Sunday, December 8, 2019

দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা

যেকোন লোক যতক্ষণ না দ্বীনের মৌলিক আকিদার জ্ঞান অর্জন করবে, যতক্ষন না তাওহীদের আরকান, তাওহীদের চার স্তরের ব্যপারে জানবে, কালেমার প্রকৃত অর্থ জানবে সে ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের ব্যপারে জ্ঞানগত কূল কিনারা পাবেনা। নিজের চোখে সত্য মিথ্যাকে দেখতে পারবে না, সবসময় অমুক শায়েখ কি বলল, অমুক হুজুর এই বলেছে সেই বলেছে...অমুক হুজুর কি ঠিক বলেছেন নাকি ভুল বলেছেন ইত্যাদি নানা সংশয় আর জিজ্ঞাসার উপর করে থাকবে, অন্য কারো মতের উপর নির্ভর করতে হবে। কারন তার নিজের কাছে হক্ক বাতিল নির্ণয়ের কষ্টিপাথর নেই। সে কখনোই জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যপারে বুঝবে না। আর দশটা মূর্খের ইডিওলজির থেকে নিজের মধ্যে কোন পার্থক্য পাবে না। সাহাবীদের কাছে ওইসব মৌলিক জ্ঞান ছিল। তখনকার যুগে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর দাওয়াত এখনকার মত রিডিফাইন করতে হত না, এমনিতেই কাফির মু'মিনরা বুঝে যেত এর দ্বারা কি বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু এখন আলাদাভাবে দিতে হয় কারন আমাদের দেশে মুরজিয়া মু'তাযিলা মার্কা দ্বীনের প্রচার হয়েছে। সুফি মিস্টিকরা ছিল প্রিচার! এদেশে এজন্যই ওযূ ভঙ্গের কারন জানি, রোযা ভঙ্গের কারন জানি কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারন জানিনা।


