Thursday, May 28, 2020

বিশেষ দ্রষ্টব্য - ৩

আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি সকলে আল্লাহর ইচ্ছায় ভাল আছেন। একটা বিষয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যা নিয়ে শেষপর্যন্ত লিখতেই চলে এলাম।

"বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজ নিয়েই দুশ্চিন্তা! আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করতে শুরু করেছেন ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের গভীর থেকে গভীরতর তত্ত্বের দিকে যাওয়া হচ্ছে। যত গভীরে প্রবেশ করছি, দেখতে পাচ্ছেন তত কুফরি আকিদা এবং যাদুবিদ্যাভিত্তিক শাস্ত্রের গহীনে যাওয়া হচ্ছে। আমার ভয় হয়, এসব পড়ে কেউ আবার কেউ ঈমান - কুফরের ফিতনায় পড়ে যায় কিনা। এজন্য ক'দিন আগে এক দ্বীনি ভাইকে বলছিলাম যতদূর গিয়েছি এবার থেমে যাব কিনা। তিনি সাহস দিয়ে থামতে নিষেধ করলেন। একটা বিষয় হচ্ছে, আমি এ সকল বিষয় না এনে পারিনা, কারন এগুলোই বিজ্ঞানের আসল পরিচয়, আসল রূপ। বিজ্ঞানীদের আসল আকিদাহ। এসব এড়িয়ে গেলে বিজ্ঞানের আসল পরিচয়কে গোপন করে আজীবন বৈধবিদ্যার মর্যাদায় রেখে অনুসরণ চালিয়েই যাওয়াতে সহযোগিতা করা হবে।  আপনারা দেখতে পাচ্ছেন কোন বিজ্ঞানপ্রিয় মুসলিম মুসলিমাহগন আমার বিরুদ্ধে এসব ডকুমেন্টস রিফিউট করতে সাহস করে না, কারন এটাই বাস্তবতা। কি করে সত্যকে অস্বীকার করবে বলুন! আমার খুব দুঃখ এবং ভয় হয় যে আমার পিছনে এমন কেউ নেই যার উপর নির্ভর করে নিশ্চিন্তে কিছু লিখব, কারন এ এমনই কিছু বিষয় যা আমার পূর্বে কেউই লেখেনি। এজন্য স্বীয় অবস্থানগত বিশুদ্ধতার সন্দেহে প্রতিনিয়ত অজানা ভয় গ্রাস করে,যেহেতু কোন কোন আলিমই এমন র‍্যাডিক্যাল চিন্তায় যায়নি তাই তাদের থেকে স্বীকৃতি নেই । আমার কন্সেপচুয়াল মডেল একমাত্র সরাসরি আসহাবে রাসূল(সাঃ) এর সাথেই মেলে। এর মাঝের ১৩০০ বছরের মাঝে আর কাউকে খুজে পাইনা, আলিমদের বিপরীত অবস্থানের জন্য কখনো কখনো  নিদারুণ অসহায়ত্বে ভুগি। অনেক প্রকারের ডিলেমার মধ্যে পড়ি। এমন চিন্তাও করি যে ভবিষ্যতে এমনও করতে পারি যে, আমি যাই বলেছি বা করেছি তা হঠাৎ করে সবকিছু মুছে দেই এবং যারা এর কিছু সংরক্ষন করেছে তা মুছতে আদেশ দেই[এমন কাজ সত্যিই করার সম্ভাবনা আছে]। কেননা আল্লাহ আযযা ওয়াযাল সবকিছুর হিসাব নেবেন। বিষয়টা চরমভাবে ভীত করে। কিন্তু আবার যখন কুরআন সুন্নাহের দিকে তাকাই তখন মনে হয় আমার অবস্থান বিশুদ্ধ এবং এসব কাজে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতাআ'লার কাছে অসন্তোষজনক নয়। যাইহোক আল্লাহর কাছে যাবতীয় ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং যেকোন ধরনের বড় কোন বিভ্রান্তির কারন হওয়া থেকে পানাহ চাই। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আমার নিজের দ্বারা ঘটা অন্যের উপর যেকোন অনিষ্ট থেকে। আমি কারও উপকার যদি নাও করতে পারি, আমার দ্বারা যেন কেউই কোনরূপ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমিন।

"বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজ সামনে আরো অনেক ভয়াবহ ঈমানবিধবংসী অপবৈজ্ঞানিক আকিদাহ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এমতাবস্থায়, সাধারন মানুষের কল্যানের জন্য আমি আবারো একটি শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এর আগে শুধুমাত্র ব্লগের রেফারেন্স দিয়ে কপি পেস্ট করার অনুমতি দিয়েছিলাম , "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজের উপর সেই সুযোগটিও রাখা হচ্ছে না। আজকের পর থেকে এই আর্টিকেল সিরিজের কোন পর্বের যেকোন ধরনের কপি পেস্ট নিষেধ করা হচ্ছে। ব্লগের রেফারেন্স আমার নাম কোন কিছু উল্লেখ করে বৈধতা পাওয়া যাবে না। সেই সাথে এর উপর যেকোনো ভিডিও নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি। তাছাড়া এর কথাগুলোকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে নিজের মত করে লেখার বিষয়েও নিষেধ করছি। অনেকে এসবে পাণ্ডিত্য জাহিরের জন্যও করে থাকে, তাদেরকে এসব কার্য থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করি। এসব নিয়ে ঘাটতে যাওয়া হাতে প্রদীপ ছাড়া অন্ধকার গুহায় প্রবেশের মত, নিজের মত ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলা, ধাধার মধ্যে পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আমি যা প্রকাশ করছি, এসবের যা দুর্বোধ্য লাগে সেসব বুঝতে চাওয়ার প্রয়োজন নেই। এসবের মাঝে অকল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই।

যারা আমার কৃত নিষেধাজ্ঞাকে লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কপিরাইট ইনফ্রিঞ্জমেন্ট পিটিশনে যাওয়া হবে। কপিরাইট চেক করার এআই বটগুলো ভাল করেই জানে, আমার এ ব্লগের বাইরে আমার পূর্বে কোন ভাষাতেই এসকল বিষয়ে আমার আনিত বিশেষ স্ট্যান্ডার্ডে কিছুই নেই। সুতরাং এ জাতীয় পিটিশনে শতভাগ আনুকূল্য পাব বলে আশা করি।

এমতাবস্থায়, একমাত্র সীমিত পরিসরে লিংক শেয়ার ছাড়া আর কিছুর বৈধতা দিতে পারিনা।  এতেও যদি ভবিষ্যতে কোন ফিতনার আশংকা করি তবে এটার পথও বন্ধ করার জন্য বলা হবে। আমি এমনিতেই সমস্ত পর্বগুলোকে পিডিএফ ফাইল তৈরি করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করব। আমি এ সংক্রান্ত সকল বিষয়কে একটা বিশেষ শেইপে পূর্নতাদান করতে চাই যেহেতু এই ফিতনা ২০১৬ এর দিকে আমার হাতেই জন্ম। আমি কোনভাবেই এসকল ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলোকে ছেলেখেলা বানিয়ে যার যার মত অনুসারে ছড়িয়ে সুদূরপ্রসারী ফিতনাহর জন্ম দিতে পারিনা।


আমি ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি একদল ভাই মতে মিল না হওয়ায় অপর মুসলিম ভাইদের সাথে এমন রুক্ষ আচরণ করছেন যেটা একমাত্র কাফিরদের সাথে করাই শোভা পায়। সৃষ্টিতত্ত্বের বিশ্বাসের পার্থক্যে এমন আচরণ কখনোই সমর্থন করা যায় না। যারা শয়তান ও কাফিরদের হাতে নির্মিত সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসস্থাপন করে, এরূপ ব্যক্তি যদি আমাদের গালমন্দও করে, আমরা তা মুখবুজে সহ্য করব, তাকফির করা তো অনেক দূরের বিষয় । ভদ্রতার সাথে জবাবের বাহিরে যেন কোনরূপ রূঢ় আচরণ অপর মুসলিম ভাইদের প্রতি না করি।


অনেকে আমার সাথে যোগাযোগের প্রত্যাশা করেন, আমি আগেই বলেছি সময়ের অপচয় এবং শুহরাতের থেকে বেচে থাকার জন্য অনলাইনে সক্রিয় অবস্থানকে অপছন্দ করি। আমি জানি না ভবিষ্যতে কবে আবারো ফেইসবুকে আসছি। তবে সব সময় "ইল্মুল কালাম ওয়াল ইসলাম" নামের আমাদের গ্রুপে নিয়মিত চোখ রাখি। ব্লগের মাঝেই আপাতত সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। এখানে কাজ শেষ হয়ে গেলে এখান থেকেও বিদায় নেব। ব্লগে আগে গুগলে লগইন না করে কমেন্ট করা যেত না , এখন পাব্লিকভাবে বিনা লগইনে যে কেউই মন্তব্য করতে পারবেন। তাছাড়া এ ব্লগে "ফলো" বাটন আগে ইনএ্যাক্টিভ ছিল, যেটা এখন এক্টিভ করেছি। যাইহোক আমি সবসময় চেষ্টা করব কমেন্টের জবাব দিতে। ইদানীং লেখালেখির কাজে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হচ্ছি বিভিন্ন ডিজিটাল  হার্ডওয়্যারে সমস্যা হবার জন্য। ডিজিটাল স্টোরেজ এবং আমার অরগ্যানিক স্টোরেজ থেকে অনেক ইনফরমেশন হারিয়ে যাচ্ছে। দু'আর মুহতাজ।           

Saturday, May 23, 2020

১৮.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

প্রাচীন যাদুকরদের বিশ্বাস ও তাদের অপবিদ্যার 

দিকে পদার্থবিজ্ঞানীদের হাতছানি 










"আজকের রাতের আলোচনা হচ্ছে চৈতন্য, সৃষ্টিশীলতা এবং মস্তিষ্ক নিয়ে। আপনার যদি গল্ফ বল সাইজের চেতনা হয়, আপনি যদি একটি বই পড়েন তবে আপনার বোধ ওই গল্ফ বল সাইজেরই হবে। আপনি যখন বাহিরে দেখবেন আপনার গল্ফ বল সাইজের সচেতনতা থাকবে, আপনি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠবেন আপনার ওই গল্ফ বলের আকৃতির জাগরন হবে। কিন্তু আপনি যদি আপনার চেতনাকে(consciousness) সম্প্রসারণ ঘটান, এরপর বইটা পড়ুন, আরো বেশি বোধ আসবে। বাইরে তাকান, আরো বেশি সচেতনতা পাবেন নিজের মধ্যে।এবং আপনি যদি জাগ্রত হন ঘুম থেকে, আরো বেশি জাগরিত মনে হবে নিজেকে। এটা হচ্ছে consciousness(চেতনা)। এবং একটা বিশুদ্ধ তরঙ্গায়িত চেতনার সমুদ্র আছে আপনার আমার শরীরের মধ্যে। এটা আছে প্রত্যেক মনের উৎসে, প্রত্যেক চিন্তার উৎসে এমনকি এটা আছে প্রত্যেক পদার্থের গোড়ায়।"
_David Lynch
[আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা-পরিচালক, 
প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী]




Occult philosophy হচ্ছে যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক বিশ্বাসব্যবস্থা। এমন বিশ্বাস বা বিশ্বদর্শন যা যাদুকরদের সিহর বা যাদুচর্চাকে র‍্যাশোনাল করে। যাদুশাস্ত্রে বর্নিত বাস্তবজগতের নীতি ও গঠনের উপর ভিত্তি করে যাদুকররা সৃষ্টিজগতের অস্তিত্বে আসার প্রক্রিয়া, সকল অস্তিত্বের রহস্য, সৃষ্টি ও স্রষ্টার ব্যপারে অনুমাননির্ভর ধারনার সমন্বয়ই হলো অকাল্ট ফিলসফি বা অকাল্ট বিশ্বদর্শন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদুকর ঋষিগন প্রাচীন কিতাবাদিতে সৃষ্টিজগতের ব্যপারে শয়তানের সাহায্যে অল্টার্ড স্টেইট অব কনসাসনেসে গিয়ে এবং যাদুশাস্ত্রের উপর নির্ভর করে প্যাগান বিশ্বাস বা ফিলসফি তৈরি করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে যাদুশাস্ত্রেই ফিলসফিক্যাল ব্যপারগুলো উল্লেখ থাকে। পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের সকল যাদুবিদ্যার ট্রেডিশনে যাদুকরদের মধ্যে সৃষ্টি জগত ও এর অস্তিত্বের অরিজিনের বিষয়ে কমন বিশ্বাস হচ্ছে, এই বিশ্বজগতের অস্তিত্ব অদ্বৈত[Monism]। অর্থাৎ যিনি স্রষ্টা, তিনিই সৃষ্টি। সহজ কথায় সর্বেশ্বরবাদ। এই বিশ্বাসের আদিম উৎস মেলে বৈদিক শাস্ত্রে এবং সম্ভবত এরও আগে ইহুদিদের কাব্বালাহ।  সম্ভবত তারা পেয়েছে ব্যবিলনীয়ান এ্যাস্ট্রলজি থেকে।এটাই ছিল প্রি-সক্রেটিক দার্শনিক এ্যান্যাক্সেগোরাস, পিথাগোরাসদের মধ্যে। এরা বিশ্বাস করত, সবকিছুর মূলে আছে মন বা চৈতন্য। সব কিছুই মেন্টাল কন্সট্রাক্ট। বিশ্বজগতের সব কিছু একসাথে মিলে ইউনিভার্সাল মাইন্ড। দার্শনিক বারুচ স্পিনোজা একেই ঈশ্বর বলতো। অর্থাৎ প্রকৃতির উপর ঐশ্বরিকতা আরোপ। আরবিতে এই বিশ্বাসকে বলা হয় ওয়াহদাতুল উজুদ[একঅস্তিত্ব]।যাদুকররা বিশ্বাস করে এই একক মহাচৈতন্যের অন্তর্ভুক্ত সকল সচেতন অস্তিত্ব সৃষ্টি ক্রিয়ায় অংশ নেয়। অর্থাৎ সবকিছুই সবকিছুর Co-creators! সকল ট্রেডিশনের যাদু ও অকাল্ট ফিলসফির মধ্যে সুক্ষ্ম কিছু পার্থক্য থাকলেও, এটাই মূল আকিদাগত শিক্ষা[৬১]। আধুনিক উইক্কানরাও এই আকিদা রাখে। উইকিপিডিয়া অনুযায়ীঃ "Unlike religions that place a divine creator outside of Nature, Wicca is generally pantheistic, seeing Nature as divine in itself."
_উইকিপিডিয়া


Heinrich Cornelius Agrippa von Nettesheim (1486–1535) সর্বপ্রথম অকাল্ট ফিলসফির একটা ভাল সংজ্ঞা প্রদান করেন তার De Occulta Philosophia Libri Tres (Three books on occult philosophy) বইয়ে। এটা পূর্নাঙ্গভাবে প্রকাশ পায় ১৫৩৩ সালে। তার মতে যাদুকররা কিছু জিনিসে বিশ্বাস ও চর্চার দ্বারা এই বিশ্ব জগতের আড়ালে থাকা ঐশ্বরিক গুপ্ত নীতিসমূহের জ্ঞান লাভ করেন। অকাল্ট ফিলসফি হচ্ছে প্রাচীন যাদুকরদের এই বাস্তব জগতের ব্যপারে আকিদার সমন্বয়। Marsilio Ficino'র হার্মেটিক কর্পাসের ১৪৬০ সালের অনুবাদ অকাল্ট দার্শনিকদের গুরুত্বপূর্ণ একটা কিতাব হিসেবে বিবেচিত হয়। রেনেসাঁয় Giovanni Pico della Mirandola(1463–1494) কর্তৃক ইহুদিদের যাদুশাস্ত্র কাব্বালার অন্তর্ভুক্তি অকাল্ট দর্শন বা যাদুশাস্ত্রভিত্তিক বিশ্বাস ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করে। তাদের পাশাপাশি আরো খ্যাতিমান অকাল্ট ফিলসফারগন হলেন Francesco Giorgi( Zorzi) (1467–1540), Girolamo Cardano (1501–1576), Tommaso Campanella (1568–1659),Athanasius Kircher (1602–1680), Paracelsus (1493–1541), John Dee (1527–1608), Robert Fludd (1574–1637),
Giordano Bruno (1548–1600)।



গত পর্বে আপনারা দেখেছেন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের পথিকৃৎগন কিরূপে পূর্বাঞ্চলীয় মিস্টিক্যাল অকাল্ট ট্রেডিশান তথা বেদান্তবাদকে বিজ্ঞানে রূপান্তর করেছেন। আপনারা দেখেছেন হিন্দু পৌত্তলিকদের কুফরি শাস্ত্রের দেবতা ব্রহ্মাকে মা'বুদ বলে স্বীকার করেছেন। সকলে ফিরে গেছে ব্রহ্মচৈতন্যের অদ্বৈত অস্তিত্বে। সেখানেই শেষ নয়। বরং ওটা ছিল অপবৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রার মহাসূচনা। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এর অশুভ যাত্রা অব্যাহত আছে। ওদের কুফরি তত্ত্ব সমূহ আজ আরো বেশি বিস্তৃত, সমৃদ্ধ এবং পূর্ণতাপ্রাপ্ত। আজ পদার্থবিজ্ঞান ছাপিয়ে এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতাদের পর্যন্ত যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক অকাল্ট ফিলসফি পৌছে গেছে। পদার্থবিজ্ঞানীগন ফিরে গেছেন ইজরায়েলের ইহুদী কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈদের কাছে।

প্রথমাবস্থায় পদার্থবিজ্ঞানের পথিকৃৎগন প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট অপবিদ্যার সত্যায়নে বেদান্তবাদকে ব্যবহার করে ব্রহ্মচৈতন্যকে স্বীকৃতি দেয়, এরপর সৃষ্টি ক্রিয়ায় যাদুকরদের প্রাচীন বিশ্বাসকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রতিষ্ঠা করা হয় মনুষ্য চেতনার প্রভাবকে। বলা হয়, মানব চেতনা কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ায় কাজ করে এবং এটা বাস্তবজগতকে সৃষ্টিতে এবং পরিবর্তনে অংশ নেয়। অর্থাৎ মানুষ নিজেই যার যার অবস্থা ও বাস্তবজগতের সৃষ্টিকর্তা। এবং কালেক্টিভলি সমগ্র মানবজাতি মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে রাখতে সক্রিয় পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকে। এর মানে হচ্ছে সচেতন প্রানী বা মনুষ্যজাতি এই ব্রহ্মাণ্ডের সহসৃষ্টিকর্তা[Co-creators]।

পদার্থবিজ্ঞানী তথা যাদুশাস্ত্রের অনুসারী এবং চর্চাকারীরা সর্বপ্রথম সৃষ্টিতে Act of observation বা পর্যবেক্ষণের  অপরিহার্যতাকে দ্বার করায়।তাদের তত্ত্বানুসারে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড মৌলিক অবস্থায় অদ্বৈত চৈতন্যের সমুদ্র বা সবকিছুই ননলোকাল(স্থানবিহীন) একক এনার্জি ফিল্ড। এতে বস্তু জগতের সৃষ্টির জন্য বা কোন কিছুর অস্তিত্ব সচেতন পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ পর্যবেক্ষক ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স করে। পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিই সাথে সাথে এনার্জিকে বস্তুতে রূপান্তর করে ফেলে। অব্জারভেশন ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সের তত্ত্বকে বলা হয় কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশান[১]।

শুধু পর্যবেক্ষক হলেই চলবেনা। চেতনা বা সচেতনতা হচ্ছে শর্ত। চৈতন্যই বা active intention'ই সমস্ত কিছুর আসল ভাগ্যনিয়ন্তা।শ্রোডিঞ্জারের মতে, কোপেনহেগেন ব্যাখ্যার দ্বারা বোঝা যায় যে পর্যবেক্ষণ না হওয়া অবধি বিড়ালটি জীবিত ও মৃত উভয়ই থাকবে। পর্যবেক্ষককে অবশ্যই সচেতন সত্তা হতে হবে। "চেতনা ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সের কারন" হিসেবে দ্বার করানো হয় 'ভন নিউম্যান-উইগ্নার' ব্যাখ্যায়[২]।

এটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি ব্যাখ্যা যা কোয়ান্টাম মেজারমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য চেতনাকে আবশ্যক বলে। ভন নিউম্যানের পাশাপাশি নোবেল লরিয়েট পাইয়োনিয়ার কোয়ান্টাম ফিজিসিষ্ট ইউজিন উইগ্নার একটা থট এক্সপেরিমেন্ট উত্থাপন করেন 'উইগ্নার্স ফ্রেন্ড'[৩] নামে, যাতে তিনি চেতনার অপরিহার্যতা দেখান।পরীক্ষনগুলোয় একটা প্রশ্ন উঠে আসে। চেতনা বলতে যদি মানব চেতনাকে ধরা হয় তাহলে কোন ঘটনার পর্যবেক্ষক যে জীবিত বা সচেতন এটা কিভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি? এজন্য এ সমস্যার সমাধানের জন্য অবশেষে আনা হয় Universal collective consciousness বা ব্রহ্মচৈতন্য। মহাচৈতন্যের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা করতে মার্কিন অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক মরগ্যান ফ্রিম্যানের উপস্থাপনায় এক ডকুমেন্টারিতে শ্রোডিঞ্জারের বিড়ালের থট এক্সপেরিমেন্টকে সামনে আনা হয়[৬৬]। একটি বিড়ালকে বিষাক্ত গ্যাস ও রেডিয়েশন ভরা বাক্সে আটকে রাখলে কোয়ান্টাম তত্ত্বানুসারে সেটি জীবন মৃত্যু উভয় অবস্থানেই থাকে, শ্রোডিঞ্জারের মতে সেটা চূড়ান্ত ভাবে নির্ধারণ করা হবে মেজারমেন্টের দ্বারা, আর সেটা একজন পর্যবেক্ষক। পর্যবেক্ষকের ধারনাকে এগিয়ে দিতে ইউজিন উইগ্নার এগিয়ে আসেন। তিনি প্রস্তাব করেন পর্যবেক্ষকের চেতনাই বিড়ালের ভাগ্য নির্ধারক। কিন্তু এতে আরেকটি সমস্যা তৈরি হয়। পর্যবেক্ষক যে সচেতন ও জীবন্ত সেটার নির্ধারক পর্যবেক্ষক কে? এজন্য নিয়ে আসেন থট এক্সপেরিমেন্ট - উইগ্নার্স ফ্রেন্ড। উইগ্নারের বন্ধু যে জীবিত সেটা কে নির্ধারন করে?
অন্য আরেকজন পর্যবেক্ষক। এভাবে চলতে থাকলে একটা অন্তহীন পর্যবেক্ষকদের শেকল তৈরি হয় এবং অবশেষে দারস্থ হতে হয় universal collective cosmic consciousnesses! মহাজাগতিক মহাচৈতন্যই আসল পর্যবেক্ষক। সবকিছুর ভাগ্যনিয়ন্তা[৪]।এই মহাচৈতন্যই বেদান্তশাস্ত্রের ব্রহ্মা। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভাষায় বলা হয় "কোয়ান্টাম মাইন্ড"। কোয়ান্টাম মাইন্ড বা মহাচৈতন্যের এ তত্ত্বের উৎস হচ্ছে বেদান্ত শাস্ত্র বা অদ্বৈত বেদান্তবাদ। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ১৫তম পর্বে গত হয়েছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একাধিকভাবে ব্রহ্মচৈতন্যকে সত্যায়ন করা হয়েছে। অদ্বৈত বেদান্তবাদী আরউইন শ্রোডিঞ্জার বেদান্তশাস্ত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। তিনি চৈতন্যের অদ্বৈত অস্তিত্বের ব্যপারে বলেনঃ"চেতনা কখনও একাধিকতা দ্বারা উপলব্ধি হয়নি , শুধুই এককতার দ্বারা হয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউই একের বেশি চেতনা অনুধাবন করতে পারেনি,  বিশ্বের কোথাও এ ঘটনা ঘটার কোন প্রমাণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদি আমি বলি যে একই মনের মধ্যে একাধিক চেতনা থাকতে পারে না, তবে এটি ভোঁতা টোটোলজি বলে মনে হবে – [কিন্তু] আমরা বিপরীত মত কল্পনা করতে একদমই অক্ষম।"

অর্থাৎ তিনি কোয়ান্টাম মাইন্ড বা ব্রহ্মচৈতন্যের বা ইউনিভার্সাল কালেক্টিভ কনসাসনেসের কথা বলছেন। এই চিন্তাকে দর্শনশাস্ত্রে প্যান্থেইজম[সর্বেশ্বরবাদ] এবং আরো স্পেসিফিকভাবে প্যানসাইকিজম বলে। ফিলসফিক্যাল প্যানসাইকিজম অনুযায়ী মানবদেহের বাহিরে সমগ্র মহাবিশ্বজগতের সর্বত্র একটি চেতনা ছেয়ে আছে। অর্থাৎ এ মহাবিশ্ব সচেতন সত্তা।একক মন।ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের মতে এই ইউনিভার্সাল মাইন্ডই সকল পদার্থের গর্ভ[Mind is the matrix of all matter]। এটা সর্বেশ্বরবাদের আধুনিকতর যৌক্তিক রূপ। প্যান্থেইজম বা সর্বেশ্বরবাদ যেসব প্রশ্নের জবাব দিতে অক্ষম, প্যানসাইকিজম সেসবের জবাব যৌক্তিকভাবে দিতে সক্ষম। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুধু মেজারমেন্ট প্রব্লেমই নয়, এন্টেঙ্গল্মেন্ট থিওরিও কোয়ান্টাম মাইন্ড[৫] মডেলকে সত্যায়ন করে।লেগেট ইনইক্যুয়ালিটি এক্সপেরিমেন্ট প্রমান করে যে অবজেক্টিভ রিয়ালিটির অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ সবই ভার্চুয়াল কন্সট্রাক্ট। রিয়েলিজম এর ধারনা ভুল।
ম্যাক্রো ও মাইক্রো রিয়ালিটির যে দুই ভাগ আমরা দাঁড় করাই সেটা পুরোপুরি ভুল। ম্যাট্রিক্স ফিল্মে নিওকে বুদ্ধের বেশভূষায় থাকা এক শিশু বলে হাতের চামচটিকে উদ্দেশ্য করে এটা বিশ্বাস করতে আহব্বান করে যে এই চামচটির অস্তিত্বই নেই। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রেটেনশনকে সেভাবে অনুসরণ করা হয় না কারন এটা মাল্টিভার্সের কথা বলতে গিয়ে একধরণের অযৌক্তিক ধারণা দেয়, যা অধিকাংশ পদার্থবিদ মানতে পারেন না।অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর David Deutsch বলেন,এটম ও ইলেক্ট্রন হচ্ছে মাল্টিভার্সাল অব্জেক্ট। এই মহাবিশ্বের যেমনি সমান্তরাল অগনিত ভার্সন আছে তেমনি আমাদের মত মানুষেরও। একইভাবে প্রত্যেকটা ইলেকট্রনও মাল্টিভার্সাল।এভাবে মাল্টিপ্লাই করতে থাকলে এত বেশি সমান্তরাল জগতের ব্যপারে বলে যে একপর্যায়ে তা হাস্যকর ও অযৌক্তিক হয়ে যায়।এজন্য ওয়েভফাংশন কলাপ্সে সমান্তরাল মহাবিশ্বের ব্যাখ্যাকে তেমন গ্রহন করা হয়না। অধিকন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রবর্তক পথিকৃৎগন চেতনাকেই কারন এবং অস্তিত্বের মূল হিসেবে ধরেছেন।এজন্য সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানীরা যত ব্যাখ্যাই করুক না কেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, শ্রোডিঞ্জার,বোরের, উইগ্নারদের কথাই গ্রহনযোগ্য। যদি সমান্তরাল তত্ত্বকে গ্রহনও করা হয় তবে এ তত্ত্বের অরিজিন খুজলে মিলবে সেই অভিন্ন বেদান্তশাস্ত্র। হিন্দু অকাল্ট মেটাফিজিক্সে বিষ্ণু যে কস্মিক সমুদ্রে আছে সেথায় অগণিত সমান্তরাল বিশ্ব তৈরি হয় প্রতিটিতেই আলাদাভাবে ব্রহ্ম শিব রয়েছে।


কোয়ান্টাম মেকানিক্স; অদ্বৈত ব্রহ্মচৈতন্য তথা কোয়ান্টাম মাইন্ড বা প্যানসাইকিজমকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রাচীন যাদুবিদ্যার প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সমস্ত ট্রেডিশনের অভিন্ন বিশ্বাসব্যবস্থাকে সত্যায়ন করে অকাল্ট ফিলসফিতে ফিরে গিয়েছে। অর্থাৎ যাদুকরগন হাজার বছর ধরে মহাবিশ্বের ব্যপারে যে কুফরি আকিদা রাখত সেটাই আজ যৌক্তিকভাবে বৈজ্ঞানিক হিসেবে সত্যায়ন করা হয়েছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বস্তুবাদ এবং অব্জেক্টিভ রিয়েলিজম সরাসরি অস্বীকার করে। এটা বিজ্ঞানকে সরাসরি প্রাচীন গ্রেসীয়ান-ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউতে ফিরিয়ে নিয়েছে। ম্যাটেরিয়ালিজমকে অস্বীকার করিয়ে এক্সট্রেইম আইডিয়ালিজমে ফিরিয়ে নিয়েছে। ইউজিন উইগনার বলেনঃ"অনেকগুলো দার্শনিক চিন্তা যৌক্তিকভাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, কিন্তু তার মধ্যে বস্তুবাদী চিন্তাধারা সঙ্গতিপূর্ণ নয়।"
যাহোক, আইডিয়ালিজম ছিল সকল হার্মেটিক-কাব্বালিস্টদের বিশ্বাসব্যবস্থা যা পরবর্তীতে যাদুকর পিথাগোরাস এবং আরো পরে প্লেটো গ্রহন করে। প্লেটনিক আইডিয়ালিজমের প্রত্যাবর্তনের স্বীকৃতি স্বয়ং ওয়ার্নার হাইজেনবার্গই দিয়েছিলেন[গত পর্বের শেষভাগ দ্রষ্টব্য]। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পর্যবেক্ষক নির্ভরতার জন্য আইডিয়ালিজমের আরো র‍্যাডিক্যাল শাখা:সলিপসিজমকেও[solipsism] সত্যায়ন করে। হাঙ্গেরীয় পদার্থবিদ ইউজিন উইগনার বলেন, "এটি অনুসরণ করেছে যে, পদার্থের কোয়ান্টাম বিবরণটি আমার চেতনায় প্রবেশের ছাপগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়"। অন্যত্র বলেন,"সলিপসিজম [আত্মজ্ঞানবাদ] যৌক্তিকভাবে বর্তমান কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে সামঞ্জস্য হতে পারে।"

কোয়ান্টাম মেকানিক্স তত্ত্বের অনেক প্রবর্তক মনে করতেন যে, মানুষ প্রকৃতির সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে বাস্তবতা পরিবর্তন করতে পারে এবং এই ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম মেকানিক্স, ক্লাসিকাল মেকানিক্স থেকে পৃথক বলে ধরা হয় না। এজন্য ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সের বিষয়টি এভাবে বজায় রেখেছিলেন যে, "প্রোবাবিলিটি ফাংশনে পরিবর্তন" ঘটে ,যখন কোনো পর্যবেক্ষকের মনে(চেতনায়) কোনও পরিমাপের (মেজারমেন্ট) ফলাফল নিবন্ধিত হয়। চেতনাই সবকিছুর ভাগ্য নির্ধারক। যাইহোক, এরকম চিন্তার কারণ,তিনি মানব জ্ঞানের একটি আর্টিফেক্ট হিসাবে প্রবাবিলিটি ফাংশন বুঝতে পেরেছিলেন।স্বঘোষিত অদ্বৈত বেদান্তবাদী আরউইন শ্রোডিঞ্জারের ব্যপারে কিছু বলার নেই, একজন সত্যিকারের বেদান্তবাদী কখনোই রিয়েলিস্ট(বস্তুজগতের অস্তিত্ব সত্য বলে বিশ্বাস) হতে পারেনা বরং এরা র‍্যাডিক্যাল আইডিয়ালিস্ট।নিলস বোরের মধ্যে কোয়ান্টাম তত্ত্বের দার্শনিক তাৎপর্য অন্বেষণের সক্রিয় তৎপরতা ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিবরণ দেয়। বোর কখনই কোন সীমা রেখা নির্দিষ্ট করেনি যেখান থেকে বস্তুগুলি কোয়ান্টাম রেল্ম(জগৎ) হতে কার্যনীতি পাল্টে  ক্লাসিক্যাল হয়ে যায়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এটি শুধুমাত্র পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্ন নয়, বরং দর্শনের! অর্থাৎ দার্শনিক ভিন্নতার কারনে একদম শুরু থেকেই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রবর্তকদের দ্বারা ম্যাক্রো রিয়েলিজম বা ক্ল্যাসিক্যাল নোশনকে অস্বীকারের চিন্তাধারা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ সবকিছুকে 'কোয়ান্টামাইজেশন' এর চিন্তাধারা একদমই শুরু থেকে। আজ এটা প্রায় পরিপূর্ণতার শেষ ধাপে পৌছেছে। কোয়ান্টাম এভ্যুলুশ্যন, কোয়ান্টাম বায়োলজি থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন, এনক্রিপ্টিং সবকিছুতে চলে আসছে। তাছাড়া আইনস্টাইন ও নিলসবোর, এ দুমেরুর ফিজিসিস্টদের জ্ঞানগত আদর্শের দ্বন্দ্বে আইনস্টাইনদের পরাজয়ের দরুন এ অবস্থা আরো ত্বরান্বিত হয়েছে।

নিলসবোর,শ্রোডিঞ্জারের পরের সারির পদার্থবিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম মিস্টিসিজমের আদর্শ ছেড়ে দেয়নি।বরং সেটাকে আরো বলিষ্ঠ করার কাজে সারাজীবন ব্যয় করে গেছেন। কিংবদন্তী পদার্থবিজ্ঞানী এবং দার্শনিক, জন আর্চিব্যাল্ড হুইলার তাদের একজন।তিনিও অন্যসব পদার্থবিজ্ঞানীদের অনুসারে চেতনাকে মূল হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, জন হুইলার বিংশ শতকের একঝাঁক তরুণ বিজ্ঞানীকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তাঁর ডক্টরাল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন Richard Feynman, একজন নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজয়ী, যার সাথে তিনি "হুইলার-ফাইনম্যান অ্যাবজর্বার তত্ত্ব" তৈরিতে সহকারী হিসেবে ছিলেন; Hugh Everett, যিনি মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রিটেশান এর প্রস্তাব করেছিলেন; কিপ থর্ন, যিনি নিউট্রন-স্টার কোরগুলির সাথে লাল সুপারজায়ান্ট তারার অস্তিত্বের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন; জ্যাকব বেকেনস্টাইন, যিনি ব্ল্যাক হোল থার্মোডাইনামিকস গঠন করেছিলেন; চার্লস মিসনার, যিনি মিসনার স্পেস নামে একটি গাণিতিক স্পেসটাইম আবিষ্কার করেছিলেন;Arthur Wightman, উইটম্যান অ্যাক্সিয়মসের প্রবর্তক; এবং Benjamin Schumacher , যিনি "qubit" শব্দটি আবিষ্কার করেছিলেন এবং "Schumacher compression" এর জন্য পরিচিত। জন হুইলার, ইউজিন উইগ্নারের সাথেও কাজ করেছেন। তাছাড়া তিনি পারমাণবিক বিচ্ছেদের পেছনের মূলনীতিগুলি ব্যাখ্যা করতে নিলসবোরের সাথেও কাজ করেছিলেন। গ্রেগরি ব্রেইটের সাথে মিলে জন হুইলার "ব্রেইট–হুইলার" প্রক্রিয়াটি তৈরি করেছিলেন।  "কোয়ান্টাম ফোম", "নিউট্রন মডারেটর" এবং "ওয়ার্মহোল" শব্দ আবিষ্কারের জন্য তিনি সুপরিচিত। তাছাড়া তিনি বিশ শতকের গোড়ার দিকে মহাকর্ষীয় পতনের সাথে "ব্ল্যাকহোল" শব্দটি ব্যবহার চালু করেন এবং  "one-electron universe" হাইপোথিসিস প্রস্তাব করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তিনি শিকাগোতে ম্যানহাটন প্রকল্পের ধাতববিদ্যার পরীক্ষাগারে কাজ করেছিলেন, যেখানে তিনি পারমাণবিক চুল্লিগুলির নকশা করতে সহায়তা করেছিলেন এবং তারপরে ওয়াশিংটনের রিচল্যান্ডের হ্যানফোর্ড সাইটে, যেখানে তিনি DuPont তাদের তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তিনি প্রিন্সটনে ফিরে এসেছিলেন, ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে হাইড্রোজেন বোমার নকশা তৈরি ও নির্মাণে সহায়তার জন্য সরকারি চাকরিতে ফিরে এসেছিলেন।

