Monday, December 10, 2018

যাদুর অস্তিত্বে অবিশ্বাসের প্রবণতা এবং নব্য মু'তাযিলা চিন্তাধারা

বিষয়টা সত্যিই ভয়াবহ। আপনি যদি সারা ইন্টারনেটও ঘাটেন, মুসলিম আলিমদের থেকে দু একটা আর্টিকেল পাবেন কিনা সন্দেহ যা হার্মেটিক প্র‍্যাক্টিস ও অন্যান্য অকাল্টিজমের বিরুদ্ধে লেখা। Mysticism, Occult বিষয়গুলোতে আলিমদের পক্ষ থেকে সাবধানতা বা বিরুদ্ধবাদী কোনকিছু খুঁজে না পাবার সম্ভাবনাই বেশি। ব্যপারটা এরকম যে, তারা হয়ত কিছুই টের পায় নি অথবা, ওইসমস্ত বিষয়গুলো বৈধ বা দোষনীয় কিছু নয়।
সেদিন দেখলাম একটা জনপ্রিয় ইসলামিক ইউটিউব চ্যানেল শেষ জামানায় প্রকাশিত অকাল্ট ফিজিক্সকে 'জম জম পানির' শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে ব্যবহার করে চমৎকার ভিডিও বানিয়েছে। ইন্না লিল্লাহ! এই আর্টিকেলটা ওটা দেখবার পরেই লেখার সিদ্ধান্ত নেই। 
এ অনুচ্ছেদের একদম শেষাংশে ব্যপারটা এতটা ভয়াবহ কেন, সেটা বুঝতে পারবেন,ইনশাআল্লাহ।

আজকের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের(দাবিদারদের) অধিকাংশই যাদুবিদ্যাকে নতুন করে অলিখিতভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। আলিমদের থেকে শুরু করে সর্বত্রই যাদুর ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে বলবে, শয়তান জ্বীন দিয়ে কোন ব্যক্তিকে ক্ষতি করা, টর্চার করা, পজেশনই হচ্ছে সর্সারি বা উইচক্র্যাফট। 

যাদু করা কুফরি হবে কেন প্রশ্ন করলে তারা চোখ বুজে জানাবে এটা(যাদু) করতে হলে জ্বিনকে সিজদাহ করতে হয়,ওর অনুগত হতে হয় শিরকি কাজের দ্বারা,কুরআন ও পবিত্র বিষয়গুলোকে অবমাননা করতে হয়, আল্লাহর কালামকে উলটে লিখতে হয়। যখন আপনি এসব করবেন, তখন শয়তান আপনার প্রতি খুশি হয়ে যাদুর ফলাফল ঘটাবে। অথবা লক্ষ্যে থাকা ব্যক্তিকে আক্রমণ করবে পজেশনের মাধ্যমে। এজন্য এসব কাজ কুফরি ও শিরকি। ব্যস..... এ পর্যন্তই! 
 অর্থাৎ তাদের কথা হচ্ছে যাদু মানেই 'শয়তানঘটিত' কাজ। আর কিছু নয়। . তাহলে ইসলামের বাহিরের কাফির প্যাগান-পৌত্তলিকদের যাদুবিদ্যার বিষয় গুলো কি সর্সারির আওতায় পড়ে না? অর্থাৎ বৈধ?? সেসবের চর্চা করলে তো তাহলে কোন সমস্যা নেই! তাই না!! কারন অমুসলিম দেশের কাফির পৌত্তলিক- উইক্কানদের যাদুচর্চার ৯৫%ই হচ্ছে নিজের অভিপ্রায় বা ইন্টেন্টকে খাটিয়ে কারো ক্ষতি করা বা নিজের স্বার্থ হাসিল করা। এদের অধিকাংশই মন্ত্র(স্পেল) তৈরি করে গ্রন্থিতে(knot) ফুঁৎকার দিয়ে যাদু করে থাকে। তাহলে মেইনস্ট্রিম পপুলার ইসলামিক কমিউনিটি এর ব্যপারে কি বলবে? হয় জ্বীনদের দ্বারা করে, অথবা এটা কোন যাদুই না। তাই না ?? কিন্তু আমরা তাদেরকে এক্ষেত্রে একদম নিরব অবস্থাতেই অবস্থাতেই পাই। এসবে তেমন কোন ডেটা নেই।

আপনি যদি দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে গিয়ে যাদু সংক্রান্ত যতকিছুই পাবেন ৯৯% ই জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাদুগ্রস্থ বলবে। . অথচ, জ্বীনের পজেশন, নির্যাতন শাব্দিকভাবে যাদুর শ্রেনীতে ফেললেও উহা মূলত যাদু নয়। 'শব্দ'গতদিক দিয়ে, “Every effect whose cause or origin is subtle, mysterious or supernatural is sihr.” (Lisaanul Arab and Qaamoos).

 মূলত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের দাবিদার আলিমদের বিরাট একটা অংশ supernatural sorcery এর স্থানটিকে অস্বীকার করছেন, যেটা ইমাম রাযি(রহ:) যাদুবিদ্যায় ২য় শ্রেণীতে স্থান দিয়েছেন। (অধিকাংশ আলিম)তারা এই ম্যাজিক্যাল আর্টের পিছনের জ্ঞান বা বিদ্যাগুলোকে একদমই যাদুর ভেতরে ফেলছেন নাহ। এই নব্য চিন্তাধারা সালাফদের মধ্যে ছিল না। আর কুরআন সুন্নাহর সমস্ত দলিল তাদের এই অবস্থানকে সুস্পষ্টভাবে ভ্রান্ত প্রমান করে। তাদের এই চিন্তাধারা পরবর্তী প্রজন্মর মাঝে চরম ভ্রান্তি এবং বিপদের সৃষ্টি করে।

