Monday, December 10, 2018

কোয়ান্টাম ম্যাথড


আমরা অনেকে মনে করি বাংলাদেশের প্রচলিত কোয়ান্টাম ম্যাথড হয়ত কোয়ান্টাম ফিজিক্সের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসায় করছে। আমরা মনে করি এর সাথে সাইন্সের এই এডভান্স মেকানিক্সের কোন সম্পর্ক নেই। যারা এরকমটা ভাবেন, তারা ঐভাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যপারে জানেন না যেসব বিজ্ঞানীদের হাত ধরে এর আগমন এবং যাদের দ্বারা এই ফিজিক্সের প্রতিষ্ঠা। তারা এর অরিজিনের ব্যপারে একদমই অজ্ঞ। অন্ধভাবে একে পবিত্র জ্ঞান হিসেবেই শ্রদ্ধা করে। এমনও দেখেছি এদের কতক ইসলামের সাথেও এই ফিজিক্সকে কম্প্যাটিবল করতে চেষ্টা করে। 

কোয়ান্টাম ম্যাথড এসেছে কোয়ান্টাম মিস্টিসিজম থেকে। https/en.m.wikipedia.org/wiki/Quantum_mysticism 

যাহোক, আজ কোয়ান্টাম ম্যাথড তথা কোয়ান্টাম মিস্টিসিজমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ধারনা সম্পর্কে লিখব। 

সাব এটমিক লেভেলে সবকিছুই এনার্জি ফ্রিকোয়েন্সি আর ভাইব্রেশন।সব কিছুই ননলোকাল। ম্যাটারের অস্তিত্ব নেই।কোয়ান্টামের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তাই বলতেন।এই কন্সেপ্ট এসেছে বৌদ্ধ ও হিন্দু শাস্ত্র থেকে যে রিয়েলিটি হলো মায়া বা ইল্যুশন। এজন্য সাবএটমিক লেভেলে সবাই এক(ননলোকাল)। মিস্টিকদের ভাষায় সব কিছু এক ভালবাসার ডোরে বাধা। এজন্য আধ্যাত্মবাদীরা প্রশ্ন তোলে 'এক অস্তিত্বের মধ্যে কেন এত সংঘাত'(?)! 

এজন্য সংঘাতের মূলে থাকা সকল ধর্ম বিশ্বাসের শিকল ভেঙ্গে ইনফিনিট কনসাসনেসের(চেতনার) সাথে নিজেকে একাকার করে প্রকৃতির অপার ভালবাসা অনুভব করতে ধ্যান ও যোগ সাধনা করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। হিউম্যান কনসাসনেস এর মৃত্যু নেই,মৃত্যুর পরে পুনর্জন্ম রিইনকারনেশন হয়। 

কোয়ান্টাম তত্ত্বানুযায়ী সৃষ্টি ও স্রষ্টার অস্তিত্ব এক। আমরাই ঈশ্বর। রিয়েলিটির কোক্রিয়েটর আমরা এবং কস্মিক কনসাসনেস নিজেই। 'আল্লাহ' বলে বাইরের কেউ নেই। সোজা কথা- সর্বেশ্বরবাদ বা প্যান্থেইজম। এজন্য কোয়ান্টাম ম্যাথডে ট্রেন্সেন্ডেন্টাল ধ্যানের সময় নিজেকে অসীম শক্তির আধার ভাবতে বলা হয়। ধ্যানের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। একে বলা হয় অল্টারড স্টেট অব কনসাসনেস। পশ্চিমে বিভিন্ন সাইকাডেলিক ড্রাগও এই স্বর্গীয় অনুভূতির জন্য ব্যবহার করা হয়। চেতনার এই পর্যায়ে মানুষ ভিন্ন ডাইমেনশনে ভ্রমন করে, সেখানে স্পিরিট বিং(ইসলামে শয়তান জ্বীন বলে) দের সাক্ষাৎ ও অশির্বাদও গ্রহন করে ইয়োগীরা। 
কোয়ান্টাম ম্যাথডের মহাজাতক শহীদ আল বোখারী এই স্পিরিট এন্টিটি তথা শয়তানকে নাম দিয়েছে 'অন্তগুরু'। তাদের প্রকাশিত সাফল্যের চাবিকাঠি বইতে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে এই উপদেষ্টা আধ্যাত্মিক গুরুর সাথে সাক্ষাৎ লাভের বিষয় নিয়ে। নিচে স্ক্রিনশটে পড়ুনঃ



অবাক হই এটা দেখে যে এরা শয়তানকে গুরু বানায় আর মুসলিমরা এরই দর্শন লাভের জন্য জ্যোতিষী যাদুকরদের কাছে যায়।

সার্নের ফিজিসিস্ট জন হাগেলিনও বর্তমানে এই মতাদর্শকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ এবং পালন করেন। তিনি এখন মহাঋষি মহাযোগী প্রতিষ্ঠানে ব্যস্ত। 