জন হুইলার আইডিয়ালিস্টিক রিয়েলিটির[বস্তুজগতের ব্যপারে প্রাচীন যাদুকরদের বিশ্বাসের] ধারনাকে আরও শক্তিশালী করতে ডিজিটাল ফিজিক্সের পরিচয় করান। তার মতে, পদার্থের প্রতিটি অংশই চেতনা দিয়ে গঠিত এবং সবকিছুর গোড়ায় ডিজিটাল বিট রয়েছে। তিনি একে সংক্ষেপে বলেন, "it from bit"। তিনি তার এক জার্নালে উল্লেখ করেন,"'এটা বিট থেকে আগত' তত্ত্বটি দ্বারা বোঝায় যে, এই বস্তুজগতের প্রতিটা পদার্থের একটি অতি গভীরতম নিন্মস্তর আছে, উদাহরণস্বরূপ একরকমের অবস্তুগত উৎস এবং ব্যাখ্যাস্থল। এটাকে আমরা বলি বাস্তবতা একদম সর্বনিন্মস্তরে হ্যা বা না সূচক প্রশ্ন থেকে উদ্ভূত হয়।...সংক্ষেপে, সমস্ত বস্তুজগতের বস্তুর তথ্যতাত্ত্বিক উৎস রয়েছে এবং এটা একটি অংশগ্রহনমূলক মহাবিশ্ব।"

মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তাবিহীন আত্মনির্ভরশীল অনন্ত অস্তিত্বের বিষয়টি যাদুকররা প্রাচীনকাল থেকে Ouroboros[ডানের ছবি] এর প্রতীক দ্বারা বোঝাতো। এর দ্বারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তারা অনন্ত এবং কোন স্রষ্টার প্রয়োজনকে অস্বীকার করে। Ouroboros এর সাপটি নিজের লেজকে গ্রাস করার অনেকগুলো তাৎপর্যের একটি হচ্ছে ভবিষ্যৎ অতীতকে প্রভাবিত করে।মানে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো অতীতকে পরিবর্তন করে। ভবিষ্যৎ অতীতকে নির্ধারন করে। এই প্রাচীন অকাল্ট মেটাফিজিক্সকেই জন হুইলার সত্যায়ন করেছেন তার “participatory anthropic principle"[৯] তত্ত্বে। এ তত্ত্বানুসারে তিনি মনুষ্য পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াটিকে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য একদমই মূখ্য হিসেবে ধরেন। অর্থাৎ মানুষই মূল সৃষ্টিজগতের অস্তিত্বে রূপান্তরকরণে অবজারভার হিসেবে কাজ করে। মানুষই এই মহাবিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিতে অংশগ্রহণকারী অবিচ্ছেদ্য অংশ। পার্টিসিপেটরি এ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপল দ্বারা বলা হয় মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য অবজারভেশন বা পর্যবেক্ষণ একান্ত অপরিহার্য। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে এমনিতেই ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সের জন্য পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য ছিল। পার্টেসিপেটরি এ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপল অনুযায়ী গোটা মহাবিশ্বকেই পর্যবেক্ষণ নির্ভর করে দেয়া হয়, এবং এর দ্বারা সমস্ত প্রানীজগতকে সৃষ্টিকার্যে পার্টেসিপেটর বা অংশগ্রহণকারী হিসেবে বসিয়ে সৃষ্টিকর্তা আসনে বসিয়ে দেয়া হয়। যেহেতু মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য চেতনাপূর্ন সত্তার পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য, এবং এদের পর্যবেক্ষণই অস্তিত্বদাতা, সেহেতু সরাসরি সমস্ত সচেতন জীবজগত তথা আমরাই হচ্ছি মা'বুদ বা সৃষ্টিকর্তা[লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ]। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের চেতনা  কিরূপে পর্যবেক্ষণক্রিয়া সম্পাদন করে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স সমস্ত অস্তিত্বকে গভীরতম পর্যায়ে মহাচৈতন্য বলে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে ডুয়ালিটি বলে কিছু নেই।
অর্থাৎ অবিভক্ত চৈতন্য'ই তার পূর্ব অস্তিত্বকে পর্যবেক্ষনের দ্বারা নির্মাণে অংশ নেয়। আপনাদের হয়ত বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং অকাল্ট ফিলসফি সবসময়ই একটু Counter intuitive।
এ বিষয়টিকেই সহজে দেখানো হয়েছে Interesteller নামের হলিউডের এক বিখ্যাত সায়েন্সফিকশন ফিল্মে। Matthew McConaughey'র কন্যা শৈশবে সর্বদা তার রুমের বইয়ের তাকে অদ্ভুত কিছু দেখতো। সে একে Ghost মনে করে তার বাবা Matthew McConaugheyকেও দেখায়। কথা কিন্তু এর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনা। পরবর্তীতে স্পেস মিশনে Matthew McConaughey যখন ওয়ার্মহোলে প্রবেশ করলো, সেখানে টাইম স্পেসের বাহিরে Fifth Dimensional অজস্র কাঠামো দেখতে পায়। তার সঙ্গী রোবট এসবের স্রষ্টা কারা প্রশ্ন করলে উত্তরে বলে, এটা আমাদেরই সৃষ্টি। অর্থাৎ মানুষের চৈতন্যের কালেক্টিভ বিবর্তনের সর্বশেষ পর্যায়ে উচ্চমাত্রায় অধিষ্ঠিত হয়, Matthew McConaughey সেখান থেকেই অতীতে তার কন্যাকে শৈশবে নিয়মিত মর্সকোডে বার্তা পাঠাতো, কিন্তু তার মেয়ে ভাবতো, এটা অশরীরী Ghost জাতীয় কিছু। শয়তানের পূজা এবং যাদুশাস্ত্রের প্রচারকারী spirit science নামের ইউটিউব চ্যানেলটিও এটাই বলে[১০]। Interstellar[৬] ফিল্মটি খাঁটি [অপ]বিজ্ঞানের উপর নির্মিত। পদার্থবিজ্ঞানী কিপ থর্ণ এটা নির্মাণের পেছনে সারাক্ষণ সক্রিয়ভাবে ছিলেন। এর সপক্ষে অনেক বিজ্ঞানীরাও প্রশংসা করে বক্তব্য দেন, বেশি কিছু সায়েন্টিফিক পেপারও লেখা হয়। অর্থাৎ মহাজাগতিক মহাচৈতন্য ইতোমধ্যে পর্যবেক্ষক হিসেবে থেকে মহাবিশ্ব নির্মান করেছে। আমরাই কালেক্টিভলি সৃষ্টিশুরুতে স্রষ্টারূপে আছি, আমরাই ছিলাম অনেক দূরে বহু আগে থেকে।হুইলার এ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপলের ব্যপারে দেয়া রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমরা কেবল নিকটবর্তী এবং এখানেই নয় অনেক দূরে এবং বহু আগে থেকে সবকিছুকে সত্তায় পরিনত করার কাজে অংশীদার [বা অংশগ্রহণ করেছি]।" অন্যত্র বলেন,"পদার্থবিজ্ঞান এখন পর্যবেক্ষকের অংশগ্রহনকে (observer-participancy) দ্বার করিয়েছে ;পর্যবেক্ষকের অংশগ্রহনের দ্বারা (সাবএটোমিক লেভেলে) তথ্য(ইনফরমেশন) উৎসারিত হয়, তথ্য পদার্থকে(বস্তুজগতকে) দ্বার করায়।"

অতীতের পানে কোনরূপ বার্তা প্রেরণকে ফিজিক্সের ভাষায় বলা হয় রেট্রোকজ্যুয়ালিটি। অকাল্ট মেটাফিজিক্স[যাদুশাস্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্ব] অনুযায়ী আমরাই অতীতে সবকিছু সৃষ্টি করেছি,কালেক্টিভ কনসাসনেস ক্রমশ বিবর্তিত হয়ে ভবিষ্যতে আবারো শুরুর ন্যায় পর্যায়ে যাবে। অর্থাৎ অরোবোরাস প্রতীকের সাপটির লেজ অনন্তকাল ধরে ক্রমশ গিলতে থাকে। লেজ যদি অতীত আর মুখ যদি ভবিষ্যৎ হিসেবে ধরা হয় তবে অতীতের ন্যায়, ভবিষ্যতও অতীতের ভাগ্য নির্ধারক। মানে আমরা যা করছি সেসবে আমাদেরই ভবিষ্যৎ প্রভাব বিস্তার করে। এটাই The Predestination নামের ফিল্মে স্পষ্টভাবে দেখায়। সেখানে দেখানো হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র জেন এর ভবিষ্যতই তার অতীত নির্ধারন করে,সে নিজেই একাধারে তার সন্তান,নিজের অস্তিত্বদানকারী স্ত্রী ও স্বামীর ভূমিকায় থাকে। নিজেই নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরের সার্জারির জন্য দায়ী থাকে। এ ফিল্মটি আসলে যাদুকরদের মেটাফিজিক্যাল বিশ্বাসের একটা এ্যালিগোরিক্যাল প্রজেকশান। এতে ডিম নাকি মুরগী আগে সে ধাঁধাও আনা হয়। এর সমাধানে মোরগকে আনা হয়!  সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এ ফিল্মে অরোবোরসের রেফারেন্সও আনা হয়। নিজের অস্তিত্বের ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় চরিত্র বার বার বলে,"সাপ তার লেজ কে গ্রাস করছে, চিরকাল ধরে করে চলেছে।" 
জন হুইলার এবং ফাইনম্যানের absorber theory তে রেট্রোকজ্যুয়ালিটি ব্যবহার করেছেন। রেট্রোকজুয়ালিটি বলে, ভবিষ্যৎ  সময়ের পিছনে গিয়ে অতীতের কোন কিছুতে প্রভাব বিস্তার, যোগাযোগ বা বার্তা পৌছাতে সক্ষম।Ernst Stueckelberg এবং পরবর্তীতে রিচার্ড ফেইনম্যান Dirac equation'এ ঋণাত্মক-শক্তির সমাধানকে পুনরায় ব্যাখ্যা করে পজিট্রনকে সময়ের পিছনে যাবার একটি তত্ত্ব উত্থাপন করেছিলেন। সময়ের পিছনে চলে আসা ইলেকট্রন ধনাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ ধারন করতে পারে।সমস্ত ইলেক্ট্রনের অভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য হুইলার এই ধারণাটি প্রবর্তন করেছিলেন, যা আমাদেরকে বলে যে "তারা সকলেই একই ইলেক্ট্রন"। একে self-intersecting world line বলা যায়।প্রচলিত রেফারেন্স ফ্রেমের এক পর্যবেক্ষক অনুযায়ী tachyons নামের হাইপোথিটিক্যাল সুপারলুমিনাল কণাগুলোর মহাশূন্যের অনুরূপ কক্ষপথ রয়েছে এবং সেটাকে সময়ে পিছন দিকে যেতে দেখা যায়। সায়েন্স ফিকশন ফিল্মগুলোয় যেমনটা বার্তা অতীতে পৌছাতে দেখা যায়।
জনৈক পদার্থবিজ্ঞানী  এ ব্যপারে বলেন,"আমাদের কোন জিনিস পরীক্ষনের অভিপ্রায় সে পরীক্ষনের ইলেক্ট্রনের পূর্বাবস্থাকে নির্ধারন করে,অর্থাৎ যেকোনভাবে আমাদের কাজের একটা প্রভাব আছে যেটা সময়ের উল্টো দিকে অতীতের দিকে যায়।" সহজ করে বললে, ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্টে অবজার্ভারের চোখ খুলবার আগে এনার্জি ওয়েভ স্লিটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন দেয়ালে আঘাত হানার এক সেকেন্ড আগেও যদি পর্যবেক্ষণ শুরু করা হয়, এনার্জি ওয়েভ সাথে সাথেই পার্টিকেল হয়ে যায়, সেই সাথে অতীতে ঘটা পিছনের দিকের ওয়েভ অবস্থারও পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ অতীতকে প্রভাবিত করে। প্যারাসাইকোলজিস্ট Helmut Schmidt কোয়ান্টাম মেকানিক্স দ্বারা রেট্রোকজ্যুয়ালটিকে[৭] যথার্থ প্রমানের চেষ্টা করেছেন। যাইহোক, এটা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অকাল্ট ফিলসফির আরেকটি অংশ, এর তাৎপর্য পরবর্তী পর্বগুলোয় বোঝা সহজ হবে। যাদুকরদের বিশ্বাস এই মহাবিশ্বটাই একটি যাদুপ্রদর্শনী সবটাই যাদু। ট্যারেন্স ম্যাকানা বলেন,পদার্থই হচ্ছে যাদু!তিনি বলেন,"প্রত্যেক ইলেক্ট্রন হচ্ছে একেকটি ওয়ার্মহোলের মুখ যা কোয়াড্রিলিয়ন হায়ার ডাইমেনশনাল ইউনিভার্সে নিয়ে যায় যেগুলো একেবারেই যৌক্তিক অনুধাবনের বাহিরে রয়েছে। পদার্থে যাদুর অস্তিত্বের অভাব নেই বরং পদার্থই যাদু।" জন হুইলার জানতেন তিনি যে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বলেন সেটা যাদু, মায়া। তার মতে এই এই যাদুপ্রদর্শনীর সৃষ্টিকর্তা আমরাই! তিনি বলেনঃ

"প্রশ্নটি হচ্ছে, প্রশ্নটি কী?
সবই কি যাদুপ্রদর্শনী?
বাস্তবতা কি একটি মায়া(ইল্যুশন)?
(এ) মেশিনের কাঠামো কী?
ডারউইনের ধাঁধা: প্রাকৃতিক নির্বাচন[ন্যাচারাল সিলেকশন]?
স্পেস-টাইম কোথা থেকে আসে?
এটা চেতনা থেকে আসে, এটা ছাড়া কোন উত্তর আছে?
সেখানে কি আছে?
এটা কি আমরা নিজেরাই?
অথবা, এর সবই কি কেবল একটি ম্যাজিক শো?
আইনস্টাইন আমাকে বলেছেন:
"আপনি যদি শিখতে পারেন, শেখান!"

— John Wheeler[৮]
[Speaking at the American
 Physical Society, Philadelphia
 (Apr 2003). As quoted and cited
 in Jack Sarfatti, 'Wheeler's World:
 It From Bit?', collected in
 Frank H. Columbus and Volodymyr
 Krasnoholovets (eds.), Developments
 in Quantum Physics (2004), 42.]


অর্থাৎ যাদুকরদের সাথে গলা মিলিয়ে মহান [অপ]বিজ্ঞানী জন হুইলার স্বয়ং স্বীকৃতি দিচ্ছেন যে এই বাস্তবতা একটি যাদুপ্রদর্শনী! তিনি স্বীকৃতি দেন সবকিছুই মহাচৈতন্য, মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা মানুষই! ১৯৬৭ সালে হুইলার তার Dewitt ইক্যুয়েশনে মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ওয়েভ ফাংশনকে ব্যাখ্যা করেন। তার ইক্যুয়েশন অনুযায়ী দুটি উপাদান ইউনিভার্সাল ওয়েভ ফাংশনের থাকতে হবে। এক হচ্ছে এনার্জি লেভেল শূন্য হতে হবে। অপরটি একে সময়হীন হতে হবে। এ ইকুয়েশন বলে যে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের বা ব্রহ্মচৈতন্যের(quantum mind) চেতনা(consciousness) বিশ্বজগতকে সিমুলেট করে। তার এই যাদুশস্ত্রকেন্দ্রিক কুফরি আকিদার কারন তিনি অন্য সকল পদার্থবিজ্ঞানীর ন্যায় পূর্বাঞ্চলীয়(ভারতীয়) যাদুশাস্ত্রের অনুসরন করতেন।তিনি ভারতীয় বেদান্ত-ঔপনিষদিক চিন্তাধারার প্রশংসা করে বলেন, "আমি ভাবতে পছন্দ করি যে কেউ একজন খুজে বের করবে যে ভারতীয় চিন্তাধারা কি রূপে গ্রীসে স্থান করে নিয়েছে এবং সেখান থেকে আমাদের সময়কার দর্শনে এসে পৌছেছে।"

অর্থাৎ তিনি সত্যায়ন করছেন যে, ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট তথা অকাল্ট ভারত ও গ্রীসে পৌছানোর পর আবারো তাদের কাছে পৌছায়। এটা আমি এতদিন আমিই বলেছি। আশাকরি এখন আর কোন সন্দেহ নেই। হুইলার বিশ্বাস করতেন তার এসকল যাদুশাস্ত্র উদ্ভূত অপবিদ্যার সমস্ত প্রশ্ন এবং উত্তর হিন্দু-বৌদ্ধ ঋষিগন জানতেন। তিনি এমন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন যে,যদি ওইসব যাদুকর প্যাগান ঋষিদের থেকে পদার্থবিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত্বসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর হুইলারের নিজের লিখে রাখা যেত, তাহলে সকল প্রশ্নের জবাব পেতেন। তিনি  বলেন,"যে কারো মধ্যে এরকম অনুভূতি আসবে যে পূর্বাঞ্চলীয় চিন্তাবিদগন  এসবের[পদার্থবিজ্ঞান/অকাল্ট মেটাফিজিক্স] সব জানতেন।আমরা যদি তাদের উত্তরগুলোকে আমাদের ভাষায় অনুবাদ করে নিতাম, তাহলে আমরা আমাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতাম।"

সুতরাং, বুঝতেই পারছেন আজ আমরা পদার্থবিজ্ঞানের মোড়কে কোন বিদ্যার অনুসরণ করছি! এবার চলুন; যাওয়া যাক আরেক কিংবদন্তী মহান 'ইহুদী' পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড বোহমের কাছে। তিনি ছিলেন আরেক মহান ইহুদি অপবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বন্ধু। তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ভিন্ন স্তরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলীয় যাদুশাস্ত্র এবং [সম্ভাব্য] যাদুশাস্ত্র কাব্বালার সমন্বয়ে বহু দূরে এগিয়ে যান। থিওসফিক্যাল সোসাইটির একজন শীর্ষ স্থানীয় গুরু হলেন: জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তি, তাকে অনেকেই ওয়ার্ল্ড টিচার বলে সন্দেহ করতো। তার সাথে ডেভিড বোহমের গভীর সম্পর্ক ছিল।তারা পরস্পর একাধিকবার সাক্ষাত করেন। বোহম তার সাহচর্যে [অপ]বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও গবেষণায় সরাসরি বেদান্ত-ঔপনিষদিক অকাল্ট অপবিদ্যাকে ব্যবহার করেন। হেলেনা ব্লাভাস্তস্কির অকাল্ট মিস্ট্রি স্কুল থিওসফিক্যাল সোসাইটির কুফরি অপবিদ্যাকেই সায়েন্টিফিক তত্ত্বে রূপান্তর করেন।১৯৬১ সালে শুরুতে বোহমের সাথে জিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির সাক্ষাতের সময় ফিজিক্স ও মনস্তত্ত্ব সংক্রান্ত থিওরি গুলো গভীর গুরুত্বের স্থানে নিয়ে আসা হয়। তাদের পারস্পারিক সহযোগিতা ও পারস্পারিক যোগাযোগ এক শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ স্থায়ী হয়েছিল এবং তাদের রেকর্ড করা সংলাপগুলি বেশ কয়েকটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে বোহমের মতামতগুলির পরিপূর্ণ  অভিব্যক্তি ১৯৯০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ওজায় কৃষ্ণমূর্তির প্রতিষ্ঠিত ওক গ্রোভ স্কুলে একটি সেমিনারে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এটি ছিল ওক গ্রোভ স্কুলে বোহমের আয়োজিত ধারাবাহিক সেমিনারের একটি। সেমিনারে বোহম মানুষের চিন্তাভাবনার প্রকৃতি এবং দৈনন্দিন জীবনে ও সমাজে চিন্তার বিস্তৃত প্রভাব বর্ণনা করেছিলেন। কৃষ্ণমূর্তির অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউয়ের সাথে বোহমের দীর্ঘকালীন সম্পৃক্ততা কিছু বৈজ্ঞানিক সহকর্মীরা শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতেন।তাদের দু'জনের মধ্যে সম্পর্কের  সাম্প্রতিক বিস্তৃত পরীক্ষা এটিকে আরও ইতিবাচক আলোকে উপস্থাপন করে এবং দেখায় যে মনস্তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে বোহমের কাজ ছিল সঙ্গতিপূর্ণ এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


বোহম অলৌকিক সুপারন্যাচারাল বিষয়গুলোকে আলোচনা করা থেকে বাদ দেয়নি। বোহম উরি গেলারের চাবি এবং চামচগুলি বাঁকানো সম্ভব হিসাবে ধরেছিলেন, এতে তার সহকর্মী বেসিল হিলির সতর্ক করে বলেছিলেন যে এটি পদার্থবিদ্যায় তার বৈজ্ঞানিক গ্রহনযোগ্যতাকে ক্ষুন্ন করতে পারে। মার্টিন গার্ডনার একটি নিবন্ধে ১৯৫৯ সালে জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তির সাথে নিবিড় যোগাযোগ এবং পরস্পরের মধ্যে অকাল্ট ফিলসফিক্যাল তত্ত্বের আদানপ্রদানের কথা উল্লেখ করেন। বোহমের সাথে জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তির পরবর্তী সময়ে অনেকগুলি মতবিনিময় হয়েছিল। গার্ডনার বলেছিলেন যে মন এবং পদার্থের আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে বোহমের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি সংক্ষেপে বলেছিলেন, "এমনকি ইলেকট্রনকে মনের একটি নির্দিষ্ট স্তরে অবহিত করে।" এছাড়াও লিখেছেন এটা অনেকটা "প্যানসাইকিজম নিয়ে ফ্লার্ট করা"র মত। বোহমের সাথে শুধু কৃষ্ণমূর্তিই নয়,বৌদ্ধদের গুরু দালাই লামার সাথেও ধারাবাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে বোহম রয়্যাল সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হন।

অন্যান্য বেদান্তমেকানিক্স তথা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পথিকৃৎদের অনূরূপ বোহমও চেতনার অপরিহার্যতা ও সর্বেশ্বরবাদী মহাচৈতন্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি সকলের ন্যায় বিশ্বাস করতেন সর্বত্রই চৈতন্য বিদ্যমান যাকে প্যানসাইকিজম বলে। আগেই উল্লেখ করেছি প্যানসাইকিজম, সলিড প্যান্থেইজমের চেয়ে বেশি সেন্সিবল বা যুক্তিপূর্ণ অর্থাৎ এটা সর্বেশ্বরবাদের উন্নত সংস্করণ। ১৯৯০ সালে বোহম "A New theory of the relationship of mind and matter" প্রকাশ করেছিলেন, এটি ছিল বোহমের কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে চৈতন্যের উপর লেখা প্যানসাইকিজম তত্ত্বের একটি কাগজ।বোহম প্রচার করতেন মন এবং বস্তুরকে পরস্পর নির্ভরশীল এবং সম্পর্কযুক্ত।সচল এবং জড় পদার্থগুলো অবিচ্ছেদ্যভাবে অন্তর্নির্মিত। পদার্থ, শক্তি, স্থান, সময় এবং সমগ্র মহাবিশ্বের ফ্যাব্রিকের মধ্যে জীবন এবং ইন্টেলিজেন্স বিদ্যমান। এটি প্যানসাইকিজমের ধারণা।ডঃ বোহম লিখেছেন, "সক্রিয় হওয়ার জন্য কোন আকৃতির ক্ষমতা মনের সর্বাধিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত বৈশিষ্ট্য এবং আমাদের মধ্যে ইলেকট্রনের সাথে মনের(চেতনার) অনুরূপ কিছু একটা রয়েছে।"
সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে তিনি সর্বেশ্বরবাদের উন্নততর রূপ তথা সর্বচৈতন্যবাদ বা প্যানসাইকিজমে বিশ্বাস করতেন এবং এই কুফরি বিশ্বাসকে [অপ]বিজ্ঞানে রূপান্তর করেছেন। জিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির সাথে সমন্বয় সামঞ্জস্যপূর্ণ আকিদাকে বিজ্ঞানে রূপান্তর করলে স্বভাবতই শ্রোডিঞ্জারদের মত ব্রহ্মচৈতন্যে ফিরতেই হবে। ব্রহ্মাকে মা'বুদ বলতেই হবে। আগে অনেকবার উল্লেখ করেছি ব্রহ্মকে ইলাহের আসনে বসানোর মাধ্যমে প্রতিটি বস্তু ও প্রানীকেই রুবুবিয়্যাত বা স্রষ্টার আসনে বসানো হয়।  উপনিষদে একটি কথা রয়েছে যে,"অহমব্রহ্মাস্মি" অর্থাৎ!আমিই আমার জগতকে সৃষ্টিকারী। মানে আমিই সর্বত্র বিদ্যমান ঈশ্বর।
সে হিসেবে সর্বচৈতন্যবাদ তথা প্যানসাইকিজম প্রতিটি সৃষ্টিকে ডিভিনিটি দানের মাধ্যমে "মিনি ত্বগুত" এ অধিষ্ঠিত করে[লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ]। আমরা বাংলা ভাষায় যে ব্রহ্মাণ্ড শব্দটি ব্যবহার করি এটা বেদান্তবাদী কুফরি শিক্ষাই বহন করে।বোহম বলতেন, আমাদের ত্রিমাত্রিক বাস্তবতা পারস্পরিকভাবে জড়ানো উচ্চতর বাস্তবতার (রিয়ালিটির) প্রজেকশন। তার এই চিন্তাধারাকে বলা হয় প্লেটনিক আইডিয়ালিজম। প্লেটো এই অকাল্ট ধারনাটি গ্রহন করে ইহুদী যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ থেকে। বোহম নিজেও ইহুদি ছিল। সুতরাং এটা অসম্ভব নয় যে সে বৈদিক শাস্ত্রের পাশাপাশি কাব্বালিস্টিক অকাল্ট ফিজিক্সকে বিজ্ঞানে স্থান দিয়েছেন।কাব্বালাহ'ও সর্বচৈতন্যবাদ বা প্যানসাইকিজমের আকিদার প্রচার করে। ডেভিড বোহম কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং আপেক্ষিকতার তত্ত্বকেপরস্পরবিরোধী হিসাবে দেখতেন,তিনি একটি তত্ত্বের ব্যপারে বলতেন যা মহাবিশ্বের আরও মৌলিক স্তরকে নির্দেশ করছিল। তিনি একে কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন।তিনি কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং আপেক্ষিকতার তত্ত্ব উভয়কেই এই গভীর তত্ত্বের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন।বোহম বেদান্ত-ঔপনিষদিক ঐন্দ্রজালিক শিক্ষাকে সরাসরি পদার্থবিদ্যায় নিয়ে আসেন।হলোগ্রাম এ্যানালোজি ব্যবহার করেছেন যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, বস্তুজগতের প্রত্যেক অংশ সকল অংশের ধারক। অর্থাৎ ক্ষুদ্রতম অংশেও সমস্তটার গঠনবিন্যাস একইভাবে বিদ্যমান। এই বিষয়টিতে গভীরভাবে  বেদান্তশাস্ত্রের গভীর ঐন্দ্রজালিক শিক্ষা নিহিত আছে, সামনের পর্বগুলোয় বিস্তারিত আলোচনা করব। আসলে বোহম অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউ এর মাঝে এত দূর প্রবেশ করেছে এবং সরাসরি বৈদিক তত্ত্বগুলোকে বিজ্ঞানে রূপান্তর করেছে, যেটা অন্য কেউ করেনি।


যাহোক,জন স্টুয়ার্ট বেল (১৯২৮-১৯৯৯) ছিলেন সার্ন এর আইরিশ থিওরিটিক্যাল পদার্থবিদ এবং বেলস থিওরামের প্রবর্তক, এটা গুপ্ত ভেরিয়েবল থিওরি সম্পর্কিত কোয়ান্টাম ফিজিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ থিওরাম।তিনিও বোহমের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।ডাঃ বেল সব সময় নন লোকালিটির অস্তিত্ব পরীক্ষণের পন্থা নিয়ে ভাবতেন।তিনি ১৯৬৪ সালে একটি পরীক্ষন কল্পনা করেছিলেন, তবে এর জন্য এমন একটি প্রযুক্তিগত নির্ভুলতার প্রয়োজন ছিল যা তখনও আবিষ্কার হয়নি। যে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন ছিল তা এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার-মিলিয়ন্থের মধ্যে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনে সক্ষম। ১৯৮২ সালে অ্যালাইন অ্যাস্পেক্ট, জিন ডালিবার্ড এবং জেরার্ড রজার সাফল্যের সাথে বেলের পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করেছিলেন।প্রক্রিয়াটি আলোর এক সেকেন্ডের ৩০ বিলিয়ন্থের কম সেকেন্ড নিয়েছিল।চেনা ফিজিক্যাল প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে ফোটনগুলির যোগাযোগের সম্ভাবনা অস্বীকার করা হয়েছিল।প্রতিটি ফোটন তার জোড়ার সাথে পোলারাইজেশন এ্যাঙ্গেলকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।এর অর্থ দাড়ায়, হয় আলোর চেয়ে দ্রুতগতির যোগাযোগ (মূলধারার পদার্থবিজ্ঞানের একটি কলঙ্কজনক ধারণা) অথবা
ফোটনগুলি ননলোকালভাবে সংযুক্ত। এর দ্বারা নিলস বোরের দলটির মত বিজয়ী হয়।
সমস্ত পদার্থ একে অন্যের সাথে সংযুক্ত। সেপারেশন হচ্ছে ইল্যুশন। সবকিছুই ননলোকাল অবস্থায় পরস্পর সংযুক্ত ইংল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী পল ডেভিস বলেন, "যেহেতু সমস্ত কণা ধারাবাহিকভাবে মিথস্ক্রিয়া এবং বিভাজন করে চলেছে, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ননলোকাল দিকগুলি তাই প্রকৃতির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।" [১১]
বেল থিওরাম এবং বেলের ইনইকুয়্যালিটি, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্টকে আবিষ্কার করেছিল ( KAFATOS, 1999)। এন্টেঙ্গলমেন্ট তত্ত্ব টেলিপোর্টেশন (জেইলিংগার, ২০১০) এবং কোয়ান্টাম ইনফরমেশন তত্ত্ব (জুরেক,১৯৯১; লয়েড, ২০০৬) এর দরজা উন্মুক্ত করেছিল। কোয়ান্টাম তত্ত্বের পথ ধরে, অ্যাসপেক্ট এক্সপেরিমেন্ট (Aspect et al।, 1982) এবং জেনো ইফেক্টের (অর্টোলি; ফ্যারাবড, 2006; রোভেলি, 2015) প্রমাণ করেছে যে পরিমাপের সমস্যাটি অনিবার্য এবং খুব বাস্তবিক, এবং কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট; আইনস্টাইন-বোর বিতর্কের সেরা সমাধান বলে অভিহিত হচ্ছে।জন বেল বলেন,"অত্যন্ত নিষ্ঠুর সত্য যে এ্যাস্পেক্ট এক্সপেরিমেন্টটি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং এর অদ্ভুত বিষয়গুলোর সত্যতাকে নিশ্চায়ন করে। তাই আমাকে এটাকে স্বীকার করতেই হয় যে,কোয়ান্টাম কোয়ালিশনের অস্তিত্ব এই জগতে আছে। আমরা যদি এটাকে গ্রহন না করে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করি তবে স্বীকার করতেই হবে যে  আমাদেরকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কর্মকে আলোর গতির চেয়ে দ্রুতগতিতে আহব্বান করতে হবে। এটা এমন যে মনে হয় ঘটনার পিছন থেকে কেউ আমাদের সাথে চালাকি করে খেলছে। মনে করুন একটি রেলওয়ে সিস্টেম, আমরা জানি রেলগাড়ি আলোর গতির চেয়ে বেশি দ্রুত ছুটতে পারে না। কিন্তু আপনি টাইমটেবল ঘেটে দেখলেন যে রেলগাড়িটিকে রাতের মধ্যেই আলোর গতির আগে স্টার্টিং পয়েন্টে ফিরে আসতে হবে। তাই ঘটনার আড়ালে অসাধারন ব্যাপারটি ঘটে, যেটা আমরা সাধারনভাবে ব্যবহার করিনা। এটা একরকমের ডিলেমা। আমার মনে হয় না এর চেয়ে ভাল কোন উপায়ে ব্যাপারটি দেখার কোন উপায় আছে।" Dr quantum কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট এর শিক্ষায় বলেন, বিগব্যাং এর সময় সবকিছু একত্রিত ছিল। কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট এখন বলে যে, এখনো সবকিছু সবকিছুর সাথে যুক্ত।স্পেস হচ্ছে একটি কন্স্ট্রাক্ট যেটা স্বাতন্ত্র্যবোধের মায়ার জন্ম দেয়।[২৫]


