বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?
The Occult Origins of Mainstream Physics and Astronomy
পর্বঃ ১৪
আমরা ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের আসল চেহারার কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছি। আজকের এ পর্বটি অপবিজ্ঞানের অপর এক উৎপত্তিস্থল এবং সেখান থেকে ক্রমবিকাশকে স্পষ্ট করবে। আর সেটা হচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় যাদুশাস্ত্রভিত্তিক দর্শন, সহজ ভাষায় হিন্দু-বৌদ্ধ-বেদান্তবাদ ইত্যাদি ভারতীয় দর্শন বা 'ধর্মচক্র'(wheel of dharma)। এজন্য সবার প্রথমে আবারো আর্যদের কাছে ফিরে যেতে হবে। কেননা হিন্দুদের বেদ শাস্ত্রের অরিজিন্স আর্যদের থেকে। আমরা ৩নং পর্বে এ নিয়ে সামান্য উল্লেখ করলেও আজ আবারো সামান্য উল্লেখ করছি।
ভারতের মাটিতে আর্যরা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। ইতিহাস অনুযায়ী তাদের আগমন ছিল অনেকটা সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের মত। তারা সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে উন্নত ছিল। রণকৌশলগত দিক দিয়েও উচু স্থানে ছিল, যার জন্য ভারতীয় আদিবাসীরা দমন পীড়নে সফল হয়নি, বরং আর্যদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। আর্যদের ধর্মশাস্ত্রের নাম বেদ। তারা সাধারণ ভারতবাসীদের তুলনায় শারীরিক ও জ্ঞানগত দিক দিয়ে উন্নত হওয়ায় তাদের মধ্যে বর্নবাদ বা বর্ণবৈষম্যের মানসিকতা চলে এসেছিল। এরা সাধারণ মানুষদের অনার্য বলত। তাদের মুখের ভাষা ছিল সংস্কৃত।
এবার প্রশ্ন আসে, আর্যদের আদি নিবাস কোথায়! ইতিহাসবিদগন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মত দিয়েছেন। তারা ছিল বাবেল শহরের দেশ ইরাকের পাশের দেশ পারস্যের বাসিন্দা। ভাষাবিদদের মতে আজকের ইরান শব্দটি আরিয়ান(আর্য) শব্দ থেকে রাখা হয়েছে। পারস্যের জন্দভেস্ত শাস্ত্র এবং বেদের ভাষাগত সাদৃশ্য এমনকি পূজিত দেবতা-অপদেবতাদের সাদৃশ্য প্রমাণ করে আর্যরা পারস্যে হয়ে ভারতবর্ষে আগমন করে। জেন্দভেস্তায় বরুণকে দেবরাজ ও ইন্দ্রকে মন্দ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ঋগবেদে বরুণ জল ও মেঘের দেবতা আর ইন্দ্রকে দেবরাজ। রামের মিত্র গুহক চন্ডাল (Chaldea) বংশ সম্ভূত।
আচার্য জগদীশ চন্দ্রের মতে, ভারতীয় আর্যগণ ভারতে আসার পূর্বে কৃষ্ণ সমুদ্রের তীরে এবং আর্মেনীয়ায় বাস করতেন এবং তাঁরাই প্রাচীন ব্যবলিন, মিশরিয় সভ্যতার সৃষ্টি করেছিলেন। ঋগ্বেদের ভৌগলিক বিবরণে নির্ভর করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, আর্যগণ শুধু যে পন্টাশ ও আর্মেনীয়া অঞ্চলে বাস করতেন তা নয়, ককেশিয়া এশিয়া-মাইনর ও ক্রীট দ্বীপেও তাঁদের বাস ছিল। বেদে যেরূপ বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে, তা ঐ সকল স্থানের সঙ্গে যথাযথ মিলে গেছে। এমন অনেক নগর নদী ও পর্বতের উল্লেখ দেখা যায়, যা ভারতে নাই, অথচ ঐ সকল প্রদেশ এখনও অবিকৃত নামে পরিচিত আছে। আর্যগণ কখন ভারতে আসেন, এই প্রসঙ্গে জগদীশ চন্দ্র বলেন,শুধু যে বেদ লিখিত হওয়ার পরে, আর্যরা ভারতে আসেন , এমন নয়, এমন কি, রামায়ণ মহাভারত বর্ণিত যুদ্ধও আর্য জাতির ভারতে আসবার পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল। কুরুপান্ডবদের ও রামরাবণের যুদ্ধ ভারতীয় ঘটনা নয়। যবদ্বীপ বা বলী দ্বীপের সঙ্গেও এ সমস্ত ঘটনার কোন সম্বন্ধ নাই। বুদ্ধদেবের জন্মের কিছু পূর্বে আর্যগণ ভারতে আসেন। এই জন্যেই ভারতে এমন কিছু Archaeological প্রমাণ বর্তমান নাই যার দ্বারা মহাভারত ও রামায়ণে বর্ণিত আর্যকীর্তি সপ্রমাণ হতে পারে । প্রতীচ্য পন্ডিতগণ এইজন্যই বলেন যে, মহাভারত ও রামায়ণে ঐতিহাসিক সত্য নাই। বুদ্ধের একজন শিক্ষকের নাম ছিল আলার কালাম। এটি ব্যবিলনীয় নাম। এক ব্যবিলনীয় রাজাও এই নামে পরিচিত ছিলেন, বুদ্ধের সময় পর্যন্তও আর্যগণ পূর্ব প্রথায় নামাকরণ করতেন।
বেদ বর্ণিত ভৌগলিক বৃত্তান্তের একটি উদাহারণ এই যে, রাজা সুদাসকে ‘পৈজবনী’ বলা হয়েছে। তিনি (Pizvon) ‘পিজবনে’ রাজত্ব করতেন। এই Pizvon ইউফ্রেটিস(ফোরাত) নদীর তীরে অবস্থিত। তুর্বস, শিমু, কবশ, পুরু, ভেদ, সম্বর, ভালান, আলিনস, শিব, অজ, সিগ্রু ও যক্ষেরা এই Pizvon এর উত্তরে বাস করতেন।সোমসুষ্ম, হরিকষি, চমুর, বিপাসি-আার্জিকীয়, ক্রুম, কুভ, তৃষ্টমা, সিন্ধু বিধরণী, এই সকল স্থান কৃষ্ণ সমুদ্রের তীরবর্তী প্রদেশে পাওয়া যাচ্ছে। ভারতে এই সকল নামে অভিহিত কোনও স্থানের উল্লেখ বা অস্তিত্ব নাই। কেউ কেউ এমনও বলছেন যে কশ্যপ মুণির নামানুসারে কাস্পিয়ান হ্রদের নাম করণ করা হয়েছে। কয়েকজন পশ্চিমা নৃবিজ্ঞানিও এ মতের সমর্থন করেছেন। এমতবাদ কে আউট অব ইন্ডিয়া(Out of India) হিসাবে অভিহিত করা হয়।
ভাষা ও ইতিহাসবিদগন আরেকটি মত পোষণ করেন যে,আর্যদের আদি নিবাস উড়াল পর্বত সংলগ্ন তৃনভূমি যার জন্য সাদৃশ্যতার জন্য ইউরোপীয় Slavic ভাষাকে ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করে। পাশ্চাত্যে আর্যদের নিয়ে আগ্রহ বাড়তে শুরু করে ১৯ শতকে। ১৭৮৩ সালে উইলিয়াম জন্স সংস্কৃত এবং গ্রীক ল্যাটিন কেল্টিক জার্মান ভাষার মধ্যে সাদৃশ্য খুজে পান, এরপরে Franz Bopp দেখান যে আভেস্ত, আর্মেনীয়, স্লাভিক ভাষাগুলোর সাথেও সম্পর্ক রয়েছে,এ কথা আসলেই সত্য যে ব্যবিলনীয়ান প্রাচীন রাজাবাদশাহদের নামগুলো কেমন যেন হিন্দুয়ানি শোনায়। ভাষাবিদগনের এই মতামত আর্যদের ব্যাপারে এরকম ভাবায় যে, এরা বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা জাতি। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে এরা ভারতে প্রবেশ করে। সেইসাথে আরেকটি ধারণার উন্মেষ ঘটায়। অনেক দার্শনিকরা প্রচার করা শুরু করে, এই আর্যরা ছিল প্লেটোর বলা সেই মিথিক্যাল মহাদেশ আটলান্টিস থেকে বেচে আসা অবশিষ্ট জনগণ যারা ইউরোপ, এশিয়ার ইরাক - পারস্য সংলগ্ন অঞ্চল এবং ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। ফলে নর্ডিক, জার্মানিক, পারসিয়ান ও ভারতীয়দের রক্তে আর্যদের রক্ত মিশে যায় বলে প্রচার হয়।[১]
আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করেন রাশিয়ান মিস্টিক ও অকাল্টিস্ট ম্যাডাম হেলেনা পেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কি। তিনি বিবর্তনবাদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে মূলজাতি(রুটরেস) হিসেবে আর্যজাতির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অনেক কিছু লেখেন যা থেকে জার্মানির এডলফ হিটলার গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে তার মধ্যে Aryan Supremacy 'র ধারনা চলে আসে। ফলে উগ্র অকাল্ট বিশ্বাসে বশবর্তী হয়ে প্রচণ্ড জাতিবিদ্বেষ নিয়ে ইহুদী গনহত্যা শুরু করে। হিটলার এত বেশি আর্য শ্রেষ্ঠত্বের দ্বারা প্রভাবিত ছিল যে, সে বিজ্ঞানী গবেষকদের পথে নামিয়ে সাধারন মানুষের মুখের আকার পরিমাপ করে আর্য বংশধরদের খুঁজতেন। আর্য অনার্য পার্থক্য করতেন। এই অদ্ভুত কাজের ভিডিও ফুটেজ ধারন করা হয়েছিল যা আজও টিকে আছে।
আর্যদের আদি নিবাসের ব্যপারে সত্য যাই হোক, এ ব্যপারে অন্তত বলা যায় যে আর্যরা ভারতের আদিবাসী নয়। অর্থাৎ বেদ-সংস্কৃত এগুলো বিদেশী ভাষা-সাহিত্য ও শাস্ত্র। অবশ্য আজকের হিন্দুদের একদল প্রমাণের চেষ্টা করে যে আর্যরা ভারতেরই প্রাচীন আদিবাসী,তারা অনুপ্রবেশকারী দস্যু নয়, এর দ্বারা তারা প্রমাণ করতে চায় যে, আর্য-হিন্দুত্ববাদ এগুলো ভারতেরই নিজস্ব জিনিস, তারাই সবচেয়ে সনাতন এবং উন্নত সভ্যতা।
