Tuesday, September 8, 2020

মানহাজের ব্যাপারে নির্দেশনা

পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি



সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্*র জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক, আর, সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাহাবীগণের প্রতি ।
এরপর,
যে সকল যুবকেরা দ্বীনের কাজে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে সক্ষম, এবং দ্বীনের জন্য নিজেদেরকে কুরবানি করতে সক্ষম, তারা অতি দূর্ভাগ্যবশত একটি ভুলধারণা দ্বারা ভুলদিকে চালিত হচ্ছে, যেটা হল, তারা ইসলামের সেসকল ‘উলামাদের কথা শুনছে ও আনুগত্য করছে যারা জিহাদ থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে রেখেছে। কারণ, যে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে বসে থাকে, তার কথা শুনা অথবা তার আনুগত্য করা উচিত নয়। আর এর ফলে দ্বীনের এই সম্পদেরা ব্যক্তিগতভাবে যা পালন করা ফার্*দ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে যা সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফার্*দ তাতে মনযোগ দিয়েছে, যেমনঃ ‘ইল্*ম অর্জন করা। অথচ এমনকি যদি সকল মানুষও ‘উলামায় পরিণত হয়ে যায়, তাহলেও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না – জামা‘আহ্*, শোনা, আনুগত্য করা, সাহায্য করা এবং জিহাদ করা – এগুলোর সমন্বয় ঘটছে।                                                   
সুতরাং এখান থেকে, আমাদের যুবকদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা উচিত যে, তাদের ‘ইল্*মসম্পন্ন নেতৃত্ব আজ পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে। এটি (এই নেতৃত্ব) সেই গুরুত্বপূর্ণ ফার্*দ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে যেটিকে সামান্য অবহেলা করার কারণে আল্লাহ্*র রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছু সাহাবীকেও (রাযিআল্লাহু আনহুম) নিন্দা করা হয়েছিল। আর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তার এই কথাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেনঃ
“যেরূপে আপনার প্রতিপালক আপনাকে আপনার ঘর থেকে সত্যের সাথে বের করলেন, আর মুসলিমদের একটি দল এটিকে অপছন্দ করছিল।”[সূরাহ্* আল-আনফালঃ০৫]
বদরের দিনে যখন সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহুম)-গণ বের হলেন, তখন তারা ভাবছিলেন যে, তারা সেদিন বানিজ্যের কাফেলা আয়ত্ত করবেন। সুতরাং, যখন তারা (রাযিআল্লাহু আনহুম) শুনলেন যে, হাজারখানেক কুরাইশ বেড়িয়ে এসেছে, তারা এটা অপছন্দ করলেন। সুতরাং, [আবূ আইয়্যুব বর্ণনা করেছেন] আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আবূ আইয়্যুব বললেনঃ “আমরা শত্রুর সম্মুক্ষীণ হবার ব্যাপারে আমাদের অনিচ্ছা প্রকাশ করলাম, এবং আমরা বললামঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল, আমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হইনি, আর তাদের মোকাবিলা করার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা শুধুমাত্র কাফেলাটির জন্যই বেরু হয়েছি।” ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আমরা আমাদের পূর্বের কথাই তাকে আবার শোনালাম। ফলে তিনি বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” এরপর আল-মিক্বদাদ ইব্*ন ‘আম্*র (রাযিআল্লাহু আনহু) কথা বললেন, আর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল! এক্ষেত্রে আমরা আপনাকে সেই কথা বলব না যা বনু ইসরঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ ‘সুতরাং আপনি এবং আপনার রব যান এবং যুদ্ধ করেন! আমরা তো এখানেই বসে থাকব।’ [আল-মাইদাহঃ২৪]
বরং আমরা আপনাকে বলিঃ আপনি এবং আপনার রব এগিয়ে যান এবং যুদ্ধ করুন, আর আমরা আপনাদের সাথেই যুদ্ধ করব! আল্লাহ্*র কসম, আমরা আপনার ডানদিক থেকে, আপনার বামদিক থেক, আপনার সামনের থেকে এবং আপনার পিছন থেকে যুদ্ধ করব।”
এটা হল সাহাবীদের (রাযিআল্লাহু আনহুম) কথা, যারা একটি যুদ্ধ ও জিহাদসমৃদ্ধ পরিবেশে ছিলেন, আল-আওস এবং আল-খাজরাযের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধ তাদের দুই গোত্রের অসংখ্যজনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, আর এটি স্থায়ী হয়েছিল ১০ বছরের জন্য, আর তারা যখন এমন অসীম যুদ্ধের মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, তখন আল-ইসলাম তাদের কাছে এসেছিল, আর জাহিলিয়্যাহ্*-এর সময় আল-আওস এবং আল-খাজরাযের অনেকেই যুদ্ধের সাথে পরিচিত ছিল, আর এসবকিছুর পরে আল-ইসলাম তাদের কাছে আসলো এবং তাদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিল – তাহলে আজকের দিনে আমরা কোথায়? অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ্* দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহ্*র দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিস্*ক্ব”। “আর যদি তারা বের হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ্* তাদের বেড় হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’”[সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৪৬] যারা মহিলাদের সাথে বসে থেকে পরিতুষ্ট তারা বুঝে না, এমনকি যদিও তাদের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠ ডিগ্রী থাকে। আর তারা জানে না, এমনকি যদিও ফাত্*ওয়ার জন্য তাদের দিকেই সমস্ত প্রশ্ন করা হয়। কারণ এটা আল্লাহ্*র কিতাবে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া আছেঃ “তারা ঘরে বসে থাকা (মহিলাদের) সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল” – এমন যে কেউ যার অন্তর আছে বা যাকে আল্লাহ্* শোনার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে জানে যে এই আয়াতের বর্ণনার সাথে কারোও অবস্থার মিলে যাওয়াটা একটা ব্যাপক নিন্দনীয় ব্যাপারঃ “তারা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল, আর তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছিল, তাই তারা বুঝে না।”[সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৮৭]
