আল্লাহ আযযা ওয়াযাল কুরআনকে নাযিল করেছেন আমাদের জীবনাচরণ আকিদা কর্মের সীমারেখা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে। এতে ব্যক্তিগত সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে অবশ্য পালনীয় এমন কোন কিছুই নেই যা গুপ্তাবস্থায় আছে। এতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তাগুতকে বর্জন করতে, কুফর করতে। তাওহীদের আরকান সুস্পষ্ট। এরপরেও মুসলিমরা কেন কিসের কনফিউশনে ভোগে জানিনা। আল্লাহ কুফফারদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হবে তা কি জানিয়ে দেন নি!? আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে বাদ দিয়ে যারা নিজেদের খেয়াল খুশিমত বিধান রচনা করে, তাদের পরিচয় কি আল্লাহ স্পষ্ট করেন নি!? তিনি কি আমাদেরকে তাদের সাথে করনীয় আচরণকে বলে দেন নি!?
বালা ওয়াল্লাহ! দিয়েছেন! এ সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বানী এত স্পষ্ট যে তা বুঝতে তাফসীর কিংবা মুফাসসিরীনের শরণাপন্ন হতে হয়না। রহমানের আয়াতে কোন বক্রতা নেই। এতদসত্ত্বেও আপনি দেখবেন কুরআন পাঠকারীর অভাব নেই কিন্তু আল্লাহর এই শাশ্বত বানী অন্তঃকরণে ধারন করেছে এমন ব্যক্তির খুব অভাব। যারা তাওহিদুল আমালির সাথে সরাসরি যুক্ত এদের সংখ্যা আরো আরো কম! এরা সবাই আল্লাহর হুকুমকে নিজেদের সুবিধামত কাঁটছাট করে অনুসরণকারী! অবস্থাটা এমন যেন লোকেরা কুরআনকে সুর দিয়ে দিয়ে বাহ্যিক ভক্তি ও সম্মান দিয়ে পাঠ করছে, কিন্তু এর সরল অর্থ পড়েও বোঝেনা। এরা তাগুতের বিষয়গুলোকে জোরে জোরে তিলাওয়াত করছে, আল ওয়ালা আল বারা'র আয়াত গুলো পড়ছে, কিন্তু হৃদয় দিয়ে মানছেনা। শুধু মুখেই বলছে। অন্তঃকরণে তালাবন্ধ এসকল পাঠকারীদের জন্য কি কুরআন কোন কল্যাণ বয়ে আনবে?
মুহতারাম শাইখুল হাদিস আবু ইমরান[দাঃবা] আমাদেরকে বলছিলেন, এইসকল পাঠকারীদের জন্য কুরআন পাঠ করেও না মান্য করার জন্য দলিল হয়ে যাবে, তাদের আযাবের সাক্ষী হিসেবে থাকবে।
হে আখ্যি,গুটিকয়েক গারীব আলিম উমারার মুখে জানবার পরেও তাওহিদের পূর্নস্বীকৃতি না দিয়ে এরকম কুরআন পড়ে লাভ কি যা কেবল আযাবই বৃদ্ধি করে? কুফফারদের সাথে কম্প্রোমাইজকারী দা'ঈ কিংবা আলিম[!] রব্বে ক্বারীমের ওই আয়াত গুলোকে প্রচার করে লাভ কি যা কেবল তার আযাবকেই বৃদ্ধি করে!? তাওহীদের আরকানগুলোকে যারা মানেনা, যারা কালেমার অর্থকে যারা অপূর্ণাঙ্গ ভাবে মানে, এদের ঈমানের অবস্থা কি অনেকটা এরকম নয় যে; কোন ব্যক্তি ওযূ ছাড়াই সারাজীবন স্বলাত পড়লো?
তাই, হে আমার ভাই আগে পূর্নাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করে আমল করার মধ্যে কল্যাণ আছে। সুবিধামত কিছু অংশকে মানলাম আর কিছু অংশ অস্বীকার করলাম, এরকম কোন সুযোগ নেই আখ্যি!
