Tuesday, May 28, 2019

৯.ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব[নক্ষত্রমালা ও ছায়াপথ]

পর্ব-৯

নক্ষত্রমালা


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন একদম ছয়দিনের শেষ প্রহরে শুক্রবারে।অথচ প্রচলিত বিজ্ঞান আমাদের শেখায় তারকা, গ্রহ(কথিত) সবকিছু এলোমেলোভাবে সৃষ্টি হয় বিগব্যাং এর দ্বারা। ওরা এক স্থানে বলে প্রথম তারকাটির জন্ম ১০০মিলিয়ন বছর পূর্বে। ওরা সূর্যকেও ওদের বিলিয়ন মিলিয়ন তারকার একটি হিসেবে বিবেচনা করে। এই তারকা সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবী তথা কথিত গ্রহ সৃষ্টিরও অনেক আগে। তাদের ভাষায় এটা হচ্ছে কস্মোলজিক্যাল এভ্যুল্যুশন[১]।

কাফিরদের একটা বাংলা ওয়েবে তারকা এবং গ্রহ সৃষ্টির মেইনষ্ট্রিম সায়েন্স স্বীকৃত প্রক্রিয়া  লিখেছেঃ
"গ্রহ বা গ্রহানু সৃষ্টিতত্ত্ব জানার আগে সূর্য কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল তা জেনে রাখা ভালো। আমাদের সূর্য সৃষ্টি হয় সৌর নেবুলা থেকে। আর সৌর নেবুলা সৃষ্টি হয় সুপারনোভা বিস্ফোরণ মাধ্যমে।

সূর্যের চেয়ে তিন গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রসমূহের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেনের সংযোজন বিক্রিয়ায় তৈরি হয় হিলিয়াম, হিলিয়ামের সংযোজনে তৈরি হয় কার্বন এবং সেই কার্বনের সংযোজনে তৈরি হয় লোহা। লোহা তৈরির মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীণ বিক্রিয়াসমূহের পরম্পরার পরিসমাপ্তি ঘটে, কারণ এর পরের বিক্রিয়াটি তাপশোষী। এমনই এক সময়ে নক্ষত্রের অভ্যন্তরস্থ বহির্মুখী চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যাওয়ায় এটি আর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, ফলে নক্ষত্রে ঘটে এক প্রচণ্ড অন্তস্ফোটন (Implosion)। নক্ষত্রটির বেশিরভাগ ভরই এর কেন্দ্রে সংকুচিত হয়ে পড়ে, আর গ্যাসীয় বাতাবরণটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবলবেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাই সুপারনোভা বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কেন্দ্র ছাড়া অবশিষ্ট অংশটুকু বা আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলাকণার মেঘ অর্থাৎ যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তা নেবুলায় পরিণত হয়।

একইভাবে সৌর নেবুলা সৃষ্টি হয়েছিল। যা প্রায় ১ আলোকবর্ষ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এরপর এই বিশাল আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলাকণার মেঘের ঘূর্ণনবেগ বাড়ার সাথে সাথে এটি সংকুচিত হতে শুরু করলো। ফলে আস্তে আস্তে মেঘের আকৃতি ছোট হতে থাকে । এটি চ্যাপ্টা আকৃতির সাথে সাথে প্রায় ১০০ জ্যোতির্বিদ্যার একক (১ জ্যোতির্বিদ্যার একক= ১৪৯৬০০০০০ কি.মি) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে যায়।

নীহারিকার মেঘের কেন্দ্র আশেপাশের অন্য অংশ হতে বেশি ঘনত্বপূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। সেখানেই তৈরি হয়ে থাকে আমাদের প্রোটোসূর্য। ধীরে ধীরে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এটি হতে দৃশ্যমান আলো নির্গত হতে থাকে । এরপরে তাপমাত্রা আরও অনেক বাড়ার পর নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সৃষ্টি হয়ে যায় আমাদের সূর্য । আমাদের সূর্য মেঘটির কেন্দ্রের স্থান দখল করে ছিল। এরপর আশেপাশের সকল বস্তু চাকতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে শুরু করে। আশেপাশের সকল বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। তখন অনুবীক্ষণিক ধূলিকণার বস্তুগুলো একে অপরকে আরও বেশি আকর্ষণ করতে শুরু করে।
স্বল্প ভররের বস্তু হতে অধিক ভরের বস্তুর সৃষ্টি হতে থাকে। আস্তে আস্তে বস্তুগুলো বড় হতে হতে একসময় গ্রহাণুতে রূপান্তর হয়ে পড়ে। এর থেকেও বড়গুলো গ্রহে পরিণত হয়। আমাদের পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো ঠিক এভাবেই সৃষ্টি হয়।"[২]

