Tuesday, February 16, 2021

২য় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শুয়োর



 জনৈক ভাই খুব হাতাশা আর দুঃখ প্রকাশ করে বলছেন, তিনি আজ কিছু মুসলিম নামযুক্ত মুর্তাদরা নবী(স) কে নিয়ে অশ্লীলভাবে কটুক্তি করতে দেখেছেন।  তিনি জানতে চাইছেন তাদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না?

বললাম, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে জঙ্গী সাব্যস্ত হবেন এবং আপনাকেই উলটো আইনের আওতায় নেওয়া হবে। কারন এ দেশে নাস্তিক গুরু রাজিব হায়দার বা থাবা বাবা যখন নবী(স) কে নিয়ে অশ্লীল কাব্য, গল্প লিখলো এবং অশ্লীলভাবে কটূক্তি করলো এবং এতে যখন তাকে হত্যা করা হলো তখন খোদ প্রধানমন্ত্রীই তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গেল এবং সংবাদমাধ্যমে তাকে ২য় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ খেতাব দিলো।

বিশ্বাস না হলে দেখুনঃ

https://m.youtube.com/watch?v=zODpDVfbdys


শুধু প্রধানমন্ত্রীই নয়, তার সাথে নাস্তিকদের কর্মের সাথে একমত আব্দুল্লাহ আল মাসুদদের ন্যায় আলেমদের এক একদল।তারাও একে শহীদ খেতাব দিল। দেখুনঃ   https://m.youtube.com/watch?v=MCiCs88_pI0 


নাস্তিক ব্লগার রাজিব হায়দারের অপকর্মের কিছু নমুনা দেখুনঃ

https://m.youtube.com/watch?v=omMgA-OqUwM

https://m.youtube.com/watch?v=GBRJ_qbToic 

https://m.youtube.com/watch?v=J2h1AOGElGs


তিনি জানতে চাইলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে কিনা..

বললাম-"পুলিশের কাছে যেতে পারেন। কিন্তু নাস্তিকদের অসাম্প্রদায়িক মুক্ত চেতনার অসহিষ্ণুতার জন্য আপনাকেই জঙ্গী সাব্যস্ত হয়ে শাস্তি পেতে হতে পারে।"


তিনি বললেন- "এ কেমন পরীক্ষায় ফেললো আল্লাহ্‌ আমাদের 😞

সহ্যও করতে পারি না, কিছু করতেও পারি না"

কিছু করতে পারিনা বললে ভুল হবে। করনীয় কি সেটা নবী (স) এর সুন্নাহ তে ভালভাবেই  বর্ণিত আছে। এর দলিলভিত্তিক করনীয় বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ https://m.youtube.com/watch?v=GBRJ_qbToic

(একই)

অতঃপর দেখুন যারা নবী(স) এর নির্দেশ মোতাবেক কটুক্তিকারী মুর্তাদকে ঘায়েল করেছে তাদের কি পরিনতি হয়েছে।

https://m.youtube.com/watch?v=mTa5thx5oBw

এর পরে ওয়াশিকুর বাবু নামের মুরতাদ আর জঘন্য ভাষায় আল্লাহর ও তার রাসূল(সা) কে নিয়ে কটুক্তি করে। তাকে হত্যার পরেও সরকার একই আচরন করে।

সুতরাং চলমান সময়ে যারা এভাবে আল্লাহ ও তার নবী(স) কে গালিগালাজ ও কটূক্তি করে যাচ্ছে, তাদের বিপক্ষে মামলা করতে চাওয়া, আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের চিন্তা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ?

প্রশ্ন আসতে পারে, কেন এই শাসকগোষ্ঠী নাস্তিকদের সপক্ষেই থাকছে! এত উত্তর খুব সোজা। তাদের নাম গুলো মুসলিম হলেও তারা অন্তরের দিক দিয়ে আদৌ মুসলিম নয়। এরা নিজেরা আইন তৈরি করে বিচার করে, এজন্য তারা ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকেই কাফের। আল্লাহ সূরা মায়েদার ৪৪ নং আয়াতেই তা পরিষ্কারভাবে বলেছেন। এজন্য তাদের বিচার, রায় সবকিছুই নাস্তিকদের পক্ষে যাবে এটাই স্বাভাবিক।। মানবরচিত বিধানের এই শাসকরা আইন হাতে তৈরি করে নিজেদেরকে ইলাহর আসনে বসায় বলে শার'ঈ পরিভাষায় এদের তাগুত বলে। এতএব  কাদের কাছে বিচার চাইবেন? সূরা নিসার ৬০ নং আয়াতে শিক্ষণীয় বিষয় আছে। আল্লাহ বলেনঃ

"আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা নিজেদের মোক্কাদমা তাগুতের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।"


শাসক গোষ্ঠী যে তাগুত সেটার সুস্পষ্ট প্রমান তারা দিয়েছে মুরতাদ ব্লগারদের সমর্থন দিয়ে ও তাদের হত্যাকারীদের বিপক্ষে বিচার করে। কিন্তু এর পরেও কিছু মূর্খরা কখনোই বুঝবেনা। এরা তাগুতকেই বিচার ফয়সালাকারী হিসেবে মান্য করে যাবে।আহলে হাদিস সংগঠনটি এই তাগুতকেই মান্য করতে নির্দেশ দেয়, তাগুতের গুরুদের নামের সাথে 'রহিমাহুল্লাহ' উচ্চারণও করে, আর তাদের ৯৯% ই নাস্তিকদের প্রতি নিরবতা পালন করে। তেমনি অন্যান্য সকল হক্কানী-সহীহ আকিদার ঝান্ডাধারীরাও। মোডারেট আরিফআজাদরা রাসূল (স) কে কটূক্তিকারীদের কতলের 'বিরুদ্ধে'ও মনগড়া আর্টিকেল প্রকাশ করে।

এ আর্টিকেলটি এ জন্যই লেখা যে এখনো অধিকাংশই জানেনা নাস্তিকদের কুকর্ম ও তাগুতের সমর্থনসূচক অবস্থান। এখনো ৯০% মানুষই সত্যের ব্যপারে বেখবর। এদের অনেকে না জেনেই কাফেরদের পক্ষে থেকে তাদের সমর্থন আর হত্যার নিন্দা করে।  এর কারন কাফেরদের সপক্ষীয় শক্তিশালী মিডিয়া কভারেজ। আজ মালাউন অভিজিৎ কে কতলকারী ভাইদেরকে মৃত্যুদণ্ডের রায় হলো। মুর্তাদ সরকার ঠিকই মদিনা সনদে দেশ চালানোর প্রহসন করে। মাথামোটা জনগণ এগুলো শুনে মনে করে তাগুতলীগ কত্ত ভালা! কিন্তু তাদের মুসলমানত্বের পরিচয় হচ্ছে- শাতীমে রাসূল(সাঃ) দেরকে নিরাপত্তা দেয়া এবং এদেরকে কতল করা হলে সত্যিকারের আশিকে রাসূলদের(স) মৃত্যুদণ্ড দেয়া। যতদিন জাতি এই তাগুতকে চিনবে না, প্রকৃত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দিকে আসবে, লাঞ্ছনা কিছু মাত্রায়ও কমবে না। আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।


.

পড়ুনঃ

https://medium.com/@abuyunus/শাতিমে-রাসুল-সাঃ-ও-ইদ্রিস-কান্ধলভি-রহঃ-2194b3ab6888

Sunday, February 14, 2021

সিহর এবং অকাল্ট - টেকনোলজিক্যাল এ্যাম্বিগুইটি

সিহর কি? সিহর বা যাদু হচ্ছে সেই ব্যাখ্যাতীত অদ্ভুত ঘটনা যার কার্যকরণ গুপ্ত বা অজ্ঞাত। এটা বলে সাধারণ মানুষ যারা সিহরের অস্তিত্ব এবং প্রভাবকে অনুভব করে। কিন্তু একজন যাদুকরের নিকট সিহরের সংজ্ঞা একদমই ভিন্ন। তার কাছে যাদু বা সিহর হচ্ছে এমন এক ক্র‍্যাফট যার দ্বারা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নীতিকে পালটে ফেলা হয়, বিকৃত করা হয়,ভেঙ্গে ফেলা হয়, পরিবর্তন করা হয়। অর্থাৎ তাদের নিকট witchcraft/magick/sorcery মানেই manipulating, perverting,distorting, twisting, changing the law of nature/creation।  বৈদিক এবং কাব্বালিস্টিক অর্থাৎ যাদুর ইস্টার্ন এবং ওয়েস্টার্ন উভয় ট্রেডিশনের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন তবে লক্ষ্য তাদের অভিন্ন। আল্লাহর সৃষ্টির সোর্সকোড সম্পর্কে জানার চেষ্টা এবং যতটুকু জানা যায় কিংবা যতটুকু ক্ষমতা আছে সেই জ্ঞান/বিদ্যা দ্বারা পরিবর্তন ঘটিয়ে উদ্দেশ্যসাধন/লক্ষ্য অর্জন। বৈদিক মতানুযায়ী you cannot beat a river into submission,you have to surrender to its current and use its power as your own, therefore silence your ego and your power will rise!  অন্যদিকে কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈদের মত হচ্ছে you can beat a river into submission, therefore you need to raise your ego at highest level and your power will rise! এখানে নদীর স্রোত হচ্ছে ন্যাচারাল ল' & অর্ডারের ফ্লো এর এ্যালিগোরি। যারা বোঝেন নি, বোঝার প্রয়োজন নেই। এই কথাগুলো বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান আর্টিকেল সিরিজেও পাবেন। 

যাইহোক, বৈদিক কিংবা কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রে যে শিক্ষা দেয়া হয় তা মূলত আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টিকে করাপ্ট করার শিক্ষা। যখন কোন ন্যাচারাল অর্ডার বা নীতিকে করাপ্ট করার চেষ্টা করা হয়, সেটা ততক্ষণ পর্যন্ত বিকৃত হয় না যতক্ষণ না এর সৃষ্টিকর্তার থেকে পারমিশন/অনুমোদন আসে। এজন্য আমরা সূরা বাকারার ১০২ নং এ দেখি وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ । উদাহরণ স্বরুপ ধরুন, একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের এমডির কাছে থেকে যেকোন নীতি কিংবা দুর্নীতির জন্য সাক্ষর গ্রহণ করে অনুমতিগ্রহন করে করতে হয়। কোন প্রোডাক্ট ঢুকলে বা বের হলেও তার সাক্ষর গ্রহন লাগে। উনি যদি কাগজে অবৈধভাবে দুর্নীতি ঘটবার জন্য সাক্ষর বা অনুমতি না দেন তাহলে হাজার কিছু করলেও অবৈধভাবে অর্থলাভ হবেনা। ধরুন অফিসের একদল লোক দুর্নীতি করে অর্থলাভের উপায় বের করলো, তারা পাবলিকভাবে এমন এমন মিথ্যা বিশ্বাস প্রচার করলো যার ফলে মনে হয়, এই লোকগুলো সত্য বলছে, ভাল কাজই করতেছে। কিন্তু সুক্ষ্ম দুর্নীতি এমডি ঠিকই বুঝে গেছেন। এখন অনুমতি চাইতে সাক্ষর নিতে গেলে তিনি সাক্ষর করলেন ঠিকই কিন্তু মনে মনে বলেন, এদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ,এ বছর  আরো করো,বছর শেষে ছাটাই করা হবে। যখন অবৈধভাবে কোম্পানির প্রোডাক্ট গুলো বের করা হবে তখনও এমডির কাছে পারমিশন রিকোয়েস্ট গিয়েছে যার এ্যাপ্রোভাল পেয়েই কাজটি ঘটেছে। 


দৃশ্যকল্পটি বুঝে থাকলে উপরোল্লিখিত কথার তাৎপর্য বোঝা সহজ হবে। যাদুকররা যে ট্রেডিশনেরই হোক না কেন এরা যা প্র‍্যাক্টিস করে যেটা ঘটে এটা আল্লাহর অনুমোদনের বাহিরে হয়না, কিন্তু এরা তাদের কাজকে ঘিরে অনেক মনগড়া কুফরি আকিদা বিশ্বাস তৈরি করে যা মাঝেমধ্যে সত্যিকারের কস্মোজেনেসিসকে রিরাইট করে। কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তনের অনুমোদন আল্লাহর থেকে পায় কিন্তু বিনিময়ে অর্থাৎ যাদুর বিনিময়ে পরপারে এদের আর কোন অংশই অবশিষ্ট থাকেনা।  

সুতরাং বৈদিক কিংবা কাব্বালিস্টিক ট্রেডিশনে যে বিদ্যা শেখানো হয় তা সৃষ্টির নীতিকে পরিবর্তন করার অপবিদ্যা ছাড়া আর কিছুই না যা আল্লাহর অনুমতিতেই কাজ করে। এমতাবস্থায়, সেই বেদান্তবাদ বা কাব্বালাহ এর বিদ্যা দ্বারার মেক্যানাইজেশন অর্থাৎ এর বিদ্যার উপর যদি কোন প্রযুক্তি নির্মাণ করা হয় তবে তা কখনোই আল্লাহর দ্বীন অনুযায়ী হালাল হিসেবে গন্য করা সমীচীন হবেনা। উদাহরণস্বরূপ বেদান্তশাস্ত্রে বিশ্বাসী শ্রোডিঞ্জার,হাইজেনবার্গদের বানানো বেদান্ত মেকানিক্স  দুঃখিত ;কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপর বানানো কোয়ান্টাম প্রসেসর। এর রহস্যময় কার্যনীতি এর উদ্ভাবকরাও বোঝেনা। সিহরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কার্যনীতি বা মেকানিকস কখনোই মানুষের কাছে পুরোপুরি বোধগম্য হবেনা। সাধারন মানুষের কাছে যেমন মিস্টিক্যাল, যাদুকরদের কাছেও তেমন মিস্টিক্যাল। পার্থক্য হচ্ছে যাদুকররা মনগড়া কিছু বলে ইন্টারপ্রেট করার চেষ্টা করে। এর মেকানিক্স নূহের [আঃ] যুগেও মানুষ যেমন বুঝতো না এখনো বোঝেনা। প্রথমেই বলেছিলাম, সিহর বা যাদু হচ্ছে সেই ব্যাখ্যাতীত অদ্ভুত ঘটনা যার কার্যকরণ গুপ্ত বা অজ্ঞাত। এখন যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন উসূলের ডেভেলপ করে যাতে বলা হয় প্রযুক্তিগত সবকিছু, নো ম্যাটার এটার ডেভেলপমেন্ট এর সূত্র যাদুশাস্ত্র থেকে নেয়া বা না নেয়া, সেটার কার্যনীতি আজ না বোঝা গেলেও সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ঠিকই বোঝা যাবে, প্রযুক্তির কার্যনীতির বোধগম্যতা সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ যাদুকরদের মৌলিক কার্য তথা ন্যাচারাল 'ল বিকৃতকারী বিদ্যার মেক্যানাইজেশনকে হালাল ভাবে নিয়ে সভ্যতার এ্যাডভান্সমেন্টের সাথে কিংবা সময়ের এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং জুড়ে দেয়ার উসূল ত্রুটিযুক্ত এবং সমর্থনযোগ্য নয়। এর দ্বারা একরকম মু'তাযিলাদের উসূলকে ধারন করা হয়, মু'তাযিলারা যাদুবলে কিছুকে স্বীকার করেনা, তারা সিহরকে বিদ্যা বিজ্ঞান প্রযুক্তির ডোমেইনে ফেলে। যাইহোক, এমন উসূল তৈরির একটি কারন হতে পারে গোটা বিষয়ে পুওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং অথবা সার্বিকভাবে এমন উসূলে চলা যেটায় শারঈ সমস্ত বিধানগুলোর ব্যপারে বুঝ গলার নিচে যেতে দেয় না। 


