Monday, December 10, 2018

যাদুবিদ্যা সংক্রান্ত সুবিশাল ভ্রান্তি এবং নিওমু'তাযিলা চিন্তাধারা

IndraJala
যাদুবিদ্যা সম্পর্কে একটা সুবিশাল ভ্রান্তি মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে প্রচলিত আছে। আমি মনে করি এই ভুল ধারনা একদিক থেকে অনেক ভাল যা মানুষ এ অপবিদ্যার থেকে দূরে রাখে।কিন্তু খারাপ দিকটিও অত্যন্ত ব্যাপক। দুঃখের বিষয় যে এই জ্ঞানগত সীমাবদ্ধতা আলিমগনের মধ্যেও বিরাজমান। এটা এই যে, যাদু শয়তান এর দ্বারা হয়ে থাকে বা শয়তান সংঘটিত করে বা শয়তান জ্বীন এ কাজের জন্য দায়ী। যাদুবিদ্যার সমস্ত দায়ভার এভাবে শয়তানের উপর দেওয়ার পরে অন্য সবকিছুকে আর নিষিদ্ধ আর্টের আওতায় ফেলা হয় না। এজন্য আগের যুগের আলিমগনকে আলকেমিক্যাল প্রাকটিসকে যাদুবিদ্যায় অন্তর্ভুক্ত করতে দেখলেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে কিছুতেই যাদুশাস্ত্রের আওতায় ফেলতে দেখবেন না। সেটা পবিত্র বিজ্ঞান!

