সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বকে বর্জন করা হয়েছে। গ্রহন করা হয়েছে যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শন উৎসারিত মিথ্যা সৃষ্টিতত্ত্ব। মুসলিম আলিমগন এসব গ্রহন করে নিয়েছেন। সেই সাথে ইসলামাইজ করা হয়েছে। এই বিকৃতির শুরু যেদিন থেকে গ্রীক দর্শন আরবে প্রবেশ করে, সেদিন থেকে। ওই যুগের আলিমগনও সেসব দ্বারা ধীরে ধীরে প্রভাবিত হতে শুরু করেন। একপর্যায়ে এখন আর অধিকাংশ মুসলিম সৃষ্টিতত্ত্বসংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবীদের(রাঃ) আকিদা রাখে না। বরং এমন কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং ইসলামের সাথে মিশ্রন ঘটিয়েছে যার উৎস শয়তান এবং যাদুবিদ্যার কুফরি শাস্ত্র। তারা 'প্রাকৃতিক দর্শন'কে গ্রহন করে কুরআন সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে, সেসবকে দ্বীনের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। তারা কুফর ও শিরকে ভরা বানোয়াট আকিদা গুলোর প্রচার করার সময় গ্রহনযোগ্য করবার জন্য কুরআনের পবিত্র আয়াতগুলোকে ব্যবহার করছে এই বলে যে "কুরআনে ১৪০০ বছর আগে অমুক অমুক বিষয় গুলো বলেছে", যা অপবিজ্ঞানী, দার্শনিকরা বলছে! নাউজুবিল্লাহ!! এভাবে সুস্পষ্ট বৈপরীত্যপূর্ন কুফরকে কুরআন এর দলিল দ্বারা সত্যায়ন এবং বিপরীত দিক দিয়ে, কুরআনের বর্ননার সাথে ওই সব শয়তানি আকিদার মেলবন্ধনের অপচেষ্টা চলছে।
অথচ বর্তমান অপবিজ্ঞানী,প্রাচীন যাদুকররা যা বলে তা তাদের অনুমান এবং শয়তানের বক্তব্য ছাড়া কিছুই নয়। ওদের কথা বাস্তব জগতের সাথেও কোনরূপ সাদৃশ্যতা রাখে না। বাস্তব জগতে বরং সেটাকেই সত্যরূপে দেখা যায়, যা রহমান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনে এবং সাহাবিদের(রাঃ) বর্ননাগুলোয় পাওয়া যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপবিদ্যার ধারক এবং শয়তানের আউলিয়ারা ১% সত্যের সাথে অনুমান নির্ভর ৯৯% কুফরি দর্শন মিশ্রিত করে প্রচার করে, মূর্খরা এতেই ফাঁদে পড়ে। তারা শয়তানের এবং তার অনুসারীদের অনুসরন করতে শুরু করে।
আজকের সময়ে হাজারো ফিতনার মধ্যে সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত আকিদাগত ভ্রষ্টতার ফিতনায় উম্মাহ নিমজ্জিত। এজন্য সত্য মিথ্যাকে স্পষ্ট করতে এবং সতর্ক করতে, এ সংক্রান্ত বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর দলিলভিত্তিক ধারাবাহিক আর্টিকেল প্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। আমি এখানে নিজস্ব কোন নবউদ্ভাবিত আকিদা বা চিন্তাধারাকে উপস্থাপন করছি না, বরং এটা কুরআন সুন্নাহর দালিলিক সুবিশাল সংকলন বৈ আর কিছু নয়। এটা ১৪০০ বছর আগের সাহাবীদের সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে আকিদা,জ্ঞানকেই পুনরুজ্জীবন করার প্রয়াস মাত্র। এ লক্ষ্যে cosmogony এর ব্যপারে আসা কুরআন,অজস্র সহীহ ও দুর্বল হাদিস এবং প্রাচীন সুপ্রসিদ্ধ আলিমদের মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাফসীর নিয়ে আসা হবে, ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাছে কাফির মুশরিকদের মনগড়া এবং যাদুশাস্ত্র নির্ভর কুফরি বিশ্বাসের চেয়ে 'প্রাচীন বরেন্য আলিম ও সাহাবীদের(রাঃ) দ্বারা গৃহীত' কুরআন সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসরাইলীয় বর্ননাও শত সহস্রগুন উত্তম।
|
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া |
কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বর্তমান সময়ে বিচিত্র অপব্যাখ্যার চিত্রও তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার কাছে এ ব্যপারে সাহায্য চাই এবং ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।
আশাকরি এসমস্ত বিষয়ে চলমান বিতর্ক মতানৈক্য অবসান ঘটবে। কিন্তু তাদের ব্যপারে আশাহীন যারা কুরআন সুন্নাহর দলিলকে যথেষ্ট মনে করে না। যাদের হৃদয়ে ব্যধির দরুন সজ্ঞানে কাফিরদের কুফরি আকিদাকে গ্রহন করে এবং সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিকতা দেখা স্বত্ত্বেও সেগুলোকে দ্বীনের সাথে মেশাতে চায়। আল্লাহর কাছে মু'তাযিলা, মুরজিয়া এবং তাদের ন্যায় অন্যান্য পথভ্রষ্ট ফের্কার ফিতনা থেকে পানাহ চাই।
পর্ব -১