ইরাক সিরিয়ার অন্তর্গত ফোরাত নদীর ব্যপারে বৈদিক শাস্ত্রের উল্লেখ,বুদ্ধের শিক্ষকের ব্যবিলনীয়ান নাম, পারস্যের ভাষা ধর্ম সাহিত্যের সাদৃশ্যতা, ইরান থেকে আগমনের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রভৃতি প্রমাণ করে, কোন এক সময়ে আক্কাদিয়ান-অ্যাসিরিয়ান-ব্যবিলনীয়ান সম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রনে আর্যরা ছিল, তখনই বেদ রচিত হয়। ব্যবিলনীয়ান সম্রাট বখতে নাসরই সারা পৃথিবীকে শাসন করেন। এর আগেও এরকম totalitarian one world order এর ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। অর্থাৎ বৈদিক শাস্ত্রের অরিজিনস বাবেল শহর কিংবা তার আশপাশ থেকে ভারতে যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই বেদ ব্যবিলনীয়ান রহস্যবাদী জ্ঞান বিজ্ঞান দ্বারা সমৃদ্ধ হবে, যা আজ ভারতবর্ষে পরম পূজনীয় বিশুদ্ধ জ্ঞান(sacred knowledge)। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীরা আমাদের আশপাশে মিলেমিশে থাকার জন্য আমরা ব্রাহ্মান্যবাদী শাস্ত্র গুলোর দিকে কখনো বাঁকাচোখে তাকাই না,এজন্য সেসবের ব্যপারে কারও তেমন মাথাব্যাথ্যা নেই। অথচ হিন্দুত্ববাদী শাস্ত্রগুলো গভীরভাবে দেখলে দেখবেন, এসব যাবতীয় নিষিদ্ধ বিদ্যা দ্বারা সমৃদ্ধ কিছু শাস্ত্র। এতে তন্ত্র মন্ত্রের শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবিলনীয়ান ম্যাজাইদের থেকে আসা জ্যোতিষশাস্ত্র এবং সেই সাথে সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে বিচিত্র রূপকের আড়ালে ঐ একই তত্ত্বের আলোচনা আছে, যা পৃথিবীর প্রত্যেক বাতেনিয়্যাহ(গুপ্তবাদী/অধিবিদ্যার সাধক - যাদুকর) গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান, সেই একই যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক অকাল্ট বিশ্বদর্শন! অন্যান্য যাদুর মাজহাবগুলো বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের স্বীকার হয়েছে, বিভিন্ন সময় বিলুপ্তির মুখে পড়েছে(খ্রিষ্টান-মুসলিমদের শাসনামলে), অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, কিন্তু ভারতবর্ষের তথা পূর্বাঞ্চলীয় যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শনগুলো সবসময়ই মাথা উচু করে ছিল। এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী বিদেশী দখলদারদের আনাগোনা চললেও হিন্দুত্ববাদ সম্মানের সাথে মাথা উচু করে থেকেছে। এ অঞ্চল মধ্যযুগীয় খ্রিষ্টানদের প্যাগান নিধনের সেই আগ্রাসন থেকে নিরাপদেই ছিল। আলেকজান্ডার যখন হিন্দুস্তান দখল করে তখন হিন্দুত্ববাদ মহা সম্মানের সময় পার করেছে, গ্রীক শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য। পরবর্তীতে যখন মুসলিমরা ক্ষমতায় আসে, তারাও হিন্দুত্ববাদ তথা বৈদিক দর্শনশাস্ত্রের উপর উল্লেখযোগ্য তেমন কোন আগ্রাসন চালায়নি। সংস্কৃত ভাষার জন্য অন্যদেশী, অন্যভাষীরা কখনো বোঝেনি এতে কি আছে। যখন ইংরেজরা ভারত দখল করলো তখন হিন্দুদের সাথে মিত্রতা করলো। সুতরাং পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্ট ট্রেডিশন সবসময় ব্যাঘাতহীনভাবে বিকশিত হয়েছে। এজন্য হাজার হাজার বছরের পুরোনো আর্যদের শাস্ত্র এখন পর্যন্ত টিকে আছে। প্রাচীন যুগে বাবেল শহরটি যেমন রহস্যবাদ(Mysticism) ও যাদুবিদ্যার(Occultism) কেন্দ্রবিন্দু ছিল তেমনি এখন ভারত হয়ে গেছে অকাল্ট জ্ঞান বিজ্ঞানের মহা আধার। আল্লাহর রাসূল (সঃ) পূর্বদিকের ব্যপারে সাবধান করেছেন। বলেছিলেন কুফরের মূল হচ্ছে পূর্বদিক।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কুফরীর গোড়া হল পূর্বদিকে।
(বুখারী ৩৩০১, মুসলিম ৫২)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৭৫২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
মক্কার পূর্বদিকে ছিল বাবেল শহর একইভাবে পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থান ভারতবর্ষের, যেখানে ব্যবিলনীয়ান বিদ্যা সংরক্ষিত এবং বিকশিত হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বে পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্টিজমের প্রবেশঃ
ভারতবর্ষ তথা পূর্বাঞ্চলীয় মানুষের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের ধর্মীয় বিষয়ে সংযোগ এবং আদানপ্রদান বেশ পুরোনো। প্রথম দিকে বৌদ্ধ ধর্মের সাথে পাশ্চাত্যের মিথস্ক্রিয়া ঘটে। বৌদ্ধ ধর্মটির উৎস হিন্দু ধর্মই। ব্রাহ্মন পরিবারে জন্মানো গৌতম বুদ্ধ যখন প্রচলিত হিন্দুধর্মে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তখন নিজেই এর উপর ভিত্তি করে নতুন কিছুর অন্বেষণ করতে শুরু করলেন, যাতে করে পূর্ন আধ্যাত্মিক উপলব্ধি পাওয়া যাবে। এরকমটা ধারনা করা হয়, তিনি ব্যবিলন শহরেও জ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেন, এ বিষয়ে আলোচনা গত হয়েছে। তার শিক্ষকের নামে যেহেতু ব্যবিলনীয়ান নামের সাদৃশ্যতা আছে সুতরাং তার শিক্ষা ও বিদ্যায় বাবেল শহরের দার্শনিক ও যাদুকরদের প্রভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। তিনি ধ্যানের দ্বারা চেতনার ওপারে(altered state of consciousness) যেতেন অদৃশ্য-অস্পৃশ্য জাতির(জ্বীন) সহায়তায় অধিবিদ্যা অর্জন এবং আধ্যাত্মিক সিদ্ধির লক্ষ্যে। ধীরে ধীরে সর্বেশ্বরবাদী বৌদ্ধ দর্শন গড়ে ওঠে এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হিন্দুত্ববাদ, বৌদ্ধমত প্রভৃতি কোন ধর্মের(religion) শ্রেনীতে পড়ে না বরং সেগুলো প্রতিষ্ঠিত দর্শন।
পাশ্চাত্যে হিন্দুত্ববাদের আরেক শাখা তথা বৌদ্ধ দর্শনের সাথে সংযোগ প্রায় দু-হাজার বছরের বেশি। সর্বপ্রথম মিথস্ক্রিয়া ঘটে ঈসা(আঃ) এর জন্মের পূর্বে হেলেনিস্টিক পিরিয়ডে গ্রীকদের সাথে। আলেকজান্ডারের দখলের ফলে সেসময় আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের অধিকাংশ অঞ্চল গ্রীক শাসনের অধীনে ছিল।তখন উপনিবেশিক গ্রীক শাসকগোষ্ঠীর একদল লোক ভারত ও ব্যাক্ট্রিয়ার এসে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করে। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত এসকল লোকেরা ইন্দো-গ্রীক রাজাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়। তারাই গ্রেসীয়-বৌদ্ধমত এর প্রবর্তনা ঘটায়। তখন বৌদ্ধমত গ্রেসীয়- ব্যাক্ট্রিয়ান এবং ইন্দো-গ্রীকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইন্দো-গ্রীক রাজাদের মধ্যে Menander I এবং Menander II বৌদ্ধদের প্রতীক মুদ্রায় ব্যবহার চালু করেন, ধর্মচক্রের প্রতীকও মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়। রাজা প্রথম মিনান্ডার ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের গ্রন্থ Milinda Panha এর প্রধান আলোচিত চরিত্র যেটায় বলা আছে যে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন। বৌদ্ধদের মতে, সম্রাট অশোকের পাশাপাশি মিনান্ডার বৌদ্ধ ধর্মের অনেক বড় হিতকারী বন্ধু। Mahavamsa এ উল্লেখ আছে যে, মিনান্ডারের শাসনামলে মহাধর্মরক্ষীতা নামের এক প্রবীণ বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রায় ৩০০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে গ্রীসের আলেকজান্দ্রিয়া (ককেশাসের) শহর থেকে শ্রীলংকায় নিয়ে আসেন শুধুমাত্র বৌদ্ধধর্মের প্রতি গ্রীকদের ত্যাগ ও উদারতা প্রদর্শনের জন্য।
৩য় থেকে ৪র্থ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান লেখক হিপ্পোলাইটাস এবং এপিফানিয়াস, Scythianus নামের একজন ব্যক্তির ব্যপারে বলেছেন যিনি ৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতে গমন করেন এবং "দ্বৈতনীতির মতবাদ" অর্জন করে ফেরেন।জেরুজালেমের Cyril এর মতে, Scythianus এর শিষ্য Terebinthus নিজেকে "বুদ্ধ" নামে পরিচয় দেয় এবং ফিলিস্তিন, জুডিয়া ও ব্যবিলনে সেসব প্রচার করে।
