Tuesday, March 19, 2019

ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব[Article Series]

ﺑِﺴْــــــــﻢِ ﺍٌﻟﻠَّﻪِ ﺍٌﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍٌﻟﺮَّﺣِﻴْـــــــــﻢِ


সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বকে বর্জন করা হয়েছে। গ্রহন করা হয়েছে যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শন উৎসারিত মিথ্যা সৃষ্টিতত্ত্ব। মুসলিম আলিমগন এসব গ্রহন করে নিয়েছেন। সেই সাথে ইসলামাইজ করা হয়েছে। এই বিকৃতির শুরু যেদিন থেকে গ্রীক দর্শন আরবে প্রবেশ করে, সেদিন থেকে। ওই যুগের আলিমগনও সেসব দ্বারা ধীরে ধীরে প্রভাবিত হতে শুরু করেন। একপর্যায়ে এখন আর অধিকাংশ মুসলিম সৃষ্টিতত্ত্বসংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবীদের(রাঃ) আকিদা রাখে না। বরং এমন কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং ইসলামের সাথে মিশ্রন ঘটিয়েছে যার উৎস শয়তান এবং যাদুবিদ্যার কুফরি শাস্ত্র। তারা 'প্রাকৃতিক দর্শন'কে গ্রহন করে কুরআন সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে, সেসবকে দ্বীনের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। তারা কুফর ও শিরকে ভরা বানোয়াট আকিদা গুলোর প্রচার করার সময় গ্রহনযোগ্য করবার জন্য কুরআনের পবিত্র আয়াতগুলোকে ব্যবহার করছে এই বলে যে "কুরআনে ১৪০০ বছর আগে অমুক অমুক বিষয় গুলো বলেছে", যা অপবিজ্ঞানী, দার্শনিকরা বলছে! নাউজুবিল্লাহ!! এভাবে সুস্পষ্ট বৈপরীত্যপূর্ন কুফরকে কুরআন এর দলিল দ্বারা সত্যায়ন এবং বিপরীত দিক দিয়ে, কুরআনের বর্ননার সাথে ওই সব শয়তানি আকিদার মেলবন্ধনের অপচেষ্টা চলছে।



অথচ বর্তমান অপবিজ্ঞানী,প্রাচীন যাদুকররা যা বলে তা তাদের অনুমান এবং শয়তানের বক্তব্য ছাড়া কিছুই নয়। ওদের কথা বাস্তব জগতের সাথেও কোনরূপ সাদৃশ্যতা রাখে না। বাস্তব জগতে বরং সেটাকেই সত্যরূপে দেখা যায়, যা রহমান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনে এবং সাহাবিদের(রাঃ) বর্ননাগুলোয় পাওয়া যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপবিদ্যার ধারক এবং শয়তানের আউলিয়ারা ১% সত্যের সাথে অনুমান নির্ভর ৯৯% কুফরি দর্শন মিশ্রিত করে প্রচার করে, মূর্খরা এতেই ফাঁদে পড়ে। তারা শয়তানের এবং তার অনুসারীদের অনুসরন করতে শুরু করে।

আজকের সময়ে হাজারো ফিতনার মধ্যে সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত আকিদাগত ভ্রষ্টতার ফিতনায় উম্মাহ নিমজ্জিত। এজন্য সত্য মিথ্যাকে স্পষ্ট করতে এবং সতর্ক করতে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর দলিলভিত্তিক ধারাবাহিক আর্টিকেল প্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। আমি এখানে নিজস্ব কোন নবউদ্ভাবিত আকিদা বা চিন্তাধারাকে উপস্থাপন করছি না, বরং এটা কুরআন সুন্নাহর দালিলিক সুবিশাল সংকলন বৈ আর কিছু নয়। এটা ১৪০০ বছর আগের সাহাবীদের সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে আকিদা,জ্ঞানকেই পুনরুজ্জীবন করার প্রয়াস মাত্র। এ লক্ষ্যে cosmogony এর ব্যপারে আসা কুরআন,অজস্র সহীহ ও দুর্বল হাদিস এবং প্রাচীন সুপ্রসিদ্ধ আলিমদের মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাফসীর নিয়ে আসা হবে, ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাছে কাফির মুশরিকদের মনগড়া এবং যাদুশাস্ত্র নির্ভর কুফরি বিশ্বাসের চেয়ে 'প্রাচীন বরেন্য আলিম ও সাহাবীদের(রাঃ)  দ্বারা গৃহীত' কুরআন সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসরাইলীয় বর্ননাও শত সহস্রগুন উত্তম।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া
কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বর্তমান সময়ে বিচিত্র অপব্যাখ্যার চিত্রও তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার কাছে এ ব্যপারে সাহায্য চাই এবং ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আশাকরি এসমস্ত বিষয়ে চলমান বিতর্ক মতানৈক্য অবসান ঘটবে। কিন্তু তাদের ব্যপারে আশাহীন যারা কুরআন সুন্নাহর দলিলকে যথেষ্ট মনে করে না। যাদের হৃদয়ে ব্যধির দরুন সজ্ঞানে কাফিরদের কুফরি আকিদাকে গ্রহন করে এবং সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিকতা দেখা স্বত্ত্বেও সেগুলোকে দ্বীনের সাথে মেশাতে চায়। আল্লাহর কাছে মু'তাযিলা, মুরজিয়া এবং তাদের ন্যায় অন্যান্য পথভ্রষ্ট ফের্কার ফিতনা থেকে পানাহ চাই।



PDF Download link:
https://aadiaat.blogspot.com/2019/08/pdf_2.html

আর্টিকেল সিরিজঃ https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/article-series_19.html

পর্ব ১- সৃষ্টির সূচনা
https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/blog-post_78.html

পর্ব ২- জমিন-আসমানের সৃষ্টি
https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/blog-post_83.html

পর্ব ৩- পৃথিবী
https://aadiaat.blogspot.com/2019/04/blog-post_42.html

পর্ব ৪- যমীনের প্রান্তসীমা
https://aadiaat.blogspot.com/2018/11/blog-post_27.html

পর্ব ৫- পাহাড় ও পর্বত
https://aadiaat.blogspot.com/2019/04/blog-post_72.html

পর্ব ৬- আসমান
https://aadiaat.blogspot.com/2019/04/blog-post_37.html

পর্ব ৭- আসমান-যমীন স্থির
https://aadiaat.blogspot.com/2019/04/blog-post_22.html

পর্ব ৮- চন্দ্র-সূর্য
https://aadiaat.blogspot.com/2019/05/blog-post_0.html

পর্ব ৯- নক্ষত্রমালা ও ছায়াপথ
https://aadiaat.blogspot.com/2019/05/blog-post_30.html

পর্ব ১০- দিবা-রাত্রি
https://aadiaat.blogspot.com/2019/06/blog-post_6.html

পর্ব ১১- মেঘ-বৃষ্টি
https://aadiaat.blogspot.com/2019/07/blog-post_91.html

পর্ব ১২- বির্বতনবাদ
https://aadiaat.blogspot.com/2019/08/blog-post_71.html 

Monday, March 18, 2019

২.ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব

পর্ব-২



মুসলিম উম্মাহ আজ সৃষ্টির সূচনাকে কিভাবে বিশ্বাস করে?! তারা কাফির মুশরিকদের শেখানো কাল্পনিক শয়তানি তত্ত্ব-বিগব্যাং কে গ্রহন করে নিয়েছে। অবস্থাটা এরূপ দাড়িয়েছে যে, বিগব্যাং এর বিকল্প হিসেবে তারা আজ অন্য কিছুকে চিন্তা করতে পারে না। অথচ বিগব্যাং তত্ত্বটির আনুষ্ঠানিক প্রবক্তা একজন ক্যাথলিক পাদ্রী(লেমাইত্রে)।আপনাদেরকে পূর্বে দেখিয়েছি ক্যাথলিকরা কিরূপ রোমান পৌত্তলিকতা দ্বারা আচ্ছন্ন । যাহোক, বিগব্যাং এর গোড়া খুজলে বের দেখা যায় এর মূল উৎস হচ্ছে কাব্বালিস্টিক স্যাটানিক টেক্সট। বিভিন্ন অকাল্ট কমিউনিটিতে এই তত্ত্বটিকে(বিগব্যাং) তাদের প্রাচীন(শয়তানি) জ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বৈদিক দর্শন এবং পিথাগোরিয়ান কুফরি দর্শন গুলোকে যৌক্তিক ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বিগব্যাং অত্যন্ত শক্তিশালী ভিত্তি। ওদের কুফরি দর্শনের পূর্নতা দানের জন্য বিগব্যাং এর পাশাপাশি বিগক্রাঞ্চও আছে। অর্থাৎ একসময় সম্প্রসারনশীল মহাবিশ্ব সংকুচিত হয়ে আসা শুরু করবে। এবং একপর্যায়ে আবারো সেই এক বিন্দুতে চলে আসবে। শেষ যুগের অভিশপ্ত কাফিরদের শয়তানি আকিদাকে বৈজ্ঞানিকভাবে সাইক্লিক্যাল অসোটেলিং ইউনিভার্স থিওরিসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। আমি কুফরি দর্শনগুলো বিস্তারিত এখানে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকছি। এগুলো নিয়ে "The occult origins of mainstream physics and astronomy" ডকুমেন্টারি আর্টিকেল সিরিজে বিস্তারিত নিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ।