তাই জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন মুফতি যদি অনেক কিতাবাদি, প্রবন্ধ এবং ভলিউমের লেখকও হয়ে থাকেন, তবুও তিনি বুঝেন না, কারণ ‘ইল্*মের সারাংশ হল আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি ভয়। উম্মে সুফিয়ান (আল্লাহ্* যেন তার উপর রহম করেন) নামক এক মহিলা বলেছিলেনঃ “ও ‘আলিম!” আর তিনি বললেনঃ “‘আলিম হল শুধু সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্*কে ভয় করে চলে।” সুতরাং, ‘ইল্*ম মানে ব্যাপক বর্ণনার সমষ্টি নয়, বরং ‘ইল্*ম হল আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন সে অনুসারে আল্লাহ্*র ‘ইবাদাত করা, আর তাকে ভয় করা এবং তার দেওয়া দায়িত্ব পালন করা।
আর তাই আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেন যে, তারা বুঝে না। কারণ, যদি তারা সত্যিই বুঝতো, এবং যদি তাদের অন্তরে এই ঈমান দৃঢ় ভাবে থাকতো যে, আল্লাহ্*র সাথে যা আছে তা এই দুনিয়া অপেক্ষা অনেক উত্তম, তবে তারা আল্লাহ্*র সন্তুষ্টি এবং তার থেকে পুরস্কার লাভের আশায় প্রতিযোগিতা করতো, আপোষে ভরা হীন জীবনকে পছন্দ করতো না।
তাই আমি বলিঃ যুবকদেরকে এ সকল বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা কৃত্রিমতার শিকলের বন্ধন থেকে মুক্তি পায়, যে বন্ধন তাদেরকে সঠিক কাজ করা থেকে বিরত রাখে।
আর এই হল (‘আব্দুল ‘আযিয আল-‘উমারি, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলাকারী অন্যতম মুজাহিদ) ‘আবুল ‘আব্বাসঃ এক অমূল্য সম্পদ – যার ন্যায় সম্পদ আমাদের ভূখন্ডে এবং মুসলিম ভূখন্ডসমূহে আরোও আছে, কিন্তু তাদেরকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে – যার দ্বারা আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা অনেক কল্যাণ সাধন করেছেন। সে এসকল শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিল, ফলে যখন সে এখানে (আফগানিস্তানে) আসলো, তখন সে বাস্তবতার স্বরূপকে দেখলো এবং অসচেতন মানুষকে সচেতন করার জন্য তার শেষ বক্তব্য উপস্থাপন করলো যা ছিল অতি স্বচ্ছ এবং হৃদয়স্পর্শী।  সুতরাং, ইসলামের জাগরণের পথে জাগৃত মানুষদের অনেক উত্তম গুণাবলী এবং অসাধারণ সক্ষমতা রয়েছে, আর তাদেরকে কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অজ্ঞতার এই কুয়াশা এবং এই অন্ধকার দূরীভূত হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসরণীয় আরেকটি দালীল হচ্ছেঃ
হুযাইফাহ্* (রাযিআল্লাহু আনহু) আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, যেটিতে আলোচিত দৃশ্যপট আমাদের বর্তমান অবস্থার সাথে মিলে যায়, সেখানে তিনি (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ “মানুষ আল্লাহ্*র রসূলকে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো, কিন্তু আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করতাম অকল্যাণ সম্পর্কে, এই ভয়ে যে, তা আমাকে গ্রাস না করে ফেলে। তাই আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহ্*র রসূল, আমরা ছিলাম জাহিলিয়্যাহ্* এবং খারাবীতে নিমজ্জিত, এবং আল্লাহ্* আমাদেরকে কল্যাণের দিকে চালিত করেছেন। সুতরাং, এই কল্যাণের পরে কি আর কোন অকল্যাণ আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা।’ আমি বললামঃ ‘এই অকল্যাণের পরে কি আর কোন কল্যাণ থাকবে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা, কিন্তু সেটি দূষিত হবে।’ আমি বললামঃ ‘সেটির দূষণ কি?’ তিনি বললেনঃ ‘একদল মানুষ যারা আমার দেখানো সঠিক পথে চলবে না, তুমি তাদের মাঝে কল্যাণ এবং অকল্যাণ দেখতে পাবে।’ আমি বললামঃ ‘সেই কল্যাণের পরে কি আর কোন অকল্যাণ থাকবে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা, জাহান্নামের দ্বারে আহবানকারী; যে-ই তাদের ডাকে সাড়া দিবে, তাকে তারা জাহান্নামে ছুড়ে ফেলবে।’” [বুখারী ও মুসলিম]
সুতরাং, আজকের এই পরিস্থিতি যা আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে, এখন এই ভয়াবহ অকল্যাণ ইসলামের ভূখন্ডসমূহের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে, আর এর দৃষ্টান্ত চতুর্দিকে দেখতে পাওয়া যায়, যেমনঃ আজকের শাসকেরা মানুষদেরকে জাহান্নামের দ্বারেই আহবান করছে, ‘আরব উপদ্বীপসমূহ এবং অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডের শাসকেরা সবাই এ ব্যাপারে একইরূপ ধারন করেছে, কারণ, তাদের মিডিয়া, তাদের সমগ্র কর্মপদ্ধতি, জমিনে তাদের দুর্নীতির সৃষ্টি, মানবরচিত বিধানের দ্বারা সকল কর্মের পরিচালনা, রসূলের ﷺ আদর্শ ব্যতীত অপর আদর্শসমূহের প্রচার করা, এসবকিছুর দ্বারা তারা সকাল-সন্ধ্যায় মানুষদেরকে জাহান্নামের দরজার দিকে আহবান করছে, আর আল্লাহ্* ছাড়া কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই। সুতরাং, পত্র-পত্রিকাসমূহ, রেডিও-টেলিভিশন, মিটিং-সভাসমূহ – এ সব কিছুতে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা এবং তার রসূলের প্রতি কুফ্*র পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, আর কেউ এগুলোতে কোন প্রকারের বাঁধা দিচ্ছে না। সুতরাং, এই শাসকেরাই হল তারা, যারা জাহান্নামের দ্বারে আহবান করে।
এখন এরকম পরিস্থিতিতে সমাধান কি হতে পারে?