মধ্যযুগের শুরুতে বৌদ্ধ বা পূর্বাঞ্চলীয় দর্শনের সাথে পাশ্চাত্যের তেমন উল্লেখযোগ্য সংযোগ ঘটে নি। কিন্তু ষোড়শ শতকের শুরুতে ইউরোপের খ্রিষ্টানদের সাথে বৌদ্ধদের যোগাযোগ শুরু হয়। জেসুইট মিশনারির সেন্ট ফ্রান্সিস জাভিয়ার এবং ইপ্পোলিটো ডেসিডারি কর্তৃক বৌদ্ধদের মতবাদ এবং চর্চার বিশদ বর্ননা খ্রিষ্টানদের কাছে পৌছায়। ইপ্পোলিটো ডেসিডারি লম্বা সময় তিব্বতে অবস্থান করেন, সেখানে তিনি তিব্বতীয় ভাষা - দর্শন শিখে বিশদভাবে তিব্বতীয় বৌদ্ধমত এবং তার ভ্রমনের ব্যপারে লেখেন।
পাশ্চাত্যে ভারতীয় দর্শনের(Eastern esoteric philosophy) প্রথম প্রকাশ পায় যাদের মধ্য দিয়ে, তাদের প্রধান একজন Arthur Schopenhauer। তিনি ১৮৫০ সালে আর্যদের বৈদিক আধ্যাত্মিক আত্মজ্ঞানের চেতনাকে ব্যবহার করে নৈতিকতামূলক চিন্তাধারার প্রচার করেন।
এরপরে ১৮৭৫ সালে রাশিয়ান হেলেনা পেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কি নিউইয়র্কে থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।সেটা হিন্দুত্ববাদ,বৌদ্ধমত, হার্মেটিক, কাব্বালার সম্মিলিত একটা যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক মিস্ট্রি স্কুল। সমস্ত কুফরি শাস্ত্র,বিদ্যা ও আকিদার অসাধারণ সমন্বয়। ১৮৭৯ সালে তিনি ভারতে পাড়ি জমান আধ্যাত্মিক গুপ্তজ্ঞানের অন্বেষণে। এই থিওসফি(theosophy) পরবর্তীতে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর মধ্যে তৈরি হওয়া নিউএজ(New age) মুভমেন্ট এর বিশ্বাস,চিন্তাধারা মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
New Age শব্দটি ব্লাভাস্তস্কির ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত The Secret Doctrine (গুপ্ত মতবাদ) নামের গ্রন্থ থেকে এসেছে। H.P Blavatsky তার অর্জিত জ্ঞানের উৎস হিসেবে তিব্বতীয় "শিক্ষকের" কথা বলতেন। তিনি বলতেন ওইসব আধ্যাত্মিকভাবে সিদ্ধ শিক্ষকেরা চান প্রাচীন অকাল্ট দর্শন যা প্রাচীন যুগে একসময় ছিল, আবারো পৃথিবীতে জাগ্রত হোক। তারা ব্লাভাস্তস্কির দ্বারা সেটার পুনঃজাগরন ঘটাতে চাইছেন যেটা নিকট ভবিষ্যতে অন্যান্য ধর্মগুলোর পতন ঘটাবে। তিনি তার বইতে সরাসরি শয়তানকে একমাত্র উপাস্য বলে দাবি করেন। তাছাড়া বিব্লিক্যাল লুসিফারকেও প্রশংসা করেন। তিনি দাবি করেন সমস্ত জ্ঞান এই লুসিফার থেকে আসে। তিনি বলেনঃ
"শয়তান হচ্ছে এই গ্রহের ঈশ্বর একমাত্র উপাস্য"
খুতুমি ও এলমোরিয়া(শয়তান) নামের দুই শিক্ষকের(ascended masters) কথা তিনি বলেন, যাদের থেকে তিনি গুপ্তবিদ্যা অর্জন করেছেন। ১৮৮০ সালে ভারতের তামিল নাড়ুর adyar এ প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে। থিওসফির মূল তত্ত্ব হচ্ছে ওয়াহদাতুল উজুদ বা মনিজম সহজ ভাষায় সর্বেশ্বরবাদ, পুনর্জন্মবাদ, বিবর্তনবাদ,সকল বাস্তবতা(reality) হচ্ছে আসল বাস্তবজগতের প্রতিবিম্ব, বাস্তবতা হচ্ছে মায়াজাল। কোন কিছুই সলিড নয়। হেলেনা Isis Unveiled এবং The Secret Doctrine নামের দুটি বই প্রকাশ করেন।
থিওসফি বা থিওসফিক্যাল সোসাইটিকে হালকাভাবে নিলে ভুল হবে । শুনলে অবাক হতে হবে যে, থিওসফির সাথে সংযুক্ত ছিল খোদ মহাত্মা গান্ধীর মত নেতা! দুজন থিওসফিস্ট(প্যাগান ধর্মতত্ত্ববিদ) মহাত্মা গান্ধীকে ভগবতগীতা উপহার দেওয়ার পর থেকে গান্ধী হিন্দুত্ববাদী চেতনার প্রতি ঝুকছিলেন। গান্ধী, ম্যাডাম হেলেনা এবং এ্যানি বিসেন্টের সাথে একান্ত সাক্ষাতও করেছেন। মহাত্মা গান্ধী আমৃত্যু থিওসফিস্ট ছিলেন। তিনি বলেন,
"থিওসফি হচ্ছে ম্যাডাম ব্লাভাস্তকির শিক্ষা....থিওসফি হচ্ছে মানবজাতির ভ্রাতৃত্ব।"
অন্যত্র তিনি ভারতের স্বাধীনতায় থিওসফিস্টদের ভূমিকার কথা জোর দিয়ে বলতে গিয়ে বলেন,
"শুরুতে ভারতের শীর্ষসস্থানীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতাগন ছিলেন থিওসফিস্ট।"
মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর দিনই একটি জার্নাল প্রকাশ করা হয় যাতে উল্লেখ ছিল, "থিওসফিক্যাল লিটারেচারে অনেক প্রশংসনীয় বিষয় আছে যা কেউ তার সর্বোত্তম কল্যানের জন্য পাঠ করবে,কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে অকাল্ট বিদ্যা অর্জনে বুদ্ধিবৃত্তিক পাঠ্যবিষয়ে খুব বেশি জোড় দেওয়া হয়েছে, এবং এটাই থিওসফির কেন্দ্রীয় ধারনা- মানবজাতির ভ্রাতৃত্ব এবং মানুষের নৈতিকতা অর্জন - যা হারিয়ে গেছে।"[৪]
রুডল্ফ স্টেইনার, ম্যানলি পি হল প্রমুখ দার্শনিক এবং ফ্রিম্যাসন অনেক বিষয়ে থিওসফিক্যাল সোসাইটির উপরনির্ভর করতেন। বিখ্যাত অকাল্ট রাইটার ডেভিড আইক এখনো থিওসফিক্যাল সোসাইটির কিতাবাদি থেকে অনুসারীদেরকে শেখায়।[১৫]
১৮৭৯ সালে স্যার এডউইন আর্নল্ড এর দ্য লাইট অব এশিয়ার কবিতায় গৌতম বুদ্ধের জীবনকে তুলে ধরেন। সে বই বেস্ট সেলারের তালিকায় ছিল। এ বই তখন প্রকাশ হয়, যখন খ্রিষ্টানধর্ম ডরউইনের বিবর্তনবাদ এবং বস্তুবাদের দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তখন পাশ্চাত্যের বিদ্বান ও সুশীল সমাজের কাছে বৌদ্ধধর্মটি একটি যৌক্তিক বিকল্প ধর্মমত হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া শুরু করে। এডুইন আর্নল্ড এর এই বইটি তাই এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে তা প্রায় ৮০ টি সংস্করণ বের হয় এবং প্রায় ১০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়!
থিওসফিক্যাল সোসাইটির অবদানে বৌদ্ধধর্ম আরো জনপ্রিয়তা পায়। স্টিফেন প্রোথেরোর মতে, থিওসফিস্টদের মধ্যে হেলেনা প্রেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কি, হেনরি স্টিল ওলকট বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন, যারা ১৮৮০ এর দিকে ইউরোপিয়ান - আমেরিকানদের মধ্যে প্রথম ফর্মালভাবে বৌদ্ধদর্শন গ্রহণকারী।
হেনরী ওলকট সিংহলি বুদ্ধধর্মের প্রচার প্রসারে খুবই প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব ছিল। তিনিই Buddhist Modernism এর প্রবর্তনায় বড় ভূমিকায় ছিলেন।তিনি থিওসফিক্যাল সোসাইটির শাখা তৈরিতে পাশে ছিলেন, এজন্য প্রথমদিকে তিনি শ্রীলংকায় যান। বৌদ্ধদের বিভিন্ন কিতাবাদিও রচনা করেন,তার একটি the Buddhist Catechism (1881)। তার কাজে আরো উৎসাহ দিতে বৌদ্ধদের মধ্যে Hikkaduve Sumangala তার দিকে এগিয়ে আসেন।হেনরি ওলকট, পল কারাস,সয়েন শাক প্রমুখ যে ধরনের বৌদ্ধমত প্রচার করছিল সেটাকে বলা হয় " Buddhist modernism"।
এ ধরনের বৌদ্ধদর্শনে সরাসরি বৌদ্ধধর্মের নামে প্রচার করা হয় না বরং বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন মতবাদ কে যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক দর্শনে রূপ দেওয়া হত। ওলকটের 'বুদ্ধিস্ট ক্যাটেকিজমে' বিজ্ঞানের সাথে এই দর্শনের সাদৃশ্যতা তৈরি এবং বিজ্ঞানের অরিজিনের সাথে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। Paul Carus বিশ্বাস করতে বাধ্য হন যে বৌদ্ধ ধর্ম হচ্ছে "বিজ্ঞানের ধর্ম"(religion of science)। তার বিখ্যাত একটি লেখনী হচ্ছে The Gospel of Buddhism, যেটা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। একই ধরনের চিন্তাধারার প্রচারক ছিলেন অনাগরিক ধর্মপাল নামের এশিয়ান বৌদ্ধ ধর্মগুরু।