১.সৃষ্টি জগতের সূচনাঃআলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্ট জিনিসের ব্যপারে মতানৈক্য রয়েছে। প্রথম সৃষ্টি পানি,আরশ,কলম,আলো আধার প্রভৃতির কোনটি সেটা আল্লাহই ভাল জানেন।
|
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া |
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবী উবাদাহ বিন সামেতের ছেলে ওয়ালীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মৃত্যুর সময় আপনার আব্বার অসিয়ত কী ছিল?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমাকে আমার আব্বা ডেকে বললেন, বেটা! তুমি আল্লাহকে ভয় কর। আর জেনে রেখো, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর ভয় রাখতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতি এবং তকদীরের ভালো-মন্দ সব কিছুর প্রতি ঈমান এনেছ। এ ঈমান ছাড়া মারা গেলে তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। অতঃপর তাকে বলেন, ‘লিখো’। কলম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি কী লিখব?’ তিনি বললেন, ‘তকদীর এবং অনন্তকাল ধরে যা ঘটবে তা লিখো।’ (আহমাদ ২৩০৮১, তিরমিযী ২১৫৫, ৩৩১৯নং)
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১১৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
সৃষ্টির প্রথমে কি ছিল এরূপ ভাবতে থাকলে শয়তান অনেকের ক্ষেত্রে এরূপ প্রশ্ন তৈরি করে, যেমনঃ "আল্লাহর পূর্বে কি ছিল"।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ)তিনি বলেন,حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ صَبَّاحٍ، حَدَّثَنَا شَبَابَةُ، حَدَّثَنَا وَرْقَاءُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَنْ يَبْرَحَ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يَقُولُوا هَذَا اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَىْءٍ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ ".
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা একে অপরকে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, এ আল্লাহ সব কিছুরই স্রষ্টা, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করল?[মুসলিম ১/৬০, হাঃ ১৩৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯৮)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২৯৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، - وَاللَّفْظُ لِهَارُونَ - قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَزَالُ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يُقَالَ هَذَا خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَلْيَقُلْ آمَنْتُ بِاللَّهِ " .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মানুষের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয় যে, এ সৃষ্টিজগত তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যার অন্তরে এমন প্রশ্নের উদয় হয় সে যেন বলে, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি’। [৪৭] (ই.ফা. ২৪৩; ই.সে. ২৫১)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)একদা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! মানুষ তোমাকে প্রশ্ন করতে থাকবে। এমন কি এ প্রশ্নও করবে, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন; তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, পরবর্তীকালে একদিন আমি মাসজিদে (নাবাবীতে) উপস্থিত ছিলাম। এমন সময়ে কতিপয় বেদুঈন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, হে আবূ হুরায়রা! এ তো আল্লাহ তা’আলা। তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) হাতে কিছু কংকর নিয়ে তাদের প্রতি তা নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, আমার বন্ধু (রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) সত্য কথাই বলে গেছেন। (ই.ফা. ২৪৮; ই.সে. ২৫৭)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَامِرِ بْنِ زُرَارَةَ الْحَضْرَمِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ مُخْتَارِ بْنِ فُلْفُلٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِنَّ أُمَّتَكَ لاَ يَزَالُونَ يَقُولُونَ مَا كَذَا مَا كَذَا حَتَّى يَقُولُوا هَذَا اللَّهُ خَلَقَ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ " .
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আপনার উম্মাত সর্বদা এটা কে সৃষ্টি করল। এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকবে। এমনকি এ প্রশ্নও করবে যে, সকল সৃষ্টিই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তা হলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে? (ই.ফা. ২৫০; ই.সে. ২৫৯)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ ﷺ قَالَ : «لَا يَزَالُ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتّى يُقَالَ هذَا خَلَقَ اللّهُ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللهَ؟ فَإِذَا قَالُوا ذلِكَ فَقُولُوا اللّهُ أَحَدٌ اللّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَه كُفُوًا أَحَدٌ ثُمَّ لْيَتْفُلْ عَنْ يَسَارِه ثَلَاثًا وَلْيَسْتَعِذْ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ». رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَسَنَذْكُرُ حَدِيْثَ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ فِيْ بَابِ خُطْبَةِ يَوْمِ النَّحْرِ إِنْ شَآءَ اللهُ تَعَالى
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মানুষেরা তো (প্রথম সৃষ্টি জগত ইত্যাদি সম্পর্কে) পরস্পরের প্রতি প্রশ্ন করতে থাকবে, এমনটি সর্বশেষে এ প্রশ্নও করবে, সমস্ত মাখলূক্বাতকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন তারা এ প্রশ্ন উত্থাপন করে তখন তোমরা বলবে : আল্লাহ এক, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি আর কেউ তাকে জন্ম দেননি। তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই। অতঃপর (শাইত্বনের উদ্দেশে) তিনবার নিজের বাম দিকে থু থু ফেলবে এবং বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাবে। [১] (মিশকাতের লেখক বলেন) ‘উমার ইবনু আহ্ওয়াস-এর হাদীস ‘খুতবাতু ইয়াওমিন্ নাহ্র’ অধ্যায়ে বর্ণনা করবে ইন্শাআল্লাহ তা’আলা।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৭৫
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জন্ম মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন মাখলুকের জন্য। তিনি জীবন মৃত্যুর ধারনারও সৃষ্টিকর্তা। তিনি নিজে জন্ম মৃত্যু থেকে পবিত্র। তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি এবং কাউকে জন্ম দেননি। এসব তার মাখলুকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ এসব ধারনা থেকেও পবিত্র।
আল্লাহ বলেনঃالَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়(সূরা মুলক-০২)
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْতিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি [সূরা ইখলাস ৩]সুতরাং এরূপ প্রশ্ন একদমই অবান্তর। অনেক যিন্দিক এরূপ প্রশ্নও করে 'সব কিছুর শুরু থাকে আল্লাহর পূর্বে কি ছিল? '। এই প্রশ্নটিতে 'পূর্বে' বা 'আগে' শব্দটি সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﺆﺫﻳﻨﻲ ﺍﺑﻦ ﺍۤﺩﻡ ﻳﺴﺐ ﺍﻟﺪﻫﺮ ﻭﺃﻧﺎ ﺍﻟﺪﻫﺮ ﺑﻴﺪﻱ ﺍﻷﻣﺮ ﺃﻗﻠﺐ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﺭ . ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪআবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আদাম সন্তান আমাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তারা যুগ বা কালকে গালি দেয়, অথচ আমিই দাহ'র অর্থাৎ যুগ বা কাল। আমার হাতেই (কালের পরিবর্তনের) ক্ষমতা। দিন-রাত্রির পরিবর্তন আমিই করে থাকি। [১]ফুটনোটঃ[১] সহীহ : বুখারী ৪৮২৬, মুসলিম ২২৪৬, আবূ দাঊদ ৫২৭৪, আহমাদ ৭২৪৫, সহীহাহ্ ৫৩১, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৪৩।হাদিসের মান: সহিহ হাদিসএই হাদিসের মানে এই নয় যে, আল্লাহই সময়। বরং