সুতরাং, সেই মহান সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহু) এরপরে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাহলে আমি যদি সেই সময়ে উপস্থিত থাকি, তবে তখন আপনি আমাকে কি করতে বলেন?”ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে একটি আদেশ দিলেন, যদিও ইসলামে অনেক ফার্*দ দায়িত্ব আছে এবং তাদের গুরত্বেরও প্রচুর বর্ণনা মিলে, এরপরেও এই ধরনের পরিস্থিতিতে আদেশ শুধু একটিই, ঈমান আনার পরে যেটির গুরুত্ব অন্যান্য সকল ফার্*দ কর্তব্যের তুলনায় বেশী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “মুসলিমদের জামা‘আহ্* ও এর ইমামের সাথে নিজেকে বিদ্ধ কর [অর্থাৎ, জামা‘আহ্* ও ইমামকে আকড়ে থাকো]।”
সুতরাং, এই হল এক ফার্*দ কর্তব্য যা এখন পালন করা অতীব জরুরী বিষয়, কিন্তু আল্লাহ্* যে সকল ‘উলামাদের উপর দয়া করেছেন তারা ব্যতীত আর কোন ‘উলামার কাছেই এটির কোন জায়গা নেই, আর তারা এটির কথা মুখেও তুলেন না। তাদের প্রত্যেকে তাওয়াগিত শাসকদের [যারা শারী‘আহ দ্বারা শাসন করা পরিত্যাগ করেছে] সম্পর্কে ভালো কথা বলা আর প্রশংসা করায় ব্যস্ত, যারা কিনা আল্লাহ্* ও তার রসূলের উপর অবিশ্বাস করেছে। ফলে এ সকল ‘উলামারা কাফির শাসকদের প্রতি প্রশংসামূলক কথা বলে টেলিগ্রাম পাঠান, আর সেসকল কাফির শাসকেরা এসকল ‘উলামাদের প্রশংসা করে ‘উলামাদের প্রতি প্রশংসামূলক টেলিগ্রাম পাঠান, আর এভাবে সমগ্র উম্মাহ্*কে প্রতারিত করা হয়।
আজ উম্মাহ্* যে দুর্যোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এরূপ দুর্যোগ দ্বারা এটি এর আগে কখনো আক্রান্ত হয়নি। এর আগেও অনেক বিষয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল আংশিক এবং একটি নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজকের দুর্যোগটি মিডিয়ার জাগরণের দ্বারা সমগ্র জাতিকে তার পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মিডিয়া আজকে প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করেছে, আর কোন ঘরই এই ফিত্*নাহ্* থেকে মুক্ত নয়, তা শহরাঞ্চলের ঘর হোক কিংবা বনাঞ্চলের ঘর। কেউ এটি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অতীতে কোন ‘আলিম ভুল করলে তার ভুল একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতো, আর কোন রাজপুত্র বা শাসক কোন দুষ্কর্ম করলে তার সেই দুষ্কর্ম তার রাজপ্রাসাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু, এমনটি মুসলিমদের ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি যে, বেশীরভাগ মানুষই তাদের চাকুরীর কাছে বন্দী, যে চাকুরী হল অত্যাচারী শাসকের অধীনে নিয়োজিত থেকে কোন সেবা প্রদান করা।
যতবার এই উম্মাহ্*র অবনতি ঘটেছে, আর যখনই এই উম্মাহ্*র মানুষ সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তখনই এই দ্বীনের ইতিহাসে অসাধারণ ঘটনার সূচনা ঘটেছে, অন্যেরা এই পথকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছে, এবং তারা কঠোর আত্মত্যাগ করেছে, এবং নিজেদেরকে কুরাবনী দিয়েছে। কিন্তু, এমনটি কখনোই ঘটেনি যে, সমগ্র উম্মাহ্* এবং তার ফুক্বাহা এবং তার ‘উলামা তাওয়াগিত শাসকদের অধীনে নিয়োজিত চাকুরীর দাসে পরিণত হয়েছে!
তাদের (‘উলামা) একজন আমার সাথে কথা বলছিল, আর সে বললঃ “আমরা সত্য কথা বলতে সক্ষম নই, কারণ যখনই আমরা সত্য কথা বলতে চাই, তখনই আমরা ঘরগুলোতে থাকা শিশুদের কথা, আর মহিলাদের কথা চিন্তা করি, তখন তারা কোথায় যাবে? আর আমরাই বা কোথায় যাব?”
সুতরাং, আজকের দিনের শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়োজিত চাকুরীজীবির সাথে শাসকের কি ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান তা যুবকদের বুঝা খুবই জরুরী। যে কেউই আজ শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়োজিত একটি চাকুরীজীবি, তবে সে ঠিক তা-ই, অর্থাৎ সে শাসনব্যবস্থারই চাকর, সেটিরই দাস। আর আমরা যখন বলি যে, অমুক শাইখ এবং অমুক আর তমুক শাসনব্যবস্থার দাস, তখন যুবকদের আমাদের উপর রাগ করা উচিত নয়।
আমরা যদি একটি সামগ্রিক জরিপ করতাম যেখানে জনসংখ্যা, নাম, বয়স, সামাজিক অবস্থান, পেশা ইত্যাদির অনুসন্ধান করা হত, আর সবাইকে এই প্রশ্নটি করতামঃ “আপনি কি সরকারী চাকুরীজীবি নাকি স্বাধীনভাবে উপার্জনকারী?” তবে যে শাসনব্যবস্থার চাকুরী করে সে কি লিখত?
ম্যানেজার বলতোঃ “আমি শাসনব্যবস্থার চাকুরীজীবি, সরকারী চাকুরীজীবি।”
পুলিশ বলতোঃ “আমি একজন সরকারী কর্মচারী।”
বিচারকেরা বলতোঃ “আমরা সরকারী চাকুরীজীবি।”
আর দার উল-ইফতা’-এর ‘উলামা বলতোঃ “আমরা সরকারী চাকুরীজীবি।”
সুতরাং, যুবকদের বুঝ-এর মাঝে ঘাটতি রয়েছে, যখন আমরা মানুষদের প্রকৃত পরিচয় বর্ণনা করি, যে তারা হল সরকারী কর্মচারী, আপনি দেখবেন যে তারা রাগান্বিত হচ্ছে!