ইউরোপেও ১৯ শতকে বৌদ্ধ শাস্ত্র নিয়ে গভীর গবেষণা শুরু হয়। Eugène Burnouf নামের এক ফ্রেঞ্চ ওরিয়েন্টালিস্ট(প্রাচ্যবিদ) সর্বপ্রথম সংস্কৃত পদ্মসূত্রের ফ্রেঞ্চ অনুবাদ করার মাধ্যমে ইউরোপে ব্যাপক বৌদ্ধ দর্শনের প্রসার শুরু হয়। তার পাশাপাশি Christian Lassen পলি ভাষার ব্যাকরণ প্রকাশ করেন ১৮২৬ সালে। Robert Caesar Childers ১৮৭৫ সালে প্রথম পলি শব্দভাণ্ডার এবং অনুবাদ প্রকাশ করেন। ইন্দোলজিস্ট ম্যাক্স মুলার অক্সফোর্ড সিরিজে Sacred Books of the East নামে অনেক বৌদ্ধদের শাস্ত্র প্রকাশ করেন। ১৮৮১ সালে, Dhammapada (Müller ) ও Sutta-Nipata ( Viggo Fausböll) ১০ খন্ডের অনুবাদসহ প্রকাশ করা হয়। Hermann Oldenberg ১৮৮১ সালে Buddha: his life, his doctrine, his order ( Buddha: Sein Leben, seine Lehre, seine Gemeinde) নামে পলিভাষার কিতাবাদি প্রকাশ করে বেশ জনপ্রিয় হন। এই সময় জার্মান দার্শনিক Schopenhauer বৌদ্ধদর্শনের খুব প্রশংসা করেন। তিনি এমনকি দাবি করেন বৌদ্ধদর্শন পৃথিবীর অন্য যেকোন ধর্ম অপেক্ষা ভাল।
Friedrich Nietzsche আরেক জার্মান দার্শনিক, যাকে গোটা বিশ্ব চেনে, তিনিও বৌদ্ধধর্মের প্রশংসাকারী। ১৮৯৫ সালে তার প্রকাশিত The Anti-Christ বইয়ে তিনি বৌদ্ধধর্মের অনেক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "a hundred times more realistic than Christianity" অর্থাৎ, বৌদ্ধধর্ম খ্রিষ্টানধর্মের চেয়েও শতগুন বেশি বাস্তবিক। ১৮৮৩ সালের আরেক প্রকাশনায় বলেন, "আমি ইউরোপের বুদ্ধ হতে পারতাম"।
উত্তর আমেরিকায় প্রথম বৌদ্ধ অভিবাসী ছিল ১৮৪৮ সালে কিছু চাইনিজ বৌদ্ধ, যারা West Coast এ আস্তানা গাড়ে। ১৮৭৫ সালের মধ্যে ৮ টি মন্দির গড়া হয়ে যায় সানফ্রানসিসকোতে। ১৮৯৩ সালে Jōdo Shinshū সন্ন্যাসী ভিক্ষুরা চলে আসে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে Buddhist Missions of North America নামে কাজ শুরু করে। এরপরে জাপানি বৌদ্ধরাও আসতে শুরু করে। চাইনিজরা বৌদ্ধধর্মের পাশাপাশি অনেকে তাওবাদেরও প্রচার শুরু করে। আমেরিকান ট্রান্সেন্ডেন্টালিস্টরা বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনেক পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। র্যাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন বলতেন, সত্যিকারের আদর্শ Transcendentalism এর জন্য হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রতীক্ষা করছিল তারা। ১৮৯৮ সালের দিকে DT Sujuki থিওসফি হিন্দুত্ববাদ ও বৌদ্ধদর্শনের প্রসারে বড় ভূমিকা রাখেন। ১৯০৩ সালের দিকে জার্মানিতেও বৌদ্ধদের জয়যাত্রা শুরু হয়, এরপরে ব্রিটেনে। এভাবে ইউরোপজুড়ে Eastern Mysticism এ ঝোঁক দিনদিন বাড়তে থাকে।
পাশ্চাত্যে ভারতীয় অকাল্ট দর্শনগুলো পৌছানোর কাজে থিওসফিক্যাল সোসাইটির পর যদি কারো নাম আসে তাহলে সেটা স্বামী বিবেকানন্দ। বিবেকানন্দের আমেরিকা সফরের আগে এমারসন ও হেনরী থরেউ তাদের কবিতা ও প্রবন্ধে ভগবত গীতা থেকে কিছু অনুচ্ছেদ তুলে ধরে পাঠকদের চিন্তার জগতে আকর্ষণ তৈরি করেছিলেন। Brahma ও Hamatreya নামের দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। বিবেকানন্দের অন্যনাম নরেন্দ্রনাথ। নরেন নামেও পরিচিত ছিল। তিনি রামকৃষ্ণের সাথে সাক্ষাতের আগেই রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ নামের বেদান্তবাদী শাখাকে গ্রহন করেন।
রামকৃষ্ণ ছিলেন কলকাতার এক কালী মন্দিরের পুরুতঠাকুর, পরে তিনি বিবেকানন্দের গুরু হন। রামকৃষ্ণের মাধ্যমে নরেন প্রাচ্যবাদ, পেরেনিয়ালিজম এবং ইউনিভার্সালিজমের ব্যপারে জানেন। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনে সুবিধাভোগী হিন্দুদের ন্যায় বিবেকানন্দ পাশ্চাত্যের বই পাঠের সুযোগ পান। তিনি David Hume , Immanuel Kant , Johann Gottlieb Fichte , Baruch Spinoza, Georg W. F. Hegel , Arthur Schopenhauer , Auguste Comte ,
John Stuart Mill এবং Charles Darwin এর কিতাবাদি পাঠ করেন। ১৮৮৪ সালের কিছু আগে বিবেকানন্দ ফ্রিম্যাসনে যোগদান করেন(তার নামে ম্যাসনিক লজও খোলা হয়)।
নরেন্দ্র বৈদিক শাস্ত্রের থেকে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে নতুন রূপ দান করেন। এই ব্যাখ্যা নিও-বেদান্ত নামে পরিচিত হয়, যেখানে Advaita Vedanta যোগসাধনা, সমাজকর্ম শেখাতো কিভাবে মানব ঊৎকর্ষে পৌছানো যায়। এটাকে বিবেকানন্দ বলতেন 'প্র্যাক্টিক্যাল বেদান্ত'। তিনি হিন্দু বেদান্তবাদকে পশ্চিমাদের জন্য গ্রহন উপযোগী করেন।
তার বিখ্যাত বক্তব্য ছিল ১১সেপ্টেম্বর ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে অনুষ্ঠিত Parliament of the World's Religions এর অধিবেশনে। তার ওই বক্তব্য পশ্চিমে অনেক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে সেই সাথে ভারতেও পরিচিতি লাভ করেন। তার দ্বারা পাশ্চাত্যে অস্তিত্বগত অদ্বৈতবাদ অর্থাৎ সর্বেশ্বরবাদের ধারনাটির প্রসিদ্ধি লাভ করে। বিবেকানন্দের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তার উত্থান। পাশ্চাত্যের চেতনার সামনে হিন্দুত্ববাদকে মাথা উচু করে দ্বার করানো। মহাত্মা গান্ধীও একই রকমের হিন্দু জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত ছিলেন। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসলামবিদ্বেষী সংগঠন Rashtriya Swayamsevak Sangh (RSS) এর নেতা Babasaheb Apte এর সারাজীবনে একটি কথাই বলে গিয়েছেন, সেটা হলো, "বিবেকানন্দ আরএসএসের কাছে গীতা তুল্য"।
বিবেকানন্দ ৩১ মে ১৮৯৩ সালে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিনি চীন জাপান হয়ে কানাডা যান এরপরে আমেরিকা। ৩০ জুলাই শিকাগো পৌছান।" Parliament of Religions" সেখানে অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল পূর্ব পশ্চিমের ধর্মীয় সেতুবন্ধনের ন্যায়। হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করছিল ব্রাহ্মসমাজ ও থিওসফিক্যাল সোসাইটি। সেখানে বিবেকানন্দ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন হিন্দুত্ববাদের জয়গান গেয়ে। প্রথম দিকে এত উদ্বিগ্ন ছিলেন যে স্বরস্বতী দেবী মূর্তিকে উদ্দেশ্য করে পূজো দেন। প্রথম বাক্যটি ছিল, 'আমেরিকার ভাই ও বোনেরা'। এটা শুনেই উপস্থিত ৭০০০ জন সবাই দাঁড়িয়ে হিন্দুত্ববাদের প্রতি সম্মানে দু মিনিট নিরবতা পালন করে।
এরপরে নিরবতা ভেঙ্গে বিবেকানন্দ ওরফে নরেন বলেন, সর্বকনিষ্ঠ জাতির প্রতি সবচেয়ে প্রাচীন জাতির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, যেটা সন্ন্যাসবাদের সবচেয়ে পুরাতন ধারা, যা মানুষকে সহিষ্ণুতা এবং সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতার শিক্ষা দিয়েছে।
Parliament President John Henry Barrows বলেন, "ধর্মসমূহের মাতা ভারতের পক্ষ থেকে গেরুয়া সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন যিনি শ্রোতা দর্শকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রভাব বিস্তার করেন।"
এরপরে আমেরিকান পত্রপত্রিকা গুলোয় বিবেকানন্দের প্রশংসায় ভরে যায়। ব্রুকলিনের এথিক্যাল সোসাইটির প্রশ্ন উত্তর পর্বে বিবেকানন্দ বলেন, 'আমার একটা বার্তা আছে পশ্চিমের কাছে যেরূপে পূর্বাঞ্চলের জন্য বুদ্ধের ছিল'। বিবেকানন্দ পূর্ব মধ্য আমেরিকায় বিভিন্ন স্থানে দু' বছর বক্তৃতা দিয়ে কাটান। শিকাগো, বোস্টন, ডেট্রয়েট, নিউইয়র্কসহ অনেক স্থানে যান। ১৮৯৪ তে বেদান্ত সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন নিউইয়র্কে। যোগ সাধনা ও ভারতীয় অকাল্ট ফিলসফি শিখানোর জন্য বিনা মূল্যে ক্লাসে করাতেন।
বিবেকানন্দ এর পরে ট্রান্সেন্ডেলিজম নিউথট প্রভৃতি সর্বেশ্বরবাদী দার্শনিক শাখাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে প্রচার করতেন। অনেক বিখ্যাত লোক তার কাজে মুগ্ধ হয়ে সরাসরি দেখা করে। এরমধ্যে বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা অন্যতম! নরেন তার বেদান্তবাদের ১২ টা শাখা খোলেন, সবচেয়ে বড়টা হলিউডে অবস্থিত। বেদান্ত প্রেস বের করেন হিন্দুত্ববাদ প্রচারের জন্য। নরেনকে একদিন পত্রের মাধ্যমে তার গুরু রাজার হালে না থেকে ধনী গরীবদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধর্ম প্রচার করতে বলেন। এরপরে ১৮৯৭ সালে দেশে ফেরেন। সে বছর রামকৃষ্ণ মিশন খোলেন। বিবেকানন্দের ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতের কিংবদন্তী সুভাষ চন্দ্র বসু, থিওসফিস্ট মহাত্মা গান্ধী।
