Monday, December 28, 2020

বান্দার সাহায্য রবের জন্য

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। 

الحمد لله رب العالمين، اللهم صلِّ على محمد وآله وسلم وبارك. 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি বিশ্বজাহানের রব। হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পরিবার পরিজনের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। 


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, 

 

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُ‌وا اللَّهَ يَنصُرْ‌كُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ 

অর্থ: হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। [ সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৭ ] 


অধিকাংশ মানুষ হয়তো আল্লাহ তায়ালার এ কথার দিকে দৃষ্টি দেয়, “আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখবেন”, কিন্তু তার পূর্বে যে শর্ত রয়েছে, “যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর” এ দিকে কেউ দৃষ্টি দেয় না। অথচ আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আল্লাহ তা’য়ালা সাহায্য করবেন যদি তোমরা তাকে সাহায্য কর। কীভাবে বান্দা আল্লাহ তায়ালাকে সাহায্য করবে? 


উস্তাদ আব্দুল্লাহ বিন খালেদ আল-আ’দম বলেন: বান্দার কাছ থেকে রবের সাহায্য কামনার উদ্দেশ্য হল – বান্দার দোয়ার বিনিময়ে আল্লাহ বান্দাকে এমন সাহায্য করবেন যা দ্বারা সে গুনাহ ও খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, কল্যাণকর কাজের চেষ্টা করতে পারে এবং উত্তম আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে পারে। আর পদস্খলন ও ভুলত্রুটির কারণে সর্বদা অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা-ইস্তেগফার করতে থাকে। ফলে আসমান-জমিনের রব (তার প্রতি) সন্তুষ্ট হয়ে যায়। 


ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ: বলেন, কুরআন এ কথার প্রমাণ করে যে শক্তি সামর্থ্য ও ইজ্জত-সম্মান আল্লাহর নিকট তাওবাকারী ইবাদতগুজার বান্দাদের জন্যই। কুরআনের বহু জায়গায় এর সমর্থনে আয়াত রয়েছে। যেমন সূরা হুদে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 

 


وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِينَ 

আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না। [ সূরা হুদ ১১:৫২ ] 

 

এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তিনি তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। এটা কখন করবেন? যখন ইস্তিগফারের আমল করা হবে। যেমনটি আল্লাহ তা’আলা উক্ত আয়াতে এভাবে বলেছেন: 

اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ 

অর্থ: তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। 

উক্ত আয়াতের আরেকটি অংশ হচ্ছে: 

 


وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ 

অর্থ: তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন…। 

 

এখানে ‘قُوَّةً’ (শক্তি) শব্দটি নাকেরাহ তথা অনির্দিষ্ট। এটাকে অনির্দিষ্ট আনা হয়েছে অনেক প্রকারের শক্তি বুঝানোর জন্য। ‘قُوَّةً’ বা শক্তি কি জিনিস? 


এর উত্তরে বলা হয় যে, হতে পারে এখানে শক্তি দ্বারা বাহ্যিক শক্তি উদ্দেশ্য। বাকি এটা অভ্যন্তরীণ শক্তিও হতে পারে। আবার কখনো উভয়টি একত্রেও উদ্দেশ্য হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি করবেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল বীরত্ব, ধৈর্য, দৃঢ়তা, অগ্রগামিতা এবং স্থিরতা দান করবেন। আর বাহ্যিক শক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হল শারীরিক শক্তি, অস্ত্র ও সংখ্যা ইত্যাদির শক্তি। 


উস্তাদ বলেন: বান্দার কাছে রবের সাহায্য কামনার অর্থ হল - যেন বান্দার প্রতি আল্লাহ তা’আলার এমন সাহায্য অবতীর্ণ হয়, যা দ্বারা সে তার আমলকে আল্লাহর জন্য খালেস করে নিতে পারে। নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে। নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে পারে। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং আল্লাহর সামনে নিজকে আদনা(নগণ্য) হিসেবে পেশ করতে পারে যাতে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। 


বান্দা থেকে কাঙ্ক্ষিত সাহায্য হল - বান্দা ঐ ব্যক্তির কথা শুনবে এবং মানবে যাকে আল্লাহ তায়ালা নেতৃত্বের অধিকারী বানিয়েছেন। কেননা (বান্দার আল্লাহকে) সাহায্য করার অর্থই হল, আল্লাহ তায়ালার আদিষ্ট বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলা এবং যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন তার বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। 


সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যে সম্পর্কে আদেশ করেছেন তথা “শ্রবণ ও অনুসরণ করা” - এটাই অনুসরণ করাই হল আল্লাহ তায়ালাকে সাহায্য করা। 


উস্তাদ বলেন: এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল - কাঙ্ক্ষিত সাহায্যের মানেই হচ্ছে বান্দার শক্তি ও সামর্থ্য ছেড়ে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার শক্তি ও সামর্থ্যের দিকে যাওয়া এবং তাঁর উপরই ভরসা করা। 


অর্থাৎ কখনো কখনো দেখা যায় যে, মানুষ নিজের শক্তির উপর ভরসা করে, নিজের অস্ত্রের উপর ভরসা করে আর বলে যে, আমার নিকট দামি অস্ত্র আছে, আমার নিকট অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী অস্ত্র আছে, আর সে তার বাহ্যিক এই শক্তির উপরই ভরসা করে থাকে। - এটা ভুল। এমনটা করা যাবে না। আমরা অনেক সময় শুনতে পাই ভাইদের কেউ কেউ হয়ত বলে থাকেন, “আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের কাছে অস্ত্রের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে”। অথবা বলে “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এত এত পরিমাণ গনিমত হিসেবে পেয়েছি”। অথবা এভাবে বলে যে, “আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন(সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালকের জন্য) আমাদের নিকট আধুনিক সকল যোগাযোগ মাধ্যম এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে”। এটা হচ্ছে অস্ত্রের উপর ভরসা। এটা আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা নয়। 


আবার কখনো এভাবে বলে যে, “আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ চাহে তো আমাদের অমুক নেতা একটি পরিকল্পনা করবেন..!” অর্থাৎ এখানে ভরসা হচ্ছে নেতার উপর, তার পৃষ্ঠপোষকতা এবং তার তীক্ষ্ণ মেধার উপর। আর এটাই হচ্ছে ভুল। 


আবার কখনো এভাবে বলে যে,“আমরা সুদৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি…” - এটাও পরিকল্পনার উপর ভরসা, আল্লাহর উপর ভরসা নয়। 


তবে হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিব এবং পরিকল্পনাও গ্রহণ করব। এভাবে উত্তম নেতা নির্বাচন, উৎকৃষ্ট যোগাযোগ মাধ্যমও গ্রহণ করব। সাধ্যানুযায়ী অত্যাধুনিক দামি এবং পরীক্ষিত নির্ভরযোগ্য অস্ত্রের পরিমাণও জমা করব। অর্থাৎ আমরা পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিব কিন্তু নির্ভর করব একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উপর, ভরসা করব একমাত্র তাঁরই উপর। আমাদের কাছে যা থাকবে তার উপর ভরসা করব না। কেননা আমরা তো আল্লাহর উপরই ভরসা করি। 


আমাদের শত্রুরা আমাদের চাইতে অনেক বেশি অস্ত্র ও সংখ্যার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন। তারা এমন উন্নত অস্ত্র, দক্ষ পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেন অপদস্থ হয়? 