আপনি যদি কোন আলিমকে প্রশ্ন করেন কেন যাদুবিদ্যা নিষিদ্ধ ও কুফরি(?), তারা একরকমের মুখস্ত বলে দিবেন, যাদুকররা শয়তানের পূজা করে,শিরক করতে বাধ্য করে, আল্লাহ ও তার কালামকে অবমাননা করতে বলে যেন তারা তাদের বিভিন্ন দুঃসাধ্য কাজ গুলো তারা করে দেয়। এর বেশি তারা বলেন না। দেখে আসতে পারেনঃ https://islamqa.info/en/4010
তারা এমনকি স্পেলকেও 'শুধুমাত্র' শয়তান জ্বীনদের ইনভোকেশনের উপায় বলছে।
এরকম demoniac হস্তক্ষেপের সাথে যাদুকে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট করার জন্য যখন অধিকাংশ ভিন্ন মাজহাবের যাদুকে দেখা যায় তখন সাধারন মানুষ একে magick বলেই শনাক্ত করতে পারেনা।
অনেকে দেখি যাদুবিদ্যার দিকেই পা বাড়ায়, অথচ জানেই না যে এই আর্ট সর্সারি বৈ আর কিছু নয়।
.
তারা আরেকটা কথা বলেন যে, যাদু হচ্ছে শুধুই ধারনাগত পরিবর্তন ঘটায়, চোখকে সম্মোহিত করে,যেমনটা মূসা(আ) এর সামনে যাদুকররা করেছিল। তারা বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটানোকে অস্বীকার করতে চান। মনে রাখবেন মুতাযিলা সম্প্রদায় যাদুর অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না। বস্তুত,যাদু বাহ্যিকভাবেও পরিবর্তন ঘটায়। একারনেই ইহুদীরা আল্লাহর রাসূলকে(স) যাদু করে অসুস্থ করে ফেলেছিল। আজকের এক শ্রেনীর আলিমদের যাদুর সজ্ঞায়ন অনুযায়ী ইহুদীরা আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কে শয়তান জ্বীন ব্যবহার করে বিরক্ত করে বা শারীরিকভাবে কষ্ট দিয়ে অসুস্থ করবার কথা। কিছু দুর্বল হাদিসে যাদুর দ্বারা বস্তুর আকৃতির ফিজিক্যাল পরিবর্তন/ট্রান্সফর্মেশনও সম্ভব বলে পাওয়া যায়। বাবেল শহরে হারুত ও মারুত বিশেষ গুপ্ত নিষিদ্ধ বিদ্যা শেখাতো। তারা তো শয়তান জ্বীন ছিল না।
.
যাদুবিদ্যার অনেক শাখা বিদ্যমান এর মধ্যে একটা মাইনর ব্রাঞ্চ হচ্ছে জ্বীনের সাহায্যে অতিপ্রাকৃত বিষয় করে দেখানো(ডায়নামো)। একে বাহ্যিকভাবে যাদুর শাখায় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও মূল যাদু নয় যেমনটা হাতের চালাকি দ্বারাও ম্যাজিশিয়ানরা যাদুর খেলা দেখিয়ে থাকে। মূল যাদুবিদ্যা স্বতন্ত্র বিষয়। আর এতে শয়তানের তুলনায় মানুষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে। কিছু যাদু(i.e:chaos magick) আছে যাতে জ্বীনদেরও সাহায্য লাগে না। যাদু সংঘটন কাজটি করে যাদুকরের ইন্টেনশন,অভিপ্রায়। শয়তান জ্বীনরা যাদুকরদের বাহ্যিক নিরাপত্তা, দিকনির্দেশনার কাজটি সামান্যভাবে করে থাকে। এজন্য পাশ্চাত্যে যাদুকররা শয়তান জ্বীনদেরকে বলে স্পিরিট গাইড, দেবী,দেবতা, হায়ার বিং প্রভৃতি। যাদুবিদ্যায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিচিত্র শিরকি কাজের হুকুম উইজার্ডদের পালন করতে হয়। এমনকি বিকৃত যৌনাচার পর্যন্ত। এ সকল রিচুয়াল কোন ম্যাজিক্যাল শক্তি জেনারেট করে না, শুধুই শয়তানের সাথে সখ্যতার জন্য করা হয়। কিন্তু আজকে আমাদেরকে শেখানো হয় যাদুর উৎস ওটাই!! আজকের প্যাগানিজমের নবজাগরনে উইচ/মিস্টিকরা সবচেয়ে বেশি যে ধরনের হেক্স/যাদু করে থাকে তার অধিকাংশই curse ভিত্তিক। সেখানে শয়তানের ভূমিকা গৌন। এক্ষেত্রে এসকল সম্মানিত আলিমগন কি বলবেন জানতে আগ্রহী। ইন্টেনশন এর শক্তিকে যাদুবিদ্যায় ব্যবহারের বিষয়টি ঠিক ওইরকম যেমনটা মানুষের ঈর্ষান্বিত চোখের নজর(evil eye) লাগে। মানুষের কথার(স্পেল/ইনক্যান্টেশনের) যে প্রভাব রয়েছে সেটা নজর ও অভিশাপের বিষয়টি দ্বারা বোঝা যায়। হয়ত জানেন যে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীরা সুবিশাল গাছ কর্তন এর বিকল্প হিসেবে কার্স ব্যবহার করে।
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ، قَالَ كُنَّا نَرْقِي فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي ذَلِكَ فَقَالَ ‏ "‏ اعْرِضُوا عَلَىَّ رُقَاكُمْ لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ ‏"‏ ‏.‏

‘আওফ ইবনু মালিক আশজা’ঈ (রাঃ)

তিনি বলেন, আমরা জাহিলী (মূর্খতার) যুগে (বিভিন্ন) মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। এজন্যে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আবেদন করলাম-হে আল্লাহর রসূল! এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার নিকট উপস্থাপন করো, ঝাড়ফুঁকে কোন দোষ নেই-যদি তাতে কোন শিরক (জাতীয় কথা) না থাকে।
(ই.ফা. ৫৫৪৪, ই.সে. ৫৫৬৯)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬২৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
.
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ عُمَيْرٍ، مَوْلَى آبِي اللَّحْمِ قَالَ شَهِدْتُ خَيْبَرَ مَعَ سَادَتِي فَكَلَّمُوا فِيَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَعْلَمُوهُ أَنِّي مَمْلُوكٌ ‏.‏ قَالَ فَأَمَرَ بِي فَقُلِّدْتُ السَّيْفَ فَإِذَا أَنَا أَجُرُّهُ فَأَمَرَ لِي بِشَيْءٍ مِنْ خُرْثِيِّ الْمَتَاعِ وَعَرَضْتُ عَلَيْهِ رُقْيَةً كُنْتُ أَرْقِي بِهَا الْمَجَانِينَ فَأَمَرَنِي بِطَرْحِ بَعْضِهَا وَحَبْسِ بَعْضِهَا ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنْ لاَ يُسْهَمَ لِلْمَمْلُوكِ وَلَكِنْ يُرْضَخُ لَهُ بِشَيْءٍ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ ‏.‏

