Thursday, November 16, 2017

সমতল পৃথিবীর বিষয়টি অনেকের কাছেই আনএক্সেপ্টেবল।


সমতল পৃথিবীর বিষয়টি অনেকের কাছেই আনএক্সেপ্টেবল। এর প্রধান কারন 'ব্রেইনওয়াশ'। যারা যত বেশি টিভি-মুভির সাথে সম্পর্ক যুক্ত তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো বেশি অগ্রহণযোগ্য। আর সাইন্টিফিক ফ্যান্টাসি থাকলে তো আর কথাই নাই। তাদের ক্ষেত্রেও এটা শকিং যারা সারাজীবন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে ছিলেন, আর সকল পড়াশুনা ছিল সৌরজগৎ কেন্দ্রিক তাই পৃথিবী কেন্দ্রিক সমতল-বদ্ধ ও জিওস্টেশনারী কসমোজনি বিরাট এক ধাক্কা। এজন্য এ সকল শ্রেনীর লোকদের থেকে সবচেয়ে বেশি বিদ্রুপ ও বিরুদ্ধাচরণ দেখা যায়। এদের কিছুর বিজ্ঞানান্ধতা এত বেশি যে সকল তথ্য প্রমান পাবার পরেও মহাকাশ ও জাগতিক ভ্রান্ত শিক্ষাকেই চোখ বন্ধ করে আঁকড়ে ধরে থেকে নির্বোধের মত বিদ্রুপ করে। এর কোন মানে হয় না!

ফ্ল্যাট আর্থ এখন সুবিশাল একটি বিপ্লবে রূপ নিয়েছে। এই এস্ট্রোনমির গ্রহণকারীর সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। আমেরিকায় (যুক্তরাষ্ট্র) সবচেয়ে প্রকট। অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনেও অনেক সমতল পৃথিবীর সমর্থক-গবেষক রয়েছে। তাছাড়া পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশ গুলোতেও এর অগণিত সমর্থক রয়েছে।কিছু লোককে দেখি ফ্ল্যাট আর্থ দেখলেই খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস বলে নির্বোধের মত আঙ্গুল তোলে এর দিকে। জানতে ইচ্ছে করে, তারা কি এ ব্যপারে অজ্ঞ যে ৫০০ আগে জিওসেন্ট্রিক-জিওস্টেশনারী এস্ট্রোনমিই প্রতিষ্ঠিত সত্য অথবা বিজ্ঞান রূপে ছিল।আর বর্তমানে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে খ্রিস্টানদের অফসিয়াল বিশ্বাস হচ্ছে গ্লোবিউলার হেলিওসেন্ট্রিক মডেল। Answering-islam নামের খ্রিষ্টানদের বড় ওয়েবসাইট আছে যেখানে ওরা কুরআনের এরর ধরার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। ওরা ইতোমধ্যে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী যে মহাজগতের বর্ননা এসেছে সেটাই দেখিয়েছে Error হিসেবে। সেটা আবার এপোলোজেটিক মোডারেট স্টাইলে খন্ডন করার চেষ্টায় আছে এন্সারিং-খ্রিষ্টিয়ানিটি নামের ওয়েবসাইট। ক্যাথলিক বিদ্বেষী অল্প কিছু খ্রিষ্টানরা এ শতাব্দীতেও বিশ্বাস করে জিওসেন্ট্রিক মডেলে, যদিও ওদের বিকৃত কিতাবে এ ব্যপারে অতটা স্পষ্ট নয়, যেমনটা আমাদের কুরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট। এজন্য কাফেরদের মধ্যে নাস্তিকরা কুরআনকে ফ্ল্যাট আর্থ বুক টাইটেল দিয়ে ভিডিও বানিয়েছিল।আসলে ওরা নিজেদেরকেই বিদ্রুপ করেছে। সেসমস্ত নাস্তিকদের উদাহরণ হচ্ছে এরূপ যে একজন মূর্খ ঘোড়ার পিঠে চেপে আছে অথচ বলছে 'আমি এমূহূর্তে হাতির পিঠে বসে আছি'। যারা জিওসেন্ট্রিক এস্ট্রোনমিকে খ্রিষ্টানদের প্রডাক্ট মনে করে ওরা আসলে অপদার্থ কাফের খ্রিষ্টানদের বিষয়েই ভাল জ্ঞান রাখেনা।

দেখা যায় সামান্য সংখ্যক সমতল পৃথিবীতে বিশ্বাসকারী খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের সাথে সেধে বন্ধুত্ব করতে চায়। ওরা ইসলামের সত্যতার ব্যপারে ভালই জানে কিন্তু মুসলিম হবেনা বাপদাদাদের জন্য। এজন্য এদের কতক দাওয়াত পেলে নিশ্চুপ থাকে। তাই বলে এদের সাথে আপোষ করা বা ফ্রেন্ডশিপ করার বৈধতা নেই। যদি কেউ বলে থাকে তবে আশংকা করি সে নযরের বদনযর প্রাপ্ত।