সবার প্রথমে মু'তাজিলারা যাদুকে অস্বীকার করা শুরু করে, তাদের কাছে যাদুশাস্ত্রগুলো ছিল স্বতঃসিদ্ধ বৈধ বিদ্যা এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের একটা উৎস। যেদিন থেকে গ্রীক প্লেটনিক-পিথাগোরিয়ান ম্যাজিক্যাল অকাল্ট টেক্সট গুলি পৌছায় তখন এই মু'তাজিলা সম্প্রদায়ই এসব বিষয় সবচেয়ে বেশি আলিঙ্গন করে। তাদের অনেকে আলকেমির মধ্যেও ডুবে যায়।
 এসবকে তারা ম্যাজিক্যাল ফরবিডেট প্রাক্টিসের আওতায় ফেলতো না। এরা সেসব গ্রেসিয়ান ন্যাচারাল ফিলসফি(অকাল্ট) ঘাটাঘাটি করে 'কালাম শাস্ত্র' তৈরি করে। এরা ইসলামের সাথে বিষয়গুলোকে খাপখাইয়ে প্রবেশ করাতো এবং কাফিরদের সাথে তর্ক বিতর্কে এবং দাওয়ার কাজে ব্যাপক আকারে এসব ব্যবহার করতো। তখনই হঠাৎ করে পৃথিবীর আকারের(এস্ট্রোনমি) ব্যপারে প্রশ্ন ওঠে। মু'তাযিলারা পিথাগোরাসের এস্ট্রলজির উপর ঈমান আনে যার ফলে এরা সহজেই স্ফেরিক্যাল মডেলকে ধারন করে। 
এস্ট্রোনোমিকাল এ চিন্তাধারা পরবর্তী সুন্নী আলিমদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করে। . পরবর্তীতে এই মুতাজিলাদের আকিদাগুলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের দাবিদার আশ'আরি মাতুরিদিদের মধ্যে কিছুটা চলে আসে। এদেরও অধিকাংশ যাদু বলতে জ্বীনদের পজেশনকে বোঝায় এবং সুপারন্যাচারাল সর্সারিকে অস্বীকার করে। এরাও যাদুবিদ্যা বা এ সংক্রান্ত অকাল্ট শাস্ত্রকে নিষিদ্ধ যাদুর শ্রেণীতে ফেলে না, বা সেসবের ব্যপারে নিরবতা পালন করে। এই দিকে অনেক বড় বড় আলিম রয়েছেন যাদের নাম উল্লেখ করে কোনরকম বিতর্কের জন্ম দিতে চাই না, অসম্মানিতও করতে চাই না।

 সাহাবীদের জামাতের অনুসারী আলিমদের মধ্যে যাদুবিদ্যার ক্ষেত্রে এরকম মুতাজিলাদের ন্যায় চিন্তাধারা যে কতটা ভুল তা বোঝা যায় আল্লাহর কালামে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা নিজেই এধরনের supernatural sorcery থেকে আশ্রয় চাওয়া শিখিয়েছেন। অর্থাৎ ওই সমস্ত যাদু বা উইচক্র্যাফট যাতে কোন ডাকিনী মন্ত্র বা কিছু কথা পাঠ করে গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে দূরবর্তী কোন কিছুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়।

 আল্লাহ বলেন,

وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ , وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়। গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক্ক)

 আমি এ যুগের এক আলিমকে দেখেছি এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন, এই আয়াতের অমুক শব্দটি বুৎপত্তিগত শব্দ অমুক, এর ভার্বের অর্থ অমুক, এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে শয়তান যে মানুষের হৃদয়ে ফুঁ দিয়ে ওয়াসওয়াসা দেয়!!!

অথচ সূরা নাসে আল্লাহ আলাদাভাবেই শয়তান জ্বীন ও মানুষের ওয়াসওয়াসা থেকে আশ্রয় চাওয়াকে শিখিয়েছেন। তারা এভাবে সমস্ত যাদুচর্চায় জ্বীনের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ যে করেই হোক টেনে আনেন। এ আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা দেখুন হাফেজ ইবনে কাসির(র) এর বিখ্যাত তাফসীরে। যাহোক, জ্বীনদের ছাড়াই এই সুপারন্যাচারাল ম্যাজিক্যাল আর্টের অস্বীকৃতির প্রবণতা শুধু যে আগের মুতাযিলা, আশআরি মাতুরিদিদের মাঝেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। 
 এ যুগের মর্ডানিস্ট আলিম ও মর্ডানিস্ট মুসলিমদের মধ্যেও ব্যাপক। এরা বস্তুত নব্য মুতাযিলা(Neo mu'tazila)। আগের যুগের মুতাজিলারা যেভাবে গ্রীক 'ন্যাচারাল অকাল্ট ফিলোসফিকে' ইসলামাইজড করেছিল তেমনি আজকেও এরা কাফিরদের কল্পনা নিঃসৃত কথাগুলোকে ইসলামের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে। আপনারা হয়ত জানেন ২০০ বছর আগেরকার ন্যাচারাল ফিলসফিকেই(Neo Platonic School of thought) 'সাইন্স' শব্দের মোড়কে ভরা হয় ১৯ শতকে, যাকে মু'তাজিলা আদর্শ জ্ঞান হিসেবে গ্রহন করেছিল। ঠিক সেটাই আজকের মর্ডানিস্ট মুসলিমরা(নিও মুতাজিলারা) একই ভাবে গ্রহন করেছে। এরাও কাফিরদের সাথে তর্কবিতর্কে একইভাবে সেসব ব্যবহার করে ইসলামের সাথে সেসব মিশিয়ে।



Source:Tafsir ibn kather(2.102)




আল্লাহর রাসূলকে (স) এক ইহুদী (লাবিদ ইবনে আ'সাম) চিরুনী ও চুলে যাদু করে অসুস্থ করে। সেটা কি কোন জ্বীনদেরকে চালনার মাধ্যমে করেছিল? অর্থাৎ জ্বীনরা কি আল্লাহর রাসূল (স) এর মধ্যে যাদুর প্রভাব সৃষ্টি করতো!? একদমই না। বরং এ যাদু করা হয়েছিল চিরুনি ও চুল ব্যবহার করে মানুষের দ্বারা।

আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ .
 حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ سَحَرَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ مِنْ بَنِي زُرَيْقٍ يُقَالُ لَهُ لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ، حَتَّى كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ يَفْعَلُ الشَّىْءَ وَمَا فَعَلَهُ، حَتَّى إِذَا كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ ذَاتَ لَيْلَةٍ وَهْوَ عِنْدِي لَكِنَّهُ دَعَا وَدَعَا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ يَا عَائِشَةُ، أَشَعَرْتِ أَنَّ اللَّهَ أَفْتَانِي فِيمَا اسْتَفْتَيْتُهُ فِيهِ، أَتَانِي رَجُلاَنِ فَقَعَدَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِي، وَالآخَرُ عِنْدَ رِجْلَىَّ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ مَا وَجَعُ الرَّجُلِ فَقَالَ مَطْبُوبٌ‏.‏ قَالَ مَنْ طَبَّهُ قَالَ لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ‏.‏ قَالَ فِي أَىِّ شَىْءٍ قَالَ فِي مُشْطٍ وَمُشَاطَةٍ، وَجُفِّ طَلْعِ نَخْلَةٍ ذَكَرٍ‏.‏ قَالَ وَأَيْنَ هُوَ قَالَ فِي بِئْرِ ذَرْوَانَ ‏"‏‏.‏ فَأَتَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي نَاسٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَجَاءَ فَقَالَ ‏"‏ يَا عَائِشَةُ كَأَنَّ مَاءَهَا نُقَاعَةُ الْحِنَّاءِ، أَوْ كَأَنَّ رُءُوسَ نَخْلِهَا رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ ‏"‏‏.‏ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ أَسْتَخْرِجُهُ قَالَ ‏"‏ قَدْ عَافَانِي اللَّهُ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُثَوِّرَ عَلَى النَّاسِ فِيهِ شَرًّا ‏"‏‏.‏ فَأَمَرَ بِهَا فَدُفِنَتْ‏.‏ تَابَعَهُ أَبُو أُسَامَةَ وَأَبُو ضَمْرَةَ وَابْنُ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ هِشَامٍ‏.‏ وَقَالَ اللَّيْثُ وَابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ هِشَامٍ فِي مُشْطٍ وَمُشَاقَةٍ‏.‏ يُقَالُ الْمُشَاطَةُ مَا يَخْرُجُ مِنَ الشَّعَرِ إِذَا مُشِطَ، وَالْمُشَاقَةُ مِنْ مُشَاقَةِ الْكَتَّانِ‏.‏ . 

 যুরাইক গোত্রের লাবীদ ইবনু আ‘সাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যাদু করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মনে হতো যেন তিনি একটি কাজ করেছেন, অথচ তা তিনি করেননি। একদিন বা একরাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বার বার দু‘আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু’পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেনঃ এ লোকটির কী ব্যথা? তিনি বলেনঃ যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ বিন আ’সাম। প্রথম জন জিজ্ঞেস করেনঃ কিসের মধ্যে? দ্বিতীয় জন উত্তর দেনঃ চিরুনী, মাথা আঁচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের ‘জুব’-এর মধ্যে।
 তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সহাবী সাথে নিয়ে সেখানে যান। পরে ফিরে এসে বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! সে কূপের পানি মেহদীর পানির মত লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
আবূ উসামাহ আবূ যামরাহ ও ইবনু আবূ যিনাদ (রহ.) হিশাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। লাইস ও ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহ.) হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন, চিরুনী ও কাতানের টুকরায়। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, الْمُشَاطَةُ হল চিরুনী করার পর যে চুল বের হয়। مُشَاقَةِ হল কাতান।

 [৩১৭৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৮)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৭৬৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com


আপনি অবাক হবেন, অনেক সম্মানিত আলিম রয়েছেন যারা এটাকে অস্বীকার করেন। কেন করেন সেটা উপরেই উল্লেখ করেছি।
আপনি এই শেষ জামানায় যাদুকারিনীদেরকে ইন্টারনেটেই knot এ spell casting এর দৃশ্য দেখতে পারবেন। ওরা মন্ত্রের কার্যকারীর মাধ্যম হিসেবে ফিফথ ইলিমেন্টকে দ্বায়ী করেঃ
 এরপরেও অসংখ্য লোকের কাছে শুধু demonic possession-ই হচ্ছে যাদু! মু'তাজিলা এবং মু'তাযিলা প্রভাবিত অতিরিক্ত রকমের jaherite পন্থী লোকেরা মানতে চায় না যে মানুষের কথা,চিন্তা ও (শুভ/অশুভ) কামনা বা intention এর একটা প্রভাব আছে।

আবূ রাযীন (রাঃ) বলেন,
. حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا يَعْلَى بْنُ عَطَاءٍ، عَنْ وَكِيعِ بْنِ عُدُسٍ، عَنْ عَمِّهِ أَبِي رَزِينٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ الرُّؤْيَا عَلَى رِجْلِ طَائِرٍ مَا لَمْ تُعَبَّرْ فَإِذَا عُبِّرَتْ وَقَعَتْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَأَحْسِبُهُ قَالَ ‏"‏ وَلاَ يَقُصُّهَا إِلاَّ عَلَى وَادٍّ أَوْ ذِي رَأْىٍ ‏

 রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার পূর্ব পর্যন্ত তা একটি পাখির পায়ের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে। অতঃপর ব্যাখ্যা করা হলে তা কার্যকর হয়। বর্ণনাকারী বলে, আমার ধারণা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ “বন্ধু ও জ্ঞানী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে স্বপ্নের কথা বলবে না। . সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০২০ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
 Source: ihadis.com 

 ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, . حَدَّثَنَا عَارِمٌ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَجُلًا - أَوْ أَعْرَابِيًّا - أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَكَلَّمَ بِكَلَامٍ بَيِّنٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنَ الْبَيَانِ سِحْرًا، وَإِنَّ مِنَ الشِّعْرِ حِكْمَةً» . 
 এক ব্যক্তি বা এক বেদুইন নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় কথাবার্তা বললো। নবী (সাঃ) বলেনঃ কথায়ও যাদুকরী প্রভাব থাকে এবং কবিতাও প্রজ্ঞাপূর্ণ হতে পারে। (আবু দাউদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ,আহমাদ, ইবনে হিব্বান,তহাকিম) 

আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৮৮০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com


 وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الدَّارِمِيُّ، وَحَجَّاجُ بْنُ الشَّاعِرِ، وَأَحْمَدُ بْنُ خِرَاشٍ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنِ ابْنِ، طَاوُسٍ عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الْعَيْنُ حَقٌّ وَلَوْ كَانَ شَىْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا ‏"‏ ‏.‏ 
 ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘কুদৃষ্টির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাস্তব’। কোন বিষয় যদি ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত, তাহলে ‘কুদৃষ্টি’ ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত এবং তোমাদের (কুদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের) -কে গোসল করতে বলা হলে তোমরা গোসল করাবে। [২৬]