যাদুবিদ্যায় ইন্টেনশন বা অভিপ্রায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ[৫৮]। যাদুকররা স্বীয় চেতনার ইন্টেনশন ব্যবহার করে উদ্দেশ্য হাসিল করে। প্রকৃতির নীতি গুলোয় প্রভাব বিস্তার করে। এজন্য যাদুকরা নিজেদেরকে ঐশ্বরিক শক্তিসম্পন্ন সত্তা মনে করে। এরা নিজেদেরকে স্রষ্টা মনে করে। এই অকাল্ট চর্চাকে বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতিদান এবং তাতে উৎসাহিত করার পেছনে অপবিজ্ঞানীরা পিছিয়ে থাকেনি।সর্বপ্রথম একাজে যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে মানব মস্তিষ্ক কিভাবে প্রকৃতি বা রিয়ালিটি পাল্টে ফেলতে পারে সেটাকে ব্যাখ্যা করে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা! এক্ষেত্রে ডেভিড বোহম সবচেয়ে বড় যে কাজটি করেছেন সেটাকে বলা হয় হলোনোমিক ব্রেইন থিওরি। হলোনমিক ব্রেইন থিওরি এখন নিউরোসায়েন্সের একটি শাখা, যা এই ধারণাটি অনুসন্ধান করে যে; মস্তিষ্কের কোষগুলিতে বা এর মধ্যে কোয়ান্টাম ইফেক্ট দ্বারা মানব চেতনা গঠিত হয়। বোহম বিশ্বাস করতেন যে সেলুলার স্তরে মস্তিষ্ক কিছু কোয়ান্টাম ইফেক্টের গণিত অনুসারে কাজ করে, এবং তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, চিন্তাসমূহ 'কোয়ান্টাম এন্টিটি'র অনূরূপ বন্টিত এবং ননলোকাল অবস্থায় থাকে।স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী কার্ল এইচ প্রিব্রাম সহযোগিতায় ডেভিড বোহম মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের হলোনমিক মডেলটির ডেভেলপমেন্ট এর সাথে জড়িত ছিলেন, এটা মানুষের চেতনার প্রকৃতির ব্যপারে একটি মডেল; যা প্রচলিতভাবে গৃহীত ধারণাগুলি থেকে একেবারে আলাদা। বোহম, প্রিব্রামের সাথে কাজ করা এ তত্ত্বটি মানুষের মস্তিষ্ককে কোয়ান্টাম গাণিতিক নীতিগুলি এবং ওয়েভ প্যাটার্ন এর বৈশিষ্ট্য মেনে হলোগ্রামের ন্যায় কাজ করে বলে দাবি করেন।কার্ল প্রিব্রামের হোলোনমিক ব্রেইন থিওরি(কোয়ান্টাম হলোগ্রাফি) মন বা চেতনা দ্বারা উচ্চতর ক্রম প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ব্যবহার করে করে। তিনি বোহমের সাথে মনুষ্য মনকে ব্যাখ্যা করতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে বোস-আইনস্টাইন সংশ্লেষকে কোয়ান্টাম ডাইনামিক্সকে সমর্থন করার দ্বারা ডেনড্র্যাটিক ঝিল্লিপৃষ্ঠের পানি কাজ করতে পারে।কোয়ান্টাম চৈতন্যের(কনসাসনেস) এই নির্দিষ্ট তত্ত্বটি প্রাথমিকভাবে পদার্থবিদ ডেভিড বোহমের সহযোগিতায় স্নায়ুবিজ্ঞানী কার্ল প্রিব্রাম ডেভেলপ করেছিলেন। এটি মস্তিষ্ককে 'হলোগ্রাফিক স্টোরেজ নেটওয়ার্ক' হিসাবে দেখিয়ে মানুষের চেতনাকে ব্যাখ্যা করে।প্রিব্রাম ব্যাখ্যা দেন যে, এই প্রক্রিয়াগুলি মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম ফাইবারযুক্ত ডেন্ড্রিটিক ওয়েবগুলিতে বৈদ্যুতিক দোলনে জড়িত, যা অ্যাক্সন এবং সিনাপেসের সাথে জড়িত সাধারণ ক্রিয়াকলাপগুলোর চেয়ে পৃথক। এই দোলন(oscillation) তরঙ্গগুলো ওয়েভ ইন্টারফারেন্স প্যাটার্ন তৈরি করে যেখানে মেমরিটিকে প্রাকৃতিকভাবে এনকোড করা হয় এবং তরঙ্গগুলি Fourier ট্রান্সফর্ম দ্বারা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। Gabor, Pribram এবং অন্যান্যরা মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া এবং হলোগ্রামে তথ্য সংরক্ষণের মধ্যে সাদৃশ্য উল্লেখ করেছিলেন, যা Fourier ট্রান্সফর্মের মাধ্যমেও বিশ্লেষণ করা যায়।[১৩]

এভাবেই সর্বচৈতন্যবাদি ডেভিড বোহম প্রমাণের চেষ্টা করেন যে মানুষের ব্রেইন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আওতার বাহিরে নয়। আমাদের মস্তিষ্কের চেতনা পর্যবেক্ষনের ভূমিকা পালন করে ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সে সক্ষম।অর্থাৎ,আমাদের মনের ইন্টেনশান দ্বারা রিয়ালিটি ম্যানিপুলেট, ম্যানিফেস্ট করা সম্ভব। আমরাই বাস্তবতার স্রষ্টা। আমরাই আমাদের ভাগ্য বিধাতা। বোহম বলতেন সমস্ত বস্তু জগতের উৎস হচ্ছে  শূন্যস্থান। বেদান্তবাদি জিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির অনুসরণে বলতেন এই চেতনা সমগ্র শূন্যস্থান বা স্পেসজুড়ে রয়েছে। এই চৈতন্যের শক্তি পদার্থে পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম।তিনি বলেনঃ "হ্যাঁ, আপনি যদি বলেন যে সমস্ত বস্তু ইনফরমেশন(0/1 bits) থেকে কাজ করে,শুধুমাত্র স্নায়ুতন্ত্র বা ডিএনএ এর বস্তু নয় যা কোষে কাজ করে, যদিও ইলেক্ট্রন খালি স্থান থেকে তৈরি হয় যা ইনফরমেশনের কোনও অজানা উৎস দ্বারা প্রকাশিত হয়, যা সমস্ত শূন্য স্থান জুড়ে রয়েছে । এবং আমাদের চিন্তা, আবেগ এবং পদার্থের মধ্যে বড় কোন বিভাজন নেই। আপনি দেখেন যে তারা একে অপরের মধ্যে প্রবাহিত। এমনকি আপনার সাধারন অভিজ্ঞতায় আপনার চিন্তাভাবনা,আবেগগুলি শরীরের মধ্যে সচল পদার্থের মধ্যে প্রবাহিত হয়। অথবা শরীরে পদার্থের সঞ্চালিত আবেগ এবং চিন্তাভাবনার জন্ম দেয়। এখন একমাত্র বক্তব্য হলো বর্তমান বিজ্ঞানের কোনও ধারণা নেই যে কীভাবে চিন্তা(thought) এমন কোনও বস্তুকে প্রভাবিত করতে পারে যার সাথে শরীরের কোন সংযোগ নেই অথবা কোন সরাসরি কোন প্রক্রিয়া দ্বারা সংযুক্তও নয়। তবে এবার আপনি যদি বলেন যে, বস্তুজগতের অস্তিত্বের পুরো স্থলটি শূন্যস্থানের(empty space) মধ্যে মোড়ানো এবং সমস্ত পদার্থ এই স্পেস থেকে আসছে, এমনকি আমাদের মস্তিস্ক, আমাদের চিন্তাসহ এখান থেকে আসছে ...তাহলে পদার্থের সৃষ্টির জন্য ইনফরমেশন স্পেস বা শূন্যস্থানকে বিদীর্ন করে। আপনি বলতে পারেন, পদার্থ যে ইনফরমেশন বহন করে, এর উপর ভিত্তি করে আকৃতি ধারন করে, আর তাই চিন্তাপ্রক্রিয়া খালি স্পেসের(ফাকা স্থান) ইনফরমেশনকে উল্টিয়ে দিতে সক্ষম। তাই আমি বলব যে এটা সম্ভব বলেই মনে হয়, এজন্য এটা আসলেই ঘটে কিনা তা দেখতে খুব গভীর পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন।"

অর্থাৎ যাদুকরদের চর্চা ও বিশ্বাস অনুযায়ী মানব চৈতন্য পদার্থ জগৎ নিয়ন্ত্রনে সক্ষম।উদাহরণস্বরূপ যেভাবে ওয়াচস্কির ম্যাট্রিক্স ফিল্মের নিও'র মত হাতের ইশারা বুলেট থামিয়ে দেয়। ডেভিড বোহম মানুষকে বাস্তবজগতের সৃষ্টিকর্তার অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। শুধুমাত্র চেতনা/অভিপ্রায় দ্বারা রিয়ালিটি বদলে ফেলা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন।তিনি বলেনঃ"একজন মানুষ এই সামগ্রিক(জগতের সৃষ্টি) প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়, সে মূলত তার উদ্দেশ্য[বা অভিপ্রায়] অনুযায়ী মৌলিকভাবে কার্যকলাপে পরিবর্তন আনতে পারে যা কিনা তার বাস্তব জগতকে পরিবর্তন করে ফেলার শামিল, যা তার চেতনার(consciousness) বিষয়বস্তু।"[১২]

অন্যত্র আমেরিকার নিউএজ অকাল্টিস্টদের ল' অব এ্যাট্রাকশনের প্রচারকারী মিস্টিক-অকাল্টিস্টদের মত বোহম বলেন,"আমরা যা বিশ্বাস করি তাই বাস্তবতায় রূপ নেবে বলে ধরি, আমাদের বিশ্বাসই নির্ধারণ করে কি সত্য হবে। যা আমরা সত্য হিসেবে ধরি সেটাই আমাদের বাস্তবতা(রিয়ালিটি)।"

ডেভিড বোহম কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন কে অস্বীকার করেছিলেন। তার এক কলিগ বলেন, "মূলত বায়োলজি আর ফিজিক্সের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। ইলেক্ট্রনের হয়ত প্রোটো কনসাস্নেস আছে। আমরা প্রত্যেকেই একটা বিশেষ প্রসেসে সৃষ্টি। পার্টিকেলগুলো সলিড নয় বরং এরা বারংবার ঘটা আত্মঃপুনরাবৃত্তিকারী প্রক্রিয়ার ফসল। আমাদের অস্তিত্ব একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার ফসল। আমরা নিজেরাই নিজেদের রিয়ালিটির সৃষ্টিকর্তা।"
বোহমের সমসাময়িক পদার্থবিদদের একটা বড় সংখ্যা কট্টর বস্তুবাদে বিশ্বাস করত। বেদান্তবাদী অকাল্ট চিন্তাধারা সায়েন্টিফিক বানানো তথা বিজ্ঞানে রূপান্তরের জন্য অনেকে প্রশংসা করতো,অনেক বস্তুবাদীরা সমালোচনা করত, এ বিষয়ে তিনি দুঃখের সাথে বলেনঃ"আমি মনে করি অন্য সাধারন মানুষের তুলনায় বিজ্ঞানীরা কিছু বিষয় মেনে নিতে কঠিন মনে করেন, কেননা তারা এটোমিস্টিক দর্শনে বহু সময় যাবৎ থেকেছে। তারা তাদের মতে এতটা অভ্যস্ত যে হঠাৎ করেই তারা দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে চায়না। তারা হঠাৎ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনকে অহেতুক মনে করে,অস্বস্তিকর ভাবে। কেননা তারা দেখেছে এতদিন পুরাতন তত্ত্বানুসারে ভালই চলেছে এখন পরিবর্তনের দরকার কি! এটা আপনি একদিক দিয়ে দেখে ভালই মনে করবেন কিন্তু বৃহত্তর দৃষ্টিতে এটা খুবই বিপদজনক অবস্থান।"


ডেভিড বোহম-প্রিব্রামের পর সর্বচৈতন্যবাদী আরেক কিংবদন্তি পদার্থ[অপ]বিজ্ঞানী স্যার রজার পেনরোজ এবং এ্যানেস্থেশিওলজিস্ট স্টুয়ার্ট হ্যামারফ এগিয়ে আসেন। তারা এমন হাইপোথিসিস উত্থাপন করেছেন যা চরম বস্তুবাদী চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করে। তাদের দুজনে মিলে চেতনা সম্পর্কিত একটি কোয়ান্টাম তত্ত্ব উত্থাপন করে; যাকে অর্কেস্ট্রেটেড অবজেক্টিভ রিডাকশন(Orch-OR) বলে। একে ইন্টিগ্রেটেড ইনফরমেশন থিয়োরিও বলে, এতে বলা হয় গোটা মহাবিশ্ব চেতনা দ্বারা ছেয়ে আছে। সমস্ত চৈতন্যময় সৃষ্টিজগত একত্রে মিলে মহাচৈতন্য[১৪]। এই দর্শন দ্বারা নিউরোসায়েন্টিস্ট Christof Koch আকৃষ্ট হয়েছেন। স্যার রজার পেনরোজ ও হ্যামারফ উভয়ই সর্বচৈতন্যবাদি(প্যানসাইকিস্ট) বা সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।ডঃ পেনরোজ নিজেকে একজন প্যানসাইকিস্ট দাবি করার জন্য খুব বেশি দূর যাননি। তিনি বলেছিলেন, সম্ভবত কোয়ান্টাম মেকানিক্স চেতনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বলেন, "পদার্থবিজ্ঞানের নীতিগুলি জটিল ব্যবস্থা তৈরি করে, এবং এই জটিল ব্যবস্থাগুলি চেতনার দিকে পরিচালিত করে, যা পরে গণিত তৈরি করে, যা পরে অনুপ্রেরণামূলক উপায়ে সংজ্ঞায়িত করে, এর দ্বারা পদার্থবিজ্ঞানের মূল অন্তর্নিহিত নীতিগুলি উত্থাপন করে।" প্রাচীন চৈতন্যবাদী অকাল্ট তত্ত্বকে বিজ্ঞানে ফেরানোর কথা উল্লেখ করে Shadows of the Mind: A Search for the Missing Science of Consciousness নামে বই রচনা করেন।

পেনরোজ এবং হ্যামারফ প্রথমে তাদের ধারণাগুলি আলাদাভাবে ডেভেলপ করেছিলেন এবং পরে 1990 এর দশকের গোড়ার দিকে উভয় মিলে অর্চ-ওআর নামে তত্ত্বটির পূর্ণতা দেন। তত্ত্বটি 2013 সালের শেষের দিকে লেখক দ্বারা পর্যালোচনা এবং আপডেট করা হয়েছিল। এতে যেটা প্রমানের চেষ্টা করা হয় সেটা হলো, আমাদের মস্তিস্ক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতিতে কাজ করে। চেতনাও এখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি মেনে চলে।পেনরোজ প্রস্তাব করেন যে, চেতনা কোয়ান্টাম স্তরে বিদ্যমান এবং মস্তিষ্কের সংশ্লেষগুলিতে থাকে।পেনরোজ লিখেছিলেন, "কেউ অনুমান করতে পারে  মস্তিষ্কের কোথাও কোথাও কোষগুলি একক কোয়ান্টাম সংবেদনশীলতার সন্ধান করতে পারে। যদি এটি প্রমাণিত হয় তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপে উল্লেখযোগ্যভাবে জড়িত।"

পেনরোজ সর্বপ্রথম কোয়ান্টাম ইফেক্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন  তার 1989 সালের বই The Emperor's New Mind এ। এতে আলোচিত তত্ত্বটিকে বলা হয় অর্চ-ওআর বলা হয়, যা "অর্কেস্ট্রেটেড অবজেক্টিভ রিডাকশন" এর সংক্ষিপ্তরূপ।পেনরোজের মতে "অবজেক্টিভ রিডাকশন" বাক্যাংশটির অর্থ, কোয়ান্টাম ইন্টারফারেন্সের কলাপ্স এবং সুপারপজিশন বুদবুদ ফেটে যাওয়ার মতো একটি বাস্তব, ফিজিক্যাল প্রক্রিয়া।১৯৯৪ সালে তাঁর Shadows of the Mind গ্রন্থে লিখেছেন যে, কোয়ান্টাম চৈতন্যের সাথে জড়িত স্ট্রাকচারগুলো মাইক্রোটিউবিউলস নামক প্রোটিন স্ট্র্যান্ড হতে পারে। এগুলো আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন সহ আমাদের বেশিরভাগ কোষে পাওয়া যায়। পেনরোজ এবং হ্যামারফ যুক্তি দিয়েছিলেন যে কম্পনশীল মাইক্রোটিউবিউলস কোয়ান্টাম সুপারপজিশন গ্রহণ করতে পারে।পেনরোজের যুক্তি Gödel এর অসম্পূর্ণ থিওরাম থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। পেনরোজের চেতনা(consciousness) সম্পর্কিত প্রথম বই হলো,The Emperor's New Mind (1989)। হামারফ (১৯৯৬) চেতনাকে কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের টিউবুলিন প্রোটিন রূপান্তরের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন। এখানে চেতনাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দেখান। তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি সচেতন মুহুর্তের সাথে, "প্ল্যাঙ্ক স্কেল জিওমেট্রির নতুন সমন্বয় অপরিবর্তনীয়ভাবে নির্বাচিত হয়"। এটি সময়ের আপাত বিভ্রমের বা ইল্যুশনের দিকে চালিত করে। এইভাবে চেতনা যদি না থাকতো তাহলে সময়ও থাকতো না।২০১৪ সালের জানুয়ারিতে, হ্যামারফ এবং পেনরোজ দাবি করেছিলেন যে মার্চ ২০১৩-এ জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেটেরিয়ালস সায়েন্সের অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা মাইক্রোটিউবুলেসের কোয়ান্টাম কম্পনের আবিষ্কার Orch-OR তত্ত্বকে সমর্থন করে।

হ্যামারফের চিন্তাধারা ইনফরমেশন রিয়েলিজমের সাথে সম্পর্কযুক্ত[৬০]। তিনি বলেন,স্টুয়ার্ট হ্যামারফ বলেন, "আমাদেরকে স্কুলে শেখানো হয়েছে এই মহাবিশ্ব এ্যটমসহ বিচিত্র জিনিস দ্বারা তৈরি।এটম দিয়ে মলিকিউল তৈরি, মলিকিউল দিয়ে পদার্থ তৈরি, এবং সবকিছুই এর দ্বারা তৈরি। কিন্তু এটম প্রায় পুরোপুরি শূন্য। যেমন ধরুন এই হাতের বলটি এটমের নিউক্লিয়াস। হাইড্রোজেন এটমের প্রোটন উদাহরণস্বরূপ। এর ইলেক্ট্রন যা একে বাহির থেকে প্রদক্ষিণ করে যা ধরুন ওই পাহাড় সারির দূরত্ব থেকে, এর ভেতরকার সবকিছুই ফাঁকা। আসলে এই মহাবিশ্বই প্রকৃতপক্ষে শূন্য। যদি আমরা এই শূন্যতার আরো ভেতরের দিকে যাই, আমরা এক মৌলিক স্তরে এসে উপনীত হই যেটা ফান্ডামেন্টাল স্পেস টাইম জিওমেট্রি যেখানে শুধুই তথ্য বা ইনফরমেশন আছে বিশেষ প্যাটার্নে। একে প্লাঙ্ক স্কেল বলা হয়। এটাই মহাবিশ্বের ফ্যাব্রিক। এখানে বিগব্যাং এর সময় থেকে তথ্য মওজুদ আছে।"
এটা মূলত সর্বচৈতন্যবাদের অকাল্ট বিশ্বাসকে আরেকটু যুক্তিযুক্ত করে। এখানে চেতনাকে মৌলিকভাবে শূন্য ও এক ডিজিটের ইনফরমেশন হিসেবে প্রকাশ করা হয় ম্যাট্রিক্স ফিল্মের অনুরূপ। এর উপর ভিত্তি করে সিমুলেশন হাইপোথিসিস গড়ে উঠেছে, আগামী ১৯তম পর্বে এর ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, বিইযনিল্লাহ। স্টুয়ার্ট হ্যামারফ সর্বচৈতন্যবাদের ব্যপারে বলেনঃ"প্রোটোকনসাসনেস হচ্ছে এমন জিনিস যেটা থেকে চেতনার জন্ম। এটা মৌলিক এবং অখণ্ডনীয়। এটা সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল। এটা হয়ত স্পেস টাইম জিওমেট্রির মূলে রয়েছে। এটা বিগব্যাং এর থেকেই ছিল এবং আছে।" এক বৈঠকে ডেভিড ক্যালমার, স্টুয়ার্ট হ্যামারফ,টিলার প্রমুখ মিলে নিজেদের আকিদাকে মনিস্টিক প্যানসাইকিজম বলে স্বীকৃতি দেয়।অর্থাৎ তারা একমত পোষণ করেন যে তারা যেটাকে বিজ্ঞান বলে প্রতিষ্ঠার কার্যে নিয়োজিত আছেন সেটা অদ্বৈত সর্বচৈতন্যবাদি বিশ্বাস ব্যবস্থা!

সুতরাং [অপ]বিজ্ঞান আজকে প্রাচীন যাদুকরদের চিন্তা,চর্চা এবং তাদের দৃষ্টিতে যে কুফরি সৃষ্টিতত্ত্ব ছিল সেটাতে ফিরে গিয়েছে। অদ্বৈত বেদান্তবাদ বা মনিজম বা প্যানসাইকিজম বা ওয়াহদাতুল উজুদ, যে নামেই ডাকুন না কেন, এই কুফরি আকিদা আজকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। আজ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা হচ্ছে আমরাই এই রিয়ালিটির স্রষ্টা। আমরাই ঈশ্বর। এটাই মূলত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শিক্ষা। এটাই বিশ্বাস করত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রবর্তক বিজ্ঞানীগন। এই শিক্ষা কোয়ান্টাম সাবএ্যাটোমিক জগতের মধ্যে আটকে না রেখে ত্রিমাত্রিক ম্যাক্রো রিয়েলিটিতে বসানোর জন্য মানব মস্তিষ্ক বা মানব চেতনাকে কোয়ান্টাম অবজারভারে বসানো জরুরী। এ কাজটিই আন্তরিকতার সাথে করেছেন ডেভিড বোহম, জন হুইলার, স্যার রজার পেনরোজের মত পদার্থবিজ্ঞানের জাহাজগন।এখানেই শেষ নয়। বরং সেটা সবে শুরু। মানব মস্তিষ্ককে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতিতে ফেলার জন্য আরো অসংখ্য ফিজিসিস্টগন চলে আসেন। এদের একজন হেনরি স্ট্যাপ। হেনরি স্ট্যাপ নিচে উল্লিখিত ধারণার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন: "কোয়ান্টাম তত্ত্বের গণিতের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও মেজারিং ডিভাইসকে পারমাণবিক উপাদানগুলির সংগ্রহ থেকে স্বতন্ত্রভাবে পৃথক হিসাবে গণ্য করার কোনও মানে হয় না। একটি ডিভাইস হচ্ছে বাহ্যিক মহাবিশ্বের অন্য একটি অংশ ... তদুপরি, একজন মানব পর্যবেক্ষকের সচেতন চিন্তাগুলি অবশ্যই তার মস্তিষ্কে যা ঘটছে তার সাথে সরাসরিভাবে সংযুক্ত থাকা সঙ্গত, কিছু মেজারিং ডিভাইসে কী ঘটছে তা নয়। .. আমাদের দেহ এবং মস্তিষ্ক এইভাবে ... কোয়ান্টাম মেক্যানিক্যালি বাহ্যিক মহাবিশ্বের অংশ হয়ে যায়। এভাবে ফিজিক্যাল ইউনিভার্সকে এরূপ ইউনিফাইড পন্থায় ব্যবহার; একটি ধারণামূলক সহজ এবং যৌক্তিকভাবে সুসংগত তাত্ত্বিক ভিত্তি সরবরাহ করে।"

হেনরি স্ট্যাপ প্রস্তাব করেছিলেন যে, কোয়ান্টাম তরঙ্গগুলি তখনই হ্রাস পায় যখন তারা চেতনার(কনসাসনেস) সাথে ইন্ট্যার‍্যাক্ট করে। তিনি এক্ষেত্রে অর্থোডক্স কোয়ান্টাম মেকানিক্স থেকে যুক্তি ব্যবহার করেন। তিনি ছিলেন মূলত একজন প্যানসাইকিস্ট। যাহোক,১৯২০ এর দশকে কোপেনহেগেনে কোয়ান্টাম গুরু নিলস বোরের সাথে কাজ করেছিলেন পদার্থবিদ Pascual Jordan। তিনি বলেছিলেন: "পর্যবেক্ষণগুলি যা পরিমাপ করতে হবে সে বিষয়েই কেবল বিরক্ত করে না, বরং তারা এটিকে সৃষ্টি করে ... আমরা একটি নির্দিষ্ট অবস্থান অনুমান করতে [একটি কোয়ান্টাম কণা] বাধ্য হই"। অন্য কথায়, জর্ডান বলেছেন, "আমরা নিজেরাই মেজারমেন্টের ফলাফল উৎপন্ন করি।" অর্থাৎ আমরাই বাস্তবজগত নির্মানকারী বা স্রষ্টা।Evolve Your Brain: The Science of Changing Your Mind গ্রন্থে Dr. Joe Dispenza, চিন্তা ও চেতনা সম্পর্কিত বিষয়গুলো মস্তিষ্ক, মন এবং দেহের সাথে সংযুক্ত করে।এতে বলা হয়, আমরা যখন সত্যই আমাদের মন পরিবর্তন করি, তখন মস্তিষ্কে পরিবর্তনের শারীরিক প্রমাণ পাওয়া যায়।তাঁর দ্বিতীয় সেরা বই,Breaking the Habit of Being Yourself: How to Lose Your Mind and Create a New one - এ বলেছিলেন যে একটি নতুন বিজ্ঞান আসছে, যা সমস্ত মানুষকে তাদের পছন্দসই বাস্তবতা(reality) তৈরি করতে সাহায্য করবে। ডাঃ ডিসপেনজা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে আপনার চিন্তাভাবনা বা চেতনা বাস্তবজগতকে পরিবর্তন করতে পারে।
ডগলাস অ্যাডামস তাঁর বিখ্যাত বই The Hitchhiker’s Guide To The Galaxy লিখেছেন, আমাদের উপলব্ধি; এই প্রক্রিয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে[১৫]।

২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় সান্তা বার্বারার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ম্যাথিউ ফিশার যুক্তি দিয়েছিলেন যে মস্তিস্কে আরও শক্তিশালী কোয়ান্টাম সুপারপজিশনগুলি টিকিয়ে রাখতে সক্ষম অণু থাকতে পারে। বিশেষত, তিনি মনে করেন যে ফসফরাসের পরমাণু- নিউক্লিয়াই তে এই ক্ষমতা থাকতে পারে।ফসফরাস পরমাণুগুলো জীবন্ত কোষের সর্বত্র রয়েছে। এগুলি প্রায়শই ফসফেট আয়নগুলির রূপ নেয়, যেখানে একটি ফসফরাস পরমাণু চারটি অক্সিজেন পরমাণুর সাথে মিলিত হয়।এই জাতীয় আয়নগুলি কোষের মধ্যে শক্তির প্রাথমিক একক। কোষের বেশিরভাগ শক্তি এটিপি নামক অণুতে সংরক্ষণ করা হয়, যার মধ্যে একটি জৈব রেণুতে যোগ হওয়া তিনটি ফসফেট গ্রুপের একটি স্ট্রিং থাকে। যখন কোনও ফসফেটগুলি বিনামূল্যে কেটে ফেলা হয়, তখন কোষটি ব্যবহারের জন্য শক্তি ছেড়ে দেয়।কোষগুলোতে ফসফেট আয়নগুলিকে একত্রিত করার জন্য এবং তাদের আবার ক্লিভ করার জন্য আণবিক মেশিনারি রয়েছে। ফিশার এমন একটি প্রকল্পের কথা বলেছিল  যাতে দুটি ফসফেট আয়ন একটি বিশেষ ধরণের সুপারপজিশনে স্থাপন করা যেতে পারে, যাকে "এন্টেঙ্গেল্ড অবস্থা" বলে।
ফসফরাস নিউক্লিয়ায় স্পিন নামে একটি কোয়ান্টাম প্রোপার্টি রয়েছে যা নির্দিষ্ট দিকগুলোতে ফিরে থাকা ছোট চৌম্বকের মতো কাজ করে। এন্টেঙ্গল্ড অবস্থায়, একটি ফসফরাস নিউক্লিয়াসের স্পিন অন্যটির উপর নির্ভর করে।অন্যভাবে বলতে গেলে, এন্টেঙ্গল্ড অবস্থা একাধিক কোয়ান্টাম কণাকে ধারন করা বাস্তবিক সুপারপজিশন অবস্থা। ফিশার বলেন,"যদি পারমাণবিক স্পিনের সাথে কোয়ান্টাম প্রক্রিয়াজাতকরণ মস্তিষ্কে প্রকৃতপক্ষে উপস্থিত থাকে তবে এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা হবে, যেটা প্রায় সবসময়ই ঘটে থাকে"।[১৭]


নিউইয়র্ক সিটি কলেজ অফ টেকনোলজির প্রবীণ পদার্থবিদ গ্রেগরি ম্যাটলফ বলেছেন যে তাঁর কাছে প্রাথমিক কিছু প্রমাণ রয়েছে যা দেখায় যে, প্যানসাইকিজম অসম্ভব নয়। ডাঃ ম্যাটলফ এনবিসি নিউজকে বলেছেন, "এগুলি সবই খুব অনুমানমূলক, তবে এটি এমন কিছু যা আমরা যাচাই করতে পারি এবং হয় যাচাই বা মিথ্যা করতে পারি।"

২০০৬ সালে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী Bernard Haisch  বলেন যে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা খালি জায়গায়[empty space] চেতনা তৈরি এবং সঞ্চালিত হয়। যে কোন জটিল সৃষ্টি যা পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদনে সক্ষম, সেগুলো চৈতন্য(consciousness) তৈরি করতে বা সম্প্রচার করতে পারে। ডাঃ ম্যাটলফ জার্মান পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন যাতে করে এ বিষয়টি পরীক্ষা করে একটি পর্যবেক্ষণমূলক স্টাডির প্রস্তাবনার দিকে যাওয়া যায়।তারা যা পরীক্ষা করেছিল তা হলো Parenago'র Discontinuity।এটা এমন এক পর্যবেক্ষণ যে আমাদের সূর্যের মত নক্ষত্রগুলো, যেগুলো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে প্রদক্ষিণ করছে সেসব উষ্ণতর নক্ষত্র গুলোর চেয়ে দ্রুতগতিশীল। কিছু বিজ্ঞানী এটিকে গ্যাস মেঘের সাথে মিথস্ক্রিয়ার জন্য দায়ী করেন। কিন্তু ম্যাটলফ অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি কনসাসনেস এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড রিসার্চ নামের প্রকাশিত জার্নালে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।উত্তপ্ত তারকার চেয়ে শীতল তারকারা "ইউনিডিরেকশনাল জেটের নির্গমন" এর কারণে দ্রুততর চলতে পারে। এই জাতীয় তারকা তাদের সৃষ্টির প্রথম দিকে একটি জেট নির্গত করে। ম্যাটলফ দেখান, যে গতি অর্জনের জন্য এটি তারার সচেতনতার সাথে নিজেকে চালিত করার একটি উদাহরণ হতে পারে।অর্থাৎ বলা হচ্ছে তারকাদের চেতনা আছে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি Gaia স্পেস টেলিস্কোপ এর লক্ষ্য তারকার মানচিত্র তৈরি করা,যা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সমর্থন বা দুর্বল করার জন্য আরও ডেটা সরবরাহ করতে পারে। ডাঃ ম্যাটলফের অভিমত হলো,একটি প্রোটো-মহাচৈতন্য ক্ষেত্রের উপস্থিতি ডার্ক ম্যাটারের পরিবর্তে কাজ করতে পারে।ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের প্রায় 95% ভাগ স্থান জুড়ে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যদিও বিজ্ঞানীরা এর কোনও অস্তিত্ব  খুঁজে পান নি। সুতরাং, তর্কের খাতিরে বলতে গেলে, চেতনা(Consciousness) যদি এমন উপাদান হয় যা সাবটমিক স্তরে কণাসমূহের সংমিশ্রণে উত্থিত হয়, তবে প্রশ্ন আসে এই ক্ষুদ্র চৈতন্যের বিটগুলো কীভাবে সংহত হয়।


উইসকনসিন-মেডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট  এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জিউলিও টোননি প্যানসাইকিজম কিছুটা আলাদা গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাকে integrated information theory বলা হয়। এখানে, চেতনাকে মহাবিশ্বের কোথাও একটি সত্যিকারের ফিজিক্যাল অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ বলা হয়েছে।যদিও আমরা এখনও এটি খুঁজে পাইনি। আমাদের সূর্য আলো এবং তাপকে বিকিরণ করার সাথে সাথে সম্ভবত চেতনাও(consciousness) বিকিরণ ঘটায়।ডঃ টোননি একটি পরিমাপকের ধারনাকে ব্যাখ্যা করেন যে, কতটুকু চেতনা প্রতিটি বস্তুতে বিদ্যমান, সেটা পরিমাপের জন্য। এখানে সেই পরিমাপক ইউনিটকে phi বলা হয়। এটি কোনও জীব নিজেকে বা তার চারপাশের বস্তুর উপর কতটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে তা ব্যাখ্যা করে। তত্ত্বটি বুদ্ধিকে চেতনা থেকে পৃথক করে, যা কিছু লোক এক হিসাবে অনুমান করে। Giulio Tononi এর প্রস্তাবিত integrated information theory of consciousness তত্ত্ব (আইআইটি), এবং ২০০৪ সালে ক্রিস্টোফ কোচের মতো অন্যান্য স্নায়ুবিজ্ঞানী দ্বারা গৃহীত হওয়ার পরে, চেতনাকে সুবিস্তৃত এবং কিছু সাধারণ সিস্টেমেও এটি পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হয়।  তবে, এর দ্বারা পুরোপুরি এটা বোঝায় না যে সমস্ত সিস্টেম সচেতন, এজন্য টোননি এবং কোচকে বলেছেন যে আইআইটি প্যানসাইকিজমের কিছু কিছু উপাদান অন্তর্ভুক্ত করেছে তবে অন্যবিষয়গুলি নয়। কোচ আইআইটি-কে প্যানসাইকিজমের একটি "বৈজ্ঞানিকভাবে পরিশোধিত সংস্করণ" হিসাবে উল্লেখ করেছেন।[১৮][১৬]।


ম্যাটলফ ও টোননি তারকাদের যে চৈতন্যের কথা বলছেন এই ধারনাটি পাওয়া যায় এক শ্রেণীর প্রাচীন জ্যোতিষীদের মধ্যে। তারা তারকাদেরকে মানব ভাগ্যের প্রভাবক হিসেবে মনে করতো। যদি তারকাদেরকে পর্যবেক্ষকের আসনে বসানো হয়,তবে তারা অন্যবস্তুতে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম । অকাল্ট মিস্ট্রি স্কুল থিওসফিক্যাল সোসাইটির শীর্ষনেত্রী এলিস বেইলী তার এসোটেরিক এ্যাস্ট্রলজি গ্রন্থে উল্লেখ করেনঃ"বারো নক্ষত্রের শক্তি বারোটি গ্রহের মধ্যে মিশ্রিত, তবে তাদের প্রতিক্রিয়া উত্থাপন করার এবং সচেতনভাবে প্রাপ্ত, স্বীকৃত, এবং নিযুক্ত হওয়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে গ্রহে বসবাসকারী জীবনের প্রতিক্রিয়া পদ্ধতির উপর নির্ভর করে এবং স্বতন্ত্রভাবে মানুষের উপর। এটি যথাযথভাবে বলা হয়েছে যে চেতনা সচেতনতার বাহনের উপর নির্ভর করে, তাদের বিকাশের দিক থেকে, এবং তার কাছে পৌঁছে যাওয়া এ জিনিস এবং আবেগগুলির সাথে নিজেকে সনাক্ত করার জন্য ব্যক্তির সক্ষমতার উপর নির্ভর করে এবং কেবল তার উপর নির্ভর করে না, যেটা ইতিমধ্যে নিজের একটি স্বীকৃত অংশ বা দিক হিসেবে বিবেচিত। এটি বলা যেতে পারে যে রাশিচক্রের লক্ষণগুলি থেকে শক্তির প্রভাব দ্বারা প্রকাশিত এবং সম্ভব হওয়া বাস্তবতা এবং গুণাবলীর উচ্চতর প্রতিক্রিয়া মানুষের চেতনার দিকটি ধরে রাখতে গ্রহগুলির ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের উপর কিছুটা নির্ভরশীল। এটি বিবেচনা করুন, কারণ এটি একটি গভীর রহস্যময় সত্যকে সূচিত করে।" 
 (এসোটেরিক জ্যোতিষ, পৃষ্ঠা ৫৩/৪)

M. Kafatos এবং R. Nadeau এর কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর কিছু দিকগুলোতে  সচেতন মহাবিশ্বের ধারনার দিকে ঝুঁকে আছে(1990)।J. Gribbina কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সবচেয়ে স্পষ্ট লেখক যিনি প্যানসাইকিজমের ওয়ার্ল্ডভিউ মানতেন (১৯৯৫)। এস.কফম্যান কোয়ান্টাম ফিজিক্স সম্পর্কে খুবই ভাল ধারণা রাখতেন। প্যানসাইকিজম নিয়ে খোলামেলাভাবে বলতেন। তার বই At home in the universe (1999)। তদুপরি, কফম্যান (2016) প্যানসাইকিজম সম্পর্কে আলোচনাটি বারুচ স্পিনোজার কাছে ফিরিয়ে আনলেন। স্পিনোজা ও আইন্সটাইন অভিন্ন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন natura naturans এবং natura naturata তে যার মানে হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টির বাহ্যিক কেউ নয়, বরং সর্বেশ্বরবাদের অনুরূপ  একজন ইমিন্যান্ট সত্তা যিনি একদিক দিয়ে ঈশ্বর অপর দিকে সৃষ্টি-প্রকৃতি।এভাবেই পদার্থবিজ্ঞানীরা সর্বচৈতন্যবাদের প্রাচীন অকাল্ট ফিলসফি তথা যাদুশাস্ত্রভিত্তিক কুফরি দর্শনে ফিরে যান। Umezawa, Vitiello, freeman, De broglie,Arthur Eddington সহ আরো অজস্র ফিজিসিস্ট অদ্বৈত বেদান্তবাদের সর্বচৈতন্যবাদি আকিদাকে বিজ্ঞানের মোড়কে প্রতিষ্ঠা করে।[১৯] টেগমার্কের দৃষ্টিভঙ্গি হলো চেতনা পদার্থের অবস্থা(state of matter) গুলোর একটি, আমরা পদার্থের অবস্থা হিসেবে পাই কঠিন, তরল বা বায়বীয়। চেতনাও এরূপ আরেকটি অবস্থা। পদার্থবিদ Tegmark বলেন, “আমি ধারনা করি যে, চেতনা পদার্থের অপর একটি অবস্থা।  অনেক ধরণের তরল যেমন রয়েছে তেমনি অনেক ধরণের চেতনাও রয়েছে।"[২০]

