Friday, February 26, 2021

সিরাতুল মুস্তাকীমের দিকে আহ্বান

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় ভাই ও বোনেরা।

আমাদের মধ্যে এরকম অনেকেই আছি যারা দ্বীনের পথে চলতে ইচ্ছুক। এবং চলতে শুরু করলে খুব বেশিদিন কন্টিনিউ করতে পারি না।অল্প ক'দিন পরেই আগের পুরোনো জাহেলিয়াতে ফিরে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের তাবলীগ জামায়াতের ভাইয়েদেরও এমন হয়,তারা মাসে তিন দিন না সময় দিলে ধীরে ধীরে দ্বীন থেকে দূরে সরে যেতে থাকে, এমনিভাবে দেখা যায় চিল্লাদেনেওয়ালা ভাইয়েরা অনেকেও নামাজ কালাম ছেড়ে দেয়!!শিবিরের সাথী পদের ভাইয়েদেরও এ অবস্থায় যেতে দেখেছি! নিজের চোখেই এগুলো দেখেছি। কিন্তু এর রহস্য কি!? এমনটা হয় কেন?? আমরা কি কখনো ভাবি,কেন এমনটা হচ্ছে!?  এর অনেকগুলো কারনের অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে আমাদের ইলমের অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটি। আমরা জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞাত। দেখে দেখে শুনে শুনে নামাজ রোযা করি। সবাই কুরআন মানে তাই আমিও মানি, কুরআনে কি আছে জীবনেও আমরা উল্টিয়ে দেখিনা। অবিশ্বাস্য সত্য হচ্ছে আমরা অধিকাংশই কালেমা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর অর্থই পূর্নরূপে জানি না। আক্ষরিক অর্থটাকে নিয়েই বসে আছি আর দূরে থাকছি ওই অর্থ থেকে, যেটা সলফে সালেহীনগন জানতেন, রাসূল(স) শিখিয়েছেন আর যেজন্য তৎকালীন মক্কার পৌত্তলিকরা অস্বীকার করত। নিচে তিনটি অডিও বয়ানের ডাইরেক্ট লিংক দেওয়া হল,যা শুনলে গোটা থিংকিং প্যাটার্ন ঘুরে যাবে আর দ্বীনদারিত্ব অন্তরে স্থিরভাবে বসে যাবে(বিঈদনিল্লাহ)।

লিংক___

https://ia600807.us.archive.org/17/items/BanglaIslamicBestLecturesbooks/LaIlahaIllallah-ItsMeaning_ExplanationAndImplementation.Part-01.mp3

https://ia600807.us.archive.org/17/items/BanglaIslamicBestLecturesbooks/LaIlahaIllallah-ItsMeaning_ExplanationAndImplementation.Part-02.mp3

https://ia600807.us.archive.org/17/items/BanglaIslamicBestLecturesbooks/LaIlahaIllallah-ItsMeaning_ExplanationAndImplementation.Part-03.mp3


দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে পক্ষপাতহীন ইলম অন্বেষণে অন্তত  একবার বিনম্রচিত্তে পূর্নাঙ্গ কুরআন এর অনুবাদ পাঠ করা যেতে পারে যেহেতু আমরা আজমী। আর পাশাপাশি দুর্বোধ্য আয়াত বুঝতে কোন প্রসিদ্ধ তাফসীর কিতাব(যেমনঃতাফসীর ইবনে কাসীর) পাঠ করা যেতে পারে। 

সেই সাথে একবার নবী (স) এর জীবনী সম্বলিত কিতাব পাঠ করা যেতে পারে। 

আর রহিকুল মাখতুম:

http://download1326.mediafire.com/986djh2a0iyg/12d6iovh4locgnb/%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%82%E0%A6%B2+%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%AE+%28www.muslimmedia.info%29.pdf 


পাঠ করা যেতে পারে আসহাবে রাসূলের জীবনী। শোনা যেতে পারে রেইনড্রপ্স মিডিয়া পরিবেশিত সিরাহ...

উপরে প্রদত্ত তিনটি অডিও বয়ানসমূহ শাইখুল হাদিস মুফতি জসীমউদ্দিন রহমানী (হাফিঃ) এর। ইসলামের অন্যান্য বিষয় গুলো জানতেও তার অন্যান্য লেকচার শোনা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ তার লেকচারগুলোর মাধ্যমে আমাদের দ্বীন সম্পর্কে শিরক,বিদাত,গুলু, ইরজামুক্ত বিশুদ্ধ ধারনা অর্জন সহজ হবে। 

অন্যান্য অডিও লেকচার : https://archive.org/details/BanglaIslamicBestLecturesbooks


দাওয়াতের সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে শায়েখ এর বয়ান বাংলাদেশ,পশ্চিম বঙ্গ,আসাম উড়িষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত বলে মন্তব্য করেছিলেন আহলে হাদিসের শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেব।


শাইখ রহমানির কথা ভাবলে ইমাম ইবনে তাইমিয়া(রহ.) এর উক্তি স্মরনে আসে, তিনি বলেছিলেন হক্কপন্থী আলেমদের দু স্থানে খুজতে,  কবরে অথবা কারাগারের প্রকোষ্ঠে।

ওয়ামা তাওফিক ইল্লাবিল্লাহ।



[আনুমানিক ৩-৪ বছর আগের লেখা]

Monday, February 22, 2021

বর্তমান সময়ে দ্বীনের নিষিদ্ধ অধ্যায়

 


মানবরচিত সংবিধানের শাসক কস্মিনকালেও চাইবেনা যে আপনি তাওহীদ পরিপূর্নভাবে আকড়ে ধরুন, অথবা সে সম্পর্কে আপনার বোধোদয় হোক। ওরা ইনিশিয়্যাল স্টেজে চাইবে আপনি শুধু তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ অর্থাৎ আল্লাহকে রব হিসেবে মানুন এবং তাওহীদে উলুহিয়্যাতের 'অর্ধেকটা' জানুন এবং পালন করুন,এজন্য নামাজ যত ইচ্ছা পড়ার পড়ুন কিচ্ছু বলবেনা,রোযাও যত ইচ্ছা রাখুন, যাকাত হজ্জ্ব যত ইচ্ছা করুন। যত ইচ্ছা তাবলীগে সময় দিন,যত ইচ্ছা ওয়াজ মাহফিল করুন, যত ইচ্ছা পীরের দর্গায় বাশে ঝুলুন । কোন সমস্যা নাই, উলটা নিরাপত্তা লাগলে তাতেও ফ্রি সহযোগীতা করবে। দেখেননি ইজতেমায় তাগুতের গোলামরা হেলিকপ্টার দিয়ে নিরাপত্তা দেয়!! রুবুবিয়্যাত আর উলুহিয়্যাতের অর্ধেকটা নিয়ে থাকুন,  মাগার খবরদার!  তাওহীদে উলুহিয়্যাতের পুরোটা নিজে বোঝা যাবে না প্রচারও করা যাবেনা।  ওয়াজ মাহফিল করুন ভাল কথা, কিন্তু তাওহীদে পূর্নাঙ্গ আলোচনা করা যাবেনা। সেটা ফরবিডেন।এছাড়া যত কিচ্ছা কাহিনী আছে বলুন বা শ্রবন করে ইমোশিত হোন। যত সুর আছে দিয়ে ওয়াজ করে ওয়ায়েজিন তার স্কিল প্রদর্শন করুক। যত বার পারেন চিল্লা দিয়ে আসুন, সেটাকেই বুজুর্গির মাপকাঠি। । আর তাওহীদে উলুহিয়্যাতের পুরোটা অথবা হাকিমিয়্যাহ কোথাও বলতেও পারবেন না শুনতেও পারবেন না। কারন আপনি জেনে গেলেই আপনিই মৌলবাদী জঙ্গী। হাতে অস্ত্র না থাকলেও আপনি র‍্যাডিক্যাল ফ্যানাটিক জেলট! ইসলামের জ্ঞানের এই পার্টটা নিষিদ্ধ।  কোন পাঠ্যপুস্তকেও আনা যাবে না, হোক না সেটা মাদ্রাসা। যদি পড়তেও সুযোগ আসে, তবে তা বোঝা লাগবেনা,পালন করা তো দূরে থাক।।এর কারন কি????


কারন, এই শাসকগোষ্ঠী কক্ষনো চায় না আপনি কুফর বিত তাগুত এবং পরে ঈমান বিল্লাহ করুন(২:২৫৬)।অথচ এটাই তাওহীদের রুকন(শর্ত)। ওরা চায় না আপনি কুফর বিত তাগুতের দ্বারা কালেমার ' লা ইলাহা' এর স্বীকৃতি দিন এবং 'ইল্লাল্লাহু' দ্বারা ঈমান বিল্লাহ(মানে আল্লাহর উপর ঈমানের পরিপূর্ণতা দেন) সম্পন্ন করুন। তো প্রশ্ন হচ্ছে তাওহীদের রোকন 'কুফর বিত তাগুত' করলে শাসকগোষ্ঠীর ভয় কোথায়?


ভয় হচ্ছে, শাসকগোষ্ঠী নিজেদের আদর্শগত অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। যখন কোন মুসলিম আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান দ্বারা বিচার করে তখন সে কাফের হয়ে যায় (৫:৪৪)। আর যখন কেউ আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাকে হালাল করে আর হালাল কে হারাম করে এবং সেটাকে মানতে বাধ্য করে তখন সে 'তাগুতে' উন্নীত হয়। আর সবাই যদি তাওহীদের দুই রোকনের একটি তথা 'কুফর বিত তাগুত' করে, তবে মানব রচিত সংবিধানের শাসকদের কি দশা হবে? সুবহানআল্লাহ!  এই হচ্ছে কারন। অধিকন্তু কাফেরদেরই সাথে বন্ধুত্বের বৈধতা নেই, আনুগত্য তো দূরের কথা। এজন্য অইসলামিক বিচার ব্যবস্থার জন্যেই তারা কাফের হয়ে যায় এবং মুসলিমদের আনুগত্যের বৈধতা হারায়।এখানে ইজতেহাদ করে বৈধতা আরোপের সুযোগ নেই। আল্লাহই স্বয়ং ক্ল্যারিফাই করেছেন। আর এমতাবস্থায় ঐ মুরতাদ সারাদিন নামাজ-রোজা করলেও লাভ নেই যেমনটি একটি কাফের নামাজ রোজা পড়লে লাভ নেই,যদিও তারা প্রতিবছর হজ্জ্বে যান।


যাহোক,ঠিক এই কারনেই মানবরচিত কন্সটিটিউশনের শাসকগোষ্ঠীরা কোনদিনও চায় না তাওহীদ পূর্নাঙ্গভাবে বুঝুন বা পালন করুন। আর পূর্নাঙ্গ তাওহীদের রোকন বা শর্ত (কুফর বিত তাগুত, ইমান বিল্লাহ) পালন করলে বা মানলে তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ ও উলুহিয়্যাহর স্বীকৃতি আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এই কারনে  লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর স্বীকৃতি দিয়েও দেওয়া হয়না যদি না তাওহীদই ঠিক না থাকে। 