আল্লাহ বলেন,‘...তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে! আর কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ৮৫)
Vai yajuj majoj somporke question chillo ? Apner ei somporke dharona ki Tafhimul Quran er reference gulo dekhun
ReplyDeleteY
Delete
ReplyDeleteوَ یَسْــٴَـلُوْنَكَ عَنْ ذِی الْقَرْنَیْنِؕ قُلْ سَاَتْلُوْا عَلَیْكُمْ مِّنْهُ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।৬১ এদেরকে বলে দাও, আমি তার সম্বন্ধে কিছু কথা তোমাদের শুনাচ্ছি।৬২
তাফসীর :
টিকা:৬১) وَ یَسۡئَلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ এ বাক্যটির শুরুতে যে “আর” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তার সম্পর্কে অবশ্যই পূর্ববর্তী কাহিনীগুলোর সাথে রয়েছে। এ থেকে স্বতঃফূর্তভাবে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মূসা ও খিযিরের কাহিনীও লোকদের প্রশ্নের জবাবে শোনানো হয়েছে। একথা আমাদের এ অনুমানকে সমর্থন করে যে, এ সূরার এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী আসলে মক্কার কাফেররা আহলি কিতাবদের পরামর্শক্রমে রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞেস করেছিল।
।
সুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-83
টিকা নং:61, 62,
وَ یَسْــٴَـلُوْنَكَ عَنْ ذِی الْقَرْنَیْنِؕ قُلْ سَاَتْلُوْا عَلَیْكُمْ مِّنْهُ ذِكْرًاؕ
আর হে মুহাম্মাদ! এরা তোমার কাছে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।৬১ এদেরকে বলে দাও, আমি তার সম্বন্ধে কিছু কথা তোমাদের শুনাচ্ছি।৬২
তাফসীর :
টিকা:৬১) وَ یَسۡئَلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ এ বাক্যটির শুরুতে যে “আর” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তার সম্পর্কে অবশ্যই পূর্ববর্তী কাহিনীগুলোর সাথে রয়েছে। এ থেকে স্বতঃফূর্তভাবে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মূসা ও খিযিরের কাহিনীও লোকদের প্রশ্নের জবাবে শোনানো হয়েছে। একথা আমাদের এ অনুমানকে সমর্থন করে যে, এ সূরার এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী আসলে মক্কার কাফেররা আহলি কিতাবদের পরামর্শক্রমে রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞেস করেছিল।
টিকা:৬২) এখানে যে যুলকারনাইনের কথা বলা হচ্ছে তিনি কে ছিলেন, এ বিষয়ে প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে আজও পর্যন্ত মতবিরোধ চলে আসছে। প্রাচীন যুগের মুফাস্সিরগণ সাধারণত যুলকারনাইন বলতে আলেকজাণ্ডারকেই বুঝিয়েছেন। কিন্তু কুরআনে তাঁর যে গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, আলেকজাণ্ডারের সাথে তার মিল খুবই কম। আধুনিক যুগে ঐতিহাসিক তথ্যাবলীর ভিত্তিতে মুফাসসিরগণের অধিকাংশ এ মত পোষণ করেন যে, তিনি ছিলেন ইরানের শাসনকর্তা খুরস তথা খসরু বা সাইরাস। এ মত তুলনামূলকভাবে বেশী যুক্তিগ্রাহ্য। তবুও এখনো পর্যন্ত সঠিক ও নিশ্চিতভাবে কোন ব্যক্তিকে যুলকারনাইন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারেনি। কুরআন মজীতে যেভাবে তার কথা আলোচনা করেছে তা থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে চারটি কথা জানতে পারিঃ
ReplyDeleteএক, তার যুলকারনাইন (শাব্দিক অর্থ “দু’ শিংওয়ালা”) উপাধিটি কমপক্ষে ইহুদীদের মধ্যে, যাদের ইঙ্গিত মক্কার কাফেররা তার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেছিল, নিশ্চয়ই পরিচিত হওয়ার কথা তাই একথা জানার জন্য আমাদের ইসরাঈলী সাহিত্যের শরণাপন্ন না হয়ে উপায় থাকে না যে, তারা “দু’শিংওয়ালা” হিসেবে কোন্ ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে জানতো?
জুলকারণাইন কিসসা সংক্রান্ত মানচিত্র
দুই, এ ব্যক্তির অবশ্যই কোন বড় শাসক ও এমন পর্যায়ের বিজেতা হওয়ার কথা যার বিজয় অভিযান পূর্ব থেকে পশ্চিমে পরিচালিত হয়েছিল এবং অন্যদিকে উত্তর-দক্ষিণ দিকেও বিস্তৃত হয়েছিল। কুরআন নাযিলের পূর্বে এ ধরনের কৃতিত্বের অধিকারী মাত্র কয়েকজন ব্যক্তির কথাই জানা যায়। তাই অনিবার্যভাবে তাদেরই কারোর মধ্যে আমাদের তার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য ও বৈশিষ্ট্যও খুঁজে দেখতে হবে।