সর্বচৈতন্যবাদি পদার্থবিজ্ঞানী ক্লি আরউইন বলেনঃ"চেতনার কঠিন সমস্যাটির দিকে অবশ্যই বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানের অ্যান্টোলজিকাল লেন্সের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে, যা আমাদের বলে যে বাস্তবতা হল তথ্য(ইনফরমেশন) তাত্ত্বিক এবং প্ল্যাঙ্ক স্কেল স্পেসটাইমের স্তরে কোয়ান্টাইজড। সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, চেতনা (বস্তুর সচেতনতা) ছাড়া তথ্য বা ইনফরমেশন থাকতে পারে না।...এটি চেতনাকে ভাষা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে - বস্তুর একটি সেট এবং অর্থ প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত স্বাধীনতার ডিগ্রি সহ একটি ক্রম স্কিম। প্ল্যাঙ্ক স্কেলে যেহেতু তথ্য চেতনা ব্যতীত থাকতে পারে না, তাই আমরা একটি "চেতনার আদিম ইউনিট" নামক একটি সত্ত্বার অস্তিত্ব উত্থাপন করি যা কোয়ানটাইজড স্পেসটাইমের ভাষায় গাণিতিক অপারেটর হিসাবে কাজ করে। সাম্প্রতিক অনেক বাস্তবিক আবিষ্কার এবং বিভিন্ন বাস্তবসম্মত ইউনিফিকেশন মডেলের সাথে সংগতিপূর্ণ বেশ কয়েকটি গুণাবলী রয়েছে, (তাই) E8 জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে গড়া কোয়াজিক্রিস্ট্যাল গণিত, রিয়ালিটির ভাষা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে হয়।"[২১]

পদার্থবিদ জিম আল খালিলি এক পিবিএস ডকুমেন্টারিতে বলেন,"আপনি যদি কোন পদার্থবিদের চোখে ভয় দেখতে চান তবে তাকে মেজারমেন্ট প্রব্লেম নিয়ে প্রশ্ন করুন। মেজারমেন্ট প্রব্লেম হচ্ছে, কোন এ্যাটম তখনই নির্দিষ্ট স্থানে জাগ্রত হবে যখন পরিমাপ করতে যাওয়া হবে। অন্যভাবে বললে, এ্যাটম সমগ্র স্থানে ছড়িয়ে থাকে যতক্ষন না কোন সচেতন পর্যবেক্ষক তাকায়। সুতরাং মেজারমেন্ট এর কাজটি বা পর্যবেক্ষণই এই সমগ্র মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করে। আমাদের রিয়ালিটি শুধুই ইল্যুশন(মায়া)।"
জিম প্রায়ই কোয়ান্টাম বায়োলজি এবং কোয়ান্টাম বিবর্তনের প্রচারণা চালায়।কোয়ান্টাম বায়োলজির দ্বারা বোঝায় যে সমস্ত জীব কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি মেনেই বিবর্তিত হয়ে প্রাণ ধারন করে বিভিন্ন প্রজাতির জন্ম হয়, এমনকি ডিএনএ সৃষ্টিতেও তেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অবাধ বিচরণ রয়েছে। এ নিয়ে তিনি প্রায়ই অসংখ্য প্রেজেন্টেশনে কাজ করেছেন।[২৩] তিনি ফিজিক্সের উপর অসংখ্য বিবিসি,পিবিএস ডকুমেন্টারিতে উপস্থাপনা করেছেন।এক ডকুমেন্টারিতে তাকে "ইভিল কোয়ান্টাম ডিলার" এর সাথে তাস খেলতে দেখা যায়[ছবি ডানে]। ভিডিওতে সেই ইভিল কোয়ান্টাম ডিলারকে শিংযুক্ত শয়তানের প্রতিকৃতিতে দেখা যায়! তিনি কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গলমেন্ট প্রমাণের জন্য শয়তানের সাথে তাস খেলেন। এবং এতে শর্তারোপ করা হয়, শয়তান বিজয়ী হলে নিলসবোরের দল রিয়ালিটির ব্যপারে সঠিক ধারণা করে।খেলায় শয়তানটি জয়লাভ করে।[২৪]
একটা বিষয় এখানে লক্ষ্যনীয়, ওরা ঠিকই জানে এসব তত্ত্বের মানে কি এবং কাকে সত্যায়ন করা, এজন্য মাঝেমধ্যে অনেক খোলামেলা উপমা/রূপক ব্যবহার করে, আফসোসের বিষয় আমরা বুঝিনা। জন বেলের ওই কথাটি মনে পরে গেল,"...যেন কেউ আমাদের সাথে খেলছে...।"

যাইহোক, সময় যতই সম্মুখপানে গড়ায় অকাল্ট ফিলসফির ভ্যালিডেশনের স্প্যান-হোরাইজন দিনকে দিন বাড়তে থাকে। এখন ফিজিক্স কমিউনিটি ছাপিয়ে এই প্রাচীন প্যাগান বিলিফ সিস্টেমকে নিউরোসায়েন্টিস্ট, বায়োলজিস্ট, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার খ্যাতিমান লোকেরা প্রচারণা কাজে আন্তরিক ভাবে এগিয়ে এসেছে। গুগল পাওয়ার্ড TEDx এর প্রেজেন্টেশন, লেকচারগুলোয় এখন প্রায়ই ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ফিজিক্স ছেড়ে সর্বচৈতন্যবাদি কোয়ান্টাম মিস্টিক্যাল অকাল্ট ফিজিক্সকে আঁকড়ে ধরার প্রতি আহব্বান করা হয়। বায়োলজিস্ট রুপার্ট শেল্ড্রেক Ph.D এমনই একজন। তিনি ৮০ টিরও বেশি সায়েন্টিফিক পেপার লিখেছেন।তিনি ছিলেন রয়্যাল সোসাইটির সদস্য। তিনি TEDX এ দেয়া এক বক্তৃতায় বলেন,"উনিশ শতকের শেষের দিকে বিজ্ঞান যে বিশ্বাস বা দর্শন অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে সেটাকে বলা হয় বস্তবাদের দর্শন বা ফিলসফিক্যাল ম্যাটেরিয়ালিজম। এবং বিজ্ঞান বস্তুবাদের অংশ হিসেবে দেখা হয়। আমি মনে করি আমরা যেহেতু এটা ভাঙতে শুরু করেছি, সুতরাং বিজ্ঞান পুনরুজ্জীবিত হবে।"অন্যদিকে এ্যান্টন জেইলিঞ্জার বলেন,"রিয়েলিজমকে আজকের পদার্থবিদগন যেরূপ বিশ্বাস করেন তার চেয়ে বেশি পরিমানে আমাদের ত্যাগ করতে হবে।" হুইলারের ডিলেইড চয়েজ এক্সপেরিমেন্ট এ প্রমান করা হয় যে, নিলস বোরের পক্ষের অবস্থান শুদ্ধ, আইনস্টাইনের পক্ষটি ভুল। কগনিটিভ সায়েন্টিস্ট ডোনাল্ড হফম্যান কোয়ান্টাম ফিজিক্স জনহুইলারকে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে বলেন, এই বাস্তবতা ইল্যুশন, অব্জেক্টিভ রিয়ালিটি বলে কিছু নেই।


পদার্থবিজ্ঞান এখন রিয়েলিজম বা বাস্তববাদকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। এখন স্বতসিদ্ধ সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে প্লেটোর কাব্বালাহ থেকে গৃহীত আইডিয়ালিজম বা ভাববাদ। এই বিশাল বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পিছনে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রবর্তক [অপ]বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি আছে হিপ্পিদের অবদান। হিপ্পিদের নিয়ে বিগত পর্বগুলোয় সংক্ষেপে লিখেছিলাম।সহজ কথায় এরা হচ্ছে সাদাচামড়ার আমেরিকান বেদান্তশাস্ত্রের অনুসারী মাল'উন।এদের কতক গৌতম বুদ্ধের অনুসারী বৌদ্ধ। কতক নিওপ্যাগানিস্ট, কতক সারাদিন মদগাঁজা ও অন্যান্য সাইকাডেলিক ড্রাগ গ্রহন করে চেতনার ওপারে ভ্রমন করে আধ্যাত্মিক অনুভূতি লাভের জন্য। এদের অনেকে আবার এলজিবিটি সহ সবধরনের ট্যাবু মুভমেন্টে কাজ করে।কেউ বা উইক্কানদের সাথে মিশে যাদুটোনা,শয়তানের পূজা সহ সবধরনের বামপথের অনুসরণ করে। শুনতে নিশ্চয়ই অবাক লাগছে এরাই আজকের পদার্থবিজ্ঞানের প্যারাডাইম শিফটিং এর ভূমিকায় কাজ করেছে। আজকের পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম বিপ্লবের দ্বারা এহেন সর্বচৈতন্যবাদে প্রত্যাবর্তনে তাদেরই অবদান অনেক বেশি ছিল। এ স্বীকৃতি আমি দেই নি। আমার চেয়ে বিস্তারিতভাবে সুন্দর করে বলেছেন পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড কায়সার। তিনি এই বিষয়ের উপর একটা বই-ই রচনা করেছেন How the Hippies Saved Physics: Science, Counterculture, and the Quantum Revival নামে। তাছাড়া একাধিক ভিডিও সাক্ষাতকারেও এ নিয়ে অনেক কথা বলেন। আমার নিজে থেকে কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। তিনি যে বর্ননা দিয়েছেন, সেটাই যথেষ্ট। তিনি বলেনঃ"বর্তমানে কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্সের একটা বিপ্লব শুরু হয়েছে যেখানে পদার্থবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে অনেক দিকের বিজ্ঞানীরা আছেন যারা একের পর পর এক সাফল্যময় উদ্ভাবন আর আবিষ্কারের দ্বারা এগিয়ে যাচ্ছেন। যেমন ধরুন কোয়ান্টাম কম্পিউটার,কোয়ান্টাম এনক্রিপশন। এর দ্বারা ব্যাংকের ট্রাঞ্জেকশন এবং ফেডারেল নির্বাচনে ভোটিং এর খুব কাজে আসছে।বর্তমানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর ভিত্তি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প চলছে যারা এর নীতির উপর ভর করে বিভিন্ন গবেষণা চালাচ্ছে। এখন ব্যপার হচ্ছে ব্যাংকার বা রাজনীতিবিদগন কেন কোয়ান্টাম ফিজিক্সের উপর এত নির্ভরশীল হতে যাচ্ছে, এটা খুবই অদ্ভুত ব্যপার। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক কাজের সুযোগ এসেছে। ১৯৭০ সালের দিকে একধরনের পতন শুরু হয়। বিশেষ করে আমেরিকায়। এ সময়টাতে ফিজিসিস্টদের খুব একটা ভাল দিন যাচ্ছিল না।এসমস্ত আজকের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব খুব কষ্টের অবস্থা থেকে এসেছে। তখনকার ফিজিক্সের উপর পিএইচডি ধারী ১০০০ জনের মাত্র ৫০ জনের জন্য চাকুরীর ব্যবস্থা ছিল। আমেরিকার তরুন পদার্থবিদদের জন্য এটা খুবই কষ্টের সময়। তখন একদল তরুন মেধাবী ও প্রতিভাবান কিছু পদার্থবিদ মাত্র পিএইচডি নিয়ে বের হয়। ওটা তাদের জন্য একদমই ভুল সময়। 
তারা জার্নাল আর্টিকেলও বের করে কিন্তু চাকুরী খুজে কোথাও কোন চাকুরী পায় না। তাদের মধ্যে দশজন বার্ক্লি ক্যালিফোর্নিয়ায় একত্রিত হলো। তাদের অনেক আশা ছিল তারা ভাল একটা জব পাবে পাশাপাশি তারা পরস্পর কোয়ান্টাম ফিজিক্সের যে অদ্ভুত দর্শনের কথা বলে তাতে খুব আগ্রহ প্রকাশ করে। তো তারা একত্রিত হয়ে সাক্ষাতের আয়োজন করত,তারা নিজেদের দলের নাম দেয় 'ফান্ডামেন্টাল ফিজিক' গ্রুপ। তারা প্রতি শুক্রবারের বিকাল ৪ টায় বার্ক্লিতে জড়ো হত। এভাবে তারা তাদের আলোচনা সভা দীর্ঘ চার বছর চালিয়ে যায়। তারা বলতে শুরু করে যে তারা যদি চাকরিবাকরির ক্যারিয়ার নাও গড়তে পারে,তারা তাদের ফিজিক্সে কৌতূহলী অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে পারবে কারন, তাদের হাতে অনেক অবসর সময় ছিল। একটা বিষয়ে তাদের খুব আগ্রহ ছিল এটা ছিল কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট বা বেলস থিওরাম। আইরিশ ফিজিসিস্ট  জন বেল এরও কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট এর ব্যপারে খুব আগ্রহ ছিল। তিনি ৬০ এর দশকে এক অখ্যাত জার্নালেও উল্লেখ করেন কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট যদি সত্য হয় তবে পার্টিকেল অনেক দূরে থাকলেও একে অপরের সাথে সংযোগ রক্ষা করে যেটা আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন না।  বেল বলতেন এটা আপনাদের ভাল না হলেও সত্য হওয়া প্রয়োজন। তো, এই মহাজাগতিক রহস্যময় গুপ্ত আচরণের ব্যপারে ফান্ডামেন্টাল ফিজিক গ্রুপের চরম আকর্ষণ ছিল, এ নিয়েই তারা বছরের পর বছর আলোচনা করে যান। জন ক্লাউজার ছিলেন এই পদার্থবিজ্ঞানী দলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, তিনি সর্বপ্রথম এই ধারনাটিকে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেন, সাথে স্টুয়ার্ট ফ্রিম্যানও ছিল। ১৯৭০ এর দিকেই অনেক ভিন্ন সংস্কৃতি গুলোর বিপ্লব আমেরিকার সানকফ্রান্সিস্কোতে চলতে শুরু করে। ওই সময়ে পত্রিকাগুলোতে প্রমোট করা হতো, মাইন্ড রিডিং, স্পুনবেন্ডিং(মনের শক্তি দ্বারা চামচ বাকিয়ে ফেলা),ইএসপি, ইউএফও এবং সবধরনের অকাল্ট(যাদুবিদ্যা) বিষয় গুলো। অন্যদিকে আমাদের এদিকে কিছু লোক ছিল যারা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অদ্ভূত রহস্যে মোড়ানো বিষয় গুলো নিয়ে সারাদিন ভাবতো যেমনটা বলা হয় যে আমি যদি এ স্থানে কোন কিছু করি তাহলে ওইদিকটায় সেটার প্রভাব পড়বে। তাদের অনেকে ভাবা শুরু করলো, এই বিষয়টি কি মাইন্ডরিডিং বা ইএসপি এর মতই কোন বিষয় কিনা। এটা সত্য যে তখন অধিকাংশ মানুষই মাইন্ড রিডিং ও অন্যান্য অকাল্ট বিষয় গুলোয় বিশ্বাস করতনা, বরং পত্রিকা ও গনমাধ্যম গুলোয় এগুলো নিয়ে বেশি আলোচনা হত। বিভিন্ন অকাল্ট এক্সপেরিমেন্ট গুলোকে বেশি বেশি প্রচার করত। 
তো তারা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মধ্যে এ ধরনের তাৎপর্য খুজে বেড়াতো।আমি আগেই বলেছি তাদের অধিকাংশেরই নিয়মিত কোন চাকুরি ছিল না। তাদের অনেকে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউণ্ডেশনে ছিল যেটা পদার্থবিজ্ঞানের অনেক গ্রহনযোগ্য একটা স্থান। তো তারা যেটা করতো, যে একটা ভাল সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিজেদের মধ্যে। তো সে সময় (অকাল্টিজমের প্রতিযোগিতায়) যেটা হলো যুক্তরাষ্ট্র ভাবতে শুরু করলো যে সম্ভবত সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ভাল মানের মাইন্ডরিডার আছে। এজন্য তারা ভয় করতো হয়ত সোভিয়েত এর দ্বারা সবার মাইন্ড কন্ট্রোল জাতীয় কিছু করে ফেলতে পারে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র নন ট্রেডিশনাল(অকাল্ট) রিসার্চে বিনিয়োগ শুরু করলো। শুধুমাত্র মাইন্ড রিডিং এর গবেষণায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে। তখন বার্কলির বেকার পদার্থবিজ্ঞানীদের ভাড়া করা হয় যাতে তারা এসব মাইন্ডরিডিং এর ব্যপারগুলোকে কোয়ান্টাম ফিজিক্স দ্বারা ব্যাখ্যা দেয়,তারা সেখানে পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করে। আরেকটা সোর্স থেকেও সাহায্য গ্রহন করে, সেটা হচ্ছে  ক্যালিফোর্নিয়ার হিপ্পি মুভমেন্টদের(বিগত পর্বে উল্লেখ করেছি) থেকে যারা হিউম্যান পটেনশিয়ালটি(মানুষের মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি নিহিত আছে এমন ধারনা) নিয়ে কথা বলতো।কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী পার্টিকেল যেভাবে টাইম ও স্পেসের সর্বত্রজুড়ে সংযোগ বা বিরাজ করে, তেমনি তারা ধারনা করতো মানুষের মন দ্বারা অতিমানবীয় ক্ষমতাকে আনলক করার সম্ভাবনা আছে কিনা। এর দ্বারা আরো অস্বাভাবিক অনেক কিছু করা সম্ভব কিনা। তো, এভাবেই বছরের পর বছর খুবই স্মার্ট এবং মেধাবী পদার্থবিজ্ঞানীগন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওইসব(অকাল্ট রিসার্চের) কাজে সাহায্য করে যাচ্ছিল। এরপরে তারা মেইন জার্নালে যাবতীয় গবেষণা ও পরীক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে লিখতো না বরং নিজেদের মধ্যে কিছু জার্নালে সেসব প্রকাশ করত। এরপরে তাদের জার্নাল গুলো হিপ্পিদের(হিপ্পিদের পরিচয় সহজ কথায় আমেরিকান সাদা চামড়ার হিন্দু) মধ্যে ঘুরতে থাকে। তাদের মধ্যে গবেষণা নথিগুলোকে ইমেইল বা আনঅফিশিয়াল জার্নাল আকারে ঘুরতে থাকে। তাদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী ফিজিসিস্ট থেকে শুরু করে যাদুবিদ্যায় আগ্রহী লোকেরাও ছিল। তাদের এ সকল (কোয়ান্টাম মেকানিক্সভিত্তিক অকাল্ট ফিলসফি ও) গবেষণা গুলো(নিজেদের কমিউনিটির বাইরে) বিভিন্ন বই আকারে প্রকাশ করতে শুরু করে যা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। সেসব বই মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রয় হয়। তারা বই বিক্রয়ে এওয়ার্ডও অর্জন করে। এরকম বইয়ের মধ্যে আছে পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রিতজফ কাপ্রার The Tao of physics[তাও চাইনিজ সর্বেশ্বরবাদি অকাল্ট দর্শনের নাম]। গ্যারি জুকাভের The Dancing Wu Li Masters। যখন আমরা কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্স নিয়ে আজ ভাবি তখন দেখতে পাই সেই সময়ের এসমস্ত পদার্থবিজ্ঞানীদের অবদানগুলো। ওইসময়টাতে বেলস থিওরাম নিয়ে অন্য কেউই এত ভাবে নি। তারা কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট নিয়ে আসলেই অনেক গভীর গবেষণা করেন। তারা অনেক বুদ্ধিদীপ্ত থট এক্সপেরিমেন্ট তৈরি করেন যেগুলায় বলেন বেলস থিওরামের সাথে আইন্সটাইনের রিলেটিভিটি থিওরির অনেক সাংঘর্ষিকতা  আছে। এটা নিয়ে জন বেল নিজেও চিন্তা করেছেন যে কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট রিলেটিভিটি তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে দুই পদার্থবিজ্ঞানের পিলার সংঘর্ষে লিপ্ত হতে যাচ্ছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সকে রিলেটিভিটির সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে, যদি তা না হয় তবে সেটা বিরাট খবর। তো বার্কলে ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স গ্রুপটি অনেক সুচতুর থট এক্সপেরিমেন্ট কে ব্যবহার করে মডার্ন ফিজিক্সের বিভিন্ন দুর্বল জয়েন্ট গুলোকে খুজে বের করতে শুরু করে। তারা আরো কিছু পদার্থবিদদের এ ব্যপারে সাড়া নেয়ার চেষ্টা করে। এরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক পদার্থবিজ্ঞানীরা সাড়া দিতে শুরু করেন, তারা এমন সব থিওরির পরিচয় ঘটান যা হাইজেনবার্গ, জন বেল কেউই জানতো না। যেমন, আজকের বিখ্যাত নো ক্লোনিং থিওরাম।কোয়ান্টাম ফিজিক্সের খুবই গভীর মৌলিক ফ্যাক্ট যেটা আগে কারও জানা ছিল না। এই তত্ত্বটি এসেছে ওইসব বার্কলে ফান্ডামেন্টাল ফিজিক গ্রুপের চিন্তাসমূহের ফলস্বরূপ। আজকের কোয়ান্টাম এনক্রিপশনের জন্য কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট ও নো ক্লোনিং থিওরাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এরই মাধ্যমে আমরা এনক্রিপ্টেড কোয়ান্টাম সিস্টেম পেয়েছি।তো আপনি যদি সকল প্যাকেজগুলো একত্রিত করেন, আপনি দেখতে পাবেন, ওই বার্কলে ফিজিসিস্টরা অনেক ভুলও করেছে, ভুল আমরাও করি কিন্তু তাদের ভুলগুলো ছিল অত্যন্ত প্রোডাক্টিভ। তারা খুবই ডিসিপ্লিন্ড এবং তাদের থট এক্সপেরিমেন্ট গুলোও খুবই ক্রিয়েটিভ। তো এভাবেই বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও তাদের তত্ত্ব নিয়ে অনেক সাংঘর্ষিকতা চলতে থাকে, বিশেষ করে সানফ্রান্সিসকোর হিপ্পি কমিউনিটির সাথে। হিপিরাও অনেক প্রশিক্ষিত বিদ্বান ছিল কিন্তু তাদের আইডিয়া গুলোও অনেক বেশি অদ্ভুতুড়ে ছিল, তাদের চিন্তাধারা ছিল মেইনস্ট্রিম থেকে অনেক ভিন্ন। সমন্বিত ভাবে তারা অনেক প্রোডাক্টিভ মিস্টেইক্স করেন। তারা ভুল অনেক বেশি করলেও সেগুলো খুবই প্রোডাক্টিভ ছিল।তাদের এই ভুল গুলোর কারনেই আমরা আজ এমন জিনিস পাচ্ছি যা আগের কেউ জানতো না।"[২৬]



কলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক
ভিক্টর এন ম্যান্সফিল্ড বৌদ্ধধর্মের সাথে Jungian  মনোবিজ্ঞানের সাথে তাঁর নিজস্ব সংযুক্ত পদার্থবিজ্ঞানের অনেকগুলি কাগজপত্র এবং বই লিখেছিলেন,তিনি 'দ্য তাও অব দ্য ফিজিক্স'  এর প্রশংসা করে 'ফিজিক্স টুডে' তে ১৯৭৫ সালে লিখেছেনঃ"ফ্রিতজফ ক্যাপ্রা, দ্যা তাও অব ফিজিক্সে... আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের গাণিতিক বিশ্ব-দৃষ্টিভঙ্গি এবং বুদ্ধ-কৃষ্ণের মিস্টিক্যাল[অকাল্ট] দর্শনগুলির সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছেন।  যেখানে অন্যরা এই আপাতদৃষ্টিতে এই ওয়ার্ল্ডভিউ গুলোকে একত্রিত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন, ক্যাপ্রাকে (বলতেই হয়) একজন উচ্চশক্তির তাত্ত্বিক,(তিনি) প্রশংসিতভাবে সফল হয়েছে। আমি দৃঢ়তার সাথে সাধারণ মানুষ এবং বিজ্ঞানী উভয় শ্রেণীকেই বইটি পাঠের পরামর্শ দিচ্ছি। "

এভাবেই কোয়ান্টাম রিভাইভাল তথা বেদান্তবাদের বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউ বা যাদুশাস্ত্রভিত্তিক বিশ্বদর্শন/বিশ্বাসব্যবস্থা বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সুতরাং কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে বেদান্তমেকানিক্স বললে অবিচার হবে না। জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী Peter Hans Dhurr বলেন,"যখন আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর কোন লেকচার দেই, আমি অনুভব করি যেন আমি বেদান্তশাস্ত্র নিয়ে কথা বলছি।" তিনি নিজেও বেদান্তবাদি আদিশঙ্করের অনুসারী। অন্যত্র বলেন,"আমি পদার্থের উপর গত ৩৫ বছর গবেষণা করেছি, শুধু মাত্র এটা বের করার জন্য যে এর আদৌ অস্তিত্ব নেই! আমি এমন কিছু নিয়ে গবেষণা করেছি যার আদৌ অস্তিত্ব নেই।এটাই বহু আগে উপনিষদে আদি শঙ্কর বলেছিলেনঃতুমি যা-ই দেখ তার কোন অস্তিত্বই নেই।"


জনাব উল্ফগ্যাং পাওলি আরেকজন নোবেল বিজয়ী কোয়ান্টাম [অপ]বিজ্ঞানী যিনি সর্বস্বীকৃত অকাল্টিস্ট[২৭]। আলকেমি,নিউমেরলজি ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিরচণ করেন।বিশ্বাস করতেন পূর্বাঞ্চলীয় বেদান্তবাদে। এর উপর নির্ভর করে তিনি কিছু অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্বও প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি ছিলেন অকাল্ট আধ্যাত্মবাদি সাইকোলজিস্ট Carl Jung এর অত্যন্ত কাছের মানুষ। মায়ের আত্মহত্যা, স্ত্রীর ডিভোর্সের জন্য চরম হতাশা আর বিষাদময় জীবন কাটাতেন।তখনই Carl Jung তার পাশে দাড়ালেন। অকাল্টিজমে[যাদুশাস্ত্রে] ডুবে থাকার জন্য তিনিও বিশ্বাস করতেন আমাদের চৈতন্যই সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা। তিনি যাদুকরদের এই কুফরি আকিদার বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি দিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে বলেন,"নির্বাচন করার স্বাধীনতার সক্ষমতা (কমপক্ষে আংশিকভাবে) এবং যা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তার উপর মৌলিকভাবে নিয়ন্ত্রণহীন প্রভাবের মাধ্যমে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান পর্যবেক্ষককে তার মাইক্রোকোজমে আরও একবার সৃষ্টির এক ক্ষুদ্র প্রভু হিসাবে পরিণত করেছে। কিন্তু যদি এই ঘটনাগুলি নির্ভর করে যে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তবে কী সম্ভব নয় যে এগুলোও ঘটনাকারী যা তাদের পর্যবেক্ষণ করে তার উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ পর্যবেক্ষকের মানসিকতার প্রকৃতির উপর)? এবং যদি নিউটনের সময় থেকে ডিটারমিনিজমের আদর্শের সন্ধানে থাকা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান[ন্যাচারাল সায়েন্স] অবশেষে প্রাকৃতিক নীতিগুলোর পরিসংখ্যানগত বৈশিষ্ট্যের মূলে "সম্ভবত" পর্যায়ে পৌঁছে যায় ... তবে সেই সমস্ত বৈষম্যের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকা কি উচিত যা শেষ পর্যন্ত সমস্ত অর্থে "পদার্থবিজ্ঞান" এবং "মানসিকতার" এর মধ্যে পার্থক্যকে ছিনতাই করে?"

তিনি এ কথা কার্ল ইয়াঙ এর নিকট লিখে পাঠান। অনেকে বুঝতে পারেন নি হয়ত, তাই সহজ করে বলি। উল্ফ গ্যাং পাওলি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এটা পর্যবেক্ষককে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার ক্ষুদ্র প্রভুর[মিনি ত্বাগুত] আসনে বসায়। নিউটনিয়ান মেকানিক্স থেকে শুরু হয় ডিটারমিনিস্টিক ফিজিক্স, এখানে সবকিছুই নির্ধারনযোগ্য মেকানিস্টিক। সহজ কথায় এই পদার্থবিদ্যার ধারা ভাগ্য বলে কিছুকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স সবকিছুকে "সম্ভবত" বা প্রোব্যাবিলিস্টিক করে তোলে। সবকিছুই ননলোকাল যতক্ষন না কোন চৈতন্য পর্যবেক্ষণ করে মনের শক্তির বলে ওয়েভফাংশন কলাপ্স ঘটায়, অর্থাৎ পিউর এনার্জি ফর্ম থেকে পদার্থে রূপান্তর ঘটায়। মানে এখানে পর্যপবেক্ষকই ঈশ্বরের কাজ করে। পাওলি সাহেব প্রশ্ন তোলেন,কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা বেদান্তমেকানিক্স এসে গেছে, এখনো কি মন ও পদার্থবিদ্যার মধ্যে বিভাজনকারী কোন কিছু থাকা উচিত!? গ্যারি ওয়েইন বলেন, পাওলি  কোয়ান্টাম মেকানিক্স ভালভাবে বুঝতে বেদান্তশাস্ত্র আগে পড়তে পরামর্শ দিতেন।[২৯]



In Quest of Brahma

CERN

Conseil Européen pour la Recherche Nucléaire
 [Large Hadron Collider]





একাধিক রাষ্ট্র মিলে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মাটির ৩০০ ফুট নিচে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পার্টিকেল এক্সিলারেটর নির্মান করেছে।এটা ফ্রান্সের সীমানাতেও প্রবেশ করেছে। এই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার মূলত জয়েন্ট ইউরোপীয়ান প্রজেক্ট এবং এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও সম্পৃক্ততা আছে।এটাই পদার্থবিদ্যার গবেষণায় সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি। এই সার্ন ল্যাবের সামনেই রাখা হয়েছে নটরাজ শিবের বিশাল মূর্তি! এর উদ্দেশ্য কি? [অপ]বিজ্ঞানীরা সেখানে কি করছে? উত্তর হচ্ছে তারা ব্রহ্মচৈতন্যের সন্ধানে একযোগে কাজ করছে। শুনতে অবাক লাগছে? পূর্বাঞ্চলীয় বেদান্ত-ঔপনিষদিক শাস্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্বে আছে, ব্রহ্ম হচ্ছে সৃষ্টির দেবতা,শিব ধ্বংসের এবং বিষ্ণু সংরক্ষক। ব্রহ্মার মায়াকল্পের শেষ লগ্নে নটরাজ শিব ধ্বংস নৃত্য শুরু করে সমস্ত ঐন্দ্রজালিক পদার্থ তথা মহাবিশ্বের[মায়ার] ধ্বংস ঘটায়, সাথে সাথে ব্রহ্ম আবারো মহাবিশ্বের তথা এর সবকিছু পুনরায় সৃষ্টি করতে চলে আসে। বেদান্তবাদী আজকের পদার্থবিজ্ঞানীগন এই ব্রহ্মার সন্ধানে কাজ করছেন। তারা সেই সাবএ্যাটমিক পার্টিকেলের অনুসন্ধান করছেন যা সমস্ত বস্তুকে ধরে আছে। যা সমস্ত বস্তুর মূলে আছে।
এটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সেই মহাচৈতন্য বা ব্রহ্মচৈতন্য! এ লক্ষ্যে তারা প্রোট্রন বা পার্টিকেলকে আলোর গতিতে ছুটিয়ে পরস্পর সংঘর্ষ ঘটিয়ে ধ্বংস করেন। এতে দ্বারা বেদান্তশাস্ত্রীয় রূপক বর্ননার ব্রহ্মাকে খুজে বেড়ান যা সৃষ্টিক্রিয়ায় আসে। যা নটরাজ শিবের ধ্বংস নৃত্যের দ্বারাই কেবল পাওয়া যায়। এজন্যই শিবের ধ্বংস নৃত্যরত প্রতিকৃতি সার্ন ল্যাবের সামনে সসম্মানে রাখা হয়েছে। ফিজিসিস্টগন জানেন, তারা এখানে শিবের কাজটি করছেন। আমি পূর্বে বহুবার বলেছি, বেদান্তবাদি দর্শনে বিভিন্ন দেবদেবীর বর্ননাগুলো মূলত রূপক। এতে দেবতাদের দ্বারা প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তি, আচরণ ও নীতিকে পার্সোনিফাই করা হয়েছে। মূল বার্তা হচ্ছে অদ্বৈত অস্তিত্ব[ওয়াহদাতুল উজুদ] তথা সর্বেশ্বরবাদ। পদার্থবিজ্ঞানী Fritjof Capra বলেন[৩১], "কয়েকশ বছর আগে, ভারতীয় শিল্পীরা শিবের নৃত্যের দৃশ্যের চিত্রগুলি সারিবদ্ধভাবে ব্রোঞ্জের দ্বারা সুন্দরভাবে তৈরি করেছিলেন। আমাদের সময়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক নৃত্যের প্যাটার্ন চিত্রিত করার জন্য সর্বাধিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। মহাজাগতিক নৃত্যের এই রূপক এভাবে প্রাচীন পুরাণ, ধর্মীয় শিল্প এবং আধুনিক পদার্থবিদ্যাকে এক করে দেয়।" অন্যত্র বলেন,"কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব অনুসারে, সৃষ্টি এবং ধ্বংসের নৃত্য পদার্থের অস্তিত্বের মূলভিত্তি। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এইভাবে প্রকাশ করেছে যে, প্রতিটি সাবএ্যাটমিক কণা কেবল এনার্জিরনৃত্যই করে না, এটি একটি সৃষ্টি ও ধ্বংসের কম্পনশীল নৃত্য করে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের জন্য শিবের নৃত্য হলো সাবএ্যাটমিক পদার্থের নৃত্য, সমস্ত অস্তিত্ব এবং সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনার মূল ভিত্তি।”

সুতরাং বুঝতেই পারছেন অপবিজ্ঞানীরা সার্ন ল্যাবে শিবমূর্তির সামনে কিসের অনুসন্ধান করছেন। তারা পদার্থের মূলে যেতে চাইছেন।দেখতে চাইছেন সেই ব্রহ্ম চৈতন্যের অস্তিত্বকে যা মহাবিশ্বের পদার্থের মায়াজাল বুনেছে। এই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের ভেতরে বেদান্তের রূপক দেবতা নটরাজের ধ্বংস নৃত্য চলে পদার্থের ভিত্তির অন্বেষণে যাকে বলা হয় ঈশ্বর কণা বা হিগস ফিল্ড। ফিজিসিস্ট ফ্রিতজফ অন্যত্র বলেনঃ"শিবের নৃত্য সমস্ত অস্তিত্বের ভিত্তিমূলের প্রতীকী। একই সাথে শিব আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে, পৃথিবীতে এই বহুবিধ রূপগুলি মৌলিক নয়, বরং মায়াজাল এবং চিরপরিবর্তনশীল। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান শুধুমাত্র সৃষ্টি এবং ধ্বংসের ছন্দটি শুধুমাত্র ঋতুর আর সকল জীবিত বস্তুর জীবন মৃত্যুর পালাবদলেই প্রকাশ হয় বলে দেখায় না, বরং এটা অজৈব পদার্থেরও মর্মার্থ বর্ননা করে।"