আজকে এই বিগব্যাং থিওরিকে অধিকাংশ মুসলিমরা গ্রহন করেছে। অগনিত আলিম এতে বিশ্বাস রাখে। তারা এই শয়তানি তত্ত্বটিকে যথাসম্ভব ইসলামাইজ করে নিয়েছে। আলিম, দাঈরা গর্বের সাথে এই কথাও বলছে ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বিগব্যাং এর কথা কুরআনেই বলে দিয়েছেন! দলিল দিচ্ছে সূরা আয যারিয়াতের ৪৭ নং আয়াত এবং ২১ঃ৩০। মা'আযাল্লাহ!!  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কি এই বিগব্যাং এর দ্বারাই আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন?! বিগব্যাং কস্মিক প্লুরালিজম, স্পেস বা মহাশূন্য,কোটি কোটি গোলাকৃতির গ্রহ, অভিকর্ষ, মহাকর্ষ, ছায়াপথ,নীহারিকার কাল্পনিক অস্তিত্বকে যৌক্তিকভাবে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আল্লাহর বলা সৃষ্টিতত্ত্বটি কি এইরূপ যেটা কাব্বালিস্টিক মেইনস্ট্রিম মহাকাশ বিজ্ঞান থেকে বলা হচ্ছে?
নাকি দুটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারনা!?
এ নিয়েই আজকের পর্ব।

বস্তুত, উভয় বর্ননা সম্পূর্ন ভিন্ন এবং এইরূপ ভিন্নতা যে, যেন তা পরস্পর দুমেরুর। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা ছয়দিনে সাত আসমান ও সাত জমিনকে স্তরে স্তরে নির্মান করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা একদমই তা বলেন নি যা আজকের সায়েন্স নামের অপবিজ্ঞান বলছে। আল্লাহর সৃষ্ট আসমান বিগব্যাং এর ফলে হওয়া ইনফিনিট শূন্য(কথিত স্পেস) নয় বরং একটির উপর আরেকটি সাতটি গম্বুজাকৃতির সলিড স্তর, আদৌ অদৃশ্য বা অস্পৃশ্য নয়। আর জমিন বা পৃথিবী আদৌ মহাশূন্যে ছুটন্ত গোলক নয় বরং জমিন তথা পৃথিবী হচ্ছে একটির উপর আরেকটি(মোট ৭টি) সমতল দ্বীপ সদৃশ জমিন। আমাদের অবস্থান প্রথম জমিনে যার উপর সাতটি মজবুত আসমানের স্তর রয়েছে। আর আমাদের পায়ের নিচের দিকে আরো ছয়টি সমতল (পৃথিবী)জমিন সদৃশ স্তর বিদ্যমান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সর্বপ্রথম পৃথিবীকে সৃষ্টি করেন এরপর সাত আসমান(বিগব্যাং থিওরির বিপরীত)। এটাই কুরআন সুন্নাহ, সাহাবীদের(রাঃ) শিক্ষা। এবং সুনিশ্চিতভাবে এটা আজকের দাজ্জালের অনুসারী বিজ্ঞানী তথা ন্যাচারাল ফিলসফারদের বিপরীত তত্ত্ব। অথচ আজ এই সম্পূর্ন বিপরীত মেরুর অপবিদ্যাকে ইসলামাইজ করে সবার সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত আকিদায় প্রবেশ করানো হয়েছে। কাফিররা চায়, দুনিয়ার সমস্ত লোকেরা ওদের ন্যায় কুফরি আকিদা গ্রহন করুক,সেটা যেভাবেই হোক। এই বিষয়গুলো প্রকাশ করার জন্য আজ অধিকাংশ মুসলিমই আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করছে। সুবহানআল্লাহ!


৬ দিনে সৃষ্টিঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা ৬ দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন।
আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ تَبَارَكَ اللّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক (আরাফঃ৫৪)

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ

আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে বিরাজমান হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?(সিজদাহ ৪)

ছয়দিনে সৃষ্টির বিষয়টি শুধু কুরআনেই নয় তাওরাতেও ছিল। এখনো আছে, কিন্তু ওরা সামান্য পরিবর্তন করেছে। ওরা বলে আল্লাহ ছয়দিনের সৃষ্টির শেষে বিশ্রাম গ্রহন করেন! নাউজুবিল্লাহ!! এই কথা আল্লাহর রাসূল(সাঃ) সামনেও বলেছিল, যা শুনে তিনি প্রচন্ডভাবে রাগান্বিত হন। ওদের বানোয়াট মিথ্যাচারীতা খন্ডন করে নিচের আয়াতটিঃ
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ

আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি (ক্কাফ ৩৮)


هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ السَّمَاء وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

তিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। [হাদীদঃ০৪]

ছয়দিনে সৃষ্টির ব্যপারে আরো দলিলঃ

إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الأَمْرَ مَا مِن شَفِيعٍ إِلاَّ مِن بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمُ اللّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ أَفَلاَ تَذَكَّرُونَ

নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরী করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পাবে না তবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না ?  [ইউনুস ৩]

وَهُوَ الَّذِي خَلَق السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاء لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً وَلَئِن قُلْتَ إِنَّكُم مَّبْعُوثُونَ مِن بَعْدِ الْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِنْ هَـذَا إِلاَّ سِحْرٌ مُّبِينٌ

তিনিই আসমান ও যমীন ছয় দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, "নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!(হুদঃ৭)

الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمَنُ فَاسْأَلْ بِهِ خَبِيرًا

তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃস্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস কর(ফুরকানঃ৫৯)


এই ছয়দিনের সৃষ্টির বর্ননা আদৌ 'বিগব্যাং থিওরি' নয় যেটা আজকের মডারেট মুসলিম থেকে শুরু করে প্রায় সবাই সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করে। বরং এই সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পূর্ন ভিন্ন এবং বিগব্যাং তত্ত্বের বিপরীত। এই কথা আমরা বারবার বলছি। বিগব্যাং তত্ত্বানুযায়ী মহাবিস্ফোরণের দ্বারা ভ্যাকুয়াম মহাশূন্য(যেটাকে আকাশ বলা হয়) সৃষ্টি হয়, এই মহাকাশ সৃষ্টির বিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছর পর বিলিয়ন মিলিয়ন পৃথিবীর মত গোলাকৃতি পাথুরে বা গ্যাসের দলা ঠান্ডা হয়ে গ্রহ নামের কিছু জিনিসের সৃষ্টি হয়, এরকম কোটিকোটি গ্রহের একটি হচ্ছে পৃথিবী। এই অপোজিট অল্টারনেটিভ সৃষ্টিতত্ত্বে আসমান মানে অনন্ত শূন্যস্থান। সলিড কিছু নয়। অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্বানুযায়ী মহাকাশ সর্বপ্রথম একাএকা সৃষ্টি হয় মহাবিস্ফোরণের দ্বারা এরপর বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পর কোটি কোটি সূর্যের মত তারকা এবং এর চারপাশে অস্থিরভাবে ঘুর্নায়মান গ্রহ,উপগ্রহ। সেই সোলার সিস্টেমও দৌড়াচ্ছে,ছায়াপথ হচ্ছে গ্রহনক্ষত্রকে ধারনকারী। সেটাও ছুটে চলছে।

অথচ কুরআনিক কস্মোজেনেসিস একদম ভিন্ন কিছু। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সর্বপ্রথম পৃথিবী সৃষ্টি করেন।এরপর পৃথিবীর পর আসমানকে ছাদ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়। যেমনটা অট্টালিকার ভিত্তি প্রস্তুতের পরে ছাদ নির্মান করা হয়। আল্লাহ বলেনঃ

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيعاً ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।(বাকারাঃ২৯)




নূনঃ
নূন হচ্ছে বিশালাকার মাছ, যার উপর যমীনকে বিস্তৃত করা হয়েছে।
Ibn 'Abbas told all of you by Wasil b. 'Abd al-A'la al-Asadi-Muhammad b. Fudayl-al-A'mash-Abu Zabyan-Ibn 'Abbas: The first thing created by God is the Pen. God then said to it: Write!, whereupon the Pen asked: What shall I write, my lord? God replied: Write what is predestined! He continued. And the Pen proceeded to (write) whatever is predestined and going to be to the Coming of the Hour. God then lifted up the water vapor and split the heavens off from it. Then God created the fish (nun), and the earth was spread out upon its back. The fish became agitated, with the result that the earth was shaken up. It was steadied by means of the mountains, for they indeed proudly (tower) over the
earth.352 

I was told about the same by Wasil-Waki'-al-A'mash-Abu Zabyan-Ibn 'Abbas.