এইজন্য তাগুত শাসকগোষ্ঠী চাইবে আপনি সারাদিন তাবলীগ, চিল্লা,পীরের দর্গা আর মাজারে পড়ে থাকুন, সেটাকেই সেক্রিড আর পূর্ন দ্বীন হিসেবে ভাবুন। দ্বীনের খণ্ডিত আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর গন্ডির ভেতরে আটকে থাকুন।আর যদি বিদাত শিরক বোঝার ইচ্ছে জাগে, তাহলেও 'সহীহ' আকিদায় ঢোকার সুযোগ তারা দিয়েছে । আর সেটা আহলে হাদিস-মাদখালিরা।এই কথিত সহীহ আকিদার কাণ্ডারিরা কিন্তু আমল আর মাস'য়ালার কিছু বিশুদ্ধ জ্ঞানই প্রচার করবেন কিন্তু গোড়ায় ঐ একই জিনিস। অপূর্ণাঙ্গ খণ্ডিত তাওহীদ। তারা কাফের ও মুরতাদদের আনুগত্য করতে বলবে।সেটা নাকি ফরজও!! কাফেরদের সাথে কম্প্রোমাইজ করে চলতে বলবে, সেটাই নাকি মধ্যমপন্থা!  তাওহীদে প্যাচ খাওয়ার জন্য জিহাদ তাদেরকাছে সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদ।এ কারনে শাসকও তাদের প্রতি তুষ্ট। শাসক চায় আপনি পুরো শিরক বিদাতে মশগুল থাকুন, পিসটিভিকে বন্ধ করা হয়েছিল কেন?? শাসকগোষ্ঠী যখন দেখল অপূর্ণাঙ্গ  বিশুদ্ধ ঈমান আমলের প্রচার করছে তারা আর সেটা শ্রোতাদেরকে দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে রূপান্তর করছে। পূর্নাঙ্গ তাওহীদের ঘষা লাগলে জ্বলে উঠার সম্ভাবনা থাকে, সেজন্য আধা দ্বীন শেখারও রাস্তা বন্ধ করে দিল। যেন অধিকাংশই বিদাত আর শিরককে হাতের নাগালে পায় ও তা পালনেই সন্তুষ্ট থাকে। যখন আসাদুল্লাহ গালিব সাহেবকে জঙ্গীবাদের সম্পৃক্ততার জন্য রিমান্ডে নিল, এর পরে রিমান্ড ফিরে তিনিও জঙ্গী তথা জিহাদ বিরোধীতায় চলে গেলেন। কি জানি! কি ঘোল ওরা তাকে খাইয়ে মগজধোলাই করেছিল আল্লাহ ভাল জানেন। এমনকি এর পরে তাদের ইসলামী জঙ্গীবাদ তথা জিহাদ সমর্থনে দেওয়া ফতওয়াও চেঞ্জ হয়ে জঙ্গীবিরোধী ফতওয়া হয়ে যায়!এজন্য আহলে হাদিস নিয়ে সবসময়ই শাসকদের টেনশন থাকেই। এজন্য মতে অমিল হলে মাঝে মধ্যে আহলে হাদিসের কয়েকজন সামান্য সময়ের জন্য জেলও খাটেন। ।। অবশ্য এখন বর্তমানে আহলে হাদিস শায়খগন তাদের মুরজিয়া আকিদা প্রচারে বেশ স্পষ্ট, এটা শাসকদের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তির।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সত্যিকারের অর্থ জানুনঃ

https://ia600807.us.archive.org/17/items/BanglaIslamicBestLecturesbooks/LaIlahaIllallah-ItsMeaning_ExplanationAndImplementation.Part-01.mp3


https://ia600807.us.archive.org/17/items/BanglaIslamicBestLecturesbooks/LaIlahaIllallah-ItsMeaning_ExplanationAndImplementation.Part-02.mp3


https://ia600807.us.archive.org/17/items/BanglaIslamicBestLecturesbooks/LaIlahaIllallah-ItsMeaning_ExplanationAndImplementation.Part-03.mp3


মাথায় চিন্তা আসতে পারে,বিষয়টা এত কঠিন বা জটিল লাগে কেন! আর এই বুঝ কি নবী (সা) এর জামানায় ছিল! 

এর উত্তর, তাওহীদের এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং নবী(সা) নয় শুধু, সকল নবী গনেরই ছিল এবং এরই প্রচার করতেন। আল্লাহ বলেনঃ 

"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক..।"[১৬:৩৬]


নবী (সা) যখন প্রথমেই মক্কাবাসীদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত দিলেন তখন কাফেরদের অফার করলেন, তারা যদি কালেমার সাক্ষ্য দেয় তবে আরব, অনারব সবাই তোমাদের দ্বীন গ্রহন করবে আর কাফেররা জিজিয়া দিয়ে থাকতে বাধ্য হবে। আবু লাহাবদের মাথায়ই একথা শুনে বাজ পড়ে। সব যুগে শাসকদের মাথাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যখনই নবীগন(আলাহিসালাম) তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। এর কারন কাফেররা ভাল করেই বুঝত, এটা মানার অর্থ সব ক্ষমতা আল্লাহকে দিয়ে আত্মসমার্পন করা। মানে বুঝেশুনে কালেমার সাক্ষ্যদান মানেই তাওহীদ উলুহিয়্যাহ, রুবুবিয়্যাহ ও আসমাওয়াস সিফাত স্বীকৃতি ও পালন করা,পূর্নরূপে তাগুতকে বর্জন এবং আল্লাহর ইবাদতকরন। এটা তারা কক্ষনো চাইত না বলেই সংঘাত হত। আর নবী (সা) এর বলা আরব আজমদের দ্বীন গ্রহন এবং কাফেরদের জিজিয়া দিতে থাকার বিষয়টি সত্যায়ন করে এই ইউনিভারসাল আয়াতটি যেথায় আল্লাহ বলেনঃ

"আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়.."[২:১৯৩] 


অর্থাৎ দ্বীন বিজয়ী করতে সর্বক্ষন যুদ্ধে লিপ্ত থাকা। আল্লাহ নবী(সা)কে এ উদ্দেশ্যেই প্রেরন করেছিলেন।আল্লাহ বলেনঃ

"তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে"[৯:৩৩]


এখনো কাফের আর ঈমানের মধ্যে ওইরূপ শত্রুতা বিদ্যমান। আর এর কারন উপরেই উল্লেখ করেছি। অথচ আমরা এগুলো বুঝিই না, শুনলেও জটিল মনে হয়,যেহেতু কাফেররা তাওহীদের শিক্ষাকে নানা প্রতিবন্ধতা দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে।এজন্যই কিছু আলেম যারা তাওহীদের পূর্ন দাওয়াত ও প্রতিষ্ঠার কথা বলে তাদের কে ওরা হয় দড়িতে ঝুলায় অথবা গুম করে অথবা কারাগারে বন্দী করে রাখে। কারো অবস্থা করা হয় মুফতি হান্নান(রঃ) অথবা শায়খ আব্দুর রহমান(রঃ)দের মত, কারও অবস্থা হয় শাইখুল হাদিস মুফতি জসীমউদ্দিন রহমানীর(হাফিঃ) মত। উপরে উল্লেখ করেছি কাফের শাসকরা আপনাকে অর্ধেক তাওহীদের উপরে আমল করা শেখাবে। কিন্তু যখন তারা পুরোপুরী মৌলবাদী অথবা ঠ্যাড়োড়িস্টদের দমন করতে সক্ষম হবে তখন শুরু হবে আইসোলেশন প্রসেস। আস্তে আস্তে যা আগে অনুমিত ছিল তা সংকীর্ন করা হবে।আর শেষ হবে সম্পূর্নভাবে দ্বীন ইসলামকে উৎপাটন এর মাধ্যমে।  ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি হিন্দুয়ানী সভ্যতা তৈরির জন্য জোড় চেস্টা চলতে দেখা যাচ্ছে। মূর্তি, আর হিন্দুদের সংস্কৃতি চাপানো হচ্ছে, স্বাভাবিকিকরনের কাজ চলছে। ইসলাম শিক্ষা বইয়ের নাম পাল্টে ধর্ম আর এথিকস দেওয়া হয়েছে সেই সাথে আল্লাহর পাশে দেবতার তুলনাও হয়েছে জেনারেলের পাঠ্যক্রমে,বিবর্তনবাদকে মাধ্যমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলযাত্রাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, আপনি কি শুনেন নি মাদ্রাসাকে ব্যাঙের ছাতা বলা হয়েছে, এবং শিক্ষাক্রম বদলানোর কথা, আপনি কি শোনেননি মসজিদ গুলোতে তালা ঝুলানোর হুমকি!! জ্বি।  শুনেছেন কিন্তু বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে। স্পেনের ইতিহাসে শিক্ষনীয় বিষয় আছে। স্পেনে আগে কি অবস্থা ছিল!  আর আজ?? আমরা স্পেনের চেয়েও দ্রুত গতিতে সেদিকে হাটছি। কাফেরদের কে যত প্রশ্রয় দেবেন সে কখনোই সন্তুষ্ট হবেনা যতক্ষন না তার মত সম্পূর্ণ কাফের হয়ে যান। আমার- আপনার প্রতিপালক সত্য বলেছেনঃ


"ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন.."[২:১২০]


 আমরা দ্বীনের ভেতরে করাপশনের দুষ্টচক্রে আটকে হক্ক বাতিল আইডেন্টিফাই করার এর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। এজন্য হক্ককে বাতিল আর বাতিলকে হক্ক মনে হয়।এজন্য যে যার মত দ্বীন গবেষনা করছে প্রচার আর পালন করছে। যা সত্য থেকে বহু বহু দূরে। আজ জায়গায় জায়গায় ভাঙ্গা হচ্ছে মসজিদ। ওয়াজ নসিহতে সরাসরি তাগুতের এজেন্টগুলো এসে বাধা দেয়। নিরীহ হুজুরদের নন ভায়োলেন্ট ওয়াজ নসীহাকে বন্ধ করে হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। ওয়াজের স্টেজে উঠে ওয়াজ শুনতে আসা সাধারন ধর্মপ্রাণ আল্লাহর বান্দাদেরকে এবং তাদের পরিবারের সন্তানদেরকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়া হয়। আমরা জানিও না কেন এমনটা হচ্ছে। অথচ এটা খুব সাধারণ বিষয় যে-  জবাইয়ের আগে মুরগীকে দানাপানি খাওয়ানো প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। এজন্য এতদিন যেহেতু কাফিররা বঙ্গদেশীয় মুসলিমদেরকে শতবছর দানাপানি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে সত্যিকারের দ্বীনের বুঝ অর্জন থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে, এখন তাদের খুঁটি শক্ত হয়ে গেছে। এখন শিক্ষাদীক্ষাসহ সবক্ষেত্রে পুরোপুরি কুফরি বিলিফকে প্রোমোটিং এর সময় এসে গেছে সুতরাং দানাপানি বন্ধ। ফলশ্রুতিতে হেফাজতের উপর শাপলাচত্বরে গনহত্যা।মসজিদ মাদ্রাসায় তাগুতের শতভাগ নিয়ন্ত্রন, নাস্তিক মুর্তাদদের কতলকারীদের হত্যাসহ মসজিদ ভাংচুরও করছে সরকারী মদদে। এখন আর ট্রেডিশনাল শান্তিপ্রিয় ইসলামকেও টলারেট করা হবেনা। আপনারা কি শোনেন নি র‍্যাবের প্রধান ইউনিভার্সিটির দ্বীন প্রচারকারী বড় ভাইদের হত্যার সরাসরি হুমকি দিয়েছিল? অতএব এখন শান্তিপ্রিয় ননভায়োলেন্ট ইসলামও টেররিজমের ডোমেইনে ফেলা হবে। যার ফলে র‍্যাবকে দেখা যায় ফাজায়েলে আমল,নামাজ শিক্ষার কিতাবকেও জঙ্গীবাদী কিতাব হিসেবে উপস্থাপন করে। এটাই সেই লাঞ্ছনা!  এজন্য আল্লাহ রাসূলের (স) এর বানী সত্য। তিনি বলেছিলেনঃ 


 ﺑَﺎﺏٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﻬْﻲِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻌِﻴﻨَﺔِ

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ ﺑْﻦُ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﺍﻟْﻤَﻬْﺮِﻱُّ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﻭَﻫْﺐٍ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﺣَﻴْﻮَﺓُ ﺑْﻦُ ﺷُﺮَﻳْﺢٍ، ﺡ ﻭﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺟَﻌْﻔَﺮُ ﺑْﻦُ ﻣُﺴَﺎﻓِﺮٍ ﺍﻟﺘِّﻨِّﻴﺴِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺍﻟْﺒُﺮُﻟُّﺴِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻴْﻮَﺓُ ﺑْﻦُ ﺷُﺮَﻳْﺢٍ، ﻋَﻦْ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻗَﺎﻝَ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ : ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟْﺨُﺮَﺍﺳَﺎﻧِﻲِّ، ﺃَﻥَّ ﻋَﻄَﺎﺀً ﺍﻟْﺨُﺮَﺍﺳَﺎﻧِﻲَّ، ﺣَﺪَّﺛَﻪُ ﺃَﻥَّ ﻧَﺎﻓِﻌًﺎ ﺣَﺪَّﺛَﻪُ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺇِﺫَﺍ ﺗَﺒَﺎﻳَﻌْﺘُﻢْ ﺑِﺎﻟْﻌِﻴﻨَﺔِ، ﻭَﺃَﺧَﺬْﺗُﻢْ ﺃَﺫْﻧَﺎﺏَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮِ، ﻭَﺭَﺿِﻴﺘُﻢْ ﺑِﺎﻟﺰَّﺭْﻉِ، ﻭَﺗَﺮَﻛْﺘُﻢُ ﺍﻟْﺠِﻬَﺎﺩَ، ﺳَﻠَّﻂَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺫُﻟًّﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﺰِﻋُﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺮْﺟِﻌُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺩِﻳﻨِﻜُﻢْ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺩَﺍﻭُﺩَ : ﺍﻟْﺈِﺧْﺒَﺎﺭُ ﻟِﺠَﻌْﻔَﺮٍ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻟَﻔْﻈُﻪُ ﺻﺤﻴﺢ

 পরিচ্ছেদঃ ৫৬. আল-ঈনাহ পদ্ধতির লেনদেন

৩৪৬২। ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

 বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)

 পুনঃনিরীক্ষণঃ 

 সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)



[২/৩ বছর আগের পুরোনো পোস্ট…]

Tuesday, February 16, 2021

ভাসমান ফেনা...


সন্ত্রাসী সাব্যস্তকরনের একটা সহজ উপায় কুফফারদের নিকট রয়েছে৷ প্রথমে কোন মুসলিম ভুখন্ডে মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ চরমপন্থী সন্ত্রাসী আছে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালাবে(যদি কিছু নাও থাকে)। যখন সে অঞ্চলের মানুষ বারবার অযথা হামলার স্বীকার হবে, এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করবে। সেটা সামরিক প্রচেষ্টা হলে অবশ্যই ছবি তুলে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে বলা হবে,' এই দেখো, সন্ত্রাসীরা... এদেরকেই আমরা দমন করার চেষ্টা করছি গ্রেটার হিউম্যানিটেরিয়ান স্বার্থে। মানব সভ্যতার কল্যানের জন্য আমরা যে ঐক্যবদ্ধ দমনের চেষ্টা করছি, এতে শিশুদের নিহত হবার যে দৃশ্য দেখছেন, সেসব কোলাটেরাল ড্যামেজ, টেইক ইট ইজি!...... '
.
এভাবেই আজকে আরবভূমি গুলোর কেন্দ্রস্থল গুলোকে আজ রণাঙ্গনে পরিনত করা হয়েছে। কাফিররা ভাল করে বোঝে যে, আরবদের ধ্বংস করা হলে আযমরা কোন ব্যপারই নাহ। বিষয় গুলো আমরা আজ চোখের সামনেই দেখছি। আমরা যেরকম বাসাবাড়িতে থাকছি, আক্রান্ত দেশগুলোতেও আমাদের ন্যায় একসময় থাকত। এখন অধিকাংশই ধ্বংসস্তুপ৷ যাও আছে তার উপর কিছুক্ষন পর পর বিমান থেকে এক্সপ্লোসিভ ফেলা হয়। প্রতিদিনই কিছু না বাচ্চা শিশু, মহিলারা লাশ হচ্ছে। ওরাও কারো না কারো মা বোন বা সন্তান। অসহায়ত্বের এই পার্স্পেক্টিভ সহজে বোঝা সম্ভব না, যদি না কেউ ওই অবস্থা সচক্ষে দেখে বা হৃদয় দিয়ে অনুভবের চেষ্টা করে। কাফিররা কেমন যেন বিস্ফোরক গুলোকে ফেলবার বৈধ স্থান পেয়েছে। তাগুত সংঘই এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আফসোস এর বিষয় যে এই করুন অবস্থাগুলো চোখে দেখেও যাদের কাধে দিকনির্দেশনার দায়িত্ব ন্যস্ত, তারা আরো কালো আধারে জাতিকে ডুবানোর জন্য গাইড করে। এদের দিন যায় দ্বীন বেচে।জাতিকে কালেক্টিভভাবে ভুল পথে পরিচালনার দায়ভার সিংহভাগ তাদের উপরেই পরে। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, যারা হক্কের উপর থাকে, সত্যের দিকে আহব্বান করে আল্লাহ তাদের প্রতি সাধারন মানুষের মধ্যে গ্রহনযোগ্যতা এবং ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। হয়ত ফিতরাতগত কারনে অধিকাংশ মানুষই সেটাকে সমর্থন করে। যে ব্যক্তি হাত দিয়ে পারে না, সে ব্যক্তি মন দিয়েও সমর্থন করে। এর জ্বলন্ত প্রমান আজকের সময়ের শাইখ তামিম আল আদনানি। একটা সময় ছিল তাকে খুব কম মানুষ চিনতো৷ অল্প লোকের গন্ডীর বাইরে তার চেনা জানা ছিল না। যখন তার কথাগুলো ভাইরাল হতে লাগলো, তার বিরোধিদের চেয়ে অনুসারীদের সংখ্যাই বাড়তে লাগলো৷ এখনো বাড়ছে। ওনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় সাত লাখ স্পর্শ করতে যাচ্ছে। যারাই তার বিরুদ্ধে বলছে, তাদেরকে সমর্থনের বদলে কথা দিয়ে উত্তমমধ্যম দিয়ে দিচ্ছে। এরূপ হবার কারন সত্যের পথে অবিচল থাকা। যখন অটোম্যান খিলাফার পতন হয়ে যাচ্ছিলো, সেসময় এবং পরবর্তী সময়ে আলিমদের মধ্যে মুসলিম ভূখন্ড গুলোয় ঊস্তায নূর উদ্দিন জঙ্গি এবং তার শিষ্যের মতের ও পথের পর্যাপ্ত আলিমদের পাওয়া যায় নি যারা গাইড করবে। সমুদ্রের ফেনায় ট্রান্সফর্ম হওয়া তখন থেকেই শুরু। ওই অবস্থা আজ পর্যন্ত বলবৎ আছে। এর মধ্যে কাফিররা জুমহুরিয়া,আসহাবিয়্যাহ সহ অনেক ইডিওলজি উম্মাহর মধ্যে ইঞ্জেক্ট করে একদম বিকলাঙ্গ করে দিয়েছে, এমন করেছে যে এখন শাইখ উসামা, মোল্লা ওমরদেরকে সন্ত্রাসী মনে করানো হয়। আমরাও পাশ্চাত্যের শিক্ষা সহ সব কিছুই গ্রহন করেছি, ওরা যেভাবেই নাচাচ্ছে সেভাবেই নাচছি। সব স্থানে কাফিরবান্ধব মোডারেট ইসলামের প্রচার করা হয়। এটাই আজকের সহীহ দ্বীন এবং স্বহীহ আকিদা!

২য় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শুয়োর



 জনৈক ভাই খুব হাতাশা আর দুঃখ প্রকাশ করে বলছেন, তিনি আজ কিছু মুসলিম নামযুক্ত মুর্তাদরা নবী(স) কে নিয়ে অশ্লীলভাবে কটুক্তি করতে দেখেছেন।  তিনি জানতে চাইছেন তাদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না?

বললাম, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে জঙ্গী সাব্যস্ত হবেন এবং আপনাকেই উলটো আইনের আওতায় নেওয়া হবে। কারন এ দেশে নাস্তিক গুরু রাজিব হায়দার বা থাবা বাবা যখন নবী(স) কে নিয়ে অশ্লীল কাব্য, গল্প লিখলো এবং অশ্লীলভাবে কটূক্তি করলো এবং এতে যখন তাকে হত্যা করা হলো তখন খোদ প্রধানমন্ত্রীই তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গেল এবং সংবাদমাধ্যমে তাকে ২য় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ খেতাব দিলো।

বিশ্বাস না হলে দেখুনঃ

https://m.youtube.com/watch?v=zODpDVfbdys


শুধু প্রধানমন্ত্রীই নয়, তার সাথে নাস্তিকদের কর্মের সাথে একমত আব্দুল্লাহ আল মাসুদদের ন্যায় আলেমদের এক একদল।তারাও একে শহীদ খেতাব দিল। দেখুনঃ   https://m.youtube.com/watch?v=MCiCs88_pI0 


নাস্তিক ব্লগার রাজিব হায়দারের অপকর্মের কিছু নমুনা দেখুনঃ

https://m.youtube.com/watch?v=omMgA-OqUwM

https://m.youtube.com/watch?v=GBRJ_qbToic 

https://m.youtube.com/watch?v=J2h1AOGElGs


তিনি জানতে চাইলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে কিনা..

