Wednesday, September 23, 2020

২১.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

 Physics From Babylon





বিগত পর্বগুলোয় অপবৈজ্ঞানিক আলোচনাকে একবাক্যের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর আকারে নিন্মলিখিত কথায় প্রকাশ করা যায়ঃ

রিয়ালিটি বা বাস্তব জগত কি জিনিস?

উত্তরঃঅদ্বৈত মহাচৈতন্য [Non dualistic universal collective consciousness]। 

 

এ মহাচৈতন্য কি অবস্থায় আছে? 

উত্তরঃহলোগ্রাফিক অবস্থায়, এটা একরকমের  ম্যাথম্যাটিক্যাল সিমুলেশন, মায়াবাদের অনুরূপ মায়া[Holographic simulation]।


এই রিয়ালিটির হলোগ্রাফিক স্ট্রাকচারটি কিরূপ? 

উত্তরঃঅকাল্ট শাস্ত্রানুযায়ী এই রিয়ালিটি হাইলি জিওমেট্রিক্যাল, যা প্লেটনিক সলিডগুলো দ্বারা তৈরি,এগুলো যাদুবিদ্যার ক্লাসিক্যাল ইলিমেন্টসের জিওমেট্রিক প্যাটার্ন ।


আজকের পর্বে আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি অকাল্ট ফিজিক্স অনুযায়ী গোটা মহাবিশ্বের স্তর বা গঠনবিন্যাস এবং এর কার্যপ্রণালী সম্পর্কে। আমাদের মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবে কিরূপে কাজ করে এবং এর স্তর বা গঠনবিন্যাস সম্পর্কে যাদুশাস্ত্রীয়-অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে আমরা আজ প্রবেশ করব এ্যাডভান্স হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্সে। বাস্তবজগত সম্পর্কে অকাল্ট টেক্সটসমূহের হাইপার স্পেশিয়াল ধারনা নিয়ে মনে পড়ে ১০ নং পর্বে আলোচনা করেছিলাম। তাই সহজভাবে বুঝতে আবারো ১০নং পর্বে ফিরে যাওয়া আবশ্যক।

ন্যাচারাল ফিলসফি তথা পদার্থবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার পূর্ণতাপ্রাপ্তির জন্য বহু আগে থেকে প্রয়োজন ছিল সবকিছুর জন্য একটি থিওরি। এমন এক থিওরি[থিওরি অব এভ্রিথিং] যা সমস্তকিছুকে ব্যাখ্যা করবে। যা সৃষ্টিতত্ত্বের পূর্নাঙ্গ বর্ণনা দেবে। যা মানবজাতিকে দেবে বৈজ্ঞানিক মেটাফিজিক্যাল দর্শন বা আকিদাহ[বিশ্বাসব্যবস্থা]। এটা সন্ধান দেবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ও অফুরন্ত শক্তির। এক কথায় এটা মানবজাতিকে বস্তুজগত ও মহাবিশ্বের সবকিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাদান থেকে শুরু করে জীবনাচরণ ও একটি বৈশ্বিক ধর্মীয় বিশ্বাস[আকিদা] ব্যবস্থাকে বিনির্মাণ করবে। মহান ইহুদী ন্যাচারাল ফিলসফার এ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তৈরিতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তার জিওমেট্রিক গ্রাভিটির ব্যাখ্যা কোনভাবেই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাথে খাপ খায়না। যার জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে সমস্ত কিছুর একটি তত্ত্বের[Theory of Everything/Unified field theory]। কোয়ান্টাম রিয়ালিটিকে অস্বীকার করে আইনস্টাইন নিজেই একটা থিওরি অব এভ্রিথিং প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন কিন্তু সফল হন নি। স্টিফেন হকিং তার বই "এ ব্রিফ হিস্টরি অব টাইমে" বলেন,"আইনস্টাইন তার জীবনের শেষ বছর গুলোয় বিফলতার সাথে ইউনিফাইড থিওরিকে খুজেঁ গিয়েছেন। কিন্তু তার ওই সময়টি এ থিওরি খোঁজার জন্য সঠিক সময় ছিল না। সেসময়ে গ্রাভিটি ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের ব্যপারে ধারনা থাকলেও নিউক্লিয়ার ফোর্সগুলোর ব্যপারে ভাল ধারনা ছিল না। তাছাড়া আইনস্টাইন যদিও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিকাশে ভূমিকা রাখেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে তিনি একরকম অস্বীকার করতেন।"[৪]

তখন থেকেই পদার্থবিজ্ঞানীগন একে একে থিওরি অব এভ্রিথিং আনার চেষ্টা শুরু করেন। Theory of Everything কে final theory , ultimate theory , master theory প্রভৃতি নামেও ডাকা হয়। আপনারা ইতোমধ্যে বিজ্ঞানের আদিমরূপ এবং এর ক্রমবিকাশের ধারা সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন। হাজার বছর পূর্বের যাদুকরদের বিশ্বাস ও যাদুশাস্ত্রের তত্ত্বকে প্রথমাবস্থায় ন্যাচারাল ফিলসফিতে রূপায়ন, অতঃপর "বিজ্ঞান" নামের নতুন শব্দের মোড়কে নিয়ে আসা হয়েছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এটা প্রত্যাশিত যে, অপবিজ্ঞানকে আধুনিক যাদুশাস্ত্রের অনুসারী কাফির তথা কথিত অপবিজ্ঞানীরা পুনরায় যাদুশাস্ত্রে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কোয়ান্টাম রেভ্যুলুশনের মাধ্যমে এ কাজের সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। বিজ্ঞান ফিরে গেছে হাজার বছরের পুরোনো অকাল্ট শাস্ত্রের আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটির ধারনাতে। সুতরাং ফাইনাল থিওরি বা থিওরি অব এভ্রিথিং হবে যাদুশাস্ত্রের মেকানিক্সের সবচেয়ে নগ্ন সংস্করণ। এতেই যাদুকরদের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস তথা তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহকে অস্বীকারকারী কুফরি আকিদাকে সবচেয়ে বেশি পরিপূর্ণতা দেয়া হবে। হয়েছেও তাই! স্টিফেন হকিং 'এম থিওরি' নামে একটি থিওরি অব এভ্রিথিং এর প্রস্তাব করেন। এখানে M দ্বারা আপাতত বোঝানো হয়েছে Magic বা Mystery কে। এ কথা উইকিপিডিয়াতেও বলা হয়েছেঃ

According to Witten, M should stand for "magic", "mystery" or "membrane" according to taste, and the true meaning of the title should be decided when a more fundamental formulation of the theory is known.

[তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া]


এম-থিওরি বা ম্যাজিক থিওরিতে আল্লাহর ব্যপারে কিরূপ ধারনা করা হয়? আগেই উল্লেখ করেছি, যাদুশাস্ত্রের কুফরি আকিদাকে পূর্নাঙ্গভাবে প্রকাশ করবে থিওরি অব এভ্রিথিং বা ফাইনাল থিওরি। স্টিফেন হকিংকে প্রশ্ন করা হয়, "যদি এম থিওরিকে থিওরি অব এভ্রিথিং হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে সেটা কি করুণাময় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করবে নাকি বাতিল করবে?" উত্তরে হকিং বলেন,"এম থিওরি আল্লাহর অস্তিত্বকে ডিস্প্রুভ করেনা কিন্তু তার অস্তিত্বকে অপ্রয়োজনীয় প্রমাণ করে। এটা বলে যে, একজন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন ছাড়াই এই মহাবিশ্ব একা একাই বার বার শূন্য থেকে সৃষ্টি হতে থাকবে।"[১]

শুধুমাত্র এমথিওরিই নয়,পদার্থবিজ্ঞানীরা একে একে নানান ফাইনাল থিওরির ইক্যুয়েশন নিয়ে আসতে শুরু করেন। আমরা গত পর্বে অপেশাদার পদার্থবিজ্ঞানী নাসিম হারামাইনের ইউনিফাইড থিওরি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু নিয়ে আসেন স্ট্রিং থিওরি, সার্নের বিজ্ঞানী জন হাগেলিন প্রস্তুত করেন সুপারস্ট্রিং থিওরি। এভাবেই একে একে বিভিন্ন ফাইনাল থিওরির প্রস্তাব আসতে শুরু করে। মিচিও কাকুর স্ট্রিং থিওরি বিগত কয়েক দশকে বিজ্ঞান মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কিন্তু পরবর্তীতে এটাও বেশকিছু কারনে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। থিওরি অব রেলেটিভিটিতে গ্রাভিটিকে বলা হয় স্পেসের জিওমেট্রিক কার্ভাচার। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সে বলা হয় সকল ফোর্সই কোন না কোন পার্টিকেলের ফসল বলা হয়। কিন্তু যেহেতু কোয়ান্টাম ননলোকাল ওয়ার্ল্ডে স্পেসের জিওমেট্রিক ডিস্ট্যান্স মাপার সুযোগ নেই, তাই একে যদি একটি ফোর্স হিসেবে ধরা হয় গ্রাভিটন নামে, তখন তাদের ম্যাথম্যাটিকস ভেঙ্গে পড়ে। তাই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং গ্রাভিটিকে যদি ইউনিফাই ঘটানোর জন্য সমাধান নিয়ে থিওরি অব এভ্রিথিং হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছিল স্ট্রিং থিওরির।

স্ট্যান্ডার্ড মডেল বলে যে ইলিমেন্টারি[ইলেক্ট্রন, কোয়ার্ক, ফোটন] পার্টিকেলগুলো জিরো ডাইমেনশনাল অবজেক্ট কিন্তু স্ট্রিং থিওরি এখানে বলে, ইলিমেন্টারি পার্টিকেল গুলো কম্পনশীল স্ট্রিং দ্বারা তৈরি। বেহালার স্ট্রিং গুলো যেভাবে ভিন্ন ভিন্ন নোট সৃষ্টি করে,ভিন্ন ভিন্ন কম্পাংকের এনার্জি স্ট্রিং একেকটি একেক ফ্রিকোয়েন্সিতে ভাইব্রেট করে পার্টিকেল গঠন করে।। একেক ফ্রিকোয়েন্সিতে একেক ধরনের পার্টিকেল তৈরি হয়।এমনকি গ্রাভিটিও।পদার্থবিদ ডক্টর ব্রেইন গ্রীন বলেন, 'স্ট্রিং গুলো খুবই ক্ষুদ্র, এ্যাটমকে যদি সোলার সিস্টেমের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে স্ট্রিং গুলো হবে পৃথিবীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সমান'। স্ট্রিং থিওরি বলে আমাদের রিয়ালিটিতে ১০ টি ডাইমেনশন রয়েছে।  এ যেন হার্মেটিক এবং কাব্বালিস্টিক টেক্সটেরই সায়েন্টিফিক ভার্সন। তবে স্ট্রিং থিওরির একটা সমস্যা আছে, এর অধিকাংশ ম্যাথগুলো থ্রি স্পেশিয়াল, ওয়ান টেম্পরাল ডাইমেনশনে কাজ করে না, এরজন্য চাই ১০ টি ডাইমেনশান বা মাত্রা।  যেহেতু অন্য ডাইমেনশনগুলো আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে, তাই স্ট্রিং থিওরিটি পরীক্ষন অযোগ্য একটি তত্ত্ব। কিন্তু নিখুঁত গাণিতিক সংগঠনের জন্য একে পুরোপুরিভাবে ফেলে দেয়া হয়নি। এটাকে পুরোপুরি থিওরি অব এভ্রিথিং রূপে স্বীকৃতি দেয়া না হলেও আশা করা হয় এর দ্বারা ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে খুজে পাওয়া যাবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত থিওরি অব এভ্রিথিং।

অপর্যবেক্ষণযোগ্যতার জন্য স্ট্রিং থিওরিকে থিওরি অব এভ্রিথিং এর মর্যাদা না দেয়া হলেও, এ থিওরির সবচেয়ে বড় অবদান ছিল [অপ]বিজ্ঞানের সবচেয়ে অবহেলিতঃ ডাইমেনশনাল কন্সেপ্টকে পুনরুজ্জীবিত করা। বিজ্ঞানে মাত্রা বা ডাইমেনশনালিটির অনুপ্রবেশ ঘটে যাদুকর-জ্যোতিষী জন ডি এর হাত ধরে। তিনিই ফোর্থ ডাইমেনশনের ব্যপারে ধারনা দেন। স্ট্রিং থিওরি বহুমাত্রার শিক্ষা গ্রহন করে ইহুদী যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ থেকে। সৃষ্টিকর্তার ব্যপারেও কাব্বালিস্টিক শিক্ষাকেই প্রতিফলন ঘটিয়েছে। আপনারা বিগত আর্টকেল গুলোয় এটা দেখেছেন যে আধুনিক অপবিজ্ঞানের পথিকৃৎদের কেউই আসলে মনোথেইস্টিক বা তাওহীদের শিক্ষার প্রচার করেনা। বরং শ্রোডিঞ্জার থেকে শুরু করে আইনস্টাইন সকলেই বেদান্তশাস্ত্রের ঈশ্বরের কথা বলতেন যা আত্ব তাওহিদূর রুবুবিয়্যাহ'র বিপরীত কুফরি আকিদা। মিচিও কাকু বিপরীতে হাটেননি। তিনিও সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন এবং তার থিওরিতে সে শিক্ষারই প্রচার করেন।

তাকে যখন প্রশ্ন করা হয় জীবন ও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকার প্রশ্ন সম্পর্কে, তখন তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "আমাকে বলতে দিন আমরা ফিজিসিস্টরা কিভাবে বিষয়টা দেখি, উদাহরনস্বরূপ, আইনস্টাইন বড় একটা প্রশ্ন করতেন, যে কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে কিনা,সব(সৃষ্টিজগতের) কিছুর মানে আছে কিনা,আর এভাবেই আইন্সটাইন এ প্রশ্নের জবাব দিতেন যে, দুই ধরনের ঈশ্বর(গড) আছে। আমাদেরকে অনেক বৈজ্ঞানিক চিন্তার হতে হবে, আমাদেরকে ডিফাইন করতে হবে আপনি গড দ্বারা বোঝেন। যদি গড বলতে হস্তক্ষেপ করার ঈশ্বরকে বোঝানো হয়, ব্যক্তিক সত্ত্বাগত ঈশ্বরকে বোঝায়,প্রার্থনা শোনার God কে বোঝায়, তাহলে আপনাকে সেটাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে সৃষ্টিকর্তা কি সত্যিই আমাদের সকল প্রার্থনা শোনেন(?) যেমন ক্রিসমাসে বাই-সাইকেল চাওয়া, তিনি(আইনস্টাইন) ঈশ্বরের ব্যপারে ধারনায় এরকমটা মানতেন না,তিনি(আইনস্টাইন) বিশ্বাস করতেন নিয়ম-নীতির গড,হার্মোনি, সৌন্দর্যের, সিমপ্লিসিটি এবং আভিজাত্যতার গড, দ্য গড অব স্পিনৌজা (প্যান্থেইস্টিক গড)। এই ধরনের গডে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন, কারন তিনি দেখতেন মহাবিশ্ব অত্যন্ত গর্জিয়াস, এসব ঐরকম থাকবার কথা নয়, এটা বরং হতে পারতো বিশৃঙ্খল, কদর্য, নোংরা।.."

অনেক পাঠক 'গড অব স্পিনোজা' এর অর্থ বুঝতে পারছেন না। বারুচ স্পিনোজা নামের এক নিকৃষ্ট শ্রেণীর কাফির সর্বেশ্বরবাদকে(ওয়াহদাতুল উজুদ/মনিজম) ফিলসফির কাতারে ইংরেজিতে অফিশিয়াল নাম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেন। একে এরপরে থেকে প্যান্থেইজম নামে ইংরেজিতে সহজে বোঝানো হয়। যদিও এই আকিদা ব্যবিলনীয়ান এস্ট্রলজি থেকে এসেছে, ইতোপূর্বে এর অর্গানাইজড ফর্ম ছিল না।এই বিশ্বাস অনুযায়ী প্রকৃতিকেই গডে পার্সোনিফাই করে ডাকা হয়। একেই স্পিনোজা'স গড, স্পিনোজিজম[২] বলে।

কাকু দাবি করেন তার জীবনের লক্ষ্যই আইনস্টাইনের অসম্পূর্ন স্বপ্নকে সম্পূর্ন করা। একটি থিওরি অব এভ্রিথিং প্রতিষ্ঠা করা। তাকে যখনই সৃষ্টিকর্তার কথা জিজ্ঞেসা করা হয় তিনি সব সময়েই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আইনস্টাইনের রেফারেন্স দিয়ে বলতেন, "ইসহাক(আ), ইউসুফ(আ), মূসা(আ) ইত্যাদি নবীদের 'পালনকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করা কঠিন"। কিন্তু বারুচ স্পিনোজার সর্বেশ্বরবাদের কুফরি অর্থে 'ঈশ্বর' বা গড শব্দটিতে বিশ্বাস করতেন আইনস্টাইন সাহেব এবং এটাই গ্রহণযোগ্য। তাকে অপর এক সাক্ষাতকারে এ ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, তিনি দুইটি ধর্মকে কাছে থেকে দেখেছেন। পরিবারকে বৌদ্ধধর্মে পেয়েছেন কিন্তু আমেরিকায় পেয়েছেন খ্রিষ্টান। এজন্য তিনি তার থিওরিতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করতে দুই ধর্মের তথ্যকে একাকার করে একটা কুফরি দর্শন বানিয়ে নিয়েছেন। পৃথিবী মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে অর্থাৎ বিগব্যাং হবার আগে Nirvana পার হয়ে আসছে। ১১ ডাইমেনশনের হাইপার স্পেসের কস্মিক মিউজিকই নাকি "ঐশ্বরিক মন"(mind of God) । এটা ঠিক তাই-ই যা গড অব Spinoza। এই মন রিড করতেই থিওরি অব এভ্রিথিং এর প্রয়োজন ছিল, যা নিয়ে আজ কাকু কাজ করছেন। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ব্যপারে আসা ফিলসফিক্যাল বা মেটাফিজিক্যাল প্রশ্নের সমাধান থিওরি অব এভ্রিথিং এর অন্যতম বড় লক্ষ্য।

আরেকবার তাকে প্রশ্ন করা হয় এটা জিজ্ঞেস করে যে, তিনি(মিচিও কাকু) সাইন্স ও (প্যাগান)ধর্মতত্ত্বের সংযোগকে কিভাবে দেখেন, তিনি বলেন, "আমার মাথায় দুইটি অংশ সবসময় যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, বৌদ্ধধর্মে আমরা বিশ্বাস করি সময়হীন নির্বাণে যেথায় কোন শুরু শেষ বলে কিছু নেই, যখন আমি সানডে স্কুলে পড়ি তখন আমি জেনেসিস পাঠ করি, সেখানে আমি পাই সৃষ্টিজগতের একটি শুরুর(প্রক্রিয়া)কে এমনকি ধবংসেরও দিবসকে(কিয়ামত) যেটা বৌদ্ধমতের নির্বাণ বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক,আমি আজ একজন পদার্থবিদ এবং আমাদের হাতে আছে মাল্টিভার্স এর ধারনা, আমরা সেটাকে দুইরকমের সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে মিশিয়ে নিতে পারি, মাল্টিভার্সের হায়ার ডাইমেনশনে একটা নির্বাণ অবস্থা রয়েছে যেখানে বাবল(bubble) মহাবিশ্ব গুলোর সংঘর্ষের মাধ্যমে অস্তিত্বে আসে, আর অজস্র বিগ ব্যাং হতে থাকে এবং অজস্র জেনেসিস ঘটতে থাকে যা বাবল ইউনিভার্সসমূহের সংঘর্ষে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে থাকে।... রিডাকশনিজম অনুযায়ী অটম গুলো ভাঙলে অজস্র পার্টিকেলের দেখা মেলে যার কোন মানে নেই। কিন্তু আমাদের এখন আরো বেশি হলিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে স্ট্রিং থিওরিতে। যা আমাদের বলে আমাদের দেখতে হবে গোটা মহাবিশ্ব কম্পনশীল স্ট্রিং এর ন্যায় এটা আমাদের বলে কেন পার্টিকেলগুলো মিউজিক্যাল নোটস এর ন্যায়। আমার মনে হয় অধিকাংশ ধর্মেরই কমন একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে idea of harmony, synthesis । যখন আপনি বিজ্ঞানের দিকে তাকাবেন সেখানেও পাবেন যে বিজ্ঞান প্রাচীন কিছু সমাজের মৌলিক দার্শনিক দিকনির্দেশনা মেনে চলে। হার্মোনির অনুসন্ধান, ঐক্যের(সৃষ্টি স্রষ্টার অস্তিত্বের ঐক্য-ওয়াহদাতুল উজুদ/মনিজম) অনুসন্ধান। এজন্য আইনস্টাইন বলেন তিনি স্পিনোজার(সর্বেশ্বরবাদী) গডে বিশ্বাসী। যেটা গড অব হার্মোনি।নয়ত মহাবিশ্ব এতটা হার্মোনিয়াস(গুছানো/নীতিবদ্ধ/সুশৃঙ্খল) হত না এখন যতটা। তিনি পার্সোনাল (ইব্রাহীম /ইসহাক/ইয়াকুব নবীদের) গডে বিশ্বাস করতেন না। যেটা প্রার্থনার ঈশ্বর। তিনি বিশ্বাস করতেন একজন নিয়মদাতা আছেন এটাই হচ্ছে হার্মোনির নীতি।"

অর্থাৎ মিচিও কাকু অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে তার নিজ আকিদাকে প্রকাশ করেছেন। তিনি বৌদ্ধদের কুফরি সৃষ্টিতত্ত্বের দর্শনকে ইউনিভার্সের একদম ফান্ডামেন্টাল অরিজিন হিসেবে রেখেছেন। (তার কথানুযায়ী)খ্রিষ্টান থিওলজিকে যদি ক্যাথলিকদের মত কুফরি বিগব্যাং তত্ত্ব দ্বারাও খাপ খাইয়ে নেন এরপরেও নির্বানই সবকিছুর শুরু। অর্থাৎ তার মতে বিবলিক্যাল ঈশ্বর যদি থেকেও থাকে তবে তার উপরের সত্য হচ্ছে বৌদ্ধদর্শনের নির্বান[নাউজুবিল্লাহ]!! এখানেই কাব্বালিস্টিক এস্ট্রোফিজিক্সের অনুসারী মিচিও কাকু জানিয়ে দিলেন স্রষ্টার ব্যপারে কিরূপ আকিদা। এরপরে আরো ক্ল্যারিফাই করে বলেন - "আমাদের এখন আরো বেশি হলিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে স্ট্রিং থিওরিতে। যা আমাদের বলে আমাদের দেখতে হবে গোটা মহাবিশ্ব কম্পনশীল স্ট্রিং এর ন্যায়, এটা আমাদের বলে কেন পার্টিকেলগুলো মিউজিক্যাল নোটস এর ন্যায়। আমার মনে হয় অধিকাংশ ধর্মেরই কমন একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে idea of harmony, synthesis । যখন আপনি বিজ্ঞানের দিকে তাকাবেন সেখানেও পাবেন যে বিজ্ঞান প্রাচীন কিছু সমাজের মৌলিক দার্শনিক দিকনির্দেশনা মেনে চলে। হার্মোনির অনুসন্ধান, ঐক্যের(সৃষ্টি স্রষ্টার অস্তিত্বের ঐক্য-ওয়াহদাতুল উজুদ/মনিজম) অনুসন্ধান। এজন্য আইনস্টাইন বলেন তিনি স্পিনোজার (সর্বেশ্বরবাদী) গডে বিশ্বাসী। যেটা গড অব হার্মোনি।নয়ত মহাবিশ্ব এতটা হার্মোনিয়াস(গুছানো/নীতিবদ্ধ/সুশৃঙ্খল) হত না এখন যতটা। তিনি পার্সোনাল (ইব্রাহীম /ইসহাক/ইয়াকুব নবীদের) গডে বিশ্বাস করতেন না। যেটা প্রার্থনার ঈশ্বর। তিনি বিশ্বাস করতেন একজন নিয়মদাতা আছেন এটাই হচ্ছে হার্মোনির নীতি।"

হ্যা অধিকাংশ (প্যাগান) ধর্মেরই কমন একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে "আইডিয়া অব হার্মোনি, সিন্থেসিজ",এর অরিজিন্স প্রাচীন ব্যবিলনিয়া এবং এই কুফরি দর্শনের দিকনির্দেশনাই প্রতিষ্ঠিত অপবিজ্ঞান মৌলিকভাবে মেনে চলে। এজন্য আইনস্টাইনও এই সর্বেশ্বরবাদেই বিশ্বাস করতেন 'গড' এর নামে। এই স্ট্রিং থিওরিও হার্মোনির বার্তা দেয়। এটা হাইপার স্পেসের কস্মিক মিউজিকের বার্তা দেয়, আর কস্মিক বাবল অবস্থার মাল্টিভার্স Nirvana'র বার্তা দেয়। অর্থাৎ জনৈক লেখক জনাব আরিফ আজাদের দৃষ্টিতে 'ভদ্রলোক মিচিও কাকু' আইনস্টাইনিয়ান প্যান্থেইস্টিক বিশ্বাসের প্রচারক। একেই তার স্ট্রিং থিওরির সহায়তায় বেশি লজ্যিক্যাল এবং গ্রহণযোগ্য বলে দাঁড় করাচ্ছেন। এই প্যান্থেইস্টিক Mind of God'ই ইউনিভারসাল ইন্টেলিজেন্স যার কারনে ইউনিভার্স এতটা হার্মোনিয়াস/পরিপাটি/সুশৃঙ্খল! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ!

অপর এক বিতর্কে কাকু বলেন, "আমার এই দিকে যারা আছেন ১০০% নিশ্চিতভাবে তারা বিশ্বাস করে,যে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই। আর এইদিকের গ্রুপ ১০০% বিশ্বাস করে যে জীবনের মানে আছে এবং একজন ঈশ্বর আছেন। একদিকের লোকেরা শুদ্ধ আরেকদিকের লোকেরা ভুল, তাই তো? আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে তারা উভয়েই ভুল।

বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞান হচ্ছে ডিসাইডেবল স্টেইটমেন্ট, আমি যদি এখন সেলফোনটি নিচে ফেলে দেই, আমি জানি এটা ডিসাইডেবল, এটা নিচে পড়বে গ্রাভিটির জন্য। সাইন্স এমন সব স্টেটমেন্ট এর উপর প্রতিষ্ঠির যা পরীক্ষার যোগ্য, পুনঃপরীক্ষন যোগ্য, ডিসাইডেবল, ফলসিফাইয়েবল। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে কিনা এটা আনডিসাইডেবল(অনির্ধারনযোগ্য)। এটা বিজ্ঞানের অংশ নয়। এটা অনেকটা একটা (পৌরাণিক অলীক প্রানী)ইউনিকর্নের অস্তিত্বকে মিথ্যা প্রমান করার ন্যায়।... এখন, আমি একজন পদার্থবিজ্ঞানী, আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে আইন্সটাইনের একটা ইক্যুয়েশনের স্বপ্নকে সম্পূর্ন করা যা কিনা এক ইঞ্চির বেশি বড় হবেনা,যেটা সকল বস্তুগত জ্ঞানের সারাংশ বের করবে। এবং আমাদেরকে "ঈশ্বরের মনকে পড়তে" অনুমতি দেবে। তো তার(আইন্সটাইনের) কি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ঈশ্বরের প্রতি(?)। আইনস্টাইন বলেছেন দুই ধরনের ঈশ্বরের কথা। এটাই সকল কনফিউশন তৈরির কারন। প্রথম ধরনের ঈশ্বর হচ্ছে ব্যক্তিগতজীবন ঈশ্বর।এটা হচ্ছে প্রার্থনার ঈশ্বর, প্রতিশোধপ্রবন ঈশ্বর, ঐ ঈশ্বর যে প্রার্থনায় সাড়া দেয়, মূসা(আ), ইসহাক(আ),ইয়াকুব(আ) এর ঈশ্বর। আইনস্টাইন বলতেন আপনি এই ধরনের ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারেন না।কিন্তু আরেক ধরনের ঈশ্বর আছে। এটা হচ্ছে বারুচ স্পিনোজার ঈশ্বর(সর্বেশ্বরবাদ-প্রকৃতিপূজা), হার্মোনি বিউটি,simplicity, elegance এর ঈশ্বর।

এগুলো থাকত না যদি ইউনিভার্স কোন এক্সিডেন্ট এর দ্বারা তৈরি হত।তাই আমি ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোন এভিডেন্স(সাক্ষ্যপ্রমাণ) পাইনা। এর মানে এই নয় তার কোন অস্তিত্বই থাকবে না বা জীবনের কোন মানে নেই। আমি শুধুমাত্র ফিজিক্সের ইক্যুয়েশনে এটা খুজে পাচ্ছিনা। তো, আমাদের নিকট 'ঈশ্বরের মনের' একজন ক্যান্ডিডেট আছে। ঐশ্বরিক মনের ক্যান্ডিডেট হচ্ছে এগারো ডাইমেনশনের হাইপার স্পেসের কস্মিক মিউজিক।"


এই হচ্ছে অবস্থা। মিচিও কাকু সুস্পষ্টভাবেই বলে দিলেন যে তিনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের কোন এভিডেন্সই পান না। আর তার অস্তিত্বটি ইউনিকর্ন এর অস্তিত্বে বিশ্বাসের ন্যায়। এটা নাকি আনডিসাইডেবল! এজন্য তিনি আইনস্টাইনিয়ান প্যান্থেইস্টিক "মাইন্ড অব গডে" বিশ্বাস করেন, যা কি না পৃথিবীর সুশৃঙ্খলিত অবস্থার কারন, মনিস্টিক ঐশ্বরিক ঐ মনের জন্যই সবকিছু এত হার্মোনিয়াস এতটা ম্যাথম্যাটিক্যাল, ইউনিভার্স এক্সিডেন্ট এর কারনে তৈরি হলে এমন হত না! এখানেই শেষ নয়। 

তার মাল্টিডাইমেনশনাল স্ট্রিং থিওরিটি নেয়া হচ্ছে যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ থেকে। তাছাড়া কাব্বালাহ স্পিনোজার সর্বেশ্বরবাদি গড অব হার্মোনি, বিউটি,ইলেগেন্সেরই শিক্ষা দেয়। মিচিও কাকু নিজেই তার স্ট্রিং থিওরিকে কাব্বালার প্রতিফলন বলে স্বীকার করেছেন! তিনি বলেন,"আমি একটা বাস্তব বিষয়ের ব্যপারে বিমোহিত; স্ট্রিং থিওরি বা থিওরি অব এভরিথিং এর অনেক মৌলিক রহস্য কেমন যেন জোহার এবং কাব্বালারই প্রতিফলন।"


ইহুদীরাও এটা জানে যে যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ এবং স্ট্রিং থিওরি একই সমান্তরালে। এক কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈ বলেন, তার কাছে ফিজিক্স খুবই পছন্দের একটা বিষয়। তিনি দেখেন যে স্ট্রিং থিওরি সেফার ইয়েতজিরার কথারই পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। যাদুবিদ্যার একটা মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে রিয়ালিটির নীতিসমূহকে ইচ্ছেমত পালটে ফেলা,নিজের মত করে ব্যবহারের চেষ্টা। মিচিও কাকু তার কাব্বালিস্টিক থিওরি অব এভ্রিথিং এর দ্বারা এই আশাও করেন। কাকু বলেন, "প্রতিবারই যখনই আমরা কোন ফোর্স নিয়ে গবেষণা করি,মানব ইতিহাস একেবারে চেঞ্জ হয়ে যায়,এবার আমরা কাজ করছি থিওরি অব এভ্রিথিং নিয়ে। এটা আমাদেরকে কি দিতে পারে? স্বল্পমেয়াদে হয়ত কিছুই দেবে না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটা আমাদেরকে স্থান ও কালের নিয়ত্বা করে ফেলতে পারে।" 

 

জনাব মিচিও কাকু'ই সব বলে দিয়েছেন, আমি বোধ করি আমার নিজে থেকে আর কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। যাইহোক, স্ট্রিং থিওরি ডাইমেনশনাল ব্যাপারগুলোকে বিজ্ঞানের আলোয় আবারো নিয়ে আসলেও, কিছু ক্ষেত্রে কাব্বালিস্টিক অপবিদ্যা শিক্ষার ঘাটতির দরুন আরো সুস্পষ্টভাবে নতুন থিওরির দ্বারা ফিরে যেতে হয়েছে বাবেল শহরে। বিজ্ঞান আজ ফিরে গেছে প্লেটনিক আইডিয়ালিজমের এ্যালিগোরি অব কেইভে। এমুহুর্তে পাঠকদেরকে অনুরোধ করব ১০তম পর্বে ফিরে যেতে। কেননা আজকের আলোচনা সেই পর্বটির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সে পর্বে আলোচিত হাজার বছর পূর্বের যাদুশাস্ত্রের শিক্ষাকে আজ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে প্রতিফলিত হতে দেখবেন। আমরা আলোচনা করেছিলাম প্লেটোনিক সলিডস,থিওরি অব ফর্ম এবং এ্যালিগোরি অব কেইভ। আজ চূড়ান্তভাবে সে কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হচ্ছে।

কাব্বালিস্টিক বিদ্যাগুলো থেকে গ্রহণ করা প্লেটোর অন্যতম বড় শিক্ষা ছিল Theory of forms, Platonic Idealism এবং প্লেটোনিক সলিডস। থিওরি অব ফর্মের দ্বারা প্লেটো বলেছেন প্রকৃতির সমস্ত বস্তুর ফর্ম বা আকৃতির যে বৈচিত্র আমরা চোখে দেখি তা আসলে একই বস্তুর বিচিত্র রূপ। অর্থাৎ, সমস্ত বস্তুর মূলে এক ও অভিন্ন Energy, essence হিসেবে আছে। সব কিছু একক বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ[৩]। আরো সহজ করে বললে প্রতিটি বস্তু একক মৌল দ্বারা তৈরি, অনেকটা এ্যানাক্সিম্যান্ডারের এপেইরনের মত কিছুটা। তার এই তত্ত্বের সাথে মৌলিকভাবে যুক্ত আছে আইডিয়ালিজম।এটা প্লেটোর একটি যুগান্তকারী শিক্ষা যা আজকের ফিজিক্স আঁকড়ে ধরেছে। এই মতবাদ মূলত পিথাগোরাসের দ্বারা বাবেল ও মিশর থেকে ধার করে আনা আকিদারই রিকন্সট্রাক্টেড ফর্ম। নিওপ্লেটনিজম আইডিয়ালিজম ভিত্তিক দর্শন। আইডিয়ালিজম অনুযায়ী Nous(মন/বুদ্ধি/চেতনা) হচ্ছে সকল ম্যাটারের মূল ভিত্তি। 

Nous is the most critical component of idealism , Neoplatonism being a pure form of idealism. [note 3] The demiurge (the nous) is the energy, or ergon (does the work), which manifests or organises the material world into perceivability. 