ওই লেখা লিখে লাভ কি যা কোন পরিবর্তন আনে না, যা কাউকে পথ দেখায় না, যাতে শুধুই ফ্যান ফলোয়ার্স লাইক কমেন্ট বাড়ে? অনেক এ্যানালিটিক্যাল ইন্টেলেকচুয়াল পোস্ট লিখে সাময়িক বুদ্ধিবৃত্তিক জাহির করে ভাব নিয়ে লাভ কি!?
.
অনলাইনে লেখকদের অভাব নাই, কিন্তু উনাদেরকে কখনো দেখবেন না ফলোয়ারদের সামনে নিজেদের জ্ঞানের সোর্সকোড উন্মুক্ত করতে। হয়ত অনেকের কাছে ব্যপারটা প্রেস্টিজিয়াস, ওজন কমে যাবার ভয় থাকে। যদি জিজ্ঞেসা করেন কোন কিতাবাদি পড়ে ইল্ম নিয়েছেন, হয়ত গর্বের সাথে বলবে, কুরআন ও হাদিস নিজেই এ্যানালাইজ করে জ্ঞানী হয়ে গেছেন। বইয়ের নাম যদি বলেও সেগুলো আপনার হাতের নাগালের বাহিরে থাকবে অথবা আরবিভাষার। অথবা এমন কোন আলিমের অনুসরন করে বলে নাম উল্লেখ করবে যার নাম ধরে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখবেন উনি আরবিতে কথা বলেন। ইংরেজি অনুবাদের ভিডিও খুব একটা নেই। এদিকে আপনি আরবিও জানেন না, ইংরেজিতেও দুর্বল। তারপর? তারপরে যেখানেই আছেন সেখানেই থাকবেন। দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অন্বেষণের ইচ্ছা থাকার পরেও পথ পাচ্ছেন না। কোন একটা সেলেব্রিটি দ্বীনদারকে প্রশ্ন করে দেখুন। ম্যাসেজের রিপ্লাই পান কিনা সন্দেহ, পাইলেও রোবটের মত বলবে, একজন আলিমের সহবতে থাকুন। আচ্ছা, আপনাদের কয়জনের বাড়ির পাশে কওমি মাদ্রাসা আছে? আর ওই মাদ্রাসার আলিমদের মধ্যে কয়জন আছে যারা কালেমার অর্থই ভাল করে জানে, তাওহীদের রোকন জানে এবং তাতে আমল করে!?
.
ঘুরে ফিরে আপনাকে ওই একই গর্তে থাকতে হবে।সারাজীবন "জ্ঞানী" ভাইদের পোস্ট পরে যেতে হবে। নিজে লিখার বা সত্যমিথ্যা বোঝার জ্ঞান সবসময় শূন্যের কাছে থাকবে। কারন আপনার কাছে তো জ্ঞানের কষ্টিপাথর নেই। সারাজীবন 'আমির হামজা এই বলেছে আর আজহারি হুজুর ওই বলেছে, মাদানি শাইখ এই বলেছে ফরাজি হুজুর এই বলেছে, কোন দিকে যাব?' এ অবস্থা থাকবে। অথবা জ্ঞানের দৌড় এরকম থাকবে যে, 'আমার প্রিয় সহিহ আকিদার আলেমরা হলো মুজাফফর বিন মুহসীন, মতিউর রহমান মাদানি এবং জসিমউদ্দিন রহমানী'(অনেকে এই বাক্যের কন্ট্রাভার্সিয়াল ইস্যুই ধরতে পারছেন না)। এই জন্য প্রথমেই বলেছি অধিকাংশ জ্ঞানী লেখক ভাইয়েরা তাদের জ্ঞান-কার্নেলের সোর্সকোড উন্মুক্ত করবে না। ইগোরও একটা ব্যপার আছে না!? আপনার মাতৃভাষায় কথা বলে এমন কোন হকপন্থী আলিমকে দেখালে, আপনি যদি সব বুঝেই যান তাহলে হয়ত তাদের অনলাইনে জ্ঞানের ওয়েট কমে যাবার আশংকাও থাকতে পারে।আমি ৫% ভাইদেরও কম দেখেছি যারা সত্যবাদী আলিমদের পথ দেখায়। যারা এমনটা করে তাদের দুনিয়াবি বুদ্ধিবৃত্তিক প্লেজার গ্রহনের ধান্ধা থাকে না। তারা খুব বেশিদিনও অনলাইনে থাকে না।