বললাম-"পুলিশের কাছে যেতে পারেন। কিন্তু নাস্তিকদের অসাম্প্রদায়িক মুক্ত চেতনার অসহিষ্ণুতার জন্য আপনাকেই জঙ্গী সাব্যস্ত হয়ে শাস্তি পেতে হতে পারে।"


তিনি বললেন- "এ কেমন পরীক্ষায় ফেললো আল্লাহ্‌ আমাদের 😞

সহ্যও করতে পারি না, কিছু করতেও পারি না"

কিছু করতে পারিনা বললে ভুল হবে। করনীয় কি সেটা নবী (স) এর সুন্নাহ তে ভালভাবেই  বর্ণিত আছে। এর দলিলভিত্তিক করনীয় বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ https://m.youtube.com/watch?v=GBRJ_qbToic

(একই)

অতঃপর দেখুন যারা নবী(স) এর নির্দেশ মোতাবেক কটুক্তিকারী মুর্তাদকে ঘায়েল করেছে তাদের কি পরিনতি হয়েছে।

https://m.youtube.com/watch?v=mTa5thx5oBw

এর পরে ওয়াশিকুর বাবু নামের মুরতাদ আর জঘন্য ভাষায় আল্লাহর ও তার রাসূল(সা) কে নিয়ে কটুক্তি করে। তাকে হত্যার পরেও সরকার একই আচরন করে।

সুতরাং চলমান সময়ে যারা এভাবে আল্লাহ ও তার নবী(স) কে গালিগালাজ ও কটূক্তি করে যাচ্ছে, তাদের বিপক্ষে মামলা করতে চাওয়া, আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের চিন্তা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ?

প্রশ্ন আসতে পারে, কেন এই শাসকগোষ্ঠী নাস্তিকদের সপক্ষেই থাকছে! এত উত্তর খুব সোজা। তাদের নাম গুলো মুসলিম হলেও তারা অন্তরের দিক দিয়ে আদৌ মুসলিম নয়। এরা নিজেরা আইন তৈরি করে বিচার করে, এজন্য তারা ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকেই কাফের। আল্লাহ সূরা মায়েদার ৪৪ নং আয়াতেই তা পরিষ্কারভাবে বলেছেন। এজন্য তাদের বিচার, রায় সবকিছুই নাস্তিকদের পক্ষে যাবে এটাই স্বাভাবিক।। মানবরচিত বিধানের এই শাসকরা আইন হাতে তৈরি করে নিজেদেরকে ইলাহর আসনে বসায় বলে শার'ঈ পরিভাষায় এদের তাগুত বলে। এতএব  কাদের কাছে বিচার চাইবেন? সূরা নিসার ৬০ নং আয়াতে শিক্ষণীয় বিষয় আছে। আল্লাহ বলেনঃ

"আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা নিজেদের মোক্কাদমা তাগুতের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।"


শাসক গোষ্ঠী যে তাগুত সেটার সুস্পষ্ট প্রমান তারা দিয়েছে মুরতাদ ব্লগারদের সমর্থন দিয়ে ও তাদের হত্যাকারীদের বিপক্ষে বিচার করে। কিন্তু এর পরেও কিছু মূর্খরা কখনোই বুঝবেনা। এরা তাগুতকেই বিচার ফয়সালাকারী হিসেবে মান্য করে যাবে।আহলে হাদিস সংগঠনটি এই তাগুতকেই মান্য করতে নির্দেশ দেয়, তাগুতের গুরুদের নামের সাথে 'রহিমাহুল্লাহ' উচ্চারণও করে, আর তাদের ৯৯% ই নাস্তিকদের প্রতি নিরবতা পালন করে। তেমনি অন্যান্য সকল হক্কানী-সহীহ আকিদার ঝান্ডাধারীরাও। মোডারেট আরিফআজাদরা রাসূল (স) কে কটূক্তিকারীদের কতলের 'বিরুদ্ধে'ও মনগড়া আর্টিকেল প্রকাশ করে।

এ আর্টিকেলটি এ জন্যই লেখা যে এখনো অধিকাংশই জানেনা নাস্তিকদের কুকর্ম ও তাগুতের সমর্থনসূচক অবস্থান। এখনো ৯০% মানুষই সত্যের ব্যপারে বেখবর। এদের অনেকে না জেনেই কাফেরদের পক্ষে থেকে তাদের সমর্থন আর হত্যার নিন্দা করে।  এর কারন কাফেরদের সপক্ষীয় শক্তিশালী মিডিয়া কভারেজ। আজ মালাউন অভিজিৎ কে কতলকারী ভাইদেরকে মৃত্যুদণ্ডের রায় হলো। মুর্তাদ সরকার ঠিকই মদিনা সনদে দেশ চালানোর প্রহসন করে। মাথামোটা জনগণ এগুলো শুনে মনে করে তাগুতলীগ কত্ত ভালা! কিন্তু তাদের মুসলমানত্বের পরিচয় হচ্ছে- শাতীমে রাসূল(সাঃ) দেরকে নিরাপত্তা দেয়া এবং এদেরকে কতল করা হলে সত্যিকারের আশিকে রাসূলদের(স) মৃত্যুদণ্ড দেয়া। যতদিন জাতি এই তাগুতকে চিনবে না, প্রকৃত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দিকে আসবে, লাঞ্ছনা কিছু মাত্রায়ও কমবে না। আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।


.

পড়ুনঃ

https://medium.com/@abuyunus/শাতিমে-রাসুল-সাঃ-ও-ইদ্রিস-কান্ধলভি-রহঃ-2194b3ab6888

Sunday, February 14, 2021

সিহর এবং অকাল্ট - টেকনোলজিক্যাল এ্যাম্বিগুইটি

সিহর কি? সিহর বা যাদু হচ্ছে সেই ব্যাখ্যাতীত অদ্ভুত ঘটনা যার কার্যকরণ গুপ্ত বা অজ্ঞাত। এটা বলে সাধারণ মানুষ যারা সিহরের অস্তিত্ব এবং প্রভাবকে অনুভব করে। কিন্তু একজন যাদুকরের নিকট সিহরের সংজ্ঞা একদমই ভিন্ন। তার কাছে যাদু বা সিহর হচ্ছে এমন এক ক্র‍্যাফট যার দ্বারা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নীতিকে পালটে ফেলা হয়, বিকৃত করা হয়,ভেঙ্গে ফেলা হয়, পরিবর্তন করা হয়। অর্থাৎ তাদের নিকট witchcraft/magick/sorcery মানেই manipulating, perverting,distorting, twisting, changing the law of nature/creation।  বৈদিক এবং কাব্বালিস্টিক অর্থাৎ যাদুর ইস্টার্ন এবং ওয়েস্টার্ন উভয় ট্রেডিশনের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন তবে লক্ষ্য তাদের অভিন্ন। আল্লাহর সৃষ্টির সোর্সকোড সম্পর্কে জানার চেষ্টা এবং যতটুকু জানা যায় কিংবা যতটুকু ক্ষমতা আছে সেই জ্ঞান/বিদ্যা দ্বারা পরিবর্তন ঘটিয়ে উদ্দেশ্যসাধন/লক্ষ্য অর্জন। বৈদিক মতানুযায়ী you cannot beat a river into submission,you have to surrender to its current and use its power as your own, therefore silence your ego and your power will rise!  অন্যদিকে কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈদের মত হচ্ছে you can beat a river into submission, therefore you need to raise your ego at highest level and your power will rise! এখানে নদীর স্রোত হচ্ছে ন্যাচারাল ল' & অর্ডারের ফ্লো এর এ্যালিগোরি। যারা বোঝেন নি, বোঝার প্রয়োজন নেই। এই কথাগুলো বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান আর্টিকেল সিরিজেও পাবেন। 

যাইহোক, বৈদিক কিংবা কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রে যে শিক্ষা দেয়া হয় তা মূলত আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টিকে করাপ্ট করার শিক্ষা। যখন কোন ন্যাচারাল অর্ডার বা নীতিকে করাপ্ট করার চেষ্টা করা হয়, সেটা ততক্ষণ পর্যন্ত বিকৃত হয় না যতক্ষণ না এর সৃষ্টিকর্তার থেকে পারমিশন/অনুমোদন আসে। এজন্য আমরা সূরা বাকারার ১০২ নং এ দেখি وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ । উদাহরণ স্বরুপ ধরুন, একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের এমডির কাছে থেকে যেকোন নীতি কিংবা দুর্নীতির জন্য সাক্ষর গ্রহণ করে অনুমতিগ্রহন করে করতে হয়। কোন প্রোডাক্ট ঢুকলে বা বের হলেও তার সাক্ষর গ্রহন লাগে। উনি যদি কাগজে অবৈধভাবে দুর্নীতি ঘটবার জন্য সাক্ষর বা অনুমতি না দেন তাহলে হাজার কিছু করলেও অবৈধভাবে অর্থলাভ হবেনা। ধরুন অফিসের একদল লোক দুর্নীতি করে অর্থলাভের উপায় বের করলো, তারা পাবলিকভাবে এমন এমন মিথ্যা বিশ্বাস প্রচার করলো যার ফলে মনে হয়, এই লোকগুলো সত্য বলছে, ভাল কাজই করতেছে। কিন্তু সুক্ষ্ম দুর্নীতি এমডি ঠিকই বুঝে গেছেন। এখন অনুমতি চাইতে সাক্ষর নিতে গেলে তিনি সাক্ষর করলেন ঠিকই কিন্তু মনে মনে বলেন, এদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ,এ বছর  আরো করো,বছর শেষে ছাটাই করা হবে। যখন অবৈধভাবে কোম্পানির প্রোডাক্ট গুলো বের করা হবে তখনও এমডির কাছে পারমিশন রিকোয়েস্ট গিয়েছে যার এ্যাপ্রোভাল পেয়েই কাজটি ঘটেছে। 


দৃশ্যকল্পটি বুঝে থাকলে উপরোল্লিখিত কথার তাৎপর্য বোঝা সহজ হবে। যাদুকররা যে ট্রেডিশনেরই হোক না কেন এরা যা প্র‍্যাক্টিস করে যেটা ঘটে এটা আল্লাহর অনুমোদনের বাহিরে হয়না, কিন্তু এরা তাদের কাজকে ঘিরে অনেক মনগড়া কুফরি আকিদা বিশ্বাস তৈরি করে যা মাঝেমধ্যে সত্যিকারের কস্মোজেনেসিসকে রিরাইট করে। কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তনের অনুমোদন আল্লাহর থেকে পায় কিন্তু বিনিময়ে অর্থাৎ যাদুর বিনিময়ে পরপারে এদের আর কোন অংশই অবশিষ্ট থাকেনা।  