(ই.ফা. ৫৫১৪, ই.সে. ৫৫৩৯)
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৫৯৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com



 حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها قَالَتْ كَانَ يُؤْمَرُ الْعَائِنُ فَيَتَوَضَّأُ ثُمَّ يَغْتَسِلُ مِنْهُ الْمَعِينُ ‏.‏

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বদনযরকারীকে নির্দেশ দেয়া হতো যেন সে উযু করে এবং সেই পানি দিয়ে নযর লাগা ব্যক্তি বা বস্তু ধুয়ে নেয়। 
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৮০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com

 আজকে কুদৃষ্টি বা বদনযর (Evil Eye - Ayn al Hasad) এর ব্যখ্যায় বলা হচ্ছে আল্লাহর প্রশংসা না করার জন্য হচ্ছে। আল্লাহর প্রশংসার ফলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা চোখের নযরে দ্বারা ঈর্ষাজনিত কুকামনার ফলে হওয়া অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা দান করেন।কিন্তু এরূপ ব্যখ্যাকারীরা কোন লোকের দৃষ্টির supernatural কুপ্রভাবকে ধরছে না। তাদের কথা সত্য হলে, অর্থাৎ মানুষের আত্মার প্রভাব না থাকলে কেন নযরকারীর ওযূর পানি দ্বারা নযরগ্রস্থ ব্যক্তি বা বস্তুকে ধৌত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?!!
 আপনি কি জানেন, বদনযরের ব্যপারটি প্যাগান যাদুকররাও বিশ্বাস করে! তারা নেগেটিভ এনার্জি ক্লিন্সিং এর জন্য শয়তানের শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করেঃ
  https://m.youtube.com/watch?v=ruA23jOlao8


 و حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَاهُ يَقُولُ اغْتَسَلَ أَبِي سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ بِالْخَرَّارِ فَنَزَعَ جُبَّةً كَانَتْ عَلَيْهِ وَعَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ يَنْظُرُ قَالَ وَكَانَ سَهْلٌ رَجُلًا أَبْيَضَ حَسَنَ الْجِلْدِ قَالَ فَقَالَ لَهُ عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ وَلَا جِلْدَ عَذْرَاءَ قَالَ فَوُعِكَ سَهْلٌ مَكَانَهُ وَاشْتَدَّ وَعْكُهُ فَأُتِيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُخْبِرَ أَنَّ سَهْلًا وُعِكَ وَأَنَّهُ غَيْرُ رَائِحٍ مَعَكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَأَتَاهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ سَهْلٌ بِالَّذِي كَانَ مِنْ أَمْرِ عَامِرٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَامَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ أَلَّا بَرَّكْتَ إِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ تَوَضَّأْ لَهُ فَتَوَضَّأَ لَهُ عَامِرٌ فَرَاحَ سَهْلٌ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ
আবূ উমামা ইবনু সহল ইব্নু হুনাইফ (র)
(জুহফার নিকটবর্তী) খাব্বার নামক স্থানে আমার পিতা আবূ সহল (ইব্নু হানীফ) গোসল করার মনস্থ করে জুব্বা খুলে ফেললেন। আমির ইব্নু রবীয়া দেখতেছিলেন। আমার পিতা সহল সুন্দর ও সুদর্শন লোক ছিলেন। আমির বললেন, আজকের মতো আর কোনদিন আমি এত সুন্দর মানুষ দেখিনি, এমন কি এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট কোন যুবতীও দেখিনি। (আমিরের এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই) তৎক্ষণাৎ সহলের গায়ে জ্বর এল এবং জ্বরের বেগ ভীষণ হল। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলল, সহলের জ্বর এসেছে এবং সে আপনার সাথে যেতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহলের কাছে এলেন, সহল আমিরের সেই কথা নকল করে শোনালেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন মুসলমান নিজের ভাইকে কেন হত্যা করে ? অতঃপর আমিরকে বললেন, তুমি (বারাকাল্লাহ) বললে না কেন? বদ নজর (কুদৃষ্টি) সত্য। সহলের জন্য ওযূ কর, তাকেও ওযুর পানি দাও। আমির সহলের জন্য ওযূ করলেন এবং ওযুর পানি তাকে দিলেন। অতঃপর সহল ভাল হয়ে গেলেন এবং রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে গেলেন, আর তাঁর কোন অসুবিধা তখন ছিল না। 
(বুখারী ৫৭৪০, মুসলিম ২১৮৭)
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬৮৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.চম


 যাদু বিদ্যার বড় একটা অংশ এবং বদনযরের উভয়ই আত্মার অনিষ্ট বৈ কিছু নয়। 
 حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ هِلاَلٍ الصَّوَّافُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ صُهَيْبٍ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ جِبْرِيلَ، أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ اشْتَكَيْتَ فَقَالَ ‏ "‏ نَعَمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ ‏.‏ 
 সা’ঈদ (রাঃ) জিবরীল (‘আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আগমন করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল) বললেনঃ আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- সে সব জিনিস হতে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব আত্মার খারাবী অথবা কুদৃষ্টি হতে আল্লাহ আপনাকে মুক্তি দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (ই.ফা. ৫৫১২, ই.সে. ৫৫৩৭)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৯৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com

 আল্লাহর রাসূল(সা) বিষাক্ত প্রানীর দংশন ও কু-দৃষ্টির ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁক এর অনুমতি দিয়েছেন।

 وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ سُفْيَانَ، ح وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ، بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنَا حَسَنٌ، - وَهُوَ ابْنُ صَالِحٍ - كِلاَهُمَا عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ رَخَّصَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الرُّقْيَةِ مِنَ الْعَيْنِ وَالْحُمَةِ وَالنَّمْلَةِ ‏.‏ وَفِي 
حَدِيثِ سُفْيَانَ يُوسُفُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ .‏ 

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুদৃষ্টি লাগা, বিষাক্ত জন্তুর বিষক্রিয়া ও বিষাক্ত পার্শ্বঘা থেকে বেঁচে থাকতে ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৫৩৬, ই.সে ৫৫৬১) সুফইয়ান ইউসুফ ইবনু ‘আবদুল্লাহর ইবনু হারিস-এর সূত্রে হাদীস বর্ণিত রয়েছে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬১৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.চম