এর কারণ হচ্ছে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করি আর তারা করে না। সুতরাং আমরাও যদি আল্লাহর উপর ভরসা ছেড়ে দিয়ে শত্রুদের মত আমাদের কাছে যা আছে তার উপর ভরসা করি তাহলে নিশ্চিত পরাজয় বরণ করতে হবে। অতএব আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর এটাই হল বান্দার নুসরাত। 


উস্তাদ বলেন: “বান্দার কাছে রবের সাহায্য কামনার অর্থ হল” বান্দা যাতে যথাযথ প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গ্রহণ করে নুসরাতে ইলাহী এর নিয়ামত অর্জন করতে পারে সেই চেষ্টা করা। একটা ভুল ধারণা হল, যে আল্লাহর উপর ভরসা করবে সে আসবাব গ্রহণ করবেনা। এটা ভুল চিন্তা এবং পরাজয়ের কারণ। 


এ বিষয়ে তিনি শাইখ আবু কাতাদাহ আল-ফিলিস্তিনী রহ. এর একটি কথা উল্লেখ করেছেন। শাইখ তার আলোচনায় আল্লাহ তা’য়ালার এই বাণী উল্লেখ করেন – 

 


إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا 

তাদের কিছু কৃতকর্মের কারণে শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছিল.........। 

 


আয়াতটি উল্লেখ করে বলেন, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা। (এটি দ্বারা তিনি পূর্বের এ কথাকে বুঝিয়েছেন: একটা ভুল ধারণা হল, যে আল্লাহর উপর ভরসা করবে সে আসবাব গ্রহণ করবেনা। এটা ভুল চিন্তা এবং পরাজয়ের কারণ।) শাইখ রহ. বলেন, আমি প্রত্যেক মুজাহিদকে একথার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য বলি। আর এখানে আরো একটি বিষয় রয়েছে যা আমরা আলোচনা করব, তা হল ‘নিশ্চয়ই গুনাহ পরাজয়ের কারণ’। কিন্তু প্রশ্ন হল – “সকল গুনাহ-ই কি পরাজয়ের কারণ? উত্তর হল – “না। সকল গুনাহ পরাজয়ের কারণ নয়। বরং যে গুনাহের সম্পৃক্ততা জিহাদ ও ক্বিতালের সাথে রয়েছে শুধু সে গুনাহ-ই পরাজয়ের কারণ। 


যেমন বর্তমানে এধরণের যে সকল গুনাহ হয় তা হল:- প্রশিক্ষণ না নেয়া, এ গুনাহটাও পরাজয়ের একটি কারণ। এমনিভাবে জামাআহ তথা দলবদ্ধতা ত্যাগ করা বা দল ভেঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া, আমিরের নাফরমানী করা, শক্তি অর্জনের সুন্নাহর পথকে গ্রহণ না করা - এ বিষয়ে উপকারী ব্যক্তি নির্ধারণ না করা ইত্যাদি গুনাহও পরাজয়ের অন্যতম কারণ। অন্যান্য গুনাহের তুলনায় এগুলোকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই, কেননা অন্যান্য গুনাহের প্রভাব যুদ্ধের ময়দানে ফলাফলের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিকভাবে দেখা যায় না। কিন্তু এগুলোর প্রভাব তাৎক্ষনিকভাবে দেখা যায়। 


তবে আমরা অবশ্যই অন্যান্য গুনাহ ও অপরাধ থেকেও তাওবা করার কথা বলি। যেমন ধরুন - আমার মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ রয়েছে! হ্যাঁ, এরও প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এটা কি (যুদ্ধক্ষেত্রে) জামাআহ বা দল ত্যাগ করা থেকে বড় অপরাধ? 


এর থেকেও বড় অপরাধ যেটা সেটা হল প্রশিক্ষণ না নেয়া, অস্ত্র সংগ্রহ না করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাহায্য কামনা করে, সে কেন যুদ্ধের পূর্বেই অস্ত্র সংগ্রহ করবে না? সে কি অক্ষম? সে কি অপরাধী এবং গুনাহগার নয়? এ সবগুলোই কি গুনাহ নয়? 


উস্তাদ বলেন: অন্যান্য গুনাহের খারাবীও কম নয়, কিন্তু তার প্রভাব ময়দানে ফলাফলের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক নয়। আর ঐ সকল গুনাহ যা জিহাদ ও ক্বিতালের আ’মালের সাথে সম্পৃক্ত সেগুলোর প্রভাব তাৎক্ষনিক। একারণেই এটা أبعد النجعة “আবআদুন নুজ’আ” এর মত। 


أبعد النجعة “আবআদুন নুজ’আ” কি জিনিস? তা হল দানা পানির তালাশে দূরবর্তী কোন স্থানে গমন করা। এটা এমন স্থান, যেখানে যাওয়া হয় বিনোদন কিংবা পশু চড়ানোর জন্য, তা অনেক দূরবর্তী একটি স্থান, যার আশে পাশে অনেক জায়গা রয়েছে। এমন স্থানকেই আমরা ‘আবআদুন নুজয়া’ বলে থাকি। (ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই পরিভাষাটি তখনই ব্যবহার হয় যখন সে তার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সঠিক পথ ছেড়ে ভুল পথে অগ্রসর হয়। যেমন বলা হয় “ফুলানুন আবআদুন নুজ’আ”)। ঠিক তদ্রুপ জিহাদ ও ক্বিতালের আ’মালের সাথে সম্পৃক্ত গুনাহগুলোকে পরাজয়ের সবব বা কারণ না ধরে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের গুনাহ ও ইয়াতীমের মাল ভক্ষণের মত গুনাহগুলোকে পরাজয়ের কারণ ধরলে তখনই বলা হয় এটা أبعد النجعة “আবআদুন নুজ’আ” এর মত। 


সুতরাং আমাদের জন্য উচিৎ হল, সবব আর মুসাব্বাবের মাঝে কী সম্পর্ক এব্যাপারে সতর্ক থাকা। আ’মল ও নতীযা বা ফলাফলের সাথে কি সম্পর্ক? এবং কোন গুনাহগুলো পরাজয়ের কারণ আর কোন গুনাহগুলো পরাজয়ের কারণ না? সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। শাইখের কথা এখানেই শেষ। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে শাইখের মর্যাদা বুলন্দির প্রার্থনা করছি। 


جزاكم الله خيرًا، والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته 

 

*********************

--শাইখ হারিস বিন গাজি আন নাজারি (রহিমাহুল্লাহ)

ডকুমেন্ট সোর্সঃ একিউ


Friday, December 18, 2020

রাজাকার এবং দেশদ্রোহীতাঃ এ্যান অব্লিক্ক এ্যাঙ্গেল

ভারতের সেবাদাসে পরিনতকারী রাজনৈতিক তাগুত শাসক আওয়ামীতাগুতলীগকে প্রায়ই রাজাকার এবং দেশদ্রোহীতার ট্যাগ দিয়ে কিছু মানুষের উপর ঘেউ ঘেউ করে চড়াও হতে দেখা যায়। মালাইনদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই রাজাকার লেবেল ধরিয়ে দেয়ার অদ্ভুত প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আসলে আজকের রাজাকার কারা?