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সময়ের সৃষ্টিকর্তা। তার হাতেই এর নিয়ন্ত্রন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনের বহু আয়াতে তার সৃষ্ট মাখলুকের শপথ করেছেন। কিন্তু মাখলুকের জন্য আল্লাহ ব্যতিত কারো নামে শপথ শিরক। আল্লাহ বলেনঃ
وَالْعَصْرِকসম যুগের (সময়ের),[আসর-১]অতএব, সময়ের নিয়ন্ত্রন ও সৃষ্টি আল্লাহরই। আল্লাহ সময়ের যেকোন সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। যেখানে আল্লাহই সময়ের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক সেখানে আল্লাহর সত্ত্বার ব্যপারে সময়কেন্দ্রিক প্রশ্ন নিতান্তই মূর্খলোকের কাজ ছাড়া কিছু নয়। এজন্য কাফির, যিন্দিক, মুশরিকরা মূলত নির্বোধ, যদিও তারা নিজেদের মহাজ্ঞানী মনে করে।
আল্লাহ বলেনঃ
لَأَنتُمْ أَشَدُّ رَهْبَةً فِي صُدُورِهِم مِّنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ | 13 |
নিশ্চয় তোমরা তাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা অধিকতর ভয়াবহ। এটা এ কারণে যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।[সূরা হাশর ১৩] |
দেখুনঃ
https://islamqa.info/en/answers/9571/what-is-the-meaning-of-the-hadeeth-do-not-inveigh-against-time-waqt-for-allaah-is-time-waqtআল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার অস্তিত্বের ব্যপারে পাঠের সময় শয়তান অনেকের মনে আল্লাহর আকৃতি কিরূপ এ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। মানুষ তার সীমাবদ্ধ চিন্তাচেতনার দ্বারা আল্লাহকে কল্পনা করতে চেষ্টা করে। আর মানুষের কল্পনার সীমাবদ্ধতায় আল্লাহকে ফেলা অনেক বড় রকমের গোমরাহি। এ নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিতর্ক আছে, আল্লাহর সাকার বা নৈরাকার নিয়ে। চরম জাহেরী ও বাতেনিপন্থী দুই দল আল্লাহর আকার এবং নিরাকার কট্টরভাবে সাব্যস্ত করে। যেমনটা মুশাব্বিহা,সুফিদের মধ্যে দেখা যায়। আল্লাহর হাত,চক্ষু, পায়ের ব্যপারে অনেক গুলো আয়াতে এসেছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকিদা হচ্ছে সেসবকে শুধুই পড়ে যাওয়া। সাহাবিদের(রাঃ) কেউই এসবের কোন রূপ জাহেরি বা বাতেনি ব্যাখ্যা করেননি। কোনরূপ মনগড়া ব্যাখ্যা করাই বিদআত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা হাত,চক্ষু,পা প্রভৃতির ব্যপারে যা বলেছেন তাতে আমরা বিশ্বাস করি, এবং এর সাথে কোন কিছুর সাদৃশ্যতা যোগ করিনা। আল্লাহ, মানুষের যেকোন ধরনের কাল্পনিক সীমাবদ্ধতা থেকে পবিত্র। আল্লাহর সাদৃশ্য সৃষ্টির কোন কিছুই নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন,
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌএবং তার সমতুল্য কেউ নেই।(ইখলাস-০৪)
কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন(শূরা ১১)
‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য স্থির করো না’ (নাহল ১৬/৭৪)আল্লাহর সত্ত্বাগত বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা গবেষণা নিষিদ্ধ। এটা শয়তানকে বিভ্রান্ত করতে সুযোগ দেয়।
Ibn Abbas reported: The Messenger of Allah, peace and blessings be upon him, said, “Reflect deeply upon the creation, but do not reflect upon the essence of the Creator. Verily, his essence cannot be known other than to believe in it.”