আবুল লাহমের মুক্তদাস উমাইর (রাঃ)

তিনি বলেন, আমি খাইবারের যুদ্ধে আমার মনিবদের সাথে অংশগ্রহন করি। তারা আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে কথা বললেন। তারা তাঁকে আরো জানান যে, আমি ক্রীতদাস। বর্ণনাকারী উমাইর (রাঃ) বলেন, আমার ব্যপারে তাঁর হুকুম মোতাবিক আমার গলায় তরবারি ঝুলিয়ে দেয়া হল। তরবারিটিকে আমি মাটিতে হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে হাটছিলাম। তিনি গনিমতের মধ্য হতে কিছু তৈজসপত্র আমাকে দিতে বললেন। আমি তাঁকে কয়েকটি মন্ত্র শুনালাম, যেগুলো দিয়ে আমি পাগলদের ঝাড়ফুঁক করতাম। তিনি এর কিছু বাদ দেয়ার এবং কিছু রাখার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন।

সহীহ্‌, সহীহ আবূ দাঊদ (২৪৪০)

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫৫৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
.
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عُمَارَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، أَنَّ خَالِدَةَ بِنْتَ أَنَسٍ أُمَّ بَنِي حَزْمٍ السَّاعِدِيَّةَ، جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَعَرَضَتْ عَلَيْهِ الرُّقَى فَأَمَرَهَا بِهَا ‏.‏

আনাস এর কন্যা উম্মু বানী হাযম খালিদাহ আস-সাইদিয়্যাহ (রাঃ)

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসেন এবং ঝাড়ফুঁক করার মন্ত্র পেশ করেন। তিনি তাকে তা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দেন। [৩৫১৪]

তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৫১৪
হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস
Source: ihadis.com
.
.
যাদুকরদের ইন্টেন্ট(অভিপ্রায়) কার্যক্ষম করাও সহজ বিষয় নয়। এর জন্য তাদের অনেক চর্চা করতে হয়। সৃষ্টিকর্তার থেকে সম্পূর্ন বিমুখ হয়ে সৃষ্টির কাছে নিজেকে বিলীন করতে হয়। অর্থাৎ কুফর করতেই হয়। সর্সারারদের আরেকটি হাতিয়ার হচ্ছে স্পেল বা মন্ত্র। মন্ত্রে শিরকি কথা থাকতেও পারে আবার শিরক বিহীনও হতে পারে। শিরক বিহীন স্পেল হলেও উহা নিষিদ্ধ। কথা কিভাবে বাহ্যিক পরিবেশে প্রভাব ফেলে সেটা বুঝাতে হলে 'occult physics' এর দিকে যেতে হবে, যেদিকে নিকোলা টেসলা হেটেছেন। এ জন্য প্রাচীন কাল থেকে প্রত্যেক যাদুকরই ছিল উচ্চস্তরের ন্যাচারাল ফিলসফার। আর এই ন্যাচারাল ফিলসফি থেকেই ফিজিক্স/ফিজিসিস্টদের উত্থান। কোয়ান্টাম ফিজিক্স সবচেয়ে এডভান্স থিওরেটিকাল মেকানিক্স।এজন্য আজকের শেষ যুগে পাশ্চাত্যের সর্সারারগন সবাই সর্বপ্রথম কোয়ান্টাম ফিজিক্স স্টাডি করেন।এবং অন্যদেরকেও সেদিকে আহব্বান করে। যারা বলতে চায় 'কোয়ান্টাম মিস্টিসিজম' দুঃখিত পার্টিকেল ফিজিক্স একদম পবিত্র নিষ্কলুষ তাদেরকে প্রশ্ন করি কেন আল্লাহর রাসূল(সা) এস্ট্রলজিক্যাল সাইন্সকে যাদুর শাখাভুক্ত বলেছেন?
.
শায়খ বিন বাজ বলেন, যাদুর বিপরীতে রয়েছে তাওয়াক্কুল। অর্থাৎ যাদুকররা কখনো আল্লাহর উপর ভরসা করে না, তেমনটা চিন্তাও করে না। বরং তারা গুপ্ত Natural law গুলোকে নিজেদের হাতে তুলে নিতে চায়। যখন তারা অন্তর দ্বারা এবং মন্ত্র দ্বারা ক্ষতিসাধন/লাভবান হবার অভিপ্রায় করে তখন সংশ্লিষ্ট বস্তু তার স্রষ্টার কাছে ঘটবার অনুমতি প্রার্থনা করে। এজন্যই সমস্ত যাদু-ই নিস্ফল যদি আল্লাহর অনুমতি না প্রদান করেন। এজন্য আল্লাহ বলেন, " وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ " [২:১০২]
.
মধ্যযুগে মিস্টিকরা এটা বিশ্বাস করত যে সমস্ত যাদুর ফলাফল আল্লাহর ইচ্ছাধীন, কিন্তু আজকে একেও অস্বীকার করে সর্সারাররা। কাফির যাদুকররা যেমনি নিজে থেকে স্বার্থ হাসিলের প্রচেষ্টা করে, তেমনি আমাদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা দু'আ/প্রার্থনা/সাহায্য চাওয়াকে(ডিপেন্ডেন্সি) পছন্দ করেন। ব্যপারটি এরূপ যে দুই ব্যক্তির একজন অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে খায়, অপরজন বৈধ পন্থায় উপার্জন করে খায়। আর আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে সেটা না দিলেও তার মাঝে কল্যাণ নিহিত থাকে,যদিও আমরা তা বুঝি না।
.
আল্লাহ পছন্দ করেন তার উপর তাওয়াক্কুলকারীদেরকে এজন্য দেখা যায়ঃ ইমরান (রাঃ) বর্ননা করেছেন,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ الْبَاهِلِيُّ، حَدَّثَنَا الْمُعْتَمِرُ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، - يَعْنِي ابْنَ سِيرِينَ - قَالَ حَدَّثَنِي عِمْرَانُ، قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا وَمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏"‏ هُمُ الَّذِينَ لاَ يَكْتَوُونَ وَلاَ يَسْتَرْقُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ ‏"‏ ‏.‏ فَقَامَ عُكَّاشَةُ فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ أَنْتَ مِنْهُمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ ‏"‏ ‏.‏
.
আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, তারা কারা, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)? তিনি বললেনঃ যারা ক্ষতস্থানে লোহা পুড়ে লাগায় না এবং (জাহিলী যুগের ন্যায়) ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্রের দ্বারা চিকিৎসা কামনা করে না বরং তারা আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করে। এ সময় ‘উক্কাশাহ্‌ (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নাবী! আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, তিনি আমাকেও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘উক্কাশাহ্ তোমার আগেই সে দলভুক্ত হয়ে গেছে। (ই.ফা. ৪১৭; ই.সে. ৪৩১)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪১২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
.
সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী সেসমস্ত কথামালা, যা আল্লাহর রাসূল(সা) শিখিয়েছেন এবং যে সমস্ত বানী দুনিয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা অবতীর্ণ করেছেন। জগতের নীতিগুলো ম্যানিপুলেট করার জন্য মানুষ ও শয়তানের বানানো বুলি বা মন্ত্রের তুলনায় জগৎসমূহের মালিকের শেখানো কথাগুলো অধিকতর এবং সর্বাধিক শক্তিশালী। এবং বিজয়ী।
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي السَّفَرِ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ خَارِجَةَ بْنِ الصَّلْتِ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّهُ مَرَّ بِقَوْمٍ فَأَتَوْهُ فَقَالُوا إِنَّكَ جِئْتَ مِنْ عِنْدِ هَذَا الرَّجُلِ بِخَيْرٍ فَارْقِ لَنَا هَذَا الرَّجُلَ ‏.‏ فَأَتَوْهُ بِرَجُلٍ مَعْتُوهٍ فِي الْقُيُودِ فَرَقَاهُ بِأُمِّ الْقُرْآنِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ غُدْوَةً وَعَشِيَّةً كُلَّمَا خَتَمَهَا جَمَعَ بُزَاقَهُ ثُمَّ تَفَلَ فَكَأَنَّمَا أُنْشِطَ مِنْ عِقَالٍ فَأَعْطُوهُ شَيْئًا فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَهُ لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كُلْ فَلَعَمْرِي لَمَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةٍ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةٍ حَقٍّ ‏"‏ ‏.