১৯৭১ এর আগের দেশপ্রেমিকরাই আজকের রাজাকার। যারা ভারতের পাতা ফাঁদে পাকিস্তান আলাদা হোক সেটা চায় নি,তারাই আজকের স্বীকৃত রাজাকার। একইভাবে তৎকালীন সময়ে মুজিবকে দেশদ্রোহীতার জন্য আগড়তলার মামলা দেয়া হয়েছিল। তখন তাকে কন্সিডার করা হত টেররিস্ট,বিচ্ছিন্নতাবাদী অপশক্তি হিসেবে। এটাই হচ্ছে অব্লিক্ক পার্স্পেক্টিভ। যেকোন একটা দিক দিয়ে আপনি হিরো অথবা ভিলেন। যেহেতু মুজিব তার চেষ্টায় সফল, তাই এখন জাতির জনক খেতাব পেয়ে গেছেন। আজকে একদল আছে যারা খুলনাকে ভারতের অংশ করতে চায়। মাঝেমধ্যে আলাদা ম্যাপও ছাপে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একদল স্বাধীন স্টেট করতে চায়। এই লোকগুলো আমাদের দেশের প্যাট্রিয়টদের কাছে ভিলেন অথচ তাদের সেইম ইডিওলজির এ্যাডহিয়ারেন্টসদের কাছে মুক্তিসেনা,মুক্তিযোদ্ধা,ন্যশনাল হিরো। 


এখন আমাদের অবস্থান এমন হতে হবে যা আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের জন্য কল্যাণমূলক চিন্তাধারার সমর্থন। দ্বীনের সাথে সঙ্গতিপূর্ন আদর্শ বা অবস্থান। সুতরাং রাজাকার কিংবা জঙ্গী ট্যাগ সম্পূর্ন আপেক্ষিক একটা ব্যপার। 

কিসের জন্য হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ?

আমি জানি এ পোস্ট পাঠ করার শুরুতে অনেক নির্বোধ মুশরিকলীগ বলতে শুরু করবে আমি পাকিস্থানের দালালি করে লিখছি... ইত্যাদি ইত্যাদি। কুকুরের মুখে ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনে চুপচাপ থাকাটা আসলে এক প্রকার ভীরুতা। 


মূলত আমাদের দেশের কথিত স্বাধীনতা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে ভাষা আন্দোলনের দ্বারা। এর কলকাঠি শুরু থেকেই ভারত নাড়ছিল। ভারতের মূল উদ্দেশ্যঃ পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করে ফেলা। এ কথা শিবসেনাদের এক শপথেই ত্রিশূল উচিয়ে মালউনদেরকে বলতে দেখেছি। ভারতের মালউন[অভিশপ্ত] মুশরিকরা ইসলামিস্ট বলতে পাকিস্থানকেই রিপ্রেজেন্ট করে, এজন্য মুসলিমিদেরকে দুর্বল করতে হলে পাকিস্তানকে দুর্বল করতে হবে। এ লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনে নামে মালাউন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পরবর্তীতে হুজুগে 'অসাম্প্রদায়িক' মুসলিম ইন্টেলেকচুয়ালদের সমর্থনে সাধারন মানুষও এতে যোগ দেয়। ফলে শক্ত আন্দোলনে রূপ নেয় ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনই পরে স্বাধীনতা আন্দোলনে ফুয়েল জোগায়। আসলে ভাষা পরিবর্তন খুব বেশি কিছু না। আট দশ বছরের চেষ্টায় যেকোন দেশের জনগন নতুন একটি ভাষায় সফল ভাবে শিফট করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ মিশর, মরক্কো,সোমালিয়া,সিরিয়াতে নিকট অতীতেই আরবি ভাষার প্রচলন ছিল না অথচ এখন সেখানে সবাই আরবিতে কথা বলে, আরবের
অন্তর্ভুক্ত করা হয় এদেরকে। যেহেতু ভাষা পরিবর্তনের প্রশ্ন উঠেছিলোই,বঙ্গদেশীয় উলামারা এক হয়ে এই দাবি করতেই পারত যে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবি চাই। এতে দুই ভূখন্ডের উপর সমান সমান বিচার হত। এর বিরোধিতা পশ্চিম পাকি মুসলিমরা করত না কেননা এটা কুরআনেরই ভাষা। হয়ত ফলাফলে বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় যেত সব কিছুকে অপরিবর্তিত রেখে। কিন্তু ওই সময়ের আলিমদের কোন ভূমিকায় ছিলেন না। এরকারন এ অঞ্চলের আলেম উলামাগন বরাবরের মতই সুবিধাবাদি আপোষকারি। এরা সবসময় অসাম্প্রদায়িকতাকে প্রমোট করে এসেছে। ফলাফলস্বরূপ দ্বীন বিরোধী সংবিধান এবং স্বাধীনতার অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমন্ত্রকে মেনে নিয়েছে নিরবে অন্য লাখো অসাম্প্রদায়িক বংগালের সাথে সাথে। ইংরেজপূর্ব মুসলিমদের শাসনামলেও এই অসাম্প্রদায়িকতার খল চেতনা বজায় ছিল। তাছাড়া হিন্দুত্ববাদি চেতনা থেকে অফিশিয়ালি বাংগালি মুসলিমরা সরে আসলেও আনঅফিশিয়ালি ঠিকই হিন্দুয়ানি কস্টিউম বলবৎ ছিল সংস্কৃতিতে। এমনকি এটা আজও চলছে মালুত্ববাদী পহেলা বৈশাখ,বিয়ে অনুষ্ঠান, পরিধেয় পোশাকে....। মূলত এ কারনেই পাকিস্তান বাংগালি আওয়াম মুসলিমদের জনগনকে হাফ-হিন্দু হিসেবে কনসিডার করত। এ সুযোগটা ভাল করেই নিয়েছিল ভারত। তাদের অখন্ড মহাভারতের স্বপ্ন পূরণে পাকিস্তানকে দূর্বল করে বাংলাকে আলাদা করে নিজেদের সাথে মিলিয়ে দিতে সবসময় প্রত্যক্ষভাবে পাশে ছিল ভারত। বোকা বাংগালি সো কল্ড মুসলিমদের জীবনকে ইউজ করে ওরা নয় মাসের যুদ্ধ বাধাঁয়। ওরা ভঙ্গবল্টুকে নেতা হিসেবে বেছে নেয়। এমনকি ভারতীয় মিলিটারি,প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়েও যুদ্ধ করে মুসলিম ভূখন্ডকে আলাদা করে দেয়। এজন্যই পাকিস্তানের দ্বারা দেয়া বিজয়ের লিখিত স্বীকৃতির সময় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ছিলেন ভারতের মালাউনবাহিনীর অরোরা। অর্থাৎ সহজ করে বললে যুদ্ধটা ছিল ভারত ভার্সেস পাকিস্তান। মাঝখানে মূর্খ অসাম্প্রদায়িক নির্বোধ বাঙ্গালি মুসলিমরা জীবন দেয় মুশরিকদের পক্ষে। এজন্যই স্বাধীনতার পর জাতীয় সংগীত রাখা হয় রবীন্দ্রনাথ শূকরের ওই গান, যেটা রচনা করেছিল ১৯১১ এর বঙ্গভঙ্গ রদে ভারত-বাংলা পূনঃসংযোগের আনন্দে। অর্থাৎ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের আলাদাকরন = ভারতের সাথে পুনর্মিলন। একই আনন্দে এই সঙ্গীতকে রাখা হয় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। হয়ত অফিশিয়ালি বাংলাকে ভারতের সাথে রিকানেক্ট করার আনফিনিশড জব সম্পন্ন হত যদি কিছু জাতীয়তাবাদি সেনা কর্মকর্তা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট বঙ্গবল্টুকে নকডাউন না করতেন। আল্লাহু আ'লাম। তবে এটা নিশ্চিতভাবে জানা উচিত যে আজকে বঙ্গবল্টু নামের খলনায়কটাকে নিয়ে যেভাবে যিকির করা হচ্ছে, দেবতা বানিয়ে পূজো দেয়া হচ্ছে, বাস্তবতা ছিল একদমই ভিন্ন যে ইতিহাসকে মুছে ফেলা হয়েছে। সত্যিকারের ইতিহাস কিছুটা জানতে পারবেন, "আমার ফাসী চাই" এবং "আমাদের স্বাধীনতা - পর্দার এপার ওপার" নামের দুটি নিষিদ্ধ গ্রন্থে। দুটিই পিডিএফ পাওয়া যায়। আমি দুটো বইয়ের লিংক নিচে দিয়ে দেব। যারা বাস্তব ইতিহাস জানে তারা এই বিড়িখোড় তাগুতকে জাতির পিতা বলতে লজ্জাবোধ করবে। 