আর এটা সত্যিই অদ্ভূত বিষয়! আপনি তাদের সাথে অত্যাচারী শাসকদের কোন সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকার করেন, অথচ এটাই তাদের প্রকৃত বর্ণনা এবং বাস্তবতা।
সুতরাং, সমাধানের পথটি হল সেই পথ যা খুবই স্পষ্ট এবং সরলভাবে আল্লাহ্*র কিতাব এবং রসূল () -এর সুন্নাহ্*-এ বলে দেওয়া আছে। সুতরাং, এসকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সম্পর্কিত করেঃ
[১] সমাধান হল জিহাদের জন্য সবাই মিলে একত্রিত হওয়া।
[২] সমাধান হল জামা‘আহ্*, শ্রবন, আনুগত্য এবং জিহাদের মাধ্যমে কাজ করা।
[৩] সমাধান হলঃ “মুসলিমদের জামা‘আহ্* ও এর ইমামের সাথে নিজেকে বিদ্ধ কর [অর্থাৎ, জামা‘আহ্* ও ইমামকে আকড়ে থাকো]।”
আর মুসলিমদের জামা‘আহ্* এবং সেটির ইমামের উপর প্রথম ফার্*দ কর্তব্য হল কুফ্*ফারদেরকে প্রতিহত করা এবং আগ্রাসী সৈন্যদেরকে প্রতিরোধ করা। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “অতএব আল্লাহ্*র রাস্তায় যুদ্ধ কর; তোমার উপর নিজ ব্যতীত অপর কারোও ভার অর্পন করা হয়নি, এবং ঈমানদারদেরকে উদ্বুদ্ধ কর; অচিরেই আল্লাহ্* কুফ্*ফারদের শক্তি প্রতিহত করবেন, আর আল্লাহ্* শক্তিতে সুদৃঢ় ও শাস্তিদানে কঠোর।”[সূরাহ্* আন্*-নিসাঃ৮৪] সুতরাং, কুফ্*ফারদের শক্তি প্রতিহত করার উপায় হচ্ছেঃ [১] যুদ্ধ করা এবং [২] উদ্বুদ্ধ করা।
সুতরাং, তাহলে কেন মানুষেরা সঠিক দিকনির্দেশনার অনুসরণ করছে না? কারণ হল জাহান্নামের দ্বারে আহবানকারীরাঃ
[১] শাসকেরা এবং তাদের সমগ্র কর্মপদ্ধতি, যা দিন-রাত মানুষকে সরলপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে আহবান করে আসছে।
[২] সরকারী চাকুরীজীবি লোকেরা, যাদের মধ্যে কতক-কে মানুষকে আল্লাহ্*র রাস্তায় বাঁধা দেওয়ার কাজের চাকুরী দেওয়া হয়েছে।
শাসনব্যবস্থা তাদেরকে চাকুরী দিয়েছে এবং তাদেরকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছে, কিন্তু, এই পেশার মূল বাস্তবতা হল তাকে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার চাকুরী দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, তথ্যমন্ত্রীর কাজ হল মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া, এটি সে নিজে করে এবং তার সমগ্র কর্মপদ্ধতি ও কর্মব্যবস্থাকে দিয়ে করায়। সে তার দেশকে সর্বোৎকৃষ্ট দেশ হিসেবে মানুষকে ধারণা দেয় এবং শাসককে একজন প্রতিভাবান শাসক হিসেবে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে, আর এরকম অনেক মিথ্যা কথা সে নির্দ্বিধায় মানুষের সামনে উপস্থাপন করে, আর মানুষকে প্রতারিত করে।
একইভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিথ্যা সাক্ষী দেয়। সে বলে যেঃ “আমরা ভালো আছি, আর আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থায় আছে”, অথচ প্রকৃতপক্ষে আমরা এক দশকেরও বেশী সময় ধরে অন্যের দখলদারীর অধীনে আছি, আর সমগ্র বিশ্ব জানে যে আমরা দখলদারীর অধীনে আছি, আমেরিকার প্লেনসমূহ কাউকে কিছু না জানিয়ে যখন খুশী তখন হানা দেয়, দিন হোক কিংবা রাত হোক। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেড়িয়ে এসে বলেঃ “আমরা স্বাধীন, এবং কেউ আমাদের অনুমতি না নিয়ে আমাদের ভূখন্ড ব্যবহার করতে পারে না। সুতরাং, এরাই হল তারা যারা মিথ্যা সাক্ষী দেয়।
আর আল্লাহ্*র রহমতে, অবশেষে সকল মানুষের মাঝে এই সচেতনতা ছড়িয়ে পড়েছে, আর তারা জানতে পেরেছে যে, এরা (শাসনব্যবস্থার কর্মচারীরা) আসলে সরকার ও শাসনব্যবস্থার দাস।
কিন্তু এখন আমরা যে বিপদের সম্মুক্ষীন হচ্ছি তা কোন মন্ত্রী বা তার অনুসারীদের থেকে আসছে না, কারণ তারা যা করে তার দ্বারা মানুষকে এখন আর প্রতারিত করা সম্ভব নয়, কারণ তাদের প্রতারণা মানুষের সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখন যে সমস্যাটি প্রধান বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হল আল্লাহ্*কে ভয় করে না দ্বীনের এমন নেতাদের থেকে আসা মিথ্যা এবং প্রতারণা, যা উম্মাহ্*কে ভুল পথে পরিচালিত করছে।
এখন যদি মিথ্যা কথার সাক্ষীটি মক্কা আল-মুকাররামাহ্*-এ পবিত্র কা’বাঘরের নিকটে থাকা ব্যক্তিটি হন, তাহলে কেমন হয়? নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার একটি হাদীসে বর্ণনা করেছেনঃ “আল্লাহ্*র দৃষ্টিতে সবচাইতে ঘৃণ্য ব্যক্তি হল তিন প্রকারের…” আর তিনি প্রথম যার কথা উল্লেখ করলেনঃ “হারামে থাকা এক মুলহিদ (বিদ‘আতী)।” আর মাসজীদ আল-হারামে অবস্থান করে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হল সবচাইতে ভয়াবহ বিদাআতী কাজগুলোর মাঝে একটি, যার ফলাফলস্বরূপ উম্মাহ্* পথভ্রষ্ট হয় আর সাক্ষীদানকারী ব্যক্তি মাস শেষে কিছু পয়সা বেতন হিসেবে পান।
সুতরাং, এ সকল শাসকদের কুফ্*র-এর ব্যাপারে, তাদের দুষ্কর্মের ব্যাপারে, তাদের মুসলিম ভূখন্ডসমূহকে কুফ্*ফারদেরকে দখল করতে দেওয়ার ব্যাপারে, এবং তাদের আল্লাহ্*র বান্দাদের মাঝে দুর্নীতির ছড়ানোর ব্যাপারে কেউ দ্বিমত্* করে না।