ফ্রিম্যাসন সদস্য স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন বৈদিক রহস্যবাদী দর্শনের এক মহান সাধক পুরুষ। তিনি ওয়াহদাতুল উজুদে(Monism-সর্বেশ্বরবাদ) বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চাইতেন ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে মানব জাতি সৃষ্টি - স্রষ্টার এক অস্তিত্বের (ওয়াহদাতুল উজুদের-monism) একক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হোক। তিনি কুয়োর ব্যাঙের একটা গল্প শুনিয়ে বোঝাতেন যাতে মানুষ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে নিজেদেরকে না জড়ায়।[১৪]
বিবেকানন্দের পরে আরবিন্দ ঘোষ, জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তি, রমনা মহর্ষি, যোগানন্দ, মা আনন্দময়ী, স্বামীমুক্তানন্দ, মহা ঋষি মহেশ যোগী,রজনীশসহ আরো অনেক গুরুঠাকুররা ভারত থেকে আমেরিকায় এসে আস্তানা গাড়ে। মহাঋষি মহেষ যোগী Transcendental Meditation নামের যোগসাধনার কেন্দ্র খোলেন। তার পরে আসেন দীপক চোপড়া এবং অপ্রাহ উইনফ্রে। শুরু হয় নতুন যুগের(New Age) আধ্যাত্মিক বিপ্লব। প্রাচীন যাদুশাস্ত্রভিত্তিক কুফরি দর্শনের মহা বিপ্লব।
বিংশ শতকে বৌদ্ধ শাস্ত্রের অনুবাদিত গ্রন্থ এবং প্রচারকদের কিতাবাদির প্রসারণ আরো বাড়তে থাকে।১৯২০ সালে যোগানন্দ আমেরিকায় International Congress of Religious Liberals এর মিটিং এ যোগ দিতে আসেন। ঐ বছরেই তিনি Self-Realization Fellowship (SRF) প্রতিষ্ঠা করেন যোগসাধনা এবং সনাতন দর্শন প্রচারের জন্য। একই সময় যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তি নামের দক্ষিণ ভারত থেকে আসা আরেক ব্রাহ্মন; মৈত্রীয়(কল্কি) নামের একজন মহা অবতারের আবির্ভাবের বার্তা প্রচার শুরু করেন। এই মেসিয়ানিক ফিগারই থিওসফিক্যাল সোসাইটির পৃথিবীর মহাগুরু(ওয়ার্ল্ড টিচার)। মৈত্রেয় নামটি বৌদ্ধদের মৈত্রেয় বুদ্ধ থেকে নেওয়া। তিনি কল্কি অবতার। যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির পর এ্যালিস বেইলিও তার লুসিস ট্রাস্টের(লুসিফার ট্রাস্ট) এর দ্বারা মৈত্রেয় বুদ্ধের আগমনের বার্তা প্রচার করেছেন। প্রথম দিকে ২০২২ এর দিকে আশেপাশের সময়ে আসবার কথা জানানো হয়, পরবর্তীতে বলা হয় তিনি ২০২৫ এর পরে আসবেন। বেইলির পর বেঞ্জামিন ক্রিম নামের আরেক থিওসফিস্ট মৈত্রেয় বুদ্ধের আগমন নিয়ে খুব প্রচারণা চালান। তিনি মৈত্রেয়র বুদ্ধের অনেক বৈশিষ্ট্যের বর্ননা দেন যেমন তার নেতৃত্বে বিশ্বের সমস্ত জাতির একত্রিত হওয়া। শান্তি প্রতিষ্ঠা তার একচ্ছত্র শাসনের দ্বারা দুনিয়ায় স্বর্গলোকের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। যাইহোক, মৈত্রেয় বা কল্কি অবতার কে আর ভাঙ্গিয়ে বলবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। তিব্বতীয় অনুবাদ গ্রন্থ প্রথম প্রকাশ হয় ১৯২৭ সালে। ১৯৩৫ সালে এর পুনঃমুদ্রনে Carl Jung এর মন্তব্য সংযুক্ত হয়। এর দ্বারা তিব্বতীয় বৌদ্ধমতে পাশ্চাত্যে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।আলেকজান্দ্রা ডেভিড নিলের লেখা "My Journey to Lhasa" তিব্বতের ব্যপারে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়ায়। আরেক জার্মান লেখক, Hermann Hesse পূর্বাঞ্চলীয় দর্শনের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করে বই প্রকাশ করে, যার নাম "সিদ্ধার্থ"। এটাও জনপ্রিয় বই। এভাবে বৌদ্ধপ্রীতি বাড়ার সাথে সাথে যোগসাধনা, ধ্যানের প্রচলনও অনেক বেড়ে যায়। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর বৌদ্ধধর্ম এর সংখ্যা আরো বাড়ে, হাজার হাজার মেডিটেশন সেন্টারে ছেয়ে যায়, যেখানে ১৯০০-৬০ এ ২১ টা গজিয়েছিল। ১৯৫৯ সালে সুজুকি নামের আরেক জেন বুদ্ধ সানফ্রানসিসকো কে আসেন। ১৯৭০ এর পর দিয়ে তিব্বতি বুদ্ধ বাড়তে থাকে, লামারা আসতে থাকে একে একে। সাম্ভালা পাব্লিকেশন এরনামে তিব্বতিয় বই অনুবাদ শুরু হয়। ১৯৬৫ তে ওয়াশিংটনডিসি এ বৌদ্ধ বিহার নির্মান হয়। তিব্বতীয় বৌদ্ধমত এর কালচক্রতন্ত্র অনুযায়ী শেষ যুগে ২৪তম শেষ অবতার(কল্কি) আসবেন দুনিয়ার বুকে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য। কালচক্রশাস্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে এই অবতার(এটাই বৌদ্ধধর্মের মৈত্রেয় অবতার) আদম, নূহ, ইব্রাহীম, সাদাচাদরওয়ালা(সম্ভবত এর দ্বারা খিযির আলাইহিসালামকে বুঝিয়েছে) ঈসা এবং মুহাম্মদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। এই লোকেদের ধর্মটি বর্বর ধর্ম, এটিকে বিলুপ্ত করতে তিনি আসবেন। তখন মাহদি নামের একজনের সাথে যুদ্ধ হবে![৫]
অতএব, বুঝতে পারছেন ভারতের ধর্মচক্র তথা ধর্মের লেবাসে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্ট দর্শনগুলোর আসল অরিজিন কি, কোন মতাদর্শ থিওসফি - বেদান্তবাদ বহন করে,মাসূনী বিবেকানন্দ কিসের দর্শন প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে গেছে! বুঝতে পারছেন, আজকের ধ্যান ভিত্তিক আধ্যাত্মিকতা আসলে কার মতাদর্শ প্রচার করছে..কার আগমনের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করছে!
১৯৬০ এর দিকে হিপ্পিদের বিপ্লব শুরু। Friedrich Nietzsche , Goethe , and Hermann Hesse , Wandervogel প্রমুখের বই পড়ে হাজার খানেক জার্মান তরুন তরুনীরা পুঁজিবাদী এবং বস্তুবাদী সভ্যতার প্রতি বিরক্ত হয়ে আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে প্রকৃতিপূজা, পূর্বাঞ্চলীয়(ভারতীয়) দর্শনের চর্চা, ধ্যান এবং নেশাজাতীয়(psychadelic intoxicating drugs) দ্রব্য সেবনের মাধ্যমে চেতনার ওপারে(Altered state of consciousness) যেত, আধ্যাত্মিকতার জন্য তরুনদের এ মাদককেন্দ্রিক জাগরণকে হিপ্পি নাম দেওয়া হয়। এদের দ্বারাই LSD, DMT, ম্যাজিক মাশরুম,আয়োহুয়াস্তকাসহ বিভিন্ন চরম নেশা উদ্দীপক মাদকের প্রচলন ঘটে। এরা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সবরকম মাদক সেবনের বৈধতা আনে। আমেরিকাতেও হিপ্পিরা ছড়িয়ে পড়ে। হিপ্পি মুভমেন্ট এর আরেকটি অংশ ছিল Sexual Revolution। বিভিন্ন ধরনের sexual pervertion কে বৈধতা দিতে আন্দোলনে নামে। এরা মাঝেমধ্যে একসাথে আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়াতে যেত এবং মাদকসেবনের পাশাপাশি অসভ্যতায় লিপ্ত হতো। এরা মাঝেমধ্যে ব্যানারে "যা ভাল লাগে তাই করো" এমনকি এলিস্টার ক্রৌলির বলা কথা লিখে রাজপথে নামত। এদের দ্বারাই আমেরিকায় লিভটুগেদার এবং আজকের LGBT মুভমেন্ট বৈধতা লাভ করে। হিপ্পিদের হিন্দুবৌদ্ধ প্রীতির সময় গ্যারি স্নাইডার, এল্যান ওয়াটসের মত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব বেদান্তবাদ, বৌদ্ধদর্শন প্রচার করতেন। তাছাড়া অস্কার উইল্ডি, ওয়াল্ট হুইটম্যান, র্যাল্ফ ওয়াল্ডো ইমারসন, হারমান হিসি,উইলিয়াম ব্লেক এরা সবাই তাদের পাশে ছিল।[২]
বিংশ শতকে হিন্দুত্ববাদে প্রভাবিত হয়ে Maximiani Portaz 'আর্য প্যাগানিজম' নামে পূর্বাঞ্চলীয় রহস্যবাদ(Eastern Mysticism) প্রচার শুরু করেন। তার সাথে সাবিত্রী দেবী, জ্যাকব উইলহেলম হাউয়ার মিলে জার্মান ফেইথ মুভমেন্ট চালু করেন। তখন থেকে তারা স্বস্তিকা(卐)চিহ্নটি তারা ব্যবহার করত আর্য প্যাগান চিহ্ন হিসেবে।