ভারত শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদি শক্তির জন্যই স্বার্থকে পূর্নভাবে হাসিল করতে পারেনি। ৭২ সালেই দেশকে ভারত নিজের স্বার্থে ব্যবহার শুরু করে। ৭২ সালে ভার‍তের অনূকুলে নদী গবেষণা কমিশন গঠন করে। ফারাক্কা বাধে কি করেছে সেটা আপনারা ভাল করেই জানেন। অসমাপ্ত লক্ষ্যকে পূর্নতা দিতে আজ বঙ্গবল্টুর কন্যা হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা হয়েছে,সারাদেশকে RAW এজেন্ট দ্বারা ভরে দেওয়া হয়েছে। এদেশের সামরিক বাহিনী গুলোও আজ র' এর নিয়ন্ত্রনে। ৯০% মুসলিম এর দেশে সরাসরি আলিম উলামা এবং খোদ ইসলামি চেতনাকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেয়া হয়। আওয়াম সাধারন আলিমদেরকে ঘাড় মটকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আজ আওয়ামীলীগরা ঢাকায় বিজয় দিবসে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজায়। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী ফেসবুকে ১৬ ডিসেম্বর পাক ভারত যুদ্ধে ভারতের বিজয়ের স্ট্যাটাস দেয়। আমার মনে পড়ে আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগে ভারতীয় এক ফিল্মে বলেছিল, ৭১ এর যুদ্ধটা পাক বাংলার মধ্যে নয় বরং যুদ্ধটা পাক-ভারতের মধ্যে হয়। এবারের ১৬ই ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করে দখলের আনন্দ উদযাপন করেছে। আরএসএস দল গুলো তো ২০২৫ এর মধ্যে দেশ দখলের হুমকি দিয়েছিল। এখনো আরো পাঁচ বছর হাতে আছে। তারা তাদের গতিতেই কাজ করে যাচ্ছে, আমরাই ওদের উঠানো ফলস ইডিওলজিতে গা ভাসাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে। 


১.https://archive.org/download/IslamiBoi/Amader_shadhinota_pordar_epar_opar.pdf

২.https://mazams.weebly.com/uploads/4/8/2/6/48260335/amar_fashi_chai_bangla.pdf


Friday, December 11, 2020

পরীক্ষাস্বরূপ হক্বপন্থীদের জন্য বিপদ আপদ আসবেই

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

الحمد لله رب العالمين، اللهم صلّ على محمد وآله وسلم وبارك، أما بعد


হামদ ও সালাতের পর,

আল্লাহ তায়ালার বানী:-


أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبْ

অর্থ: “তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ (এখনো) তোমাদের উপর তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের অনুরূপ অবস্থা আসে নি। তাদের স্পর্শ করেছিল অভাব-অনটন ও রোগ-যাতনা এবং তারা প্রকম্পিত হয়েছিল। এমনকি রসূল ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিলেন তারা বলতে শুরু করলেন, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? শুনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।[সূরা বাকারা ২:২১৪]



দুনিয়ার জীবনে মানুষ সর্বদা পরীক্ষায় থাকে। আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াকে পরীক্ষাগার হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। কখনো এমন সময় আসবেনা যাতে কোন ধরণের পরীক্ষা থাকবে না। আর বান্দা আল্লাহ তা’আলার সাথে মিলিত হওয়ার ও জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো এমন সময় আসবেনা, যাতে প্রশান্ত হয়ে যাবে ও পরীক্ষা এবং বিপদ আপদের পরিসমাপ্তিতে পৌঁছে যাবে। 


বান্দা যখন জান্নাতে পৌঁছে যাবে, তখন তার সকল প্রকার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। আর জান্নাত হবে ভোগ বিলাসের বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে ভোগ বিলাস করতে চায়, সে দুনিয়াকে প্রতিদান প্রাপ্তির স্থান বানায় অথচ তা প্রতিদান প্রাপ্তির স্থান নয় বরং তা হল পরীক্ষাগার। 


আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ও নবী কুলের সরদার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ওহি প্রেরণ করে প্রথমে গোপনে, কিছুদিন পর প্রকাশ্যে দাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই কাজে তিনি কুফফারদের পক্ষ হতে কষ্ট, বাধা ও বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। 


এরপরে হিজরত ও হিজরতের কষ্ট সহ্য করার, স্বাধীন রাষ্ট্র বানানো এবং জিহাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার এই কাজ এই পর্যন্ত চালু ছিল যে, তিনি তার সবচেয়ে প্রিয়তম বন্ধু আল্লাহ তা’আলার সাথে মিলিত হয়েছেন এমতাবস্থায় যে, তিনি মুনাফিক ও ইয়াহুদীদের সাথে জিহাদ ও পরীক্ষার অবস্থায় ছিলেন।


রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয়তম বন্ধুর সাথে মিলিত হওয়ার পরে মুরতাদদের সাথে সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়। আর মুরতাদদের সাথে যুদ্ধের পরে রোম ও পারস্যের যুদ্ধ হয়। 


এভাবেই বান্দার ফিতনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা চলতে থাকবে, কিয়ামত দিবসে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত। আল্লাহ তা’আলা মানুষদের জন্য এটাই নিয়ম বানিয়েছেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা এই দুনিয়াকে পরীক্ষার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তুমি কোন দিন প্রফুল্লতার সাথে বলতে পারবেনা যে, আলহামদুলিল্লাহ এখন আমরা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি অথবা আলহামদুলিল্লাহ এখন আমরা এই যুদ্ধ থেকে মুক্তি পেয়ে গেছি। 

বান্দা একমাত্র জান্নাতেই প্রফুল্ল হতে পারবে, আল্লাহ তা’আলা বলেন:

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ

“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল”। [সূরা ইমরান ৩:১৪২]


জান্নাতের রাস্তা হল জিহাদ ও সবরের রাস্তা, তুমি কি ধারণা করছ যে, জিহাদ ও সবর করার আগেই জান্নাতে চলে যাবে? 