সুতরাং শয়তানের সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী সর্বপ্রথম তারকার সৃষ্টি হয় অতঃপর অনেকপরে কথিত গ্রহ-উপগ্রহ। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সর্বপ্রথম পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন,সাতটি পৃথিবী একের উপর আরেকটি সমতল দ্বীপ সদৃশ। এরপর আমাদের উপরে গম্বুজাকৃতির আসমান এবং এভাবে মোট সপ্ত আসমান, অতঃপর শুক্রবার শেষ প্রহরে চাঁদ সূর্য,তারকারাজি সৃষ্টি করেন। তারকারাজিকে দুনিয়ার নিকটতম আকাশে গেঁথে দেন।

I was told by Musa b. Harun-'Amr b. Hammad-Asbat-al-Suddi-Abu Malik and Abu SalihIbn 'Abbas. Also (al-Suddi)-Murrah al-Hamdani-'Abdallah b. Masud and some (other) companions of the Prophet ( comment?ing on): "Then[....]Friday. Friday-yawm al-jum'ah -is thus called because on it, God
put together fl-m-) the creation of the heavens and the earth and "revealed in every heaven its command."375 He continued: In every heaven, He created its (special) angels as well as its (special) oceans, the mountains with hail,376 and what (man) does not know.377 He then adorned the lower heaven with the stars and made them an ornament and guard to guard against the Satans.378 [....]
[ইবনে জারির তাবারির ইতিহাস]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَى فِي كُلِّ سَمَاء أَمْرَهَا وَزَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা
[৪১:১২]

সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন, শরীআতের দলিল অপবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার একেবারেই বিপরীতের। শুধু তাই না, এই বিজ্ঞান সূর্যকে নক্ষত্র মনে করে। অন্যদিকে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী নক্ষত্র ও সূর্য সম্পূর্ন ভিন্ন সৃষ্টি। আল্লাহ তারকারাজিকে সম্পূর্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন তিনটি উদ্দেশ্যেঃ
১.আসমানের সৌন্দর্যের জন্য।
২.আসমানের তারকা দেখে যমীনের উপর পথ চেনার নির্দেশক হিসেবে এবং
৩.বিতাড়িত শয়তানের থেকে আকাশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপনাস্ত্ররূপে।

এর বাহিরে তারকারাজির অন্য কোন কাজ নেই। বর্তমান বিজ্ঞান নক্ষত্রের ব্যপারে যা বলে, তা সুস্পষ্ট মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُواْ بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ قَدْ فَصَّلْنَا الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি
[আনআমঃ৯৭]
এর ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ

অন্যত্র বলেনঃ
وَعَلامَاتٍ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ
এবং তিনি পথ নির্ণয়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন, এবং তারকা দ্বারা ও মানুষ পথের নির্দেশ পায়[নাহলঃ১৬]

আল্লাহ বলেনঃ
وَالسَّمَاء ذَاتِ الْبُرُوجِ
শপথ নক্ষত্র শোভিত আকাশের[বুরুজঃ১]
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি।
وَحِفْظًا مِّن كُلِّ شَيْطَانٍ مَّارِدٍ
لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَى وَيُقْذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبٍ
دُحُورًا وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ
إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ
এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে।ওরা উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়। ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে
[আস ছফফাতঃ৬-১০]




আল্লাহ সূরা ফুরকানে বলেনঃ
تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاء بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا
কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র
[২৫:৬১]