According to Ibn al-Muthanna-Ibn Abi 'Adi-Shu'bah Sulayman (al-A'mash ?)-Abu Zabyan-Ibn 'Abbas: The first (thing) created by God is the Pen. It proceeded to (write) whatever is going to be. (God) then lifted up the water vapor, and the heavens were created from it. Then He created the fish, and the earth was spread out on its back. The fish moved, with the result that the earth was shaken up. It was steadied by means of the mountains, for the mountains indeed proudly (tower) over the earth. So he said, and he recited: "Nun. By the Pen and what they write."353

I was told the same by Tamim b. al-Muntasir-Ishaq (b. Ytzsuf)-Sharik (b.'Abdallah al-Nakha'i)-al-A'mash-Abu Zabyanor Mujahid
[History Of Tabari- Six Days Creation]

এ ব্যপারে আল্লাহই ভাল জানেন।




আসমানের আগে পৃথিবী সৃষ্টির বিষয়টি বিগব্যাং থিওরির মিথ্যাচারীতা এবং আধুনিক মুসলিমদের অপব্যাখ্যাকে  প্রকাশ করে দেয়। মাছের পিঠে যমীন ও আসমানকে রাখার বিষয়টিও অপবিজ্ঞান পরিপন্থী বিষয়। নাসার প্রকাশ করা পৃথিবীর (ভুয়া)ছবি গুলোতে এরকম কিছুই দেখা যায় না,কিন্তু হলিউডের Color of magic ফিল্মের শুরুতে ঠিকই ডিস্ক ওয়ার্ল্ড কচ্ছপের পিঠে দেখানো হয়। আমরা মুসলিমরা আজ এমন, যে স্টিফেন হকিং যখন বলে জগতসমূহ কচ্ছপের পিঠে আছে তখন সেটাকে খুব গভীর জ্ঞানগর্ভের বিষয় বলে মনে করি, অথচ যখন শার'ঈ দলিলে কাফিরদের কথার বিপরীত সত্যকে উল্লেখ দেখি তখন সেটার প্রতি অবিশ্বাসকে মুখে প্রকাশ না করলেও অন্তরে ঠিকই অবিশ্বাসবশত সংশ্লিষ্ট হাদিসটিকে জাল-জঈফ বানাতে সনদ তালাশ শুরু করি। এটাকে তখন কুসংস্কার কিংবা অতিরিক্ত ধর্মীয়গোড়ামিপূর্ন বিশ্বাস বলে মনে করি, কিন্তু ওদিকে হকিং কমিউনিটির ইউনিভার্স অন টার্টেল থিওরিকে শ্রদ্ধার সাথে দেখি। নিঃসন্দেহে এটা অন্তরের রোগসমূহের একটি।

 যারা কাফিরদের বিগব্যাং তত্ত্বকে ইসলামাইজ করেছে,তাদের নিকট প্রশ্ন, বিগব্যাং থিওরিতে কিভাবে পৃথিবীকে মহাশূন্য বা মহাকাশ ছাড়াই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছে(যেহেতু কুরআন-হাদিস এ কথা বলছে), এটা তো বিগব্যাং এর সাথে বৈপরীত্যপূর্ন সাংঘর্ষিক বর্ননা!? তারা এখন কিরূপ অপব্যাখ্যার দ্বারা ইসলাম ও কুফরকে সমন্বয় করবে?!

ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ তার আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বলেনঃ





   প্রথমাবস্থায় আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী কোনরূপ ফাকা স্থান ছিল না। পরস্পর ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। এমনকি আসমান-জমিনকে সাত স্তরেও বিভক্ত করা হয়নি। পরবর্তীতে আসমান ও জমিনকে পৃথক করে, আসমানকে সাত স্তরে বিভক্ত করা হয়। আল্লাহ বলেনঃ

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মিশে(rat'q) ছিল ওতপ্রোতভাবে , অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক(fat'q) করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?

  وَجَعَلْنَا فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ

আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়।

  وَجَعَلْنَا السَّمَاء سَقْفًا مَّحْفُوظًا وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ

আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।

  وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।(আম্বিয়াঃ৩০-৩৩)


অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এর বর্ননা খুবই স্পষ্ট।  আসমান এবং জমিন উভয়ই সলিড অবজেক্ট।  যা সর্বপ্রথম একত্রে মিশে ছিল, পরবর্তীতে আল্লাহ উভয়কে পৃথক করে উভয়ের মাঝে ফাকাস্থান সৃষ্টি করেন। এবং  আসমানকে ফেড়ে সাতটি স্তরে বিভক্ত করে পৃথিবীর ছাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
অতঃপর চাঁদ সূর্য নক্ষত্রমালা এবং দিন রাত্রিকে সৃষ্টি করেন যারা প্রত্যেকের নির্ধারিত ফালাকে আবর্তন করে।

যারা বিবর্তনবাদী শয়তানি বিজ্ঞানকে ইসলামের সাথে মিশ্রিত করছে, তারা কি করে এটা সমন্বয় করছে যে, (প্রচলিত তত্ত্বানুযায়ী) নন সলিড শূন্য আকাশ(ভ্যাকুয়াম)  জমিনের সাথে মিশে ছিল! এবং সেই ফাকা স্থান বা এম্পটি স্পেস আবার আলাদাও করা হল! যারা কুরআন আর অপবিজ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করছে দাওয়ার নামে এরা শুধু অপব্যাখ্যাই করেনি,বরং কুরআনের আয়াত গুলোকে অর্থহীন করে তুলছে। কারন দুইটা ভিন্ন জিনিসকে এক করার চেষ্টা করে খিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছে। আমরা যেরূপে সমস্ত দলিল গুলো একের পর এক প্রকাশ করছি, এরূপ করে যদি কুফর-ঈমানের মাঝে অবস্থানকারী মুসলিমরা অপব্যাখ্যা আর গোঁজামিল দিয়ে আধুনিক অপবিজ্ঞানকে সমন্বয় করতে চেষ্টা করত, তাহলে ওদের ভাঁওতাবাজি সহজেই প্রকাশ পেত। কিন্তু ওরা এটা কখনোই করবে না, বরং বিচ্ছিন্নভাবে আয়াত গুলোকে নিজের মত অনুবাদ করে অপব্যাখ্যা করবে।
আফসোসের বিষয় হচ্ছে, যে আয়াত(২১:৩০) বিগব্যাং এর ভুয়া তত্ত্ব থেকে আল্লাহর সৃষ্টির পবিত্রতা ঘোষনা করে, সেই আয়াতকেই ওরা বিগব্যাং কে সত্যায়নের দলিল হিসেবে ব্যবহার করে। ইন্না লিল্লাহ। এজন্য যারা কুরআন হাদিসে বর্নিত কস্মোলজির সম্পর্কে জ্ঞানহীন তারা অপব্যাখ্যাকেই সত্য বলে ভাবতে শুরু করে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আসমান জমিনকে ঘোরাঘুরি বা আবর্তন উপযোগী করে সৃষ্টি করেন নি। বরং আসমান জমিন স্থির(এ ব্যপারে সামনে শরী'আতের আরো মজবুত দলিলের সম্মুখীন হব,বিইযনিল্লাহ) । আল্লাহ আসমানকে আমাদের উপরে গম্বুজাকৃতির ছাদ এবং জমিনকে বিছানার ন্যায় বিছিয়েছেন। পাহাড়কে স্থাপন করেছেন কীলকরূপে সমতল জমিন স্থির রাখার জন্য যাতে তা এদিক ওদিক কাত হয়। বড় আফসোসের বিষয় হচ্ছে কুরআন সুন্নাহর বিকৃত ব্যাখ্যাকারীরা সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতকে ব্যবহার করে স্থির জমিনকে ঘূর্নয়মান চলমান প্রমানের জন্য। কারন তাদের নীতি অনুযায়ী, কাফিরদের প্রচলিত এ বিজ্ঞান অনুযায়ী দ্বীনকে খাপ খাওয়াতে হবে। তারা "সবাই" শব্দের ভেতর জমিনকেও অন্তর্ভুক্ত করে, অথচ স্পষ্টভাবে দেখছেন আল্লাহ এই "সবাই" বলতে দিন-রাত্রি, চন্দ্র-সূর্য এ চারটি জিনিসের কথা বলেছেন।