তিন, তাকে অবশ্যই এমন একজন শাসনকর্তা হতে হবে যিনি নিজের রাজ্যকে ইয়াজুজ মা’জুজের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য কোন পার্বত্য গিরিপথে একটি মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করেন। এ বৈশিষ্ট্যটির অনুসন্ধান করার জন্য আমাদের একথাও জানতে হবে যে, ইয়াজুজ মা’জুজ বলতে কোন্ জাতিকে বুঝানো হয়েছে এবং তারপর এও দেখতে হবে যে, তাদের এলাকার সাথে সংশ্লিষ্ট এ ধরনের কোন্ প্রাচীর দুনিয়ায় নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেটি কে নির্মাণ করেছে? চার, তার মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোসহ এ বৈশিষ্ট্যটিও উপস্থিত থাকা চাই যে, তিনি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল ও ন্যায়পরায়ণ শাসনকর্তা হবেন। কারণ কুরআন এখানে তার এ বৈশিষ্ট্যটিকেই সবচেয়ে সুস্পষ্ট করেছে।
এর মধ্যে থেকে প্রথম বৈশিষ্ট্যটি সহজেই খুরসের (বা সাইরাস) বেলায় প্রযোজ্য। কারণ বাইবেলের দানিয়েল পুস্তকে দানিয়েল নবীর যে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তাতে তিনি ইরানীদের উত্থানের পূর্বে মিডিয়া ও পাস্যের যুক্ত সাম্রাজ্যকে একটি দু’শিংওয়ালা মেষের আকারে দেখেন। ইহুদীদের মধ্যে এ “দু’শিংধারী”র বেশ চর্চা ছিল। কারণ তার সাথে সংঘাতের ফলেই শেষ পর্যন্ত বেবিলনের সাম্রাজ্য খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায় এবং বনী ইসরাঈল দাসত্ব শৃংখল থেকে মুক্তি লাভ করে। (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা বনী ইসরাঈল ৮ টীকা)
ReplyDeleteদ্বিতীয় চিহ্নটিরও বেশীর ভাগ তার সাথে খাপ খেয়ে যায় কিন্তু পুরোপুরি নয়। তার বিজয় অভিযান নিঃসন্দেহে পশ্চিমে এশিয়া মাইনর ও সিরিয়ার সমুদ্রসীমা এবং পূর্বে বখ্তর (বলখ) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কিন্তু উত্তরে বা দক্ষিণে তার কোন বড় আকারের অভিযানের সন্ধান এখনো পর্যন্ত ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়নি। অথচ কুরআন সুস্পষ্টভাবে তার তৃতীয় একটি অভিযানের কথা বর্ণনা করছে। তবুও এ ধরনের একটি অভিযান পরিচালিত হওয়া অসম্ভব নয়। কারণ ইতিহাস থেকে দেখা যায়, খুরসের রাজ্য উত্তরে ককেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
তৃতীয় চিহ্নটির ব্যাপারে বলা যায়, একথা প্রায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, ইয়াজুজ মা’জুজ বলতে রাশিয়া ও উত্তর চীনের এমনসব উপজাতিদের বুঝানো হয়েছে যারা তাতারী, মঙ্গল, হূন ও সেথিন নামে পরিচিত এবং প্রাচীন যুগ থেকে সভ্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল। তাছাড়া একথাও জানা গেছে যে, তাদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ককেশাসের দক্ষিণাঞ্চলে দরবন্দ ও দারিয়ালের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু খুরসই যে, এ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন তা এখনো প্রমাণিত হয়নি।
শেষ চিহ্নটি প্রাচীন যুগের একমাত্র খুরসের সাথেই সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কারণ তার শত্রুরাও তার ন্যায়বিচারের প্রশংসা করেছে। বাইবেলের ইষ্রা পুস্তক একথার সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি নিশ্চয়ই একজন আল্লাহভীরু ও আল্লাহর অনুগত বাদশাহ ছিলেন। তিনি বনী ইসরাঈলকে তাদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রিয়তার কারণেই বেবিলনের দাসত্বমুক্ত করছিলেন এবং এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদাতের জন্য বাইতুল মাকদিসে পুনর্বার হাইকেলে সুলাইমানী নির্মাণ করার হুকুম দিয়েছিলেন।
এ কারণে আমি একথা অবশ্যি স্বীকার করি যে, কুরআন নাযিলের পূর্বে যতজন বিশ্ববিজেতা অতিক্রান্ত হয়েছেন তাদে মধ্য থেকে একমাত্র খুরসের মধ্যেই যুলকারনাইনের আলামতগুলো বেশী পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু একেবারে নিশ্চয়তা সহকারে তাকেই যুলকারনাইন বলে নির্দিষ্ট করার জন্য এখনো আরো অনেক সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে। তবুও কুরআনে উপস্থাপিত আলামতগুলো যত বেশী পরিমাণে খুরসের মধ্যে বিদ্যমান, ততটা আর কোন বিজেতার মধ্যে নয়।