মূলত এডলফ হিটলার বেদান্তবাদী চিন্তাধারা দ্বারা আচ্ছন্ন হয়। কিছু ইতিহাস ও ভাষাবিদদের স্বীকৃতি পেয়ে নিজেদের আর্য জাতির বংশধর শুরু করে। থিওসফি সহ বাতেনি অকাল্ট সংগঠনের শাস্ত্রগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে Anti Semitic চেতনা জাগ্রত হয়। অর্থাৎ সামের বংশধরের সাথে বনু ইয়াফিসের কিংবা হামের পুত্রের বংশের মধ্যের ঈমান ও কুফরের শত্রুতা(এ নিয়ে ২য় পর্বে বিস্তারিত সংযুক্ত হবে)। এই জাতিগত বিদ্বেষের ফলে আল্লাহর কিতাবধারীদের মধ্যে ইহুদীরাই হিটলারের হাতের কাছে পায়, যার জন্য গণহত্যার স্বীকার হয়। এখানে হিটলারকে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আল্লাহর দ্বীনকে ত্যাগ করা ইহুদীদেরকে শাস্তি দেন। লক্ষ লক্ষ ইহুদীদের হত্যা করা হয়। এখানে আল্লাহ, বড় শয়তানকে দিয়ে আল্লাহর বিধান ছেড়ে শয়তানের আবৃত্ত শাস্ত্রকে গ্রহনকারীদেরকে শাস্তি দেন(এর আগে নেবুচাদনেজার ২ এর দ্বারা শাস্তি দেন যার ব্যপারে কুরআনেও ইঙ্গিত আছে)। তবে হিটলারের মধ্যে ইয়াকুবের(আ) সন্তানদের (ইহুদী) ন্যায় ইসমাঈলের(আ) সন্তানদের (মুসলিম) প্রতিও ঘৃণা ছিল। একইভাবে খ্রিষ্টানধর্মের প্রতিও ছিল তার তীব্র বিদ্বেষ। ইতিহাসবিদরা তাকে এন্টিখ্রিষ্টান ধর্মহীন মিস্টিক এবং অকাল্টিস্ট বলেই জানে। হিটলার ইহুদীদেরকে অর্ধ মানব(Sub-human) হিসেবে দেখতেন, মুসলিমদেরকে আরো নিকৃষ্ট অর্ধ উল্লুক(half Ape) মনে করতেন। মুসলিমদের হাতের কাছে পেলে কিরূপ আচরণ করত সেটা অনুমান করতে পারছেন। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের ব্যপারে বিভিন্ন সময়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে হিটলার, কিন্তু সবসময়েই আরব ও মুসলিম জাতিকে নিচু জাতি বলে গেছে। হিটলার ইসলামের মিলিট্যান্ট(জিহাদ কেন্দ্রিকতা) নীতির জন্য অনেক প্রশংসা করে এমনকি নিজেদের আগ্রাসী নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলেন(তার এ কথাগুলো আজকের ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামকেও হিটলারের সমতূল্য বর্বর ধর্ম প্রমাণের চেষ্টা করে,অথচ এটা দেখেনা যে হিটলারের এসব কথা ছিল রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলিমদের খুশি করার জন্য বলা)। তিনি তৎকালীন জেরুজালেমের গ্রান্ড মুফতি আমিনের সাথেও সাক্ষাত করেন। তিনি চাচ্ছিলেন মুসলিমদের হাতে রেখে প্রথমে বিশ্বকে হাতের কব্জায় আনবে এরপরে শামের রক্তের অবশিষ্টাংশঃ আরব ও মুসলিমদের একযোগে দমন করবে। একথা সে নিজেই প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন,"আমরা সুদূর পূর্ব এবং আরবদেশগুলোয় হাঙ্গামা চালিয়ে যাব। আমাদের নিজেদেরকে মানুষ ভাবতে দিন এবং ওইসব লোকেদেরকে অর্ধ উল্লুক বললে সবচেয়ে ভাল মানায় যারা চাবুকের বাড়ি খাবার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।"
ইতিহাসবিদ Percy Ernst Schramm বর্ননা করেন যে হিটলার তার যৌবন বয়স থেকেই খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করেন এবং ওয়াহদাতুল উজুদ(মনিজম বাংলায় সহজ অর্থে সর্বেশ্বরবাদ) আকিদায় বিশ্বাস স্থাপন করেন। তিনি মনে করেন হিটলার আর্নেস্ট হাইকেল ও তার শিষ্য উইলহেলম বোলস্কি দ্বারা প্রভাবিত হন। Bullock এর মতে হিটলার কিশোর বয়সে অকাল্ট শাস্ত্র এবং জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন।[৩]
পাশ্চাত্যে ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ও অশান্তি দেখে জনগনের মনে শান্তির অন্বেষণ শুরু হয়, যোগ সাধনা এবং হিন্দুত্ববাদী অকাল্ট দর্শন যখন শান্তির ব্যানার দেখিয়ে প্রচার হচ্ছিল, সেটা দেখে জনগণ ব্যাপকহারে গ্রহন করতে শুরু করে। মানুষ কতটা বোকা! যে অকাল্ট দর্শন গ্রহন করে হিটলার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে, সেই দর্শনের মধ্যেই শান্তি খোঁজে! যাহোক, থিওসফিক্যাল সোসাইটির শাখা প্রশাখার সফল বিস্তারের পরে আসলো প্রভুপদের ইস্কন। ইস্কনের কার্যক্রম পশ্চিমা দেশগুলো ছাপিয়ে আমাদের বাংলাদেশেও অত্যন্ত শক্তিশালী। অন্যান্য অকাল্ট অর্গানাইজেশন ন্যায় বৈষ্ণবের উপর দাঁড়ানো ইস্কন তাদের অভিন্ন অকাল্ট মতাদর্শ প্রচারের কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৭০ এর দিকে থিওসফি, ট্রান্সেন্ডেন্টালিজম, বেদান্তবাদ, বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের ফলে প্যাগান আধ্যাত্মিকতার এক সুবিশাল সম্প্রদায় গড়ে ওঠে আমেরিকায়। নিউএজ নামে সমস্ত মিস্টিক, যাদুকর, জ্যোতিষী, সর্বেশ্বরবাদ, পুনর্জন্মবাদের বিশ্বাসের কমন গ্রাউন্ডে নিজেদেরকে নতুন যুগের পথিক হিসেবে পরিচয় দেয়, অবশ্য এই নিউএজ শব্দটিও ম্যাডাম হেলেনার একটি বই থেকে নেওয়া। তাদের মতে এস্ট্রলজিক্যাল ক্যালেন্ডারের এ্যাকুরিয়াস যুগে প্রবেশ করার মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, এজন্য নিউএজ। আজ শুধু আমেরিকায় এদের সংখ্যা ৩৫ লক্ষেরও বেশি। আজ দীপক চোপড়া,অপ্রাহ উইনফ্রে নিউ এজের অনেক বড় সেলিব্রেটি বক্তা, লেখক।[১৩]
বাংলাদেশের মত মুসলিম অধ্যুষিত দেশে সাধারন মুসলিমদের মধ্যে যাদুশাস্ত্রভিত্তিক সর্বেশ্বরবাদী প্যাগান দর্শন তথা হিন্দু-বেদান্তবাদ এবং ম্যাডাম হেলেনার theosophical মতবাদগুলো প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করত, এমন উচু সারির জ্যোতিষীদের দ্বারা গঠিত হয় কোয়ান্টাম ম্যাথড নামের অকাল্ট(অধি/গুপ্তবিদ্যা-যাদুবিদ্যা) মিস্ট্রি স্কুলের প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান। আজ বাংলাদেশেও লক্ষ লক্ষ মানুষ মূর্তিপূজার চেয়েও জঘন্য আকিদাগত শিক্ষাকে ধারন করছে কোয়ান্টাম ম্যাথডের দ্বারা। কোয়ান্টাম ম্যাথড আমেরিকার থিওসফিস্ট / নিউএজ আধ্যাত্মবাদী লেখকদের কিতাবাদি সরাসরি প্রচার করে। এরা ইসলামকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে, সাধারন অজ্ঞ মুসলিমদের ফাঁদে আটকানোর আশায়। কোয়ান্টাম ম্যাথড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ইতোপূর্বে অনেক আর্টিকেলে করেছি[৬] তাই নতুন করে পুরোনো কথা লিখতে চাইনা।
Eastern mystical initiations(পূর্বাঞ্চলীয় রহস্যবাদী শিক্ষা) গুলো মানুষকে আত্মপূজা,মনের পূজা, প্রকৃতিপূজা, সর্বেশ্বরবাদ (প্যান্থেইজম), পুনর্জন্মবাদ প্রভৃতি মৌলিক বিশ্বাসের প্রচার করে। যাদুবিদ্যা,জ্যোতিষবিদ্যার চর্চাকে উন্নীত করে। সেইসাথে শয়তান জ্বীনকে শরীর ও মনের উপর পূর্ন কর্তৃত্বদানে উৎসাহিত করে। ascended masters, higher self, spirit guide,higher beings, light beings,angelic entities প্রভৃতি শব্দ দ্বারা শয়তান জ্বীনের সাথে শারীরিক মানসিকভাবে সংযোগ সাধনের ব্যপারে উৎসাহিত করে। ধ্যানের মাধ্যমে সে উপায় শিখিয়ে দেয়। এরা থার্ডআই, গডরিয়েলাইজেশন, ওয়াননেস, এনলাইটমেন্ট, সাইকিক পাওয়ার,দেহচক্রের বিকাশ, কুণ্ডলীনি শক্তির জাগরণের নামে জ্বীনদের কে সেচ্ছায় শরীরমনে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেয়।পাশাপাশি বিভিন্ন মাজহাবের যাদুবিদ্যার শিক্ষা দেয়। এক পশ্চিমা উইচক্র্যাফটের ফেইসবুক গ্রুপের উইক্কান এডমিন Shawnda Clawson কে higher self এর ব্যপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল যার সাথে তারা শারীরিক ও আত্মিক সংযোগের জন্য অনেক চেষ্টা করে। উত্তরে তিনি সরাসরি সত্যতা স্বীকার করেন, নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেনঃ
সুতরাং দেখতেই পারছেন, এইসব মিস্ট্রিস্কুলের আল্টিমেট শিক্ষা প্রত্যেকের অদৃশ্য সহচর ক্বারীন জ্বীন-শয়তানের সাথে নিজেদের সমার্পন। অর্থাৎ Spiritual Satanism। সুতরাং আজ যারা মুসলিম হয়েও নিউএজ/থিওসফিক্যাল সোসাইটির এদেশীয় শাখা কোয়ান্টাম ম্যাথডে ভিড়ছে, তারা কোন পথে হাটছে!?