এবার আসুন, সূরা আম্বিয়ার এ আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির(রঃ),প্রাচীন আলিম,মুফাসসীরিন এবং সাহাবীরা(রাযি.) কি বলছেন সেটা দেখি- 




আশা করি এবার স্পষ্ট হয়েছে। সাহাবা(রাঃ), মুফাসসিরীন সবাই আসমান জমিনের ব্যপারে সেই অভিন্ন সত্য কথা বলছেন, যার বর্ননা আমরা করছি। মহাবিস্ফোরণের ন্যায় কিছুই ঘটে নি, যা কাফিররা বিশ্বাস করতে বলে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সবই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। সর্বপ্রথম আসমান ও জমিন একত্রিত ছিল। সাহাবীদের বর্ননানুযায়ী উভয়ই বস্তু একে অপরের সাথে সংযুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা পৃথক করে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী ফাকাস্থান তৈরি করলেন।আসমানকে ফেড়ে সাত স্তরে বিভক্ত করলেন।

প্রথম আসমান থেকে জমিনের ফাকা স্থানটি ৫০০ বছরের পথের সমান দীর্ঘ। আল্লাহ আসমান ফেড়েঁ বর্ষন করলেন। বিষয়টি আলজেরীয় এক ভাই গ্রাফিক্যালি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। দেখুনঃ
https://youtu.be/RvTxxRwxQX0

 আজকের বিজ্ঞান বলে আসমান বলতে অন্তহীন 'শূন্য' অথচ আল্লাহ আসমান জমিনের মধ্যকার শূন্যস্থান সৃষ্টি করেছেন। আসমান যদি সত্যিই শূন্যস্থান হত তাহলে সাহাবীরা(রাঃ), প্রাচীন মুফাসসিরীন কখনোই আসমান জমিন পৃথক করে মাঝে শূন্যস্থান নির্মানের কথা বলতেন না। আসমানকে পৃথক করার প্রশ্নও আসতো না, কারন যেহেতু আসমান মানেই শূন্য। শূন্যতা বা ফাকাস্থানকে জমিন থেকে পৃথক করে আবারও ফাকাস্থান তৈরির চিন্তা একদমই অর্থহীন। তাফসিরেও একই কথা যে, পর্বতের দ্বারা যমীনকে স্থির করা হয়েছে। আসমানকে তাবু বা বেনার ন্যায় স্তম্ভ ছাড়াই স্থির রাখা হয়েছে। আসমান হচ্ছে তরঙ্গায়িত সুউচ্চ ছাদ যা আমাদের জন্য বন্ধ(যদিও থিয়েটারে/কম্পিউটারে বানানো চাদে মঙ্গলে যাওয়ার ভিডিও মানুষ সত্য বলে বিশ্বাস করে)। আর আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত ৪ টি জিনিস ছাড়া অন্যকিছুকে আবর্তনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

পৃথিবীকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং এর পরবর্তীতে আসমানকে সপ্তস্তরে বিভক্তকরনের দলিল হিসেবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ

قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَندَادًا ذَلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ
বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।

  وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِن فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاء لِّلسَّائِلِينَ
তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে।

  ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।

  فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَى فِي كُلِّ سَمَاء أَمْرَهَا وَزَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা [হা মীম সেজদাহঃ৯-১২]


এ আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসিরের(রহঃ) তাফসীরে এসেছেঃ






সুতরাং,এটা স্পষ্ট যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সর্বপ্রথম ২ দিনে জমিনকে(পৃথিবীকে) সৃষ্টি করেন। পরের দুইদিন আসমানকে সপ্তস্তরে সজ্জিত করেন। এরপর আরো দুইদিনে জমিনকে বিছানার ন্যায় সমতলে বিস্তৃত করেন, বসবাস উপযোগী করেন, পানি,গাছপালা, পর্বত স্থাপন করেন। নিকটতম (১ম)আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সুসজ্জিত করেন। এরমানে তারকারাজি প্রথম নিকটতম আসমানেই রয়েছে। কিন্তু বিবর্তনবাদী অপবিজ্ঞান আমাদের শোনায়, এই তারকারা সর্বত্র আর এরা সূর্যের মত আলো দান কারী। তারকা-চন্দ্র-সূর্য নিয়ে সামনে বিস্তারিত আসছে। ইবনে আব্বাস(রাঃ) এর কাছে আগত ব্যক্তির প্রশ্ন(আসমান আগে নাকি জমিন আগে) টি অবশ্যই ভাল করে পাঠ করেছেন। তার সাথে শতভাগ ঐক্যমত পোষন করি। আর তিনি যা বর্ননা করেছেন, তা সুস্পষ্টভাবে মেইনস্ট্রিম কস্মোলজিকে ভ্রান্ত প্রমান করে। উমার(রাঃ) সত্য বলেছেন, ইবনে আব্বাস(রাঃ) এর কুরআনের জ্ঞানই সর্বাধিক। বর্তমানে সাহাবিদের(রাঃ) ব্যাখ্যার বিপরীতে যে যাই বলুক সবই ভ্রান্ত এবং বর্জনীয়। 

ইবনু আব্বাস(রাঃ) যে ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন, তার নির্ভুলতার দলিল মেলে নিন্মোক্ত আয়াতেঃ

أَأَنتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاء بَنَاهَا
তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? 

 رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا
তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন।

  وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا
তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন।

  وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। 

 أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءهَا وَمَرْعَاهَا
তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন,

  وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا
পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন   [আন নাযিয়াতঃ ২৭-৩২]


অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা যমীনকে বিস্তৃতকরন বা সমতলায়নের কাজটি আসমানকে সপ্তস্তরে বিন্যাস্ত করবার পর করেন। আফসোসের বিষয় যে আয়াত দ্বারা রহমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা জমিনকে বিস্তৃত ও সমতলভাবে বিছানোর কথা বলেন, কাফিরদের মতাদর্শের সাথে মিল রাখার জন্য এই আয়াতকেই আজকের মুসলিমরা ব্যবহার করে। তারা কাল্পনিক "গোলাকার" পৃথিবীর দলিলরূপে আন নাযিয়াতের ৩০ নং আয়াতকে ব্যবহার করে। তারা دَحَاهَا শব্দটিকে অপব্যাখ্যা করে বলে পৃথিবী উটপাখির ডিমের ন্যায়। তারা এই ডিম্বতত্ত্বটি গ্রহন করে রাশাদ খলিফা নামের নবী দাবিকারী মুর্তাদের থেকে। এর চেয়ে নিকৃষ্ট কাজ আর কি হতে পারে!


 দাহাহা শব্দটির অর্থ বিস্তৃত করা। দাহাহা শব্দটির দূরবর্তী শব্দের অর্থটিকেও যদি গ্রহন করা হয় তবে এর দ্বারা বোঝায় উটপাখি ডিমপাড়ার জন্য অসমতল ভূমি পা দিয়ে আঁচড়ে যেভাবে বিস্তৃত করে ঐরূপ। এর সাথে ডিমের কোন সম্পর্ক নেই। উটপাখির এই কাজটিকেও যদি আয়াতের অর্থের সাথে সংযোগ করা হয়, তবে অর্থ দাঁড়ায় পৃথিবী বিস্তৃত সমতল!


ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহর তার তাফসিরে বলেনঃ




অর্থাৎ তিনি জমিনকে বিস্তৃত করেন এবং পর্বত স্থাপনের দ্বারা স্থির ও নিশ্চল করেন। আল্লাহ আসমানকে সপ্তস্তরে বিন্যাস্ত করেন এবং নিকটতম আসমানের গায়ে নক্ষত্রদের বসিয়ে দেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা জমিনের ন্যায় আসমানকেও স্থির রাখেন এবং সেটা ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَيُمْسِكُ السَّمَاء أَن تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوفٌ رَّحِيمٌ

তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্টে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।(হাজ্জ্ব ৬৫)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা গম্বুজাকৃতির সমুন্নত ছাদকে স্বীয় অনুগ্রহে স্থির রাখেন, এবং যমীনের উপর পতন রোধ করেন। আশা করি, পাঠকদের আর কোন সন্দেহ নাই, আসমানের ব্যপারে। এই আয়াতটি আবারো বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত মিথ্যা কস্মোলজিকে মিথ্যা প্রমান করে। এই আসমান মানে মহাশূন্য নয়। মহাশূন্য বলে বস্তুত কিছুই নেই। সবই কল্পনা।  আসমান বলতে এটাই যেটা আমরা আমরা উর্ধ্বলোকে দেখতে পাই । যমীন বলতে এই আমাদের সমতলে বিছানো যমীনই, এর বাহিরে কিছু নেই। গ্রহ বলতে কল্পনা ব্যতিত কিছুই নেই।

আসমানি ছাদ যদি আল্লাহর ইচ্ছায় পতিত হয় তবে তা এই ভূপৃষ্ঠেই পড়বে। সৃষ্টির শুরুতে এটা মাটির সাথে লেগে ছিল, পরবর্তীকালে আসমানকে উর্ধ্বে স্তম্ভব্যতিত দ্বার করানোর দ্বারা মধ্যবর্তী ফাকাস্থান তৈরি করা হয়, যার ভেতর আমরা আছি। ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ

আজকের পর্বের দ্বারা সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে সম্পূর্নভাবে প্রকাশ হয়েছে। সেই সাথে স্পষ্ট হয়েছে যাবতীয় অপব্যাখ্যা এবং অপবিজ্ঞানের বিষয়গুলো। প্রকৃত সত্য এটাই যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আমাদেরকে জানিয়েছেন তার পবিত্র কালামের দ্বারা এবং যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা সাহাবীদের থেকে পাওয়া গেছে। প্রাচীন যুগের প্রকৃত জ্ঞানী আলিমগন সাহাবিদের থেকে ভিন্ন মনগড়া তাফসিরে যান নি,যেমনটা এ যুগের আলিমদের পাওয়া যায়। গ্রীক দর্শন আরবে প্রবেশের পরবর্তী সময় থেকে সব বদলে যেতে শুরু করে। যারা কুফরি দর্শনের ব্যপারে লেখালিখি করেছেন, তাদেরও অনেকে সৃষ্টিতত্ত্বে এসে গ্রীকচিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। আলিমদের মধ্যে যে বা যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে সেসব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন তাদের প্রতি আমরা বিদ্বেষ পোষন করিনা। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেসীয়ান-পিথাগোরিয়ান কস্মোলজিকে গ্রহন করেছেন তাদের ব্যপারেও সুধারনা রাখার চেষ্টা করি, আমরা মনে করি তারা নেহাৎ নিরুপায় হয়ে এমনটা করেছেন, কেননা বিজ্ঞানকেন্দ্রিক ফিতনাহ ওই যুগ থেকেই শুরু। অপবিদ্যার আগমনে, হক্ক জ্ঞানকে পিছনে ঠেলে দেওয়া শুরু হয়, ভ্রান্ত-কুসংস্কারাচ্ছন্ন তত্ত্বের নাম দিয়ে। হতে পারে সমকালীন আলিম সম্প্রদায় তখন থেকেই নিরুপায় হয়ে ইল্মুল কালাম অনুযায়ী যুক্তিসিদ্ধতার দিকে লক্ষ্য রেখে জিনিস গুলোকে গ্রহন এবং ইসলামিকীকরনের চেষ্টা করেছেন। গত পর্বেই দেখেছেন, ইবনু কাসির(রহঃ) জ্যোতির্বিদদের কথা ইসলামের দলিল দ্বারা খন্ডন করেছেন, হয়ত আলিমদের একটা দল এভাবে খন্ডন করে টিকতে পারেন নি বরং ইসলামের সাথে সমন্বয়ের দিকে গিয়েছেন। অথবা নেহাৎ অন্তরের ব্যাধির দরন কাফিরদের মিথ্যা ইল্ম তাদের নিকট সুশোভিত মনে হয়েছে এবং গ্রহন করেছেন। এটা আজকের যামানায় খুব সাধারন দৃশ্য। যারা এরূপ করছে, তাদেরকে দেখবেন, এ সমস্ত দলিল সমূহ তাদের সামনে পেশ করা হলে এসব বর্ননা সহীহ কিনা তা যাচাইয়ের দিকে যাবে, কারন তারা অন্তর থেকে এগুলো মানে না। এরা তাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক নিঃসৃত যুক্তি দ্বারা সব কিছু বুঝতে চায় এবং মানতে চায়। অথচ মূল দলিল গুলো কুরআনেই আছে। তারা এসবকে রূপক বর্ননা বলে এড়িয়ে যায়, পাশে যুক্তিনির্ভর দূরবর্তী অপব্যাখ্যার বিদ্যা এদের ভালই জানা আছে।


ওয়াআল্লাহু আ'লাম।

বিগত পর্বগুলোঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/article-series_85.html

[চলবে ইনশাআল্লাহ ]

Thursday, March 14, 2019

১.ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব

সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বকে বর্জন করা হয়েছে। গ্রহন করা হয়েছে যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শন উৎসারিত মিথ্যা সৃষ্টিতত্ত্ব। মুসলিম আলিমগন এসব গ্রহন করে নিয়েছেন। সেই সাথে ইসলামাইজ করা হয়েছে। এই বিকৃতির শুরু যেদিন থেকে গ্রীক দর্শন আরবে প্রবেশ করে, সেদিন থেকে। ওই যুগের আলিমগনও সেসব দ্বারা ধীরে ধীরে প্রভাবিত হতে শুরু করেন। একপর্যায়ে এখন আর অধিকাংশ মুসলিম সৃষ্টিতত্ত্বসংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবীদের(রাঃ) আকিদা রাখে না। বরং এমন কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং ইসলামের সাথে মিশ্রন ঘটিয়েছে যার উৎস শয়তান এবং যাদুবিদ্যার কুফরি শাস্ত্র। তারা 'প্রাকৃতিক দর্শন'কে গ্রহন করে কুরআন সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে, সেসবকে দ্বীনের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। তারা কুফর ও শিরকে ভরা বানোয়াট আকিদা গুলোর প্রচার করার সময় গ্রহনযোগ্য করবার জন্য কুরআনের পবিত্র আয়াতগুলোকে ব্যবহার করছে এই বলে যে "কুরআনে ১৪০০ বছর আগে অমুক অমুক বিষয় গুলো বলেছে", যা অপবিজ্ঞানী, দার্শনিকরা বলছে! নাউজুবিল্লাহ!! এভাবে সুস্পষ্ট বৈপরীত্যপূর্ন কুফরকে কুরআন এর দলিল দ্বারা সত্যায়ন এবং বিপরীত দিক দিয়ে, কুরআনের বর্ননার সাথে ওই সব শয়তানি আকিদার মেলবন্ধনের অপচেষ্টা চলছে।

অথচ বর্তমান অপবিজ্ঞানী,প্রাচীন যাদুকররা যা বলে তা তাদের অনুমান এবং শয়তানের বক্তব্য ছাড়া কিছুই নয়। ওদের কথা বাস্তব জগতের সাথেও কোনরূপ সাদৃশ্যতা রাখে না। বাস্তব জগতে বরং সেটাকেই সত্যরূপে দেখা যায়, যা রহমান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনে এবং সাহাবিদের(রাঃ) বর্ননাগুলোয় পাওয়া যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপবিদ্যার ধারক এবং শয়তানের আউলিয়ারা ১% সত্যের সাথে অনুমান নির্ভর ৯৯% কুফরি দর্শন মিশ্রিত করে প্রচার করে, মূর্খরা এতেই ফাঁদে পড়ে। তারা শয়তানের এবং তার অনুসারীদের অনুসরন করতে শুরু করে।