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

অবশ্যই আমি তোমাদের কে ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফসলাদির ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব, আর সুসংবাদ হল সবরকারীদের জন্য। [সূরা বাকারা ২:১৫৫]


এই আয়াতে ঐ সকল সবরকারীদেরকে সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং হকের উপর অটল থাকে আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত।

প্রত্যেকের দ্বীনদারি অনুযায়ী তার পরীক্ষা হয়- যেমনটি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

(أشد الناس بلاء الأنبياء، ثم الأمثل فالأمثل، يُبتلى الرجل على حسب دينه فإن كان صلب الدين اشتد بلاؤه، وإن كان في دينه رقة ابتُلي على حسب دينه...الحديث)

“সব চাইতে বেশী বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন নবীগণ, এর পরে যারা নবীগণের যত নিকটবর্তী ছিল তারা ততবেশী বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। প্রত্যেকেই তার দ্বীনদারি অনুযায়ী পরীক্ষিত হয়, সুতরাং সে যদি দ্বীনদারিতায় মজবুত হয় তার পরীক্ষা কঠিন হবে, আর যদি দ্বীনদারিতায় দুর্বল হয় তাহলে তার দুর্বলতা অনুযায়ী পরীক্ষিত হবে।,... হাদিসের শেষ পর্যন্ত। (তিরমিজী)


সুতরাং মানুষ তার দ্বীনদারী অনুযায়ী পরীক্ষিত হয়, যে তার দ্বীনদারিতায় যত অটল থাকবে তার পরীক্ষা তত কঠিন হবে।

শয়তান কতককে এই কথা বলে ধোঁকা দেয় যে, তোমার দ্বীনদারিতা মজবুত হলে কঠিন বিপদ আসবে, তাই তুমি কঠিন বিপদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য তোমার দ্বীনদারিতাকে দুর্বল কর। খবিস শয়তানের ধোঁকা কতইনা মারাত্মক! আর শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষও বলে, আমার দ্বীনদারিতা মজবুত হলে আমার বিপদও কঠিন হবে, আর আমি কঠিন বিপদ সহ্য করতে পারবনা, তাই আমার নফস ও ইবাদতকে দুর্বল বানাব, কারণ আমি ছোট বা দুর্বল বিপদ চাই, এটা শয়তানের ধোঁকা ও বুঝার ভুল। 



(সঠিক কথা হল) পরীক্ষা হবে দ্বীনদারিতা অনুযায়ী, তাই মানুষের পরীক্ষার উপযোগী ধৈর্য ও দৃঢ় থাকাবস্থায়ই তাকে পরীক্ষা করা হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে তার সাধ্যের বাহিরে পরীক্ষা করবেন না, বরং তাকে তার ঈমানের উপযোগী পরীক্ষা করবেন। এই পরীক্ষা তার ঈমান, ইয়াকিন, তাওয়াককুল ও সবরের উপযুক্ত হবে। তার পরীক্ষা সে অনুযায়ীই আসবে, এর চেয়ে বেশীর পরীক্ষা হবেনা। সুতরাং মানুষকে এমন পরীক্ষা করা হবে না, যেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সক্ষমতা তার নেই, যার ফলে কিয়ামতের দিবসে সে আল্লাহকে বলতে পারবে, হে আল্লাহ আপনি আমাকে সাধ্যের বাহিরে পরীক্ষা করেছেন! 


আসলে বিষয়টা এমন নয় বরং ঈমান অনুযায়ী বিপদ আসবে। অতএব যাদের দ্বীনদারিতা মজবুত, যদিও অন্যদের ঈমানের দুর্বলতার কারণে তাদের কাছে পরীক্ষা কঠিন মনে হবে কিন্তু যাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তার সেই পরিমাণ ঈমান আছে যার দ্বারা সে দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারবে এবং পরীক্ষায় সফল হতে পারবে। এটা সে এই কারণে পারবে কারণ আল্লাহ্ তার ঈমান মজবুত করে দিয়েছেন। 


(উদাহরণ স্বরূপ কেউ কেউ বলে যে,) “অমুককে কঠিন পরীক্ষা করা হয়েছে, তার জায়গায় আমি হলে বিপদে ধৈর্যধারণ করতে পারতাম না”। হ্যাঁ তার সেই পরিমাণ ঈমান, ইয়াকিন ও আল্লাহ তা’আলার সাথে সততা ছিল যা তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ্ এর দ্বারাই সেই পরীক্ষায় তাকে উত্তীর্ণ করেছেন।


এখানে উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল-আ’দম বলেছেন, আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদের জন্য আবশ্যক হল ছোট বড় প্রত্যেক আমলে আল্লাহ তা’আলার নিকট মনে মনে সওয়াবের আশা করা। এখানে ছোট বড় প্রত্যেক আমলের জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট সওয়াবের আশা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। সে আল্লাহর রাস্তায় থাকাবস্থায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কাজে থাকা অবস্থায় প্রত্যেক আমলেই আল্লাহর নিকট সওয়াবের আশা করবে। 


উস্তাদ বলেন, এটা এইজন্য যেন তার কোন প্রতিদান ও সওয়াব ছুটে না যায়। জিহাদ হল নেক কাজের অনেক বড় একটি দরজা ও নেকী অর্জনের বড় একটি ক্ষেত্র। আল্লাহর রাস্তার পথিক এই পথে চলতে যে সকল কষ্ট, বিপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, সওয়াবের প্রত্যাশা সে গুলোকে লাঘব করে দেয়। তার এই অনুধাবনটা নিঃসন্দেহে সফলতা অর্জনের উপায়, মনোবল বৃদ্ধির কারণ ও অন্তরের জন্য আনন্দের ব্যাপার হবে ইনশা আল্লাহ্।


আমরা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি, আর তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।


والحمد لله رب العالمين، وجزاكم الله خيرًا


_শাইখ হারিস বিন গাজি আন নাজারি (রহিমাহুল্লাহ)

Saturday, December 5, 2020

গুরাবা বা অপরিচিতগণ


لسلام عليكم ورحمة الله وبركاته

الحمد لله رب العالمين، اللهم صلُّ على محمد وآله وسلم وبارك

أما بعد:-

হামদ ও সালাতের পর উপদেশ হল:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

بدأ الإسلام غريبًا وسيعود غريبًا كمابدأ فطوبى للغرباء رواه مسلم

অর্থ: ইসলাম এসেছে নিঃসঙ্গ-অপরিচিতভাবে, অচিরেই আবার তা পূর্বের ন্যায় নিঃসঙ্গ-অপরিচিত হয়ে যাবে, সুসংবাদ (নিঃসঙ্গ-অপরিচিত) গুরাবাদের জন্যই। 

(মুসলিম)

 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে ঐ সকল লোকদের প্রশংসা করেছেন যারা অপরিচিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন – طوبى ‘তুবা’ অর্থাৎ সুসংবাদ। আবার طوبى ‘তুবা’ নামে জান্নাতে একটি গাছও রয়েছে। অতএব সুসংবাদ এই গুরাবাদের জন্যই।


গুরাবার উদ্দেশ্য: গুরাবা দ্বারা তাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে – যারা ওহী তথা কুরআন সুন্নাহকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছে - যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ আঁকড়ে ধরেছিলেন। এটাই ‘গুরাবা’ এর অর্থ। একাকী থাকা কিংবা বিরোধিতা করা, এটা গুরাবার অর্থ নয়। বরং গুরাবা অর্থ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই আদর্শের উপর ছিলেন তা আঁকড়ে ধরা। যেমনটি হাদিসে এসেছে: بدأ الإسلام غريبًا ( ইসলামের সূচনা হয়েছে গরীব তথা নিঃসঙ্গ-অপরিচিত অবস্থায়)। গুরাবারা হাদিসের এই আদর্শকেই আঁকড়ে ধরেছে, যে আদর্শের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন। সুতরাং غربة ‘গুরবাত’ হল, সত্যের জন্য মানুষ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া। 


শেষ জামানায় বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাবে, মতভেদ বৃদ্ধি পাবে এবং বিদআ’ত বৃদ্ধি পাবে, এমনকি সুন্নাহ অপরিচিত হয়ে যাবে। সেই সাথে সত্যও অপরিচিত হয়ে যাবে। জমিনে প্রতিষ্ঠিত থাকবে বাতিল শক্তি – আর যা সত্যের অনুগামী হবে তা হবে প্রত্যাখ্যাত। غربة বা অপরিচিত বলতে এটাকেই বুঝানো উদ্দেশ্য। যার উপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতিষ্ঠিত ছিলেন – আর তাদের এই আদর্শটাই এক সময় অপরিচিত হয়ে যাবে।