[উইকিপিডিয়া]

রিয়ালিটি মনের দ্বারা নির্ভরশীল।এই এনার্জির দ্বারাই সকল ম্যাটার গঠিত যা আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করে তোলে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের উক্তিটি মনে আছে? মাইন্ড ইজ দ্য ম্যাট্রিক্স অব অল ম্যাটার। তবে এক্সট্রিম আইডিয়ালিজম যেমন সলিপসিজম রিয়ালিটির স্বাধীন অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে।

প্রাচীন ও বর্তমান অকাল্টিস্টরা প্লেটনিক সলিডের জিওমেট্রিক শেপ গুলো[চারটি ক্লাসিক্যাল ইলিমেন্টগুলোকে] দ্বারা এটা বোঝায় যে, সাবএটমিক পার্টিকেল গুলো ওই শেপের উপর ভিত্তি করে ম্যাটার তৈরি করে। যদিও সেসব জ্যামিতিক আকৃতি পানি বায়ু আগুন পৃথিবীকে বোঝায়, ফিজিক্যালি অন্যান্য পদার্থ এসব বস্তুর বা জ্যামিতিক শেপে বিদ্যমান। প্লেটোর Timaeus এ প্লেটনিক সলিডগুলোর বিস্তর বর্ননা আছে। কিউব দ্বারা পৃথিবী,আইকোসাহেড্রন দ্বারা পানি, টেট্রাহিড্রন দ্বারা আগুন, অক্টাহিড্রন দ্বারা বায়ু, ডোডেকাহিড্রন দ্বারা ইথারের জিওমেট্রিক শেইপ কে বোঝানো হয়। গ্রীকদের বিশ্বাস ইথার বা ডোডেকাহিড্রনের ব্যবহার ক্ষমতা শুধুমাত্র দেবতাদেরই আছে। সাধারন মানুষের হাতে পড়লে এর দ্বারা ব্যাপক অপব্যবহার হতে পারে,যার দ্বারা ঘটতে পারে তুমুল ধ্বংস যজ্ঞ। টেট্রাহিড্রনকে বস্তুজগতের সবচেয়ে মৌলিকতম জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার বলা হত। সমস্তকিছুর মূলে আছে টেট্রাহিড্রন।


প্লেটো,হেগেল,ইমানুয়েল কান্ট, জর্জ বার্কলি ছিলেন আইডিয়ালিস্ট ফিলসফার। প্লেটনিক আইডিয়ালিজমের থিওরি অব ফর্ম অনুযায়ী বলা হয় আমাদের জগতের উপরে একটি উচ্চমাত্রিক পার্ফেক্ট জগত আছে। আমাদের ত্রিমাত্রিক জগত হচ্ছে উচ্চতর জগত বা মাত্রার ছায়া। আরো বেশকিছু শাখার আইডিয়ালিস্টিক দর্শন আছে যেমনঃ সাব্জেক্টিভ, ট্রান্সেন্ডেন্টাল, এ্যাবসুলেট বা অব্জেক্টিভ আইডিয়ালিজম। প্লেটোর Idealism দ্বারা বোঝানো হয় আমরা চোখে আশপাশের জগতকে যেরূপে দেখি এটাই সবটা নয়। এগুলো আদৌ বাস্তব রূপ নয়। বরং চারপাশের দৃশ্যমান সমস্ত বস্তু উপরের মাত্রাগুলোর ছায়া। আসল রিয়ালিটি বা বাস্তবতা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাহিরে। প্রকৃতির সমস্ত বস্তু একটি অপরটির অংশ, সবকিছু মিলিয়ে একটা কমপ্লেক্স জিওমেট্রিক শেইপ তৈরি করে। এই জটিল বাস্তবতার মাত্র ১% এর মত আমরা ত্রিমাত্রিক রিয়ালিটিতে দেখি। বিষয়টি বোঝাতে প্লেটো বিখ্যাত Allegory Of Cave ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা বোঝানো হয়, বাহিরের পরিবেশে যায়নি এরকম  কিছু লোককে প্রায় সারাজীবন গুহার মধ্যে দড়ি দ্বারা আটকে রেখে পিছনে মশাল ধরিয়ে আলোকিত করলে তারা তাদের ছায়াকে শুধু দেখতে পায়, এক পর্যায়ে এই ছায়াকেই তারা নিজেদের বাস্তবতা মনে করবে। বাহিরের ত্রিমাত্রিক পৃথিবীর ব্যপারে তারা বেখবর। কখনো যদি তারা ওই বন্ধন ছিন্ন করে গুহা থেকে বের হয়, তবে তারা ত্রিমাত্রিক বাস্তবতাকে নিজেদের আসল বাস্তবতা বলে মেনে নিতে পারবে না, তাদের কাছে খুব অস্বস্তিকর মনে হবে। তাদের কেউ দৌড়ে গুহায় আবারো প্রবেশ করে ওই ছায়ামূর্তির জীবনে ফিরে যেতে চাইবে, খুব কমই পারবে সেটাকে মেনে নিতে। যারা সেই ছায়ার বাস্তবতা থেকে নিজেদের বের করে নিতে পারে, তারা বোঝে ওই ছায়ার বাস্তবতা সত্য নয়। প্লেটো বুঝিয়েছেন, মানুষও তেমনি ত্রিমাত্রিক এই বাস্তবতার শেকলে আবদ্ধ, অথচ আমরা যা চোখে দেখছি এটা সত্য নয়(reality is illusion), এটা আসল বাস্তবতার অনেকটা ছায়ার মত। আমরা সারাজীবন এই ত্রিমাত্রিক অভিজ্ঞতার মায়াজালেই আবদ্ধ থাকতে পছন্দ করি, খুব কম [enlightened] লোকই এর উপরের মাত্রাসহ প্রকৃত রিয়ালিটির কথা জানতে এবং মানতে পারে।গুহার দেয়ালের ছায়াকে দ্বারা রূপকার্থে ত্রিমাত্রিক দুনিয়াকে বোঝানো হয়েছে, শিকল বা দড়ি দ্বারা বাধা দ্বারা বোঝানো হয়েছে মানুষের সীমিত পারসেপশানকে। বাধা ছিন্ন করে বাহিরে যাওয়া দ্বারা বোঝানো হয়েছে Higher Dimensions/Realms বা উচ্চতর plain of existence এর জ্ঞান এর সন্ধানে বের হওয়া। সেই নতুন সূর্যালোক, আকাশ, চাঁদ সূর্যকে মেনে নেওয়া দ্বারা বোঝানো হয়েছে হাইপার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটিকে বিশ্বাস করা এবং আগের ত্রিমাত্রিক জগতের ধারনাকে মিথ্যা বা illusion বলে স্বীকৃতি দেওয়া। উইকিপিডিয়া অনুযায়ীঃ The allegory contains many forms of symbolism used to instruct the reader in the nature of perception. The cave represents superficial physical reality. It also represents ignorance, as those in the cave live accepting what they see at face value. Ignorance is further represented by the darkness that engulfs them because they cannot know the true objects that form the shadows, leading them to believe the shadows are the true forms of the objects. The chains that prevent the prisoners from leaving the cave represent that they are trapped in ignorance, as the chains are stopping them from learning the truth. The shadows cast on the walls of the cave represent the superficial truth, which is the illusion that the prisoners see in the cave. The freed prisoner represents those who understand that the physical world is only a shadow of the truth, and the sun that is glaring the eyes of the prisoners represents the higher truth of ideas. The light further represents wisdom, as even the paltry light that makes it into the cave allows the prisoners to know shapes.(উইকিপিডিয়া)


এই হাইপারডাইমেনশনাল রিয়ালিটির শিক্ষাকে পাওয়া যায় প্রাচীন ইহুদিদের যাদুশাস্ত্র কাব্বালায়।ইহুদী র‍্যবাঈ বিলি ফিলিপ্স বলেনঃ "কাব্বালা এমন সব জ্ঞানের কথা বলে যা শুধু শতাব্দীর দ্বারাই এগিয়ে নয় বরং সেই সময়কার চেয়ে হাজার বছর এগিয়ে। (কাব্বালার)জোহার কিতাবটি ২০০০ বছর আগে আমাদেরকে বলে সত্যিকারের reality(বাস্তবতা) ১০ টি মাত্রার(যেটা tree of life)। আপনি কল্পনা করতে পারেন হাজার বছর আগে আমাদেরকে এই কথা বলা হয়েছে! এটা এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ যে কাব্বালাহ বলে আমরা পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা মাত্র ১% রিয়ালিটিকে দেখতে পারি, অবশিষ্ট ৯৯% বাস্তবতা আমাদের চোখে অদৃশ্য।"[৩১]

সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন প্লেটোনিক শিক্ষাগুলো কিসের সমান্তরালে পাওয়া যায়। প্লেটোনিক সলিডস/স্যাক্রিড জিওম্যাট্রি থেকে শুরু করে আইডিয়ালিস্টিক হাইপার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটির সবটাই ইহুদীদের যাদুশাস্ত্রের থেকে আসা। এখন আমি যদি শুধু সাদৃশ্য পেয়েই কাব্বালিস্টিক ডক্ট্রিন থেকে প্লেটোর জ্ঞান আরোপ করি,তাহলে সেটা সত্য হয়ে যাবে না। চলুন এবার দেখি ইহুদী র‍্যবাঈরা কি বলছে-

Leone Ebreo ছিলেন খুবই বড় মাপের কাব্বালিস্ট। তিনি প্লেটোকে প্রাচীন কাব্বালিস্টদের শিষ্য হিসেবে দেখতেন। ইহুদি র‍্যাবাই Yehudah messer leon প্লেটোনিজম এবং কাব্বালার সাদৃশ্যতা নিয়ে অনেক আলোচনা করেন। তার পুত্র প্লেটোকে দেবোপম মহাগুরু হিসেবে দেখত। গ্রীক দর্শন এবং কাব্বালার মধ্যে সাদৃশ্যতার ব্যপারে র‍্যাবাঈ আব্রাহাম ঈয়াগেল বলেন,  "এটা খুব সুস্পষ্ট, যারা ডেমোক্রিটাস এবং বিশেষ করে প্লেটোর দর্শন এবং মতবাদ গুলোকে পড়বে, যেগুলো দেখে একদমই মনে হবে সেই মতাদর্শ একদমই ইজরাইলের ঋষিদের অনুরূপ এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে বলা বক্তব্য যেন তাদের নিজেদের ভাষায় কাব্বালিস্টদেরই কথা। এবং কেনই বা আমরা তাদের চিন্তা গুলোকে ধারন করব না যেখানে তারা আমাদেরই, এবং (যেখানে)আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকেই গ্রীকরা জ্ঞান গ্রহন করেছে! এই দিন পর্যন্ত অনেক অনেক বড় বড় ঋষিগন প্লেটোর ওই মতাদর্শকে লালন করত এবং অনেক ছাত্ররা তাদের অনুসরন করত, এটা তাদের কাছে খুবই জানা ঘটনা যারা ঋষিগনের সেবায় নিয়োজিত ছিল, তাদের প্রদত্ত শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছে,যে শিক্ষা প্রত্যেক ভূমিতে পাওয়া গিয়েছে।"

History of Western Philosophy তে Bertrand Russell বলেন, " পিথাগোরাসের মাধ্যমে অর্ফিক (বিশ্বাস) জিনিসগুলো প্লেটোর দর্শনে প্রবেশ করেছে এবং প্লেটো থেকে পরবর্তী দর্শন গুলোয় এগুলো কিছুটা ধর্মীয় মর্যাদা লাভ করে।"

খ্রিষ্ট পূর্ব ৩য় শতকের ইহুদী দার্শনিক Aristobulus বলেন, "এটা প্রমাণিত যে প্লেটো আমাদের[ইহুদিদের] (দর্শনগত)নীতিমালা গুলোকে অনুকরন করে, যা সে খুব গভীরভাবে অন্বেষণ করেছিলেন। এগুলো আলেকজান্ডার ও পারসিয়ানদের জবড় দখলের আগে Demetrius, Phalereus এর পূর্বেও অনুবাদ হয়েছিল। যেমন হিব্রু Exodus, আমাদের গোত্রীয় ভাই,এবং তাদের ভূমির জবরদখল এবং সমস্ত [কাব্বালিস্টিক]আইন-কানুন অনুবাদিত হয়। তাই এটা খুবই পরিষ্কার বিষয় যে, যে দার্শনিককে[প্লেটো] নিয়ে কথা হচ্ছে তিনি আমাদের থেকে অনেক কিছু নিয়েছেন।তিনি পিথাগোরাসের মত অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, যিনি আমাদেরই অনেক মতবাদ গ্রহন করেছেন এবং নিজের বিশ্বাসের সাথে মিশিয়েছেন।"

পাঠক মনে স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল জাগে এডভান্স ফিজিক্সের জ্ঞানে পূর্ন কাব্বালার ব্যপারে। সঙ্গত কারনেই আমাদেরকে কাব্বালাহর পরিচয় নিয়ে আবারো সংক্ষিপ্ত আকারে লিখতে হচ্ছে। আমি এখানে নিজের কথার চেয়ে কাব্বালিস্ট ইহুদি র‍্যাবাঈদের কথাকেই বেশি তুলে ধরব। তাদের উক্তিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য।

২০০ খ্রিস্টাব্দে ইজরাইল ছিল পৌত্তলিক রোমানদের দখলে, তখন ইহুদীদের মধ্যে যারাই তাদের ধর্মকে প্রকাশ করত তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড কিংবা নির্বাসিত করা হত। এই দুর্বল ও লাঞ্ছিত অবস্থা থেকে ইহুদীরা নিবৃত্তি লাভের আশায় ভাগ্য বদলের জন্য যাদুবিদ্যাকে আরো শক্ত করে ধারন করে। তাদের একজন ছিল র‍্যাবাঈ শিমন বার ইয়োহাই ছিলেন তাদের একজন শীর্ষস্থানীয় আলিম।তিনি রোমানদের বিরুদ্ধে কথা বলে প্রানভয়ে পলায়ন করেন এবং প্রায় ১৩ বছর একটি গুহায় লুকিয়ে থাকেন। তিনি সেখানে ধ্যানে বসেন তাওরাতকে ব্যবহার করে। এই ধ্যান কোন সাধারণ স্তরের ছিল না, সাধারন ইহুদিদের জন্য এটা করা নিষিদ্ধ ছিল, কেননা একথা প্রচলিত আছে যে অনেকে এর চর্চা করতে গিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছে অনেকে প্রাণও হারিয়েছে। কারন অত্যন্ত শক্তিশালী আধ্যাত্মিক শক্তি তাদের উপর ভর করে। ইহুদিদের মধ্যে প্রচলিত আছে যে বাবেল শহরে বন্দিদশার সময়ে হিযকিল নামের জনৈক ইহুদী আকাশের দিকে চেয়ে  সিংহাসনে বসা একজন লোককে দেখেন। ইহুদিরা মনে করে এটা সৃষ্টিকর্তা, হিযকিলের মত তারাও এই রকমের সিংহাসনের দেখা পেতে ধ্যানের চর্চা শুরু করত। তারা মনে করে এই চর্চার মাধ্যমে তারা তাদের ভাগ্যের ব্যপারে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা সমূহ জানতে পারবে। এরপরে সেফার ইয়েতজিরাহ[দ্য বুক অব ক্রিয়েশন] একটি রহস্যময় কিতাব আবিষ্কার হলো যাতে ইহুদীরা মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্বের বর্ননা করেছে। এতে বলা হয়েছে স্রষ্টা মহাবিশ্বকে ২২টি হিব্রু বর্ণমালার উচ্চারণে সৃষ্টি করেছেন। র‍্যাবাঈগন সেফার ইয়েতজিরার শিক্ষাকে অত্যন্ত শক্তিশালী গুপ্তবিদ্যা মনে করে জনসাধারণের ধরা ছোঁয়া থেকে একে শত শত বছর যাবৎ আড়ালে রাখেন। একাদশ শতাব্দিতে ক্রুসেডের সময় ইহুদীদের প্রতি আরেকদফা নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে,তারা নিজেদেরকে বাঁচাতে পালিয়ে যাদুবিদ্যাসহ ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমায়। এরপরে ত্রয়োদশ শতকে ইহুদীরা ফ্রান্স ,জার্মানি ও স্পেনে পাড়ি জমায়। এরপরে থেকে ইহুদীদের যাদুবিদ্যাকে "কাব্বালাহ" শব্দে সর্বত্র পরিচিতি পায় যার অর্থ, "গ্রহন করা"। বারো শতকে স্প্যানিশ র‍্যাবাঈ আরেকটি রহস্যময় কিতাব আবিষ্কার করেন, যার নাম জোহার। এরামাইক ভাষায় লিখিত এই কিতাবটি নানারকম প্রতীক এবং কামনাপূর্ণ[ইরটিক] ভাষায় পরিপূর্ণ। জোহারের লেখক কে সেটা ধোঁয়াশাপূর্ণ। কাব্বালিস্টদের অনেকে মনে করেন র‍্যাবাঈ শিমন বার ইয়োহাই এই কিতাবটি লেখেন। এটাকে অনুবাদ করা খুবই জটিল কাজ। ইহুদিরা মনে করে এই কিতাবে মহাবিশ্বের সকল বিষয়ের সমাধান রয়েছে। জোহারের কাছেই আছে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বসংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের সমাধান। জোহারের শিক্ষা গুলোর একটি হচ্ছে মানুষ আল্লাহর ইচ্ছায় নয় বরং মানুষই আল্লাহকে তাদের ইচ্ছামত চালাতে পারে[নাউজুবিল্লাহ]। জোহার একটি র‍্যাডিক্যাল প্রশ্ন করে, কে কাকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়? জোহার উত্তরে বলে, মূলত আদম ও হাওয়া'[আঃ] -ই মূলত আল্লাহকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়, তারা বের হয় নি[লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ]। জোহারে সবচেয়ে বড় সিম্বলিক কোড হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার অবস্থার দশটি রূপ বা স্তর যাকে হিব্রুতে বলে সেফিরোথ। কাব্বালিস্টদের অন্যতম বিখ্যাত ব্যাখ্যানুসারে এগুলো সৃষ্টিকর্তার দেহেরই ম্যাপ[নাউজুবিল্লাহ]। কাব্বালিস্টরা মনে করে, তারা যদি সৃষ্টিকর্তার এ্যানাটমির ব্যপারে জানে তাহলে তারা এটা জানতে হবে কিভাবে তার শক্তি কাজ করে। ১৪৯২ সালে এক হাজার ইহুদি পালিয়ে স্পেনে আসে যেটা স্পেনে কাব্বালাহ প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখে। এর একশত বছর পর থেকে আবু লাফিয়া নামের এক র‍্যাবাঈ  এর উদ্ভাবিত ধ্যান ও ইয়োগার সংমিশ্রিত পদ্ধতির অনুসরণে "প্রতিশ্রুত মসীহের" দ্রুত আগমণের জন্য ডাকা শুরু হয়। জেরুজালেম থেকে উত্তরে ৯০ মাইল দূরে গ্যালিলি অঞ্চলে সাফেদ নামের এক শহরে একদল কাব্বালিস্ট ইহুদিরা বসতি গড়ে তোলে। এই শহরটি কাব্বালিস্টরা এজন্য পছন্দ করত কারন, এখানে শিমন বার ইয়োহায় এখানে হেটেছিলেন। পাঁচ শতাব্দি আগে থেকে ইহুদী কাব্বালিস্টরা এই আশা করে আসছে যে, এই শহরের পথ দিয়ে একদিন স্বয়ং মসিহ হাটবেন। 

র‍্যাবাঈ আইজ্যাক লুরিয়া ১৫ শতকের এক মহান কাব্বালিস্ট ঋষি। তিনি জোহারকে মন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন এবং তিনি শিক্ষা দিতেন পুনর্জন্মবাদের। ১৫০২ সালে আইজ্যাক লুরিয়া প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার মৃত্যুকে অনেকে নিষিদ্ধ বিদ্যাকে প্রকাশের জন্য অভিশপ্ত  মৃত্যু বলে অভিহিত করে। ষোড়শ শতকে  কাব্বালা নর্থ আফ্রিকা, ইউরোপ,মধ্যপ্রাচ্যে সব স্থানে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কারের পর সর্বত্র সহজেই ছড়িয়ে পড়ে জোহার। কাব্বালাহ এভাবে গুপ্তাবস্থা থেকে প্রকাশ্যে আসে।[২৪]

কাব্বালিস্টরা ধ্যানের পাশাপাশি হিন্দুদের ন্যায় ইয়োগা করে থাকে। কাব্বালিস্টদের বিশ্বাসমতে হিব্রু প্রতিটি বর্ণমালা খুবই পবিত্র। সেসব উচ্চারণের দ্বারাই এই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে। এই বর্ণমালায় এমন শক্তি আছে, যা দ্বারা বস্তুজগতের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার সম্ভব। এজন্য কাব্বালিস্টরা এসবে বহুমুখী উচ্চারণের পাশাপাশি বর্ণমালার আকারের ন্যায় শরীরকে বাঁকিয়ে যোগব্যায়াম করে থাকে।[৩]

র‍্যাবাঈ আব্রাহাম ইয়াহুদা আশলাগ কাব্বালার পরিচয়ে বলেন,"This wisdom is no more and no less than a sequence of roots,which hang down by way of cause and effect,in fixed,determined rules,weaving into a single,exalted goal described as: "the revelation of His Godliness to his creatures in this world."

 

কাব্বালিস্ট এ্যান্থনি কোসনেক ইয়াহুদা আশলাগের এ কথার ব্যাখ্যায় বলেন,"একটি উচ্চমাত্রীয় শক্তি রয়েছে এবং পরিচালনাকারী শক্তি[গভার্নিং ফোর্স] আছে, যেটি উচ্চতর শক্তির[upper force] শেকলের দ্বারা নেমে এসে আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতকে নির্মান করে।আমরা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, গ্রাভিটি ইত্যাদি ফিজিক্যাল ফোর্সের ব্যপারে অবগত আছি। তবে এমন কিছু উচ্চমাত্রিক শক্তি আছে যা সবকিছুকে পরিচালনা করে অথচ এর কার্যনীতির ব্যপারে আমরা কিছু জানিই না। যেমন ধরুন আমরা ইলেক্ট্রিসিটির প্রভাব বা ক্ষমতার ব্যপারে জানি কিন্তু একে আমরা দেখতে পাই না, এমনকি আমরা এর ব্যপারে জানিও না এটা কি জিনিস। সর্বশেষ অনুধাবনযোগ্য শক্তিসমূহের সমন্বিত শক্তি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা, যিনি সকল শক্তি এবং সকল গভার্নিং ফোর্সের সর্বোচ্চ সীমায় অবস্থিত। আপার ফোর্স পাঁচটি জগতকে সৃষ্টি করে এবং আমাদের জগতের থেকে সে জগতের মাঝে একটি সীমানা নির্ধারন করে। সায়েন্স অব কাব্বালাহ ট্রেডিশনাল বিজ্ঞানের ন্যায় আমাদের ফিজিক্যাল জগত নিয়ে গবেষণা  চালায় না। বরং এটা সীমারেখার বাহিরের জগত নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। এবং ওই উচ্চতর শক্তির মাত্রা থেকে কিছু নীতি ছাড়া আমাদের জগতে আর কিছুই প্রবিষ্ট হয় না, আর সে নীতি গুলো ঠিক তাই, যেমনটা ইয়াহুদা আশলাগ বলেন,সেগুলো fixed, absolute এবং সর্বত্র বিরাজমান।"[৫]



বিশ্বে সবচেয়ে বড় কাব্বালার সংগঠন বিনেঈ বারুচ কাব্বালাহ ইন্সটিটিউট এর চেয়ারম্যান Rev Michael Laitman কাব্বালার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, "কাব্বালার জন্ম প্রাচীন বাবেল শহরে,যেখানে সর্বপ্রথম সেখানকার মানুষ এই বিদ্যাকে আবিষ্কার করে। কাব্বালা মহাবিশ্ব এবং জগতের ভিত্তিমূলের ব্যপারে শিক্ষা দেয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই শিক্ষাটি খুব অল্পকিছু লোকের মধ্যে প্রচলিত ছিল, এ জ্ঞান প্রায় ৪৫০০ বছর ধরে লুকায়িত ছিল,কিন্তু এখন এই বিদ্যা বিকশিত অবস্থায় আমাদের সকলের সামনে প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে, কেননা এই মূহুর্তে এর জ্ঞান আমাদের বিশেষ প্রয়োজন। যেহেতু এই ইল্ম বিগত বছরগুলোয় লুকায়িত-আবদ্ধ অবস্থায় ছিল,এটাকে ঘিরে অনেক ধরনের ভুল ধারনা এবং বিরূপ ধারনা গড়ে উঠেছে,অথচ কাব্বালাহ হচ্ছে আমাদের মহাবিশ্ব ও জীবনের বিষয়ে বিজ্ঞান। এটা গুপ্ত অবস্থায় থাকার জন্য সাধারন মানুষ একে যাদুবিদ্যা বলে ভুল ধারণা করে থাকে, এমন ধারনা পুরোপুরি ভুল। কাব্বালাকে আমি মূলত মহাজাগতিক জ্ঞান বলব। এখন কাব্বালাহ সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ১৮০০ ফ্যাকাল্টিতে পড়ানো হয়।... কাব্বালাহ খুবই সিরিয়াস ও রিগোরাস সায়েন্স। এবং পৃথিবীতে আমাদের অনেক সংগঠন আছে। আমাদের হাতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অনেক বিজ্ঞানীরা আছেন, যেমন ধরুন সাইকোলজি, ফিজিক্স মেডিসিন ইত্যাদি। পলিটেশিয়ান ইকোনমিস্টরাও আছেন। কারন সাম্প্রতিক সংকটগুলোয় এটা জানা দাবি রাখে যে কেন এসব ঘটনা ঘটছে। এবং কাব্বালাহ পার্স্পেক্টিভে এর সুরাহা কি হবে। আমাদেরকে কাব্বালাহ শেখায় আমরা একটা আবদ্ধ প্রকৃতিতে বসবাস করি। আমরা বাস করি একক নীতির অধীনে। গোটা মানব জাতি একক পরিবারের মত আমাদেরকে সেরূপেই বাস করা উচিত। এবং বর্তমান সংকট আমাদের নিকট এই ছবিটিই প্রকাশ করছে। কাব্বালাহ শেখায় সেসমস্ত নীতি সমূহ যা প্রকৃতিতে বিদ্যমান এবং এসবকে ব্যবহারের কৌশল। কি করে আমরা আমাদের সাথে প্রকৃতির হার্মোনি অর্জন করব, সেটাও শেখায়।...আমাদেরকে নতুন ধরনের আইন বা নীতির অনুসন্ধান করতে হবে যেটা শোষণ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে না বরং তা হবে পারস্পারিক সহযোগিতামূলক ঐক্যের[One World Order],অন্যথায় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কাব্বালাতে প্রবিষ্ট হবার আমরা বস্তুজগতকে স্বচ্ছ[transparent] অবস্থায় দেখি। আমরা ওইসমস্ত ফোর্সগুলোকে দেখতে শুরু করি যা আমাদের মহাবিশ্বের চারদিকে রয়েছে। সেগুলো কিভাবে মহাবিশ্বকে পরিচালনা করে। এটা অনেকটা  নকশিকাঁথার মত, যেটার একদিক দিয়ে নকশাগুলোর ছবি দেখা যায়, অপর পাশ দিয়ে সুতার বুনন দেখা যায়, যা দ্বারা নকশাটি করা হয়েছে। কাব্বালাহ এখানে যে কাজটি করে তা হলো,এটা আমাদেরকে ওইসব সুতা তথা ওইসব ফোর্সগুলোকে দেখবার ও বুঝবার সক্ষমতা দান করে যা দ্বারা বস্তুজগতের চিত্র নির্মিত। এবং শেখায় কি করে আমরা এই জ্ঞানকে ব্যবহার করে জগতের চিত্রকে সঠিকভাবে বুনতে পারি। এখন যেটা হচ্ছে, আমরা [যারা সাধারন মানুষ তারা] জানিনা কেন জগতের কোন স্থানে হাত দিলে সেটার থেকে ভুল-অপ্রত্যাশিত ফিডব্যাক পেয়ে থাকছি। এজন্য কাব্বালাহ যখন আমাদের নিকট জগতের আসল রূপ প্রকাশ করে তখন এটা যেকোন ব্যক্তিকে প্রকৃতির অপোজিশনে এমন বাস্তবসম্মতভাবে বসায় যে এটা আমাদেরকে সত্যিকারের জীবন পরিচালনায় সহায়তা করে। যদি মানুষ কাব্বালাহ কি তার সম্পর্কে জানত, তবে আজকের বিদ্যমান সংকটগুলোর সম্মুখীন হতে হত না। আমাদের বর্তমান সংকটগুলো আছে শিক্ষাদীক্ষায়,সংস্কৃতি ও পারিবারিক জীবনে। ডিভোর্স রেট বাড়ছে,বাচ্চারা ঘরছাড়া হচ্ছে, ড্রাগ ইউজ বাড়ছে, সন্ত্রাস ও বৈশ্বিক জঙ্গীবাদ ইত্যাদি সকল সমস্যা এজন্যই হচ্ছে যে আমরা বিশ্বকে অনুভব করিনা। এজন্যই কাব্বালাহ চলে এসেছে এসবের ব্যাখ্যা দান করে আমাদের মধ্যে অপূর্ব ঐকতান সৃষ্টির জন্য।"[৩১]


অর্থাৎ কাব্বালাহ মূলত প্রকৃতির নীতিকে ইচ্ছেমত পালটে দিয়ে কার্যসিদ্ধির পথ বাতলে দেয়, অর্থাৎ স্পষ্ট করে বললে উচ্চমাত্রিক যাদুবিদ্যার শিক্ষা দেয় যার জন্ম বাবেল শহরে। এখানে র‍্যাবাঈ নিজেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাব্বালার অরিজিনকে বলে দিয়েছেন যার ফলে আমাকে এর শেকড় তালাশে সময় ব্যয় করতে হয়নি। র‍্যাবাঈ মুখের এই ব্যবিলনীয়ান অরিজিনের কথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনেও[২:১০২] বলেছেন ফলে এদের বিদ্যা বা জ্ঞানের আসল পরিচয়টা খুবই স্পষ্ট। আশ্চর্যের বিষয় হলো এখানে র‍্যাবাঈ নিজেই যাদুবিদ্যাকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে গিয়ে এর যাদুবিদ্যা লেবেলকে খণ্ডনের চেষ্টা করেন। এটা যাদু না বরং এ্যাডভান্স ফিজিক্স! কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈদের কাছে বাবেল শহর খুবই পবিত্র স্থান।র‍্যাবাঈ লাইটম্যান অন্যত্র এর স্তুতিপাঠ করতে গিয়ে বলেন,"পৃথিবী নামক গ্রহে অনেক জায়গা রয়েছে, অনেক মানুষ রয়েছে। আমরা সকলেই একটা অঞ্চল থেকে এসেছি, সেটা হলো ব্যবিলন। একটা সময় ছিল যখন আমরা সকল মানব সম্প্রদায় সেখানে ছিলাম, সেখান থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ি। বর্তমানে আমরা প্রায় ৭ বিলিয়ন মানুষ যারা একে অপরকে বুঝি না তবে এরপরেও আমাদেরকে এই স্বীকৃতি দিতেই হবে যে যদিও আমরা সকলেই আমাদের আদি নিবাস বাবেল শহর থেকে দূরে বাস করি,আমরা একটি পরিবারের মতই, পৃথিবী গ্রহটি একটি মাত্র স্থান, যেখানে আমরা সকলে ইন্টারকানেক্টেড। বিজ্ঞান, গবেষণা এবং প্রকৃতি আমাদের নিকট প্রকাশ করে,আমরা পরস্পর কতটা আন্তঃনির্ভরশীল।আমি যদি কোন কর্ম সম্পাদন করি, তবে সেটা অন্য কাউকেও অন্য একটি কর্ম করতে বাধ্য করবে, এভাবে করে একে অন্যজনের উপর কর্ম সংঘটিত করে। এই সিস্টেমটিকে বুঝতে আমাদেরকে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ককে বুঝতে হবে যাতে করে মানব জাতি পরস্পরের প্রতি নিরাপত্তা অনুভব করে। অপর পক্ষে আমরা যদি পরস্পরকে বুঝতে চেষ্টা না করি তাহলে বিভেদ বাড়বে, একে অপরকে হত্যা করতে উদ্যত হবে এমনকি এটা ভয়াবহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও বাধিয়ে দিতে পারে। যখন থেকে আমরা এই ইজরাইল ভূমি থেকে কাব্বালার জ্ঞান ছড়াতে শুরু করলাম, আমরা উত্তর কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চিলি,উরুগুয়ে প্যারাগুয়ে, ম্যাক্সিকো,ইউরোপ, রাশিয়া,আমেরিকা সহ সকল স্থান থেকে ফোন কল আসা শুরু হলো, সকলের একই প্রশ্ন, কি করে আমরা পরস্পরকে এক আত্মার ঐক্যের প্রীতিডোরে বেধে একটি আন্তঃসম্পর্কযুক্ত ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করব। আমি এটা দেখার অপেক্ষায় আছি, যখন গোটা মানবজাতি কাব্বালার জ্ঞানকে ব্যবহার করে বিশ্বজগতের চারদিকে ও উপরের পরিচালনাকারী শক্তির ব্যপারে বুঝে মানবজাতিকে আধ্যাত্মিক ডাইমেনশনে নিয়ে যাবে। এটা করা আমাদের সাধ্যের মধ্যেই আছে এবং আমি নিশ্চিত আমরা কাব্বালার জ্ঞানকে সারাবিশ্বে প্রকাশের মাধ্যমে এর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।"[৬]