সার্নের বিজ্ঞানীগন শুধুমাত্র বৈদিক শিবমূর্তি স্থাপন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সেটার উদ্বোধন শুরু করে সার্ন ল্যাবে কর্মকর্তাদের সম্মিলিত শিবের ধ্বংস নৃত্যের অনুকরণে নৃত্যের মাধ্যমে। ২০১৫ সালের মার্চে তারা সার্নের মধ্যে এই শয়তানি নৃত্যকে প্রকাশ করে[নিচের ছবি]। এগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে আধুনিক বিজ্ঞান বেদান্তশাস্ত্রেরই নতুনরূপ। অপবিজ্ঞানীগন আন্তরিকভাবে আল্লাহর রাসূল[সাঃ] ভাষ্য অনুযায়ী কুফরের মূল পূর্বাঞ্চলের যাদুশাস্ত্র ও কুফরি দর্শনকে বিজ্ঞানরূপে প্রতিষ্ঠা করেছে। এবং প্রকাশ্যে কাজ করছে। অথচ আমরা এসবকে গ্রহন করছি বিশুদ্ধ হালাল "বিজ্ঞান" হিসেবে।

যখন পার্টিকেল এক্সিলারেটরে পার্টিকেলকে ছোটানো হয় এবং সংঘর্ষ ঘটিয়ে তথা রূপকার্থে শিবনৃত্যের দ্বারা ব্রহ্মাকে আহবান করা হয়, তখন বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত কিছু দৃশ্য দেখেন। তারা তাতে অসংখ্য মুখাবয়ব আবিষ্কার করে[ডানের ছবি]![৩৩] হয়ত এরা পদার্থের উপর ম্যানিপুলেট করতে গিয়ে মাত্রাভেদ করে শয়তানের জগতে কোনভাবে প্রবেশ করছে[আল্লাহই ভাল জানেন]। অধিকাংশ লোকের ধারনা, সার্নের এই কাজ আমাদের জগত ও উচ্চতর জগতের মাত্রার দুয়ারকে খুলে দেবে। অর্থাৎ শয়তানের দুয়ার খুলে দেবে। আপনারা হয়ত জানেন, নটরাজ শিবের আরেক ইনকারনেশন হচ্ছে 'রুদ্র'[৩৪]।
তিব্বতীয় বৌদ্ধরা রুদ্রচক্রী নামের এক মহাশক্তিধর মেসিয়ানিক সত্তার অপেক্ষা করছে যেটা বৌদ্ধদের কালচক্রতন্ত্র অনুযায়ী শেষ অবতার হিসেবে আবির্ভূত হয়ে নূহ,ঈসা,মূসা,সাদাচাদরওয়ালা, মুহাম্মদ এবং মাহদী নামের ব্যক্তিদের অনুসারীদের[ম্লেচ্ছ] বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। অনেক বৌদ্ধ লামাদের মতে তিনি সাম্বালা বা আগার্থায় আছেন, হয়ত যমীনের নিচে অথবা অন্যমাত্রায় রাজত্ব করছেন। তিনিই সর্বশেষ কল্কি অবতার! এ নিয়ে আলাদা আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। এই মহা শক্তিধর সত্তাকে লামারা ব্রহ্মাত্মা নামেও ডাকে। পোলিশ পর্যটক Ferdynand Ossendowski রাশিয়ান বিপ্লবের সময় দূর প্রাচ্য ভ্রমণ করেন। তার অভিজ্ঞতার উপর 'Beasts Men and Gods' নামে বই প্রকাশ করেন ১৯২১ সালে। তাতে তিনি পঞ্চম সেকশনের ৪৬-৪৯ চ্যাপ্টারে তিনি তিব্বতের উপত্যকায় থাকাকালে অদ্ভুত উদ্বেগপূর্ণ অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। তাকে সেখানকার বৌদ্ধ লামারা বৌদ্ধধর্মে উল্লিখিত বিশ্বসম্রাট ব্রহ্মাত্মার কাহিনী শোনায়। তারা বলে, অনেক বছর আগে একদল মানুষসহ এক মহান ব্যক্তি মাটির নিচে হারিয়ে যায়,যারা আর কখনোই ফেরেনি।[পৃঃ৩০২] তাদের রাজ্যে অনেকেই গিয়েছে, এমনকি গৌতমবুদ্ধ নিজেও গিয়েছে। তাদের ওই রাজ্যটার অবস্থান স্পষ্টভাবে কেউই জানেনা। সেখানকার রাজা এক মহাশক্তিধর ব্যক্তি। সেখানে কোন অপরাধ, যুদ্ধ কিছুই নেই। সেটা একটা পার্থিব স্বর্গ। বিজ্ঞান সেখানে কোনরকম ব্যাঘাতহীনভাবে বিকশিত হয়ে চূড়ান্তপর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এখন মাটির নিচের এই স্বর্গরাজ্য মিলিয়ন খানেক মানুষ বাস করে। তাদের রাজাই হচ্ছে এই বিশ্বজগতের রাজা। তিনি এই বিশ্বের সকলের আত্মার ব্যপারে জানেন।তিনি সেখান থেকেই মাটির উপরের প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষকে পরিচালনা করেন বা তাদের উপর তার কর্তৃত্ব রয়েছে। তারা তাকে মেনে চলে।
অন্য আরেক লামা বললেন, "মানুষের জন্ম মৃত্যুর উপরও তার ক্ষমতা রয়েছে। আসমান যমীনের সকল ক্ষমতা আছে।" এবং "তার নির্দেশে গাছ,ঘাস এবং ঝোপঝাড় জন্মাতে পারে;বৃদ্ধ অক্ষমরা শক্তসমর্থ যুবকে পরিনত করতে পারেন;মৃতকে জীবিতও করতে পারেন।"[পৃষ্ঠা ৩০৪] সুতরাং, সংক্ষেপে বলা যায়, ব্রহ্মাত্মা হচ্ছেন এমন এক খোদায়ী সত্তা যিনি বেহেশতি রাজ্য আগার্থা বা সাম্ভালায় রাজত্ব করেন। ওসেনডোস্কির বইটি লেখার শেষের দিকে তাকে উচ্চমার্গীয় এক লামা তাকে বলেন, ওই লামার প্যাগোডায় ১৮৯১ সালে এসেছিলেন এবং কিছু ভয়ংকর ভবিষ্যদ্বাণী করেন।এটা ছিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক মহাযুদ্ধের সতর্কবানীঃ অর্ধচন্দ্র ধীরে ধীরে নিষ্প্রভ হবে এবং এর অনুসারীরা[মুসলিমদের বোঝানো হচ্ছে] ভিক্ষা এবং অন্তহীন যুদ্ধ-সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে। তাদের দখলদাররা সূর্যের দ্বারা আঘাত হানবে কিন্তু কোন লাভ হবেনা, তারা ২য় বারে আরো কঠিন দুর্ভাগ্যের দিকে যাবে, যেটা শেষ হবে অন্যসব লোকেদের সামনে তাদের অপমানের পাত্র হবার দ্বারা[পৃঃ৩১৩]।যখন ভবিষ্যদ্বানীর কথা গুলো শেষ হবে, "এরপরে আগার্থার মানুষেরা মাটির নিচের রাজ্য থেকে বেড়িয়ে ভূপৃষ্ঠে চলে আসবে।"[পৃঃ৩১৪]

বেদান্তশাস্ত্রের অনুসারী সুফিমিস্টিক জনাব René Jean-Marie-Joseph Guénon তার বই-
Lord of the World 'এ ব্রহ্মাত্মাকে কুতুব শব্দে উল্লেখ করেছেন। এবং উনিশ ও বিংশ শতকের অকাল্টিজমের সকল শিক্ষার উৎস হিসেবে সাম্ভালা/আগার্থাকে উল্লেখ করেন এবং সেখানে থাকা বিশ্বরাজাকে সমস্ত অকাল্ট শিক্ষার  হায়ারার্কি চক্রের প্রধান বলে উল্লেখ করেন[পৃঃ২৩]। এই রাজার শিক্ষার যে উচ্চতম সার্কেল আছে সেটা পাশ্চাত্যের অকাল্টিজম যেমন,হার্মেটিক অর্ডার অব গোল্ডেন ডনের প্রধান, থিওসফিক্যাল সোসাইটির মহাত্মা এবং সুফিবাদের Aqtab এর সাথে সম্পর্ক রক্ষা ও যোগাযোগ রাখে।[৩৫]

 মুসলিমদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে যাবে, অনেক অলৌকিক ক্ষমতার মালিক হিসেবে বলা এই ব্রহ্মাত্মা বলতে কাকে বোঝানো হচ্ছে মনে করছেন? তার মানে, যদি সকল অকাল্ট মিস্ট্রি স্কুল গুলোর হায়ারার্কিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রধান দাজ্জাল হয়[বস্তুত তা-ই] তাহলে গ্রেসিয়ান ও বৈদিক অকাল্ট ট্রেডিশন এবং এর উপর গজানো পদার্থবিজ্ঞান মূলত কার শিক্ষা!? কার কাছ থেকে আসছে! দাজ্জালের!!!?

এ কারনেই সার্ন ল্যাবের সামনে রুদ্র তথা নটরাজ শিবমূর্তি। যেহেতু পদার্থবিজ্ঞানীদের জেনেভায় এসব কার্যের সাথে শয়তান ও দাজ্জালের সুস্পষ্ট সম্পর্ককে ঠাহর করা যায়,সেহেতু এই পার্টিকেল এক্সিলারেটর দ্বারা জ্যাক পার্সন্সের 'ব্যবিলন ওয়ার্কিং' এর ন্যায় কোন ধরনের ডিমেনশনাল রিফট বা ইন্টারডিমেনশনাল পোর্টাল তৈরির আশংকাকে একদম উড়িয়ে দেয়া যায়না। সম্ভবত এন্টিম্যাটারসহ বিভিন্ন পার্টিকেল নিয়ে কাজ করা, মিনি বিগব্যাং তৈরির চেষ্টার খবর শুনে অনেক ম্যাটেরিয়ালিস্ট পদার্থবিজ্ঞানীরা সার্নের কার্যক্রমের সমালোচনা করে। স্টিফেন হকিং নিজের নাস্তিকতার স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, "এটা নরকের দুয়ার খুলে দেবে"। অন্যত্র বলেন, "এটা প্যান্ডোরার বক্স খুলে দেবে,একবার যদি আপনি খুলে দেন এটা থেকে যা আসবে তা আর ফেরত পাঠাতে পারবেন না"[৩২]। সার্নের গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক কম্পিউটিং শাখার ডিতেক্টর Sergio Bertolucci এক ব্রিফিংয়ে রিপোর্টারদের বলেন,"এই দরজার বাহির থেকে হয়ত কিছু আসবে,অথবা আমরা কোনকিছুকে এর মধ্য দিয়ে পাঠাতে পারব।"

অকাল্ট থিওসফিক্যাল সোসাইটির নেতানেত্রীগন বলতেন বিশ্বশিক্ষক বা ওয়ার্ল্ড টিচার আমাদের জগতের মাত্রায় দেহধারন করেছেন বা দেহের অবয়বে রূপান্তরিত হয়েছেন। যদি দাজ্জাল নিজেকে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে  ব্রহ্মচৈতন্য বা ব্রহ্মের আত্মার দৈহিক কাঠামোগত রূপ ধারন করার দাবি করে অর্থাৎ নিজেকে প্রভু বলে দাবি করে, তার রুবুবিয়্যাত বা প্রভুত্বের স্বীকৃতি না দিয়ে একজনও সার্নের বা কোয়ান্টাম ফিজিসিস্টও থাকবে!?

চলুন, এবার সার্নের পদার্থবিজ্ঞানীদের অবস্থা দেখা যাক। তাদের আকিদা ধীরে ধীরে আধ্যাত্মবাদে আরো বেশি শক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ কুফরের পথে অটলতা বাড়ছে। এদের কেউ সব ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে মহাঋষি মহেশযোগীর ধ্যানকক্ষে। এমনই একজন পদার্থবিজ্ঞানী জন স্যামুয়েল হাগেলিন। তিনি সার্নে পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চে নিয়োজিত ছিলেন। গবেষণার বছরখানেক পর হঠাৎ করে সবছেড়ে আত্মার সিদ্ধির সন্ধানে ধ্যানচর্চা শুরু করেন।হয়ে যান একজন অদ্বৈত বেদান্তবাদী সাধক।হয়ে যান আমেরিকান ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশনের[টিএম] প্রধানগুরু।এরপর মহাঋষি মহেশযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা অধ্যাপনা শুরু করেন। জন হাগেলিন অন্য সবার মতই ব্রহ্মচৈতন্যে বিশ্বাসী। তিনি বিজ্ঞানে মহাচৈতন্যকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজ শুরু করেন।প্রতিষ্ঠা করেন সুপারস্ট্রিং থিওরি। তিনি মহাচৈতন্যবাদ দ্বারা ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কাজ করেন। সর্বচৈতন্যবাদি এই পদার্থবিদ বিশ্বাস করেন চেতনাই বস্তু জগতের মূলে রয়েছে। সবকিছুই চেতনার এক মহাসমুদ্র। তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দ্বারা রিয়ালিটির বর্ননায় বলেনঃ"আমি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছি এবং সার্ন ল্যাবে কাজ করেছি।কোয়ান্টাম মেকানিক্স হচ্ছে ইনফরমেশনের খেলা ও প্রদর্শনী, সম্ভাব্য তথ্যের খেলা ও প্রদর্শনী। ইনফরমেশনের ওয়েভ। সম্ভাব্য ইলেক্ট্রনের তরঙ্গ। এ জগতটি শুধু ইলেক্টনের না বরং পটেনশিয়াল ইলেক্টনের। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কিসের সম্ভাব্য তরঙ্গ? এটা কি সমুদ্রের ঢেউ? জ্বিনা। এটা মহাজাগতিক সমুদ্র, বিশুদ্ধ সম্ভাব্যতার ঢেউয়ের সমুদ্র। Abstracr pure potential existence এর সমুদ্র, একে আমরা বলি ইউনিফাইড ফিল্ড বা সুপারস্ট্রিং ফিল্ড, আর এর দ্বারাই আমরা তৈরি। ফিজিক্স জানতে চেষ্টা করে বিশ্বজগতের মৌলিক কাঠামো, বিল্ডিং ব্লক্সকে যার দ্বারা সব কিছু নির্মিত। বুঝতে চেষ্টা করে এই জীবন এবং মহাবিশ্বের অস্তিত্বের গোড়াকে। জীবন ও মহাবিশ্ব যেন আপনার আঙ্গুলের ফাঁকা থেকে বেরিয়ে যায়।এবং আপনি আসতে থাকেন ক্রমশ বিমূর্ত অবস্থায় এবং একপর্যায়ে pure abstraction এর মধ্যে। এটাই ইউনিফাইড ফিল্ড। পিওর এ্যাবস্ট্রাক্ট পটেনশিয়াল এক্সিস্টেন্স। বিশুদ্ধ বিমূর্ত সত্তা। বিশুদ্ধ আত্মসচেতন (অনন্ত) সম্ভাবনাময় মহাচৈতন্য। যেটা কম্পনশীল তরঙ্গের দ্বারা জাগরিত হয় এবং গঠন করে সমস্ত পদার্থ এবং সমগ্র মহাবিশ্বকে।"

তিনি বিশ্বাস করতেন অদ্বৈত অস্তিত্ব বা Monism/pantheistic panpsychism'এ যেটাকে আরবিতে বলা হয় ওয়াহাতুল উজুদ।আজকের পদার্থবিজ্ঞান এই বেদান্তবাদী প্রাচীন অদ্বৈত অস্তিত্বে অস্তিত্বের কুফরি বিশ্বাসের দিকেই হাতছানি দিয়ে ডাকে।এই সার্নের পদার্থবিদ মানুষকে মনচৈতন্য ব্যবহার করে কিভাবে বস্তুজগতে প্রভাব ফেলা যায় সেটার শিক্ষা দেয়। কেন স্বাভাবিক চেতনা দ্বারা আমরা বস্তুজগতে প্রভাব ফেলতে পারিনা সেটাও বলেন। হাগেলিন বলেনঃ "ইউনিভার্স যেমন বিভিন্ন স্তরে স্তরে সাজানো ঠিক একইভাবে মনেরও একই ভাবে বিভিন্ন স্তরের কাঠামো আছে। একদম অগভীর থেকে গভীর পর্যন্ত। আমরা যদি মনকে খুবই অগভীরভাবে ব্যবহার করি সাধারন চিন্তা দ্বারা। আমরা খুব সামান্য ক্ষমতাই দেখব যেটা হাতের সাহায্য ছাড়া টেবিলের বালুকণাকেও নড়ানোর জন্য যথেষ্ট না। এতটাই দুর্বল হতে পারে চেতনা। কিন্তু অন্যদিকে চেতনার সবচেয়ে গভীরতম ধাপ গোটা মহাবিশ্বকে তৈরি করে। আক্ষরিকভাবে আমরা বিভিন্ন জগতে বাস করি।যেমন ম্যাক্রোস্কপিক জগত যেটা আমাদের সত্তার জগত এবং অন্যদিকে মাইক্রোস্কপিক জগত যেটা আমাদের এটম ও নিইক্লিয়াইর জগত। দুটোই সম্পূর্ণ ভিন্ন জগত যাদের নিজস্ব ভাষা ও গণিত রয়েছে।একদিকে আমি আমার এ্যাটম অন্যদিকে আমি আমার দেহসত্তা, আমার ম্যাক্রোস্কপিক শারীরিক কাঠামো। এগুলো সবই সত্য। সত্যের অনেকগুলো স্তর রয়েছে। বিজ্ঞান ও দর্শন যে সর্ব গভীরতম সত্যের ব্যপারটি প্রকাশ করেছে সেটা হচ্ছে মৌলিক একত্বের সত্য (ননডুয়ালিটিঃএকক অস্তিত্ব/ওয়াহদাতুল উজুদ)। সবচেয়ে গভীর সাবনিউক্লিয়ার পর্যায়ের বাস্তবতা হচ্ছে আমি এবং আপনি(অস্তিত্বগতভাবে) একদমই 'এক'।"


অর্থাৎ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান আজ বেদান্তশাস্ত্রের অনুসরনে অদ্বৈত অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে। এই [অপ]বিজ্ঞানীও অন্য সকল বৈদিক যাদুশাস্ত্রের অনুসারীদের অনুরূপ বলেন, আমরাই এই সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা। সমগ্র অস্তিত্ব ভিত্তিগতভাবে একক এবং বস্তু অবস্তু এমনকি শূন্যস্থানেও চেতনা বিদ্যমান। সবকিছু মিলে এই ব্রহ্মাণ্ড এক বুদ্ধিপ্রদীপ্ত সচেতন সত্তা। সবকিছুই এর সহযোগী স্রষ্টা।তিনি বলেন,"কোয়ান্টাম ফিজিক্স এবং মলিকিউলার বায়োলজি উভয় ডিসিপ্লিনই আজ বলে যে আমরাই আমাদের বাস্তব জগতের সৃষ্টিকর্তা।সর্বশেষে আমরা দেখি চৈতন্যের ফিজিক্সটা কিরূপ? আমরা প্রশ্নটা আজ করতে পারি। চেতনা কি জিনিস।এটা কোথায় থেকে আসে, এর উৎস কি। মানুষের সক্ষমতার সীমানা কি? আমরা আজ এই প্রশ্নোত্তরের জন্য প্রস্তুত। আজকের cutting Edge বিদ্যার প্রভাবে তৈরি ইউনিফাইড ফিল্ডের জ্ঞানের দ্বারা আমরা আজ জানি যে জীবনের অস্তিত্ব  মৌলিকভাবে একক। এই একত্বের মূলে মন ও পদার্থের মূলে আছে চৈতন্য। মহাজাগতিক  চৈতন্য। তো এই গভীর উপলব্ধিতে বলা যায় যে চেতনা মস্তিষ্কের সৃষ্টি নয়। এটা মস্তিষ্কের কোন বায়োকেমিক্যাল প্রসেসে তৈরি নয়, বরং এটা প্রকৃতির মৌলিক জিনিস। এটা প্রকৃতির একদমই শেকড়ের। একে আমরা বলি ইউনিফাইড ফিল্ড।এখন আমাদের চৈতন্যের ভিত্তিগত জ্ঞান আছে। এটা মাইন্ড বডির সমস্ত আর্গুমেন্ট এর সমাধান করে। বিগত শতাব্দী ধরে পদার্থবিদ্যা প্রকৃতির ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর সকল ক্ষেত্রে বিচরণ করেছে, চেষ্টা করেছে প্রকৃতির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গভীরতম ভিত্তিমূলে যেতে যেখানে আছে একক মহাজাগতিক সার্বজনীন বুদ্ধিদীপ্ত অস্তিত্বের একক ফিল্ড। এই ফিল্ডটি গ্রাভিটি, ইলেক্ট্রম্যাগনেটিজম,লাইট, রেডিওএ্যাক্টিভিটি, নিউক্লিয়ার শক্তি সব কিছুকে একীভূত করে। সবধরনের ফোর্স এবং প্রকৃতির সবধরনের পার্টিকেল যেমনঃ কোয়ার্ক,নিউট্রন,প্রোট্রন সবকিছুকে একীভূত করে। এবং সবকিছুকে এককভাবে বোঝা যায়। এরা সবাই একক অস্তিত্বের সমুদ্রের(ওয়াহদাতুল উজুদ) ভিন্ন ভিন্ন ঢেউ, যাকে বলা হয় ইউনিফাইড ফিল্ড বা সুপারস্ট্রিং ফিল্ড। এই ফিল্ড হচ্ছে ননম্যাটেরিয়াল(অবস্তুগত) ফিল্ড। এটা আলটিমেটলি চৈতন্যের সমুদ্র। আমার আপনার সকলের চেতনার উৎস ওই একক চেতনা। মহাবিশ্বের সবকিছুই ওই চেতনা ছাড়া আর কিছু নয়।"[৩৬]

সর্বচৈতন্যবাদি এই পদার্থবিদ বৈদিক-উপনিষেদিক শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করেও ব্রহ্মচৈতন্যের উপর অনেক লেকচার দিয়েছেন[৩৭]। এই হচ্ছে শিবমূর্তি স্থাপিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমানবিক গবেষণা কেন্দ্রের পদার্থবিজ্ঞানীদের অবস্থা।সার্নে কাজ করতেন জন স্টুয়ার্ট বেল, যিনি বেলস থিওরামের দ্বারা ননলোক্যালিটি প্রমানের দ্বারা কোয়ান্টাম বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করেন। তার এ অবদানেরর দরুন বিজ্ঞান ম্যাটেরিয়ালিজম ছেড়ে প্লেটনিক আইডিয়ালিজমের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। পদার্থবিজ্ঞান ফিরে গেছে প্রাচীন গ্রীসের প্লেটো পিথাগোরাসদের কাছে, যারা বাবেল শহরের ইহুদিদের থেকে যাদুশাস্ত্র কাব্বালার জ্ঞান নিয়ে ফিরে নিজেদের ভাষায় প্রচার করতেন। অর্থাৎ আজকের পদার্থবিজ্ঞান মূলত ফিরে গেছে বাবেল শহরে।একদিকে সার্ন ল্যাবের সামনে নটরাজ শিব, অন্যদিকে সার্নের অদূরেই ইতালির সীমান্তের দিকে হঠাৎ করে নির্মাণ করা হলো বাবেল সম্রাট নমরুদের পালমিরা ফটক। দায়েশ যখন ইরাকের বাবেল শহরের বা'আল মন্দিরের পালমিরা উড়িয়ে দিল,এর পরেই এর নির্মাণ। ইতালির দেবতা অ্যাপোলো পূজার স্থানটিতেই নমরূদের পালমিরা আর্চ নির্মাণ করা হয়। শুধুমাত্র ইতালিতেই নয়, লন্ডন ও নিউইয়র্কেও করা হয়। এগুলো উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অনেক রিচুয়াল করা হয়। এই নির্মাণ প্রদর্শনীর পাশেই বাবেল সম্রাট নমরূদের প্রতিকৃতি এবং পোস্টারে লেখা "ধ্বংসের পর আবারও নমরুদের পালমিরার জেগে ওঠা।"[ছবি ডানদিকে] এখানে নমরুদ ও বা'আল দেবতার সম্পর্ক হতে পারে, নমরুদের মৃত্যুর পর তাকে বা'আল দেবতা নামে পূজা করা হতো।

নমরুদের এই বাবেল শহরই যাদুশাস্ত্রের সবচেয়ে বড় প্রাচীন মহাবিদ্যালয়। এখান থেকেই সবদিকে যাদুবিদ্যা এবং যাদুশাস্ত্রের প্রসার ঘটে। সত্যিকারের সিহরে যাদুকররা মন বা চেতনাকে ব্যবহার করে বা করা শেখায়। জ্বীনের দ্বারা কারও ক্ষতি সিহরের সংজ্ঞার মধ্যে পড়েনা। জ্বীন-শয়তানদেরকে যাদুকররা গাইড হিসেবে ব্যবহার করে। সিহর বা যাদু হচ্ছে একটা [বি]জ্ঞান, একটা বিদ্যা যার দ্বারা প্রাকৃতিক বা মানসিক পরিবর্তন ঘটানো হয়। একাজে মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় মানুষের মনকে, মনের ইচ্ছা-অভিপ্রায়[ইন্টেনশন] বা চেতনাকে। এটাই হার্মেটিক-কাব্বালিস্টিক অকাল্টের ম্যাজিক্যাল ইনিসিয়েশান[৪০][৫৮]।পাশ্চাত্যের যাদুবিদ্যার ট্রেডিশানে সিজিল, ক্যায়স/ সিম্প্যাথেটিক ম্যাজিক পুরোটাই ইন্টেনশান নির্ভর,এতে তেমন কোন রিচুয়াল পালন কিংবা শয়তান কিংবা যাদুকরদের ভাষায় দেবতার ভক্তি করা হয়না[৪১]। যাদুকর উইচরা মনে করে এই বিদ্যা এক প্রকার আর্ট, এক ধরনের ক্র‍্যাফট যার দ্বারা কোন কিছু অর্জন করা যায়। এরা বাস্তবজগত বা রিয়ালিটির ব্যপারে একজন পদার্থবিদের অনুরূপ ধারনা রাখে। তাদের কাছে উইচক্র্যাফট স্রেফ reality manipulation। যাদুবিদ্যার এই মাত্রারচর্চাকে ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা অনেকটা এরকম যে, আল্লাহর উপর ভরসা না করে, নিজেকে রবের আসনে বসিয়ে প্রকৃতির গুপ্ত নীতিগুলোকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে পরিবর্তনের চেষ্টার দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল। যাদুকরদের ইন্টেনশান সৃষ্টিকর্তা ভাল করেই জানেন, সে অনুযায়ী তাদেরকে ফলাফল প্রদান করেন কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভরসায় অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস করে নিজেকে রবের আসনে বসানোর দরুন,এটা কুফর। এজন্য যাদুবিদ্যায় শয়তানের অর্চনা কিংবা পবিত্র গ্রন্থের অবমাননা না করলেও কুফরি।আধুনিক মুসলিমদের অধিকাংশই যাদুর ওই চৈতন্যঘটিত সুপারন্যাচারাল বিষয়টিকে অস্বীকার করে মু'তাযিলাদের অনুরূপ,এরা যাদু বলতে বোঝে শুধু শয়তানের পূজা করে শয়তানজ্বীন দ্বারা কোন কার্যহাসিল। কালো যাদু মানে তাবিজ কবচ লিখে জ্বীন দ্বারা চালান, এরপরে জ্বীনের উপদ্রব। তাদের দৃষ্টিতে এটা এজন্যই কুফরি যে, শয়তানের সন্তুষ্টির জন্য অর্চনা কিংবা পবিত্র জিনিসের অবমাননা করা হয়, অথচ এ রিচুয়াল কাল্টগুলো মূল সিহরের সংজ্ঞাতেই পড়েনা,এই চিন্তাধারা বিশুদ্ধ আকিদার দাবিদারদের থেকে শুরু করে সিহরের রুকইয়্যাহকারীদের[চিকিৎসক] মধ্যে পর্যন্ত বিদ্যমান; যার জন্য এরা যাদুকে আলাদা কোন বিদ্যা হিসেবে দেখে না,যার দরুন কোয়ান্টাম মেকানিক্সসহ পদার্থবিজ্ঞান যদি কাব্বালা কিংবা জ্যোতিষবিদ্যার শিক্ষাকে প্রচার করে, এরা সেটাকে যাদুবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত মনে করেনা বরং মনে করে বিশুদ্ধ - নিষ্কলুষ হালাল বিদ্যা। যাইহোক, আধুনিক [অপ]বিজ্ঞান আজ চৈতন্যনির্ভর যাদুবিদ্যার এই শাখাটিকেই শেখায়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স রিয়ালিটির ব্যপারে যাদুশাস্ত্র(বৈদিক ও কাব্বালিস্টিক) নির্ভর মেকানিক্সের শিক্ষা দেয়, একটা কুফরি অদ্বৈত সর্বচৈতন্যবাদি মেটাফিজিক্সকে দ্বার করায়। এরপরে ডেভিড বোহম, হুইলার, রজার পেনরোজ, স্টুয়ার্ট হ্যামারফসহ আরো অনেকে প্রমাণ করে যে আমাদের মস্তিষ্ক কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর যাদুকরি তত্ত্ব মেনেই কাজ করে। এর দ্বারা বোঝায় আমরাই এই রিয়ালিটির স্রষ্টা। অতঃপর আধুনিক বিজ্ঞানীগন সরাসরি এটা বলেন। শুধু তাই না, তারা আজ ভাগ্য পরিবর্তন ও সুখী জীবন গঠনের জন্য আশা আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতাদানে [অপ]বৈজ্ঞানিক পন্থায় প্রাচীন সিহর[যাদু] অবলম্বনের শিক্ষা দেয়[কোয়ান্টাম সর্সারি(৫৮)]। আহবান করে কুফরের পানে। প্রথম অবস্থায় শুধুমাত্র আকিদাগত কুফরের দিকে আহব্বান করেছে। এমন আকিদাকে বৈজ্ঞানিক বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে, এমন আকিদা বা বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে বিচিত্র তত্ত্ব তৈরি করছে যার অরিজিন্স[উৎস] প্রাচীন মিশর-বাবেল-ভারত ও গ্রীসের যাদুকরগন।

মহাকাশ সংস্থা নাসার পদার্থবিজ্ঞানী টম ক্যাম্পবেল অপর এক ব্রহ্মচৈতন্যবাদি পদার্থবিদ। তিনি মহাচৈতন্যের প্রচারে অনেক স্পষ্ট। অজস্র ভিডিও ইন্টারভিউ, প্রেজেন্টেশনে তার অদ্বৈত বেদান্তবাদি আদর্শকে প্রচার করেন।তার দৃষ্টিতে ঈশ্বর প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান মিশরীয় জ্যোতিষী যাদুকরদের অনুরূপ। তিনি খোলখুলিভাবে সর্বেশ্বরবাদের কথা বলতে গিয়ে বৈদিক মহাচৈতন্যকেই ঈশ্বর হিসেবে অভিহিত করেন। সমস্ত সৃষ্টির বস্তুই কো-ক্রিয়েটরস। সবাই মিলে (কালেক্টিভলি) একক অস্তিত্ব। সকলেই ঈশ্বর।[৩৮] তিনি বলেন, "চৈতন্য(consciousness) হচ্ছে একধরনের ইনফরমেশন(তথ্য), একধরনের ইনফরমেশন ফিল্ড। একরকমের ডেটা।চেতনা হচ্ছে একমাত্র ফান্ডামেন্টাল,অন্য যাই আছে তা এর থেকে উদ্ভূত। আমাদের বাস্তব জগত, শরীর মস্তিষ্ক যা-ই আছে সবই চেতনা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং চেতনা হচ্ছে ফান্ডামেন্টাল রিয়ালিটি।যদি বলা হয় এই সমগ্র জগৎ কি ঈশ্বরের সৃষ্টি(?),যদি ঈশ্বর বৃহত্তর মহাচৈতন্য হয় তবে, হ্যা সবকিছুই বৃহত্তর চেতনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আরোপ করা হলে সবকিছুই যথার্থ হয়।"
তিনি মহাচৈতন্যেবাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ইনফরমেশন রিয়েলিজমের[২৮] পক্ষে বলেন। তাছাড়া সরাসরি মনের ইচ্ছা বা অভিপ্রায়(ইন্টেনশান) ব্যবহার করে কার্যসিদ্ধির উপায় বাতলে দেন। কোয়ান্টামতত্ত্ব বা বেদান্তমেকানিক্স ব্যবহার করে রিয়ালিটি ম্যানিফেস্টের শিক্ষা দেন। অর্থাৎ সিহরের শিক্ষা দেন![৩৯] সুতরাং এসমস্ত বিজ্ঞানীদের যদি  বিজ্ঞানের মুখোশের আড়ালে থাকা যাদুকর বলা হয়, কিছু মাত্র অবিচার হবে না।


পুরো মহাবিশ্বকে জীবন্ত সচেতন সত্তা হিসেবে ধরার প্রবণতা বায়োসেন্ট্রিজম নামের আরেক নব্য তত্ত্বের সাথে মেলে। তবে সর্বচৈতন্যবাদ[প্যানসাইকিজম] খাটি প্যাগান বিশ্বাস ব্যবস্থা। এটাকে সায়েন্টিফিক মর্যাদাদানের দ্বারা আজ কোয়ান্টাম মেকানিক্স আধ্যাত্মিক পথের এক পাথেয় হিসেবে অকাল্টিস্টদের পাশাপাশি সরাসরি সায়েন্টিফিক কমিউনিটি,গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যন্ত প্রচার শুরু করেছে।[২২] অকাল্ট রাইটার mitch horowitz বিগথিংক'এ দেয়া এক প্রশ্নোত্তরে বলেন,"এজ অব এনলাইটমেন্টের সময়টাতে অনেক লোক এস্ট্রলজি, আলকেমি, ভবিষ্যদ্বাণীসহ অনেক কিছু প্রাক্টিস করা শুরু করে। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বত্র আলো ছড়াতে থাকে, মানুষ নিউটনিয়ান মেকানিক্সেও সেই সাথে খুবুই আগ্রহী হয়। আপনারা এটা জেনে কিছু মনে করবেন না যে নিউটন নিজেও আলকেমি চর্চা করত। কিন্তু এরপরেই হঠাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক অকাল্টিজমকে একেবারে বাদ দিলো সকল কোর্স ও ইউনিভার্সিটির বিষয় থেকে। আপনি যদি সামনের দিকে এগিয়ে বিংশ শতকের দিকে পিছনের ৮০ বছরে ফিরে যান এবং আজ পর্যন্ত দেখেন, আপনি দেখবেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন পরীক্ষণগুলো জনমনে বিচিত্র ধর্মীয় রহস্যবাদী[সেই প্রাচীন] চিন্তাকে আবারো জাগ্রত করছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের পরীক্ষনগুলোয় বিগত আশি বছরে যে অদ্ভুত বিষয় গুলো দেখা যাচ্ছে সেসবকে বাদ দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়া সত্যিই অসম্ভব যেমনঃ এ্যাটোমিক স্কেলে বিজ্ঞানীগন দেখছেন পার্টিকেলগুলো পর্যবেক্ষনের আগে দেখা যায় না।এটা সব ধরনের অসাধারন বিষয়কে সত্যায়ন করছে। বিজ্ঞানীগন এখন এ ব্যপারে উদ্বিগ্ন যে, নিউএজার(নিউএজ অকাল্ট স্পিরিচুয়ালিস্ট) বা আমার মত [অকাল্ট রাইটার] লোকেদের এই [বৈজ্ঞানিক]বিষয়গুলো [নিজেদের বলে] দখল না করতে শুরু করে। যেন এটা না বলা শুরু করে যে 'আহাঃ দেখো! রেনেসাঁ যুগের অকাল্টিস্টরা যা নিয়ে আগ্রহী ছিল তার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।'কারন কোয়ান্টাম ফিজিসিস্টগন নিজেরাও এ বিষয় গুলো বুঝতে পারছেন না। এটা এ যুগের চ্যালেঞ্জ, এ যুগের রহস্য!"[৪২]