আর এরপর আপনি আসলেন, আর পবিত্র মাসে পবিত্র জায়গার পবিত্র ঘরে মিথ্যা সাক্ষী দিলেন! আর আল্লাহ্* ব্যতীত কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই।




শাসকদের আজ বিভিন্ন প্রকারের চালাকির ব্যবহার ব্যতীত কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই। আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামাতের পূর্বে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা চলবে, যেখানে আমানতদারকে ধিক্কার দেওয়া হবে এবং বিশ্বাসঘাতক/খিয়ানাতকারী-কে বিশ্বাস করা হবে, মিথ্যাবাদীকে বিশ্বাস করা হবে এবং সত্যবাদীকে অবিশ্বাস করা হবে, এবং রুওয়াইবিদাহ্*-রা কথা বলা শুরু করবে।” তাকে বলা হলঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল, এই রুওয়াইবিদাহ্*-রা কারা?” তিনি বললেনঃ “সে সকল বোকাদের দল যারা মানুষজনের কার্যাবলি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলবে।”
সুতরাং, আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, এটাই সেই যুগ যেখানে শাসকেরা সকল প্রকারের চালাকী ব্যবহার করছে, হোক তা ‘আরবের শাসক কিংবা অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডসমূহের শাসক, কিংবা বিশ্বের অন্য যেকোন স্থানের শাসক। আর এর একটি পরিষ্কার নিদর্শন হল, বুশ অসংখ্য মুসলিমদের রক্তপাতকারী শ্যারনের কথা উল্লেখ করে “একজন শান্তিপূর্ণ মানুষ” হিসেবে। আর একইভাবে দ্বীনের শাসকেরা কুফ্*ফারদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে অপরদিকে দাবী করে যে তারা ইসলামের উপরই প্রতিষ্ঠিত আছে, আর এভাবে সমগ্র উম্মাহ্*কে তারা প্রতারিত করে।
আর এই প্রতারণার সাথে আরোও প্রতারণার স্বরূপ তারা এমনসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে প্রতারিত করা। আর মানুষেরা হয়ত বিস্মিত হবে যখন আমরা এগুলোর কথা বলছি, যেহেতু এগুলো শারী‘ঈ ও ফিক্ব্*হী বিষয়ের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে এ সকল প্রতিষ্ঠান জেনে বা না জেনে উম্মাহ্*কে প্রতারিত করছে। কারণ রেডিও-টেলিভিশনে কিছু ‘উলামাকে উপস্থাপন করা ও তাদের ফাত্*ওয়া দেওয়ার পিছনে শাসনব্যবস্থার অপর উদ্দেশ্য আছে। তা না হলে তারা রেডিও-টেলিভিশন ও অন্যান্য জায়গায় সত্যবাদী ‘উলামাদেরকে উপস্থাপন করতো। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে উম্মাহ্*র এই কঠিন ও দুর্দশাময় সময়ে এ সকল প্রতিষ্ঠান একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
কারণ আমরা অতীতে দেখেছি যে, যখন এই শাসনব্যবস্থা আমেরিকান ক্রুসেডারদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করলো এবং তাদেরকে হারামাইন ভূখন্ডে আসতে দিলো, তখন সাধারণ মানুষেরা এবং এর যুবকেরা এর বিরোধীতা করলো, কিন্তু এরপরে যেটির দ্বারা মানুষের এই বিরোধীতাকে শান্ত করা হল তা হচ্ছে এ সকল প্রতিষ্ঠান ও এর ‘উলামাদের দ্বারা। তারা শাসকের কাজকে সঠিক বলে ফাত্*ওয়া দিল এবং এই শাসককে “ওয়ালিয়্যুল ‘আম্*র” নামে নামকরণ করলো, যদিও প্রকৃতপক্ষে এই শাসক মুসলিমদের জন্য “ওয়ালিয়্যুল ‘আম্*র” নয়। সুতরাং, এ সকল বাস্তবতাকে লক্ষ্য করতে হবে।
মানুষ হয়ত বিস্মিত হবে যে, এটা কিভাবে সম্ভব? অমুক ও অমুক শাইখের এত ‘ইল্*ম থাকা সত্ত্বেও, এবং তাদের এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও এটা তারা কি করে করতে পারেন? এটা কিভাবে সম্ভব যে তারা স্বল্প কিছু পয়সার বিনিময়ে তাদের দ্বীনকে বিক্রয় করছেন?
আমি বলি যে, মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়, আর আমরা যদি আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকাই এবং ইসলামের গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস দেখি, তবে আমরা দেখবো যে এরূপ ঘটোনাগুলো বার বারই ঘটেছে। আর মানুষের বুঝার সুবিধার্থে আমি একটি বা দুইটি উদাহরণ উপস্থাপন করবোঃ
[১] ইমাম আয-যাহাবী (রহিমুল্লাহ) তার সিয়ার-এ ‘আলী ইবনুল মাদিনির (রহিঃ) জীবনী উল্লেখ করেছেন। তার জীবনীর সূচনাটির দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন, তিনি বলেছেনঃ “ ‘আলী ইবনুল মাদিনি…যিনি হাদীসশাস্ত্রে আমিরুল মুমিনীন।” [সিয়ার ‘আলামীন-নুবালাঃ ১১/৪১] । আর তিনি তার কথা উল্লেখ করেছেন, বর্ণনা করেছেন, প্রশংসা করেছেন আর এমনও বলেছেন যে, হাদীসশাস্ত্রে মানুষেরা তার উপর নির্ভরশীল। আমরা যদি ন্যায়পরায়ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই তবে হ্যা, এটা ঠিক যে উনার ‘ইল্*মের তুলনায় আমাদের এখনকার ‘উলামাগণ তেমন কিছুই নন, কিন্তু এত কিছুর পরেও তিনি একটি বিশাল ভুল করেছিলেন যখন তাকে সুলতানের চাকুরী করতে নিয়ে আসা হল। বনুল-‘আব্বাসের শাসকেরা তাকে এমন কাজের জন্য জোর করেছিল যা ছিল তার নিজ ‘আক্বীদাহ্* এবং তিনি যে শিক্ষা দিতেন তার পরিপন্থী। আর তিনি তাদের সাথে সম্মত হয়েছিলেন এবং এতে উম্মাহ্*র দিকনির্দেশনা চরম ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছিল।
[২] একইভাবে শাইখুল মুমিনীন ইয়াহ্*ইয়া ইব্*ন মা’ইন (রহিঃ)-ও একই ভুল করেছিলেন।