আজকের সময়ে হাজারো ফিতনার মধ্যে সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত আকিদাগত ভ্রষ্টতার ফিতনায় উম্মাহ নিমজ্জিত। এজন্য সত্য মিথ্যাকে স্পষ্ট করতে এবং সতর্ক করতে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর দলিলভিত্তিক ধারাবাহিক আর্টিকেল প্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। আমি এখানে নিজস্ব কোন নবউদ্ভাবিত আকিদা বা চিন্তাধারাকে উপস্থাপন করছি না, বরং এটা কুরআন সুন্নাহর দালিলিক সুবিশাল সংকলন বৈ আর কিছু নয়। এটা ১৪০০ বছর আগের সাহাবীদের সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে আকিদা,জ্ঞানকেই পুনরুজ্জীবন করার প্রয়াস মাত্র। এ লক্ষ্যে cosmogony এর ব্যপারে আসা কুরআন,অজস্র সহীহ ও দুর্বল হাদিস এবং প্রাচীন সুপ্রসিদ্ধ আলিমদের মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাফসীর নিয়ে আসা হবে, ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাছে কাফির মুশরিকদের মনগড়া এবং যাদুশাস্ত্র নির্ভর কুফরি বিশ্বাসের চেয়ে 'প্রাচীন বরেন্য আলিম ও সাহাবীদের(রাঃ)  দ্বারা গৃহীত' কুরআন সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসরাইলীয় বর্ননাও শত সহস্রগুন উত্তম।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া
কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বর্তমান সময়ে বিচিত্র অপব্যাখ্যার চিত্রও তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার কাছে এ ব্যপারে সাহায্য চাই এবং ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আশাকরি এসমস্ত বিষয়ে চলমান বিতর্ক মতানৈক্য অবসান ঘটবে। কিন্তু তাদের ব্যপারে আশাহীন যারা কুরআন সুন্নাহর দলিলকে যথেষ্ট মনে করে না। যাদের হৃদয়ে ব্যধির দরুন সজ্ঞানে কাফিরদের কুফরি আকিদাকে গ্রহন করে এবং সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিকতা দেখা স্বত্ত্বেও সেগুলোকে দ্বীনের সাথে মেশাতে চায়। আল্লাহর কাছে মু'তাযিলা, মুরজিয়া এবং তাদের ন্যায় অন্যান্য পথভ্রষ্ট ফের্কার ফিতনা থেকে পানাহ চাই।



পর্ব -১



১.সৃষ্টি জগতের সূচনাঃ
আলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্ট জিনিসের ব্যপারে মতানৈক্য রয়েছে। প্রথম সৃষ্টি পানি,আরশ,কলম,আলো আধার প্রভৃতির কোনটি সেটা আল্লাহই ভাল জানেন।

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবী উবাদাহ বিন সামেতের ছেলে ওয়ালীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মৃত্যুর সময় আপনার আব্বার অসিয়ত কী ছিল?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমাকে আমার আব্বা ডেকে বললেন, বেটা! তুমি আল্লাহকে ভয় কর। আর জেনে রেখো, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর ভয় রাখতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতি এবং তকদীরের ভালো-মন্দ সব কিছুর প্রতি ঈমান এনেছ। এ ঈমান ছাড়া মারা গেলে তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। অতঃপর তাকে বলেন, ‘লিখো’। কলম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি কী লিখব?’ তিনি বললেন, ‘তকদীর এবং অনন্তকাল ধরে যা ঘটবে তা লিখো।’ (আহমাদ ২৩০৮১, তিরমিযী ২১৫৫, ৩৩১৯নং)

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১১৬

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com



সৃষ্টির প্রথমে কি ছিল এরূপ ভাবতে থাকলে শয়তান অনেকের ক্ষেত্রে এরূপ প্রশ্ন তৈরি করে, যেমনঃ "আল্লাহর পূর্বে কি ছিল"।
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ)তিনি বলেন,
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ صَبَّاحٍ، حَدَّثَنَا شَبَابَةُ، حَدَّثَنَا وَرْقَاءُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لَنْ يَبْرَحَ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يَقُولُوا هَذَا اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَىْءٍ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ ‏"‏‏.‏

 রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা একে অপরকে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, এ আল্লাহ সব কিছুরই স্রষ্টা, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করল?[মুসলিম ১/৬০, হাঃ ১৩৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৮)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২৯৬

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، - وَاللَّفْظُ لِهَارُونَ - قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ يَزَالُ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يُقَالَ هَذَا خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَلْيَقُلْ آمَنْتُ بِاللَّهِ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মানুষের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয় যে, এ সৃষ্টিজগত তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে? রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যার অন্তরে এমন প্রশ্নের উদয় হয় সে যেন বলে, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি’। [৪৭] (ই.ফা. ২৪৩; ই.সে. ২৫১)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪১

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com



আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
একদা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! মানুষ তোমাকে প্রশ্ন করতে থাকবে। এমন কি এ প্রশ্নও করবে, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন; তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, পরবর্তীকালে একদিন আমি মাসজিদে (নাবাবীতে) উপস্থিত ছিলাম। এমন সময়ে কতিপয় বেদুঈন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, হে আবূ হুরায়রা! এ তো আল্লাহ তা’আলা। তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) হাতে কিছু কংকর নিয়ে তাদের প্রতি তা নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, আমার বন্ধু (রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) সত্য কথাই বলে গেছেন। (ই.ফা. ২৪৮; ই.সে. ২৫৭)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪৬

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَامِرِ بْنِ زُرَارَةَ الْحَضْرَمِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ مُخْتَارِ بْنِ فُلْفُلٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِنَّ أُمَّتَكَ لاَ يَزَالُونَ يَقُولُونَ مَا كَذَا مَا كَذَا حَتَّى يَقُولُوا هَذَا اللَّهُ خَلَقَ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ ‏"‏ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আপনার উম্মাত সর্বদা এটা কে সৃষ্টি করল। এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকবে। এমনকি এ প্রশ্নও করবে যে, সকল সৃষ্টিই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তা হলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে? (ই.ফা. ২৫০; ই.সে. ২৫৯)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪৮

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com




وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ ﷺ قَالَ : «لَا يَزَالُ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتّى يُقَالَ هذَا خَلَقَ اللّهُ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللهَ؟ فَإِذَا قَالُوا ذلِكَ فَقُولُوا اللّهُ أَحَدٌ اللّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَه كُفُوًا أَحَدٌ ثُمَّ لْيَتْفُلْ عَنْ يَسَارِه ثَلَاثًا وَلْيَسْتَعِذْ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ». رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَسَنَذْكُرُ حَدِيْثَ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ فِيْ بَابِ خُطْبَةِ يَوْمِ النَّحْرِ إِنْ شَآءَ اللهُ تَعَالى

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মানুষেরা তো (প্রথম সৃষ্টি জগত ইত্যাদি সম্পর্কে) পরস্পরের প্রতি প্রশ্ন করতে থাকবে, এমনটি সর্বশেষে এ প্রশ্নও করবে, সমস্ত মাখলূক্বাতকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন তারা এ প্রশ্ন উত্থাপন করে তখন তোমরা বলবে : আল্লাহ এক, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি আর কেউ তাকে জন্ম দেননি। তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই। অতঃপর (শাইত্বনের উদ্দেশে) তিনবার নিজের বাম দিকে থু থু ফেলবে এবং বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাবে। [১] (মিশকাতের লেখক বলেন) ‘উমার ইবনু আহ্‌ওয়াস-এর হাদীস ‘খুতবাতু ইয়াওমিন্‌ নাহ্‌র’ অধ্যায়ে বর্ণনা করবে ইন্‌শাআল্লাহ তা’আলা।

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৭৫

হাদিসের মান: হাসান হাদিস


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জন্ম মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন মাখলুকের জন্য। তিনি জীবন মৃত্যুর ধারনারও সৃষ্টিকর্তা। তিনি নিজে জন্ম মৃত্যু থেকে পবিত্র। তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি এবং কাউকে জন্ম দেননি। এসব তার মাখলুকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ এসব ধারনা থেকেও পবিত্র।
আল্লাহ বলেনঃ
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ

যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়(সূরা মুলক-০২)



لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি [সূরা ইখলাস ৩]


সুতরাং এরূপ প্রশ্ন একদমই অবান্তর। অনেক যিন্দিক এরূপ প্রশ্নও করে 'সব কিছুর শুরু থাকে আল্লাহর পূর্বে কি ছিল? '। এই প্রশ্নটিতে 'পূর্বে' বা 'আগে' শব্দটি সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট।

ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﺆﺫﻳﻨﻲ ﺍﺑﻦ ﺍۤﺩﻡ ﻳﺴﺐ ﺍﻟﺪﻫﺮ ﻭﺃﻧﺎ ﺍﻟﺪﻫﺮ ﺑﻴﺪﻱ ﺍﻷﻣﺮ ﺃﻗﻠﺐ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﺭ . ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আদাম সন্তান আমাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তারা যুগ বা কালকে গালি দেয়, অথচ আমিই দাহ'র অর্থাৎ যুগ বা কাল। আমার হাতেই (কালের পরিবর্তনের) ক্ষমতা। দিন-রাত্রির পরিবর্তন আমিই করে থাকি। [১]
ফুটনোটঃ
[১] সহীহ : বুখারী ৪৮২৬, মুসলিম ২২৪৬, আবূ দাঊদ ৫২৭৪, আহমাদ ৭২৪৫, সহীহাহ্ ৫৩১, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৪৩।
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

