পর্ব-১১
পানি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার এক মৌলিক সৃষ্টি। সৃষ্টি জগতের মূল হচ্ছে পানি। আল্লাহ বলেনঃ
"....এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।..."[২১:৩০]
আমাদের যমীনের তলদেশে, আসমানে সর্বত্রই পানির অতল সমুদ্র। এই পানির মধ্যে আল্লাহ বৈচিত্র রেখেছেন। সমস্ত পানিই একরকম নয়। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।
আল্লাহ বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاء بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا
তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম(২৫:৫৪)
ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِينٍ
অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।(৩২:৮)
শুধু মানুষই নয়, গোটা বিশ্বজগতের পূর্বে শুধু পানিই ছিল। অতঃপর আল্লাহ আসমান ও যমীনের মাঝে শূন্যস্থান তৈরি করেন, যমীনের নিচেও পানি, আসমানের উপরেও জলধি। আসমানের উপরিস্থিত পানি বিশেষ পবিত্র পানি যা বৃষ্টির পানির উৎস। এই পানির দ্বারা আল্লাহ যমীনে ফুল ফসল উদগত করেন।পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ মানুষকে সপ্তআসমানের উপরের সমুদ্র থেকে বিশেষ বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যার দ্বারা সমস্ত মৃতদেহ পুনর্গঠিত হবে। হাউজে কাওসারের পানিও আল্লাহর বৈচিত্র্যময় বিশেষ সৃষ্টি, যা কেউ পান করলে ২য় বার পিপাসার্ত হবে না। জাহান্নামীদের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্তদেরকে বিশেষ পানিতে নিক্ষেপ করা হবে যা তাদের ক্ষতবিক্ষত বিদগ্ধ দেহকে ঐরূপে পুনর্গঠিত করবে যেমনটা নদীর তীরের ঘাস গজিয়ে ওঠে।
حديث أبي سعيد الخدري رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: يدخل أهل الجنة الجنة، وأهل النار النار ثم يقول الله تعالى: أخرجوا من كان في قلبه مثقال حبة من خردل من إيمان، فيخرجون منها قد اسودوا، فيلقون في نهر الحيا أو الحياة (شك من أحد رجال السند) فينبتون كما تنبت الحبة في جانب السيل، ألم ترأنها تخرج صفراء ملتوية أخرجه البخاري في 2 كتاب الإيمان: 15 باب تفاضل أهل الإيمان في الأعمال
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতীগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা (ফেরেশতাদের) বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনো। তারপর তাদের জাহান্নাম হতে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতঃপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের [বর্ণনাকারী মালিক (রহ.) শব্দ দু’টির কোনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন] নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন নদীর তীরে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাও না সেগুলো কেমন হলুদ বর্ণের হয় ও ঘন হয়ে গজায়?
(বুখারী পর্ব ২ : /১৫ হাঃ ২২, মুসলিম ১/৮২ হাঃ ১৮৪)
আল লু'লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ১১৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
সুতরাং পানি আল্লাহর এক অনন্য মৌলিক সৃষ্টি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত স্বরূপ মেঘ-বৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকারকারী আধুনিক অপবিজ্ঞান মেঘ বৃষ্টির ব্যপারে এমন ব্যাখ্যা দেয় যাতে করে মনে হয় এই বৃষ্টি একদমই ন্যাচারাল ফেনোমেনা অথচ মেঘ-বৃষ্টি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার একান্ত ইচ্ছাধীন। এছাড়াও অপবিজ্ঞানীরা মেঘবৃষ্টির ব্যাখ্যা হিসেবে 'পানিচক্র'কে দ্বার করিয়েছে। এটা একটা self sustaining cycle যেখানে ডিভাইন ডমিনিয়নের কোন প্রয়োজন নেই। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা মেঘ-বৃষ্টির ব্যপারে একদমই ভিন্ন কিছু বলেছেন। এই বাস্তব জগতে বৃষ্টি আদৌ কোন ন্যাচারাল ফেনোমেনা নয়, এমন নয় যে একা একাই ঘটে। বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা নিজ অনুগ্রহে আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষন করেন। অর্থাৎ এর ভেতর অলৌকিকতা রয়েছে। রহমান আল্লাহ বলেনঃ
أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاء صَبًّا
আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি,
(৮০:২৫)
সত্যিই এতে আশ্চর্যের এবং অলৌকিকতার বিষয় আছে। কারন আল্লাহ সরাসরি আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষন করেন। এমনটা না যে মেঘই পানির উৎস বা মেঘই পানি আকারে নেমে আসে,যেমনটা অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্বে দেখা যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা পবিত্র কুরআনের অনেকগুলো আয়াতে বলেছেন তিনি আসমান থেকে বর্ষণ করেন। মেঘ হচ্ছে যমীনের উপর পানিবাহী উট। এরা জমাট তরঙ্গায়িত আসমানি সমুদ্র থেকে ঝরা পানিকে ধারন করে আল্লাহর নির্দেশিত অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ এক সাথে বসা ছিলেন। হঠাৎ তাদের উপর মেঘরাশি প্রকাশিত হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের প্রশ্ন করেন : তোমরা জান এটা কি? তারা বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এটা হল যমিনের পানিবাহী উট। আল্লাহ তা’আলা একে এমন জাতির দিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যারা তাঁর কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না এবং তাঁর কাছে মুনাজাতও করে না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন : তোমাদের উপরে কি আছে তা জান? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ এটা হল সুউচ্চ আকাশ , সুরক্ষিত ছাদ এবং আটকানো তরঙ্গ।
[জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩২৯৮]
বৃষ্টিধারনকারী আসমানের ব্যপারে আল্লাহ বলেনঃ
وَالسَّمَاء ذَاتِ الرَّجْعِ
শপথ আসমানের যা ধারন করে বৃষ্টি (৮৬:১১)
Hennessy Commercial[৫] |
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এই পানিপূর্ন আসমানি ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি নাযিল করেন। আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ السَّمَاء مِن مَّاء فَأَحْيَا بِهِ الأرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخِّرِ بَيْنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’ আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে(২:১৬৪)
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأَرْضَ فِرَاشاً وَالسَّمَاء بِنَاء وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقاً لَّكُمْ فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান(২:২২)
وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا
তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান(১৮:৪৫)