র‍্যাবাঈদের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট, তারা মূলত একজন শাসকের নেতৃত্বে এক সরকারবিশিষ্ট বিশ্বব্যবস্থার স্বপ্ন[Utopian Dream] দেখে যেটার স্বপ্ন হাজার বছর পূর্বে প্লেটো আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেখেছেন। প্লেটো মূলত ইহুদি যাদুশাস্ত্রেরই একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন, উপরে আলোচনা গত হয়েছে। শেষ পর্বের দিকে ইহুদিদের এ ইউটোপিয়ান মহাপরিকল্পনাকে ব্যক্ত করা হবে ইনশাআল্লাহ। এই ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডারে বিশ্বশাসকের ভূমিকায় থাকবে তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত মসীহ! এই লক্ষ্যেই এখন কাব্বালার শিক্ষাকে সর্বত্র প্রচার করা হয়েছে। কখনো তা পদার্থবিজ্ঞানের নামে কখনো বা সরাসরি পরিচয় প্রকাশ করে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান যেটা শেখায়, সে শিক্ষাই বিদ্যমান কাব্বালায়, বরং আরো এ্যাডভান্স স্তরের হাইপার ডাইমেনশনাল ইল্ম এতে রয়েছে, যা এখন ফিজিক্সে নগ্নভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। এ্যাস্ট্রলজি বা জ্যোতিষবিদ্যা কাব্বালারই শাখাগত শিক্ষা যেটাকে আল্লাহর রাসূল(স) যাদু সাব্যস্ত করেছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত সামনে আসছে। ডেভিডবোহম, শ্রোডিঞ্জার কিংবা হারামাঈন বিজ্ঞানের নামে যে কজ এন্ড ইফেক্ট, ইন্টারকানেক্টেডনেস,ইন্টারডিপেন্ডেন্সের শিক্ষা দেয় তা শুধুমাত্র বৈদিকই না, এটা আরো রুট লেভেলে কাব্বালারই শিক্ষা। র‍্যাবাঈয়ের কথায় এটা সুস্পষ্ট।

কাব্বালার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো আল্লাহর অস্তিত্ব সংক্রান্ত বিষয়ের কুফরি আকিদা। কাব্বালিস্টরা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা বরং তারা যাদুশাস্ত্রের অনুসরনে সৃষ্টিকর্তার ব্যপারে সর্বেশ্বরবাদি বিশ্বাস পোষণ করে। ওয়াহদাতুল উজুদের আকিদা মূলত যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ থেকেই এসেছে। তাদের মতে সৃষ্টিকর্তা মহাবিশ্বেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, স্রষ্টা থেকেই সৃষ্টি এসেছে। স্রষ্টার অস্তিত্ব এখন কেবল মহাবিশ্ব ও জাগতিক ফিজিক্সের নীতি সমূহ।কাব্বালাহ শেখায় কিভাবে চৈতন্যকে স্রষ্টার আসনে পৌছে নিয়ে প্রকৃতিকে তথা ফিজিক্সের 'ল মনের অধীনে নিয়ে পরিচালনা করা যায়। এজন্য তারা ইগোকে সর্বোচ্চ শাখায় নেয়ার শিক্ষা দেয়। সহজ ভাষায় কাব্বালাহ মানুষকে সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করা শেখায়!পূর্বাঞ্চলীয় যাদুবিদ্যার ট্রেডিশন একদমই বিপরীত এখানে ইগোকে ধ্বংস করতে বলা হয়। প্রায় এক যুগ আগে জেফ্রি স্যাটিনোভার[এম.এস,ফিজিক্স],প্রফেসর উইলিয়াম টিলার, প্রফেসর উল্ফ[পিএইচডি] প্রমুখ বিজ্ঞানীগন ইজরাইলের বিনেঈ বারুচ ইন্সটিটিউট চেয়ারম্যান র‍্যাবাঈ লাইটম্যানের সাথে সভা সেমিনারের আয়োজন করে, কাব্বালাহ ও ফিজিক্সের ইউনিফিকেশনের উদ্দেশ্যে। তখন অশীতিপর ইহুদি আলিম Rev laitman কাব্বালার ইল্মকে প্রকাশের সময় সৃষ্টিকর্তার ব্যপারে কাব্বালিস্টিক ধারনাকে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, "ঈশ্বর হলেন অপরিবর্তনশীল নীতি যেটা সৃষ্টিজগতের সবকিছুকে তার সমতুল্য হবার জন্য পরিচালনা করে আসছে। সুতরাং তারা একক হয়ে গেছে, সৃষ্টি ও স্রষ্টা একত্রে এমনভাবে মিলে যাবে যে তাদের মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না। তাহলে কোন জিনিসটা এ কাজ করতে পারে? সেটা হলো সৃষ্টিই, যা নিজেদের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার সমতুল্য হবার জন্য আশা লালন করতে হবে। আমরা কেন [স্রষ্টার থেকে] আলাদা হয়ে থাকব[? বরং], আমরা উপরের দিকে মিলে যাবার উপায় শিখব। আমরা কিভাবে দুই লেভেলের ব্যপারে শিখব বা জানব? এটা আমাদের অন্তরের দ্বারা [অদ্বৈত অস্তিত্বের] অনুধাবনের দ্বারা সম্ভব যদি আধ্যাত্মিকতার উপরের দিকে যেতে চাইব তাহলেই আমরা কেবল উপরের[জগতের] অবস্থার ব্যপারে বুঝতে শুরু করব। এটাই কাব্বালার জ্ঞান। এর শিক্ষা হলো আমরা ইতোমধ্যেই এই[স্রষ্টার সমকক্ষ] অবস্থাতে আছি,কিন্তু এটা আমরা অনুভব করিনা। কিন্তু আমরা যদি আমাদের তালাবদ্ধ এই অনুভূতি বা বিশ্বাসের অবস্থাকে জাগরিত করে সত্যিকারের [ঐশ্বরিক] অবস্থাকে অনুভব করতে পারি, তাহলে আমরা [ঐশ্বরিক] আলোকে চালিত করতে পারি। আমি এখন এই[ঐশ্বরিক] অবস্থাতেই আছি, কিন্তু আমি এ ব্যপারে সচেতন নই। কিন্তু আমি যদি আমার চৈতন্যকে জাগরিত করতে পারি, আমার আবেগ ও ইচ্ছা অন্যসব অংশকেও জাগ্রত করবে।
তখনই আমরা আধ্যাত্মিকতা অনুভব করব, এর মানে কি? এর মানে হলো, তখন আমরা অনুভব করতে শুরু করব কিরূপে আমরা একে অপরের সাথে এক দেহে বা এক অস্তিত্বে ইন্টারকানেক্টেড[মনিজম/ওয়াহদাতুল উজুদ]। এখন আজকের যুগে সবচেয়ে বড় সমস্যার কাজ হলো গোটা মানবজাতিকে জোর করে উপরের দিকে [চৈতন্যের দিকে] চালিত করা[বা জোর করে গোটা মানব জাতিকে অদ্বৈত অস্তিত্বের কুফরি আকিদার দিকে চালিত করা]।" ডক্টর উল্ফ এত গভীর শ্রোডিঞ্জারিয়ান বৈজ্ঞানিক আকিদা কাব্বালার মধ্যে দেখে মাথায় হাত দিয়ে খানিকক্ষন বসে ছিলেন। তিনি স্তম্ভিত হন এটা দেখে যে, আরউইন শ্রোডিঞ্জার, প্ল্যাঙ্ক,হাইজেনবার্গ যে বৈদিক অদ্বৈত অস্তিত্বের কথা বলতেন, সেই নিগূঢ় মহাবৈজ্ঞানিক উপলব্ধি কাব্বালাই শেখায়। ডক্টর উল্ফ এরপরে সম্বিত ফিরে পেয়ে মাথা থেকে হাত নামিয়ে নিজেকে সামলে আমৃত্যু কাব্বালার প্রচার প্রসারে কাজ করার শপথ করেন ফেলেন![৭]


কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈ এ্যান্থনি কোসনেক চিত্র এঁকে এঁকে কাব্বালার মেটাফিজিক্সের শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,সৃষ্টির শুরুতে স্রষ্টা ও সৃষ্টি একক অবস্থায় ছিল[ওয়াহদাতুল উজুদ]। পরবর্তীতে সৃষ্টিকে বিকশিত করবার মাধ্যমে একক আত্মার অস্তিত্ব থেকে ৬০০০০০ স্বতন্ত্র আত্মায় বিভক্ত হয়, যারা প্রত্যেকেই আলাদা অস্তিত্বকে অনুভব করে,এখনো আমরা একক অস্তিত্বেই বিদ্যমান কিন্তু আমাদের মধ্যে ইগো জন্মানোর ফলশ্রুতিতে ননডুয়াল অস্তিত্বকে অনুভব করতে পারিনা। কাব্বালাহ শেখায় কিভাবে সৃষ্টির পরবর্তী নিন্মমুখী ধাপগুলোকে অনুসরন করে উপরের দিকে চেতনাকে পৌছে স্রষ্টার সমকক্ষতা অনুভব করা যায়। স্বাতন্ত্রের বিভেদ ভেঙ্গে ননডুয়ালিটির অনুভূতিকে চেতনায় জাগ্রত করা যায়।[৮]অর্থাৎ বৈদিক অদ্বৈতবাদী শিক্ষার অরিজিন্স আসলে কাব্বালাহ!

র‍্যাবাঈ লাইটম্যান ল্যারি কিং এর সাক্ষাতে বলেন,"আমি আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী নই।আমরা প্রকৃতির নীতির[law] নিয়ে deal করি,এটা আল্লাহ নয় যার নিকট প্রার্থনা করতে হবে, যাকে ভয় পেতে হবে। আমরা প্রকৃতির নীতির সাথে সংযুক্ত এবং আমাদেরকে এর উপর প্রভাব বিস্তার করতে হবে। এ সিস্টেমটা এভাবেই তৈরি। যেহেতু প্রকৃতির সাথে আমাদের এক প্রকার সম্পর্ক আগে থেকেই রয়েছে,সেহেতু আমরা একে প্রভাবিত করে মানবজাতিকে সমৃদ্ধি-কল্যাণময় অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি। তাই বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিকভাবে দেখুন, আমরা জীবন এবং বৃহত্তরভাবে গোটা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে পারি।"

অর্থাৎ ফিজিক্সের নীতিগুলোকে ব্যবহার করে মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণ ও সমৃদ্ধির দিকে চালিত করা যাদুবিদ্যা কাব্বালার একটি মহাউদ্দেশ্য। আমি নিশ্চিত, এখানে ইহুদী র‍্যাবাঈ এটাকে যেরূপ কল্যাণমুখী কাজ বলে দেখে আজকের অধিকাংশ মুসলিম আলিমসমাজও এটাকে কল্যাণকর কাজ বা উদ্দেশ্য বলে মনে করেন। এতে কোন কিছুই দোষনীয় মনে করে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমনকি যাদুবিদ্যার বিষয়ে যে আলিমদের বিশেষ পাণ্ডিত্য আছে অর্থাৎ রাক্কীগণও অভিন্ন চিন্তা রাখেন!


ইহুদি যাদুকররা শয়তান প্রদত্ত অনন্ত জীবনপ্রদায়ী বৃক্ষের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে। তারা কামনা করে অমরত্বের। এক ইহুদী কাব্বালিস্টকে দেখেছিলাম বিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে আগামী কয়েকদশকের মধ্যে মৃত্যুকে এড়িয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করতে![৯]র‍্যাভ লাইটম্যান বলেন,"টাকা, ক্ষমতা এগুলো সবই পরিপূর্ণতার নিয়ামক। কিন্তু উচ্চমাত্রিক জীবনের ন্যায় অন্য কোন পার্ফেক্ট পরিপূর্নতা আপনি মানবজাতিকে দিতে পারবেন না, যেটা পরিপূর্ন  চিরঞ্জীবিনী[অমরত্ব]। যখন আপনি বুঝতে পারবেন এই রিয়ালিটি কিরূপে কাজ করে এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত, আপনি মানবজাতিকে এমন এক স্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন যেটা স্থান-কালের দিক দিয়ে অনন্ত সীমাহীন। এ ধরনের পরিপূর্নতা বা প্রাপ্তির সামনে মূলত টাকা, সম্পদ ও ক্ষমতার মত সাময়িক প্রাপ্তি কিছুই না।"

অনন্তজীবনপ্রদায়ী বৃক্ষের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেছে Madonna, Britney Spears, Demi Moore, Ashton Kutcher, Guy Ritchie সহ অনেক সুপারস্টার হলিউড অভিনেত্রী - নায়ক ও গায়ক। ইহুদী বংশোদ্ভূত না হলেও সবাই পাড়ি জমাচ্ছে যাদুশাস্ত্রীয় বিশ্বাসব্যবস্থা কাব্বালায়। কারন, এটাই বিজ্ঞান! ল্যারি কিং লাইভে ম্যাডোনা বলেন, "কাব্বালাহ একটি বিশ্বাস ব্যবস্থা যেটা অসাধারণ রকমের সায়েন্টিফিক। আমি আসলে সবসময় আমার জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য খুঁজতাম,জানতে চাইতাম চলমান অশান্তি অনাচারের কারন কি, এসব কি এভাবেই চিরকাল চলতে থাকবে[?]। এরপরে শুনতে পাই কাব্বালাহ খুবই সায়েন্টিফিক একটা বিশ্বাস ব্যবস্থা, এটা মোটেও ডগম্যাটিক বা রিলিজিয়াস নয়।এটা পরোয়া করেনা আপনি কোন জাতি থেকে আসছেন। এবং এরপরে আমি শুনি যে এর শিক্ষক র‍্যাবাঈ যিনি অত্যন্ত জ্ঞানী…।"


এবার চলুন,দেখা যাক এই সাজারাতুল খুলদ বা অনন্তজীবনপ্রদায়ী বৃক্ষের সায়েন্টিফিক ওয়ার্ল্ডভিউ আসলে কতটা সায়েন্টিফিক। এই বৃক্ষ মূলত কিসের শিক্ষা দেয়! কাব্বালাহর ভেতর প্রবেশ করা শুরু করলে আপনি প্রথমেই আবিষ্কার করতে থাকবেন অনেক জটিল জিওমেট্রিক নকশা বা সারণী। এখানে প্রবেশকারীদেরকে ইহুদীরা প্রথমেই কাব্বালার মৌলিক শিক্ষাঃ সাজারাতুল খুলদ বা tree of life এর দিকে নিয়ে যায়। যাদুবিদ্যার এই এ্যাডভান্স ট্রেডিশন ট্রি অব লাইফের জ্যামিতিক নকশার দ্বারা মানব আত্মা বা চৈতন্য  এবং ফিজিক্যাল মহাবিশ্বের ম্যাপকে প্রকাশ করে। আত্মা বা চেতনার ক্ষেত্রে ডায়াগ্রামটি microcosm আর মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে ডায়াগ্রামটি macrocosm। সহজ ভাষায় বললে, তারা শেখায় এই জিওমেট্রিক ম্যাপিং যদি অনুসরণ করা যায় তাহলে যেকোন মানুষ আত্মিক ভাবে সৃষ্টিকর্তার সমতুল্য হতে পারে[মা'আযাল্লাহ], একইভাবে এটি মহাবিশ্বের ডাইমেনশনাল লেয়ারের ম্যাপ। এটি শেখায় কিভাবে ত্রিমাত্রিক জগত উচ্চমাত্রিক জগতের দ্বারা পরিচালিত হয়,এটা শেখায় সৃষ্টিকর্তার [বিকৃত কুফরি] স্বরূপ প্রকৃতি এবং গোটা ননডুয়ালিস্টিক[ওয়াহদাতুল উজুদ/monistic]সৃষ্টিতত্ত্ব। এর দ্বারা র‍্যাবাঈগন বস্তুজগতের সকল রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে বস্তুজগতকে নিয়ন্ত্রন এবং ঐশ্বরিক ক্ষমতা অর্জনের সম্ভাবনার কথা শেখায়। এ ব্যপারটি উপরে উল্লিখিত র‍্যাবাঈদের কথাতেই পেয়েছেন।

 

ট্রি অব লাইফের একেকটি ধাপকে বলা হয় Sephiroth। সেফিরথ গুলোর একদম উপরে আছে কেথার যার অর্থ ক্রাউন। হিন্দু ষড়চক্রেরও সর্বোচ্চে ক্রাউনচক্রের অবস্থান। ট্রি অব লাইফের কেথারের মধ্যে নিন্মদেশীয় সকল sepiroth এর গুন ও বৈশিষ্ট্য সুপ্তাবস্থায় বিদ্যমান। একে বলা যায় ইউনিভার্সাল কালেক্টিভ কনসাসনেস,মহাচৈতন্য, কোয়ান্টাম মাইন্ড প্রভৃতি। যেকোন কিছুর সৃষ্টি, সংগঠন এখান থেকেই হয়। যাদুশাস্ত্রের অনুসারী ইহুদীরা অস্তিত্বের এই অবস্থাকে সৃষ্টিকর্তা বলে। এই সৃষ্টিকর্তা ইব্রাহীম আলাইহিসালাম এর নয় বরং যাদুশাস্ত্রের কুফরি আকিদা,Alternative cosmogony। এজন্যই বনী বারুচ কাব্বালাহ একাডেমির চেয়ারম্যান র‍্যাবাঈ লাইটম্যানকে যখন ল্যারি কিং প্রশ্ন করেন, "আপনি কি আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী?" লাইটম্যান কোনরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই বলেন,"আমি আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী নই।" কাব্বালিস্টদের গুরুরই এই অবস্থা! কেথারকে ভিজুয়ালাইজ করে ফাউন্টেন নামের কাব্বালিস্টিক ফিল্মটি। দেখানো হয় নায়ক ট্রি অব লাইফের আলোকময় সর্বোচ্চ চূড়ার দিকে আরোহণ করবার সময় চৈতন্যের অনেক ট্রাঞ্জিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানেই ইহুদী নায়িকা কে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় অনন্তকাল একত্রে থাকবার[৩৬]।কাব্বালাহ এসেছে ইহুদীদের হাত ধরে,এখন ফিল্মের মধ্যেও এই ইহুদী নায়িকাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে অনন্ত জীবনপ্রদায়ী বৃক্ষের কাছে অনন্তকাল বেচে থাকার!


কেথারের নিচের স্তরে আছে হোকমাহ এবং বিনাআহ। হোকমাহ হচ্ছে কেথার থেকে আসা ম্যাস্কুলিন এনার্জি ফিল্ড যাকে চাইনিজ ট্রেডিশানে বলে ইয়াং। বিনাআহকে বলা হয় ফেমিনিন এনার্জি সোর্স। হোকমাহ এর ধারন কৃত এলোমেলো বিশৃঙ্খল এনার্জিকে পার্ফেক্ট অর্ডারে নিয়ে আসে বিনাআহ।চাইনিজ তাওবাদে একে ইং বলা হয়। একে বলা হয় সৃষ্টির গর্ভ। বিনাআহ'র নিচের সেপিরথকে বলে হেসেড। এখানে মহাজাগতিক আইডিয়া ও আইডিয়াল এর বিকাশ ঘটে যার উপর নির্ভর করে প্রকৃতি চালিত হয়। হেসেডের পাশের সেপিরথ হলো গেবুরাহ [১০]। এখানে মহাবিশ্বের নীতি ও ভারসাম্য নির্ধারিত হয়। কেথার যেমন করে হোকমাহ বিনাআহ এর উৎস বা কেন্দ্র,একইরকম হেসেড ও গেবুরাহ এর কেন্দ্র হচ্ছে নিচের সারির টিফেরাত। টিফেরাতকে মহাজাগতিক ট্রান্সলেটর বলা যায়, এখানে উচ্চমাত্রিক ফোর্স থেকে ফর্মে রূপান্তর হয়। আবার নিন্মমাত্রার ফর্মকে ফোর্সে রূপান্তর হয়। মিস্টিক অকাল্টিস্টরা যে এ্যাসেনশন বা উচ্চমাত্রায় চেতনা এবং নিজেদেরকে অধিষ্ঠিত হবার কল্পনা করে,সেটা এই সেপিরথের দ্বারা। উচ্চমার্গীয় মাত্রার সীমানা এখানেই শেষ। এর নিচে যা আছে তা ত্রিমাত্রিক বস্তুজগতের সাথে সম্পর্কিত। এরপরে নিচে আছে নেটযাক ও হোড। এগুলো মানুষের মন ও চেতনার সাথে সম্পর্কিত। এর নিচে আছে ইয়েসোড। এটা মাইন্ড ও ম্যাটারের সংযোগস্থল। এটা এনার্জি ও ভাইব্রেশন ফিল্ড যা ত্রিমাত্রিক জগতের ম্যাটারকে জেনারেট করে। সব শেষে আছে মালখুত। উপরের সকল সেপিরত মিলে তৈরি হয় মালখুত। এটাই আমাদের ত্রিমাত্রিক বস্তু জগত। কাব্বালিস্টরা শেখায় কিভাবে এই ট্রি অব লাইফের স্তরগুলোয় আরোহন করে নিজেদেরকে কেথার বা ওদের কাল্পনিক monistic স্রষ্টার সমতুল্য হওয়া যায়। সুফি ট্রেডিশনের ফানাফিল্লাহ বাকাফিল্লাহর শিক্ষার সোর্স খুজতে গেলে অবশেষে মেলে এই ইহুদি মিস্টিসিজম কাব্বালাহ! যেহেতু, মালখুত পর্যন্ত সবকিছুই কেথার বা ঐশ্বরিক এ্যামেনেশান[প্রকাশ], কাব্বালিস্টরা বলে এই বস্তু জগত স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার নিজের অস্তিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ সেই সর্বেশ্বরবাদ বা মনিজমের আকিদাহ। All the different emanations emanating from the source[কেথার]। আপনারা হিন্দু তান্ত্রিকদের ষড়চক্রের ব্যপারে দেখে থাকবেন যেখানে শেখানো হয় কিভাবে দেহের মধ্যে কাল্পনিক আলোকবলয়ের জাগরণের দ্বারা সিদ্ধিলাভ করা যায়। ইহুদীদের কাব্বালার ট্রি অব লাইফের এই সেপিরথের শিক্ষাগুলো মূলত এটাই, তবে আরো গভীর এবং বিস্তারিত। এক কাব্বালিস্ট আমাকে বলে বেদান্তশাস্ত্রের সব শিক্ষাকে যদি একটা পিলার হিসেবে ধরা হয় তবে কাব্বালার শিক্ষার মোট তিনটি পিলার আছে। 

অর্থাৎ বেদান্তবাদি শিক্ষা ইহুদীদের যাদুশাস্ত্রের কাছে শিশু,তিন ভাগের একভাগ। বলা যায়, ইস্টার্ন অকাল্ট ট্রেডিশন কাব্বালাহ থেকেই এসেছে অর্থাৎ জন্মস্থান বাবেল শহর। ডানের চিত্রে ট্রি অব লাইফের সেফিরথকে ৩টি স্তরকে আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে। সর্বনিন্ম স্তরকে বলা হয় গাল্ফ,মধ্যস্তরকে বলা হয়  " দ্য ভেইল অব পেরখাহ", সর্বোচ্চ স্তরকে বলা হয় "The Abyss"। হিন্দু বৌদ্ধদের কাছে কেবলমাত্র শেষ ভাগের [গাল্ফ] জ্ঞান রয়েছে। উপরের দিকের দুই স্তর বৈদিক ট্রেডিশনে অজানা। শুধুমাত্র নিন্মস্তরের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ করে হিন্দু ঋষিযোগীরা ভাবে এনলাইটমেন্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে যাদুশাস্ত্রীয় গভীর কুফরি ইল্মের জন্যই ইহুদী কাব্বালিস্টদের এত অহংকার। 



কাব্বালিস্টিক cosmogony বা সৃষ্টিতত্ত্ব শেখায়, কেথার বা মহাচৈতন্য বা একক আত্মা সৃষ্টির শুরুতে সর্বপ্রথম একটি সার্কুলার প্যাটার্ন তৈরি করে। এরপরে সার্কেলের কেন্দ্র থেকে সরে সীমানায় গিয়ে আরেকটা সার্কেল তৈরি করে। এতে ভেস্কাপাইসিস তৈরি হয়। এরপরে দুই সার্কেলের ছেদক বিন্দুতে গিয়ে ক্রমাগত সার্কেল তৈরির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় Seed of life। এরপরে আরো একাধিক সিড অব লাইফের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় flower of life । ফ্লাওয়ার অব লাইফের ভেতরেই আছে tree of life,fruit of life এবং egg of life। Egg of life এর প্যাটার্ন মানুষে দেহের কোষগুলোয় বিদ্যমান। Fruit of life এর সব সার্কেলগুলো একে অপরের সাথে যোগ করলে তৈরি হয় মেটাট্রন কিউব যেটায় সমস্ত প্লেটোনিক সলিড বিদ্যমান। বহুবার উল্লেখ করেছি প্লেটোনিক সলিডগুলোকে যাদুশাস্ত্রে পাচঁটি উপাদানের জিওমেট্রিক শেইপ হিসেবে আরোপ করা হয়। আগুনকে টেট্রাহিড্রন, বায়ুকে অক্টাহিড্রন,মাটিকে কিউব,পানিকে আইকোসাহিড্রন এবং ইথারকে ডোডেকাহিড্রন আকৃতির বলা হয়। সমস্ত জিওমেট্রিক সলিডগুলোর উৎস ফ্লাওয়ার অব লাইফ। কাব্বালাহ শেখায় মহাবিশ্বের সকল বস্তু ফ্লাওয়ার অব লাইফের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এটাই সকল কস্মোর ফ্যাব্রিক্স। সকল বস্তু পাঁচটি ইলিমেন্টের সমন্বয়ে সৃষ্ট পাঁচটি বেসিক জিওমেট্রিক স্ট্রাকচারে [টেট্রাহিড্রন,অক্টাহিড্রন, কিউব,আইকোসাহিড্রন, ডোডেকাহিড্রন] যাকে প্লেটনিক সলিড নামে পরবর্তীতে ডাকা হয়। এ সকল সলিড গুলোর সবচেয়ে মৌলিক জিওমেট্রিক শেইপ হলো টেট্রাহিড্রন। কাব্বালিস্টরা টেট্রাগ্রামাটনকে ঐশ্বরিক আকৃতি বলে অভিহিত করে। সকল সলিডগুলো টেট্রাহিড্রন দ্বারা সৃষ্ট। এটাই যাদুশাস্ত্রের কুফরি আকিদা অনুযায়ী মহাবিশ্বের ফান্ডামেন্টাল বিল্ডিং ব্লক। প্রাচীন যাদুশাস্ত্র অনুযায়ী সাব এ্যাটোমিক রেল্মে এনার্জির জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার হচ্ছে টেট্রাহিড্রন, সে হিসেবে আধুনিক বিজ্ঞানের শিক্ষানুযায়ী প্ল্যাঙ্ক স্কেলের জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার হবে টেট্রাহিড্রন! যদি বিজ্ঞান এর স্বীকৃতি দেয়, তবে সন্দেহাতীতভাবে বলা যাবে, যে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ফিরে গেছে বাবেল শহরে। 

 

যাইহোক,মহাবিশ্বের যত যাই আছে সবকিছুতেই প্লেটনিক সলিড বিদ্যমান, যেটা এসেছে মেটাট্রন কিউব থেকে,যেটি এসেছে ফ্রুট অব লাইফ থেকে,যেটি এসেছে ফ্লাওয়ার অব লাইফ থেকে,যেটা তৈরি করেছে মহাচৈতন্য। যাদুশাস্ত্রীয় জ্যামিতিক প্যাটার্নঃফ্লাওয়ার অব লাইফের দেখা মেলে ব্যবিলন,চীন,ভারত,মিশরসহ সকল যাদুবিদ্যার স্বর্গভূমিতে। এর সবচেয়ে পুরাতন নিদর্শন রয়েছে মিশরের  আবিদোসে অবিস্থিত দেবতা সেটির মন্দিরের পাশেই ওসিরিয়ন মন্দিরের নিচের দেয়ালে। বিংশ শতকের শেষভাগে Flinders Petrie ও Margaret Murray নামের দুজন বালুতে ঢাকা প্রাচীন এ মন্দির খনন করার সময় হঠাৎ আবিষ্কার করেন[৩৪]। ফ্লাওয়ার অব লাইফ ঠিক সেখান থেকেই এসেছে যেখান থেকে ট্রি অব লাইফের জ্ঞান এসেছে। অর্থাৎ র‍্যাবাঈদের ভাষায় কাব্বালার জন্ম যেখানে। মানে বাবেল শহর। ক্রপসার্কেলের বিষয়ে বিগত পর্বে লিখেছিলাম, আপনারা জানেন এই ক্রপসার্কেলের বিচিত্র স্যাক্রিড জিওমেট্রিক প্যাটার্ন গুলোর পিছনে কারা আছে। বিগত বছর গুলোয় অসংখ্যবার ক্রপসার্কেলে ট্রি অব লাইফের পাশাপাশি ফ্লাওয়ার অব লাইফকেও দেখানো হয়েছে। পাশ্চাত্যের স্পিরিট মিডিয়াম চ্যানেলকারীরা বলে থাকে এই উচ্চমাত্রিক প্রাণসত্তাগুলো আমাদের জ্ঞানগত উৎকর্ষলাভের জন্যই স্যাক্রিড জিওমেট্রির শিক্ষাকে আবারো হাইলাইট করছে। সাজারাতুল খুলদের জ্যামিতিক প্যাটার্ন মূলত ফ্লাওয়ার অব লাইফেরই অংশ। এবার প্রিয় পাঠক বলুন, যাদুশাস্ত্রের স্বর্গভূমির কোন এক প্যাগান মন্দিরের অপবিদ্যাকে যদি আজ এ্যাডভান্স পদার্থ বিদ্যায় ফিরে আসতে দেখেন তাহলে, এই পদার্থবিজ্ঞানের আসল পরিচয়কে কি বলবেন? 