একদম কাকতালীয়ভাবে হিন্দুয়ানি শিক্ষা পাশ্চাত্যে প্রবেশ করেনি। এর পেছনে বড় ধরনের উদ্দেশ্য আছে। ফ্রিম্যাসন সদস্য স্বামী বিবেকানন্দ এমনিতেই বেদান্তবাদ প্রচারের জন্য যায়নি। এসবের পেছনে আড়ালে তারাই ছিল, যারা শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে। এজন্যই জাতিসংঘ যোগসাধনার দর্শনকে এখন সবচেয়ে বেশি সমর্থন করে। তারা বিভিন্ন যোগসাধনা ধ্যানের সংগঠনগুলোয় অর্থায়নের দায়িত্বেও ছিল। আজও আছে। এমনকি জাতিসংঘের কার্যালয়ে ধ্যানে বসার কক্ষের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আজ জাতিসংঘ শান্তির জন্য ধ্যান যোগসাধনাকে সমর্থন করছে জোড়ালোভাবে।
তারা আন্তর্জাতিক যোগসাধনা দিবস প্রতিষ্ঠা করে[৮]। ভারতের 'ঔঁম মন্ডল' নামের একটি হিন্দুত্ববাদি অকাল্ট সংগঠন ছিল, যারা সম্প্রতি নাম পরিবর্তন করে রাখে ব্রহ্মকুমারী! জাতিসংঘ এই অকাল্ট সোসাইটিকে জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক এনজিও হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এতটুকুই নয়, জাতিসংঘ Economic and Social Council (ECOSOC) এর General Consultative Status দান করে। এছাড়াও, ব্রহ্মকুমারী বা ওমমন্ডলকে ইউএন Department of Public Information (DPI) এর এসোসিয়েট স্ট্যাটাস দান করে,United Nations Children's Fund (UNICEF) এর Consultative Status দেয়। United Nations Environment Assembly of UNEP এর Observer Status দেয়। ব্রহ্মকুমারী এখন UN Framework Convention on Climate Change (UNFCCC) এর পর্যবেক্ষক। Education for Rural People (ERP), Food and Agricultural Organisation (FAO) এর Flagship Member এর মর্যাদাও দেওয়া হয়[৭]।
এবার আশাকরি বুঝতে পারছেন এই যোগসাধনার বিপ্লবের পিছনে কারা আছে।এদের গোড়া কতটা শক্ত, সেটা বুঝতে আশাকরি কষ্ট হচ্ছে না। নিচের ছবিটায় যে বইটাকে দেখছেন, সেটা ১৯৮৯ সালে র্যাল্ফ ইপারসনের লেখা।
ডান পৃষ্ঠার মধ্যভাগে দেখছেন, এতে তিনি One World Religion এর কথা উল্লেখ করেন, অর্থাৎ প্রচলিত ধর্মগুলোকে উচ্ছেদ করে একটি বিশ্বাসব্যবস্থাকে সমাজে চালু করা হবে যেটা হবে আত্ম বা নিজের মনের পূজা। বাস্তবে জাতিসমূহের ঐক্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত ইউএন ঠিক এই ধর্ম বা দর্শনের দিকে জাতি সমূহকে ধাবিত করার জন্য কাজ করছে। শুনেছি জাতিসংঘের কথিত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের আচার্য রজনীশ অশ্বের গ্রন্থসমূহ পড়তে দেয়! আজকের Atheism বা নাস্তিক্যবাদ যেটাকে সর্বত্র দেখা যায় সেটার পিছনেও জাতিসংঘ এবং তাদের পেছনের হায়ারার্কির(শ্রেণীগোষ্ঠী) হাত আছে। কেননা, নাস্তিক্যবাদ হচ্ছে সর্বেশ্বরবাদেরই সন্তানস্বরূপ। প্যান্থেইস্টিক মতবাদ সমস্ত শয়তানি আকিদার জন্মদাত্রী। সমস্ত মিস্ট্রি স্কুলের সার্বজনীন শিক্ষা। এতে করে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ধারনা তো একদিকে নস্ট করাই হয়, উপরন্তু সমস্ত সৃষ্টিকে দেবত্ব(divinity) দান করে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসের নূন্যতম দরজাটিও বন্ধ করা হয়। নাস্তিক্যবাদীদের একটা বড় সংখ্যা এগনস্টিসিজমের(অজ্ঞেয়বাদ) দিকে হাটে, কিন্তু সর্বেশ্বরবাদে সে পথও থাকে না,কারন সব কিছুই ঈশ্বর! নাস্তিক্যবাদে যেমন সৃষ্টিকর্তার কোন আলাদা স্বত্ত্বাগত অস্তিত্বে বিশ্বাস করা হয় না, তেমনি সর্বেশ্বরবাদেও করা হয়না, এজন্য উভয় একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান যাদুকরদের এই বিশ্বাস প্রচারের দায়িত্বে আজ সরাসরি জাতিসংঘ কাজ করছে। জাতিসংঘকে তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র সেই থিওসফিক্যাল মসীহ বা হিন্দু/বৌদ্ধদের/ইহুদীদের শেষ অবতারের কাজ অর্ধেক করে রাখার জন্য, তার জন্য পরিবেশ তৈরির জন্য।
U Thant নামের জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেল বৌদ্ধদের ধ্যান এবং জাতিসংঘের ধ্যানের কক্ষের ব্যপারে বলেন, 'এটা মনকে সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে এবং মনোযোগ, বুদ্ধিমত্তা, সচেতনতা বাড়ায় এবং সর্বশেষে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করায় সাহায্য করে।'
United State এর permanent representative, Andrew Young U.N. কে ধ্যানকক্ষের ব্যপারে বলেনঃ 'আমি প্রার্থনা করি যেন, ওই ধ্যানকক্ষ জাতিসংঘ ছাপিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করুক।'
তিব্বতীয় গুরু, Djwhal Khul বলেনঃ 'ঐশ্বরিক ভালোবাসার অভিব্যক্তি এখনো তৈরির পথে আছে, খুব কম মানুষই এ কথার মানে বোঝে। কিন্তু প্রতীকীর মাধ্যমে বলব যেহেতু জাতিসংঘের(UN) উত্তরণ ঘটেছে সত্যিকারের ক্ষমতার দ্বারা সেহেতু পৃথিবীর কল্যান নিশ্চিত হয়েছে। এই কি কল্যান নাকি কার্যত ভালবাসা? সত্যিকারের মানব সম্পর্ক বলতে কি মানব সম্প্রদায় এবং জাতিসমূহের প্রতি ভালবাসা বোঝায়? আন্তর্জাতিক সহযোগীতা বলতে কি সারা পৃথিবীর(মানুষের) প্রতি ভালবাসা বোঝায়? এই জিনিসগুলোই ঐশ্বরিক ভালবাসা যেটা ক্রাইস্টের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। আর এই জিনিস গুলোই তাই যার জন্য আমরা জাতিসংঘের মাধ্যমে কাজ করছি,যাতে তাকে(ক্রাইস্টকে) সত্ত্বায় আনয়ন করা যায়। আমরা এ কাজটা অনেক বড় পরিসরে করছি বর্তমানে। এমন কেউ আছে যারা কাঠামোগত(hierarchically) ভাবে সাহায্য করছে এবং ভবিষ্যতেও সাহায্য করবে।"
অন্যত্র বলেন, "জাতিসংঘের মধ্যে বীজের ন্যায় আন্তর্জাতিক যোগসাধনাকারী চিন্তাশীল গোষ্ঠী আছে। একদল চিন্তাশীল জ্ঞানী নারীপুরুষ যাদের হাতে মানবজাতির ভাগ্য নির্ভর করে।"
ট্রায়াঙ্গল বুলেটিন(বাতেনিয়্যাহদের ম্যাগাজিন) ৪৭ এ নিচের কথাগুলো এসেছেঃ
"একুরিয়ান যুগে ক্রাইস্ট এর আবির্ভাবের এবং তার কর্মগুলোকে সম্পাদনের পূর্বেই মানবজাতির অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ করবার মত রয়েছে। আজকের পৃথিবীর অব্যবস্থাপনা ভারসাম্যহীনতাকে শুদ্ধ করা ক্রাইস্টের কাজ নয় যা বিগত শতাব্দীগুলোয় মানবজাতি করেছে। তিনি বর্তমানের রাজনীতির দ্বারা তৈরি বিশ্বব্যাপী দারিদ্র,ক্ষুধামুক্ত এবং অস্ত্রহীন করবার কাজ করবেন না। আমরাই এই সমস্যাগুলো তৈরি করেছি, এইগুলো মানুষের অন্তরের বোধগম্যতার বাহিরের বিষয় নয়, আমরা বিষয়গুলোকে বিবেচনা করব এবং স্বার্থপরতাকে ত্যাগ করব, যার জন্য দরকার জাতির সংঘবদ্ধ কর্ম। এটা মানবজাতির আধ্যাত্মিক দাবি এবং আধ্যাত্মিক দায়িত্ববোধ যে তার নিজ বাড়ি নিজেই পরিপাটি করবে।"
থিওসফিস্টদের নেত্রী Alice A. Bailey, তার
The Reappearance of the Christ এ বলেন, "ওই কাঠামোগত শ্রেনীগোষ্ঠী(শাসকের উপরের গোপন ব্যক্তিবর্গ বোঝাতে) এ মুহূর্তে জাতিসংঘের(UN) এ্যসেম্বলিকে পুনর্গঠনের জন্য চেষ্টা করছে। এই অব্যক্তিক শক্তি তার গ্রাহক জাতির গ্রহণেচ্ছার উপর নির্ভর করে, যেটা বিবর্তনের ফলে হওয়া সত্যিকারের সিদ্ধির উপর নির্ভর করে। জাতিসমূহকে এখন বোঝানো হয় একত্রিত আত্মকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীকে যারা নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টায় রত। ওই হায়ারার্কি বা শ্রেণীগোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, গঠনমূলক এনার্জি বিতরন যেটা একতার থিওরিকে ধীরে ধীরে চর্চায় পরিনত করবে এবং "ইউনাইটেড"(সংঘ) শব্দটি সত্যিকারের অর্থপ্রদ তাৎপর্যে পরিনত হবে।" [৯]
অতএব, তাদের মধ্যে পারস্পারিক স্বীকৃতি(Mutual Recognition) আছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার। একদিকে ব্রহ্মকুমারী বা ঔঁম মন্ডল সোসাইটিকে দিয়ে সারাবিশ্বে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে প্যাগানিজম তথা প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান মিস্ট্রি স্কুলের প্রসার, অন্যদিকে এই শিক্ষার শিক্ষকদের মুখে জাতিসংঘের বাহবা দান! যে বিষয়টা বিস্মিত করে, ইব্রাহীমের(আ) দ্বীনের বিদ্বেষী যাদুশাস্ত্রভিত্তিক কুফরি দর্শনের প্রচারকারীরা কোন ক্রাইস্টের কথা বলছে? এটা কি এন্টি ক্রাইস্ট নাকি ইসা ইবনে মারিয়াম(আঃ)!? আপনাদের কি মনে হয়?