শেষ চিহ্নটি প্রাচীন যুগের একমাত্র খুরসের সাথেই সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কারণ তার শত্রুরাও তার ন্যায়বিচারের প্রশংসা করেছে। বাইবেলের ইষ্রা পুস্তক একথার সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি নিশ্চয়ই একজন আল্লাহভীরু ও আল্লাহর অনুগত বাদশাহ ছিলেন। তিনি বনী ইসরাঈলকে তাদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রিয়তার কারণেই বেবিলনের দাসত্বমুক্ত করছিলেন এবং এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদাতের জন্য বাইতুল মাকদিসে পুনর্বার হাইকেলে সুলাইমানী নির্মাণ করার হুকুম দিয়েছিলেন।
ReplyDeleteএ কারণে আমি একথা অবশ্যি স্বীকার করি যে, কুরআন নাযিলের পূর্বে যতজন বিশ্ববিজেতা অতিক্রান্ত হয়েছেন তাদে মধ্য থেকে একমাত্র খুরসের মধ্যেই যুলকারনাইনের আলামতগুলো বেশী পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু একেবারে নিশ্চয়তা সহকারে তাকেই যুলকারনাইন বলে নির্দিষ্ট করার জন্য এখনো আরো অনেক সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে। তবুও কুরআনে উপস্থাপিত আলামতগুলো যত বেশী পরিমাণে খুরসের মধ্যে বিদ্যমান, ততটা আর কোন বিজেতার মধ্যে নয়।
ঐতিহাসিক বর্ণনার জন্য এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, খুরস ছিলেন একজন ইরানী শাসনকর্তা। খৃস্টপূর্ব ৫৪৯ অব্দের কাছাকাছি যুগ থেকে তাঁর উত্থান শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি মিডিয়া (আল জিবাল) এবং লিডিয়া (এশিয়া মাইনর) রাজ্য জয় করার পর ৫৩৯ খৃস্টপূর্বাদ্বে বেবিলন জয় করেন। এরপর তার পথে আর কোন রাজশক্তির বাধা ছিল না। তার বিজয় অভিযান সিন্ধু ও সুগদ (বর্তমান তুর্কিস্তান) থেকে শুরু করে একদিকে মিসর ও লিবিয়া এবং অন্যদিকে থ্রেস ও ম্যাকডোনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আবার উত্তর দিকে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করে ককেশিয়া ও খাওয়ারিযাম পর্যন্ত। বলতে গেলে সেকালের সমগ্র সভ্য জগত তাঁর শাসনাধীন ছিল।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৮৪,
ReplyDeleteاِنَّا مَكَّنَّا لَهٗ فِی الْاَرْضِ وَ اٰتَیْنٰهُ مِنْ كُلِّ شَیْءٍ سَبَبًاۙ
আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়ে রেখেছিলাম এবং তাকে সব রকমের সাজ-সরঞ্জাম ও উপকরণ দিয়েছিলাম।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৮৫,
ReplyDeleteفَاَتْبَعَ سَبَبًا
সে (প্রথমে পশ্চিমে এক অভিযানের) সাজ-সরঞ্জাম করলো।
সুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-86
টিকা নং:63, 64, 65,
حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِیْ عَیْنٍ حَمِئَةٍ وَّ وَجَدَ عِنْدَهَا قَوْمًا۬ؕ قُلْنَا یٰذَا الْقَرْنَیْنِ اِمَّاۤ اَنْ تُعَذِّبَ وَ اِمَّاۤ اَنْ تَتَّخِذَ فِیْهِمْ حُسْنًا
এমন কি যখন সে সূর্যাস্তের সীমানায় পৌঁছে গেলো৬৩ তখন সূর্যকে ডুবতে দেখলো একটি কালো জলাশয়ে৬৪ এবং সেখানে সে একটি জাতির দেখা পেলো। আমি বললাম, “হে যুলকারনাইন! তোমার এ শক্তি আছে, তুমি এদেরকে কষ্ট দিতে পারো অথবা এদের সাথে সদাচার করতে পারো।”৬৫
তাফসীর :
টিকা:৬৩) ইবনে কাসীরের মতে সূর্যাস্তের সীমানা বলতে বুঝাচ্ছে (আরবী---------------) অর্থাৎ তিনি পশ্চিম দিকে দেশের পর দেশ জয় করতে করতে স্থলভাগের শেষ সীমানায় পৌঁছে যান, এরপর ছিল সমুদ্র। এটিই হচ্ছে সূর্যাস্তের সীমানার অর্থ। সূর্য যেখানে অস্ত যায় সেই জায়গার কথা এখানে বলা হয়নি।
টিকা:৬৪) অর্থাৎ সেখানে সূর্যাস্তের সময় মনে হতো যেন সূর্য সমুদ্রের কালো বর্ণের পংকিল পানির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। যুলকারনাইন বলতে যদি সত্যিই খুরসকেই বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে এটি হবে এশিয়া মাইনরের পশ্চিম সমুদ্রতট, যেখানে ঈজিয়ান সাগর বিভিন্ন ছোট ছোট উপসাগরের রূপ নিয়েছে। কুরআন এখানে ‘বাহর’ (সমুদ্র) শব্দের পরিবর্তে “আয়েন” শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা সমুদ্রের পরিবর্তে হ্রদ বা উপসাগর অর্থে অধিক নির্ভুলতার সাথে বলা যেতে পারে একথাটি আমাদের উপরোক্ত অনুমানকে সঠিক প্রমাণ করে।