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সূরা হিজরে ইরশাদ করেনঃ
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاء بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ
নিশ্চয় আমি আকাশে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে দর্শকদের জন্যে সুশোভিত করে দিয়েছি।

وَحَفِظْنَاهَا مِن كُلِّ شَيْطَانٍ رَّجِيمٍ
إِلاَّ مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُّبِينٌ
আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছি।
কিন্তু যে চুরি করে শুনে পালায়, তার পশ্চাদ্ধাবন করে উজ্জ্বল উল্কাপিন্ড
[১৫:১৬-১৮]

মাত্র তিনটি উদ্দেশ্যে আল্লাহ নক্ষত্রদের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আজকের কল্পনাভিত্তিক কস্মোলজিক্যাল মিস্টিসিজমে নক্ষত্রের এসকল কাজ নেই। তাদের কাছে তারকাদের ভূমিকা আরো অনেক কিছু।  এরা কখনো স্বীকৃতি দেয় না যে, নক্ষত্র শয়তানের বিরুদ্ধে উল্কা নিক্ষেপক হিসেবে কাজ করে, এরা তো উল্কা বলতে নক্ষত্রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কিছুকেই বোঝায় না। দ্বিতীয়ত, হেলিওসেন্ট্রিক এভার এক্সপ্যান্ডিং ইউনিভার্সে যেখানে সকল তারকা এদিক ওদিক ধাবমান, সেখানে তারকা দেখে পথ চেনার কথা কল্পনাও করা যায় না। কারন, এই কস্মোলজি অনুযায়ী প্রতিনিয়ত তারকারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। এক শতাব্দী পর এক তারকা সম্পূর্ন হারিয়ে যাবে আবার নতুন কোন অজানা অচেনা তারকার উদয় ঘটবে। অথচ বাস্তবতা ঠিক তাই,যা রহমান আল্লাহ বলেছেন। মানব সভ্যতার আদি থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত তারকাদের অবস্থান/কক্ষপথ অপরিবর্তিত আছে। চলমান তারকারা সেই প্রাচীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত একই দূরত্ব ও অবস্থানে থেকে পৃথিবীকে আবর্তন করছে। এটা প্রমান করে আল্লাহর কথাই সন্দেহাতীতভাবে সত্য। আল্লাহ কখনোই পরিবর্তনশীল কোন কিছুকে পথের দিশা রূপে সৃষ্টি করতেন না যদি নক্ষত্ররা সত্যিই অবস্থান পরিবর্তন করত(যেমনটা আজকের বিজ্ঞান বলে)।
আজকের বিজ্ঞান অনুযায়ী, নক্ষত্ররা হচ্ছে একেকটি সূর্য, এদের প্রত্যেকের চারদিকে পৃথিবীর মত কিন্তু গোলাকার কিছু মাটি/পাথরের দলা ঘুরতে থাকে, তাদের পরিভাষায় সেসব হচ্ছে গ্রহ। সূর্য তথা প্রত্যেক নক্ষত্রের কাজ হচ্ছে, তাদের চারপাশের গ্রহ গুলোয় আলোদান।এরা হচ্ছে একেকটা জগতের সকল শক্তির উৎস! আমাদের উপর চক্রশীল সূর্যও নাকি একটা নক্ষত্র। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা চাদঁ সূর্যকে তারকাদের থেকে আলাদা উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন সময়ের হিসাবের জন্য এবং একটি নিদর্শন হিসেবে, এটা আদৌ কোন নক্ষত্র নয়। অন্যদিকে নক্ষত্রদেরকে আল্লাহ ভিন্ন উদ্দেশ্য ও কাজ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন,আমরা উপরে তা আলোচনা করেছি। আল্লাহ যখন ইউসুফ(আঃ) এর স্বপ্নের বর্ননা দিলেন তখন চাঁদ-সূর্যের কথা নক্ষত্রদের থেকে আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন। নক্ষত্ররা আসমানের সমুদ্রের কক্ষপথে সন্তরনরত চাঁদ সূর্যের তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র এবং অল্প আলোযুক্ত প্রদীপমালা।
আল্লাহ বলেনঃ
إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ
যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি
[ইউসুফঃ৪]