 তবে শিরক শব্দযুক্ত মন্ত্র পাঠে ঝাড়ফুঁক করা থেকে বিরত থাকতে বলেন।

 حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ، قَالَ كُنَّا نَرْقِي فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي ذَلِكَ فَقَالَ ‏ "‏ اعْرِضُوا عَلَىَّ رُقَاكُمْ لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ ‏"‏ ‏.‏ 
‘আওফ ইবনু মালিক আশজা’ঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জাহিলী (মূর্খতার) যুগে (বিভিন্ন) মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। এজন্যে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আবেদন করলাম-হে আল্লাহর রসূল! এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার নিকট উপস্থাপন করো, ঝাড়ফুঁকে কোন দোষ নেই-যদি তাতে কোন শিরক (জাতীয় কথা) না থাকে। (ই.ফা. ৫৫৪৪, ই.সে. ৫৫৬৯) 
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬২৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com

وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه أَنَّهُ قَالَ لِثَابِتٍ رَحِمَهُ اللهُ: أَلاَ أَرْقِيكَ بِرُقْيَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ: بَلَى، قَالَ: اَللهم رَبَّ النَّاسِ، مُذْهِبَ البَأسِ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شَافِيَ إِلاَّ أنْتَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَماً . رواه البخاري

আনাস (রাঃ)

তিনি সাবেত (রাহিমাহুল্লাহ)কে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মন্ত্র দ্বারা ঝাড়ফুঁক করব না?’ সাবেত বললেন, ‘অবশ্যই।’ আনাস (রাঃ) এই দো‘আ পড়লেন, ‘‘আল্লাহুম্মা রাব্বান্না-স, মুযহিবাল বা’স, ইশফি আন্তাশ শা-ফী, লা শা-ফিয়া ইল্লা আন্ত্, শিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাক্বামা।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক! তুমি কষ্ট দূর কর এবং আরোগ্য দান কর। (যেহেতু) তুমি রোগ আরোগ্যকারী। তুমি ছাড়া আরোগ্যকারী আর কেউ নেই। তুমি এমনভাবে রোগ নিরাময় কর, যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৯০৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com


 যাদুকররা spell,incantations, intention এর পাশাপাশি রাতের কোন ধরনের প্রভাবকেও ব্যবহার করতে চেষ্টা করে, এজন্য ওদের কাছে অর্ধচন্দ্র, পূর্নচন্দ্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসব কাজ এস্ট্রোলজিক্যাল বিদ্যা সহজ করে। এ কারনে আল্লাহ বলেন,
 . وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ . 
 অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়(সূরা ফালাক্ক)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে ইবনু কাসির(রঃ) এর তাফসীর গ্রন্থটি দেখুন। যাদুকররা তাদের এই Actions at a distance ঘটাবার অকাল্ট সাইন্সের জ্ঞান লাভ করে যাদুশাস্ত্র থেকে। যাদুকররা সে শাস্ত্রলব্ধ বিদ্যা উৎসারিত কিছু কাজ বা চর্চা, দ্বারা বাহ্যত অবাস্তব কিছু করে থাকে। যেমন,দূরবর্তী কাউকে অসুস্থ করে দেওয়া, চোখকে bewitch করা,এমনি অবজেক্ট এর আকৃতিও পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলা(আল্লাহর ইচ্ছায়)। এরা সাধারণত প্রকৃতির নীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে কোন কিছুকে বদলে ফেলার চেষ্টা করে। এজন্য তারা ওইসব শাস্ত্রের অনুগামী হয় যাতে করে প্রকৃতির বিচিত্র নীতি, শক্তির কজ এবং ইফেক্ট সম্পর্কে জানতে পারে। 
রিয়েলিটির হিডেন মেকানিক্স সম্পর্কে জ্ঞান সরবরাহের ব্যপারে অপেক্ষাকৃত উচ্চতর ডাইমেনশনে থাকা শয়তানই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। যাদুশাস্ত্রের বিদ্যাকে শয়তান ও যাদুকররা পূর্নাঙ্গ বিশ্বাসব্যবস্থায় রূপান্তরের জন্য monism/ non dualism/অদ্বৈতবাদের(ওয়াহদাতুল উজুদ) মত কুফরি আকিদারও বানিয়ে নেয়।
 আল্লাহ বলেন,
"তারা(ইহুদীরা) ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না।"

অর্থাৎ এখানে স্পষ্ট যে এটা বিশেষ শাস্ত্র বা বিদ্যা বা নিষিদ্ধ জ্ঞান। হারুত ও মারুতের বিষয়টা আরো বেশি স্পষ্ট করে। তারা এমন কোন গুপ্তবিদ্যা শেখাতো যা দ্বারা প্রকৃতির নীতিকে লঙ্ঘন করে(আল্লাহর ইচ্ছায়), এমন কাজ করা সম্ভব ছিল। সোজাসুজিভাবে বলতে গেলে, এগুলো বস্তুত 'গুপ্ত বিজ্ঞান'। Arthur C Clark বলেন, 'যাদু হচ্ছে এমন বিজ্ঞান যা আমরা এখনো বুঝতে পারিনা।' এজন্য আল্লাহর রাসূল(স) জ্যোতিঃশাস্ত্র, যা কিনা প্রাচীন কালের এবং তার(সাঃ) সময়কার সাইন্স ছিল, তাকেই সরাসরি যাদু বলেছেন। এস্ট্রলজি দিয়ে সাধারনত কজ এন্ড ইফেক্ট বের করার চেষ্টা করত। এরা এর দ্বারা নক্ষত্রদেরকে প্রভাবক হিসেবে দ্বার করত(যদিও এটা ভিত্তিহীন এবং সম্পূর্ন ভুল)। হাজার বছর ধরে প্রকৃতি ও মানুষের বিভিন্ন কাজ ও অবস্থাকে অবজার্ভ করে এই শাস্ত্র তৈরি করেছে। এর দ্বারা ন্যাচারাল 'ল গুলোকে ডিফাইন করার চেষ্টা করতো। এই শাস্ত্রই ছিল প্রাচীন বিজ্ঞান। 
এর ব্যপারে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ
 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنِ 
 اقْتَبَسَ عِلْماً مِنَ النُّجُومِ، اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَادَ» رواه أبو داود بإسناد صحيح