এই হাদিসের মানে এই নয় যে, আল্লাহই সময়। বরং
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সময়ের সৃষ্টিকর্তা। তার হাতেই এর নিয়ন্ত্রন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনের বহু আয়াতে তার সৃষ্ট মাখলুকের শপথ করেছেন। কিন্তু মাখলুকের জন্য আল্লাহ ব্যতিত কারো নামে শপথ শিরক। আল্লাহ বলেনঃ
وَالْعَصْرِ
কসম যুগের (সময়ের),[আসর-১]

অতএব, সময়ের নিয়ন্ত্রন ও সৃষ্টি আল্লাহরই। আল্লাহ সময়ের যেকোন সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। যেখানে আল্লাহই সময়ের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক সেখানে আল্লাহর সত্ত্বার ব্যপারে সময়কেন্দ্রিক প্রশ্ন নিতান্তই মূর্খলোকের কাজ ছাড়া কিছু নয়। এজন্য কাফির, যিন্দিক, মুশরিকরা মূলত নির্বোধ, যদিও তারা নিজেদের মহাজ্ঞানী মনে করে।
আল্লাহ বলেনঃ
لَأَنتُمْ أَشَدُّ رَهْبَةً فِي صُدُورِهِم مِّنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ
13
নিশ্চয় তোমরা তাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা অধিকতর ভয়াবহ। এটা এ কারণে যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।[সূরা হাশর ১৩]


দেখুনঃ
https://islamqa.info/en/answers/9571/what-is-the-meaning-of-the-hadeeth-do-not-inveigh-against-time-waqt-for-allaah-is-time-waqt


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার অস্তিত্বের ব্যপারে পাঠের সময় শয়তান অনেকের মনে আল্লাহর আকৃতি কিরূপ এ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। মানুষ তার সীমাবদ্ধ চিন্তাচেতনার দ্বারা আল্লাহকে কল্পনা করতে চেষ্টা করে। আর মানুষের কল্পনার সীমাবদ্ধতায় আল্লাহকে ফেলা অনেক বড় রকমের গোমরাহি। এ নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিতর্ক আছে, আল্লাহর সাকার বা নৈরাকার নিয়ে। চরম জাহেরী ও বাতেনিপন্থী দুই দল আল্লাহর আকার এবং নিরাকার কট্টরভাবে সাব্যস্ত করে। যেমনটা মুশাব্বিহা,সুফিদের মধ্যে দেখা যায়। আল্লাহর হাত,চক্ষু, পায়ের ব্যপারে অনেক গুলো আয়াতে এসেছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকিদা হচ্ছে সেসবকে শুধুই পড়ে যাওয়া। সাহাবিদের(রাঃ) কেউই এসবের কোন রূপ জাহেরি বা বাতেনি ব্যাখ্যা করেননি। কোনরূপ মনগড়া ব্যাখ্যা করাই বিদআত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা হাত,চক্ষু,পা প্রভৃতির ব্যপারে যা বলেছেন তাতে আমরা বিশ্বাস করি, এবং এর সাথে কোন কিছুর সাদৃশ্যতা যোগ করিনা। আল্লাহ, মানুষের যেকোন ধরনের কাল্পনিক সীমাবদ্ধতা থেকে পবিত্র। আল্লাহর সাদৃশ্য সৃষ্টির কোন কিছুই নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন,

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
(ইখলাস-০৪)


কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন(শূরা  ১১)


 ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য স্থির করো না’ (নাহল ১৬/৭৪)


আল্লাহর সত্ত্বাগত বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা গবেষণা নিষিদ্ধ। এটা শয়তানকে বিভ্রান্ত করতে সুযোগ দেয়।
Ibn Abbas reported: The Messenger of Allah, peace and blessings be upon him, said, “Reflect deeply upon the creation, but do not reflect upon the essence of the Creator. Verily, his essence cannot be known other than to believe in it.”
Source: Musnad al-Rabī’ 742

"একদা নবী কারীম (সা.) সাহাবাদের চুপচাপ বসে থাকা একটি দলের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছ? তারা বললেন, আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে চিন্তা করছি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা কর; কিন্তু তার সত্তা সম্বন্ধে চিন্তা করো না। যেহেতু তিনি ধারণার অতীত[তাফসীর ইবনে কাসির]।"
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের বাহ্যিক ও কাল্পনিক সকল দৃষ্টির উর্ধ্বে। সকল প্রকার কল্পনা থেকে পবিত্র। আল্লাহ বলেনঃ

لاَّ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ(আনআম ১০৩)

আজ কাফিররা অনেক রকম কাল্পনিক ফিলসফি তৈরি করে নিয়েছে। সেখানে তারা আল্লাহর ব্যপারে বিচিত্র কথা বলে। এমনকি বিশ্বজগতকেও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করে, এমনকি প্রকৃতিকেও সৃষ্টিকর্তা সাব্যস্ত করে(ন্যাচারালিজম/প্যান্থেইজম/ননডুয়ালিজম)।ব্যবিলনিয়ান শয়তানি প্রকৃতি পূজার শিরকি যে আকিদা(monism/gnostic non Dualism/pantheism) ইবনে আরাবি, মানসুর হাল্লাজ প্রমুখ ইসলামের মধ্যে সঞ্চালিত করেছে, এবং সুফি/পীরদের মাঝে (ওয়াহদাতুল উজুদ,হুলুল ওয়াল ইত্তেহাদ- ইউনিটি অব এক্সিস্টেন্স/ননডুয়ালিজম বা মনিজম বা প্যান্থেইজম) এখনো মওজুদ আছে, তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। সালাফের মধ্যে এ আকিদা ছিল না। বরং, এ আকিদার গোড়া তালাশ করলে বাবেল শহর ও এর আশপাশের মালাউন যাদুকর এবং শয়তানদের মিলবে। এটা তো সেই শয়তানের গড়া বিকল্প  মেটাফিজিক্স, যা সম্পূর্নভাবে আল্লাহ ও তার রাসূলের শিক্ষার বিপরীত। এসব কুফরি আকিদাধারীরা আল্লাহর ব্যপারে মনগড়া যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।
আল্লাহ বলেনঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র[হাশরঃ২৩]


সেই সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ যতকিছুর খরচ করেছেন,এতে তার ভান্ডার থেকে কোন কিছুই কমে নি।

حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ يَدُ اللَّهِ مَلأَى لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ، سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ـ وَقَالَ ـ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ ـ وَقَالَ ـ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ ‏"‏‏.‏

আবু হুরায়রাহ (রাঃ)
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র হাত পূর্ণ, রাতদিন খরচ করলেও তাতে কমতি আসে না। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমরা কি দেখেছ? আসমান যমীন সৃষ্টি করার পর থেকে তিনি যে কত খরচ করেছেন, তা সত্ত্বেও তাঁর হাতে যা আছে, তাতে এতটুকু কমেনি। এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তখন তাঁর আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর অন্য হাতে আছে দাঁড়িপাল্লা, যা কখনও তিনি নিচে নামান আবার কখনও উপরে উঠান। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৭)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৪১১

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


আরশ-কুরসি-লাওহে মাহফূজঃ


حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى بْنُ حَمَّادٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَمُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الرِّبَاطِيُّ، قَالُوا حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، - قَالَ أَحْمَدُ كَتَبْنَاهُ مِنْ نُسْخَتِهِ وَهَذَا لَفْظُهُ - قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْحَاقَ يُحَدِّثُ عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ عُتْبَةَ عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ جُهِدَتِ الأَنْفُسُ وَضَاعَتِ الْعِيَالُ وَنُهِكَتِ الأَمْوَالُ وَهَلَكَتِ الأَنْعَامُ فَاسْتَسْقِ اللَّهَ لَنَا فَإِنَّا نَسْتَشْفِعُ بِكَ عَلَى اللَّهِ وَنَسْتَشْفِعُ بِاللَّهِ عَلَيْكَ ‏.‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ وَيْحَكَ أَتَدْرِي مَا تَقُولُ ‏"‏ وَسَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا زَالَ يُسَبِّحُ حَتَّى عُرِفَ ذَلِكَ فِي وُجُوهِ أَصْحَابِهِ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ وَيْحَكَ إِنَّهُ لاَ يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ مِنْ خَلْقِهِ شَأْنُ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ وَيْحَكَ أَتَدْرِي مَا اللَّهُ إِنَّ عَرْشَهُ عَلَى سَمَوَاتِهِ لَهَكَذَا ‏"‏ ‏.‏ وَقَالَ بِأَصَابِعِهِ مِثْلَ الْقُبَّةِ عَلَيْهِ ‏"‏ وَإِنَّهُ لَيَئِطُّ بِهِ أَطِيطَ الرَّحْلِ بِالرَّاكِبِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ بَشَّارٍ فِي حَدِيثِهِ ‏"‏ إِنَّ اللَّهَ فَوْقَ عَرْشِهِ وَعَرْشُهُ فَوْقَ سَمَوَاتِهِ ‏"‏ ‏.‏ وَسَاقَ الْحَدِيثَ وَقَالَ عَبْدُ الأَعْلَى وَابْنُ الْمُثَنَّى وَابْنُ بَشَّارٍ عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ عُتْبَةَ وَجُبَيْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَالْحَدِيثُ بِإِسْنَادِ أَحْمَدَ بْنِ سَعِيدٍ هُوَ الصَّحِيحُ وَافَقَهُ عَلَيْهِ جَمَاعَةٌ مِنْهُمْ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَعَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ وَرَوَاهُ جَمَاعَةٌ عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ كَمَا قَالَ أَحْمَدُ أَيْضًا وَكَانَ سَمَاعُ عَبْدِ الأَعْلَى وَابْنِ الْمُثَنَّى وَابْنِ بَشَّارٍ مِنْ نُسْخَةٍ وَاحِدَةٍ فِيمَا بَلَغَنِي ‏.