আধুনিক অপবিজ্ঞান দৃশ্যমান নক্ষত্রসমূহকে গ্রহ বা প্ল্যানেট বানিয়েছে। এরা গ্রহ বলতে বোঝায় পৃথিবীর মত জগৎ। মঙ্গল,বুধ,শুক্র,শনি,বৃহস্পতি প্রভৃতি নক্ষত্রগুলোকে গ্রহ বানিয়েছে, এমনকি সেখানে যাবার মিথ্যা দাবী আর কল্পনায় জনগনকে ডুবিয়ে রেখেছে। তাদের মতে এরকম আরো বিলিয়ন মিলিয়ন গ্রহ সমগ্র মহাকাশে বিরাজমান। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এসব গ্রহের অস্তিত্ব শুধু কল্পনাতেই। ওরা যাদেরকে গ্রহ বলে, তারা মূলত চলমান নক্ষত্র। এ কথা হাদিসেও আছে। আলি(রাঃ) একদিন আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কে প্রশ্ন করেন ঐ সমস্ত তারকাদের ব্যপারে, কুরআনে যাদের শপথ আল্লাহ করেছেন। যাদেরকে আল্লাহ খুন্নাস বলেছেন। খুন্নাসের ব্যপারে আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেন সেসব হচ্ছে ৫টি 'তারকা'। সেগুলো হলো, বৃহস্পতি, শনি,বুধ,মঙ্গল,শুক্র। আমাদেরকে আজকে বিজ্ঞান এদেরকে 'গ্রহ' বলতে শেখায় অথচ নবী(সাঃ) শিখিয়েছেন তারকা। এই পাচঁঁটি এমনই তারকা যারা চাঁদ সূর্যের ন্যায় উদিত হয় এবং অস্ত যায়। এরা ছাড়া বাকি তারকারা আসমানে চক্রাকারে ঘুরছে। এদের এই ঘূর্ননই হচ্ছে আল্লাহর প্রার্থনা।


Ibn 'Abbas said that 'Ali b. Abi Talib said to the Messenger of God: You are like my father and my mother! You have mentioned the course of the retrograde stars (al-khunnas) by which God swears in the Qur'an,449 together with the sun and the moon, and the rest. Now, what are al-khunnas? The Prophet replied: 'Ali, they are five stars: Jupiter (al-birjis), Saturn (zuhal), Mercury ('utarid), Mars (bahram), and Venus (al-zuhrah). These five stars [661
rise and run like the sun and the moon and race with them together. All the other stars are suspended from heaven as lamps are from mosques, and circulate together with heaven praising and sanctifying God with prayer. The Prophet then said: If you wish to have this made clear, look to the circulation of the sphere alternately here and there. It is the circulation of heaven and the circulation of all the stars together with it except those five. Their's'
circulation today is what you see, and that is their prayer. Their circulation to the Day of Resurrection is as quick as the circulation of a mill because of the dangers and tremors of the Day of Resurrection. This is (meant by) God's word: "On a day when the
heaven sways to and fro and the mountains move. Woe on that day
unto those who declare false (the Prophet's divine message). 11453
[History of Tabari]

আসমানে সৃষ্ট গতিশীল পানির কক্ষপথে চাঁদ-সূর্যের সাথে বুধ, শুক্র,শনি বৃহস্পতি, মঙ্গল তারকারা সন্তরন করে। সেসব চাঁদ সূর্যের মত ফালাকে আবর্তিত হয়ে অতঃপর অস্তগমন করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এই পাঁঁচ তারকাদের ব্যপারে বলেনঃ
فَلَا أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ
আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়।

الْجَوَارِ الْكُنَّسِ
চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়[তাকভীরঃ১৫-১৬]