এখানে লক্ষণীয় একটি বিষয় হচ্ছে আল্লাহ বারি বর্ষণের ক্ষেত্রে أَنزَلَ, يُنَزِّلُ, نَّزَّلَ, أَنزَلْنَا, يُنَزِّلُ প্রভৃতি অর্থাৎ 'নাযিল' শব্দ ব্যবহার করেন। নাযিল শব্দটি একইভাবে কুরআন ও হাদীদের(লোহা) ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন। এর দ্বারা এমন কিছুকে বোঝায় যেটা অপার্থিব(extraterrestrial) বা পৃথিবীর বাইরে থেকে পাঠানো হয়। বৃষ্টির ক্ষেত্রে এ শব্দের ব্যবহারের দ্বারা স্পষ্ট হয়, এই পানি স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার বিশেষ রহমত,যা তিনি যমীনের উর্দ্ধলোক আসমান থেকে প্রেরণ করেন। সুতরাং এই বিশেষ পবিত্র পানির ভান্ডার আমাদের নাগালের মধ্যে দুনিয়াতে নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلاَّ بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ
আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার রয়েছে। আমি নির্দিষ্ট পরিমানেই তা অবতরণ করি।
وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই(১৫:২১-২২)
আধুনিক অপবিজ্ঞান আমাদেরকে শেখায় দুনিয়ার যাবতীয় পানির উৎস এই কাল্পনিক মহাশূন্যে ভেসে বেড়ানো গোলক পৃথিবীই। এখানে পানি নাযিল হবার মত কোন বিষয় ঘটে না, বরং এখানে বৃষ্টি হচ্ছে কথিত পানির চক্রেরই ফসল, এই বর্ষন প্রক্রিয়ায় কোন অলৌকিকতা বা সৃষ্টিকর্তার করুনার মত কোন বিষয় নেই। এরা আজ নিজেরাই জলীয়বাষ্প তৈরিকারী যন্ত্রের দ্বারা এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বৃষ্টি ঘটানোর কাজে সক্ষমতা প্রদর্শন করে। অর্থাৎ তারা তাদের থিওরি এবং প্রায়োগিক কার্যের মাধ্যমে বোঝাতে চায় যে এই বারি বর্ষণ সম্পূর্ন স্রষ্টার কর্তৃত্বহীন প্রাকৃতিক ঘটনা। বস্তুত, কাফিরদের বলা সমস্ত সৃষ্টিতত্ত্বের মূল বার্তাই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আযযা ওয়াযালের অস্তিত্বের বিশ্বাসটিকেই ফুঁৎকার দিয়ে নিভিয়ে দেওয়া। ওরা রহমানের নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। আল্লাহ বলেনঃ
يُرِيدُونَ أَن يُطْفِؤُواْ نُورَ اللّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللّهُ إِلاَّ أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে।[৯:৩২]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বৃষ্টির দ্বারা দুধরনের পানি বর্ষন করেন, একটা হচ্ছে আসমান থেকে সরাসরি রহমতের বারিধারা। আরেকটি হচ্ছে
যমীনের জলাধারগুলো থেকে শুষ্কবায়ুতে টেনে নেওয়া পানি।কিন্তু মূল পানির উৎস আসমানই। আজকের অপবিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে বর্ষণের জন্য অনেক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে, এরা ঘন জলীয়বাষ্পকে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে কৃত্রিম বৃষ্টির সৃষ্টি করে বোঝাতে চায়, এই সৃষ্টিজগতের সমস্ত রহস্য তাদের হাতের মুঠোয় রয়েছে। তারা এর দ্বারা বৃষ্টিধারা প্রেরণে রহমান আল্লাহর নিয়ন্ত্রন এবং অনুগ্রহকে অস্বীকার করতে চায়।নাসার এরকম এক রেইন মেশিন দিয়ে বৃষ্টিপাতের পর উপস্থাপক বলছিল,'এটা অনেকটা সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার অনুরূপ(playing God)'[১]। বস্তুত তারা যা করে সেটা মূল বারিধারার উৎস নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আসমান থেকে বৃষ্টির পানি নাযিল করেন। আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে একাধিক আয়াতে আসমান থেকে পানি বর্ষণের কথা বলেন। আল্লাহ বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء طَهُورًا
তিনিই স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে বাতাসকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্যে পানি বর্ষণ করি(২৫:৪৮)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেনঃ
সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সরাসরি আসমান থেকে পানি নাযিল করেন। এখানে কোনরূপ পার্স্পেক্টিভ বোঝানো হয় নি,যেমনটা আধুনিক অপবিজ্ঞানে বিশ্বাসী মুসলিমরা অপব্যাখ্যা করে থাকে। আল্লাহ আসমান থেকে যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন সেটা যমীনের জন্য রহমতস্বরূপ। এই পানিতে রহমান বিশেষ কিছু দিয়ে প্রেরণ করেন যা শুষ্কমৃতভূমিকে সঞ্জীবিত করে, এর দ্বারাই সকল প্রকার ফসল,গাছপালা জন্মায়। সাধারণ পানিতে হয় না।
অন্যান্য আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ একই কথা বলেছেন, অর্থাৎ তিনি আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেনঃ
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَأَلْقَى فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ
তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জন্তু। আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর তাতে উদগত করেছি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি(৩১:১০)
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَسَلَكَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّن نَّبَاتٍ شَتَّى
তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে বিছানা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি(২০:৫৩)
তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন।(১৩:১৭)
"...আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন..."(১১:৫২)
পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম(১০:২৪)
আসমানি পানি পবিত্র,এতে আল্লাহ বিশেষ সঞ্জীবনীশক্তি দিয়েছেন যার দ্বারা আল্লাহ মৃত ভূমিকে সঞ্জীবিত করেন, বৃক্ষ,তৃণলতা,ফল ফসল উদগত করেন। আসমানি পবিত্র পানি ছাড়া ফুল ফসল কিছুই উদগত হয় না, বস্তুত সেদিক থেকে ভাবলে সবকিছুর উপরে আল্লাহই সমস্ত প্রানীজগতের জন্য আসমান থেকেই রিযিক নাযিল করেন। এই বৃষ্টির পবিত্র ধারাই রিযক, যা দ্বারা আল্লাহ যমীনে সমস্ত ফল-ফসল উদগত করেন। আল্লাহ বলেনঃ
وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاء مِن رِّزْقٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ آيَاتٌ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
দিবারাত্রির পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে(৪৫:৫)
اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَسَخَّرَ لَكُمُ الأَنْهَارَ
তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন(১৪:৩২)
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء لَّكُم مِّنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ
তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ কর(১৬:১০)
وَاللّهُ أَنزَلَ مِنَ الْسَّمَاء مَاء فَأَحْيَا بِهِ الأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তদ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেছেন। নিশ্চয় এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, যারা শ্রবণ করে(১৬:৬৫)
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجْنَا بِهِ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهَا وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ بِيضٌ وَحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌ
তুমি কি দেখনি আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা আমি বিভিন্ন বর্ণের ফল-মূল উদগত করি। পর্বতসমূহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ-সাদা, লাল ও নিকষ কালো কৃষ্ণ(৩৫:২৭)
وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء مُّبَارَكًا فَأَنبَتْنَا بِهِ جَنَّاتٍ وَحَبَّ الْحَصِيدِ
আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তদ্বারা বাগান ও শস্য উদগত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।(৫০:৯)
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَتُصْبِحُ الْأَرْضُ مُخْضَرَّةً إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর ভূপৃষ্ট সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠে। নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষদর্শী, সর্ববিষয়ে খবরদার(২২:৬৩)
وَمِنْ آيَاتِهِ يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاء مَاء فَيُحْيِي بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
তাঁর আরও নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্যে এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
(৩০:২৪)
أَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ السَّمَاء مَاء فَأَنبَتْنَا بِهِ حَدَائِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍ مَّا كَانَ لَكُمْ أَن تُنبِتُوا شَجَرَهَا أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَعْدِلُونَ
বল তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্যে বর্ষণ করেছেন পানি; অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শক্তিই তোমাদের নেই। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়(২৭:৬০)
অপবিজ্ঞানের পানিচক্রের বৃষ্টিপাত প্রক্রিয়ায় কোন অলৌকিকতা কিংবা কোনরূপ তাৎপর্য নেই। বরং তারা সেটার তাৎপর্যহীনতা বোঝাতে নিজেরাই কৃত্রিমভাবে বৃষ্টির ব্যবস্থা করে, এর দ্বারা বোঝাতে চায় এতে কোনরূপ অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভাব(Divine Intervention) নেই বরং এটা একদমই সাধারণ একটি ঘটনা। আমরাও বৃষ্টি ঘটাতে পারি! অথচ বাস্তবিকভাবে এই বর্ষণ প্রক্রিয়ায় ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন এবং উপদেশ নিহিত আছে।আল্লাহ বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِيَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِن طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَجَنَّاتٍ مِّنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ انظُرُواْ إِلِى ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ إِنَّ فِي ذَلِكُمْ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে(৬:৯৯)
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَسَلَكَهُ يَنَابِيعَ فِي الْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهُ حُطَامًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِأُوْلِي الْأَلْبَابِ
তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে(৩৯ঃ২১)
আল্লাহ প্রদত্ত আসমানের রহমতের বৃষ্টিতে চিন্তাশীলদের জন্য পুনরুত্থান দিবসের বার্তা নিহিত আছে। যেভাবে আল্লাহ মৃত মৃত্তিকাকে সঞ্জীবিত করেন, সেভাবেই আল্লাহ পুনরুত্থান দিবসে সকল পচে গলে মাটিতে মিশে যাওয়া মৃতদেহগুলোকে আবারো পুনরায় গঠন করবেন। এজন্য আমাদের চোখের সামনে ঘটা বর্ষণের দৃশ্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। আল্লাহ বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ حَتَّى إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالاً سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنزَلْنَا بِهِ الْمَاء فَأَخْرَجْنَا بِهِ مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ كَذَلِكَ نُخْرِجُ الْموْتَى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হঁাকিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব-যাতে তোমরা চিন্তা কর(৭:৫৭)
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنَّكَ تَرَى الْأَرْضَ خَاشِعَةً فَإِذَا أَنزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاء اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ إِنَّ الَّذِي أَحْيَاهَا لَمُحْيِي الْمَوْتَى إِنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখবে অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি যখন তার উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন সে শস্যশ্যামল ও স্ফীত হয়। নিশ্চয় যিনি একে জীবিত করেন, তিনি জীবিত করবেন মৃতদেরকেও। নিশ্চয় তিনি সবকিছু করতে সক্ষম(৪১:৩৯)
رِزْقًا لِّلْعِبَادِ وَأَحْيَيْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا كَذَلِكَ الْخُرُوجُ
বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পুনরুত্থান ঘটবে(৫০:১১)
পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আসমানের সমুদ্র থেকে পবিত্র বৃষ্টি বর্ষণ করবেন,এখন বৃষ্টির দ্বারা যেভাবে কোন মৃত মৃত্তিকাকে আল্লাহ সবুজ তৃণভূমিতে পরিণত করেন তেমনিভাবে ঐদিনও আসমানের বিশেষ পানি দ্বারা বর্ষণের মাধ্যমে মাটিতে পচে মিশে যাওয়া মানুষের অস্থিমজ্জা ও মাংসগুলোকে রিজেনারেট করবেন এবং প্রাণসঞ্চার করবেন। প্রাচীন আরবের কাফিররা আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও এই পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করত না। আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ وَنُقِرُّ فِي الْأَرْحَامِ مَا نَشَاء إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّى وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِن بَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا وَتَرَى الْأَرْضَ هَامِدَةً فَإِذَا أَنزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاء اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ
হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে(২২:৫)
حديث أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما بين النفختين أربعون قال: أربعون يوما قال: أبيت قال: أربعون شهرا قال: أبيت قال: أربعون سنة قال: أبيت قال: ثم ينزل الله من السماء ماء، فينبتون كما ينبت البقل، ليس من الإنسان شيء إلا يبلى، إلا عظما واحدا، وهو عجب الذنب، ومنه يركب الخلق يوم القيامة
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফূৎকারের মধ্যে চল্লিশের ব্যবধান হবে। [আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)]-এর এক ছাত্র বললেন, চল্লিশ বলে চল্লিশ দিন বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারপর পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, চল্লিশ বলে চল্লিশ মাস বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, এবারও অস্বীকার করলাম। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, চল্লিশ বছর বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, এবারও আমি অস্বীকার করলাম। এরপর আল্লাহ্ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। এতে মৃতরা জীবিত হয়ে উঠবে, যেমন বৃষ্টির পানিতে উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন হয়ে থাকে। তখন শিরদাঁড়ার হাড় ছাড়া মানুষের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। ক্বিয়ামাতের দিন ঐ হাড়খণ্ড থেকেই আবার মানুষকে সৃষ্টি করা হবে।