 

 

সেক্রিড জিওমেট্রি দ্বারা কাব্বালাহ মহাবিশ্বের গঠনতত্ত্বের শিক্ষা দেয়। সেই সাথে বহুমাত্রিক বিশ্বব্যবস্থার শিক্ষা দেয়। এটা মানুষকে শেখায় কিভাবে আমাদের মাত্রার জগত তৈরি হয়েছে। এটা শেখায় উচ্চতর মাত্রাগুলো নিন্মস্তরের মাত্রাকে সৃষ্টি করে, অর্থাৎ ৮ম মাত্রা ৭ম, ৭ম মাত্রা ৬ষ্ঠ। এরকমভাবে আমাদের ৩য় মাত্রা ৪র্থ মাত্রার প্রজেকশন। মনে করুন, আমদের এই রিয়ালিটি হায়ার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটির ছায়া বা প্রজেকশন। কথাগুলো খুব পরিচিত মনে হচ্ছে?  জ্বি, আমি সেই এ্যালিগোরি অব কেইভের কথাই বলছি, যার ব্যপারে প্লেটো বলেছিলেন। প্লেটোর আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটির শিক্ষার উৎস ইহুদী যাদুবিদ্যা কাব্বালাহ! কাব্বালাহ শেখায় কিভাবে মানবচৈতন্যের বিশেষ ব্যবহারের দ্বারা উচ্চমাত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে আমাদের জগতকে ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। সার্জিও নামের ক্যালিফোর্নিয়ার জনৈক বাসিন্দা র‍্যাবাঈ লাইটম্যানকে প্রশ্ন করেন, জীবনের উদ্দেশ্য কি? উত্তরে লাইটম্যান বলেন,"আমাদের জীবনের একাধিক উদ্দেশ্য আছে যেটা অর্জনের জন্য আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে। আমাদেরকে সবার প্রথম এটা মেনে নিতে হবে যে আমরা খুবই ছোট্ট একটা জগতের মধ্যে আবদ্ধ আছি, ধরুন আমরা এত ছোট জগতে আছি যে এটা অচেতন থাকার মতই। আমাদের চেতনার জাগরন ঘটাতে হবে, আমরা যে ক্ষুদ্র জগতের ধারনার মাঝে আবদ্ধ আছি সেটা থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর জগতের দিকে যেতে হবে, যেটা উচ্চতর ডাইমেনশন। এবং সেই উচ্চতর মাত্রায় নতুন অনন্ত সীমাহীন জীবনকে খুজে বের করা।এবং এরপরে সেই উচ্চতর শক্তি(force) অর্থাৎ স্রষ্টাকে(পেয়ে তার সমকক্ষতা অর্জন করা) যেটা এই জাগতিক সিস্টেমকে পরিচালনা করে। সুতরাং জীবনের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আসল বাস্তবতাকে[রিয়ালিটি] জানা যেটা আমাদের থেকে এখনো গুপ্ত অবস্থায় আছে। আমাদের এ জগতে যা কিছুই আছে তা সবই উচ্চতর জগতের[ডাইমেনশন] ফলাফল[শ্যাডো]। আমরা যে রেসপন্সটি উচ্চতর মাত্রায় পাঠাতে চেষ্টা করি এটাই আমাদের [ত্রিমাত্রিক] জাগতের ঘটনায় প্রভাব বিস্তার করে।এজন্য আমাদের জন্য কর্তব্য যে আমাদের চেতনাকে উচ্চতর মাত্রার দিকে জাগ্রত করা যা কিনা ইতিবাচকভাবে আমাদের এ জগতের ঘটনায় প্রভাব বিস্তার করবে। কাব্বালার জ্ঞান সকলের[সমগ্র মানবজাতির] জন্য সর্বপ্রথম প্রাচীন বাবেল শহরে নাযিল হয়। এবং ঠিক তখন থেকেই কাব্বালার সমস্ত শাস্ত্র সমূহ মানুষকে সৃষ্টিজগতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এ শিক্ষা দেয় যে, সকল মানুষকে উচ্চমাত্রিক বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে সকলকে পূর্ণাঙ্গ এবং উৎকর্ষময় জীবন অর্জন করানো। 

আমাদের সরকার ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টরা মূলত পাপেটের ন্যায়। মানুষ তাদেরকে তাদের ক্ষমতা দেখে মান্য করে। কিন্তু এই প্রেসিডেন্টগনও উচ্চতর মাত্রার[ডাইমেনশন] ফোর্স্ফিল্ড[force-field] দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাদের প্রতিটি কাজই উচ্চতর মাত্রার ঘটনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখন আপনি সাধারন মানুষ হয়ে উচ্চতরমাত্রায় পৌছে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে সেখানে চালিত করতে পারেন, যেটা দ্বারা পরবর্তীতে ওইসকল প্রেসিডেন্টগন চালিত হবেন। অর্থাৎ এভাবে আমি সাধারন মানুষ হয়েও প্রেসিডেন্টদের চেয়েও উচ্চস্তরের লোক হতে পারি। কাব্বালাহ এটাই শেখায়। জ্বি কাব্বালাহ রিয়ালিটিতে প্রভাব বিস্তার কর‍তে শেখায়। আমরা সকলেই একটা স্থানে[Dimension] আছি যেখানকার খুব অল্প অংশই[মাত্রা] আমরা অনুভব কর‍তে সক্ষম। আমরা অনেকটা অচেতন অবস্থায় আছি, আমাদের প্রয়োজন এই অচেতনা ভেঙ্গে চৈতন্য[consciousness] অর্জন করা। তবেই আমরা এটা আবিষ্কারে সক্ষম হব যে, আমরা এক সমৃদ্ধশালী অনন্ত চিরস্থায়ী ডাইমেনশনে আছি এবং আমাদের এই ত্রিমাত্রিক জগতকে তখন একদমই ম্লান মনে হবে। আমরা এখন এ জগতে এমন অবস্থায়ই আছি যেন তা এক চেতনাহীন বিবর্ণ স্বপ্নময় এক জগত যেটা থেকে আপনি যদি জাগ্রত হন তবে এ জগতকে আপনি একেবারেই বিবেচনা করবেন না। এটা অনেকটা এরকম যে কোন একজন ব্যক্তি ঘুমিয়েছিল এবং ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু একটা স্বপ্নে দেখেছে। কিন্তু এখন যেহেতু[উচ্চতর মাত্রায় অধিষ্ঠিত হয়েছে] জাগ্রত হয়েছে, এই বাস্তবতাই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাব্বালাহ শেখায় যে, একটি মাত্র ফোর্সফিল্ড আছে যেটা প্রকৃতির শক্তি। এই ফোর্স বা শক্তিটি অন্যসকল শক্তিকে একীভূত করে। সবকিছুই যা ঘটেছে বা ঘটবে সকল শক্তি,সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। এই একক ফোর্সই সমগ্র রিয়ালিটিকে পরিচালনা করে। এটা মূলত একটা ফিল্ড। এটা সকল জীব ও জড়বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত। কাব্বালার বিদ্যা আমাদেরকে এজন্যই দেয়া হয়েছে যাতে করে আমরা এই ফোর্সফিল্ডের ব্যপারে জানতে পারি এবং এটাকে সবকিছুর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি। এই ফিল্ড মূলত জেনারেল কনক্লুসিভ ল' অব ন্যাচার। সায়েন্সও এটাকে এভাবেই এভাবেই বলে। এজন্য এটা একটা ইউনিক উইসডম। বর্তমানে আমরা এই বিদ্যার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মাধ্যমে। কারন যখন আমরা সবচেয়ে নিন্মতম স্তরের রিয়ালিটিতে যাচ্ছি আমরা এটমের কাছে যাচ্ছি এরপরে আরো ভিতরের দিকে যাচ্ছি এবং দেখতে পাচ্ছি যে সকল ঘটনাই অবজারভারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানেই আমাদের পদার্থবিদ্যার উন্নয়নের জন্য কাব্বালার জ্ঞান দরকার। আমি মনে করি মানুষকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা কোন কোন সমস্যারই সমাধানই করতে পারব না যদি না আমরা বিগত সহস্রবছর যাবৎ বার বার করে আসা একই ভুল থেকে বের হই। আমরা মনে করি আমরা মানবকে পরিবর্তন করে উন্নততর জীবনের দিকে যেতে পারি, এখন আমাদের প্রথম জেনারেশনকে দেখা যাচ্ছে হতাশার দিকে চলে যাচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের শিশুসন্তানেরা। তারা জীবনকে এভাবে দেখছে যে, এই জীবন এভাবেই চলছে, কিছুই পরিবর্তনের নেই,ফলে একরকমের হতাশা চলে আসছে মূলত এভাবে করে গোটা মানবজাতির মাঝেই এমন ভাব চলে আসছে। এটা হবার কারন বিগত হাজার বছরের একইরকমের জীবনাচরণ। আমরা এটাকে ভাল লক্ষণ হিসেবে দেখি। আমরা তাদেরকে বলব এভাবে নৈরাশ্যের কিছু নেই, কারন এটা গোটা পৃথিবীরই ক্রাইসিস। এটা একটা পূর্বাভাস যে আমাদেরকে এমন একটা স্থানে[উচ্চতর মাত্রা] অধিষ্ঠিত হওয়া উচিৎ যেখান থেকেই সমস্ত কিছু পরিচালিত[governed] হয়। যেখানকার শক্তি দ্বারা আমরা নিজেদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারব, নিজেদেরকে সংযুক্ত করতে পারব, এবং সমৃদ্ধিময় জীবন গড়তে পারব, সকল সমস্যা ও অভাবের মোচন সম্ভব হবে। আমি মনে করি এখন যাই ঘটছে সেটা কাব্বালাহকে সায়েন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে নিয়ে আসবে এবং প্রতিষ্ঠিত করবে।"[১১]


সুতরাং বুঝতেই পারছেন কাব্বালাহ মূলত হাইপার ডাইমেনশনাল এ্যাডভান্স ফিজিক্স। এটা মানুষকে অনন্ত  উচ্চমাত্রিক কথিত স্বর্গের অনন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি দেয়। যেখানে অভাব সংকট বলে কিছু নেই। সবকিছুই প্রাচুর্যপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ। এটা প্রথমত ত্রিমাত্রিক জগতে ভাগ্য ও জীবন যাত্রায় প্রভাব বিস্তারের দ্বারা উৎকর্ষের স্বপ্ন দেখায় এবং পরবর্তীতে গোটামানব জাতিকে উচ্চতর স্বর্গীয় মাত্রায় অধিষ্ঠিত হবার প্রতিশ্রুতি দেয়। হয়ত  কাব্বালিস্টিক মিসায়াহই উচ্চতরমাত্রায় ট্রান্সেন্ড করবার প্রতিশ্রুতিকে পরিপূর্নতা দিতে শুরু করবে ডিজনির Tomorrowland ফিল্মের অনুরূপ। আমরা হাদিসে ইহুদীদের অবতারের এক হাতে জান্নাতের প্রলোভনের কথা দেখতে পাই। এই র‍্যাবাঈ কি সেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছে কিনা আল্লাহই ভাল জানেন। 

কি বলবেন, যদি কাব্বালিস্টিক-প্লেটোনিক Allegory of cave এর আইডিয়ালিস্টিক যাদুশাস্ত্রীয় অকাল্ট শিক্ষাকে পদার্থবিজ্ঞান সায়েন্স হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করতে দেখেন? 


জ্বি,আধুনিক বিজ্ঞান পরিপূর্নভাবে ফিরে গেছে বাবেল শহরে। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত কোয়ান্টাম গ্রাভিটি রিসার্চ সেন্টার চেষ্টা করছে একটা Theory of Everything আনবার জন্য। তাদের প্রস্তাবিত থিওরির নাম ইমার্জেন্স থিওরি। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং গ্রাভিটিকে ইউনিফাই করার জন্য মেইনস্ট্রিম সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে তারা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে আছে। তাদের গোড়া অন্য সকলের চেয়ে শক্ত, কেননা তারা পদার্থবিজ্ঞানের কোয়ান্টামগ্রাভিটির উপর ভিত্তি করে গবেষণা চালাচ্ছে, সেই সাথে পদার্থবিজ্ঞানী গ্যারেটলিসির লি এ্যালজেব্রাকেও ব্যবহার করছে। মজার বিষয় হচ্ছে, তারা পূর্ববর্তী সমস্ত [অপ]বিজ্ঞানীদের অনুসরণে যাদুশাস্ত্রভিত্তিক থিওরি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে,তারা সরাসরি ইহুদি যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ তথা ব্যবিলনীয়ান আইডিয়ালিস্টিক অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে বিজ্ঞানে স্পষ্টভাবে নিয়ে এসেছে। যেহেতু তাদের গ্রাউন্ডই কোয়ান্টাম গ্রাভিটির উপর প্রতিষ্ঠিত, সেহেতু সরাসরি আইডিয়ালিস্টিক ঐন্দ্রজালিক ফিজিক্সে আসতে কোন সমস্যা হয়নি। তাদের প্রকাশিত অফিশিয়াল ভিডিও ডকুমেন্টারি :
What is Reality[৩২] তে উপস্থাপিকা ম্যারিয়ন কির দেখান; কিভাবে ত্রিমাত্রিক ক্রিস্টাল মাটিতে দ্বিমাত্রিক শ্যাডো প্রজেক্ট করে। এর তাৎপর্য হচ্ছে প্লেটোর allegory of cave অর্থাৎ আমাদের এই চেনাপরিচিত ত্রিমাত্রিক জগত বহুমাত্রিক উচ্চতর জগতের প্রজেকশন বা ছায়া। ডকুমেন্টারির ২:৪১ মিনিটে সরাসরি বলা হয় ত্রিমাত্রিক এ জগতের ফান্ডামেন্টাল বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে টেট্রাহিড্রন[১২]! কোয়ান্টাম গ্রাভিটি রিসার্চের[QGR] ডিরেক্টর পদার্থবিজ্ঞানী ক্লি আরউইন বলেন,"জিওমেট্রির সবচেয়ে সরলতম বিল্ডিং ব্লক সবসময়ই সিমপ্লেক্স। উদাহরণস্বরূপ দ্বিমাত্রিক সিমপ্লেক্স হলো ইক্যোয়ল্যাটারাল ট্রায়াঙ্গল। এবং রিয়ালিটি দেখতে ত্রিমাত্রিক। সুতরাং কেউ যদি খোজে, থ্রি
ডাইমেনশনাল রিয়ালিটিতে সবচেয়ে সিম্পল বিল্ডিং ব্লক কি হতে পারে, সবচেয়ে সিম্পল থ্রিডি বিট অব ইনফরমেশন কি হতে পারে। সেটা থ্রিসিমপ্লেক্স হতে পারে,যাকে টেট্রাহিড্রন বলা হয়। আমরা যতই দেখেছি, ততই বুঝতে সমর্থ হচ্ছি যে, আপনি স্পেস-টাইম ও পার্টিকেল ফিজিক্সকে রেগুলার টেট্রাহিড্রন দ্বারা মডেল করতে পারবেন। আপনি যদি এমন একটি কোড আবিষ্কার করেন যেটা হায়ার ডিমেনশনাল ক্রিস্টালের প্রজেকশন থেকে লোয়ার ডিমেনশনাল স্পেসে তৈরি হয়, আপনি টেট্রাহিড্রনসমূহের একটা কন্সট্রাক্ট খুজে পাবেন, যেটা হাইলি অর্ডার্ড, তাই বলে এমন অর্ডার্ড নয় যেমনটা চেকার্ডবোর্ড, যেটা কিনা ডিটারমিনিস্টিক, এটা সিন্ট্যাক্টিক্যাল ফ্রিডম দ্বারা অর্ডারড, যেখানে আপনি এটা ওটা এভাবে সেভাবে রাখবেন তবে ৩য় অংশকে ডানে বা বায়ে স্বাধীনভাবে রাখতে পারবেন। সুতরাং আপনি ভাষাকে তৈরি করছেন না বরং এটা প্রথম জিওমেট্রিক প্রিন্সিপলেই দেয়া ছিল। আপনি যখন হাতে একটা তারের ফ্রেমের কিউব হাতে নেন এবং সূর্যালোকের নিচে ধরে মাটিতে ছায়া তৈরি করেন, আপনি [ছায়ার] কিউবের ১২টি প্রান্তসীমাকে সৃষ্টি করেন না, যেটা পরস্পর লোপ পেয়ে খাপ খাইয়ে নেয়। এটা আপনাকে জিওমেট্রিক ফার্স্ট প্রিন্সিপলেই দেয়া ছিল, যেমন ধরুন, পিথাগোরিয়ান থিওরামে, যেটা কিউবের এ্যাঙ্গেলের ছায়াতে পাওয়া যায়। আপনি একটি হায়ার ডিমেনশনাল ক্রিস্টাল নিয়ে ত্রিমাত্রিক শ্যাডোতে আনতে পারেন। আমরা ই৮ ক্রিস্টালকে ত্রিডিতে প্রজেক্ট করি যেটা একটি কোয়াজিক্রিস্টাল কোড বা ল্যাঙ্গুয়েজ উৎপন্ন করে। এবং সেটা টেট্রাহিড্রনকে আমাদের চারপাশের জগতের পার্টিকেল ও ফোর্সকে গঠন করায়। তো আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিজিক্সকে কোয়াজিক্রিস্টাল কোড দ্বারা মডেল করা যেটা সবচেয়ে সরলতম ত্রিমাত্রিক ইনফরমেশন বিট তথা টেট্রাহিড্রন দ্বারা তৈরি।"[১২]


অর্থাৎ রিয়ালিটিতে টেট্রাহিড্রন হচ্ছে প্ল্যাঙ্ক পিক্সল বা সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্যের জিওমেট্রিক শেইপ। এই টেট্রাহিড্রাগুলো জটিল গাণিতিক নীতির উপর ভিত্তি করে সমস্ত বস্তু গঠন করে এবং এটাই গোটা স্পেসকে পরিপূর্ন করে রেখেছে। এর যেকোন একটা টেট্রাহিড্রন এর বিশেষ কোন এ্যাঙ্গেলে ঘুরে যাওয়া, স্পেসের অন্য সকল টেট্রাহিড্রার দিককে নির্ধারন বা সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। এখন প্রশ্ন হবে টেট্রাহিড্রনগুলোর সঞ্চালন এবং কে কোনদিকে কত ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলে ঘুরে থাকবে সেটার নির্ধারক কে? উত্তর হচ্ছে- ইউনিভার্সাল কালেক্টিভ কন্সাসনেস, কোয়ন্টাম মাইন্ড বা ব্রহ্মচৈতন্য।QGR[Quantum Gravity Research] এর ডকুমেন্টারিটি এটাই সরাসরি বলে ৪:১১ মিনিটে! আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি রিয়ালিটির ফান্ডামেন্টাল টেট্রাহিড্রাল স্ট্রাকচার সংক্রান্ত বিদ্যা প্রাচীন যাদুকরদের মৌলিক যাদুশাস্ত্রীয় শিক্ষা। 

কোয়ান্টাম গ্রাভিটি রিসার্চ সেন্টারের অফিশিয়াল লোগোটাই রেখেছে অকাল্ট সেক্রিড জিওমেট্রির টেট্রাহিড্রন! অতএব আমরা সন্দেহাতীতভাবে বলতে পারি, আজকের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান মূলত ব্যবিলনীয়ান অকাল্টেরই আধুনিক সংস্করণ। তাছাড়া আপনারা স্পষ্ট দেখছেন এরা প্লেটোর কাব্বালিস্টিক এ্যালিগোরি অব কেইভের বর্ননাই দিচ্ছে ফিজিক্সের ভাষায়, যেখানে বলা হচ্ছে ত্রিমাত্রিক জগত উচ্চমাত্রাসমূহের ছায়া! এখানেই শেষ নয়, স্বীকৃতি দিচ্ছে প্যান্থেইস্টিক ননডুয়ালিটির সেই কুফরি অদ্বৈতবেদান্তবাদী আকিদার যার উপর কোয়ান্টাম মেকানিক্স দাঁড়িয়ে আছে। মহাচৈতন্যই সবকিছুর মূল! সম্ভবত, আইনস্টাইনের প্রতি কোয়ান্টাম ফিজিসিস্টদের সব ক্ষোভ-রাগ এই ডকুমেন্টারি দ্বারা মোচন হয়েছে, কারন এতে চরমভাবে আইনস্টাইনকে নিয়ে কৌতূক করা হয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত থিওরিকে সত্যিই ToE হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায়, কারন তারা বিগত আলোচনায় দেখানো সকল কুফরি আকিদাগুলোকে একত্রিত করেছে। তারা থিওরি অব এভ্রিথিং এ সাতটি বিষয়ের সংযোগ ঘটিয়েছে। 

১.ইনফরমেশন[রিয়ালিটি ইনফরমেশন বিট দ্বারা তৈরি ম্যাট্রিক্স ফিল্মের অনুরূপ]

২.Causalty loop [বিগত পর্বে অরোবোরাস ও প্রিডেস্টিনেশন নামের ফিল্মের সমন্বয়ে আলোচনা করেছি।আগামী পর্বে আরো গভীর আলোচনা আসছে]

৩.নন ডিটারমিনিজম[কোয়ান্টাম ফিজিক্সের একদম মৌলিক বৈশিষ্ট্য, তাকদির বলে কিছু নেই সবকিছুই নিজের শক্তিতে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে,আনলিমিটেড পটেনশিয়ালিটি]

৪.চৈতন্য[মহাবিশ্ব পুরোটাই একক মহা চৈতন্য, কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে লেখা পোস্টে গত হয়েছে] 

৫.পিক্সেলেশান[সবকিছুই পিক্সেলেটেড, এটা ডিজিটাল ফিজিক্সের অংশ] 

৬.E8 crystal[অষ্টমাত্রিক ক্রিস্টালকে ব্যবহার করে হাইপারডাইমেনশনাল কাব্বালিস্টিক রিয়ালিটিকে বোঝানো হয়েছে]

৭.গোল্ডেন রেশিও[সবকিছুই জিওমেট্রিক]


QGR documentary ৭:২০ মিনিটে রিয়ালিটিকে জিওমেট্রিক ইনফরমেশন বলার সাথে সাথে ইহুদী পতাকার স্টার অব ডেভিডের মধ্যে সমস্ত প্রাচীন কাব্বালিস্টিক সেক্রিড জিওমেট্রি তথা ফ্লাওয়ার অব লাইফ,ট্রি অব লাইফ,মেটাট্রন কিউব, প্লেটনিক সলিডস দেখানো শুরু করে। সেই সাথে দেখায় বৈদিক শ্রীযন্ত্র। আশ্চর্যজনকভাবে এতে এস্ট্রলজিক্যাল চার্ট ও সিম্বলকেও দেখায়[৭:২২]। এর তাৎপর্য অবশ্যই হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্সে আছে, সেটা এ পর্বের শেষদিকে ভালভাবে বুঝতে পারবেন। সুতরাং QGR রিয়ালিটির ব্যপারে যাদুবিদ্যা কাব্বালাহর কুফরি আকিদাকেই সত্যায়ন করছে। ইহুদি আইনস্টাইন বলতেন যে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সবই একই সাথে বর্তমান। অর্থাৎ 'সব সময় সব সময়ে বিদ্যমান'। আপনার ফেলে আসা অতীত এখনো অতীতের টাইম ফ্রেমে বর্তমান। সেটা এখনো বর্তমানেই অস্তিত্বশীল! সহজ উদাহরণ হলো যেকোন ভিডিও ফাইল,যেটার ডিউরেশনের ডানে বায়ে সবদিকেই সমানভাবে যাওয়া যায়। অর্থাৎ সময়টা কোন লিনিয়ারভাবে সম্মুখের দিকে ধাবমান নয়। আপনি অতীতেও যেতে পারেন আবার ভবিষ্যতেও। এটা মূলত মিস্টিসিজম। এই শয়তানি শিক্ষার উপর ভর করে QGR তাদের থিওরি অব এভ্রিথিং-এ কজোয়ালিটি লুপ নিয়ে এসেছে। এর মানে হচ্ছে অতীত ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করতে পারে আবার ভবিষ্যত অতীতকে। প্রিডেস্টিনেশন ফিল্মে যেমনটা দেখানো হয়েছে। এর দ্বারা মহাবিশ্বকে অরোবোরাসের মত বোঝানো হয়েছে যার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত একে অন্যের উপর ইন্টারডিপেন্ডেন্ড। এরকম চিন্তার উদ্দেশ্য হলো মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ও ইতিহাসের ব্যপারে একটা স্বাধীন আত্মনির্ভরশীল ধারনা প্রতিষ্ঠা। অর্থাৎ কোন এক্সটার্নাল ফোর্স বা কোন সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষীতা ছাড়াই মহাবিশ্ব অস্তিত্বে এসেছে। এর অতীত ভবিষ্যত সবকিছুই ওভারব্যালেন্সড। সবকিছু একটা ফিডব্যাক লুপের মাঝে আটকে আছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব নিজেই নিজের স্রষ্টা। ডিরেক্টর ক্লি আরউইন বছরখানেক আগে থিওসফিক্যাল সোসাইটির সামনে এক প্রেজেন্টেশনে তাদের গবেষণাকে তুলে ধরে! সেটার ভিডিও কভারে রাখা হয়েছে ouroboros এর কুফরি সিম্বল!


 ইমার্জেন্স থিওরি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অবজারভার ইফেক্টের উপর নির্ভর করে ইনডিটারমিনিস্টিক রিয়ালিটির কথা বলে যার সবকিছুই কনসাস অবজারভার নির্ধারন করে। মহাবিশ্ব নিজেই হলো মহাচৈতন্য বা ব্রহ্ম বা পর্যবেক্ষক। মহাবিশ্ব নিজেই নিজের ইলাহ, কেননা ইনফরমেশন মহাচৈতন্যের দ্বারা causality feedback loop এর মাধ্যমে অস্তিত্বে আসতে থাকে। এটা একটা ইটারনাল সিক্লিক্যাল লুপ[অরোবোরাস]।

এটা নিয়ে সামনের পর্বে বিস্তারিত আসছে। শৈববিদ্যার ধারক সার্নের পার্টিকেল এক্সিলারেটরে আবিষ্কার হয়েছে যে রিয়ালিটির সকল পার্টিকেল ও ফোর্স একটি অন্যটির মধ্যে কনভার্ট হয়, যাকে বলে গেইজ সিমেট্রি ট্রান্সফরমেশন।এসকল কনভার্শন বা ট্রান্সফরমেশন একটা আট ডাইমেনশনাল জিওমেট্রিক ক্রিস্টাল আকৃতিতে রূপ নেয় যাকে বলে E8 Lattice। কোয়ান্টাম গ্রাভিটির রিসার্চের পদার্থবিজ্ঞানীগন এই আট ডাইমেনশনের ক্রিস্টালকে প্রথমে চারমাত্রার কোয়াজি ক্রিস্টালে প্রজেক্ট করে এরপরে চারমাত্রা থেকে তিনমাত্রার ছায়া তৈরি করে। ত্রিডি কিউবিক ল্যাটিসের বেসিক শেইপ হলো কিউব। তেমনি আটমাত্রার ই৮ ক্রিস্টালের বেজ হলো গসেট পলিটোপ। গসেট পলিটোপকে চারমাত্রায় প্রতিফলন ঘটালে গোল্ডেন রেশিও পাওয়া যায় যেটা আমাদের বাস্তবজগতের সর্বত্র বিদ্যমান। অর্থাৎ পাই রেশিওকে এই এ্যাডভান্স ফিজিক্সে খুজে পাওয়া এর গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়িয়ে দেয়। কোয়ান্টাম গ্রাভিটির ডিরেক্টর পদার্থবিদ ক্লি আরউইন বলেন,"আমরা বাস্তবজগতকে ক্ষুদ্রতম প্ল্যাঙ্কলেন্থে মোজেইক কোড বা ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে দেখি।পার্টিকেল এক্সিলারেটর আমাদেরকে বলে যে সকল পার্টিকেল ও ফোর্স একে অন্যের সাথে উচ্চমাত্রিক ই৮ ক্রিস্টালে আন্তঃসংযুক্ত।তাই আমরা ই৮ ক্রিস্টালকে ত্রিডিতে প্রজেক্ট করি যা একটা কোয়াজিক্রিস্টাল কোড বা ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করে। এটা টেট্রাহিড্রন সৃষ্টি করে যার দ্বারা আমদের বস্তুজগত তৈরি। জিওমেট্রিক এ ভাষার নীতি আছে কিন্তু পাশাপাশি এর সিন্ট্যাক্টিক্যাল ফ্রিডমও আছে অন্য যেকোন ভাষার মত। এর জন্য চাই কোন একজন chooser[নির্বাচক] যে কিনা এই টেট্রাহিড্রাল জিওমেট্রিক ল্যাঙ্গুয়েজের দিক নির্ধারন করবে।
র‍্যান্ডমনেসের ধারনা এখানে ভালভাবে খাটে না কারন সকল অর্থ এ [প্ল্যাঙ্কলেভেলে]অবস্থায় এসে ভেঙ্গে যেতে থাকে। তাছাড়া র‍্যান্ডমনেসের সপক্ষে ভাল কোন এক্সপেরিমেন্টাল এভিডেন্সও নেই। ইউনিভার্সাল কালেক্টিভ কন্সাসনেস হতে পারে এর একটি সমাধান কিন্তু এটা শুনতে নিউএজ ও ধর্মীয় মনে হয়,তবে আজকে সময় একটা ভাল সংখ্যার পদার্থবিজ্ঞানীরা এই ধারনাটি নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেছেন যে আমাদের গোটা মহাবিশ্বটি অন্যকোন মহাবিশ্বের খুবই শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তৈরি একটি কোডবেজড সিমুলেশন। এটা যদি সঠিক হয় তাহলে একই লজিক অনুযায়ী, ওই কম্পিউটারযুক্ত মহাবিশ্বটিও অন্য ইউনিভার্সের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সিমুলেশন। তাই এই ধারণাটি কিছুটা শেইকি কিন্তু এরপরেও অনেক বিশ্বাসযোগ্য নামীদামী ব্যক্তিরা এটা নিয়ে সিরিয়াসলি আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু ইউনিভার্সাল কালেক্টিভ কনসাসনেস অবশেষে ফিজিক্যালি অনিবার্য। আমাদেরকে এ ধারনাটিকে এ্যান্থ্রোপোর্মোফাইজ[Anthropomorphize] বা শুনতে  রিলিজিয়াস বা স্পিরিচুয়াল[আধ্যাত্মিক] করতে হবে না, চলুন কেন করতে হবে না জানা যাক,চলুন কথা বলা যাক আপনার শরীরের একক কোষগুলোর কালেক্টিভভাবে কাজ করাকে নিয়ে। বহু বছর আগে এই পৃথিবীতে এককোষীয় জীবগুলো বসবাস করত। এই প্রানীগুলো খুব একটা স্মার্ট ছিল না।কিন্তু এরা জানত কিভাবে পুষ্টি শোষণ, বংশবিস্তার এবং বিপদ দেখলে পালাতে হয়। এরা পরিবেশগত সচেতনতা এবং বেচে থাকার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে থাকত। এরপরে তারা একত্রিত হয় কলোনিতে, যার ফলে তারা এককভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার চেয়ে আরোবেশি স্মার্ট হয়।এর মাধ্যমে মানুষের মত প্রানীরা চলে আসে। খুবই জটিল চেতনা ও সচেতনতা একত্রিত হয় ৩৭ ট্রিলিয়ন কোষের সমুদ্রের একত্রিত হয়ে মানবদেহ গঠনের মাধ্যমে। এটা মূলত পদার্থবিজ্ঞানের নীতি যে, ইলেক্ট্রন ও কোয়ার্কের দ্বারা ৮১ এ্যাটমে গঠিত হয়ে সেল্ফ অর্গানাইজড মানবচৈতন্য সৃষ্টি করে। এবং ফিজিক্স এটার সীমা নির্ধারন করে না যে কতটা এনার্জি ম্যাটার একত্রিত হয়ে সেল্ফ অর্গানাইজড কনসাস সিস্টেম তৈরি করে।"

এখানে পদার্থবিদ আরউইন শ্রোডিঞ্জারের আধ্যাত্মিক শিষ্য ক্লি আরউইন সেই বেদান্তশাস্ত্রের সর্বেশ্বরবাদি মহাচৈতন্যকে সত্যায়ন করতে গিয়ে নিউএজ প্যাগান মুভমেন্টের কুফরি আকিদার সাথে সাদৃশ্যের স্বীকৃতি দেন। কিন্তু এটা কেন সায়েন্টিফিক বিশ্বাস, তার ব্যাখ্যাতে কোষের বিবর্তনবাদী ফর্মেশনের কুফরি উদাহরণকে আনেন। তার মতে যেভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন কোষ মিলে একটা চেতনাযুক্ত মানবদেহ গঠন করে ঠিক একইভাবে মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল স্বতন্ত্র চেতনাধারী অংশ একত্রিতভাবে মহাচৈতন্য[Universal Collective consciousness] বা ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করে। এভাবে এই মহাবিশ্বই নিজেই নিজের অস্তিত্বদানকারী স্বাধীন ঈশ্বর। অর্থাৎ ফিরে গেছে সেই ইহুদী পরিবারে বেড়ে ওঠা বারুচ স্পিনোজার সর্বেশ্বরবাদে। এরা মূলত সকলেই "বনী বারুচ কাব্বালা একাডেমী"র সম্মানিত ছাত্র-শিক্ষক। এই যাদুশাস্ত্রীয় কুফরি আকিদার প্রচারক। প্লেটনিক আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটিতে প্রত্যাবর্তন একদিনে হয়নি। জোড়তোড়ভাবে শুরু হয় আশির দশকে। ১৯৮০ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ,কেমিস্ট ও ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট জেমস মুনই কাব্বালার জিওমেট্রিক শিক্ষাগুলোকে প্রকৃতিতে আরোপের কাজ সর্বপ্রথম শুরু করেন।তিনি জোর দিয়ে বলতেন, সমস্ত কেমিক্যাল টেবিল অব ইলিমেন্ট এই পাঁচটি জিওমেট্রিক শেইপে[প্লেটনিক সলিডস] বিদ্যমান।ইউনিভার্সের সমস্ত কিছু এরই আকৃতির উপরে সৃষ্ট। এরপরে রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা এটা প্রমাণ করেছেন যে পৃথিবীর ক্রাস্ট অনেকটা ডোডেকাহিড্রন শেইপের। ২০০৩ সালে নাসা বিজ্ঞানীরা দাবি করেন পাই এর উপর নির্ভর করে গোটা মহাবিশ্বের গঠন একটা ডোডেকাহিড্রনের অনূরূপ অর্থাৎ মহাবিশ্ব সামগ্রিক ভাবে ইথার[যেহেতু ইথারের জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার হচ্ছে ডোডেকাহিড্রন]। এভাবেই কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল মিস্টিসিজম আর প্লেটনিক আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটির ধারনার পুনঃবিপ্লব ঘটে। বর্তমানে ফিজিক্সের বাইরেও গুগল, ক্রোম, উইন্ডোজ, ইবে,টুইস্টার, teletubbies, Yoshi ,power rangers, m&m's, fifth element প্রভৃতি লোগো ও ক্যারেক্টারের মধ্যে সেক্রিড জিওমেন্ট্রিক্যাল ক্লাসিকাল ইলিমেন্টসগুলোর পাঁচ রঙ ব্যবহার করে। এসবের তাৎপর্যের ব্যপারে তারা খুব ভালভাবেই অবগত আছে। অর্থাৎ যাদুশাস্ত্রভিত্তিক চিন্তাধারা আজও জনসম্মুখেই প্রবহমান। 

Documentary Film : What is Reality By Quantum Gravity Research


কোয়ান্টাম গ্রাভিটি রিসার্চ সেন্টারের সাফল্যের সাথে তাদের গবেষণার ডকুমেন্টারি প্রকাশের পর এক বছরের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভের পর ২য় ডকুমেন্টারিঃ Hacking Reality[৩৩] প্রকাশ করে। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন রিয়ালিটি হ্যাক করা শেখাবে অর্থাৎ প্রকৃতির নীতি সমূহকে হ্যাক করে ইচ্ছানুযায়ী

ব্যবহার। মানে যাদুবিদ্যাকে নতুন আধুনিক শব্দে প্রকাশ করেছে। হ্যাকিং শব্দটি ডিজিটাল জিনিসের সাথে সম্পর্কিত, তাদের সায়েন্টিফিক এ্যাপ্রোচটিও ডিজিটাল ফিজিক্সকেন্দ্রিক,তারা সিমুলেশন হাইপোথেসিসকেও গ্রহন করেছে যেখানে রিয়ালিটিকে কম্পিউটার সিমুলেশন বলা হয়, সুতরাং "হ্যাকিং রিয়ালিটি" নামকরণ অবশ্যই যথার্থ। ডকুমেন্টারির শুরুতেই মহাবিশ্বের চিরন্তন অন্তহীন অস্তিত্বের পরিচয় দিয়ে শুরু করে। অর্থাৎ এই মহাচৈতন্যের মহাবিশ্বের অস্তিত্বের কোন শুরু বা শেষ নেই, যেটা সমস্ত যাদুকরদের প্রাচীন মতানৈক্যবিহীন আকিদা। এরপরে চতুর্থ ডাইমেনশনের[১৭] শিক্ষাদানের শুরুতেই স্যাটানিক-হরর আবহদানের চেষ্টা করে উপস্থাপিকা ম্যারিয়ন কির। যাতে মনে হবে যেন থার্ড ডাইমেনশনের উপরে মাত্রাতেই শয়তানের বসবাস।