Source: Musnad al-Rabī’ 742
"
একদা নবী কারীম (সা.) সাহাবাদের চুপচাপ বসে থাকা একটি দলের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছ? তারা বললেন, আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে চিন্তা করছি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা কর; কিন্তু তার সত্তা সম্বন্ধে চিন্তা করো না। যেহেতু তিনি ধারণার অতীত[তাফসীর ইবনে কাসির]।"নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের বাহ্যিক ও কাল্পনিক সকল দৃষ্টির উর্ধ্বে। সকল প্রকার কল্পনা থেকে পবিত্র। আল্লাহ বলেনঃ
لاَّ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُদৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ(আনআম ১০৩)আজ কাফিররা অনেক রকম কাল্পনিক ফিলসফি তৈরি করে নিয়েছে। সেখানে তারা আল্লাহর ব্যপারে বিচিত্র কথা বলে। এমনকি বিশ্বজগতকেও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করে, এমনকি প্রকৃতিকেও সৃষ্টিকর্তা সাব্যস্ত করে(ন্যাচারালিজম/প্যান্থেইজম/ননডুয়ালিজম)।ব্যবিলনিয়ান শয়তানি প্রকৃতি পূজার শিরকি যে আকিদা(monism/gnostic non Dualism/pantheism) ইবনে আরাবি, মানসুর হাল্লাজ প্রমুখ ইসলামের মধ্যে সঞ্চালিত করেছে, এবং সুফি/পীরদের মাঝে (ওয়াহদাতুল উজুদ,হুলুল ওয়াল ইত্তেহাদ- ইউনিটি অব এক্সিস্টেন্স/ননডুয়ালিজম বা মনিজম বা প্যান্থেইজম) এখনো মওজুদ আছে, তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। সালাফের মধ্যে এ আকিদা ছিল না। বরং, এ আকিদার গোড়া তালাশ করলে বাবেল শহর ও এর আশপাশের মালাউন যাদুকর এবং শয়তানদের মিলবে। এটা তো সেই শয়তানের গড়া বিকল্প মেটাফিজিক্স, যা সম্পূর্নভাবে আল্লাহ ও তার রাসূলের শিক্ষার বিপরীত। এসব কুফরি আকিদাধারীরা আল্লাহর ব্যপারে মনগড়া যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।
আল্লাহ বলেনঃ
سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَতারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র[হাশরঃ২৩]সেই সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ যতকিছুর খরচ করেছেন,এতে তার ভান্ডার থেকে কোন কিছুই কমে নি।
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَدُ اللَّهِ مَلأَى لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ، سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ـ وَقَالَ ـ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ ـ وَقَالَ ـ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ ".
আবু হুরায়রাহ (রাঃ)আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্র হাত পূর্ণ, রাতদিন খরচ করলেও তাতে কমতি আসে না। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমরা কি দেখেছ? আসমান যমীন সৃষ্টি করার পর থেকে তিনি যে কত খরচ করেছেন, তা সত্ত্বেও তাঁর হাতে যা আছে, তাতে এতটুকু কমেনি। এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তখন তাঁর আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর অন্য হাতে আছে দাঁড়িপাল্লা, যা কখনও তিনি নিচে নামান আবার কখনও উপরে উঠান। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৭)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৪১১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
আরশ-কুরসি-লাওহে মাহফূজঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى بْنُ حَمَّادٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَمُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الرِّبَاطِيُّ، قَالُوا حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، - قَالَ أَحْمَدُ كَتَبْنَاهُ مِنْ نُسْخَتِهِ وَهَذَا لَفْظُهُ - قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْحَاقَ يُحَدِّثُ عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ عُتْبَةَ عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ جُهِدَتِ الأَنْفُسُ وَضَاعَتِ الْعِيَالُ وَنُهِكَتِ الأَمْوَالُ وَهَلَكَتِ الأَنْعَامُ فَاسْتَسْقِ اللَّهَ لَنَا فَإِنَّا نَسْتَشْفِعُ بِكَ عَلَى اللَّهِ وَنَسْتَشْفِعُ بِاللَّهِ عَلَيْكَ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " وَيْحَكَ أَتَدْرِي مَا تَقُولُ " وَسَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا زَالَ يُسَبِّحُ حَتَّى عُرِفَ ذَلِكَ فِي وُجُوهِ أَصْحَابِهِ ثُمَّ قَالَ " وَيْحَكَ إِنَّهُ لاَ يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ مِنْ خَلْقِهِ شَأْنُ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ وَيْحَكَ أَتَدْرِي مَا اللَّهُ إِنَّ عَرْشَهُ عَلَى سَمَوَاتِهِ لَهَكَذَا " . وَقَالَ بِأَصَابِعِهِ مِثْلَ الْقُبَّةِ عَلَيْهِ " وَإِنَّهُ لَيَئِطُّ بِهِ أَطِيطَ الرَّحْلِ بِالرَّاكِبِ " . قَالَ ابْنُ بَشَّارٍ فِي حَدِيثِهِ " إِنَّ اللَّهَ فَوْقَ عَرْشِهِ وَعَرْشُهُ فَوْقَ سَمَوَاتِهِ " . وَسَاقَ الْحَدِيثَ وَقَالَ عَبْدُ الأَعْلَى وَابْنُ الْمُثَنَّى وَابْنُ بَشَّارٍ عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ عُتْبَةَ وَجُبَيْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَالْحَدِيثُ بِإِسْنَادِ أَحْمَدَ بْنِ سَعِيدٍ هُوَ الصَّحِيحُ وَافَقَهُ عَلَيْهِ جَمَاعَةٌ مِنْهُمْ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَعَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ وَرَوَاهُ جَمَاعَةٌ عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ كَمَا قَالَ أَحْمَدُ أَيْضًا وَكَانَ سَمَاعُ عَبْدِ الأَعْلَى وَابْنِ الْمُثَنَّى وَابْنِ بَشَّارٍ مِنْ نُسْخَةٍ وَاحِدَةٍ فِيمَا بَلَغَنِي .