বড় আশ্চর্যের বিষয়,এ যুগের মুসলিমরা কাফিরদের বিকৃত শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে এই তারকাদেরকে গ্রহ বলে মেনে নিয়েছে। আজ এরা বিশ্বাস করে এই পাচ তারকায় অবতরন করা যায়। কোন কোনটি তাদের কল্পনানুযায়ী বাসযোগ্য! ভবিষ্যতে সেখানে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখে! কাফিররা যেসব মিথ্যার প্রচার করে সেসবকে কুরআন সুন্নাহর মানদণ্ড দ্বারা যাচাই ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি যেকোন কালের চেয়ে এ যুগে মাত্রা ছাড়িয়েছে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা যা বলেছেন সেটাই সত্য। জুমসেন্সড ক্যামেরা,টেলিস্কোপ দিয়ে কথিত গ্রহদেরকে তারকাদের মতই মিটমিট করে জ্বলতে দেখা যায়। অন্য নক্ষত্রদের সাথে এসকল কাল্পনিক গ্রহদের খুব বেশি পার্থক্য নেই। আপনি বিশ্বাস করেন যে, কোন মানুষ জ্বলন্ত প্রদীপমালার উপর অবতরন করতে পারে,কিংবা বসবাসের চিন্তা করতে পারে! এই অসম্ভব চিন্তা/কল্পনার মধ্যেই কাফিররা আজ মানুষকে ডুবিয়ে রাখছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তারকাদেরকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করেছেন। কখনো কাওকাব,নজম,বুরুজ,খুন্নাস,তারিক্ক,সাকিব ইত্যাদি। হয়ত আল্লাহ এদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামে সম্বোধন করেছেন। কোন তারকা উজ্জ্বল, কোনটি চক্রশীল ওয়ান্ডারিং স্টার,কোনটা রেট্রোগ্রেডিং স্টার,কোনটা স্থির,কোন কোন তারকা আসমানের প্রহরীস্বরূপ,কোনটা দিনের বেলায় লুকিয়ে যায়, রাতে প্রকাশ করে। অন্তরে ব্যাধিগ্রস্ত বিজ্ঞানপন্থী মুসলিমদের অধিকাংশ এসব বিভিন্ন নামের পার্থক্যের সুযোগ ব্যবহার করে সেগুলোকে প্ল্যানেট বা গ্রহ বলে ব্যাখ্যা করে। অনেক আলিম/দাঈরাও এটা বলতে চায় যে কাওকাব মানে হচ্ছে গ্রহ। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কাওয়াকিব(কাওকাব) শব্দটি সূরা ইউসূফের ৪ নং আয়াতে ব্যবহার করেছেন। সংশ্লিষ্ট আয়াতের ব্যপারে আসা হাদিসে জনৈক ইহুদী আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কে ইউসুফ(আঃ) কে সিজদা করা 'নক্ষত্রদের' নাম জিজ্ঞেসা করেন। ওই হাদিসে আদৌ সেসব নক্ষত্রদের দ্বারা গ্রহ বোঝানো হয়নি(হাদিসটি উপরে সূরা ইউসুফের ৪নং আয়াতের নিচে দেয়া আছে)। বরং স্পষ্টভাবে নক্ষত্রের কথা বলা হয়েছে। হিব্রু ও আরবি ভাষায় কাওকাব মানে তারকা বা নক্ষত্র। এর দ্বারা বিশেষ স্থির heavenly bodies-ও বোঝায়। সকল প্রকার তারকা বা নক্ষত্রই নুজুম কিন্তু সকল নুজুমকে কাওকাব/কাওয়াকিব বলা যায় না। সকল তারকাকে নুজুম বলা যায় কিন্তু সকল তারকা তারিক/শিহাব/সাকিব/বুরুজ নয়। সৃষ্টিকর্তা কোন কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নক্ষত্রদেরকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে বলেছেন, সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। কোন মানুষ সুস্পষ্টভাবে সুনিশ্চিতভাবে আকলী জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কিছুই বলতে পারবে না। কেননা প্রত্যেক নক্ষত্রের আচরণ-বৈশিষ্ট্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই জানা আছে। আজকে যারা মর্ডান সুডো সায়েন্সের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আল্লাহর বলা শব্দ গুলোকে কাফিরদের চিন্তাধারার সাথে মেলায়, তারা অবশ্যই ভুল করছে। একলোক শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদকে(হাফিঃ) নজম ও কাওকাবের ব্যপারে প্রশ্ন করেন। শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ(হাফিঃ) উত্তরে কাফিরদের কাছে থেকে আসা প্ল্যানেটারি নোশনের সাথে কুরআনের মধ্যস্থতা করলেন। এমনভাবে উত্তর করলেন যাতে সায়েন্টিফিক কমিউনিটিও না কষ্ট পায়, আবার রিলিজিয়াস কমিউনিটিও কষ্ট না পায়। এজন্য একদিকে বললেনঃ
"As for limiting the word “najm” and using it only to refer to huge heavenly  bodies that have fixed locations in the sky, are burning and emit light by themselves, such as the sun, and using the word “kawkab” to refer to solid heavenly bodies that are not burning, such as the planets of the solar system, this is modern astronomical terminology. There is nothing wrong with adopting and using this terminology, as there is no problem with the terminology itself, but it is wrong to judge the language of the Holy Quran by the terminology of later eras. Rather what we must do is understand the Holy Quran in accordance with the Arabic language, because that is the language in which the Quran was revealed. Whoever disagrees with that is like one who understands the word sayyaarah in the verse “And there came a caravan of travellers [sayyaarah]; they sent their water-drawer” [Yoosuf 12:20] as referring to the vehicle that is known nowadays in which people ride and travel by mechanical means [sayyaarah in modern Arabic means “car”] then raises an objection against the Quran by saying that cars were not invented at the time of Yoosuf (peace be upon him), so how can cars be mentioned here?! "[৩]