বাংলা ভাষায় জীবিত সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বিশুদ্ধ আকিদা/মানহাজের প্রচারকারী এবং হকপন্থী এক আলিমের নাম শাইখুল হাদিস মুফতি জসীমউদ্দিন রহমানি হাফিজাহুল্লাহু তা'য়ালা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা প্রথমদিকে অনেক আজেবাজে বক্তা/আলিমদের দেখিয়ে হঠাৎ তাকে চিনিয়েছিলেন। যখন তার কথা প্রথম প্রথম শোনা শুরু করি, দেখতাম উনি আমার অন্তরের কথাগুলোই বলতেন। শতভাগ মিলে যেত। পরবর্তীতে তার চিন্তাধারার খুঁত খুজতে কানখাড়া করে শুনতাম। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ পাইনি। তিনিই একমাত্র জনপ্রিয় আলিম যার নাম বাংলাদেশ ছাপিয়ে ভারতের তিনচারটা প্রদেশ পর্যন্ত পৌছেছে। যদিও ইল্মের সনদ নিয়েছেন দেওবন্দ থেকে কিন্তু চিন্তাধারা ও কর্মপন্থা সালাফিদের অনুরূপ(ভুয়া সালাফি নয়)। হাজারো জেনারেল লাইনের মানুষ তার থেকে ইল্ম শিক্ষা করেছে। যাদের আশেপাশে মাদ্রাসা নেই, চেনাপরিচিত ভাল আলিম নেই, হকপন্থী আলিম নেই, তাদের জন্য শাইখের বক্তব্য,লেখা বই অবশ্যই খুবই উপকারের। যারা ইসলামের মৌলিক জ্ঞান রাখে না, কোন ফ্রেম খুজে পায় না,পারপাজ খুজে পায় না, নানাবিধ সংশয়ে পড়ে আছে তাদের পথের দিশারি হিসেবে বাংলা ভাষায় শাইখের ২য় বিকল্প আর কেউ আছে বলে জানিনা। গত দুই পোস্ট তার পথকে তুলে ধরবার জন্যই লেখা।
.
খুব কাছের এক মানহাজি দ্বীনি ভাই(জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ড) আছেন যিনি প্রথম যখন শাইখের আলোচনা শুনেছেন, উনি বুঝতে পারেন এ লোক সাধারন কেউ নন। এরপরে ঢাকায় গিয়ে তার মসজিদে নিয়মিত বিভিন্ন দারসে উপস্থিত হতেন। উনি তার প্রায় সব বয়ান গুলো শুনেছেন। বিশেষ করে রেকর্ডেড গুলো। এখন প্রায়ই দ্বীনি মোজাকারায় কথা প্রসঙ্গে আসা আয়াত গুলোও চমৎকারভাবে বলে ফেলেন। তিনি অনেক অনেক আয়াত মুখস্ত করে ফেলেছেন শুধুমাত্র শাইখের লেকচার শুনে শুনে। দ্বীনের মৌলিক জ্ঞানগুলো তার থেকে নিয়েছেন। এখন আমি তাকে অনেক জ্ঞানী মনে করি। এইতো একটু আগে কথা হয়েছে। এখন আবারো সাক্ষাৎ হবে, রাত পর্যন্ত ভাল দ্বীনি আড্ডা হবে ইনশাআল্লাহ। শাইখের মোট রেকর্ডকৃত লেকচার প্রায় ৩৫০+ । তার আলোচনা বয়ান গুলো শুনলে চিন্তার অনেক দুয়ার প্রসারিত হয়। নতুন পার্স্পেক্টিভে সবকিছু দেখার মত চোখ সৃষ্টি হয়। সত্যমিথ্যা বোঝার কষ্টিপাথর অন্তরে তৈরি হয়। তিনি আলহামদুলিল্লাহ এমন সব আলোচনা করেছেন যা কোন আলিমদের করতে দেখবেন না। বিশুদ্ধ দ্বীনের কথা বলে গেছেন। ফলস্বরূপ অনেক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। কেউ যদি জিজ্ঞেসা করে বাংলাদেশের কোন আলিমের কথা শুনব? উত্তরে অবশ্যই বলব, শাইখ জসীমউদ্দিন রহমানি(হাফিঃ)। [কমেন্টে তার লেকচার ও কিতাবের ওয়েব লিংক... Worthy to write a blank disk(DVD) with all his recorded documents]। আগে মৌলিক আকিদার জ্ঞান নিয়ে এরপরে ইসলামের ইতিহাস, আল্লাহর রাসূল(সা) ও সাহাবিদের জীবনী, কর্ম,ওয়ার্ল্ডভিউ ইত্যাদির উপর লেখা লেজেন্ডারি বই এবং যুহুদ বা দুনিয়াবিমুখতার জন্য তাযকিয়া সংক্রান্ত শ্রেষ্ঠ বই গুলো পাঠের দ্বারা জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার মাঝে কল্যান আছে। আমি চাই প্রতিটি ভাইবোনের জ্ঞান ঐরূপ হোক যাতে করে আমিই তাদের থেকে নসিহা নিতে পারি।
.
আমার বাসার পাশে এক হক্কানি সিলসিলার মাদ্রাসা। সেখানকার আলিমদের সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। তাদের সাথে মাঝেমধ্যে আমার বসাও হয়। আপনাদের তাকদির আমার অনুরূপ না, তাই আপনারা কি করবেন ভেবেই লিখলাম। আমি আলিমদের অবস্থা জানি, তাই 'কোন এক আলিমের সহবতে থাকুন' এই মুখস্ত ডায়লগ দিতে অনীহা পোষন করি।






0 Comments:

Post a Comment