জুবাইর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর ইবনু মুত্বঈম তার পিতা হতে তার দাদা সূত্রতিনি বলেন, এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! লোকজন খুবই কষ্ট করছে, পরিবার-পরিজন, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, ধন-সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে এবং জীবজন্তু মরে যাচ্ছে। সুতরাং, আপনি আমাদের জন্য মহান আল্লাহ্র নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। কেননা, আমরা আপনার সুপারিশ নিয়ে আল্লাহ্র নিকট যাই এবং আল্লাহ্র সুপারিশ নিয়ে আপনার নিকট আসি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি কি জানো! তুমি কি বলছো? অতঃপর তিনি তাসবীহ পড়তে থাকলেন, এমনকি তাঁর সাহাবীদের মধ্যেও এর (অসন্তুষ্টির) চিহ্ন পরিলক্ষিত হলো। তিনি আবার বললেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়! আল্লাহ্র সুপারিশ নিয়ে তাঁর কোনো সৃষ্টির নিকট যাওয়া যায় না। আল্লাহ্র মর্যাদা এর চেয়ে অনেক ঊর্ধে, অনেক মহান। তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি কি জানো আল্লাহ কে? তাঁর আরশ আসমানের উপর এভাবে আছে। তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, তাঁর উপর রয়েছে গম্বুজ সদৃশ ছাঁদ। তা সত্ত্বেও তা (আরশ) তাঁকে নিয়ে গোঙ্গানীর মত শব্দ করে, যেমনটি করে আরোহীর কারণে জিনপোষ। ইবনু বাশ্শার তার হাদীসে বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে এবং তার আরশ আসমানসমূহের উপরে। অতঃপর হাদীসটি এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। [৪৭২৫]
দূর্বলঃ মিশকাত হা/৫৭২৭।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭২৬
হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস
কালাম শাস্ত্র হচ্ছে ওই সমস্ত গ্রেসিয়ান-ব্যবিলনিয়ান শয়তানি দর্শন এবং আকিদা যার শাখা প্রশাখা আজ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। আরবে প্রবিষ্ট গ্রীক দর্শন তথা কালাম শাস্ত্রের ব্যপারে ইবনে কাসির(রহঃ) এর দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছেন? তিনি ওদের কাল্পনিক দর্শনকেন্দ্রিক আসমানজমিনের বর্ননা গ্রহন তো করেনই নি বরং কুরআন সুন্নাহর দলিল দ্বারা শক্তভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন। আজকের আলিমদের সাথে পূর্ববর্তী এসকল আলিমদের পার্থক্যটা এখানেই। আজকের দিনে কাফির মুশরিকদের কাল্পনিক দর্শনকেন্দ্রিক তত্ত্বকে আলিমরা ওয়াজ-বায়ানে রেফারেন্স হিসেবে গ্রহন করতেও ছাড়ে না। অথচ সত্যিকারের জ্ঞানী আলিমরা এসবকে শরীয়াতের দলিল দ্বারা বাতিল সাব্যস্ত করেছেন। এই কালাম শাস্ত্র হচ্ছে সেসমস্ত শয়তানের আকিদার উৎস যা মু'তাযিলাদের যুক্তিচর্চায় জ্বালানি হিসেবে কাজ করত। অনেক লোক মুর্তাদ হয়ে গেছে।