★এমন কখনো হয়না যে আপনি এমন কোন কিছু গনহারে বানাতে পারেন যার কার্যনীতি সম্পর্কে অজ্ঞাত। আপনি যদি কোন ম্যাথম্যাটিক্যাল প্রবলেম সলভের ব্যপারে পুরোপুরি জ্ঞান না রাখেন, তাহলে ম্যাথ কখনোই সলভ করতে পারবেন না। যদি গোঁজামিল দিতে দিতে করেও ফেলেন,সেটা কিভাবে হলো সে ব্যপারে রিফ্লেক্ট করলে অবশ্যই বুঝতে সমর্থ হবেন। সে ম্যাথের ব্যপারে যদি ভাল করে জানেন অবশ্যই একটু চেঞ্জ করে দিলেও সলভ করতে পারবেন। প্রযুক্তিগত জিনিসগুলো এমনই, এসবের কার্যনীতির রহস্য উদ্ভাবকের কাছে দুর্বোধ্য অবস্থায় থাকেনা। অপর দিকে সিহর সবসময়ই দুর্বোধ্য। এটাকে মেকানাইজড করা হলে,একে ব্যাখ্যা করতে চাইলে আনঅবজারভেবল ফিলসফিক্যাল বিলিফের দিকে যেতে হবে। প্রযুক্তিগত ডিভাইস খুব কমই পাবেন যা সরাসরি সিহরের ইল্মের উপর তৈরি। যা আজ সিহর তা হাজার বছর আগেও সিহর হিসেবেই ছিল। 


★সাধারন প্রযুক্তিগত জিনিস আল্লাহর সৃষ্টিজগতের স্বাভাবিক নীতিরই অনুসরণ করে। এরা 'ল ভায়োলেট করে না। কিন্তু প্রত্যেক যাদুকর জানে he is twisting things out of its proper shape, সে জানে সে ন্যাচারাল 'ল বিকৃত করতে চাচ্ছে। কিভাবে হয় তা কেউ(মনুষ্যজাতি) জানে না। সেটা হতে দেয়া বা না দেয়াটা আল্লাহর হাতে। এমতাবস্থায় বৈদিক কিংবা কাব্বালিস্টিক শাস্ত্র উদ্ভূত প্রযুক্তি আল্লাহর সৃষ্ট জগতের স্বাভাবিক নীতিতে কাজ করবেনা বরং সেটা ল' ভায়োলেট করেই অনবরত আল্লাহর অনুমতিতেই কাজ করবে। সুতরাং কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে বৈধ স্বাভাবিক প্রযুক্তির তালিকাভুক্তির উসূলটির গ্রহণযোগ্যতা - শূন্য। 


হয়ত কিছুকাল পর জিরো পয়েন্ট এনার্জির ডিভাইস চলে আসবে। এটা যদি যাদুকরদের বিশ্বাস অনুযায়ী প্রকৃতির ফান্ডামেন্টাল এনার্জি রিসোর্স ব্যবহার করে, যাকে তারা ইথার কিংবা কোন্টায়াম ফিল্ড/কোয়ান্টাম ফোম/পাইলট ওয়েভ প্রভৃতি শব্দ দ্বারা বোঝায়, এটা কি আল্লাহর সৃষ্টিজগতের নীতিকে ডিফেন্ড করবে নাকি বিকৃত করেই এনার্জি আউটপুট দেবে! আমি অনুভব করি এমন কিছু যদি সফল বাস্তবায়ন ঘটে এবং তা যদি ম্যাসিভ স্কেলে ব্যবহার করে তবে তা প্রকৃতি এবং আশপাশের বস্তু জগতে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা প্রকৃতির ফান্ডামেন্টাল বিল্ডিং ব্লক বিকৃত করে ফেলবে। ইন্টুইটিভ -সাইকোম্যাট্রিক এম্প্যাথরা সহজে বুঝবে যে, এটা বস্তু / প্রানীর ফিজিক্যাল এনার্জি রিসোর্স এক্সস্ট করতে থাকবে,দেখা যাবে বিল্ডিং, বৃক্ষ সমস্ত সলিড অব্জেক্টের রিজিডিটি কমে গেছে ,  সুতরাং সিহর স্বল্পমেয়াদী লাভ তৈরি করলেও তা দীর্ঘমেয়াদে কখনোই কল্যাণকর না। কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ের ম্যাক্সওয়েল চিকম্বুৎসুর ফ্রি এনার্জি ডিভাইস তৈরি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরবর্তীতে তার সাথে অনেক বার্তা বিনিময়ের পর বুঝতে পারি তার জিপিএম মেশিনগুলো রেডিও সিগ্নালকে ইলেক্ট্রিসিটিতে কনভার্ট করে। অর্থাৎ এটা বেতার তরঙ্গকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর কৌশল। এটা আদৌ যাদুকরদের প্রকৃতির ল' অল্টারিং বা পার্ভাশনের চিন্তার ডোমেইনে পরে না। উদাহরণস্বরূপ, আপনি খাদ্য গ্রহন করছেন,আর আপনার শরীর সেই খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করছে।এজন্য দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া ম্যাক্সওয়েলকে বলেছি সে যেন গরীব আফ্রিকানদেরকে এর দ্বারা উন্নয়ন ঘটায়। 


★অতএব এটা বোঝা সহজ যে ম্যাজিক্যাল অকাল্ট স্ক্রিপচার আশ্রিত বিদ্যার উপর সরাসরি ভিত্তি করে প্রযুক্তি নির্মান করা হলে তা শুধুমাত্র এজন্যই পরিত্যাজ্য নয় যে, সেটাকে আশ্রয় করে কাফিররা বিভিন্ন তাওহীদ বিদ্বেষী আকিদা বানিয়ে প্রচার করে, বা তা দ্বারা তারা তাদের কুফরি আকিদার সত্যায়ন করে বরং মূল সমস্যা হচ্ছে এই বিদ্যার মূল শিক্ষাই হচ্ছে সৃষ্টিকে বিকৃত করার জন্য আনঅথোরাইজড ইন্টারভেনশান। এবং এটাই করে থাকে। এটা সফলভাবে কাজ করছে এটা দেখার মানে এই নয় যে আল্লাহ আযযা ওয়াযাল এর উপর সন্তুষ্ট,এও না যে তা আল্লাহর বেধে দেয়া স্বাভাবিক নিজামের অধীনে কাজ করছে। বরং আউটপুট আসছে আল্লাহর অনুমতিতে তার সৃষ্টিকে বিকৃত করার মাধ্যমে। এই যাদু করা মূলত শয়তানেরই কাজ। এর শিক্ষক মূলত শয়তান। শয়তান আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তনের আদেশ দেয়। আল্লাহ শয়তানের এ শিক্ষার ব্যপারে বলেনঃ 

....فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ.... 

....তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব.....।

(সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১১৯)



অর্থাৎ এদিক থেকে দেখা যায় যাদু বা সিহর শয়তানের শিক্ষা। ইহুদিরা যে কাব্বালাহকে ধরে বসে আছে সেটা শয়তানেরই শিক্ষা। আল্লাহ বলেনঃ....وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ....

অর্থঃ... সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত....।

(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১০২)



এজন্য সরাসরি কাব্বালিস্টিক কিংবা বেদান্তবাদের উসূল ব্যবহার করে প্রযুক্তিতে রূপ দিলে তা কস্মিনকালেও বৈধ ব্যবহার্য বস্তু হিসেবে স্বীকৃতি পাবেনা। এই বৈধ অবৈধতা সাব্যস্ত করনের উসূল কোন নির্দিষ্ট সময়কেন্দ্রিক নয় বরং সকল যুগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি কেউ একে বৈধতা দিতে চেষ্টা করে তবে হয় তার সিহরের সংজ্ঞায়নের প্রকৃতি মু'তাযিলা অনুরূপ অথবা তাদের শারঈ অন্যসব উসূল ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং এমন যেরূপ হলে ইল্ম গলার নিচে প্রবিষ্ট হয়না বলে হাদিসে এসেছে। বৈধতাদান কারীদের উসূলকে গ্রহন করলে কাব্বালাহ কিংবা বেদান্তশাস্ত্রে এমন কোন সিহর শিক্ষার কিছু নেই যা ন্যাচারাল 'ল করাপ্ট করতে শেখায়, যা কিছু আছে সবই আল্লাহর নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী হয়। সেই বিধান মোতাবেক কোয়ান্টাম প্রসেসর বানানো হচ্ছে। অর্থাৎ তাহলে আর রাযি.র মতানুযায়ী রিয়ালিটি পার্ভার্শনের কিছু নেই। যাদুকররা যা করে একটা লোককে অসুস্থ করে দেয়, সেটাও প্রকৃতির 'স্বাভাবিক' নীতি!!! আচ্ছা, তাহলে আল্লাহর অনুমতিতে হবার প্রয়োজন কি!? ডিজেল দিয়ে যেভাবে ইঞ্জিন চালানো যায় এটাও এরকমই ব্যাপার। সবই হালাল ইল্ম। সবই টেকনোলজি, সবই সায়েন্টিফিক নলেজ। কিয়ামত পর্যন্ত টেকনলজিক্যাল সব হালাল নো ম্যাটার সেটা যাদুবিদ্যার নীতিতে চলছে অথবা সেটা ছাড়া সাধারন নীতিতে!!! 


ইখতেলাফ কিংবা ভিন্ন উসূল প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ কিছু নয়। বরং মাঝেমধ্যে তা কল্যাণকর। তাই বলে আমাদের এমন কিছু বলার ব্যপারে সাবধান থাকতে হবে যা পেছনের জ্ঞান কিংবা মৌলিক চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিকতা তৈরি করে। আমি এ যাবৎকাল পর্যন্ত যা লিখেছি,যার পেছনে আমার কোন ইল্মী ব্যাকআপ নেই,সেসমস্ত উসূলী(নীতিগত) বিষয়ে এমনটা দাবি করিনা যে তার সবটাই ১০০ ভাগ শুদ্ধ। এমনও হতে পারে এমন কোন উসূল প্রতিষ্ঠিত হল যা আমার চেয়ে বিশুদ্ধ এবং শারঈ দিক দিয়ে বিশুদ্ধ। এমতাবস্থায় সেটাকে অনুসরণই কল্যাণকর হবে। 




ওয়া আল্লাহু তা'আলা আ'লাম।

যা কিছু লিখেছি এর মধ্যে যা কল্যাণকর তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। যা কিছু অকল্যাণকর তা আমার এবং শয়তানের পক্ষ থেকে। 


سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ



 

Sunday, February 7, 2021

জঙ্গী উপাখ্যান

      কিছুদিন আগে জনৈক বন্ধু ম্যাসেজ করে। একটি ফেসবুক লিংক দেয়।  আর অভিযোগের সুরে বলে, যেন  গিয়ে দেখি সেখানে কিভাবে নবী(স) কে অপমান করছে।

তো সেখানে গিয়ে দেখতে পাই ওটা মুসলিম নামধারী আইডি। পোস্টটিতে বলা এরূপ বলা হচ্ছে "জঙ্গি নবী মুহাম্মদ"। কমেন্টে ইসলামী অনুভূতিযুক্ত ফাসেকরা আইডিটিকে অকথ্য গালি দিয়ে তার গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। শীতল চোখে দেখছিলাম আর মনে মনে বলছিলাম, কাফেররা মাঝেমধ্যে ওদের কাছে অপছন্দনীয় সত্যটা বুঝতে পেরে সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রুপাত্বক লেখনী লেখে।


'জঙ্গি' শব্দটি এমন একটি নেতিবাচক শব্দে রুপান্তর করা  হয়েছে যার ব্যবহারগত ভাবার্থ এখন আক্ষরিক শাব্দিক অর্থের চেয়েও বেশি কিছু বোঝানো হয়। কাফেরগোষ্ঠী শব্দটা একটি বিশেষ আদর্শের মানুষদেরকে এমনভাবে 'জঙ্গী' শব্দদিয়ে  ট্যাগ দিয়েছে যেন তারা সাধারন মানুষের পর্যায়ভুক্ত নয়। এমনভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালায় যেন (জঙ্গীরা)তারা হিউম্যানয়েড জন্তুজানোয়ার সদৃশ কিছু অথবা ক্যানিব্যালিস্টিক হিলবিলি জংলি(মানুষখেকো জংলি বা জম্বি ঘরানার কিছু), যাদেরকে দেখা মাত্র হত্যা করতে হয়। আর একাজে সহায়তা করাও পূন্যের কাজ! ভাবগত অর্থে জঙ্গি বলতে ওদের মিডিয়া তাদেরকে দেশদ্রোহী, অরাজকতা-অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুধর্ষ সন্ত্রাসী বলে প্রচার করে। এছাড়া তাদের আদর্শ ও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়েও বিদ্রুপ তাচ্ছিল্য এবং অচল বলে হেয় করে প্রচার করে। এসব মিডিয়া কখনোই তাদের ব্যপারে নিরপেক্ষ তথ্য দেবে না।  সামরিক ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন দুটি ভিন্ন আদর্শবাদীপক্ষের মধ্যে একটি আদর্শগত দ্বন্দ্ব সবসময়ই চলমান আছে। 


ফার্সী শব্দ 'জঙ্গি' এর অর্থ 'যোদ্ধা'। আর 'জঙ্গ' অর্থ যুদ্ধ।'জঙ্গিবিমান' বোধকরি সুপরিচিত শব্দ। ইসলামি আদর্শের উপরে থাকা যুদ্ধকে শার'য়ী পরিভাষায় জিহাদ বলা হয়, তেমনি জিহাদকারী 'যোদ্ধা'দের কে ইসলামী পরিভাষায় মুজাহিদ বলে। সে অনুযায়ী নবী(সাঃ) সাহাবা এবং সালাফগন সকলেই সুপার পাওয়ার জঙ্গিবাহিনীর অন্তর্গত। এর প্রধান নেতা হিসেবে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) সর্বযুগে শ্রেষ্ঠ হয়ে আছেন। আর সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন জঙ্গের মূল নির্দেশদাতা। তাছাড়া তিনিই সবচেয়ে বড় উৎসাহদানকারী। তিনি পবিত্র কুরআনে মূল লক্ষ্য হিসেবে তার বিধান বাস্তবায়নে আমরণ জঙ্গিবাদে তথা কিত্বালে(যুদ্ধে) লিপ্ত থাকার জন্য উৎসাহিত করেছেন। সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কুরআন মূলত একটি শ্রেষ্ঠ সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী কিত্বালপন্থী(জঙ্গিবাদী) কিতাব (আমি বুঝতে পারছি 'জঙ্গি' শব্দগুলোর এরূপ ব্যবহার আপনাকে বিব্রত করছে আপনার ব্রেইনওয়াসড হবার এর মাত্রা অনুযায়ী।

কিন্তু বিষয়টি নর্মালাইজেশনে নিয়ে আসবার সময় এসেছে, নতুবা কুফর আর হক্ক এর মধ্যে ধোয়াশা কাটবেনা)।যাকে ঘিরে সমস্ত দ্বীনি কিতাব রচিত। এজন্যই সালমান রুশদীর মত ইসলামবিদ্বেষী কাফেরদের যারা কুরআন পড়ে তারা বলে কুরআন শ্রেষ্ঠ জঙ্গিবাদী গ্রন্থ।