এবার চলুন যাদুশাস্ত্রের অনুসারী রহস্যবাদী লেখক, সাধক ও ঋষিদের(mystic) কাছে। এরা তাদের অনুসৃত অকাল্ট শাস্ত্রের অনুসারে উল্লিখিত পদার্থবিদদের অনুরূপই সর্বচৈতন্যবাদি এবং তারা চেতনানির্ভর সিহর চর্চার পথে উৎসাহ দেয়। হিন্দু ধর্মগুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর বলেন,"যখন সাব্জেক্ট ও অব্জেক্ট বাদ দেয়া হয় তখন যেটা থাকে, সেটা হলো কম্পনশীল এনার্জি।আপনি যখন গর্ভে ছিলেন তখনও কম্পনটাই সর্বপ্রথম ঘটেছিল।জগতের সবকিছুই কম্পমান। আপনি যদি কম্পনকে অনুভব করেন তাহলে আপনি এম্বায়োনিক লেভেলের পিছনের চেতনাকে অনুভব করেছেন। আপনার  প্রথম অনুভূতিটাই তরঙ্গ এরপর পারসেপশান। আমাদের শরীরসহ এই মহাবিশ্বটা কম্পনশীল এনার্জি। কোয়ান্টাম  ফিজিক্সকে অনেক অনেক ধন্যবাদ যে তারা আমাদের কাজটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এটা বলে সব কিছুই ওয়েভফাংশন, অন্য কিছুর অস্তিত্ব নেই।সমস্ত সৃষ্টি জগতটি ওয়েভ ফাংশন।"
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ এবং অকাল্ট রাইটার সিন্থিয়া সুই লারসন বলেন,"এরকম বলা হয় যাদুকরী চিন্তা তেমন কাজের না। কিন্তু আসলে যাদুকরী চিন্তা খুবই শক্তিশালী। কারন কোয়ান্টাম জগতে কল্পনাশক্তিই রাজা। এটাই সবকিছুর মূল। চৈতন্যই আসল। আমরা যখন স্বীকৃতি দেই যে সমস্ত পদার্থ এনার্জি দ্বারা তৈরি এবং সবাই কম্পনশীল।আমাদের মধ্যে একরকমের চিন্তা তৈরি হয় যে এই বাস্তবতা পদার্থগত ভাবে সত্য নয়, যেমনটা আমরা ভাবতে পছন্দ করি।তাই এই প্রকৃতির বাস্তবতা হচ্ছে চৈতন্য, যা নিজের পানে চেয়ে আছে, এটা অনেকটা ফিডব্যাক লুপ। তার মানে আমরা যখন বাহিরে কিছুকে দেখি সেটা মূলত মহাচৈতন্য। এটাই হচ্ছে আসল ব্যপার। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে আমাদেরকে আমাদের বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করছে।"
অকাল্ট বা যাদুবিদ্যা শিক্ষার টিভি সিরিজ Wisdom Teaching  এর নির্মাতা, পরিচালক ও লেখক জনাব ডেভিড উইলকক বলেন, "পদার্থ এবং এনার্জি হচ্ছে গভীরতম সহজাত নীতির ফসল। 
যদিও সকল জীবন নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য এবং স্বকীয়তাকে খুজে পায়, আমরা মূলত মৌলিকভাবে ইউনিফাইড কনসাসনেস শেয়ার করছি যা দ্বারা মহাবিশ্ব সৃষ্ট। এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ দেখছি যে এই মহাবিশ্বের উদ্ভূত হয়েছে জ্যামিতিক বীজ থেকে যার কোন স্থানকাল নেই।যেহেতু আমরা সচেতন, চেতনা ওই বীজের মধ্যেও আছে, সেখান থেকেই স্থান কাল উদ্ভূত হচ্ছে । সুতরাং এই 'সব কিছুই এক' দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটির বৈজ্ঞানিক ফাউন্ডেশন রয়েছে। স্পেস, টাইম, ম্যাটার, বায়োলজি সবই মহাচৈতন্যের সৃষ্টি।"
নিউএজ প্যাগান অকাল্ট মুভমেন্টের শীর্ষস্থানীয় গুরু দীপক চোপ্রা বলেন, "আত্মা আপনার শরীরের মধ্যে নেই বরং আপনার শরীরটাই আত্মা এই মহাবিশ্ব আপনার আত্মা।আত্মা হচ্ছে মূল চৈতন্য যা স্পেস টাইমের বাইরে রয়েছে। আপনি শরীরে মস্তিষ্কে আত্মাকে খুজে বেড়াচ্ছেন কিন্তু খুজে পাচ্ছেন না, কারন সেটা সেখানে নেই। কোন কিছুই আপনার চেতনার বাহিরে নয়।আপনার আত্মাই হচ্ছে কালেক্টিভ আত্মা অর্থাৎ এই ম্যাট্রিক্স বা ইউনিভার্সাল আত্মার অংশ যাকে আমরা ঈশ্বর বলি। চৈতন্য হচ্ছে সর্বময় ছাপিয়ে থাকা অস্তিত্ব সমগ্র স্থান কালের মূল। এটা সৃষ্টিকারী ও সম্পর্কযুক্ততার ফিল্ড, এটা ইন্টেনশনের ফিল্ড।"[৫৯]
Beyond belief টিভি সিরিজে যাদুশাস্ত্রের অনুসারী amelia kimkedi বলেন , "আমরা বলি মহাজাগতিক মহাচৈতন্যের কথা, আমি বলি প্রত্যেক জীবিত বস্তুর মধ্যেই ঐশ্বরিক আত্মার অস্তিত্ব রয়েছে। আমরা একে জিরো পয়েন্ট এনার্জি ফিল্ড অথবা মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তা যাই বলিনা কেন আমরা মূলত একে ঈশ্বর বলি। ঈশ্বরের নতুন নাম হলো জিরো পয়েন্ট এনার্জি। সুতরাং একটা হলোগ্রাফিক রেকর্ডের সমুদ্র আছে যেটায় সমস্ত জীবন্ত বস্তুর ইতিহাস খদিত আছে, আর এর সাথে কোয়ান্টাম প্রক্রিয়া দ্বারা সংযোগ স্থাপন করা যায়। এই কোয়ান্টাম প্রসেস হচ্ছে নিঃশর্ত ভালবাসা।"
“Selfhelp.la" এর Coach এবং  Founder; Armando Perez বলেন,"অধিকাংশ মানুষই জানেনা কিভাবে এই জগত কাজ করে,কিভাবে এনার্জি কাজ করে।এনার্জি ওয়েভ আমাদের চারপাশেই আছে। কয়েকশ বছর আগে একজন চেষ্টা করেছে কিভাবে এই এনার্জি ব্যবহার করে রেডিও ওয়েভ তৈরি করা যায়। এই এনার্জি আসলে সবসময়ই ছিল আপনি যেখানেই থাকুন না কেন। অধিকাংশ মানুষই এটা অনুধাবন করেনা যে আমরাই সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ যারা চলাফেরা করি, কথা বলি, অনেকটা আপনার সেলফোনের মত ট্রান্সমিশন টাওয়ার। ওই বক্স গুলোর মত যারা সারাক্ষণ সিগ্নাল আদান প্রদান করছে। আমরাও সেরকমই। ধরুন আমরা ঘরভর্তি লোকেদের মধ্যে দিয়ে হেটে গেলাম কেউ খেয়াল করেনি।ঘরের অন্যরুমের মানুষদের আপনি জানেন না কিন্তু কিছু একটা তাদের অস্তিত্ব আপনাকে জানান দেবে। আমরা প্রায়ই ভাইবের ব্যপারে শুনি, তার ভাল ভাইব আছে  তার ছোট ভাইব। ভাইব হচ্ছে ভাইব্রেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ। এবং ভাইব্রেশন ফ্রিকোয়েন্সীর সমতূল্য। তো আমাদের হাই বা লো ফ্রিকোয়েন্সী থাকতে পারে। তো লোকেরা হাই বা লো ভাইব্রেশনের কথা বলেনা তারা বলে আমি ভাল বা খারাপ বোধ করছি। আমি পজেটিভ থিংকারদের কেউ নই যারা খুশি থাকা এবং ইতিবাচক চিন্তা ও বিশ্বাস করার কথা প্রচার করে। আমি তাদের কেউ নই কিন্তু আমি বুঝি যে কোন কিছু অর্জনের প্রতি বিশ্বাসের একটা শক্তি আছে যতক্ষন না তা লাভ করছেন।"
NLP এক্সপার্ট এবং হিপনোথেরাপিস্ট Carlos Casados বলেন,"ভিক্টোরিয়ান যুগে এলিস্টার ক্রোওলি নামের একজন বিখ্যাত অকাল্টিস্ট ছিলেন যিনি বলতেন যাদু হচ্ছে মনের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবর্তন সাধনের আর্ট ও বিজ্ঞান, যাতে ভবিষ্যতের মুহূর্ত গুলোকে কল্পনা করে কিছু নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে বিষয় গুলোকে হতে দেয়া, আমার অবচেতন মন ওই অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করবে। কোন কষ্ট ছাড়াই মনে হবে আমার ওই কাজটি করতে হবে, আমি যেন ওই কাজ করতে বাধ্য। এই অনুভূতি গুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করবে যেভাবে আমি বাস্তবতাকে উপলব্ধি করি। এটা কি সত্যিই যাদু? এটা নির্ভর করে আপনি  যাদুবিদ্যাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। তাই না?"


আপনারা দেখতে পারছেন যাদুকরদের সর্বেশ্বরবাদী মহাচৈতন্যের আকিদাকে আজ পদার্থবিজ্ঞান সত্যায়ন করেছে, শুধু তাই নয় এ্যালিস্টার ক্রোওলির মত যাদুকর শয়তানের পূজারীর বিদ্যাকেই আজকের অপবিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করছে।বেদান্তসর্বচৈতন্যবাদী পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ অমিত গোস্বামী যাদুকরদের অনুরূপ মানুষের চিন্তা চেতনা ও অভিপ্রায়ের যাদুকরি শক্তির বিষয়ে বলেন,"এখন এই পরীক্ষাও করা হয়েছে যে যখন আপনি আলোক রশ্মিকে ফ্ল্যাশ হতে দেখেন তখন আপনার ব্রেইন পটেনশিয়াল ওই লাইট ফ্ল্যাশের সিগ্নেচার ধরে ফেলে যাকে বলা হয় ইভোক পটেনশিয়াল।এটা ইইজি মেশিন মস্তিষ্কে যুক্ত থাকলে পরিমাপ করা যায়। এবার ধরুন আমি ওইদিকটায় অন্ধকারে বসে আছি, সেখানে কোন আলোর প্রক্ষেপণ নেই, আমি আপনাকে দেখতেও পারছি না কিন্তু আমার মস্তিষ্কও (একই অভিজ্ঞতা লাভ করছে), কারন আমি "ইন্টেনশন" দ্বারা আপনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমি আপনার সাথে সরাসরি একই অভিজ্ঞতা লাভ করতে 'অভিপ্রায়' রাখি। এই 'ইন্টেনশন' আমাদেরকে একই সাথে একই ব্রেইন পটেনশিয়াল তৈরিতে সাহায্য করছে। এই পরীক্ষাটি প্রথমে হাকোবুক গ্রীনবার্গ ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকো তে এবং পরবর্তীতে লন্ডনের পিটার হেন্ড্রিকে করা হয়। জগতের সমস্ত বিষয়গুলো সহজ বোধ্য হয়ে যাবে যদি মহাচৈতন্যকে মহাবিশ্বের ভিত্তি হিসেবে ধরি।"

অর্থাৎ যাদুকরদের বিশ্বাস ও চর্চার ইন্টেনশনের বা মানুষের চেতনার শক্তি আছে এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও পরীক্ষীত সত্য! এই পদার্থবিদ বিজ্ঞানপ্রিয় জনসাধারণকে মনের ইচ্ছা বা চেতনাকে ব্যবহার করে ভাগ্য নির্ধারন - পরিবর্তন ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য উৎসাহিত করেন।তিনি শেখান বাস্তবতার কোনো কিছু পছন্দ অপছন্দ ইচ্ছামত নির্ধারনের দ্বারা কার্যসিদ্ধির কৌশল, অর্থাৎ সরাসরি যাদুচর্চার আহব্বান[৬৫]। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ! তিনি বলেন, "কোয়ান্টাম ফিজিক্স বলে পদার্থ হচ্ছে চেতনা কর্তৃক নির্বাচনের সম্ভাব্যতার তরঙ্গ। চৈতন্য বলতে আমাদের বোঝায়। পাথর পছন্দ করতে পারেনা,সেটা সচেতন নয়। কিন্তু আমরা নির্বাচন বা পছন্দ করতে পারি কারন আমরা সচেতন।আমরা যদি আমাদের বাস্তবতাকে ইচ্ছামত নির্বাচন করি তাহলে আমরা যা খুশি তাই নির্বাচন করতে পারব। কোয়ান্টাম ফিজিক্স কিভাবে নির্বাচন করার কথা বলে? কোয়ান্টাম ফিজিক্স আসলে কি বলে? কোয়ান্টাম  ফিজিক্স আমাদের যেটা বলে, আমরা চৈতন্যের এমন স্থান থেকে নির্বাচন করি যেখানে আমাদের সকলের অস্তিত্ব অভিন্ন, একক। যেখানে স্বকীয়তা ভিন্নতা বলে কিছু নেই।...হ্যা আমরা আমাদের বাস্তবতাকে নির্ধারন করি, কিন্তু আমরা সেটা নিজেদের ইগো থেকে নির্বাচন করিনা বরং আমরা চেতনার সেই গভীরতম স্থান থেকে (নিজেদের ভাগ্য)নির্ধারন করি বা নেই নির্বাচন করি যেখানে আমি আপনি ও প্রত্যেকেই একক অস্তিত্ব।..."

অন্যত্র বলেন, "আমরা সত্যিই আমাদের বাস্তবতার স্রষ্টা, এটা শুনতে যদিও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যপারে অজ্ঞ [যাদুশাস্ত্রের অনুসারী আধ্যাত্মিক সংগঠন] নিউএজারদের দাবির মত মনে হয়, মূলত কোয়ান্টাম মেকানিক্স এটাই বলে।....এই জগত চেতনা দ্বারা সৃষ্টি। এই পৃথিবী হচ্ছে চেতনা। চেতনা হচ্ছে গ্রাউন্ড, কোয়ান্টাম ফিজিক্স বিষয়টা দিবালোকের মত পরিষ্কারভাবে বলে।"

আরইজি মেশিন বা র‍্যান্ডম ইভেন্ট জেনারেটর একটি ইলেক্ট্রনিক মেশিন। এটা মানুষের ইন্টেনশনের প্রভাবকে প্রমাণ করে। নোয়েটিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষক Dean Radin বলেন, "একধরনের র‍্যান্ডম নাম্বার জেনারেটর এক্সপেরিমেন্ট যেটা ১৯৬০ সালের পর দিয়ে গত ৪০ বছরে অনেক অনেকবার করা হয়েছে প্রায় শতবার বা তারও বেশি। এই র‍্যান্ডম জেনারেটর এক ও শূণ্যের র‍্যান্ডম বিট তৈরি করে। আপনি কাউকে যদি একটি বাটন চেপে প্রায় ২০০ টি বিট তৈরি করতে বলেন এবং আবারো বললেন জিরো বিট বাদ দিয়ে আরো ১ বিট তৈরি করতে। এখন কথা হচ্ছে এত সব পরীক্ষায় কি সত্যিই কোন তাৎপর্য আছে যেখানে কেউ শূন্য বা এক বিট তৈরি করতে বলে।হ্যা তাৎপর্য আছে। যেকোনো ভাবে এই র‍্যান্ডম নাম্বার জেনারেটরের আউটপুট তৈরিতে মানুষের ইন্টেনশনের একটা ভূমিকা আছে। মানে আপনি যদি ১ তৈরি করতে বলেন, জেনারেটর কোনভাবে ১ জেনারেট করবে। "

পদার্থবিজ্ঞানীদের ব্যবিলনীয়ান অকাল্টিজমে প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে অন্য বিভাগের গবেষক বিজ্ঞানীরাও এ পথে এগিয়ে আসে। এমনই একজন হলেন William A. Tiller। তিনি Stanford University এর emeritus of materials science and engineering এর প্রফেসর। তিনিও ম্যাট্রিক্স ফিল্মের মত একইভাবে মানব চেতনা বা চিন্তা/অভিপ্রায়(ইন্টেনশন) দ্বারা প্রকৃতির নীতিকে পাল্টে ফেলার শিক্ষা দেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানীদের অনুরূপ বলেন আমরাই এই হলোগ্রাফিক মায়াজগতের[হলোডেক] পরিচালনাকারী স্রষ্টা। তিনি বলেন,"আমরাই এই হলোডেক(hollow deck) চালাচ্ছি। আমরাই কালেক্টিভভাবে সেখানে আছি। এর এমন ফ্লেক্সিবিলিটি আছে যে আপনি যাই কল্পনা করুন না কেন তাই এটা তৈরি করে ফেলবে। আপনি যখন যথেষ্ট পরিমাণে সচেতন হবেন, আপনার ইন্টেনশন যেকোন কিছুকে ম্যাটেরিয়ালাইজ করবে। অধিকাংশ লোকই রিয়ালিটিকে পাল্টে ফেলতে পারে না কারন তারা বিশ্বাস করে যে তারা এটা পারেনা।"




Noetic science Institute প্রধান বিজ্ঞানী ডন র‍্যাডিন যাদুবিদ্যা ও যাদুশাস্ত্রের উপর বিশদ গবেষণা করেন! তিনি ল্যাবে যাদুবিদ্যার অস্তিত্ব খুজে পান। তিনি বিভিন্ন শ্রেনীর যাদুর শাখা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন এবং পৃথিবীর সকল স্থানের যাদুকররা যেন একসুতোয় বোনা। শামান থেকে পিথাগোরাস, সকলের মতাদর্শ অভিন্ন। তিনি আসলে এত বিস্তারিত বলেছেন, যে আমার আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। মানুষের চেতনা বা অভিপ্রায় নির্ভর যাদুর  ব্যপারে তিনি উৎসাহিত করেন, তিনি যাদুচর্চায় স্পেল ক্যাস্টিং বা ইন্টেনশনের ঘাটতিজনিত কারনে বিফলতা নিয়েও বলেন এবং কিভাবে সফলভাবে সিহর বা যাদুচর্চা সম্ভব, সে উপায়ও বাতলে দেন!!তিনি বলেন, "আমরা আমাদের গবেষণা কেন্দ্রে মানুষের বিভিন্ন সাইকিক ফেনোমেনা, মিস্টিক্যাল অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা করি। আমরা ইইজি মেশিন দ্বারা ব্রেইন এ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করি। তো, আমি যে যাদুর ব্যপারে বলবো তা হ্যারি পর্টার বা হ্যারি হুদিনীর মত কোন কিছু নয়, সেসব ফিকশনাল বিষয় বরং আমি বলবো সত্যিকারের যাদুর বিষয়ে। সত্যিকারের যাদু তিনভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগকে বলব ভবিষ্যৎ গননা(ডিভিনেইশান), যেখানে মন দ্বারা স্থানকালের মধ্য দিয়ে কোন কিছু অনুভব করতে পারে। বস্তুবাদী চিন্তা দ্বারা আমরা জানি না এটা কিভাবে হয়। কিন্তু আইডিয়ালিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী(স্বাভাবিকভাবেই) এটা ঘটেই। সব বিষয় গুলো এরকমই। ২য় ক্যাটাগরিতে আছে 'ইচ্ছার শক্তি'। সায়েন্টিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এটাকে বলতে পারি, " mind matter interaction" বা সাইকোকেনেটিক ইফেক্ট। এর দ্বারা বোঝায় আপনার ইন্টেনশন বা ইচ্ছা শক্তি (কোনকিছুকে)পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম, এটা জিনিসগুলোকে ঘটায়। ৩য় ক্যাটাগরিতে আছা theurgy বা শয়তানকে আহব্বান। সিরিমোনিয়াল ম্যাজিকে শয়তানকে ব্যবহার করা হয় কোন কিছু করবার জন্য। আমি যাদুবিদ্যার প্রতি এজন্যই আগ্রহী হয়েছি যে অধিকাংশ সময়েই আমি বিভিন্ন প্যারাসাইকোলজিক্যাল ফেনোমেনা নিয়ে কাজ করেছি। এবং কিছু এসোটেরিক শাস্ত্র পাঠ করে বুঝতে পেরেছি যে আমরা যা নিয়ে ল্যাবে কাজ করি তাকেই যাদু বলে ডাকা হয়। ডিভিনেইশান হলো ক্ল্যারভয়েন্স বা প্রিকগনিশন। ইচ্ছার শক্তি হচ্ছে সাইকোকেনেটিক ইফেক্ট। থিউরজি হচ্ছে নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স বা মিডিয়ামশিপ। আমি যখন ৪০ বছর এসব নিয়ে কাজ করেছি তখন জানতামই না যে এগুলোই ট্রেডিশনাল ম্যাজিক! অনেক মানুষ আছে যারা যাদুবিদ্যার ব্যপারে খুবই আকর্ষিত হয় কিন্তু মোটেই পরোয়া করে না যে, যাদু কোন প্রক্রিয়ায় কাজ করে। তারা এমনকি এটাও ভাবে না যে এটার অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা, তারা শুধুই এটাকে ব্যবহার করতে চায়। আমরা ইতিহাসে দু ধরনের যাদু চর্চাকে দেখতে পাই, এক হচ্ছে লিখিত(মন্ত্র) যাদু, আরেকটি হচ্ছে সিজিল ম্যাজিক।এদুটাই খুব মৌলিক চর্চা যা গোটা ইতিহাস জুড়ে রয়েছে। কারন হয়ত এগুলো কিছু করতে সমর্থ। মানসিক দিক দিয়ে এটা এরকম যে আপনি যেটা হোক চাচ্ছেন, লিখে ফেলা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি আদৌ জগতে কোন পরিবর্তন আনে? এটাই আমরা আজ ল্যাবরেটরিতে দেখছি, সরাসরি যাদুটোনাই যে করা হচ্ছে এমন না বরং আমরা দেখছি শক্তিশালী অভিপ্রায় প্রক্ষেপণের কোন প্রভাব আছে কিনা। সিজিল ম্যাজিকও হচ্ছে লিখিত যাদুচর্চার প্রক্রিয়া ,কিন্তু এখানে পার্থক্য হলো এখানে কোন কিছু সরাসরি লেখা হয় না বরং আপনি এক্ষেত্রে কিছু প্রতীক তৈরি করলেন।যখন আপনার ওইসব প্রতীক তৈরি হয়ে যাবে এগুলো দেখা মাত্রই এর পেছনের ইন্টেনশন বা অভিপ্রায় মনে উঠবে। এখানে যে পদ্ধতিই ব্যবহার করা হোক না কেন ওই সিম্বলের মধ্যে আপনার সমগ্র ইন্টেনশনকে প্রক্ষেপ করতে হবে যাতে যেটা ঘটাতে চাচ্ছেন সেটা হয়। আমরা ল্যাবে ব্যপারটা দেখেছি, এখানে আপনি যতই ইন্টেনশনকে প্রক্ষেপ করুন না কেন ততক্ষন পর্যন্ত কাজ হবে না যতক্ষন না এই ইন্টেনশানকে রিলিজ করা হবে। তো সিজিল ম্যাজিকে যেটা করা হয়, আপনি সিম্বল তৈরি করে তাতে আপনার চরম অভিপ্রায় বা মনোবাসনা তাতে চালিত করেন এরপর প্রতীকটিকে আগুনে পুড়িয়ে দেন বা পানিতে ড্রয়ারে রাখেন, মোট কথা এটাকে দূরে সরিয়ে দেন। সুতরাং আপনি আপনার অভিপ্রায়কে যেটা করবার সেটা করতে দেন। তো, একটা জনপ্রিয় ধারনা প্রচলিত আছে যে আপনি আপনার বাস্তবতা তৈরি করেন[You create your own reality]।
মানে আপনার ধারনা ম্যানিফেস্ট করবে। এখান থেকেই এ্যাফারমেশনের ধারনা এসেছে। এটা পজেটিভ সাইকোলজির সাথেও যুক্ত। এই ধরনের চিন্তাধারা ও চর্চা খুজলে পাবেন এগুলো মূলত শামানদের থেকে এসেছে।এটা একটা Esoteric tradition এর অংশ। এবার ধরুন অনেকে বলবে আমি বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক চাচ্ছি কিংবা হাতে বিরাট স্বর্ণের স্তুপ চাচ্ছি। কিন্তু এটা তো হচ্ছে না।এখানে আমার ব্যাখ্যা হচ্ছে এটা ঘটছে আমাদের সচেতন মনের লেভেলে। সকল ঘটনা ঘটায় আরো গভীরতম লেভেলের চেতনা। এটাকে উদাহরণস্বরূপ বোঝাতে ধরা যায় সমুদ্রে ভাসমান বরফের পাহাড়ের উপরিভাগের সাথে। বরফের মাথাটি পানির উপর আপনি খুব সহজেই দেখছেন। কিন্তু এর সিংহভাগই পানির নিচে আছে, এখানেই কার্য বা ঘটনা সম্পাদিত হয়। আমি একটি মার্সেডিস চাইলেই পাচ্ছি না কারন আমাদের সাব-কনশাস এবং সচেতন মন একই সাথে চায় না, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় উভয় শ্রেনীর মনের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে। যেমন ধরুন কুকি খাওয়া ভাল না; এটা আপনি জানেন কিন্তু আপনিই আপনার অন্যহাত দিয়ে কুকি মুখে নিয়ে খেয়ে ফেলছেন।এভাবেই অচেতন মন সচেতন মনের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে। এইজন্যই ধ্যান করা শুধু দেহমনের জন্যই ভাল নয়, যাদুচর্চার জন্যও অত্যাবশকীয়। যোগীরা হয়ত গভীর ধাপের ধ্যানকে সমাধি বলে অন্যদিকে যাদুকররা বলে নোসিস(Gnosis)। এটা সকল মাজহাবের যাদুকররা বলবে আপনাকে যাদুচর্চার কাজ গুলো নোসিসের স্তর থেকে করতে হবে। অধিকাংশ মানুষই অত গভীর পর্যায় পর্যন্ত যায় না, আজকের জগতে মানুষের মনযোগ ওই পর্যায় থেকে সরিয়ে নেয় অথচ এটাই(নোসিস) খুব প্রয়োজনীয়। এস্ট্রলজি, আলকেমি, হার্বালিজম ছিল প্রোটো সায়েন্স। প্রত্যেক জ্যোতিষী ও আলকেমিস্ট ইন্টেনশন বা মনের শক্তির গুরুত্বের ব্যপারে জানতেন।এখন যেটা হচ্ছে যে, বিজ্ঞান ধীর গতিতে পরিপক্ক হয়ে চেতনা ও অভিপ্রায়কে প্রাচীন জ্যোতিষী ও আলকেমিস্টদের মত গুরুত্বের আসনে বসাতে শুরু করেছেন। আমি বাতেনি মতাদর্শগুলো যেমনঃ শামানিজম থেকে পিথাগোরাস, পূর্বাঞ্চলীয়(ভারতীয় বেদান্তবাদ) এবং আজকের সময় পর্যন্ত বিস্তারিত দেখেছি।আপনি চিন্তাধারাগুলোর একই সুতোর বুননের অনুরূপ সাদৃশ্য খুজে পাবেন। এবং তারা সকলেই বলে যে, রিয়ালিটির(বাস্তবতা) অধিকতর ভাল ব্যাখ্যা হচ্ছে  আইডিয়ালিজম, সবকিছুই চেতনা বা মন থেকে উদ্ভূত।"

আজ পদার্থবিজ্ঞান মিশর-বাবেল শহরের যাদুশাস্ত্র উদ্ভূত  পিথাগোরাস-প্লেটো-শামানদের আইডিয়ালিস্টিক সর্বচৈতন্যবাদে ফিরে গেছে। ডিন র‍্যাডিন সঠিক বলেছেন, "এখন যেটা হচ্ছে যে, বিজ্ঞান ধীর গতিতে পরিপক্ক হয়ে চেতনা ও অভিপ্রায়কে প্রাচীন জ্যোতিষী ও আলকেমিস্টদের মত গুরুত্বের আসনে বসাতে শুরু করেছেন।" সেই ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক থেকে শ্রোডিঞ্জার। আরসি হেনরি থেকে উল্ফগ্যাং পাওলি এরা সকলেই "বিজ্ঞানী" শব্দের আড়ালে থাকা অভিশপ্ত যাদুকর। এরা যে বিদ্যা শিখিয়েছে, সেটা অপবিদ্যা। এসব অকাল্ট এসোটেরিক ফিলসফি, মিস্টিসিজম। তারা আজ সফলভাবে যাদুচর্চার উপায় পদ্ধতিও শেখাচ্ছে! আজ মিচিও কাকুর মত পদার্থবিজ্ঞানীরা বেদান্তবাদী হিন্দু সাধগুরুর সাথে সাক্ষাৎকারে যাচ্ছেন।ডার্ক ম্যাটার নিয়ে বৈদিক শিক্ষা দেন[৪৪]। অকাল্ট তার তার দৃষ্টিতে প্রযুক্তির মত বিদ্যা যা দ্বারা উপকারী কাজ বা ভাল কাজ উভয়ই করা যায়! তার মতে অকাল্ট দ্বারা উপকারী বা ভাল কিছু করা উচিত[৪৫]। যাইহোক,রিলেটিভিটিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিপ্লবের পর থেকে গুগলের টেডএক্স এ যাদুশাস্ত্র এবং কোয়ান্টাম মিস্টিসিজমকে প্রমোট করা ব্যাপক আকারে বেড়ে যায়।TEDx এ ণুশা নিজের পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে তার ডাক্তারি পেশা ফেলে বেদান্তশাস্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গেরুয়া পোশাক ধারন করে যোগী হবার গল্প শোনান।তিনিও মহাচৈতন্যের শিক্ষা দেন[৪৩]। এ্যাডাম মার্ফি তো টেডএক্সে সরাসরিই কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে যাদুবিদ্যা বলে অভিহিত করলেন[৪৭]। এ অবস্থা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সেদিন দেখলাম একলোক সিজিল ম্যাজিক শিক্ষা দিচ্ছে টেডএক্সের প্রেজেন্টেশন লেকচারে[৪৮]। ২০০৪ এর দিকে বিভিন্ন শ্রেনীর একদল বিজ্ঞানীরা মিলে এক বিশাল ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণ করা হলো What the bleep do we know নামে। পদার্থবিদ্যা,প্যাগান সর্বেশ্বরবাদী আধ্যাত্মবাদ মিলিয়ে একাকার করে দেওয়া হয়। সেটা অনেক পুরস্কার লাভ করে। এতে এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের ভূমিকায় অভিনয় করে বাকপ্রতিবন্ধী ম্যাটলিন। এতে আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটিকে প্রমাণ করা হয়। এতে একটা দৃশ্যতে দেখানো হয় এক শিশু অভিনেতা ম্যাটলিনকে তার যাদুর খেলার কোটে খেলবার জন্য আহবান করে। সে সুপারপজিশন, ননলোকালিটির কিছু বিষয় ব্যবহার করে অতিপ্রাকৃতিক খেল দেখায় এবং ব্যাখ্যা করে যে, সে "ডঃ কোয়ান্টাম কমিক্স থেকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিষয় শিখে নিজের খেলার কোটে যাদু করে"[৪৯]।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যাদুকরী নীতিসমূহ পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছেও রহস্যময় এবং অনেকক্ষেত্রে ব্যাখ্যাতীত। সার্নের জন স্টুয়ার্ট বেল কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গলমেন্টের ব্যপারে এমনটিই বলেছিলেন, "এটা একটা দ্বিধাময় বিষয়,আমাদের কাছে এটা বোঝাতে এর চেয়ে ভাল কোন উপায় নেই।..এটা এমন যে মনে হয় কেউ আমাদের সাথে চালাকি করে খেলছে।" এবার একবার ভাবুন, বেদান্তশাস্ত্র উদ্ভূত এই বিদ্যা যদি ত্রিমাত্রিক জগতের মেকানিক্যাল বা ডিজিটাল যন্ত্রে প্রয়োগ করা হয়,কেমন হবে! অর্থাৎ যাদুবিদ্যার তাত্ত্বিক নীতিকে প্রয়োগ করে প্রযুক্তিতে রূপান্তর চেষ্টা।জ্বি পাঠক,কম্পিউটার প্রযুক্তিতে এই কাজটিই এখন করা হচ্ছে 'কোয়ান্টাম কম্পিউটার' নাম দিয়ে। কোয়ান্টাম প্রসেসর নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে আরো বহু বছর আগে থেকে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি মেনে কাজ করায় এটা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির কম্পিউটার। কোয়ান্টাম পার্টিকেল ফিজিক্স অনুযায়ী কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে সবকিছু ননলোকাল অবস্থায় থাকে। সবই অদ্বৈত অস্তিত্বের একক সমুদ্র। যদি মহাজাগতিক মহাচৈতন্য কম্পিউটারের ক্যালকুলেশন ও প্রসেসিং এ পর্যবেক্ষক হিসেবে দাড়ায়, তবে এর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছুই হয়না।কম্পিউটার বাইনারি বিট ০ বা ১ উপর কাজ করে,কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিই ভিন্ন।এখানে জিরো বা এক বিট একসাথে ননলোকাল অবস্থায় ধরা হয়। এই বিটের নাম দেয়া হয়েছে কিউবিট। এই কিউবিট প্রয়োজন মত ১ বা ০ হয়ে কাজ করে। সর্বপ্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান D-ওয়েভ।এছাড়াও আছে আইবিএম এর IBM-Q। কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুলোতে ইলেক্ট্রনের বদলে ব্যবহৃত হবে ফোটন।এজন্য এটা ইলেকট্রনিকস নয় বরং ফোটনিক্স। নিলস বোর ইন্সটিটিউটের পদার্থবিদ Petar Lodahl কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডেভেলপে গবেষণা করছেন।তিনি
বলেন, "কম্পিউটার গুলো দিন দিন উন্নততর হচ্ছে। আমরা জানি বর্তমানের কম্পিউটার গুলোয় একটা বড় সীমাবদ্ধতা আছে,সেটা যেকোন গননা একটি সময়ে করে। এ সমস্যা দূর করতে আমরা নিলস বোর ইন্সটিটিউটে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোয়ান্টাম চিপ ডেভেলপের চেষ্টা করছি যেটা ইলেক্ট্রনের বদলে আলোর ফোটন কণা ব্যবহার করবে। এটা ইলেক্ট্রনিক্স নয় বরং ফোটনিক্স। আমরা কোয়ান্টাম জগতের অদ্ভুত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি।" এ কথাগুলো তাদের দেয়া এক অফিশিয়াল ভিডিও বার্তায় বলেন।[৫০]
মজার বিষয় হচ্ছে, ভিডিওর ট্রাঞ্জিশনে হিন্দুদের স্বস্তিকা প্রতীকটি হাজির হয়[ছবি ডানে]। অর্থাৎ ওদের গবেষণা Pure Occult! বেদান্তশাস্ত্রের অনুসরণে যে তারা গবেষণা চালাচ্ছে, সেটা সার্নের পার্টিকেল এক্সিলারেটরের সামনে শিবমূর্তি স্থাপনের অনুরূপ স্বস্তিকা প্রতীকের দ্বারা জানিয়ে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, নাৎসি এডলফ হিটলারও বৈদিক অকাল্ট চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েই আর্য সুপ্রিমেসির আদর্শ ধারন করে, তারাও এই অকাল্ট প্রতীককে ব্যবহার করেছে। যাইহোক, নিলসবোর উপনিষদপ্রেমী ছিলেন। তিনি যেকোন প্রশ্নের উত্তর পেতে উপনিষদের কাছে যেতেন।
তার নামের এই ইন্সটিটিউটে খুব স্বাভাবিকভাবেই বৈদিক-উপনিষেদিক চিন্তাধারাকেন্দ্রিক গবেষণা হবে,এটাই স্বাভাবিক। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্মানেও বৈদিক কস্মিক ননডুয়াল কনসাসনেসের ধারনাটি গুরুত্বপূর্ন। সীমাহীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারণে বেদান্তবাদের মহাচৈতন্যের পর্যবেক্ষণ জরুরি। এজন্য আজ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে যারা কাজ করছে এরা সবাই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং ননডুয়াল ফিলসফির দিকে ঝুঁকছে। "সায়েন্স এন্ড ননডুয়ালিটি" নামের একটা পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা সংগঠন খুব আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন "ননডুয়ালিটি" বা অদ্বৈত বেদান্তবাদী চিন্তা ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরিসহ প্রতিষ্ঠায় [৪৬]। সম্ভবত এ কারনেই আর্থার সি.ক্লার্ক বলেছেন, "পর্যাপ্তভাবে চরমউন্নত প্রযুক্তি যাদুর থেকে পার্থক্যহীন"