[বুখারী পর্ব ৬৫ সূরা (৭৮) আন্-নাবা অধ্যায় হাদীস নং ৪৯৩৫; মুসলিম ২৯৫৫)
আল লু'লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ১৮৬৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ায় বর্নিত হয়েছে:
সুতরাং সুস্পষ্টভাবে দেখছেন যে আল্লাহ আসমানের সমুদ্র থেকেই বর্ষণ করেন। কাফিরদের পানিচক্রই বৃষ্টিপাত প্রক্রিয়া বা উৎস নয়। কাফিরদের বর্ণিত আসমান যমীনের বর্ণনানুযায়ী আসমান মানে অনন্ত ভ্যাকুয়াম স্পেস, আর যমীন হচ্ছে সেই ভ্যাকুয়ামে উড়ে চলা একখণ্ড গোলক, এই কাল্পনিক গোলকধাঁধায় পানির উৎসের সংকট আছে। বৃষ্টির পানি কোন এক্সটারনাল সোর্স থেকে আসে না, তাদের কল্পনায়ও এটা সম্ভব না, কারন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরেই ভ্যাকুয়াম স্পেস, অন্যদিকে মাটির নিচেও পানির রিজার্ভ সীমিত। কাল্পনিক কয়েক স্তর নিচেই আগুন আর লাভায় পরিপূর্ণ।
এই কাল্পনিক জগতের পানি চক্র হচ্ছে সমুদ্র, নদী পুকুরের পানি সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ,অতঃপর বৃষ্টি। অর্থাৎ এটা একটা সেল্ফ সাস্টেইনিং সাইকেল। তাদের এই সাইক্লিক্যাল চিন্তা এসেছে আরো সুউচ্চ কুফরি আকিদার থেকে। সেটা এখানকার আলোচ্য বিষয় নয়।
সত্যিকারের বিশ্বব্যবস্থায় করুণাময় মহান আল্লাহ স্বয়ং বৃষ্টিপাত ঘটান। আসমান থেকে আল্লাহ পরিমাণ বিহীন বৃষ্টি বর্ষণ করেন না,এমনও হয় না অপ্রয়োজনীয় বৃষ্টি কোথাও বর্ষিত হচ্ছে। প্রত্যেক বৃষ্টির ফোঁটাও আল্লাহর হিসাবে রয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاء مَاء بِقَدَرٍ فَأَنشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا كَذَلِكَ تُخْرَجُونَ
এবং যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন পরিমিত। আতঃপর তদ্দ্বারা আমি মৃত ভূ-ভাগকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। তোমরা এমনিভাবে উত্থিত হবে।(৪৩:১১)
وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম(২৩:১৮)
এমনকি প্রত্যেক ফোঁটা বৃষ্টি আল্লাহর নির্দেশমতো যমীনে পৌছে দেওয়ার জন্য সে পরিমাণ ফেরেশতাদের অবতীর্ণ করা হয়।
" With every raindrop there is an angel who descends with it until he places it where Allah has ordered "
[At Tabaree]
বৃষ্টি কোন অঞ্চলে খেয়ালখুশি মত হয় না(যেটা অপবিজ্ঞান আমাদেরকে বলে,কারন তাদের মতে বৃষ্টি ঐশ্বরিক কর্তৃত্বহীন প্রাকৃতিক ঘটনা), বরং সরাসরি আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী ঘটে। নিম্নোলিখিত হাদিসে সেটা সুস্পষ্টঃ
وعنه، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: «بينما رجل يمشي بفلاة من الأرض، فسمع صوتا في سحابة، اسق حديقة فلان، فتنحى ذلك السحاب فأفرغ ماءه في حرة، فإذا شرجة من تلك الشراج قد استوعبت ذلك الماء كله، فتتبع الماء، فإذا رجل قائم في حديقته يحول الماء بمسحاته، فقال له: يا عبد الله، ما اسمك ؟ قال: فلان للاسم الذي سمع في السحابة، فقال له: يا عبد الله، لم تسألني عن اسمي؟ فقال: إني سمعت صوتا في السحاب الذي هذا ماؤه، يقول: اسق حديقة فلان لاسمك، فما تصنع فيها، فقال: أما إذ قلت هذا، فإني أنظر إلى ما يخرج منها، فأتصدق بثلثه، وآكل أنا وعيالي ثلثا، وأرد فيها ثلثه . رواه مسلم
উক্ত রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক ব্যক্তি বৃক্ষহীন প্রান্তরে মেঘ থেকে শব্দ শুনতে পেল, ‘অমুকের বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ অতঃপর সেই মেঘ সরে গিয়ে কালো পাথুরে এক ভূমিতে বর্ষণ করল। তারপর (সেখানকার) নালাসমূহের মধ্যে একটি নালা সম্পূর্ণ পানি নিজের মধ্যে জমা করে নিল। লোকটি সেই পানির অনুসরণ করে কিছু দূর গিয়ে দেখল, একটি লোক কোদাল দ্বারা নিজ বাগানের দিকে পানি ঘুরাচ্ছে। সে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম কি ভাই?’ বলল, ‘অমুক।’ এটি ছিল সেই নাম, যে নাম মেঘের আড়ালে সে শুনেছিল। বাগান-ওয়ালা বলল, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম কেন জিজ্ঞাসা করলে?’ লোকটি বলল, ‘আমি মেঘের আড়াল থেকে তোমার নাম ধরে তোমার বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ শুনলাম। তুমি কি এমন কাজ কর?’ বাগান-ওয়ালা বলল, ‘এ কথা যখন বললে, তখন বলতে হয়; আমি এই বাগানের উৎপন্ন ফল-ফসলকে ভেবে-চিন্তে তিন ভাগে ভাগ করি। অতঃপর তার এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি আমার পরিজন সহ খেয়ে থাকি এবং বাকী এক ভাগ বাগানের চাষ-খাতে ব্যয় করি।’’
ফুটনোটঃ
(মুসলিম ২৯৮৪, আহমাদ ৭৮৮১)
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৫৬৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
সত্যিকারের বিশ্বব্যবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা Vaulted sky firmament এর উপরিস্থিত পানির সমুদ্র থেকে পবিত্র পানি নাযিল করেন। বলা যায় এটাই সকল পানির একমাত্র উৎস। (হাদিস অনুযায়ী)যমীনসমূহ পানির উপর ভাসমান দ্বীপ সদৃশ, অর্থাৎ উপরেও পানির ভাণ্ডার, নিচেও পানির অফুরন্ত ভাণ্ডার। শয়তান সবসময় অভাব, সংকীর্নতার ভয় দেয়, অথচ আল্লাহর করুনা অফুরন্ত এবং প্রাচুর্যপূর্ণ। আল্লাহ বলেনঃ
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاء وَاللّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلاً وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।[২:২৬৮]
নিঃসন্দেহে শয়তান কাফিরদেরকে দিয়ে এমন সৃষ্টিতত্ত্বকে বর্ণনা করায় যেটা অভব ও হতাশাপূর্ণ। এমন কখনো হবে না যে ভূপৃষ্ঠের পানি শেষ হয়ে যাবে,যদি না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা চান। বস্তুত সমস্তকিছু আল্লাহর করুণার নিয়ন্ত্রণাধীন। আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَن يَأْتِيكُم بِمَاء مَّعِينٍ
বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?(৬৭:৩০)
নিশ্চয়ই কফিররা ভীষণ অকৃতজ্ঞ। এরা বৃষ্টিধারার ব্যপারে কোনরূপ অলৌকিকতাকে আরোপ করতে পছন্দ করে না। বরং এর ব্যপারে কুফরি বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় এরা নিষ্প্রাণ বৃষ্টিপাতের ব্যবস্থা করে দেখিয়ে মানুষকে বোঝাতে চায় 'এখানে সৃষ্টিকর্তার কোন কর্তৃত্ব নেই, আমরাও পারি,আমরাও বৃষ্টিকে নামিয়ে আনতে সক্ষম(playing God)'। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاء الَّذِي تَشْرَبُونَ
তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?
أَأَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنزِلُونَ
তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষন করি?