টিকা:৬৫) আল্লাহ যে একথাটি সরাসরি অহী বা ইলহামের মাধ্যমে যুলকারনাইনকে সম্বোধন করে বলে থাকবেন এমন হওয়া জরুরী নয়। তেমনটি হলে তাঁর নবী বা এমন ব্যক্তি হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে, যার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। এটি এভাবে হয়ে থাকতে পারে যে, আল্লাহ সমগ্র পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে তার নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দিয়েছেন।। এটিই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। যুলকারনাইন সে সময় বিজয় লাভ করে এ এলাকাটি দখল করে নিয়েছিলেন। বিজিত জাতি তার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। এহেন অবস্থায় আল্লাহ তার বিবেকের সামনে এ প্রশ্ন রেখে দেন যে, এটা তোমার পরীক্ষার সময়, এ জাতিটি তোমার সামনে ক্ষমতাহীন ও অসহায়। তুমি জুলুম করতে চাইলে তার প্রতি জুলুম করতে পারো এবং সদাচার করতে চাইলে তাও তোমার আয়ত্বাধীন রয়েছে।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৮৭,
ReplyDeleteقَالَ اَمَّا مَنْ ظَلَمَ فَسَوْفَ نُعَذِّبُهٗ ثُمَّ یُرَدُّ اِلٰى رَبِّهٖ فَیُعَذِّبُهٗ عَذَابًا نُّكْرًا
সে বললো, “তাদের মধ্য থেকে যে জুলুম করবে আমরা তাকে শাস্তি দেবো তারপর তাকে তার রবের দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে এবং তিনি তাকে অধিক কঠিন শাস্তি দেবেন।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৮৮,
ReplyDeleteوَ اَمَّا مَنْ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَلَهٗ جَزَآءَ ا لْحُسْنٰىۚ وَ سَنَقُوْلُ لَهٗ مِنْ اَمْرِنَا یُسْرًاؕ
আর তাদের মধ্য থেকে যে ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তার জন্য আছে ভাল প্রতিদান এবং আমরা তাকে সহজ বিধান দেবো।”
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৮৯,
ReplyDeleteثُمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا
তারপর সে (আর একটি অভিযানের) প্রস্তুতি নিল।
সুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-90
টিকা নং:66,
حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلٰى قَوْمٍ لَّمْ نَجْعَلْ لَّهُمْ مِّنْ دُوْنِهَا سِتْرًاۙ
এমন কি সে সূর্যোদয়ের সীমানায় গিয়ে পৌঁছলো। সেখানে সে দেখলো, সূর্য এমন এক জাতির ওপর উদিত হচ্ছে যার জন্য রোদ থেকে বাঁচার কোন ব্যবস্থা আমি করিনি।৬৬
তাফসীর :
টিকা:৬৬) অর্থাৎ তিনি দেশ জয় করতে করতে পূর্ব দিকে এমন এলাকায় পৌঁছে গেলেন যেখানে সভ্য জগতের সীমানা শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং সামনের দিকে এমন একটি অসভ্য জাতির এলাকা ছিল, যারা ইমরাত নির্মাণ তো দূরের কথা তাঁবু তৈরী করতেও পারতো না।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৯১,
ReplyDeleteكَذٰلِكَؕ وَ قَدْ اَحَطْنَا بِمَا لَدَیْهِ خُبْرًا
এ ছিল তাদের অবস্থা এবং যুলকারনাইনের কাছে যা ছিল তা আমি জানতাম।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৯২,
ReplyDeleteثُمَّ اَتْبَعَ سَبَبًا
আবার সে (আর একটি অভিযানের) আয়োজন করলো।
সুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-93
টিকা নং:67, 68,
حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ بَیْنَ السَّدَّیْنِ وَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمَا قَوْمًاۙ لَّا یَكَادُوْنَ یَفْقَهُوْنَ قَوْلًا
এমনকি যখন দু’পাহাড়ের মধ্যখানে পৌঁছলো৬৭ তখন সেখানে এক জাতির সাক্ষাত পেলো। যারা খুব কমই কোন কথা বুঝতে পারতো।৬৮
তাফসীর :
টিকা:৬৭) যেহেতু সামনের দিকে বলা হচ্ছে যে, এ দু’পাহাড়ের বিপরীত পাশে ইয়াজুজক মাজুজের এলাকা ছিল তাই ধরে নিতে হয় যে, এ পাহাড় বলতে কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের মধ্যবর্তী সুবিস্তীর্ণ ককেসীয় পবর্তমালাকে বুঝানো হয়েছে।
টিকা:৬৮) অর্থাৎ যুলকারনাইন ও তার সাথীদের জন্য তাদের ভাষা ছিল প্রায়ই অপরিচিত ও দুর্বোধ্য। ভীষণভাবে সভ্যতার আলো বিবর্জিত ও বন্য হওয়ার কারণে তাদের ভাষা কেউ জানতো না এবং তারাও কারোর ভাষা জানতো না।
সুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-94
টিকা নং:69,
قَالُوْا یٰذَا الْقَرْنَیْنِ اِنَّ یَاْجُوْجَ وَ مَاْجُوْجَ مُفْسِدُوْنَ فِی الْاَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلٰۤى اَنْ تَجْعَلَ بَیْنَنَا وَ بَیْنَهُمْ سَدًّا
তারা বললো, “হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ৬৯ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। আমরা কি তোমাকে এ কাজের জন্য কোন কর দেবো, তুমি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবে?”