সুতরাং বৈদিক কিংবা কাব্বালিস্টিক ট্রেডিশনে যে বিদ্যা শেখানো হয় তা সৃষ্টির নীতিকে পরিবর্তন করার অপবিদ্যা ছাড়া আর কিছুই না যা আল্লাহর অনুমতিতেই কাজ করে। এমতাবস্থায়, সেই বেদান্তবাদ বা কাব্বালাহ এর বিদ্যা দ্বারার মেক্যানাইজেশন অর্থাৎ এর বিদ্যার উপর যদি কোন প্রযুক্তি নির্মাণ করা হয় তবে তা কখনোই আল্লাহর দ্বীন অনুযায়ী হালাল হিসেবে গন্য করা সমীচীন হবেনা। উদাহরণস্বরূপ বেদান্তশাস্ত্রে বিশ্বাসী শ্রোডিঞ্জার,হাইজেনবার্গদের বানানো বেদান্ত মেকানিক্স  দুঃখিত ;কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপর বানানো কোয়ান্টাম প্রসেসর। এর রহস্যময় কার্যনীতি এর উদ্ভাবকরাও বোঝেনা। সিহরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কার্যনীতি বা মেকানিকস কখনোই মানুষের কাছে পুরোপুরি বোধগম্য হবেনা। সাধারন মানুষের কাছে যেমন মিস্টিক্যাল, যাদুকরদের কাছেও তেমন মিস্টিক্যাল। পার্থক্য হচ্ছে যাদুকররা মনগড়া কিছু বলে ইন্টারপ্রেট করার চেষ্টা করে। এর মেকানিক্স নূহের [আঃ] যুগেও মানুষ যেমন বুঝতো না এখনো বোঝেনা। প্রথমেই বলেছিলাম, সিহর বা যাদু হচ্ছে সেই ব্যাখ্যাতীত অদ্ভুত ঘটনা যার কার্যকরণ গুপ্ত বা অজ্ঞাত। এখন যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন উসূলের ডেভেলপ করে যাতে বলা হয় প্রযুক্তিগত সবকিছু, নো ম্যাটার এটার ডেভেলপমেন্ট এর সূত্র যাদুশাস্ত্র থেকে নেয়া বা না নেয়া, সেটার কার্যনীতি আজ না বোঝা গেলেও সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ঠিকই বোঝা যাবে, প্রযুক্তির কার্যনীতির বোধগম্যতা সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ যাদুকরদের মৌলিক কার্য তথা ন্যাচারাল 'ল বিকৃতকারী বিদ্যার মেক্যানাইজেশনকে হালাল ভাবে নিয়ে সভ্যতার এ্যাডভান্সমেন্টের সাথে কিংবা সময়ের এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং জুড়ে দেয়ার উসূল ত্রুটিযুক্ত এবং সমর্থনযোগ্য নয়। এর দ্বারা একরকম মু'তাযিলাদের উসূলকে ধারন করা হয়, মু'তাযিলারা যাদুবলে কিছুকে স্বীকার করেনা, তারা সিহরকে বিদ্যা বিজ্ঞান প্রযুক্তির ডোমেইনে ফেলে। যাইহোক, এমন উসূল তৈরির একটি কারন হতে পারে গোটা বিষয়ে পুওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং অথবা সার্বিকভাবে এমন উসূলে চলা যেটায় শারঈ সমস্ত বিধানগুলোর ব্যপারে বুঝ গলার নিচে যেতে দেয় না। 


★এমন কখনো হয়না যে আপনি এমন কোন কিছু গনহারে বানাতে পারেন যার কার্যনীতি সম্পর্কে অজ্ঞাত। আপনি যদি কোন ম্যাথম্যাটিক্যাল প্রবলেম সলভের ব্যপারে পুরোপুরি জ্ঞান না রাখেন, তাহলে ম্যাথ কখনোই সলভ করতে পারবেন না। যদি গোঁজামিল দিতে দিতে করেও ফেলেন,সেটা কিভাবে হলো সে ব্যপারে রিফ্লেক্ট করলে অবশ্যই বুঝতে সমর্থ হবেন। সে ম্যাথের ব্যপারে যদি ভাল করে জানেন অবশ্যই একটু চেঞ্জ করে দিলেও সলভ করতে পারবেন। প্রযুক্তিগত জিনিসগুলো এমনই, এসবের কার্যনীতির রহস্য উদ্ভাবকের কাছে দুর্বোধ্য অবস্থায় থাকেনা। অপর দিকে সিহর সবসময়ই দুর্বোধ্য। এটাকে মেকানাইজড করা হলে,একে ব্যাখ্যা করতে চাইলে আনঅবজারভেবল ফিলসফিক্যাল বিলিফের দিকে যেতে হবে। প্রযুক্তিগত ডিভাইস খুব কমই পাবেন যা সরাসরি সিহরের ইল্মের উপর তৈরি। যা আজ সিহর তা হাজার বছর আগেও সিহর হিসেবেই ছিল। 


★সাধারন প্রযুক্তিগত জিনিস আল্লাহর সৃষ্টিজগতের স্বাভাবিক নীতিরই অনুসরণ করে। এরা 'ল ভায়োলেট করে না। কিন্তু প্রত্যেক যাদুকর জানে he is twisting things out of its proper shape, সে জানে সে ন্যাচারাল 'ল বিকৃত করতে চাচ্ছে। কিভাবে হয় তা কেউ(মনুষ্যজাতি) জানে না। সেটা হতে দেয়া বা না দেয়াটা আল্লাহর হাতে। এমতাবস্থায় বৈদিক কিংবা কাব্বালিস্টিক শাস্ত্র উদ্ভূত প্রযুক্তি আল্লাহর সৃষ্ট জগতের স্বাভাবিক নীতিতে কাজ করবেনা বরং সেটা ল' ভায়োলেট করেই অনবরত আল্লাহর অনুমতিতেই কাজ করবে। সুতরাং কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে বৈধ স্বাভাবিক প্রযুক্তির তালিকাভুক্তির উসূলটির গ্রহণযোগ্যতা - শূন্য। 


হয়ত কিছুকাল পর জিরো পয়েন্ট এনার্জির ডিভাইস চলে আসবে। এটা যদি যাদুকরদের বিশ্বাস অনুযায়ী প্রকৃতির ফান্ডামেন্টাল এনার্জি রিসোর্স ব্যবহার করে, যাকে তারা ইথার কিংবা কোন্টায়াম ফিল্ড/কোয়ান্টাম ফোম/পাইলট ওয়েভ প্রভৃতি শব্দ দ্বারা বোঝায়, এটা কি আল্লাহর সৃষ্টিজগতের নীতিকে ডিফেন্ড করবে নাকি বিকৃত করেই এনার্জি আউটপুট দেবে! আমি অনুভব করি এমন কিছু যদি সফল বাস্তবায়ন ঘটে এবং তা যদি ম্যাসিভ স্কেলে ব্যবহার করে তবে তা প্রকৃতি এবং আশপাশের বস্তু জগতে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা প্রকৃতির ফান্ডামেন্টাল বিল্ডিং ব্লক বিকৃত করে ফেলবে। ইন্টুইটিভ -সাইকোম্যাট্রিক এম্প্যাথরা সহজে বুঝবে যে, এটা বস্তু / প্রানীর ফিজিক্যাল এনার্জি রিসোর্স এক্সস্ট করতে থাকবে,দেখা যাবে বিল্ডিং, বৃক্ষ সমস্ত সলিড অব্জেক্টের রিজিডিটি কমে গেছে ,  সুতরাং সিহর স্বল্পমেয়াদী লাভ তৈরি করলেও তা দীর্ঘমেয়াদে কখনোই কল্যাণকর না। কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ের ম্যাক্সওয়েল চিকম্বুৎসুর ফ্রি এনার্জি ডিভাইস তৈরি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরবর্তীতে তার সাথে অনেক বার্তা বিনিময়ের পর বুঝতে পারি তার জিপিএম মেশিনগুলো রেডিও সিগ্নালকে ইলেক্ট্রিসিটিতে কনভার্ট করে। অর্থাৎ এটা বেতার তরঙ্গকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর কৌশল। এটা আদৌ যাদুকরদের প্রকৃতির ল' অল্টারিং বা পার্ভাশনের চিন্তার ডোমেইনে পরে না। উদাহরণস্বরূপ, আপনি খাদ্য গ্রহন করছেন,আর আপনার শরীর সেই খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করছে।এজন্য দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া ম্যাক্সওয়েলকে বলেছি সে যেন গরীব আফ্রিকানদেরকে এর দ্বারা উন্নয়ন ঘটায়। 


★অতএব এটা বোঝা সহজ যে ম্যাজিক্যাল অকাল্ট স্ক্রিপচার আশ্রিত বিদ্যার উপর সরাসরি ভিত্তি করে প্রযুক্তি নির্মান করা হলে তা শুধুমাত্র এজন্যই পরিত্যাজ্য নয় যে, সেটাকে আশ্রয় করে কাফিররা বিভিন্ন তাওহীদ বিদ্বেষী আকিদা বানিয়ে প্রচার করে, বা তা দ্বারা তারা তাদের কুফরি আকিদার সত্যায়ন করে বরং মূল সমস্যা হচ্ছে এই বিদ্যার মূল শিক্ষাই হচ্ছে সৃষ্টিকে বিকৃত করার জন্য আনঅথোরাইজড ইন্টারভেনশান। এবং এটাই করে থাকে। এটা সফলভাবে কাজ করছে এটা দেখার মানে এই নয় যে আল্লাহ আযযা ওয়াযাল এর উপর সন্তুষ্ট,এও না যে তা আল্লাহর বেধে দেয়া স্বাভাবিক নিজামের অধীনে কাজ করছে। বরং আউটপুট আসছে আল্লাহর অনুমতিতে তার সৃষ্টিকে বিকৃত করার মাধ্যমে। এই যাদু করা মূলত শয়তানেরই কাজ। এর শিক্ষক মূলত শয়তান। শয়তান আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তনের আদেশ দেয়। আল্লাহ শয়তানের এ শিক্ষার ব্যপারে বলেনঃ 

....فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ.... 

....তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব.....।

(সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১১৯)



অর্থাৎ এদিক থেকে দেখা যায় যাদু বা সিহর শয়তানের শিক্ষা। ইহুদিরা যে কাব্বালাহকে ধরে বসে আছে সেটা শয়তানেরই শিক্ষা। আল্লাহ বলেনঃ....وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ....

অর্থঃ... সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত....।

(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১০২)



এজন্য সরাসরি কাব্বালিস্টিক কিংবা বেদান্তবাদের উসূল ব্যবহার করে প্রযুক্তিতে রূপ দিলে তা কস্মিনকালেও বৈধ ব্যবহার্য বস্তু হিসেবে স্বীকৃতি পাবেনা। এই বৈধ অবৈধতা সাব্যস্ত করনের উসূল কোন নির্দিষ্ট সময়কেন্দ্রিক নয় বরং সকল যুগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি কেউ একে বৈধতা দিতে চেষ্টা করে তবে হয় তার সিহরের সংজ্ঞায়নের প্রকৃতি মু'তাযিলা অনুরূপ অথবা তাদের শারঈ অন্যসব উসূল ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং এমন যেরূপ হলে ইল্ম গলার নিচে প্রবিষ্ট হয়না বলে হাদিসে এসেছে। বৈধতাদান কারীদের উসূলকে গ্রহন করলে কাব্বালাহ কিংবা বেদান্তশাস্ত্রে এমন কোন সিহর শিক্ষার কিছু নেই যা ন্যাচারাল 'ল করাপ্ট করতে শেখায়, যা কিছু আছে সবই আল্লাহর নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী হয়। সেই বিধান মোতাবেক কোয়ান্টাম প্রসেসর বানানো হচ্ছে। অর্থাৎ তাহলে আর রাযি.র মতানুযায়ী রিয়ালিটি পার্ভার্শনের কিছু নেই। যাদুকররা যা করে একটা লোককে অসুস্থ করে দেয়, সেটাও প্রকৃতির 'স্বাভাবিক' নীতি!!! আচ্ছা, তাহলে আল্লাহর অনুমতিতে হবার প্রয়োজন কি!? ডিজেল দিয়ে যেভাবে ইঞ্জিন চালানো যায় এটাও এরকমই ব্যাপার। সবই হালাল ইল্ম। সবই টেকনোলজি, সবই সায়েন্টিফিক নলেজ। কিয়ামত পর্যন্ত টেকনলজিক্যাল সব হালাল নো ম্যাটার সেটা যাদুবিদ্যার নীতিতে চলছে অথবা সেটা ছাড়া সাধারন নীতিতে!!! 