আগেই উল্লেখ করেছি, গ্রাভিটিকে আইনস্টাইন দেখতেন স্পেসের জিওমেট্রিক কার্ভ হিসেবে। পার্টিকেল ফিজিক্সকে কখনো জিওমেট্রিক্যালি দেখা হত না, যার ফলে কোয়ান্টাম থিওরির সাথে অনিবার্য সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যে সংঘাত থেকে উত্তোরণের জন্য দরকার পার্টিকেল ফিজিক্সে একটা পার্ফেক্ট জিওমেট্রিক ইন্টারপ্রিটেশান, যেটা সহজেই সবকিছুকে ইউনিফাই করে প্রতিষ্ঠা করবে থিওরি অব এভ্রিথিং। এজন্য জিওমেট্রিক ডেস্ক্রিপশনের জন্য দারস্থ হতে হয় পদার্থবিজ্ঞানী এ্যান্টনি গ্যারেট লিসির কাছে, যার উদ্ভাবিত বৈপ্লবিক তত্ত্ব দ্বারা আইনস্টাইনের বিদ্যার সাথে সকল তত্ত্বের হার্মোনি তৈরি করা যায়।  গ্যারেট লিসি নিজে কাব্বালিস্টিক সেক্রিড জিওমেট্রির উপর ভিত্তি করে " An Exceptionally Simple Theory of Everything" নামে একটি থিওরি অব এভ্রিথিং এর প্রস্তাব করেন। এলিমেন্টারি পার্টিকেল সমূহকে ২৪৮ পয়েন্টে ভাগ করা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন রঙে বিভিন্ন পার্টিকেলকে চিহ্নিত করে সেসবকে এ্যানিমেট করে দেখান কিভাবে প্রকৃতিতে সেসব কাজ করে। তিনি ২০০ ডাইমেনশনাল জিওমেট্রিক স্ট্রাকচারকে দ্বার করান যার নাম ই৮[১৩]। E8 প্যাটার্নের মধ্যে গ্রাভিটি এবং প্রকৃতির সব ফান্ডামেন্টাল ফোর্সকে একীভূত করেন।
যার একদিকের কেন্দ্রে হেক্সাগনাল প্যাটার্ন রয়েছে, যেটি ফ্লাওয়ার অব লাইফের উপর প্রতিষ্ঠিত। একে ৬ ডাইমেনশনাল চার্জে ঘোরালে ইহুদীদের পতাকার স্টার অব ডেভিডকে পাওয়া যায়, একে স্টার টেট্রাহিড্রনও বলে যেটা ফ্রুট অব লাইফের উপর প্রতিষ্ঠিত। রিয়ালিটি এই শেইপের দ্বারাই অপারেট করা হয়। ফ্লাওয়ার অব লাইফ হচ্ছে সকল স্ট্রাকচারের মাতা। সকল জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার,সলিডস, আলো,ম্যাথমেটিক্যাল প্রোপোর্শনস এমন কি জানা অজানা সব ধরনের মিউজিক্যাল সিস্টেমের সোর্স।সকল পদার্থ সাবএ্যাটমিক লেভেলে এই প্যাটার্নের উপরই সৃষ্ট, এটাই ইন্দ্রজালের জিওমেট্রিক প্যাটার্ন। লিসির এই কাব্বালিস্টিক হাইপার স্পেসিয়াল রিয়ালিটিকে গাণিতিক পরিভাষায় অক্টারেক্ট।ডেকারেক্ট  তৈরি হয় ১০টি কিউবের সমন্বয়ে[১৫]। 7 demicube দ্বারাও একইরকম হাইপার ডাইমেনশনাল স্ট্রাকচার পাওয়া যায়। কিউবের সংখ্যা যত বাড়ানো হবে এটা দেখতে ততই কমপ্লেক্স হবে এবং ততই ডাইমেনশনাল লেয়ার বাড়বে। ১৮৫৪ সালে বিখ্যাত গণিতবিদ  Georg Bernard Riemann রিয়ালিটির ব্যপারে এরকম ধারনা করেছিলেন যে হয়ত আমাদের ত্রিডি রিয়ালিটি ফোরডির প্রজেকশন হবে, এমন প্লেটোনিক ভাবনার কারনে তাকে আর্কিটাইপাল ম্যাথমেটিক্যাল ফিজিসিস্টও বলা হয়। লিসিই প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী যিনি সরাসরি কাব্বালার Geometric description of reality কে সর্বপ্রথম খোলামেলা ভাবে ফিজিক্সে উপস্থাপন করেন। প্লেটোর হাইপার স্পেসিয়াল আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটিকে বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন,"পার্টিকেল ফিজিক্সকে কখনোই জিওমেট্রিক দৃষ্টিকোণে দেখা হত না যেমনটা গ্র‍্যাভিটির ক্ষেত্রে দেখা হত। এজন্য আমি এমন জিওমেট্রিক পার্টিকেল বুঝতে চেষ্টা করতাম যেটা আইনস্টাইনের গ্রাভিটির সাথে মিলে যাবে। এই মহাবিশ্ব একটাই, তাইনা? সুতরাং আমরা যেখানে বাস করি এর অবশ্যই একটা ইউনিফাইড বর্ননা থাকা উচিত। আপনি যখন মৌলিক গণিতের কাছে যাবেন, আপনি অনেক বিস্তৃত জটিল ম্যাথম্যাটিকাল স্ট্রাকচার বের হয়ে আসতে দেখবেন। এবং এই স্ট্রাকচারগুলোর কোনটি আমাদের ইউনিভার্সের বর্ননা দেয়। ফিজিক্যালি আমরা ত্রিমাত্রিক জগতে বাস করি। উচ্চতর মাত্রার ফাইবার গুলো আমাদের জগতের স্পেসের প্রত্যেক পয়েন্টের সাথে যুক্ত, যখন ফাইবার গুলো আমাদের স্পেসে মোচড় খায় তখন আমাদের মাত্রা থেকে দেখে মনে হয় পার্টিকেলগুলো এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ধাবিত হচ্ছে। সমস্ত বস্তু, ফোর্স এবগ সমস্ত কিছু এরকমই। পার্টিকেলের এমন বর্ননা একদমই জিওমেট্রিক।সমস্ত শক্তি বা ফোর্সগুলো ফাইবারগুলোর কার্ভাচার থেকে আসে, যেভাবে করে গ্রাভিটিও স্পেস টাইমের কার্ভাচার। এই বিষয়টিই ৭০ বছর যাবৎ পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য এবং স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে সকলের জানাশোনা।"

 

অর্থাৎ যা কিছু আমরা দুচোখে ঘটতে দেখি, প্রতিটি ব্যক্তি ও বস্তুর সঞ্চালন তথা সমস্তকিছুই উচ্চতরমাত্রার জিওমেট্রিক ডাইনামিক্স/ সঞ্চালন বা ঘটনার ফসল। বস্তু জগতের সকল স্ট্রাকচারগুলোও তাই। ধরুন, আপনি আপনার পাশে আটটি পাপড়িযুক্ত ফুলকে দেখতে পারছেন, হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্স অনুযায়ী এই এইট পয়েন্টেড পিটাল হবার কারন বা ব্যাখ্যা হচ্ছে উচ্চতরমাত্রার রিয়ালিটির জিওমেট্রিক প্রজেকশন বা ছায়া[ডানের ছবিতে দ্রষ্টব্য]। যদি কোন ব্যক্তিকে প্রস্ফুটিত কোন পুষ্প ছিঁড়ে ফেলতে যেতে দেখেন তাহলে এই এ্যাডভান্স ফিজিক্স অনুযায়ী ব্যাখ্যা হলো ওই মানুষটি যে টেট্রাহিড্রনের সমন্বয়ে গঠিত, সেগুলো হাইপার ডাইমেনশনাল ডাইনামিক্সের ফসল হিসেবেই হাইপার স্পেশিয়াল রিফ্লেক্সন বা ছায়ায় তৈরি দৃশ্যমান পুষ্পটিকে ছিঁড়তে যাচ্ছে। অর্থাৎ স্থির বা গতিশীল সব কিছুই উচ্চমাত্রার ছায়া বা প্রজেকশনে হচ্ছে যেমনটা র‍্যাবাঈগন বলেন। একইভাবে প্রকৃতির সকল শক্তি যেমন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক, নিউক্লিয়ার,গ্রাভিটেশনাল প্রভৃতি সবই হাইপারস্পেসের কার্ভ,কনভেক্স,কনভার্জের ফসল। সবকিছুই একক নীতির অধীনে। ধরুন ত্রিমাত্রিক আমাদের জগতে আপনি দেখছেন যে কোন ব্যক্তি হাটতে গিয়ে হঠাৎ হোচট খেয়ে পড়ে গেছে,হঠাৎ শুনলেন অমুক স্থানে ভূমি ধসে বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে,
কিংবা শুনলেন কোথাও সুনামি হয়েছে।হাইপার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটিতে এই ঘটনাগুলোর মূল উৎস উচ্চতর মাত্রায়, সেখানে ঘটা আসল ঘটনার ছায়া হিসেবে এই ত্রিমাত্রিক জগতে আমরা এসকল দুর্ঘটনা-দুর্যোগ দেখতে পারছি। এখন ভাবুন, প্রাচীন ব্যবিলনে হাইপার স্পেশিয়াল ফিজিক্সের বিষয়ে উচ্চমার্গীয় গভীর জ্ঞান রাখেন এমন বিজ্ঞানী - মনীষীগন যদি তারকা-নক্ষত্রদের সঞ্চালনকে হাইপার ডাইমেনশনাল ডাইনামিক্সের ফসল হিসেবে ধরে আমাদের জগতের প্রতিটি ঘটনার meaning ও Cause & Effect আরোপ করেন তাহলে সে বিদ্যাকে কি বলা যায়। আরো এ্যাডভান্স ফিজিক্সেরই একটা শাখা, তাইনা? এ নিয়ে আলোচনা সামনে আরো বিস্তারিত আসছে। 


কোয়ান্টাম গ্র‍্যাভিটি রিসার্চের প্রেজেন্টার ম্যারিয়ন হাইপার স্পেশিয়াল রিয়ালিটিকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ধরুন আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতের উপরে একটা ৮মাত্রার ই৮ মেশিন আছে যার মুভমেন্টের ফলে আমাদের জগতে বিভিন্ন পার্টিকেল ও ফোর্সগুলোর সৃষ্টি ও সঞ্চালন হয়। এতে উপরে দেয়া র‍্যাবাঈদের কথার ফিজিক্যাল ব্যাখ্যা স্পষ্ট হয়। কাব্বালাহ মূলত শিক্ষা দেয় একটি মাত্র নীতি বা 'ল মহাবিশ্বকে চালায়, কাব্বালিস্ট র‍্যাভ লাইটম্যান প্রায়ই বলেন,"আমরা কেবল মাত্র একটি 'ল এর অধীনে।" ই৮ লি গ্রুপ আমাদেরকে বলে, সমস্ত পার্টিকেল ও ফোর্স মূলত বিভিন্ন ফাইবারের ওরিয়েন্টেশন, বিভিন্ন ফাইবারের অংশ।

গ্যারেট লিসিকে এ ব্যপারে প্রশ্ন করলে উত্তরে বলেন,"সেগুলো[পার্টিকেল ও ফোর্স] ই৮ লি গ্রুপের বিভিন্ন ফাইবার,এবং এটা অদ্ভুত যে আমাদের ত্রিমাত্রিক জগত আটমাত্রার জগতের সাথে মৌলিকভাবে যুক্ত। এটা বিস্ময়কর এবং রহস্যময় যে গণিত খুব সুন্দরভাবে আমাদের জগতকে বর্ননা করে। আমাদের ফিজিক্যাল 'ল বলে যে সেসব আমাদের জন্য এক্সসেবল[প্রবেশাধিকার রয়েছে]। গণিতের মৌলিক বিট গুলো আসলে ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডের বর্ননা করে।যেন এরকম যে আমরা জীবন্ত গণিতের মধ্যে বাস করি।" 


অর্থাৎ যে বিষয়টিকে বার বার বলছি ত্রিমাত্রিক জগত মৌলিকভাবে আট মাত্রার সাথে যুক্ত। ডক্টর লিসি পিথাগোরাসের মতই মহাবিশ্বকে জীবন্ত সংখ্যা ও গণিত মনে করেন। ডিজিটাল ফিজিক্স/প্যানকম্পিউটেশনালিজম/সিমুলেটেড রিয়ালিটি এর কথাই বলে। এরা এদের থিওরি অব এভ্রিথিং এ অন্য সকল কুফরি আকিদা ও বিদ‌্যার পাশাপাশি সংখ্যাতত্ত্বকেও যোগ করছে! আমরা বিগত পর্বগুলোয় এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছি। কিছুদিন আগে বিনইয়ামিন সাদিক বাহইর মোশেহ নামের জনৈক ইহুদী পদার্থবিদকে দেখি[১৪] গ্যারেট লিসির ই৮ লি গ্রুপের ভূয়সী প্রশংসা করতে। সে গ্যারেট লিসিকে নোবেল পুরস্কার পাবার যোগ্য মনে করেন। তিনি গ্যারেট লিসির লি গ্রুপের তত্ত্বকে পূর্নাঙ্গ থিওরি অব এভ্রিথিং মনে করেন না,তবে বলেন এটা থিওরি অব এভ্রিথিং আবিষ্কারের কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন। এই ইহুদী কাব্বালিস্টিক সেক্রিড জিওমেট্রিক্যাল ফিজিক্সের এ্যাপ্রোচ দেখেই মূলত এত সাধুবাদ জানায়। তার সাথে আমার একাধিকবার কথা হয়। একে যখনই নিন্দা করে বলি, তারা কাব্বালিস্টিক বিদ্যাকে সায়েন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে, তখন আমাকে মসিহের আগমনের পর প্রতিশোধ[রিডেম্পশন] নেওয়ার হুমকি দেয়,ঠিক যেমন করে আরবে ইহুদীরা সাহাবীদের যুগে আরবদের প্রতি ক্ষিপ্ত হলে হুমকি দিত। আমার কোন সন্দেহ নেই যে, এসকল কাব্বালাহ ডিরাইভড ইল্ম[জ্ঞান] সরাসরি ওদের মসীহের সাথেই সম্পৃক্ত। আজকের এ্যাডভান্স ফিজিক্স মূলত তার ফিলসফিরই প্রতিনিধিত্ব করে। আমি ফিজিক্সকে কখনোই স্বতঃসিদ্ধ পুতঃপবিত্র জ্ঞান হিসাবে স্বীকৃতি দেই না বরং একে তার উনিশ শতক পূর্বনাম তথা ন্যাচারাল ফিলসফি নামেই ডাকি যার মূল পরিচয় হচ্ছে অকাল্ট[যাদুশাস্ত্র/বিদ্যা]! 


আমার সাথে তর্কে জড়ানো ওই ইহুদী পদার্থবিদ মূলত ঠিকই বলেছেন,এ্যাণ্টনি গ্যারেট লিসির থিওরি অব এভ্রিথিং আসল পূর্নাঙ্গ থিওরি অব এভ্রিথিং বা ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি নয় বরং সেটা আবিষ্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসেবে কাজ করবে। সেটাই আমরা হতে দেখছি। ক্লি আরউইনের ইমার্জেন্স থিওরিতে এটা একটা ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। পদার্থবিজ্ঞান দিন দিন স্পষ্টতার সাথে কাব্বালার প্রতিনিধিত্ব করছে। আপনারা দিব্যদৃষ্টিতে আজ দেখতে পারছেন র‍্যাবাঈদের থেকে শেখা প্লেটোর "Shadowy Reality"র কথাই আজকের অভিশপ্ত পদার্থবিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের পরিভাষায় নিয়ে এসেছেন। তারা বলছেন, ত্রিমাত্রিক জগত চতুর্থমাত্রার প্রজেকশন।প্রতিটিমাত্রা যার যার উচ্চতর মাত্রার প্রজেকশন। আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতে যা কিছু দৃশ্যমান এটাই আসল রূপ না, এটাই প্রকৃত সত্য জগত না। এটা বরং একটা ইল্যুশন। তারা বিষয়টিকে বোঝাতে সরাসরি।ক্রিস্টালকে মাটিতে প্রজেক্ট করে বোঝাচ্ছেন। কোয়ান্টাম গ্রাভিটি রিসার্চের আরেকজন বিজ্ঞানী জনাব Raymond Aschheim বোর্ডে অনেক গানিতিক ইক্যুয়েশন টেনে ব্যাখ্যা করেন কিভাবে ই৮ ল্যাটিস ৮ডি থেকে ৪ডি তে আসে[১৬]। এভাবেই পদার্থবিজ্ঞান ফিরে গেছে তার আদি[যাদুশাস্ত্রীয়] পরিচয়ে। 


প্রাচীন যাদুশাস্ত্রীয় অপবিদ্যা অনুযায়ী রিয়ালিটির ফান্ডামেন্টাল টেট্রাহিড্রাল স্ট্রাকচারের বৈজ্ঞানিকভাবে সত্যায়নকারী পদার্থবিদ ডক্টর ক্লি আরউইন ভাল করেই জানে কাব্বালিস্টিক ইউটোপিয়ান মহাপরিকল্পনার কথা। আমার মনে পড়ে তাদের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজের অসংখ্য ছবির মাঝে একটিতে এক পদার্থবিজ্ঞানীর ইজরাইলী পতাকার অনুরূপ সাদা ও নীল রঙের টিশার্টের উপর একটি সেক্রিড জিওমেট্রিকে[ডোডেকাহিড্রন] প্রজেক্ট করার মাধ্যমে সিল অব সলোমন বা স্টার অব ডেভিড[হেক্সাগ্রাম] তৈরি করে ইসরাইলের পতাকার সাথে সাদৃশ্যতা তৈরি করে।আমি যখন সেটাতে ইজরাইলের পতাকা তৈরির কারন হিসেবে কাব্বালিস্ট ইহুদীদের সাথে সম্পর্ককে জানতে চেয়ে মন্তব্য করি তখন তারা ছবিটিকে ডিলিট করে দেয়। ওরা যে খেয়েছে সেটা অনুধাবন করেছে। আমি এর আগেই ছবিটিকে সংরক্ষন করে ফেলি, যেটা ডানে দেখছেন! এরপরে কিজিআর এর গবেষক বিজ্ঞানীদের ব্যপারে একটু খোজ নিয়ে দেখি এদের অধিকাংশই কোননা কোন ভাবে ইজরাইলের সাথে যুক্ত। কেউ ইজরাইলে থেকে অন্য সেখানকার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছে। কারও বাড়িই সেখানে। এজন্যই কাব্বালার ট্রি অব লাইফের প্রতীককে সরাসরি অফিশিয়াল
ডকুমেন্টারিতে ঠাঁই দিয়েছে। জনাব আরআইন ভাল করেই জানেন যে মসীহের আগমনের জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত করতে বিশ্বব্যাপী যাদুশাস্ত্রের কুফরি আকিদা বা দর্শনকে সায়েন্টিফিকভাবে প্রচার করতে হবে। মেসিয়ানিক স্বর্গরাজ্য গড়তে দরকার যাদুশাস্ত্রীয় বিদ্যার মেকানাইজেশনের মাধ্যমে কিছু টেকনোলজিক্যাল ব্রেকথ্রু, যা হবে সেই স্বর্গরাজ্য বাস্তবায়নের চাবি। দুনিয়া থেকে অভাব দারিদ্র্য বিদূরিত হবে। উন্মোচন করবে অনন্ত শক্তি ও সমৃদ্ধির দুয়ার। এজন্য ক্লি[আরউইন] দরদি গলায় বলেন,"আমি মনে করি পৃথিবী জনাকীর্ণ হচ্ছে দিন দিন। অনেক মানুষই আছে যারা আনন্দ পাচ্ছে না দুনিয়ায়, কারন তারা সারাক্ষণ বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের চিন্তাতেই দিনাতিপাত করছে। হয়ত প্রকৃতির সবচেয়ে ক্ষুদ্র পরিসরের নিগূঢ় গুপ্ত রহস্যকে বোঝা অনেকটা এই রাজ্যের চাবি পাওয়ার মত ব্যপার। ভাবুন,যদি আমরা সবিস্তারে এই রিয়ালিটির ফ্যাব্রিককে পিক্সেলেডের স্কেলে গিয়ে আবিষ্কার করতে পারি, সেটা নতুন ধরনের টেকনোলজির গুপ্তধনকে খুলে দেবে, সেই সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অদ্ভুত বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে [কুফরি] দর্শনও গড়ে উঠবে,যা এমন কিছু করবে,আমরা কল্পনাও করতে পারিনা।"


প্লেটোর কাব্বালিস্টিক আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থার সেই মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের পাশে এভাবেই একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বৈজ্ঞানিক কমিউনিটি। প্রয়োজন সবকিছুর জন্য শুধু একটি মাত্র থিওরি[থিওরি অব এভ্রিথিং]। এজন্যই কোয়ান্টাম গ্রাভিটির ডকুমেন্টারির শেষে প্রেজেন্টার ম্যারিয়ন কির বলেন,"When humanity discovers the theory of everything, it will usher in a new age of prosperity. For example clean,cheap energy leading to the eventual elimination of poverty."

সুতরাং আপনাদের বুঝতে আশা করি কষ্ট হচ্ছে না বাবেল শহর থেকে আশা প্রাচীন এ বিদ্যাকে নতুন মোড়কে "পদার্থবিজ্ঞান" পরিচয়ে কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কুফরি আকিদাকে বিশ্বব্যাপী স্বতঃসিদ্ধ সত্য আধুনিক জ্ঞানের নামে। আজ বিজ্ঞান কাব্বালার সাথে সুর মিলিয়ে বলছে রিয়ালিটি হায়ার ডাইমেনশনের রিফ্লেক্সন[১৯]। প্লেটোর কেইভের রূপককে সত্যায়ন করেছে। ফিরে গেছে পিথাগোরিয়ান-প্লেটোনিক সলিডে। যাদুশাস্ত্রের জ্ঞানকে সত্যায়ন করে বলছে ফান্ডামেন্টাল বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে টেট্রাহিড্রন। আমি আগেই বলেছিলাম, হলিউডের অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীরা কাব্বালাকে দ্বীন হিসেবে আলিঙ্গন করেছে। ফিল্ম গুলোকে নির্মাণ করা হচ্ছে কাব্বালিস্টিক ফিলসফির উপর। সেদিন দেখলাম বিখ্যাত অভিনেতা জিম কেরি একই সর্বেশ্বরবাদি ব্যবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্রীয় শিক্ষার আকিদার প্রচার করছেন! এক টিভি ইন্টারভিউয়ে তিনি  বলেন,"আমাদের কারোরই আসলে কোন অস্তিত্ব নেই। আমরা নৃত্যরত দৈত্যাকার একক এনার্জির ফিল্ড। আমাদের এই বিষয়টিকে পার্সোনালভাবে নেয়ার কিছু নেই।এটা সত্যিই খুবই সুন্দর রেলেটিভ ম্যানিফ্যাস্টেইশান যেখানে আমরা সকলেই উপভোগের জন্য এসেছি। আমরা কোথাও যাচ্ছিনা। এটা এমন যে সবকিছুই একা একাই অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বশীল হয়েছে। এবং এখানে সবকিছু ঘটছে কারো জন্য ঘটছেনা।যখন আপনি এটা বুঝতে পারবেন,আপনি একদম চাপমুক্ত হয়ে যাবেন এবং নিজেকে উপভোগ করতে পারবেন। [সবকিছু] একগুচ্ছ টেট্রাহিড্রন [যা] একত্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে।"[১৮]




-এ্যাডভান্স হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্সে এ্যাস্ট্রলজিক্যাল ইমপ্লিকেশন-





কাব্বালিস্টিক হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্সের ব্যপারে এতক্ষণ যা জানলেন এতে করে পাঠকদের মধ্যে অনেকেই উপরে উল্লিখিত একাধিক বাক্যে এর আসল পরিচয় সম্পর্কে আঁচ করতে পেরেছেন। বাক্যগুলো ছিলঃ"হাইপার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটিতে এই ঘটনাগুলোর মূল উৎস উচ্চতর মাত্রায়, সেখানে ঘটা আসল ঘটনার ছায়া হিসেবে এই ত্রিমাত্রিক জগতে আমরা এসকল দুর্ঘটনা-দুর্যোগ দেখতে পারছি। এখন ভাবুন, প্রাচীন ব্যবিলনে হাইপার স্পেশিয়াল ফিজিক্সের বিষয়ে উচ্চমার্গীয় গভীর জ্ঞান রাখেন এমন বিজ্ঞানী - মনীষীগন যদি তারকা-নক্ষত্রদের সঞ্চালনকে হাইপার ডাইমেনশনাল ডাইনামিক্সের ফসল হিসেবে ধরে আমাদের জগতের প্রতিটি ঘটনার meaning ও Cause & Effect আরোপ করেন তাহলে সে বিদ্যাকে কি বলা যায়। আরো এ্যাডভান্স ফিজিক্সেরই একটা শাখা, তাইনা?"

জ্বি, বাবেল শহরে প্রাচীন অপবিজ্ঞানীদের হাতে রিয়ালিটি বা বাস্তবজগতের সকল ঘটনার পেছনের হাইপার ডাইমেনশনাল ডাইনামিক্সের কাব্বালিস্টিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তারকা-নক্ষত্রদের সঞ্চালনকে পার্থিব জগতের বস্তু ও মানবজীবনের প্রত্যক্ষ প্রভাবক ও ভবিষ্যতের ঘটনার নির্দেশক হিসাবে একটি এডভান্স [অপ]বিজ্ঞানকে ডেভেলপ করে যে আজ জ্যোতিষশাস্ত্র বা Astrology নামে সুপরিচিত। এটি মূলত এই বহুমাত্রিক এ্যাডভান্স ফিজিক্সেরই শাখাগত বিদ্যা বা উচ্চতর বহুমাত্রিক পদার্থবিজ্ঞানেরই উচ্চমাত্রিক জগতের ঘটনার ব্যাখ্যা বা cause & effect নির্ধারন নিরূপণের বিদ্যা। এই বিদ্যার ধারকদের বলা হয় জ্যোতিষী বা Astrologers। জ্যোতিষ বিদ্যার সংজ্ঞায় উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছেঃ

"জ্যোতিষশাস্ত্র এমন একটি শাস্ত্র যা নভোমণ্ডলে বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিবেচনা করতঃ মানুষের ভাগ্যগণনা তথা ভাগ্য নিরূপণ করে। যারা এরূপে ভাগ্য গণনা করে তাদের বলা হয় জ্যোতিষ। জ্যোতিষ একটি সংস্কৃত শব্দ।" [উইকিপিডিয়া]


মাত্র ৩০০ বছর পূর্বেও বিজ্ঞানের আসনে থাকা এই বিদ্যাকে আবারো বিংশ শতকের শেষদিকে জনগণের নিকট পরিচিত এবং জনপ্রিয় করে তুলছে বিজ্ঞানের ধারক বাহক ও নিয়ন্ত্রক এজেন্ডা। সিএনএন এর প্রতিষ্ঠাটা টেড টার্নারকে জিজ্ঞেসা করা হয় মিডিয়াতে রাশিচক্র জ্যোতিষবিদ্যার প্রসার করা হচ্ছে কেন, উত্তরে তিনি বলেন, 'এগুলো আমরা একারনেই দিচ্ছি যে জনগণের এখন এসবেরই প্রয়োজন'

অর্থাৎ এসব যাদুবিদ্যায় পরিপূর্ণভাবে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়ার অংশ। একাজে তারা সফল। এনএসএফের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক আমেরিকানদের বিশ্বাস হচ্ছে এস্ট্রলজি বাস্তব বিজ্ঞান। ডাঃ জাকির নায়েকও একে [অপ্রতিষ্ঠিত] বিজ্ঞান বলেন।তিনি বলেন,"[এস্ট্রলজি বলে] অমুক দিনে সূর্য চাঁদ অমুক জায়গায় থাকলে এটা হবে,এটা একটা সায়েন্স কিন্তু এটা প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান নয়, এটা একটা হাইপোথিসিস। এটা বিজ্ঞান বটে কিন্তু ওইরকম শক্তপোক্ত প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান নয় যেটা আমাদের স্কুল কলেজে শেখানো হয়।"

 

অর্থাৎ এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে জ্যোতিষশাস্ত্র একটি প্রাচীন বিজ্ঞান। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রাচীনতম শেকড় মেলে বাবেল শহরে।সেখান থেকে প্রাচীন মিশরের মহান বিজ্ঞানীগন এবং পরবর্তীতে হেলেনিস্টিক পিরিয়ডে এটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। বাবেল থেকে ভারত ও চীনে গিয়ে পৌছে সেখানকার স্থানীয় ধারার এস্ট্রলজিক্যাল সায়েন্স গড়ে ওঠে[২৩]। এই বিজ্ঞানকে অধিকাংশ মানুষই বাহ্যিক দিক দিয়ে দেখে কিন্তু এর পেছনের কাব্বালিস্টিক হাইপারডাইমেনশনাল ফিজিক্সের ব্যপারে কিছুই জানেনা, যে বিদ্যা বা জ্ঞানের উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। ১৫৬০ সালে প্রখ্যাত জোতিষী জন ডি চতুর্থমাত্রার কথা প্রথমে বিজ্ঞান মহলে আনেন। তার এক ডকুমেন্ট এর মধ্যে কিছু  সিল পাওয়া যায় যা একত্রিত করলে হাইপারকিউব তৈরি হয়। বহুমাত্রিক বাস্তবতার উপলব্ধি থেকেই তিনি এমনটা তৈরি করেছিলেন। ১৯ শতকের পদার্থবিদগন নন-ইউক্লিডিয়ান জিওমেট্রি নিয়ে গবেষণা করেন। হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্স আমাদেরকে বলে, ত্রিমাত্রিক বাস্তবতার সকল বস্তু, ফোর্স ও নীতি উচ্চতর মাত্রা সমূহের সাথে সংযুক্ত। প্রাচীন যুগের পিরামিডসহ সকল বড় স্থাপত্য গুলো হাইপারডাইমেনশনাল নিউমেরিক সিস্টেম এবং জিওমেট্রিকে অনুসরণ করে বানানো, যেন সেগুলো উচ্চমাত্রার সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করে। নিউমেরলজি এবং এস্ট্রলজি উভয়ই হাইপারডাইমেনশনাল আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটির সাথে সম্পর্ক
তৈরি করে ডেভেলপ করা হয়েছে।পিথাগোরিয়ানরা রিয়ালিটিকে নিউমেরলজিক্যাল ম্যাট্রিক্স বলত। সব কিছুই নাম্বার দ্বারা তৈরি। দিন-তারিখ হাইপার ডাইমেনশনাল জিওমেট্রি বা নকশারই অংশ যেটা প্লেটনিক সলিডস দ্বারা তৈরি। পৃথিবী যেহেতু সূর্যকে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে আবর্তন করে, হাইপারডাইমেনশনাল এ্যাস্পেক্টে যেহেতু সব কিছুই টেট্রাহিড্রনের ক্লাস্টার, সেহেতু পৃথিবীর টেট্রাহিড্রাল ফর্মেশনের পথিমধ্যে থাকা অন্যসকল টেট্রাহিড্রাল ইন্টারসেক্টিং পয়েন্টকে গাণিতিক ও জিওমেট্রিকভাবে প্রেডিক্ট করা যায়। অর্থাৎ ভূত ভবিষ্যত সকল ঘটনাই প্রিক্যালকুলেবল। ভবিষ্যতের ঘটনা বলে দেয়া যায় বা ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়,যেহেতু সবই বহুমাত্রিক ডাইনামিক্সের ফলাফল।

প্রকৃতির সবকিছুই একটা সাইকেলে[চক্রে] আবর্তিত হয়। হাইপারস্পেসিয়াল ডাইমেনশনগুলোও এর বিপরীতে নয়। এরাও উপরিস্থিত ডাইমেনশনের আবর্তন,সঞ্চালন নিচের ডাইমেনশনগুলোকে চালিত করতে বাধ্য করে। সবকিছুই যান্ত্রিক পেনিয়ামের প্যাটার্ণের ন্যায় সঞ্চালিত বহুমাত্রিক জিওমেট্রি। উপরে ঘটা যেকোন ঘটনা নিচের মাত্রায় অনিবার্যভাবে প্রভাবিত করে। সবকিছু সবকিছুর সাথে সংযুক্ত ডমিনোর প্রথমটাকে ফেললে যেমনি শেষটাও চেইন রিয়্যাকশনে পতিত হয় হাইপারডাইমেনশনেও এরকমভাবে ঘটনাগুলো ঘটে, অর্থাৎ উর্দ্ধদেশীয় কোন কিছুর সঞ্চালন নিন্মদেশীয় বস্তুজগতে সরাসরি প্রভাবিত করে।

অর্থাৎ এই প‌্রাচীন অকাল্ট পদার্থবিজ্ঞান থেকেই এস্ট্রলজি ও নিউমেরলজি এসেছে। এজন্যই বলা হয় সূর্য, নক্ষত্রের সঞ্চালন ভবিষ্যতের ঘটনাকে নির্ধারন করে, অমুক নক্ষত্র ওখানে গেলে ওটা হবে। নক্ষত্রগুলোর এই সঞ্চালন দেখে যাদুকররা বিশ্বাস করে এটা হয়েছে উচ্চমাত্রার ডাইনামিক্সের ফলে, নক্ষত্রগুলোর টেট্রাহিড্রাল স্ট্রাকচারের সাথে পৃথিবীরও সবকিছু সংযুক্ত। তাই নক্ষত্রের সঞ্চালন বা নক্ষত্রের টেট্রাহিড্রাল গ্রীডে সঞ্চালন পৃথীবীর সাবএ্যাটোমিক টেট্রাহিড্রাল ট্রাকচারের সাথে যুক্ত, যে উচ্চতর রিয়ালিটির ডাইনামিক্সের ফলে ছায়া হিসেবে থাকা ত্রিমাত্রার জগতের নক্ষত্রের সঞ্চালন দেখা যায়, এটা পৃথিবীর প্রতিটি ঘটনার গাণিতিক পূর্বাভাস দেয় বা সব কিছুই প্রিক্যালকুলেবল। অর্থাৎ নক্ষত্ররা দুনিয়ার যাবতীয় ঘটনায় সরাসরি প্রভাবক ও নির্দেশক।  এসমস্ত বিষয় অকাল্ট স্কুলগুলোর ইউনিভারসাল গুপ্ত শিক্ষা বা বিশ্বাস[২২]। ফ্রিম্যাসন গুরু Frank C. Higgins বলেন,"প্রকৃতির সমস্ত কিছু চক্রের দ্বারা প্রকাশিত হয়। খুবই সতর্ক গণনার দ্বারা আমরা এই ডিভাইন সিস্টেমকে রিকন্সট্রাক্ট করতে পারি।" কনফুসিয়াস বলেন,"The future develops in accordance with calculable numbers"।