لَوْ نَشَاء جَعَلْنَاهُ أُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُونَ
আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?(৫৬:৬৮-৭০)
সুতরাং সুস্পষ্ট দেখছেন শয়তান তার অনুসারীদের রেইনমেশিন দ্বারা বৃষ্টিপাত দেখানোর দ্বারা আল্লাহর সাথে কুফর করছে। এমনকি এও মুখে বলছে "It is like playing God![১]" যেখানে আল্লাহ প্রশ্ন করেছেন, এই বারিধারা মেঘ থেকে কি মানুষ নামিয়ে আনে নাকি আল্লাহ, সেখানে তারা দেখিয়েছে তারাও নামাতে সক্ষম। তবে ওরা যত চেষ্টাই করুক না কেন, এই বৃষ্টি আর আল্লাহর ভাণ্ডারের পবিত্র বারি এক নয়, কাফিরদের অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন দ্বারা তৈরি জলীয়বাষ্প মৃতভূমিতে প্রাণ সঞ্চার করতে সক্ষম নয়। অর্থাৎ এটা শুধুই নিষ্প্রাণ তাৎপর্যহীন পানির নিন্মমুখী ধারা।
আল্লাহ আযযা ওয়াযাল আসমান থেকে যে পানি ডিসেন্ড করেন সেটাকে অস্বীকার করতে দেখা যায় এ যুগের অধিকাংশ মুসলিমদেরকে কারন এরা কাফিরদের আকিদা বা বিশ্বাসব্যবস্থাকে আপন করে নিয়েছে, শার'ঈ দলিল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এরা কাফিরদের দ্বারা শোষিত পৃথিবীর সাথে তাল মেলাতে কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত গুলোর অপব্যাখ্যা করেছে যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সুস্পষ্টভাবে আসমান থেকে পানি নাযিল করবার কথা বলেছেন। আমরা এসংক্রান্ত অনেকগুলো আয়াত উপরে উল্লেখ করেছি। বিভ্রান্ত মুসলিমরা অপবিজ্ঞানের সাথে মেলাতে গিয়ে বলে আল্লাহর ওই আয়াতের দ্বারা বোঝানো হয়েছে "উপরের দিক দিয়ে পানি বর্ষণ" অর্থাৎ এটাকে পার্স্পেক্টিভের ব্যপার বলে ব্যাখ্যা করছে। তারা এরূপ বলছে একারনে যে তারা কাফিরদের বলা সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আজ মুসলিমরা আন্তরিক বিশ্বাস রাখে না যে, আল্লাহ ৬ দিনে আসমান যমীনকে সৃষ্টি করেছেন বরং বিশ্বাস করে বিগব্যাং এর দ্বারা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বাস করে পৃথিবী গোলক বল সূর্যের চারিপাশে মহাশূন্যে ঘুরছে। এই পৃথিবীর বাহিরে মহাশূন্য, বিজ্ঞান অনুযায়ী এই ভ্যাকুয়াম স্পেস থেকে পানি পৃথিবীর বায়ূমন্ডলের মধ্যে আসা হাস্যকর অযৌক্তিক কল্পনা। তাই আধুনিক মুসলিমরা আসমান থেকে পানি নাযিল হবার বিষয়টিকে অবিশ্বাস করে, এজন্য তারা যুক্তি ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়,কাফিরদের অপবিজ্ঞানকে ইসলামাইজ করে[৩]। রূঢ় সত্য হচ্ছে কাফিরদের শেখানো মুসলিমদের বিশ্বাসে আসমানের ধারণাই বাস্তব জগতে একদম ভুল। এরা সত্যের ধারে কাছেও নেই বরং কাফিরদের বলা কল্পনার জগতে বসবাস করে। আল্লাহ যমীনের উপর গম্বুজাকৃতির ছাদ থেকেই পানি বর্ষণ করেন। এ ব্যপারে আল্লাহ একদম স্পষ্টভাবে বলেন নূহ (আঃ) এর কওমের উপর গজবের ব্যপারে আসা আয়াতে। আল্লাহ ঐসময় আসমানের দরজাকে প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য খুলে দেন। আল্লাহ বলেনঃ
فَفَتَحْنَا أَبْوَابَ السَّمَاء بِمَاء مُّنْهَمِرٍ
তখন আমি খুলে দিলাম আকাশের দ্বার প্রবল বারিবর্ষণের মাধ্যমে(৫৪:১১)
আমি আকাশকে তাদের উপর অনবরত বৃষ্টি বর্ষণ করতে দিয়েছি(৬:৬)
وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءكِ وَيَا سَمَاء أَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاء وَقُضِيَ الأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ وَقِيلَ بُعْداً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
আর নির্দেশ দেয়া হল-হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ, ক্ষান্ত হও। আর পানি হ্রাস করা হল এবং কাজ শেষ হয়ে গেল, আর জুদী পর্বতে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষনা করা হল, দুরাত্না কাফেররা নিপাত যাক(১১:৪৪)
حدثنا الحميدي قال: حدثنا سفيان، عن ابن أبي حسين وغيره، عن أبي الطفيل سأل ابن الكوا عليا عن المجرة، قال: هو شرج السماء، ومنها فتحت السماء بماء منهمر
আবুত তুফাইল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
ইবনুল কাওয়া (র) আলী (রাঃ)-কে ছায়াপথ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, তা হলো আসমানের প্রবেশদ্বার এবং নৃহের বন্যায় প্রবল বৃষ্টি বর্ষণের জন্য আকাশের ঐ দ্বারই খুলে দেয়া হয়েছিল (৫৪ : ১১ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত)।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৭৭১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
অতএব এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আসমান থেকেই বর্ষণ করেন। এই বিষয়টি কাফিরদের সমস্ত কুফরি বিকল্প তত্ত্বগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করে।
এ আসমান থেকে পানি নাযিলের বিষয়টি আকিদার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ১৪০০ বছর আগের মুশরিকরাও বিশ্বাস করত যে আল্লাহই আসমান থেকে পানি নাযিল করেন। আল্লাহ বলেনঃ
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّن نَّزَّلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِن بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না(২৯:৬৩)
অথচ আজ মুসলিম উম্মাহ ঐ কাফিরদের চেয়েও জঘন্য বিশ্বাস রাখে। এরা ঐশ্বরিক তাৎপর্যবিহীন পানিচক্রে[২] বিশ্বাস করে এবং বৃষ্টিপাত, আবহাওয়া এবং সর্বোপরি গোটা সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত কাফিরদের সমস্ত বিশ্বাসকে গ্রহন করে নিয়েছে। মা'আযাল্লাহ!
হাদিসে মেঘকে বলা হয়েছে যমীনের পানিবাহী উট।আসমান থেকে যে পানি বর্ষিত হয় বা শুষ্ক বায়ু আসমান থেকে যে পানি বয়ে আনে, মেঘ তা ধারন করে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ এক সাথে বসা ছিলেন। হঠাৎ তাদের উপর মেঘরাশি প্রকাশিত হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের প্রশ্ন করেন : তোমরা জান এটা কি? তারা বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এটা হল যমিনের পানিবাহী উট।
[আত্ব তিরমীজিঃ৩২৯৮]
আল্লাহ বলেনঃ
فَالْحَامِلَاتِ وِقْرًا
অতঃপর বোঝা বহনকারী মেঘের(৫১:২)
وَأَنزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَاء ثَجَّاجًا
আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি(৭৮:১৪)
অর্থাৎ পানিবাহী মেঘমালা থেকে আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাগন জলধর মেঘের বোঝা বায়ুতে ভাসিয়ে আল্লাহর নির্দেশিত অঞ্চলের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যান।
ফেরেশতারা মেঘ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। হযরত মিকাঈল(আঃ) মেঘ-বৃষ্টির দায়িত্বে আছেন। ফেরেশতাগন মেঘমালাকে আল্লাহর নির্দেশিত জনপদের হাঁকিয়ে নিয়ে যায়। বিজ্ঞান আমাদের আজ বলে মেঘ র্যান্ডমভাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। মেঘগুলোই বৃষ্টি আকারে নেমে আসে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে মেঘগুলো আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোথাও যায় না। সরাসরি আল্লাহর কাছে প্রার্থণার পর পর মেঘ আবির্ভূত হয়ে বৃষ্টিপাতের ঘটনা হাদিসে এসেছেঃ
حدثنا إبراهيم بن المنذر، قال حدثنا الوليد، قال حدثنا أبو عمرو، قال حدثني إسحاق بن عبد الله بن أبي طلحة، عن أنس بن مالك، قال أصابت الناس سنة على عهد النبي صلى الله عليه وسلم فبينا النبي صلى الله عليه وسلم يخطب في يوم جمعة قام أعرابي فقال يا رسول الله هلك المال وجاع العيال، فادع الله لنا. فرفع يديه، وما نرى في السماء قزعة، فوالذي نفسي بيده ما وضعها حتى ثار السحاب أمثال الجبال، ثم لم ينزل عن منبره حتى رأيت المطر يتحادر على لحيته صلى الله عليه وسلم فمطرنا يومنا ذلك، ومن الغد، وبعد الغد والذي يليه، حتى الجمعة الأخرى، وقام ذلك الأعرابي ـ أو قال غيره ـ فقال يا رسول الله، تهدم البناء وغرق المال، فادع الله لنا. فرفع يديه، فقال " اللهم حوالينا، ولا علينا ". فما يشير بيده إلى ناحية من السحاب إلا انفرجت، وصارت المدينة مثل الجوبة، وسال الوادي قناة شهرا، ولم يجئ أحد من ناحية إلا حدث بالجود.
