Monday, December 10, 2018

দাজ্জ্বালের আত্মপ্রকাশের পর '৪০ দিন' এর অপব্যাখ্যা

হাদিসে এ ব্যপারে স্পষ্ট আছে যে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের পর দুনিয়াতে ৪০ দিন অবস্থান করবে।
.
حَدَّثَنَا صَفْوَانُ بْنُ صَالِحٍ الدِّمَشْقِيُّ الْمُؤَذِّنُ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، حَدَّثَنَا ابْنُ جَابِرٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ جَابِرٍ الطَّائِيُّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ الْكِلاَبِيِّ، قَالَ ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الدَّجَّالَ فَقَالَ ‏"‏ إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ فَإِنَّهَا جِوَارُكُمْ مِنْ فِتْنَتِهِ ‏"‏ ‏.‏ قُلْنَا وَمَا لُبْثُهُ فِي الأَرْضِ قَالَ ‏"‏ أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَوْمٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ ‏"‏ ‏.‏ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلاَةُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ قَالَ ‏"‏ لاَ اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ ثُمَّ يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ فَيُدْرِكُهُ عِنْدَ بَابِ لُدٍّ فَيَقْتُلُهُ ‏"‏ ‏.‏

আন-নাওয়াস ইবনু সাম‘আন আল-কিলাবী (রাঃ)

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকতে যদি সে আবির্ভূত হয় তবে তোমাদের পক্ষ হতে আমিই তার প্রতিপক্ষ হবো। আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান না থাকা অবস্থায় যদি সে আবির্ভূত হয় তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজেই তার প্রতিপক্ষ হতে হবে। আর আল্লাহ হবেন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পক্ষের দায়িত্বশীল। তোমাদের মাঝে যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন সূরাহ আল-কাহ্‌ফের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে; কেননা এটাই হবে ফিত্বনাহ থেকে তার নিরাপত্তার প্রধান উপায়। আমরা বললাম, সে পৃথিবীতে কতদিন থাকবে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ দিন। একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান ও একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান, আর বাকি দিনগুলো হবে তোমাদের সাধারণ দিনগুলোর সমান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সে দিনে এক দিন ও এক রাতের সলাত কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, তোমরা অনুমান করে দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে (সলাত পড়বে)। অতঃপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) দামেশকের পূর্ব প্রান্তে একটি সাদা মিনারে অবতরণ করবেন এবং ‘লুদ্দ’ নামক স্থানের দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে নাগালে পাবেন এবং হত্যা করবেন।
.