এই হাইপারডাইমেনশনাল ইন্টারডিপেন্ডেন্ড ঐন্দ্রজালিক রিয়ালিটিতে সকল ঘটনা অন্য সকল ঘটনার উপর নির্ভরশীল। এর দ্বারা বোঝায় এখন বিশ্বে যাই ঘটছে তা মূলত উচ্চমাত্রিক জিওমেট্রিক নকশার ইনফরমেশন এরই নিন্মমুখী বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ ত্রিমাত্রিক জগতের সবকিছু বহুমাত্রিক ক্রিস্টালাইন প্যাটার্নের ছায়া। মানুষ ও অন্যসব প্রানী টেট্রাহিড্রনের ক্লাস্টারের বাইরের কিছু নয়। যার জন্য মানুষের আচরণ, কর্ম, ভবিষ্যত সবই গণনাযোগ্য। সবকিছুতেই গোল্ডেন রেশিও পাই, ফিবোনাক্কি সিকোয়েন্স রয়েছে। পিথাগোরিয়ানরা সেলেস্টিয়াল অর্ডারকে গোল্ডেন প্রোপোর্শন দ্বারা নির্ধারিত বলতো, যেটা প্রাচীন মিশরেরও সেক্রিড সায়েন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মায়ান ক্যালেন্ডারে পাই রেশিও রয়েছে। 

 

রিচার্ড হোয়াগল্যান্ড হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্সের সাথে এ্যাস্ট্রলজিক্যাল তাৎপর্য যুক্ত করে বেশ লেখা লিখি করেন।তিনি এটাই বিশ্বাস করতেন যে সবকিছুই একটা চক্রে আবর্তন হচ্ছে এবং সবকিছুই হায়ার ডাইমেনশনাল ডাইনামিক্সের ফসল।তিনি বলেন, “affecting every known system of astronomical, physical, chemical and biological interaction differently over time -- because it affects the underlying, dynamical hyperspace foundation of ‘physical reality’ itself.”“And now, according to all accumulating evidence and this centuries-old physics... we are simply entering once again (after ‘only’ 13,000 years...) a phase of this recurring, grand solar system cycle ‘of renewed hyperdimensional restructuring of that reality ."[২১] 


যদিও বিগত ৩০০ বছরে মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞান জ্যোতিষ শাস্ত্রকে অপবিজ্ঞানের কাতারে ফেলতে চেয়েছে, বিজ্ঞান ফিরে আসছে তার আদি আইডিয়ালিস্টিক যাদুশাস্ত্রভিত্তিক অপবিদ্যার পরিচয়ে, এরজন্য আমরা কোয়ান্টাম এবং ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিক্স রিকনসাইল করার প্রচেষ্টায় থাকা বিজ্ঞানীগন[কোয়ান্টাম গ্রাভিটি রিসার্চ] এস্ট্রলজিকে আড়ালে আবডালে প্রচার করে তাদের প্রপাগান্ডা ডকুমেন্টারিতে। QGR এর প্রথম ডকুমেন্টারির ৭:২০ মিনিটে এক মূহুর্তের জন্য এস্ট্রলজিক্যাল চার্টকে প্রদর্শন করে, যেটা ডানে দেখছেন। এর কারন হচ্ছে, সেখানকার ফিজিসিস্টরা ভাল করেই জানেন, এস্ট্রলজি হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্সের গভীর বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বহন করে। 


যে বিষয়টা আমাকে অবাক করে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা, রাসূল(সাঃ) এর মাধ্যমে একদম এর ব্যপারেই সতর্ক করেছিলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জ্যোতিষ বিদ্যার কিছু অংশ শিক্ষা করল, সে আসলে যাদু বিদ্যার একটি অংশ শিক্ষা করল। বিধায় জ্যোতিষ বিদ্যা যত বেশী পরিমাণে শিক্ষা করবে, অত বেশী পরিমাণে তার যাদু বিদ্যা বেড়ে যাবে।’’[২০]

[আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে]  

(আবূ দাউদ ৩৯০৫, ইবনু মাজাহ ৩৭২৬, আহমাদ ২০০১, ২৮৩৬) 

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৬৮০

 

এই জ্যোতিষশাস্ত্রীয় বিদ্যা গড়ে উঠেছে কাব্বালাহ উৎসারিত হাইপারডাইমেনশনাল ফিজিক্সের উপর। বিজ্ঞানীগন আজ এরই দিকে ফিরে এসেছেন। একেই বলা হচ্ছে এডভান্স ফিজিক্স। এটাই আজকে সায়েন্স! আজকের এডভান্স ফিজিক্সকে সত্যায়ন করা, বৈধবিদ্যা বলে মেনে নেয়া এস্ট্রলজি বা জ্যোতিষশাস্ত্রকে সত্য ও বৈধ বিদ্যা বলে গ্রহন করবারই নামান্তর[মা'আযাল্লাহ]। কারন আজকের থিওরি অব এভ্রিথিং এর নামে কাব্বালাহ নির্ভর ৮ কিংবা ১০ মাত্রিক রিয়ালিটির ত্রিমাত্রিক ছায়ার বিদ্যা এস্ট্রলজির শিক্ষাই স্পষ্টভাবে বহন ও সত্যায়ন করে। এই বিদ্যা যে এত বড় কুফর যে  আল্লাহ রাসূল(সাঃ) এই বিদ্যার শাখার ধারকদের ধারে কাছে অবিশ্বাসের সাথে গেলেও ৪০ দিনের স্বলাত বাতিল করা হবে বলেছেন। হাফছাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট যাবে এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করবে ৪০ দিন তার ছালাত কবুল করা হবে না’ 


(মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত 

৮ম খণ্ড হা/৪৩৯৩ ‘জ্যোতিষীর গণনা’ অনুচ্ছেদ)।

ঊপদেশ, হাদিস নং ১৪৫

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস



এবার ভাবুন যারা একে "সায়েন্স" নামে শিখে এবং শেখায় এদের অবস্থা কি! [আমরাও একে ডাঃ নায়েক(হাফিঃ) এর ন্যায় বিজ্ঞান হিসেবে অস্বীকৃতি দেই না। এটা অপ্রচলিত ও অপ্রতিষ্ঠিত প্রাচীন বিজ্ঞান বটে!] অমুসলিমদের কথা বাদ দেই, যেসব মুসলিমরা আজ এডভান্স ফিজিক্সকে স্বতঃসিদ্ধ বৈধ বিদ্যা হিসেবে মানে ও প্রচার করে এদের অবস্থান কোথায়। আপনি একদল লোককে পাবেন যারা আমার কথাগুলোকে অসত্য- বাড়াবাড়ি প্রভৃতি বলে প্রচার করে। এদেরকে দেখে ওই হাদিসের দিকে তাকালে আমার ভয় হয়,যেখানে বলা হয়েছে এই অপবিদ্যা যাদুরই শাখা এবং জ্যোতিষবিদ্যার কথা শ্রবণকারীদের স্বলাত ৪০ দিন পর্যন্ত পরিত্যাক্ত। যাদুবিদ্যা নাওয়াকিদুল ঈমানের[ঈমান ভঙ্গের কারনসমূহের] একটি। আমি জানিনা যারা সব জেনেশুনে অহংকার করে একে বৈধ-হালালবিদ্যা বলতে থাকে তাদের কি অবস্থা! আমরা দেখেছি, জোতিষশাস্ত্র হাইপার ডাইমেনশনাল ফিজিক্সেরই একটা আউটকাম বা শাখাগত বিদ্যা। তাহলে হাদিস অনুযায়ী যদি জ্যোতিষবিদ্যাকে যাদুবিদ্যার একটি শাখা বলা হয় তাহলে এর পেছনের আরো জটিল হাইপারডাইমেনশনাল মেকানিজম[তথা এ্যাডভান্স ফিজিক্স] আরো এ্যাডভান্স পর্যায়ের যাদুবিদ্যা বা প্রকৃত যাদুশাস্ত্রীয় শিক্ষা। 


বস্তুত,তা-ই। এই হাইপারডাইমেনশনাল রিয়ালিটির শিক্ষাটিই কাব্বালাহ এর মূল শিক্ষা। মূল জ্ঞান। কাব্বালিস্ট এ্যান্থনি কোসেক বলেন,"যখন কোন লোক [কাব্বালাহ] শিখতে শুরু করে, আমাদেরকে এটা বোঝা উচিত যে, আমরা মূলত পরিচালক নই, বা কোন ঘটনার শুরুর কেন্দ্রবিন্দু নই। আমরা যার অভিজ্ঞতা লাভ করি,তার পুরোটাই উচ্চমাত্রার ইন্টেনশনাল লেভেল থেকে আসা। এটা মানুষের অচেতন অভিজ্ঞতার উর্দ্ধে থেকে আসে, যেটা আমরা আমরা নিজেরা গ্রহনের জন্য মোটিভেটেড হই।যদি কোন আবেগ অনুভূতি উচ্চমাত্রা থেকে আসে, তখন সেটাকে আমরা নিজেদের ইচ্ছানুভূতি দ্বারা ব্যাখ্যা করি বা ব্যক্ত করি।সুতরাং আমরা খুবই লিমিটেড পারসেপশন থেকে সেসবে সাড়া দিয়ে থাকি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো, একজন [কাব্বালার]ছাত্র হিসেবে আপনি যখন এসব সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পন্থা শেখার চেষ্টা করে, যেখানে আমরা কিছুই করিনা। সবই আমাদের মাত্রাগত অস্তিত্বের উপরের মাত্রার ইন্টেনশন থেকে ঘটে। কিন্তু আমরা আমাদের রিয়ালিটিতে যাই দেখি, তার সবই একই প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। তাই আমাদের সামনে যা-ই আসে, সেটা এমন ভাবেই আসে যেমন করে আমরা কোন জিনিসের প্রতি রিয়্যাক্ট করি, এটা মূলত কোন আকার বা বস্তুর ন্যায় আসেনা বরং অনেকটা ইন্টেনশনের মত যেটা হায়ার লেভেলে হয় এবং আমাদের বস্তুজগতে সেটা আকৃতি প্রাপ্ত হয়। যতক্ষণ না আমাদের ফ্রি উইল থাকছে না, বস্তুত প্রথমাবস্থায় আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি নেই, বরং আমরা অনেকটা রোবটের ন্যায়ই কাজ করে থাকি। এমন না যে আমরা একে ইঞ্জয় করি না, কিন্তু আসল কথা হলো আমরা যা-ই করি এর মূল লেখক[কারক] আমরা নই। তাই যাই আমরা আমাদের চোখে দেখি, আমাদের বাস্তব জগতে সবকিছুই সৃষ্টি হয় উচ্চমাত্রার ফোর্সের ইন্টেনশন বা আবেগ থেকে। [কাব্বালার] ছাত্রদের কাজ হলো ওই আবেগ বা ইন্টেনশন যে [ডাইমেনশনাল]ব্র‍্যাঞ্চ বা শাখা ধরে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় সেটার দিকে যাওয়া।....। আমরা আমাদের পার্সেপশনকে প্রশস্ত করি যাতে করে আমাদেরকে নিয়ন্ত্রনকারী উৎসের প্রতি নিয়ন্ত্রন আরো বেশি চওড়া হয়, যাতে করে আমরা ফ্রি উইল অর্জন করি। বিজ্ঞানের ভাষায় যদি বলা হয় তাহলে বলব,আমরা [ডাইমেনশনাল] ডালপালা ধরে রুট লেভেলে[উৎসে] পৌছাতে চেষ্টা করি। বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা আমাদের চারপাশে যেসব বস্তু দেখি, সেসব অদৃশ্য ফোর্স বা শক্তিরই ফসল। আমরা এটাও জানি আমাদের এই বস্তু জগত আরো গভীর ঘন, গোপন শক্তির ফসল। একটা প্রবাদ আছে, "there isn't a blade of grass that doesn't have an angel that stand over it and tells it to grow."। অন্য কথায় আমাদের সমগ্র জীবন এবং সমস্ত কিছু যা আমাদের অভিজ্ঞতাকে ডিজাইন করে,  তার সবটাই উচ্চতর মাত্রা থেকে আসে যেখানে মূল সৃষ্টি প্রক্রিয়া ঘটে। আর এখানে আমরা কঠিন বাঁধাধরার মাঝে থাকা সে জগতের আউটকাম।" 



সায়েন্টিজমের প্রচারক জনাব হাশিম আল ঘাইলির  সিমুলেশন নামের ফিল্মটিকে নিয়ে আগেই আলোচনা গত হয়েছে, সেখানে সিমুলেশন তত্ত্ব মায়াবাদের বিশ্বাসকে প্রোমোটের পাশাপাশি প্রিক্যালকুলেবল প্রিডিটারমিনিস্টিক ধারনাকে দেখায়। বোঝানো হয় এই বস্তুজগতের সমস্ত ঘটনা পূর্বেই গণনাযোগ্য। দেখানো হয়েছে ডিপআর্টিলেক্ট নামের একটি ওয়েব ২০১১ সালেই ২০১৩ সালে ঘটা পৃথিবীতে উল্কাপিণ্ডের পতনের নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করে। অপর দিকে হলিউডেও কাব্বালিস্টিক প্রিক্যালকুলেবল কন্সেপ্ট ভালভাবে প্রচার করা হয়েছে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত knowing নামের ফিল্মে একসাথে নিউমেরলজি,কাব্বালাহ, ডিভিনেশনকে সত্যায়ন করা হয়। প্রথম দিকে শুরু করা হয় শয়তানজ্বীন দ্বারা পজেসড শিশু লুসিন্ডা এ্যাম্রেইর কানে শয়তানের উইস্পার দ্বারা। এই শিশুকে কথিত হায়ার ইন্টেলিজেন্স/এলিয়েন তথা শয়তান জ্বীন অনবরত ভবিষ্যতের ঘটনাগুলোকে বাইনারী কোডের মাধ্যমে দিতে থাকে। ৫০ বছর পরের দুনিয়া কেমন হবে এমনটা কল্পনা করে শিশু শিক্ষার্থীদের থেকে ছবি অঙ্কন করিয়ে মাটির নিচে কাগজ গুলোকে সুরক্ষিত রাখা হয় যাতে ৫০ বছর পরের শিশুরা, ৫০ বছর আগের শিশুদের মনে তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে ধারনাকে দেখতে পায়। লুসিন্ডার ছবি না এঁকে অজস্র বাইনারী কোড লিখেছিল যেটা এমআইটির এস্ট্রফিজিসিস্ট প্রফেসর জন কোয়েস্টলারের হাতে তার ছেলের মাধ্যমে যায়। স্ত্রী বিয়োগে বেদনাহত জন রিয়ালিটির ব্যপারে ইনডিটারমিনিজমে বিশ্বাস করত। ফিল্মটিকে মূলত ডিটারমিনিজম ভার্সেস ফ্রিউইলের সংঘাতকে দেখানো হয় এবং অবশেষে অকাল্ট কাব্বালিস্টিক ডিটারমিনিস্টিক অকাল্ট ফিলসফিকে সত্যায়ন করা হয়। জন যখন হাতে লুসিন্ডার লেখা সংখ্যাগুলো পায় তখন খেয়াল করে এসব সংখ্যাগুলো বিগত পঞ্চাশ বছরে দুনিয়াতে ঘটা মেজর দুর্ঘটনা, দুর্যোগের দিন তারিখ। সে এমনকি রেল ও বিমান দুর্ঘটনাও প্রত্যক্ষ করে। পরবর্তীতে বাইনারী কোডের মধ্যে জিপিএস কোঅর্ডিনেশনকে খুঁজে পায়। অর্থাৎ একাধারে দিন তারিখ ও এলাকার কথা ৫০ বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। ব্যপারটা জন তার কলিগকে দেখালে সে কাব্বালাহ নিউমেরলজিকে সুডো ফ্রিঞ্জ সায়েন্স বলে উড়িয়ে দেয়। জন ধীরে ধীরে নিশ্চিত হয় ডিটারমিনিস্টিক রিয়ালিটিই সত্য।

পরবর্তীতে ফিল্মের শেষ দিকে Gnostic massage এর মাধ্যমে শেষ হয়। দেখানো হয় সোলার ফ্লেয়ারের দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কথিত এলিয়েন তথা শয়তান জ্বীন জনের ছেলে এবং লুসিন্ডার নাত্নীকে আদম ও হাওয়া হিসেবে পছন্দ করে অন্য এক স্বর্গীয় জগতে নিয়ে যায়, তারা স্পেস শীপ থেকে নেমে দৌড়ে যেতে থাকে সাজারাতুল খুলদের(ট্রি অব লাইফ) দিকে। একইভাবে হাজারো স্পেসশীপ হাজারো জুটিকে বিভিন্ন গ্রহের আদম ও হাওয়ার মত পাঠায়। এর তাৎপর্য হচ্ছে এই হায়ার ইন্টেলিজেন্স ভূতভবিষ্যৎ সব জানে,বাস্তবজগত পূর্বনির্ধারিত, এই এলিয়েনরাই[শয়তানরাই] পৃথিবীর আদম হাওয়াকে পাঠিয়েছিল। এরাই gods।এরাই মানুষের ইলাহ। হাশিম আল ঘাইলির সায়েন্টিফিক ডকুমেন্টারি ফিল্ম সিমুলেশনে এ বার্তা আরো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। 


একটা থিওরি অব এভ্রিথিং এর বিশেষ প্রয়োজন, যেটা পূর্বনির্ধারনবাদ ও অনির্ধারনবাদের[ফ্রিউইল ভার্সেস ডিটারমিনিজম] মহাসংঘাতকে দূর করবে। সেটা কোয়ান্টাম গ্রাভিটি[২৫] বেজড ইমার্জেন্স থিওরি সফলভাবে করে থাকে। ইমার্জেন্স থিওরি বা এই নতুন থিওরি অব এভ্রিথিং ডিটারমিনিজমকে প্রকৃত অবস্থা হিসেবে রেখে কোয়ান্টাম মেকানিস্টিক ননলোকাল ইনডিটারমিনিজমকে সমন্বয় করে। অর্থাৎ অনেকটা এরকম যে infinity within finite system বা Non Determinism within Deterministic System। কাব্বালাহও একই কথা শেখায়। অর্থাৎ নন ডিটারমিনিজমের পাশাপাশি ডিটারমিনিস্টিক রিয়ালিটির কথা বলে। 




 


-মিস্টেরিয়াম কস্মোগ্র‍্যাফিকাম-






যেহেতু যাদুশাস্ত্রীয় [অপ]বিদ্যা[কাব্বালাহ-জ্যোতিষবিদ্যা] গোটা মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে হাইপার ডাইমেনশনাল কমপ্লেক্স জিওমেট্রিক্যাল স্ট্রাকচার হিসেবে শেখায়, যার প্রতিটি অংশই অন্য সকল অংশের সাথে একটি অবিচ্ছেদ্য হার্মোনিক প্যাটার্নে যুক্ত, সেহেতু আমার ইন্টুইশন বলে অবশ্যই আধুনিক হেলিওসেন্ট্রিক কস্মোলজিকে যাদুকর প্যাগানরা কাব্বালিস্টিক সেক্রিড জিওমেট্রিক্যাল জ্যোতিষবিদ্যার উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠা করবে। হেলিওসেন্ট্রিক প্রতিষ্ঠিত কস্মোলজিটিও জ্যোতিষশাস্ত্রীয় তাৎপর্য বহন করবে। বস্তুত,এটাই ঘটেছে। এই আধুনিক  কস্মোলজিকে হাইপারডাইমেনশনাল রিয়ালিটির সাথে সঙ্গতি তৈরি করে

কাব্বালিস্টিক জিওমেট্রির উপর ডিজাইন করা হয়েছে। এর শুরুটা হয় রেনেসাঁর সময় থেকে। বিগত পর্বগুলোয় দীর্ঘ আলোচনা করেছি, যাবতীয় কুফরি আকিদা ও যাদুবিদ্যার মহাবিপ্লব ঘটে রেনেসাঁ পিরিয়ডে। পিথাগোরিয়ান-প্লেটনিক শিক্ষাসমূহ যা ইহুদিদের যাদুবিদ্যা কাব্বালা থেকে এসেছে, সেই সাথে মিশরীয় হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রীয় বিদ্যার মহাজাগরণ ঘটে। যাদুশাস্ত্র নির্ভর মহাবিশ্বের কুফরি সৃষ্টিতত্ত্ব ও  কস্মোলজির ধারনার পুনরুত্থান ঘটে। তৎকালীন খ্রিষ্টানরাও যাদুশাস্ত্রীয় অকাল্ট বিদ্যার দিকে আগ্রহী হয়।পিকো,ডেলা মিরান্ডোলা, জোহানেস রেউচলিন এবং ফ্রান্সিস্কাস জর্জিয়াসের মতো রেনেসাঁ যুগের খ্রিস্টানরা ইহুদি যাদুশাস্ত্রের দিকে হাত বাড়িয়েছিলেন মহাবিশ্বের গুপ্ত রহস্যের জ্ঞান লাভের জন্য। তারা কাব্বালাহকে পবিত্র শাস্ত্রের চোখে দেখত যা থেকে গ্রীক প্যাগান দার্শনিকরা জ্ঞান লাভ করেছে। ১৬ শতকের বুদ্ধিজীবীদের কাছে নিওপ্লাটোনিজম ও খ্রিষ্টীয় নিওপ্লেটনিক কাব্বালাহ এর গুরুত্ব ব্যাপক আকারে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রকৃতির গাণিতিক বিমূর্ততার বিষয়ে চিন্তা গবেষণার ক্ষেত্রটিতে নিওপ্লেটনিক-কাব্বালিস্টিক চিন্তাধারাটি সরাসরি আকার দান করে। ইহুদি যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ ও নিওপ্লেটনিজমের মধ্যে সম্পর্ককে সহজেই খুজে পাওয়া যায়, যখন আপনি দেখবেন ষোলো শতকের নিওপ্লেটনিক দার্শনিক Boethius এবং কাব্বালার কিতাব Sepher Yezirah এর মাঝে একই কথা বিদ্যমান। উভয়ই নিওপ্লেটনিজমের বিদ্যার জন্য বিখ্যাত উৎস ছিল। Boethius শেখাতেন "all things ... do appeare to be formed by the reason of numbers. For this was the principall example or patteme in the minde of the Creator।" একই কথা সেফার ইয়েতজিরাতেও আছে। এটা বলে ঈশ্বর তিনধরনের সংখ্যার দ্বারা মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। সেগুলোঃ "by writing [sefer], number [sofor], telling [sippur]।" সকল রেনেসাঁকালীন নিওপ্লেটনিস্টরা সৃষ্টিজগতের পেছনে সংখ্যাকে মূল হিসেবে ধরত। ১৬ শতাব্দির গণিতজ্ঞরা সৃষ্টিজগতের পেছনে জ্যামিতিক নকশাকে দেখানোর মাধ্যমে এটা প্রমাণে সফল হয় যে সব কিছুর পেছনে আছে সংখ্যা।এভাবে গণিত ন্যাচারাল ফিলসফির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। কিভাবে জিওমেট্রিক্যাল ধারনা বিজ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা দেখা যায় জন ডি ও কেপলারের কাজের মাধ্যমে। ইংরেজ যাদুকর-গণিতবিদ জন ডি নিওপ্লেটনিক শিক্ষায় গাণিতিক বিদ্যার অধ্যায়গুলোয় গভীর মনোযোগ দেন। তিনি অনেক বিষয়ে পড়াশুনা ও লেখালিখি করেন। তার দুটি বিখ্যাত লেখা হলো the Monas hieroglyphica এবং "Mathematical Praeface" যার মধ্যে কাব্বালাহ ও নিওপ্লেটনিক বিদ্যার সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে, যার ভিত্তিতে তিনি তার গাণিতিক শিক্ষাগুলোকে গড়ে তোলেন। একইভাবে কেপলার সরাসরি প্লেটোনিক-কাব্বালিস্টিক জ্যামিতিক শিক্ষাকে বিজ্ঞানে প্রবেশ করান প্রাচীন হেলিওসেন্ট্রিক মডেলকে যুক্তিযুক্ত করার কাজের মাধ্যমে[২৯]। হেলিওসেন্ট্রিক প্যাগান কস্মোলজিকে যখন কোপার্নিকাস সমাজে জনসম্মুখে প্রকাশ করে তখন এর যৌক্তিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন ওঠে। কোপার্নিকাসের এই হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্বকে ডিফেন্ড করতে এগিয়ে আসেন জোহানেস কেপলার। তিনি একে র‍্যাশনালাইজ

করে ১৫৯৬ সালে  প্রকাশ করেন Mysterium Cosmographicum, (অর্থ: মহাবিশ্বের গুপ্ত রহস্য)। এটিই এই জার্মান জ্যোতিষীর প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ। এটি প্রকাশের মূল উদ্দেশ্যই ছিল কোপার্নিকাসকে সমর্থন ও সত্যায়ন করা। তিনি দেখিয়েছেন আমাদের মহাবিশ্বের পাশাপাশি গোটা সৌরজগতটিও sacred geometry এর উপরে সৃষ্ট। যেহেতু এস্ট্রলজি বা জ্যোতিষশাস্ত্রের পেছনের কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রে বহুমাত্রিক জ্যামিতিক কাঠামো আমাদের সেখায় সমস্ত বস্তু ফান্ডামেন্টালভাবে টেট্রাহিড্রাল স্ট্রাকচার এবং সবকিছুই ফ্লাওয়ার অব লাইফ ও ট্রি অব লাইফের উপর প্রতিষ্ঠিত, সেহেতু জ্যোতিষীরা খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের এই আন্ডারলেইং অকাল্ট বিশ্বাস নির্ভর কস্মোলজিক্যাল অর্ডার সৃষ্টি করবে। এই প্রয়োজন পূরণে জনাব জোহানেস কেপলার সুস্পষ্টভাবে কোপার্নিকাসের কস্মোলজির ব্যাখ্যায় প্লেটোনিক সলিডস গুলোকে এনেছেন এই সোলারসিস্টেমের সংগঠনে কাব্বালাহর শিক্ষাকে ব্যাখ্যা হিসেবে দ্বার করানোর উদ্দেশ্যে। তার এ বইয়ে প্লেটোনীয় ঘনবস্তুর[platonic solids] মাধ্যমে সৌরজগতের যে মডেল তৈরি করেছিলেন সেটার চিত্র ডানের ছবিতে দেখতে পারছেন।তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রতিটি নক্ষত্র ও গ্রহের অবস্থানগুলো  প্লেটনিক-কাব্বালিস্টিক জিওমেট্রি অনুযায়ী শুদ্ধ এবং প্রতিটি গ্রহ জিওমেট্রিক কক্ষপথে আবর্তন করে। তিনি তৎকালীন পাঁচটি গ্রহকে পাঁচটি প্লেটনিক সলিডের সাথে সম্পর্ক আরো করে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে,"In the 16th century, the German astronomer Johannes Kepler attempted to relate the five extraterrestrial planets known at that time to the five Platonic solids." 


তিনি দেখিয়েছেন, সৌরজগতের সব গ্রহ একত্রিতভাবে চমৎকার প্লেটনিক জিওমেট্রিক্যাল হার্মোনিক্স তৈরি করে। কেপলার মহাজাগতিক জিওমেট্রিক্যাল হার্মোনি নিয়ে "হার্মোনিক্স মুন্ডি" নামের আরেকটি বই প্রকাশ করেন। হারমোনিকসে তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জগতের অনুপাতসমূহ, বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষ শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। ঐকতানের (হারমনি) প্রধান সেটটি পিথাগোরাস,  টলেমি এবং কেপলারের আগে আরও অনেকে অধ্যয়ন করেছিলেন যাকে তখন 'মিউজিকা ইউনিভের্সালিস' নামে আখ্যায়িত করা হতো।তার মতে, জ্যোতিষ্কগুলোর আত্মায় সুর আছে, যে সুর থেকে ঐকতানের জন্ম হয়, এই সুরের সাথে আবার মানব আত্মার মিথস্ক্রিয়া ঘটে যা নিয়ে জ্যোতিষ শাস্ত্র কাজ করে। বইয়ের শেষ তথা পঞ্চম অধ্যায়ে কেপলার গ্রহের গতি, বিশেষ করে কক্ষীয় বেগ ও সূর্য থেকে ক্ষপথের দূরত্বের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন[উইকি][২৭]। মূলত কেপলারের মিস্টেরিয়াম কস্মোগ্রাফিকামের ব্যাখ্যার পর পরই মহাকাশ বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। তিনি এতে ব্যাখ্যা করেন সুষম বহুভুজের অন্তর্বৃত্ত  এবং পরিবৃত্ত যেমন বহুভুজটির সাথে সর্বদা একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে আবদ্ধ হয়, মহাবিশ্বের জ্যামিতিক ভিত্তিও তেমন। তিনি জ্যোতিষ্কগুলোর গতিপথ ব্যাখ্যা করতে ত্রিমাত্রিক বহুতলক তথা যাদুবিদ্যায় পাঁচ উপাদানের জিওমেট্রিক শেইপ, অর্থাৎ পাঁচটি প্লেটোনীয় ঘনবস্তুকে[প্লেটনিক সলিডস] নিয়ে আসেন। কেপলার দেখান কিভাবে পাঁচটি প্লেটোনীয় ঘনবস্তুকে খ-গোলকের মাধ্যমে অন্তর্লিখিত এবং পরিলিখিত করা যায়। তিনি বস্তুগুলোর একটিকে আরেকটির ভেতর স্থাপন করে প্রতিটিকে একটি অন্তর্বৃত্ত ও একটি পরিবৃত্ত দ্বারা আবদ্ধ করেন। এক বস্তুর অন্তর্বৃত্ত তার পরেরটির পরিবৃত্তের সাথে মিলে একটি খ-গোলক গঠন করে। এভাবে পাঁচটি বস্তুর জন্য মোট ছয়টি গোলক পাওয়া যায়। তখন পর্যন্ত জানা ছয়টি গ্রহকে (বুধ,  শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল,  বৃহস্পতি  এবং শনি) কেপলার এই ছয় গোলকে স্থান করে দেন। অষ্টতলক, বিংশতলক, দ্বাদশতলক, চতুস্তলক এবং ঘনক এই বস্তু পাঁচটিকে গুরুত্ব অনুযায়ী সঠিক ক্রমে সাজিয়ে দেখেন, গোলকগুলোকে এমন দূরত্বে স্থাপন করা সম্ভব যাতে তা গ্রহীয় কক্ষপথের আপেক্ষিক আকারের প্রতিনিধিত্ব করে। অবশ্যই সে সময়কার জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দূরত্বের যে মান পাওয়া গিয়েছিল সেটাই তাকে ব্যবহার করতে হয়েছে। 


 বইয়ের শিরোনাম থেকেই বোঝা যায়, কেপলার ভেবেছিলেন তিনি মহাবিশ্বের জ্যামিতি দিয়ে ঈশ্বরের রহস্য বুঝে ফেলেছেন। কোপার্নিকাসের বিশ্ব-ব্যাবস্থা নিয়ে তার এত আগ্রহের কারণ ছিল মূলত আধ্যাত্মিক বা ধর্মতাত্ত্বিক, তিনি ভৌত বিশ্বের সাথে আধ্যাত্মিক জগতের সম্বন্ধ খুঁজে পেতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তিনি ভাবতেন মহাবিশ্ব নিজেই ঈশ্বরের একটি ছবি, যেখানে সূর্য পিতা, তারকাসমূহের গোলক পুত্র, আর মাঝের স্থানটুকু পবিত্র আত্মা! অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় রহস্যবাদী চিন্তাধারা এর মাধ্যমে প্রচার করেন। ১৫৯৬ সালে বইটি প্রকাশিত হয়, ১৫৯৭-এ তিনি নিজের কপিগুলো হাতে পান এবং বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে পাঠাতে থাকেন। খুব বেশি পাঠকপ্রিয়তা না পেলেও বইটি কেপলারকে একজন উঁচুমানের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। তার আত্মনিবেদন সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জন্য তার পৃষ্ঠপোষকরা সন্তুষ্ট হয় এবং ভৌগলিকবাবেই তার পৃষ্ঠপোষকতা বেড়ে যায়।

বইটির মূল ভিত্তি ছিল আদিরূপ বা আর্কিটাইপের ধারণা। পিথাগোরাস এবং প্লেটোর মতই তিনি এই আদিরূপটিকে প্রকৃতিগতভাবে গাণিতিক এবং বৈশিষ্ট্যগতভাবে নৈসর্গ্যিক মনে করতেন।মিস্টেরিয়ামে তিনি মহাবিশ্বের স্থির অবস্থা বিষয়ে কথা বলেন। সূর্য, স্থির তারা এবং স্থানের স্থিরতাকে তিনি পবিত্র ত্রিতত্ত্বের (পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা) সাথে তুলনা করেন। ত্রিতত্ত্বের তিনটি অংশ থাকলেও তিন অবস্থা নিজে অনঢ় এবং অপরিবর্তনীয়, ঠিক তেমনি তিনি বলেন যে মহাবিশ্ব একটি গোলক হিসেবে অপরিবর্তনীয় এবং অনঢ় কিন্তু তার তিনটি অংশ রয়েছে: সূর্য পিতা তথা ঈশ্বরের মত, স্থির খ-গোলকে নিবদ্ধ তারাগুলো পুত্রের মত, আর স্থান এবং স্থান জুড়ে থাকা বায়ু হচ্ছে পবিত্র আত্মার মত।

কেপলার বহুতলকের মাধ্যমে তৈরি এই মডেলটি ব্যবহারিক ও আদর্শিক যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার পর কেপলার বহুতলকের ধারণার সাথে জ্যোতিষ শাস্ত্র ও সঙ্গীতের মিলন ঘটান। এর সাথে টলেমির হারমোনি সূত্রের কিছুটা মিল রয়েছে।[২৭] সুতরাং বুঝতে পারছেন এই মহাকাশবিজ্ঞান মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রেরই উন্নত সংস্করণ।

কেপলার ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন জ্যোতিষী, রাশিচক্র গণনা করে অর্থও উপার্জন করতেন। জ্যোতিষশাস্ত্রকে ডিফেন্ড করে তিনি De Fundamentis Astrologiae Certoribus নামে বই লিখেছিলেন।তাকে একটু অন্য ধারার জ্যোতিষী বলে মনে করা হত কারন তিনি জ্যোতিষ শাস্ত্রীয় শিক্ষাকে বিজ্ঞানে সঞ্চালনের জন্য কাজ করতেন। ১৬০৬ সালে কেপলার অক্সফোর্ডের এক বিজ্ঞানী Thomas Harriot কে উদ্দেশ্য করে লিখেন[২৬], "I am informed that misfortune came to you from astrology. I ask you if you believe that it could be powerful enough to have such power. Ten years ago, I rejected the division into 12 equal signs, the Houses, dominations (i.e. rulerships), triplicities etc. and I am retaining only the aspects (angles) and am transferring astrology to the science of harmonics."