[আমরা সমস্ত প্রযুক্তিকে যাদু বা সিহরের অন্তর্ভুক্ত বলি না বরং শুধুমাত্র সেসব যেগুলো যাদুবিদ্যার নীতির অনুসরণে তৈরি করা হয়েছে,যেগুলোর কার্যনীতির মূল রহস্যের ব্যপারে এর নির্মাতাও নিশ্চিতভাবে জানে না।আপনারা দেখেছেন কোয়ান্টাম ফিজিসিস্টদের কাছেই বিষয়গুলো ধোয়াশাচ্ছন্ন। অন্যদিকে যেসব প্রযুক্তি যাদুশাস্ত্রের অনুসরনে নির্মাণ করা হয়নি এবং যার কার্যনীতি মানবীয় বুদ্ধির আওতাধীন সেসব প্রযুক্তি, হোক তা ডিজিটাল বা মেকানিক্যাল, সিহর বা যাদুর আওতাধীন মনে করিনা। আর্থার সি.ক্লার্ক বলেন,"যাদু হচ্ছে এমন বিজ্ঞান যা আমরা এখনো বুঝিনা।" এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করবার উদ্দেশ্য এই যে, একদল লোক আমার এসকল তৈরি ডকুমেন্টস এর উপর ভিত্তি করে ভিডিওই নির্মাণ করে ফেলছে, যাতে সরাসরি সকল প্রযুক্তিকে যাদুর আওতায় ফেলছে। এটা সুনিশ্চিতভাবে বাড়াবাড়ি।]


যাদুবিদ্যা শুধু মাত্র পদার্থবিজ্ঞানীদেরই নয়, নিউরোসায়েন্টিস্টদেরকেও প্রলুব্ধ করেছে। তারাও আলকেমিক্যাল প্রাক্টিসের মূল রহস্য উদঘাটনে সময় ব্যয় করছেন। সাধারনত ট্রান্সহিউম্যানিস্টিক এজেন্ডা নিউরোসায়েন্সে অকাল্ট রিসার্চের দিকে নিয়ে গিয়েছে। তারাও মহাচৈতন্যের দিকে হেটেছেন। তারাও বিশ্বাস করতেন গভীর চৈতন্যের স্তরে মানুষই সৃষ্টিকর্তার ভূমিকায় সৃষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়।নিউরোসায়েন্টিস্ট ফিলিপ এ্যাশলি ফ্যানি তার বই, "Isaac Newton and transmutation of alchemy :
an alternate view of Scientific Revolution" বলেন,"আলকেমি হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া আছে যার দ্বারা চূড়ান্ত সত্যের অন্বেষণ করা হয়, এবং এটা সম্ভবত কাজ করে,অন্তত সৌভাগ্যবান সামান্য কিছুলোকের ক্ষেত্রে।এই প্রাচীন বিজ্ঞান চর্চাকারীদেরকে সৃষ্টিজগতের গভীর স্ট্রাকচারগুলোর মধ্যে প্রবেশ করে বাস্তবজগতের সৃষ্টি ক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পথ করে দেয়।"
তিনি ফিলসফার্স স্টোনের ব্যপারে বলেনঃ "তথাকথিত লোহার ঔষধ ঐ পাথর লেড ও টিনের অসুখ নিরাময়ে ভাল ওষুধ যা এদেরকে আরো পার্ফেক্ট লৌহ যথাঃ রূপা ও স্বর্ণে রূপান্তর করতে পারে। একই ভাবে একে জীবনের অমৃতসুধা হিসেবে দেখা হয় যা মানুষের  অসুস্থতা দূর করে মৃতুকে আটকে দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই পাথর মানুষকে ওই দৈবিক আত্মার সাথে একাত্ম হতে সাহায্য করে যা মহাবিশ্বের সর্বত্র ছেয়ে আছে। এটা এমন এক প্রক্রিয়ায়, যার দ্বারা তাকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দান করে যাকে (তখন) যাদুকর বলা হয়।আলকেমিস্টরা এ দার্শনিকদের পাথরকে সমস্ত জ্ঞানের চাবিকাঠি হিসেবে দেখে।"

কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট ডক্টর ফ্রেড এ্যালান ওল্ফ[পিএইচডি] তার 'mind into matter:A new alchemy of science and spirit' বইয়ে উল্লেখ করেনঃ"অধিকাংশ আধুনিক অভিধানগুলো আলকেমিকে রসায়নতত্ত্বের অপেশাদার, পরীক্ষামূলক ও অনুমানকেন্দ্রিক অগ্রদূত স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে।যদিও কেমিস্ট্রি আলকেমি থেকেই উদ্ভূত, উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্যতা এখন কম।যেখানে কেমিস্ট্রি বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাইযোগ্য বাস্তব ঘটনা নিয়ে কাজ করে, সেখানে আলকেমির রহস্যময় তত্ত্ব অনুসন্ধান করে গুপ্ত অস্পৃশ্য উচ্চতর বাস্তব জগতের গঠন নিয়ে, এই রিয়ালিটিকে অনুধাবন করাই আলকেমিস্টদের লক্ষ্য। একে তারা বলে ম্যাগ্নাম ওপাস যার অর্থ 'বিশাল কর্ম', পূর্নাঙ্গ অনুধাবন।"


আলকেমিস্টদের এই প্রাচীন লক্ষ্য আবারো আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান নতুন করে স্থান দিতে শুরু করেছে।শুরু হয় সর্বচৈতন্যবাদি পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ও বেদান্তবাদি শ্রোডিঞ্জারের মাধ্যমে। আজ পদার্থ বিজ্ঞান ফিরে গেছে সেই প্রাচীন বাবেল শহরের [যাদুশাস্ত্র]কাব্বালায়। তারা ফিরে গেছে ইহুদী কাব্বালিস্টদের কাছে। ২০০৪ সালে হঠাৎ একঝাঁক পদার্থবিজ্ঞানী ও নিউরোসায়েন্টিস্ট ইসরাইলের সবচেয়ে বড় কাব্বালাহ একাডেমি Bnei Baruch কাব্বালাহ একাডেমি প্রধান কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈ Michael Laitman এর কাছে।এটাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কাব্বালাহ একাডেমি।  [অপ]বিজ্ঞানীগন সেখানে এই কাব্বালিস্টদের প্রধান র‍্যাবাঈয়ের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন। মিকাঈল লেইটম্যান বিজ্ঞানীদেরকে কাব্বালার সাজারাতুল খুলদের ব্যপারে বোঝাচ্ছিলেন। তিনি হোয়াইটবোর্ডে বিভিন্ন প্রতীক ও জ্যামিতিক ছকে বোঝাচ্ছিলেন। বিজ্ঞানীদের অনেকের কাছে বেশ কঠিন মনে হচ্ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন বৈঠকে তারা অবশেষে বুঝতে পারে কাব্বালাহ অত্যন্ত উঁচুমানের বিজ্ঞান। তারা একত্রে বিশাল সভা-সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট ডক্টর ফ্রেডএ্যালান ওল্ফ। তিনি বলেই ফেললেনঃ"আমি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করি এবং এই ব্যপারে জানি। কিন্তু কথা হলো, কাব্বালাহ হচ্ছে একটা বিজ্ঞান যা আমার কাছে আসে নি। আমি পরোয়া করিনা আপনি কি করছেন, এটাতে একটা চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্র আছে যা যেকোন কিছুকে উন্নত করতে সক্ষম।আমি পরোয়া করিনা,আপনি একজন ইহুদি, মুসলিম কিংবা অইহুদি যা-ই হন না কেন,আপনি যে জাতীয়তাই ধারন করেন না কেন, যে ধর্মেরই হন না কেন ; কাব্বালাহ আপনার মনের  সব ধরনের সংকীর্ণ চিন্তাধারা থেকে স্বাধীন করে আনবে,যেটা আপনাকে ছোট সীমাবদ্ধ সংকীর্ণ দৃষ্টি ভঙ্গির মধ্যে আটকে রাখে।আমার এ কথাগুলো হয়ত আপনাকে জাগ্রত করবে। আর যদি না হয় তবে আমি বলব আপনি হয়ত এখনো ঘুমিয়ে আছেন।"[৫১]

সুতরাং, কাব্বালাহ হচ্ছে বিজ্ঞান!! শুধু তাই না,এটা আপনাকে সব ধরনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করবে!কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈ লেইটম্যান কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানীদের কাব্বালিস্টদের অনুরূপ উপলব্ধিতে ফেরার কথা বলেন। তিনি কোয়ান্টাম ফিলসফির অনুরূপ  এক্সট্রিম আইডিয়ালিজমের কথা বলেন এবং কাব্বালাহ ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে একাকার করে বলেন যে,কোয়ান্টাম বিজ্ঞান কাব্বালারই ছোট একটা অংশ, কাব্বালার জ্ঞান আরো উচুমানের। এই জ্ঞান শুধুমাত্র কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর নির্ভর করে পাওয়া সম্ভব নয়,এটা পেতে কাব্বালার কাছেই আসতে হবে।তিনি বলেন,"তারা[পদার্থবিদ] একটি ভাল উদাহরণ দিয়েছে। তারা বলে, একজন রেড ইন্ডিয়ান সমুদ্র তীরে দাড়িয়ে আছে, সে সমুদ্রের দিকে চেয়ে ছিল, তখনই কলম্বাসের জাহাজ তীরে ভেড়ে। কিন্তু ওই ইন্ডিয়ান জাহাজটিকে দেখতে পায় না। সে কেন সেটাকে দেখেনি? না দেখার কারন সে কখনো এত বড় কাঠামোকে সমুদ্রে ভাসতে দেখেনি। তারা এখানে ভুল করেছে,কারন জাহাজটিরও অস্তিত্ব নেই। এটা শুধুই কল্পনা, যারা কল্পনা করে তাদের। এই জগতেরও অস্তিত্ব নেই।আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, আপনার নিজের জাহাজ যদি না থাকে, আপনি বাইরের অন্য জাহাজগুলোর খবর নিতে পারবেন না।আমি যদি না জানি বাইরে কি আছে, আমার প্রয়োজন হবে যেন কেউ আমাকে বাইরের অবস্থা সম্পর্কে বলে।এছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। এজন্যই কাব্বালিস্ট ঋষিগন আমাদের জন্য কিতাব লেখেন। এই কিতাব গুলো অনুসরণ করে আপনি কল্পনা করতে শুরু করেন বাহিরে কি আছে তার ব্যপারে। ওই কল্পনা থেকে আপনি আপনার মনে একরকমের প্যাটার্ন আঁকতে শুরু করেন। আপনি জানেন এগুলো প্রথমাবস্থায় শুদ্ধ নয় কিন্তু ধীরে ধীরে ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা প্রবলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনি এর আসল আকৃতি বুঝতে শুরু করেন। এরপরে আপনি আপনি এমন এক পর্যায়ে পৌছান যে আপনি দেখতে শুরু করেন। আলো এই জাহাজের মধ্যে সৃষ্টি। কল্পনা করুন, একজন গুহামানব সিনেমার মত করে হঠাৎ করে আমাদের আধুনিক জগতে চলে আসলো। সে এসে চারপাশ দেখতে থাকলো এবং বিচরণ করতে শুরু করলো, কিন্তু সে আসলে (আধুনিক সভ্যতার দালানকোঠা,নির্মাণের) কিছুই দেখতে পারবে না। সে কি এবার দেয়াল ভেদ করে হেটে যেতে পারবে? হ্যা সে পারবে।তার এ ব্যপারে কোন ধারনাই নেই সুতরাং তার জন্য সেসবের অস্তিত্বই নেই। তার জন্য কোন পদার্থ নেই। তার জন্য কোন বস্তুই আকার ধারন করেনা। ব্যপারটা এরকমই সহজবোধ্য। আমরা যদি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসি, তবে ওই সত্য দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরে আসব যেটা কাব্বালিস্টরা আমাদেরকে বলে, যেটা আমাদের কাছে খুব অদ্ভুত লাগে। ওই বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন, তারাও কেন একই অনুধাবনে পৌছেছেন। কারন তারা এমন এক জগতে পৌছেছেন যেখানে সব নীতিগুলো খুবই অদ্ভুত। হঠাৎ একই জিনিস দুই স্থানে থাকতে পারে। স্থানকালের চলাচল অন্য আকৃতিতে হতে পারে। তারাও (কাব্বালিস্টদের ন্যায়) একই চিন্তায় উপনীত হয়েছেন। সবকিছুই যে অনুভব(পর্যবেক্ষণ) করে তার উপর নির্ভর করে।তাই কোন দেয়াল ভেদ করে যাওয়া বা না যাওয়া আমার উপর নির্ভর করে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রয়েছে। সবকিছুই আমার উপরে, এর মানে আমার জাহাজ(শরীর অর্থে) অনুযায়ী হ্যা বা না। আমরা এ জগতে ৫টি ভেসল নিয়ে জন্মাই,এবং এগুলো আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্মে উন্নয়ন ঘটাই, তো একটি শিশু জন্মের পর থেকেই তার পরিবেশ সম্পর্কে ধারনা নেয়।একমাত্র সে-ই তার জগতকে ধারন করে এবং প্রভাব ফেলে। এটা ছাড়া অন্য সকল পদার্থ ও আকৃতি তার কাছে অবস্তুগত অস্তিত্বহীন। এই পঞ্চেন্দ্রিয়ই আমাদেরকে সব জিনিসকে দেয়। আমরা কি কোয়ান্টাম ফিজিক্সকে ব্যবহার করে কাব্বালার জ্ঞানের কাছে পৌছাতে পারব? জ্বিনা, তাহলে আভ্রাহাম আভিনু(Ph.D) কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে প্রথমেই ঘাটাঘাটি করতেন। তারা ভালবাসা এবং একক অস্তিত্বের(ওয়াহদাতুল উজুদ) কথা বলে। কারন তারা এই ফর্ম বা আকৃতির প্রতি একরকমের মুভমেন্ট অনুভব করে।কিন্তু আপনি একে কিভাবে ব্যবহার করবেন?  কোয়ান্টাম ফিজিক্স এটা আপনাকে বলে না।কারন এটা হচ্ছে উচ্চতর উর্দ্ধমুখী শক্তি।ধরুন এখানে দেয়ালে একটি ত্রিমাত্রিক ছবি দেখছেন এবার আপনি চোখ সরিয়ে আবারও ছবির মধ্যে নিজেকে আবিষ্ট করলেন এবং বাস্তব ত্রিমাত্রিক ছবি পেলেন। কাব্বালার জ্ঞান যেটা করে যে, এটা ছবিটিকে পেতে সাহায্য করে, এটা নতুন কিছু করেনা, এটা আপনার মনোযোগ, অ্যাট্রিবিউট এমনভাবে ব্যবহার করা শেখায় যে আপনি তাকে (বাস্তব) পদার্থে দেখতে শুরু করেন।"

কাব্বালিস্টদের সাথে ইজরাইলে হওয়া বিজ্ঞানীদের সভা সেমিনারের পরে তারা পরস্পর প্রীতিডোরে একে অপরকে আলিঙ্গন করে বিজ্ঞান ও কাব্বালার এ অসাধারণ মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত তৈরি করে।ডান পাশে দেখতে পাচ্ছেন, যাদুশাস্ত্র কাব্বালার অনুসারীদের প্রধান র‍্যাবাঈ মিকাঈল লেইটম্যানের সাথে কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট ডক্টর ফ্রেডএ্যালান ওল্ফের মৈত্রী ও ভালবাসার এক অনন্য আলোকচিত্র। এভাবেই বিজ্ঞান ফিরে গেছে ব্যবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্র কাব্বালায়। আজ এটাই বিজ্ঞান! আপনারা দেখেছেন, কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর মূল অরিজিন্স বেদান্তশাস্ত্র , এই বৈদিক শাস্ত্রের গোড়া ব্যবিলনীয়ান কাব্বালাহর সাথেই মিলবে।আজকের কোয়ান্টাম ফিজিক্স সে হিসেবে মূলত কাব্বালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পূর্ণ করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। লেখক পিটার গুড চাইল্ড বলেন,"এমনকি আজও ওই আবিষ্কারের প্রসেসগুলো চলছে। আমরা ক্লিয়ারলি দেখতে পাই না যে কাব্বালার জোহারের শিক্ষা হলো, মৃত্যু বলে কোন কিছু নেই। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় দেখলেন একটি প্রানী রাস্তার মধ্যে দৌড়ে যাবার সময় দুর্ঘটনায় মারা যায়, যেটা দুঃখজনক। কিন্তু কাব্বালার আসল শিক্ষা হলো, ওই প্রানীর দেহ পরমাণুর সমন্বয়ে সৃষ্টি, যেটা কাব্বালিস্টিক কিতাবাদিতে লেখা আছে। পরমাণু হচ্ছে আলোর ছোট ছোট বিন্দুর মত পদার্থ, যেমনটা ওই শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। এগুলো এমন পার্টিকেল যা আপনি আপনার চোখে দেখেন না কিন্তু এরা এই প্রকৃতির বিল্ডিং ব্লক,সমস্ত মহাবিশ্ব এর দ্বারা তৈরি । এখন এই মৃত প্রানীর দেহ এটমের তৈরি যাতে এনার্জি আছে।তো, কাব্বালিস্টিক শাস্ত্র পার্টিকেল থিওরির দিকে বিষয় গুলো নিয়ে আসে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কাব্বালার ওরাল ট্রেডিশন যেটা দাদা থেকে বাবা, বাবা থেকে পুত্র বা কন্যা লাভ করে, আমি দেখছি নিউক্লিয়ার  ফিজিক্সের একটা ভার্সন সেন্ট্রাল ইস্টার্ন ইউরোপে খুবই শক্তিশালী, যেখান থেকে সকল নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট এসেছে। নিলস বোর,জিলার্ড,এলবার্ট আইন্সটাইন, ওপেনহেইমার, এ্যাডওয়ার্ড টেলার, আপনি যদি এদের পারিবারিক ইতিহাস দেখেন, দেখবেন এরা সবাই সেন্ট্রাল ইস্টার্ন ইউরোপ থেকে এসেছে, যেখানে ভৌগোলিক ভাবে কাব্বালার ওরাল ট্রেডিশন ইউরোপে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।দ্য রিয়েল ডক্টর স্ট্রেঞ্জ লাভ নামে নতুন বই লিখেছি যেটা কাল বের হবে নামে।এটায় দেখানো হয়েছে কাব্বালাকে বর্তমানে কোয়ান্টাম থিওরিতে লেখা হয়েছে। কোয়ান্টাম থিওরিতে দেখানো হয় কোয়ার্ক, নিউট্রিনো এবং সবধরনের এক্সটিক পার্টিকেল আলোর তিনভাগের দুইভাগ গতিতে সঞ্চালন করে, যেটা পার্টিকেল এক্সিলারেটরে আবিষ্কার হয়েছে। আপনি যদি কাব্বালার ব্যপারে জ্ঞান রাখেন, এলবার্ট আইনস্টাইন, এডওয়ার্ড টেলার অবশ্যই কাব্বালার ব্যপারে জানতো। আপনি দেখে মনে হবে কোয়ান্টাম ফিজিক্সকে কাব্বালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে তৈরি করা হয়েছে।"

আমেরিকান থিওরেটিকাল ফিজিসিস্ট ফ্রেড এ্যালান ওল্ফ সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ করতেন। পাশাপাশি টেলিভিশনে বিভিন্ন সায়েন্টিফিক ডকুমেন্টারিতে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন বার্ক্লে ফান্ডামেন্টাল ফিজিক গ্রুপের একজন সদস্য যাদের অবদানের কথা ডেভিড কায়সারের মুখে শুনেছেন।জনাব এ্যালান উল্ফকে ডিস্কোভারি চ্যানেলের পিবিএস ডকুমেন্টারি ক্লোজার টু ট্রুথ সিরিজের 'নো দ্য জোন' এ পদার্থবিজ্ঞানীর ভূমিকায় উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া 'Dalai lama Renaissance' ডকুমেন্টারিতেও কাজ করেন। তিনি ডক্টর/ক্যাপ্টেন কোয়ান্টামের আড়ালে কাজ করে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বংশগতভাবে এই পদার্থবিদ মূলত একজন ইহুদী। এজন্যই কাব্বালার প্রতি এত অবসেশন। তিনি সর্বচৈতন্যবাদের(প্যানসাইকিজম/প্যান্থেইজম) প্রচার করতেন। তিনি ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর অনুরূপ সবকিছুর পেছনে একক কোয়ান্টাম মাইন্ডের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি বলেন,"মন বলে কিছু একটা আছে, কিন্তু স্থানকেন্দ্রিক কিছু নয়।এটা এমন কিছু নয় যে স্থানকালের ভেতর নয়, আমার আপনার মাথার মধ্যে নয়। বরং এটা আছে স্থান কালের বাহিরে। এটা অনেকটা এরকম যে আমরা কিছু লোক এ রুমের মধ্যে আছি, আর কেউ একজন আমাদেরকে বাহিরে থেকে দেখছে। এবং আমরা যা যা বলছি তা ঘটাচ্ছে। কিন্তু আমরা তার ব্যপারে সচেতন নই। আপনি ব্যপারটা বুঝতেছেন তো, বাহিরে একটা মন(চৈতন্য) আছে যেটা আমাদের মনে হয় যে সেটা, আমার মন, আপনার মন, তার মন, সবার মন। আমরা যদি মহাবিশ্বকে একক মন(চৈতন্য) হিসেবে ধরি তাহলে মনের সকল একাধিকতা যেমনটা আমাদের ব্রেইনকে মনে করি সেটা আসলে একরকমের মায়া। মূলত শুধুমাত্র একক মনের অস্তিত্ব আছে।"[৫২]


সর্বচৈতন্যবাদের ব্যপারে বলতে গিয়ে তিনি হিপি-মিস্টিকদের ড্রাগ গ্রহন করে চেতনার ওপারের রেফারেন্স দিতে ভুল করেন নি।তিনি বলেন,"আপনি যে চেয়ারে বসে আছেন সেটাও আপনাকে অনুভব করছে তার নিজের মত করে। চৈতন্য সবকিছুতে বিদ্যমান।আপনি শুধু এটাকে মানুষের মাথার মধ্যে রাখতে পারেন নাহ, এটা সর্বত্র ছেয়ে আছে।এটা যদি হিগস ফিল্ড হয় তবে তা সর্বময় রয়েছে। যারা আউটার বডি এক্সপেরিয়েন্স কিংবা LSD(সাইকাডেলিক ড্রাগ নিয়ে অল্টার্ড স্টেইট অব কনসাসনেস) সেবন করেছে তারা এ অভিজ্ঞতা লাভ করেছে যে চেতনা সবকিছুর মধ্যেই আছে। বড় বড় ঋষিগনও একই অভিজ্ঞতা লাভ করেন, Zhuang Zhou ঘুম থেকে উঠে স্বপ্নে নিজেকে প্রজাপতি রূপে দেখে নিজের আসল অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করেন।নেটিভ আমেরিকান ইন্ডিয়ানরাও এই অভিজ্ঞতার ব্যপারে জানে।"

আর সকল পদার্থবিজ্ঞানীর অনুসারে তিনিও বিশ্বাস করতেন যে পর্যবেক্ষকই জগতের স্রষ্টা।পর্যবেক্ষকের গুরুত্বের ব্যপারে বলেন,"অবশ্যই পর্যবেক্ষণ এবং পদার্থের মধ্যে কোন রকমের সম্পর্ক থাকবে যা আপনার চারপাশের জগতকে সত্য করে তোলে।" তাকে নিউএজ মুভমেন্টের হার্মেটিক ল' অব এ্যাট্রাকশনের প্রচারকারীদের বিখ্যাত ডকুমেন্টারি "সিক্রেট" এ উপস্থিত হতে দেখা যায়। মিস্টিকদের সাথে বেশি ওঠাবসার জন্য কিছুটা সমালোচিতও হতে হয়। আইডিয়ালিস্ট চেতনাবাদী এই পদার্থবিদ প্রাচীন সাব্জেক্টিভ রিয়েলিজমের উত্থানের সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে যাদুকর আলকেমিস্টদের অনুরূপ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি আন্তরিকভাবে ধারন করার কথা জানান। এ বিষয়ে বলেনঃ"আজ আমরা যতই বৈজ্ঞানিক উন্নতি সাধন করিনা কেন এখনো আমরা প্রাচীন রহস্যবাদি (যাদু)বিদ্যার সাহায্য না নিয়ে ওই পর্দার ওপারে যেতে পারি না, যেটা দৃশ্যমান ও অদৃশ্য জগতের মধ্যে পার্থক্য করে। বিজ্ঞানী উল্ফ গ্যাং পাওলি একবার বলেছিলেন, বিজ্ঞানীরা ১৭ শতাব্দীতে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায় যখন থেকে তারা বিলুপ্তপ্রায় সাব্জেক্টিভ দৃষ্টিভঙ্গির যেকোন প্রতিষ্ঠিত আদর্শ বাদ দিয়ে বোধযোগ্য সবকিছুকে শুধুমাত্র অব্জেক্টিভ সায়েন্স বানিয়ে ফেলে। আধুনিক বিজ্ঞান এখন অবজেক্টিভ বিষয় গুলো সাব্জেক্টিভ জিনিসের প্রতিফলন হিসেবে প্রতিষ্ঠার(প্লেটনিক আইডিয়ালিজম) চেষ্টা চালাচ্ছে। যেমন,পদার্থবিজ্ঞানে করা হয়েছে। আমরা সহ অনেক বিজ্ঞানীরাই নতুন অব্জেক্টিভ ম্যাটেরিয়ালিজমে বিশ্বাস করেনা, আমরা পূর্বে আসা আলকেমিস্টদের মত অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিশ্বাস করি বস্তুবাদের উর্ধ্বের কোন কিছু এই মহাবিশ্বের জন্য দায়ী।"

অতএব, হার্মেটিক আলকেমি ও জ্যোতিষবিদ্যার উৎকর্ষের যুগের যাদুকরদের কুফরি সাব্জেক্টিভ আইডিয়াকিস্টিক ওয়ার্ল্ডভিউয়ের দিকে আধুনিক [অপ]বিজ্ঞান আবারও ফিরে গেছে। মূলত, এটাই [অপ]বিজ্ঞানের আসল পরিচয়। যাদের হাতে সেই রয়্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সূচনাকারীরাই ছিল অকাল্ট সিক্রেট সোসাইটির[ফ্রিম্যাসন] শীর্ষস্থানীয় সদস্য। এরা সাধারন মানুষের কাছে যাদুশাস্ত্রের গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করতেই সাব্জেক্টিভ ওয়ার্ল্ডভিউ অল্পকিছু বছরের জন্য বাদ দিয়ে সেকুলার ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ফিলসফির প্রচার করে, পরে যখন এটার সর্বস্তরে গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হয় অর্থাৎ আজকের যুগে আবারো পুরাতন আইডিয়ালিস্টিক রিয়েলিজমে ফিরিয়ে আনে। অর্থাৎ মিশর ও বাবেল শহরের যাদুকর চন্ডাল ঋষিগন এবং গ্রীসের প্লেটো পিথাগোরাসদের ম্যাজিক্যাল কুফরি বিশ্বাসব্যবস্থাকে পুনঃসত্যায়ন করা হয় কথিত বিজ্ঞানীদের দ্বারা। আজকে আমরা যেসকল [অপ]বিজ্ঞানীদেরযাদের 'বিজ্ঞানী' বলে শ্রদ্ধা করি,এরা কি আসলেই বিজ্ঞানী নাকি যাদুকর/মিস্টিক/অকাল্ট ফিলসফার!?
নিউরোসায়েন্টিস্ট জুলিয়া মসব্রিজ বলেন,"আমি কেন বিজ্ঞানী, কারন আমি একজন মিস্টিক(অকাল্ট ফিলসফার), আমি এর মানে এটা বোঝাই না যে আমি বিজ্ঞানী হয়েছি মিস্টিক্যাল প্রশ্নগুলোর জবাব দেবার জন্য, যদিও আমার কিছু কাজে এ বিষয় গুলো জড়িয়ে আছে।আমি যেটা বুঝিয়েছি যে, একজন মিস্টিক ঠিক সেই একই কাজই করে যা একজন বিজ্ঞানী করে থাকে। সেটা হচ্ছে, নিজে নিজে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের মধ্যে কোন কিছুর আহব্বান করা, এমনিভাবে যেটা আপনি নিজেও জানেন না।এরপরে অনুসরণ করলেন, অন্ধভাবে এর পিছনে হাটলেন, এবং দেখলেন এটা কোথায় পৌছায় এরপর যেটা পেলেন সেটা সবার সাথে প্রকাশ করলেন। এটাই একজন মিস্টিক করে থাকে, এবং একই সাথে একজন বিজ্ঞানীও করে থাকে। আমি একটা পরীক্ষন করলাম যার ব্যপারে আমার কোন ধারনাই নেই। সেটা আমি কোথা থেকে পেলাম, আমার নিজেরই কোন ধারনা নেই। এরপর দেখি কি ঘটে, এরপর রাতারাতি আরেকটা প্রশ্ন মনে উদয় হয়,সেটাকে অনুসরণ করা শুরু করি। এটা মহাবিশ্বজগতের সাথে এক অসাধারণ নৃত্য। এজন্য আমার কাছে সায়েন্টিফিক অন্বেষণ এবং মিস্টিক্যাল(যাদুকরী) অন্বেষণ একই মনে হয়। উভয়ই তাদের কাজের ক্ষেত্রে সামান্য ভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। মাঝেমধ্যে যন্ত্রপাতিসমূহের মধ্যেও খুব বেশি পার্থক্য থাকে না।সবই অবজারভেশন, সবই অনুপ্রেরণা এবং সবই কমিউনিকেশন।"
অর্থাৎ, মূলত কথিত বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকেই মিস্টিক,দার্শনিক। উনিশ শতকের পূর্বে এই বিজ্ঞানের নামই তো ছিল, "ন্যাচারাল ফিলসফি"। "বিজ্ঞান" শুধুই জনগনের কাছে যাদুশাস্ত্রের গ্রহনযোগ্যতা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ব্যবহার করা টোপ মাত্র। এটা রিপ্যাকেজড ব্যবিলনীয়ান মিস্টিসিজম ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজেদেরকে সুস্পষ্ট মিস্টিক বলে স্বীকৃতিদানকারী জুলিয়া মসব্রীজ Consciousness hacking এ কাজ করতেন।তাছাড়া নোয়েটিক সায়েন্স ইন্সটিটিউটের ইনোভেশন ল্যাবের ডিরেক্টর হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন।নোয়েটিক ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা এস্ট্রোনট এডগার মিচেল।তিনি একবার স্পেস ট্রাভেলের সময় ট্রান্সেন্ডেন্টাল এক্সপেরিয়েন্স লাভ করেন। তিনি বলেছেনঃ"পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় ২৪০,০০০ মাইল তারকা ও গ্রহসমূহের মধ্যে যখন তাকিয়ে ছিলাম যেখানে আমি গিয়েছিলাম, সেটা দেখে হঠাৎ করেই আমার মধ্যে একরকমের অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হয় যেন, এই মহাবিশ্ব বুদ্ধিদীপ্ত, প্রেমময় এবং ঐকতানপূর্ন।" অর্থাৎ তিনি স্পেসে গিয়ে সর্বচৈতন্যবাদী অনুভূতি লাভ করেছেন। বিগত পর্বে স্পেসসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় দেখিয়েছিলাম এদের যাত্রাও শুরু হয়েছে যাদুবিদ্যা এবং শয়তানের আরাধনার মাধ্যমে। Space Age এর জনক যাদুকর জ্যাক পার্সন্সকে নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন। প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত এই বিজ্ঞানের প্রতিটি স্তরেই আছে যাদুশাস্ত্র, অকাল্ট ফিলসফি আর মিস্টিসিজমের চক্ষুষ্মান প্রমাণ। আজ অল্প কিছু অপবিজ্ঞানীদেরকে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছি, যদি এই বিজ্ঞানের আড়ালে লুকানো মিস্টিকদের তালিকা ধরে সকলের অপবৈজ্ঞানিক উপাখ্যান রচনা করি, তবে দিনের পর দিন যাবে তবুও এদের অপবিদ্যার কথা শেষ হবেনা।