১৬ শতক পর্যন্ত জ্যোতির্বিদ্যা আর আর এস্ট্রলজির(যেটাকে আল্লাহর রাসূল(সা) যাদুবিদ্যার শাখা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন) মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। জ্যোতিষীরাই মহাকাশবিজ্ঞানী হিসেবে ছিলেন। ১৯ শতকে এসে অল্প কিছু দিনের জন্য জ্যোতিষশাস্ত্রকে আলাদা করা হয়েছে, সবার মধ্যে এর শাখাপ্রশাখাকে প্রবেশ করানোর জন্য। এখন হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্স সেই পুরাতন যাদুশাস্ত্রকেই আবারো পুনরুজ্জীবিত করছে। মেইনস্ট্রিম ফিজিক্স থেকে ওই থিওরি গুলো খুব শীঘ্রই প্রকাশ পাবে যখন বলা হবে, তারকারাজি মানুষের কর্ম-ভাগ্যে প্রভাব ফেলে। অমুক তারকার অমুক স্থানে আসার জন্য এটা হয়। আজ ইতোমধ্যে পদার্থবিদগন জ্যোতিষ শাস্ত্রের গুহ্যতত্ত্বানুসারে বলছেন, আমরা সবাই স্টার ডাস্ট,স্টার সিড...। ইবনে কাসির(রহঃ) তার যুগে কাফিরদের থেকে আসা জ্যোতিবিদ্যাকে গ্রহন করেননি। এমনকি ওদের নিজেদের মাঝেই তত্ত্বগত সাংঘর্ষিকতার কথা বলেছেন, যেমনটা আজও বিদ্যমান। আফসোস হচ্ছে আজকে উম্মাহ কুফরি সৃষ্টিতত্ত্বকে দ্বীনের সাথে মেশাতে ব্যস্ত। সবকিছুকে ইসলামাইজ করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এরা শুধু ওইসমস্ত বিষয়গুলোকে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানায় যা গ্রহন করলে এদের ভ্রষ্টতা আর শয়তানি সম্পূর্নরুপে প্রকাশ পেয়ে যাবে। যেমন বাবেল শহরের কবি গিলগেমিশের বিবর্তনবাদের আকিদা। তবে মর্ডানিস্ট মুসলিমদের অনেকে এটাকেও ইসলামাইজ করতে ছাড়ে নি। ইন্নালিল্লাহ। অথচ সত্য হচ্ছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তা বলেননি যা আজ কাফিররা কল্পনা এবং শয়তানের সহযোগিতায় বলছে। আল্লাহ যা বলেছেন তা কুরআন সুন্নাহর দ্বারা আমাদেরকে জানানো হয়েছে যা মুশরিকদের কল্পনা এবং শয়তানের কথার সম্পূর্ন বিপরীত এবং সত্য।
সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে মিথ্যাচারীতা,অপব্যাখ্যা এবং কাফিরদের আকিদাগুলোকে ইসলামাইজড করার মত জঘন্য কাজগুলো দেখে এবং অধিকাংশ লোকের নিশ্চুপ ভূমিকা দেখে শরী'আর দলিলকেন্দ্রিক কম্পাইল্ড আর্টিকেল সিরিজ প্রকাশ করা শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ এতে করে কুরআন সুন্নাহ থেকে আসা সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে বিস্তারিত বর্ননা প্রকাশের মাধ্যমে ঐ বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্টতা দূর হবে, যে সত্য মিথ্যার অস্পষ্টতা এবং বিভ্রান্তি প্রাচীন ও এ যুগের মুরজিয়া-মু'তাযিলারা তৈরি করেছে। খুব শীঘ্রই শয়তানী অসত্য সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে আকিদাগুলো স্পষ্ট হবে। এবং কুরআন সুন্নাহর দলিলের দ্বারা উৎপাটিত হবে। বিইযনিল্লাহ।
চলবে ইনশাআল্লাহ..