তাফসীর :
টিকা:৬৯) ইয়াজুজ মা’জুজ বলতে বুঝায়, যেমন ওপরে ৬২ টীকায় ইশারা করা হয়েছে যে, এশিয়ার উত্তর পূর্ব এলাকার এমন সব জাতি যারা প্রাচীন যুগে সুসভ্য দেশগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক হামলা চালাতে অভ্যস্ত ছিল এবং মাঝে মধ্যে এশিয়া ও ইউরোপ উভয় দিকে সয়লাবের আকারে ধ্বংসের থাবা বিস্তার করতো। বাইবেলের আদি পুস্তক (১০ অধ্যায়) তাদেরকে হযরত নূহের (আ) পুত্র ইয়াফেসের বংশধর বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিকগণও এ একই কথা বলেছেন। হিযকিয়েল (যিহিষ্কেল) পুস্তিকায় (৩৮ অধ্যায় ও ৩৯ অধ্যায়) তাদের এলাকা বলা হয়েছে রোশ (রুশ) তূবল (বর্তমান তোবলস্ক) ও মিস্ক (বর্তমান মস্কো) কে। ইসরাঈলী ঐতিহাসিক ইউসীফুস তাদেরকে সিথীন জাতি মনে করেন এবং তার ধারণা তাদের এলাকা কৃষ্ণসাগরের উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। জিরোম এর বর্ণনা মতে মাজুজ জাতির বসতি ছিল ককেশিয়ার উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে।
সুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-95
টিকা নং:70,
قَالَ مَا مَكَّنِّیْ فِیْهِ رَبِّیْ خَیْرٌ فَاَعِیْنُوْنِیْ بِقُوَّةٍ اَجْعَلْ بَیْنَكُمْ وَ بَیْنَهُمْ رَدْمًاۙ
সে বললো, “আমার রব আমাকে যা কিছু দিয়ে রেখেছেন তাই যথেষ্ট। তোমরা শুধু শ্রম দিয়ে আমাকে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ করে দিচ্ছি।৭০
তাফসীর :
টিকা:৭০) অর্থাৎ শাসককর্তা হিসেবে আমার প্রজাদেরকে লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য। এ কাজের জন্য তোমাদের ওপর আলাদা করে কোন কর বসানো আমার জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ দেশের যে অর্থ ভাণ্ডার আমার হাতে তুলে দিয়েছেন এ কাজ সম্পাদনের জন্য তা যথেষ্ট। তবে শারিরীক শ্রম দিয়ে তোমাদের আমাকে সাহায্য করতে হবে।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৯৬,
ReplyDeleteاٰتُوْنِیْ زُبَرَ الْحَدِیْدِؕ حَتّٰۤى اِذَا سَاوٰى بَیْنَ الصَّدَفَیْنِ قَالَ انْفُخُوْاؕ حَتّٰۤى اِذَا جَعَلَهٗ نَارًاۙ قَالَ اٰتُوْنِیْۤ اُفْرِغْ عَلَیْهِ قِطْرًاؕ
আমাকে লোহার পাত এনে দাও।” তারপর যখন দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা সে পূর্ণ করে দিল তখন লোকদের বললো, এবার আগুন জ্বালাও। এমনকি যখন এ (অগ্নি প্রাচীর) পুরোপুরি আগুনের মতো লাল হয়ে গেলো তখন সে বললো, “আনো, এবার আমি গলিত তামা এর উপর ঢেলে দেবো।”
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ৯৭,
ReplyDeleteفَمَا اسْطَاعُوْۤا اَنْ یَّظْهَرُوْهُ وَ مَا اسْتَطَاعُوْا لَهٗ نَقْبًا
(এ প্রাচীর এমন ছিল যে) ইয়াজুজ ও মাজুজ এটা অতিক্রম করেও আসতে পারতো না এবং এর গায়ে সুড়ংগ কাটাও তাদের জন্য আরো কঠিন ছিল।
সুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-98
টিকা নং:71, 72,
قَالَ هٰذَا رَحْمَةٌ مِّنْ رَّبِّیْۚ فَاِذَا جَآءَ وَعْدُ رَبِّیْ جَعَلَهٗ دَكَّآءَۚ وَ كَانَ وَعْدُ رَبِّیْ حَقًّاؕ
যুলকারনাইন বললো, “এ আমার রবের অনুগ্রহ। কিন্তু যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতির নির্দিষ্ট সময় আসবে তখন তিনি একে ধূলিস্মাত করে দেবেন৭১ আর আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য।”৭২
তাফসীর :
টিকা:৭১) অর্থাৎ যদিও নিজের সামর্থ্য মোতাবেক আমি অত্যন্ত মজবুত ও সৃদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করেছি তবুও এটি কোন অক্ষয় জিনিস নয়। যতদিন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন এটি প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তারপর এর ধ্বংসের জন্য আল্লাহ যে সময় নির্ধারিত করে রেখেছেন তা যখন এসে যাবে তখন কোন জিনিসই একে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। “প্রতিশ্রুতির সময়” ---এর দু’ অর্থ হয়। এর অর্থ প্রাচীরটি ধ্বংস হবার সময়ও হয় আবার প্রত্যেকটি জিনিসের মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্য আল্লাহ যে সময়টি নির্ধারিত করে রেখেছেন সে সময়টিও হয় অর্থাৎ কিয়ামত।