আর সে যুগের অনেক ‘উলামাই প্রহার, ধর-পাকড়, বন্দী, মৃত্যুদন্ড ইত্যাদির ভয়ে এই একই ভুল করেছিলেন, আর একটি অতি ক্ষুদ্র দল ব্যতীত কেউ-ই দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ায় নি, আর আপনি হয়ত জানেন যে এই অল্প কয়েকজনের মাঝে ছিলেন আহ্*লুস সুন্নাহ্* ওয়াল-জামা‘আহ্*-এর ইমাম, ইমাম আহ্*মাদ ইব্*ন হান্*বাল (রহিমুল্লাহ)। সুতরাং, এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আপনি এ সকল জীবনী পড়ুন, এতে আপনি সেসকল মানুষের অবস্থা ও পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারবেন।
এটা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাহীহ্* হাদীসে তিনি বলেছেনঃ “একজন বিচারকের দুই ব্যক্তির মাঝে বিচার করা উচিত নয়, যদি তিনি রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন।” [ইমাম আহ্*মাদ থেকে বর্ণিত] এখানে দেখা যাচ্ছে যে, যদি বিচারক রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন, তাহলেই বিচার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে, তাহলে তার ব্যাপারটা কিরূপ যে ভীত অবস্থায় রয়েছে? কারণ, নিশ্চয়ই মানব রূহের উপর রাগের চাইতে ভীতির প্রভাব বেশী, যা ইবনুল-ক্বয়্যিম (রহিমুল্লাহ) বলেছেনঃ “সুতরাং, যে কেউ এটিকে শুধুমাত্র রাগের মাঝে সীমাবদ্ধ করে, আর দুশ্চিন্তাকর দুঃখ-কষ্ট, মনযোগবিচ্যুতকারী ভীতি, অসম্ভব ক্ষুধা বা তৃষ্ণা অথবা এমন যে কোন কিছু যা ক্বল্*ব (অন্তর) কে বুঝ থেকে বিরত রাখে সেগুলোকে এর বহির্ভূত করে, তবে তার প্রজ্ঞা ও তার বুঝ অতি সামান্য।” [ই’লামুল মুয়াক্বক্বইন, পৃষ্ঠাঃ ২০৭-২০৮]
সুতরাং, আমাদের দেশের মানুষেরা সত্য কথা বলতে ভয় পায়, এটা মাথায় রাখতে হবে। আর অনেক ‘উলামা একথা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, সত্য কথা বললে তাদের কি হবে, এ নিয়ে তারা ভীত। আর আমি পূর্বে হাই’আত কিবারিল-‘উলামার (শীর্ষ ‘আলিমদের কমিটী) একজন শীর্ষ ‘আলিমের সাথে আমার কথোপকথন উল্লেখ করেছি, যখন আমরা তাদেরকে বলেছিলামঃ “যদি আমরা এটা স্বীকার করে নেই যে আমেরিকানদের এই ভূখন্ডে উপস্থিতি একটি চরম দুরবস্থা, তাহলে একটি ফাত্*ওয়া প্রদান করা উচিত যে এখন জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহন করা ফার্*দ।” ফলে তিনি এ বলে ক্ষমা চাইলেন যে, তিনি এই ফাত্*ওয়া প্রদান করতে পারবেন না, আর একই সাথে সবার সামনে একথাও বললেন যে, এটাই আসলে সত্য যে, এখন আমেরিকানদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য জিহাদই করা প্রয়োজন। তিনি বললেনঃ “কিন্তু শাসনকর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আমাদের সাথে একমত হবে না।” আর যখন আমরা তাকে বললামঃ “হাই’আত কিবারিল-‘উলামার” মাধ্যমে এই ফাত্*ওয়া প্রদান করতে চেষ্টা করুন,” তখন তিনি যা বললেন তার সততাকে আমি বাহবা দেই, তিনি বললেনঃ “শাসনব্যবস্থা হাই’আত কিবারিল-‘উলামাকে এ ব্যাপারে কোন কর্তৃত্ব দেয় না।” তিনি আরোও বললেনঃ “কোন বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করা ও সেটির ব্যাপারে ফাত্*ওয়া দেওয়ার কাজ যারা করে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। ফাত্*ওয়া শুধুমাত্র সে সকল বিষয়েই দেওয়া হয় যেগুলো ‘উপর থেকে’ (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ) আমাদের দিকে পাঠানো হয়।”
সুতরাং, মানুষের এই বিষয়টি বুঝা জরুরী, কারণ যদি এই সন্দেহ ও ভুল সবার কাছে পরিষ্কার না হয়ে যায়, আর দ্বীন ও ঈমানদারদের প্রতি পরিষ্কার আনুগত্য ও সহানুভূতির ঘোষণা ছাড়া এবং শির্*ক ও বিদ‘আহ্* থেকে সম্পূর্ন দায়মুক্তি, ঘৃণা ও অনানুগত্যের ঘোষণা ব্যতীত উম্মাহ্* সামনে আগাতে থাকে, তবে আমাদের পক্ষে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন কখনোই সম্ভব হবে না। সুতরাং এটি একটি চরম সঙ্কটের বিষয় এবং অতি জরুরী বিষয়। সুতরাং, সত্যবাদী ‘উলামাদের, ‘ইল্*মের ছাত্রদের ও দ্বীনের দা‘ঈদের জরুরীভিত্তিতে এ সম্পর্কিত সকল সন্দেহ ও সংশয় যুবকদের মন থেকে দূরীভূত করার পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
সুতরাং, এই শাসনব্যবস্থা ঠিক যেমন তথ্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটির কাজ হল মানুষকে প্রতারিত করা, একইভাবে এটি এটির সে সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের পিছনে প্রচুর শ্রম দেয় যেগুলো নিজেদেরকে ইসলামের সাথে সম্পর্কিত করে, যেগুলো এই শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা প্রদান করে, যেগুলো ঘোষণা দেয় যে এরূপ শাসনব্যবস্থা সত্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত।