অর্থাৎ যেমনটা আমি আগে থেকে বলে এসেছি, কাব্বালাহ-এস্ট্রলজিক্যাল বিদ্যাকে কেন্দ্র করে যাবতীয় কস্মোলজিক্যাল বৈজ্ঞানিক আইডিয়ার ডেভেলপ করা হয়েছে। প্লেটনিক সলিডসমূহের মূল অরিজিন ইহুদী যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ। এই প্লেটনিক-কাব্বালিস্টিক সেক্রিড জিওমেট্রি আমাদের বহুমাত্রিক জগতের শিক্ষা দেয় যার ফলাফল বা শাখাগত বিদ্যা স্বরূপ এস্ট্রলজি বা জ্যোতিষশাস্ত্রীয় কুফরি বিজ্ঞান তথা যাদুর একটি শাখাকে আমরা দেখতে পাই। সুতরাং এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আধুনিক মহাকাশ বিজ্ঞান তথা জ্যোতির্বিদ্যা মূলত যাদুশাস্ত্র কাব্বালারই ফসল। আধুনিক কস্মোলজি আমাদের যা-ই শেখায় সবই কাব্বালার যাদুশাস্ত্রীয় কুফরি শিক্ষা। এটা আমার কথা নয়। এটা স্বয়ং পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু বলেছেন।তিনি বলেনঃ"আমি একজন থিওরেটিকাল ফিজিসিস্ট এবং আমি বলতে পছন্দ করি,  আমি এলবার্ট আইনস্টাইন, নিলস বোর এর মত জায়ান্টদের পদচিহ্ন অনুসরণ করি। আমি কোন দার্শনিক নই। আমরা সকলেই জানি,স্যার আইজ্যাক[নিউটন] কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রের মাঝে প্রবেশ করেছিলেন। এটা বরং বিস্ময়কর যে, বর্তমান যুগের কিছু অত্যাধুনিক মহাকাশবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু, যা আমরা পাই স্যাটেলাইট থেকে,যা আমরা পাই এটম স্ম্যাশার[CERN LHC] থেকে, যা আমরা পাই আমাদের ব্ল্যাকবোর্ড থেকে[যেমনঃম্যাথম্যাটিকস/ইকুয়েশনসমূহ], সেসব কেমন যেন জোহার এবং প্রাচীন কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রেরই প্রতিফলন।"[৩১]

 

লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ! 

এই হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের আসল চেহারা। এটা সেই বাবেল শহরের কুফরি জ্ঞান যেটা সেখান থেকে ইহুদীরা গ্রহন করে অনুসরণ করে। আপনারা কাব্বালিস্ট গুরু র‍্যাবাঈ মাইকেল লাইটম্যানের মুখেই শুনেছেন যে এটার জন্ম বাবেল শহরে। আপনারা আজ জানেন, অতীতে কেপলারের মত জ্যোতিষীরাই একে কাব্বালাহ থেকে শিখে বিজ্ঞানে রূপান্তর করেছে। আপনারা দেখেছেন, জগদ্বিখ্যাত এক পদার্থবিজ্ঞানী সত্যায়ন করছেন এই বলে যে, প্রতিষ্ঠিত কস্মোলজি এবং এর সংক্রান্ত যাবতীয় শিক্ষার সবই যাদুশাস্ত্র কাব্বালার প্রতিফলন। সৌরজগত,বিলিয়ন বিলিয়ন সূর্যের অনুরূপ নক্ষত্র,গ্রহের ধারনা, অনন্ত অসীম মহাবিশ্বসহ এ সংক্রান্ত সমস্ত আকিদা বা বিশ্বাস এসেছে যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ থেকে।আধুনিক ফিজিক্স ও এ্যাস্ট্রনমি এসেছিল বাবেল শহর থেকে এবং ফিরে গিয়েছে বাবেল শহরে। কুফরি যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহকে এভাবে সমগ্র বিশ্বে বিজ্ঞানের নামে স্বতঃসিদ্ধ সত্য বিদ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের উদ্দেশ্য কি? 


অনেকগুলো উদ্দেশ্যের একটি হচ্ছে, ইহুদীদের সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত মসিহের জন্য বিশ্বকে প্রস্তুতকরণ। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য আগে থেকেই বুদ্ধিবৃত্তিক মঞ্চ নির্মাণ। সেকাজে আরো ৫০০ বছর আগে থেকে সাফল্যের পথে হাটা শুরু করেছে মসীহের অনুগত ভৃত্যবর্গ। ইহুদি কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈ Yom tov glaser বলেন, "সমস্ত কাব্বালিস্ট র‍্যবাঈ এবং হেসিডিক মুভমেন্টের র‍্যাবাইগন এ ব্যপারে একমত যে, যখন সারাবিশ্ববাসী কাব্বালার দিকে ঝুকে পড়বে, কাব্বালার প্রতি তৃষ্ণা তৈরি হবে, কাব্বালিস্টিক ইনিসিয়েশনের প্রতি সবার ঝোক বাড়বে, তখনই মসীহ বের হবেন। আর আমরা এটাই আজ দেখছি, সমগ্র বিশ্ব এই জ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ সময়টা ইহুদী ইতিহাসের সবচেয়ে ওয়াইল্ড পার্ট এবং সর্বশেষ মুহুর্ত ইহুদী ইতিহাসের।এটা মেসিয়ানিক যুগ। আর এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ যে আমাদের চোখের সামনে ইতিহাসের এ মহা অধ্যায় আনফোল্ড হতে যাচ্ছে। এটা সব কাব্বালিস্টের কথা যে মসিহের বের হবার সময় সর্বত্র কাব্বালার প্রতি প্রচন্ড তৃষ্ণা কাজ করবে। এবং সত্যিই আমরা আজ এটাকে সচক্ষে দেখছি...।"[৩৫]


এই র‍্যাবাঈ সত্যই বলেছেন। আজ সরাসরি কাব্বালাহ এর প্রতি বিশ্ববাসীর সুতীব্র তৃষ্ণা তৈরি হয়েছে। কাব্বালাহ এর কুফরি তত্ত্বকে বানানো হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান,মহাকাশবিজ্ঞান! মহাকাশসংক্রান্ত সমগ্র অদেখা জগতের ব্যপারে আজ সারাবিশ্বের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস রাখে কাব্বালাহর কুফরি যাদুশাস্ত্রীয় কিতাবের শিক্ষাকে। একথা কোন কন্সপিরেসি থিওরিস্টের নয়। খোদ মিচিও কাকুর মত মহান পদার্থবিজ্ঞানীই এর স্বীকৃতি দিয়েছেন। কোয়ান্টাম গ্রাভিটি কাব্বালিস্টিক হাইপার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটিকেই নিয়ে আসছে থিওরি অব এভ্রিথিং এর নামে। মূলত একে থিওরি অব এভ্রিথিং না বলে থিওরি অব দাজ্জাল বা থিওরি অব এন্টাইক্রাইস্ট বললে যথার্থ হয়। আসন্ন মসিহ দাজ্জালের ফিতনাহ যে কতটা ভয়াবহ সেটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। যেদিন থেকে কস্মোলজিক্যাল আইডিয়াকে পালটে কোপার্নিকান কেপলারদের কাব্বালাহ থেকে আনা যাদুশাস্ত্রভিত্তিক প্যাগান কস্মোলজিকে প্রতিষ্ঠা শুরু হয়, তখন থেকেই ইহুদী মসিহের জন্য বিশ্বকে বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে প্রস্তুত করার মিশন শুরু হয়। সেটা আজ থেকে ৫০০ বছর আগের কথা। তাহলে ভাবুন আজ তাদের অগ্রগতি কোথায়!


আমাদের অধিকাংশ আধুনিক মুসলিমদের অবস্থা হলো, এরা সকলে সমস্বরে যাদুবিদ্যাকে কুফর/শিরক বলতে কুণ্ঠাবোধ করে না কিন্তু কাব্বালাহ ভিত্তিক কুফরি শিক্ষাকে কুফর বলতে কুণ্ঠিতবোধ করে। সহজ কথায় তাদের অবস্থা হলো, যাদুশাস্ত্র কুফরি কিন্তু যাদুশাস্ত্রীয় সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত আল্লাহদ্রোহী আকিদা কুফরি না!  যাদুশাস্ত্রভিত্তিক শিক্ষা কুফরি না! এমন কোন আলিম পাওয়া যাবে না যে যাদুকে হালাল ইল্ম বলবে অথচ এমন আলিমের অভাব নেই যারা কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রের প্রতিফলন তথা আধুনিক পদার্থ ও আকাশবিদ্যাকে স্বতঃসিদ্ধ হক্ক ইল্ম বলে ঘোষণা দেয়। মাওলানা আস্বেম ওমরদের [হাফিজাহুল্লাহ] মত আলিমের আজ বড়ই অভাব। তিনি তার এক কিতাবে মহান ইহুদীবিজ্ঞানী এলবার্ট আইনস্টাইনের থিওরিকে সরাসরি দাজ্জালের থেকে নেয়া ইল্ম বলবার সাথে একমত হয়েছেন। নিচে তার লেখার কিছু অংশঃ

 


 নিঃসন্দেহে শাইখের এ অনুধাবন শুদ্ধ। দাজ্জালের আবির্ভাবের নৈকট্যে আমাদের এ সময়টাতে তার মত গুরাবা আলিমের বড়ই অভাব। আমার এ ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই, আজকের সময়টা সাহাবি আজমাঈনগন পেলে অবশ্যই শাইখের অনুরূপই বলতেন। আমিও আমাদের উপমহাদেশের আমিরের দায়িত্বে থাকা সম্মানিত এ শাইখের সাথে সুর মিলিয়ে বলি, আজকের অপবিজ্ঞান মূলত দাজ্জাল ও তার একান্ত অনুগত ভৃত্যদেরই[ইহুদী] কুফরি [যাদুশাস্ত্রীয়] শিক্ষা। এবার ভেবে দেখুন দাজ্জালের ফিতনাহ কতটা সুদূরপ্রসারী ও ব্যাপক! আজ কত কোটি মুসলিম যে দাজ্জালি শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারন করে, সত্য হিসেবে মানে তার কোন হিসাব নেই। আপনারা জানেন, অধিকাংশ লোকই আমার কথাকে অস্বীকার করে, অনেকে বিদ্রুপ করতেও ছাড়ে না! সেসমস্ত লোকেদের লজ্জিত হওয়া উচিত। ইহুদিদের কাব্বালিস্টিক মিসায়াহ আসবার পূর্বেই এই তাগুতের শিক্ষাকে হৃদয়াঙ্গম করে বসে আছে, তাহলে যখন সে জনসমক্ষে আসবে তখন তাদের কি অবস্থা হবে! মা'আযাল্লাহ!!


সত্যিকারের সৃষ্টিতত্ত্বকে বর্জন করা হয়েছে। আর এর বদৌলতে গ্রহন করা হয়েছে কুফরি যাদুশাস্ত্রকে। ইহুদীরা যেমনি তাওরাতকে ফেলে যাদুবিদ্যাকে অনুসরণ করে তেমনি ওদের অনুসরণে আমরাও ওদের কুফরি শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করছি। অথচ সত্য শুধুমাত্র তাই যে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা স্বয়ংবর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বর্ননা করেছেন কুরআনে, যা আমরা পেয়েছি হাদিসে। সত্য একমাত্র ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব[৩০]। 

 

যাদুবিদ্যা কুফর। যাদুচর্চা হচ্ছে ঈমান ভঙ্গের কারন গুলোর একটি। এখন ভাবুন, এই বিদ্যা থেকে আসা কুফরি আকিদায় বিশ্বাস স্থাপন কতটা গুরুতর! মা'আযাল্লাহ!! আমরা বলি কাব্বালাহর শিক্ষা সমূহ কুফরি এবং মিচিও কাকুর ভাষায় কাব্বালার প্রতিফলিত শিক্ষা কুফরি। কিন্তু জাহালতের ওযর এবং মানহাজগত কারনে বর্তমান উম্মাহর এ সংক্রান্ত বিচ্যুতিকে কেন্দ্র করে কাউকে তাকফির করিনা। এমনকি কেউ সবকিছু জেনে বিরুদ্ধাচরণ করলেও না। এও বলিনা অমুক লোক যাদুশাস্ত্রীয় এই ইল্ম ধারন করে সত্য বলে মেনে কুফরি করছে। উম্মাহর নাজুক অবস্থার বিবেচনায় এসমস্ত বিষয় নিয়ে বিভাজন বিতর্ক তৈরি থেকে সকলকে নিরুৎসাহিত করি। বিতর্ক ও বিভাজনের দ্বারা ফিতনা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রোধে আমি যা বলছি এসব গনহারে প্রচার প্রসারকে নিরুৎসাহ দেই। আল্লাহ আযযা ওয়াযাল যাদের তাকদিরে এসকল বিষয়ে জানবার পথ সহজ করেছেন তারাই আসবে। কে মানলো কে অস্বীকার করলো, সেসবে আমি পরোয়া করিনা। এ সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।  


প্রিয় পাঠক আপনারা আজ দেখলেন কিভাবে থিওরি অব এভ্রিথিং এর দ্বারা নামে কাব্বালিস্টিক হাইপার ডাইমেনশনাল শিক্ষাকে কথিত বিজ্ঞানের নিয়ে আসা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন এস্ট্রলজি এই কাব্বালিস্টিক ফিজিক্সেরই শাখাগতবিদ্যা, যেটাকে আল্লাহর রাসূল(সাঃ) যাদুর একটি শাখা বলেছেন। জোহানেস কেপলার- কোপার্নিকাসের সৌরজগত তথা তারা যে এ্যাস্ট্রনমির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটা কাব্বালিস্টিক হাইপারডাইমেনশনাল  জিওমেট্রিরই ফসল। যাদুশাস্ত্র কাব্বালার জিওমেট্রিক্যাল প্যাটার্নে ফেলেই সাজানো হয়েছে আধুনিক কস্মোলজি। মিস্টেরিয়াম কস্মোগ্রাফিকামে কেপলার হেলিওসেন্ট্রিক মডেলের পেছনে যৌক্তিকতা তুলে ধরতে কাব্বালিস্টিক প্লেটনিক আইডিয়ালিস্টিক হাইপারডাইমেনশনাল জিওমেট্রিকেই নিয়ে এসেছেন। এবার উত্তর দিন, বাবেল শহরের শয়তানের আবৃত্ত দাজ্জালি শাস্ত্রসমূহ কি আসলেই বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান? 







[চলবে ইনশাআল্লাহ]












Ref:

[১]https://youtu.be/vallK5pAKbQ

[২]https/en.m.wikipedia.org/wiki/Spinozism

[৩]https://youtu.be/O_2fC0a2OkI

[৪]https://youtu.be/bPSy5vZN-go

[৫]https://youtu.be/7FEykDoaTHg

[৬]https://youtu.be/928eqIZ7NZI

[৭]https://youtu.be/X_J9EeFBVqE

[৮]https://youtu.be/pCXAvRoE2OY

https://youtu.be/JZzDWgRb8Ac

[৯]https://youtu.be/JI-I6PGGHUY

https://youtu.be/oAuwE9dbM0M

[১০]https://youtu.be/7D-W9XyJ_BA

https://youtu.be/V3A9lKPKayI

[১১] https://youtu.be/PFBVwpodDUI

[১২]https://youtu.be/xTN9tQGgN6Q

https://youtu.be/r_w408y_3rw

[১৩]https://youtu.be/Rqu_uV-gIcU

https://en.m.wikipedia.org/wiki/An_Exceptionally_Simple_Theory_of_Everything

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Antony_Garrett_Lisi

[১৪]https://youtu.be/7jl2II5bziY

[১৫]https://en.m.wikipedia.org/wiki/10-cube

https://en.m.wikipedia.org/wiki/7-demicube

[১৬]https://youtu.be/01x7tXZ9yN8

[১৭]https://youtu.be/rG6aIVGquOg

[১৮]https://youtu.be/5tKYCgQSvVQ

[১৯]http://kabbalahsecrets.com/science-and-theology-are-one-secrets-of-the-future-holy-temple/

[২০] ihadith.com

[২১]http://www.enterprisemission.com/hyper1.html 

http://www.halexandria.org/dward118.htm

[২২]https://www.youtube.com/watch?v=Zz582j7FZQE&lc=Ugi58wDqvV_uj3gCoAEC

[২৩]https://youtu.be/xySfvsY2eiw

[২৪]https://youtu.be/ppT8JK1loSg

[২৫]https://youtu.be/Rqu_uV-gIcU

[২৬]http://www.astrology.co.uk/tests/kepler.htm

[২৭]https://www.thinking3d.ac.uk/Kepler1596/

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B8_%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF

[২৮]https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%81%E0%A6%AE_%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE

[২৯]

"THE GEOMETRICAL KABBALAHS 

OF JOlIN DEE AND JOHANNES KEPLER: 

the Hebrew tradition 

and The mathematical study of nature" By 

Michael T. Walton and Phyllis J Walton 

[৩০]https://aadiaat.blogspot.com/2019/08/pdf.html

[৩১]https://m.youtube.com/watch?v=rw17zNZIve0

http://www.mediafire.com/file/1eqtu5k2dsieinl/file

[৩২]https://youtu.be/w0ztlIAYTCU 

[৩৩]https://youtu.be/vJi3_znm7ZE

[৩৪]https://youtu.be/cOvpElGFnLE

[৩৫]https://youtu.be/2DhplzBFte4

https://youtu.be/f_QKIwWPV1U

[৩৬] https://www.youtube.com/watch?v=C69RtZzKsFE


বিগত পর্বগুলোর লিংক:

Tuesday, September 8, 2020

মানহাজের ব্যাপারে নির্দেশনা

পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি



সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্*র জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক, আর, সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাহাবীগণের প্রতি ।
এরপর,
যে সকল যুবকেরা দ্বীনের কাজে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে সক্ষম, এবং দ্বীনের জন্য নিজেদেরকে কুরবানি করতে সক্ষম, তারা অতি দূর্ভাগ্যবশত একটি ভুলধারণা দ্বারা ভুলদিকে চালিত হচ্ছে, যেটা হল, তারা ইসলামের সেসকল ‘উলামাদের কথা শুনছে ও আনুগত্য করছে যারা জিহাদ থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে রেখেছে। কারণ, যে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে বসে থাকে, তার কথা শুনা অথবা তার আনুগত্য করা উচিত নয়। আর এর ফলে দ্বীনের এই সম্পদেরা ব্যক্তিগতভাবে যা পালন করা ফার্*দ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে যা সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফার্*দ তাতে মনযোগ দিয়েছে, যেমনঃ ‘ইল্*ম অর্জন করা। অথচ এমনকি যদি সকল মানুষও ‘উলামায় পরিণত হয়ে যায়, তাহলেও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না – জামা‘আহ্*, শোনা, আনুগত্য করা, সাহায্য করা এবং জিহাদ করা – এগুলোর সমন্বয় ঘটছে।                                                   
সুতরাং এখান থেকে, আমাদের যুবকদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা উচিত যে, তাদের ‘ইল্*মসম্পন্ন নেতৃত্ব আজ পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে। এটি (এই নেতৃত্ব) সেই গুরুত্বপূর্ণ ফার্*দ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে যেটিকে সামান্য অবহেলা করার কারণে আল্লাহ্*র রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছু সাহাবীকেও (রাযিআল্লাহু আনহুম) নিন্দা করা হয়েছিল। আর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তার এই কথাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেনঃ
“যেরূপে আপনার প্রতিপালক আপনাকে আপনার ঘর থেকে সত্যের সাথে বের করলেন, আর মুসলিমদের একটি দল এটিকে অপছন্দ করছিল।”[সূরাহ্* আল-আনফালঃ০৫]
বদরের দিনে যখন সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহুম)-গণ বের হলেন, তখন তারা ভাবছিলেন যে, তারা সেদিন বানিজ্যের কাফেলা আয়ত্ত করবেন। সুতরাং, যখন তারা (রাযিআল্লাহু আনহুম) শুনলেন যে, হাজারখানেক কুরাইশ বেড়িয়ে এসেছে, তারা এটা অপছন্দ করলেন। সুতরাং, [আবূ আইয়্যুব বর্ণনা করেছেন] আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আবূ আইয়্যুব বললেনঃ “আমরা শত্রুর সম্মুক্ষীণ হবার ব্যাপারে আমাদের অনিচ্ছা প্রকাশ করলাম, এবং আমরা বললামঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল, আমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হইনি, আর তাদের মোকাবিলা করার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা শুধুমাত্র কাফেলাটির জন্যই বেরু হয়েছি।” ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আমরা আমাদের পূর্বের কথাই তাকে আবার শোনালাম। ফলে তিনি বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” এরপর আল-মিক্বদাদ ইব্*ন ‘আম্*র (রাযিআল্লাহু আনহু) কথা বললেন, আর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল! এক্ষেত্রে আমরা আপনাকে সেই কথা বলব না যা বনু ইসরঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ ‘সুতরাং আপনি এবং আপনার রব যান এবং যুদ্ধ করেন! আমরা তো এখানেই বসে থাকব।’ [আল-মাইদাহঃ২৪]
বরং আমরা আপনাকে বলিঃ আপনি এবং আপনার রব এগিয়ে যান এবং যুদ্ধ করুন, আর আমরা আপনাদের সাথেই যুদ্ধ করব! আল্লাহ্*র কসম, আমরা আপনার ডানদিক থেকে, আপনার বামদিক থেক, আপনার সামনের থেকে এবং আপনার পিছন থেকে যুদ্ধ করব।”
এটা হল সাহাবীদের (রাযিআল্লাহু আনহুম) কথা, যারা একটি যুদ্ধ ও জিহাদসমৃদ্ধ পরিবেশে ছিলেন, আল-আওস এবং আল-খাজরাযের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধ তাদের দুই গোত্রের অসংখ্যজনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, আর এটি স্থায়ী হয়েছিল ১০ বছরের জন্য, আর তারা যখন এমন অসীম যুদ্ধের মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, তখন আল-ইসলাম তাদের কাছে এসেছিল, আর জাহিলিয়্যাহ্*-এর সময় আল-আওস এবং আল-খাজরাযের অনেকেই যুদ্ধের সাথে পরিচিত ছিল, আর এসবকিছুর পরে আল-ইসলাম তাদের কাছে আসলো এবং তাদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিল – তাহলে আজকের দিনে আমরা কোথায়? অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ্* দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহ্*র দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিস্*ক্ব”। “আর যদি তারা বের হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ্* তাদের বেড় হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’”[সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৪৬] যারা মহিলাদের সাথে বসে থেকে পরিতুষ্ট তারা বুঝে না, এমনকি যদিও তাদের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠ ডিগ্রী থাকে। আর তারা জানে না, এমনকি যদিও ফাত্*ওয়ার জন্য তাদের দিকেই সমস্ত প্রশ্ন করা হয়। কারণ এটা আল্লাহ্*র কিতাবে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া আছেঃ “তারা ঘরে বসে থাকা (মহিলাদের) সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল” – এমন যে কেউ যার অন্তর আছে বা যাকে আল্লাহ্* শোনার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে জানে যে এই আয়াতের বর্ণনার সাথে কারোও অবস্থার মিলে যাওয়াটা একটা ব্যাপক নিন্দনীয় ব্যাপারঃ “তারা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল, আর তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছিল, তাই তারা বুঝে না।”[সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৮৭]
তাই জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন মুফতি যদি অনেক কিতাবাদি, প্রবন্ধ এবং ভলিউমের লেখকও হয়ে থাকেন, তবুও তিনি বুঝেন না, কারণ ‘ইল্*মের সারাংশ হল আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি ভয়। উম্মে সুফিয়ান (আল্লাহ্* যেন তার উপর রহম করেন) নামক এক মহিলা বলেছিলেনঃ “ও ‘আলিম!” আর তিনি বললেনঃ “‘আলিম হল শুধু সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্*কে ভয় করে চলে।” সুতরাং, ‘ইল্*ম মানে ব্যাপক বর্ণনার সমষ্টি নয়, বরং ‘ইল্*ম হল আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন সে অনুসারে আল্লাহ্*র ‘ইবাদাত করা, আর তাকে ভয় করা এবং তার দেওয়া দায়িত্ব পালন করা।
আর তাই আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেন যে, তারা বুঝে না। কারণ, যদি তারা সত্যিই বুঝতো, এবং যদি তাদের অন্তরে এই ঈমান দৃঢ় ভাবে থাকতো যে, আল্লাহ্*র সাথে যা আছে তা এই দুনিয়া অপেক্ষা অনেক উত্তম, তবে তারা আল্লাহ্*র সন্তুষ্টি এবং তার থেকে পুরস্কার লাভের আশায় প্রতিযোগিতা করতো, আপোষে ভরা হীন জীবনকে পছন্দ করতো না।
তাই আমি বলিঃ যুবকদেরকে এ সকল বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা কৃত্রিমতার শিকলের বন্ধন থেকে মুক্তি পায়, যে বন্ধন তাদেরকে সঠিক কাজ করা থেকে বিরত রাখে।
আর এই হল (‘আব্দুল ‘আযিয আল-‘উমারি, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলাকারী অন্যতম মুজাহিদ) ‘আবুল ‘আব্বাসঃ এক অমূল্য সম্পদ – যার ন্যায় সম্পদ আমাদের ভূখন্ডে এবং মুসলিম ভূখন্ডসমূহে আরোও আছে, কিন্তু তাদেরকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে – যার দ্বারা আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা অনেক কল্যাণ সাধন করেছেন। সে এসকল শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিল, ফলে যখন সে এখানে (আফগানিস্তানে) আসলো, তখন সে বাস্তবতার স্বরূপকে দেখলো এবং অসচেতন মানুষকে সচেতন করার জন্য তার শেষ বক্তব্য উপস্থাপন করলো যা ছিল অতি স্বচ্ছ এবং হৃদয়স্পর্শী।  সুতরাং, ইসলামের জাগরণের পথে জাগৃত মানুষদের অনেক উত্তম গুণাবলী এবং অসাধারণ সক্ষমতা রয়েছে, আর তাদেরকে কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অজ্ঞতার এই কুয়াশা এবং এই অন্ধকার দূরীভূত হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসরণীয় আরেকটি দালীল হচ্ছেঃ
হুযাইফাহ্* (রাযিআল্লাহু আনহু) আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, যেটিতে আলোচিত দৃশ্যপট আমাদের বর্তমান অবস্থার সাথে মিলে যায়, সেখানে তিনি (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ “মানুষ আল্লাহ্*র রসূলকে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো, কিন্তু আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করতাম অকল্যাণ সম্পর্কে, এই ভয়ে যে, তা আমাকে গ্রাস না করে ফেলে। তাই আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহ্*র রসূল, আমরা ছিলাম জাহিলিয়্যাহ্* এবং খারাবীতে নিমজ্জিত, এবং আল্লাহ্* আমাদেরকে কল্যাণের দিকে চালিত করেছেন। সুতরাং, এই কল্যাণের পরে কি আর কোন অকল্যাণ আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা।’ আমি বললামঃ ‘এই অকল্যাণের পরে কি আর কোন কল্যাণ থাকবে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা, কিন্তু সেটি দূষিত হবে।’ আমি বললামঃ ‘সেটির দূষণ কি?’ তিনি বললেনঃ ‘একদল মানুষ যারা আমার দেখানো সঠিক পথে চলবে না, তুমি তাদের মাঝে কল্যাণ এবং অকল্যাণ দেখতে পাবে।’ আমি বললামঃ ‘সেই কল্যাণের পরে কি আর কোন অকল্যাণ থাকবে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা, জাহান্নামের দ্বারে আহবানকারী; যে-ই তাদের ডাকে সাড়া দিবে, তাকে তারা জাহান্নামে ছুড়ে ফেলবে।’” [বুখারী ও মুসলিম]
সুতরাং, আজকের এই পরিস্থিতি যা আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে, এখন এই ভয়াবহ অকল্যাণ ইসলামের ভূখন্ডসমূহের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে, আর এর দৃষ্টান্ত চতুর্দিকে দেখতে পাওয়া যায়, যেমনঃ আজকের শাসকেরা মানুষদেরকে জাহান্নামের দ্বারেই আহবান করছে, ‘আরব উপদ্বীপসমূহ এবং অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডের শাসকেরা সবাই এ ব্যাপারে একইরূপ ধারন করেছে, কারণ, তাদের মিডিয়া, তাদের সমগ্র কর্মপদ্ধতি, জমিনে তাদের দুর্নীতির সৃষ্টি, মানবরচিত বিধানের দ্বারা সকল কর্মের পরিচালনা, রসূলের ﷺ আদর্শ ব্যতীত অপর আদর্শসমূহের প্রচার করা, এসবকিছুর দ্বারা তারা সকাল-সন্ধ্যায় মানুষদেরকে জাহান্নামের দরজার দিকে আহবান করছে, আর আল্লাহ্* ছাড়া কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই। সুতরাং, পত্র-পত্রিকাসমূহ, রেডিও-টেলিভিশন, মিটিং-সভাসমূহ – এ সব কিছুতে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা এবং তার রসূলের প্রতি কুফ্*র পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, আর কেউ এগুলোতে কোন প্রকারের বাঁধা দিচ্ছে না। সুতরাং, এই শাসকেরাই হল তারা, যারা জাহান্নামের দ্বারে আহবান করে।
এখন এরকম পরিস্থিতিতে সমাধান কি হতে পারে?
সুতরাং, সেই মহান সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহু) এরপরে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাহলে আমি যদি সেই সময়ে উপস্থিত থাকি, তবে তখন আপনি আমাকে কি করতে বলেন?”ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে একটি আদেশ দিলেন, যদিও ইসলামে অনেক ফার্*দ দায়িত্ব আছে এবং তাদের গুরত্বেরও প্রচুর বর্ণনা মিলে, এরপরেও এই ধরনের পরিস্থিতিতে আদেশ শুধু একটিই, ঈমান আনার পরে যেটির গুরুত্ব অন্যান্য সকল ফার্*দ কর্তব্যের তুলনায় বেশী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “মুসলিমদের জামা‘আহ্* ও এর ইমামের সাথে নিজেকে বিদ্ধ কর [অর্থাৎ, জামা‘আহ্* ও ইমামকে আকড়ে থাকো]।”
সুতরাং, এই হল এক ফার্*দ কর্তব্য যা এখন পালন করা অতীব জরুরী বিষয়, কিন্তু আল্লাহ্* যে সকল ‘উলামাদের উপর দয়া করেছেন তারা ব্যতীত আর কোন ‘উলামার কাছেই এটির কোন জায়গা নেই, আর তারা এটির কথা মুখেও তুলেন না। তাদের প্রত্যেকে তাওয়াগিত শাসকদের [যারা শারী‘আহ দ্বারা শাসন করা পরিত্যাগ করেছে] সম্পর্কে ভালো কথা বলা আর প্রশংসা করায় ব্যস্ত, যারা কিনা আল্লাহ্* ও তার রসূলের উপর অবিশ্বাস করেছে। ফলে এ সকল ‘উলামারা কাফির শাসকদের প্রতি প্রশংসামূলক কথা বলে টেলিগ্রাম পাঠান, আর সেসকল কাফির শাসকেরা এসকল ‘উলামাদের প্রশংসা করে ‘উলামাদের প্রতি প্রশংসামূলক টেলিগ্রাম পাঠান, আর এভাবে সমগ্র উম্মাহ্*কে প্রতারিত করা হয়।
আজ উম্মাহ্* যে দুর্যোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এরূপ দুর্যোগ দ্বারা এটি এর আগে কখনো আক্রান্ত হয়নি। এর আগেও অনেক বিষয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল আংশিক এবং একটি নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজকের দুর্যোগটি মিডিয়ার জাগরণের দ্বারা সমগ্র জাতিকে তার পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মিডিয়া আজকে প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করেছে, আর কোন ঘরই এই ফিত্*নাহ্* থেকে মুক্ত নয়, তা শহরাঞ্চলের ঘর হোক কিংবা বনাঞ্চলের ঘর। কেউ এটি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অতীতে কোন ‘আলিম ভুল করলে তার ভুল একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতো, আর কোন রাজপুত্র বা শাসক কোন দুষ্কর্ম করলে তার সেই দুষ্কর্ম তার রাজপ্রাসাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু, এমনটি মুসলিমদের ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি যে, বেশীরভাগ মানুষই তাদের চাকুরীর কাছে বন্দী, যে চাকুরী হল অত্যাচারী শাসকের অধীনে নিয়োজিত থেকে কোন সেবা প্রদান করা।
যতবার এই উম্মাহ্*র অবনতি ঘটেছে, আর যখনই এই উম্মাহ্*র মানুষ সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তখনই এই দ্বীনের ইতিহাসে অসাধারণ ঘটনার সূচনা ঘটেছে, অন্যেরা এই পথকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছে, এবং তারা কঠোর আত্মত্যাগ করেছে, এবং নিজেদেরকে কুরাবনী দিয়েছে। কিন্তু, এমনটি কখনোই ঘটেনি যে, সমগ্র উম্মাহ্* এবং তার ফুক্বাহা এবং তার ‘উলামা তাওয়াগিত শাসকদের অধীনে নিয়োজিত চাকুরীর দাসে পরিণত হয়েছে!
তাদের (‘উলামা) একজন আমার সাথে কথা বলছিল, আর সে বললঃ “আমরা সত্য কথা বলতে সক্ষম নই, কারণ যখনই আমরা সত্য কথা বলতে চাই, তখনই আমরা ঘরগুলোতে থাকা শিশুদের কথা, আর মহিলাদের কথা চিন্তা করি, তখন তারা কোথায় যাবে? আর আমরাই বা কোথায় যাব?”
সুতরাং, আজকের দিনের শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়োজিত চাকুরীজীবির সাথে শাসকের কি ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান তা যুবকদের বুঝা খুবই জরুরী। যে কেউই আজ শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়োজিত একটি চাকুরীজীবি, তবে সে ঠিক তা-ই, অর্থাৎ সে শাসনব্যবস্থারই চাকর, সেটিরই দাস। আর আমরা যখন বলি যে, অমুক শাইখ এবং অমুক আর তমুক শাসনব্যবস্থার দাস, তখন যুবকদের আমাদের উপর রাগ করা উচিত নয়।
আমরা যদি একটি সামগ্রিক জরিপ করতাম যেখানে জনসংখ্যা, নাম, বয়স, সামাজিক অবস্থান, পেশা ইত্যাদির অনুসন্ধান করা হত, আর সবাইকে এই প্রশ্নটি করতামঃ “আপনি কি সরকারী চাকুরীজীবি নাকি স্বাধীনভাবে উপার্জনকারী?” তবে যে শাসনব্যবস্থার চাকুরী করে সে কি লিখত?
ম্যানেজার বলতোঃ “আমি শাসনব্যবস্থার চাকুরীজীবি, সরকারী চাকুরীজীবি।”
পুলিশ বলতোঃ “আমি একজন সরকারী কর্মচারী।”
বিচারকেরা বলতোঃ “আমরা সরকারী চাকুরীজীবি।”
আর দার উল-ইফতা’-এর ‘উলামা বলতোঃ “আমরা সরকারী চাকুরীজীবি।”
সুতরাং, যুবকদের বুঝ-এর মাঝে ঘাটতি রয়েছে, যখন আমরা মানুষদের প্রকৃত পরিচয় বর্ণনা করি, যে তারা হল সরকারী কর্মচারী, আপনি দেখবেন যে তারা রাগান্বিত হচ্ছে!
আর এটা সত্যিই অদ্ভূত বিষয়! আপনি তাদের সাথে অত্যাচারী শাসকদের কোন সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকার করেন, অথচ এটাই তাদের প্রকৃত বর্ণনা এবং বাস্তবতা।
সুতরাং, সমাধানের পথটি হল সেই পথ যা খুবই স্পষ্ট এবং সরলভাবে আল্লাহ্*র কিতাব এবং রসূল () -এর সুন্নাহ্*-এ বলে দেওয়া আছে। সুতরাং, এসকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সম্পর্কিত করেঃ
[১] সমাধান হল জিহাদের জন্য সবাই মিলে একত্রিত হওয়া।
[২] সমাধান হল জামা‘আহ্*, শ্রবন, আনুগত্য এবং জিহাদের মাধ্যমে কাজ করা।
[৩] সমাধান হলঃ “মুসলিমদের জামা‘আহ্* ও এর ইমামের সাথে নিজেকে বিদ্ধ কর [অর্থাৎ, জামা‘আহ্* ও ইমামকে আকড়ে থাকো]।”
আর মুসলিমদের জামা‘আহ্* এবং সেটির ইমামের উপর প্রথম ফার্*দ কর্তব্য হল কুফ্*ফারদেরকে প্রতিহত করা এবং আগ্রাসী সৈন্যদেরকে প্রতিরোধ করা। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “অতএব আল্লাহ্*র রাস্তায় যুদ্ধ কর; তোমার উপর নিজ ব্যতীত অপর কারোও ভার অর্পন করা হয়নি, এবং ঈমানদারদেরকে উদ্বুদ্ধ কর; অচিরেই আল্লাহ্* কুফ্*ফারদের শক্তি প্রতিহত করবেন, আর আল্লাহ্* শক্তিতে সুদৃঢ় ও শাস্তিদানে কঠোর।”[সূরাহ্* আন্*-নিসাঃ৮৪] সুতরাং, কুফ্*ফারদের শক্তি প্রতিহত করার উপায় হচ্ছেঃ [১] যুদ্ধ করা এবং [২] উদ্বুদ্ধ করা।
সুতরাং, তাহলে কেন মানুষেরা সঠিক দিকনির্দেশনার অনুসরণ করছে না? কারণ হল জাহান্নামের দ্বারে আহবানকারীরাঃ
[১] শাসকেরা এবং তাদের সমগ্র কর্মপদ্ধতি, যা দিন-রাত মানুষকে সরলপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে আহবান করে আসছে।
[২] সরকারী চাকুরীজীবি লোকেরা, যাদের মধ্যে কতক-কে মানুষকে আল্লাহ্*র রাস্তায় বাঁধা দেওয়ার কাজের চাকুরী দেওয়া হয়েছে।
শাসনব্যবস্থা তাদেরকে চাকুরী দিয়েছে এবং তাদেরকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছে, কিন্তু, এই পেশার মূল বাস্তবতা হল তাকে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার চাকুরী দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, তথ্যমন্ত্রীর কাজ হল মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া, এটি সে নিজে করে এবং তার সমগ্র কর্মপদ্ধতি ও কর্মব্যবস্থাকে দিয়ে করায়। সে তার দেশকে সর্বোৎকৃষ্ট দেশ হিসেবে মানুষকে ধারণা দেয় এবং শাসককে একজন প্রতিভাবান শাসক হিসেবে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে, আর এরকম অনেক মিথ্যা কথা সে নির্দ্বিধায় মানুষের সামনে উপস্থাপন করে, আর মানুষকে প্রতারিত করে।
একইভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিথ্যা সাক্ষী দেয়। সে বলে যেঃ “আমরা ভালো আছি, আর আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থায় আছে”, অথচ প্রকৃতপক্ষে আমরা এক দশকেরও বেশী সময় ধরে অন্যের দখলদারীর অধীনে আছি, আর সমগ্র বিশ্ব জানে যে আমরা দখলদারীর অধীনে আছি, আমেরিকার প্লেনসমূহ কাউকে কিছু না জানিয়ে যখন খুশী তখন হানা দেয়, দিন হোক কিংবা রাত হোক। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেড়িয়ে এসে বলেঃ “আমরা স্বাধীন, এবং কেউ আমাদের অনুমতি না নিয়ে আমাদের ভূখন্ড ব্যবহার করতে পারে না। সুতরাং, এরাই হল তারা যারা মিথ্যা সাক্ষী দেয়।
আর আল্লাহ্*র রহমতে, অবশেষে সকল মানুষের মাঝে এই সচেতনতা ছড়িয়ে পড়েছে, আর তারা জানতে পেরেছে যে, এরা (শাসনব্যবস্থার কর্মচারীরা) আসলে সরকার ও শাসনব্যবস্থার দাস।
কিন্তু এখন আমরা যে বিপদের সম্মুক্ষীন হচ্ছি তা কোন মন্ত্রী বা তার অনুসারীদের থেকে আসছে না, কারণ তারা যা করে তার দ্বারা মানুষকে এখন আর প্রতারিত করা সম্ভব নয়, কারণ তাদের প্রতারণা মানুষের সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখন যে সমস্যাটি প্রধান বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হল আল্লাহ্*কে ভয় করে না দ্বীনের এমন নেতাদের থেকে আসা মিথ্যা এবং প্রতারণা, যা উম্মাহ্*কে ভুল পথে পরিচালিত করছে।
এখন যদি মিথ্যা কথার সাক্ষীটি মক্কা আল-মুকাররামাহ্*-এ পবিত্র কা’বাঘরের নিকটে থাকা ব্যক্তিটি হন, তাহলে কেমন হয়? নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার একটি হাদীসে বর্ণনা করেছেনঃ “আল্লাহ্*র দৃষ্টিতে সবচাইতে ঘৃণ্য ব্যক্তি হল তিন প্রকারের…” আর তিনি প্রথম যার কথা উল্লেখ করলেনঃ “হারামে থাকা এক মুলহিদ (বিদ‘আতী)।” আর মাসজীদ আল-হারামে অবস্থান করে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হল সবচাইতে ভয়াবহ বিদাআতী কাজগুলোর মাঝে একটি, যার ফলাফলস্বরূপ উম্মাহ্* পথভ্রষ্ট হয় আর সাক্ষীদানকারী ব্যক্তি মাস শেষে কিছু পয়সা বেতন হিসেবে পান।
সুতরাং, এ সকল শাসকদের কুফ্*র-এর ব্যাপারে, তাদের দুষ্কর্মের ব্যাপারে, তাদের মুসলিম ভূখন্ডসমূহকে কুফ্*ফারদেরকে দখল করতে দেওয়ার ব্যাপারে, এবং তাদের আল্লাহ্*র বান্দাদের মাঝে দুর্নীতির ছড়ানোর ব্যাপারে কেউ দ্বিমত্* করে না।
আর এরপর আপনি আসলেন, আর পবিত্র মাসে পবিত্র জায়গার পবিত্র ঘরে মিথ্যা সাক্ষী দিলেন! আর আল্লাহ্* ব্যতীত কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই।