এই কাফেরগুলো কুরআনের সারবস্তু হালকা হলেও ধরতে পারে বলেই, ইসলাম ধবংসের জন্য ঐক্যবদ্ধ।

তারা ভাল করেই জানে, হক্ক ও বাতিলের সহাবস্থান বেশিক্ষণ চলেনা। সত্য অসত্যকে দূরীভূত করে।


শুধু নবী(স) একাই জঙ্গি ছিলেন না বরং অন্যান্য পূর্বসূরি নবীগনও এ জঙ্গিবাদের নির্দেশ পেয়েছিলেন। জাতির পিতা ইব্রাহীম আলাইহিসালাম একাই মালাউনদের মূর্তিগুলোতে একাই দুধর্ষ জঙ্গিহামলা পরিচালনা করেন।এবং মূর্তিগুলোকে লাঞ্ছিত অবস্থায় ফেলে আসেন যা মূর্তিপূজকদের অপদস্থ করে। এটাই মিল্লাতে ইব্রাহীম এর আদর্শ। আর মহান রব ইসমাঈল(আ) এর সন্তানদেরকে ঐ মহান উদ্দেশ্য পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য প্রেরন করেছেন, যেটা থেকে আজ উম্মাহর অধিকাংশই অনেক অনেক দূরে। 


মূসা কালিমুল্লাহ (আ) বনী ইসরাইলদের নিয়ে জঙ্গিতৎপরতা চালিয়ে গিয়েছেন কুফফারদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে তারা জঙ্গিবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তাদের কথাও কুরআনে বর্ননা দিয়েছেন,যেটা আমাদেরকে জিহাদে আল্লাহর আদেশ পালনে অটলতার শিক্ষা দেয়।


এভাবে ঈসা(আ),দাঊদ(আ),সুলাইমান(আ),তালূত(আ) প্রত্যেকেই কাফেরদের বিরুদ্ধে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিতৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন।যার বর্ননা কুরআনেও উল্লেখ এসেছে যেন আমরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারি।অথচ সেগুলো এখন মজার কিচ্ছাকাহিনীতে রূপান্তর করা হয়েছে।আমরাই নবীগনের সুন্নাহ থেকে ফিরে এসেছি।


পুরো কুরআনের সূরাগুলোতে শুধু মাত্র আল্লাহর দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্ব ও একে বিজয় করবার নির্দেশের ছত্রছায়ায় অন্যান্য ইসলামী আদর্শ বজায়ের নির্দেশ, আদেশ ও উপদেশ ও পূর্ববতী কওম ও নবীগনের ঘটনা এসেছে। তবে মুখ্য লক্ষ্য মহান প্রতিপালকের দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্বকে বাস্তবায়ন এর নির্দেশ এসেছে,যে লক্ষ্যে দুনিয়াতে তিনি মানুষকে তার প্রতিনিধিরূপে পাঠিয়েছিলেন।এজন্য সাধারণ বর্ননার মাঝে মাঝেই হঠাৎ করেই জিহাদের নির্দেশ,অথচ আমরা সেসব নিয়ে চিন্তা করিনা। এমনকি আল্লাহ বনী ইসরাইলের অবাধ্যতার ঘটনা ও পরিণাম উল্লেখ করেও জিহাদে উদ্দীপিত করেছেন।আমরা আজমী হওয়ায় আরবি না বোঝায় কুরআনের নির্দেশ অন্তঃকরণে পৌছায় না,আর অনুবাদের জানবার প্রতিও আগ্রহ কম, এজন্য উপমহাদেশীয় অধিকাংশ মুসলিমই কুরআনের অনুবাদে কি আছে বা আল্লাহ কি নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত গাফেল হয়ে আছে। আরবি দেখে তিলাওয়াত আর বিদাতী সুবিধাবাদী পেটপূজারী আলেমদের ওয়াজের এর বাইরে আমাদের অঞ্চলের মানুষ বেশি দূর যায় না। মোডারেটগনের অধিকাংশই আয়াত বাছাই করে অনুবাদটা কোথাও দেখে। ধারাবাহিকভাবে যদি অর্থটা পড়েও তবে সেটা তাদের মতে 'রাসূল (স) এর জীবদ্দশায় শুধু প্রযোজ্য ছিল'! কেউ বলে এযুগে কোন কিত্বাল নেই,কেউ বানিয়ে নিয়েছে নফসের জিহাদ,কেউ বা বানিয়েছে গণতান্ত্রিক জিহাদ। বস্তুত আল্লাহই সত্য বলেছেন-

"তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।২:২১৬)"


 আমরা যদি তলোয়ার হাতে নেওয়াটা পাপের মনে করি, তবে সুনিশ্চিতভাবে আমরা নবী(স) এর সুন্নাহ এর উপরে নেই।তিনি কি বলেননি যে "আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য তরবারি দিয়ে প্রেরন করা হয়েছে"!!


মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু দাওয়াত দেনেওয়ালা নবী নন, তিনি ছিলেন"নবীউস সাইফ তথা তরবারি ওয়ালা নবী।"

[দলিল- আস শিফা, পৃষ্ঠা ১৪৮;

 ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৭৪, আহমদ ২/১৪৭]

তিনি শুধু তরবারিওয়ালা নবীই নন,তিনি নিজেকে জঙ্গসমূহের(যুদ্ধ) নবীও বলেছেন।

তিনি বলেছিলেন আনা"নবীউল মালাহিম তথা যুদ্ধসমূহের নবী।"

[দলিল- শরহুশ সুন্নাহ, ১৩/২১৩; 

শামায়েলে তিরমিযী, পৃষ্ঠা ২৫]


 বর্তমানে ইসলামি আদর্শের উপরে থাকা কথিত সন্ত্রাসীদের তথা মুজাহিদকেই বাংলাভাষায় 'জঙ্গি' ট্যাগ দিয়ে সর্বত্র প্রচার প্রচারনা চলছে। ইংরেজিতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড 'টেররিস্ট' হিসেবে পরিচিত। এটা একটি দল বা মতবাদ কে সমাজ থেকে আইসোলেট করবার বুদ্ধিদীপ্ত প্রসেস।শাসকগোষ্ঠীরা সাধারনত জনগণের উপর বিভিন্নভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করে তাদের ইচ্ছামত পরিচালনার জন্য,এর সপক্ষে অসংখ্য থিঙ্ক ট্যাংক তাদের জন্য কাজ করে। এটিও সেরূপ প্রোপাগান্ডার অন্তর্গত বিষয়।


কিছু দরবারী নামধারী ইরজাগ্রস্ত ফন্দিবাজ ব্যাধিগ্রস্ত আলেমগন সাফল্যের সাথে ইসলামে যুদ্ধটাকে সন্ত্রাসবাদ তথা জঙ্গিবাদ ও জিহাদ শব্দগুলোকে ভাবগত ও আক্ষরিক অর্থেই আলাদা করে দিয়েছে, যার দরুন এই কাদিয়ানীপন্থী নামে মাত্র মহানবী (স) এর কথিত অনুসারী আলেমগন জিহাদের নতুন ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে হক্ক ও বাতিলের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকরে জনগনকে বানাচ্ছে জাহেলে মোরাক্কাব! 


যদিও ইসলামপন্থীদের নিন্দার্থে 'জঙ্গি' খেতাব দেওয়া হয়েছে,এটা নিয়ে হীনমন্যতার কিছু নেই। বরং এটা সম্মান সূচক শব্দও যেটা ব্যক্তিবিশেষের স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও তার ব্যক্তিক গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করে।জঙ্গিশব্দটিই সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ূবী রহিমাহুল্লাহর শিক্ষক সুলতান 'নুরুদ্দীন জঙ্গি' রহিমাহুল্লাহর নামেরই অংশ। যাকে মহান প্রতিপালক পছন্দ করেছিলেন নবী (স) এর দেহ মোবারককে কুফফারদের দ্বারা চুরি থেকে হেফাজতের জন্য। তিনিই সেই জঙ্গি যাকে আল্লাহ এজন্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অতঃপর তিনি নবী (স) রওজামোবারক এর চারপাশে খনন করে সিসা গালা সুদৃঢ় বেষ্টনী নির্মান করে দেন। অতঃপর দুষ্কৃতকারীদের পাকড়াও করেন। অতএব নন্দিত জাতি নিন্দুক কর্তৃক নিন্দিত হলেও সেটা পরওয়া করা একেবারেই উচিৎ নয়।


আল্লাহ বলেছেন___   "হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী"[৫:৫৪]


তাদের দ্বারা প্রদত্ত এ সন্ত্রাসী লেবেলটির ব্যবহার মূলত আপেক্ষিক। কোন দেশের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী, আবার স্বাধীনতাকামীদের কাছে 'ভ্যালিয়েন্ট ফ্রিডম ফাইটার'।বীর যোদ্ধা। যারা এদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা করেছে তারা এখন বীরশ্রেষ্ঠ বীর উত্তম খেতাব পায়। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানী সরকার তাদের সন্ত্রাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী অপশক্তি হিসেবেই দেখত। মুজিব নিজেও এক ধরনের সশস্ত্র গুপ্ত রেবেল ফোর্সের ফান্ডিং এ যুক্ত ছিল। আগরতলা মামলা খেয়েছিল কেন! কিন্তু এখন ওটা হিরোইক চেষ্টা হিসেবেই দেখানো হয়। পাকিস্তানি বাহিনীদের কাছে ছিল দেশদ্রোহী  ষঢ়যন্ত্রকারী,দেশ ও জাতির শত্রু। বর্তমানের মত মিডিয়া ব্যবস্থা এতটা শক্তিশালী ছিল না তাই, পাকিস্তানের স্বাধীনতা বিরোধী প্রচারনা জনমনে তেমন দাগ কাটে নি। এখন তো হলুদ মিডিয়াই বড় সন্ত্রাসীর কাজ করে দেয়। এরূপ ইন্টেলেকচুয়াল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ দুটি পরস্পরবিরোধী আদর্শ ও চেতনার মাঝে সব ক্ষেত্রেই থাকবে। কিন্তু বর্তমান টেররিস্ট-সন্ত্রাসী খ্যাত জঙ্গি বা মুজাহিদদের ব্যপারটা কাফেরদের কাছে একটু ভারী এবং চিন্তনীয় বিষয়।এজন্যই তারা এখন গ্লোবাল টেররিস্ট। সমস্ত কাফেরশক্তি ইসলামিক টেররিস্টদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে এক হয়ে সকল মিডিয়ায় কুফরের পক্ষাবলম্বনের 'দাওয়াত' চালায়। এবং এখন পর্যন্ত খুবই সফল! রাসূল (স) সত্যই বলেছিলেন - "আল কুফরূ মিল্লাতুন ওয়াহেদা"!  এই সংঘাত ১৪০০ বছর ধরেই চলছে। এখন কাফেরদের শেকড় সর্বত্র সর্বক্ষেত্রে গত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পোক্ত এজন্য এত জোড়ে শোড়ে জঙ্গিবিরোধি প্রচারনা প্রকাশ্যে সফলতার সাথে চলছে। আর সেসব আমাদের কানে আসছে,টিভিতেও ভাসছে ,পত্রিকাতেও আসছে!  এখানে যে আদর্শিক সংঘর্ষ চলছে সেটা সৃষ্টিকর্তারপক্ষাবলম্বী ও শয়তানেরপক্ষাবলম্বীদের মধ্যে  অর্থাৎ হিজবুল্লাহ ও হিজবুশ শায়াত্বীন এর মধ্যে।যুগে যুগে সবসময়ই সংখ্যালঘিষ্ঠরা আল্লাহর পক্ষাবলম্বী ছিল। আর অধিকাংশই শয়তানের পক্ষাবলম্বী। 


আল্লাহ তা'য়ালা তার পক্ষের স্বল্প দুর্বলদেরকে সবল কুফফারদের উপরে বিজয়ী করেছেন।এটা ভাবনার অবকাশ নেই যে আপনি নিরপেক্ষ। যারা নিরবে কুফরের বিরুদ্ধে চুপ করে আছে ও মেনে নিয়েছে তারাও শয়তানের পক্ষাবলম্বী,যেহেতু তারা অপকর্ম ও অসৎকর্মে বাধা দেয় নি। এ অবস্থান সামূদ গোত্রের ও বনী ইসরাইলের আয়লাবাসীদের নীরব দর্শকদের সাথে মিলিয়ে দেয় যারা আযাবে নিপতিত হয়েছিল, যেটা থেকে শিক্ষার নেওয়ার বিষয় বিদ্যমান। সাদা ও কালোর মধ্যে মাঝামাঝি গ্রে এরিয়া বলে কিছু নেই। হয় আপনি কাফেরদের পক্ষে নতুবা মুজাহিদদের পক্ষে। এ বিষয়টি জর্জ বুশ নিজেও পরিষ্কার করে দিয়েছিল। 



   সন্ত্রাসী জঙ্গি খেতাব পেয়ে হীনমন্যতায় ভোগবার কিছুই নেই।  মহাবিশ্বপ্রতিপালক স্বয়ং আপনাকে কাফেরদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির আদেশ করেছেন। ওদের সাথে যুদ্ধের জন্য সাধ্যমত সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে বলেছেন।ত্রাস সৃষ্টিকারীরাই সন্ত্রাসী! 

আল্লাহ বলেছেন __" আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।"(৮:৬০)


       আগেই বলেছিলাম বিষয়টির দৃষ্টিভঙ্গি দিক দিয়ে পক্ষভেদে আপেক্ষিক অবস্থানের, হক্ক ও বাতিলের মধ্যে একজন নিহত কারও কাছে শহীদ, কারো কাছে সন্ত্রাসী ও শত্রু। এর গ্রহণযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্বের মানদণ্ড গ্রহণযোগ্য একমাত্র সেটাই যেটা মহান সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নির্দিষ্ট। বস্তুত মহান রব সরল পথ ও পথভ্রষ্টতার মানদণ্ড বাতলে দিয়েছেন। এমতাবস্থায় পুরো পৃথিবীর মানুষ একদিকে হলেও সরলপথে একা হলেও চলতে হবে।


"আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। "(২:১৯৩)


"তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।"(৩:১৪২)


Tuesday, February 2, 2021

বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং ইসলাম

 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা মুসলিমদেরকে যমীনের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের দায়িত্ব দিয়েছেন। দ্বীনকে যমীনে প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিষ্ঠিত রাখার মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। সুতরাং আল্লাহর নিকট আত্মসমার্পনকারী তথা মুসলিমরা সবসময়ই গোটা বিশ্বে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে, কাফিররা শাসিত হবে। অন্যদিকে সামষ্টিকভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আল ইদাদ ওয়াল জিহাদ কাজ ছাড়াও একজন একনিষ্ঠ মুসলিমকে অনেক ব্যক্তিগত আমলে সময় পার করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ছাড়াও নফল কিয়াম,সিয়াম, আযকার, কুরআন তিলাওয়াত, তাফসীর অধ্যয়ন, হাদিস শিক্ষা, কোন মুহাক্কিক আলিমের সান্নিধ্যে ইল্ম আহরণসহ আরো অনেক আমল। সুতরাং একজন মুখলিস আব্দুল্লাহর ২৪ ঘন্টায় অবসর সময় কিংবা অলস সময় পার করার মত আসলে সময় নেই। একজন বিলিভারের হৃদয়ের খোরাক হলো কুরআন হাদিস। সে একমাত্র আল্লাহ আযযা ওয়াযালের স্মরণের মধ্যেই একমাত্র প্রশান্তি খুঁজে পায়। এছাড়া ইসলাম যুহদের শিক্ষা দেয়। এর সকল শিক্ষা দুনিয়া বিমুখতার। স্বয়ং আল্লাহ দুনিয়ার ব্যপারে নিরুৎসাহ করে বলেনঃ


وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ ۖ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না ?

(সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ৩২)


 সুতরাং মুসলিমরা থাকবে দুনিয়াতে খিলাফত তথা সামগ্রিকভাবে ইবাদাতের মধ্যে, তাদের মধ্যে ম্যাটেরিয়ালিস্টিক হলৌনেস থাকাটা প্রত্যাশিত কিন্তু স্পিরিচুয়ালভাবে এনরিচড থাকবে। অন্যদিকে কাফিরদের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ওদের সব চিন্তাভাবনাই দুনিয়াকেন্দ্রিক,ম্যাটেরিয়ালিস্টিক। ওদের দুনিয়াবি যাবতীয় সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা, উদ্ভাবনের মধ্যে ওদের হৃদয়ের খোরাকি। যার জন্য দেখা যায় দুনিয়ার যাবতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আবিষ্কারে শুধু কাফিরদেরই নাম। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত ফলাফল। আশ্চর্যজনকভাবে এটা আজকের মনস্তাত্ত্বিক ভাবে পরাজিত মুসলিম উম্মাহর অনেকের মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি করে। যার ফলে তারা কাফিরদের সামনে নিজেদের মানবিক ইনফেরিয়রিটির অনুভূতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া মধ্যযুগীয় বহু আরবি নামধারী দার্শনিক/যাদুকর-জ্যোতিষি-আলকেমিস্টদেরকে "মুসলিম বিজ্ঞানী" বলে জাতে উঠানোর চেষ্টা করে। তারা অমুক অমুক বিজ্ঞানে মুসলিমদের এই এই অবদান আছে দেখাতে চেষ্টা করে। অথচ দেখা যায় তাদের অধিকাংশই আদৌ মুসলিমই নয়, এরা ছিল মুরতাদ।  মূলত  কাফিরদের খোরাকি যখন মুসলিমদের কেউ এ্যাডপ্ট করতে চেষ্টা করে তখন পরিশেষে ইরতিদাদের দিকেই হাটা শুরু করে। সুতরাং এটা খুবই স্বাভাবিক যে কাফিররা বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে খুবই অগ্রসর হবে। এবং আমাদের কাজ হবে তাদের এই প্রযুক্তি বুদ্ধি-বিদ্যাকে তাদের দ্বারা তৈরি করিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠিত রাখার পেছনে কাজে লাগানো। প্রয়োজনে ইসলামি ইমারত বা খিলাফতের রাষ্ট্রব্যবস্থা কাফির বিজ্ঞানীদেরকে প্রেষণাদানের মাধ্যমে উদ্ভাবনী কাজে বাহবা দিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবনে উৎসাহ দেবে। এ কাজ মুসলিমদের নয়। মুসলিমদের এ কর্মে প্রবিষ্ট হওয়া একপ্রকার জিল্লতি বা লাঞ্ছনা। প্রাচীন যুগে দেখবেন দাসদেরকে ব্যবহার করা হত কায়িক পরিশ্রমের কাজে, ইমারত নির্মাণ,ফসল উৎপাদন, ভারী বস্তুবহন ইত্যাদি। ঠিক একইভাবে দাস/দাসীর স্ট্যাটাসে থাকা ইহুদি-নাসারা'রা ইসলামি খিলাফার অধীনে বড় বিল্ডিং নির্মাণ করে দেবে,ব্রীজ নির্মান করে দেবে,বিমান তৈরি করে দেবে, জাহাজ তৈরি করে দেবে, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও উন্নয়নে কাজ করবে। আমরা আদেশ দেব ওরা বাস্তবায়ন করবে ওদের দুনিয়ামুখী মেধাবুদ্ধি দিয়ে। এদের হৃদয়ের খোরাকও এতেই। শ্রদ্ধেয় শাইখুল হাদিস আবু ইমরান [হাফিঃ] বলেন,এদের নতুন উদ্ভাবন আবিষ্কারের জন্য যদি আমরা প্রয়োজনে আরো উদ্বুদ্ধ করার জন্য খোরাকি হিসেবে পিঠ চাপড়ে দেই তাহলে এরা আরো উন্নত প্রযুক্তিকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে। প্রাচীন যুগে এটাই করা হয়েছে। আমি শাইখকে ওই হাদিসের কথা বলি যেখানে হযরত উমার(রাঃ) মুসলিম কোন এক লোককে কৃষিকাজ করতে দেখে তিরস্কার করেন। মুহতারাম মুহাদ্দিস এবার পুরো হাদিসটা শোনানঃ



শাইখ বলেন, মূলত এটাই বিজ্ঞানচর্চায়, উদ্ভাবন আবিষ্কারে কুফফারদের অগ্রগামীতার কারন। এগুলো কাফিরদের হৃদয়ের খোরাক। মুসলিমদের নয়। সুতরাং এইসব বৈজ্ঞানিক/দুনিয়াবি গবেষণার কাজে সময় নষ্টের সময় কোন মুসলিমের নেই। 

যেহেতু খিলাফা ধ্বংস হয়েছে এবং মুসলিমরা গরুর লেজ ধরে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে, সেহেতু আজকে ক্ষমতার মসনদে কাফিররা বসে যাবতীয় প্রযুক্তি আবিষ্কার কুফর প্রতিষ্ঠা এবং আল্টিমেটলি মুসলিমদেরই বিরুদ্ধেই কাজে লাগাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের কাজ এটা নয় যে ওদের সমান সমান হয়ে আবিষ্কার গবেষণায় লাইফ স্পেয়ার করা। বরং ইবনে রজব আল হাম্বলী(রহঃ) কথার ন্যায় ওদের সমগ্র এ্যাডভান্সমেন্ট কে ব্যবহার করা, প্রয়োজনে কর্তৃত্বের বাইরে থাকলে তা দখল করা এবং ছিনিয়ে নিয়ে প্রয়োজনে ওদেরকে প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিকলাঙ্গ করে দেয়া যাতে মুসলিমদের সামনে দুর্বল হয়ে যায়। এর পরে সে বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে দ্বীনের পথে ব্যবহার করা। 


মাঝেমধ্যে কিছু ভাইকে দেখি তারা আমাদের হাতে কাফিরদের প্রযুক্তি ব্যাবহার দেখে বলে, আমরা যেহেতু এতই কাফিরদের বর্জন করি তাহলে ওদের কম্পিউটার রেডিও, মোবাইল, অস্ত্র ইত্যাদি ব্যবহার করি কেন। এই প্রশ্নটি সেই মানসিক পরাজয় প্রবনতা থেকেই আসে।এর উত্তরটা খুবই সিম্পল। আমরা দুনিয়ায় কাফিরদের কাতারে নেমে এটা ওটা বানিয়ে ওদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ইন্টেলেকচুয়াল প্লেজার নেয়ার জন্য দুনিয়াতে আসিনি। বরং ওদের প্রযুক্তিকে যথা সম্ভব ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর পথে কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এখন আমরা ওদের কাজে বাহবা দেই না,বরং ওদের বিদ্যা দিয়ে ওদেরকে কিভাবে 'হায়হায়' উচ্চারন করানো যায় সেটাই আমাদের বর্তমান লক্ষ্য। সুতরাং আমরা কেন ইন্টারনেট, ফোন ব্যবহার করি এমন প্রশ্ন খুবই লেইম। বরং আমরা ইহুদী নাসারাদের ফোন, ফেসবুক প্রভৃতি প্রযুক্তি দ্বীনের স্বার্থে ব্যবহার করে যথার্থই কর্মই করছি। গতকালও নাম  প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাই জিজ্ঞেস করেছেন। বিজ্ঞান চর্চা হারাম কিনা। আশা করি আজকে সেটা ক্লিয়ার হয়েছে। এ কাজ মূলত আমাদের নয়। তবে এমন বৈজ্ঞানিক থিওরি, বিদ্যা কিংবা প্রযুক্তি  যেটা সরাসরি যাদুশাস্ত্রের ইল্মের উপর প্রতিষ্ঠিত/নির্মিত সেটা ব্যবহারে মুসলিমের কোন কল্যাণ নেই। এগুলোর ব্যপারে আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী দখলের পর হযরত উমার আল খাত্তাবের[রাঃ] সুন্নাহ অনুসরনই সবচেয়ে বেশি প্রণিধানযোগ্য যেখানে তিনি বিচিত্র যাদুবিদ্যার অকাল্ট শাস্ত্রগুলোকে প্রয়োজনহীন এবং অগ্রাহ্য করেছিলেন। বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার একটা বড় অংশই পর্যবেক্ষণ অযোগ্য থিওরি। সেসবে চোখ বুজে বিশ্বাস করা ছাড়া পথ থাকেনা। এরকম এমন কোন বৈজ্ঞানিক থিওরি যা কুরআন সুন্নাহ এমনকি সাহাবিয়্যাতের কওলের সাথেও সাংঘর্ষিক, সেসব বাতিল। উদাহরণস্বরূপ সৃষ্টিতত্ত্বীয় বিষয়ে আজকে বিজ্ঞান হিসাবে যা আছে তার সবটাই বাতিল এবং যাদুশাস্ত্রীয় কুফরি বিদ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। হেলিওসেন্ট্রিক এ্যস্ট্রোনমি পুরোটাই বাতিল। সত্য একমাত্র ঐ সৃষ্টিতত্ত্ব যার ব্যপারে বলা হয়েছে কুরআনে, হাদিসে এবং যার উপর ভিত্তি করে বলা আছে সাহাবাদের কওলে। একইভাবে এ্যাডভান্স টেকনলজির এমন কিছু যদি থাকে যা যাদুবিদ্যার উপর ভিত্তি করে বানানো, সেটাও পরিত্যাজ্য। যেমন ধরুন কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এটা এসেছেই ইস্টার্ন মিস্টিসিজমের হাত ধরে। এমন অকাল্ট টেকনোলজি তথ্যা মেক্যানাইজড সিহর, নির্মাতা, নির্মাণ কৌশল সবটাই ধ্বংস করে দেয়াই সমীচীন। আমার মনে পরে বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান সিরিজের শেষাংশে এসব বিষয়ে স্পষ্ট করেছিলাম। আশা করি বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, জিজ্ঞাসার অবসান ঘটেছে। 

ইসলাম বিজ্ঞান চর্চাকে হারাম বা নিষিদ্ধ বলে না, বরং তা শুধুমাত্র কাফিরদের কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করে যারা মুসলিমরা উপকৃত হবে বা ফল ভোগ করবে। লাঞ্ছনার দুয়ার খুলে যাবে যখন মুসলিমরাই এসবকে অন্তরাত্মার খোরাকি হিসবে গ্রহন করবে এবং কাফিরদের সাথে প্রতিযোগিতা করবে উচ্চমর্যাদা থেকে নিচে কাফিরদের সমপর্যায়ে নেমে। আল্লাহ কুরআনে তার সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা-গবেষণার তাগিদ দিয়েছেন যাকে বলা হয় আত্ব তাফাক্কুর ফি খলকিল্লাহ। কিন্তু এখানে চিন্তা-গবেষণার মানে ওই স্ট্যাটাসের গবেষণা-চিন্তা নয় যেটা কাফিররা করে থাকে,বরং সেটার থট প্রসেসের লিমিট সাহাবি-তাবে-তাবেঈনদের পন্থাকে যেন অতিক্রম না করে। সুতরাং কেউ যেন সেসব আয়াতকে কোনভাবেই কাফিরদের বিজ্ঞান চর্চার মানহাজকে ডিফেন্ড না করে তুলে ধরি। 



যা কিছু লিখেছি এর মাঝে যা কিছু কল্যাণকর তা আল্লাহর পক্ষ থেকে,যা কিছু অকল্যাণকর তা আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে। 

ওয়া আল্লাহু তা'য়ালা আ'লাম


Thursday, January 28, 2021

বিশেষ দ্রষ্টব্য - ৫

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ 

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গত একমাস ধরে লক্ষ্য করছি অনেকেই "ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব" পিডিএফটি ডাউনলোড এর জন্য আমার পূর্বব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত এক গুগল ড্রাইভে এক্সেসের জন্য রিকোয়েস্ট করছেন। অথচ সেখান থেকে ফাইল অপসারন করা হয়েছিল এবং যথাস্থানে[১] লিংক আপডেট করা হয়েছিল। এরপরেও আপনাদের অনেকে পুরাতন লিংক কোথায় পাচ্ছেন বুঝতে পারছিনা। যদি কোন ভাই যদি পুরাতন লিংক সংরক্ষন করে থাকেন, সেটা চেক করে দেখবেন এবং ডিলিট করে দিবেন। কাউকে লিংক দেবার আগে এটা দেখা জরুরী, সেই লিংক কাজ করছে কিনা। যারা পুরাতন গুগল ড্রাইভে পারমিশন রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছেন তাদের সুবিধার্থে নিচে লিংক দিয়ে দিলাম[২]। যদি কোন ডকুমেন্ট এর লিংক না কাজ করে, তবে তা সরাসরি কমেন্টে জানালে ইহসান হয়। 


______________________________________________

Friday, January 22, 2021

কুরআন যখন আযাবের দলিল!

 আল্লাহ আযযা ওয়াযাল কুরআনকে নাযিল করেছেন আমাদের জীবনাচরণ আকিদা কর্মের সীমারেখা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে। এতে ব্যক্তিগত সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে অবশ্য পালনীয় এমন কোন কিছুই নেই যা  গুপ্তাবস্থায় আছে। এতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তাগুতকে বর্জন করতে, কুফর করতে। তাওহীদের আরকান সুস্পষ্ট। এরপরেও মুসলিমরা কেন কিসের কনফিউশনে ভোগে জানিনা। আল্লাহ কুফফারদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হবে তা কি জানিয়ে দেন নি!? আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে বাদ দিয়ে যারা নিজেদের খেয়াল খুশিমত বিধান রচনা করে, তাদের পরিচয় কি আল্লাহ স্পষ্ট করেন নি!? তিনি কি আমাদেরকে তাদের সাথে করনীয় আচরণকে বলে দেন নি!? 


বালা ওয়াল্লাহ!  দিয়েছেন! এ সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বানী এত স্পষ্ট যে তা বুঝতে তাফসীর কিংবা মুফাসসিরীনের শরণাপন্ন হতে হয়না। রহমানের আয়াতে কোন বক্রতা নেই। এতদসত্ত্বেও আপনি দেখবেন কুরআন পাঠকারীর অভাব নেই কিন্তু আল্লাহর এই শাশ্বত বানী অন্তঃকরণে ধারন করেছে এমন ব্যক্তির খুব অভাব। যারা তাওহিদুল আমালির সাথে সরাসরি যুক্ত এদের সংখ্যা আরো আরো কম! এরা সবাই আল্লাহর হুকুমকে নিজেদের সুবিধামত কাঁটছাট করে অনুসরণকারী! অবস্থাটা এমন যেন লোকেরা কুরআনকে সুর দিয়ে দিয়ে বাহ্যিক ভক্তি ও সম্মান দিয়ে পাঠ করছে, কিন্তু এর সরল অর্থ পড়েও বোঝেনা। এরা তাগুতের বিষয়গুলোকে জোরে জোরে তিলাওয়াত করছে, আল ওয়ালা আল বারা'র আয়াত গুলো পড়ছে, কিন্তু হৃদয় দিয়ে মানছেনা। শুধু মুখেই বলছে। অন্তঃকরণে তালাবন্ধ এসকল পাঠকারীদের জন্য কি কুরআন কোন কল্যাণ বয়ে আনবে? 