আর এই বিষয়টিকে আরোও স্পষ্ট করার জন্য বলছি, আপনি খেয়াল করে থাকবেন যে, হাই’আত কিবারিল-‘উলামার ভবনটি রাজপ্রাসাদের সংলগ্ন। আপনি হয়ত এটাও দেখেছেন যে, আল-আযহারের দারুল-ইফতার ভবনটি হুসনি মুবারাকের রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন। আর হারামাইন ভূখন্ডের দারুল-ইফতা রাজার রাজপ্রাসাদের সংলগ্ন। সুতরাং, যে ব্যক্তি রাজার থেকে বেতন নিচ্ছে, আপনি কি এমন কাউকে জিজ্ঞেস করবেন যে, রাজার ব্যাপারে শারী‘আহ্*-এ কি বিধি প্রযোজ্য? রাজা কি কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করেছে কি না? আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা কি ঈমান বিধ্বংসকারী কোন বিষয় কিনা? আসলে এই বিষয়গুলো খুবই পরিষ্কার, যদিও ‘ইল্*মের অভাবের কারণে কিছু মানুষের কাছে বিষয়টা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে এরূপ মানুষদেরকে সত্যবাদী মানুষদের কাছ থেকে ‘ইল্*ম জেনে নেওয়ার জন্য পাঠানো উচিত। আর আপনি রাজার চাকুরী করে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না যে, রাজার উপর শারী‘আহ্*-এর কি বিধি প্রযোজ্য।
সুতরাং, এরূপ ক্ষেত্রে কি করণীয় তার সমাধানের জন্য সে সকল ‘আলিম বা ব্যক্তিদের আদর্শের দিকে তাকানো ভুল হবে যারা শাসনব্যবস্থার চাপে পরে আপোষ করেছেন, আর এমন কাজ করেছেন যা দ্বীন ইসলামের আক্বীদাহ্*র পরিপন্থী।
আমাদের ইমাম ‘আলী (রাযিআল্লাহু আনহু)-এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যেখানে তিনি বলেছেনঃ “ও হারিস! বিষয়টি তোমার কাছে জটিল রূপ ধারণ করেছে। মানুষ হাক্বে্র (সত্য) উৎস নয়। হাক্ব্* কে (সত্য) জানো, আর তখনই তুমি এর অনুসারী মানুষদেরকে চিনতে পারবে।”
মানুষের মাঝে হাক্বের (সত্য) অনুসন্ধানের ফলে অন্ধ-অনুসরণ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক যুবকই তাদের সকল কাজে শাসনব্যবস্থার দাসদের অনুসরণ করে। তাদেরকে একটি মর্যাদার পোশাক পরতে দেওয়া হয়েছে আর তাদেরকে বড় বড় নাম দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা শাসনব্যবস্থার দাস। আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা তাদেরকে তাদের ‘ইল্*ম থাকা সত্ত্বেও পথভ্রষ্ট করেছেন। কারণ আমরা দ্বীনি কিতাবাদি থেকে শিখেছি যে মৌলিক যে সকল ‘আমল একজনকে দ্বীনের বহির্ভূত করে, তার মাঝে একটি হল কুফ্*ফারদের প্রতি আনুগত্য স্থাপন করা। যদিও আমাদের সাথে গোপন আলোচনায় তারা এ ব্যাপারে সত্য কথা বলে, কিন্তু এরপরেও জনসম্মুখে তারা মিথ্যা রচনা করে, যেমনটি ইয়াহ্*ইয়া ইব্*ন মা’ইন (রহিমুল্লাহ) করেছিলেন। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।
আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি ও বর্তমান দুর্দশার থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন দ্বীন ইসলাম, আল্লাহ্*, তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলিমদের আমীরগণের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া। আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আন্তরিক উপদেশ [নাসীহাহ্*], কারণ নাসীহাহ্* হল অন্যতম উপাদান যার দ্বারা দ্বীনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত হয়। এই কারণে আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “দ্বীন হল নাসীহাহ্*।” [মুসলিম দ্বারা বর্ণিত] কারণ নাসীহাহ্*র সবচাইতে পরিষ্কার নিদর্শনগুলোর মাঝে অন্যতম হল সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, যা দ্বীনকে প্রতিরক্ষা প্রদান করে। এ কারণের তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বীনের সারাংশ করেছেন তার এই উক্তির মাধ্যমেঃ “দ্বীন হল নাসীহাহ্*।”
কিন্তু এখন আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যখন, মানুষের দ্বীনের বুঝ অসংখ্য সংশয়ে ভরা, আর তারা মনে করে যে, নাসীহাহ্* এবং সচেতনতা ছাড়াও দ্বীন তার কার্যাবলি বজায় রাখতে পারে। তাই আমরা আজ দেখি যে, মানুষ আজ প্রাচুর্য ও চাকচিক্য দ্বারা আক্রান্ত এবং সে পার্থিব বিষয়াদি ও দুনিয়ার প্রতি অনেক ঝুঁকে পড়েছে। আর এরচেয়েও খারাপ কথা হল, যে সকল অলস ব্যক্তিত্বরা পার্থিব জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তারা তাদের এই ব্যাধি যুবকদের মাঝে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। কারণ যে সকল যুবকেরা তাদের দ্বীন নিয়ে গর্বিত, যারা অসৎকাজে বাঁধা দিতে চায়, অসৎকাজ বন্ধ করতে চায়, তাদেরকে এ সকল অলসেরা বলে যে, অসৎকাজে বাঁধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর এভাবে এ সকল অলসেরা রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কথার উপরে নিজেদের কথাকে প্রাধান্য দেয়।
সুতরাং, নাসীহাহ্*, এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুক্ষীণ করা ব্যতীত দ্বীনের পক্ষে তার কার্যাবলি বজায় রাখা সম্ভব নয়। আর এই কারণেই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “সর্বোত্তম জিহাদ হল অত্যাচারী শাসকের সম্মুখে হাক্ব্* (সত্য) কথা বলা।” [ইমাম আহ্*মাদ দ্বারা বর্ণিত] আর এ সবকিছু এজন্যেই যেন দ্বীনের সকল কার্যাবলি বজায় থাকে।