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় অকাল্ট(যাদুবিদ্যা) মতবাদ বা মিস্টিসিজমকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে । বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে, কোথাও রেইকি, কোথাও ইয়োগা, কোথাও কোয়ান্টাম ম্যাথড, কোথাও ইস্কন, আনন্দমর্গ,ব্রহ্মকুমারী,নিউএজ ইত্যাদি। একটি গ্লোবাল ওয়ান ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন তৈরি করার মিশন নিয়ে পথ চলা। পুরাতন ধর্মগুলোকে শুধুমাত্র টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেমনঃ খ্রিষ্টান, ইসলাম। বিভিন্ন সংগঠন ইসলামিক চিন্তাধারাকে ব্যবহার করছে টোপ হিসেবে, যাতে সরল সোজা মুসলিমরা না জেনেই ধ্যান যোগের ধর্মে পা বাড়ায়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বা কোয়ান্টাম ম্যাথডে সেকাজটাই নিপুনতার সাথে করছে মহাজাতকরা। তারা ইসলামিক টার্ম ব্যবহার করে, যাতে মুসলিমরা ভাবে এসব বৈধ বা হালাল চর্চা। 

প্রাচীনকালে এই ধ্যান-যোগের আধ্যাত্মিকতার সর্বেশ্বেরবাদী দর্শন গুলো যাদুকরদের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। খ্রিষ্টান সভ্যতা একে প্যাগানিজম বলত। ইসলামেও একই ভাবে দেখা হত। আজ এই গুপ্তবাদই গ্লোবাল রিলিজিয়নে শিফট করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই নতুন দ্বীনকে প্রমোটিংএর মহান দায়িত্ব পালন করছে 'কোয়ান্টাম ম্যাথড, বা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন '। উচ্চপর্যায়ের মহাজাতক এবং প্র‍্যাক্টিশনারগন এই ব্যপারগুলো ভালভাবেই জানেন। তারা ভাল করেই জানেন কিভাবে ইসলামকে ইউজ করে মুসলিমদেরকে অকাল্টিজমের দিকে ধাবিত করতে স্লো ইঞ্জেকশন দিতে হবে। তারা কখনই ভেতরের কথা স্বীকার করবে না নবাগত কোন ইয়োগীর কাছে।
আজ মেডিটেশনের বিপ্লব এজন্যই চলছে। 

 কোয়ান্টাম ম্যাথড ও অন্যান্য আধ্যাত্মবাদী সংগঠন এবং ম্যাজিক্যাল ট্রেডিশনগুলোর প্রধান আকিদাগত ভিত্তি হচ্ছে সর্বেশ্বরবাদ বা Monism। এটা এসেছে ব্যবিলনিয়ান এস্ট্রোলজি। এ্যাস্ট্রোলজি অকাল্টিজমেরই একটা মৌলিক শাখা অর্থাৎ যদুবিদ্যারই অংশ। এ কথা আল্লাহর রাসূলও(সাঃ) বলেছেনঃ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُسَدَّدٌ، - الْمَعْنَى - قَالاَ حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ الأَخْنَسِ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَادَ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর জ্ঞান শিক্ষা করলো সে যাদু বিদ্যার একটা শাখা শিক্ষা করলো। তা যতো বৃদ্ধি পাবে যাদুবিদ্যাও ততো বাড়বে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৯০৫
হাদিসের মান: হাসান হাদিস

এজন্য আপনি যদি একটু খোজ নেন, আমাদের দেশের কোয়ান্টাম ম্যাথডের প্রতিষ্ঠাতার অতীতকে জ্যোতিষ শাস্ত্রের চর্চাকারীদের একজন হিসেবেও পাবেন। ৯০ দশকের পত্রপত্রিকায় রাশিফল ও অন্যান্য এস্ট্রোলজিক্যাল বিষয় নিয়ে লিখতেন। আজ তিনি যা প্রচার করছেন,সেটা এই জুডিও ব্যবিলনিয়ান এস্ট্রলজির উদ্ভুত এ্যাডভান্স সংস্করণঃ এ্যাস্ট্রোথিওলজি। তিনি যে অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউয়ের প্রচার করছে সেটা তার ওয়েবসাইটেও আছেঃ


পরিশেষে শুধু এটাই বলব যে, যে ব্যক্তি কোয়ান্টাম ম্যাথড বা কোয়ান্টাম অকাল্টিজমের দিকে পা বাড়ায়, সে বস্তুত পৌত্তলিকতার চেয়েও নিকৃষ্ট কোন ধর্মের দিকে পা বাড়ায়। আর এটা এমন কিছু যা খ্রিষ্টান বা ইহুদীদের চেয়েও নিকৃষ্ট। এই ব্যাপারটিই খুলে খুলে ঐতিহাসিক দলিল সন্নিবেশ করে ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হচ্ছে এবং হবে এই আর্টিকেল সিরিজেঃ 
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html

ইনশাআল্লাহ।      


(সংক্ষেপিত)

0 Comments:

Post a Comment