যুলকারনাইন নির্মীত প্রাচীর সম্পর্কে কিছু লোকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। তারা সুপরিচিত চীনের প্রাচীরকে যুলকারনাইনের প্রাচীর মনে করে। অথচ এ প্রাচীরটি ককেশাসের দাগিস্তান অঞ্চলের দরবন্দ ও দারিয়ালের (Darial) মাঝখানে নির্মীত হয়। ককেশীয় অঞ্চল বলতে বুঝায় কৃষ্ণ সাগর ( Black sea ) ও কাস্পিয়ান সাগরের ( Caspian sea ) মধ্যবর্তী এলাকা। এ এলাকায় কৃষ্ণ সাগর থেকে দারিয়াল পর্যন্ত রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়। এর মাঝখানে যে সংকীর্ণ গিরিপথ রয়েছে কোন দুর্ধর্ষ হানাদার সেনাবাহিনীর পক্ষেও তা অতিক্রম করা সম্ভব নয়। তবে দরবন্দ ও দারিয়ালের মধ্যবর্তী এলাকায় পর্বত শ্রেণীও বেশী উঁচু নয় এবং সেখানকার পার্বত্য পথগুলোও যথেষ্ট চওড়া। প্রাচীন যুগে উত্তরের বর্বর জাতিরা এ দিক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে হত্যা ও লুটতরাজ চালাতো। ইরানী শাসকগণ এ পথেই নিজেদের রাজ্যের ওপর উত্তরের হামলার আশঙ্কা করতেন। এ হামলাগুলো রুখবার জন্য একটি অত্যন্ত মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। এ প্রাচীর ছিল ৫০ মাইল লম্বা, ২৯০ ফুট উঁচু এবং ১০ ফুট চওড়া। এখনো পর্যন্ত ঐতিহাসিক গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি যে, এ প্রাচীর শুরুতে কে এবং কবে নির্মাণ করেছিল। কিন্তু মুসলমান ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদগণ এটিকেই যুলকারনাইনের প্রাচীর বলে অভিহিত করেছেন। কুরআন মজীদে এ প্রাচীর নির্মাণের যে প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে তার চিহ্নসমূহ এখনো এখানে পাওয়া যায়।
ইবনে জারীর তাবারী ও ইবনে কাসীর তাদের ইতিহাস গ্রন্থে এ ঘটনাটি লিখেছেন। ইয়াকুতী তাঁর মু’জামূল বুলদান গ্রন্থে এরই বরাত দিয়ে লিখেছেন, হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আজারবাইজান বিজয়ের পর ২২ হিজরীতে সুরাকাহ্ ইবনে আমরকে বাবুল আবওয়াব (দরবন্দ) অভিযানে রওয়ানা করেন। সূরাকাহ আবদুর রহমান ইব্ন রবী’আহকে নিজের অগ্রবর্তী বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে সামনের দিকে পাঠিয়ে দেন। আবদুর রহমান যখন আর্মেনীয়া এলাকায় প্রবেশ করেন তখন সেখানকার শাসক শারবরায যুদ্ধ ছাড়াই আনুগত্য স্বীকার করেন। এরপর তিনি বাবুল আবওয়াবের দিকে অগ্রসর হবার সংকল্প করেন। এ সময় শারবরায তাঁকে বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে যুলকারনাইনের প্রাচীর পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য পাঠিয়েছিলাম। সে আপনাকে এর বিস্তারিত বিবরণ শুনাতে পারে। তদানুসারে তিনি আবদুর রহমানের সামনে সেই ব্যক্তিকে হাযির করেন। (তাবারী, ৩ খণ্ড, ২৩৫-৩৩৯ পৃঃ; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭ খণ্ড; ১২২-১২৫ পৃঃ এবং মু’জামুল বুলদান, বাবুল আবওয়াব প্রসঙ্গ)।
ReplyDeleteএ ঘটনার দুশো’ বছর পর আব্বাসী খলীফা ওয়াসিক বিল্লাহ (২২৭-২৩৩ হিঃ) যুলকারনাইনের প্রাচীর পরিদর্শন করার জন্য সাল্লামুত তারজুমানের নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি অভিযাত্রী দল পাঠান। ইয়াকুত তাঁর মু’জামুল বুলদান এবং ইবনে কাসীর তার আল বিদায়া ওয়ান নিহারা গ্রন্থে এর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। তাদের বর্ণনা মতে, এ অভিযাত্রী দলটি সামর্রাহ থেকে টিফলিস, সেখান থেকে আস্সারীর, ওখান থেকে আল্লান হয়ে দীলান শাহ এলাকায় পৌঁছে যায়। তারপর তারা খাযার (কাস্পিয়ান) দেশে প্রবেশ করেন। এরপর সেখান থেকে দরবন্দে পৌঁছে যুলকারনাইনের প্রাচীর পরিদর্শন করে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২ খণ্ড, ১১১ পৃঃ ; ৭ খণ্ড, ১২২-১২৫ পৃঃ, মু’জামুল বুলদান, বাবুল আবওয়াব) এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, হিজরী তৃতীয় শতকেও মুসলমানরা ককেশাসের এ প্রাচীরকেই যুলকারনাইনের প্রাচীর মনে করতো।
ইয়াকুত মু’জামুল বুলদানের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টিকেই সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। খাযার শিরোনামে তিনি লিখেছেনঃ আরবী--------------------------------- “এটি তুরস্কের এলাকা। যুলকারনাইন প্রাচীরের সন্নিকটে দরবন্দ নামে খ্যাত বাবুল আবওয়াবের পেছনে এটি অবস্থিত।” এ প্রসঙ্গে তিনি খলীফা মুকতাদির বিল্লাহর দূত আহমদ ইব্ন ফুদলানের একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করেছেন। তাতে খাযার রাজ্যের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, খাযার একটি রাজ্যের নাম এর রাজধানী ইতল। ইতল নদী এ শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ নদীটি রাশিয়া ও বুলগার থেকে এসে খাযার তথা কাম্পিয়ান সাগরে পড়েছে। বাবুল আবওয়াব শিরোনামে তিনি লিখছেন, তাকে আলবাব এবং দরবন্দও বলা হয়। এটি খাযার (কাস্পিয়ান) সাগর তীরে অবস্থিত। কুফরীর রাজ্য থেকে মুসলিম রাজ্যের দিকে আগমনকারীদের জন্য এ পথটি বড়ই দুর্গম ও বিপদ সংকুল। এক সময় এটি নওশেরেওঁয়ার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং ইরানের বাদশাহগণ এ সীমান্ত সংরক্ষণের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব দিতেন।