মুহতারাম শাইখুল হাদিস আবু ইমরান[দাঃবা] আমাদেরকে বলছিলেন, এইসকল পাঠকারীদের জন্য কুরআন পাঠ করেও না মান্য করার জন্য দলিল হয়ে যাবে, তাদের আযাবের সাক্ষী হিসেবে থাকবে। 


হে আখ্যি,গুটিকয়েক গারীব আলিম উমারার মুখে জানবার পরেও তাওহিদের পূর্নস্বীকৃতি না দিয়ে এরকম কুরআন পড়ে লাভ কি যা কেবল আযাবই বৃদ্ধি করে? কুফফারদের সাথে কম্প্রোমাইজকারী দা'ঈ কিংবা আলিম[!] রব্বে ক্বারীমের ওই আয়াত গুলোকে প্রচার করে লাভ কি যা কেবল তার আযাবকেই বৃদ্ধি করে!? তাওহীদের আরকানগুলোকে যারা মানেনা, যারা কালেমার অর্থকে যারা অপূর্ণাঙ্গ ভাবে মানে, এদের ঈমানের অবস্থা কি অনেকটা এরকম নয় যে; কোন ব্যক্তি ওযূ ছাড়াই সারাজীবন স্বলাত পড়লো? 

তাই, হে আমার ভাই আগে পূর্নাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করে আমল করার মধ্যে কল্যাণ আছে। সুবিধামত কিছু অংশকে মানলাম আর কিছু অংশ অস্বীকার করলাম, এরকম কোন সুযোগ নেই আখ্যি! 

আল্লাহ বলেন,‘...তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে! আর কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।’ 

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ৮৫)

 


Monday, January 4, 2021

পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না


بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপর এবং তার পরিবারবর্গ, সাহাবা ও যারা তার সাথে বন্ধুত্ব রাখে তাদের উপর।


শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেকের ওপরই ফরয; এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,


إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ


“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন; যারা তাঁর পথে যুদ্ধ করে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়।”-  (সূরা সফ: ৪)


কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে যারা নিরন্তর নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন। তাঁদের অন্যতম ছিলেন শায়খ উসামা বিন লাদেন রহ.। তিনিই যুগের হোবল আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্যে উম্মাহকে এক করার চেষ্টা করেন।


এর উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে, তাঁর উল্লেখযোগ্য উদ্ভাসিত রাজনৈতিক কৌশল তিনি ইমারাতে ইসলামিয়ার অধীনে বায়আত দিয়েছেন এবং বিশ্বের সমস্ত মুসলমানদের এ বায়আত দেয়ার জন্যেই আহ্বান করেছেন।


এটি এমন এক ইমারাহ, যার প্রশংসা করেছেন শায়খ হামুদ বিন উকলা রহ., শায়খ সুলামান আল-উলওয়ান ও আলী আল-খুদাইর (আল্লাহ তাঁদেরকে মুক্ত করুন), সেনাধ্যক্ষ শায়খ আবু হাফস রহ., শায়খ আবু মুসআব আয-যারকাভী রহ., শায়খ আবু হামযা আল-মুহাজির রহ., শায়খ আবুল লাইছ আল-লিবী, শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী, শায়খ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী রাহিমাহুমুল্লাহ, শায়খ নাসির আল-ওয়াহশী রহ., শায়খ মুখতার আবু যুবায়ের রহ., শায়খ আবু মুহাম্মাদ আত-তুরকিস্তানী রহ., শায়খ আবু কাতাদা আল-ফিলিস্তিনী, শায়খ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসী, শায়খ হানী আস-সিবায়ী, শায়খ তারেক আব্দুল হালীম সহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম ও নেতৃত্বশীলগণ এবং দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানের বিশিষ্টব্যক্তিগণ।


তাঁরা কোন অতি উৎসাহ বা ভয়ের বশবর্তী হয়ে এ ইমারাহ’র প্রশংসা করেননি; বরং তাঁদের প্রশংসা ছিল সত্যের প্রতি সাক্ষ্যদান; এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে উম্মতে মুসলিমার এক কাতারে একতাবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই পদক্ষেপ।


এটি সে ইমারাহ; যা সৎকাজের আদেশ দেয়, মন্দ কাজ হতে নিষেধ করে, শরীয়ত অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে, মুহাজির ও দুর্বলদের আশ্রয় প্রদান করে, তন্ত্র-মন্ত্র নামক মূর্তিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, সীমালঙ্ঘনকারী ক্রুসেডারদেরকে সমুচিত জওয়াব দেয়।


তাই আমার মুসলিম ও মুজাহিদ ভাইদের আহ্বান করছি, বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভাইদেরকে আহ্বান করছি, আপনারা এই ইমারাহ’র পাশে সমবেত হোন। মুজাহিদদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে হীন চেষ্টার প্রতি আপনারা মোটেও সাড়া দেবেন না। যারা এমন অপচেষ্টায় লিপ্ত; তাদের কাজই প্রমাণ করে, তারা ইসলামের শত্রু বৈ ভিন্ন কিছু নয়।


মুজাহিদদেরকে বিচ্ছিন্ন করার এ হীন অপচেষ্টায় প্রথমে আসে জামাআতু ইবরাহীম আল-বদরীর নাম। যারা হলো নিকৃষ্ট খারেজীদের উদাহরণ। অনবরত মুসলিম জনসাধারণ ও মুজাহিদদেরকে তাকফীর করাই যাদের বৈশিষ্ট্য। এমনকি তারা সৎকর্মের কারণেও মুসলমান ভাইদের প্রতি কুফরের অপবাদ চাপায়। 

উদাহরণ চাইলে, বলা যায়, শহীদ ভাই আবু সাঈদ আল-হাদরামী রহ. এর কথা। তাকে তাকফীর করা হয়, কেননা তিনি জায়শুল হুর এর কাছ থেকে জিহাদের ওপর বায়আত নেন।


জামাআতু ইবরাহীম আল-বদরী (বাগদাদি) আল-কায়েদার নেতৃত্বশীলকে পর্যন্ত তাকফীর করে। কারণ কী? তারা দাওয়াতের ক্ষেত্রে কখনো কখনো নরম কথাও বলে। এ জামাআতের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হলো, শরীয়তের আলোকে বিচার-ফয়সালা থেকে পলায়ন করা, মিথ্যা রটানো, অপবাদ আরোপ করা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা।


এত কিছুর ওপর তারা ঘোষণা দিল, যারা তাদের বিরুদ্ধে যাবে, চাই সে শরীয়তের আলোকে বিচার প্রার্থণা করুক না কেন; সে কাফের, তার স্ত্রী ব্যাভিচারিণী! এ যেন তারা নবুওয়তের দাবী করছে, যারাই তাদের বিরুদ্ধে যায়; তারাই কাফের!


আল-কায়েদাকে তাকফীর করার যথোপযুক্ত একটি কারণ বর্ণনার জন্যে তাদেরকে বহু বার আহ্বান করা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত তারা কোন প্রকার জবাব দেয়নি। আজও আমরা তাদেরকে, তাদের নেতা ইবরাহীম আল-বদরীকে আহ্বান করছি- আমাদেরকে তাকফীর করার কারণগুলো বর্ণনা করে দাপ্তরিকভাবে বিবৃতি প্রদান করুন। যে কারণগুলো হতে হবে অকাট্য এবং সুদৃঢ়।


আমাদের বারবার বলা সত্ত্বেও তারা আজ পর্যন্ত এটা বলেনি যে, সে সব লোক কারা? যারা তাকে নেতা হিসেবে ঘোষণা দেয়। তাকে খলীফার আসনে বসায়। আমরা আজও ইবরাহীম আল-বদরীর কাছে জানতে চাইবো, যারা তাকে খলীফার আসনে বসিয়েছে, তাকে বায়আত দিয়েছে; কে তারা?


তাদের অতীতে অর্জিত যোগ্যতাই বা কী? তাদের বৈশিষ্ট্য কী? তাদের বিষয়ে স্পষ্ট করতে হবে, যারা সাদ্দামের বাহিনীতে (বাথ পার্টিতে) ছিল, বিশেষ করে যারা ছিল সাদ্দামের গোয়েন্দা বিভাগে। কোন অধিকারে তাদেরকে উম্মতে মুসলিমার নিয়ন্ত্রণে বসানো হয়েছে?


হে মুসলিম ও মুজাহিদ ভাইগণ! বিশেষ করে আফগানের ভাইয়েরা! ইমারাতে ইসলামিয়া তার আমীর, দায়িত্বশীল ও সেনাদের নিয়ে চৌদ্দ বছরেরও বেশি সময় ধরে, একমাত্র রবের ওপর ভরসা করে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ক্রুসেডারদের হামলার প্রতিরোধ করে আসছে। 

তাদের দেয়া এমন অসংখ্য কোরবানীর পর নব্য খারেজীদের আবির্ভাব ঘটেছে, তাদেরকে কাফের বলার জন্যে!


বলে কী? তালেবান তাগুতের গোয়েন্দা দল! তাহলে বলো, আমেরিকার বিমানগুলো কেন তাদের গোয়েন্দাদের ওপর হামলা করবে? আমেরিকার গোয়েন্দা দল কী আমেরিকাকে মৃত্যুর ঘাটে নিয়ে যাবে? নিজেদেরকে লাঞ্ছনার শেষ দেখিয়ে ছাড়বে? তাগুত গোয়েন্দা দল কি মুরতাদ সরকারকে হত্যা করবে? আফগানিস্তানকে তাদের ফাসাদ থেকে মুক্ত করবে?


তাই আমি সতর্ক করছি, ইবরাহীম আল-বদরীর অপরাধগুলো জেনেও যারা তাকে বায়আত  দেবে; তারা তার এ সবকর্মে তার সমান সাহায্যকারী।


সে তাদের মতোই শরীয়তের বিচার-ফয়সালা থেকে পালানোর ব্যাপারে তাদের সঙ্গী। মুসলমানদেরকে তাকফীর করা, ক্রুসেডারদেরকে প্রতিহতকারী মুজাহিদদেরকে বিচ্ছিন্ন করা, তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া, মুজাহিদদের পূত স্ত্রীদেরকে কযফ তথা ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া, যারা শরীয়তের আলোকে বিচার-ফয়সালা করতে চায় তাঁদেরকে হত্যা করা, তাঁরা তাদের অনুগত না হলে তাঁদেরকে হত্যার হুমকি দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সমান অংশীদার। তাদের অংশীদার তাদের সকল অপরাধে। বিচার দিনের জন্যে তারা যেন জবাব তৈরি করে রাখে।


সবশেষে, সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি এর ওপর। তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীদের ওপর। আস-সালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু।



_শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ)

ইস্তিকামাহ্* (দৃঢ়চিত্ততা/মানসিক অবিচলতা)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্*, 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্* রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য।

 দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের উপর। 

ইবনুল কাইয়্যিমের রঃ মতে, কোন কাজ ইস্তিকামাহ্* তথা দৃঢ়চিত্ততা বা মানসিক অবিচলতার সাথে সম্পন্ন করতে চাইলে নিম্নোক্ত পাঁচটি শর্ত পূরণ করা জরুরীঃ 

[১] কাজটি হতে হবে কেবলমাত্র এবং শুধুমাত্র আল্লাহ্* রাব্বুল ‘আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আর এই বিষয়টি নিয়্যতের পরিশুদ্ধতার সাথে সম্পৃক্ত। এটিই হল “ইখ্*লাস” বা নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা। 

[২] অর্জিত জ্ঞান (‘ইল্*ম) হবে কাজটির ভিত্তি। অর্থাৎ, জেনে ও বুঝে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। কারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে সম্পাদিত কর্ম মানুষের মানসিক নিশ্চয়তা বিধান করে। 

[৩] নির্ধারিত পদ্ধতি মেনেই ইবাদত করতে হবে। শব্দগত অর্থেই “ইবাদত” মানে হল “মেনে চলা”, “আনুগত্য করা” ইত্যাদি। আর তাই ইবাদত বা আনুগত্য করতে হবে ইবাদতের নির্ধারিত পদ্ধতির আনুগত্য করার মাধ্যমেই। [৪] কাজটি করতে হবে যথাসম্ভব সর্বোত্তমভাবে এবং আন্তরিকতার সহিত। ইবাদতে অনাগ্রহ বা অনীহা দুর্বল ঈমানের অন্যতম প্রধান লক্ষন। 

[৫] কোন কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে কাজটির আইনী বৈধতা আছে কিনা তাও বিবেচ্য বিষয়। আইনী বৈধতা নেই এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

সুলুক (আচরন বা শিষ্টাচার) বিষয়ক অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ ইস্তিকামাহ্* (দৃঢ়চিত্ততা বা মানসিক অবিচলতা) অর্জনের ক্ষেত্রে আরো কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করার উপদেশ দিয়েছেনঃ 

[১] চূড়ান্ত পরিণতি তথা আখিরাতে বিচার দিবসের কথা ভেবে সদায় সতর্ক থাকাঃ পরকাল ভিত্তিক এই মানসিক সচেতনতার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে যাতে করে তা মানুষকে বেশী বেশী সৎকর্মের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। প্রতি মুহূর্তেই নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে একজন মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় তার আখিরাতের জীবন। 

একজন সালাফ [রাসূল (সা) এর পরবর্তী যুগে ইসলামের প্রথম দিকের তিনটি প্রজন্ম-সাহাবীগণ,তাবীঈগণ এবং তাবে-তাবেঈগণই হলেন সালাফ] বলেনঃ

“আপনি যদি জানেন যে আপনি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তাহলে বিকালের অপেক্ষা করবেন না আর যদি জানেন যে বিকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তাহলে পরবর্তী সকালের অপেক্ষা করবেন না।”

[২] অঙ্গীকার বা মুশারাতাহঃ একজন মানুষকে অঙ্গীকার করতে হবে যে তিনি দৃঢ় বা অবিচল হবেন এবং ইসলামের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে যথাসম্ভব সঠিক ও উত্তমভাবে কাজ করবেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজকের দিনে অনেক মুসলমান এ ধরনের অঙ্গীকার করার ব্যাপারে বড়ই উদাসীন। 

[৩] উক্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া বা মুজাহাদাহঃ কিছু সংখ্যক মুসলমান আছে যারা অঙ্গীকার করে কিন্তু সেই অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে সচেষ্ট হয় না। 

[৪] নিয়মিতভাবে নিজের কাজকর্মের পর্যালোচনা তথা মুরাকাবাহঃ অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়ে কখনই কোন মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে আত্মপ্রসাদে ভোগা চলবে না। এক্ষেত্রে নিজের প্রতি সৎ হতে হবে। 

[৫] নিজের কাছেই জবাবদিহি করা বা মুহাসাবাহঃ এ ধাপটি দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। 