এ যুগে যে সমতল পৃথিবীর ব্যপারে বিশ্বাসগত বিপ্লব চলছে সেটাতে যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আছে স্পিরিচুয়ালিস্ট,এর পরে আছে ডেইস্ট -এগনস্টিক, অল্প কিছু খ্রিষ্টান, সামান্য কিছু ধর্মহীন(ফর্মার এথিস্ট)। এদিকে মুসলিমদের মধ্যে আরব মুসলিমদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর কারন ওরা সরাসরি বোঝে আল্লাহ তার আয়াতে কি বলেছেন। আর আজমীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইন্দোনেশিয়ায়!

পাইলটরা পৃথিবীর সমতলতার ব্যপারে সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত জ্ঞান রাখে। অল্প কিছু পাইলট এর ব্যাপারে মুখ খুললেও অধিকাংশই চুপ থাকে ও গোপন রাখে চাকরি হারানোর ভয়ে আর মানুষ বোকা বলবে বা তিরস্কার শোনার ভয়ে। দেখুনঃ https://m.youtube.com/watch?v=VaUBrui9L1I

https://m.youtube.com/watch?v=I8ar7vDm-WA

তাছাড়া অনেক অখ্যাত বিজ্ঞানী, গবেষকরা,ইঞ্জিনিয়াররা জিওসেন্ট্রিক কসমোলজির ব্যপারে সুনিশ্চিত। এক ইঞ্জিনিয়ারকে দেখলাম চমৎকারভাবে গ্লোবিউলার মডেলকে ডিস্প্রুভ করলেন। এমনভিডিও সত্যিই রেয়ার। দেখুনঃ https://m.youtube.com/watch?v=vbHI8ezKgjE

সমতল পৃথিবীর এই ফেনোমেনা নতুন কিছু নয় আবার খুব বেশি প্রিমিটিভও নয়। মাত্র ৫০০ বছরের আগের প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান ও বিজ্ঞান। ১৭০০ সাল পর্যন্ত চীনের অফিশিয়াল বিজ্ঞান ফ্ল্যাট আর্থ ভিত্তিক। উইকিপিডিয়াতে উল্লেখ এসেছে স্পষ্টভাবে যে ওরা জেসুইট অর্ডারের চাপে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয় গ্লোব মডেলে সুইঁচ করতে। যাদের কাছে এটা খ্রিষ্টীয় ডগমা মনে হয়, তাদের উচিৎ ইতিহাস জানা। আর একদম ব্রেইনওয়াশডরা গ্লোবালিস্টরা জানেও না Copernican আর Ptolemy'র এস্ট্রোনমির ইতিহাস। ওরা জানেনা গ্রাভিটির ইতিহাস। ওদের সাইকোলজিক্যাল ন্যারোনেসের কারন স্বল্প জ্ঞান।
 এটা সত্য যে কুয়োর ব্যাঙের কাছে ছোট্ট কুয়োই বিশাল জগৎ। আর ছোট্ট পুঁটিমাছের জন্য ছোট্ট ডোবা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে টাইসন,বিল নিই রা সবচেয়ে বেশি সমতল পৃথিবীর বিরুদ্ধে বিদ্রুপ করে যাচ্ছেন। জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে কেউ যখন ফ্ল্যাট আর্থের পক্ষে কথা বলে সে বিজ্ঞানীগন তাদেরকেও অপমান করতে ছাড়েনা।কন্সপাইরেসি থিওরিস্টদের চ্যানেল গুলোর বড় একটা অংশও ফ্ল্যাট আর্থকে সমর্থন করে। ওরা তারা যারা ইল্যুমিনাতি-ম্যাসনিক অকাল্টিজমকে এক্সপোজ করত।
তবে একটা বিষয় উদ্বেগজনক। ফ্ল্যাট আর্থ সমস্ত প্যাগানদের পুনর্জাগরন ঘটাচ্ছে এবং ঘটিয়েছে। বিশেষ করে এস্ট্রলজি। zodiac cycle গুলো খুবভাল ভাবে কাজ করে পুরাতন জিওসেন্ট্রিক মডেলে।যখন এস্ট্রলজি খুব ফ্লারিশড ছিল তখনকার এস্ট্রনমি ছিল জিওসেন্ট্রিক ফ্ল্যাট প্লেইন। যার ফলে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে আধ্যাত্মবাদ। বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা Geocentric cosmology এর পক্ষেই উক্তি করেছিলেন, তাছাড়া তার কর্ম আর চিন্তা গুলোও ফ্ল্যাট আর্থ কেন্দ্রিক, তাই তাকে আধ্যাত্মবাদীরাও আদর্শ হিসেবে গ্রহন করেছে।