তার কথা হচ্ছে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক শিক্ষা অনুযায়ী তথ্য/পরিভাষাকে গ্রহন করায় কোন দোষ নেই(!), কিন্তু কুরআনকে বুঝতে হবে কুরআন নাযিলের সময়ের প্রেক্ষাপটে যা বুঝানো হয়েছে আরবি ভাষায়, তার উপর। তিনি আরবি শব্দের 'গাড়ি'র উদাহরন দিয়েছেন। ১৪০০ বছর আগে যেই মেকানিক্যাল চাকাওয়ালা বাহন ছিল সেটাকে যে শব্দে ডাকা হত, সে শব্দ দ্বারাই আজ গাড়িকে ডাকা হয়। মানুষ প্রাচীন শব্দকে আধুনিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। এমতাবস্থায় তার মতে কোনভাবেই কাউকে বলা উচিত না যে, কুরআনে কেন গাড়ির কথা আসল, গাড়ি তো ১৪০০ বছর আগে আবিষ্কৃত হয় নি!

তিনি চমৎকারভাবে সমন্বয় করলেন বৈজ্ঞানিক শব্দ গ্রহন এবং ইসলামের মধ্যে। কাফিরদের থেকে আসা বিশ্বাসগত শিক্ষা বা পরিভাষাকে গ্রহন করাতে দোষ নেই, কিন্তু কুরআনকে বুঝবার জন্য ওই নবোদ্ভাবিত বিদ্যা বা শিক্ষাকে ব্যবহার করা যাবে না! অদ্ভুত প্যারাডক্সিক্যাল কথা!

বিজ্ঞানপন্থীদের আরেক মিথ্যা দাবী হচ্ছে ,বিলিয়ন ট্রিলিয়ন (কাল্পনিক)গ্রহ-নক্ষত্র কাল্পনিক সীমাহীন মহাশূন্যের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সমস্ত নক্ষত্রদের দ্বারা শুধু প্রথম আসমানকে সুশোভিত করেছেন। অর্থাৎ কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী তারকারা শুধুই নিকটবর্তী আসমানে তথা প্রথম আসমানে এর বাইরে নয়। গ্রহ বলে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমরা রাতের আসমানে মিটমিট করে যাদের জ্বলতে দেখি, তাদের সবাই  প্রথম আসমানে ভাসমান নক্ষত্র।
আল্লাহ তাবারাকা তা'য়ালা সূরা মুলকে ইরশাদ করেনঃ
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি
[৬৭:০৫]

আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি[ছফফাতঃ৬]