সুতরাং শেষ জামানার অপরিচিতি প্রথম জামানার অপরিচিতির সাথে মিলে যাবে। যে অবস্থার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুরা ছিলেন, শেষ জমানায় অবস্থা আবার তেমনই হয়ে যাবে। যার ইঙ্গিত এই হাদিসে এসেছে:

بدأ الاسلام غريبا وسيعود غريبا كما بدأ فطوبي للغرباء رواه مسلم

অর্থ: ইসলাম এসেছে নিঃসঙ্গ-অপরিচিতভাবে, অচিরেই আবার তা পূর্বের ন্যায় নিঃসঙ্গ-অপরিচিত হয়ে যাবে, সুসংবাদ (নিঃসঙ্গ-অপরিচিত) গুরাবাদের জন্যই। (মুসলিম)


উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল-আ’দম বলেন: হাদিসে নববীতে গুরাবাদের গুণাবলী সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় এর ব্যাপারে ইঙ্গিত এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরাবাদের সামষ্টিক গুণাবলী হাদিস শরীফে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, فهم النُّزّاع من القبائل অর্থাৎ, গুরাবা হল ঐ সমস্ত লোক যারা তাদের গোত্রের মধ্যে যোদ্ধা।


যেমনটি বিষয়ের শুরুতে ছিল, প্রত্যেক গোত্রের নেককারগণ একত্রিত হবেন। আর তারাই হল প্রত্যেক গোত্রের যোদ্ধাগণ। তারা এমন সব লোক যারা সুন্নাতে নববীর সাহায্যে মানুষের ফাসাদকৃত বিষয় সংশোধন করেন।


“মানুষের ফাসাদকৃত বিষয়কে সংশোধন করা” এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কাজটি যারা করেন, তারা হল নেককার, যাদের পরিমাণ মানুষের মাঝে খুবই কম সংখ্যক। আর এরাই হল নেককার এবং সংশোধনকারী। যারা তাদের নাফরমানি করে তাদের সংখ্যা বেশি, আর যারা তাদের অনুসরণ করে তাদের সংখ্যা খুব কম। তারা হল ঐ সমস্ত লোক, যারা তাদের দ্বীন(হেফাযতের জন্য) তা নিয়ে পলিয়ে যায়। তারা কিয়ামতের দিন ঈসা ইবনে মারিয়াম আলাইহিস সালাম এর নিকট একত্রিত হবে।


এই হল হাদিসের সারমর্ম। এমনটাই ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম রহ. তার কিতাব “মাদারিজুস সালিকীন” এ গুরবাত বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। গুরাবাদের সকল গুণাবলী সেখানে তিনি একত্রিত করেছেন এবং এ বিষয়ে আলোচনাও করেছেন।


মোটকথা ঐ সকল গুণাবলী যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবাদের মাঝে ছিল সেগুলোকে আঁকড়ে ধরাই হল ওহীকে আঁকড়ে ধরা। আল্লাহর কালাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাই হল গুরবাত বা অপরিচিতি।


এসকল গুরাবাদের গুণাবলী এবং মর্যাদা সেদিন প্রকাশ পাবে, যেদিন মানুষের অবস্থা শোচনীয় ও করুণ হবে। সমাজে খারাবী বৃদ্ধি পাবে, চারিত্রিক অধঃপতন ঘটবে, নেককার মানুষ হ্রাস পাবে। ফলে তুমি এমন সাহায্যকারী কমই দেখবে, যারা সত্যের উপর থেকে তোমাকে পথ দেখাবে। তাছাড়া সুন্নাহ শিক্ষাদানকারী থাকবেনা। ফলে তুমি এমন কাউকে দেখতে পাবেনা - যে তোমাকে সত্যের দিকে পথ দেখাবে - যার ব্যাপারে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ দিয়েছেন।



অতঃপর উস্তাদ আল-আ’দম বলেন: এ জামানায় সবচেয়ে অধিক অপরিচিত ব্যক্তি হল মুজাহিদগণ। তারা নিজেদেরকে কুরবানি করেছে এবং নিজ জন্মভূমিকে ত্যাগ করেছে। প্রিয়জনদের থেকে পৃথক হয়ে গেছে, নিজেদের স্বাদকে পরিত্যাগ করেছে। তারা জাহালত বা অজ্ঞতা এবং তার ত্রুটি থেকে ঊর্ধ্বে উঠে এসেছে, ফলে তারা তাগুতকে তোষামোদ করেনা। তারা তাদের দ্বীনের মধ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণ কাফেরদেরকে সুযোগ দেন না এবং প্রবৃত্তির অনুসারীদের প্রতি নমনীয়ও হন না। বিদআ’তিদের প্রতি কোমল হন না বরং তারা তাদের নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তারা সাহাবাদের নীতির উপর চলেন। তাছাড়া তারা সাহাবাদের পন্থাকে পরিত্যাগ করেননি - যে পথ তাদেরকে তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিবে।


আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

{وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيل اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ * وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّا أَنْ قَالُوا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ * فَآتَاهُمُ اللَّهُ ثَوَابَ الدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ الْآخِرَةِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ}

অর্থ: এবং কত নবী যুদ্ধ করেছেন, এবং তাদের সাথে বহু আল্লাহ ওয়ালা ছিল। আল্লাহর পথে তাদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে তারা হীনবল হয়নি। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন। একথা ব্যতীত তাদের আর কোন কথা ছিলনা যে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজে সীমালঙ্ঘন তুমি ক্ষমা কর, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখ এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব পুরস্কার এবং পরকালের উত্তম পুরস্কার দান করেন। আল্লাহ সৎকর্মপরায়নদেরকে ভালবাসেন। 

(সূরা আলে ইমরান – ১৪৬-১৪৮)


ইহা হল শেষ জামানার গুরবাত বা অপরিচিত সম্পর্কে আলোচনা। আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের খাতেমা বিল-খাইর নসিব করেন এবং তিনি যেন আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় মৃত্যু দান করেন। আমীন। 


والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته


শাইখ হারিস বিন গাজি আন নাজারি (রহিমাহুল্লাহ)

ডকুমেন্ট সোর্সঃ তাঞ্জিমুল ক্বায়িদা

Tuesday, December 1, 2020

বিশেষ দ্রষ্টব্য - ৪

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি তা'য়ালা। 

আশা করি আল্লাহর দয়ায় সকলে ভাল আছেন। আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে স্পষ্ট করতে লিখছি। 


আপনারা জানেন আমার এ ব্লগে লেখা অনেক পোস্ট আছে যা দেখে মনে হবে আত্ব তাঞ্জিমুল ক্বায়িদাতুল
জিহাদের প্রতিনিধিত্বমূলক। খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন এখানে অনেক পোস্ট আছে যা মূলত সালাফি চিন্তাধারার সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু মূলত তাঞ্জিম আল ক্বায়িদা একটি ওপেন প্ল্যাটফর্ম। এখানে সালাফি, মাজহাবি,সুফি, দেওবন্দি এবং আসারি - আশআরি - মাতুরিদি সকল স্কুল অব থট এর এ্যাডহিয়ারেন্টসদের জন্য উন্মুক্ত। আল্লাহর যমীনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ। এ তাঞ্জিম ফুরুঈ ইখতেলাফি[ছোটখাটো মতানৈক্য] বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিভাজন তৈরিকে সমর্থন করেনা। মতানৈক্য নিয়ে বাহাসের সময় হবে তখন যখন কালো পতাকা সাদা হয়ে যাবে[দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে]।