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জ্যোতিষ বিদ্যার কিছু অংশ শিক্ষা করল, সে আসলে যাদু বিদ্যার একটি অংশ শিক্ষা করল। বিধায় জ্যোতিষ বিদ্যা যত বেশী পরিমাণে শিক্ষা করবে, অত বেশী পরিমাণে তার যাদু বিদ্যা বেড়ে যাবে।’’ 
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬৮০
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
Source: ihadis.com

 আর এই নিষিদ্ধ বিদ্যার চর্চাকারীদের ব্যপারে আল্লাহর দ্বীনের অবস্থান সর্বদাই কঠোর। অথচ আজ অধিকাংশ মুসলিম এরই মাঝে ডুবে গেছে, তারা আলাদাই করতে পারছে না কোনটা বিজ্ঞান কোনটা অপবিজ্ঞান, কোনটা বিদ্যা, কোনটি অপবিদ্যা।
 و حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدِ بْنِ زُرَارَةَ أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ حَفْصَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَتَلَتْ جَارِيَةً لَهَا سَحَرَتْهَا وَقَدْ كَانَتْ دَبَّرَتْهَا فَأَمَرَتْ بِهَا فَقُتِلَتْ
قَالَ مَالِك السَّاحِرُ الَّذِي يَعْمَلُ السِّحْرَ وَلَمْ يَعْمَلْ ذَلِكَ لَهُ غَيْرُهُ هُوَ مَثَلُ الَّذِي قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِي كِتَابِهِ { وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنْ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ } فَأَرَى أَنْ يُقْتَلَ ذَلِكَ إِذَا عَمِلَ ذَلِكَ هُوَ نَفْسُهُ

মুহাম্মাদ ইব্নু আবদির রহমান ইব্নু সা’দ ইব্নু যুরারাহ (র),তিনি বলেন, তাঁর কাছে রেওয়ায়াত পৌঁছেছে যে, উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রা) এক দাসীকে হত্যা করেছিলেন, যে দাসী তাঁর উপর জাদু করেছিল। এর পূর্বে তিনি উহাকে মুদাব্বার করে ছিলেন। পরে তাকে হত্যা করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, যে জাদু জানে এবং জাদু করে, তাকে হত্যা করাই উচিত।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫৭১
হাদিসের মান: নির্ণীত নয়
Source: ihadis.com


 ১৯ শতকের আগ পর্যন্ত এস্ট্রোলজিক্যাল সাইন্স ছিল 'ন্যাচারাল ফিলসফির' অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আলকেমি, পিথাগোরিয়ান, এরিস্টটলিয়ান ফিজিক্স আর প্লেটনিক থিওরিগুলো ছিল সবই ন্যাচারাল ফিলসফির অন্তর্গত বিষয়বস্তু। নিউটন কি কথিত বিজ্ঞানীদের অন্তর্ভুক্ত কেউ ছিলেন!? তার প্রধান পরিচয় ছিল একজন যাদুকর এবং ফ্রিম্যাসন। তার জীবদ্দশার একশত বছর পরেও তো 'সাইন্স' শব্দটাও ছিল না। 
ছিল মিস্টিসিজম। যখন থেকে অকাল্ট সাইন্স অথবা ম্যাজিক্যাল ন্যাচারাল 'ল গুলোকে 'Science' শব্দে জনসাধারণের কাছে রিইন্ট্রডিউস করা হলো, মু'তাযিলাদের মত মর্ডানিস্ট মুসলিম বা নিও মুতাজিলারা একে Sacred Science হিসেবে গ্রহন করলো। এবং যথাসম্ভব ইসলামাইজ করলো। তারা এতে কোন প্রতিবন্ধকতা পেল না, যেহেতু তাদের কাছে যাদু= শয়তান জ্বীন ঘটিত অলৌকিক কর্ম ঘটনা ও আক্রমন! এর বাহিরে তেমন কিছু নেই। যাদুবিদ্যার আওতার মাঝে-ই তারা কোন বিশেষ শাস্ত্র/জ্ঞানকে রাখেনি। 
অতএব জ্বীন-শয়তানের সাহচর্য ছাড়া অন্য যা কিছুই করা হবে তাতে সমস্যা নেই।তাদের ভাষায় 'যাদু করা কুফরি ও শিরকি কাজ কারন এতে শয়তানকে সিজদাহ করা এবং অন্যান্য আনুগত্যপূর্ন কাজ করতে হয়।' যেক্ষেত্রে জ্বীনদের ইনভোকেশনের ব্যপার নেই ইসলামি শরীয়তের সাথে প্রকাশ্য সাংঘর্ষিক কিছুও পাওয়া যায় না, সেহেতু সেসব জ্ঞান বা বিদ্যা অর্জন মোটেও দোষনীয় না। একইভাবে আজকেও কিছু সুন্নি দাবিদার মুসলিমরা নিউটনিয়ান মেকানিক্সকে সাদরে গ্রহন করেছে। সেই সাথে প্লেটনিক থট ও আইন্সটাইনিয়ান মিস্টিসিজম। আলিঙ্গন করেছে তন্ত্র মন্ত্রের শাস্ত্র বেদ-উপনিষদ উদ্ভূত কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এরা যাদুকরদের প্রতি এতটাই শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের শাস্ত্র ও তত্ত্বের প্রতি এতটাই মুগ্ধ যে সন্তানের নামই রাখছে নিউটন!! মা'আযাল্লাহ! এ জন্যই প্রথমে বলে নিয়েছিলাম এই সামান্য বিশ্বাসগত চ্যুতি সুদূরপ্রসারী ভয়াবহ বিকৃতির দিকে নিয়ে গিয়েছে। 
 আজকে আলিমরা পর্যন্ত সেসকল অপবিজ্ঞান এবং অপবিদ্যাকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন। অদেখা জগতের ব্যপারে ফতওয়া, আর্টিকেল গুলোতে তারা সর্বপ্রথমকে কথিত বিজ্ঞানের উপর আন্তরিক বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা জ্ঞাপন করে এবং এরপরে কুরআনকে যথাসাধ্য এর সাথে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করে। এ চেষ্টা হানাফি ও কথিত সালাফি উভয়ের প্রান্ত থেকেই পাওয়া যায়।
 তারা প্রথমেই বলে দেন, 'কুরআন কখনোই প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান তথা ফর্মার ন্যাচারাল ফিলোসফির বিরুদ্ধে যাবে না'। ডাঃ জাকির নায়েক (হাফিঃ) সাহেব তো ওটাকেই অস্ত্র হিসেবে নিয়ে যাবতীয় তর্কবিতর্কে লিপ্ত হন!

লুৎফর ফরাজি সাহেবের একখানা লেখনী আজ পড়লামঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2265326090363704&id=1553341364895517
সেই সাথে একটা ইসলামিক ব্লগঃ
http://islamsalvationfromhell.blogspot.com/p/magic.html

 যাদু/অপবিদ্যার ব্যপারে নব্য মুরজিয়া ও নব্য মুতাযিলাদের মধ্যে আজ একটি কমনগ্রাউন্ড দেখা যায়। মুতাজিলারা যেভাবে অপবিদ্যা চর্চা দোষনীয় মনে করে না, পুরোটাকেই সাইন্স মনে করে। তেমনি মুরজিয়ারাও সেসবকে গ্রহন করে নিয়েছে। এদের উভয়ই কাফির, যাদুকর,শয়তানের পূজারীদের মুখের বাক্যগুলোকে চোখ বুজে গ্রহন করছে। এস্ট্রোফিজিক্স থেকে শুরু করে সকল বিষয়ে তাদের সাথে কাফিরদের কোন মতানৈক্য পাওয়া যায় না। তারা সেসব অপবিদ্যা ও শারঈ দলিলের মধ্যে কোন সাংঘর্ষিকতা খুজে পান না। সেসবের রেফারেন্স দিয়ে ফতওয়াও দিয়ে থাকেন। মা'আযাল্লাহ! 
 হার্মেটিক অকাল্ট টেক্সট গুলো যেরকম প্রকৃতির নীতি গুলোকে ব্যাখ্যা ও তা কাজে লাগানোকে শেখায় তেমনি আজকের ছদ্মবেশী কথিত বিজ্ঞানও একই বিষয় শেখায়। আগে আলকেমির দ্বারা সেসব কাজকে ম্যাটেরিয়ালাইজের চেষ্টা করা হতো। তেমনি আজকের বিজ্ঞান, প্রযুক্তিকে এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। আপনি যদি এই সুডো মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞানের সকল তত্ত্বগুলোর শেকড় তালাশ করেন, সবকিছুই কোন না কোনভাবে যাদুবিদ্যা অথবা যাদুকরদের কাছে গিয়ে গজাতে দেখবেন। ইহুদীদের বিশেষ শাস্ত্রের অনুসরন ও তাদের দ্বারা আল্লাহর রাসূল(স) এর জীবদ্দশাতেই যাদুচর্চার ঘটনা গুলো ইহুদীদের অকাল্ট নলেজের প্রাক্টিসের ব্যপারটি স্পষ্ট করে। এসবে যেহেতু জ্বীন সংক্রান্ত বিষয়ের সম্পর্ক নেই, সুতরাং এসব অবশ্যই 'বিজ্ঞান'! যেমনটা ওয়ার্ল্ড একাডেমী অব কাব্বালার চেয়ারম্যান(ইহুদী র‍্যবাই) এক সাক্ষাতকারে বলেন,
"কাব্বালার জ্ঞানের উৎস হচ্ছে প্রাচীন ব্যবিলন, যেখানে মানুষ সর্বপ্রথম মহাবিশ্বের ও পৃথিবীর ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলে, খুব অল্প লোকই কাব্বালার জ্ঞান নিয়ে লেগে থাকে, যদিও এর বয়স প্রায় ৪৫০০ বছর। কিন্তু আজ এই বিদ্যা বিবর্ধিত হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে, কারন এখন আমাদের এই জ্ঞানের প্রয়োজন। যেহেতু এই জ্ঞান বা শাস্ত্রটি(কাব্বালা) অনেক বছর যাবৎ গুপ্তাবস্থায় ছিল তাই এর বিরুদ্ধে অনেক ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও গুজব তৈরি হয়েছে, অনেক ভুল ধারনার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ কাব্বালার জ্ঞান হচ্ছে আমাদের জীবন, মহাবিশ্ব সম্পর্কিত 'বিজ্ঞান'। যেহেতু এটা হাজার বছর লুকায়িত ছিল, এজন্য অনেক গুজব লোকেরা ছড়িয়েছে এর ব্যপারে যে, এটা হচ্ছে রহস্যবাদ এবং সব ধরনের যাদুবিদ্যা। কাব্বালার জ্ঞান গোটা মহাবিশ্বের জ্ঞান ধারন করে,
যদি আমি বলি। বর্তমানে গোটা বিশ্বে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮০০ টা ফ্যাকাল্টিতে পড়ানো হচ্ছে। আমি নিজে এতে পিএইচডি করেছি, আমার অনেক ছাত্রও করছে। কাব্বালা আদৌ রেড ব্রেসলেট বা holy water কিংবা সেলিব্রেটি ঘরানার কিছু নয়,এটা ভুল ধারনা। বরং কাব্বালা হচ্ছে অত্যন্ত serious ও rigorous বিজ্ঞান। আমাদের অনেক সংগঠন রয়েছে, আমাদের বিভিন্ন ফিল্ডে অসংখ্য বিজ্ঞানী ও গবেষক রয়েছে। কাব্বালা আমাদের বলে, আমরা একক ল'(law) এর নিচে বাস করি, এবং সকল মানবজাতি একটা পরিবারের মত। 
এটা প্রকৃতিতে থাকা সব ধরনের law কে ব্যাখ্যা করে, এবং এটা বলে কিভাবে এসব আমরা কাজে লাগাতে পারি এবং কিভাবে আমাদের ও প্রকৃতির মাঝে Harmony তৈরি করা যায়। কাব্বালার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা সমস্ত বস্তুকে স্বচ্ছভাবে(transparent) দেখতে শুরু করি। আমরা মহাবিশ্বের সমস্ত ফোর্সকে দেখতে পাই, তারা কিরূপে কাজ করে ও মহাবিশ্বকে পরিচালনা করে। এটা অনেকটা Embroidery(নকশাকৃত) এর ছবির মত। যার একদিক দিয়ে আপনি শুধু এর ছবিটা দেখতে পান। এবং অপর দিক থেকে আপনি ঐ সুতাগুলোর বুনন দেখতে পাবেন যা এই নকশাময় ছবিটিকে তৈরি করে। তো, কাব্বালা যেটা করে যে,এটা আমাদেরকে ওইসব সুতার বুনন তথা প্রকৃতির ফোর্সফিল্ডগুলোকে বুঝতে সাহায্য করে যা পৃথিবীর সমস্ত ছবি(বস্তুর গড়ন) তৈরি করে। আর আমরা কিভাবে এই কাব্বালার জ্ঞানকে কাজে লাগাই? এটা এরূপে যে, ছবি গুলোকে সঠিকভাবে বাধার মাধ্যমে। কারন, আজ যা হচ্ছে, আমরা পৃথিবীর কোন একটা অংশে স্পর্শ করছি কিন্তু অপর দিক দিয়ে আমরা ভুল ফিডব্যাক পাচ্ছি যার কারন আমরা জানি না। 
এ কারনে কাব্বালা যখন পৃথিবীর(সবকিছুর বুননের) ছবি প্রকাশ করে, এটা প্রত্যেকটি ব্যক্তি (বা বস্তুকে) ছবির অপজিট দিকে সঠিক ও বাস্তবিকভাবে স্থাপন করতে সাহায্য করে এবং এভাবে প্রকৃত জীবনে সব কিছুকে শুদ্ধভাবে করতে সাহায্য করে।" 