সুতরাং, আশা করি দেখতে পাচ্ছেন আজকের কাল্পনিক বিজ্ঞান আর আমাদের শাশ্বত সত্য ইসলামের সৃষ্টিতত্ত্বের মধ্যে বৈপরীত্য এবং সাংঘর্ষিকতা। দুয়ের মধ্যে জ্ঞানগত ব্যবধান আকাশ পাতালের।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তারকারাজির পতনের স্থানের(অস্তাচল) কথা বলেছেন। আধুনিক অপবিজ্ঞানকে গ্রহণকারী মুসলিমরা আনন্দের সাথে বলছে এটাই ব্ল্যাকহোল। কুরআন বিজ্ঞানময়! কুরআনে ১৪০০ বছর আগে ব্ল্যাকহোলের কথা বলা হয়েছে যা হাবল টেলিস্কোপে এখন দেখানো হচ্ছে(৪)। অথচ সত্য হচ্ছে এসব ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব কম্পিউটার এনিমেশন, বই পুস্তক আর কল্পনার বাইরে নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কি ব্ল্যাক হোলের কথাই বলেছেন?! কখনোই না।

আল্লাহ এর দ্বারা খুন্নাস তারকাদের কথা বলেছেন যারা উদিত ও এবং অস্ত যায়। আল্লাহ ওদের অস্তাচলের শপথ করেছেন।
আল্লাহ বলেনঃ
وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى
নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়[আন নাজমঃ-১]




সুতরাং এই আয়াতটি নিচের আয়াতের মতই সমার্থক(ইমাম ইবনে কাসিরও তাই বলেছেন) যে আয়াত দ্বারা আজকের বিকৃত চিন্তার মুসলিমরা ব্ল্যাকহোল বুঝিয়ে থাকে।
فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ
অতএব, আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি[ওয়াক্বিয়াহ-৭৫]




কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সকল নক্ষত্রদেরকে নির্বাপিত করবেন,সেগুলো ঝরে পড়বে আসমান গা থেকে।
আল্লাহ বলেনঃ
فَإِذَا النُّجُومُ طُمِسَتْ
অতঃপর যখন নক্ষত্রসমুহ নির্বাপিত হবে[মুরসালাতঃ৮]

وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,[ইনফিতারঃ২]

وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ
যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে(তাকভীর:২)

উপরে দেখতে পাচ্ছেন হাদিসটি, যেখানে ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন, সূর্যকে নিষ্প্রভ করে উপুর করে মাটিতে নিক্ষেপ করা হবে। নক্ষত্রদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে। এর দ্বারা প্রমান হয়,আমাদের পৃথিবী সম্পর্কে অপবিজ্ঞান যা বলে তা মিথ্যা। সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্র বিজ্ঞান অনুযায়ী পৃথিবীর তুলনায় বিলিয়ন মিলিয়ন গুন বড়। এত বড় যে পৃথিবীকে নক্ষত্রদের সামনে একটা বিন্দুর সমতুল্যও মনে হবে না।এদেরকে পৃথিবীর উপর পতনের কথা কল্পনাও করা যায় না। এর সমপর্যায়ের ভাবনা এরূপ যে কোন এক বিন্দু বালির উপর গোটা পৃথিবীকে ফেলার কথা বলা। কিন্তু সাহাবীদের(রাঃ) আকিদা এটাই যে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন এদেরকে পৃথিবীর ভূমিতে ফেলে দেবেন। সকল নক্ষত্রদেরকে সমুদ্রে ফেলে নিষ্প্রভ করবেন। এটা প্রমান করে সত্যিকারের সৃষ্টিজগতের প্রকৃতি। এটা সাহাবীদের আকিদা যে, নূনের পৃষ্ঠদেশে সমতলভাবে বিছানো যমীনের বিশালতার তুলনায় চাঁদ সূর্য, নক্ষত্ররা অনেক অনেক ছোট। এদের প্রত্যেককে একত্রে সমুদ্রে নিক্ষেপ সম্ভব। আল্লাহ স্বয়ং এদের খসে/ঝড়ে পড়ার কথা বলেছেন।