প্রথমত,কোন কিছু শুরু করার আগে নিশ্চিত করতে হবে এ কাজে আল্লাহ্* রাব্বুল ‘আলামীন খুশি হবেন কিনা অর্থাৎ কাজটা আল্লাহ্*র ওয়াস্তে করা হচ্ছে কিনা। এক্ষেত্রে এটা উপলব্ধি করা খুবই জরুরী যে কাজটি আল্লাহ্* রাব্বুল ‘আলামীন তথা ইসলামের নির্ধারিত নিয়ম মেনেই করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, কাজটি শেষ হওয়ার পর ভুল-ত্রুটি যাচাই করে দেখা,যে উদ্দেশ্য করা হয়েছে সেটা অর্জিত হয়েছে কিনা তা বিচার করা। যেটুকু সাফল্য পাওয়া গেছে তাতে সন্তুষ্ট না থেকে আরো ভাল করা যেত কিনা সেটা খতিয়ে দেখা। 

[৬] কাজটি সম্পন্ন হলে নিখুঁতভাবে করতে না পারার জন্য নিজেকে দোষারোপ করাঃ ভবিষ্যতে আরো ভালো করার প্রত্যয়ে আত্ম-নিন্দাকে একটি ইতিবাচক গুণ হিসেবে নেয়া যায়। এমনটি করতে পারলে তা আমাদের কর্ম সম্পাদনের দক্ষতা উন্নতির জন্য পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে আরও অঙ্গীকার করার সুযোগ করে দেবে। 

[৭] উন্নতির জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বা তাহসিনঃ আমরা প্রত্যহ যে কাজগুলো করি যেমনঃ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড,মহৎ কাজ,ইবাদত ইত্যাদি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আমাদেরকে উন্নতি সাধনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। 

[৮] আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের প্রতি বিনয়ী হওয়াঃ আল্লাহ্* রাব্বুল আলামীনের ক্ষমা, নির্দেশনা ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে; বুঝতে হবে তিনি ব্যতীত উৎকৃষ্ট, নিখুঁত এবং মহান আর কেউ নেই। উপরোক্ত শর্ত/ধাপগুলো দুনিয়াবী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ইবাদত এবং অন্যান্য ধর্মীয় ভাল কাজে প্রয়োগযোগ্য মনে করতে হবে। সূত্রঃ ইমাম নাওয়াবি (রাহিমাহুল্লাহ্*) এর ৪০ টি হাদিসের এর একটি ব্যাখ্যা।


ডকুমেন্ট সোর্সঃ একিউ

মরুর সিংহ খ্যাত শহীদ উমর মুখতার রহিমাহুল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ওমর ইবনে মুখতার ইবনে ওমর আল মানফী (রহ.) ১৮৫৮ ঈসায়ী “বারকার” অন্তর্বতী জাবালে আখাদ্বারে” অবস্থিত বুত্বনান এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পরিপূর্ণ ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেন । তিনি ছিলেন খুবই আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি এবং কোরআন সুন্নাহর আদর্শে আদর্শবান।


শৈশবেই তিনি পিতৃহারা হন। হজ্জের সফরে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর শাইখ হুসাইন আল গারইয়ানীর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন তিনি। নিজ মেধা ও বিচক্ষণতায় শৈশবেই সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মেধার কারণে জাগবুব কলেজের শিক্ষক মণ্ডলী তাকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। তিনি জাগবুব কলেজে আট বছর পড়াশোনা করে উস্তাদদের কাছ থেকে শরিয়তের বিভিন্ন ইলম অর্জনে নিজেকে সিক্ত ও পরিতৃপ্ত করেন।

 

তিনি ছিলেন মাঝারী উচ্চতা ও ঘন দাড়ি বিশিষ্ট। তাঁর ঠোটে সর্বদা মুচকি হাঁসি লেগে থাকতো। চেহারায় ছিল গাম্ভীর্যের ছাপ। তাঁর কথা ছিল খুবই ভারসাম্যপূর্ণ-আবেগময় যা শুনতে মানুষ কখনো বিরক্তিবোধ করতো না। তাঁর কথায় আঞ্চলিক টান ছিল। আওয়াজ ছিল খুব উঁচু ও স্পষ্ট।

 

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯১১ ঈসায়ী ইতালি লিবিয়া দখল করতে তাদের নৌবাহিনী প্রেরণ করে। শহীদ ওমর মুখতার (রহ.) তাদের প্রতিরোধ করতে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করেন। একের পর এক গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদেরকে নাজেহাল করে ছাড়েন। ফলে তিনি ইতালির মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। তাদের পত্রিকাগুলোতে জোরেশোরে তাঁকে নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়। ইতিমধ্যে ওমর মুখতার ও তাঁর সহযোদ্ধাদের হাতে ধারাবাহিক পরাজয়ের ফলে চারজন ইতালীয় শাসকের ক্ষমতার পালাবদল হয়। ফলে ওমর মুখতার (রহ.) ইতালিয়ানদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হন।

 

এদিকে ওমর মুখতারের একের পর এক বিজয়ে ইউরোপে ইতালীয়দের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাই, ওমর মুখতার ও তাঁর সঙ্গীদের রুখতে ফ্যাসিস্ট মসোলিনী নিজেই এগিয়ে আসে।

সে  যুদ্ধাপরাধী গ্ৰাজিয়ানিকে লিবিয়া অভিমুখে প্রেরণ করে। সে সেখানে এমন সব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে যার নজির তৎকালীন বিশ্বে ছিল না। সে মিসর-লিবিয়া সীমান্তে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ  কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে, যেন মিশর থেকে লিবিয়ার মুজাহিদদের কাছে কোন সাহায্য আসতে না পারে। এমন পরিস্থিতিতে শহীদ ওমর মুখতার (রহ.) বাকী মুজাহিদগণকে নিয়ে লিবিয়ার উত্তপ্ত মরুভূমিতে ঘাঁটি স্থাপন করেন । তাঁদেরকে ধাওয়া করতে আসা আগ্ৰাসী বাহিনীর জন্য মরুভূমিকে মরণ ফাঁদে পরিণত করা হয়। ফলে লিবিয়া ভূখণ্ড ইতালীয়দের জন্য অগ্নিশিখার রূপ ধারণ করে।

 

শহীদ ওমর মুখতার (রহ.) নিজের জীবনের সময়টাকে দুইভাগে ভাগ করে নিয়েছিলেন। তিনি দিনের বেলা জিহাদ করতেন আর রাতের বেলা ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দিতেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের দিনগুলোতেও প্রতি সপ্তাহে তিনি একবার কোরআন শরীফ খতম করতেন। সাধারণত দৈনিক মাত্র দুই বা তিন ঘন্টা ঘুমাতেন।

একদিন হযরত ওমর মুখতার ঘোড়ায় চড়ে মরুভূমিতে পথ চলছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর উপর আক্রমণ করা হয়। তাঁর ঘোড়া আহত হয়। তিনি মরুভূমির উত্তপ্ত বালির উপর ছিটকে পড়েন এবং গুরুতরভাবে আহত হন। হামাগুড়ি দিয়ে একটু একটু করে সামনে অগ্ৰসর হতে থাকেন। এবং এক জনবসতিতে পৌঁছাতে সক্ষম হন।

 

১১ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ঈসায়ী, শহীদ ওমর মুখতার (রহ.) লিবিয়ার উপকূলে একটি এলাকায় অবস্থা করছিলেন। সে সময় ইতালীয়রা তাঁকে অবরোধ করে ফেলে এবং বন্দী করে।

১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ঈসায়ী, সন্ধ্যা পাঁচটার সময় মিথ্যা অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তড়িঘড়ি করে তাঁর  ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ের পূর্বেই ইতালীয় সৈন্যরা ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে রেখেছিল। রায় ঘোষণার পরের দিন ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ঈসায়ী, বুধবার সকালের মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। এই লক্ষ্যে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর সকল সদস্য এবং দেশের সকল কয়েদি ও হাজতির পাশাপাশি আরো বিশ‌ হাজার অধিবাসীকে ফাঁসির মঞ্চের চারপাশে জড়ো করা হয়।

১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ঈসায়ী, সকাল ৯টার সময় হাতে বেড়ি পড়া অবস্থায় ওমর ইবনে মুখতারকে জল্লাদের হাতে সোপর্দ করা হয়। ফাঁসির মঞ্চে উঠানোর পর আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে জঙ্গি বিমান মহড়া দিতে থাকে।  শহীদ ওমর মুখতার (রহ.) এর কাছাকাছি যারা ছিলেন তাদের অনেকে বলেছেন,

ফাঁসির মঞ্চে উঠানোর পর  তিনি মৃদু আওয়াজে নামাজের আযানের মতো আযান দিচ্ছিলেন।” আবার অনেকে বলেছেন, তিনি বিড়বিড় করে কোরআনের সূরা ফজরের শেষ আয়াতগুলো পড়তেছিলেন-

يا أليتها النفس المطلمئنة. ارجعى الى ربك راضية مرضية. فادخلى في عبادى. وادخلى جنتى.

“হে  পবিত্র আত্মা! তুমি তোমার রবের নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তুর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে। (সূরা আল ফজর)

সর্বশেষ , কালিমা শাহাদাত পড়তে পড়তে শাহাদাত বরণ করেন।

اشهد أن لا اله الا الله و اشهد ان محمدا عبده و رسوله

 

তাঁর জীবনের কিছু দিক

 

শহীদ ওমর মুখতার (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে- তিনি  এক কাফেলার সাথে বনের মধ্য দিয়ে সুদান যাচ্ছিলেন। কাফেলার  একজন কাছাকাছি একটি ক্ষুধার্ত সিংহ থাকার বিষয় নিশ্চিত করে। কাফেলার লোকজন প্রস্তাব করল যে, এটির হামলা থেকে বাঁচতে এর সামনে একটি উট ছেড়ে দেয়া হোক। এতেই সিংহ সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। ওমর মুখতার তাদের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন- দুর্বলের পক্ষ থেকে সবলকে ঘোষ দেয়ার প্রথা মানবসমাজে বাতিল করা হয়েছে। সুতরাং একটি হিংস্র প্রাণীর ক্ষেত্রে এটি কী করে বৈধ হতে পারে!!

ওমর মুখতার বললেন, আল্লাহর কসম! এতে লাঞ্চনা ও অপমানের গন্ধ রয়েছে।  আল্লাহর কসম! এটি যদি আমাদের উপর আক্রমণ করতে আসে, তাহলে তলোয়ারের আঘাতে একে দ্বিখণ্ডিত করা হবে। এর সামান্য পর আচমকা  সিংহটি  সামনে এসে আক্রমণ করতে উদ্যত হল।  ওমর বিন মুখতারও প্রস্তুত ছিলেন। তিনি তরবারি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সুকৌশলে তিনি এটিকে হত্যা করলেন। অন্যান্য কাফেলাকে দেখানোর জন্য এর চামড়া উঁচুতে ঝুলিয়ে তারপর আবার যাত্রা শুরু করলেন।

পরবর্তীতে যখনই এ ঘটনাটি  তাকে বলা হতো, তখন তিনি বলতেন-

وما رميت اذ رميت ولكن الله رمى…

যখন তুমি নিক্ষেপ করতে চেয়েছিলে, তখন কিন্তু তুমি নিক্ষেপ করনি। বরং আল্লাহ তা’আলাই নিক্ষেপ করেছেন। (সূরা আনফাল)

তাঁর উপাধী:

শহীদ ওমর মুখতারের উপাধী ছিল-

শাইখুল মুজাহিদীন ,শাইখুশ শুহাদা এবং

আসাদুস সাহরা বা মরুর সিংহ।






ডকুমেন্ট সোর্সঃ AQ

Monday, December 28, 2020

বান্দার সাহায্য রবের জন্য

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। 

الحمد لله رب العالمين، اللهم صلِّ على محمد وآله وسلم وبارك. 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি বিশ্বজাহানের রব। হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পরিবার পরিজনের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। 


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, 

 

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُ‌وا اللَّهَ يَنصُرْ‌كُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ 

অর্থ: হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। [ সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৭ ] 


অধিকাংশ মানুষ হয়তো আল্লাহ তায়ালার এ কথার দিকে দৃষ্টি দেয়, “আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখবেন”, কিন্তু তার পূর্বে যে শর্ত রয়েছে, “যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর” এ দিকে কেউ দৃষ্টি দেয় না। অথচ আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আল্লাহ তা’য়ালা সাহায্য করবেন যদি তোমরা তাকে সাহায্য কর। কীভাবে বান্দা আল্লাহ তায়ালাকে সাহায্য করবে? 


উস্তাদ আব্দুল্লাহ বিন খালেদ আল-আ’দম বলেন: বান্দার কাছ থেকে রবের সাহায্য কামনার উদ্দেশ্য হল – বান্দার দোয়ার বিনিময়ে আল্লাহ বান্দাকে এমন সাহায্য করবেন যা দ্বারা সে গুনাহ ও খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, কল্যাণকর কাজের চেষ্টা করতে পারে এবং উত্তম আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে পারে। আর পদস্খলন ও ভুলত্রুটির কারণে সর্বদা অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা-ইস্তেগফার করতে থাকে। ফলে আসমান-জমিনের রব (তার প্রতি) সন্তুষ্ট হয়ে যায়। 


ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ: বলেন, কুরআন এ কথার প্রমাণ করে যে শক্তি সামর্থ্য ও ইজ্জত-সম্মান আল্লাহর নিকট তাওবাকারী ইবাদতগুজার বান্দাদের জন্যই। কুরআনের বহু জায়গায় এর সমর্থনে আয়াত রয়েছে। যেমন সূরা হুদে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 

 


وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِينَ 

আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না। [ সূরা হুদ ১১:৫২ ] 

 

এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তিনি তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। এটা কখন করবেন? যখন ইস্তিগফারের আমল করা হবে। যেমনটি আল্লাহ তা’আলা উক্ত আয়াতে এভাবে বলেছেন: 

اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ 

অর্থ: তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। 

উক্ত আয়াতের আরেকটি অংশ হচ্ছে: 

 


وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ 

অর্থ: তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন…। 

 

এখানে ‘قُوَّةً’ (শক্তি) শব্দটি নাকেরাহ তথা অনির্দিষ্ট। এটাকে অনির্দিষ্ট আনা হয়েছে অনেক প্রকারের শক্তি বুঝানোর জন্য। ‘قُوَّةً’ বা শক্তি কি জিনিস? 