আপনারা লক্ষ্য করলে এ ব্লগে এমন অনেক লেখা পাবেন যা মাতুরিদি/আশআরি কিংবা সুফি/দেওবন্দী/ব্রেলভীদের কিছু দর্শনের ব্যপারে কড়া সমালোচনা। এজন্য আমি স্পষ্টভাবে বলব আমার এ ব্লগটি আল ক্বায়িদার অফিশিয়াল কোন ব্লগ নয়। এ ব্লগের ব্যপারে খুব ভালভাবে খোরাসানের ইসলামি ইমারতের মুজাহিদগন অবহিত আছেন। এবং তারা এমনকি ব্লগের প্রতিটি আর্টিকেলের ব্যপারে অবগত আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, তাদের সাথে আমার একাধিকবার বার্তা বিনিময় হয়েছে। তারা এটাকে ব্যক্তিগত ব্লগ হিসেবেই দেখেছেন। 

সুতরাং আমার সালাফিবাদের পক্ষপাতমূলক লেখা পড়ে কেউ এ জেনারেলাইজেশনে যাবেন না যে, আল কায়িদা মানেই শুধুমাত্র সালাফিজম কিংবা আমি যা যা লিখি তার সবকিছুই আল কায়েদার মতাদর্শ। আমি এ ব্লগে কস্মোলজি/ সৃষ্টিতত্ত্বের বিষয় র‍্যাডিক্যাল চিন্তাধারার সাথে সবাইকে পরিচয় করাই,আমি বিজ্ঞানের ফিজিক্স & এস্ট্রোনমির ব্যপারে এমন কিছু বলি যা আগে কেউ কখনো বলেনি। এজন্য কেউ আমার কথাকে ধরে মানহাজকে এর অন্তর্ভুক্ত করবেন না। এ সমস্ত বিষয় মতানৈক্য আছে, থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না যেহেতু মানহাজে অনেক স্কুল অব থট আছে। 



এবার আসি সদ্য প্রকাশিত "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" এর পিডিএফ প্রসঙ্গে। আপনারা জানেন যে ২০১৭ সালে শুরু করা "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" আর্টিকেল সিরিজটি আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে শেষ হয়েছে। মাঝখানে লম্বা একটা সময় ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় থেমে ছিল। যাইহোক, আপনারা দেখেছেন বিগত বছর গুলোয় অপবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলে অনেকভাবে সমালোচিত হয়েছি। সাধারণ কেউই আমার কথাকে সহজভাবে গ্রহন করতে পারত না। অথচ তখন যা বলতাম তার কোনটিই দলিলবিহীন মনগড়া অসাড় কথা ছিল না। যখন থেকে পর্ব ধরে ধরে লিখতে শুরু করলাম তখন থেকে চুপ হয়ে যেতে দেখলাম। অতঃপর এখন আর কেউ কিছুই বলে না। ভাবখানা এমন যেন কিছুই হয়নি। এ অবস্থার কারন তারা ভাল করেই জানে। ওরা জানে বিপরীতে গিয়ে উল্টাপাল্টা বললে ঈমানের সীমারেখার বাইরের কোনকিছুকে সমর্থন করে বলা হয়ে যাবে। এজন্য হয়ত পূর্বেকার অজ্ঞতার জন্য হয়ত অনেকে লজ্জিত। আবার এরকম অনেকে আছে যারা  তাদের ঔদ্ধত্যকে অপরিবর্তিত অবস্থায় রেখেছে ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের উপর।  ওরা নিজেরাও জানে না ওদের পয়েন্ট কি অথবা তাকদিরে এরকমটা লিখিত আছে যার দিকে তারা ধাবিত,বস্তুত আমরা সকলেই। কারো স্যাটেরিক্যাল রিয়্যালশনের জবাব আমি তাদের ফ্রিকোয়েন্সিতে গিয়ে দেই নি বরং সবর করেছি এবং শুধুমাত্র চেনা অচেনা লোকগুলোর কথা ভদ্রভাবে সুদীর্ঘ আর্টিকেলের নিচে স্ক্রিনশট আকারে দিয়ে দিয়েছি। ব্যস। এটুকুই। ইতোমধ্যে পিডিএফটি আড়াই হাজারবারের বেশি ডাউনলোড হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই ১০... ২০... এরপরে অর্ধলক্ষ। আমাকে কিছুই বলতে হবে না, বুদ্ধিবৃত্তিক করাপশন দেখে পাঠকদের দ্বারাই তারা তিরস্কৃত হবে। আল্লাহ এভাবেই অহংকার ও ঔদ্ধত্যের শাস্তি দিয়ে থাকেন। দ্বীনি স্ট্যান্ডার্ডে আমি যা উল্লেখ করেছি ওটাই আল্টিমেট সীমারেখা। যে কন্সেপ্ট গুলোকে কনডেম করা হয়েছে আপনি মিথ্যে না বললে কোনভাবেই বৈধতার আওতায় আনতে পারবেন না। কারন তখন ঈমান ও কুফরের প্রশ্ন চলে আসবে। এজন্য সহজে কেউই এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস করবে না। তারমানে আমাদের এ গ্রুপে ইটারনাল সাইলেন্স চলে এসেছে বা আসবে। কোন ফেসবুক বুজুর্গ বেশি চিৎকার করলে পিডিএফটি উপহার দেবেন,আশা করি বেশিক্ষণ আওয়াজ শুনবেন না। 


মনে রাখা প্রয়োজন আমি কখনোই অল্টারনেটিভ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার মাকসাদে লেখালিখি করিনি।বরং উদ্দেশ্য বিভিন্ন তত্ত্ব সমূহের অরিজিন্স এবং  গ্রহণযোগ্যতাকে স্পষ্টীকরণ। বিজ্ঞানের অনেক রহস্যময় ব্যপারের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে উড়িয়ে দেই না। বরং সেসবের অস্তিত্ব বাস্তবে থাকলে তা সিহরের আওতাভুক্ত কিনা সে ব্যপারে সচেতন করি। এমনটা কখনোই বলিনা প্রযুক্তিগত পণ্যদ্রব্য সমূহ সিহর/যাদু। যারা এমনটা বলে যে টিভি ফ্রিজ মোবাইল সিম মেমরি সবকিছু যাদু, এটা আমার নিকট শুনতে খুব লেইম লাগে। এটা খুবই মিজারেবল পুওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং। প্রযুক্তির মধ্যে সিহরের কাতারে শুধুমাত্র সেসবকেই ফেলি যা তৈরিতে যাদুশাস্ত্রীয় বিদ্যাকে সরাসরি ব্যবহার হয়েছে। এটা খুবই সোজা হিসাব, মদ দ্বারা তৈরি খাদ্য বর্জনীয়,শূকরের চর্বি দ্বারা খাদ্য/পণ্যও বর্জনীয়। এ বিষয়ে আর্টিকেল সিরিজের শেষভাগে উল্লেখ আছে। আমরা যেন এমন কিছু না বলি যা উম্মাহ থেকে আমাদেরকে দূরে ঠেলে দেয় বা আমরা কাউকে অজ্ঞতার জন্য দূরে ঠেলে দেই।  