Source:Al Bidaya Wan Nihaya






ছায়াপথ-আকাশগঙ্গা




ছায়াপথের ব্যপারে কাফির মুশরিকদের শেখানো আকিদা হচ্ছে সেটা হচ্ছে লক্ষকোটি তারকা গ্রহ-নক্ষত্র সমস্তকিছুর ধারক। এটা ধূলিকণা, গ্যাস,প্লাজমা,কৃষ্ণবস্তু দ্বারা গঠিত। এগুলো হাজার হাজার আলোকবর্ষের দৈর্ঘ্যপ্রস্ত বিশিষ্ট হয়ে থাকে। সমগ্র মহাকাশে এরকম বিলিয়ন মিলিয়ন ছায়াপথ আছে। প্রতিটা ছায়াপথ আবার মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র ধারন করে। প্রত্যেক ছায়াপথ সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে প্রচন্ড গতিতে(ঘন্টায় মিলিয়ন বিলিয়ন কিলোমিটার) মহাশূন্যের অজানা গন্তব্যে এদিক ওদিক ছুটে চলছে[৫]।

অথচ ছায়াপথের ব্যপারে ইসলামের শিক্ষা সম্পূর্ন ভিন্ন।ছায়াপথ হচ্ছে আসমানের একটি দরজা। কিয়ামতের সময় এই দরজা থেকেই বিদীর্ণ হওয়া শুরু হবে।

সুতরাং সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, আজকের উম্মাহ কতটা জঘন্যভাবে নব্যুয়তের শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাফিরদের কাল্পনিক অসত্য শিক্ষাকে গ্রহন করে নিয়েছে! বর্তমান যুগের আলিম, দাঈ এবং গায়রে আলিম সমস্ত মুসলিমের কাছে প্রশ্ন, কাফিরদের শিক্ষার কোন বিষয়টা তাদের নিকট নব্যুয়তের শিক্ষার চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য, চাকচিক্যপূর্ন এবং উত্তম বলে মনে হয়েছে, যার দরুন তারা কাফির-মুশরিকদের ভ্রান্ত আকিদা ও শিক্ষাকে গ্রহন করে নিয়েছে?!

আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থা পুরোপুরি অনুসরন করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি সাপের গর্তেও ঢুকে, তবে তোমরাও তাতে ঢুকবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি ইয়াহুদী ও নাসারাদের কথা বলছেন? নবী (সাঃ) বললেন, তবে আর কার কথা?’’ 
বুখারী ৩৪৫৬; মুসলিম ৬৬৭৪-(৬/২৬৬৯)

‘’ইয়াহুদি ও নাসারারা তোমার প্রতি রাজী হবে না যে পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের আদর্শ গ্রহন করো। বল- আল্লাহর দেখানো পথই সুপথ এবং তুমি যদি জ্ঞান আসার পরেও ওদের ইচ্ছা অনুযায়ী চল, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর ক্রোধ হতে রক্ষা করার মতো কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না’’ 
[বাকারাহ ২/১২০]


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার প্রশংসা ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা, যে তিনি আমাদের মত অতি স্বল্পসংখ্যক অধমকে হক্ককে চেনার এবং মান্য করার তাওফিক দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।



ওয়া আল্লাহু আ'লাম



[চলবে ইনশাআল্লাহ...]




রেফা:
১)
https://www.cfa.harvard.edu/~ejchaisson/cosmic_evolution/docs/splash.html
https://www.universetoday.com/54756/what-is-the-big-bang-theory/
https://www.space.com/13352-universe-history-future-cosmos-special-report.html
https://phys.org/news/2018-06-planet-formation-star-maturity.html
http://www.bigbangcentral.com/galaxy_page.html

২)
http://www.atheistbangla.com/2018/09/how-earth-created.html

৩)
https://islamqa.info/en/answers/243871/meteorites-and-shooting-stars-may-be-called-stars-nujoom-and-heavenly-bodies-kawaakib-in-arabic

৪)
https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/Mahfuzhappy/29261752

৫)
https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ছায়াপথ

বিগত পর্বগুলোর লিংকঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/article-series_85.html

0 Comments:

Post a Comment