এর উত্তরে বলা হয় যে, হতে পারে এখানে শক্তি দ্বারা বাহ্যিক শক্তি উদ্দেশ্য। বাকি এটা অভ্যন্তরীণ শক্তিও হতে পারে। আবার কখনো উভয়টি একত্রেও উদ্দেশ্য হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি করবেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল বীরত্ব, ধৈর্য, দৃঢ়তা, অগ্রগামিতা এবং স্থিরতা দান করবেন। আর বাহ্যিক শক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হল শারীরিক শক্তি, অস্ত্র ও সংখ্যা ইত্যাদির শক্তি। 


উস্তাদ বলেন: বান্দার কাছে রবের সাহায্য কামনার অর্থ হল - যেন বান্দার প্রতি আল্লাহ তা’আলার এমন সাহায্য অবতীর্ণ হয়, যা দ্বারা সে তার আমলকে আল্লাহর জন্য খালেস করে নিতে পারে। নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে। নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে পারে। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং আল্লাহর সামনে নিজকে আদনা(নগণ্য) হিসেবে পেশ করতে পারে যাতে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। 


বান্দা থেকে কাঙ্ক্ষিত সাহায্য হল - বান্দা ঐ ব্যক্তির কথা শুনবে এবং মানবে যাকে আল্লাহ তায়ালা নেতৃত্বের অধিকারী বানিয়েছেন। কেননা (বান্দার আল্লাহকে) সাহায্য করার অর্থই হল, আল্লাহ তায়ালার আদিষ্ট বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলা এবং যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন তার বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। 


সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যে সম্পর্কে আদেশ করেছেন তথা “শ্রবণ ও অনুসরণ করা” - এটাই অনুসরণ করাই হল আল্লাহ তায়ালাকে সাহায্য করা। 


উস্তাদ বলেন: এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল - কাঙ্ক্ষিত সাহায্যের মানেই হচ্ছে বান্দার শক্তি ও সামর্থ্য ছেড়ে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার শক্তি ও সামর্থ্যের দিকে যাওয়া এবং তাঁর উপরই ভরসা করা। 


অর্থাৎ কখনো কখনো দেখা যায় যে, মানুষ নিজের শক্তির উপর ভরসা করে, নিজের অস্ত্রের উপর ভরসা করে আর বলে যে, আমার নিকট দামি অস্ত্র আছে, আমার নিকট অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী অস্ত্র আছে, আর সে তার বাহ্যিক এই শক্তির উপরই ভরসা করে থাকে। - এটা ভুল। এমনটা করা যাবে না। আমরা অনেক সময় শুনতে পাই ভাইদের কেউ কেউ হয়ত বলে থাকেন, “আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের কাছে অস্ত্রের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে”। অথবা বলে “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এত এত পরিমাণ গনিমত হিসেবে পেয়েছি”। অথবা এভাবে বলে যে, “আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন(সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালকের জন্য) আমাদের নিকট আধুনিক সকল যোগাযোগ মাধ্যম এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে”। এটা হচ্ছে অস্ত্রের উপর ভরসা। এটা আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা নয়। 


আবার কখনো এভাবে বলে যে, “আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ চাহে তো আমাদের অমুক নেতা একটি পরিকল্পনা করবেন..!” অর্থাৎ এখানে ভরসা হচ্ছে নেতার উপর, তার পৃষ্ঠপোষকতা এবং তার তীক্ষ্ণ মেধার উপর। আর এটাই হচ্ছে ভুল। 


আবার কখনো এভাবে বলে যে,“আমরা সুদৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি…” - এটাও পরিকল্পনার উপর ভরসা, আল্লাহর উপর ভরসা নয়। 


তবে হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিব এবং পরিকল্পনাও গ্রহণ করব। এভাবে উত্তম নেতা নির্বাচন, উৎকৃষ্ট যোগাযোগ মাধ্যমও গ্রহণ করব। সাধ্যানুযায়ী অত্যাধুনিক দামি এবং পরীক্ষিত নির্ভরযোগ্য অস্ত্রের পরিমাণও জমা করব। অর্থাৎ আমরা পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিব কিন্তু নির্ভর করব একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উপর, ভরসা করব একমাত্র তাঁরই উপর। আমাদের কাছে যা থাকবে তার উপর ভরসা করব না। কেননা আমরা তো আল্লাহর উপরই ভরসা করি। 


আমাদের শত্রুরা আমাদের চাইতে অনেক বেশি অস্ত্র ও সংখ্যার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন। তারা এমন উন্নত অস্ত্র, দক্ষ পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেন অপদস্থ হয়? 


এর কারণ হচ্ছে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করি আর তারা করে না। সুতরাং আমরাও যদি আল্লাহর উপর ভরসা ছেড়ে দিয়ে শত্রুদের মত আমাদের কাছে যা আছে তার উপর ভরসা করি তাহলে নিশ্চিত পরাজয় বরণ করতে হবে। অতএব আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর এটাই হল বান্দার নুসরাত। 


উস্তাদ বলেন: “বান্দার কাছে রবের সাহায্য কামনার অর্থ হল” বান্দা যাতে যথাযথ প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গ্রহণ করে নুসরাতে ইলাহী এর নিয়ামত অর্জন করতে পারে সেই চেষ্টা করা। একটা ভুল ধারণা হল, যে আল্লাহর উপর ভরসা করবে সে আসবাব গ্রহণ করবেনা। এটা ভুল চিন্তা এবং পরাজয়ের কারণ। 


এ বিষয়ে তিনি শাইখ আবু কাতাদাহ আল-ফিলিস্তিনী রহ. এর একটি কথা উল্লেখ করেছেন। শাইখ তার আলোচনায় আল্লাহ তা’য়ালার এই বাণী উল্লেখ করেন – 

 


إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا 

তাদের কিছু কৃতকর্মের কারণে শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছিল.........। 

 


আয়াতটি উল্লেখ করে বলেন, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা। (এটি দ্বারা তিনি পূর্বের এ কথাকে বুঝিয়েছেন: একটা ভুল ধারণা হল, যে আল্লাহর উপর ভরসা করবে সে আসবাব গ্রহণ করবেনা। এটা ভুল চিন্তা এবং পরাজয়ের কারণ।) শাইখ রহ. বলেন, আমি প্রত্যেক মুজাহিদকে একথার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য বলি। আর এখানে আরো একটি বিষয় রয়েছে যা আমরা আলোচনা করব, তা হল ‘নিশ্চয়ই গুনাহ পরাজয়ের কারণ’। কিন্তু প্রশ্ন হল – “সকল গুনাহ-ই কি পরাজয়ের কারণ? উত্তর হল – “না। সকল গুনাহ পরাজয়ের কারণ নয়। বরং যে গুনাহের সম্পৃক্ততা জিহাদ ও ক্বিতালের সাথে রয়েছে শুধু সে গুনাহ-ই পরাজয়ের কারণ। 


যেমন বর্তমানে এধরণের যে সকল গুনাহ হয় তা হল:- প্রশিক্ষণ না নেয়া, এ গুনাহটাও পরাজয়ের একটি কারণ। এমনিভাবে জামাআহ তথা দলবদ্ধতা ত্যাগ করা বা দল ভেঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া, আমিরের নাফরমানী করা, শক্তি অর্জনের সুন্নাহর পথকে গ্রহণ না করা - এ বিষয়ে উপকারী ব্যক্তি নির্ধারণ না করা ইত্যাদি গুনাহও পরাজয়ের অন্যতম কারণ। অন্যান্য গুনাহের তুলনায় এগুলোকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই, কেননা অন্যান্য গুনাহের প্রভাব যুদ্ধের ময়দানে ফলাফলের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিকভাবে দেখা যায় না। কিন্তু এগুলোর প্রভাব তাৎক্ষনিকভাবে দেখা যায়। 


তবে আমরা অবশ্যই অন্যান্য গুনাহ ও অপরাধ থেকেও তাওবা করার কথা বলি। যেমন ধরুন - আমার মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ রয়েছে! হ্যাঁ, এরও প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এটা কি (যুদ্ধক্ষেত্রে) জামাআহ বা দল ত্যাগ করা থেকে বড় অপরাধ? 


এর থেকেও বড় অপরাধ যেটা সেটা হল প্রশিক্ষণ না নেয়া, অস্ত্র সংগ্রহ না করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাহায্য কামনা করে, সে কেন যুদ্ধের পূর্বেই অস্ত্র সংগ্রহ করবে না? সে কি অক্ষম? সে কি অপরাধী এবং গুনাহগার নয়? এ সবগুলোই কি গুনাহ নয়? 


উস্তাদ বলেন: অন্যান্য গুনাহের খারাবীও কম নয়, কিন্তু তার প্রভাব ময়দানে ফলাফলের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক নয়। আর ঐ সকল গুনাহ যা জিহাদ ও ক্বিতালের আ’মালের সাথে সম্পৃক্ত সেগুলোর প্রভাব তাৎক্ষনিক। একারণেই এটা أبعد النجعة “আবআদুন নুজ’আ” এর মত। 


أبعد النجعة “আবআদুন নুজ’আ” কি জিনিস? তা হল দানা পানির তালাশে দূরবর্তী কোন স্থানে গমন করা। এটা এমন স্থান, যেখানে যাওয়া হয় বিনোদন কিংবা পশু চড়ানোর জন্য, তা অনেক দূরবর্তী একটি স্থান, যার আশে পাশে অনেক জায়গা রয়েছে। এমন স্থানকেই আমরা ‘আবআদুন নুজয়া’ বলে থাকি। (ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই পরিভাষাটি তখনই ব্যবহার হয় যখন সে তার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সঠিক পথ ছেড়ে ভুল পথে অগ্রসর হয়। যেমন বলা হয় “ফুলানুন আবআদুন নুজ’আ”)। ঠিক তদ্রুপ জিহাদ ও ক্বিতালের আ’মালের সাথে সম্পৃক্ত গুনাহগুলোকে পরাজয়ের সবব বা কারণ না ধরে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের গুনাহ ও ইয়াতীমের মাল ভক্ষণের মত গুনাহগুলোকে পরাজয়ের কারণ ধরলে তখনই বলা হয় এটা أبعد النجعة “আবআদুন নুজ’আ” এর মত। 


সুতরাং আমাদের জন্য উচিৎ হল, সবব আর মুসাব্বাবের মাঝে কী সম্পর্ক এব্যাপারে সতর্ক থাকা। আ’মল ও নতীযা বা ফলাফলের সাথে কি সম্পর্ক? এবং কোন গুনাহগুলো পরাজয়ের কারণ আর কোন গুনাহগুলো পরাজয়ের কারণ না? সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। শাইখের কথা এখানেই শেষ। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে শাইখের মর্যাদা বুলন্দির প্রার্থনা করছি। 


جزاكم الله خيرًا، والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته 

 

*********************

--শাইখ হারিস বিন গাজি আন নাজারি (রহিমাহুল্লাহ)

ডকুমেন্ট সোর্সঃ একিউ


Friday, December 18, 2020

রাজাকার এবং দেশদ্রোহীতাঃ এ্যান অব্লিক্ক এ্যাঙ্গেল

ভারতের সেবাদাসে পরিনতকারী রাজনৈতিক তাগুত শাসক আওয়ামীতাগুতলীগকে প্রায়ই রাজাকার এবং দেশদ্রোহীতার ট্যাগ দিয়ে কিছু মানুষের উপর ঘেউ ঘেউ করে চড়াও হতে দেখা যায়। মালাইনদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই রাজাকার লেবেল ধরিয়ে দেয়ার অদ্ভুত প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আসলে আজকের রাজাকার কারা?


১৯৭১ এর আগের দেশপ্রেমিকরাই আজকের রাজাকার। যারা ভারতের পাতা ফাঁদে পাকিস্তান আলাদা হোক সেটা চায় নি,তারাই আজকের স্বীকৃত রাজাকার। একইভাবে তৎকালীন সময়ে মুজিবকে দেশদ্রোহীতার জন্য আগড়তলার মামলা দেয়া হয়েছিল। তখন তাকে কন্সিডার করা হত টেররিস্ট,বিচ্ছিন্নতাবাদী অপশক্তি হিসেবে। এটাই হচ্ছে অব্লিক্ক পার্স্পেক্টিভ। যেকোন একটা দিক দিয়ে আপনি হিরো অথবা ভিলেন। যেহেতু মুজিব তার চেষ্টায় সফল, তাই এখন জাতির জনক খেতাব পেয়ে গেছেন। আজকে একদল আছে যারা খুলনাকে ভারতের অংশ করতে চায়। মাঝেমধ্যে আলাদা ম্যাপও ছাপে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একদল স্বাধীন স্টেট করতে চায়। এই লোকগুলো আমাদের দেশের প্যাট্রিয়টদের কাছে ভিলেন অথচ তাদের সেইম ইডিওলজির এ্যাডহিয়ারেন্টসদের কাছে মুক্তিসেনা,মুক্তিযোদ্ধা,ন্যশনাল হিরো। 


এখন আমাদের অবস্থান এমন হতে হবে যা আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের জন্য কল্যাণমূলক চিন্তাধারার সমর্থন। দ্বীনের সাথে সঙ্গতিপূর্ন আদর্শ বা অবস্থান। সুতরাং রাজাকার কিংবা জঙ্গী ট্যাগ সম্পূর্ন আপেক্ষিক একটা ব্যপার। 

কিসের জন্য হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ?

আমি জানি এ পোস্ট পাঠ করার শুরুতে অনেক নির্বোধ মুশরিকলীগ বলতে শুরু করবে আমি পাকিস্থানের দালালি করে লিখছি... ইত্যাদি ইত্যাদি। কুকুরের মুখে ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনে চুপচাপ থাকাটা আসলে এক প্রকার ভীরুতা। 