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় কোন এক জুমু’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্বা দিচ্ছিলিন। তখন এক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্র রসূল! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহ্র নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’ হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খণ্ড মেঘও দেখিনি। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু’আ শেষে) তিনি দু’ হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খণ্ড উঠে আসল। অতঃপর তিনি মিম্বার হতে নীচে নামেননি, এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর দাড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমু’আর দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্র রসূল! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট দু’আ করুন। তখন তিনি দু’ হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ্ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দু’আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খণ্ডের দিকে ইশারা করছিলেন, আর সেখানকার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে এবং কানাত উপত্যকার পানি একমাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল, তখন (মদীনার) চারপাশের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে, সে এ প্রবল বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯৩৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
কিছু বাতাস মেঘকে বিদীর্ণ করে, কিছু বায়ু আসমান থেকে পানি বহন করে নিয়ে আসে।
আল্লাহ বলেনঃ
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُزْجِي سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُمَّ يَجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاء مِن جِبَالٍ فِيهَا مِن بَرَدٍ فَيُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاء وَيَصْرِفُهُ عَن مَّن يَشَاء يَكَادُ سَنَا بَرْقِهِ يَذْهَبُ بِالْأَبْصَارِ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা, তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎঝলক দৃষ্টিশক্তি যেন বিলীন করে দিতে চায়(২৪:৪৩)
اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاء كَيْفَ يَشَاء وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ فَإِذَا أَصَابَ بِهِ مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
তিনি আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়(৩০:৪৮)
الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ إِلَى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَحْيَيْنَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا كَذَلِكَ النُّشُورُ
আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূ-খন্ডের দিকে পরিচালিত করি, অতঃপর তদ্বারা সে ভূ-খন্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবে হবে পুনরুত্থান(৩৫:৯)
وَالنَّاشِرَاتِ نَشْرًا
فَالْفَارِقَاتِ فَرْقًا
মেঘবিস্তৃতকারী বায়ুর শপথ
মেঘপুঞ্জ বিতরণকারী বায়ুর শপথ এবং(৭৭:৩-৪)
আধুনিক বিজ্ঞান আমাদেরকে মেঘের গর্জন এবং বজ্রপাতের ব্যপারে কি বলে? বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা হচ্ছে এগুলো মেঘে মেঘে ঘর্ষণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ এবং নিনাদ! অথচ হাদিসে এর ব্যাখ্যা একদমই ভিন্ন। বজ্রবিদ্যুতের ব্যপারে আল্লাহ বলেনঃ
هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِىءُ السَّحَابَ الثِّقَالَ
তিনিই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্যে এবং আশার জন্যে এবং উক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা(১৩:১২)
حدثنا بشر قال: حدثنا موسى بن عبد العزيز قال: حدثني الحكم قال: حدثني عكرمة، أن ابن عباس كان إذا سمع صوت الرعد قال: سبحان الذي سبحت له، قال: إن الرعد ملك ينعق بالغيث، كما ينعق الراعي بغنمه
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বজ্রধ্বনি শুনতে পেলে বলতেনঃ “মহাপবিত্র সেই সত্তা বজ্রধ্বনি যাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করলো”। তিনি বলেন, বজ্রধ্বনিকারী হলেন একজন ফেরেশতা। তিনি মেঘমালাকে হাঁকিয়ে নিয়ে যান, যেমন রাখাল তার মেষপালকে হাঁকিয়ে নিয়ে যায়।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৭২৭
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
حدثنا عبد الله بن عبد الرحمن، أخبرنا أبو نعيم، عن عبد الله بن الوليد، وكان، يكون في بني عجل عن بكير بن شهاب، عن سعيد بن جبير، عن ابن عباس، قال أقبلت يهود إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقالوا يا أبا القاسم أخبرنا عن الرعد ما هو قال " ملك من الملائكة موكل بالسحاب معه مخاريق من نار يسوق بها السحاب حيث شاء الله " . فقالوا فما هذا الصوت الذي نسمع قال " زجره بالسحاب إذا زجره حتى ينتهي إلى حيث أمر " . قالوا صدقت فأخبرنا عما حرم إسرائيل على نفسه قال " اشتكى عرق النسا فلم يجد شيئا يلائمه إلا لحوم الإبل وألبانها فلذلك حرمها " . قالوا صدقت . قال هذا حديث حسن صحيح غريب .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, ইয়াহুদীরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে আবুল কাসিম! আমাদেরকে রা’দ (মেঘের গর্জন) প্রসঙ্গে বলুন, এটা কি? তিনি বললেনঃ মেঘমালাকে হাঁকিয়ে নেয়ার জন্য ফেরেশতাদের একজন নিয়োজিত আছে। তার সাথে রয়েছে আগুনের চাবুক। এর সাহায্যে সে মেঘমালাকে সেদিকে পরিচালনা করেন, যেদিকে আল্লাহ তা’আলা চান। তারা বলল, আমরা যে আওয়াজ শুনতে পাই তার তাৎপর্য কি? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা হচ্ছে ফেরেশতার হাঁকডাক। এভাবে হাঁকডাক দিয়ে সে মেঘমালাকে তার নির্দেশিত স্হানে নিয়ে যায়। তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন। তারা আবার বলল, আপনি আমাদের বলুন, ইসরাঈল [ইয়াকুব (‘‘আঃ)] কোন জিনিষ নিজের জন্য হারাম করেছিলেন? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তিনি ইরকুন নিসা (স্যায়াটিকা) রোগে আক্রান্ত ছিলেন কিন্তু উটের গোশত ও এর দুধ ছাড়া তার উপযোগী খাদ্য ছিল না। তাই তিনি তা হারাম করে নিয়েছিলেন। তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন।
সহীহ : সহীহাহ (১৮৭২)।
ফুটনোটঃ
আবু ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩১১৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
বিজ্ঞান আমাদের শেখায় বজ্রপাত যেকারও উপর পড়তে পারে, তারা এটাকে প্রাকৃতিক ঘটনা সাব্যস্ত করে। এর কারনও নাকি নিয়ন্ত্রনহীন প্রাকৃতিক ঐশ্বরিক তাৎপর্যবিহীন। অথচ আল্লাহ বলেন তিনিই এই বজ্রপাত দ্বারা তার ইচ্ছেমত আঘাত করেন।এটা সম্পূর্ন তার ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রনাধীন। আল্লাহ বলেনঃ
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلاَئِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاء وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ
তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচছা, তাকে তা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতন্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী(১৩:১৩)
অতএব বজ্র যেখানে সেখানে পতিত হয় না। যিকরকারীর উপর আল্লাহ তা পতিত করেন না। সুতরাং বিদ্যুৎ/বজ্রের ব্যপারে বিজ্ঞান যা বলে তার কিছুই গ্রহনযোগ্য নয়[৬]।
রঙধনুর ব্যপারে আধুনিক (অপ)বিজ্ঞান কি বলে[৪]? এটা নাকি আলোর স্পেকট্রামের বিচিত্র রিফ্লেক্সন/রিফ্র্যাকশানের ফল। কিন্তু হাদিসে এসেছেঃ
حدثنا عارم قال: حدثنا أبو عوانة، عن أبي بشر، عن سعيد بن جبير، عن ابن عباس: القوس: أمان لأهل الأرض من الغرق، والمجرة: باب السماء الذي تنشق منه
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রংধনু হলো পৃথিবীবাসীর জন্য মহাপ্লাবনের পর নিরাপত্তার প্রতীক এবং ছায়াপথ হলো আকাশের একটি দরজা, যা থেকে আকাশ বিদীর্ণ হবে।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৭৭২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
নিঃসন্দেহে বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুবিশাল রহমত। এটা আল্লাহর নাযিলকৃত এমন পবিত্র পানি, যার ভাণ্ডার মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। এই পানিই মানব-দানব ও সমগ্র প্রানীকুলের রিযিকের মূল। আল্লাহ বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِن بَعْدِ مَا قَنَطُوا وَيَنشُرُ رَحْمَتَهُ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ
মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমত ছড়িয়ে দেন। তিনিই কার্যনির্বাহী, প্রশংসিত[৪২:২৮]
“And we have sent down from the heavens’ water that is blessed.” (Surah Qaf: Ayat 9).