আমার এক ভাই বলেছিলেন আর্টিকেলগুলোর শুরুতে কিছু পরিভাষা দিয়ে দিতে যাতে সবার জন্য বুঝতে সহজ হয়। এটা করতে আমার সাথে সাধারন মানুষের ইন্ট্যার‍্যাকশানের প্রয়োজন ছিল, যেটার পথ বন্ধ। পাঠকদের সুবিধার্থে ১০ পর্বের পর দিয়ে ইংরেজি বাক্য এবং উইকিপিডিয়া ভিত্তিক লেখা কমিয়ে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি এনেছি, এটা আপনারা সকলেই আশা করি লক্ষ্য করেছেন। অনেক কিছুই সরাসরি না দিয়ে অনুবাদ করেছি। এজন্য এটা পাঠ করা এবং বোঝা খুব কঠিন হবে না আশা করি। 

প্রথমবারে পিডিএফে কম্বাইন করা আর্টিকেলে কিছু মেজর ইস্যু থাকে, এজন্য আগের ফাইল ডিলিট করে আপডেট করা হয়েছে। রিভিউ ছাড়াই পাব্লিশ করছি এজন্য, এখনো অনেক মাইনর ইস্যু আছে। আপনারা যারা আগে ডাউনলোড করেছেন তারা ফাইলটা ডিলিট করে আবারো আপডেটেড লিংক থেকে[সেকেন্ড এডিশন] নামিয়ে নিবেন। বিশেষ কারনে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এই আর্টিকেল সিরিজকে শেষ করা। আরো বিস্তারিত করার ইচ্ছা ছিল। ইনশাআল্লাহ বছর খানেক পর পরবর্তী সংস্করণে অনেক কিছু সংযোগ ঘটানো হবে। 



এখন আসা যাক আসল কথায়। গুরাবা তথা এ যুগের আগন্তুকঃসংস্কারকরা সবসময় দ্বীনের সাথে ইনকন্সিস্টেন্ট/ইনকম্প্যাটিবল জিনিস নিয়ে কথা বলবে, সংস্কারের চেষ্টা করবে,এটাই স্বাভাবিক। হতে পারে-পলিটিক্যাল,সোস্যাল, ইকোনমিক্যাল, এজ্যুকেইশনাল...সবকিছু। তারা কোন কিছুর সাথেই আপোষ করে চলবে না। এরই একটা অংশ কস্মোলজি-কস্মোগনি সংক্রান্ত শিক্ষা। এটা একদমই গুরুত্বহীন চ্যাপ্টার না। কিন্তু তাই বলে এটা নিয়ে সারাক্ষন পড়ে থাকা বুদ্ধিপ্রদীপ্ত কাজ বলে মনে করি না। বরং উম্মাহর সংকটের সময়ে অন্যশাখা গুলো নিয়ে বেশি চিন্তাফিকির করাই বেশি সঙ্গত। একটা বিষয় নিয়ে সারাদিন সময় দিয়ে বাকি গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে ভুলে যাওয়া খণ্ডিত দ্বীনচর্চার নামান্তর। এজন্য যেহেতু সৃষ্টিতত্ত্ব/বিজ্ঞান সংক্রান্ত যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে, আমাদের উচিত এর পেছনে আর বেশি সময় ব্যয় না করা। প্রত্যেকেরই উচিত সাধ্যমত দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করা যাতে করে পা পিছলে না যায়। প্রত্যেকেই একেকটা বিশুদ্ধ তাওহীদ ওয়াল জিহাদের দাওয়াহ পোর্টাল হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদের উদ্দেশ্য যেন কখনোই দুনিয়ামুখী না হয়, কিংবা অর্থনৈতিক/ যশ/খ্যাতির উদ্দেশ্যে না হয়। রিয়া-উজব ধবংসের দিকে নিয়ে যায়। আরেকটি বিষয় হলো এই সকল র‍্যাডিক্যাল আইডিয়াগুলোকে ধরে আমরা যেন কোনভাবেই উম্মাহর মাঝে বিভাজন সৃষ্টি না করি। কাউকে এমনভাবে কিছু না বলি যাতে তাকে ভিন্ন ফির্কা বা পথভ্রষ্ট/ইন্ডিরেক্ট তাকফির করা হয়,আমরাও যাতে নিজেদের ভিন্ন ফির্কায় ডিফারেশিয়েট না করি। এগুলো অনেকটাই খারেজিদের ভাবনা। যদি এরকম কাউকে করতে দেখেন, তাহলে ঐ ব্যক্তিকে তিরস্কার করি, তার সাথে আমি ইমরানের  কোন সম্পর্ক নেই, যদিও সে ব্যক্তি আমার এখান থেকেই এই চিন্তাধারার সম্পর্কে ধারনালাভ করেছে। আমাদের মানহাজ অনেকটা নরম মধ্যমপন্থীদের মানহাজ। আমরা চরমপন্থাকে অপছন্দ করি। কোন মানুষের বাহ্যিক কুফরি কর্ম বা তার পক্ষপাতমূলক কর্ম দেখে যেন আগ বাড়িয়ে কাফির ডাকা না শুরু করি। সবার আগে প্রয়োজন দাওয়াহ পৌছানো। অধিকাংশ সময় জাহালতের জন্যই মানুষ উল্টাপাল্টা কর্ম করে।  



আমার সাথে যোগাযোগহীনতা নিয়ে কিছু কথাঃ

আমার প্রিয়ভাইয়েরা খুব চান আমি যেন ফেসবুকে সবসময় থাকি, তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকি, সবার সাথে নিয়মিত লাইভ বার্তা বিনিময়,সরাসরি দেখা করি....ইত্যাদি ইত্যাদি।ব্যস্ততা+ মানহাজগত কারনে এরকমটা আসলে সম্ভব না।  আমি ব্যক্তিগতভাবেও সবার চোখের আড়ালে একাকি থাকতে পছন্দ করি। ফেসবুকের কারো সাথেই যোগাযোগ করিনা। বিগত কয়েকমাস ধরে পারিবারিক আইডিটাও ডিএ্যাক্টিভেট করে রেখেছি। বাস্তবজীবনেও একাকিত্ব - আইসোলেশন পছন্দ করি। মানুষের সাথে ইন্টার‍্যাকশন হলে খুবই এক্সস্ট লাগে, মনে হয় সমস্ত এনার্জি ড্রেইন হয়ে যায়। যত একা থাকি তত ভাল থাকি। ইন্টুইটিভ এমপ্যাথ হবার জন্য এরকম মানসিকতা হতে পারে। আল্লাহ ভাল জানেন। ফেসবুকে সক্রিয় থাকাকালে দেখা যেত কোন একজনকে ম্যাসেজে বেশি সময় দেয়া হয়ে যেত, অন্য আরেকজনকে কম অথবা অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাঝেমধ্যে ইগ্নোর হয়ে যেত। এখানে আসলে সুবিচার করা হয়না। দিলে সকলকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এজন্য ব্যস্ততার জন্য ভারসাম্যহীন আচরণের তুলনায় সকলের থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা কল্যাণকর মনে করছি। এজন্য কেউই আমার প্রতি অভিমান রাখবেন না। ভাল খবর হচ্ছে ব্লগের কমেন্ট সেকশনকে আবারো খুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় দেরিতে হলেও রিপ্লাই পাবেন। বিইযনিল্লাহ। খুলবার মূল উদ্দেশ্যঃ পিডিএফের কোন বড় কোন সমস্যা পেলে যেন যেকেউ জানাতে পারে। 




যা কিছু উল্লেখ করেছি, তার মাঝে যা অকল্যাণকর তা আমার এবং শয়তানের পক্ষ থেকে। যা কিছু কল্যাণকর যা আল্লাহ আযযা ওয়াযালের পক্ষ থেকে।

দু'আর দরখাস্ত রইলো। আসসালামু আলাইকুম আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।