Sunday, December 8, 2019

False Predictions

ছোটবেলায় ইংরেজি বইয়ে একটা গল্প পড়েছিলেন, এক রাখাল প্রতিদিন চিৎকার করত বাঘ বাঘ বলে, আতঙ্কিত গ্রামবাসী যখন লাঠিসোঁটা নিয়ে আসতো, দেখতো কিছুই আসেনি। রাখাল বালক মজা করছে, এভাবে নিয়মিত ধোকা দিত। এক দিন যখন সত্যিই বাঘ এলো কেউ তার চিৎকারে কর্ণপাত করেনি। কারন সবার ধারনা ছিল এবারো মজাই করছে।
.
অনেক ফেসবুকার দ্বীনি বান্দা আছেন যারা নিয়মিত শ্বাসরুদ্ধকর লেখা পোস্ট করেন। কন্টেন্ট এরকম থাকে যে, অমুক দেশে এই ঘটেছে সুতরাং সামনে এই ঘটনা গুলো ঘটবে। তুরস্কে এই হয়েছে,অমুক প্রেসিডেন্ট এই করছে, সামনে এই করবে, শীঘ্রই সিরিয়ায় অমুক দল অমুক স্থানে যাবে, অমুকের সাথে চুক্তি করবে, অমুকের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে মালাহামার শুরু হবে, এরপরে অমুক বাহিনী অমুক স্থানে গিয়ে অমুকের সাথে যুক্ত হবে, সেখানে অমুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হবে। এরপরে অমুক নেতার মৃত্যুর পরে এই এই ঘটনা ঘটবে এরপরেই বের হবে ইমাম মাহদী। ইমাম মাহদী অবশ্যই অমুক স্থানে বের হবে, অমুক দেশের যুদ্ধে এভাবে ওভাবে নেতৃত্ব দেবে। অমুক দেশের সাথে যুদ্ধ হবে, এরপরে বের হবে দাজ্জাল....। আমি তাদের মত অত সুন্দর পারি না। তারা কেমন যেন জ্যোতিষী বা সুথসেয়ারদের মত বেশ কনফিডেন্সের সাথে এগুলো বলে যান। এখন আবার নতুন সংযোজন ঘটিয়ে শেষে লেখেন 'ওয়া আল্লাহু আ'লাম'! এতে গ্রহণযোগ্যতা একটু ভারী হয়, নিজেদের সার্কেলের বাহিরেও এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়।
.
তারা বর্তমান যেকোন ঘটনাকে শেষ যুগের বর্ননায় আসা হাদিসের মিলিয়ে ব্যাখ্যা করে। সৌদি বা ইজরাইল অমুক দেশে বা নিজের দেশে কি করলো সেটার সাথে ২/৩% সাদৃশ্যপূর্ণ কোন একটা হাদিস মিলিয়ে বলে দেয়, এইতো! এটা হলো সামনে এটা হবে। এভাবে করে পাঠকদেরকে জিইয়ে রাখে। তারা প্রতীক্ষায় থাকে, 'এই বুঝি এটা হলো, এই বুঝি মালহামা শুরু হয়ে গেল, এই তো আগামীবছরই ইমাম মাহদী বেরিয়ে গেল, হাদিসে দাজ্জালের ব্যপারে এই বিষয়টি কেউ বোঝে নি। এই যে এটাই হচ্ছে অমুক হাদিসের আসল ব্যাখ্যা। সৌদির বাদশাহ মারা যাবার পর ক্ষমতা নিয়ে রাজপুত্রদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হবে এরপরে হাজীলুন্ঠন হবে এরপরে সেখানে বের হবে ইমাম মাহদী... এই যে বাদশা মারা গেছেন, পুত্রদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে সুতরাং আগামীবছর.....।'
.
এভাবে করে পাঠকরা সেই ২০১৩/১৪(বা এরও বহুত আগে) থেকে 'আগামীবছরই হয়ত ইমাম মাহদী আসছেন, মালহামা লেগে যাবে' বলে আশা করতে থাকে। কিন্তু বছরের পর বছর যায় তেমন কোন পরিবর্তন ঘটে না। আসলে এরকম ফলস প্রেডিকশান করে তেমন একটা লাভ নেই।সবাই জানে এখন শেষ মূহুর্ত, তাই বলে সরাসরি বর্তমানের শাসকদের কথাই হাদিসে বলা হয়েছে ভাবা এক রকমের বোকামি। এই জ্ঞান আল্লাহই ভাল রাখেন। বড় বড় আলামত প্রকাশ পেলে স্পষ্টভাবে সব প্রকাশিত হতে থাকবে, তখন থেকে হাদিসের কথা গুলোর সরাসরি প্রতিফলন দেখা যাবে। সেটা এখনও শুরু হয়নি। এভাবে জ্যোতিষী স্টাইলে ভবিষ্যদ্বানী করবার মত লেখা লিখে সাধারন আল্লাহর বান্দাদের মনে আশার প্রদীপ বার বার জ্বালানো আর নিভানো একদমই সমর্থন করিনা। তাছাড়া ওগুলো ফলসইন্টারপ্রিটেশন। এ ব্যপারটা অনেকটা বাঘ আসছে বলে চিৎকার করবার মত অতঃপর পাঠকরা পরের বছর আবিষ্কার করে সব কিছুই আগের মতই চলছে, কোন পরিবর্তন নেই! এক পর্যায়ে দেখা যাবে এ সমস্ত আর্টিকেলের পাঠকদের মধ্যে একরকমের অবিশ্বাস,সংশয়ের জন্ম নেবে তাই এই কাজে কল্যাণের তুলনায় অকল্যাণই বেশি বয়ে আনে। দেখা যাবে আসল মুহুর্তে এইসব কন্টেন্টের 'ফর্মার রিডারগন' একদমই নিষ্ক্রিয়-নির্বিকার, অনেকটা বাঘের চিৎকারে সাড়াদানকারী গ্রামবাসীর মত। ইতোমধ্যে অনেকে এরকম হয়ে গেছে ।এজন্য প্রথমেই উদাহরণটা টানা। কুফফারদের পলিটিক্যাল ব্যপারে আপনার যতই পাণ্ডিত্য থাকুক না কেন, সেগুলো দ্বীনি পরিসরে খুব বেশি কাজের না। অন্যদিকে হাদিসের অপব্যাখ্যা চরম ধৃষ্টতাপূর্ন কাজ। সালাফ যেভাবে কুরআন হাদিস বুঝেছে তার বাহিরে গিয়ে বুঝতে গেলেই গোমরাহ হবার সুপ্রশস্ত আশংকা।

0 Comments:

Post a Comment