সুতরাং বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, আসমানের নাযিলকৃত পবিত্র বস্তু। অথচ এই রহমতের বৃষ্টিকে বর্ষিত হতে দেখে মাঝেমধ্যে আমরা অভিশম্পাত
করি, বৃষ্টিকে গালি দেই! আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বারিধারা নেমে আসতে দেখলে কি করতেন?
সাহাবী আনাস রা. বলেন,
أَصَابَنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَطَرٌ، قَالَ: فَحَسَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَوْبَهُ، حَتَّى أَصَابَهُ مِنَ الْمَطَرِ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ لِمَ صَنَعْتَ هَذَا؟ قَالَ: «لِأَنَّهُ حَدِيثُ عَهْدٍ بِرَبِّهِ تَعَالَى»
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর কাপড়ের কিয়দংশ উন্মোচন করলেন যেন শরীরে বৃষ্টির পানির স্পর্শ লাগে।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ তা তার মহান রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে”।
[সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত। হাদিস নং ৮৯৮]
وعن أنس قال: أصابنا -ونحن مع رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مطر، قال: فحسر ثوبه، حتى أصابه من المطر، وقال: «إنه حديث عهد بربه» رواه مسلم
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, একবার আমরা বৃষ্টিতে পড়লাম, তখন আমরা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গেই ছিলাম । তিনি তাঁর (শরীরের কিছু অংশ হতে) কাপড় হটিয়ে নিলেন ফলে বৃষ্টির পানি তাঁর শরীরে পড়লো । তিনি বললেনঃ এটা তাঁর প্রতিপালকের তরফ থেকে (রহম স্বরূপ) প্রথম বৃষ্টি হিসাবে আসলো (সেই মৌসুমের ) । [৫৫৫]
ফুটনোটঃ
[৫৫৫] মুসলিম , ৮৯৮ , আবু দাউদ ৫৯০০ , আহমাদ ১১৯৫৭ ।
বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৫১৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৃষ্টি হলেই তাঁর দাসী কে বলতেন, আমার ঘোড়ার জিন এবং কাপড়-চোপড় বের করে বৃষ্টিতে দাও। (যেন রহমতের বৃষ্টি এর উপর পড়তে পারে) এবং তিনি উপরের (সূরা ক্বাফ, আয়াত-৯) আয়াতটি পাঠ করতেন।
[আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১২৪৫]
বৃষ্টির পানি সত্যিই একটু ভিন্ন, আপনি দেখবেন মৃতপ্রায় কোন গাছের উপর বৃষ্টির পানি পড়ার পর সেটা পুনরায় সতেজ হয়ে উঠেছে, যেন পুনরায় জীবন লাভ করেছে। চর্মরোগী কিংবা ঘামাচিতে আক্রান্তকে ব্যক্তিও বৃষ্টিতে ভিজলে খুব দ্রুত আরোগ্যলাভ করতে দেখা যায়, যেন এই পানি শরীরের মৃত কোষগুলোকে সঞ্জীবিত করে। বৃষ্টির বর্ষণ মানে আল্লাহর রহমত বর্ষণ, এসময়ের দু'আকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।
In a hadith of Sahl ibn Sa’d (Ra.) attributed to the Prophet (Pbuh) it is said, “There are two which will not be rejected: duaa at the time of azan and when it is raining.”
(Sunnan Abu Dawood & Saheeh al-Jaami).