মূলত আমাদের দেশের কথিত স্বাধীনতা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে ভাষা আন্দোলনের দ্বারা। এর কলকাঠি শুরু থেকেই ভারত নাড়ছিল। ভারতের মূল উদ্দেশ্যঃ পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করে ফেলা। এ কথা শিবসেনাদের এক শপথেই ত্রিশূল উচিয়ে মালউনদেরকে বলতে দেখেছি। ভারতের মালউন[অভিশপ্ত] মুশরিকরা ইসলামিস্ট বলতে পাকিস্থানকেই রিপ্রেজেন্ট করে, এজন্য মুসলিমিদেরকে দুর্বল করতে হলে পাকিস্তানকে দুর্বল করতে হবে। এ লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনে নামে মালাউন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পরবর্তীতে হুজুগে 'অসাম্প্রদায়িক' মুসলিম ইন্টেলেকচুয়ালদের সমর্থনে সাধারন মানুষও এতে যোগ দেয়। ফলে শক্ত আন্দোলনে রূপ নেয় ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনই পরে স্বাধীনতা আন্দোলনে ফুয়েল জোগায়। আসলে ভাষা পরিবর্তন খুব বেশি কিছু না। আট দশ বছরের চেষ্টায় যেকোন দেশের জনগন নতুন একটি ভাষায় সফল ভাবে শিফট করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ মিশর, মরক্কো,সোমালিয়া,সিরিয়াতে নিকট অতীতেই আরবি ভাষার প্রচলন ছিল না অথচ এখন সেখানে সবাই আরবিতে কথা বলে, আরবের
অন্তর্ভুক্ত করা হয় এদেরকে। যেহেতু ভাষা পরিবর্তনের প্রশ্ন উঠেছিলোই,বঙ্গদেশীয় উলামারা এক হয়ে এই দাবি করতেই পারত যে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবি চাই। এতে দুই ভূখন্ডের উপর সমান সমান বিচার হত। এর বিরোধিতা পশ্চিম পাকি মুসলিমরা করত না কেননা এটা কুরআনেরই ভাষা। হয়ত ফলাফলে বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় যেত সব কিছুকে অপরিবর্তিত রেখে। কিন্তু ওই সময়ের আলিমদের কোন ভূমিকায় ছিলেন না। এরকারন এ অঞ্চলের আলেম উলামাগন বরাবরের মতই সুবিধাবাদি আপোষকারি। এরা সবসময় অসাম্প্রদায়িকতাকে প্রমোট করে এসেছে। ফলাফলস্বরূপ দ্বীন বিরোধী সংবিধান এবং স্বাধীনতার অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমন্ত্রকে মেনে নিয়েছে নিরবে অন্য লাখো অসাম্প্রদায়িক বংগালের সাথে সাথে। ইংরেজপূর্ব মুসলিমদের শাসনামলেও এই অসাম্প্রদায়িকতার খল চেতনা বজায় ছিল। তাছাড়া হিন্দুত্ববাদি চেতনা থেকে অফিশিয়ালি বাংগালি মুসলিমরা সরে আসলেও আনঅফিশিয়ালি ঠিকই হিন্দুয়ানি কস্টিউম বলবৎ ছিল সংস্কৃতিতে। এমনকি এটা আজও চলছে মালুত্ববাদী পহেলা বৈশাখ,বিয়ে অনুষ্ঠান, পরিধেয় পোশাকে....। মূলত এ কারনেই পাকিস্তান বাংগালি আওয়াম মুসলিমদের জনগনকে হাফ-হিন্দু হিসেবে কনসিডার করত। এ সুযোগটা ভাল করেই নিয়েছিল ভারত। তাদের অখন্ড মহাভারতের স্বপ্ন পূরণে পাকিস্তানকে দূর্বল করে বাংলাকে আলাদা করে নিজেদের সাথে মিলিয়ে দিতে সবসময় প্রত্যক্ষভাবে পাশে ছিল ভারত। বোকা বাংগালি সো কল্ড মুসলিমদের জীবনকে ইউজ করে ওরা নয় মাসের যুদ্ধ বাধাঁয়। ওরা ভঙ্গবল্টুকে নেতা হিসেবে বেছে নেয়। এমনকি ভারতীয় মিলিটারি,প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়েও যুদ্ধ করে মুসলিম ভূখন্ডকে আলাদা করে দেয়। এজন্যই পাকিস্তানের দ্বারা দেয়া বিজয়ের লিখিত স্বীকৃতির সময় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ছিলেন ভারতের মালাউনবাহিনীর অরোরা। অর্থাৎ সহজ করে বললে যুদ্ধটা ছিল ভারত ভার্সেস পাকিস্তান। মাঝখানে মূর্খ অসাম্প্রদায়িক নির্বোধ বাঙ্গালি মুসলিমরা জীবন দেয় মুশরিকদের পক্ষে। এজন্যই স্বাধীনতার পর জাতীয় সংগীত রাখা হয় রবীন্দ্রনাথ শূকরের ওই গান, যেটা রচনা করেছিল ১৯১১ এর বঙ্গভঙ্গ রদে ভারত-বাংলা পূনঃসংযোগের আনন্দে। অর্থাৎ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের আলাদাকরন = ভারতের সাথে পুনর্মিলন। একই আনন্দে এই সঙ্গীতকে রাখা হয় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। হয়ত অফিশিয়ালি বাংলাকে ভারতের সাথে রিকানেক্ট করার আনফিনিশড জব সম্পন্ন হত যদি কিছু জাতীয়তাবাদি সেনা কর্মকর্তা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট বঙ্গবল্টুকে নকডাউন না করতেন। আল্লাহু আ'লাম। তবে এটা নিশ্চিতভাবে জানা উচিত যে আজকে বঙ্গবল্টু নামের খলনায়কটাকে নিয়ে যেভাবে যিকির করা হচ্ছে, দেবতা বানিয়ে পূজো দেয়া হচ্ছে, বাস্তবতা ছিল একদমই ভিন্ন যে ইতিহাসকে মুছে ফেলা হয়েছে। সত্যিকারের ইতিহাস কিছুটা জানতে পারবেন, "আমার ফাসী চাই" এবং "আমাদের স্বাধীনতা - পর্দার এপার ওপার" নামের দুটি নিষিদ্ধ গ্রন্থে। দুটিই পিডিএফ পাওয়া যায়। আমি দুটো বইয়ের লিংক নিচে দিয়ে দেব। যারা বাস্তব ইতিহাস জানে তারা এই বিড়িখোড় তাগুতকে জাতির পিতা বলতে লজ্জাবোধ করবে। 


ভারত শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদি শক্তির জন্যই স্বার্থকে পূর্নভাবে হাসিল করতে পারেনি। ৭২ সালেই দেশকে ভারত নিজের স্বার্থে ব্যবহার শুরু করে। ৭২ সালে ভার‍তের অনূকুলে নদী গবেষণা কমিশন গঠন করে। ফারাক্কা বাধে কি করেছে সেটা আপনারা ভাল করেই জানেন। অসমাপ্ত লক্ষ্যকে পূর্নতা দিতে আজ বঙ্গবল্টুর কন্যা হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা হয়েছে,সারাদেশকে RAW এজেন্ট দ্বারা ভরে দেওয়া হয়েছে। এদেশের সামরিক বাহিনী গুলোও আজ র' এর নিয়ন্ত্রনে। ৯০% মুসলিম এর দেশে সরাসরি আলিম উলামা এবং খোদ ইসলামি চেতনাকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেয়া হয়। আওয়াম সাধারন আলিমদেরকে ঘাড় মটকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আজ আওয়ামীলীগরা ঢাকায় বিজয় দিবসে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজায়। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী ফেসবুকে ১৬ ডিসেম্বর পাক ভারত যুদ্ধে ভারতের বিজয়ের স্ট্যাটাস দেয়। আমার মনে পড়ে আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগে ভারতীয় এক ফিল্মে বলেছিল, ৭১ এর যুদ্ধটা পাক বাংলার মধ্যে নয় বরং যুদ্ধটা পাক-ভারতের মধ্যে হয়। এবারের ১৬ই ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করে দখলের আনন্দ উদযাপন করেছে। আরএসএস দল গুলো তো ২০২৫ এর মধ্যে দেশ দখলের হুমকি দিয়েছিল। এখনো আরো পাঁচ বছর হাতে আছে। তারা তাদের গতিতেই কাজ করে যাচ্ছে, আমরাই ওদের উঠানো ফলস ইডিওলজিতে গা ভাসাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে। 


১.https://archive.org/download/IslamiBoi/Amader_shadhinota_pordar_epar_opar.pdf

২.https://mazams.weebly.com/uploads/4/8/2/6/48260335/amar_fashi_chai_bangla.pdf


Friday, December 11, 2020

পরীক্ষাস্বরূপ হক্বপন্থীদের জন্য বিপদ আপদ আসবেই

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

الحمد لله رب العالمين، اللهم صلّ على محمد وآله وسلم وبارك، أما بعد


হামদ ও সালাতের পর,

আল্লাহ তায়ালার বানী:-


أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبْ

অর্থ: “তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ (এখনো) তোমাদের উপর তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের অনুরূপ অবস্থা আসে নি। তাদের স্পর্শ করেছিল অভাব-অনটন ও রোগ-যাতনা এবং তারা প্রকম্পিত হয়েছিল। এমনকি রসূল ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিলেন তারা বলতে শুরু করলেন, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? শুনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।[সূরা বাকারা ২:২১৪]



দুনিয়ার জীবনে মানুষ সর্বদা পরীক্ষায় থাকে। আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াকে পরীক্ষাগার হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। কখনো এমন সময় আসবেনা যাতে কোন ধরণের পরীক্ষা থাকবে না। আর বান্দা আল্লাহ তা’আলার সাথে মিলিত হওয়ার ও জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো এমন সময় আসবেনা, যাতে প্রশান্ত হয়ে যাবে ও পরীক্ষা এবং বিপদ আপদের পরিসমাপ্তিতে পৌঁছে যাবে। 


বান্দা যখন জান্নাতে পৌঁছে যাবে, তখন তার সকল প্রকার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। আর জান্নাত হবে ভোগ বিলাসের বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে ভোগ বিলাস করতে চায়, সে দুনিয়াকে প্রতিদান প্রাপ্তির স্থান বানায় অথচ তা প্রতিদান প্রাপ্তির স্থান নয় বরং তা হল পরীক্ষাগার। 


আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ও নবী কুলের সরদার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ওহি প্রেরণ করে প্রথমে গোপনে, কিছুদিন পর প্রকাশ্যে দাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই কাজে তিনি কুফফারদের পক্ষ হতে কষ্ট, বাধা ও বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। 


এরপরে হিজরত ও হিজরতের কষ্ট সহ্য করার, স্বাধীন রাষ্ট্র বানানো এবং জিহাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার এই কাজ এই পর্যন্ত চালু ছিল যে, তিনি তার সবচেয়ে প্রিয়তম বন্ধু আল্লাহ তা’আলার সাথে মিলিত হয়েছেন এমতাবস্থায় যে, তিনি মুনাফিক ও ইয়াহুদীদের সাথে জিহাদ ও পরীক্ষার অবস্থায় ছিলেন।


রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয়তম বন্ধুর সাথে মিলিত হওয়ার পরে মুরতাদদের সাথে সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়। আর মুরতাদদের সাথে যুদ্ধের পরে রোম ও পারস্যের যুদ্ধ হয়। 


এভাবেই বান্দার ফিতনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা চলতে থাকবে, কিয়ামত দিবসে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত। আল্লাহ তা’আলা মানুষদের জন্য এটাই নিয়ম বানিয়েছেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা এই দুনিয়াকে পরীক্ষার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তুমি কোন দিন প্রফুল্লতার সাথে বলতে পারবেনা যে, আলহামদুলিল্লাহ এখন আমরা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি অথবা আলহামদুলিল্লাহ এখন আমরা এই যুদ্ধ থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি। 

বান্দা একমাত্র জান্নাতেই প্রফুল্ল হতে পারবে, আল্লাহ তা’আলা বলেন:

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ

“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল”। [সূরা ইমরান ৩:১৪২]


জান্নাতের রাস্তা হল জিহাদ ও সবরের রাস্তা, তুমি কি ধারণা করছ যে, জিহাদ ও সবর করার আগেই জান্নাতে চলে যাবে? 

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

অবশ্যই আমি তোমাদের কে ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফসলাদির ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব, আর সুসংবাদ হল সবরকারীদের জন্য। [সূরা বাকারা ২:১৫৫]


এই আয়াতে ঐ সকল সবরকারীদেরকে সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং হকের উপর অটল থাকে আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত।

প্রত্যেকের দ্বীনদারি অনুযায়ী তার পরীক্ষা হয়- যেমনটি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

(أشد الناس بلاء الأنبياء، ثم الأمثل فالأمثل، يُبتلى الرجل على حسب دينه فإن كان صلب الدين اشتد بلاؤه، وإن كان في دينه رقة ابتُلي على حسب دينه...الحديث)

“সব চাইতে বেশী বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন নবীগণ, এর পরে যারা নবীগণের যত নিকটবর্তী ছিল তারা ততবেশী বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। প্রত্যেকেই তার দ্বীনদারি অনুযায়ী পরীক্ষিত হয়, সুতরাং সে যদি দ্বীনদারিতায় মজবুত হয় তার পরীক্ষা কঠিন হবে, আর যদি দ্বীনদারিতায় দুর্বল হয় তাহলে তার দুর্বলতা অনুযায়ী পরীক্ষিত হবে।,... হাদিসের শেষ পর্যন্ত। (তিরমিজী)


সুতরাং মানুষ তার দ্বীনদারী অনুযায়ী পরীক্ষিত হয়, যে তার দ্বীনদারিতায় যত অটল থাকবে তার পরীক্ষা তত কঠিন হবে।

শয়তান কতককে এই কথা বলে ধোঁকা দেয় যে, তোমার দ্বীনদারিতা মজবুত হলে কঠিন বিপদ আসবে, তাই তুমি কঠিন বিপদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য তোমার দ্বীনদারিতাকে দুর্বল কর। খবিস শয়তানের ধোঁকা কতইনা মারাত্মক! আর শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষও বলে, আমার দ্বীনদারিতা মজবুত হলে আমার বিপদও কঠিন হবে, আর আমি কঠিন বিপদ সহ্য করতে পারবনা, তাই আমার নফস ও ইবাদতকে দুর্বল বানাব, কারণ আমি ছোট বা দুর্বল বিপদ চাই, এটা শয়তানের ধোঁকা ও বুঝার ভুল। 



(সঠিক কথা হল) পরীক্ষা হবে দ্বীনদারিতা অনুযায়ী, তাই মানুষের পরীক্ষার উপযোগী ধৈর্য ও দৃঢ় থাকাবস্থায়ই তাকে পরীক্ষা করা হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে তার সাধ্যের বাহিরে পরীক্ষা করবেন না, বরং তাকে তার ঈমানের উপযোগী পরীক্ষা করবেন। এই পরীক্ষা তার ঈমান, ইয়াকিন, তাওয়াককুল ও সবরের উপযুক্ত হবে। তার পরীক্ষা সে অনুযায়ীই আসবে, এর চেয়ে বেশীর পরীক্ষা হবেনা। সুতরাং মানুষকে এমন পরীক্ষা করা হবে না, যেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সক্ষমতা তার নেই, যার ফলে কিয়ামতের দিবসে সে আল্লাহকে বলতে পারবে, হে আল্লাহ আপনি আমাকে সাধ্যের বাহিরে পরীক্ষা করেছেন! 


আসলে বিষয়টা এমন নয় বরং ঈমান অনুযায়ী বিপদ আসবে। অতএব যাদের দ্বীনদারিতা মজবুত, যদিও অন্যদের ঈমানের দুর্বলতার কারণে তাদের কাছে পরীক্ষা কঠিন মনে হবে কিন্তু যাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তার সেই পরিমাণ ঈমান আছে যার দ্বারা সে দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারবে এবং পরীক্ষায় সফল হতে পারবে। এটা সে এই কারণে পারবে কারণ আল্লাহ্ তার ঈমান মজবুত করে দিয়েছেন। 


(উদাহরণ স্বরূপ কেউ কেউ বলে যে,) “অমুককে কঠিন পরীক্ষা করা হয়েছে, তার জায়গায় আমি হলে বিপদে ধৈর্যধারণ করতে পারতাম না”। হ্যাঁ তার সেই পরিমাণ ঈমান, ইয়াকিন ও আল্লাহ তা’আলার সাথে সততা ছিল যা তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ্ এর দ্বারাই সেই পরীক্ষায় তাকে উত্তীর্ণ করেছেন।


এখানে উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল-আ’দম বলেছেন, আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদের জন্য আবশ্যক হল ছোট বড় প্রত্যেক আমলে আল্লাহ তা’আলার নিকট মনে মনে সওয়াবের আশা করা। এখানে ছোট বড় প্রত্যেক আমলের জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট সওয়াবের আশা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। সে আল্লাহর রাস্তায় থাকাবস্থায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কাজে থাকা অবস্থায় প্রত্যেক আমলেই আল্লাহর নিকট সওয়াবের আশা করবে। 


উস্তাদ বলেন, এটা এইজন্য যেন তার কোন প্রতিদান ও সওয়াব ছুটে না যায়। জিহাদ হল নেক কাজের অনেক বড় একটি দরজা ও নেকী অর্জনের বড় একটি ক্ষেত্র। আল্লাহর রাস্তার পথিক এই পথে চলতে যে সকল কষ্ট, বিপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, সওয়াবের প্রত্যাশা সে গুলোকে লাঘব করে দেয়। তার এই অনুধাবনটা নিঃসন্দেহে সফলতা অর্জনের উপায়, মনোবল বৃদ্ধির কারণ ও অন্তরের জন্য আনন্দের ব্যাপার হবে ইনশা আল্লাহ্।


আমরা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি, আর তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।


والحمد لله رب العالمين، وجزاكم الله خيرًا


_শাইখ হারিস বিন গাজি আন নাজারি (রহিমাহুল্লাহ)