 এদিকে ফিজিসিস্ট মিচিও কাকু এক সাক্ষাতকারে বলেন, "আমি একজন থিওরেটিকাল ফিজিসিস্ট এবং আমি বলতে পছন্দ করি যে, আমি এলবার্ট আইনস্টাইন, নিলস বোর এর মত জায়ান্টদের পদচিহ্ন অনুসরণ করি। আমি কোন দার্শনিক নই। যাহোক, আমি একটা বাস্তব বিষয়ের ব্যপারে বিমোহিত; স্ট্রিং থিওরি বা থিওরি অব এভরিথিং এর অনেক মৌলিক রহস্য কেমন যেন জোহার এবং কাব্বালারই প্রতিফলন। এটা বরং বিস্ময়কর যে, বর্তমান যুগের কিছু অত্যাধুনিক মহাকাশবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু যা আমরা পাই স্যাটেলাইট থেকে,যা আমরা পাই এটম স্ম্যাশার থেকে, যা আমরা পাই আমাদের ব্ল্যাকবোর্ড(এর ইক্যুয়েশন) থেকে, সেসব কেমন যেন জোহার এবং প্রাচীন কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রেরই প্রতিফলন।"

 সুতরাং আশা করি এখন আর কিছুই অস্পষ্ট রইলো না। কাব্বালা যাদুবিদ্যা নয়,বরং উহা বিজ্ঞান!! মানুষ অকারনে যাদুবিদ্যা বলে গুজব রটিয়েছে এতদিন! এ কারনেই আজ কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ গবেষনাকেন্দ্রের অফিশিয়াল ডকুমেন্টারিতে কাব্বালার ট্রি অব লাইফের সিম্বলকে দেখায়। কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট ফ্রেড এল্যান উল্ফ বলেন, "কাব্বালা হচ্ছে বিজ্ঞান, আপনি মুসলিম, ইহুদী,জেন্টাইল যাই হোন না কেন, এই কাব্বালা আপনাকে যেকোন ধরনের শিকলের শৃঙখল থেকে মুক্ত করবে।"
কাব্বালিস্ট ইহুদীদের সাথে আজকের ফিজিসিস্টরা বৈঠকও করে। সেই সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মধ্যে কাব্বালার জ্ঞান খুজে পান কাব্বালিস্ট র‍্যাবাইরা। এ কারনেই আমরা একে 'অপবিজ্ঞান' বলি। এসব যাদুশাস্ত্রের এক্সটেন্ডেড ফরম্যাট বৈ কিছু নয়।

 এই বিষয়গুলো তো আজকে নতুন নয়, বরং নিউটন কাব্বালিস্টিক কিতাব পাঠ করেই বিভিন্ন থিওরি রচনা করেছেন। সেটা তো মিচিও কাকুও স্বীকার করেছেন। সমস্যা হচ্ছে আজকের অধিকাংশ উলামাদের থেকে অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে তেমন কিছুই পাবেন না। কারন গোড়াতেই সমস্যা, এরা মু'তাজিলাদের সেই বিশ্বাসটি দ্বারা সজ্ঞানে বা অবচেতনে প্রভাবিত অথবা ইচ্ছা করেই গ্রহন করেছে। আজকের কথিত আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অধিকাংশ আলিমই যাদু বলতে জ্বীন জাতির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বলে বিশ্বাস করে। এবং মনে করে এর বাইরে কিছু নেই। এভাবে তারা নিষিদ্ধ শাস্ত্রের সীমানাকে সংকুচিত করে নিজেদেরকেই মহাভ্রান্তির দিকে ফেলেছে।
 আজকে মাওলানা আস্বেম ওমরদের(হাফিজাহুল্লাহু তা'য়ালা) মত আলিমদেরকেই শুধু পাবেন, যারা কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রের ব্যপারে উম্মাহকে সতর্ক করে। এ কারনে সালাফি লেবাসে যেজন্য মুরজিয়াদের ব্যপারে সতর্ক থাকতে হয় তেমনি নব্য মু'তাজিলা চিন্তাধারার ব্যপারেও সতর্ক থাকা জরুরী।
 একটা সময় ছিল যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য অবতীর্ণ হলে, কাফিররা বলতো, "এটা যাদু, আমরা একে মানি না।" যেমনটা আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ 
  وَلَمَّا جَاءهُمُ الْحَقُّ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ وَإِنَّا بِهِ كَافِرُونَ 
যখন সত্য তাদের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, এটা যাদু, আমরা একে মানি না।(৪৩:৩০)

 আজ বিজ্ঞানের মোড়কে আনা কাফিরদের সমস্ত অপবিদ্যা এবং তার উপর গজিয়ে ওঠা দর্শনগুলো যখন আমাদের সম্মুখে আনা হলো, তখন আমরাও বলি "এটা যাদু, আমরা একে মানি না।" আমরা বরং মানি ঐ সত্য জ্ঞান ও বানী সমূহকে, যা অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার নিকট থেকে। এবং যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল(সা) এবং সাহাবা(রাঃ)


__________________________________
 এ সংক্রান্ত আগের পোস্টঃ

https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_24.html

0 Comments:

Post a Comment