জুবাইর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর ইবনু মুত্বঈম তার পিতা হতে তার দাদা সূত্র
তিনি বলেন, এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! লোকজন খুবই কষ্ট করছে, পরিবার-পরিজন, ঘরবাড়ি ধ্বংস  হয়ে যাচ্ছে, ধন-সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে এবং জীবজন্তু মরে যাচ্ছে। সুতরাং, আপনি আমাদের জন্য মহান আল্লাহ্‌র নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। কেননা, আমরা আপনার সুপারিশ নিয়ে আল্লাহ্‌র নিকট যাই এবং আল্লাহ্‌র সুপারিশ নিয়ে আপনার নিকট আসি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি কি জানো! তুমি কি বলছো? অতঃপর তিনি তাসবীহ পড়তে থাকলেন, এমনকি তাঁর সাহাবীদের মধ্যেও এর (অসন্তুষ্টির) চিহ্ন পরিলক্ষিত হলো। তিনি আবার বললেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়! আল্লাহ্‌র সুপারিশ নিয়ে তাঁর কোনো সৃষ্টির নিকট যাওয়া যায় না। আল্লাহ্‌র মর্যাদা এর চেয়ে অনেক ঊর্ধে, অনেক মহান। তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি কি জানো আল্লাহ কে? তাঁর আরশ আসমানের উপর এভাবে আছে। তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, তাঁর উপর রয়েছে গম্বুজ সদৃশ ছাঁদ। তা সত্ত্বেও তা (আরশ) তাঁকে নিয়ে গোঙ্গানীর মত শব্দ করে, যেমনটি করে আরোহীর কারণে জিনপোষ। ইবনু বাশ্শার তার হাদীসে বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে এবং তার আরশ আসমানসমূহের উপরে। অতঃপর হাদীসটি এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। [৪৭২৫]

দূর্বলঃ মিশকাত হা/৫৭২৭।


সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭২৬

হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস







কালাম শাস্ত্র হচ্ছে ওই সমস্ত গ্রেসিয়ান-ব্যবিলনিয়ান শয়তানি দর্শন এবং আকিদা যার শাখা প্রশাখা আজ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। আরবে প্রবিষ্ট গ্রীক দর্শন তথা কালাম শাস্ত্রের ব্যপারে ইবনে কাসির(রহঃ) এর দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছেন? তিনি ওদের কাল্পনিক দর্শনকেন্দ্রিক আসমানজমিনের বর্ননা গ্রহন তো করেনই নি বরং কুরআন সুন্নাহর দলিল দ্বারা শক্তভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন। আজকের আলিমদের সাথে পূর্ববর্তী এসকল আলিমদের পার্থক্যটা এখানেই। আজকের দিনে কাফির মুশরিকদের কাল্পনিক দর্শনকেন্দ্রিক তত্ত্বকে আলিমরা ওয়াজ-বায়ানে রেফারেন্স হিসেবে গ্রহন করতেও ছাড়ে না। অথচ সত্যিকারের জ্ঞানী আলিমরা এসবকে শরীয়াতের দলিল দ্বারা বাতিল সাব্যস্ত করেছেন। এই কালাম শাস্ত্র হচ্ছে সেসমস্ত শয়তানের আকিদার উৎস যা মু'তাযিলাদের যুক্তিচর্চায় জ্বালানি হিসেবে কাজ করত। অনেক লোক মুর্তাদ হয়ে গেছে।




১৬ শতক পর্যন্ত জ্যোতির্বিদ্যা আর আর এস্ট্রলজির(যেটাকে আল্লাহর রাসূল(সা) যাদুবিদ্যার শাখা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন) মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। জ্যোতিষীরাই মহাকাশবিজ্ঞানী হিসেবে ছিলেন। ১৯ শতকে এসে অল্প কিছু দিনের জন্য জ্যোতিষশাস্ত্রকে আলাদা করা হয়েছে, সবার মধ্যে এর শাখাপ্রশাখাকে প্রবেশ করানোর জন্য। এখন হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্স সেই পুরাতন যাদুশাস্ত্রকেই আবারো পুনরুজ্জীবিত করছে। মেইনস্ট্রিম ফিজিক্স থেকে ওই  থিওরি গুলো খুব শীঘ্রই প্রকাশ পাবে যখন বলা হবে, তারকারাজি মানুষের কর্ম-ভাগ্যে প্রভাব ফেলে। অমুক তারকার অমুক স্থানে আসার জন্য এটা হয়। আজ  ইতোমধ্যে পদার্থবিদগন জ্যোতিষ শাস্ত্রের গুহ্যতত্ত্বানুসারে বলছেন, আমরা সবাই স্টার ডাস্ট,স্টার সিড...। ইবনে কাসির(রহঃ) তার যুগে কাফিরদের থেকে আসা  জ্যোতিবিদ্যাকে গ্রহন করেননি। এমনকি ওদের নিজেদের মাঝেই তত্ত্বগত সাংঘর্ষিকতার কথা বলেছেন, যেমনটা আজও বিদ্যমান। আফসোস হচ্ছে আজকে উম্মাহ কুফরি সৃষ্টিতত্ত্বকে দ্বীনের সাথে মেশাতে ব্যস্ত। সবকিছুকে ইসলামাইজ করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এরা শুধু ওইসমস্ত বিষয়গুলোকে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানায় যা গ্রহন করলে এদের ভ্রষ্টতা আর শয়তানি সম্পূর্নরুপে প্রকাশ পেয়ে যাবে। যেমন বাবেল শহরের কবি গিলগেমিশের  বিবর্তনবাদের আকিদা। তবে মর্ডানিস্ট মুসলিমদের অনেকে এটাকেও ইসলামাইজ করতে ছাড়ে নি। ইন্নালিল্লাহ। অথচ সত্য হচ্ছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তা বলেননি যা আজ কাফিররা কল্পনা এবং শয়তানের সহযোগিতায় বলছে। আল্লাহ যা বলেছেন তা কুরআন সুন্নাহর দ্বারা আমাদেরকে জানানো হয়েছে যা মুশরিকদের কল্পনা এবং শয়তানের কথার সম্পূর্ন বিপরীত এবং সত্য।






সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে মিথ্যাচারীতা,অপব্যাখ্যা এবং কাফিরদের আকিদাগুলোকে ইসলামাইজড করার মত জঘন্য কাজগুলো দেখে এবং অধিকাংশ লোকের নিশ্চুপ ভূমিকা দেখে শরী'আর দলিলকেন্দ্রিক কম্পাইল্ড আর্টিকেল সিরিজ প্রকাশ করা শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ এতে করে কুরআন সুন্নাহ থেকে আসা সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে বিস্তারিত বর্ননা প্রকাশের মাধ্যমে ঐ বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্টতা দূর হবে, যে সত্য মিথ্যার অস্পষ্টতা এবং বিভ্রান্তি প্রাচীন ও এ যুগের মুরজিয়া-মু'তাযিলারা তৈরি করেছে। খুব শীঘ্রই শয়তানী অসত্য সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে আকিদাগুলো স্পষ্ট হবে। এবং কুরআন সুন্নাহর দলিলের দ্বারা উৎপাটিত হবে। বিইযনিল্লাহ। 

চলবে ইনশাআল্লাহ..