ইখতেলাফ কিংবা ভিন্ন উসূল প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ কিছু নয়। বরং মাঝেমধ্যে তা কল্যাণকর। তাই বলে আমাদের এমন কিছু বলার ব্যপারে সাবধান থাকতে হবে যা পেছনের জ্ঞান কিংবা মৌলিক চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিকতা তৈরি করে। আমি এ যাবৎকাল পর্যন্ত যা লিখেছি,যার পেছনে আমার কোন ইল্মী ব্যাকআপ নেই,সেসমস্ত উসূলী(নীতিগত) বিষয়ে এমনটা দাবি করিনা যে তার সবটাই ১০০ ভাগ শুদ্ধ। এমনও হতে পারে এমন কোন উসূল প্রতিষ্ঠিত হল যা আমার চেয়ে বিশুদ্ধ এবং শারঈ দিক দিয়ে বিশুদ্ধ। এমতাবস্থায় সেটাকে অনুসরণই কল্যাণকর হবে। 




ওয়া আল্লাহু তা'আলা আ'লাম।

যা কিছু লিখেছি এর মধ্যে যা কল্যাণকর তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। যা কিছু অকল্যাণকর তা আমার এবং শয়তানের পক্ষ থেকে। 


سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ



 

Sunday, February 7, 2021

জঙ্গী উপাখ্যান

      কিছুদিন আগে জনৈক বন্ধু ম্যাসেজ করে। একটি ফেসবুক লিংক দেয়।  আর অভিযোগের সুরে বলে, যেন  গিয়ে দেখি সেখানে কিভাবে নবী(স) কে অপমান করছে।

তো সেখানে গিয়ে দেখতে পাই ওটা মুসলিম নামধারী আইডি। পোস্টটিতে বলা এরূপ বলা হচ্ছে "জঙ্গি নবী মুহাম্মদ"। কমেন্টে ইসলামী অনুভূতিযুক্ত ফাসেকরা আইডিটিকে অকথ্য গালি দিয়ে তার গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। শীতল চোখে দেখছিলাম আর মনে মনে বলছিলাম, কাফেররা মাঝেমধ্যে ওদের কাছে অপছন্দনীয় সত্যটা বুঝতে পেরে সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রুপাত্বক লেখনী লেখে।


'জঙ্গি' শব্দটি এমন একটি নেতিবাচক শব্দে রুপান্তর করা  হয়েছে যার ব্যবহারগত ভাবার্থ এখন আক্ষরিক শাব্দিক অর্থের চেয়েও বেশি কিছু বোঝানো হয়। কাফেরগোষ্ঠী শব্দটা একটি বিশেষ আদর্শের মানুষদেরকে এমনভাবে 'জঙ্গী' শব্দদিয়ে  ট্যাগ দিয়েছে যেন তারা সাধারন মানুষের পর্যায়ভুক্ত নয়। এমনভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালায় যেন (জঙ্গীরা)তারা হিউম্যানয়েড জন্তুজানোয়ার সদৃশ কিছু অথবা ক্যানিব্যালিস্টিক হিলবিলি জংলি(মানুষখেকো জংলি বা জম্বি ঘরানার কিছু), যাদেরকে দেখা মাত্র হত্যা করতে হয়। আর একাজে সহায়তা করাও পূন্যের কাজ! ভাবগত অর্থে জঙ্গি বলতে ওদের মিডিয়া তাদেরকে দেশদ্রোহী, অরাজকতা-অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুধর্ষ সন্ত্রাসী বলে প্রচার করে। এছাড়া তাদের আদর্শ ও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়েও বিদ্রুপ তাচ্ছিল্য এবং অচল বলে হেয় করে প্রচার করে। এসব মিডিয়া কখনোই তাদের ব্যপারে নিরপেক্ষ তথ্য দেবে না।  সামরিক ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন দুটি ভিন্ন আদর্শবাদীপক্ষের মধ্যে একটি আদর্শগত দ্বন্দ্ব সবসময়ই চলমান আছে। 


ফার্সী শব্দ 'জঙ্গি' এর অর্থ 'যোদ্ধা'। আর 'জঙ্গ' অর্থ যুদ্ধ।'জঙ্গিবিমান' বোধকরি সুপরিচিত শব্দ। ইসলামি আদর্শের উপরে থাকা যুদ্ধকে শার'য়ী পরিভাষায় জিহাদ বলা হয়, তেমনি জিহাদকারী 'যোদ্ধা'দের কে ইসলামী পরিভাষায় মুজাহিদ বলে। সে অনুযায়ী নবী(সাঃ) সাহাবা এবং সালাফগন সকলেই সুপার পাওয়ার জঙ্গিবাহিনীর অন্তর্গত। এর প্রধান নেতা হিসেবে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) সর্বযুগে শ্রেষ্ঠ হয়ে আছেন। আর সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন জঙ্গের মূল নির্দেশদাতা। তাছাড়া তিনিই সবচেয়ে বড় উৎসাহদানকারী। তিনি পবিত্র কুরআনে মূল লক্ষ্য হিসেবে তার বিধান বাস্তবায়নে আমরণ জঙ্গিবাদে তথা কিত্বালে(যুদ্ধে) লিপ্ত থাকার জন্য উৎসাহিত করেছেন। সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কুরআন মূলত একটি শ্রেষ্ঠ সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী কিত্বালপন্থী(জঙ্গিবাদী) কিতাব (আমি বুঝতে পারছি 'জঙ্গি' শব্দগুলোর এরূপ ব্যবহার আপনাকে বিব্রত করছে আপনার ব্রেইনওয়াসড হবার এর মাত্রা অনুযায়ী।

কিন্তু বিষয়টি নর্মালাইজেশনে নিয়ে আসবার সময় এসেছে, নতুবা কুফর আর হক্ক এর মধ্যে ধোয়াশা কাটবেনা)।যাকে ঘিরে সমস্ত দ্বীনি কিতাব রচিত। এজন্যই সালমান রুশদীর মত ইসলামবিদ্বেষী কাফেরদের যারা কুরআন পড়ে তারা বলে কুরআন শ্রেষ্ঠ জঙ্গিবাদী গ্রন্থ।

এই কাফেরগুলো কুরআনের সারবস্তু হালকা হলেও ধরতে পারে বলেই, ইসলাম ধবংসের জন্য ঐক্যবদ্ধ।

তারা ভাল করেই জানে, হক্ক ও বাতিলের সহাবস্থান বেশিক্ষণ চলেনা। সত্য অসত্যকে দূরীভূত করে।


শুধু নবী(স) একাই জঙ্গি ছিলেন না বরং অন্যান্য পূর্বসূরি নবীগনও এ জঙ্গিবাদের নির্দেশ পেয়েছিলেন। জাতির পিতা ইব্রাহীম আলাইহিসালাম একাই মালাউনদের মূর্তিগুলোতে একাই দুধর্ষ জঙ্গিহামলা পরিচালনা করেন।এবং মূর্তিগুলোকে লাঞ্ছিত অবস্থায় ফেলে আসেন যা মূর্তিপূজকদের অপদস্থ করে। এটাই মিল্লাতে ইব্রাহীম এর আদর্শ। আর মহান রব ইসমাঈল(আ) এর সন্তানদেরকে ঐ মহান উদ্দেশ্য পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য প্রেরন করেছেন, যেটা থেকে আজ উম্মাহর অধিকাংশই অনেক অনেক দূরে। 


মূসা কালিমুল্লাহ (আ) বনী ইসরাইলদের নিয়ে জঙ্গিতৎপরতা চালিয়ে গিয়েছেন কুফফারদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে তারা জঙ্গিবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তাদের কথাও কুরআনে বর্ননা দিয়েছেন,যেটা আমাদেরকে জিহাদে আল্লাহর আদেশ পালনে অটলতার শিক্ষা দেয়।


এভাবে ঈসা(আ),দাঊদ(আ),সুলাইমান(আ),তালূত(আ) প্রত্যেকেই কাফেরদের বিরুদ্ধে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিতৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন।যার বর্ননা কুরআনেও উল্লেখ এসেছে যেন আমরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারি।অথচ সেগুলো এখন মজার কিচ্ছাকাহিনীতে রূপান্তর করা হয়েছে।আমরাই নবীগনের সুন্নাহ থেকে ফিরে এসেছি।


পুরো কুরআনের সূরাগুলোতে শুধু মাত্র আল্লাহর দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্ব ও একে বিজয় করবার নির্দেশের ছত্রছায়ায় অন্যান্য ইসলামী আদর্শ বজায়ের নির্দেশ, আদেশ ও উপদেশ ও পূর্ববতী কওম ও নবীগনের ঘটনা এসেছে। তবে মুখ্য লক্ষ্য মহান প্রতিপালকের দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্বকে বাস্তবায়ন এর নির্দেশ এসেছে,যে লক্ষ্যে দুনিয়াতে তিনি মানুষকে তার প্রতিনিধিরূপে পাঠিয়েছিলেন।এজন্য সাধারণ বর্ননার মাঝে মাঝেই হঠাৎ করেই জিহাদের নির্দেশ,অথচ আমরা সেসব নিয়ে চিন্তা করিনা। এমনকি আল্লাহ বনী ইসরাইলের অবাধ্যতার ঘটনা ও পরিণাম উল্লেখ করেও জিহাদে উদ্দীপিত করেছেন।আমরা আজমী হওয়ায় আরবি না বোঝায় কুরআনের নির্দেশ অন্তঃকরণে পৌছায় না,আর অনুবাদের জানবার প্রতিও আগ্রহ কম, এজন্য উপমহাদেশীয় অধিকাংশ মুসলিমই কুরআনের অনুবাদে কি আছে বা আল্লাহ কি নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত গাফেল হয়ে আছে। আরবি দেখে তিলাওয়াত আর বিদাতী সুবিধাবাদী পেটপূজারী আলেমদের ওয়াজের এর বাইরে আমাদের অঞ্চলের মানুষ বেশি দূর যায় না। মোডারেটগনের অধিকাংশই আয়াত বাছাই করে অনুবাদটা কোথাও দেখে। ধারাবাহিকভাবে যদি অর্থটা পড়েও তবে সেটা তাদের মতে 'রাসূল (স) এর জীবদ্দশায় শুধু প্রযোজ্য ছিল'! কেউ বলে এযুগে কোন কিত্বাল নেই,কেউ বানিয়ে নিয়েছে নফসের জিহাদ,কেউ বা বানিয়েছে গণতান্ত্রিক জিহাদ। বস্তুত আল্লাহই সত্য বলেছেন-

"তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।২:২১৬)"


 আমরা যদি তলোয়ার হাতে নেওয়াটা পাপের মনে করি, তবে সুনিশ্চিতভাবে আমরা নবী(স) এর সুন্নাহ এর উপরে নেই।তিনি কি বলেননি যে "আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য তরবারি দিয়ে প্রেরন করা হয়েছে"!!


মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু দাওয়াত দেনেওয়ালা নবী নন, তিনি ছিলেন"নবীউস সাইফ তথা তরবারি ওয়ালা নবী।"

[দলিল- আস শিফা, পৃষ্ঠা ১৪৮;

 ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৭৪, আহমদ ২/১৪৭]

তিনি শুধু তরবারিওয়ালা নবীই নন,তিনি নিজেকে জঙ্গসমূহের(যুদ্ধ) নবীও বলেছেন।

তিনি বলেছিলেন আনা"নবীউল মালাহিম তথা যুদ্ধসমূহের নবী।"

[দলিল- শরহুশ সুন্নাহ, ১৩/২১৩; 

শামায়েলে তিরমিযী, পৃষ্ঠা ২৫]


 বর্তমানে ইসলামি আদর্শের উপরে থাকা কথিত সন্ত্রাসীদের তথা মুজাহিদকেই বাংলাভাষায় 'জঙ্গি' ট্যাগ দিয়ে সর্বত্র প্রচার প্রচারনা চলছে। ইংরেজিতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড 'টেররিস্ট' হিসেবে পরিচিত। এটা একটি দল বা মতবাদ কে সমাজ থেকে আইসোলেট করবার বুদ্ধিদীপ্ত প্রসেস।শাসকগোষ্ঠীরা সাধারনত জনগণের উপর বিভিন্নভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করে তাদের ইচ্ছামত পরিচালনার জন্য,এর সপক্ষে অসংখ্য থিঙ্ক ট্যাংক তাদের জন্য কাজ করে। এটিও সেরূপ প্রোপাগান্ডার অন্তর্গত বিষয়।


কিছু দরবারী নামধারী ইরজাগ্রস্ত ফন্দিবাজ ব্যাধিগ্রস্ত আলেমগন সাফল্যের সাথে ইসলামে যুদ্ধটাকে সন্ত্রাসবাদ তথা জঙ্গিবাদ ও জিহাদ শব্দগুলোকে ভাবগত ও আক্ষরিক অর্থেই আলাদা করে দিয়েছে, যার দরুন এই কাদিয়ানীপন্থী নামে মাত্র মহানবী (স) এর কথিত অনুসারী আলেমগন জিহাদের নতুন ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে হক্ক ও বাতিলের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকরে জনগনকে বানাচ্ছে জাহেলে মোরাক্কাব! 


যদিও ইসলামপন্থীদের নিন্দার্থে 'জঙ্গি' খেতাব দেওয়া হয়েছে,এটা নিয়ে হীনমন্যতার কিছু নেই। বরং এটা সম্মান সূচক শব্দও যেটা ব্যক্তিবিশেষের স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও তার ব্যক্তিক গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করে।জঙ্গিশব্দটিই সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ূবী রহিমাহুল্লাহর শিক্ষক সুলতান 'নুরুদ্দীন জঙ্গি' রহিমাহুল্লাহর নামেরই অংশ। যাকে মহান প্রতিপালক পছন্দ করেছিলেন নবী (স) এর দেহ মোবারককে কুফফারদের দ্বারা চুরি থেকে হেফাজতের জন্য। তিনিই সেই জঙ্গি যাকে আল্লাহ এজন্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অতঃপর তিনি নবী (স) রওজামোবারক এর চারপাশে খনন করে সিসা গালা সুদৃঢ় বেষ্টনী নির্মান করে দেন। অতঃপর দুষ্কৃতকারীদের পাকড়াও করেন। অতএব নন্দিত জাতি নিন্দুক কর্তৃক নিন্দিত হলেও সেটা পরওয়া করা একেবারেই উচিৎ নয়।


আল্লাহ বলেছেন___   "হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী"[৫:৫৪]


তাদের দ্বারা প্রদত্ত এ সন্ত্রাসী লেবেলটির ব্যবহার মূলত আপেক্ষিক। কোন দেশের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী, আবার স্বাধীনতাকামীদের কাছে 'ভ্যালিয়েন্ট ফ্রিডম ফাইটার'।বীর যোদ্ধা। যারা এদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা করেছে তারা এখন বীরশ্রেষ্ঠ বীর উত্তম খেতাব পায়। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানী সরকার তাদের সন্ত্রাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী অপশক্তি হিসেবেই দেখত। মুজিব নিজেও এক ধরনের সশস্ত্র গুপ্ত রেবেল ফোর্সের ফান্ডিং এ যুক্ত ছিল। আগরতলা মামলা খেয়েছিল কেন! কিন্তু এখন ওটা হিরোইক চেষ্টা হিসেবেই দেখানো হয়। পাকিস্তানি বাহিনীদের কাছে ছিল দেশদ্রোহী  ষঢ়যন্ত্রকারী,দেশ ও জাতির শত্রু। বর্তমানের মত মিডিয়া ব্যবস্থা এতটা শক্তিশালী ছিল না তাই, পাকিস্তানের স্বাধীনতা বিরোধী প্রচারনা জনমনে তেমন দাগ কাটে নি। এখন তো হলুদ মিডিয়াই বড় সন্ত্রাসীর কাজ করে দেয়। এরূপ ইন্টেলেকচুয়াল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ দুটি পরস্পরবিরোধী আদর্শ ও চেতনার মাঝে সব ক্ষেত্রেই থাকবে। কিন্তু বর্তমান টেররিস্ট-সন্ত্রাসী খ্যাত জঙ্গি বা মুজাহিদদের ব্যপারটা কাফেরদের কাছে একটু ভারী এবং চিন্তনীয় বিষয়।এজন্যই তারা এখন গ্লোবাল টেররিস্ট। সমস্ত কাফেরশক্তি ইসলামিক টেররিস্টদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে এক হয়ে সকল মিডিয়ায় কুফরের পক্ষাবলম্বনের 'দাওয়াত' চালায়। এবং এখন পর্যন্ত খুবই সফল! রাসূল (স) সত্যই বলেছিলেন - "আল কুফরূ মিল্লাতুন ওয়াহেদা"!  এই সংঘাত ১৪০০ বছর ধরেই চলছে। এখন কাফেরদের শেকড় সর্বত্র সর্বক্ষেত্রে গত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পোক্ত এজন্য এত জোড়ে শোড়ে জঙ্গিবিরোধি প্রচারনা প্রকাশ্যে সফলতার সাথে চলছে। আর সেসব আমাদের কানে আসছে,টিভিতেও ভাসছে ,পত্রিকাতেও আসছে!  এখানে যে আদর্শিক সংঘর্ষ চলছে সেটা সৃষ্টিকর্তারপক্ষাবলম্বী ও শয়তানেরপক্ষাবলম্বীদের মধ্যে  অর্থাৎ হিজবুল্লাহ ও হিজবুশ শায়াত্বীন এর মধ্যে।যুগে যুগে সবসময়ই সংখ্যালঘিষ্ঠরা আল্লাহর পক্ষাবলম্বী ছিল। আর অধিকাংশই শয়তানের পক্ষাবলম্বী। 


আল্লাহ তা'য়ালা তার পক্ষের স্বল্প দুর্বলদেরকে সবল কুফফারদের উপরে বিজয়ী করেছেন।এটা ভাবনার অবকাশ নেই যে আপনি নিরপেক্ষ। যারা নিরবে কুফরের বিরুদ্ধে চুপ করে আছে ও মেনে নিয়েছে তারাও শয়তানের পক্ষাবলম্বী,যেহেতু তারা অপকর্ম ও অসৎকর্মে বাধা দেয় নি। এ অবস্থান সামূদ গোত্রের ও বনী ইসরাইলের আয়লাবাসীদের নীরব দর্শকদের সাথে মিলিয়ে দেয় যারা আযাবে নিপতিত হয়েছিল, যেটা থেকে শিক্ষার নেওয়ার বিষয় বিদ্যমান। সাদা ও কালোর মধ্যে মাঝামাঝি গ্রে এরিয়া বলে কিছু নেই। হয় আপনি কাফেরদের পক্ষে নতুবা মুজাহিদদের পক্ষে। এ বিষয়টি জর্জ বুশ নিজেও পরিষ্কার করে দিয়েছিল। 



   সন্ত্রাসী জঙ্গি খেতাব পেয়ে হীনমন্যতায় ভোগবার কিছুই নেই।  মহাবিশ্বপ্রতিপালক স্বয়ং আপনাকে কাফেরদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির আদেশ করেছেন। ওদের সাথে যুদ্ধের জন্য সাধ্যমত সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে বলেছেন।ত্রাস সৃষ্টিকারীরাই সন্ত্রাসী! 

আল্লাহ বলেছেন __" আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।"(৮:৬০)


       আগেই বলেছিলাম বিষয়টির দৃষ্টিভঙ্গি দিক দিয়ে পক্ষভেদে আপেক্ষিক অবস্থানের, হক্ক ও বাতিলের মধ্যে একজন নিহত কারও কাছে শহীদ, কারো কাছে সন্ত্রাসী ও শত্রু। এর গ্রহণযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্বের মানদণ্ড গ্রহণযোগ্য একমাত্র সেটাই যেটা মহান সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নির্দিষ্ট। বস্তুত মহান রব সরল পথ ও পথভ্রষ্টতার মানদণ্ড বাতলে দিয়েছেন। এমতাবস্থায় পুরো পৃথিবীর মানুষ একদিকে হলেও সরলপথে একা হলেও চলতে হবে।


"আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। "(২:১৯৩)


"তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।"(৩:১৪২)


Tuesday, February 2, 2021

বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং ইসলাম

 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা মুসলিমদেরকে যমীনের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের দায়িত্ব দিয়েছেন। দ্বীনকে যমীনে প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিষ্ঠিত রাখার মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। সুতরাং আল্লাহর নিকট আত্মসমার্পনকারী তথা মুসলিমরা সবসময়ই গোটা বিশ্বে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে, কাফিররা শাসিত হবে। অন্যদিকে সামষ্টিকভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আল ইদাদ ওয়াল জিহাদ কাজ ছাড়াও একজন একনিষ্ঠ মুসলিমকে অনেক ব্যক্তিগত আমলে সময় পার করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ছাড়াও নফল কিয়াম,সিয়াম, আযকার, কুরআন তিলাওয়াত, তাফসীর অধ্যয়ন, হাদিস শিক্ষা, কোন মুহাক্কিক আলিমের সান্নিধ্যে ইল্ম আহরণসহ আরো অনেক আমল। সুতরাং একজন মুখলিস আব্দুল্লাহর ২৪ ঘন্টায় অবসর সময় কিংবা অলস সময় পার করার মত আসলে সময় নেই। একজন বিলিভারের হৃদয়ের খোরাক হলো কুরআন হাদিস। সে একমাত্র আল্লাহ আযযা ওয়াযালের স্মরণের মধ্যেই একমাত্র প্রশান্তি খুঁজে পায়। এছাড়া ইসলাম যুহদের শিক্ষা দেয়। এর সকল শিক্ষা দুনিয়া বিমুখতার। স্বয়ং আল্লাহ দুনিয়ার ব্যপারে নিরুৎসাহ করে বলেনঃ


وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ ۖ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না ?

(সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ৩২)


 সুতরাং মুসলিমরা থাকবে দুনিয়াতে খিলাফত তথা সামগ্রিকভাবে ইবাদাতের মধ্যে, তাদের মধ্যে ম্যাটেরিয়ালিস্টিক হলৌনেস থাকাটা প্রত্যাশিত কিন্তু স্পিরিচুয়ালভাবে এনরিচড থাকবে। অন্যদিকে কাফিরদের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ওদের সব চিন্তাভাবনাই দুনিয়াকেন্দ্রিক,ম্যাটেরিয়ালিস্টিক। ওদের দুনিয়াবি যাবতীয় সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা, উদ্ভাবনের মধ্যে ওদের হৃদয়ের খোরাকি। যার জন্য দেখা যায় দুনিয়ার যাবতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আবিষ্কারে শুধু কাফিরদেরই নাম। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত ফলাফল। আশ্চর্যজনকভাবে এটা আজকের মনস্তাত্ত্বিক ভাবে পরাজিত মুসলিম উম্মাহর অনেকের মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি করে। যার ফলে তারা কাফিরদের সামনে নিজেদের মানবিক ইনফেরিয়রিটির অনুভূতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া মধ্যযুগীয় বহু আরবি নামধারী দার্শনিক/যাদুকর-জ্যোতিষি-আলকেমিস্টদেরকে "মুসলিম বিজ্ঞানী" বলে জাতে উঠানোর চেষ্টা করে। তারা অমুক অমুক বিজ্ঞানে মুসলিমদের এই এই অবদান আছে দেখাতে চেষ্টা করে। অথচ দেখা যায় তাদের অধিকাংশই আদৌ মুসলিমই নয়, এরা ছিল মুরতাদ।  মূলত  কাফিরদের খোরাকি যখন মুসলিমদের কেউ এ্যাডপ্ট করতে চেষ্টা করে তখন পরিশেষে ইরতিদাদের দিকেই হাটা শুরু করে। সুতরাং এটা খুবই স্বাভাবিক যে কাফিররা বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে খুবই অগ্রসর হবে। এবং আমাদের কাজ হবে তাদের এই প্রযুক্তি বুদ্ধি-বিদ্যাকে তাদের দ্বারা তৈরি করিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠিত রাখার পেছনে কাজে লাগানো। প্রয়োজনে ইসলামি ইমারত বা খিলাফতের রাষ্ট্রব্যবস্থা কাফির বিজ্ঞানীদেরকে প্রেষণাদানের মাধ্যমে উদ্ভাবনী কাজে বাহবা দিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবনে উৎসাহ দেবে। এ কাজ মুসলিমদের নয়। মুসলিমদের এ কর্মে প্রবিষ্ট হওয়া একপ্রকার জিল্লতি বা লাঞ্ছনা। প্রাচীন যুগে দেখবেন দাসদেরকে ব্যবহার করা হত কায়িক পরিশ্রমের কাজে, ইমারত নির্মাণ,ফসল উৎপাদন, ভারী বস্তুবহন ইত্যাদি। ঠিক একইভাবে দাস/দাসীর স্ট্যাটাসে থাকা ইহুদি-নাসারা'রা ইসলামি খিলাফার অধীনে বড় বিল্ডিং নির্মাণ করে দেবে,ব্রীজ নির্মান করে দেবে,বিমান তৈরি করে দেবে, জাহাজ তৈরি করে দেবে, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও উন্নয়নে কাজ করবে। আমরা আদেশ দেব ওরা বাস্তবায়ন করবে ওদের দুনিয়ামুখী মেধাবুদ্ধি দিয়ে। এদের হৃদয়ের খোরাকও এতেই। শ্রদ্ধেয় শাইখুল হাদিস আবু ইমরান [হাফিঃ] বলেন,এদের নতুন উদ্ভাবন আবিষ্কারের জন্য যদি আমরা প্রয়োজনে আরো উদ্বুদ্ধ করার জন্য খোরাকি হিসেবে পিঠ চাপড়ে দেই তাহলে এরা আরো উন্নত প্রযুক্তিকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে। প্রাচীন যুগে এটাই করা হয়েছে। আমি শাইখকে ওই হাদিসের কথা বলি যেখানে হযরত উমার(রাঃ) মুসলিম কোন এক লোককে কৃষিকাজ করতে দেখে তিরস্কার করেন। মুহতারাম মুহাদ্দিস এবার পুরো হাদিসটা শোনানঃ



শাইখ বলেন, মূলত এটাই বিজ্ঞানচর্চায়, উদ্ভাবন আবিষ্কারে কুফফারদের অগ্রগামীতার কারন। এগুলো কাফিরদের হৃদয়ের খোরাক। মুসলিমদের নয়। সুতরাং এইসব বৈজ্ঞানিক/দুনিয়াবি গবেষণার কাজে সময় নষ্টের সময় কোন মুসলিমের নেই। 

যেহেতু খিলাফা ধ্বংস হয়েছে এবং মুসলিমরা গরুর লেজ ধরে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে, সেহেতু আজকে ক্ষমতার মসনদে কাফিররা বসে যাবতীয় প্রযুক্তি আবিষ্কার কুফর প্রতিষ্ঠা এবং আল্টিমেটলি মুসলিমদেরই বিরুদ্ধেই কাজে লাগাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের কাজ এটা নয় যে ওদের সমান সমান হয়ে আবিষ্কার গবেষণায় লাইফ স্পেয়ার করা। বরং ইবনে রজব আল হাম্বলী(রহঃ) কথার ন্যায় ওদের সমগ্র এ্যাডভান্সমেন্ট কে ব্যবহার করা, প্রয়োজনে কর্তৃত্বের বাইরে থাকলে তা দখল করা এবং ছিনিয়ে নিয়ে প্রয়োজনে ওদেরকে প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিকলাঙ্গ করে দেয়া যাতে মুসলিমদের সামনে দুর্বল হয়ে যায়। এর পরে সে বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে দ্বীনের পথে ব্যবহার করা। 


মাঝেমধ্যে কিছু ভাইকে দেখি তারা আমাদের হাতে কাফিরদের প্রযুক্তি ব্যাবহার দেখে বলে, আমরা যেহেতু এতই কাফিরদের বর্জন করি তাহলে ওদের কম্পিউটার রেডিও, মোবাইল, অস্ত্র ইত্যাদি ব্যবহার করি কেন। এই প্রশ্নটি সেই মানসিক পরাজয় প্রবনতা থেকেই আসে।এর উত্তরটা খুবই সিম্পল। আমরা দুনিয়ায় কাফিরদের কাতারে নেমে এটা ওটা বানিয়ে ওদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ইন্টেলেকচুয়াল প্লেজার নেয়ার জন্য দুনিয়াতে আসিনি। বরং ওদের প্রযুক্তিকে যথা সম্ভব ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর পথে কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এখন আমরা ওদের কাজে বাহবা দেই না,বরং ওদের বিদ্যা দিয়ে ওদেরকে কিভাবে 'হায়হায়' উচ্চারন করানো যায় সেটাই আমাদের বর্তমান লক্ষ্য। সুতরাং আমরা কেন ইন্টারনেট, ফোন ব্যবহার করি এমন প্রশ্ন খুবই লেইম। বরং আমরা ইহুদী নাসারাদের ফোন, ফেসবুক প্রভৃতি প্রযুক্তি দ্বীনের স্বার্থে ব্যবহার করে যথার্থই কর্মই করছি। গতকালও নাম  প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাই জিজ্ঞেস করেছেন। বিজ্ঞান চর্চা হারাম কিনা। আশা করি আজকে সেটা ক্লিয়ার হয়েছে। এ কাজ মূলত আমাদের নয়। তবে এমন বৈজ্ঞানিক থিওরি, বিদ্যা কিংবা প্রযুক্তি  যেটা সরাসরি যাদুশাস্ত্রের ইল্মের উপর প্রতিষ্ঠিত/নির্মিত সেটা ব্যবহারে মুসলিমের কোন কল্যাণ নেই। এগুলোর ব্যপারে আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী দখলের পর হযরত উমার আল খাত্তাবের[রাঃ] সুন্নাহ অনুসরনই সবচেয়ে বেশি প্রণিধানযোগ্য যেখানে তিনি বিচিত্র যাদুবিদ্যার অকাল্ট শাস্ত্রগুলোকে প্রয়োজনহীন এবং অগ্রাহ্য করেছিলেন। বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার একটা বড় অংশই পর্যবেক্ষণ অযোগ্য থিওরি। সেসবে চোখ বুজে বিশ্বাস করা ছাড়া পথ থাকেনা। এরকম এমন কোন বৈজ্ঞানিক থিওরি যা কুরআন সুন্নাহ এমনকি সাহাবিয়্যাতের কওলের সাথেও সাংঘর্ষিক, সেসব বাতিল। উদাহরণস্বরূপ সৃষ্টিতত্ত্বীয় বিষয়ে আজকে বিজ্ঞান হিসাবে যা আছে তার সবটাই বাতিল এবং যাদুশাস্ত্রীয় কুফরি বিদ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। হেলিওসেন্ট্রিক এ্যস্ট্রোনমি পুরোটাই বাতিল। সত্য একমাত্র ঐ সৃষ্টিতত্ত্ব যার ব্যপারে বলা হয়েছে কুরআনে, হাদিসে এবং যার উপর ভিত্তি করে বলা আছে সাহাবাদের কওলে। একইভাবে এ্যাডভান্স টেকনলজির এমন কিছু যদি থাকে যা যাদুবিদ্যার উপর ভিত্তি করে বানানো, সেটাও পরিত্যাজ্য। যেমন ধরুন কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এটা এসেছেই ইস্টার্ন মিস্টিসিজমের হাত ধরে। এমন অকাল্ট টেকনোলজি তথ্যা মেক্যানাইজড সিহর, নির্মাতা, নির্মাণ কৌশল সবটাই ধ্বংস করে দেয়াই সমীচীন। আমার মনে পরে বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান সিরিজের শেষাংশে এসব বিষয়ে স্পষ্ট করেছিলাম। আশা করি বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, জিজ্ঞাসার অবসান ঘটেছে। 

ইসলাম বিজ্ঞান চর্চাকে হারাম বা নিষিদ্ধ বলে না, বরং তা শুধুমাত্র কাফিরদের কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করে যারা মুসলিমরা উপকৃত হবে বা ফল ভোগ করবে। লাঞ্ছনার দুয়ার খুলে যাবে যখন মুসলিমরাই এসবকে অন্তরাত্মার খোরাকি হিসবে গ্রহন করবে এবং কাফিরদের সাথে প্রতিযোগিতা করবে উচ্চমর্যাদা থেকে নিচে কাফিরদের সমপর্যায়ে নেমে। আল্লাহ কুরআনে তার সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা-গবেষণার তাগিদ দিয়েছেন যাকে বলা হয় আত্ব তাফাক্কুর ফি খলকিল্লাহ। কিন্তু এখানে চিন্তা-গবেষণার মানে ওই স্ট্যাটাসের গবেষণা-চিন্তা নয় যেটা কাফিররা করে থাকে,বরং সেটার থট প্রসেসের লিমিট সাহাবি-তাবে-তাবেঈনদের পন্থাকে যেন অতিক্রম না করে। সুতরাং কেউ যেন সেসব আয়াতকে কোনভাবেই কাফিরদের বিজ্ঞান চর্চার মানহাজকে ডিফেন্ড না করে তুলে ধরি। 



যা কিছু লিখেছি এর মাঝে যা কিছু কল্যাণকর তা আল্লাহর পক্ষ থেকে,যা কিছু অকল্যাণকর তা আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে। 

ওয়া আল্লাহু তা'য়ালা আ'লাম