টিকা:৭২) যুলকারনাইনের কাহিনী এখানে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কাহিনীটি যদিও মক্কার কাফেরদের পরীক্ষামূলক প্রশ্নের জবাবে শুনানো হয় তবুও আসহাবে কাহফ এবং মূসা ও খিযিরের কাহিনীর মতো এ কাহিনীটিকেও কুরআন নিজের রীতি অনুযায়ী নিজের উদ্দেশ্য সাধনে পুরোপুরি ব্যবহার করেছে। এতে বলা হয়েছে, যে যুলকারনাইনের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তোমরা আহলি কিতাবদের মুখে শুনেছো সে নিছক একজন বিজেতা ছিল না বরং সে ছিল তাওহীদ ও আখেরাত বিশ্বাসী মু’মিন। সে তার রাজ্যে আদল, ইনসাফ ও দানশীলতার নীতি কার্যকর করেছিল। সে তোমাদের মতো সংকীর্ণচেতা ছিল না। সামান্য সরদারী লাভ করে তোমরা যেমন মনে করো, আমি অদ্বিতীয়, আমার মতো আর কেউ নেই, সে তেমন মনে করতো না।
ReplyDeleteসুরা: কাহফ
ReplyDeleteআয়াত নং :-99
টিকা নং:73,
وَ تَرَكْنَا بَعْضَهُمْ یَوْمَئِذٍ یَّمُوْجُ فِیْ بَعْضٍ وَّ نُفِخَ فِی الصُّوْرِ فَجَمَعْنٰهُمْ جَمْعًاۙ
আর সে দিন৭৩ আমি লোকদেরকে ছেড়ে দেবো, তারা (সাগর তরংগের মতো) পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং আমি সব মানুষকে একত্র করবো।
তাফসীর :
টিকা:৭৩) অর্থাৎ কিয়ামতের দিন। কিয়ামতের সত্য প্রতিশ্রুতির প্রতি যুলকারনাইন যে ইঙ্গিত করেছিলেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার কথাটি বাড়িয়ে এখানে এ বাক্যাংশটি বলা হচ্ছে।
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ১০০,
ReplyDeleteوَّ عَرَضْنَا جَهَنَّمَ یَوْمَئِذٍ لِّلْكٰفِرِیْنَ عَرْضَا ۙ
আর সেদিন আমি জাহান্নামকে সেই কাফেরদের সামনে আনবো,
১৮: আল-কাহাফ,:আয়াত: ১০১,
ReplyDeleteالَّذِیْنَ كَانَتْ اَعْیُنُهُمْ فِیْ غِطَآءٍ عَنْ ذِكْرِیْ وَ كَانُوْا لَا یَسْتَطِیْعُوْنَ سَمْعًا۠
যারা আমার উপদেশের ব্যাপারে অন্ধ হয়েছিল এবং কিছু শুনতে প্রস্তুতই ছিল না।
ভাই আপনি অধিক ব্যাখার জন্য পড়ুন শেখ ইমরান নযর হোসাইন এর ইয়াজুজ মাজুজ নামের বই । আর believer Bangla এর এই ছয়টি ভিডিও
ReplyDeletehttps://youtube.com/playlist?list=PLo-2VxJrnWwY7VP3WeG_8Nk1LexwsJDzt
See Cyrus the Great in Quran
ReplyDeletehttps://en.m.wikipedia.org/wiki/Cyrus_the_Great_in_the_Quran
ভাই আরেকটা অনুরোধ স্যাটেলাইট সম্পর্কে কিছু বলুন , আবহাওয়া অফিস , আবহাওয়া অধিদপ্তর , আবহাওয়া বিদ গনেরা কিভাবে আবহাওয়া সম্পর্কে জানে ওরা কিভাবে ভিডিও স্যাটেলাইট কি এটার সাথে জড়িত
ReplyDeleteসাইরাসকে জরাথুস্ত্র মতবাদের অনুসারী মনে করা হয়। যদিও তার পেছনে শক্ত প্রমাণ নেই। এমনকি সাইরাসের সময়কালে জরাথুস্ত্র মতবাদ তার সংগঠিত অবস্থায় পৌঁছেছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। কারণ সাসানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরেই মূলত জরাথুস্ত্র মতবাদ স্বর্ণসময় পায়। এভাবে কেউ কেউ তাকে বহু ঈশ্বরবাদী বলে দাবি করতে চায়, যিনি স্থানীয় পারসিক দেবতাদের উপাসনা করতেন। জেনোফোন মনে করেন, তিনি ছিলেন মিথ্রার সমর্থক। সেই সাথে ব্যাবিলনীয় দেবতা মারদুক তো আছেই।সব মিলিয়ে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি ঐতিহাসিকদের মধ্যে। তবে ধর্ম সম্পর্কে তিনি ছিলেন যথেষ্ট উদার। সাইরাস সিলিন্ডার অনুসারে,
ReplyDeleteযে সকল বিদেশিদের জোর করে ব্যাবিলনে আটক রাখা হয়েছিল, তাদেরকে নিজভূমে ফিরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ইহুদিরাও ছিল, যারা ব্যাবিলনীয় বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভের পর জেরুজালেম ফিরে গিয়ে মন্দির নির্মাণ করেন। তার দুটো ফরমান বাইবেলের বুক অব ইজরাদে সংরক্ষণ করা হয়। একটি হিব্রুতে, অপরটি আরামায়িকতে। (Bickerman, Page: 72-108)