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৩২১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
.
এত স্পষ্টতার পরেও আজকে একদল মুসলিম ভাইদেরকে পাওয়া যায় যারা এই ৪০ দিনের মেটাফোরিক্যাল ব্যাখ্যাদানের চেষ্টা চালায়। তারা আপনাকে বলবে, প্রথম যে দিনটি ছিল এক বছরের সমান সেটা মূলত ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা। এরপরে যে দিনটি একমাসের সময়, সেটা দ্বারা বোঝানো হয় আমেরিকার নিয়ন্ত্রনে শাসন ব্যবস্থা। এক সপ্তাহের দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট দিন = ভবিষ্যতে ইজরাইলের নিয়ন্ত্রনে বিশ্বব্যবস্থা। এরপরের স্বাভাবিক দিনগুলোর দৈর্ঘ্যে পৌছবার পরে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
.
তাদের এই ব্যাখ্যা একদমই নব উদ্ভাবিত ব্যাখ্যা যার সাথে সালাফের কোন সম্পর্কই নেই। তাদের এরকম নব্য উদ্ভাবনের কারন হতে পারে দিবসের দৈর্ঘ্যের বর্ননাকে সাধারন দিবসের কথিত ইউনিভার্সালিটির সাথে এ্যাডজাস্ট করা। র‍্যাশোনাল করা। নতুন কিছুর প্রচার করে ইন্টেলেকচুয়ালি সাপ্রেস করা(নতুন বিদ্যাকে জাহির করা)। অথবা শুধুই অন্ধ অনুসরন। এই অপব্যাখ্যার মূলে গিয়ে পাবেন ত্রিনিদাদে অবস্থানরত আলিম শাইখ ইমরান নযর হোসেন সাহেবকে[১]। তার এদেশীয় অনুসারীই এই বিষয়টির প্রচার করে। এটা ভাল দিক যে, ইমরান নযর হোসেন সাহেব আজকের অধিকাংশ আলিমদের তুলনায় বহির্বিশ্বের ব্যপারে অনেক সচেতন। তিনি শেষ জামানার ব্যপারেও অনেকের চেয়ে বেশি কনসার্নড। তিনি হয়ত কাফিরদের ফিতনার জালগুলোর ব্যপারে উম্মাহকে অবহিত করতে চান। যেমন, চলমান মুদ্রাব্যবস্থার ব্যপারে তার সুক্ষ্ম বিশ্লেষণ। কিন্তু সেসবের সাথে তিনি একদমই মনগড়া কিছু চিন্তাধারা অথবা ব্যাখ্যাকে মিলিয়ে এমনভাবে প্রচার করেন যেন তিনি একদম সঠিকই বলছেন,অথচ সেসব সালাফের চিন্তাধারার বিপরীতে চলে যায়। এর একটি হচ্ছে দাজ্জালের প্রকাশকালের ব্যাপ্তি ৪০ দিনের ব্যপারে। তিনি মূলত তরুন মুসলিম সমাজকে সুফিবাদের দিকে উৎসাহিত করেন। বাতেনি ইল্মচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এদেশীয় তার অনুসারীরা এ সময়টাতে দাজ্জাল সম্পর্কিত কিছু লিখতে গেলে এর প্রতিই খুব গুরুত্ব দেয় যেটা একদমই সাহাবীদের জামা'আতের বাহিরের চিন্তাধারা প্রকাশ করে। এটা উপরে দেওয়া হাদিসটিতেও পাওয়া যায়। উপরে বর্নিত আছে,"..আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সে দিনে এক দিন ও এক রাতের সলাত কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, তোমরা অনুমান করে দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে (সলাত পড়বে).."। অর্থাৎ ইমরান নযর হোসেনের অনুসারীরা যেভাবে বলে যে এই এক বছর একটা শাসনামল বা শাসন কাল বোঝায় সেরকম মোটেই না। নতুবা কখনোই অনুমান করে সালাত আদায়ের কথা বলতেন না। আমি জানি সাধারণভাবে এই দলিলের বর্ননাকে তারা অন্যভাবে ঘুরিয়ে দেবেন নিজেদের অনুকূলে। কিন্তু খুব বেশি লাভ নেই।
অন্যান্য হাদিসগুলো এ ব্যপারটিকে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ স্পষ্ট করে। এর মধ্যে একটি হাদিস নিচে তুলে ধরছি। এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমান করে ৪০ দিনের ব্যাপ্তিকাল এর বিবরণে কোন মেটাফোরিক্যাল/এ্যালিগোরিক্যাল ব্যাপার বলে কিছু নেই। বরং আক্ষরিকভাবেই দিবসের ব্যাপ্তিকাল একবছর/মাস ও সপ্তাহের ন্যায় হবে। আমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল(স) দ্বীনের খুঁটিনাটি খুব সরলভাবে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনকেও সহজ করেছেন। কিন্তু এসব সরল বর্ননায় সাধারনভাবে বাতেনিয়্যাহপন্থীদেরকে বক্রতা তালাশ করতে দেখা যায়।