মাঝেমধ্যে আমরা বৃষ্টিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করি তবুও বর্ষিত হতে দেখে অসন্তুষ্ট হই। কখনো কখনো বৃষ্টি আমাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও তা অন্য কোন প্রানীর জন্য প্রয়োজন হতে পারে।নিশ্চয়ই আল্লাহ পরিমিতভাবে বর্ষণ করেন এবং তিনি কোন মাখলুকের ব্যপারে বেখবর নন। ছোট্ট পিপীলিকার ব্যপারেও নয়।
وعن أبى هريرة قال: سمعت رسول الله ﷺ يقول: «خرج نبي من الأنبياء بالناس يستسقى فإذا هو بنملة رافعة بعض قوائمها إلى السماء فقال: ارجعوا فقد استجيب لكم من أجل هذه النملة ». رواه الدارقطني
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, নাবীদের মধ্যে একজন নাবী ইস্তিস্ক্বার (সলাত) আদায়ের জন্য লোকজন নিয়ে বের হয়েছিলেন। হঠাৎ তিনি একটি পিপীলিকা দেখতে পেলেন। পিপড়াটি তার দুটি পা আকাশের দিকে উঠিয়ে রেখেছে। (অর্থাৎ পিপীলিকাটি বৃষ্টির জন্য দুআ করছে)। এ দৃশ্য দেখে উক্ত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে বললেন, তোমরা ফিরে চলো। এ পিপড়াটির দু'আর কারণে তোমাদের দু'আ কবুল হয়ে গেছে। (দারাকুত্বনী)
[মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৫১০]
আজ মুসলিম হয়েও অধিকাংশ লোকই প্রাচীন মুশরিকদের চেয়ে নিকৃষ্ট বিশ্বাস রাখে মেঘ ও বর্ষণের বিষয়গুলোতে। এরা কাফিরদের গড়া ওয়াটার সাইকেলে বিশ্বাস রাখতে পছন্দ করে। সবকিছুকে মেক্যানিস্টিক কজ এ্যান্ড ইফেক্ট তৈরি করে নিয়েছে, মুসলিমরা এই Godless cause and effect কে ইসলামাইজ করতে বানিয়েছে এগুলো সবই আল্লাহ ঘটান। অর্থাৎ মু'তাযিলা/আশআরিদের ফিলোসফিক্যাল অকেশনালিজমে ঢুকে গিয়েছে। আপনি যদি কোন মুসলিমকে জিজ্ঞেসা করেন, কিভাবে বৃষ্টি হচ্ছে(?) তারা এ কথা বলবে না যে আল্লাহ আসমান থেকে পানি নাযিল করেছেন। বরং তারা বলবে সূর্যের তাপে পানি জলীয়বাষ্প হয়ে ঘণীভূত হয়ে বৃষ্টি আকারে নামছে। এরা আমাদের আশপাশের বাস্তবতা(reality) এবং Divine dominion কে আলাদাভাবে দেখছে। দ্বীনকে প্র্যাক্টিক্যাল জগত থেকে গুটিয়ে মৌখিক বিশ্বাসের গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ করেছে। প্রাচীন মুশরিকরা বৃষ্টিপাতের কারন ব্যাখ্যা করত কোন নক্ষত্রের উদয় বা অস্তকে। তদ্রুপ আজকের মুসলিমরা মেক্যানিস্টিক ওয়াটার সাইকেলকে কারন হিসেবে দর্শায়। এরা ১৪০০ বছর আগের মু'মিনদের মত বলে না, আল্লাহ বৃষ্টি দিচ্ছেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে লেখা এই আর্টিকেল সিরিজের একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে জাগতিক এবং গায়েবের সমস্তকিছুর আল্লাহর প্রতি একক মুখাপেক্ষীতা দর্শানো, মানুষকে আকিদাগত সুবিশাল ফাটলের ব্যপারে অবগত করা। আমরা মানুষকে এ কথা বলতে উৎসাহিত করি যে মেঘ বৃষ্টি বা যে কোন কিছু যাকে আমরা প্রাকৃতিক তাৎপর্যহীন ঘটনা বলে সাব্যস্ত করি তা সম্পূর্ন আল্লাহর ডমিনিয়নে এবং তার ইচ্ছা, নির্দেশে হয়ে থাকে। বলতে উৎসাহ করি যে, মেঘ-বৃষ্টি এমনি এমনিই হচ্ছে না বরং আল্লাহর করুনা অনুগ্রহ বা রহমত স্বরূপ তা আসমান থেকে নাযিল হচ্ছে।
মূলত অপবিজ্ঞান এবং ইসলামের আপোষকারী বিভ্রান্ত মুসলিমরা বজ্র-মেঘ-বৃষ্টিসহ অন্যান্য সকল সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে আসা কুরআন সুন্নাহরভিত্তিক বিবরণ শুনে খানিকটা বিব্রত হয়[৭]। কারন মাঝেমধ্যে সেসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কুরআন সুন্নাহর সাথে মেলানো দুষ্কর হয়ে যায়। তাই তারা প্রথমেই হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, সনদ সহীহ কিনা.. ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের চেষ্টা থাকে কোনভাবে মওযূ প্রমাণের। সেটা না পারলে কোন না কোন আলিমের রেফারেন্স টানেন যার সাথে (অপ)বিজ্ঞানের আপোষকরা সহজ। তারা যখন একেবারেই আপোষ করতে পারে না ঈমান ও কুফরের সাথে তখন আশ্রয় নেয় ফিজিক্যাল ও মেটাফিজিক্যাল দুধরনের এক্সপ্ল্যানেশনে। ফিজিক্যাল এক্সপ্ল্যানেশন হিসেবে গ্রহন করে অপবিজ্ঞানকে আর মেটাফিজিক্যাল ব্যাখ্যা হিসেবে নেয় শার'ঈ দলিলকে। যদি দুইরকমের ব্যাখ্যা করে দুটোতেই বিশ্বাস স্থাপনের সুযোগ থাকে তাহলে হাদিসে 'নক্ষত্রের কারনে বৃষ্টিপাত হয়েছে' বললেও কেউ কাফির হবে না বা শিরক হবে না। কারন সেটাকে ফিজিক্যাল কারন আর মেটাফিজিক্যালি আল্লাহরই বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছেন বলে পার পাওয়া যাবে। এভাবে সমস্ত শরী'আতে কুফর শিরক সাব্যস্ত স্পষ্ট বিষয়কে হালাল/জায়েজ বা ইসলামাইজ করা সম্ভব। এগুলো আসলে ব্যধিগ্রস্ত অন্তরের মুনাফিকি ব্যাখ্যা। মুনাফিকরা দুদিকেই থাকে। কাফিরদের সামনেও কুফর করে আবার ঈমানদারদের সামনে ঈমানের প্রকাশ ঘটায়। মেক্যানিস্টিক ইন্টারপ্রিটেশনেও আমরা ফিজিক্যাল এবং মেটাফিজিক্সকে আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করতে পারিনা। যখন আল্লাহ পানিবাহী বায়ু চালনা করেন আমরা তখন সেটাকে এর underlying reason কে বাদ দিয়ে বাহ্যিক ঘটনাকে কারন সাব্যস্ত করতে পারি না,অর্থাৎ এক্ষেত্রে বলতে পারিনা যে 'পানিবাহী বায়ু মেঘকে পানি পূর্ন করেছে তাই বৃষ্টি হচ্ছে' বরং বলি আল্লাহই পানিবাহী বায়ু দ্বারা মেঘকে পূর্নকরে বৃষ্টি ঘটিয়েছেন। সুতরাং আমরা সরাসরি আল্টিমেট রিয়ালিটিকেই(ডিভাইন ইন্টারভেনশান) প্রাইমারি এবং আল্টিমেট কজ এন্ড ইফেক্ট হিসেবে প্রকাশ করি। এটাই ইসলাম শেখায়। এজন্য কোথাও সুনামি কিংবা এ জাতীয় 'প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে' আমরা 'প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয়' না বলে বলি আল্লাহর শাস্তি কিংবা পরীক্ষা।
Ref:
১]
https://m.youtube.com/watch?v=VMjvybtX3TI
https://m.youtube.com/watch?v=_0eTXG39i4o
https://m.youtube.com/watch?v=v67nPTG3Pno
২]
https://m.facebook.com/notes/quran/পবিত্র-কোরআন-ও-বিজ্ঞানের-দৃষ্টিতে-বৃষ্টি-বা-পানি-চক্র/828388863885478/
৩]
https://response-to-anti-islam.com/show/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A3-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%86%E0%A6%9B%E0%A7%87--/74
https://response-to-anti-islam.com/show/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE(Hail)-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%AA-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A7%9F--/73
http://the-scientific-quran.blogspot.com/2015/06/blog-post_54.html?m=1
https://sorolpath.wordpress.com/tag/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0/
৪]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Rainbow
৫]
https://m.youtube.com/watch?v=_faCEgNrrBE
৬]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Thunder
https://www.scientificamerican.com/article/what-causes-thunder/
https://www.weatherwizkids.com/weather-lightning.htm
৭]
https://response-to-anti-islam.com/show/%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AB%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A7%88%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A7%9F--/217
বিগত পর্বগুলোঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/article-series_85.html
চলবে ইনশাআল্লাহ..