খারিজাহ ইবনুস সাল্‌ত (রহঃ) হতে তার চাচার সূত্র

তিনি একটি জনপদ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় সেখানকার কিছু লোক তার কাছে এসে বললো, আপনি এই ব্যক্তির [রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] কাছ থেকে কল্যাণ নিয়ে এসেছেন। কাজেই আমাদের এই ব্যক্তিকে একটু ঝাড়ফুঁক করে দিন। এ বলে তারা একটি পাগলকে বাঁধা অবস্থায় তার কাছে আনলো। তিনি তিন দিন সকাল-বিকাল সূরাহ ফাতিহা পড়ে তাকে ঝাড়ফুঁক করলেন। তিনি যখনই পাঠ শেষ করতেন তখন থুথু জমা করে তার শরীরে নিক্ষেপ করতেন। অতঃপর লোকটি যেন বন্ধনমুক্ত হয়ে গেলো। তারা তাকে কিছু বিনিময় দিলো। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে ঘটনাটি জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যা পেয়েছো তা খাও। আমার জীবনের শপথ! কিছু লোক তো বাতিল মন্ত্র দ্বারা উপার্জন করে খায়। আর তুমি উপার্জন করেছো সত্য মন্ত্র দ্বারা।

সহীহঃ সহীহাহ্ (২০২৭)

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৪২০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
.
وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه أَنَّهُ قَالَ لِثَابِتٍ رَحِمَهُ اللهُ: أَلاَ أَرْقِيكَ بِرُقْيَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ: بَلَى، قَالَ: اَللهم رَبَّ النَّاسِ، مُذْهِبَ البَأسِ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شَافِيَ إِلاَّ أنْتَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَماً . رواه البخاري

আনাস (রাঃ)

তিনি সাবেত (রাহিমাহুল্লাহ)কে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মন্ত্র দ্বারা ঝাড়ফুঁক করব না?’ সাবেত বললেন, ‘অবশ্যই।’ আনাস (রাঃ) এই দো‘আ পড়লেন, ‘‘আল্লাহুম্মা রাব্বান্না-স, মুযহিবাল বা’স, ইশফি আন্তাশ শা-ফী, লা শা-ফিয়া ইল্লা আন্ত্, শিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাক্বামা।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক! তুমি কষ্ট দূর কর এবং আরোগ্য দান কর। (যেহেতু) তুমি রোগ আরোগ্যকারী। তুমি ছাড়া আরোগ্যকারী আর কেউ নেই। তুমি এমনভাবে রোগ নিরাময় কর, যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৯০৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
.
কাফির যাদুকরদের মধ্যে সাইকিক হিলাররা(physic healers) যেসব স্পেল ব্যবহার করে তার অধিকাংশই অথর্ব এবং শয়তানের আনুগত্যের একটা মাধ্যম মাত্র।

حَدَّثَنَا أَيُّوبُ بْنُ مُحَمَّدٍ الرَّقِّيُّ، حَدَّثَنَا مُعَمَّرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بِشْرٍ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ الْجَزَّارِ، عَنِ ابْنِ أُخْتِ، زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ زَيْنَبَ، قَالَتْ كَانَتْ عَجُوزٌ تَدْخُلُ عَلَيْنَا تَرْقِي مِنَ الْحُمْرَةِ وَكَانَ لَنَا سَرِيرٌ طَوِيلُ الْقَوَائِمِ وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ إِذَا دَخَلَ تَنَحْنَحَ وَصَوَّتَ فَدَخَلَ يَوْمًا فَلَمَّا سَمِعَتْ صَوْتَهُ احْتَجَبَتْ مِنْهُ فَجَاءَ فَجَلَسَ إِلَى جَانِبِي فَمَسَّنِي فَوَجَدَ مَسَّ خَيْطٍ فَقَالَ مَا هَذَا فَقُلْتُ رُقًى لِي فِيهِ مِنَ الْحُمْرَةِ فَجَذَبَهُ وَقَطَعَهُ فَرَمَى بِهِ وَقَالَ لَقَدْ أَصْبَحَ آلُ عَبْدِ اللَّهِ أَغْنِيَاءَ عَنِ الشِّرْكِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏"‏ إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ ‏"‏ ‏.‏ قُلْتُ فَإِنِّي خَرَجْتُ يَوْمًا فَأَبْصَرَنِي فُلاَنٌ فَدَمَعَتْ عَيْنِي الَّتِي تَلِيهِ فَإِذَا رَقَيْتُهَا سَكَنَتْ دَمْعَتُهَا وَإِذَا تَرَكْتُهَا دَمَعَتْ ‏.‏ قَالَ ذَاكِ الشَّيْطَانُ إِذَا أَطَعْتِيهِ تَرَكَكِ وَإِذَا عَصَيْتِيهِ طَعَنَ بِإِصْبَعِهِ فِي عَيْنِكِ وَلَكِنْ لَوْ فَعَلْتِ كَمَا فَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَانَ خَيْرًا لَكِ وَأَجْدَرَ أَنْ تَشْفِينَ تَنْضَحِينَ فِي عَيْنِكِ الْمَاءَ وَتَقُولِينَ ‏"‏ أَذْهِبِ الْبَاسْ رَبَّ النَّاسْ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا ‏"‏ ‏.‏