.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“দাজ্জালের গাধার (বাহনের) মাঝে চল্লিশ গজের দূরত্ব থাকবে এবং এক একটি পদক্ষেপ তিনদিনের ভ্রমণের সমান হবে। সে তার গাধার পিঠে আরোহণ করে সমুদ্রে এমনভাবে ঢুকে যাবে, যেমন তোমরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে পানির ছোট নালায় ঢুকে থাক (এবং নালা পার হয়ে থাক)। সে দাবি করবে, আমি বিশ্বজগতের রব এবং সূর্যটা আমার কথা মত চলছে। তোমরা কি চাচ্ছ যে আমি একে থামিয়ে দেই? তার কথায় সূর্য থেমে যাবে। এমনকি একটি দিন মাস ও সপ্তাহের সমান হয়ে যাবে। এবার সে বলবে, তোমরা কি চাচ্ছ, আমি এটিকে আবার চালিয়ে দেই? লোকেরা বলবে, হ্যাঁ দিন। তখন দিন ঘণ্টার সমান হয়ে যাবে।
তার কাছে এক মহিলা আসবে এবং বলবে, হে আমার রব, আপনি আমার পুত্র এবং স্বামীকে জীবিত করে দিন। তখন শয়তানরা মহিলার পুত্র ও স্বামীর আকৃতিতে এসে হাজির হবে। মহিলা শয়তানকে গলায় জড়িয়ে ধরবে এবং তার সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হবে। মানুষের ঘরগুলো শয়তানদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
এক গ্রাম্যলোক দাজ্জালের নিকট আসবে এবং বলবে, হে আমাদের রব, আপনি আমাদের জন্য আমাদের উট ও বকরিগুলোকে জীবিত করে দিন। দাজ্জাল তাদেরকে উট-বকরির আকৃতিতে কতগুলো শয়তান দিয়ে দেবে। এই পশুগুলো ঠিক সেই বয়স ও সেই শরীর স্বাস্থ্যের হবে, যেমনটি তাদের মৃত উট বকরিগুলো ছিল। এসব দেখে গ্রামের অধিবাসীরা বলবে, ইনি যদি আমাদের রব না হতেন, তাহলে আমাদের মৃত উট বকরিগুলোকে কোনক্রমেই জীবিত করতে পারতেন না।...."
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৪৩)
.
সুতরাং নিজেকে সৃষ্টিকর্তা প্রমানের জন্য বাহ্যিকভাবে দাজ্জালের কথায় (যাদুবিদ্যার কার্যক্ষমতাও আল্লাহর ইচ্ছাধীন) সূর্য থেমে যাবে। এমতাবস্থায় একদিন=মাস/সপ্তাহের সমান হয়ে যাবে। এভাবে প্রথমদিনটি ১ বছরের সমান দীর্ঘ হয়ে যাবে। পরের দিন মাস, পরের দিন সপ্তাহের সমান...। এজন্যই আল্লাহর রাসূল(সাঃ) অনুমান করে স্বালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা আদৌ ব্রিটিশ,ইউএস বা ভবিষ্যতে ইজরাইলাইত শাসনকালকে বোঝায় না। এবার আশা করি বুঝতে পারছেন তাদের এ নতুন ব্যাখ্যাটি কতটা ভ্রান্ত। সালাফের চিন্তা/ব্যাখ্যা/বোধের বাহিরে কুরআন সুন্নাহর কোন নতুন (তাদের সাথে)সাদৃশ্যহীন যে ব্যাখ্যাই আনা হোক না কেন না অবশ্যই বর্জনীয়।
.
উইকিপিডিয়া থেকে সম্ভবত সরিয়ে ফেলা হয়েছে যে, শিখধর্ম গুরুগোবিন্দের একটা বিখ্যাত কিতাবে উল্লেখ করেছেন মাহদী নামের লোকের শত্রুঃ শেষ অবতার- কল্কি বের হবার পরে সূর্য থেমে যাবে এবং ১২ ঘন্টা পর পর একটু করে সরবে!
.
আমি এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই কাউকে শত্রুতার জের ধরে, অপমান করে, কিংবা ছোট করে লিখছি না। শুধুই তাদের কল্যানের জন্যই দলিলগুলো সরলভাবে উপস্থাপন করা। ইমরান নযর হোসেন সাহেবের সুন্নাহ ও সালাফের বোধ পরিপন্থী এই ব্যাখ্যাটিই বেশি বেশি অনলাইনে প্রচার করা হয়, মানুষ এতে দ্রুত আকৃষ্টও হয়। এজন্যই এটা নিয়ে কিছু কথা লেখা। সামনে তার অন্যান্য ভুল ব্যাখ্যাগুলোকেও দলিল প্রমানের সাথে উপস্থাপন করব যদি সেসব এর ন্যায় ছড়াতে দেখি, বিইযনিল্লাহ।
ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
_________________________________________________
Ref:
১.https://youtu.be/Q6Ur8HMN4Yc

0 Comments:

Post a Comment