শাসকদের আজ বিভিন্ন প্রকারের চালাকির ব্যবহার ব্যতীত কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই। আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামাতের পূর্বে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা চলবে, যেখানে আমানতদারকে ধিক্কার দেওয়া হবে এবং বিশ্বাসঘাতক/খিয়ানাতকারী-কে বিশ্বাস করা হবে, মিথ্যাবাদীকে বিশ্বাস করা হবে এবং সত্যবাদীকে অবিশ্বাস করা হবে, এবং রুওয়াইবিদাহ্*-রা কথা বলা শুরু করবে।” তাকে বলা হলঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল, এই রুওয়াইবিদাহ্*-রা কারা?” তিনি বললেনঃ “সে সকল বোকাদের দল যারা মানুষজনের কার্যাবলি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলবে।”
সুতরাং, আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, এটাই সেই যুগ যেখানে শাসকেরা সকল প্রকারের চালাকী ব্যবহার করছে, হোক তা ‘আরবের শাসক কিংবা অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডসমূহের শাসক, কিংবা বিশ্বের অন্য যেকোন স্থানের শাসক। আর এর একটি পরিষ্কার নিদর্শন হল, বুশ অসংখ্য মুসলিমদের রক্তপাতকারী শ্যারনের কথা উল্লেখ করে “একজন শান্তিপূর্ণ মানুষ” হিসেবে। আর একইভাবে দ্বীনের শাসকেরা কুফ্*ফারদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে অপরদিকে দাবী করে যে তারা ইসলামের উপরই প্রতিষ্ঠিত আছে, আর এভাবে সমগ্র উম্মাহ্*কে তারা প্রতারিত করে।
আর এই প্রতারণার সাথে আরোও প্রতারণার স্বরূপ তারা এমনসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে প্রতারিত করা। আর মানুষেরা হয়ত বিস্মিত হবে যখন আমরা এগুলোর কথা বলছি, যেহেতু এগুলো শারী‘ঈ ও ফিক্ব্*হী বিষয়ের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে এ সকল প্রতিষ্ঠান জেনে বা না জেনে উম্মাহ্*কে প্রতারিত করছে। কারণ রেডিও-টেলিভিশনে কিছু ‘উলামাকে উপস্থাপন করা ও তাদের ফাত্*ওয়া দেওয়ার পিছনে শাসনব্যবস্থার অপর উদ্দেশ্য আছে। তা না হলে তারা রেডিও-টেলিভিশন ও অন্যান্য জায়গায় সত্যবাদী ‘উলামাদেরকে উপস্থাপন করতো। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে উম্মাহ্*র এই কঠিন ও দুর্দশাময় সময়ে এ সকল প্রতিষ্ঠান একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
কারণ আমরা অতীতে দেখেছি যে, যখন এই শাসনব্যবস্থা আমেরিকান ক্রুসেডারদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করলো এবং তাদেরকে হারামাইন ভূখন্ডে আসতে দিলো, তখন সাধারণ মানুষেরা এবং এর যুবকেরা এর বিরোধীতা করলো, কিন্তু এরপরে যেটির দ্বারা মানুষের এই বিরোধীতাকে শান্ত করা হল তা হচ্ছে এ সকল প্রতিষ্ঠান ও এর ‘উলামাদের দ্বারা। তারা শাসকের কাজকে সঠিক বলে ফাত্*ওয়া দিল এবং এই শাসককে “ওয়ালিয়্যুল ‘আম্*র” নামে নামকরণ করলো, যদিও প্রকৃতপক্ষে এই শাসক মুসলিমদের জন্য “ওয়ালিয়্যুল ‘আম্*র” নয়। সুতরাং, এ সকল বাস্তবতাকে লক্ষ্য করতে হবে।
মানুষ হয়ত বিস্মিত হবে যে, এটা কিভাবে সম্ভব? অমুক ও অমুক শাইখের এত ‘ইল্*ম থাকা সত্ত্বেও, এবং তাদের এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও এটা তারা কি করে করতে পারেন? এটা কিভাবে সম্ভব যে তারা স্বল্প কিছু পয়সার বিনিময়ে তাদের দ্বীনকে বিক্রয় করছেন?
আমি বলি যে, মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়, আর আমরা যদি আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকাই এবং ইসলামের গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস দেখি, তবে আমরা দেখবো যে এরূপ ঘটোনাগুলো বার বারই ঘটেছে। আর মানুষের বুঝার সুবিধার্থে আমি একটি বা দুইটি উদাহরণ উপস্থাপন করবোঃ
[১] ইমাম আয-যাহাবী (রহিমুল্লাহ) তার সিয়ার-এ ‘আলী ইবনুল মাদিনির (রহিঃ) জীবনী উল্লেখ করেছেন। তার জীবনীর সূচনাটির দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন, তিনি বলেছেনঃ “ ‘আলী ইবনুল মাদিনি…যিনি হাদীসশাস্ত্রে আমিরুল মুমিনীন।” [সিয়ার ‘আলামীন-নুবালাঃ ১১/৪১] । আর তিনি তার কথা উল্লেখ করেছেন, বর্ণনা করেছেন, প্রশংসা করেছেন আর এমনও বলেছেন যে, হাদীসশাস্ত্রে মানুষেরা তার উপর নির্ভরশীল। আমরা যদি ন্যায়পরায়ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই তবে হ্যা, এটা ঠিক যে উনার ‘ইল্*মের তুলনায় আমাদের এখনকার ‘উলামাগণ তেমন কিছুই নন, কিন্তু এত কিছুর পরেও তিনি একটি বিশাল ভুল করেছিলেন যখন তাকে সুলতানের চাকুরী করতে নিয়ে আসা হল। বনুল-‘আব্বাসের শাসকেরা তাকে এমন কাজের জন্য জোর করেছিল যা ছিল তার নিজ ‘আক্বীদাহ্* এবং তিনি যে শিক্ষা দিতেন তার পরিপন্থী। আর তিনি তাদের সাথে সম্মত হয়েছিলেন এবং এতে উম্মাহ্*র দিকনির্দেশনা চরম ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছিল।
[২] একইভাবে শাইখুল মুমিনীন ইয়াহ্*ইয়া ইব্*ন মা’ইন (রহিঃ)-ও একই ভুল করেছিলেন।
আর সে যুগের অনেক ‘উলামাই প্রহার, ধর-পাকড়, বন্দী, মৃত্যুদন্ড ইত্যাদির ভয়ে এই একই ভুল করেছিলেন, আর একটি অতি ক্ষুদ্র দল ব্যতীত কেউ-ই দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ায় নি, আর আপনি হয়ত জানেন যে এই অল্প কয়েকজনের মাঝে ছিলেন আহ্*লুস সুন্নাহ্* ওয়াল-জামা‘আহ্*-এর ইমাম, ইমাম আহ্*মাদ ইব্*ন হান্*বাল (রহিমুল্লাহ)। সুতরাং, এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আপনি এ সকল জীবনী পড়ুন, এতে আপনি সেসকল মানুষের অবস্থা ও পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারবেন।
এটা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাহীহ্* হাদীসে তিনি বলেছেনঃ “একজন বিচারকের দুই ব্যক্তির মাঝে বিচার করা উচিত নয়, যদি তিনি রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন।” [ইমাম আহ্*মাদ থেকে বর্ণিত] এখানে দেখা যাচ্ছে যে, যদি বিচারক রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন, তাহলেই বিচার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে, তাহলে তার ব্যাপারটা কিরূপ যে ভীত অবস্থায় রয়েছে? কারণ, নিশ্চয়ই মানব রূহের উপর রাগের চাইতে ভীতির প্রভাব বেশী, যা ইবনুল-ক্বয়্যিম (রহিমুল্লাহ) বলেছেনঃ “সুতরাং, যে কেউ এটিকে শুধুমাত্র রাগের মাঝে সীমাবদ্ধ করে, আর দুশ্চিন্তাকর দুঃখ-কষ্ট, মনযোগবিচ্যুতকারী ভীতি, অসম্ভব ক্ষুধা বা তৃষ্ণা অথবা এমন যে কোন কিছু যা ক্বল্*ব (অন্তর) কে বুঝ থেকে বিরত রাখে সেগুলোকে এর বহির্ভূত করে, তবে তার প্রজ্ঞা ও তার বুঝ অতি সামান্য।” [ই’লামুল মুয়াক্বক্বইন, পৃষ্ঠাঃ ২০৭-২০৮]
সুতরাং, আমাদের দেশের মানুষেরা সত্য কথা বলতে ভয় পায়, এটা মাথায় রাখতে হবে। আর অনেক ‘উলামা একথা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, সত্য কথা বললে তাদের কি হবে, এ নিয়ে তারা ভীত। আর আমি পূর্বে হাই’আত কিবারিল-‘উলামার (শীর্ষ ‘আলিমদের কমিটী) একজন শীর্ষ ‘আলিমের সাথে আমার কথোপকথন উল্লেখ করেছি, যখন আমরা তাদেরকে বলেছিলামঃ “যদি আমরা এটা স্বীকার করে নেই যে আমেরিকানদের এই ভূখন্ডে উপস্থিতি একটি চরম দুরবস্থা, তাহলে একটি ফাত্*ওয়া প্রদান করা উচিত যে এখন জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহন করা ফার্*দ।” ফলে তিনি এ বলে ক্ষমা চাইলেন যে, তিনি এই ফাত্*ওয়া প্রদান করতে পারবেন না, আর একই সাথে সবার সামনে একথাও বললেন যে, এটাই আসলে সত্য যে, এখন আমেরিকানদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য জিহাদই করা প্রয়োজন। তিনি বললেনঃ “কিন্তু শাসনকর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আমাদের সাথে একমত হবে না।” আর যখন আমরা তাকে বললামঃ “হাই’আত কিবারিল-‘উলামার” মাধ্যমে এই ফাত্*ওয়া প্রদান করতে চেষ্টা করুন,” তখন তিনি যা বললেন তার সততাকে আমি বাহবা দেই, তিনি বললেনঃ “শাসনব্যবস্থা হাই’আত কিবারিল-‘উলামাকে এ ব্যাপারে কোন কর্তৃত্ব দেয় না।” তিনি আরোও বললেনঃ “কোন বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করা ও সেটির ব্যাপারে ফাত্*ওয়া দেওয়ার কাজ যারা করে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। ফাত্*ওয়া শুধুমাত্র সে সকল বিষয়েই দেওয়া হয় যেগুলো ‘উপর থেকে’ (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ) আমাদের দিকে পাঠানো হয়।”
সুতরাং, মানুষের এই বিষয়টি বুঝা জরুরী, কারণ যদি এই সন্দেহ ও ভুল সবার কাছে পরিষ্কার না হয়ে যায়, আর দ্বীন ও ঈমানদারদের প্রতি পরিষ্কার আনুগত্য ও সহানুভূতির ঘোষণা ছাড়া এবং শির্*ক ও বিদ‘আহ্* থেকে সম্পূর্ন দায়মুক্তি, ঘৃণা ও অনানুগত্যের ঘোষণা ব্যতীত উম্মাহ্* সামনে আগাতে থাকে, তবে আমাদের পক্ষে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন কখনোই সম্ভব হবে না। সুতরাং এটি একটি চরম সঙ্কটের বিষয় এবং অতি জরুরী বিষয়। সুতরাং, সত্যবাদী ‘উলামাদের, ‘ইল্*মের ছাত্রদের ও দ্বীনের দা‘ঈদের জরুরীভিত্তিতে এ সম্পর্কিত সকল সন্দেহ ও সংশয় যুবকদের মন থেকে দূরীভূত করার পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
সুতরাং, এই শাসনব্যবস্থা ঠিক যেমন তথ্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটির কাজ হল মানুষকে প্রতারিত করা, একইভাবে এটি এটির সে সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের পিছনে প্রচুর শ্রম দেয় যেগুলো নিজেদেরকে ইসলামের সাথে সম্পর্কিত করে, যেগুলো এই শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা প্রদান করে, যেগুলো ঘোষণা দেয় যে এরূপ শাসনব্যবস্থা সত্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত।
আর এই বিষয়টিকে আরোও স্পষ্ট করার জন্য বলছি, আপনি খেয়াল করে থাকবেন যে, হাই’আত কিবারিল-‘উলামার ভবনটি রাজপ্রাসাদের সংলগ্ন। আপনি হয়ত এটাও দেখেছেন যে, আল-আযহারের দারুল-ইফতার ভবনটি হুসনি মুবারাকের রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন। আর হারামাইন ভূখন্ডের দারুল-ইফতা রাজার রাজপ্রাসাদের সংলগ্ন। সুতরাং, যে ব্যক্তি রাজার থেকে বেতন নিচ্ছে, আপনি কি এমন কাউকে জিজ্ঞেস করবেন যে, রাজার ব্যাপারে শারী‘আহ্*-এ কি বিধি প্রযোজ্য? রাজা কি কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করেছে কি না? আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা কি ঈমান বিধ্বংসকারী কোন বিষয় কিনা? আসলে এই বিষয়গুলো খুবই পরিষ্কার, যদিও ‘ইল্*মের অভাবের কারণে কিছু মানুষের কাছে বিষয়টা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে এরূপ মানুষদেরকে সত্যবাদী মানুষদের কাছ থেকে ‘ইল্*ম জেনে নেওয়ার জন্য পাঠানো উচিত। আর আপনি রাজার চাকুরী করে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না যে, রাজার উপর শারী‘আহ্*-এর কি বিধি প্রযোজ্য।
সুতরাং, এরূপ ক্ষেত্রে কি করণীয় তার সমাধানের জন্য সে সকল ‘আলিম বা ব্যক্তিদের আদর্শের দিকে তাকানো ভুল হবে যারা শাসনব্যবস্থার চাপে পরে আপোষ করেছেন, আর এমন কাজ করেছেন যা দ্বীন ইসলামের আক্বীদাহ্*র পরিপন্থী।
আমাদের ইমাম ‘আলী (রাযিআল্লাহু আনহু)-এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যেখানে তিনি বলেছেনঃ “ও হারিস! বিষয়টি তোমার কাছে জটিল রূপ ধারণ করেছে। মানুষ হাক্বে্র (সত্য) উৎস নয়। হাক্ব্* কে (সত্য) জানো, আর তখনই তুমি এর অনুসারী মানুষদেরকে চিনতে পারবে।”
মানুষের মাঝে হাক্বের (সত্য) অনুসন্ধানের ফলে অন্ধ-অনুসরণ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক যুবকই তাদের সকল কাজে শাসনব্যবস্থার দাসদের অনুসরণ করে। তাদেরকে একটি মর্যাদার পোশাক পরতে দেওয়া হয়েছে আর তাদেরকে বড় বড় নাম দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা শাসনব্যবস্থার দাস। আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা তাদেরকে তাদের ‘ইল্*ম থাকা সত্ত্বেও পথভ্রষ্ট করেছেন। কারণ আমরা দ্বীনি কিতাবাদি থেকে শিখেছি যে মৌলিক যে সকল ‘আমল একজনকে দ্বীনের বহির্ভূত করে, তার মাঝে একটি হল কুফ্*ফারদের প্রতি আনুগত্য স্থাপন করা। যদিও আমাদের সাথে গোপন আলোচনায় তারা এ ব্যাপারে সত্য কথা বলে, কিন্তু এরপরেও জনসম্মুখে তারা মিথ্যা রচনা করে, যেমনটি ইয়াহ্*ইয়া ইব্*ন মা’ইন (রহিমুল্লাহ) করেছিলেন। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।
আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি ও বর্তমান দুর্দশার থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন দ্বীন ইসলাম, আল্লাহ্*, তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলিমদের আমীরগণের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া। আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আন্তরিক উপদেশ [নাসীহাহ্*], কারণ নাসীহাহ্* হল অন্যতম উপাদান যার দ্বারা দ্বীনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত হয়। এই কারণে আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “দ্বীন হল নাসীহাহ্*।” [মুসলিম দ্বারা বর্ণিত] কারণ নাসীহাহ্*র সবচাইতে পরিষ্কার নিদর্শনগুলোর মাঝে অন্যতম হল সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, যা দ্বীনকে প্রতিরক্ষা প্রদান করে। এ কারণের তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বীনের সারাংশ করেছেন তার এই উক্তির মাধ্যমেঃ “দ্বীন হল নাসীহাহ্*।”
কিন্তু এখন আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যখন, মানুষের দ্বীনের বুঝ অসংখ্য সংশয়ে ভরা, আর তারা মনে করে যে, নাসীহাহ্* এবং সচেতনতা ছাড়াও দ্বীন তার কার্যাবলি বজায় রাখতে পারে। তাই আমরা আজ দেখি যে, মানুষ আজ প্রাচুর্য ও চাকচিক্য দ্বারা আক্রান্ত এবং সে পার্থিব বিষয়াদি ও দুনিয়ার প্রতি অনেক ঝুঁকে পড়েছে। আর এরচেয়েও খারাপ কথা হল, যে সকল অলস ব্যক্তিত্বরা পার্থিব জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তারা তাদের এই ব্যাধি যুবকদের মাঝে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। কারণ যে সকল যুবকেরা তাদের দ্বীন নিয়ে গর্বিত, যারা অসৎকাজে বাঁধা দিতে চায়, অসৎকাজ বন্ধ করতে চায়, তাদেরকে এ সকল অলসেরা বলে যে, অসৎকাজে বাঁধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর এভাবে এ সকল অলসেরা রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কথার উপরে নিজেদের কথাকে প্রাধান্য দেয়।
সুতরাং, নাসীহাহ্*, এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুক্ষীণ করা ব্যতীত দ্বীনের পক্ষে তার কার্যাবলি বজায় রাখা সম্ভব নয়। আর এই কারণেই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “সর্বোত্তম জিহাদ হল অত্যাচারী শাসকের সম্মুখে হাক্ব্* (সত্য) কথা বলা।” [ইমাম আহ্*মাদ দ্বারা বর্ণিত] আর এ সবকিছু এজন্যেই যেন দ্বীনের সকল কার্যাবলি বজায় থাকে।
দ্বীনের সকল কার্যাবলি যেন সুষ্ঠভাবে বজায় থাকে এ জন্য যে নিজেকে ঝুঁকির সম্মুক্ষীণ করছে, তার পরিস্থিতির উদাহরণ হল সেই জাহাজের মানুষটির পরিস্থিতির উদাহরণের ন্যায়, যেটির ক্যাপ্টেন সেটিকে একটি খাড়া জলপ্রপাতের দিকে চালিত করছে, আর এই ব্যক্তি সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপদেশ দিতে চায়, আর অন্যান্যরা তাকে (ক্যাপ্টেনের) ভয়ে বলছেঃ “যদি তুমি তাকে উপদেশ দাও, তবে সে তোমাকে হত্যা করবে! তাকে উপদেশ দিতে যেও না।” সুতরাং, (উপদেশ না দেওয়ার) ফলাফল হচ্ছে, তারা সকলেই সেই জলপ্রপাতের মধ্যে পড়বে।
আর তাই আমাদের দ্বীনে একটি ভুল পথকে সঠিক করার জন্য এত জোর ও যত্ন দেওয়া হয়েছে যে, আপনি নিজেকে আল্লাহ্*র রাস্তায় কুরবানী করে দিবেন যেন পথটি সঠিক হয়, যেন মানুষ নিজেদের দ্বীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর এই কারণে আল্লাহ্*র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর এই হাদীসটি এসেছেঃ “শহীদদের নেতা হলেন হামযা ইব্*ন ‘আব্দিল মুত্তালিব, এবং একজন ব্যক্তি যিনি একটি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আদেশ করেছেন (হাক্ব্*-এর) এবং নিষেধ করেছেন (বাতিল-এর), আর তাই তিনি তার (শাসকের) দ্বারা হত্যাকৃত হয়েছেন।”[আল-হাকিম দ্বারা বর্ণিত হয়েছে]
এটা এই হাদীসের একটি খুবই পরিষ্কার ও স্পষ্ট বুঝ, আর এরপরেও আমাদের ‘উলামা ও মাশায়িখগণ আমাদেরকে ধরে রাখেন এবং এটা করা থেকে বিরত করেন, একথা বলে যে, এতে কোন কল্যাণ নেই।
সুতরাং, তাদের (যারা যুবকদেরকে উপরোল্লিখিত হাদীসানুসারে কাজ করতে নিষেধ করে) দেওয়া বুঝ ‘আক্বীদাহ্* ও দ্বীনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তারা কি করে নিজেদের কথাকে আল্লাহ্*র রসূলের এ কথার উপরে প্রাধান্য দেনঃ “শহীদদের নেতা হলেন হামযা ইব্*ন ‘আব্দিল মুত্তালিব, এবং একজন ব্যক্তি যিনি একটি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আদেশ করেছেন (হাক্ব্*-এর) এবং নিষেধ করেছেন (বাতিল-এর), আর তাই তিনি তার (শাসকের) দ্বারা হত্যাকৃত হয়েছেন।” [আল-হাকিম দ্বারা বর্ণিত হয়েছে] কারণ আমাদের শক্তি, দ্বীনকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য আমাদের অস্ত্র, দ্বীনকে ভিতর থেকে দূষিত করার যে কোন অপচেষ্টার প্রতিরোধ, বাহির (কুফ্*ফার) থেকে আগত দ্বীনের প্রতি যে কোন প্রকারের হুমকির প্রতিরোধ, ইত্যাদির সাথে শহীদ হবার তামান্না ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং, জিহাদ এবং এর ফলাফলস্বরূপ যা আসে, শুধুমাত্র তার মাধ্যমেই হাক্ব্*কে (সত্য) পুনরায় ফিরিয়ে আনা এবং বাতিলকে (মিথ্যা) পুনরায় দূরীভূত করা সম্ভব।
সুতরাং, যে সকল যুবকদের অন্তরকে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা দ্বীনের ভালোবাসার প্রতি এবং তার রাস্তায় কুরবানীর প্রতি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাদের মোটেও উচিত হবে না এ সকল শাসনব্যবস্থার দাস, অলস ব্যক্তি ও পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে যাওয়া লোকদের থেকে কোন প্রকারের কথাকেই কানে নেওয়া। সুতরাং, পূর্বের (যখন তথ্যপ্রযুক্তি এত শক্তিশালী ছিল না) ‘উলামাগণ (যারা ছিলেন ন্যায়পরায়ণ) আর বর্তমানের (যখন তথ্যপ্রযুক্তি খুবই শক্তিশালী) শাসনব্যবস্থার ‘উলামাগণের মাঝে কতই না পার্থক্য!
‘ইল্*মের অধিকারী ব্যক্তিগণ বলেছেনঃ “শাসকের দ্বারে ‘আলিমদের প্রবেশের ক্ষেত্রে তিনটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে।” আর এর মাঝে সবচাইতে বেশী ক্ষতিকর হল সাধারণ জনগণকে পথভ্রষ্ট করা। কারণ সাধারণ জনগণ বলবেঃ “যদি এই নেতা বা এই রাজা বা এই মন্ত্রী ভালো না হতেন, তবে তো অমুক আর অমুক শাইখ কখনোও তাদের ভবনে প্রবেশ করতেন না!” আর তারা এ ব্যাপারে অজ্ঞ যে, আসলে সেই শাইখ শাসনব্যবস্থারই একটি দাস যে সেই নেতা বা রাজা বা মন্ত্রীর চাকুরী করে।
ইমাম আহ্*মাদ (রহিমুল্লাহ) বলেছেনঃ “যে সকল বিষয় মানুষের ফিক্ব্হী (প্রজ্ঞার) অভাবকে নির্দেশ করে, তার মাঝে একটি হল সে দ্বীনের বিষয়াদিতে অপর কোন মানুষের অন্ধ-অনুসরণ করে।” [ই’লামুল মুওয়াক্ব্*ক্বইন, ২/২১১]
সুতরাং, শাসকেরা যাদেরকে জিহাদের পথে বাঁধাস্বরূপ দাঁড় করিয়ে রেখেছে, যখন আমরা তাদেরকে চিনতে পারবো, আর যখন আমরা সার্থকভাবে সাধারণ মানুষদেরকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করতে পারবো, তখনই আমরা আল্লাহ্*র অনুমতিক্রমে জিহাদের পথে চলা শুরু করতে পারবো যার দ্বারা কুফ্*ফারদের শক্তিকে ধ্বংস করা হয় এবং হাক্ব্* (সত্যকে) প্রতিষ্ঠিত করা হয়। আর এ সকল শাসনব্যবস্থার দাসেরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে ফিক্ব্*হী (প্রজ্ঞার ) শিক্ষা দিয়েছেন তা ধারন করে না, এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে যে মানহাজ (কর্মপদ্ধতির) শিক্ষা দিয়েছেন, সে সম্পর্কে তাদের কোন বুঝ নেই।   (চলমান…)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়লা আমাদের সকলকে বুঝার ও হক্ব  অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।


تنظيم القاعدة