ব্রহ্মকুমারীর অফিশিয়াল ওয়েব পেইজ অনুযায়ী, "জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ব্রহ্মকুমারী সারাবিশ্বের ১১০ টার বেশি দেশে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে।জাতিসংঘের নিজস্ব আন্তর্জাতিক এনজিও হবার পাশাপাশি এটা জাতিসংঘের এবং অর্থনৈতিক -সামাজিক কাউন্সিলের(ECOSOC) পরামর্শদাতার মর্যাদাও অর্জন করেছে। এটা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল, আবহাওয়া পরিবর্তন,খাদ্যসংকট, লিঙ্গসমতা, গ্লোবাল পাব্লিক হেলথ,মানবিক জরুরী সেবা,মানব অধিকার,নারী শিশু যুবক, আন্তর্জাতিক দশক ও দিবসের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নীতিমালা এবং উদ্দেশ্য প্রচার,অকাল্ট আধ্যাত্মিকতার পথ প্রচারে কাজ করছে।"[৭]
অর্থাৎ বেদান্তবাদ,বৌদ্ধদর্শন প্রচারে পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী কুফফার জোট দাপটের সাথে কাজ করছে। এজন্যই বাংলাদেশে কোয়ান্টাম ম্যাথড মাথা উচু করে চলছে, মাঝেমধ্যে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন যোগসাধনা শিক্ষার অনুষ্ঠান প্রচার করছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের ব্রহ্মকুমারী সংগঠনটিও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে[১০]। এভাবেই বাহ্যিকভাবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সৃষ্ট (কুফফার)জাতিসংঘ "ওঁমশান্তি" প্রচারের দ্বারা শান্তিপ্রতিষ্ঠার কাজ করছে। মসীহের প্রতীক্ষায় থাকা ইহুদীদের বাবেল শহর থেকে গৃহীত সেই কাব্বালার অনুসারী প্লেটোর আদর্শ শাসন ব্যবস্থার স্বপ্ন পূরণে এক সরকারকেন্দ্রিক বিশ্বশাসন ব্যবস্থা গঠনের (Totalitarian One World Government) জন্য জাতিসংঘ(United Nation) ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই দেশ ও জাতিসমূহ একত্রিত হবে।
পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্ট(যাদুবিদ্যা) দর্শনের প্রচারে হলিউড বসে থাকে নি। ফিল্মগুলো বেদান্তবাদ এবং বৌদ্ধ অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউ প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছে। “The Force”, “Star Wars,” ফিল্ম গুলোয় হলিউড সৃষ্টিজগতের আদি অন্তে হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা অনুযায়ী ব্রহ্মার ধারনাকে প্রমোট করে। “The Matrix,” ফিল্ম সিরিজে বৈদিক মায়াতত্ত্ব এবং বৌদ্ধ দর্শনকে গভীরভাবে প্রকাশ করে। Star Wars এর নির্মাতা জর্জ লুকাস হিন্দু বেদান্তবাদের অনুসারী জোসেফ ক্যাম্পবেলের থেকে ধারনা নিয়েছে। এছাড়াও লিটল বুদ্ধ, সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত, কুন্ডুন, The Last Airbender, Interstellar (2014), Dr Strange, Inception,I origins, Avatar সহ এখনো অসংখ্য পূর্বাঞ্চলীয় বৈদিক আধ্যাত্মবাদ নির্ভর film তৈরি করছে। পেপার পেন্সিল নির্ভর মাধ্যমের তুলনায় আধুনিক যুগের মানুষেরা ভিডিও বা চলচ্চিত্রকে বেশি পছন্দ করে, এজন্য ফিল্মের দ্বারা যেকোন কিছুর চেয়ে বেশি বড় পরিসরে প্রচারণা চালানো যায়। যেহেতু অনেক বড় বড় রাজনৈতিক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা আছে, সেখানে একই শয়তানি শক্তির ক্রীড়ানক হলিউডের এটা অবশ্যই মস্ত বড় দায়িত্ব। তারা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনে রত আছে।[১১]
এভাবেই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার দরুন বৌদ্ধ ধর্ম এখন অস্ট্রেলিয়া তে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু ধর্ম। আমেরিকাতেও বেদান্তবাদী দর্শন, যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক প্যাগান আধ্যাত্মিকতার মহাবিপ্লব চলছে। পাশ্চাত্যে হিন্দুত্ববাদ পৌছানোর সাথেই সংস্কৃত হয়ে যায় পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক পবিত্র ভাষা। বিভিন্ন ভাষাবিদ ইতিহাসবিদরা সভা সেমিনার ইন্টার্ভিউতে সংস্কৃতের বৈজ্ঞানিক সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা-গবেষণা চলত। এক সাক্ষাতকারে পদার্থবিজ্ঞানী এবং সংস্কৃতবিদ প্রফেসর ডিন ব্রাউন সংস্কৃতের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, এটা ইউরোপিয়ান অনেক ভাষার মা। এটা একটা খুবই সায়েন্টিফিক ভাষা। বৈদিক মিস্ট্রি স্কুলটিও অনেক উচুস্তরের এবং অত্যন্ত জটিল ট্রেডিশান।তিনি পদার্থবিজ্ঞানের এবং বেদের ব্যপারে বলেন, "বেদের ইক্যুয়েশন হচ্ছে Atman=Brahman, সমস্ত কস্মোলজি এর থেকে আসে"। তিনি প্রশ্নকর্তার সাথে একমত হয়ে বলেন এটা অনেকটা E=Mc2 এর অনুরূপ এবং বলেন বেদকে ভালভাবে বোঝা গেলে সত্যিকারের ফিজিক্স ও মেটাফিজিক্সকে বোঝা যাবে। ডিন ব্রাউন যোগসূত্র এবং উপনিষদের অনুবাদক।[১২]
পাশ্চাত্যে সংস্কৃত ও বৈদিক শাস্ত্র পৌঁছানোর আগে বিজ্ঞানের মূল উৎস ছিল হার্মেটিক এবং কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রগুলো। কথিত বিজ্ঞানীগন যাদুশাস্ত্রভিত্তিক দর্শনগুলোকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মোড়কে নিয়ে আসতেন। আপনারা বিগত পর্বগুলোয় কোপার্নিকাস, কেপলার, বেকন, আইজ্যাক নিউটনদের দেখেছেন। কিন্তু যখন পাশ্চাত্যে তন্ত্র মন্ত্রে ভরা বৈদিক শাস্ত্রগুলো পৌছতে লাগল, কথিত বিজ্ঞানীগনও অন্যসবার মত বেদান্তবাদের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। এরপরে একে একে অসংখ্য তত্ত্ব বেদান্তবাদ বৌদ্ধদর্শন থেকে গ্রহন করে বিভিন্ন গাণিতিক যুক্তি দ্বারা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে। অর্থাৎ হাজার বছর ধরে সুসংরক্ষিত পূর্বাঞ্চলীয় বা বৈদিক অকাল্ট ট্রেডিশান বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে। ভারতীয় ঋষি পুরুতঠাকুর মুশরিকদের কুফরি বিদ্যা ও বিশ্বাসব্যবস্থা হয়ে যায় স্বতঃসিদ্ধ পবিত্র বিজ্ঞান!
১৯৭৪ সালে কলোরাডো তে প্রতিষ্ঠিত হয় নারোপা বিশ্ববিদ্যালয়, সেইসাথে মহাঋষি মহেষযোগী বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বিশ্বনন্দিত পদার্থবিজ্ঞানীরা এসব শিক্ষালয়ে যোগসাধনা এবং নমঃ নমঃ জপেন। তাদের কেউ আবার CERN এর পদার্থবিজ্ঞানী। অপবিজ্ঞানের বেদান্তবাদী এ নতুন ধারা নিয়ে বিস্তারিত আসছে পরবর্তী পর্বে। বিইযনিল্লাহ।
[চলবে ইনশাআল্লাহ]
Ref:
[১]
https://www.ancient.eu/The_Vedas/
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vedas
https://www.thedailycampus.com/opinion/21264/কত-রক্তে-রঞ্জিত-আমরা-বাঙালি-জাতি
onushilon.org/animal/human/rece/arza.htm
https://horoppa.wordpress.com/2015/07/01/carvaka-philosophy-sindhu-savyata-prachin-dhara/
suprovatsydney.com.au/-p1179-105.htm
rajatdevp.blogspot.com/2018/10/archaeology.html?m=1
https://fb.com/permalink.php?story_fbid=1256370707855683&id=950632021762888
https://en.m.wikisource.org/wiki/Atlantis:_The_Antediluvian_World/Part_5/Chapter_10
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Japhetites
https://www.ancient.eu/Aryan/
https://www.ancient-origins.net/history-famous-people/true-aryans-who-were-they-really-and-how-were-their-origins-corrupted-009075
https://www.conspiracyschool.com/dying-god/aryan-myth
[২]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Buddhism_in_the_West
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Buddhist_modernism
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Greco-Buddhism
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Greco-Buddhist_Art
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indo-Greek_Kingdom
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Greco-Bactrian_Kingdom
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hinduism_in_the_West
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hippie
https://www.myss.com/free-resources/world-religions/hinduism/hinduism-in-the-west/
[৩]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Religious_views_of_Adolf_Hitler
https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Occult_Roots_of_Nazism
[৪]
https://www.theosophytrust.org/1105-gandhi-on-theosophy-and-theglobal-civilization-of-tomorrow
[৫]
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_20.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_73.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_4.html
[৬]
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_899.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_86.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_14.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_36.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/occultism_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/law-of-attraction_29.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/law-of-attraction_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_8.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_90.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_96.html
https://aadiaat.blogspot.com/2019/01/blog-post_85.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/psychic-ability_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_55.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_39.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_32.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/03/bio-energy-card_21.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_31.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_72.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/chakra-third-eye-yoga_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/one-world-religion_10.html
[৭]
https://www.brahmakumaris.org/about-us/united-nations
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Brahma_Kumaris
[৮]
https://www.un.org/depts/dhl/dag/meditationroom.htm
https://gratefulness.org/blog/united-nations-meditation-peace/
https://www.un.org/en/events/yogaday/
https://theosophy.wiki/en/United_Nations
[৯]
www.aquaac.org/un/medatun.html
[১০]
https://m.youtube.com/watch?v=wrtk4EyfKP0
https://m.youtube.com/watch?v=RocaWJbAoXc
https://m.youtube.com/watch?v=sRICavTvQCs
https://m.youtube.com/watch?v=AEmineosGFA
https://m.youtube.com/watch?v=lxMeL0F1tTk
[১১]
https://www.theguardian.com/film/2014/dec/25/movies-embraced-hinduism
https://www.worldreligionnews.com/religion-news/hinduism/hinduism-subtle-influence-hollywood-movies
[১২]
https://m.youtube.com/watch?v=7Brv2FaOluU&client=mv-google
[১৩]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/New_Age
https://www.patheos.com/library/new-age
[১৪]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Swami_Vivekananda
https://en.m.wikipedia.org/wiki
Teachings_and_philosophy_of_Swami_Vivekananda
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hindu_revivalism
[১৫]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Theosophists
বিগত পর্বসমূহের লিংকঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html