এদের উদ্দেশ্য কি? সোজা উত্তর, ধর্মকে বাদ দিয়ে প্রাচীন প্যাগানিজম এবং অকাল্ট ফিলসফি প্রতিষ্ঠা, একটি ধর্মহীন অকাল্ট টেকনোক্রেটিক বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণ।আগের পর্বগুলোয় দেখিয়েছি, বর্তমানকালের সকল আধ্যাত্নবাদী অকাল্ট সংগঠন ও সংস্থার পিছনে বটবৃক্ষের ন্যায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে জাতিসংঘ। বিজ্ঞানটা এর বাইরের নয়। বেদান্ত মেকানিক্স তথা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রবর্তক পথিকৃৎদের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? একেকজন অকাল্ট ফিজিক্স ও ফিলসফিকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে, আর সাথে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছে। এরা যায় কালচক্রতন্ত্রের সেই মহান অবতার তথা কাব্বালিস্টিক মসীহের নেতৃত্বে এক সরকারবিশিষ্ট বিশ্বব্যবস্থা। যেখানে ধর্মগুলোকে উৎখাত করা হবে। এজন্য ধর্ম সমূহের বিপক্ষে নিরেশ্বরবাদ বা নাস্তিকতার চেয়ে সর্বেশ্বরবাদি আকিদাকে শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে নিয়েছে, যেটা প্রাচীন যাদুকরদের মাঝে ছিল। বিজ্ঞান যে কাজটা করছে সেটা হলো, এসকল কুফরি আকিদাকে লজ্যিক্যালি সত্যায়ন করছে[৬৩]। বিজ্ঞানের তর্কাতীত গ্রহনযোগ্যতার সুযোগে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মাঝে ধীরে ধীরে প্রবিষ্ট হচ্ছে এবং ইয়াক্বিনের স্থানটি দখল করে নিচ্ছে। ওরা এইসব কুফরি আকিদা গ্রহনে যৌক্তিকতা হিসেবে যেটা দ্বার করায় তা হচ্ছে, ধর্ম বহু বছর ধরে হানাহানি, বিদ্বেষই প্রচার করেছে। ধর্মে মানবতা - ঐক্য - ভালবাসা বলে কিছু নেই। এটা শতাব্দীর পর শতাব্দী দিয়েছে যুদ্ধ, দাঙ্গা। শান্তিপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ। অন্যদিকে ননডুয়ালিটি আপনাকে দেবে নিঃস্বার্থ ভালবাসা এবং মহাজাগতিক ঐক্যের অনুভূতি। এটা সমস্ত অস্তিত্বকে নিজের সাথে যুক্ত ভাবতে শেখায়। তাই পারস্পারিক সহানুভূতি, ভালবাসা এবং সর্বোপরি এক শান্তিময় পৃথিবীতে গড়তে এই প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্তবাদী বিশ্বাসের বিকল্প নেই। তাছাড়া এটা বৈজ্ঞানিকও। সবকিছুতেই মহাজাগতিক চৈতন্য বিদ্যমান। এই ইউনিভার্স সচেতন বুদ্ধিদীপ্ত সত্তা। এটাই এককভাবে ঈশ্বর। আইনস্টাইন, স্পিনোজা থেকে শুরু করে সকল কাব্বালিস্ট -বেদান্তবাদের অনুসারীদের বিশ্বাস তাই।  আমরাই এই রিয়ালিটির সৃষ্টিক্রিয়ায় অংশীদার[কো-ক্রিয়েটর]। আমরাই ঈশ্বর। সুতরাং এই বৈজ্ঞানিক দর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস বিদ্বেষ-বিভাজনকারী ধর্ম অপেক্ষা উত্তম। যাদুশাস্ত্রের অনুসারী louis Turi[beyond belief]বলেনঃ"আমরা আজ অসাধারণ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে উপনীত হয়েছি। আমরা চাঁদে যাচ্ছি, আমাদের জিপিএস ও ইন্টারনেট রয়েছে।কিন্তু দু হাজার বছর ধরে এখনো আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে প্রবঞ্চনাময়, ধর্মতাত্ত্বিক বিদ্যমান। এই গ্যাপটি দূর করতে দরকার কস্মিক চেতনার বিশ্বাসের। শুধু আপনিই বিশ্বাসী হলেই হবেনা, বরং শাসক গোষ্ঠীরা কস্মিক কনসাসনেসের ব্যপারে একমত হবেন। সেটাই হবে মুক্তির পথ।আমরা যদি প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তিগতভাবে একত্রিত হয়ে কাজ করি তবে তারা একে গুরুত্বের সাথে দেখবে এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই জনগণের মধ্যে প্রক্রিয়াগুলো ছড়াতে পারব, যেটা চেতনার জাগরণে উৎসাহিত করবে।" অপর আরেক অকাল্ট ফিলসফির অনুসারী Andrew Harvey[Open minds]বলেন,
"আপনি ঐশ্বরিক চেতনা নিয়ে জন্মলাভ করেছেন। এই জীবনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুবিচার এবং গভীর শান্তি ও চরম ভালবাসায় ভরা সহানুভূতি নিয়ে বেচে থাকার অনুভূতি অর্জন। পরস্পরভেদী আনন্দ ও সবকিছুর প্রতি ভালবাসা এ পৃথিবীতেই অনেক আগে থেকে আছে, এটা অন্য কোথাও নেই। নিজের মধ্যে ঐশ্বরিক চেতনা জাগ্রত করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মহাবিশ্ব,নিজের এবং এর সকল সত্তার মধ্যে ঐশ্বরিক অস্তিত্বকে জাগরিত করা।"[৫৩]

অকাল্টিস্ট ট্যারেন্স মেকানা বলেনঃ"আমি মনে করি আমরা এখন বার্থ ক্যানালে আছি যেখানে সব কিছু ধ্বংস হচ্ছে। সমুদ্র আবহাওয়া এমনকি আমাদের শরীরও ধ্বংসের মুখে আছে যেখানে আমরা নানা রোগব্যাধিকে দেখছি। আমরা এখন শুধুই সামনের দিকে যাচ্ছি। সামনেই একমাত্র মুক্তির পথ এটাই একমাত্র পথ।আমি এই চিন্তাকে প্রচার করতে পছন্দ করি প্রথম একারনে যে আমি এতে বিশ্বাস করি।  দ্বিতীয়ত, এটা একটা আশার বার্তা। এটা ছাড়া মানুষ খুবই ঝুকির মুখে যাচ্ছে কারন দিন দিন সবকিছু ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এখন কোন রকমের ট্রান্সেন্ডেন্টাল ফেজ ট্রাঞ্জিশনে বিশ্বাস ছাড়া একরকমের আশাহীন নিহিলিজমের দিকে যাবার প্রবণতা আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ধর্মগুলো ব্যর্থ হয়েছে। ধর্ম যেটা দিয়েছে সেটা যুদ্ধ বিগ্রহ। আমরা প্রথমবারের মত সত্যিকারের মত মানব সভ্যতার ফেজ ট্রাঞ্জিশনের দিকে যাচ্ছি।" ২০১১ সালে কেম্ব্রিজে সায়েন্স ও স্পিরিচুয়ালিটিকে এক করে jeff lieberman গুগলের টেডএক্সে লেকচার দেন, তিনি প্রচার করেন যে আমরা সকলেই একক অস্তিত্ব। সকলেই একক মহাচৈতন্যের অংশ।তিনি দুঃখ দুর্ভোগের দুঃসহ মানসিক পরিতাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ওয়াহদাতুল উজুদে[Monism-অদ্বৈত বেদান্তবাদ] বিশ্বাসের আহবান জানান। তিনি ব্যাখ্যা করেন, যখন সকলে মিলে এক অস্তিত্বের বিশ্বাস অন্তরে প্রবিষ্ট হবে, তখন আমরা যাবতীয় ব্যক্তিগত দুঃখ ভুলে যেতে পারব। তার মতে শুধু এই বিশ্বাসের দ্বারাই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব[৫৪]।

কাব্বালিস্টিক-বৈদিক সর্বচৈতন্যবাদি [অ]শান্তির বার্তায় সাড়া দিয়েছেন অনেক শিল্পী, সেলিব্রেটি অভিনেতা -অভিনেত্রী, টিভি ব্যক্তিত্বরা। Ashton Kutcher , Mila Kunis , Demi Moore , James Van Der Beek , Marla Maples , Madonna , Ariana Grande , Frankie Grande, Britney Spears , Roseanne Barr , Sandra Bernhard , Anthony Kiedis , Mick Jagger , Jerry Hall , Lucy Liu , Alex Rodriguez , Rosie O'Donnell , Naomi Campbell , Donna Karan , Elizabeth Taylor , Paris Hilton , Nicole Richie , Kyle Richards , Heather McComb,  Lindsay Lohan'সহ আরো অনেক সেলিব্রেটি কাব্বালাহকে গ্রহন করেছেন ধর্মের বিকল্প হিসেবে। আয়রনম্যান খ্যাত Robert Downey Jr. গ্রহন করেছেন পূর্বাঞ্চলীয় মিস্টিক্যাল ট্রেডিশনের শাখা তথা বৌদ্ধধর্মকে। আরো আছেন এ্যাঞ্জেলিনা জোলি, জেনিফার লোপেজ...। এঞ্জেলিনা জোলির শরীর বৌদ্ধদের ট্যাটু দ্বারা আবৃত।তাতে আছে বৌদ্ধ মন্ত্র,বৌদ্ধ মন্দির ও যাদুবিদ্যার চার ইলিমেন্টসের[আগুন,পানি,মাটি,বায়ু] নাম। এরা বিশ্বাস করে বিশ্বশান্তি এর দ্বারাই প্রতিষ্ঠা সম্ভব। হয়ত আপনার চেনা জানা অনেকেই এদের কারও না কারো ফ্যান। আমেরিকার নিউএজ মুভমেন্টের অনুসারী সেলিব্রেটিদের সংখ্যা আরও বেশি। এখানে আছে মরগান ফ্রিম্যানের মত সায়েন্স ফিকশন ফিল্মের অভিনেতা ও সায়েন্টিফিক ডকুমেন্টারির উপস্থাপক থেকে শুরু করে জিমকেরির মত অভিনেতারা। জিম কেরি বলেন,"আমি ঘুম থেকে উঠলাম এবং হঠাৎ বুঝতে পারলাম ভাবনা কিরকম ভ্রম জিনিস, এটা কি রকমের আমাদের দুর্দশার জন্য দায়ী। এরপর আমিই আমাকে নিয়ে ভিন্ন মাত্রায় ভাবতে শুরু করলাম, এবং ভাবছিলাম এখন কে কাকে নিয়ে ভাবছে। হঠাৎ করেই আমার মাঝে অদ্ভুত রকমের স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করলাম। আমি নিজেকে অনেক বড় দেখতে শুরু করলাম।আমি আমার শরীরের চেয়ে বড়। আমি অনুভব করলাম আমি সবকিছুতে এবং সবার মাঝে রয়েছি। আমি মহাবিশ্বের কোন অংশ নই বরং আমিই মহাবিশ্ব। আমরা সকলেই একক জিনিস, এটা সত্যিই।"[৫৫]


এভাবেই বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত ও প্রমাণিত কুফরির দ্বারা বিশ্বে যাদুশাস্ত্রভিত্তিক ওয়ান ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলে একযোগে কাজ করছে। আমাদের মুসলিমদের অবস্থা কিরূপ? আমরা কি বিশ্বের চলমান কুফরের স্রোতের অনুকূলে চলছি? দুর্ভাগ্যজনকভাবে উত্তর হচ্ছে, হ্যা। আমরা মুসলিমরা ইহুদী ও বৈদিক অপবিদ্যাকে আপন করে গ্রহন করে নিয়েছি বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে। বিজ্ঞানের নামে অস্পষ্ট করে দেয়া সুস্পষ্ট কুফরি যাদুশাস্ত্রকে শুধুমাত্র সাধারন মুসলিমরাই গ্রহন করেনি, আলিমরাও একে বৈধতা দিয়েছেন। আলিমরা আজ তাদের ধর্মীয় বায়ানে দু একটা [অপ]বৈজ্ঞানিক শব্দ মুখে আওড়াতে পারলে ধন্য মনে করেন। নিজেকে খুবই বিজ্ঞ মনে হয়। প্রচার করছে তাওহীদ কিন্তু সেটাকে রিইনফোর্স করছে ইত্তেহাদের আকিদা দ্বারা। প্রচার করছে ইসলামের কিন্তু একে সত্যায়নের জন্য রেফারেন্স হিসেবে যেটাকে টানছে সেটা  বেদান্তশাস্ত্রের এবং এর অনুসারী অকাল্ট ফিলসফারদের। এরা আলিম হয়ে প্রচার করছে জ্যোতিষশাস্ত্র নির্ভর আকাশবিদ্যার ধারনাকে, যেখানে আল্লাহর রাসূল(সাঃ) একে যাদুবিদ্যার শাখায় ফেলেছেন। সমস্ত নিষিদ্ধবিদ্যাকে বৈধতাদানের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ইজতেহাদের দরজাকে। আলিমদেরই যদি এই অবস্থা হয়, সাধারন মুসলিমদের কি অবস্থা হবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সাধারন মুসলিমরা আজ [অপ]বিজ্ঞান দিয়ে কুরআনকে মানতে ও বুঝতে পছন্দ করে। কোন কিছু বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে সেটাকে  যেভাবেই হোক বৈজ্ঞানিক বানাতে চেষ্টা করে। বৈজ্ঞানিক না হলে তাদের ঈমান ঈয়াক্বিনের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যায়। মুসলিম বিশ্বে অপবিজ্ঞানকে ধারনের যাত্রা শুরু হয় আরবে গ্রীক-ভারতীয় দর্শন তথা কালামশাস্ত্র গ্রহনের মাধ্যমে। কালামিরা ছিলেন, আজও কালামিদের উত্তরসূরীরা আছেন। যদি বলেন গ্রীক দর্শনের ফিতনা শেষ তবে বড় ভুল করবেন, কেননা মধ্যযুগে ব্যবিলনীয়ান মিস্টিসিজম থেকে আসা গ্রীক দর্শনের প্রভাব আজকের তুলনায় খুব সামান্যই ছিল। সেসময় গ্রীকদর্শন বহিরাগত বিদ্যা হিসেবে খুব স্পষ্টই ছিল। কিন্তু আজ এর পোশাক ফ্লেভার একদমই পাল্টে ফেলা হয়েছে 'বিজ্ঞান' নামের দ্বারা। বিজ্ঞান আজ প্লেটোনিক আইডিয়ালিস্টিক অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন করছে[৬৪], যে বিজ্ঞান সর্বজনগৃহীত শ্রদ্ধেয় নিষ্কলুষ বিদ্যা। অর্থাৎ আড়ালে থেকে ভিন্ন নামে কালামশাস্ত্র সর্বত্র আরও শক্তভাবে প্রবেশ করেছে। আগে কালামশাস্ত্রের ইল্মের বিরুদ্ধে বলার মত অনেক আলিম ছিল, কিন্তু আজ এর বিরুদ্ধে বলা তো দূরের কথা,উল্টো সপক্ষে ইজতিহাদের পক্ষের আলিমদের অভাব নেই।এর উল্টোটা বললে খারেজি কিংবা "পথভ্রষ্ট গোমরাহ চক্র" ট্যাগ মিলতে পারে। এজন্য কালামিরা শেষ হয়ে যায়নি। উল্টো নব্যকালামিদের দ্বারাই সর্বত্র ছেয়ে গেছে।

সাফিয়্যাহ সাবরিনা সাঈদ নামের জনৈক বিজ্ঞানমনষ্ক প্রগতিশীল মর্ডানিস্ট মুসলিমকে প্রায়ই দেখি বিজ্ঞানকে  চরমভাবে ইসলামাইজ করে প্রচার করতে। সেদিন তার কথা শুনে 'থ হয়ে যাই। তিনি বলেন, "একজন মুসলিম হিসেবে যে কারনে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যপারে আমি আগ্রহবোধ করি, সেটা হচ্ছে এই যে এটা(কোয়ান্টাম মেকানিক্স)  হচ্ছে মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন।এটা যেন এমন যেন, মানবজাতি তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিবর্তনের চক্রকে সম্পূর্ন করেছে। কোয়ান্টাম  মেকানিক্স জগতের  ব্যপারে যে ধারনা দেয় সেটা নতুন নয় বরং অনেক পুরোনো, প্রাচীন ও রহস্যময়। এখন কোয়ান্টাম মেকানিক্স রিয়ালিটির যে বর্ননা দিচ্ছে সেটাই ইতিহাসের পাতায় প্রাচীনকাল থেকে সকল মিস্টিক্যাল ট্রেডিশন বলে এসেছে। আমার কাছে এটা খুবই উল্লেখযোগ্য। এ কারনে যে, প্রাচীন যুগের লোকেরা নিজেদের অনুমান ও ধারনা করে বাস্তবজগতের ব্যপারে যা বলতো সেগুলোই আধুনিক যুগের মানুষরা ভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বলছে যেটা নিশ্চিত করে প্রাচীন শাস্ত্রগুলো সৃষ্টিজগতের ব্যপারে যা বলতো তার সবই সত্য। এবং এই সত্যেরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এজন্যই আমি লক্ষ্য করেছি যে প্রায় সব কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনক বিজ্ঞানীগন বিভিন্ন মিস্টিক্যাল ট্রেডিশানের মধ্যে ডুবে ছিলেন, যেমন পূর্বাঞ্চলীয় বা পাশ্চাত্যের (রহস্যবাদসমূহে)। কোয়ান্টাম বিপ্লবের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বলেন,চেতনাই জগতের সবচেয়ে মৌলিক জিনিস। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ যিনি আনসার্টেইনটি প্রিন্সিপ্যালের জনক,আরউইন শ্রোডিঞ্জার যার ইক্যুয়েশন আমরা মূল হিসেবে ব্যবহার করি, হার্মানের গেজ থিওরি যেটাকে স্ট্রিং থিওরিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই পূর্বাঞ্চলীয় রহস্যবাদে(হিন্দু-বেদান্তবাদি দর্শন) ডুবে ছিলেন। উল্ফ গ্যাং পাওলির এক্সক্লুশন প্রিন্সিপলও মিস্টিসিজম দ্বারা প্রচ্ছাদিত। জন ভন নিউম্যান বলেছেন চেতনাই ওয়েভ ফাংশনের কলাপ্স ঘটায়। মুসলিম বিশ্বে আলাদা মিস্টিক্যাল ট্রেডিশন ছিল, আমাদের নয়শ বছর ধরে ইসলামিক সায়েন্স, কস্মোলজি, অ্যাস্ট্রোনমি ইত্যাদি ছিল। সেসময়ের মিস্টিকগন জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে লিখতেন। এবং পদার্থবিদগনও গভীরভাবে আধ্যাত্মবাদ ও মিস্টিসিজমে(যাদুশাস্ত্রভিত্তিক বিশ্বাসব্যবস্থা) ডুবে ছিলেন।মূলত ইসলামি এ্যাটোমিক থিওরি যেটাকে আশআরি এটোমিজম বলে সেটা মূলত সেসকল ধর্মতাত্ত্বিক - মিস্টিকদের দ্বারা গঠন করা হয়। আমার কাছে ওই ট্রেডিশন থেকে আসা কোয়ান্টাম মেকানিক্স শুধুই প্রাচীন জ্ঞান প্রকাশের নতুন ভাষা।"[৫৬]

এ মুসলিমার[!] কথাগুলো আমাকে নির্বাক করে দেয়। তিনি প্রথমেই বলে নিচ্ছেন, মুসলিম হিসেবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স যে কারনে তাকে আকর্ষিত করে, তা হলো এটা মানবজাতির বিশাল অর্জন এবং এটা প্রাচীন যাদুকরদের কুফরি আকিদাকে সত্যায়ন করে! তিনি এটার স্বীকৃতিও দিচ্ছেন যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রবর্তক পদার্থবিদগন বেদান্তশাস্ত্র এবং অকাল্ট ফিলসফির মধ্যে ডুবে ছিলেন। এরপরে এটাও গর্বের সাথে বলছেন যে মধ্যযুগে অনেক আরব কালামিরা জ্যোতিষবিদ্যা-যাদুশাস্ত্রের চর্চা কর‍তেন,আশআরি স্কুল অব থটের এ্যাটোমিক থিওরির কথাও বলেন। তার নিকট এই কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রাচীন কুফরি অকাল্ট বিদ্যার প্রকাশের নতুন ভাষা। আমি এখানে লিটারেচারের আইরনি,প্যারাডক্স ফিগার অব স্পিচ গুলোর সবই খুজে পাচ্ছি! তিনি নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিচ্ছেন অথচ যাদুশাস্ত্রভিত্তিক যাদুকরদের কুফরি আকিদাসমূহের সত্যায়নের বিষয়টিতে তিনি খুবই রোমাঞ্চিত। অর্থাৎ এখানে অজ্ঞতার কোন কিছু নেই, সব যেনে বুঝে কুফরের পক্ষাবলম্বন! পরবর্তীতে আবিষ্কার করি সুফি আলিম ইমরান নযর হোসেনের গুরু ফজলুর রহমান আনসারিকে তিনিও গুরুভক্তি করেন! মা'আযাল্লাহ। এজন্যই এই অবস্থা। অন্যত্র দেখলাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স তথা বেদান্তমেকানিক্স[৬২] ব্যবহার করে  আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর মিরাজ গমনকে ব্যাখ্যা করছে[৫৭]! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ! এদের সংখ্যা আজ অনেক। এরা বস্তুত নিও-কালামি। মু'তাযিলা ও আশআরি-মাতুরিদিরা নিজেদের কালাম শাস্ত্র অনুসরনের ব্যপারে স্বীকৃতি দেয়।কিন্তু এরকম মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি, যারা নিজেদের বিশুদ্ধ[স্বহীহ] আকিদার মুসলিম বলে পরিচয় দেয় কিন্তু উপরিউক্ত মুসলিমার ন্যায় নিজের পরিচয়ের সাথে পরস্পরবিরোধী বিশ্বাস ধারন করে। এরকম ব্যধিগ্রস্ত দুরাত্মার সংখ্যা নেহাৎ কম নয়, যারা সব জেনে-বুঝেও কুফরি বেদান্তশাস্ত্রে বিশ্বাস রাখে, কিন্তু অন্যদিকে নিজেদেরকে স্বহীহ আকিদার মুসলিম বলে দাবি করে।এসব ধর্ম-বিদ্যার খাটি অনুসারীরাই বলে দেয় যে, এসব জ্ঞানের উৎস হচ্ছে দাজ্জাল। এমতাবস্থায় এরকম দুই নৌকায় পা দেয়া মুসলিম দাবিদারদের অবস্থা কি হবে, যখন সমস্ত অকাল্ট ট্রেডিশনের উস্তায জনাব দাজ্জাল সাহেব আত্মপ্রকাশ করবেন!?

যখন থেকে কালাম শাস্ত্রের এ্যাডভান্স সংস্করণ তথা গ্রেসিয়ান ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট ফিলসফি তথা যাদুকরদের কুফরি মতবাদ বা বিশ্বাসকে সত্যায়নকারী অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করি, অজানা অচেনা অনেক মানুষ আমার বিরুদ্ধে লেগে পড়ে। অতীতের আলিমরা কালামিদের[গ্রেসিয়ান অকাল্ট ফিলসফিকে দ্বীনের সাথে সমন্বয়কারী] যে ফিতনাটি দেখেছেন, সেটা আজকের তুলনায় খুবই কম। সে অবস্থাতেই তারা অনেক  রোষানলে পড়েছেন। সেখানে আজকের ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউয়ের পূর্নতাপ্রাপ্তির দিনে আমার মত গাইরে আলিমের কি অবস্থা হওয়া উচিত, সেটা সম্ভবত বুঝতেই পারছেন। ডানের ছবিতে জনৈক [আমার] অচেনা লোককে দেখতে পাচ্ছেন, যিনি আমাকে কাজ্জাব বলছেন। অর্থাৎ আমি বেদান্তশাস্ত্রভিত্তিক এই শৈবধর্মীয় অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বলবার জন্য কাজ্জাব! তাহলে সত্যবাদী কারা? ব্রহ্ম শিব আর অদ্বৈত বেদান্তবাদকে সত্যায়নকারী, বিজ্ঞানে রূপান্তরকারী আরউইন শ্রোডিঞ্জার, নিলসবোর আর ওয়ার্নার হাইজেনবার্গগন? সত্য কি তাহলে ব্রহ্মচৈতন্য এবং সার্নের সামনে নটরাজ শিবের ধ্বংস নৃত্য? লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ! জ্ঞানহীন নির্বোধ কেউ যদি প্রজ্ঞাবানদের অনুরূপ  ভান ধরে, তাহলে এভাবেই ধরা পরে। এরা আসলে কোন বিশ্বাসব্যবস্থার পক্ষাবলম্বন  করে!? উত্তর আল্লাহ আযযা ওয়াযালই ভাল জানেন। যতদিন অনলাইনে সক্রিয় ছিলাম ততদিন এরা আদৌ আমার 'ফ্রেন্ডলিস্টে'ই ছিল না, কখনো এদেরকে চিনতামও না কথা বলা তো অনেক দূরের ব্যপার। সুতরাং অজানা প্রক্রিয়ায় আমি তাদের সাথে কবে কিরূপ আদবহীন আচরণ করেছিলাম, সেটা আল্লাহই ভাল জানেন। যদি "তাদের কল্পনা কিংবা স্বপ্নে" [এছাড়া আর কোনভাবে সম্ভব নাহ] কখনো তাদের সাথে আদবহীন কিছু করে থাকি, তাহলে বিনীতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি যা বলি তা রিফিউট করা অল্প সময়েই খুব সহজ। প্রথমেই এ্যাঞ্জেলিনা জোলি, জেনিফার লোপেজ, ম্যাডোনা কিংবা জিম কেরীদের বিশ্বাসের অবস্থানে গিয়ে নিজেকে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে স্বীকৃতি দিতে হবে। অথবা নিজেকে ইসলামের নাম ভাঙ্গানো বাতেনিয়্যাহ ফের্কাগুলোয় নিজেকে অধিভুক্ত করতে হবে।

আমি যা-ই বলি সবই ১৪০০ বছর আগের সাহাবী আজমাঈনদের অবস্থান থেকে। তারা যেটাকে অনুসরণীয় বলেছেন, সেটাকে অনুরণীয় বলি।তারা যে শাস্ত্র বা বিশ্বাসব্যবস্থাকে বর্জনীয় বলেছেন সেটাকে বাতিল সাব্যস্ত করি। অপবিজ্ঞানে গত পর্বে ব্রহ্মকে পেয়েছেন, আজ দেখেছেন শিবকে। আগামীপর্বে আসবে বিষ্ণু। বিজ্ঞান আবারও ফিরে গেছে বৈদিক ঋষি ও বাবেল শহরের ইহুদি কাব্বালিস্টদের কাছে। সামনের পর্বগুলোয় আরো স্পষ্ট ভাবে দেখবেন যে, আজকের এই অপবিজ্ঞান যাকে সায়েন্স বলছে, তা মূলত ব্যবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্রভিত্তিক অপবিদ্যা।






[চলবে ইনশাআল্লাহ]







রেফঃ

[১]en.m.wikipedia.org/wiki/Copenhagen_interpretation
[২]en.m.wikipedia.org/wiki/Von_Neumann%E2%80%93Wigner_interpretation
[৩]en.m.wikipedia.org/wiki/Wigner%27s_friend
[৪]https://m.youtube.com/watch?v=V9KnrVlpqoM
[৫]en.m.wikipedia.org/wiki/Quantum_mind
[৬]http://imaginingthetenthdimension.blogspot.com/2014/12/the-science-of-interstellar.html?m=1
[৭]en.m.wikipedia.org/wiki/Retrocausality
[৮]en.m.wikipedia.org/wiki/John_Archibald_Wheeler
[৯]https://futurism.com/john-wheelers-participatory-universe

http://kwelos.tripod.com/anthropism.htm
[১০]https://m.youtube.com/watch?v=qSYw7XUX7_Y
[১১]https://www.cosmic-core.org/free/article-134-the-holographic-universe-part-1-david-bohm-the-holographic-universe/
https://blogs.scientificamerican.com/cross-check/david-bohm-quantum-mechanics-and-enlightenment/
[১২]https://www.scienceandnonduality.com/article/david-bohm-implicate-order-and-holomovement
[১৩]en.m.wikipedia.org/wiki/David_Bohm
http://www.consciousness.arizona.edu/documents/TSC2018AbstractBookfinal3.pdf
en.m.wikipedia.org/wiki/Holonomic_brain_theory
[১৪]en.m.wikipedia.org/wiki/Universal_mind
[১৫]http://www.messagetoeagle.com/use-your-mind-to-change-reality-it-is-easier-than-you-think/
[১৬]http://www.physics-astronomy.com/2017/07/quantum-consciousness-universe-may-be.html?m=1
[১৭]http://www.bbc.com/earth/story/20170215-the-strange-link-between-the-human-mind-and-quantum-physics
https://phys.org/news/2019-11-quantum-physics-reality-doesnt.html
[১৮]en.m.wikipedia.org/wiki/Panpsychism
[১৯]http://www.scielo.br/scielo.php%3Fscript%3Dsci_arttext%26pid%3DS0101-31732018000500101&sa=U&ved=2ahUKEwjyzqqD1N_oAhU2zDgGHcOWB38QFjABegQICBAB&usg=AOvVaw3lm-71rbIgftfOPs_pkOh9
en.m.wikipedia.org/wiki/Interpretations_of_quantum_mechanics
https://blogs.scientificamerican.com/observations/spacetime-emergence-panpsychism-and-the-nature-of-consciousness
https://aeon.co/ideas/panpsychism-is-crazy-but-its-also-most-probably-true
[২০]https://medium.com/the-physics-arxiv-blog/why-physicists-are-saying-consciousness-is-a-state-of-matter-like-a-solid-a-liquid-or-a-gas
[২১]https://quantumgravityresearch.org/portfolio/hard-problem-of-consciousness
[২২]https://www.scienceandnonduality.com/article/quantum-physics-as-a-spiritual-path
https://www.scienceandnonduality.com/article/the-reality-of-consciousness
[২৩]https://m.youtube.com/watch?v=NUFHbfYG83c
[২৪]https://m.youtube.com/watch?v=ISdBAf-ysI0
[২৫]https://m.youtube.com/watch?v=O8Ia3kcQydc
[২৬]https://m.youtube.com/watch?v=iah2GeJgWJk
https://m.youtube.com/watch?v=0Lpf15w6voc
https://m.youtube.com/watch?v=iah2GeJgWJk
https://m.youtube.com/watch?v=BH8dQvVmlXU
https://www.scientificamerican.com/article/how-the-hippies-saved-physics-science-counterculture-and-quantum-revival-excerpt/
[২৭]https://www.brainpickings.org/2019/03/13/wolfgang-pauli-carl-jung-figuring/
https://www.newscientist.com/article/dn17023-why-two-geniuses-delved-into-the-occult/
[২৮]https://www.scienceandnonduality.com/article/physics-is-pointing-inexorably-to-mind?
https://phys.org/news/2009-06-quantum-mysticism-forgotten.html
[২৯]https://www.esamskriti.com/essays/docfile/39_1439.pdf
[৩০]https://m.youtube.com/watch?v=jhPmmSfkDIU
https://m.youtube.com/watch?v=L1rFMetfIXY
[৩১]https://www.fritjofcapra.net/shivas-cosmic-dance-at-cern/
https://wptt.org/2010/03/19/the-cosmic-dance/
[৩২]https://www.agoracosmopolitan.com/news/ufo_extraterrestrials/2019/03/05/13549-new-theory-suggests-that-cern-collider-could-open-the-gates-of-hell.html
[৩৩]https://www.nature.com/news/2008/081103/full/news.2008.1203.html
[৩৪]https://en.m.wikipedia.org/wiki/Rudra
[৩৫]http://www.chinabuddhismencyclopedia.com/en/index.php/Rudra_Chakrin:_King_of_the_World,_Tantric_Apocolyptic_Redeemer,_and_Dajjal
[৩৬]https://m.youtube.com/watch?v=B_MqGGlnBAQ
[৩৭]https://m.youtube.com/watch?v=4u3f7_p1i8c
[৩৮]https://m.youtube.com/watch?v=dgMRS0bA_2A
https://m.youtube.com/watch?v=zstsJ7-ULM0
https://m.youtube.com/watch?v=T1vYHOPFgcg
https://m.youtube.com/watch?v=5fcKezLW__Q
https://m.youtube.com/watch?v=21cbogJAgjY
https://m.youtube.com/watch?v=_wISsxE-EZU
[৩৯]https://m.youtube.com/watch?v=NWqxqOCoWVg
https://m.youtube.com/watch?v=LhaP0S6blCA
https://m.youtube.com/watch?v=iSrjSRiMvM0
[৪০]https://m.youtube.com/watch?v=an1_z41VEZg
https://m.youtube.com/watch?v=Rg_wig9VY1I
https://m.youtube.com/watch?v=KHeak6M1Iw8
https://m.youtube.com/watch?v=dWYLBmoK-vs
https://m.youtube.com/watch?v=nyrYo6rhhew
https://m.youtube.com/watch?v=Rj_ISTkZYvY
https://m.youtube.com/watch?v=84xU6W1UGj4
https://m.youtube.com/watch?v=-9NH5U7bOOY
https://m.youtube.com/watch?v=r7cYsgB4G1s
https://m.youtube.com/watch?v=5i3-9JqLH2Y
[৪১]https://m.youtube.com/watch?v=hMhuVrlB1lE
https://m.youtube.com/watch?v=XZfgvdPwz5Y
https://m.youtube.com/watch?v=ZSrtV-Je8Ms
https://m.youtube.com/watch?v=zYcETVmLA4M
https://m.youtube.com/watch?v=JYTHmLQzcUE
https://m.youtube.com/watch?v=9SrekXBdd6I
https://m.youtube.com/watch?v=B2RDjf9FCBE
https://m.youtube.com/watch?v=mpd0N-ubfwg
https://m.youtube.com/watch?v=ZSrtV-Je8Ms
https://m.youtube.com/watch?v=sYrm9YZBeqs
https://m.youtube.com/watch?v=GZ019mza4RA
https://m.youtube.com/watch?v=9V1nj-Xq0Qg
https://m.youtube.com/watch?v=_-5g1t7Fimg
https://m.youtube.com/watch?v=b9ciM1ciYKY
https://m.youtube.com/watch?v=r_teXX3rfmM
https://m.youtube.com/watch?v=yT1NDLkDVGE
https://m.youtube.com/watch?v=bj9bhX8iE-0
[৪২]https://m.youtube.com/watch?v=2clykIEvyz8
[৪৩]https://m.youtube.com/watch?v=lo0X2ZdElQ4
[৪৪]https://m.youtube.com/watch?v=vElbDPr0NtY
[৪৫]https://m.youtube.com/watch?v=x5CV-j0y2fU
[৪৬]https://m.youtube.com/watch?v=BZ0YFoUcY0s
[৪৭]https://m.youtube.com/watch?v=BHOzudE1oRk
[৪৮]https://m.youtube.com/watch?v=zL8LBcSx7yU
[৪৯]https://m.youtube.com/watch?v=lDIqNTDi96I
[৫০]https://youtu.be/I7-geL0Puqw
[৫১]https://m.youtube.com/watch?v=yhlTXnM625w
[৫২]https://m.youtube.com/watch?v=l3kX4KMzPn4
[৫৩]https://m.youtube.com/watch?v=PgYO3VB6ubo
[৫৪]https://m.youtube.com/watch?v=N0--_R6xThs
[৫৫]https://m.youtube.com/watch?v=uIaY0l5qV0c
[৫৬]https://m.youtube.com/watch?v=je2x4_JK0gU
[৫৭]https://m.youtube.com/watch?v=C1VEr81KKpc
[৫৮]https://deepeartharts.com/blog/2017/6/1/consciousness-and-magic
http://www.traditionalwitch.net/forums/topic/2652-science-quantum-physics-witchcraft/
http://www.quantumsorcery.org/quantumsorcery.html
https://www.wildmaryacademy.com/post/the-sorcery-of-consciousness
https://steemit.com/magic/@krnel/reality-unreality-magic-and-sorcery-the-power-of-consciousness-pt-10
https://gnosticteachings.org/faqs/psychology/1720-what-is-consciousness.html
https://openmindcounseling.com/mind-consciousness-occult-evolutionary-theory/
https://templeofwitchcraft.org/consciousness-community-and-healing-rest-response-and-regenerate/
https://deepeartharts.com/blog/2017/6/1/consciousness-and-magic
https://www.dimension1111.com/magick-and-intent.html
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Maleficium_(sorcery)
https://blacklightmetaphysics.wordpress.com/2013/08/23/intention-in-magic/
https://www.mumblesandthings.com/blog/magical-intention
https://sarahprout.com/activate-the-magic/
https://www.hellanamaste.com/blog/better-intention-setting
https://thetravelingwitch.com/blog/2018/8/26/how-to-set-a-clear-powerful-intention-why-its-important
https://www.patheos.com/blogs/teaaddictedwitch/2018/03/more-than-just-intention-magic/
https://m.youtube.com/watch?v=FzYwuifw1O4
https://m.youtube.com/watch?v=2w_xj2klAgE
https://m.youtube.com/watch?v=7c3AVj66ahg
[৫৯]https://m.youtube.com/watch?v=es2JOsBs1Ys
[৬০]https://m.youtube.com/watch?v=iIyEjh6ef_8

https://m.youtube.com/watch?v=1d5RetvkkuQ
https://m.youtube.com/watch?v=I4vjq46gCUQ
[৬১]https://www.esoteric-philosophy.net/consc.html
https://books.google.com.bd/books?id=4VMBNEW8-HEC&pg=PA44&lpg=PA44&dq
https://www.theosociety.org/pasadena/hpb-sio/sio-kosm.htm
https://thebuddhistcentre.com/westernbuddhistreview/rebirth-and-consciousness
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cosmic_Consciousness
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Wiccan_views_of_divinity
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Neopaganism
[৬২]https://m.youtube.com/watch?v=efMfEZL6wtc

https://m.youtube.com/watch?v=qj_i7YqDwJA
[৬৩]https://m.youtube.com/watch?v=3lhOX1aY5DE
[৬৪]https://m.youtube.com/watch?v=4C5pq7W5yRM

https://m.youtube.com/watch?v=oZbJc64edpU
https://m.youtube.com/watch?v=bBtMeWaqmgA
[৬৫]https://m.youtube.com/watch?v=2mwz2ARM90g
[৬৬]https://m.youtube.com/watch?v=V9KnrVlpqoM







বিগত পর্বগুলোর লিংকঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html