দ্বীনের সকল কার্যাবলি যেন সুষ্ঠভাবে বজায় থাকে এ জন্য যে নিজেকে ঝুঁকির সম্মুক্ষীণ করছে, তার পরিস্থিতির উদাহরণ হল সেই জাহাজের মানুষটির পরিস্থিতির উদাহরণের ন্যায়, যেটির ক্যাপ্টেন সেটিকে একটি খাড়া জলপ্রপাতের দিকে চালিত করছে, আর এই ব্যক্তি সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপদেশ দিতে চায়, আর অন্যান্যরা তাকে (ক্যাপ্টেনের) ভয়ে বলছেঃ “যদি তুমি তাকে উপদেশ দাও, তবে সে তোমাকে হত্যা করবে! তাকে উপদেশ দিতে যেও না।” সুতরাং, (উপদেশ না দেওয়ার) ফলাফল হচ্ছে, তারা সকলেই সেই জলপ্রপাতের মধ্যে পড়বে।
আর তাই আমাদের দ্বীনে একটি ভুল পথকে সঠিক করার জন্য এত জোর ও যত্ন দেওয়া হয়েছে যে, আপনি নিজেকে আল্লাহ্*র রাস্তায় কুরবানী করে দিবেন যেন পথটি সঠিক হয়, যেন মানুষ নিজেদের দ্বীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর এই কারণে আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর এই হাদীসটি এসেছেঃ “শহীদদের নেতা হলেন হামযা ইব্*ন ‘আব্দিল মুত্তালিব, এবং একজন ব্যক্তি যিনি একটি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আদেশ করেছেন (হাক্ব্*-এর) এবং নিষেধ করেছেন (বাতিল-এর), আর তাই তিনি তার (শাসকের) দ্বারা হত্যাকৃত হয়েছেন।”[আল-হাকিম দ্বারা বর্ণিত হয়েছে]
এটা এই হাদীসের একটি খুবই পরিষ্কার ও স্পষ্ট বুঝ, আর এরপরেও আমাদের ‘উলামা ও মাশায়িখগণ আমাদেরকে ধরে রাখেন এবং এটা করা থেকে বিরত করেন, একথা বলে যে, এতে কোন কল্যাণ নেই।
সুতরাং, তাদের (যারা যুবকদেরকে উপরোল্লিখিত হাদীসানুসারে কাজ করতে নিষেধ করে) দেওয়া বুঝ ‘আক্বীদাহ্* ও দ্বীনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তারা কি করে নিজেদের কথাকে আল্লাহ্*র রসূলের এ কথার উপরে প্রাধান্য দেনঃ “শহীদদের নেতা হলেন হামযা ইব্*ন ‘আব্দিল মুত্তালিব, এবং একজন ব্যক্তি যিনি একটি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আদেশ করেছেন (হাক্ব্*-এর) এবং নিষেধ করেছেন (বাতিল-এর), আর তাই তিনি তার (শাসকের) দ্বারা হত্যাকৃত হয়েছেন।” [আল-হাকিম দ্বারা বর্ণিত হয়েছে] কারণ আমাদের শক্তি, দ্বীনকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য আমাদের অস্ত্র, দ্বীনকে ভিতর থেকে দূষিত করার যে কোন অপচেষ্টার প্রতিরোধ, বাহির (কুফ্*ফার) থেকে আগত দ্বীনের প্রতি যে কোন প্রকারের হুমকির প্রতিরোধ, ইত্যাদির সাথে শহীদ হবার তামান্না ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং, জিহাদ এবং এর ফলাফলস্বরূপ যা আসে, শুধুমাত্র তার মাধ্যমেই হাক্ব্*কে (সত্য) পুনরায় ফিরিয়ে আনা এবং বাতিলকে (মিথ্যা) পুনরায় দূরীভূত করা সম্ভব।
সুতরাং, যে সকল যুবকদের অন্তরকে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা দ্বীনের ভালোবাসার প্রতি এবং তার রাস্তায় কুরবানীর প্রতি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাদের মোটেও উচিত হবে না এ সকল শাসনব্যবস্থার দাস, অলস ব্যক্তি ও পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে যাওয়া লোকদের থেকে কোন প্রকারের কথাকেই কানে নেওয়া। সুতরাং, পূর্বের (যখন তথ্যপ্রযুক্তি এত শক্তিশালী ছিল না) ‘উলামাগণ (যারা ছিলেন ন্যায়পরায়ণ) আর বর্তমানের (যখন তথ্যপ্রযুক্তি খুবই শক্তিশালী) শাসনব্যবস্থার ‘উলামাগণের মাঝে কতই না পার্থক্য!
‘ইল্*মের অধিকারী ব্যক্তিগণ বলেছেনঃ “শাসকের দ্বারে ‘আলিমদের প্রবেশের ক্ষেত্রে তিনটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে।” আর এর মাঝে সবচাইতে বেশী ক্ষতিকর হল সাধারণ জনগণকে পথভ্রষ্ট করা। কারণ সাধারণ জনগণ বলবেঃ “যদি এই নেতা বা এই রাজা বা এই মন্ত্রী ভালো না হতেন, তবে তো অমুক আর অমুক শাইখ কখনোও তাদের ভবনে প্রবেশ করতেন না!” আর তারা এ ব্যাপারে অজ্ঞ যে, আসলে সেই শাইখ শাসনব্যবস্থারই একটি দাস যে সেই নেতা বা রাজা বা মন্ত্রীর চাকুরী করে।
ইমাম আহ্*মাদ (রহিমুল্লাহ) বলেছেনঃ “যে সকল বিষয় মানুষের ফিক্ব্হী (প্রজ্ঞার) অভাবকে নির্দেশ করে, তার মাঝে একটি হল সে দ্বীনের বিষয়াদিতে অপর কোন মানুষের অন্ধ-অনুসরণ করে।” [ই’লামুল মুওয়াক্ব্*ক্বইন, ২/২১১]
সুতরাং, শাসকেরা যাদেরকে জিহাদের পথে বাঁধাস্বরূপ দাঁড় করিয়ে রেখেছে, যখন আমরা তাদেরকে চিনতে পারবো, আর যখন আমরা সার্থকভাবে সাধারণ মানুষদেরকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করতে পারবো, তখনই আমরা আল্লাহ্*র অনুমতিক্রমে জিহাদের পথে চলা শুরু করতে পারবো যার দ্বারা কুফ্*ফারদের শক্তিকে ধ্বংস করা হয় এবং হাক্ব্* (সত্যকে) প্রতিষ্ঠিত করা হয়। আর এ সকল শাসনব্যবস্থার দাসেরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে ফিক্ব্*হী (প্রজ্ঞার ) শিক্ষা দিয়েছেন তা ধারন করে না, এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে যে মানহাজ (কর্মপদ্ধতির) শিক্ষা দিয়েছেন, সে সম্পর্কে তাদের কোন বুঝ নেই।   (চলমান…)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়লা আমাদের সকলকে বুঝার ও হক্ব  অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।


تنظيم القاعدة

0 Comments:

Post a Comment