যায়নাব (রাঃ) বর্ননা করেন,

এক বৃদ্ধা আমাদের এখানে আসতো এবং সে চর্মপ্রদাহের ঝাড়ফুঁক করতো। আমাদের একটি লম্বা পা-বিশিষ্ট খাট ছিল। আব্দুল্লাহ (রাঃ) ঘরে প্রবেশের সময় সশব্দে কাশি দিতেন। একদিন তিনি আমার নিকট প্রবেশ করলেন। সে তার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে একটু আড়াল হলো। তিনি এসে আমার পাশে বসলেন এবং আমাকে স্পর্শ করলে এক গাছি সুতার স্পর্শ পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? আমি বললাম, চর্মপ্রদাহের জন্য সূতা পড়া বেঁধেছি। তিনি সেটা আমার গলা থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেললেন এবং তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, আবদুল্লাহর পরিবার শিরকমুক্ত হলো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ “মন্ত্র, রক্ষাকবচ, গিটযুক্ত মন্ত্রপূত সূতা হলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত”। আমি বললাম, আমি একদিন বাইরে যাচ্ছিলাম, তখন অমুক লোক আমাকে দেখে ফেললো। আমার যে চোখের দৃষ্টি তার উপর পড়লো তা দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো। আমি তার মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলে তা থেকে পানি ঝরা বন্ধ হল এবং মন্ত্র পড়া বন্ধ করলেই আবার পানি পড়তে লাগলো। তিনি বলেন, এটা শয়তানের কাজ। তুমি শয়তানের আনুগত্য করলে সে তোমাকে রেহাই দেয় এবং তার আনুগত্য না করলে সে তোমার চোখে তার আঙ্গুলের খোঁচা মারে। কিন্তু তুমি যদি তাই করতে, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন, তবে তা তোমার জন্য উপকারী হতো এবং আরোগ্য লাভেও অধিক সহায়ক হতো। তুমি নিম্নোক্ত দুআ’ পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে তা তোমার চোখে ছিটিয়ে দাওঃ “আযহিবিল বা’স রব্বান নাস, ইশফি আনতাশ শাফী, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামান” (হে মানুষের প্রভু! কষ্ট দুর করে দাও, আরোগ্য দান করো, তুমিই আরোগ্য দানকারী, তোমার আরোগ্যদান ছাড়া আরোগ্য লাভ করা যায় না, এমনভাবে আরোগ্য দান করো যা কোন রোগকে ছাড়ে না)।

তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৫৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
.
যাদুবিদ্যাকে ইমাম রাযি(রঃ) এর আটভাগ অনেকটাই শুদ্ধ। তবে তার অনেক কথা বিতর্কিত। এসকল বিষয় ইমাম ইবনে কাসির(র) এবং ইমাম আবু জাফর ইবনে জারির তাবারি(রহ.) এর তাফসীর দেখতে পারেন।
.
পরবর্তী পোস্টে 'অকাল্ট ফিজিক্স এবং ননডুয়ালিজমের' উপর কিছু লিখবার ইচ্ছা আছে।ইনশাআল্লাহ

0 Comments:

Post a Comment