একটা বিষয় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে সরাসরি দাজ্জালের অনুসারীরাই ফ্ল্যাট আর্থের প্রোমোটিং এ কাজ করছে পাশ্চাত্যে।এদিকে ইউটিউবও খুব সহযোগীতা করছে, ফ্ল্যাট আর্থ প্রুফ গুলোকে প্রোমোট করে। ইউটিউব এ ঢুকলেই মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাট আর্থের ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে নাটক করছে মাইক জ্যাকের চ্যানেল(ওডিডি টিভি) সহ অনেক ভিডিও রিমুভ করে। কোন কিছু গোপন করার খেলা খেললে সেটারই পাবলিসিটি এমনিতেই বাড়ে। প্রথমেই দেখি এরিক দুবেই কিছু গ্রাফিক্যাল সিমুলেশনে দিয়ে গ্লোব আর্থকে ডিস্প্রুভ করতে। ধীরে ধীরে পপুলারিটি পেতে থাকলে একপর্যায়ে সেলিব্রেটির পর্যায়ে যায়। পরে দেখা যায় স্পিরিচুয়ালিজমকে (নিউএজ) প্রমোট করছে আর মানুষকে সেদিকে আহব্বান করছে।

হাজারো জিনস্টিস্ট,মিস্টিক রা ফ্ল্যাট আর্থে মাথা চাড়া দিয়ে কাজ করা শুরু করে। Yoda টিভিরা প্রচার করে You have to unlearn,what you have learned। অর্থাৎ মতলব হচ্ছে আগের সব শেখানো শিক্ষাকে ইরেজ করুন, হোক সেটা ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়। দাজ্জাল যে তার অনুসারীদের দ্বারা এখন এই ফ্ল্যাট আর্থ প্লটটাকে বেছে নিয়েছে,কুফরি আর এস্ট্রলজি বেজড ব্ল্যাক আর্ট প্রচার করার জন্য, সেটা স্পষ্ট।।জিওসেন্ট্রিক কসমোলজিক্যাল মডেলে সৃষ্টিজগৎ এর গুহ্যজ্ঞান লাভের জন্য টেসলার তিনটি তত্ত্ব একমাত্র কাজ করে এজন্য টেসলাও গ্লোরিফাইড হয়েছে ওদের দ্বারা। আধ্যাত্মিক সাধনার পথে চালনার একটা বিশাল লাভ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির আল্লাহর রাস্তায় ফেরত আসবার পথকে বন্ধ করে দেওয়া। সে আগে থেকে কাফের হলেও দ্বীনে প্রত্যাবর্তন এর দ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারন ওদের বিলিভ সিস্টেম একদমই মনোথেইজমের বিপরীত মেরুর।। এমনকি এক মুসলিম নামওয়ালা একজনের আইডি দেখেছিলাম, ওদের পাতানো ফাদে পা দিয়ে কাব্বালা(আর্ট অব ন্যাক্রোমেসির ইহুদিদের একটা স্কুল অব টিচিং) চর্চা শুরু করেছে। ইন্না লিল্লাহ!! এজন্যই ইউটিউবের ৮৫% ভিডিও গুলো ওদের। আর সেসব ওদের ডিসিপ্টিভ চিন্তা-দর্শন বহন করে।আর কাফেরদের ইউটিউব দিয়ে সেসব ভাইরালকরন চলছে। যেকেউ ওদের ফাদে পা দেবেই,যার মাঝে তাওহীদের জ্ঞান নেই। এজন্য এ ফাদের বিষয়ে সাবধান থাকবেন।

উম্মাহর চলমান দুর্দশার সময়ে এসব নিয়ে আলোচনার সময় সত্যিই নেই। কিন্তু বাধ্য হয়ে লিখতে হচ্ছে যখন দেখি কিছু ভাই সত্যের প্রচারক অথচ আকাশবিজ্ঞান আর সৃষ্টি জগৎ এর ব্যপারে ভুল/ মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন,আর মানুষ সেটা গ্রহন করছে। এটা মনে রাখা জরুরী যে আমাদের কাফেরদের তথ্যের ব্যপারে সাবধান হওয়া উচিৎ। এ আর্টিকেলটি লেখার উদ্দেশ্য এটা বোঝানো যে সমতল পৃথিবীর নোশন খ্রিষ্টীয় নয় যে ফেইক অ্যালিগেশন অনেক নির্বোধ করে থাকে এবং বর্তমান সময়ে এর গ্রহণযোগ্যতা বিশেষ সম্প্রদায়ের মাঝেও কেন্দ্রিভূত নয়। আর এরূপ বিশ্বাসে অপমানবোধ অথবা নঞর্থকতার কিছু নেই। কিন্তু যারা কুয়োর ব্যাঙ তাদের জন্য বড়ব্যাঙ থিওরি নিয়ে বসে থাকাই সমীচীন।

1 Comments: