Sunday, March 15, 2020

১৭.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

পর্ব-১৭







ইহুদীরা কেন আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এর কাছে রূহের ব্যপারে প্রশ্ন করেছে? উপরে দেখছেন যে, ইহুদীরা প্রত্যাশা করছিল যে তাদের কাছে ইল্ম আছে সেটার বিপরীত কিছু আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলবেন। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা রহস্যের আবরণে জড়িয়ে আসল বিষয়টিকে তাদের কাছে প্রকাশ থেকে দূরে রাখলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনে(সূরা বাকারা) ইহুদীদের অনুসৃত শাস্ত্রকে সরাসরি ব্যবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্র বলেছেন। ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট(যাদু/গুপ্ত) শাস্ত্র তথা আজকের ইহুদীদের কাব্বালা অনুযায়ী আত্মা বা রূহ হচ্ছে সৃষ্টিজগতের মূল অস্তিত্ব। এটাকে  মহাচৈতন্যও(consciousness) বলে। তাদের মতে, এটাই স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা, তারই সত্তার মানব শরীরের প্রবেশ করে। হিব্রু ভাষায় একে বলা হয় אין סוף(Ein Sof)। তাদের কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রমতে সৃষ্টিকর্তা বলে কোন আলাদা স্বত্ত্বা নেই, তিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতের সাথে বিলীন হয়ে আছেন। সৃষ্টিকর্তার বর্তমান রূপ হচ্ছে সমস্ত বস্তু-অবস্তু জগৎ। তার সত্তাগত অস্তিত্ব থেকেই সবকিছু তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব(সর্বেশ্বরবাদ)। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সচেতন রূহ আছে,এটাই সবচেয়ে মৌলিক অস্তিত্ব অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষই একেকটি ঐশ্বরিক অস্তিত্ব। প্রত্যেক পদার্থের  সাবএটোমিক(পরমাণুরও নিন্মস্তর) পর্যায়ে যেটার অস্তিত্ব বিদ্যমান সেটা হচ্ছে এই চেতনা। কাব্বালাহ শেখায় কিভাবে সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকা মহাচেতনা বা কাব্বালিস্টিক স্রষ্টা ক্রমশ নিন্মস্তরের মাত্রায় গিয়ে আমাদের ত্রিমাত্রিক বাস্তবতাকে(3D reality) নির্মাণ করেছে। এই ত্রিমাত্রিক জগতের উপর ও নিচের বস্তুজগৎ এবং যেসব নীতি(law) ও শক্তি(Force) এর সমন্বয়ে গঠিত সেগুলোকে ব্যাখ্যা করা, সেসবকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষে(God realization, আরবিতে ফানাফিল্লাহ) পৌছানো যায় এবং কিভাবে বাস্তব বস্তুজগতে সেসব নীতি ও শক্তিকে ব্যবহার করে সমৃদ্ধির স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেটা শেখায়।অর্থাৎ এটা আজকের বিজ্ঞানেরই প্রাচীন নাম। এজন্য আজকের কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈগন কাব্বালার ব্যপারে বেশ শক্তভাবেই বলেন এটা খুবই উঁচুমানের বিজ্ঞান। যাদুবিদ্যা বলে এর ব্যপারে যে 'অপবাদ' আছে সেটা নাকি ভুল! আজকের ইহুদীদের অধিকাংশই আল্লাহর স্বত্ত্বাগত অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা। বরং সৃষ্টিকর্তা বলতে সর্বেশ্বরবাদী বিশ্বাস রাখে। অর্থাৎ আরবিতে যাকে ওয়াহদাতুল উজুদ(নন ডুয়ালিটি)। ল্যারি কিং এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় কাব্বালাহ একাডেমির চেয়ারম্যান র‍্যাবাঈ মাইকেল লেইটম্যানকে প্রশ্ন করা হয়,"আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?" উত্তরে তিনি দ্বিধাহীনভাবে সরাসরি বলে দেন, "না,আমি বিশ্বাস করিনা"।  সৃষ্টিকর্তার অদ্বৈত অস্তিত্ব তত্ত্বের শুরু ইহুদীদের অপবিদ্যা গ্রহনের স্থান প্রাচীন ব্যবিলনীয়া। এখানেই সংখ্যাতত্ত্ব,জ্যোতিষবিদ্যার জন্ম, গ্রীক দার্শনিকদের যাবতীয় জ্ঞানের প্রধানকেন্দ্রস্থল। আত্মা বা রূহের ব্যপারে  ইহুদী Rabbi Eliezer Wolf বলেনঃ "আমাদের দেহ অনেকটা রেডিও ডিভাইসের মত। আমাদের (দেহের)মধ্যে আত্মা সঞ্চালিত হয়ে এগুলোর উপযুক্ত যন্ত্রের মত কাজ করার বিশেষ যোগ্যতা আছে যা আমাদেরকে সচল(এ্যানিমেট) করে,এবং বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করায়। প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন শরীর ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার ফ্রিকোয়েন্সি বহন করে, যেটা আমাদের স্বতন্ত্র আত্মার তরঙ্গকে ধারন করার প্রস্তুত করা। আমার শরীর কে শুধুমাত্র আমার আত্মার ঘর হিসেবে কাজ করার জন্য  বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। তোমার শরীরেও একটা ফ্রিকোয়েন্সি সেট করা আছে তোমার আত্মার ঘর হিসেবে কাজের জন্য।এই ধারনাটি অনেক গভীর অর্থ বহন করে যখন আমরা মৃত্যুকে বিবেচনা করব।যখন কেউ মারা যায় আমরা প্রশ্ন করি, "আত্মা কোথায় যায়?" সত্যিকারের উত্তর হলো, আত্মাটি কোথাও যায় না।এটাই সর্বত্রই বিরাজমান ছিল। যে জিনিসটি কোথাও চলে গেছে সেটা হচ্ছে শরীর।অধিকন্তু, মৃত্যুর ব্যপারে একটা শিক্ষা হলো এ কন্সেপ্ট আমাদেরকে আমাদের জীবনের ব্যপারে আরো বড় শিক্ষা দেয়। আমরা আমাদের উৎকর্ষে পৌছতে পারব যখন আমাদের শরীর আত্মার ফ্রিকোয়েন্সির সাথে সংগতিপূর্ণ হবে। তখনই আমাদের শরীরে আত্মা খুব ভালভাবে মিলে যাবে,তখনই আমাদের শরীর আত্মার ইচ্ছা, অভিলাষের,ভাগ্যের উপযুক্ত প্রকাশ ঘটাতে পারবে।কেবল তখনই আমরা যথাযথ ঐকতান ও অন্তর্নিহিত শান্তির সাথে নিজেদের স্বীয় অস্তিত্বে বাস করতে পারব।"[১]

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কাব্বালার অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে 'অমরত্ব' এবং 'অদ্বৈত অস্তিত্বের'(ওয়াহদাতুল উজুদের) শিক্ষা। কাব্বালাহ শিক্ষা দিচ্ছে আত্মা হচ্ছে  Universal collective consciousness(সার্বজনীন একক মহাচৈতন্য), মৃত্যুর দ্বারা মানুষ একক চেতনা বা অস্তিত্বে মিশে যায়। পরকাল বলে কিছু নেই। জন্ম মৃত্যু শুধুই চেতনার সংকোচন বা প্রসারণ। এটাই ওদের আত্মার ব্যপারে ব্যাখ্যা। ওরা একেই সৃষ্টিকর্তা বলে। সৃষ্টিকর্তার আলাদা স্বত্তাগত অস্তিত্ব নেই। এটা ইহুদীদের যাদুশাস্ত্রের অন্যতম নিগূঢ় দর্শন বা আকিদা। [মূলত সুফি দর্শন কাব্বালারই ইসলামিক ভার্সন। আসন্ন আলোচনায় বেদান্তবাদের সাথেও পূর্ণ সাদৃশ্য খুজে পাবেন।]

কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈ Joseph Gikatilla  বলেন,"তার(স্রষ্টা) দ্বারা সর্বত্র পূর্ণ হয়ে আছে,সে-ই সমস্তকিছু।" Moshe de Leon বলেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব "উপরে ও নিচে, আসমানে ও যমীনে,তার পাশে ২য় কোন সত্তার অস্তিত্ব নেই।"  Rabbi Azriel(1160-1238), যিনি কিনা কাব্বালার সর্বশ্রেষ্ঠ ঋষিদের একজন, তিনি বলেনঃ"যদি কেউ তোমায় জিজ্ঞেস করে 'ঈশ্বর কি',উত্তরঃতিনি কোনরকম ত্রুটিযুক্ত নন। যদি সে জিজ্ঞেস করেঃ 'তার বাহিরে কি অন্য কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে?' উত্তরঃ কোন কিছুর অস্তিত্ব তার বাহিরে নেই। যদি সে জিজ্ঞেস করে,'কিভাবে তিনি সমস্ত জিনিসকে অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বে নিয়ে আসেন, যেহেতু অস্তিত্ব ও শূন্যতার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে?' উত্তরঃ যিনি শূন্যতা থেকে অস্তিত্বে আনেন তিনি শূন্যতাহীন,যেহেতু সত্তা কিছুই নয় এবং আদৌ কিছুতেই সত্তার মধ্যে যেমন আছে তেমন কিছুই নেই। সত্ত্বা শূন্য এবং শূন্যতা সত্তা..আপনার জল্পনা-কল্পনা খুব বেশি গ্রহণ করবেন না, কারণ আমাদের সীমাবদ্ধ বুদ্ধি দুর্ভেদ্যের পরিপূর্ণতা বুঝতে পারে না যা আইন সোফের(Ein Sof) সাথে এক।"

কাব্বালিস্ট মোজেস চদরভার লিখেছেনঃ"ঈশ্বরের অস্তিত্ব সর্বত্র নিহিত আছে, এবং ঈশ্বরের বাইরে কিছুর অস্তিত্ব নেই। যেহেতু ঈশ্বরই সমস্ত অস্তিত্বের কারন,এটা অসম্ভব যে কোন সৃষ্ট বস্তুর অস্তিত্ব তার বাহিরে। ঈশ্বর হলেন অস্তিত্ব,জীবন,সমগ্র অস্তিত্বের বাস্তবতা।
মূল কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে তোমার কখনো উচিত হবে না ঈশ্বরের মধ্যে কোনরূপ বিভাজন সৃষ্টি করা...যদি তুমি নিজে নিজে বলো," Ein Sof একটা নির্দিষ্ট বিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে থাকে এবং সেখান থেকে বাহিরের দিকেও," ঈশ্বর তোমাকে নিষেধ করেছেন কিন্তু তুমি বিভেদ করছো। বরং তোমার বলা উচিত ঈশ্বরকে সমস্ত অস্তিত্বে বিদ্যমান পাওয়া যায়। কেউ এটা বলতে পারেনা যে, "এটা একটা পাথর, ঈশ্বর নয়," ঈশ্বর (এমনটা বলতে) নিষেধ  করেছেন।বরং অস্তিত্বশীল সমস্ত বস্তুই ঈশ্বর, এবং ঐ পাথরটি এমন বস্তু যা ঈশ্বরের সত্তা দ্বারা পরিপূর্ণ...ঈশ্বরকে সমস্ত কিছুতে পাওয়া যায়, এবং ঈশ্বরের পাশে অন্য কোন কিছু নেই।”
 (Perek Helek, Modena ms. 206b, translation mine)

"ঈশ্বর হচ্ছে বাস্তব জগত কিন্তু সকল বাস্তবতাই ঈশ্বর নন... তাকে সকল বস্তুতে পাওয়া যায়, এবং সকল বস্তুকে তার মধ্যে পাওয়া যায়, কোন কিছুই নেই যা ঐশ্বরিক দৈবিকতার বাহিরে। ঈশ্বর নিষেধ করেছেন। সবকিছুই ঈশ্বরের মাঝে, এবং ঈশ্বর সবকিছুর মাঝে বাহিরে নিহিত,এবং কোন কিছুই ঈশ্বরের (বাহিরে)পাশে নেই।"
 (Elimah Rabbati 24d-25a, translation mine)

১৮ ও ১৯ শতকে প্রচলিত ইহুদীধর্মের হেসিডিক ট্রেডিশনে খুব পরিষ্কার অদ্বৈতবাদী বক্তব্য পাওয়া যায়।
Baal Shem tov বলেন "ঈশ্বরের সাথে পরিপূর্ণ একত্বতা ছাড়া কোনকিছুই অস্তিত্বশীল নয়," তার শিষ্য মেজরিচের ম্যাগিদ লিখেন, "ঈশ্বর হলেন Ein Sof। যার মানে হলো এমন কোন বস্তুর অস্তিত্ব নেই যা তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পথে বাধা হয়। ঈশ্বরের অস্তিত্ব পৃথিবীর আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত সমগ্র স্থান পূর্ণ করে আছে,এমন কোন স্থানই ঈশ্বরের সত্তা ব্যতিত খালি নেই।" [১৩]
  (Torat HaMagid, trans Aryeh Kaplan)



অতএব, বুঝতে পারছেন ইহুদীরা আল্লাহর ঐশী বানী ছেড়ে এমন কোন শাস্ত্রের অনুসরন করেছে যার সার-বক্তব্য হচ্ছে অদ্বৈতবাদ বা সর্বেশ্বরবাদ। তাদের অনুসৃত শাস্ত্র ছিল যাদুবিদ্যা এবং শয়তানের আবৃত্ত শাস্ত্র। আজ তার নাম দেওয়া হয়েছে কাব্বালাহ। কাব্বালাহর বৃহত্তম একাডেমি বেনেঈ বারুচ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লেইটম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কাব্বালাহ এর অরিজিনের ব্যপারে। তিনি উত্তরে বলেন," কাব্বালা জ্ঞানের জন্ম প্রাচীন বাবেল শহরে,এটা অনেক বছর গুপ্ত অবস্থায় ছিল,তাই এই জ্ঞান কে যাদুবিদ্যা বলা হয়, এটা ভুল ধারণা। এটা খুবই সিরিয়াস ধরনের বিজ্ঞান।আজ কাব্বালাহ পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন অনুষদে কাব্বালিস্টিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়। এই গুপ্তবিদ্যা এখন প্রকাশিত হয়েছে কারন এটা এখন আমাদের প্রয়োজন।"
ইহুদীদের অনুসৃত যাদুবিদ্যার ব্যপারে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনেই বলেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
وَاتَّبَعُواْ مَا تَتْلُواْ الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُواْ لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْاْ بِهِ أَنفُسَهُمْ لَوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ


তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।[২:১০২]


ইহুদীদের যাদুবিদ্যা তথা কাব্বালাহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এবং এর সর্বত্র অনুসরনকে র‍্যাবাঈগন তাদের মসীহর(দাজ্জাল) আগমনের সময়ের চিহ্ন হিসেবে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে এক র‍্যবাঈ বললেন, "সমস্ত কাব্বালিস্ট র‍্যবাঈ এবং হেসিডিক মুভমেন্টের র‍্যাবাইগন এ ব্যপারে একমত যে, যখন সারাবিশ্ববাসী কাব্বালার দিকে ঝুকে পড়বে, কাব্বালার প্রতি তৃষ্ণা তৈরি হবে, কাব্বালিস্টিক ইনিসিয়েশনের(শিক্ষার) প্রতি সবার ঝোক বাড়বে, তখনই মসীহ বের হবেন। আর আমরা এটাই আজ দেখছি, সমগ্র বিশ্ব এই জ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ সময়টা ইহুদী ইতিহাসের সবচেয়ে ওয়াইল্ড পার্ট এবং সর্বশেষ মুহুর্ত ইহুদী ইতিহাসের।এটা মেসিয়ানিক যুগ। আর এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ যে আমাদের চোখের সামনে ইতিহাসের এ মহা অধ্যায় আনফোল্ড হতে যাচ্ছে। এটা সব কাব্বালিস্টের কথা যে মসিহের বের হবার সময় সর্বত্র কাব্বালার প্রতি প্রচন্ড তৃষ্ণা কাজ করবে। এবং সত্যিই আমরা আজ এটাকে সচক্ষে দেখছি...।"

আজকের পর্বে স্পষ্ট হবে, আজকের কথিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহ মূলত রিপ্যাকেজড ব্যাবিলনিয়ান যাদুবিদ্যা। ইহুদিদের সর্বেশ্বরবাদি আকিদায় হিব্রু Ein sof শব্দ দ্বারা সমস্ত বস্তুর মূলে থাকা সচেতন চেতনাশক্তিকে বোঝায় যেটা তাদের দৃষ্টিতে ঈশ্বর। এটাকেই হিন্দুরা বলে ব্রহ্মা! কাব্বালিস্ট র‍্যাবাঈগন বিশ্বাস করেন, আমাদের ত্রিমাত্রিক বাস্তবতা মূলত উপরস্থ মাত্রাসমূহের প্রতিফলন। অর্থাৎ আমরা যা সত্য ভাবি তা আসলে ভ্রম বা মায়া(illusion)। হিন্দুধর্মে একে বলা হয় ইন্দ্রের মায়াজাল। বৃহদারণ্যক উপনিষদে আছে ইন্দ্র মায়ার সাহায্যে বিরাট আকার ধারণ করেছেন, তাঁর রথের সংখ্যা দশ শত। ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে-- যুক্তা হাস্য হরয়ঃ শতা দশেতি ও। 
(বৃহদারণ্যক ২। ৫। ১৯)।

বেদান্তবাদীদের ভক্তি সম্প্রদায় এবং মূর্খ নিচু শ্রেনীর হিন্দুরা সরাসরি মূর্তি তৈরি করে যে পূজা অর্চনার প্রথা মেনে চলে, সেটা বেদের মূল বক্তব্য কিংবা শিক্ষা নয়। প্রাচীন যুগ থেকে বৈদিক শিক্ষাদীক্ষা ছিল অভিজাত উচুবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে যারা বৈদিক-উপনিষেদিক শ্লোক-সুক্তের রূপকার্থে উল্লিখিত দেবতাদের আড়ালে অদ্বৈতবাদের মায়াতত্ত্বকে হৃদয়ে গভীরভাবে লালন করত। শিব, বিষ্ণু,ব্রহ্মা কোন দেবতা নয় বরং এগুলো যাদুবিদ্যা কেন্দ্রিক অকাল্ট দর্শন উৎসারিত সৃষ্টিকর্তাহীন মহাবিশ্ব ও সৃষ্টিতত্ত্বের প্রক্রিয়া, নীতি ও শক্তির বহুমুখী personification। বৃহদারণ্যক উপনিষদে দুই স্থানে ইঙ্গিতে বলা হয়েছে যে এই দ্বৈতভাব বিশ্বের স্বাভাবিক প্রকৃতি নয়। তা একটি কৃত্রিম অবস্থার মত: " যত্র হি দ্বৈতমিব ভবতি তদিতর ইতরং জিঘ্রতি তদিতর ইতরং পশ্যতি " ইত্যাদি।

পূর্বাঞ্চলীয় আধ্যাত্মবাদের সাথে ইহুদী আধ্যাত্মবাদের কেমন যেন অদ্ভুত মিল, তাই না? মূলত ইহুদীদের কাব্বালাহ যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শনের দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমার মনে পড়ে এক mystic-যাদুকর বলছিলো, ভারতীয় বেদান্তবাদী দর্শন কেবল একটি মাত্র খুটির(জ্ঞানগত শাখা) ব্যপারে শিক্ষা দেয় যেখানে বৌদ্ধমত দুটিকে এবং কাব্বালাহ তিনটি পিলারেরই শিক্ষা দেয়। কাব্বালার জন্মস্থান বাবেল শহর। এদিকে বেদান্তবাদী শিক্ষা আর্যদের দ্বারা বাবেল শহরের পাশের দেশ পারস্য হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। ইতিহাসবিদগন বিশ্বাস করেন গ্রীক দর্শনের উৎস বাবেল শহর এবং ইহুদী র‍্যাবাঈগন। বেদান্তবাদী কিতাব রচনার পূর্বে বেদান্তবাদের জ্ঞান একমাত্র বাবেল শহর তথা সেখানকার যাদুশাস্ত্রের অনুসারী ইহুদিদের মধ্যেই ছিল। প্রায় ৩০০০ এর বেশি মেসোপটোমিয় (ব্যবিলনীয়া) দেবতাদের সাথে ভারতীয় দেবতাদের মিলে যায়[৩], যেটা এ ভারতীয় ধর্মের আদি উৎসকে বলে দেয়। ইহুদীরা ভারতে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে প্রবেশ করে। অনেক র‍্যাবাঈ এবং ইতিহাস-প্রাচ্যবিদ হিন্দুত্ববাদ ও ইহুদীধর্মের সাদৃশ্যতা আরোপ করেন, মুশরিক হিন্দু ও ইহুদীদের আন্তরিক সৌহার্দ্যকে তুলে ধরেন[২]। যাহোক, আজ আমরা বেদান্তবাদী চেতনার কিছুটা গভীরে প্রবেশ করব।



বেদান্তশাস্ত্রে চেতনা ও অদ্বৈতবাদ(ॐ):




বৈদিক শাস্ত্রে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সমস্ত সৃষ্টি মায়া। সত্য একমাত্র চেতনা বা আত্মা। একক চেতনাই(collective consciousness) সর্বত্র বিরাজমান, এটাই সকল অনু-পরমানুর মূল উৎস, পরম আত্মা - পরম মহান। একমাত্র সত্য অস্তিত্ব। ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বলে বস্তুবাদী চিন্তা মানুষকে গ্রাস করে তার আসল পরিচয় থেকে দূরে রাখে একজন সাধকের লক্ষ্য হচ্ছে নিজের ওই একত্বের বাধনে জড়ানো আধ্যাত্মিক উপলব্ধি তৈরি করা, পরম শূন্যতার উপলব্ধি জাগিয়ে মনের দ্বারা বস্তুজগতের উপর প্রভাব বিস্তার করা।

মুশরিক হিন্দুদের আকিদা তথা বিশ্বাস হচ্ছে, ব্রহ্মা হচ্ছে ঈশ্বর বা স্রষ্টা।এটা কাব্বালার 'আইন সফের' হিন্দুয়ানী সংস্করণ। ব্রহ্মের আসল পরিচয় হচ্ছে আত্মা বা চেতনা(consciousness)! তাদের মতে এই একক আত্মাই সবকিছুতে বিদ্যমান,সমস্ত অনুপরমানুর মূলে আছে এই অদ্বৈত মহাচৈতন্য। যেহেতু এই একক মহাত্মার সর্বত্র বিদ্যমান, তাই সকল মানুষই ব্রহ্মার অনুরূপ। বৃহদারান্যক উপনিষদে আছে "Tat Tvam asi" অর্থাৎ তুমিই ব্রাহ্মন।অন্যত্র আছে,

“ আত্মাই হচ্ছে ব্রাহ্মন”
Sanskrit: ayam atma brahma.
(Brihadaranyaka Upanishad 4.4.5)

“ আমি ব্রাহ্মন”
Sanskrit: aham brahmasmi.
(Brihadaranyaka Upanishad 1.4.10)

“ ব্রাহ্মন হলো চেতনা. ”
Sanskrit: prajnanam brahma.
(Aitareya Upanishad 3.1.3)

"সবকিছুই ব্রাহ্মন"
Sanskrit: Sarvam khalvidam brahma.
(Chandogya Upanishad 3.14.1)



"সবকিছুই প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্ম। আত্মাও ব্রাহ্মন। একই একই আত্মার ৪ টি কোয়ার্টার। "
 [ প্রথম ৩ কোয়ার্টার ঔঁমের সাথে যুক্ত AUM: 1 = A , 2 = U , 3 = M. ৪র্থ কোয়ার্টার হচ্ছে নিরবতা]
(Mandukya Upanishad 1.2)




"আমরা এ জগতে যাই দেখতে পাই তাই ব্রহ্মা।"

Sanskrit: sarvam khalv idam brahma. 
(Chandogya Upanishad 3.14.1)

"ব্রহ্মা হচ্ছে বাস্তবতা, জ্ঞান এবং অনন্ততা"
(Taittiriya Upanishad 2.1.3)


“ ব্রহ্মা হচ্ছে চেতনা(consciousness) ”
Sanskrit: prajnanam brahma.
(Aitareya Upanishad 3.1.3)


“Brahman that is immediate and direct—the Self that is within all.”
“You cannot see That which is the Seer of seeing;
you cannot hear That which is the Hearer of hearing;
you cannot think of That which is the Thinker of thought;
you cannot know That which is the Knower of knowledge.
This is your Self, that is within all;
everything else but This is perishable.” 
(Br. Up. 3.4.2)[৫]



পরাবিদ্যায় ব্রহ্মের সংজ্ঞা হল চরাচরে অবস্থিত যাবতীয় বিচিত্র উপাদানের ধাত্রস্বরূপ একক মহাচৈতন্য।ব্রহ্ম শব্দটি বৈদিক সংস্কৃত। পল ডয়সেনের মতে হিন্দুধর্মে এই শব্দের মাধ্যমে "সমগ্র চরাচরে বাস্তবায়িত সৃষ্টিশীল নীতিকে" বোঝায়। বেদে প্রাপ্ত বিভিন্ন দার্শনিক ধারণার অন্যতম হল ব্রহ্ম, এবং বিভিন্ন প্রারম্ভিক উপনিষদে এর বিস্তারিত আলোচনা আছে।বেদে ব্রহ্মকে বলা হয়েছে মহাজাগতিক নিয়ম।  উপনিষদের বিভিন্ন জায়গায় একে বলা হয়েছে সচ্চিদানন্দ এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে অব্যয়, শাশ্বত ও পরম সত্য হিসেবে।

"এই আমার অন্তরতম আত্মা, এই পৃথিবীর চেয়ে বড়, এই আকাশের চেয়ে বড়, এই ব্রহ্মাণ্ডের চেয়ে বড়। এই আত্মা, এই আত্মসত্তাই হল সেই ব্রহ্ম।"
- ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.৩ থেকে ৩.১৪.৪

পল ডয়সন দেখিয়েছেন যে উপরে উদ্ধৃত আত্মা সম্পর্কিত মতবাদ বহু শতাব্দী পরে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে নব্য প্লেটোবাদী দার্শনিক প্লটিনাসের এনিয়াডেস গ্রন্থে পুনরাবৃত্ত হয়েছিল (এনিয়াডেস ৫.১.২)।

বিভিন্ন প্রাচীন হিন্দু দর্শনে ব্রহ্ম হল সত্যের "চূড়ান্ত ও অব্যয়" রূপ, যেখানে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মহাজগৎ কেবল মায়া। ব্রহ্ম ও মায়ার অস্তিত্ব পরস্পরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, এরা একত্রে মহাজাগতিক চেতনার(consciousness) প্রকাশ।উপনিষদের মূল শিক্ষা হল প্রতিটি মানুষের আত্মার সাথে অন্য সমস্ত মানুষ, অন্য সমস্ত জীব এবং পরম সত্য ব্রহ্মের একাত্মতার চেতনা জাগ্রত করার শিক্ষা।[১৪]

‘ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’। অর্থাৎ, ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব ব্রহ্মস্বরূপ।শঙ্করাচার্য বলেছেন-‘অস্তি তাবৎ, নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্তস্বভাবং সর্ব্বজ্ঞং সর্ব্বশক্তিসমন্বিতং ব্রহ্ম ব্রহ্মশব্দস্য হি ব্যুৎপাদ্যমানস্য নিত্যশুদ্ধত্বাদয়োহর্থাঃ প্রতীয়ন্তে। বৃহতের্ধাতো অর্থানুগমাৎ। সর্ব্বস্যাত্মত্বাচ্চ ব্রহ্মাস্তিত্বসিদ্ধিঃ। সর্ব্বোহি আত্মাস্তিত্বং প্রত্যেতি। ন নাহমস্মীতি। যদিহি ন আত্মাস্তিত্বপ্রসিদ্ধিঃ স্যাৎ সর্ব্বোলোকোনাহহমস্মীতি প্রতীয়াৎ আত্মা চ ব্রহ্ম।’
- (শাঙ্করভাষ্য : ব্রহ্মসূত্র-১)

অর্থাৎ :
'সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিসমন্বিত, নিত্যশুদ্ধ, নিত্যবুদ্ধ ও নিত্যমুক্তস্বভাব ব্রহ্ম আছেন। কারণ, ব্রহ্ম শব্দটির যদি ব্যুৎপত্তি করা যায়, তাহলেও ঐ সব অর্থই পাওয়া যায়। ‘মহান্’ এই অর্থবোধক বৃহ ধাতু থেকেই তো ‘ব্রহ্ম’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া, ব্রহ্ম- যেহেতু সকলেরই আত্মা, এ কারণে, সবার নিকট সর্বদা ব্রহ্মের অস্তিত্ব প্রসিদ্ধ রয়েছে। সকলেই নিজের আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করে থাকে। আমি নাই- এরকম জ্ঞান কখনও কারও হয় না। যদি এভাবে আমার অস্তিত্ব প্রসিদ্ধ না হতো- তাহলে সকলেই আমি নাই- এভাবে বুঝতো। আত্মাই তো ব্রহ্ম।'

ব্রহ্মকে বলা হয়েছে- নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ এবং মুক্তস্বভাব। যেহেতু ব্রহ্মের উৎপত্তি বা বিনাশ নেই, সেহেতু ব্রহ্ম হলেন নিত্য। যেহেতু কোন প্রকার দোষ বা মালিন্য তাঁকে স্পর্শ করে না, সেহেতু তিনি হলেন শুদ্ধ। যেহেতু তিনি জড়বস্তু নন, সেহেতু তিনি হলেন বুদ্ধ বা সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। যেহেতু তাঁর কোন সীমা নেই, সেহেতু তিনি হলেন নিত্যমুক্ত। ব্রহ্মকে বলা হয়েছে অদ্বিতীয়, কারণ দ্বিতীয় কোন পদার্থ স্বীকার করলে অদ্বৈত হানি হয়। ব্রহ্মের কোন অংশও নেই। এই কারণে ব্রহ্মকে বলা হয়েছে নির্বিশেষ। ব্রহ্ম হলেন অসীম। কারণ তার বাইরে কোন কিছু নেই। বিশ্বের যাবতীয় পদার্থ ব্রহ্মের মধ্যেই অবস্থিত। তাই বলা হয়েছে- ‘সর্বং খলু ইদং ব্রহ্ম’। অর্থাৎ, এই বিশ্বে সবই ব্রহ্ম অথবা এই বিশ্বে ব্রহ্ম ছাড়া অন্য কোন দ্বিতীয় সত্তা নেই।[১৫]


ॐ শব্দটির মানেও ব্রহ্মা বা মহাবিশ্ব-সৃষ্টিজগৎ। ॐ দ্বারা মহাবিশ্বের মহাজাগতিক একক অদ্বৈত চেতনার আধ্যাত্মিক গীতধ্বনি বোঝানো হয়। শ্রী যন্ত্র বা ॐ মন্ডল(অনেকগুলো হেক্সাগন বা কথিত star of david এর সমন্বিত রূপ) হিন্দুদের অতি পবিত্র প্রতীক। টনোস্কোপ যন্ত্রে  যখন ॐ শব্দটিকে প্রক্ষেপ করা হয়, তাতে শ্রী যন্ত্র বা ॐ মন্ডলের প্রতীককে দেখা যায়(ডানের ছবি)। এটা পৌত্তলিকদের মধ্যে ওদের মনগড়া দর্শনকে আরো বেশি যুক্তিযুক্ত করে বিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। এর রহস্য হচ্ছে ধুম্রবিহীন শিখার তৈরি জাতি, যারা ত্রিমাত্রিক জগতের উপরে বসবাস করবার কারনে পদার্থের গঠনগত অনেক অজানা বিষয়ে সাধারনভাবেই জ্ঞাত,সেটাই ঋষি ঠাকুরদের কাছে বলে কুফরকে প্রতিষ্ঠিত করে। মূলত বেদান্তবাদ কিংবা কাব্বালিস্টিক শাস্ত্র গুলো তাদের হাত ধরেই আসা। যাইহোক, ॐ দ্বারা বেদান্তের অদ্বৈতবাদী সৃষ্টি-স্রষ্টার ধারনাকে গভীরভাবে প্রকাশ করে। অদ্বৈত বেদান্তবাদকে[अद्वैत वेदान्त] বাবেল শহরের আশপাশ থেকে আগত বৈদিকশাস্ত্রের মূল তত্ত্ব হিসেবে দেখা হয়। বেদের মূল বক্তব্য, সৃষ্টি-স্রষ্টার একক অস্তিত্ব(ওয়াহদাতুল উজুদ) বা non duality। উপমহাদেশের পীর সুফিদের প্রধান আকিদা হচ্ছে 'ওয়াহদাতুল উজুদ'। ওয়াহদা এসেছে আরবি শব্দ 'ওয়াহেদ' থেকে যার অর্থ 'এক' বা 'একক'। এবং উজুদ অর্থ 'অস্তিত্ব'। অর্থাৎ বাংলায় এক  একঅস্তিত্ব বা অদ্বৈতবাদ। অর্থাৎ সুস্পষ্ট অভিশপ্ত কাফির-মুশরিকদের অদ্বৈতবাদের মূল আকিদাকে আরবি শব্দের মোড়কে ইসলামে ঢুকিয়ে সুফি - মারেফাতের নামে প্রচার চলছে [মা'আযাল্লাহ]।

The Sanskrit words Advaita-Vedanta mean “non-dualistic” and “end of Vedas” respectively. Gaudapada (7th century CE) is credited with the founding of this philosophical school, and Shankara was its earliest proponent. The philosophical school of Advaita-Vedanta is still very much alive and thriving in present day India.
The Vedanta Sutras of Badarayana, with Commentary by Sankara 2 vols., George Thibaut trans. (New York, NY: Dover Press, 1962).

The Hiranyagarbha Sukta announces: Hiranyagarbhah samavartatagre bhutasya jatah patireka asit, which means, Before creation existed the golden womb Hiranyagarbha, Bhagwan of everything born. (Rig Veda 10.121.1)
RIG VEDA 10.121 HIRAṆYAGARBHA SUKTAM
The Hiraṇyagarbha Sūkta of the Ṛigveda informs that Bhagwan manifested Himself in the beginning as the Creator of the Universe, encompassing all things, including everything within Himself, the collective totality, as it were, of the whole of creation, animating it as the Supreme Intelligence. It the recreation after unmanifested stage of Bhagwan.

ঋগ্বেদের হিরণ্যগর্ভ সুক্তে বলা হয়েছে মহাবিশ্বের সৃষ্টির আগে সৃষ্টিজগৎ সচেতন বুদ্ধিপ্রদীপ্ত একক স্বত্ত্বার অনুরূপ ছিল যেটা থেকে সৃষ্টিজগতে রূপান্তরিত হয়, অর্থাৎ এদের বক্তব্য হচ্ছে এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টিকর্তারই রূপান্তরিত রূপ,এখন প্রত্যেক স্বত্ত্বাই ঈশ্বর। এজন্য মুশরিকরা দেখা হলে 'নমঃস্কার' বলে, যার অর্থ, 'তোমার অন্তঃস্থিত ঐশ্বরিক দৈবসত্তার নিকট মাথা নত করি(I bow to the divine in you)'! অর্থাৎ অদ্বৈতবাদ বা সর্বেশ্বরবাদ হিন্দু-বৌদ্ধ-বৈষ্ণব-নাথ(পূর্বাঞ্চলীয় দর্শনসমূহ) প্রভৃতির মৌলিক বিশ্বাস।

অদ্বৈত বেদান্ত ( সংস্কৃত: अद्वैत वेदान्त) বা অদ্বৈতবাদ হল বৈদিক দর্শনের সর্বেশ্বরবাদী ধর্ম চর্চার সাধন -পদ্ধতিগত একটি ধারা।সর্বেশ্বরবাদী এ মতে, মানুষের সত্যিকারের সত্ত্বা আত্মা হল শুদ্ধ চৈতন্য  এবং পরম সত্য ব্রহ্মও শুদ্ধ চৈতন্য(consciousness)। এ মতে উপনিষদগুলির একটি সামগ্রিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।  অদ্বৈত বেদান্তের প্রধান ব্যাখ্যাকর্তা হলেন আদি শঙ্কর। তবে তিনি এই মতের প্রবর্তক নন। পূর্বপ্রচলচিত অদ্বৈতবাদী মতগুলিকে তিনি সুসংবদ্ধ করেছিলেন।

পাশ্চাত্য প্রাচ্যবাদ ও দীর্ঘস্থায়ী দর্শন মতের প্রভাব, এবং ভারতের নব্য-বেদান্ত মত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের উপর অদ্বৈত বেদান্তের প্রভাবের জন্য অদ্বৈত মতকে হিন্দু দর্শনের বেদান্ত শাখা ও সেগুলির সাধনপদ্ধতিগুলির  মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও শক্তিশালী মত মনে করা হয়। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে অদ্বৈতবাদী শিক্ষার প্রভাব দেখা যায়।ভারতীয় সংস্কৃতির বাইরেও অদ্বৈত বেদান্ত হিন্দু অধ্যাত্মবিদ্যার একটি সাধারণ উদাহরণ বলে বিবেচিত হয়। বেদান্তের প্রতিটি শাখারই প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল প্রস্থানত্রয়ী (উপনিষদ্ ,ভগবদ্গীতা ও ব্রহ্মসূত্র)। অদ্বৈত মতে, এই বইগুলির দার্শনিক ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।অদ্বৈত অনুগামীরা আত্মা ও ব্রহ্ম জ্ঞান সংক্রান্ত বিদ্যা বা জ্ঞানের সাহায্যে মোক্ষ লাভ করতে চান। এই মোক্ষ লাভ একটি দীর্ঘকালীন প্রয়াস। গুরুর অধীনে থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটি লাভ করা সম্ভব।

গৌড়পাদ উপনিষদ্ ব্যাখ্যায় বৌদ্ধ দর্শনকে গ্রহণ করলে বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্মের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। আত্মা বা ব্রহ্ম "সজীব সত্ত্বা"য় পর্যবসিত হয়ে "মায়াবাদ"-এর উদ্ভব ঘটে।  এখানে আত্মা ও ব্রহ্মকে দেখা হতে থাকে "শুদ্ধ জ্ঞানচৈতন্য" হিসেবে। শিপারসের মতে, "মায়াবাদ" মতটিই পরবর্তীকালের ভারতীয় দর্শনের প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে।মায়া ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনের একটি মৌলিক ধারণা। ভারতীয় দর্শনের বিশেষ করে বেদান্ত দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মায়াবাদ। শংকরাচার্যের দর্শনের সঙ্গে মায়াবাদ এতটাই সম্পৃক্ত যে তাঁর দর্শনকে প্রায়শ মায়াবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে মায়াবাদের গুরুত্ব অপরিসীম।

সাধারণত ‘মায়া’ বলতে এমন একটি অনির্বচনীয় শক্তিকে বুঝায় যা রহস্যজনকভাবে জগৎরূপে প্রতিভাত। মায়া সব রকম অবভাসিক সত্ত্বার সমন্বয়। যখনই আমরা পরম সত্ত্বার একত্বকে অনুভব করতে ব্যর্থ হই তখনই মায়ার উদ্ভব ঘটে। কোনো বস্ত্ত বা বিষয় প্রকৃতই যা নয় সেভাবে প্রতিভাত হবার নামই মায়া। যেমন অন্ধকারে একটি রজ্জুকে ভ্রমবশত আমরা সাপ মনে করি। ভ্রম দূর হলে সাপের অস্তিত্ব রূপ নেয় বাস্তব রজ্জুর। এ জাতীয় ভ্রান্ত জ্ঞানকেই সাধারণত মায়া বলে আখ্যায়িত করা হয়। শংকরাচার্যের মতে, একমাত্র ব্রহ্মই সত্য এবং এ জগৎ মিথ্যা। অজ্ঞতাবশত রজ্জুতে সর্প ভ্রম হয় এবং সর্প দর্শনে আমরা আতঙ্কিত হই। ঠিক তেমনিভাবে আমরা অজ্ঞতার কারণে ব্রহ্মের স্থলে জগৎ দর্শন করি এবং জগতের প্রতি আকৃষ্ট হই। যথার্থ জ্ঞান লাভ করলে আমরা যেমন বুঝতে পারি, সর্প সত্য নয় এবং এর পেছনে সত্য হলো রজ্জু, ঠিক তেমনিভাবে যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারলে আমরা উপলব্ধি করতে পারব যে, জগতের পেছনে পরম সত্য হলো ব্রহ্ম। রজ্জুর পরিবর্তে সর্প অথবা ব্রহ্মের পরিবর্তে জগৎ প্রত্যক্ষণই হলো মায়া।
শংকরের মতে মায়া ঈশ্বরের অনির্বচনীয় শক্তি। তার মতে সত্য তিন প্রকার: প্রাতিভাষিক, ব্যবহারিক ও পারমার্থিক। তার মতে একমাত্র ব্রহ্মই পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য। ব্রহ্ম ও ঈশ্বর সমমর্যাদাসম্পন্ন নন। তিনি মনে করেন, মায়ার দ্বারা আবৃত ব্রহ্মই ঈশ্বর(সর্বেশ্বরবাদ)। মায়া ঈশ্বরের শক্তি। কিন্তু মায়া ব্রহ্মের শক্তি নয়। শংকর ঈশ্বরকে জাদুকরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, জাদুকর যেমন তার জাদুশক্তি বলে এক টাকাকে দশ টাকা বানায় ঈশ্বরও তেমনিভাবে তার মায়াশক্তি দ্বারা জগৎপ্রপঞ্চ সৃষ্টি করেন। অজ্ঞতার কারণে সাধারণ মানুষ জাদুকরের সৃষ্টি দেখে বিস্মিত হয়, কিন্তু জ্ঞানী এর দ্বারা প্রতারিত হয় না। ঠিক তেমনিভাবে একজন সাধারণ মানুষ জগৎপ্রপঞ্চকে সত্য বলে মনে করে। কেউ কেউ মনে করেন যে, মায়াবাদ শংকরের চিন্তার ফসল। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, শংকরের জন্মের বহু আগে বেদে, উপনিষদে, গীতায় কোথাও প্রচ্ছন্নরূপে আবার কোথাও স্পষ্টত মায়াবাদ বিদ্যমান। ব্রহ্মবাদীদের মত মায়াবাদীদেরও একই লক্ষ্য --> ব্রহ্মজ্যোতিতে লীন হয়ে যাওয়া (সুফিদের ফানাফিল্লাহ-বাকাফিল্লাহ অভিন্ন দর্শনের কথা বলে)। সহজ কথায় মায়াবাদ অনুযায়ী সমগ্র বস্তুজগৎ মূলত মিথ্যা মায়াময় ঐন্দ্রজালিক মরীচিকা। Individuality বলে কিছু নেই, মূলত সবই একক সত্তা।  সবই ব্রহ্ম বা ঐশ্বরিক সত্তা।[১৬]


শঙ্করের আগেও অদ্বৈতবাদের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু সে সময় এই মতবাদ বেদান্ত দর্শনে প্রধান স্থানটি অধিকার করতে পারেনি। বেদান্তের প্রথম যুগের দার্শনিকেরা ছিলেন সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ। তারা প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন। তারা সমাজে এক উচ্চশ্রেণির জন্ম দেন। এই শ্রেণি হিন্দুধর্মের সাধারণ মতাবলম্বী ও তাত্ত্বিকদের থেকে স্পষ্ট পার্থক্য বজায় রাখত। তাদের শিক্ষা অল্পসংখ্যক শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই প্রচারিত হয়েছিল। বেদান্ত শাখার প্রাচীন শাখাগুলিতে বিষ্ণু বা শিবের উপাসনার কথা নেই। শঙ্করের পরেই হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মতাত্ত্বিকরা বেদান্ত দর্শনকে কমবেশি তাদের মতবাদের ভিত্তি হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেন। এর ফলেই ভারতীয় সমাজে বেদান্তের ধর্মীয় প্রভাবটি বাস্তব ও চূড়ান্ত রূপ নেয়।

ভারতে ব্রিটিশ শাসন ও বিদেশি উপনিবেশ স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে ঊনবিংশ শতাব্দীতে হিন্দু নবজাগরণ শুরু হয়। এই নবজাগরণের ফলে ভারত ও পাশ্চাত্য সমাজে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে ধারণাই বদলে যায়। পাশ্চাত্য প্রাচ্যবিদেরা বেদের মধ্যে ভারতীয় ধর্মগুলির "সারবত্তা" খুঁজতে শুরু করেন। এদিকে একাধিক ধর্মীয় মতকে এবং "আধ্যাত্মিক ভারত" নামে একটি জনপ্রিয় ধারণাকে "হিন্দুধর্ম" শব্দটির অধীনে আনা হয়। হিন্দুধর্মের সারমর্ম বেদে নিহিত আছে বলে পাশ্চাত্য গবেষকরা যা মনে করেছিলেন, তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন হিন্দু সংস্কারপন্থীরাও। সেই সঙ্গে বিশ্বজনীনতাবাদ ও দীর্ঘস্থায়ী দর্শন মতের প্রভাবে সব ধর্মকে একটি সাধারণ আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে সত্য বলে ধরে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ইউনিটারিয়ান চার্চ হিন্দুধর্মের এই নতুন পরিচয়ের প্রচারে ব্রাহ্মসমাজকে কিছুকাল সাহায্য করে।

বেদান্তকে হিন্দুধর্মের সারমর্ম ধরে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অদ্বৈত বেদান্তকে হিন্দুধর্মের আধ্যাত্মিক সত্ত্বার শাস্ত্রীয় উদাহরণ বলে ধরে নেওয়া হয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদীরাও এই মত পোষণ করতেন। তারা অদ্বৈত বেদান্তকে ভারতীয় ধর্মগুলির সর্বোচ্চ রূপ বলে প্রচার করতেন। ফলে এই মত প্রভূত জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে হিন্দুরা বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালানোর জন্য একটি জাতীয় আদর্শ গঠন করার সুযোগ পান।

অদ্বৈত বেদান্তের বিশ্বজনীন ও স্থায়িত্ববাদী ব্যাখ্যা জনপ্রিয় করার ব্যাপারে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি সামগ্রিকভাবে হিন্দু নবজাগরণ ও রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমে পাশ্চাত্যে অদ্বৈত বেদান্ত প্রচারে প্রধান ভূমিকাও নিয়েছিলেন। তার অদ্বৈত বেদান্ত ব্যাখ্যাটি "নব্য-বেদান্ত" নামে পরিচিত। ১৮৯৬ সালে লন্ডনে দেওয়া একটি বক্তৃতায় বিবেকানন্দ বলেন,
"আমি সাহসের সঙ্গে বলতে পারি যে, আধুনিক গবেষকদের থেকে বাহ্যিক ও নৈতিক ব্যাপারে একটি ধর্মই একটু এগিয়ে আছে আর সেটি হল অদ্বৈত। এই কারণেই এই ধর্ম আধুনিক বিজ্ঞানীদের এত আকর্ষণ করে। পুরনো দ্বৈতবাদী তত্ত্বগুলি তাদের পক্ষে যথেষ্ট নয় বলেই তাঁরা মনে করেন। শুধু বিশ্বাসে একজন মানুষের চলে না। তার চাই বৌদ্ধিক বিশ্বাস।"

পাশ্চাত্য আধ্যাত্মিকতা ও নিউ এজ মতবাদ বিভিন্ন মতবাদকে একই অদ্বৈতবাদী অভিজ্ঞতাপ্রসূত। এই জন্য অদ্বৈত বেদান্ত এই দুই মতাবলম্বীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অদ্বৈতবাদকে "উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের চেতনা ব্যতীত একটি অনাদি প্রাকৃতিক সচেতনতা" মনে করা হয়। এটিকে আবার "ইন্টারকানেক্টেডনেস" হিসেবেও অভিহিত করা হত। অর্থাৎ, "এই মতে সব কিছুই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, কিছুই পৃথক নয়; কিন্তু একই সময় প্রতিটি বস্তুই তাদের স্বাতন্ত্র্য্য বজায় রাখছে।"


জর্জ ফুরস্টেইনের অদ্বৈতবাদ-সংক্রান্ত উদ্ধৃতি অনুসারে অদ্বৈত বেদান্তের সিদ্ধান্ত নিম্নরূপ:
"সত্য বললে, এই জটিল ব্রহ্মাণ্ডে একটিই সত্য আছে। এখানে একটিই মহান সত্ত্বা আছেন, যাঁকে ঋষিরা বলেন ব্রহ্ম। ব্রহ্মের মধ্যেই অসংখ্য রূপ বিদ্যমান। সেই মহান সত্ত্বাই চৈতন্য(consciousness)। ইনিই সব কিছুর কেন্দ্র বা সকল জীবের আত্মা।"


অদ্বৈত বেদান্তের দর্শনের ভিত্তি উপনিষদ্‌, ভগবদ্গীতা ও ব্রহ্মসূত্র। উপনিষদের আপ্ত বচনগুলিকে ভিত্তি করেই তা সূত্রাকারে পরিণত হয়েছে। কাজেই এই ব্রহ্মসূত্রের ব্যাখ্যার ভিত্তিতেই বিভিন্ন দার্শনিক মতকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।আদি শঙ্কর তার ভাষ্যগুলির মধ্যে এগুলির অন্তর্নিহিত দার্শনিক অর্থ আলোচনা করেছেন। এই জন্য এই গ্রন্থগুলি অদ্বৈত বেদান্ত পরম্পরায় কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পায়।সর্বোচ্চ ধারণায় ঈশ্বরকে “মিথ্যা” বলা হয়েছে, কারণ ব্রহ্ম মায়ার আবরণের জন্য ঈশ্বর রূপে প্রতিভাত হন।অনেক লেখকের মতে, বৌদ্ধধর্ম ও অদ্বৈতবাদের মধ্যেকার সাদৃশ্যের কারণটি হল উভয় মতের উপর উপনিষদের প্রভাব। দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণ তার ইন্ডিয়ান ফিলোজফি বইতে বলেছেন: "সন্দেহ নেই বৌদ্ধধর্ম ও অদ্বৈত বেদান্তের মধ্যে সাদৃশ্য আছে। তবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ, দুই ধারার প্রেক্ষাপটই হল উপনিষদ।"

শুধু বৌদ্ধধর্মের সাথে নয়, ইসলামের ছায়ায় প্রচারিত উপমহাদেশের সুফি পীরগনের বিশ্বাস বা আকিদাও বেদান্তবাদের অনুরূপ। সুফিবাদে ওয়াহদাতুল উজুদ(অদ্বৈতবাদ) হুলুল ওয়াল ইত্তেহাদ(সর্বেশ্বরবাদ) মৌলিক বিশ্বাসের বিষয়। মূলত ইসলামের মধ্যে এই সুফিবাদ সমস্ত কুফরি আকিদার শব্দকে আরবিতে রূপান্তর করে প্রচার করা হয় বলে সাধারণ মানুষ এর ভেতরের অবস্থার ব্যপারে বোঝে না। সুফিবাদ সুস্পষ্ট কুফরি মতবাদের ধারক ও বাহক। সুফি ধর্মবিদ মার্টিন লিংস বলেছেন,
"রাজকুমার দারা শিকো (মৃত্যু ১৬১৯) ছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সুফি মতাবলম্বী পুত্র। তিনি বলেছিলেন, সুফিবাদ ও হিন্দুদের অদ্বৈত বেদান্তের মধ্যে শুধু পারিভাষিক পার্থক্য ছাড়া বাকি সবই এক"[১৭]



বিজ্ঞানের ব্রহ্মচৈতন্যে প্রত্যাবর্তন
 

বোঝার সুবিধার্থে অদ্বৈত বেদান্তবাদ-মায়াতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উপরে উল্লেখ করলাম। এবার ভাবুন তো যদি হিন্দুদের তন্ত্র-মন্ত্রের অদ্বৈত বেদান্তবাদ এবং ইহুদিদের যাদুশাস্ত্র কাব্বালাকে বিচিত্র গাণিতিক ফর্মুলা-ইক্যুয়েশনে ফেলে শতভাগ জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রে রেখে স্বতঃসিদ্ধ নিষ্কলুষ বিজ্ঞানের নামে সর্বত্র প্রচার করা হয়?

জ্বী, আজকের পদার্থবিদগন(natural philosophers) ফিরে গেছেন সেই ইন্দ্রজালের দিকে। আমার মনে পড়ে, বছর চারেক আগে কথিত বিজ্ঞানীগনের(!) ইন্দ্রজালের দিকে প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ করে একটা ছোট্ট পোস্ট দিয়েছিলাম[৪]। তখন আজকের ন্যায় এত কিছু ব্যাখ্যা করিনি বলে পাঠকদের কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। কিছু ভাইবোনেরা না বুঝেই বিশ্বাস করেছিলেন(তারা অবশ্যই সৌভাগ্যবান)। অহংকারী নির্বোধের দল সবসময়ই অবিশ্বাস করত। যাই হোক, আজ সকলের তাত্ত্বিকভাবে বুঝবার সময় হয়ে গেছে। আজকের পর্বের শুরু এখানেই।গত পর্বে সংক্ষেপে পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় দর্শন প্রবেশ ও সমাদৃত হবার ইতিহাস আলোচনা শেষ করেছিলাম।

ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের হাত ধরে আসা ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট নলেজ অন্যান্য ভূখণ্ডের তুলনায় হাজার বছর ধরে সুরক্ষিত ছিল। যেখানে খ্রিষ্টানরা যাদুশাস্ত্রের ব্যপারে কঠোর দমন পীড়ন চালায়, মুসলিমরা সেখানে ভারতে প্রবেশ করে শাসনভার গ্রহনের পর পৌত্তলিকদের দর্শন ও অপবিদ্যার বিরুদ্ধে দমন পীড়নের বদলে কবীন্দ্র পরমেশ্বরদের দিয়ে রামায়ণ-মহাভারত অনুবাদে পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। এতে করে আজকের যুগ পর্যন্ত ভারতীয় পৌত্তলিকদের অকাল্ট শাস্ত্রগুলো নিরাপদে রয়ে যায়। খ্রিস্টান শাসনের পতনের পর যাদুশাস্ত্রের রেনেসাঁর দ্বারা সাহিত্য - দর্শনে যাদুশাস্ত্রগুলো পরম পূজনীয় বিষয় হয়ে যায়। বিগত পর্বে দেখিয়েছি কোপার্নিকান, ভিঞ্চি,নিউটন - বেকন'দের যাদুশাস্ত্রের প্রতি কিরূপ অনুরাগ ছিল। সময় যতই সামনের দিকে গড়ায় প্রাচীন হার্মেটিক কিতাবাদির বাইরে প্রকৃতির দার্শনিকদের বা ন্যাচারাল ফিলসফারদের (নতুন টাইটেলঃ বিজ্ঞানী) কাছে নতুন কিছুর প্রতীক্ষা বাড়তেই থাকে। আঠারো-উনিশ শতকে কাব্বালার কিতাবাদি আজকের ন্যায় সহজলভ্য ছিল না। ১৯২০ সালে কাব্বালাহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় র‍্যাবাঈ ইয়াহুদা আশলাগ। এর পরবর্তীতে সহজলভ্য হতেও সময় লাগে। ঠিক এর পূর্বে স্বামী বিবেকানন্দ, হেলেনা ব্লাভাস্তস্কি প্রমুখের দ্বারা ভারতে সংরক্ষিত অকাল্ট অপবিদ্যা পাশ্চাত্যে পৌছতে শুরু করে। কবিসাহিত্যিক থেকে শুরু করে দার্শনিক ও কথিত বিজ্ঞানীগন ভারতীয় অকাল্ট নলেজকে গ্রহন করতে থাকে। এ ব্যপারে ১৪ তম পর্বে আলোচনা হয়েছে।

ভারত পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের কাছে হয়ে যায় জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্রভূমি। অবিকৃত যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক বৈদিক ঔপনিষদিক তত্ত্বগুলো পেয়ে সবার অবস্থা ওইরূপ হয় যেন তারা স্বর্ণের খনি পেয়েছে। কুফরি দর্শনেরঅন্বেষী বিজ্ঞানীগন খ্রিষ্টধর্ম বা আব্রাহামিক ধর্মবিশ্বাসের প্রতি অবজ্ঞাপোষণের জন্য বিকল্প পথ পেয়ে যায়। আইনস্টাইনের মত পদার্থ (অপ)বিজ্ঞানী বলেনঃ"বৌদ্ধধর্মে এমন সব বৈশিষ্ট্য আছে যা ভবিষ্যতের জন্য কস্মিক ধর্মে থাকা উচিত:এটা সৃষ্টিকর্তার সত্তাগত (অস্তিত্বের) ধারনাকে বাদ দিয়ে সবধরনের ধর্মতত্ত্ব ও মতবাদকে পরিহার করে;এটা উভয় প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক দিক পূরন করে,এবং এটা এমন ধর্মীয় চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত যেটা সকল জিনিসের অভিজ্ঞতা উৎসারিত, প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিকতা হচ্ছে অর্থপূর্ণ ঐক্য। বৌদ্ধধর্ম এই বৈশিষ্ট্য গুলো পূরণ করে। যদি কোন ধর্ম থেকে থাকে যেটা বৈজ্ঞানিক চাহিদার সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম, তবে সেটা বৌদ্ধধর্ম। আমি স্পিনোজার(বারুচ স্পিনোজাঃসর্বেশ্বরবাদী শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের একজন) ঈশ্বরে বিশ্বাসী,যিনি নিজেকে সমগ্র অস্তিত্বের নিয়মতান্ত্রিক হার্মোনির মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে(সর্বেশ্বরবাদ), কোন ব্যক্তিক সৃষ্টিকর্তার স্বত্ত্বায় নয়, যিনি মানুষের ভাগ্য ও কর্মের ব্যপারে পরোয়া করেন।"

 অন্যত্র বলেনঃ"আমি কোন (স্বতন্ত্র)সত্তাগত সৃষ্টিকর্তায়(আল্লাহ) বিশ্বাসী নই এবং আমি শুধু এটা অস্বীকারই করিনি বরং সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছি।"


কিংবদন্তী পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে নিয়ে প্রথম পর্বেই দীর্ঘ আলোচনা করেছি, তাই নতুন করে তার ব্যপারে উল্লেখের প্রয়োজন নেই। মূলত কাব্বালার পাশাপাশি বেদান্তবাদ কিংবা বৌদ্ধমত এবং অন্যান্য ধর্মচক্র(ভারতীয় রহস্যবাদি দর্শনসমূহ) সর্বেশ্বরবাদের শিক্ষা দেয়, যা এক প্রকারের নিরেশ্বর বা নাস্তিকতার আদি সংস্করন। এটা শুধু ভারতীয় কিংবা ইহুদীদের নয়, সমগ্র রহস্যবাদী ট্রেডিশান(mystery tradition) অভিন্ন মৌলিক শিক্ষা। আজকের অপবিজ্ঞানীগন তাদের তত্ত্বসমূহের আড়ালে এই কুফরি আকিদার দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পথভ্রষ্ট খ্রিস্টানরা তো সাড়া দিয়েছেই , আজকের মুসলিম উম্মাহও এদের মহা কুফরের হাতছানিতে সাড়া দিয়েছে সাগ্রহে। কথিত বিজ্ঞান আজ ফিরে গেছে ব্যাবিলনীয় ইন্দ্রজালের দিকে, ফিরে গেছে ব্রহ্ম চৈতন্যের আদি ধর্মে। চলুন কথিত আধুনিক বিজ্ঞানের ইতিহাসের দিকে যাওয়া যাক।


ইহুদী বংশোদ্ভূত আইনস্টাইন ছিলেন সুইস প্যাটেন্ট অফিসের নিচু শ্রেনীর ক্লার্ক। তিনি ওইসময় চারটি সায়েন্টিফিক পেপার লিখে ফেলেন।
১.ফোটনকণা হচ্ছে আলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত পার্টিকেল। তিনি ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্টকে ব্যাখ্যা করতে তার নতুন বর্ননা বা মতবাদকে ব্যবহার করেন।
২.অপর পেপারে তিনি গাণিতিকভাবে এটমের অস্তিত্বের প্রমাণ করেন। তখনো এটমিক তত্ত্বের স্বীকৃতি নিয়ে সন্দেহ ছিল।
৩.তিনি স্পেশাল থিওরি অব রেলেটিভিটিকে প্রকাশ করেন যেটায় দেখান কিভাবে গতি সময়কে প্রভাবিত করে।
৪.এরপরে এনার্জি=এমসি২। তিনি ম্যাটার ও এনার্জির মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন।
কিন্তু তার এ তত্ত্ব তখনও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি যেহেতু তার তত্ত্ব তার সময়ের বিজ্ঞানীদের তুলনায় অনেক এ্যাডভান্স পর্যায়ের।

ইহুদীদের কাব্বালিস্টিক যাদুশাস্ত্রগুলোয় বিশদ উল্লেখ আছে অকাল্ট সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে। অনু পরমানুর সমন্বয়ে যে বস্তুর গঠন এবং সমগ্র বস্তু যে energy সে জ্ঞানও ইহুদীদের কাব্বালাহ শেখায়। তাছাড়া উচ্চতর বহুমাত্রিক জগৎ এবং মহাজাগতিক বিচিত্র শক্তি, গঠনপ্রকৃতি, অরিজিন এবং শেষ পরিনতি সবকিছুই কাব্বালাহ শেখায়। নিউটনের পরে ইহুদী আইনস্টাইনই সর্বপ্রথম কাব্বালিস্টিক এ সব বিদ্যাকে শক্ত-গ্রহনযোগ্য প্ল্যাটফর্মে প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন।

এরপরে তৎকালীন আরেক মহান পদার্থবিজ্ঞানী জনাব ম্যাক্স প্ল্যাংক আইনস্টাইনের আলো ও ফোটনের ব্যপারে লেখা গবেষণা পত্রটি পাঠ করেন। প্ল্যাংক আইনস্টাইনকে নিয়ে আসার জন্য তার অফিসে লোক পাঠায়। এই স্বীকৃতি আইনস্টাইনকে বিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে পরিচিত করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে অখ্যাত আইনস্টাইন খ্যাতিমান হতে শুরু করেন। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সারাজীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মাধ্যমে জীবন পার করেন, হয়ত তার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হচ্ছে আইনস্টাইন।

 ড্যানিশ পদার্থবিদ নিলস বোর কোপেনহেগেনে বড় হন এবং ২৬ বছর বয়সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি আইনস্টাইনের এটমের ব্যপারে ধারনার রিসার্চ পেপার পড়েন এবং ১৯১৩ সালে এটমিক স্ট্রাকচারের কার্যনীতির ব্যপারে একটা কন্সেপচুয়াল মডেল তৈরি করেন। পজেটিভ চার্জড নিউক্লিয়াসকে নেগেটিভ চার্জড ইলেক্ট্রন প্রদক্ষিণ করে, এই ইলেক্ট্রন গুলো বিশেষ এনার্জি লেভেলে অর্বিট করে যা কোয়ান্টাইজড। বোর এর এটোমিক মডেলটি এটমিক পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নশাস্ত্রেও প্রভাববিস্তার করে যেটা আধুনিক যুগের প্রবর্তনা ঘটায়। তিনি ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন এর ফিজিক্স প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হন। একইসময় আইনস্টাইন ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনে প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হন।সেসময় তিনি আরো কিছু রিসার্চ পেপার পাব্লিশ করেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে, "আকাশ নীল কেন"।

এরপরে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের অঙ্গনে প্রাচীন জ্যোতিষী - যাদুকরদের সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মাধ্যমে। এ ব্যপারে কিছু বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত ছিল রিডাকশনিজম বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ফিজিক্স, যেখানে বস্তু বা অনু-পরমাণুর স্বাধীন স্বতন্ত্র ও বাস্তব অস্তিত্ব এবং সবকিছু যুক্তি এবং determinism এর গন্ডির মধ্যে রাখা হয়। একে ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স বলেও ডাকা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা গুরু ছিলেন মহান যাদুকর আইজ্যাক নিউটন। বস্তুবাদ,ভোগবাদ,নাস্তিক্যবাদ প্রভৃতি চিন্তাধারা ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিক্সের বস্তুবাদী সৃষ্টিতত্ত্বের কিছু ফলাফল। একটা বিষয় হচ্ছে আলকেমিস্ট নিউটন যদিও ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ফিজিক্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন, তার পঠিত ও গবেষনার যাদুকরী শাস্ত্রগুলো ছিল আধ্যাত্মবাদী বা আইডিয়ালিস্টিক। তিনি ডুবে থাকতেন কাব্বালা,হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রের মধ্যে। কথিত বিজ্ঞানের পূর্ব নামঃ natural philosophy'র প্রথম এবং প্রাচীন ধারাটি ছিল মন বা চেতনাকেন্দ্রিক, ফিলসফির ভাষায় আইডিয়ালিস্টিক। এই আইডিয়ালিজমের উপরে ছিল সমস্ত আদি যাদুশাস্ত্রের কিতাব গুলো।
গ্রীক দার্শনিকদের মধ্যে পিথাগোরাস, প্লেটো প্রমুখ আইডিয়ালিস্টিক বিশ্বদর্শনে বিশ্বাস করত। এটা সমস্ত প্রাচীন-অর্বাচীন যাদুকরদের মৌলিক ওয়ার্ল্ডভিউ বা বিশ্বাসব্যবস্থা। এ বিশ্বদর্শনে আত্মা বা মনই সবকিছু। প্রাচীন দার্শনিকদের এই আইডিয়ালিস্টিক ফিলসফির উৎস ছিল ব্যাবিলনীয় কাব্বালিস্টিক অকাল্ট(যাদু) শাস্ত্র এবং ব্যবিলনীয়ান-ক্যালডিয়ান ম্যাজাই। এগুলো থেকেই পারসিয়ান আর্যগণ বেদান্তশাস্ত্র তৈরি করে ভারত পর্যন্ত পৌছায়। আইডিয়ালিস্টিক সৃষ্টিতত্ত্বে মূল হচ্ছে মন বা চেতনা। চারপাশের বস্তুজগতের অনু-পরমাণুর একদম মূলে রয়েছে চেতনা। এই চেতনার মধ্যে ভেদ নেই। সমগ্র সৃষ্টিজগতে একক চেতনা বা মহাচৈতন্য। সহজ করে বললে, সমস্ত বস্তুর কণার মূলে আছে অনু-পরমানু, অনু-পরমানু এনার্জি দ্বারা তৈরি, এই এনার্জি তৈরি হয়েছে অদ্বৈত চেতনা সত্তা দিয়ে। যাদুকরদের বিশ্বাস অনুযায়ী এটাই ঈশ্বর। হিব্রু কাব্বালায় এটা আইনসফ। ইসলামিক দৃষ্টিকোণে এভাবে বলা যায় ম্যাটারের মূলে থাকা এনার্জির মূলে আছে স্বয়ং আল্লাহর সত্তাগত অস্তিত্ব, মানে সমস্ত বস্তু বা পদার্থই আল্লাহ! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ!! এটাই ওয়াহদাতুল উজুদ(অদ্বৈত অস্তিত্ব) বা monism এর আকিদা। এটাকেই আরবিতে বলা হয় আল ইত্তেহাদ।এটাই অদ্বৈত বেদান্তবাদ,কাব্বালা সহ সমস্ত মিস্ট্রি ট্রেডিশনের মূল কথা। উপরে আলোচনা করেছি বেদান্তশাস্ত্রে এই অদ্বৈত চেতনা বা মহাচৈতন্যকে আত্মা/ব্রহ্মা প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। এই মনই সকল বস্তুর গর্ভ। অনু-পরমাণুর সংগঠন এই মহাব্রহ্মচৈতন্যই ধরে রেখেছে। ত্রিমাত্রিক আমাদের জগতে আমরা যে বস্তুসমূহের মধ্যে ব্যবধান বা স্বাতন্ত্র্য দেখি সেটা মায়া। আমরা যে শূন্য স্থান দেখি সেটাও এনার্জি দ্বারা পূর্ন। আমরাও এরই সাথে ইন্টারকানেক্টেড। আইডিয়ালিস্টিক মহাবিশ্বে সমস্ত সৃষ্টিই নিজ নিজ বিবর্তনশীল স্রষ্টা। কোন সলিড বস্তু বলে কিছু নেই,সবই একক ইউনিফাইড এনার্জি ফিল্ড, অতএব সমস্ত পদার্থের সলিডিটি(solidity) একরকমের মরীচিকা বা মিথ্যা । সবকিছু ননলোকাল। এখানে মন বা চেতনাই আসল। অনু-পরমাণুর ভেতরেও শূন্য স্পেস। এখানে সবকিছুই অনন্ত ক্ষমতাশালী অনন্ত সম্ভাবনাময়, যেহেতু সবকিছুই ঈশ্বর বা ঐশ্বরিক সত্তার অংশ। এ বিষয়টি ত্রিমাত্রিক জগতের বাসিন্দাদের যারা জানে তারা তাদের সচেতন পর্যবক্ষন বা অভিপ্রায় দ্বারা নিজেদের ভাগ্যে পরিবর্তন করতে পারে কেননা সকল কর্ম পর্যবেক্ষকের উপর নির্ভর করে। সাবএ্যাটমিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষকই সবকিছুর ভাগ্য নিয়ত্বা। সৃষ্টিকর্তার আলাদা সত্তা বিহীন এ ননডুয়াল অস্তিত্বে সবকিছুই সবকিছুকে সৃষ্টি করছে, অর্থাৎ অনেকটা self sustained universe মডেল যেখানে অদ্বৈত ব্রহ্মচেতনা আমাদের ত্রিমাত্রিক অস্তিত্ব তৈরি করছে আবার সাবএ্যাটমিক লেভেলে আমরাই মহাবিশ্বের কম্পোজিশনে ভূমিকা রাখছি।  কোয়ান্টাম মেকানিক্স এই সমস্ত শিক্ষাগুলো বিজ্ঞানের মোড়কে শেখায়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স materialism এর plurality, locality, determinism এর বিপরীতে singularity বা non duality, Non locality, Non Determinism কে শেখায়, বাস্তব জগতের সবকিছুকে হলোগ্রাফিক প্রজেকশন বলে, সবকিছুকে মায়াজাল বোঝায়,সবকিছুই ব্রহ্ম চেতনার স্বপ্ন বা সিমুলেশন।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে আনা হয়েছে সাবএ্যাটমিক পর্যায়ে পদার্থের আচরণ ব্যাখ্যা করতে, যেখানে ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিক্স ব্যাখ্যা দিতে অপারগ। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্স তাত্ত্বিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বস্তুবাদী বা নাস্তিক্যবাদী বিজ্ঞানীদের কাছে এই বিপরীতমুখী শিক্ষা বাহ্যত সহজ না, কিন্তু অপরদিকে আইডিয়ালিস্টিক দর্শন সর্বেশ্বরবাদের কথা বলে, যেটা নাস্তিক্যবাদি একই মুদ্রার অপর পিঠ। অবশেষে Materialistic Classical Deterministic Physics,  Nonlocal indeterministic quantum physics এর কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। প্রমানিত করা হয়, ব্রহ্মচৈতন্যের অস্তিত্বের ধারনাই সঠিক! ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সের বস্তুবাদী ধরাবাধা চিন্তা ভুল।

গোটা বিজ্ঞান, অকাল্ট শাস্ত্রের হাত ধরে আসলেও কয়েক শতাব্দী অকাল্টিজম, মিস্টিসিজম এর বিরোধিতা করত। এটা ছিল একটা প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞানের নামে ন্যাচারাল ফিলসফির রহস্যময় যাদুকরী দিকগুলোকে বাদ দিয়ে সাধারন মানুষের কাছে অত্যাবশকীয় নিষ্কলুষ বিদ্যা হিসেবে গ্রহনযোগ্যতা তৈরি। যখন বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা মানুষ হৃদয়ে ধারন করলো, এরপরে সমস্ত অকাল্ট দর্শনকেই পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে নিয়ে আসলো। এ কাজে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বৈপ্লবিক অবদান রাখে।  "প্রব্লেম-রিয়্যাকশান-সল্যুশন" প্রক্রিয়ায় যখন আবারো প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান অকাল্টিজমে বিজ্ঞানে প্রত্যাবর্তন করলো, ম্যাটেরিয়ালিজমকে ভুল প্রমাণ করা হলো, দৃষ্টিভঙ্গিকে পাল্টে অকাল্ট ফিলোসোফির (যাদুশাস্ত্রভিত্তিক বিশ্বাসব্যবস্থা) সবকিছু একে একে সায়েন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে লাগল। চলুন, এবার আবারো ইতিহাসে ফেরা যাক।

১৯২০ সালে আরেক নোবেল বিজয়ী মহান পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ তার বিখ্যাত uncertainty principal তৈরি করেন,যেটা বলে: যখন কোন পদার্থবিদ সাবএটোমিক পার্টিকেলস পর্যবেক্ষণ করতে যান, পরীক্ষণের যন্ত্র অনিবার্যভাবে সাবএটোমিক পার্টিকেলের কক্ষপথকে উল্টিয়ে দেয়। এটা এজন্য হয় যে, তারা এমন কিছুর পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করেন যা ওই ব্যবহৃত ফোটনের সমস্কেলের।আরো বেশি নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, সাবএ্যাটমিক পর্যায়ের কোন কিছুকে অবজার্ভ করতে গেলে এমন যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে যেটা অবজার্ভড পার্টিকেলে ফোটনগুলোকে প্রজেক্ট করবে। কারন আমাদের রেটিনা দ্বারা ফোটন্সের রিসেপশনকে আমরা দৃষ্টি বা ভিশন বলি। মূলত, কোন কিছু দেখতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই এটার দিকে ফোটন ছুড়তে হবে। সমস্যা হলো, এই ফোটনগুলো সাবএটমিক পার্টিকেল গুলোকে সমস্যায় ফেলে যেহেতু তারা উভয়ে একই আকারের। এজন্য, কক্ষপথে অল্টারিং ছাড়া সাবএটোমিক কণাকে অবজার্ভ করার উপায় নেই। ১৯২৫ সালে হাইজেনবার্গ ম্যাট্রিক্স মেকানিক্স নামের একটা ধারনার পরিচয় ঘটান। এনার্জি কিভাবে এটম ধারন করে তা ব্যাখ্যা করেন। ম্যাট্রিক্স মেকানিক্স একটুও ট্রেডিশনাল ফিজিক্সের অনুরূপ ছিল না।
নিলস বোর হাইজেনবার্গের আইডিয়াকে সমর্থন করলেন। কিন্তু আইনস্টাইনসহ অনেক পদার্থবিদগন তেমন সমর্থন করলেন না। এরপরে যখন হাইজেনবার্গ নিজেই ফিজিক্স প্রফেসর হলেন তখন, নিজের আইডিয়াকে প্রচার শুরু করলেন। প্রশ্ন আসে, হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স মেকানিক্সের উৎস কি? হঠাৎ করে কোথা থেকে 'অনিশ্চয়তার নীতির' আইডিয়া পেলেন? উত্তর হচ্ছে, ভারতীয় বৈদিক অকাল্ট দর্শন! বিশ্বাস করতে নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে, তবে সত্য হলো তিনি ভারতীয় বা পূর্বাঞ্চলীয় মিস্ট্রি স্কুল দ্বারা চরমভাবে প্রভাবিত ছিলেন। The Holographic Paradigm (page 217–218) এ Fritjof Capra যখন Renee Weber দ্বারা সাক্ষাত করেন,তিনি উল্লেখ করেনঃ শ্রোডিঞ্জার হাইজেনবার্গের ব্যপারে বলতে গিয়ে বলেন, "আমার সাথে হাইজেনবার্গের সাথে একাধিক আলোচনা হয়েছে। আমি থাকতাম ইংল্যান্ডে [circa 1972] এরপর আমি তার সাথে Munich এ একাধিকবার দেখা করি এবং তাকে গোটা পাণ্ডুলিপি  চ্যাপ্টারের পর চ্যাপ্টার দেখাই। সে খুবই খোলাখুলিভাবে  আগ্রহবোধ করেন, তিনি আমাকে এমন কিছু বলেন যা আমার মনে হয়না পাব্লিকভাবে কেউ কিছু জানে,কারন তিনি তা কখনোই প্রকাশই করেন নি। তিনি বলেছিলেন যে তিনি (বেদের সাথে) সমান্তরাল সাদৃশ্যতার ব্যপারে ভালভাবেই অবগত। কোয়ান্টাম থিওরি নিয়ে কাজের সময় তিনি ভারতে যান বক্তৃতার জন্য এবং সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অতিথি হয়ে ছিলেন। তিনি ঠাকুরের সাথে ভারতীয় দর্শন নিয়ে অনেক কথা বলেন। হাইজেনবার্গ আমায় বলেন, এই আলাপন তার পদার্থবিদ্যায় অনেক সাহায্য করে,কারন সেসব তাকে দেখায় যে কোয়ান্টাম তত্ত্বের নতুন ধারনা অতটা পাগলাটে নয়। তিনি অনুধাবন করেন, বস্তুত এই গোটা (বেদান্তবাদী)সংস্কৃতি খুব সাদৃশ্যপূর্ণ ধারনা দেয়। হাইজেনবার্গ বলেন, এটা তার জন্য বড় একটা সাহায্য ছিল। নিলসবোরেরও একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়, যখন তিনি চীনে যান।"

সুতরাং বুঝতেই পারছেন হাইজেনবার্গের তত্ত্বের উৎস কি। শুধু হাইজেনবার্গই নন, নিলসবোর নিজেও ছিলেন বেদান্ত-উপনিষদিক শাস্ত্রের অনুগত পাঠক। তিনি বলেনঃ "আমি প্রশ্ন করতে উপনিষদের মধ্যে যাই।" এ কারনেই হাইজেনবার্গের থিওরির পাশে নিলসবোরের একনিষ্ঠ সমর্থন ছিল।


ড্যানিশ ফিজিসিস্ট নিলস বোরকে স্মরণ করা হয় এটোমিক স্ট্রাকচার ও কোয়ান্টাম তত্ত্বে ব্যাপক অবদান রাখার জন্য।নিলস বোর ১৯০০ সালে পরমাণুর বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সিতে তড়িৎচুম্বকীয় রেডিয়েশন ধারণ ও বিকিরণের কারন ব্যাখ্যা করে আলোচিত হন। তিনি চীনে গমন করে চাইনিজ মিস্ট্রি ট্রেডিশান(যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শন) : তাওবাদ দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি ১৯৪৭ সালে যখন নাইট উপাধি লাভ করলেন তখন সর্বেশ্বরবাদী চাইনিজ দর্শন তাওবাদের ইনইয়াং প্রতীককে তার পরিধেয় কোটের হাতে ধারন করেন। তিনি বলেনঃ"পরমাণুতত্ত্বের সমান্তরাল শিক্ষায় আমাদেরকে ওইসব তাত্ত্বিক সমস্যার দিকে যেতে হয় সে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন বুদ্ধ এবং Lao Tzu, যখন অভিনেতা ও দর্শকের অবস্থানে আমাদের অস্তিত্বের মধ্যে ছন্দময় সংগতি আনয়নের চেষ্টা করা হয়।"
( Niels Bohr, Atomic Physics and Human Knowledge, (edited by John Wiley and Sons))

নিলসবোর বৈদিক ও বৌদ্ধদর্শনের মায়াতত্ত্বে বিশ্বাস করতেন, মূলত এ বিশ্বাসের সাথে সংগতি রেখেই কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানকে সাজানো হয়েছে। গানিতিক সূত্রে ও যুক্তিতে রচনা করা হয়েছে আদি ব্রহ্মান্য-বেদান্তবাদ।নিলস বোর বৈদিক মায়াতত্ত্বের সাথে সুর মিলিয়ে বলেনঃ"সব জিনিস; যাকে আমরা সত্য বলি, তা এমন জিনিস দ্বারা তৈরি যা সত্য বলে বিবেচিত হতে পারে না....যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স আপনাকে গভীরভাবে অভিঘাত না করে,তবে আপনি এটা এখনো বুঝতে পারেন নি।"
কোয়ান্টাম তত্ত্ব আসলে এ বেদান্তবাদি মায়াবাদের বিশ্বাসটিকে ধারন করতে শেখায়। সবকিছুই মেন্টাল প্রজেকশন। স্বপ্নের মত, সবকিছু মহাচৈতন্যের স্বপ্ন বা কল্পনা। সিমুলেশন বা হলোগ্রাফিক হলোফ্র‍্যাক্টাল রিয়েলিটি। অন্যভাবে বলা যায়, বস্তু জগতে সলিড বলে কিছু নেই, সবই এনার্জি। তাই যাকে আমরা সত্য বলে মনে করি তা সত্য বলে বিবেচ্য হতে পারে না।সত্য কেবল ব্রহ্মচৈতন্য, আর সবকিছুই মায়া। এজন্য বৈদিক শাস্ত্রে আছে, "ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা!"

কোয়ান্টাম মেকানিক্স অধিকাংশ মানুষই অসম্ভব কঠিন দুর্বোধ্য মনে করে। এর ম্যাজিক্যাল কার্যনীতি সহজে বুঝতে পারেনা। এমনকি অনেক বস্তুবাদী পদার্থবিদও আছেন যারা কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝেন না! রিচার্ড ফাইনম্যান বলেন, "আমি মনে করি আমি নিরাপদে এটা বলতে পারি কেউই কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝে না।" আসলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে না বুঝতে পারার মূল কারন হচ্ছে প্যাগান আধ্যাত্মবাদ বা যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক অকাল্ট ফিলসফির মূল তত্ত্বের ব্যপারে কোন জ্ঞান না থাকা। বেদান্তবাদের শিক্ষা না থাকা। স্বভাবতই বেদান্তবাদ কিংবা কাব্বালার মূল নীতি বা তত্ত্বকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক শব্দের মোড়কে বিজ্ঞানরূপে প্রতিষ্ঠা করলে বোঝা ভারী মুশকিল হয়ে যায়। আরো কঠিন হয় যখন এই চিন্তাধারা বিপরীত মেরুর(বস্তুবাদী) মতাদর্শের লোকের নিকট হজম করতে বলা হয়। এজন্যই কোয়ান্টাম মেকানিক্স কিছু মানুষের কাছে দুর্বোধ্য। এজন্য আগে babylonian mysticism গিলতে হবে। গিলতে হবে অদ্বৈত বেদান্তবাদ। এজন্যই হাইজেনবার্গ বলেছেনঃ "যেসব লোক বেদান্ত অধ্যয়ন করেছে, তাদের কাছে কোয়ান্টাম থিওরি হাস্যকর লাগবেনা।"


অন্যত্র বলেনঃ"ভারতীয় দর্শনের ব্যপারে কিছু কথোপকথনের পর, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার কিছু ধারনা, যেগুলো খুব পাগলাটে মনে হত, সেগুলো বুঝে আসে।"

এজন্যই আর্টিকেলের প্রথমদিকেই অদ্বৈত বেদান্তবাদের ব্যপারে উল্লেখ করেছি যাতে বুঝতে সহজ হয়। এবার চলুন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু শব্দের ব্যাখ্যার সাথে পরিচিত হওয়া যাকঃ

Consciousness:
চেতনা দ্বারা কোয়ান্টাম তত্ত্বে বেদান্তবাদের অদ্বৈত ব্রহ্ম চৈতন্যকে বোঝায়। এর দ্বারা বোঝানো হয় সমস্ত পদার্থের মূলে আছে একক ইউনিফাইড কালেক্টিভ কনসাসনেস। একটি মাইন্ড। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর ভাষায়,"This mind is the matrix of all matter"। সমস্ত পদার্থের গর্ভ এই মহাচেতনা। এটাই সৃষ্টিকর্তা। আবার এই স্রষ্টাই বস্তুজগৎ।  এটিই দার্শনিক Baruch spinoza'র pantheistic God. এ বিশ্বাসকে দর্শনে নন ডুয়ালিজম বা অদ্বৈতবাদ বা monism অথবা আরবিতে ওয়াহদাতুল উজুদ বলা হয়। হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রে উল্লিখিত নীতির প্রথমটিই চেতনা বা মন নির্ভর মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ড!

Non Locality:
যেহেতু কোয়ান্টাম লেভেলে সবকিছুই চেতনার অংশ, সেহেতু সবকিছুই একক। কোন বস্তুরই স্থানগত নির্দিষ্টতা নেই। যেকোনো বস্তু যেকোন স্থানে বিদ্যমান।



Quantum Entanglement:
Non Locality এর দরুন সমস্ত বস্তুজগতই একই বাধনে বাধা। সবকিছুই একে অপরের সাথে সংযুক্ত। "ব্রহ্মাণ্ডের" সব কিছুই একক অস্তিত্ব। এজন্য একই মৌল থেকে উৎপন্ন বস্তুকে আলাদা করে শত শত আলোকবর্ষ দূরে নিয়ে গেলেও একে অপরের সাথে যুক্তই থাকে। সেপারেশন বা মধ্যবর্তী ফাকাস্থান হচ্ছে মায়া বা ইল্যুশন। এজন্য দূরে এক প্রান্তে ঐ বস্তুর এক খন্ডে কোন পরিবর্তন ঘটালে, সাথে সাথে অপর প্রান্তে অবস্থিত অপর খন্ডে প্রভাব ফেলে। একে কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গলমেন্ট বলে। কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গল্মেন্ট অদ্বৈত ব্রহ্মচৈতন্যের অস্তিত্বের স্বীকৃতি দেয়।[১১]



Measurement problem:
ননলোকাল অবস্থায় সমস্ত পদার্থের অবস্থা হচ্ছে কম্পনশীল তরঙ্গায়িত এনার্জি পার্টিকেল। ওয়েভ ফাংশন হচ্ছে কোয়ান্টাম স্টেটে পার্টিকেলসমূহের অবস্থান, মোমেন্টাম,সময়,ঘূর্নন প্রভৃতির সম্ভাব্যতার ফাংশন।
ওয়েভ ফাংশনকে Ψ ভেরিয়েবলের দ্বারা বোঝানো হয়। ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সের হবার কারনকে মেজারমেন্ট প্রব্লেম বলা হয়। সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য কারন হচ্ছে অবজারভার বা পর্যবেক্ষক।


Observer Effect(measurement problem):
ওয়েভফাংশন কলাপ্সের জন্য দায়ী সচেতন পর্যবেক্ষক।সচেতন পর্যবেক্ষক ছাড়া সাবএ্যাটমিক লেভেলে পার্টিকেলগুলো আচরণ একরকম, অবজারভার যুক্ত করলেই সাথে সাথে আচরণ পাল্টে ফেলে।বিখ্যাত  ডাবলস্লিট এক্সপেরিমেন্টে অসংখ্যবার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যখন পর্যবেক্ষক রাখা হয়না তখন নিক্ষেপিত ফোটন গুলো তরঙ্গায়িত এনার্জির ন্যায় আচরণ করে, কিন্তু যেই মাত্র পর্যবেক্ষক রাখা হয় সাথে সাথে ননলোকাল এনার্জি থেকে পার্টিকেলে রূপান্তরিত হয়। এর গভীর তাৎপর্য হচ্ছে চেতনা বস্তুজগতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ম্যাক্রো রিয়েলিটিতেও এপ্লাই যোগ্য হয় তাহলে শুধুমাত্র মনের অভিপ্রায় দ্বারা প্রকৃতি ও বস্তু জগতে পরিবর্তন ঘটিয়ে উপকার বা অপকার করা সম্ভব![১০]
আশাকরি এখন বিষয়টা খুব বেশি কঠিন মনে হবেনা।এবার চলুন আবার ইতিহাসে ফেরা যাক।

নিলসবোর,ওয়ার্নার হাইজেনবার্গদের পাশে আরেকজন মহান(অপ)বিজ্ঞানী ছিলেন যার হাত ধরে কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরিপূর্ণতা পায়। তিনি হলেন, আরউইন শ্রোডিঞ্জার। Erwin Schrödinger একজন অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান ১৯৩৩ সালে। ১৯২০ সালে শ্রোডিঞ্জার তার বিখ্যাত ওয়েভ ইক্যুয়েশন নিয়ে আসেন যা কিভাবে কোয়ান্টাম মেক্যানিক্যাল ওয়েভ ফাংশনের সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় তা প্রেডিক্ট করে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে ওয়েভ ফাংশন ব্যবহৃত হয় কিভাবে পার্টিকেলগুলো সময়ের সাথে সাথে সঞ্চালিত এবং মিথস্ক্রিয়া করে তা নির্ধারনের জন্য।কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনক এই মহান (অপ) বিজ্ঞানী ১৯২৬ সালে আইনস্টাইন যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি গ্রহন করেছেন, সেখানে ফিজিক্স প্রফেসর হিসেবে শিক্ষাকতা করতেন।

 শ্রোডিঞ্জারই প্রথম ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম বলেন যে, দুইটি পার্টিকেল এন্টেঙ্গেল্ড(entanglement Theory)  অবস্থায় সহাবস্থানে থাকবার মত আচরন করতে পারে, যদিও উভয় বস্তু কোটিকোটি আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থান করে।কোন এক বস্তুর উপর করা কোনধরনের অবজারভেশন বা মেজারমেন্টের কারনে অপর বস্তুর তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন ঘটে, যদিও বস্তুদ্বয় কোটিকোটি আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত। এটাকে Non locality'ও বলে। হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স মেকানিক্সের বিকল্প হিসেবে আনা ওয়েভ মেকানিক্স বা ওয়েভ ইক্যুয়েশনের উৎস হচ্ছে বেদান্তশাস্ত্র!শ্রোডিঞ্জার অন্যান্য বিজ্ঞানীদের অনুরূপ বেদান্ত শাস্ত্রের অনুসারী। শ্রোডিঞ্জার সরাসরি অদ্বৈত বেদান্তবাদের অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে বিজ্ঞানের থিওরিতে রূপান্তর করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পরিপূর্ণতা দান করেন। এ ব্যপারে তিনি বলেনঃ"আমার অধিকাংশ ধারনা চিন্তাধারা এবং তত্ত্বগুলো বেদান্তবাদ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত।"


বেদান্তশাস্ত্রের ব্রহ্মচৈতন্য, একক অস্তিত্বের ধারনাকে তিনি বিচিত্র (অপ)বৈজ্ঞানিক থিওরি/ফর্মুলা/গানিতিক যুক্তিতে ও নতুন শব্দে প্রকাশ করেন। অর্থাৎ সরাসরি বৈদিক অকাল্ট ফিলসফিকে বিজ্ঞানের মোড়কে প্রবেশ করিয়ে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা। শ্রোডিঞ্জার এক পর্যায়ে নিজের ধর্মকে ত্যাগ করে বেদান্তবাদী হিন্দু হয়ে যান। বৈদিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সুগভীর বিশ্বাস ও বেদের প্রতি ঋণের ব্যপারে সে ১৯২৫ সালে কোয়ান্টাম থিওরি তৈরির আগে একটা প্রবন্ধে প্রকাশ করে। তিনি বলেনঃ "আপনার এই জীবনটি কোন পূর্নাঙ্গ অস্তিত্ব না কিন্তু কিছু অর্থে অবশ্য 'পূর্নাঙ্গ'; শুধুমাত্র এই পূর্নাঙ্গতা এরূপভাবে সংগঠিত নয় যে এটাকে মাত্র এক পলকেই জরিপ(দেখে) করে নেওয়া যায়। এটা তাই, যা আমরা ব্রাহ্মনদের প্রকাশিত বিশুদ্ধ রহস্যঘন ফর্মুলায় দ্বারা জানি, যেটা খুব সহজ সরল এবং স্পষ্টঃ tat tvam asi, (this is you) অথবা অন্য শব্দেঃ 'আমি পূর্বে এবং পশ্চিমে। আমি উপর এবং নিচ, আমিই গোটা বিশ্বজগৎ( ब्रह्मैवेदममृतं पुरस्तात् ब्रह्म पश्चात् ब्रह्म उत्तरतो दक्षिणतश्चोत्तरेण। अधश्चोर्ध्वं च प्रसृतं ब्रह्मैवेदं विश्वमिदं वरिष्ठम् 2.2.11)।"

ভারতে বিদ্যমান ব্যবিলনীয়ান মিস্টিসিজম পাশ্চাত্যে প্রবেশের জন্য তিনি চিরঋনী। তিনি বলেন,"পূর্ব থেকে পশ্চিমে রক্তের(বৈদিক শাস্ত্রকে বোঝাতে) সঞ্চালন পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানকে আধ্যাত্মিক রক্তস্বল্পতা থেকে বাচানোর জন্য।"

শ্রোডিঞ্জার তার বই "What is Life" এ বৈদিক ধারনাকে ব্যবহার করেছে, যেটা পরবর্তীতে বায়োলজিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তার বায়োগ্রাফার Walter Moore এর মতে, শ্রোডিঞ্জারের গবেষণার সাথে তার বেদান্তবাদি ধারনার সুস্পষ্ট নিরবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা বিদ্যমান। তিনি বলেনঃ
"বেদান্তবাদ ও নস্টিসজমের বিশ্বাস ব্যবস্থা একজন মেধাবী শিশুসম গণিতজ্ঞ এবং পদার্থবিদের নিকট আকর্ষণীয়, যেটা বুদ্ধিবৃত্তিক অহংবোধের জন্য হয়ে থাকে। এ ব্যপারটি শ্রোডিঞ্জারের বেদান্তবাদে বিশ্বাসের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে পারে। সেগুলো তার নিজ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসের আসনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে পিছপা হয় না। এটা বলা খুব সহজ যে, তার ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের সাথে থিওরেটিকাল ফিজিক্সের আকস্মিক আবিষ্কারের সরাসরি সংযোগ আছে, সেই সাথে বেদের unity ও continuity, ওয়েভ মেকানিক্সের unity ও continuity তে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯২৫ সালের দিকে পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বকে পারস্পারিক  মিথস্ক্রিয়াকারী বিভাজনযোগ্য কণার সমন্বয়ে গঠিত একটা বড় মেশিন হিসেবে দেখা হত, পরবর্তী বছরগুলোতে শ্রোডিঞ্জার,  হাইজেনবার্গ এবং তাদের অনুসারীরা মিলে এমন একটি বিশ্বব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করলো, যাতে অবিভাজ্য সম্ভাব্য তরঙ্গের পরিধিকে আরোপ করা হয়। এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্নভাবে বৈদিক চিন্তাধারার 'সব কিছুই এক(all is one)' এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন। শ্রোডিঞ্জার সত্যের সন্ধানে পড়াশুনা করে বেদান্তবাদী হিন্দু হয়ে যান। শ্রোডিঞ্জার হিন্দু শাস্ত্রগুলো তার বিছানার পাশে রাখতেন। তিনি পড়তেন বেদ,যোগ এবং শঙ্খ দর্শন এবং তিনি সেসবগুলোকে নিজের ভাষায় কাজে(কোয়ান্টাম ফিজিক্সে) লাগান,এবং অবশেষে তিনি এতে বিশ্বাস স্থাপন করেন। উপনিষদ এবং ভগবতগীতা তার প্রিয় শাস্ত্র। তার উপনিষদিক পদ্ধতি বেশ চিত্তাকর্ষক এবং ধারাবাহিকঃ আত্ম(ব্যক্তি নিজে) এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সবকিছু মিলে এক। তিনি প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসকে (ইহুদি,খ্রিষ্ট, ইসলাম) ত্যাগ করেন। যেহেতু তিনি রূপক দ্বারা ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ করতে পছন্দ করতেন তাই  এই ধর্মগুলোকে তিনি  কোন যুক্তিতর্ক কিংবা বিদ্বেষপ্রবণ হয়ে ত্যাগ করেন নি। বরং শুধুমাত্র সেগুলোকে "সাদামাটা" বলে বর্জন করেছেন।"
(Schrödinger: Life and Thought (Meine Weltansicht), p. 173)[৫]

আরউইন শ্রোডিঞ্জার অদ্বৈত বেদান্তবাদের অস্তিত্বগত অদ্বৈত মহাচৈতন্যের বিশ্বাসকে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় যুক্ত করেন। চেতনাকে মৌলিক সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি উপনিষদের তত্ত্বকে সমাধান হিসেবে উল্লেখ করে বলেনঃ"এমন কোন ধরনের ফ্রেইমওয়ার্ক নেই যার মধ্যে আমরা চেতনাকে একাধিক অবস্থায় পেতে পারি; এটা এমন কিছু যা আমরা প্রত্যেকের ক্ষনকালীন একাধিকতার (temporal plurality) দরুন মনে করি, কিন্তু এটা মিথ্যা ধারনা...এই সাংঘর্ষিকতার একমাত্র সমাধান আমাদের কাছে রয়েছে, যেটায় প্রাচীন উপনিষদের প্রাচীন জ্ঞান নিহিত।"..."কোয়ান্টাম মেকানিক্স এভাবেই মৌলিক অদ্বৈত অস্তিত্বের ধারনাকে উদঘাটন করেছে।"
 (Mein Leben, Meine Weltansicht [My Life, My World View] (1961), Chapter 4)

শ্রোডিঞ্জার মহাবিশ্বের অস্তিত্বগত ধারনার ব্যপারে বেদান্তবাদ এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাদৃশ্যতা ও সামঞ্জস্যতা উল্লেখ করে বলেন,"বেদান্তশাস্ত্রের একতা(unity) ও ধারাবাহিকতা(continuity) ওয়েভ মেকানিক্সের একতা (unity) ও ধারাবাহিকতায়(continuity) প্রতিফলিত হয়। এটা সম্পূর্নভাবে বেদান্তবাদের 'সবকিছুই এক অস্তিত্ব'(ওয়াহদাতুল উজুদ) ধারনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন।"



অন্যত্র বলেনঃ"Multiplicity শুধুই বাহ্যত। এটা উপনিষদের মতবাদ। এবং শুধু উপনিষদেরই না। নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের সাথে মিশে(সুফিরা যাকে ফানাফিল্লাহ বলে) যাবার রহস্যময় অভিজ্ঞতা এই দৃষ্টিভঙ্গি বা বিশ্বাসের দিকে চালিত করে,যদিনা পাশ্চাত্যে শক্তিশালী কোন অন্ধবিশ্বাস(খ্রিস্টান বা ইসলামকে বুঝিয়েছেন) বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমন কোন ধরনের ফ্রেইমওয়ার্ক নেই যার মধ্যে আমরা চেতনাকে একাধিক অবস্থায় পেতে পারি; এটা এমন কিছু যা আমরা প্রত্যেকের ক্ষনকালীন একাধিকতার (temporal plurality) দরুন মনে করি, কিন্তু এটা মিথ্যা ধারনা....এই সাংঘর্ষিকতার একমাত্র সমাধান আমাদের কাছে রয়েছে, যেটায় প্রাচীন উপনিষদের প্রাচীন জ্ঞান নিহিত।
 Erwin Schrödinger
(Amaury de Riencourt, The Eye of Shiva: Eastern Mysticism and Science, p.78).

উপরে শ্রোডিঞ্জার যে মাল্টিপ্লিসিটি/প্লুরালিটির কথা বলেছেন,এর দ্বারা বুঝিয়েছেন মায়াবাদকে। তিনি বেদান্তবাদ ঔপনিষদিক তত্ত্বের সাথে একমত হয়ে সমস্ত অস্তিত্বকে একক(আল আকিদাতুল ওয়াহদাতুল উজুদ) বলে প্রচার করেন। তিনি আব্রাহামিক একত্ববাদের ধর্মগুলোকে বৈপরীত্যপূর্ন এবং তাদের সর্বেশ্ববাদি চিন্তাধারার শত্রু বা বাধাদানকারী মনে করতেন। তিনি মনে করতেন সমস্ত মহাবিশ্ব এক ঐন্দ্রজালিক চেতনার বুননে তৈরি। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভাষায় সবকিছুই non local। তিনি মাল্টিপ্লিসিটি বা প্লুরালিটি কে ক্ষনস্থায়ী এবং মিথ্যা বলেছেন। এর মানে জাগতিক স্বতন্ত্র্য অস্তিত্বের ধারনাটি অসত্য। অর্থাৎ প্রতিটা মানুষ,বস্তু, পানি,গাছপালা প্রভৃতি সবকিছু একসাথে মিশে আছে। সমস্ত বস্তুর সাবএ্যাটমিক পর্যায়ে আছে একক চেতনা। আমরা যে ফাকা ব শূন্যস্থান(স্পেস) দেখি এটাও একক সত্তার অস্তিত্ব দ্বারা পূর্ণ। সবকিছুই ব্রহ্ম চেতনা(কনসাসনেস)।তিনি বলেনঃ " বেদ শিক্ষা দেয় যে চেতনা (consciousness) হচ্ছে একক বা একটি, যাই ঘটছে তা সার্বজনীন মহাচৈতন্যে(universal consciousness) ঘটছে এবং সেখানে অস্তিত্বের একাধিকতা বলে কিছু নেই। "
Erwin Schrödinger
[Mein Weltansicht – My World View,1960.
chapter 5]

অন্যত্র বলেনঃ"মহাবিশ্বে মনের সংখ্যা এক। প্রকৃতপক্ষে, চেতনা হচ্ছে এক একতা যার উপর সমস্ত সত্ত্বা নির্ভর করে আছে।"


"চেতনাকে কোন বস্তুগত শব্দ দ্বারা বিবেচনা করা যায় না। কারন চেতনা বা কনসাসনেস একদমই মৌলিক।এটাকে অন্য কোন কিছু দ্বারা হিসেব করা যায়না।"
(Schroedinger, Erwin. 1984. “General Scientific and Popular Papers,” in Collected Papers, Vol. 4. Vienna: Austrian Academy of Sciences. Friedr. Vieweg & Sohn, Braunschweig/Wiesbaden. p. 334.

শ্রোডিঞ্জারের determinism এবং free will এর উপরে লেখা বিখ্যাত প্রবন্ধে, তিনি চেতনার এককত্বের ব্যপারে স্পষ্টভাবে তার বিশ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই "অন্তর্দৃষ্টি নতুন নয়.... উপনিষদের মাধ্যমে বহু আগে থেকে আত্মা=ব্রহ্ম এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এটা ভারতীয় চিন্তা হিসেবে বিবেচিত,যেটা ধর্মনিন্দার উর্ধে বিশ্বের ঘটমান সবকিছুর সারাংশের গভীর অন্তর্দৃষ্টিকে তুলে ধরে। বেদান্তবাদের সমস্ত পণ্ডিতদের একমাত্র চেষ্টা ছিল, ঠোটের দ্বারা উচ্চারণ করা শেখার পর ওই মহান চিন্তা দ্বারা মনকে আবিষ্ট করা।"


ওয়াল্টার মূর অনুযায়ী, A Life of Erwin Schrödinger নামের জীবনী লেখনীর ১২৫ নং পৃষ্ঠায় এসেছে," মানব উন্নয়নের ধাপগুলো হচ্ছে, অর্জন(অর্থ),জ্ঞান(ধর্ম),ক্ষমতা(কাম),সত্ত্বা(মোক্ষ) এর প্রচেষ্টা...নির্বান হচ্ছে আশীর্বাদপুষ্ট জ্ঞানের একটা বিশুদ্ধ অবস্থা। এখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বলে কিছু নেই। আমিত্ব বা এর দ্বারা বিভাজ্যতা হচ্ছে মায়া। একজন মানুষের লক্ষ্য তার কর্মকে রক্ষা করা এবং এর উন্নয়ন ঘটানো- যখন মানুষ মারা যায়, তার কর্ম বেচে থাকে এবং আরেকটা ব্যক্তি অর্জনের সূচনা ঘটায়।"

এ উক্তিতে বোঝা যায় যে শ্রোডিঞ্জার পুনর্জন্মবাদেও বিশ্বাসী ছিল।তিনি তার কুকুরকে "আত্মা" নামে বলে ডাকতেন।শ্রোডিঞ্জারের What is Life? (1944) বইয়ে বৈদিক চিন্তাধারা ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়েছে।সেটা খুব দ্রুতই বিখ্যাত হয়ে যায়। কেউ কেউ ভারতীয় অকাল্ট বিশ্বাসে বেশি প্রভাব থাকার জন্য সমালোচনা করে। DNA কোডের সহ-আবিষ্কারক ফ্রান্সিস ক্রিক এই বইটিকে তার বৈপ্লবিক আবিষ্কারে অন্তদৃষ্টি তৈরিতে অবদান রেখেছে বলে দাবি করেন। শ্রোডিঞ্জার ইউরোপের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে ছিলেন। বৈদিক অকাল্ট শাস্ত্র থেকে অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় রূপায়নের দ্বারা যুগান্তকারী অবদান রাখার জন্য ১৯৩৩ সালে তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৬১ সালে তিনি মারা যান।

শ্রোডিঞ্জারের কাছে (অপ)বিজ্ঞান চিরঋনী হয়ে থাকবে বেদান্তবাদকে ওয়েভমেকানিক্স বা কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় রূপান্তর করবার জন্য। পদার্থবিদদের ম্যাটার ছেড়ে মাইন্ডের দিকে ফিরে যাওয়ার ব্যপারটি নতুন কিছু নয় বরং এটা হাজার বছরের পুরোনো অকাল্ট দর্শন।সেই ব্যবিলনীয়া থেকে গ্রীস, ভারত এবং পরবর্তীতে প্রাচ্যের সীমানা পেরিয়ে পাশ্চাত্য। কখনো কাব্বালাহ কখনো বা প্লেটনিক আইডিয়ালিজম, কখনো বা বেদান্ত-উপনিষদ। এরা শুধুমাত্র বেদ-উপনিষদকেই বিজ্ঞানে রূপান্তর করেনি বরং এর পাশাপাশি ব্যবিলনীয়ান - পিথাগোরিয়ান - প্লেটনিক মিস্টিসিজমকে বিজ্ঞান বানিয়ে ফেলেছে অর্থাৎ যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক কুফরি আকিদাই হচ্ছে আজকের সায়েন্স। শ্রোডিঞ্জারের পাশাপাশি আরেকজন অদ্বৈতবাদী নোবেলবিজয়ী কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট হলেন ইউজিন উইগনার। তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সে থিওরি অব সিমেট্রির ভিত্তি স্থাপন করেন। যার জন্য ১৯৬৩ সালে তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। তিনি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় মহাচৈতন্যের অস্তিত্বের গুরুত্বের ব্যপারে বলতে গিয়ে বলেনঃ "যখন ফিজিক্যাল থিওরির জগতকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের ঘটনা পর্যন্ত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দ্বারা বিস্তৃত করা হলো,তখন আবারো চৈতন্যের ধারনা সামনে এসে হাজির হলো। কনসাসনেস বা চেতনার ধারনাকে বাদ দিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কোন সুদৃঢ় নীতি ফর্মুলেট করা সম্ভব নয়।"
 Eugene Wigner (1902 -1995) from his collection of essays “Symmetries and Reflections – Scientific Essays”


১৯৬১ সালে ইউজিন উইগ্নার Remarks on the mind–body question নামের রিসার্চ পেপারে কোয়ান্টাম মেকানিকসে একজন সচেতন অবজারভারের মৌলিক ভূমিকা পালন করার ব্যপারে বলেন। অর্থাৎ ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সের জন্য প্রয়োজন কনসাস বা সচেতন অবজারভার। এর ব্যাখ্যা হলো, মহাবিশ্বের একক চেতনার অস্তিত্বের মধ্যে কোন বস্তুরই আলাদা ঠিকানা নেই। সবই নন লোকাল এনার্জেটিক ফিল্ড। pure abstract consciousness। আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতের মরীচিকায় এবং এর ভিত্তিমূলের যেকোন পরিবর্তনের জন্য দায়ী সচেতন অবজারভার বা পর্যবেক্ষক। অবজারভারই তার ভাগ্য ও পরিবেশের নিয়ত্তা। এ ব্যপারে সামনে আরো বিস্তারিত উল্লেখ করব।

পদার্থবিদ ইউজিন উইগনার মহাচৈতন্যের ব্যপারে জোর দিয়ে বলেন,"আমাদের ধারনা যেভাবেই ভবিষ্যতে ডেভেলপ করা হোক না কেন, এটা সবসময়ই উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে যে বাহ্যিক বস্তুজগতের ব্যপারে গবেষণা এই বৈজ্ঞানিক উপসংহারে পৌছায় যে চেতনা (consciousness) হচ্ছে সর্বশেষ সার্বজনীন বাস্তবতা।"
Eugene Wigner – (Remarks on the Mind-Body Question, Eugene Wigner, in Wheeler and Zurek, p.169) 1961



আইনস্টাইনের আবিষ্কার কর্তা এবং father of quantum mechanics খ্যাত নোবেলবিজয়ী(১৯১৮) মহান পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ছিলেন মহাচৈতন্যবাদী অদ্বৈতবাদী মিস্টিক।তিনি বলেনঃ "আমি চেতনাকে(consciousness) মৌলিক হিসেবে ধরি। আমি বিশ্বাস করি পদার্থ বা বস্তু চেতনা থেকে উৎসারিত। আমরা চেতনার পেছনে যেতে পারিনা। সমস্ত কিছু যা আমরা বলি,সমস্ত কিছু যাকে আমরা অস্তিত্বশীল বলি ,সবই চেতনা হিসেবে(ব্রহ্মচৈতন্য) মেনে বলি।"


অদ্বৈত অস্তিত্ব(Monism: সর্বেশ্বরবাদ) এবং হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রের মেন্টালিজমের আকিদাকে জোর দিয়ে বলেনঃ"(আমি)একজনলোক যে তার জীবনে বস্তু সংক্রান্ত পরিষ্কার বিজ্ঞানের প্রতি ঝুঁকে ছিল, কেউই আমাকে স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে মনে করবে না। আমি আমার এটমসংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণার ফলাফলের ব্যপারে কিছু বলতে পারিঃ কোন বস্তু বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। সমস্ত বস্তুর অস্তিত্বের উৎস বা যা থেকে জাগরিত হয় এবং অস্তিত্বে আসে, শুধুমাত্র একটি শক্তি বা ফোর্সের জন্য, যেটি সবচেয়ে ক্ষুদ্র সোলার সিস্টেম তথা পার্টিকেলের এটমিক কম্পন এবং সেগুলোকে একত্রে ধরে রাখে। আমরা অবশ্যই ধারনা করি, এই ফোর্স বা শক্তির পেছনে একটি সচেতন এবং বুদ্ধিদীপ্ত মনকে। এই মন(চেতনা) হচ্ছে সমগ্র বস্তুজগতের গর্ভ।"
– Das Wesen der Materie [The Nature of Matter], speech at Florence, Italy (1944) (from Archiv zur Geschichte der Max-Planck-Gesellschaft, Abt. Va, Rep. 11 Planck, Nr. 1797)
– Max Planck (1858–1947), the originator of quantum theory, The Observer, London, January 25, 1931
Das Wesen der Materie [ The Nature of Matter], a 1944 speech in Florence, Italy, Archiv zur Geschichte der Max‑Planck‑Gesellschaft, Abt. Va, Rep. 11 Planck, Nr. 1797; the German original is as quoted in The Spontaneous Healing of Belief (2008) by Gregg Braden, p. 212. "Geist", here translated as "mind" can also be translated as "spirit".




আসলে এদের প্রত্যেকেই ব্যাবিলনীয় অকাল্ট (যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক) ওয়ার্ল্ডভিউ এর প্রচারকারী। প্রত্যেকেই কাব্বালিস্ট/আইডিয়ালিস্ট। হাজার হাজার বছর আগের যাদুবিদ্যার মেকানিক্স এবং যাদুশাস্ত্র নির্ভর সৃষ্টিতত্ত্বকে শিক্ষা দিচ্ছে যা ঈমানের বিপরীত মেরুতে অবস্থিত। এমনকি শুধু তাই নয়, এরা সরাসরি বাস্তবজীবনে যাদু চর্চার উপায়ও শিক্ষা দিচ্ছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কই একাজটি করেছে। তিনি বলেনঃ"এই মহাবিশ্ব,যার মধ্যে আমরা কাজ করি এটি একটি হলোগ্রাফিক ইনফরমেশনাল স্ট্রাকচার, যার মধ্যে আমরা আমাদের চেতনাকে ব্যবহার করে প্রবেশ এবং কাজ করি। প্রত্যেক ব্যক্তি এক একটি মাইক্রোভার্সে বাস করে,যেটাকে শ্রদ্ধেয় এন্টন উইলসন বলেছেন "রিয়ালিটি টানেল" - পরস্পরের সাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হয় শেয়ার্ড প্রোগ্রামের জন্য। মাল্টিভার্সের মধ্যে প্রোগ্রাম গুলোর অবস্থান এন্টেঙ্গেল্ড ওয়েভ ফর্মে।এটা হচ্ছে আমাদের মন যা এটাকে স্থান কাল ও বস্তুতে সাজায়। আপনি আপনার (মানসিক)প্রোগ্রামকে নতুনভাবে সাজান তবেই ভিন্ন ধরনের রিয়ালিটিতে নিজেকে খুজে পাবেন।"

যারা ওয়াচস্কি ব্রাদার্সের তৈরি বৌদ্ধ দর্শন ভিত্তিক সায়েন্সফিকশন ফিল্মসিরিজ "দ্য ম্যাট্রিক্স" দেখেছেন তাদের জন্য প্ল্যাঙ্ক সাহেবের কথাগুলোর মর্মোদ্ধার করতে সহজ হবে। হলিউড ভিত্তিহীন কিছু বানিয়ে টাকা নষ্ট করে নি। বরং এ ফিল্মের পিছনে প্রতিষ্ঠিত কুফরি অপবিজ্ঞানের শক্ত ব্যাকআপ আছে। এখানে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সরাসরি মায়াবাদ ভিত্তিক হলোগ্রাফিক সিমুলেটেড রিয়ালিটির কথা বলছেন। শেষ বাক্যে যাদুবিদ্যার একটি শাখাকে বাস্তবে প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যপারে সামনে আলোচনা আসছে। যাইহোক, আবারো ইতিহাসে ফিরতে হয়।



-Validation of Indo-Babylonian Occult Philosophy-




তৎকালীন বস্তুবাদী পদার্থবিজ্ঞানীগন এ তত্ত্বগুলোকে কোনভাবেই মানতে পারছিল না যদিও সেগুলো গাণিতিক দিক দিয়ে নির্ভুল। আইনস্টাইন এ ব্যপারে মাথাঘামাতে শুরু করলেন। ১৯২৭ সালে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, ইরউইন শ্রোডিঞ্জার, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, আইনস্টাইন, ম্যাডাম কুরীসহ পৃথিবীর বাঘা বাঘা পদার্থবিদদের নিয়ে একটা বড় কনফারেন্স এর আয়োজন করা হয়, বিদ্যমান পদার্থবিজ্ঞানে ওয়েভ ও ম্যাট্রিক্স মেকানিক্সের আবির্ভাবে হওয়া সমস্যার জন্য। নিচের ছবিতে দেখানো পদার্থবিদদের কনফারেন্সে যোগ দেওয়া ফিজিসিস্টদের ২৯ জনের মধ্যে ১৭ জনই নোবেল বিজয়ী।


বৈঠকের শুরুতেই নিলস বোর ও আইনস্টাইন বাস্তবতার (রিয়ালিটি) স্বরূপ প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা হয়, যেটা নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের যত তর্ক। বোরের অবস্থান ছিল কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার সপক্ষে, যেটা তার মতে  ভবিষ্যতের পথ দেখাবে। আইনস্টাইন কোনভাবেই একমত হতে পারছিলেন না। তার মতে কোয়ান্টাম মেকানিকস কখনোই মহাবিশ্বের শুদ্ধ বর্ননা হতে পারেনা। তিনি এত বিরোধিতা করেন যে ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি নামের নতুন এক থিওরি নিয়ে কাজ শুরু করেন যেটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রয়োজনীয়তা দূর করবে। ১৯৩০ সালেও আইনস্টাইন কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে রিজেক্ট করতে থাকেন এবং ম্যাটেরিয়ালিজমের চেয়ে নিন্মমানের ব্যাখ্যা হিসেবে দেখতে থাকেন। ১৯৩৫ সালে আইনস্টাইন, পোডলস্কি, রোজেন মিলে একটি পেপার লিখেন যে, কোয়ান্টাম থিওরি এজন্যই শুদ্ধ হতে পারে না, কারন কোন বস্তু দূরবর্তী বস্তুর মধ্যে তৎক্ষণাৎ মিথস্ক্রিয়া তাদের মতে সম্ভব না। অর্থাৎ Quantum Entanglement কে অস্বীকার করেন। আইনস্টাইন পার্টিকেলের NonLocal আচরণকে "spooky action at a distance" বলে হাস্যকর ভ্রান্ত থিওরি হিসেবে উপস্থাপন করেন।কিছুটা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ফিজিক্সে বিশ্বাসী হবার জন্য ১৯৩৫ সালে আইনস্টাইন, প্রোডলস্কি, রোজেন(EPR) কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে অপূর্ণাঙ্গ ফর্মুলেশন বলে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। তারাই প্রথম কোয়ান্টাম মেকানিক্সের "নন লোকালিটি"র ব্যপারে অস্বীকৃতি দিয়ে লেখেন, যার মানে এটা যেকোন বড় দূরত্বের পরেও একইসাথে সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে তৎক্ষণাৎ একশান বা প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিকে বলে। তারা এটাকে মানতে পারতেন না কারন তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী কোন কিছুই আলোর গতির আগে ছুটতে পারেনা। যখন The EPR paper প্রকাশ হলো সেটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যাদুকরী তাৎপর্যকে সত্যায়ন করে বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিলো। আসলে তারা পুরোপুরি  রিডাকশনিস্ট ছিলেন বললে ভুল হবে। তারাও ভারতীয় দর্শনের প্রতি দুর্বল ছিলেন। পার্থক্য হচ্ছে একপক্ষ সেসব অকাল্ট শাস্ত্রকে আদর্শ কিতাব বলে স্বীকৃতি দিত অপর পক্ষ তন্ত্র মন্ত্রে ভরা অকাল্ট টেক্সটগুলোকে(যাদুশাস্ত্র) সরাসরি বিজ্ঞান বানিয়ে ফেলেছে, যেটা নিলসবোর, শ্রোডিঞ্জারদের করতে দেখেছেন।আইনস্টাইন নিয়মিত ভগবত গীতা পাঠ করতেন।  তিনি বলেনঃ"যখন আমি ভগবতগীতা পাঠ করি এবং ভাবি কিভাবে স্রষ্টা এই মহাবিশ্বকে বানিয়েছেন,সমস্ত বিষয়গুলোকে খুব বাহুল্যপূর্ণ মনে হয়....আমি মনে করি কস্মিক রিলিজিয়াস(সর্বেশ্বরবাদী) অনুভূতি বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মহান প্রেরণা"।
যাইহোক, আবারো অপবিজ্ঞানের ইতিহাসে ফিরি...।

 ১৯৪০ সালের দিকেও আইনস্টাইন নিলসবোরের সাথে সবসময় তর্কে জেতার চেষ্টা করতেন এবং ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরিকে দ্বার করিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিকসকে ইনভ্যালিড সাব্যস্ত করতে চাইতেন।
প্রায় ২৮ বছর ধরে আইনস্টাইন ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি দ্বারা বস্তুবাদী চিন্তার দ্বারা সবকিছুর সমাধান করতে চাইতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেন নি। তিনি ১৯৫৫ সালে মারা যান। ১৯৬২ সালে নিলস বোর মৃত্যুবরণ করেন। সার্ন লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার ল্যাবের পদার্থবিদ জন বেল ১৯৬৪ সালে EPR paradox এর সমাধান করেন। তিনিও গীতা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। বিস্তারিত না গিয়ে এর মূল প্রশ্নগুলো ছিলঃ কিভাবে আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত একটা একটি সাবএটমিক কণা অন্য সাবএ্যাটোমিক কণার বিপরীতমুখী অবস্থার ব্যপারে জানতে পেরে সে অনুযায়ী কাজ করে? তাদের মধ্যে কি কোন সাধারন তথ্য বিদ্যমান থাকে যখন ওই কণাগুলো তৈরি হয়? কিভাবে তারা পরস্পরের ব্যপারে সচেতন থাকে এবং অসম্ভব বড় দূরত্বের পরেও তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেখায়? এটাকে এন্টেঙ্গেলমেন্টের নীতি বলে এবং আইনস্টাইনের বিখ্যাত সন্দেহ:“spooky action at a distance”। জন বেল “spooky action” এর অস্তিত্বের সম্ভাব্যতাকে হাতেকলমে দেখিয়েছেন এবং কিছু শর্ত জুড়েছেন কোয়ান্টাম ও ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিক্সের প্যারাডক্স নিষ্পন্ন করতে।যেহেতু ব্রহ্মচেতনাকে বাদ দিয়ে এন্টেঙ্গেলনেন্ট এর উৎসকে ব্যাখ্যা না করা যায়না সেহেতু, জন বেল সৃষ্টি ও ধ্বংসের মহাজাগতিক নৃত্যের চালনাকারী পর্যায়ে চেতনার(কনসাসনেসের) অস্তিত্বের সম্ভাব্যতার কথা স্বীকার করেন। ফ্রেঞ্চ পদার্থবিদ Bernard D'Espagnat কোয়ান্টাম বাস্তবতার ব্যপারে ১৯৭৯ সালে বলেন, " বাহ্যিক, স্থিতিশীল,বস্তুগত পৃথিবীর গোটা ধারনা এখন শুধু কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাথেই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়নি বরং কিছু পরীক্ষণের সাথে...অন্যভাবে বললে, সমস্ত বস্তু একত্রিতভাবে অবিভাজ্য একক(অদ্বৈতবাদ/ওয়াহদাতুল উজুদ)।"[৬]

অতএব, ১৯৬৪ সালে ফিজিসিস্ট জনবেলের বিখ্যাত বেলস থিওরামকে প্রকাশের মাধ্যমে গাণিতিক ও বাস্তবিক পরীক্ষণের দ্বারা যাচাই করে প্রমাণ করেন নিলস বোর এবং আইনস্টাইন এই দুই পক্ষের মধ্যে কার অবস্থান শুদ্ধ ছিল। এই ধরনের পরীক্ষণের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন ছিল।১৮ বছর লেগেছে সব যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করতে এবং ১৯৮২ এ্যালেন সব যন্ত্রপাতি একত্রিত করেন এবং পরীক্ষণ শুরু করেন। পরীক্ষণের ফলাফল ছিল NonLocality-ই আসলে শুদ্ধ। অর্থাৎ নিলস বোর এবং তার সতীর্থ সাগরেদদের অবস্থান সঠিক। কোয়ান্টাম মেকানিক্সই শুদ্ধ।ম্যাটেরিয়ালিস্টিক মেকানিক্স শুদ্ধ নয়।

কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট বিশ্বজগতের মৌলিক একটি আচরণ, যেটা শ্রোডিঞ্জার প্রস্তাব করেছিলেন এবং পাশে নিলসবোর ছিলেন। এটা প্রমাণ করে যে, এই মহাবিশ্ব একটি virtual construct।  রিয়ালিটি হচ্ছে ইল্যুশন,এক ইউনিভার্সাল মাইন্ড। সবকিছু মায়া। বস্তুজগতের অস্তিত্ব নেই। সলিড বস্তুর মূলত অস্তিত্ব নেই। বস্তুর মায়াময় অসত্য অস্তিত্ব আসে চেতনা এবং সম্ভাব্য তরঙ্গের মিথস্ক্রিয়ার দরুন। এ বিষয়টা অনেকবার প্রমান করে দেখানো হয় Double slit experiment এর দ্বারা।


১৯৭৮ আবারো নতুনভাবে ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্টটি করেন। তিনি নাম দেন, ডিলেইড চয়েজ এক্সপেরিমেন্ট।এই পরীক্ষাতেও কোয়ান্টাম মেকানিকস উত্তীর্ণ হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যখনই অবজারভার দেখা শুরু করে ওয়েভ সাথে সাথে বদলে পার্টিকেলে রূপান্তরিত হয়। এতে আবারো প্রমাণ হয় কনসাস অবজারভারই নির্ধারণ করে বস্তুর আচরণ। ১৯৯৯ সালে মার্লিন স্ক্যালি সর্বপ্রথম The delayed-choice quantum eraser experiment নামে আরেকটি জটিলতর পরীক্ষা করেন।


এতেও প্রমাণ হয় অদ্বৈত বেদান্তবাদের নন ডুয়ালিস্টিক আকিদা। অর্থাৎ বিজ্ঞানীগন প্রমাণ করলেন এক অস্তিত্বের(মনিজম) বিশ্বাসই(ওয়াহদাতুল উজুদ) সঠিক। তারা এ ব্যপারে একমত যে সমগ্র বস্তু এবং সৃষ্টিজগত মহাচৈতন্যের মায়া বা কল্পের উপর দাড়িয়ে আছে। ব্রহ্মাণ্ডে চেতনাই একক অস্তিত্ব, একক সত্তা। বস্তুগত দৃষ্টিভঙ্গিতে আলাদা বা স্বাতন্ত্র্যবোধের ধারনাটি নিছক মায়াজাল, সমস্ত বস্তু একে অপরের সাথে সংযুক্ত ইন্দ্রের জাল দ্বারা। ব্রহ্মচৈতন্যের মধ্যস্থিত সচেতন চেতনা দ্বারা বাহ্যিক বস্তুর উপর প্রভাব বিস্তার সম্ভব, সমগ্র বস্তু বা পদার্থের অনু পরমানুর মূলে রয়েছে একটি সচেতন মন যেটাকে বেদান্তবাদী দৃষ্টিকোণে ব্রহ্মচেতনা বলা হয়। এই মনই সমস্ত বস্তুর ম্যাট্রিক্স। তাই সচেতন কোন মানব চেতনা তার আশপাশের বস্তু বা ব্যক্তির উপর তার কল্পনা-চিন্তা-অভিপ্রায় দ্বারা পরিবর্তন করতে সক্ষম। এর দ্বারা প্রত্যেকেই আত্মদৈবিকতাকে(self divinity) খুজে পায়। অর্থাৎ সর্বেশ্বরবাদী বিশ্বাসের সবকিছুই যে সৃষ্টিকর্তা, সেটাকে উপলব্ধি করতে পারে। অর্থাৎ আবারো সেই প্রাচীন প্লেটনিক আইডিয়ালিজমে প্রত্যাবর্তন। সেই বাবেল শহরের শয়তান ও যাদুকরদের কুফরি আকিদার সত্যায়ন।



শ্রোডিঞ্জারের মত পদার্থবিদগনের যেহেতু সংস্কৃত ভাষার উপর সরাসরি দখল ছিল না, তারা বিভিন্ন অনুবাদের উপর নির্ভর করতেন। তারা উপনিষদের অনুবাদ পাঠ করতেন। ব্যতিক্রম ছিলেন রবার্ট ওপেনহেইমার। তিনি এমন একজন পদার্থবিজ্ঞানী যিনি ভারতীয় অকাল্ট শাস্ত্রের স্বর্ণখনিকে হৃদয়াঙ্গম করতে সংস্কৃত ভাষা শেখেন ১৯৩৩ সালে। এবং ভগবত গীতার মূল শাস্ত্র পাঠ করেন। তিনি তার বিভিন্ন কর্মে ভগবতগীতা থেকে উদ্ধৃতি দিতেন। তিনি বলেন, "বেদশাস্ত্র হচ্ছে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সুবিধা।"

১৯৪৫ সালে পৃথিবীর প্রথম নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষামূলক নিক্ষেপের পর বিস্ফোরণের পর হওয়া মেঘের মত কুণ্ডলী দেখে তিনি ভগবতগীতা(১১:৩২) থেকে একটি ভার্সের উদ্ধৃতি দেন।"এখন আমি মৃত্যু(যম) হয়েছি,পৃথিবী ধ্বংসকারী"। ভগবতগীতার প্রশংসায় তিনি বলেনঃ"পশ্চিমা সভ্যতার সবচেয়ে ভয়ানক বৈজ্ঞানিক অর্জনের পাশাপাশি সবচেয়ে প্রদীপ্ত রহস্যময় অভিজ্ঞতা (mystical experience) হিসেবে আমাদেরকে দিয়েছে ভারতের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক কীর্তিস্মম্ভ ভগবতগীতা।"

"ভগবত গীতা হচ্ছে বিদ্যমান ভাষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দার্শনিক গীতি"
 [“Sacred Jewels of Yoga: Wisdom from India’s Beloved Scriptures, Teachers, Masters, and Monks”]


ওপেনহেইমারের কাছে  জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় শুধু ভগবতগীতা নয়, গৌতমবুদ্ধও  আদর্শ ছিলেন। এগুলো থেকেই সব ধরনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব তৈরি করতেন। তিনি বলেনঃ"আমরা যদি প্রশ্ন করি, উদাহরণ স্বরূপ, ইলেকট্রনের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে কিনা, আমরা অবশ্যই বলব 'না', আমরা যদি প্রশ্ন করি, ইলেক্ট্রনের অবস্থান সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় কিনা, আমরা বলব 'না', আমরা যদি প্রশ্ন করি,ইলেক্ট্রন স্থির হয়ে আছে কিনা, আমরা বলব 'না'। তাহলে গতিশীল কিনা, আমরা অবশ্যই বলব 'না'। গৌতমবুদ্ধ এভাবেই জবাব দিয়েছেন যখন মৃত্যুর পর মানুষের অবস্থার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল; কিন্তু এ ধরনের উত্তর ১৭ - ১৮ শতকের বিজ্ঞানের রীতির কাছে পরিচিত নয়।" 
(J. R. Oppenheimer, Science and the Common Understanding)[৭]


পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর ডিন ব্রাউন সংস্কৃত ভাষা শিখে তাতেও পন্ডিত হন। তিনি উপনিষদ, দেবসহ অনেক বইও রচনা করেন! নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট থেকে হয়ে যান বেদান্তবাদী। এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন, "আমার কাছে সংস্কৃতের মধ্যে মৌলিক অন্তর্দৃষ্টির বিষয় বলে মনে হয় আত্মা=ব্রহ্মের তত্ত্বটি,আত্মা হচ্ছে আমাদের মধ্যের ওই সারবস্তু যা দ্বারা গোটা ব্রহ্মলোক গঠিত। " উত্তরে পদার্থবিদ ব্রাউন বলেন," হ্যা, সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা আপনি ভাবতে পারেন, 
সেটা হচ্ছে ব্রহ্মা। চির সম্প্রসারণশীল, এটা সকল মহাবিশ্বজগত,সমান্তরাল বিশ্বজগত সবকিছুই অসীম চির সম্প্রসারণশীল সবকিছু, এবং সর্বশক্তিমান মা'বুদ ব্রহ্মা। অপরদিকে সবকিছুর ক্ষুদ্রতর দিক যতটা আপনি ভাবতে পারেন, আপনার ভিতরে,আপনার আসল সুক্ষ্ম সত্তা সেটা আপনার ইগো,শরীর কোনটিই নয়। এটা সকলের মধ্যে অপরিহার্য সত্তা। এবং বেদের ইক্যুয়েশন হচ্ছে আত্মা=ব্রহ্মা।  এর মানে সবকিছু ঠিক তাই যা আপনার সারসত্তা। আমি মনে করি অন্য সকল সংস্কৃতি ও প্রথার মিস্টিসিজম(যাদুশাস্ত্র উৎসারিত রহস্যবাদ) ঠিক একই উপসংহারে উপনীত হয়। বৈদিক শাস্ত্র সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত ও জটিল ভার্সন কিন্তু আমি মনে করি সবই একই কথা বলে। এটা অনেকটা E=mc2 এর অনুরূপ। হ্যা আমরা আত্মা=ব্রহ্মা ইক্যুয়েশনে গোটা ভারতীয় মহাকাশ তত্ত্ব পাই, যেটা থেকে প্রাচীন গ্রীক মহাকাশবিদ্যা গড়ে ওঠে, যেহেতু গ্রীক বৈদিক সাবকালচার, আমাদের আধুনিক বিজ্ঞান এর থেকেই আসে। সবই এসেছে তন্ত্রশাস্ত্র থেকে যাকে বর্তমান রূপ অদ্বৈত বেদান্তবাদ। বেদ অর্থ জ্ঞান, বেদান্ত মানে বেদের পরিপূর্ণতা। অদ্বৈত অর্থ, 'দুই নয়', যার মানে হলো, যা সবচেয়ে বড় তা সবচেয়ে ছোট বস্তু থেকে ভিন্ন নয়। বৈদিক শাস্ত্রগুলোর জ্ঞান এত বেশি প্রসারিত যে যখন কোন মানুষ সেটার কাছে যায়,সে নিজেকে ওই বিদ্যার কাছে নিয়ে আসে।" প্রশ্নকর্তা বলেন,"আমরা প্লেটোর থেকে ধারনাগত(আইডিয়ালিস্টিক) জগতের ব্যপারে জানতে পারি, সবকিছুই বিশুদ্ধ একক বস্তুর বিভিন্ন রূপ। এটা বেদের মধ্যেও পাওয়া যায় "
ডিন উত্তরে বলেন, "বেদে এ এটাকে বলে 'ঋতম্বরপ্রজ্ঞান'। ঋত মানে কোনকিছু ঠিক করা, এর দ্বারা বোঝায় মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা imperfect, তাই মহাবিশ্বের গতি এই ইম্পার্ফেক্ট থেকে পার্ফেকশন বা উৎকর্ষতা অভিমুখী(বিবর্তনবাদ)।.."
প্রশ্নকর্তা বললেন, "আমরা পাশ্চাত্যে কেমন যেন আধ্যাত্মিকশূন্যতা,স্বাতন্ত্রতা লক্ষ্য করি। কিন্তু অপর দিকে সংস্কৃত প্রথায় বিশেষ করে তান্ত্রিক উৎসগুলোয় একরকমের অদ্বৈত বিশ্বাসকে লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে আমরা কাম ও আধ্যাত্মিকতাকে এক সুতোয় পাওয়া যায় যা আপনি Devas বইয়ে উল্লেখ করেছেন।"  উত্তরে ডিন ব্রাউন বলেন,"জ্বি, প্রকৃতি হচ্ছে দেবতা সদৃশ। আপনি  হিব্রু কাব্বালায় দেখবেন, ঈশ্বর EIn sof হয়ে শাকিনা সদৃশ। আবার সেটাই মালকুত বা জগত প্রকৃতি(nature)। তাই একভাবে প্রকৃতির (পূজার) মাধ্যমে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়, অন্যভাবে ঈশ্বরের মাধ্যমে প্রকৃতিকে পাওয়া যায়(সর্বেশ্বরবাদ/pantheism)। "[১২]

সুতরাং বুঝতেই পারছেন সমস্ত পদার্থবিদরাই চরমভাবে পূর্বাঞ্চলীয় রহস্যবাদ দ্বারা ঘোর আবেশে আচ্ছন্ন ছিল। এর থেকেই যাবতীয় গবেষণা এবং তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করতেন।কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে বেদান্ত মেকানিক্স কিংবা ব্যবিলনীয়ান মেকানিক্স বললে মনে হয় কোনরূপ ভুল হবে না। পদার্থবিজ্ঞানের এ ধারায় এসে অনেক পদার্থবিদ ব্রহ্মচৈতন্য(Universal Collective Consciousness) এর মৌলিক অস্তিত্বের ব্যপারটি মেনে নিতে পারেনা, কারন এটা সম্পূর্ন স্পিরিচুয়ালিটি বা আধ্যাত্মবাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এজন্য ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সের(Measurement problem) ব্যাখ্যায় parallel universe theory(Many world interpretation) কে নিয়ে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে সমান্তরাল মহাবিশ্বের তত্ত্বটিও অকাল্ট ফিলসফি থেকে এসেছে। গ্রীক-বৈদিক  দর্শনের মধ্যে এই চিন্তাধারা ছিল। এ্যানাক্সিম্যান্ডার কস্মিক প্লুরালিজমের প্রচার করতেন। যারা অদ্বৈত ব্রহ্মচৈতন্যকে মানতে চান না তাদের এটা মাথায় রাখা উচিত, যাদের হাতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্ম তাদের প্রত্যেকেই অদ্বৈত বেদান্তবাদী ছিলেন এবং তাদের অনেকেই বলেছেন(যেমনঃইউজিন উইগ্নার), চেতনাকে বাদ দিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ফর্মুলেট করা সম্ভব নয়। সুতরাং যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের স্রষ্টারাই ব্রহ্মচৈতন্যবাদী,সেখানে আপনি চাইলেই এটাকে অন্যকিছু দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করলে কাজ হবে না বরং সেটা হবে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত মত। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনকগন সেটার পরোয়া করেনা। তাদের মতবাদটিই সর্বোৎকৃষ্ট গ্রহনযোগ্য মত বলে বিবেচিত হবে। এ বিষয়ে পদার্থবিজ্ঞানী অমিত গোস্বামী বলেন, "যদিও প্রচলিত বিজ্ঞানে এখনো বস্তুবাদিতা রয়েছে,বিশাল সংখ্যক পদার্থবিজ্ঞানীগন 'চেতনাকে' মূল হিসেবে ধরে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নে সমর্থন ও কাজ করে যাচ্ছেন।"



১৯৭০ সালে আধ্যাত্মবাদী নিউএজ প্যাগান মুভমেন্ট কোয়ান্টাম ফিজিক্স থেকে বিভিন্ন ধারনাকে গ্রহন করতে শুরু করে। Arthur Koestler, Lawrence LeShan প্রমুখের বই থেকে মানুষ এটা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, প্যারাফিজিক্যাল আইডিয়া কোয়ান্টাম মেকানিকস দ্বারা ব্যাখ্যা সম্ভব। তৈরি হয় নিও বেদান্তবাদ ও নিও-প্লেটনিজমের সাথে এ্যাডভান্স ফিজিক্স সংমিশ্রিত বিশ্বাস ব্যবস্থাঃকোয়ান্টাম মিস্টিসিজম। সে যুগে Fundamental Fysiks নামের একটা দল তৈরি হয় যারা কোয়ান্টাম মিস্টিসিজম গ্রহন করে, পাশাপাশি ধ্যান - যোগসাধনার পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন চর্চাও গ্রহন করে। Fundamental Fysiks গ্রুপের সদস্য যেমন Fritjof capra ; উইগনার,শ্রোডিঞ্জার ও হাইজেনবার্গদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে The Tao of Physics: An Exploration of the Parallels Between Modern Physics and Eastern Mysticism (1975) নামের বইটি লেখেন।
এই বইটা সাধারন মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে গ্যারী জুকাভ নামের কাপ্রার অনুসারী আরেকটি বই পাব্লিশ করে, যেটাতে সে প্রচুর নিজের দার্শনিক চিন্তাধারা কোয়ান্টাম মেকানিকস এর সাথে মেশায়। আজকের নিউএজ মুভমেন্ট যে কোয়ান্টাম মিস্টিসিজম এর উপর দাঁড়িয়ে সেটা প্রাচীন জুডিও-গ্রেসিয়-ইজিপ্ট-ইন্ডিয়ান-ব্যবিলনীয়ান মিস্টিসিজম ও শ্রোডিঞ্জার -বোর-হাইজেনবার্গের বেদান্তশাস্ত্র নির্ভর কোয়ান্টাম মেকানিকসের সম্মিলনে সমৃদ্ধ শক্তিশালী পশ্চিমা আধ্যাত্মিক প্যাগানিজম। দীপক চোপ্রা কোয়ান্টাম মিস্টিসিজম এবং প্রাচীন অকাল্ট ট্রেডিশনের মেলবন্ধনে “Quantum theory”,Quantum Healing (1989),  Ageless Body, Timeless Mind (1993)সহ অনেক বই পাব্লিশ করেছেন।
আমাদের দেশের কোয়ান্টাম ম্যাথড নিউএজ প্যাগানিজমেরই বাংলাদেশী শাখা। এরাও তাদের কোর্সে উল্লিখিত বইগুলো পড়ার জন্য বাংলাদেশি সাধারন জ্ঞানহীন মুসলিমদেরকে যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক সর্বেশ্বরবাদী কুফরি আকিদার দিকে টানতে ব্যবহার করে। মূলত কোয়ান্টাম ম্যাথডে যারা আছে এরা কেউই মুসলিম নয়। তাদের মূল পরিচয় জ্যোতিষী। এরা বাংলাদেশে যাদুশাস্ত্র ভিত্তিক অকাল্ট দর্শন প্রচারে কাজ করছে।
কোয়ান্টাম ম্যাথড বাংলাদেশে যা প্রচার করছে তা শ্রোডিঞ্জার, হাইজেনবার্গের বেদান্তবাদী ননডুয়ালিস্টিক(অদ্বৈতবাদী-monism- আরবি:ওয়াহদাতুল উজুদ) আকিদা। সুতরাং তাদের সায়েন্স অব লিভিং বা এরকমের দাবি অসত্য নয়। তাদের পেছনে গোটা (অপ)বিজ্ঞানের ব্যাকআপ আছে। এদের ব্যপারে বিস্তারিত অনেক আর্টিকেলে উল্লেখ করেছি[৮], এতদিন তাদের পেছনের সায়েন্টিফিক ভিত্তির ব্যপারে তেমন কিছু বলিনি। আজ জানতে পারছেন।

অনেক পদার্থবিজ্ঞানী নিউএজারদের সাথে একমত হয় না তাদের অতিরিক্ত দর্শন নির্ভর‍তা এবং বিভিন্ন ট্রেডিশনের অকাল্টিজমের মেশানো শিক্ষার জন্য। বিশেষ করে ম্যাটেরিয়ালিস্ট আইনস্টাইনের বস্তুবাদী শিষ্যরা তার মতই কোয়ান্টাম মিস্টিসিজমকে পছন্দ করেন না। নিউএজ গুরু দীপক চোপ্রা,অপ্রাহ উইনফ্রেদেরকে বস্তুবাদী পদার্থবিদগন ভাল চোখে দেখেন না। তারা যুক্তি দেয় কোয়ান্টাম মেকানিক্স শুধুমাত্র কোয়ান্টাম জগতের জন্য। আমাদের বস্তু জগতের জন্য প্রযোজ্য না। এটাকে বলে ম্যাক্রো রিয়েলিজম(Macro- Realism) । বিজ্ঞানী লেগেট ও গার্ড, বেলস থিওরামের ন্যায় 'ইনইক্যুয়ালিটি' নামে একটা ধারনা প্রকাশ করেন যেটায় বলা হয়, কোয়ান্টাম ইফেক্টে একটা লিমিট আছে। কিন্তু ২০১১ সালে পদার্থবিদ স্টেফানি, সিমন্স এবং জর্জ নি প্রমুখের দ্বারা চালিত একটা গ্রুপ পরীক্ষণের মাধ্যমে লেগেট-গার্ডের ইনইক্যুয়ালিটিতে ভায়োলেশনগুলো প্রকাশ করেন। এরপরে তাদের ওই ফলাফল অনেকবার ডুপ্লিকেট করা হয়। এতে প্রমাণ হয় যে ম্যাক্রো রিয়ালিটি কোয়ান্টাম রিয়ালিটি থেকে আসে, অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার জগতের দ্বারা আমাদের সলিড জগত গঠিত, তাই সেখানটার নীতি আমাদের উর্দ্ধজগতে প্রভাবহীন নয়। বরং একই নীতিতেই কাজ করে। ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট বড় বড় বস্তুর ক্ষেত্রেও সফল ভাবে কাজ করেছে, যেমনঃএটম,মলিকিউলস এমনকি ১৬ টি কার্বন এটম দ্বারা তৈরি বলের ক্ষেত্রেও কাজ করে সমান ভাবে। বিজ্ঞানীগন এখন মাঝারি আকারের প্রোটিন, ভাইরাসের সাথে এই পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন। ননলোকাল এন্টেঙ্গেলমেন্ট ছোট ডায়মন্ড এর জোড়া, এল্যুমিনিয়াম চিপ, ছোট লোহার টুকরার ক্ষেত্রেও সফল ভাবে কাজ করেছে। ম্যাক্রো রিয়েলিজম এর ধারনা ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল ধরনের পরীক্ষনে ভুল সাব্যস্ত হয়! কোয়ান্টাম মেকানিকস যে ম্যাক্রো(বড়) রিয়ালিটি বা আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতে কাজ করে সেটার সবচেয়ে সাধারণ সহজ উদাহরণ হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো, যা আমাদের ত্রিমাত্রিক বড় আকৃতির জগতে কাজ করছে। সুতরাং ম্যাক্রো রিয়েলিজমের ধারনা ম্যাটেরিয়ালিস্টদের একটা বদ্ধমূল ভুল ধারনা। পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার বলেনঃ "পদার্থবিজ্ঞান এখন পর্যবেক্ষকের অংশগ্রহনকে (observer-participancy) দ্বার করিয়েছে ;পর্যবেক্ষকের অংশগ্রহনের দ্বারা (সাবএটোমিক লেভেলে) তথ্য(ইনফরমেশন) উৎসারিত হয়, তথ্য পদার্থকে(বস্তুজগতকে) দ্বার করায়।"
- John A. Wheeler

অর্থাৎ যেহেতু সাবএ্যাটমিক জগতে সচেতন পর্যবেক্ষক এনার্জির কার্য-আচরণকে প্রভাবিত করে, পর্যবেক্ষকের উপর সাবএ্যাটমিক লেভেলের এনার্জেটিক ইনফরমেশনের আচরণ নির্ভর করে। আর এই ইনফরমেশন বা তথ্য, বস্তু বা পদার্থকে আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতে দ্বার করায়। অর্থাৎ মূলে আছে চেতনার হস্তক্ষেপ। সাবএ্যাটমিক লেভেলে মানুষের চিন্তাভাবনাও এনার্জি। এই চিন্তাচেতনার এনার্জি অন্য সমস্ত এনার্জির প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে সক্ষম। সুতরাং চেতনা বা আত্মার অভিপ্রায়(intention)  আমাদের আশপাশের বস্তুজগতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। প্রত্যেকেই যার যার আশপাশের সৃষ্টিজগতের নিয়ত্বা হতে পারে! ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ বস্তুর আচরণে অব্জারভেশন নির্ভরতার বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেনঃ"আমরা আর কোন বস্তুর স্বাধীন আচরন পর্যবেক্ষণ ছাড়া  বলতে পারব না।"

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও মহাকাশবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আর.সি হেনরি বলেনঃ "নতুন পদার্থবিজ্ঞানের ধারার মৌলিক সারকথা বলে স্বীকার করে যে, পর্যবেক্ষকই বাস্তব জগতের স্রষ্টা। পর্যবেক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আমরাই এই রিয়েলিটি বা বাস্তব জগত সৃষ্টিতে যুক্ত আছি। পদার্থবিজ্ঞানীগন এখন এটা স্বীকার করতে বাধ্য যে এই মহাবিশ্ব 'মনস্তাত্ত্বিক' নির্মাণ। মহান পদার্থবিজ্ঞানী স্যার জেমস জিন্স লিখেছেনঃ "জ্ঞানগত ধারা এখন অ-যান্ত্রিক বাস্তবজগতের (বিশ্বাসের) দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে এখন মেশিনের মত নয় বরং মহাচেতনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মনকে(mind) আর বস্তুজগতে(matter) অনধিকার প্রবেশকারী রূপে দেখা হচ্ছে না, বরং আমরা মন বা চেতনাকে বস্তুজগতের সৃষ্টিকর্তা এবং প্রতিপালক বলে স্বীকৃতি দিয়ে অভ্যর্থনা জানাই। আসুন এবং গ্রহন করুন এই তর্কাতীত উপসংহারকে। এই মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ড অবস্তুগত-মনস্তাত্ত্বিক এবং আধ্যাত্মিক(spiritual)"
 – R.C. Henry, Professor of Physics and Astronomy at Johns Hopkins University ,  “The Mental Universe” ; Nature 436:29,2005

শুধু হেনরীই নন আধুনিক প্রায় ৯৯ ভাগ পদার্থবিজ্ঞানীগন এখন কোয়ান্টাম বেদান্তবাদ বা ব্রহ্মচৈতন্যকে ইলাহ হিসেবে বিশ্বাস করছে এবং প্রচার করছে। এরা এটাও বলে দিচ্ছে যে আমরাও এ বস্তুজগতের সৃষ্টিতে স্রষ্টার হিসেবে অংশগ্রহণ করছি। ব্যপারটা এরকম যে Reality creates us and We are creating the reality। আজকের পদার্থবিজ্ঞানের মূল শিক্ষা হচ্ছে প্রতিটা বস্তুই মহাচৈতন্যের অংশ হিসেবে জগত সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তা রূপে অংশ নিচ্ছে। সবাই স্রষ্টা। আর সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে অদ্বৈত  মহাচৈতন্য বা ব্রহ্ম, কাব্বালার পরিভাষায় যাকে বলা হয় Ein Sof। আজ বিজ্ঞান সরাসরি নিজ ইচ্ছাকে ব্যবহার করে বস্তুজগতে প্রভাব বিস্তার বা পরিবর্তনে উৎসাহ দেয়।এটা যাদুবিদ্যার অনেক পদ্ধতির একটি। রূহের অভিপ্রায় - অভিলাষ কে ব্যবহার করে কারও ক্ষতি বা উদ্দেশ্য হাসিল যাদুবিদ্যার মৌলিক চর্চা। অর্থাৎ আজকের কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান যাদুবিদ্যাকেই শেখাচ্ছে। এজন্যই প্রাচীন যাদুকরদের প্রধান এবং মৌলিক আকিদা ছিল ওয়াহদাতুল উজুদ(Non duality/Unity of existence/monism)।
২০১৪ সালের ফিল্ম "ট্র্যান্সেন্ডেন্স" এ বিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনীত জনি ডিপ যখন এক প্রেজেন্টেশনে তার আবিষ্কৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বলবার মুহুর্তে বলেন,"উদাহরন স্বরূপ কল্পনা করুন, পূর্ন মানবীয় আবেগ ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আত্মসচেতন আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স,যেটাকে মাঝে মধ্যে সিংগুলারিটি বলেও ডাকা হয়,আমি বলি 'ট্রান্সেন্ডেন্স'। এ ধরনের সুপার ইন্টেলিজেন্স তৈরি করার জন্য আমাদেরকে আগে পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন বিষয়টিকে আনলক করতে হবে:'চেতনার প্রকৃতি কি?, আত্মার অস্তিত্ব কি আছে? যদি থাকে তাহলে সেটা কোথায়?" সে সময় এক মৌলবাদি খ্রিষ্টান দাড়িয়ে প্রশ্ন করে," প্রফেসর, আপনি তাহলে একজন ঈশ্বরকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন, আপনার নিজের ঈশ্বর?"। উত্তরে জনি ডিপ বলেন,"চমৎকার প্রশ্ন, এটা কি নয় যে মানুষ সবসময়ই তাই(ঈশ্বর)?"
   এজন্যই যাদুশাস্ত্রধারী ইহুদীরা রূহের ব্যপারে এত কৌতূহলী ছিল। এদের বিশ্বাস মতে আইনসফই প্রানপ্রদায়ী সর্বত্রবিরাজমান এনার্জি বা চেতনাই আত্মা। এজন্য কাব্বালাহ শিক্ষা দেয়, সবাই ঈশ্বর। প্রাচীনকাল থেকেই ওরা যাদুবিদ্যার সাহায্য নিয়ে গোলেম(Golem) বা আত্মাবিহীন সচল দেহ সৃষ্টির চেষ্টা করত। এরকমটা প্রচলিত আছে যে ওরা সফলও হয়েছিল। ট্রান্সেন্ডেন্স ফিল্মে জনি ডীপ যা বললো, সেটা ইহুদীদের প্রাচীন চিন্তা-ধারনা ও চেষ্টার আধুনিকতম রূপ।
 
আজকের বিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে কাব্বালিস্টিক আইডিয়ালিজমে ফিরে গেছে। যাদুশাস্ত্র থেকে বিজ্ঞান অল্প কিছুদিনের জন্য আলাদা করে যৌক্তিকতা আর গ্রহনযোগ্যতার আসন লাভ করেছিল,কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি আবারো ফিরে গেছে সেই পুরোনো যাদুবিদ্যায়। বেদান্তশাস্ত্রের নব্য বৈজ্ঞানিক রূপঃ কোয়ান্টাম মেকানিক্স  বিশেষ শ্রেনীর উইচক্র্যাফট বা যাদুবিদ্যাকে শেখায়। প্রথমত এটা অকাল্ট মেকানিক্স শেখাচ্ছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স কেমন যেন হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রের প্রতিটি নীতিমালাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হার্মেটিক ওয়ার্ল্ডভিউ এর অনুরূপ কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর মহাবিশ্বের ধারনাও Mental। হার্মেটিক শাস্ত্রের নীতির অনুরূপ মহাবিশ্বের সবকিছুই কম্পনশীল তরঙ্গায়িত এনার্জি। আইনস্টাইনই এনার্জি ও ম্যাসের ধারনা প্রতিষ্ঠার দ্বারা 'সবকিছুই এনার্জি' এই বিশ্বাসকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।  হলিউডেও যাদুবিদ্যা এবং এ্যডভান্স ফিজিক্সকে একাকার করে প্রচার প্রচারণা চলছে। ডক্টর স্ট্রেঞ্জ নামের ফিল্মে টিল্ডা সুইন্টন(সর্সারার সুপ্রীম) যখন স্টিফেন স্ট্রেঞ্জকে মাল্টিডাইমেনশনাল ইউনিভার্সকে 'চেতনার ওপারে'(altered state of consciousness) নিয়ে ভ্রমন করিয়ে আনেন তার বিদ্যার উপর বিশ্বাস আনয়নের জন্য,তখন অকাল্ট কস্মোলজির খানিকটা দেখায়, সেখানেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মহাচৈতন্য ভিত্তিক সৃষ্টিতত্ত্বকে দেখায়। এক পর্যায়ে উইচ টিল্ডা সুইন্টন ডক্টর স্ট্রেঞ্জকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "...তুমি মনে করো ,এই জগত কিভাবে কাজ করে তা তুমি জানো। তুমি মনে কর যে এই ম্যাটেরিয়াল বস্তু জগতই সবকিছু। সত্য কি? কোন রহস্যটি তোমার চিন্তাশক্তিরও বাহিরে? পদার্থের  একদম মৌলিক শেকড়ে চেতনা ও পদার্থ(mind and matter) একত্রিত হয়। চিন্তা চেতনাই রিয়েলিটি বা বাস্তবজগতের আকৃতি দানকারী.."। যারা বিজ্ঞানের মোহে অন্ধ হয়ে আছে বা সায়েন্টিফিক প্যাগানিজমের ব্যপারে কিছুই জানে না, তারা হলিউডের অনেক বিষয়ই দেখেও তাৎপর্য ঠাহর করতে পারেনা।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অকাল্ট কস্মোলজির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, ব্যবিলনীয়ান ফিজিক্সে ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি হার্মেটিক candle,sympathetic, sigil ও chaos magic শেখাচ্ছে এবং এতে উৎসাহিত করছে।Chaos Magick হচ্ছে এমন একটি যাদুবিদ্যার মাজহাব যাতে চেতনা বা অভিপ্রায়কে ব্যবহার করে যাদুকর কারও ক্ষতি,  (বাহ্যিক)উপকার অথবা চিকিৎসা করে। যাদু বিদ্যার এ মাজহাবে শয়তান জ্বীনের উপর নির্ভর করতে হয়না। কাব্বালিস্ট ইহুদীদের যাদুশিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়ে শেখানো হয় কিভাবে শুধুমাত্র বদনযরের(evileye) এর দ্বারা কাউকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলা যায়। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানীগন এখন intention কে সর্বোচ্চ ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। কোয়ান্টাম তত্ত্বের পিতা হিসেবে খ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক নিজেই বলেছেন,"এটা হচ্ছে আমাদের মন যা এটাকে স্থান কাল ও বস্তুতে সাজায়। আপনি আপনার (মানসিক)প্রোগ্রামকে নতুনভাবে সাজান তবেই ভিন্ন ধরনের রিয়ালিটিতে নিজেকে খুজে পাবেন।"

পদার্থবিদ অমিত গোস্বামী নিয়মিত বলেন,"আমরাই আমাদের জগতের স্রষ্টা"।  তিনি নিয়মিত শিক্ষা দেন আমাদের চিন্তা অভিপ্রায় দ্বারা আশপাশের জগত নিয়ন্ত্রনের জন্য। কোয়ান্টাম মিস্টিসিজমকে গ্রহন করা নিউএজে বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে মানুষের চিন্তাশক্তিকে এত শক্তিশালীও করতে পারে যার বলে জড়বস্তুতে সরাসরি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রন সম্ভব। তাছাড়া কোয়ান্টাম মেকানিক্সের entanglement এর যাদুবিদ্যায় তাৎপর্য হচ্ছে sympathetic magic যে যাদুবিদ্যার মাজহাবে, যাদুর উপকরন হিসেবে সম্পর্কযুক্ত বস্তুর উপর যাদু করা হয়। যেহেতু সমস্ত বস্তু একসাথে সংযুক্ত, কারও চুলের সাথে দেহের মৌলের মিল থাকায় পরস্পর বাহ্যত বিচ্ছিন্ন হলেও সম্পর্ক বিদ্যমান(entangled)। এজন্য ঘাম লাগানো কাপড়ের টুকরা,চুল প্রভৃতি যাদুবিদ্যায় ব্যব্হার হয়। সুতরাং যাদু করতে গেলে অদ্বৈতবাদের কুফরির দিকে যেতেই হবে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই তাগুতি(নিজেকে রবের আসনে বসায় যেহেতু) শিক্ষার সাথে যাদুশাস্ত্র উদ্ভূত বৌদ্ধচিন্তারও অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। গৌতম বুদ্ধ  বলেনঃ "আমরা ঠিক তাই যা আমরা ভাবি, সব কিছুই আমাদের চিন্তা থেকে উদ্ভুত, আমাদের চিন্তা চেতনার দ্বারা আমরা আমাদের জগতকে নির্মাণ করি।"




-পদার্থবিদদের বাবেলের যাদুশাস্ত্রে প্রত্যাবর্তন-



বেদান্তশাস্ত্র নির্ভর আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কোয়ান্টাম বলবিদ্যা শাখার আবির্ভাবের দ্বারা সৃষ্টিতত্ত্ব ও সৃষ্টি জগতের ব্যপারে বিশ্বাস হাজার বছর আগের যাদুকরদের কাছে ফিরে যায়। সুস্পষ্ট যাদুবিদ্যাকেন্দ্রিক অপবিজ্ঞান থেকে এর ব্যপারে বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসের স্বীকৃতি সবই দেওয়া হয়েছে। ফিরে যাওয়া হয়েছে বাবেল শহর থেকে কাব্বালার জ্ঞান নিয়ে আসা প্লেটো ও পিথাগোরাসদের আদর্শে। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ বলেনঃ"আমি মনে করি যে আধুনিক পদার্থবিদ্যা অবশ্যই প্লেটোর মতবাদকে পছন্দ করেছে।  বস্তুত, বস্তুর ক্ষুদ্রতম একক কোন বস্তুগত জিনিস নয়, তারা আকৃতি(form),ধারনা(idea) যেটা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যায় গাণিতিক ভাষার মাধ্যমে।"
Das Naturgesetz und die Struktur der Materie (1967), as translated in Natural Law and the Structure of Matter (1981), p. 34
W. Heisenberg

ভারতীয় বেদান্তবাদী দর্শন এবং গ্রেসিও-ব্যবিলনীয়ান দর্শনে মৌলিক পার্থক্য নেই। সকল অকাল্ট/মিস্টিক্যাল ট্রেডিশানই অদ্বৈতবাদের কথা বলে। এদের মূল উৎস একটাই। পূর্ববর্তী পর্বগুলোয় অনেকবার উল্লেখ করেছি  যাদুবিদ্যার উৎস হচ্ছে প্রাচীন বাবেল শহর। পিথাগোরাস থেকে শুরু করে প্লেটো প্রত্যেকেই অধিবিদ্যা অর্জনের তাগিদে বাবেল শহর সফর করেন। ইহুদী কাব্বালিস্টগন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে প্লেটোকে কাব্বালার একজন বড় ব্যাখ্যাকারী ঋষির চোখে দেখে। প্লেটোর থিওরি অব ফর্ম ও আইডিয়ালিজম তথা কাব্বালাহ এর ওয়ার্ল্ডভিউয়ের দিকে ফিরে যাবার কথা উল্লেখ করে হাইজেনবার্গ বলেনঃ"যেটা দরকার, সেটা হলো ফিজিক্সের একটা মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের উচিৎ ডেমোক্রিটাসের দর্শনকে ত্যাগ করা এবং তার মৌলিক ইলিমেন্টারি পার্টিকেলের ব্যপারে ধারনাকেও। এটার বদলে আমাদের উচিত মৌলিক সিমেট্রিকে গ্রহন করা, যে ধারনাটি এসেছে প্লেটোর দর্শন থেকে।"... "মডার্ন(বৈজ্ঞানিক) দৃষ্টিভঙ্গির সাথে প্লেটো ও পিথাগোরিয়ানদের সাদৃশ্যতা আরো সামনে নিয়ে যাওয়া যায়।প্লেটোর Timaeus এ উল্লিখিত ইলিমেন্টারি পার্টিকেলগুলো সর্বশেষে কোন বস্তু নয় বরং গাণিতিক আকৃতি বা ফর্ম। "সমস্ত জিনিস হচ্ছে সংখ্যা" বাক্যটি পিথাগোরাসের বলে আরোপ করা হয়। ওই সময় যেসব গাণিতিক ফর্মগুলো ছিল তা হচ্ছে রেগুলার সলিডের(টেট্রাহিড্রন,অক্টাহিড্রন..) মত কিছু জ্যামিতিক আকৃতি বা ত্রিকোণ যা এর সার্ফেস গঠন করে। কোয়ান্টামতত্ত্ব এর মধ্যেও নিঃসন্দেহে ইলিমেন্টারি পার্টিকেলগুলো অবশেষে ফর্ম হয়ে যায় এবং এটা আরো জটিল ধরনের।"

সুতরাং আজকের কথিত বিজ্ঞানীরা আদৌ নতুন কিছুর পথ দেখাচ্ছেন না। সেসব আসলে সেই প্রাচীন যাদুকর - ন্যাচারাল ফিলসফার বা দার্শনিকদের অকাল্ট চিন্তাধারার আধুনিক সংস্করণ , এরা বিজ্ঞানের নতুন মোড়কে নামে সেই প্রাচীন অভিন্ন কুফরি দর্শনের প্রচার করছে। আপনারা নিশ্চয়ই বিগত পর্বের মাধ্যমে অবগত আছেন,প্লেটো-পিথাগোরাসদের বিদ্যার উৎস ছিল বাবেল শহর। প্রত্যেকেই কাব্বালার অনুগত ছাত্র। তাদের বিদ্যার আসল পরিচয় হলো যাদুশাস্ত্র। তাহলে পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গগন  প্লেটনিক বিদ‌্যাকে গ্রহনের মাধ্যমে কোথায় ফিরে গেছেন!? উত্তর হচ্ছে ব্যাবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্রে। আজকের পদার্থবিদ্যা ওইসব অভিশপ্ত যাদুকর-জ্যোতিষীদের কুফরি আকিদা ও বিদ্যারই নতুন নামের মোড়কে আনা পরিশোধিত রূপ। এটা স্বীকার করে পদার্থবিজ্ঞানী ওপেনহেইমার  দিয়ে বলেনঃ"মানবীয় সাধারণ বোধের ব্যপারে ধারনা, যেটা এটোমিক ফিজিক্সের বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেসব একদমই অপরিচিত নয় অথবা এমনও নয় যে কখনো পূর্বে কখনো শোনা যায় নি বা তা একেবারেই নতুন। এমনকি আমাদের নিজেদের সংস্কৃতির মধ্যেই(আছে), এসবের একটা ইতিহাস আছে,হিন্দু ও বৌদ্ধদর্শনের মধ্যে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তার মূখ্য পর্যায়ের বিষয়। যা আমরা আধুনিক পদার্থবিদ্যায় আবিষ্কার করব তা মূলত প্রাচীন জ্ঞানেরই দৃষ্টান্ত, অনুপ্রেরণা এবং পরিশোধিত  রূপ।"

দালাই লামা বলেনঃ"প্রশস্তভাবে বলছি, যদিও কিছু ভিন্নতা রয়েছে,আমি মনে করি বিশ্বদর্শনের দিক দিয়ে বৌদ্ধদর্শন এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরস্পর হাত মেলায়।"



সুস্পষ্টভাবে দেখতে পারছেন, এরাই তাদের অর্জিত বিদ্যার উৎসেরর স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীর পরিচয়ের আড়ালে এ সমস্ত অপবিজ্ঞানী কিংবা যাদুকরদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় আজ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আলাদা কোন সত্তার অস্তিত্ব নেই। আমরাই সৃষ্টিকর্তা,সবকিছুই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সৃষ্টিজগত বিনির্মাণে অংশ নেয়। অদ্বৈত সত্তা বা সর্বেশ্বরবাদি অদ্বৈত ব্রহ্মচৈতন্যই হচ্ছে বৈজ্ঞানিকভাবে আসল সৃষ্টিকর্তা(নাউজুবিল্লাহ)।এটাই আইন্সটাইনের "গড অব স্পিনোজা(বারুচ স্পিনোজা)"। বিদ্যমান বস্তুজগতের solidity বলে কিছু নেই, সবই মরীচিকা। সবই অদ্বৈত চেতনার সাগরের অ্যাবস্ট্রাক্টস এনার্জি ফিল্ড। সমস্ত কিছুই ননলোকাল, অনন্ত ক্ষমতাশালী এবং অনন্ত সম্ভাবনাময় (infinite potentiality), পর্যবেক্ষণই সব কিছুর নিয়ত্তা। আগের ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সে ছিল সবকিছু deterministic বা পূর্বনির্ধারিত হবার ধারনা কিন্তু কোয়ান্টাম বিপ্লবে প্রমাণ করা হয় ভাগ্য বলে কিছু নেই। সবকিছুই স্বাধীন, যেকোনো কিছু যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে। এতে তাকদির বলে কিছু নেই, আছে অনন্ত সম্ভাবনাময় স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি।
যেকেউই তার ভাগ্য বদল করতে পারে নিজ আত্মিক শক্তির(chaos magic) বা ইন্টেনশান দ্বারা। এজন্য বলা হচ্ছে এর পরের বিবর্তন হচ্ছে মহাচৈতন্যের ব্যপারে সচেতন হয়ে,প্রকৃতির উপর নিজের আত্মিক শক্তি দ্বারা ম্যানিপুলেট করার দ্বারা নিজের ভেতর নিহিত দেবত্বকে প্রকাশ করা। অর্থাৎ ঈমান যদি পশ্চিমে থাকে, babylonian natural philosophy এর বর্তমান রূপ: কথিত বিজ্ঞান ঠিক বিপরীতমুখী পূর্বদিকের শিক্ষা শেখাচ্ছে। অর্থাৎ ইসলাম যাকে কুফর বলে। এরা আল্লাহর সাথে শরীক করছে না বরং আল্লাহর সত্তাগত অস্তিত্বের ন্যূনতম বিশ্বাস বা ধারনার অবকাশকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে। বৈপরীত্যের উদাহরণ দিতে গিয়ে পূর্বদিকের কথা উল্লেখ করেছি, কিন্তু হাদিসেও এসেছে যে কুফরের জন্ম পূর্বদিকে। এই পূর্বদিকের ব্যাখ্যায় সর্বশেষে আসে ভারতবর্ষের নাম।

حدثنا عبد الله بن يوسف، أخبرنا مالك، عن أبي الزناد، عن الأعرج، عن أبي هريرة ـ رضى الله عنه ـ أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ‏ "‏ رأس الكفر نحو المشرق،...... ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,  ‘কুফরীর মূল পূর্বদিকে,....।’


সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩০১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

 পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার ভারতীয়-গ্রেসিয়ান শয়তানি অকাল্ট দর্শনকে ধারনের আনন্দ প্রকাশ করে বলেন,"আমি এটা ভাবতে পছন্দ করি যে কেউ দেখুক কতটা গভীর ভারতীয় চিন্তাধারা গ্রীসে পৌছে গেছে এবং সেখান থেকে আমাদের দর্শন পর্যন্ত চলে এসেছে।"

অতএব আশাকরি বুঝতে পারছেন কথিত বিজ্ঞানের মূল পরিচয়। এর অকল্যানে আজ মানুষ অপবিজ্ঞানের গন্ডির বাইরে চিন্তা করতে পারেনা। খ্রিস্টানরা অনেক আগেই অপবৈজ্ঞানিক জালে ধরা দিয়েছে। মুসলিমরাও পিছিয়ে নেই। মধ্যযুগের মুসলিমদের প্রাচীন হার্মেটিক-আলকেমিক্যাল ধারার বিজ্ঞান চর্চাকালে অনেক শ্রদ্ধেয় আলিমদের দ্বারা ভৎসনা - নিন্দার স্বীকার হয়েছিলেন। আলিমরা তাদের কাজকে যাদুবিদ্যা ও কালাম শাস্ত্রকে নিষিদ্ধ সাব্যস্ত করার দ্বারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। আজও সেই প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান-গ্রীক ও ভারতীয় যাদুশাস্ত্র নির্ভর জ্ঞানকে পুনরুজ্জীবিত করে কথিত বিজ্ঞানকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুস্পষ্ট আকিদাগত কুফরকে বাস্তব সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে।আফসোসের বিষয়,আজ একজনকেও খুজে পাওয়া কষ্ট হয়ে যায়, যিনি বিপথগামী মুসলিমদেরকে সতর্ক করবে। উল্টো আধুনিক মুসলিমরা সেসব কুফরি বেদান্ত মেকানিক্সের বিদ্যাকে বৈধ জ্ঞান হিসেবে নিয়ে ধীরে ধীরে সত্য থেকে সরে যাচ্ছে। অনেকে গ্রহন করছে কুফরকে। অনেকে বা বিচিত্র সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে রহস্যবাদী চিন্তা-কল্পনার দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পরে আছে। বিজ্ঞান থেকে এসেছে এলিয়েন রহস্য,স্পেস ফ্যান্টাসি, সমান্তরাল বিশ্বের ধারনা,বিবর্তনবাদ,সিমুলেশন হাইপোথিসিস(মায়াবাদের আধুনিক সংস্করণ), টেলিকেনেসিস,টেলিপোর্টেশন ইত্যাদি বিষয়কে ঘিরে মিস্টিক্যাল ভাবনা। আজ এসবকে নিয়ে ফিল্ম, বই কত কিছুই না লেখা হয়। এ বছরে অনুষ্ঠিত একুশে বই মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে সায়েন্স ফিকশন জান্রার বই! এ অবস্থা আকিদাগত দিক দিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভোগা, এরপরে অজ্ঞেয়বাদ এমনকি শেষমেশ  তাওহীদ থেকে বহু দূরে নিয়ে যায়। বেদান্তশাস্ত্র বা ইস্টার্ন মিস্টিসিজমকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে রূপায়নকারী অপবিজ্ঞানীগন তাদের কর্মের ফলাফল স্বরূপ আধুনিক প্রজন্মের এ পরিনতির কথা আচ করতে পেরেছিলেন। এজন্য ১৯৫৮ সালে দেওয়া শ্রোডিঞ্জারের দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছেন, "শেষ প্রজন্মকে চিহ্নিত করে রাখুন যারা মিস্টিসিজম সংক্রান্ত নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে বাস করবে।"
আজ সত্যিই জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে যাদুশাস্ত্রভিত্তিক শয়তানের দর্শনগুলোকে জোরেসোরে প্রচার প্রসার চলছে। ১৪তম পর্বে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা গত হয়েছে। বাংলাদেশেও পিছিয়ে নেই, বৈষ্ণব-ইস্কন,বাউল সম্প্রদায়,কোয়ান্টাম ম্যাথড সমূহকে পৃষ্ঠপোষকতায় রাখা হয়েছে। চন্ডিদাসদের মানবপূজার  শিক্ষাকে আদর্শ হিসেবে দেখানো হয়, অন্যদিকে তাওহিদের প্রচারকারীদের বানিয়ে ফেলা হচ্ছে সন্ত্রাসী-জংগী। আজ পৃথিবীর সর্বত্র প্রচার করা হচ্ছে কাব্বালা ও বেদান্তের অদ্বৈতবাদের শিক্ষা। প্রচার করা হচ্ছে,এটিই নাকি সারাবিশ্বে শান্তি-একতা ফিরিয়ে আনবে।প্রতিষ্ঠা করবে প্লেটোর স্বপ্নের স্বর্গরাজ্য। এটাই কাব্বালিস্টিক মেসিয়ানিক ইউটোপিয়ান ড্রিম। এজন্য পদার্থবিদ্যাকে বহু আগেই যাদুশাস্ত্রে বা অকাল্টিজমে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রাচীন যাদুকররা এই reality সম্পর্কে যা বলত, তাকে সত্যায়ন করা হয়েছে। Dr. pillai বলেন: "পদার্থবিদগন আজ (বাস্তবজগতের ব্যপারে) একই উপসংহারে উপনীত হয়েছেন, যা মিস্টিকগনদের(রহস্যবাদি/বাতেনিয়্যাহ/যাদুকর) ছিল-এটা হচ্ছে শুধুই ভাইব্রেশান যেটা থেকে সমস্ত কিছু উদ্ভূত।"

আজ যখন চোখের আড়ালে থাকা যাদুশাস্ত্রের আধুনিক সংস্করণ তথা বিজ্ঞানের ইতিহাস তুলে ধরে সতর্ক করতে শুরু করলাম,এক শ্রেনীর নির্বোধ আমার বিরুদ্ধে চরম শত্রুতা পোষণ করতে শুরু করলো। আমার ব্যপারে সমালোচনা কটূক্তি কোন কিছু করতেই ছাড়ে নি। অনেকে তো এও বলে আমি নাকি নতুন ফির্কা তৈরি করছি। মা'আযাল্লাহ!

প্রিয় পাঠক, আপনারা অবহিত হয়েছেন, কিভাবে বৈদিক কুফরি তত্ত্বকে পদার্থবিজ্ঞানে রূপান্তর করা হয়েছে। এবার ভাবুন, কতটা নির্বোধ হলে কেউ একজন সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য সাব্যস্ত করতে পারে। কতটা নির্বোধ হলে বেদান্ত মেকানিক্স তথা গোটা ব্যাবিলনীয়ান-কাব্বালিস্টিক যাদুশাস্ত্র উৎসারিত সুস্পষ্ট কুফরি আকিদাপূর্ন বিদ্যাকে কেউ ইসলামের সাথে সমন্বয়যোগ্য বৈধ জ্ঞান বলে স্বীকৃতি দিতে পারে!? উপরের সমন্বিত স্ক্রিনশটে দেখতে পারছেন আজকের মুসলিমদের চরম নির্বুদ্ধিতার চিত্র। এরা যাদুকর /বাতেনিয়্যাহদের নতুন শাখা তথা অপবিজ্ঞানীদের প্রতি কিরূপ অন্ধ বিশ্বাস, ভক্তি এবং আস্থা রাখে! সুবহানআল্লাহ!! এদের অনুরূপ লোকেরা আজ অপবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা দ্বারা কুরআন সুন্নাহর যথার্থতা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে। অপবিজ্ঞানকে বানিয়ে নিয়েছে সত্য মিথ্যা প্রভেদের স্বতসিদ্ধ মাপকাঠি। একইভাবে বিপরীতদিক দিয়ে কুরআন সুন্নাহকেও (অপ)বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যতা আছে দাবি তুলে কুরআন সুন্নাহকে justify করে। ইন্না-লিল্লাহ!!  এরা যদি মুখে কুরআন সুন্নাহকে একক হক্কের মাপকাঠি বলেও স্বীকৃতি দেয়, হৃদয়ের গভীরে বক্রতা,সন্দেহ আর ব্যাধির দরুন অপবিজ্ঞান তথা যাদুশাস্ত্রভিত্তিক বিদ্যার প্রতি কুফর করার বদলে সেসব ঘেষা কুরআনের ব্যাখ্যার দিকে ঝুকে থাকে। এরা বাহ্যত এমন ভাব ধরে, যেন কি যেন জানে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অন্তসারশূন্য ফাঁপা অহংবোধে পূর্ন নির্বোধ অন্তঃকরণ। এজন্যই বেদান্তবাদী শ্রোডিঞ্জার, হাইজেনবার্গ আর ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কদের কাব্বালিস্টিক বিদ্যাকে সত্য বলে মনে করে, হয়ত এ নির্বোধগুলো জানে না যে, ওদের বিদ্যা ঈমানের বিপরীত মেরুর। আর জেনেবুঝেও যাদুবিদ্যা বা শয়তানের আবৃত্ত শাস্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিলে কিছুই বলার নেই। নিঃসন্দেহে, এসকল অভিশপ্ত কুফরি বিদ্যা ও আকিদাকে সত্য-বিশুদ্ধ-হালাল বলে স্বীকৃতি তাওহীদের সাথে আর সম্পর্ক থাকে না, সম্পর্ক হয় আল ইত্তেহাদের সাথে,সম্পর্ক হয় কুফরের সাথে। যারা সব জেনেও বেদান্ত মেকানিক্সে উপর আস্থা রাখে, এরা পরোক্ষভাবে হলেও ফিজিসিস্ট ডিন ব্রাউন,শ্রোডিঞ্জারদের ন্যায় ব্রহ্মাকে মা'বুদ বলে স্বীকৃতি দেয়(মা'আযাল্লাহ)। এরা নিজেরাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মধ্যে কতটা বলবৎ আছে সেটা আল্লাহই জানেন, এজন্যই তো কাব্বালাহ কিংবা বেদান্তমেকানিক্সের বিরুদ্ধে বললে এদের কাছে আলাদা ফির্কার মত লাগে।যাদুবিদ্যাকে আঁকড়ে ধরা এসকল লোকেদের কাছে তাদের নিজেদের মনগড়া খেয়ালি মু'তাযিলা ঘেষা চিন্তাধারার সপক্ষে কোন দলিল খুজে পাবেন না। আমি ইজতেহাদ করছিনা, সে ইল্ম বা যোগ্যতা কোনটাই আমার আছে বলে মনে করি না। আমি সুস্পষ্ট করছি বৈধতার সীমানায় প্রবিষ্ট সুস্পষ্ট নিষিদ্ধ অপবিদ্যা। সুস্পষ্ট কুফর। যাদুবিদ্যা কাব্বালাহ কিংবা বেদান্তশাস্ত্রকে কুফর বলতে মুজতাহিদ হওয়া লাগে না। বিজ্ঞানের মোড়কে ভরা জ্যোতিষশাস্ত্র নির্ভর ব্যবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক বিশ্বাসব্যবস্থার আসল রূপকে স্পষ্ট করার জন্য আমার পাশে বিদ্যমান কুরআন-সুন্নাহর দলিল, প্রাচীন সালাফের পথের উলামাদের মতামত এবং সর্বোপরি সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞানগত সাহায্যই যথেষ্ট। উপরে এক র‍্যবাঈয়ের কথা উল্লেখ করেছি, যিনি বলছেন কাব্বালিস্টিক বিদ্যার ছড়াছড়ি এবং এর প্রতি গভীর অনুরাগের সময়টাতেই ইহুদিদের মসীহ নিজেকে প্রকাশ করবেন। অর্থাৎ যাদুবিদ্যাকে বিজ্ঞানে রূপান্তরের পেছনে অন্যতম কারন হিসেবে বলা যায়, দাজ্জালের আনুকুল্যে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশটাকেও তৈরি করে রাখা। দাজ্জাল আসবার আগেই যদি কিছু লোক কাব্বালিস্টিক মেকানিক্সের গর্তে ঢুকে পড়ে, তবে প্রকাশ করবার পর না জানি কত কিছু হবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আশ্চর্যের এবং একইসাথে আফসোসের বিষয় হলো, যখন ইন্ডিয়ান-ব্যবিলনীয়ান যাদুবিশ্বাস উদ্ভূত গ্রীক দর্শন আরবে পৌছলো, তখন অনেক আলিমগন এর বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু আজ যখন ওই একই যাদুশাস্ত্র কেন্দ্রিক দর্শনকে কেন্দ্র করে বানানো গোটা (অপ)বিজ্ঞানকে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সঞ্চালন করা হলো, তেমন কাউকেই খুজে পাওয়া যায় না এর ব্যপারে সতর্ক করতে। আজ উম্মাহর বিশাল অংশ আংশিক বা বহুলাংশে মু'তাযিলা চিন্তাধারাকে ধারন করে। অধিকাংশই আশআরি, মাতুরিদি চিন্তাধারা নিজের অজান্তেই প্রভাবিত। শতকোটি মুসলিম আজ অপবিজ্ঞান তথা যাদুশাস্ত্রকে কুরআন হাদিসের সাথে সমন্বয় করার কাজে ব্যস্ত। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ!
বেদান্তশাস্ত্র-কাব্বালাহকে গ্রহন করা কোন সাধারণ বিদআত বা গুনাহের প্রশ্ন নয় বরং ঈমান ও কুফরের প্রশ্ন! ওযর বিয জাহালাহ অর্থাৎ অজ্ঞতার অজুহাতে আওয়াম অজ্ঞ মুসলিমদেরকে এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে তাকফির করা যায় না, কিন্তু যারা এসব বিষয় জেনেও পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, এরা প্রকৃতপক্ষে বিভ্রান্ত ব্যাধিগ্রস্ত দুরাত্মা। আল্লাহর কাছে এদের দ্বারা সম্ভাব্য অনিষ্টের ব্যপারে আশ্রয় চাই।

আশাকরি, আজকের পর্বের দ্বারা অনেক পাঠকদের মনে আমার (অপ)বিজ্ঞানবিরোধী অবস্থানগত শুদ্ধতার ব্যপারে জাগ্রত সন্দেহ-সংশয় অনেকাংশে দূর হয়েছে। আজকের পর্বের দ্বারা আমরা তত্ত্বগত দিক দিয়ে অপবিজ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করা শুরু করছি। বলা যেতে পারেন, "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?" সিরিজ কেবল শুরু হলো। আমরা যাত্রা শুরু করছি উচ্চতর বহুমাত্রিক পদার্থবিজ্ঞান এবং "শয়তানের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্বের" অভিমুখে। আজকের পর্বে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অল্প আলোচনা হয়েছে, সামনে আরো আসছে। আজ ব্রহ্মা এসেছে। আগামী পর্বগুলোয় শিব, বিষ্ণু, ইন্দ্র প্রত্যেকেই আসবে।দেখতে পাবেন, পদার্থবিজ্ঞানীগন ইজরাইলে কাব্বালার শিক্ষা নিতে ইহুদি র‍্যাবাঈ এর কাছে ফিরে গেছে। অদূর ভবিষ্যতে সুস্পষ্টভাবে দেখবেন এবং উপলব্ধি করবেন, আজকের কথিত বিজ্ঞান; স্বয়ং আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কর্তৃক সরাসরি কুফরি যাদুবিদ্যার আওতায় ফেলা জ্যোতিষশাস্ত্রকে ম্যাথম্যাটিকসের ফর্মুলা ইকোয়েশন আর সুন্দর নামে বিজ্ঞানের মোড়কে নিয়ে আসা হয়েছে। ওয়াল্লাহি, এই বিজ্ঞান অভিশপ্ত যাদুকরদের আকিদার নতুন মোড়কে পেশকৃত প্রাচীন কুফরি ধর্মদর্শন বৈ আর কিছু নয়। যারা এতদিন আমার কথা সত্য বলে মনে করেছেন, তারা আজ কিছুটা সত্যতা উপলব্ধি করতে পারছেন। সামনে বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট  হবে। সাদা এবং কালো সম্পূর্ণভাবে পৃথক হবে, ইনশাআল্লাহ। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।








[চলবে ইনশাআল্লাহ...]











★দ্রষ্টব্য: আজকের পর্বটি প্রায় তিন মাস আগে লেখা, দুনিয়াবি চরম ব্যস্ততার জন্য পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ সম্ভব হয়নি। সামনে আরো কঠিন ব্যস্ততা বাড়ার আশংকা করি। এজন্য "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজের পরবর্তী পর্বগুলোয় নূন্যতম এক বছর পরে হাত দিতে হবে। এসবের জন্য যে পরিমাণে সময় ও সুযোগ ছিল সেটা তিন মাস আগে থেকে শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহর কাছে দু'আ করি এবং আপনাদেরও দুআ চাই যেন এক বছরের মধ্যে দুনিয়ামুখী ব্যস্ততা কেটে যায়। আমি প্রফেশনাল লেখক বা ব্লগার নই, এজন্য হয়ত এরূপ অবস্থা। আগামী এক বছর পর আল্লাহ চাইলে আবারো শুরু করতে পারব। এর মধ্যে আল্লাহ আযযা ওয়াযালের কাছে ফিরে গেলে হয়ত অনেক কিছুই আধারে রয়ে যাবে। দু'আর মুহতাজ।





টিকা:

[১]
https://www.chabad.org/kabbalah/article_cdo/aid/380651/jewish/Neshamah-Levels-of-Soul-Consciousness.htm
https://www.chabad.org/kabbalah/article_cdo/aid/380302/jewish/Gate-of-Reincarnations-Introduction.htm



[২]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hinduism_and_Judaism
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bnei_Menashe
http://www.newkabbalah.com/Indian.html


[৩]
https://tamilandvedas.com/2014/09/18/3000-gods-in-mesopotamia-similar-to-hindus/


[৪]
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_77.html


[৫]
https://ramanan50.wordpress.com/2015/03/17/vedas-on-consciousness/
https://www.hinduhumanrights.info/vedic-evolution-of-consciousness/
https://www.vedanet.com/consciousness-the-key-to-all-vedic-disciplines/


[৬]
https://haribhakt.com/brain-waves-theory-of-bhagavad-gitas-consciousness-and-vedas/
https://spiritual-minds.com/hindandquaunt.htm


[৭]
https://upliftconnect.com/quantum-physics-vedas/
https://detechter.com/6-famous-international-physicists-who-were-influenced-by-hinduism


[৮]
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_899.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_86.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_14.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_36.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/occultism_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/law-of-attraction_29.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/law-of-attraction_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_8.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_90.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_96.html
https://aadiaat.blogspot.com/2019/01/blog-post_85.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/psychic-ability_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_55.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_39.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_32.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/03/bio-energy-card_21.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_31.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_72.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/chakra-third-eye-yoga_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/one-world-religion_10.html


[৯]
https://grahamhancock.com/vasavadak2/
https://m.huffpost.com/us/entry/us_3082572
www.chakranews.com/maya-world-quantum-physics-hindu-perspective/5680/
https://medium.com/the-liberals/does-quantum-physics-have-anything-to-do-with-the-upanishads-1d802c54b16d
https://www.hinduhumanrights.info/quantum-physics-and-vedic-unified-consciousness/
www.hitxp.com/articles/science-technology/vedic-quantum-mechanics/
https://lifespa.com/quantum-physics-vedic-science/
https://www.speakingtree.in/allslides/vedanta-the-real-father-of-quantum-physics
https://www.scienceandnonduality.com/article/understanding-the-science-of-consciousness-in-ancient-india-part-1


[১০]
https://m.youtube.com/watch?v=aXvHfCeXd5U


[১১]
https://m.youtube.com/watch?v=X93XMwOG66E


[১২]
https://m.youtube.com/watch?v=7Brv2FaOluU


[১৩]
https://www.embodiedphilosophy.com/vedanta-and-kabbalah-nonduality-east-and-west/


[১৪]
https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ব্রহ্মন্


[১৫]
https://horoppa.wordpress.com/2015/06/17/vedanta-philosophy-advaitabad-3-brahma/


[১৬]
bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
https://sanatandharmatattva.wordpress.com/2016/09/12/প্রসঙ্গ-মায়াবাদ/
https://bn.m.wikisource.org/wiki/ভারতবর্ষে/ব্রাহ্মণ্যশাস্ত্রের_মায়াবাদ_ও_অদ্বৈতবাদ


Monday, March 2, 2020

লিনাক্সে SP flash tool ব্যবহার কৌশল


ডেবিয়ান বেজড লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা অধিকাংশই পারি না বা জানি না কিভাবে SP Flash Tool ব্যবহার করতে হয়। Sp tool কি জিনিস সেটা যারা এন্ড্রয়েড ফোনের টেকনিশিয়ানরা ভাল জানে। এটা মিডিয়াটেক চিপের ফোনগুলোয় রম ফ্ল্যাশ, ফার্মওয়্যার আপডেট,ইএমএমসি ফরম্যাট-রাইটিং এমনকি হার্ডব্রিকড ফোনগুলোকেও ঠিক করতে ব্যবহার হয়।  আজকের টিউটোরিয়াল mx linux এর উপর সফলভাবে করেছি। আশা করি ডেবিয়ান বেজড অন্যান্য ডিস্ট্রো তেও কাজ করবে।

প্রথমেই আপনার libpng-12 আলাদাভাবে ডাউনলোড করতে হবে কারন এটা রিপোজিটরেও নাই। গুগল ড্রাইভে পাবেন। লিংকঃ https://drive.google.com/open?id=1_IeUjlyl1VSKjI8M0IJ8wtR10hUBofy9
এবার সামান্য হ্যাকিংএ যেতে হবে। জিপ ফাইলটা এক্সট্র‍্যাক্ট করে ফাইলগুলো নিচের ডিরেক্টরিতে গিয়ে পেস্ট করবেন। (সাধারনভাবে পেস্ট হবে না। ফাইলম্যানেজারে রুট এ্যাক্সেস নিতে হবে।)
/usr/lib/x86_64-linux-gnu/

এবার latest SP_Flash_Tool ডাউনলোড করে /opt/SP_Flash_Tool ডিরেক্টরিতে পেস্ট করবেন রুট এক্সেস নিয়ে।এসপি টুলের ডাউনলোড লিংক
https://spflashtool.com/download/SP_Flash_Tool_Linux_32Bit_v5.1520.00.100.zip

আর কোন সমস্যা থাকার কথা না। যদি কোন ডিপেন্ডেন্সি এরর দেখায় তবে সেটা সাইন্যাপ্টিকে পাবেন। এবার সরাসরি টার্মিনাল চালু করে নিচের কমান্ড পেস্ট করে রান করুন।
/opt/SP_Flash_Tool/flash_tool.sh

ব্যস,চালু হয়ে গেল এসপি ফ্ল্যাশ টুল।  এ টিউটোরিয়াল মোটামুটি বিগিনারদের জনয় প্রযোজ্য না। মোটামুটি লিনাক্সে অভ্যস্ত যারা তাদের জন্য এটা বুঝতে অনেক সহজ লাগবে।  আল্লাহ হাফেজ।

Saturday, February 29, 2020

বিশেষ দ্রষ্টব্য

আসসালামু আলাইকুম। ফেসবুক থেকে সাময়িক বিদায়ের পর গত প্রায় তিনমাস ব্লগে কোন এ্যাক্টিভিটি নেই দেখে অনেকের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার ইচ্ছায় ভাল আছি, আলহামদুলিল্লাহ। দুনিয়ামুখী বিচিত্র ব্যস্ততায় জড়িয়ে আছি। গত তিন মাস ব্লগে প্রবেশের সময় সুযোগই হয় নি।  আল্লাহর কাছে দু'আ করছি যেন তিনি দ্রুত ব্যস্ততা ও পেরেশানি কাটিয়ে দেন। আপনাদের দু'আর কামনা করি।  এখনো পেইজে ফিরতে পারছিনা। হয়ত আরো লম্বা একটা সময় দূরে থাকতে হবে। তবে আমি এখন থেকে চেষ্টা করব মাঝেমধ্যে ব্লগে লিখতে। বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান সিরিজের ১৫ তম পর্বের পরের পর্বগুলো ব্যস্ততা না কাটা পর্যন্ত হয়ত লেখা সম্ভব হবেনা। আমার সাথে যোগাযোগ এর পদ্ধতি তেমন নেই। ব্লগে কেউ কোন কমেন্ট করলে উত্তরদানের চেষ্টা করব। তাছাড়া আমাদের ফেসবুক গ্রুপের এক্টিভিটির খবরাখবর রাখি। গ্রুপঃ https://m.facebook.com/groups/315165405515447



সেদিন এক ভাই জানালেন কেউ কেউ এই ব্লগের প্রতি আর্টিকেল এর তলায় দেয়া রেফারেন্স লিংকগুলোয় প্রবেশ করে সেখানকার মতাদর্শ নিয়ে ঘাটাঘাটির জন্য উৎসাহিত করছেন। আমি এ ভয়টিই করি। আগেও অনেকবার বলেছি, আবারো বলি রেফারেন্স লিংকে যাদুকর এবং নিকৃষ্ট কাফিরদের বিচিত্র কুফরি দর্শন, চিন্তাধারায় ভরা,ওদের চিন্তা নির্ভর কোন কিছুই গ্রহনযোগ্য না, সেখানে সেসবকে জ্ঞানের উৎস বানানো বোকামি। আমি সেসবকে ব্যবহার করি শুধুই লেখা বা ইনফরমেশন এর অথেন্টিসিটি রক্ষার্থে, সোর্স রেফারেন্স হিসেবে। কাউকে সেসবের প্রবেশের জন্য না। সেসব উল্লেখ না করলে লিখিত বিষয়বস্তু অনেকটা ভিত্তিহীন মনগড়া কাহিনী হয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে আমি মানুষ কে এক গর্ত থেকে বের হবার জন্য বলছি কিন্তু কিছু লোক আরেক গর্তে পড়লো। একাজে আমি চূড়ান্ত ভাবে নিষেধ করি। যদি কেউ বিপথগামী হয়, তাতে আমি দায়ী নই।

আরেকটি বিষয়, আমার দেয়া ডেটা-ডকুমেন্টস-আর্টিকেল এর উপর নির্ভর করে অনেকে অনেক কিছু লেখা শুরু করেছে, ভিডিও বানানোও শুরু করেছে। অনেকে এও করছে যে আমি যা বলি না তার চেয়েও বেশি বলে। তাদের কথা আমার উপর বর্তায় না, তাদের কোন এক্টিভিটিজ দ্বারা আমাকে বিচার করা সমীচীন হবে না। এসব বিষয় নিয়ে সাধারন জাহিল আলিম কিংবা গায়রে আলিম কারো সাথে অসহিষ্ণু আচরণ, আলাদা ফির্কার মত মতাদর্শ প্রচারকারীদেরকে কোনরূপ সমর্থন করিনা। তারা আমাদের নয়, আমরাও তাদের নই। কেউ যদি কোন কিছু কপি পেস্ট করে তাতে আপত্তির কিছু থাকবে না যদি সে আমার মানহাজ অন্তত লেখাগুলোর উৎস(ব্লগের লিংক) গোপন না করে। আমি একটা বিশেষ মানহাজ বা কর্মপদ্ধতির দাঈ। আমার সকল কর্মের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর পথের দিকে আহব্বান।  কোন মুরজিয়া বা আকিদা মানহাজগতভাবে কলুষিত লোক যদি আমার কথাকে তার নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাধারা বা লেখা বলে ব্লগের লিংক গোপন করে প্রচার করে তাহলে অবশ্যই আপত্তির যোগ্য কাজ।

আমি ব্লগে যাই করেছি বা করব সেসব একদমই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার জন্য। কে কি ভাবছে বা ভাববে তাতে পরোয়া করি না। আমি কারো কাছে থেকে কোনরূপ বিনিময় কামনা করিনা। কোনরূপ শুহরাত কিংবা পরিচিতি কিংবা খ্যাতির বাসনাও আমার মধ্যে নেই।  আমি সবসময় অচেনা, অপরিচিত, লুক্কায়িত হয়ে থাকতে পছন্দ করি। আমার কোন কাজের পিছনে কমার্শিয়াল পারপাজও নেই। আপনারা যে ব্লগে প্রবেশ করেন এতে আমার কোন লাভ নেই,  কোন অর্থনৈতিক লাভ নেই। উল্টো ডাটা আর সময়টাকে আমাকেই খরচ করতে হয়। অনেকে বই বের করার প্রত্যাশা করেন।  আমার একেবারেই বানিজ্যিক চিন্তা নেই। বই বের করার জন্য জ্ঞানগতভাবে নিজেকে মোটেও যোগ্যতাসম্পন্ন মনে করিনা।

অনেকে আগের ব্লগঃ The Truth is stranger এর ব্যপারে জিজ্ঞাসা করেন। ব্লগটিকে আনপাবলিশ করে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ব্লগে কোন সমস্যা হলে সেটাকে চালু করা হবে। ওই ব্লগে যেসব আর্টিকেল কন্টেন্ট ছিল এটাতেও তার সবই আছে। তাই ওটা বন্ধ থাকলেও সমস্যা নেই। 
আপনাদের দু'আ এর প্রত্যাশা করি যেন দ্রুত ব্লগ ও পেইজে ফিরে আসতে পারি। আল্লাহ হাফেজ।
 

Sunday, December 8, 2019

১৪.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?
The Occult Origins of Mainstream Physics and Astronomy
পর্বঃ ১৪



আমরা ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের আসল চেহারার কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছি। আজকের এ পর্বটি অপবিজ্ঞানের অপর এক উৎপত্তিস্থল এবং সেখান থেকে ক্রমবিকাশকে স্পষ্ট করবে। আর সেটা হচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় যাদুশাস্ত্রভিত্তিক দর্শন, সহজ ভাষায় হিন্দু-বৌদ্ধ-বেদান্তবাদ ইত্যাদি ভারতীয় দর্শন বা 'ধর্মচক্র'(wheel of dharma)। এজন্য সবার প্রথমে আবারো আর্যদের কাছে ফিরে যেতে হবে। কেননা হিন্দুদের বেদ শাস্ত্রের অরিজিন্স  আর্যদের থেকে। আমরা ৩নং পর্বে এ নিয়ে সামান্য উল্লেখ করলেও আজ আবারো সামান্য উল্লেখ করছি।


ভারতের মাটিতে আর্যরা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। ইতিহাস অনুযায়ী তাদের আগমন ছিল অনেকটা সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের মত। তারা সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে উন্নত ছিল। রণকৌশলগত দিক দিয়েও উচু স্থানে ছিল, যার জন্য ভারতীয় আদিবাসীরা দমন পীড়নে সফল হয়নি, বরং আর্যদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। আর্যদের ধর্মশাস্ত্রের নাম বেদ। তারা সাধারণ ভারতবাসীদের তুলনায় শারীরিক ও জ্ঞানগত দিক দিয়ে উন্নত হওয়ায় তাদের মধ্যে বর্নবাদ বা বর্ণবৈষম্যের মানসিকতা চলে এসেছিল। এরা সাধারণ মানুষদের অনার্য বলত। তাদের মুখের ভাষা ছিল সংস্কৃত।

এবার প্রশ্ন আসে, আর্যদের আদি নিবাস কোথায়! ইতিহাসবিদগন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মত দিয়েছেন। তারা ছিল বাবেল শহরের দেশ ইরাকের পাশের দেশ পারস্যের বাসিন্দা। ভাষাবিদদের মতে আজকের ইরান শব্দটি আরিয়ান(আর্য) শব্দ থেকে রাখা হয়েছে। পারস্যের জন্দভেস্ত শাস্ত্র এবং বেদের ভাষাগত সাদৃশ্য এমনকি পূজিত দেবতা-অপদেবতাদের সাদৃশ্য প্রমাণ করে আর্যরা পারস্যে হয়ে ভারতবর্ষে আগমন করে। জেন্দভেস্তায় বরুণকে দেবরাজ ও ইন্দ্রকে মন্দ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ঋগবেদে বরুণ জল ও মেঘের দেবতা আর ইন্দ্রকে দেবরাজ। রামের মিত্র গুহক চন্ডাল (Chaldea) বংশ সম্ভূত।

আচার্য জগদীশ চন্দ্রের মতে, ভারতীয় আর্যগণ ভারতে আসার পূর্বে কৃষ্ণ সমুদ্রের তীরে এবং আর্মেনীয়ায় বাস করতেন এবং তাঁরাই প্রাচীন ব্যবলিন, মিশরিয় সভ্যতার সৃষ্টি করেছিলেন। ঋগ্বেদের ভৌগলিক বিবরণে নির্ভর করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, আর্যগণ শুধু যে পন্টাশ ও আর্মেনীয়া অঞ্চলে বাস করতেন তা নয়, ককেশিয়া এশিয়া-মাইনর ও ক্রীট দ্বীপেও তাঁদের বাস ছিল। বেদে যেরূপ বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে, তা ঐ সকল স্থানের সঙ্গে যথাযথ মিলে গেছে। এমন অনেক নগর নদী ও পর্বতের উল্লেখ দেখা যায়, যা ভারতে নাই, অথচ ঐ সকল প্রদেশ এখনও অবিকৃত নামে পরিচিত আছে। আর্যগণ কখন ভারতে আসেন, এই প্রসঙ্গে জগদীশ চন্দ্র বলেন,শুধু যে বেদ লিখিত হওয়ার পরে, আর্যরা ভারতে আসেন , এমন নয়, এমন কি, রামায়ণ মহাভারত বর্ণিত যুদ্ধও আর্য জাতির ভারতে আসবার পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল। কুরুপান্ডবদের ও রামরাবণের যুদ্ধ ভারতীয় ঘটনা নয়। যবদ্বীপ বা বলী দ্বীপের সঙ্গেও এ সমস্ত ঘটনার কোন সম্বন্ধ নাই। বুদ্ধদেবের জন্মের কিছু পূর্বে আর্যগণ ভারতে আসেন। এই জন্যেই ভারতে এমন কিছু Archaeological প্রমাণ বর্তমান নাই যার দ্বারা মহাভারত ও রামায়ণে বর্ণিত আর্যকীর্তি সপ্রমাণ হতে পারে । প্রতীচ্য পন্ডিতগণ এইজন্যই বলেন যে, মহাভারত ও রামায়ণে ঐতিহাসিক সত্য নাই। বুদ্ধের একজন শিক্ষকের নাম ছিল আলার কালাম। এটি ব্যবিলনীয় নাম। এক ব্যবিলনীয় রাজাও এই নামে পরিচিত ছিলেন, বুদ্ধের সময় পর্যন্তও আর্যগণ পূর্ব প্রথায় নামাকরণ করতেন।
বেদ বর্ণিত ভৌগলিক বৃত্তান্তের একটি উদাহারণ এই যে, রাজা সুদাসকে ‘পৈজবনী’ বলা হয়েছে। তিনি (Pizvon) ‘পিজবনে’ রাজত্ব করতেন। এই Pizvon ইউফ্রেটিস(ফোরাত) নদীর তীরে অবস্থিত। তুর্বস, শিমু, কবশ, পুরু, ভেদ, সম্বর, ভালান, আলিনস, শিব, অজ, সিগ্রু ও যক্ষেরা এই Pizvon এর উত্তরে বাস করতেন।সোমসুষ্ম, হরিকষি, চমুর, বিপাসি-আার্জিকীয়, ক্রুম, কুভ, তৃষ্টমা, সিন্ধু বিধরণী, এই সকল স্থান কৃষ্ণ সমুদ্রের তীরবর্তী প্রদেশে পাওয়া যাচ্ছে। ভারতে এই সকল নামে অভিহিত কোনও স্থানের উল্লেখ বা অস্তিত্ব নাই। কেউ কেউ এমনও বলছেন যে কশ্যপ মুণির নামানুসারে কাস্পিয়ান হ্রদের নাম করণ করা হয়েছে। কয়েকজন পশ্চিমা নৃবিজ্ঞানিও এ মতের সমর্থন করেছেন। এমতবাদ কে আউট অব ইন্ডিয়া(Out of India) হিসাবে অভিহিত করা হয়।

ভাষা ও ইতিহাসবিদগন আরেকটি মত পোষণ করেন যে,আর্যদের আদি নিবাস উড়াল পর্বত সংলগ্ন তৃনভূমি যার জন্য সাদৃশ্যতার জন্য ইউরোপীয় Slavic ভাষাকে ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করে। পাশ্চাত্যে আর্যদের নিয়ে আগ্রহ বাড়তে শুরু করে ১৯ শতকে। ১৭৮৩ সালে উইলিয়াম জন্স সংস্কৃত এবং গ্রীক ল্যাটিন কেল্টিক জার্মান ভাষার মধ্যে সাদৃশ্য খুজে পান, এরপরে Franz Bopp দেখান যে আভেস্ত, আর্মেনীয়, স্লাভিক ভাষাগুলোর সাথেও সম্পর্ক রয়েছে,এ কথা আসলেই সত্য যে ব্যবিলনীয়ান প্রাচীন রাজাবাদশাহদের নামগুলো কেমন যেন হিন্দুয়ানি শোনায়। ভাষাবিদগনের এই মতামত আর্যদের ব্যাপারে এরকম ভাবায় যে, এরা বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা জাতি। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে এরা ভারতে প্রবেশ করে। সেইসাথে আরেকটি ধারণার উন্মেষ ঘটায়। অনেক দার্শনিকরা প্রচার করা শুরু করে, এই আর্যরা ছিল প্লেটোর বলা সেই মিথিক্যাল মহাদেশ আটলান্টিস থেকে বেচে আসা অবশিষ্ট জনগণ যারা ইউরোপ, এশিয়ার ইরাক - পারস্য সংলগ্ন অঞ্চল এবং ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। ফলে নর্ডিক, জার্মানিক, পারসিয়ান ও ভারতীয়দের রক্তে আর্যদের রক্ত মিশে যায় বলে প্রচার হয়।[১]

আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করেন রাশিয়ান মিস্টিক ও অকাল্টিস্ট ম্যাডাম হেলেনা পেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কি। তিনি বিবর্তনবাদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে মূলজাতি(রুটরেস) হিসেবে আর্যজাতির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অনেক কিছু লেখেন যা থেকে জার্মানির এডলফ হিটলার গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে তার মধ্যে Aryan Supremacy 'র ধারনা চলে আসে। ফলে উগ্র অকাল্ট বিশ্বাসে বশবর্তী হয়ে প্রচণ্ড জাতিবিদ্বেষ নিয়ে ইহুদী গনহত্যা শুরু করে। হিটলার এত বেশি আর্য শ্রেষ্ঠত্বের দ্বারা প্রভাবিত ছিল যে, সে বিজ্ঞানী গবেষকদের পথে নামিয়ে সাধারন মানুষের মুখের আকার পরিমাপ করে আর্য বংশধরদের খুঁজতেন। আর্য অনার্য পার্থক্য করতেন। এই অদ্ভুত কাজের ভিডিও ফুটেজ ধারন করা হয়েছিল যা আজও টিকে আছে।

আর্যদের আদি নিবাসের ব্যপারে সত্য যাই হোক, এ ব্যপারে অন্তত বলা যায় যে আর্যরা ভারতের আদিবাসী নয়। অর্থাৎ বেদ-সংস্কৃত এগুলো বিদেশী ভাষা-সাহিত্য ও শাস্ত্র। অবশ্য আজকের হিন্দুদের একদল প্রমাণের চেষ্টা করে যে আর্যরা ভারতেরই প্রাচীন আদিবাসী,তারা অনুপ্রবেশকারী দস্যু নয়, এর দ্বারা তারা প্রমাণ করতে চায় যে, আর্য-হিন্দুত্ববাদ এগুলো ভারতেরই নিজস্ব জিনিস, তারাই সবচেয়ে সনাতন এবং উন্নত সভ্যতা।

ইরাক সিরিয়ার অন্তর্গত ফোরাত নদীর ব্যপারে বৈদিক শাস্ত্রের উল্লেখ,বুদ্ধের শিক্ষকের ব্যবিলনীয়ান নাম,  পারস্যের ভাষা ধর্ম সাহিত্যের সাদৃশ্যতা, ইরান থেকে আগমনের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রভৃতি প্রমাণ করে, কোন এক সময়ে আক্কাদিয়ান-অ্যাসিরিয়ান-ব্যবিলনীয়ান সম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রনে আর্যরা ছিল, তখনই বেদ রচিত হয়। ব্যবিলনীয়ান সম্রাট বখতে নাসরই সারা পৃথিবীকে শাসন করেন। এর আগেও এরকম totalitarian one world order এর ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। অর্থাৎ বৈদিক শাস্ত্রের অরিজিনস বাবেল শহর কিংবা তার আশপাশ থেকে ভারতে যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই বেদ ব্যবিলনীয়ান রহস্যবাদী জ্ঞান বিজ্ঞান দ্বারা সমৃদ্ধ হবে, যা আজ ভারতবর্ষে পরম পূজনীয় বিশুদ্ধ জ্ঞান(sacred knowledge)। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীরা আমাদের আশপাশে মিলেমিশে থাকার জন্য আমরা ব্রাহ্মান্যবাদী শাস্ত্র গুলোর দিকে কখনো বাঁকাচোখে তাকাই না,এজন্য সেসবের ব্যপারে কারও তেমন মাথাব্যাথ্যা নেই। অথচ হিন্দুত্ববাদী শাস্ত্রগুলো গভীরভাবে দেখলে দেখবেন, এসব যাবতীয় নিষিদ্ধ বিদ্যা দ্বারা সমৃদ্ধ কিছু শাস্ত্র। এতে তন্ত্র মন্ত্রের শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবিলনীয়ান ম্যাজাইদের থেকে আসা  জ্যোতিষশাস্ত্র এবং সেই সাথে সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে বিচিত্র রূপকের আড়ালে ঐ একই তত্ত্বের আলোচনা আছে, যা পৃথিবীর প্রত্যেক বাতেনিয়্যাহ(গুপ্তবাদী/অধিবিদ্যার সাধক - যাদুকর)  গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান, সেই একই যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক অকাল্ট বিশ্বদর্শন! অন্যান্য যাদুর মাজহাবগুলো বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের স্বীকার হয়েছে, বিভিন্ন সময় বিলুপ্তির মুখে পড়েছে(খ্রিষ্টান-মুসলিমদের শাসনামলে), অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, কিন্তু ভারতবর্ষের তথা পূর্বাঞ্চলীয় যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শনগুলো সবসময়ই মাথা উচু করে ছিল। এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী বিদেশী দখলদারদের আনাগোনা চললেও হিন্দুত্ববাদ সম্মানের সাথে মাথা উচু করে থেকেছে। এ অঞ্চল মধ্যযুগীয় খ্রিষ্টানদের প্যাগান নিধনের সেই আগ্রাসন থেকে নিরাপদেই ছিল। আলেকজান্ডার যখন হিন্দুস্তান দখল করে তখন হিন্দুত্ববাদ মহা সম্মানের সময় পার করেছে, গ্রীক শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য। পরবর্তীতে যখন মুসলিমরা ক্ষমতায় আসে, তারাও হিন্দুত্ববাদ তথা বৈদিক দর্শনশাস্ত্রের উপর উল্লেখযোগ্য তেমন কোন আগ্রাসন চালায়নি। সংস্কৃত ভাষার জন্য অন্যদেশী, অন্যভাষীরা কখনো বোঝেনি এতে কি আছে। যখন ইংরেজরা ভারত দখল করলো তখন হিন্দুদের সাথে মিত্রতা করলো। সুতরাং পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্ট ট্রেডিশন সবসময় ব্যাঘাতহীনভাবে বিকশিত হয়েছে। এজন্য হাজার হাজার বছরের পুরোনো আর্যদের শাস্ত্র এখন পর্যন্ত টিকে আছে। প্রাচীন যুগে বাবেল শহরটি যেমন রহস্যবাদ(Mysticism) ও যাদুবিদ্যার(Occultism) কেন্দ্রবিন্দু ছিল তেমনি এখন ভারত হয়ে গেছে অকাল্ট জ্ঞান বিজ্ঞানের মহা আধার। আল্লাহর রাসূল (সঃ) পূর্বদিকের ব্যপারে সাবধান করেছেন। বলেছিলেন কুফরের মূল হচ্ছে পূর্বদিক।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কুফরীর গোড়া হল পূর্বদিকে।

(বুখারী ৩৩০১, মুসলিম ৫২)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৭৫২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

মক্কার পূর্বদিকে ছিল বাবেল শহর একইভাবে পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থান ভারতবর্ষের, যেখানে ব্যবিলনীয়ান বিদ্যা সংরক্ষিত এবং বিকশিত হয়েছে।


পশ্চিমা বিশ্বে পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্টিজমের প্রবেশঃ
ভারতবর্ষ তথা পূর্বাঞ্চলীয় মানুষের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের ধর্মীয় বিষয়ে সংযোগ এবং আদানপ্রদান বেশ পুরোনো। প্রথম দিকে বৌদ্ধ ধর্মের সাথে পাশ্চাত্যের মিথস্ক্রিয়া ঘটে। বৌদ্ধ ধর্মটির উৎস হিন্দু ধর্মই। ব্রাহ্মন পরিবারে জন্মানো গৌতম বুদ্ধ যখন প্রচলিত হিন্দুধর্মে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তখন নিজেই এর উপর ভিত্তি করে নতুন কিছুর অন্বেষণ করতে শুরু করলেন, যাতে করে পূর্ন আধ্যাত্মিক উপলব্ধি পাওয়া যাবে। এরকমটা ধারনা করা হয়, তিনি ব্যবিলন শহরেও জ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেন, এ বিষয়ে আলোচনা গত হয়েছে। তার শিক্ষকের নামে যেহেতু ব্যবিলনীয়ান নামের সাদৃশ্যতা আছে সুতরাং তার শিক্ষা ও বিদ্যায় বাবেল শহরের দার্শনিক ও যাদুকরদের প্রভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। তিনি ধ্যানের দ্বারা চেতনার ওপারে(altered state of consciousness) যেতেন অদৃশ্য-অস্পৃশ্য জাতির(জ্বীন) সহায়তায় অধিবিদ্যা অর্জন এবং আধ্যাত্মিক সিদ্ধির লক্ষ্যে। ধীরে ধীরে সর্বেশ্বরবাদী বৌদ্ধ দর্শন গড়ে ওঠে এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হিন্দুত্ববাদ, বৌদ্ধমত প্রভৃতি কোন ধর্মের(religion) শ্রেনীতে পড়ে না বরং সেগুলো প্রতিষ্ঠিত দর্শন।

পাশ্চাত্যে হিন্দুত্ববাদের আরেক শাখা তথা বৌদ্ধ দর্শনের সাথে সংযোগ প্রায় দু-হাজার বছরের বেশি। সর্বপ্রথম মিথস্ক্রিয়া ঘটে ঈসা(আঃ) এর জন্মের পূর্বে হেলেনিস্টিক পিরিয়ডে গ্রীকদের সাথে। আলেকজান্ডারের দখলের ফলে সেসময় আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের অধিকাংশ অঞ্চল গ্রীক শাসনের অধীনে ছিল।তখন উপনিবেশিক গ্রীক শাসকগোষ্ঠীর একদল লোক ভারত ও ব্যাক্ট্রিয়ার এসে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করে। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত এসকল লোকেরা ইন্দো-গ্রীক রাজাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়। তারাই গ্রেসীয়-বৌদ্ধমত এর প্রবর্তনা ঘটায়। তখন বৌদ্ধমত গ্রেসীয়- ব্যাক্ট্রিয়ান এবং ইন্দো-গ্রীকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইন্দো-গ্রীক রাজাদের মধ্যে Menander I এবং Menander II বৌদ্ধদের প্রতীক মুদ্রায় ব্যবহার চালু করেন, ধর্মচক্রের প্রতীকও মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়। রাজা প্রথম মিনান্ডার ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের গ্রন্থ Milinda Panha এর প্রধান আলোচিত চরিত্র যেটায় বলা আছে যে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন। বৌদ্ধদের মতে, সম্রাট অশোকের পাশাপাশি মিনান্ডার বৌদ্ধ ধর্মের অনেক বড় হিতকারী বন্ধু। Mahavamsa এ উল্লেখ আছে যে, মিনান্ডারের শাসনামলে মহাধর্মরক্ষীতা নামের এক প্রবীণ বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রায় ৩০০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে গ্রীসের আলেকজান্দ্রিয়া (ককেশাসের) শহর থেকে শ্রীলংকায় নিয়ে আসেন শুধুমাত্র বৌদ্ধধর্মের প্রতি গ্রীকদের ত্যাগ ও উদারতা প্রদর্শনের জন্য।

৩য় থেকে ৪র্থ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান লেখক হিপ্পোলাইটাস এবং এপিফানিয়াস, Scythianus নামের একজন ব্যক্তির ব্যপারে বলেছেন যিনি ৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতে গমন করেন এবং "দ্বৈতনীতির মতবাদ" অর্জন করে ফেরেন।জেরুজালেমের Cyril এর মতে, Scythianus এর শিষ্য Terebinthus নিজেকে "বুদ্ধ" নামে পরিচয় দেয় এবং ফিলিস্তিন, জুডিয়া ও ব্যবিলনে সেসব প্রচার করে।

মধ্যযুগের শুরুতে বৌদ্ধ বা পূর্বাঞ্চলীয় দর্শনের সাথে পাশ্চাত্যের তেমন উল্লেখযোগ্য সংযোগ ঘটে নি। কিন্তু ষোড়শ শতকের শুরুতে ইউরোপের খ্রিষ্টানদের সাথে বৌদ্ধদের যোগাযোগ শুরু হয়। জেসুইট মিশনারির সেন্ট ফ্রান্সিস জাভিয়ার এবং ইপ্পোলিটো ডেসিডারি কর্তৃক বৌদ্ধদের মতবাদ এবং চর্চার বিশদ বর্ননা খ্রিষ্টানদের কাছে পৌছায়। ইপ্পোলিটো ডেসিডারি লম্বা সময় তিব্বতে অবস্থান করেন, সেখানে তিনি তিব্বতীয় ভাষা - দর্শন শিখে বিশদভাবে তিব্বতীয় বৌদ্ধমত এবং তার ভ্রমনের ব্যপারে লেখেন।

পাশ্চাত্যে ভারতীয় দর্শনের(Eastern esoteric philosophy) প্রথম প্রকাশ পায় যাদের মধ্য দিয়ে, তাদের প্রধান একজন Arthur Schopenhauer। তিনি ১৮৫০ সালে আর্যদের বৈদিক আধ্যাত্মিক আত্মজ্ঞানের চেতনাকে ব্যবহার করে নৈতিকতামূলক চিন্তাধারার প্রচার করেন।
এরপরে ১৮৭৫  সালে রাশিয়ান হেলেনা পেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কি নিউইয়র্কে থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।সেটা হিন্দুত্ববাদ,বৌদ্ধমত,  হার্মেটিক, কাব্বালার সম্মিলিত একটা যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক মিস্ট্রি স্কুল। সমস্ত কুফরি শাস্ত্র,বিদ্যা ও আকিদার অসাধারণ সমন্বয়। ১৮৭৯ সালে তিনি ভারতে পাড়ি জমান আধ্যাত্মিক গুপ্তজ্ঞানের অন্বেষণে। এই থিওসফি(theosophy) পরবর্তীতে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর মধ্যে তৈরি হওয়া নিউএজ(New age) মুভমেন্ট এর বিশ্বাস,চিন্তাধারা মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
New Age শব্দটি ব্লাভাস্তস্কির ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত The Secret Doctrine  (গুপ্ত মতবাদ) নামের গ্রন্থ থেকে এসেছে। H.P Blavatsky তার অর্জিত জ্ঞানের উৎস হিসেবে তিব্বতীয় "শিক্ষকের" কথা বলতেন। তিনি বলতেন ওইসব আধ্যাত্মিকভাবে সিদ্ধ শিক্ষকেরা চান প্রাচীন অকাল্ট দর্শন যা প্রাচীন যুগে একসময় ছিল, আবারো পৃথিবীতে জাগ্রত হোক। তারা ব্লাভাস্তস্কির দ্বারা সেটার পুনঃজাগরন ঘটাতে চাইছেন যেটা নিকট ভবিষ্যতে অন্যান্য ধর্মগুলোর পতন ঘটাবে। তিনি তার বইতে সরাসরি শয়তানকে একমাত্র উপাস্য বলে দাবি করেন। তাছাড়া বিব্লিক্যাল  লুসিফারকেও প্রশংসা করেন। তিনি দাবি করেন সমস্ত জ্ঞান এই লুসিফার থেকে আসে। তিনি বলেনঃ
"শয়তান হচ্ছে এই গ্রহের ঈশ্বর একমাত্র উপাস্য"

খুতুমি ও এলমোরিয়া(শয়তান) নামের দুই শিক্ষকের(ascended masters) কথা তিনি বলেন, যাদের থেকে তিনি গুপ্তবিদ্যা অর্জন করেছেন। ১৮৮০ সালে ভারতের তামিল নাড়ুর adyar এ প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে। থিওসফির মূল তত্ত্ব হচ্ছে ওয়াহদাতুল উজুদ বা মনিজম সহজ ভাষায় সর্বেশ্বরবাদ, পুনর্জন্মবাদ, বিবর্তনবাদ,সকল বাস্তবতা(reality) হচ্ছে আসল বাস্তবজগতের প্রতিবিম্ব, বাস্তবতা হচ্ছে মায়াজাল। কোন কিছুই সলিড নয়।  হেলেনা Isis Unveiled এবং The Secret Doctrine নামের দুটি বই প্রকাশ করেন।
থিওসফি বা থিওসফিক্যাল সোসাইটিকে হালকাভাবে নিলে ভুল হবে । শুনলে অবাক হতে হবে যে, থিওসফির সাথে সংযুক্ত ছিল খোদ মহাত্মা গান্ধীর মত নেতা! দুজন থিওসফিস্ট(প্যাগান ধর্মতত্ত্ববিদ) মহাত্মা গান্ধীকে ভগবতগীতা উপহার দেওয়ার পর থেকে গান্ধী হিন্দুত্ববাদী চেতনার প্রতি ঝুকছিলেন। গান্ধী, ম্যাডাম হেলেনা এবং এ্যানি বিসেন্টের সাথে একান্ত সাক্ষাতও করেছেন। মহাত্মা গান্ধী আমৃত্যু থিওসফিস্ট ছিলেন। তিনি বলেন,
"থিওসফি হচ্ছে ম্যাডাম ব্লাভাস্তকির শিক্ষা....থিওসফি হচ্ছে মানবজাতির ভ্রাতৃত্ব।"

অন্যত্র তিনি ভারতের স্বাধীনতায় থিওসফিস্টদের ভূমিকার কথা জোর দিয়ে বলতে গিয়ে বলেন,
"শুরুতে ভারতের শীর্ষসস্থানীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতাগন ছিলেন থিওসফিস্ট।"

মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর দিনই একটি জার্নাল প্রকাশ করা হয় যাতে উল্লেখ ছিল, "থিওসফিক্যাল লিটারেচারে অনেক প্রশংসনীয় বিষয় আছে যা কেউ তার সর্বোত্তম কল্যানের জন্য পাঠ করবে,কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে অকাল্ট বিদ্যা অর্জনে বুদ্ধিবৃত্তিক পাঠ্যবিষয়ে খুব বেশি জোড় দেওয়া হয়েছে,  এবং এটাই থিওসফির কেন্দ্রীয় ধারনা- মানবজাতির ভ্রাতৃত্ব এবং মানুষের নৈতিকতা অর্জন - যা হারিয়ে গেছে।"[৪]

রুডল্ফ স্টেইনার, ম্যানলি পি হল প্রমুখ দার্শনিক এবং ফ্রিম্যাসন অনেক বিষয়ে থিওসফিক্যাল সোসাইটির উপরনির্ভর করতেন। বিখ্যাত অকাল্ট রাইটার ডেভিড আইক এখনো থিওসফিক্যাল সোসাইটির কিতাবাদি থেকে অনুসারীদেরকে শেখায়।[১৫]


১৮৭৯ সালে স্যার এডউইন আর্নল্ড এর দ্য লাইট অব এশিয়ার কবিতায় গৌতম বুদ্ধের জীবনকে তুলে ধরেন। সে বই বেস্ট সেলারের তালিকায় ছিল। এ বই তখন প্রকাশ হয়, যখন খ্রিষ্টানধর্ম ডরউইনের বিবর্তনবাদ এবং বস্তুবাদের দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তখন পাশ্চাত্যের বিদ্বান ও সুশীল সমাজের কাছে বৌদ্ধধর্মটি একটি যৌক্তিক বিকল্প ধর্মমত হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া শুরু করে। এডুইন আর্নল্ড এর এই বইটি তাই এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে তা প্রায় ৮০ টি সংস্করণ বের হয় এবং প্রায় ১০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়!

থিওসফিক্যাল সোসাইটির অবদানে বৌদ্ধধর্ম আরো জনপ্রিয়তা পায়। স্টিফেন প্রোথেরোর মতে, থিওসফিস্টদের মধ্যে হেলেনা প্রেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কি, হেনরি স্টিল ওলকট বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন, যারা ১৮৮০ এর দিকে ইউরোপিয়ান - আমেরিকানদের মধ্যে প্রথম ফর্মালভাবে বৌদ্ধদর্শন গ্রহণকারী।
হেনরী ওলকট সিংহলি বুদ্ধধর্মের প্রচার প্রসারে খুবই প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব ছিল। তিনিই Buddhist Modernism এর প্রবর্তনায় বড় ভূমিকায় ছিলেন।তিনি থিওসফিক্যাল সোসাইটির শাখা তৈরিতে পাশে ছিলেন, এজন্য প্রথমদিকে তিনি শ্রীলংকায় যান। বৌদ্ধদের বিভিন্ন কিতাবাদিও রচনা করেন,তার একটি the Buddhist Catechism (1881)। তার কাজে আরো উৎসাহ দিতে বৌদ্ধদের মধ্যে Hikkaduve Sumangala তার দিকে এগিয়ে আসেন।হেনরি ওলকট, পল কারাস,সয়েন শাক প্রমুখ যে ধরনের বৌদ্ধমত প্রচার করছিল সেটাকে বলা হয় " Buddhist modernism"।
এ ধরনের বৌদ্ধদর্শনে সরাসরি বৌদ্ধধর্মের নামে প্রচার করা হয় না বরং বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন মতবাদ কে যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক দর্শনে রূপ দেওয়া হত। ওলকটের 'বুদ্ধিস্ট ক্যাটেকিজমে' বিজ্ঞানের সাথে এই দর্শনের সাদৃশ্যতা তৈরি এবং বিজ্ঞানের অরিজিনের সাথে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। Paul Carus বিশ্বাস করতে বাধ্য হন যে বৌদ্ধ ধর্ম হচ্ছে  "বিজ্ঞানের ধর্ম"(religion of science)। তার বিখ্যাত একটি লেখনী হচ্ছে The Gospel of Buddhism, যেটা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। একই ধরনের চিন্তাধারার প্রচারক ছিলেন অনাগরিক ধর্মপাল নামের এশিয়ান বৌদ্ধ ধর্মগুরু।

ইউরোপেও ১৯ শতকে বৌদ্ধ শাস্ত্র নিয়ে গভীর গবেষণা শুরু হয়। Eugène Burnouf নামের এক ফ্রেঞ্চ ওরিয়েন্টালিস্ট(প্রাচ্যবিদ) সর্বপ্রথম সংস্কৃত পদ্মসূত্রের ফ্রেঞ্চ অনুবাদ করার মাধ্যমে ইউরোপে ব্যাপক বৌদ্ধ দর্শনের প্রসার শুরু হয়। তার পাশাপাশি Christian Lassen পলি ভাষার ব্যাকরণ প্রকাশ করেন ১৮২৬ সালে। Robert Caesar Childers ১৮৭৫ সালে প্রথম পলি শব্দভাণ্ডার এবং অনুবাদ প্রকাশ করেন। ইন্দোলজিস্ট ম্যাক্স মুলার অক্সফোর্ড সিরিজে Sacred Books of the East নামে অনেক বৌদ্ধদের শাস্ত্র প্রকাশ করেন। ১৮৮১ সালে, Dhammapada (Müller ) ও Sutta-Nipata ( Viggo Fausböll) ১০ খন্ডের অনুবাদসহ প্রকাশ করা হয়। Hermann Oldenberg ১৮৮১ সালে Buddha: his life, his doctrine, his order ( Buddha: Sein Leben, seine Lehre, seine Gemeinde) নামে পলিভাষার কিতাবাদি প্রকাশ করে বেশ জনপ্রিয় হন। এই সময় জার্মান দার্শনিক Schopenhauer বৌদ্ধদর্শনের খুব প্রশংসা করেন। তিনি এমনকি দাবি করেন বৌদ্ধদর্শন পৃথিবীর অন্য যেকোন ধর্ম অপেক্ষা ভাল।
Friedrich Nietzsche আরেক জার্মান দার্শনিক, যাকে গোটা বিশ্ব চেনে, তিনিও বৌদ্ধধর্মের প্রশংসাকারী। ১৮৯৫ সালে তার প্রকাশিত The Anti-Christ বইয়ে তিনি বৌদ্ধধর্মের অনেক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "a hundred times more realistic than Christianity" অর্থাৎ, বৌদ্ধধর্ম খ্রিষ্টানধর্মের চেয়েও শতগুন বেশি বাস্তবিক। ১৮৮৩ সালের আরেক প্রকাশনায় বলেন, "আমি ইউরোপের বুদ্ধ হতে পারতাম"।

উত্তর আমেরিকায় প্রথম বৌদ্ধ অভিবাসী ছিল ১৮৪৮ সালে কিছু চাইনিজ বৌদ্ধ, যারা West Coast এ আস্তানা গাড়ে। ১৮৭৫ সালের মধ্যে ৮ টি মন্দির গড়া হয়ে যায় সানফ্রানসিসকোতে। ১৮৯৩ সালে Jōdo Shinshū সন্ন্যাসী ভিক্ষুরা চলে আসে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে Buddhist Missions of North America নামে কাজ শুরু করে। এরপরে জাপানি বৌদ্ধরাও আসতে শুরু করে। চাইনিজরা বৌদ্ধধর্মের পাশাপাশি অনেকে তাওবাদেরও প্রচার শুরু করে। আমেরিকান ট্রান্সেন্ডেন্টালিস্টরা বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনেক পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। র‍্যাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন বলতেন, সত্যিকারের আদর্শ Transcendentalism এর জন্য হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রতীক্ষা করছিল তারা। ১৮৯৮ সালের দিকে DT Sujuki থিওসফি হিন্দুত্ববাদ ও বৌদ্ধদর্শনের প্রসারে বড় ভূমিকা রাখেন। ১৯০৩ সালের দিকে জার্মানিতেও বৌদ্ধদের জয়যাত্রা শুরু হয়, এরপরে ব্রিটেনে। এভাবে ইউরোপজুড়ে Eastern Mysticism এ ঝোঁক দিনদিন বাড়তে থাকে।


পাশ্চাত্যে ভারতীয় অকাল্ট দর্শনগুলো পৌছানোর কাজে থিওসফিক্যাল সোসাইটির পর যদি কারো নাম আসে তাহলে সেটা স্বামী বিবেকানন্দ। বিবেকানন্দের আমেরিকা সফরের আগে এমারসন ও হেনরী থরেউ তাদের কবিতা ও প্রবন্ধে ভগবত গীতা থেকে কিছু অনুচ্ছেদ তুলে ধরে পাঠকদের চিন্তার জগতে আকর্ষণ তৈরি করেছিলেন। Brahma ও Hamatreya নামের দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। বিবেকানন্দের অন্যনাম নরেন্দ্রনাথ। নরেন নামেও পরিচিত ছিল। তিনি রামকৃষ্ণের সাথে সাক্ষাতের আগেই রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ নামের বেদান্তবাদী শাখাকে গ্রহন করেন।
রামকৃষ্ণ ছিলেন কলকাতার এক কালী মন্দিরের পুরুতঠাকুর, পরে তিনি বিবেকানন্দের গুরু হন। রামকৃষ্ণের মাধ্যমে নরেন প্রাচ্যবাদ, পেরেনিয়ালিজম এবং ইউনিভার্সালিজমের ব্যপারে জানেন। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনে সুবিধাভোগী হিন্দুদের ন্যায় বিবেকানন্দ পাশ্চাত্যের বই পাঠের সুযোগ পান। তিনি  David Hume , Immanuel Kant , Johann Gottlieb Fichte , Baruch Spinoza, Georg W. F. Hegel , Arthur Schopenhauer , Auguste Comte ,
John Stuart Mill এবং Charles Darwin এর কিতাবাদি পাঠ করেন। ১৮৮৪ সালের কিছু আগে বিবেকানন্দ ফ্রিম্যাসনে যোগদান করেন(তার নামে ম্যাসনিক লজও খোলা হয়)।

নরেন্দ্র বৈদিক শাস্ত্রের থেকে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে নতুন রূপ দান করেন। এই ব্যাখ্যা নিও-বেদান্ত নামে পরিচিত হয়, যেখানে Advaita Vedanta যোগসাধনা, সমাজকর্ম  শেখাতো কিভাবে মানব ঊৎকর্ষে পৌছানো যায়। এটাকে বিবেকানন্দ বলতেন 'প্র‍্যাক্টিক্যাল বেদান্ত'। তিনি হিন্দু বেদান্তবাদকে পশ্চিমাদের জন্য গ্রহন উপযোগী করেন।
তার বিখ্যাত বক্তব্য ছিল ১১সেপ্টেম্বর ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে অনুষ্ঠিত Parliament of the World's Religions এর অধিবেশনে। তার ওই বক্তব্য পশ্চিমে অনেক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে সেই সাথে ভারতেও পরিচিতি লাভ করেন। তার দ্বারা পাশ্চাত্যে অস্তিত্বগত অদ্বৈতবাদ অর্থাৎ সর্বেশ্বরবাদের ধারনাটির প্রসিদ্ধি লাভ করে। বিবেকানন্দের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তার উত্থান। পাশ্চাত্যের চেতনার সামনে হিন্দুত্ববাদকে মাথা উচু করে দ্বার করানো। মহাত্মা গান্ধীও একই রকমের হিন্দু জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত ছিলেন। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসলামবিদ্বেষী সংগঠন Rashtriya Swayamsevak Sangh (RSS) এর নেতা Babasaheb Apte এর সারাজীবনে একটি কথাই বলে গিয়েছেন, সেটা হলো, "বিবেকানন্দ আরএসএসের কাছে গীতা তুল্য"।

বিবেকানন্দ ৩১ মে ১৮৯৩ সালে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিনি চীন জাপান হয়ে কানাডা যান এরপরে আমেরিকা। ৩০ জুলাই শিকাগো পৌছান।" Parliament of Religions" সেখানে অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল পূর্ব পশ্চিমের ধর্মীয় সেতুবন্ধনের ন্যায়। হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করছিল ব্রাহ্মসমাজ ও থিওসফিক্যাল সোসাইটি। সেখানে বিবেকানন্দ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন হিন্দুত্ববাদের জয়গান গেয়ে। প্রথম দিকে এত উদ্বিগ্ন ছিলেন যে স্বরস্বতী দেবী মূর্তিকে উদ্দেশ্য করে পূজো দেন। প্রথম বাক্যটি ছিল, 'আমেরিকার ভাই ও বোনেরা'। এটা শুনেই উপস্থিত ৭০০০ জন সবাই দাঁড়িয়ে হিন্দুত্ববাদের প্রতি সম্মানে দু মিনিট নিরবতা পালন করে।
এরপরে নিরবতা ভেঙ্গে বিবেকানন্দ ওরফে নরেন বলেন, সর্বকনিষ্ঠ জাতির প্রতি সবচেয়ে প্রাচীন জাতির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, যেটা সন্ন্যাসবাদের সবচেয়ে পুরাতন ধারা, যা মানুষকে সহিষ্ণুতা এবং সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতার শিক্ষা দিয়েছে।

Parliament President John Henry Barrows বলেন, "ধর্মসমূহের মাতা ভারতের পক্ষ থেকে গেরুয়া সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন যিনি শ্রোতা দর্শকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রভাব বিস্তার করেন।"
এরপরে আমেরিকান পত্রপত্রিকা গুলোয় বিবেকানন্দের প্রশংসায় ভরে যায়। ব্রুকলিনের এথিক্যাল সোসাইটির প্রশ্ন উত্তর পর্বে বিবেকানন্দ বলেন, 'আমার একটা বার্তা আছে পশ্চিমের কাছে যেরূপে পূর্বাঞ্চলের জন্য বুদ্ধের ছিল'। বিবেকানন্দ পূর্ব মধ্য আমেরিকায় বিভিন্ন স্থানে দু' বছর বক্তৃতা দিয়ে কাটান। শিকাগো, বোস্টন, ডেট্রয়েট, নিউইয়র্কসহ অনেক স্থানে যান। ১৮৯৪ তে বেদান্ত সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন নিউইয়র্কে। যোগ সাধনা ও ভারতীয় অকাল্ট ফিলসফি শিখানোর জন্য বিনা মূল্যে  ক্লাসে করাতেন।

বিবেকানন্দ এর পরে ট্রান্সেন্ডেলিজম নিউথট প্রভৃতি সর্বেশ্বরবাদী দার্শনিক শাখাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে প্রচার করতেন। অনেক বিখ্যাত লোক তার কাজে মুগ্ধ হয়ে সরাসরি দেখা করে। এরমধ্যে বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা অন্যতম! নরেন তার বেদান্তবাদের ১২ টা শাখা খোলেন, সবচেয়ে বড়টা হলিউডে অবস্থিত। বেদান্ত প্রেস বের করেন হিন্দুত্ববাদ প্রচারের জন্য। নরেনকে একদিন পত্রের মাধ্যমে তার গুরু রাজার হালে না থেকে ধনী গরীবদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধর্ম প্রচার করতে বলেন। এরপরে ১৮৯৭ সালে দেশে ফেরেন। সে বছর রামকৃষ্ণ মিশন খোলেন। বিবেকানন্দের ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতের কিংবদন্তী সুভাষ চন্দ্র বসু, থিওসফিস্ট মহাত্মা গান্ধী।

ফ্রিম্যাসন সদস্য স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন বৈদিক রহস্যবাদী দর্শনের এক মহান সাধক পুরুষ। তিনি ওয়াহদাতুল উজুদে(Monism-সর্বেশ্বরবাদ) বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চাইতেন ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে মানব জাতি সৃষ্টি - স্রষ্টার এক অস্তিত্বের (ওয়াহদাতুল উজুদের-monism) একক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হোক। তিনি কুয়োর ব্যাঙের একটা গল্প শুনিয়ে বোঝাতেন যাতে মানুষ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে নিজেদেরকে না জড়ায়।[১৪]

বিবেকানন্দের পরে আরবিন্দ ঘোষ, জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তি,  রমনা মহর্ষি, যোগানন্দ, মা আনন্দময়ী, স্বামীমুক্তানন্দ, মহা ঋষি মহেশ যোগী,রজনীশসহ আরো অনেক গুরুঠাকুররা ভারত থেকে আমেরিকায় এসে আস্তানা গাড়ে। মহাঋষি মহেষ যোগী Transcendental Meditation নামের যোগসাধনার কেন্দ্র খোলেন। তার পরে আসেন দীপক চোপড়া এবং অপ্রাহ উইনফ্রে। শুরু হয় নতুন যুগের(New Age) আধ্যাত্মিক বিপ্লব। প্রাচীন যাদুশাস্ত্রভিত্তিক কুফরি দর্শনের মহা বিপ্লব।

বিংশ শতকে বৌদ্ধ শাস্ত্রের অনুবাদিত গ্রন্থ এবং প্রচারকদের কিতাবাদির প্রসারণ আরো বাড়তে থাকে।১৯২০ সালে যোগানন্দ আমেরিকায় International Congress of Religious Liberals এর মিটিং এ যোগ দিতে আসেন। ঐ বছরেই তিনি Self-Realization Fellowship (SRF) প্রতিষ্ঠা করেন যোগসাধনা এবং সনাতন দর্শন প্রচারের জন্য। একই সময় যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তি নামের দক্ষিণ ভারত থেকে আসা আরেক ব্রাহ্মন; মৈত্রীয়(কল্কি) নামের একজন মহা অবতারের আবির্ভাবের বার্তা প্রচার শুরু করেন। এই মেসিয়ানিক ফিগারই থিওসফিক্যাল সোসাইটির পৃথিবীর মহাগুরু(ওয়ার্ল্ড টিচার)। মৈত্রেয় নামটি বৌদ্ধদের মৈত্রেয় বুদ্ধ থেকে নেওয়া। তিনি কল্কি অবতার। যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির পর এ্যালিস বেইলিও তার লুসিস ট্রাস্টের(লুসিফার ট্রাস্ট) এর দ্বারা মৈত্রেয় বুদ্ধের আগমনের বার্তা প্রচার করেছেন। প্রথম দিকে ২০২২ এর দিকে আশেপাশের সময়ে আসবার কথা জানানো হয়, পরবর্তীতে বলা হয় তিনি ২০২৫ এর পরে আসবেন। বেইলির পর বেঞ্জামিন ক্রিম নামের আরেক থিওসফিস্ট মৈত্রেয় বুদ্ধের আগমন নিয়ে খুব প্রচারণা চালান। তিনি মৈত্রেয়র বুদ্ধের অনেক বৈশিষ্ট্যের বর্ননা দেন যেমন তার নেতৃত্বে বিশ্বের সমস্ত জাতির একত্রিত হওয়া। শান্তি প্রতিষ্ঠা তার একচ্ছত্র শাসনের দ্বারা দুনিয়ায় স্বর্গলোকের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। যাইহোক, মৈত্রেয় বা কল্কি অবতার কে আর ভাঙ্গিয়ে বলবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। তিব্বতীয় অনুবাদ গ্রন্থ প্রথম প্রকাশ হয় ১৯২৭ সালে। ১৯৩৫ সালে এর পুনঃমুদ্রনে Carl Jung এর মন্তব্য সংযুক্ত হয়। এর দ্বারা তিব্বতীয় বৌদ্ধমতে পাশ্চাত্যে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।আলেকজান্দ্রা ডেভিড নিলের লেখা "My Journey to Lhasa" তিব্বতের ব্যপারে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়ায়। আরেক জার্মান লেখক, Hermann Hesse পূর্বাঞ্চলীয় দর্শনের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করে বই প্রকাশ করে, যার নাম "সিদ্ধার্থ"। এটাও জনপ্রিয় বই। এভাবে বৌদ্ধপ্রীতি বাড়ার সাথে সাথে যোগসাধনা, ধ্যানের প্রচলনও অনেক বেড়ে যায়। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর বৌদ্ধধর্ম এর সংখ্যা আরো বাড়ে, হাজার হাজার মেডিটেশন সেন্টারে ছেয়ে যায়, যেখানে ১৯০০-৬০ এ ২১ টা গজিয়েছিল। ১৯৫৯ সালে সুজুকি নামের আরেক জেন বুদ্ধ সানফ্রানসিসকো কে আসেন। ১৯৭০ এর পর দিয়ে তিব্বতি বুদ্ধ বাড়তে থাকে, লামারা আসতে থাকে একে একে। সাম্ভালা পাব্লিকেশন এরনামে তিব্বতিয় বই অনুবাদ শুরু হয়। ১৯৬৫ তে ওয়াশিংটনডিসি এ বৌদ্ধ বিহার নির্মান হয়। তিব্বতীয় বৌদ্ধমত এর কালচক্রতন্ত্র অনুযায়ী শেষ যুগে ২৪তম শেষ অবতার(কল্কি) আসবেন দুনিয়ার বুকে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য। কালচক্রশাস্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে এই অবতার(এটাই বৌদ্ধধর্মের মৈত্রেয় অবতার) আদম, নূহ, ইব্রাহীম, সাদাচাদরওয়ালা(সম্ভবত এর দ্বারা খিযির আলাইহিসালামকে বুঝিয়েছে) ঈসা এবং মুহাম্মদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। এই লোকেদের ধর্মটি বর্বর ধর্ম, এটিকে বিলুপ্ত করতে তিনি আসবেন। তখন মাহদি নামের একজনের সাথে যুদ্ধ হবে![৫]

অতএব, বুঝতে পারছেন ভারতের ধর্মচক্র তথা ধর্মের লেবাসে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্ট দর্শনগুলোর আসল অরিজিন কি, কোন মতাদর্শ থিওসফি - বেদান্তবাদ বহন করে,মাসূনী বিবেকানন্দ কিসের দর্শন প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে গেছে! বুঝতে পারছেন, আজকের ধ্যান ভিত্তিক আধ্যাত্মিকতা আসলে কার মতাদর্শ প্রচার করছে..কার আগমনের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করছে!

১৯৬০ এর দিকে হিপ্পিদের বিপ্লব শুরু। Friedrich Nietzsche , Goethe , and Hermann Hesse , Wandervogel প্রমুখের বই পড়ে হাজার খানেক জার্মান তরুন তরুনীরা পুঁজিবাদী এবং বস্তুবাদী সভ্যতার প্রতি বিরক্ত হয়ে আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে প্রকৃতিপূজা, পূর্বাঞ্চলীয়(ভারতীয়) দর্শনের চর্চা, ধ্যান এবং নেশাজাতীয়(psychadelic intoxicating drugs) দ্রব্য সেবনের মাধ্যমে চেতনার ওপারে(Altered state of consciousness) যেত, আধ্যাত্মিকতার জন্য তরুনদের এ মাদককেন্দ্রিক জাগরণকে হিপ্পি নাম দেওয়া হয়। এদের দ্বারাই LSD, DMT, ম্যাজিক মাশরুম,আয়োহুয়াস্তকাসহ বিভিন্ন চরম নেশা উদ্দীপক মাদকের প্রচলন ঘটে।  এরা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সবরকম মাদক সেবনের বৈধতা আনে। আমেরিকাতেও হিপ্পিরা ছড়িয়ে পড়ে।  হিপ্পি মুভমেন্ট এর আরেকটি অংশ ছিল Sexual Revolution। বিভিন্ন ধরনের sexual pervertion কে বৈধতা দিতে আন্দোলনে নামে। এরা মাঝেমধ্যে একসাথে আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়াতে যেত এবং মাদকসেবনের পাশাপাশি অসভ্যতায় লিপ্ত হতো। এরা মাঝেমধ্যে ব্যানারে "যা ভাল লাগে তাই করো" এমনকি এলিস্টার ক্রৌলির বলা কথা লিখে রাজপথে নামত। এদের দ্বারাই আমেরিকায় লিভটুগেদার এবং আজকের LGBT মুভমেন্ট বৈধতা লাভ করে। হিপ্পিদের হিন্দুবৌদ্ধ প্রীতির সময় গ্যারি স্নাইডার, এল্যান ওয়াটসের মত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব বেদান্তবাদ, বৌদ্ধদর্শন প্রচার করতেন। তাছাড়া অস্কার উইল্ডি, ওয়াল্ট হুইটম্যান, র‍্যাল্ফ ওয়াল্ডো ইমারসন, হারমান হিসি,উইলিয়াম ব্লেক এরা সবাই তাদের পাশে  ছিল।[২]

বিংশ শতকে হিন্দুত্ববাদে প্রভাবিত হয়ে Maximiani Portaz 'আর্য প্যাগানিজম' নামে পূর্বাঞ্চলীয় রহস্যবাদ(Eastern Mysticism) প্রচার শুরু করেন। তার সাথে সাবিত্রী দেবী, জ্যাকব উইলহেলম হাউয়ার মিলে জার্মান ফেইথ মুভমেন্ট চালু করেন। তখন থেকে তারা  স্বস্তিকা()চিহ্নটি তারা ব্যবহার করত আর্য প্যাগান চিহ্ন হিসেবে।
মূলত এডলফ হিটলার বেদান্তবাদী চিন্তাধারা দ্বারা আচ্ছন্ন হয়। কিছু ইতিহাস ও ভাষাবিদদের স্বীকৃতি পেয়ে নিজেদের আর্য জাতির বংশধর শুরু করে। থিওসফি সহ বাতেনি অকাল্ট সংগঠনের শাস্ত্রগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে Anti Semitic চেতনা জাগ্রত হয়। অর্থাৎ সামের বংশধরের সাথে বনু ইয়াফিসের কিংবা হামের পুত্রের বংশের মধ্যের ঈমান ও কুফরের শত্রুতা(এ নিয়ে ২য় পর্বে বিস্তারিত সংযুক্ত হবে)। এই জাতিগত বিদ্বেষের ফলে আল্লাহর কিতাবধারীদের মধ্যে ইহুদীরাই হিটলারের হাতের কাছে পায়, যার জন্য গণহত্যার স্বীকার হয়। এখানে হিটলারকে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আল্লাহর দ্বীনকে ত্যাগ করা ইহুদীদেরকে শাস্তি দেন। লক্ষ লক্ষ ইহুদীদের হত্যা করা হয়। এখানে আল্লাহ, বড় শয়তানকে দিয়ে আল্লাহর বিধান ছেড়ে শয়তানের আবৃত্ত শাস্ত্রকে গ্রহনকারীদেরকে শাস্তি দেন(এর আগে নেবুচাদনেজার ২ এর দ্বারা শাস্তি দেন যার ব্যপারে কুরআনেও ইঙ্গিত আছে)। তবে হিটলারের মধ্যে ইয়াকুবের(আ) সন্তানদের (ইহুদী) ন্যায় ইসমাঈলের(আ) সন্তানদের (মুসলিম) প্রতিও ঘৃণা ছিল। একইভাবে খ্রিষ্টানধর্মের প্রতিও ছিল তার তীব্র বিদ্বেষ। ইতিহাসবিদরা তাকে এন্টিখ্রিষ্টান ধর্মহীন মিস্টিক এবং অকাল্টিস্ট বলেই জানে। হিটলার ইহুদীদেরকে অর্ধ মানব(Sub-human) হিসেবে দেখতেন, মুসলিমদেরকে আরো নিকৃষ্ট অর্ধ উল্লুক(half Ape) মনে করতেন। মুসলিমদের হাতের কাছে পেলে কিরূপ আচরণ করত সেটা অনুমান করতে পারছেন। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের ব্যপারে বিভিন্ন সময়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে হিটলার, কিন্তু সবসময়েই আরব ও মুসলিম জাতিকে নিচু জাতি বলে গেছে। হিটলার ইসলামের মিলিট্যান্ট(জিহাদ কেন্দ্রিকতা) নীতির জন্য অনেক প্রশংসা করে এমনকি নিজেদের আগ্রাসী নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলেন(তার এ কথাগুলো আজকের ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামকেও হিটলারের সমতূল্য বর্বর ধর্ম প্রমাণের চেষ্টা করে,অথচ এটা দেখেনা যে হিটলারের এসব কথা ছিল রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলিমদের খুশি করার জন্য বলা)। তিনি তৎকালীন জেরুজালেমের গ্রান্ড মুফতি আমিনের সাথেও সাক্ষাত করেন। তিনি চাচ্ছিলেন মুসলিমদের হাতে রেখে প্রথমে বিশ্বকে হাতের কব্জায় আনবে এরপরে শামের রক্তের অবশিষ্টাংশঃ আরব ও মুসলিমদের একযোগে দমন করবে। একথা সে নিজেই প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন,"আমরা সুদূর পূর্ব এবং আরবদেশগুলোয় হাঙ্গামা চালিয়ে যাব। আমাদের নিজেদেরকে মানুষ ভাবতে দিন এবং ওইসব লোকেদেরকে অর্ধ উল্লুক বললে সবচেয়ে ভাল মানায় যারা চাবুকের বাড়ি খাবার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।"

ইতিহাসবিদ Percy Ernst Schramm বর্ননা করেন যে হিটলার তার যৌবন বয়স থেকেই খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করেন এবং ওয়াহদাতুল উজুদ(মনিজম বাংলায় সহজ অর্থে সর্বেশ্বরবাদ) আকিদায় বিশ্বাস স্থাপন করেন। তিনি মনে করেন হিটলার আর্নেস্ট হাইকেল ও তার শিষ্য উইলহেলম বোলস্কি দ্বারা প্রভাবিত হন। Bullock এর মতে হিটলার কিশোর বয়সে অকাল্ট শাস্ত্র এবং জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন।[৩]

পাশ্চাত্যে ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ও অশান্তি দেখে জনগনের মনে শান্তির অন্বেষণ শুরু হয়, যোগ সাধনা এবং হিন্দুত্ববাদী অকাল্ট দর্শন যখন শান্তির ব্যানার দেখিয়ে প্রচার হচ্ছিল, সেটা দেখে জনগণ ব্যাপকহারে গ্রহন করতে শুরু করে। মানুষ কতটা বোকা! যে অকাল্ট দর্শন গ্রহন করে হিটলার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে, সেই দর্শনের মধ্যেই শান্তি খোঁজে! যাহোক, থিওসফিক্যাল সোসাইটির শাখা প্রশাখার সফল বিস্তারের পরে আসলো প্রভুপদের ইস্কন। ইস্কনের কার্যক্রম পশ্চিমা দেশগুলো ছাপিয়ে আমাদের বাংলাদেশেও অত্যন্ত শক্তিশালী। অন্যান্য অকাল্ট অর্গানাইজেশন ন্যায় বৈষ্ণবের উপর দাঁড়ানো ইস্কন তাদের অভিন্ন অকাল্ট মতাদর্শ প্রচারের কাজ করে যাচ্ছে।

১৯৭০ এর দিকে থিওসফি, ট্রান্সেন্ডেন্টালিজম, বেদান্তবাদ, বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের ফলে প্যাগান আধ্যাত্মিকতার এক সুবিশাল সম্প্রদায় গড়ে ওঠে আমেরিকায়। নিউএজ নামে সমস্ত মিস্টিক, যাদুকর, জ্যোতিষী, সর্বেশ্বরবাদ, পুনর্জন্মবাদের বিশ্বাসের কমন গ্রাউন্ডে নিজেদেরকে নতুন যুগের পথিক হিসেবে পরিচয় দেয়, অবশ্য এই নিউএজ শব্দটিও ম্যাডাম হেলেনার একটি বই থেকে নেওয়া। তাদের মতে এস্ট্রলজিক্যাল ক্যালেন্ডারের এ্যাকুরিয়াস যুগে প্রবেশ করার মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, এজন্য নিউএজ। আজ শুধু আমেরিকায় এদের সংখ্যা ৩৫ লক্ষেরও বেশি। আজ দীপক চোপড়া,অপ্রাহ উইনফ্রে নিউ এজের অনেক বড় সেলিব্রেটি বক্তা, লেখক।[১৩]

বাংলাদেশের মত মুসলিম অধ্যুষিত দেশে সাধারন মুসলিমদের মধ্যে যাদুশাস্ত্রভিত্তিক সর্বেশ্বরবাদী প্যাগান দর্শন তথা হিন্দু-বেদান্তবাদ এবং ম্যাডাম হেলেনার theosophical মতবাদগুলো প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করত, এমন উচু সারির জ্যোতিষীদের দ্বারা গঠিত হয় কোয়ান্টাম ম্যাথড নামের অকাল্ট(অধি/গুপ্তবিদ্যা-যাদুবিদ্যা) মিস্ট্রি স্কুলের প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান। আজ বাংলাদেশেও লক্ষ লক্ষ মানুষ মূর্তিপূজার চেয়েও জঘন্য আকিদাগত শিক্ষাকে ধারন করছে কোয়ান্টাম ম্যাথডের দ্বারা। কোয়ান্টাম ম্যাথড আমেরিকার থিওসফিস্ট / নিউএজ আধ্যাত্মবাদী লেখকদের কিতাবাদি সরাসরি প্রচার করে। এরা ইসলামকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে, সাধারন অজ্ঞ মুসলিমদের ফাঁদে আটকানোর আশায়। কোয়ান্টাম ম্যাথড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ইতোপূর্বে অনেক আর্টিকেলে করেছি[৬] তাই নতুন করে পুরোনো কথা লিখতে চাইনা।

Eastern mystical initiations(পূর্বাঞ্চলীয় রহস্যবাদী শিক্ষা) গুলো মানুষকে আত্মপূজা,মনের পূজা, প্রকৃতিপূজা, সর্বেশ্বরবাদ (প্যান্থেইজম), পুনর্জন্মবাদ প্রভৃতি মৌলিক বিশ্বাসের প্রচার করে। যাদুবিদ্যা,জ্যোতিষবিদ্যার চর্চাকে উন্নীত করে। সেইসাথে শয়তান জ্বীনকে শরীর ও মনের উপর পূর্ন কর্তৃত্বদানে উৎসাহিত করে। ascended masters, higher self, spirit guide,higher beings, light beings,angelic entities প্রভৃতি শব্দ দ্বারা শয়তান জ্বীনের সাথে শারীরিক মানসিকভাবে সংযোগ সাধনের ব্যপারে উৎসাহিত করে। ধ্যানের মাধ্যমে সে উপায় শিখিয়ে দেয়। এরা থার্ডআই, গডরিয়েলাইজেশন, ওয়াননেস, এনলাইটমেন্ট, সাইকিক পাওয়ার,দেহচক্রের বিকাশ, কুণ্ডলীনি শক্তির জাগরণের নামে জ্বীনদের কে সেচ্ছায় শরীরমনে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেয়।পাশাপাশি বিভিন্ন মাজহাবের যাদুবিদ্যার শিক্ষা দেয়। এক পশ্চিমা উইচক্র‍্যাফটের ফেইসবুক গ্রুপের উইক্কান এডমিন Shawnda Clawson কে higher self এর ব্যপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল যার সাথে তারা শারীরিক ও আত্মিক সংযোগের জন্য অনেক চেষ্টা করে। উত্তরে তিনি সরাসরি সত্যতা স্বীকার করেন, নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেনঃ

সুতরাং দেখতেই পারছেন, এইসব মিস্ট্রিস্কুলের আল্টিমেট শিক্ষা প্রত্যেকের অদৃশ্য সহচর ক্বারীন জ্বীন-শয়তানের সাথে নিজেদের সমার্পন। অর্থাৎ  Spiritual Satanism। সুতরাং আজ যারা মুসলিম হয়েও নিউএজ/থিওসফিক্যাল সোসাইটির এদেশীয় শাখা কোয়ান্টাম ম্যাথডে ভিড়ছে, তারা কোন পথে হাটছে!?


একদম কাকতালীয়ভাবে হিন্দুয়ানি শিক্ষা পাশ্চাত্যে প্রবেশ করেনি। এর পেছনে বড় ধরনের উদ্দেশ্য আছে। ফ্রিম্যাসন সদস্য স্বামী বিবেকানন্দ এমনিতেই বেদান্তবাদ প্রচারের জন্য যায়নি। এসবের পেছনে আড়ালে তারাই ছিল, যারা শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে। এজন্যই জাতিসংঘ যোগসাধনার দর্শনকে এখন সবচেয়ে বেশি সমর্থন করে। তারা বিভিন্ন যোগসাধনা ধ্যানের সংগঠনগুলোয় অর্থায়নের দায়িত্বেও ছিল। আজও আছে। এমনকি জাতিসংঘের কার্যালয়ে ধ্যানে বসার কক্ষের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আজ জাতিসংঘ শান্তির জন্য ধ্যান যোগসাধনাকে সমর্থন করছে জোড়ালোভাবে।
তারা আন্তর্জাতিক যোগসাধনা দিবস প্রতিষ্ঠা করে[৮]। ভারতের 'ঔঁম মন্ডল' নামের একটি হিন্দুত্ববাদি অকাল্ট সংগঠন ছিল, যারা সম্প্রতি নাম পরিবর্তন করে রাখে ব্রহ্মকুমারী! জাতিসংঘ এই অকাল্ট সোসাইটিকে জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক এনজিও হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এতটুকুই নয়, জাতিসংঘ Economic and Social Council (ECOSOC) এর General Consultative Status দান করে। এছাড়াও, ব্রহ্মকুমারী বা ওমমন্ডলকে ইউএন Department of Public Information (DPI) এর এসোসিয়েট স্ট্যাটাস দান করে,United Nations Children's Fund (UNICEF) এর Consultative Status দেয়। United Nations Environment Assembly of UNEP এর Observer Status দেয়। ব্রহ্মকুমারী এখন UN Framework Convention on Climate Change (UNFCCC) এর পর্যবেক্ষক। Education for Rural People (ERP), Food and Agricultural Organisation (FAO) এর Flagship Member এর মর্যাদাও দেওয়া হয়[৭]।


এবার আশাকরি বুঝতে পারছেন এই যোগসাধনার বিপ্লবের পিছনে কারা আছে।এদের গোড়া কতটা শক্ত, সেটা বুঝতে আশাকরি কষ্ট হচ্ছে না। নিচের ছবিটায় যে বইটাকে দেখছেন, সেটা ১৯৮৯ সালে র‍্যাল্ফ ইপারসনের লেখা।

ডান পৃষ্ঠার মধ্যভাগে দেখছেন, এতে তিনি One World Religion এর কথা উল্লেখ করেন, অর্থাৎ প্রচলিত ধর্মগুলোকে উচ্ছেদ করে একটি বিশ্বাসব্যবস্থাকে সমাজে চালু করা হবে যেটা হবে আত্ম বা নিজের মনের পূজা। বাস্তবে জাতিসমূহের ঐক্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত ইউএন ঠিক এই ধর্ম বা দর্শনের দিকে জাতি সমূহকে ধাবিত করার জন্য কাজ করছে। শুনেছি জাতিসংঘের কথিত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের আচার্য রজনীশ অশ্বের গ্রন্থসমূহ পড়তে দেয়! আজকের Atheism বা নাস্তিক্যবাদ যেটাকে সর্বত্র দেখা যায় সেটার পিছনেও জাতিসংঘ এবং তাদের পেছনের হায়ারার্কির(শ্রেণীগোষ্ঠী) হাত আছে। কেননা, নাস্তিক্যবাদ হচ্ছে সর্বেশ্বরবাদেরই সন্তানস্বরূপ। প্যান্থেইস্টিক মতবাদ সমস্ত শয়তানি আকিদার জন্মদাত্রী। সমস্ত মিস্ট্রি স্কুলের সার্বজনীন  শিক্ষা। এতে করে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ধারনা তো একদিকে নস্ট করাই হয়, উপরন্তু সমস্ত সৃষ্টিকে দেবত্ব(divinity) দান করে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসের নূন্যতম দরজাটিও বন্ধ করা হয়। নাস্তিক্যবাদীদের একটা বড় সংখ্যা এগনস্টিসিজমের(অজ্ঞেয়বাদ) দিকে হাটে, কিন্তু সর্বেশ্বরবাদে সে পথও থাকে না,কারন সব কিছুই ঈশ্বর! নাস্তিক্যবাদে যেমন সৃষ্টিকর্তার কোন আলাদা স্বত্ত্বাগত অস্তিত্বে বিশ্বাস করা হয় না, তেমনি সর্বেশ্বরবাদেও করা হয়না, এজন্য উভয় একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান যাদুকরদের এই বিশ্বাস প্রচারের দায়িত্বে আজ সরাসরি জাতিসংঘ কাজ করছে। জাতিসংঘকে তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র সেই থিওসফিক্যাল মসীহ বা হিন্দু/বৌদ্ধদের/ইহুদীদের শেষ অবতারের  কাজ অর্ধেক করে রাখার জন্য, তার জন্য পরিবেশ তৈরির জন্য।
U Thant নামের জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেল বৌদ্ধদের ধ্যান এবং জাতিসংঘের ধ্যানের কক্ষের ব্যপারে বলেন, 'এটা মনকে সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে এবং মনোযোগ, বুদ্ধিমত্তা, সচেতনতা বাড়ায় এবং সর্বশেষে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করায় সাহায্য করে।'

United State এর permanent representative, Andrew Young  U.N. কে ধ্যানকক্ষের ব্যপারে বলেনঃ 'আমি প্রার্থনা করি যেন, ওই ধ্যানকক্ষ জাতিসংঘ  ছাপিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করুক।'

তিব্বতীয় গুরু, Djwhal Khul বলেনঃ 'ঐশ্বরিক ভালোবাসার অভিব্যক্তি এখনো তৈরির পথে আছে, খুব কম মানুষই এ কথার মানে বোঝে। কিন্তু প্রতীকীর মাধ্যমে বলব যেহেতু জাতিসংঘের(UN) উত্তরণ ঘটেছে সত্যিকারের ক্ষমতার দ্বারা সেহেতু পৃথিবীর কল্যান নিশ্চিত হয়েছে। এই কি কল্যান নাকি কার্যত ভালবাসা? সত্যিকারের মানব সম্পর্ক বলতে কি মানব সম্প্রদায় এবং জাতিসমূহের প্রতি ভালবাসা বোঝায়? আন্তর্জাতিক সহযোগীতা বলতে কি সারা পৃথিবীর(মানুষের) প্রতি ভালবাসা বোঝায়? এই জিনিসগুলোই ঐশ্বরিক ভালবাসা যেটা ক্রাইস্টের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। আর এই জিনিস গুলোই তাই যার জন্য আমরা জাতিসংঘের মাধ্যমে কাজ করছি,যাতে তাকে(ক্রাইস্টকে) সত্ত্বায় আনয়ন করা যায়। আমরা এ কাজটা অনেক বড় পরিসরে করছি বর্তমানে। এমন কেউ আছে যারা কাঠামোগত(hierarchically) ভাবে সাহায্য করছে এবং ভবিষ্যতেও সাহায্য করবে।"

অন্যত্র বলেন, "জাতিসংঘের মধ্যে বীজের ন্যায় আন্তর্জাতিক যোগসাধনাকারী চিন্তাশীল গোষ্ঠী আছে। একদল চিন্তাশীল জ্ঞানী নারীপুরুষ যাদের হাতে মানবজাতির ভাগ্য নির্ভর করে।"

ট্রায়াঙ্গল বুলেটিন(বাতেনিয়্যাহদের ম্যাগাজিন) ৪৭ এ নিচের কথাগুলো এসেছেঃ
"একুরিয়ান যুগে ক্রাইস্ট এর আবির্ভাবের এবং তার কর্মগুলোকে সম্পাদনের পূর্বেই মানবজাতির অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ করবার মত রয়েছে। আজকের পৃথিবীর অব্যবস্থাপনা ভারসাম্যহীনতাকে শুদ্ধ করা ক্রাইস্টের কাজ নয় যা বিগত শতাব্দীগুলোয় মানবজাতি করেছে। তিনি বর্তমানের রাজনীতির দ্বারা তৈরি বিশ্বব্যাপী দারিদ্র,ক্ষুধামুক্ত এবং অস্ত্রহীন করবার কাজ করবেন না। আমরাই এই সমস্যাগুলো তৈরি করেছি, এইগুলো মানুষের অন্তরের বোধগম্যতার বাহিরের বিষয় নয়, আমরা বিষয়গুলোকে বিবেচনা করব এবং স্বার্থপরতাকে ত্যাগ করব, যার জন্য দরকার জাতির সংঘবদ্ধ কর্ম। এটা মানবজাতির আধ্যাত্মিক দাবি এবং আধ্যাত্মিক দায়িত্ববোধ যে তার নিজ বাড়ি নিজেই পরিপাটি করবে।"

থিওসফিস্টদের নেত্রী Alice A. Bailey, তার
The Reappearance of the Christ এ বলেন, "ওই কাঠামোগত শ্রেনীগোষ্ঠী(শাসকের উপরের গোপন ব্যক্তিবর্গ বোঝাতে) এ মুহূর্তে জাতিসংঘের(UN) এ্যসেম্বলিকে পুনর্গঠনের জন্য চেষ্টা করছে। এই অব্যক্তিক শক্তি তার গ্রাহক জাতির গ্রহণেচ্ছার উপর নির্ভর করে, যেটা বিবর্তনের ফলে হওয়া সত্যিকারের সিদ্ধির উপর নির্ভর করে। জাতিসমূহকে এখন বোঝানো হয় একত্রিত আত্মকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীকে যারা নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টায় রত। ওই হায়ারার্কি বা শ্রেণীগোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, গঠনমূলক এনার্জি বিতরন যেটা একতার থিওরিকে ধীরে ধীরে চর্চায় পরিনত করবে এবং "ইউনাইটেড"(সংঘ) শব্দটি সত্যিকারের অর্থপ্রদ তাৎপর্যে পরিনত হবে।" [৯]

অতএব, তাদের মধ্যে পারস্পারিক স্বীকৃতি(Mutual Recognition) আছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার। একদিকে ব্রহ্মকুমারী বা ঔঁম মন্ডল সোসাইটিকে দিয়ে সারাবিশ্বে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে প্যাগানিজম তথা প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান মিস্ট্রি স্কুলের প্রসার, অন্যদিকে এই শিক্ষার শিক্ষকদের মুখে জাতিসংঘের বাহবা দান! যে বিষয়টা বিস্মিত করে, ইব্রাহীমের(আ) দ্বীনের বিদ্বেষী যাদুশাস্ত্রভিত্তিক কুফরি দর্শনের প্রচারকারীরা কোন ক্রাইস্টের কথা বলছে? এটা কি এন্টি ক্রাইস্ট নাকি ইসা ইবনে মারিয়াম(আঃ)!? আপনাদের কি মনে হয়?

ব্রহ্মকুমারীর অফিশিয়াল ওয়েব পেইজ অনুযায়ী, "জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ব্রহ্মকুমারী সারাবিশ্বের ১১০ টার বেশি দেশে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে।জাতিসংঘের নিজস্ব আন্তর্জাতিক এনজিও হবার পাশাপাশি এটা জাতিসংঘের এবং অর্থনৈতিক -সামাজিক কাউন্সিলের(ECOSOC) পরামর্শদাতার মর্যাদাও অর্জন করেছে। এটা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল, আবহাওয়া পরিবর্তন,খাদ্যসংকট, লিঙ্গসমতা, গ্লোবাল পাব্লিক হেলথ,মানবিক জরুরী সেবা,মানব অধিকার,নারী শিশু যুবক, আন্তর্জাতিক দশক ও দিবসের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নীতিমালা এবং উদ্দেশ্য প্রচার,অকাল্ট আধ্যাত্মিকতার পথ প্রচারে কাজ করছে।"[৭]

অর্থাৎ বেদান্তবাদ,বৌদ্ধদর্শন প্রচারে পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী কুফফার জোট দাপটের সাথে কাজ করছে।  এজন্যই বাংলাদেশে কোয়ান্টাম ম্যাথড মাথা উচু করে চলছে, মাঝেমধ্যে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন যোগসাধনা শিক্ষার অনুষ্ঠান প্রচার করছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের ব্রহ্মকুমারী সংগঠনটিও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে[১০]। এভাবেই বাহ্যিকভাবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সৃষ্ট (কুফফার)জাতিসংঘ "ওঁমশান্তি" প্রচারের দ্বারা শান্তিপ্রতিষ্ঠার কাজ করছে। মসীহের প্রতীক্ষায় থাকা ইহুদীদের বাবেল শহর থেকে গৃহীত সেই কাব্বালার অনুসারী প্লেটোর আদর্শ শাসন ব্যবস্থার স্বপ্ন পূরণে এক সরকারকেন্দ্রিক বিশ্বশাসন ব্যবস্থা গঠনের (Totalitarian One World Government) জন্য জাতিসংঘ(United Nation) ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই দেশ ও জাতিসমূহ একত্রিত হবে।

পূর্বাঞ্চলীয় অকাল্ট(যাদুবিদ্যা) দর্শনের প্রচারে হলিউড বসে থাকে নি। ফিল্মগুলো বেদান্তবাদ এবং বৌদ্ধ অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউ প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছে। “The Force”,  “Star Wars,” ফিল্ম গুলোয় হলিউড সৃষ্টিজগতের আদি অন্তে হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা অনুযায়ী ব্রহ্মার ধারনাকে প্রমোট করে। “The Matrix,” ফিল্ম সিরিজে বৈদিক মায়াতত্ত্ব এবং বৌদ্ধ দর্শনকে গভীরভাবে প্রকাশ করে।  Star Wars এর নির্মাতা জর্জ লুকাস হিন্দু বেদান্তবাদের অনুসারী জোসেফ ক্যাম্পবেলের থেকে ধারনা নিয়েছে।  এছাড়াও লিটল বুদ্ধ, সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত, কুন্ডুন, The Last Airbender, Interstellar (2014), Dr Strange, Inception,I origins, Avatar সহ এখনো অসংখ্য পূর্বাঞ্চলীয় বৈদিক আধ্যাত্মবাদ নির্ভর film তৈরি করছে। পেপার পেন্সিল নির্ভর মাধ্যমের তুলনায় আধুনিক যুগের মানুষেরা ভিডিও বা চলচ্চিত্রকে বেশি পছন্দ করে, এজন্য ফিল্মের দ্বারা যেকোন কিছুর চেয়ে বেশি বড় পরিসরে প্রচারণা চালানো যায়। যেহেতু অনেক বড় বড় রাজনৈতিক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা আছে, সেখানে একই শয়তানি শক্তির ক্রীড়ানক হলিউডের এটা অবশ্যই মস্ত বড় দায়িত্ব। তারা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনে রত আছে।[১১]

এভাবেই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার দরুন বৌদ্ধ ধর্ম এখন অস্ট্রেলিয়া তে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু ধর্ম। আমেরিকাতেও বেদান্তবাদী দর্শন, যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক প্যাগান আধ্যাত্মিকতার মহাবিপ্লব চলছে। পাশ্চাত্যে হিন্দুত্ববাদ পৌছানোর সাথেই সংস্কৃত হয়ে যায় পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক পবিত্র ভাষা।  বিভিন্ন ভাষাবিদ ইতিহাসবিদরা সভা সেমিনার ইন্টার্ভিউতে সংস্কৃতের বৈজ্ঞানিক সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা-গবেষণা চলত। এক সাক্ষাতকারে পদার্থবিজ্ঞানী এবং সংস্কৃতবিদ প্রফেসর ডিন ব্রাউন সংস্কৃতের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, এটা ইউরোপিয়ান অনেক ভাষার মা। এটা একটা খুবই সায়েন্টিফিক ভাষা। বৈদিক মিস্ট্রি স্কুলটিও অনেক উচুস্তরের এবং অত্যন্ত জটিল ট্রেডিশান।তিনি পদার্থবিজ্ঞানের এবং বেদের ব্যপারে বলেন, "বেদের ইক্যুয়েশন হচ্ছে Atman=Brahman, সমস্ত কস্মোলজি এর থেকে আসে"। তিনি প্রশ্নকর্তার সাথে একমত হয়ে বলেন এটা অনেকটা E=Mc2 এর অনুরূপ এবং বলেন বেদকে ভালভাবে বোঝা গেলে সত্যিকারের ফিজিক্স ও মেটাফিজিক্সকে বোঝা যাবে। ডিন ব্রাউন যোগসূত্র এবং উপনিষদের অনুবাদক।[১২]

পাশ্চাত্যে সংস্কৃত ও বৈদিক শাস্ত্র পৌঁছানোর আগে বিজ্ঞানের মূল উৎস ছিল হার্মেটিক এবং কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রগুলো। কথিত বিজ্ঞানীগন যাদুশাস্ত্রভিত্তিক দর্শনগুলোকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মোড়কে নিয়ে আসতেন। আপনারা বিগত পর্বগুলোয় কোপার্নিকাস, কেপলার, বেকন, আইজ্যাক নিউটনদের দেখেছেন। কিন্তু যখন পাশ্চাত্যে তন্ত্র মন্ত্রে ভরা বৈদিক শাস্ত্রগুলো পৌছতে লাগল, কথিত বিজ্ঞানীগনও অন্যসবার মত বেদান্তবাদের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। এরপরে একে একে অসংখ্য তত্ত্ব বেদান্তবাদ বৌদ্ধদর্শন থেকে গ্রহন করে বিভিন্ন গাণিতিক যুক্তি দ্বারা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে। অর্থাৎ হাজার বছর ধরে সুসংরক্ষিত পূর্বাঞ্চলীয় বা বৈদিক অকাল্ট ট্রেডিশান বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে। ভারতীয় ঋষি পুরুতঠাকুর মুশরিকদের কুফরি বিদ্যা ও বিশ্বাসব্যবস্থা হয়ে যায় স্বতঃসিদ্ধ পবিত্র বিজ্ঞান!
১৯৭৪ সালে কলোরাডো তে প্রতিষ্ঠিত হয় নারোপা বিশ্ববিদ্যালয়, সেইসাথে মহাঋষি মহেষযোগী বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বিশ্বনন্দিত পদার্থবিজ্ঞানীরা এসব শিক্ষালয়ে যোগসাধনা এবং নমঃ নমঃ জপেন। তাদের কেউ আবার CERN এর পদার্থবিজ্ঞানী। অপবিজ্ঞানের বেদান্তবাদী এ নতুন ধারা নিয়ে বিস্তারিত আসছে পরবর্তী পর্বে। বিইযনিল্লাহ।



[চলবে ইনশাআল্লাহ]


Ref:

[১]
https://www.ancient.eu/The_Vedas/
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vedas
https://www.thedailycampus.com/opinion/21264/কত-রক্তে-রঞ্জিত-আমরা-বাঙালি-জাতি
onushilon.org/animal/human/rece/arza.htm
https://horoppa.wordpress.com/2015/07/01/carvaka-philosophy-sindhu-savyata-prachin-dhara/
suprovatsydney.com.au/-p1179-105.htm
rajatdevp.blogspot.com/2018/10/archaeology.html?m=1
https://fb.com/permalink.php?story_fbid=1256370707855683&id=950632021762888
https://en.m.wikisource.org/wiki/Atlantis:_The_Antediluvian_World/Part_5/Chapter_10
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Japhetites
https://www.ancient.eu/Aryan/
https://www.ancient-origins.net/history-famous-people/true-aryans-who-were-they-really-and-how-were-their-origins-corrupted-009075
https://www.conspiracyschool.com/dying-god/aryan-myth

[২]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Buddhism_in_the_West
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Buddhist_modernism
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Greco-Buddhism
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Greco-Buddhist_Art
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indo-Greek_Kingdom
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Greco-Bactrian_Kingdom
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hinduism_in_the_West
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hippie
https://www.myss.com/free-resources/world-religions/hinduism/hinduism-in-the-west/

[৩]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Religious_views_of_Adolf_Hitler
https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Occult_Roots_of_Nazism

[৪]
https://www.theosophytrust.org/1105-gandhi-on-theosophy-and-theglobal-civilization-of-tomorrow

[৫]
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_20.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_73.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_4.html

[৬]
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_899.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_86.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_14.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_36.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/occultism_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/law-of-attraction_29.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/law-of-attraction_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_8.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_90.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_96.html
https://aadiaat.blogspot.com/2019/01/blog-post_85.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/psychic-ability_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_55.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_39.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_32.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/03/bio-energy-card_21.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_31.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_72.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/chakra-third-eye-yoga_10.html
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/one-world-religion_10.html

[৭]
https://www.brahmakumaris.org/about-us/united-nations
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Brahma_Kumaris

[৮]
https://www.un.org/depts/dhl/dag/meditationroom.htm
https://gratefulness.org/blog/united-nations-meditation-peace/
https://www.un.org/en/events/yogaday/
https://theosophy.wiki/en/United_Nations

[৯]
www.aquaac.org/un/medatun.html

[১০]
https://m.youtube.com/watch?v=wrtk4EyfKP0
https://m.youtube.com/watch?v=RocaWJbAoXc
https://m.youtube.com/watch?v=sRICavTvQCs
https://m.youtube.com/watch?v=AEmineosGFA
https://m.youtube.com/watch?v=lxMeL0F1tTk

[১১]
https://www.theguardian.com/film/2014/dec/25/movies-embraced-hinduism
https://www.worldreligionnews.com/religion-news/hinduism/hinduism-subtle-influence-hollywood-movies

[১২]
https://m.youtube.com/watch?v=7Brv2FaOluU&client=mv-google

[১৩]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/New_Age
https://www.patheos.com/library/new-age

[১৪]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Swami_Vivekananda
https://en.m.wikipedia.org/wiki
Teachings_and_philosophy_of_Swami_Vivekananda
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hindu_revivalism

[১৫]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Theosophists



বিগত পর্বসমূহের লিংকঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html

দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা

যেকোন লোক যতক্ষণ না দ্বীনের মৌলিক আকিদার জ্ঞান অর্জন করবে, যতক্ষন না তাওহীদের আরকান, তাওহীদের চার স্তরের ব্যপারে জানবে, কালেমার প্রকৃত অর্থ জানবে সে ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের ব্যপারে জ্ঞানগত কূল কিনারা পাবেনা। নিজের চোখে সত্য মিথ্যাকে দেখতে পারবে না, সবসময় অমুক শায়েখ কি বলল, অমুক হুজুর এই বলেছে সেই বলেছে...অমুক হুজুর কি ঠিক বলেছেন নাকি ভুল বলেছেন ইত্যাদি নানা সংশয় আর জিজ্ঞাসার উপর করে থাকবে, অন্য কারো মতের উপর নির্ভর করতে হবে। কারন তার নিজের কাছে হক্ক বাতিল নির্ণয়ের কষ্টিপাথর নেই। সে কখনোই জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যপারে বুঝবে না। আর দশটা মূর্খের ইডিওলজির থেকে নিজের মধ্যে কোন পার্থক্য পাবে না। সাহাবীদের কাছে ওইসব মৌলিক জ্ঞান ছিল। তখনকার যুগে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর দাওয়াত এখনকার মত রিডিফাইন করতে হত না, এমনিতেই কাফির মু'মিনরা বুঝে যেত এর দ্বারা কি বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু এখন আলাদাভাবে দিতে হয় কারন আমাদের দেশে মুরজিয়া মু'তাযিলা মার্কা দ্বীনের প্রচার হয়েছে। সুফি মিস্টিকরা ছিল প্রিচার! এদেশে এজন্যই ওযূ ভঙ্গের কারন জানি, রোযা ভঙ্গের কারন জানি কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারন জানিনা।


ওই লেখা লিখে লাভ কি যা কোন পরিবর্তন আনে না, যা কাউকে পথ দেখায় না, যাতে শুধুই ফ্যান ফলোয়ার্স লাইক কমেন্ট বাড়ে? অনেক এ্যানালিটিক্যাল ইন্টেলেকচুয়াল পোস্ট লিখে সাময়িক বুদ্ধিবৃত্তিক জাহির করে ভাব নিয়ে লাভ কি!?

অনলাইনে লেখকদের অভাব নাই, কিন্তু উনাদেরকে কখনো দেখবেন না ফলোয়ারদের সামনে নিজেদের জ্ঞানের সোর্সকোড উন্মুক্ত করতে। হয়ত অনেকের কাছে ব্যপারটা প্রেস্টিজিয়াস, ওজন কমে যাবার ভয় থাকে। যদি জিজ্ঞেসা করেন কোন কিতাবাদি পড়ে ইল্ম নিয়েছেন, হয়ত গর্বের সাথে বলবে, কুরআন ও হাদিস নিজেই এ্যানালাইজ করে জ্ঞানী হয়ে গেছেন। বইয়ের নাম যদি বলেও সেগুলো আপনার হাতের নাগালের বাহিরে থাকবে অথবা আরবিভাষার। অথবা এমন কোন আলিমের অনুসরন করে বলে নাম উল্লেখ করবে যার নাম ধরে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখবেন উনি আরবিতে কথা বলেন। ইংরেজি অনুবাদের ভিডিও খুব একটা নেই। এদিকে আপনি আরবিও জানেন না, ইংরেজিতেও দুর্বল। তারপর? তারপরে যেখানেই আছেন সেখানেই থাকবেন। দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অন্বেষণের ইচ্ছা থাকার পরেও পথ পাচ্ছেন না। কোন একটা সেলেব্রিটি দ্বীনদারকে প্রশ্ন করে দেখুন। ম্যাসেজের রিপ্লাই পান কিনা সন্দেহ, পাইলেও রোবটের মত বলবে, একজন আলিমের সহবতে থাকুন। আচ্ছা, আপনাদের কয়জনের বাড়ির পাশে কওমি মাদ্রাসা আছে? আর ওই মাদ্রাসার আলিমদের মধ্যে কয়জন আছে যারা কালেমার অর্থই ভাল করে জানে, তাওহীদের রোকন জানে এবং তাতে আমল করে!?

ঘুরে ফিরে আপনাকে ওই একই গর্তে থাকতে হবে।সারাজীবন "জ্ঞানী" ভাইদের পোস্ট পরে যেতে হবে। নিজে লিখার বা সত্যমিথ্যা বোঝার জ্ঞান সবসময় শূন্যের কাছে থাকবে। কারন আপনার কাছে তো জ্ঞানের কষ্টিপাথর নেই। সারাজীবন 'আমির হামজা এই বলেছে আর আজহারি হুজুর ওই বলেছে, মাদানি শাইখ এই বলেছে ফরাজি হুজুর এই বলেছে, কোন দিকে যাব?' এ অবস্থা থাকবে। অথবা জ্ঞানের দৌড় এরকম থাকবে যে, 'আমার প্রিয় সহিহ আকিদার আলেমরা হলো মুজাফফর বিন মুহসীন, মতিউর রহমান মাদানি এবং জসিমউদ্দিন রহমানী'(অনেকে এই বাক্যের কন্ট্রাভার্সিয়াল ইস্যুই ধরতে পারছেন না)। এই জন্য প্রথমেই বলেছি অধিকাংশ জ্ঞানী লেখক ভাইয়েরা তাদের জ্ঞান-কার্নেলের সোর্সকোড উন্মুক্ত করবে না। ইগোরও একটা ব্যপার আছে না!? আপনার মাতৃভাষায় কথা বলে এমন কোন হকপন্থী আলিমকে দেখালে, আপনি যদি সব বুঝেই যান তাহলে হয়ত তাদের অনলাইনে জ্ঞানের ওয়েট কমে যাবার আশংকাও থাকতে পারে।আমি ৫% ভাইদেরও কম দেখেছি যারা সত্যবাদী আলিমদের পথ দেখায়। যারা এমনটা করে তাদের দুনিয়াবি বুদ্ধিবৃত্তিক প্লেজার গ্রহনের ধান্ধা থাকে না। তারা খুব বেশিদিনও অনলাইনে থাকে না।

বাংলা ভাষায় জীবিত সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বিশুদ্ধ আকিদা/মানহাজের প্রচারকারী এবং হকপন্থী এক আলিমের নাম শাইখুল হাদিস মুফতি জসীমউদ্দিন রহমানি হাফিজাহুল্লাহু তা'য়ালা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা প্রথমদিকে অনেক আজেবাজে বক্তা/আলিমদের দেখিয়ে হঠাৎ তাকে চিনিয়েছিলেন। যখন তার কথা প্রথম প্রথম শোনা শুরু করি, দেখতাম উনি আমার অন্তরের কথাগুলোই বলতেন। শতভাগ মিলে যেত। পরবর্তীতে তার চিন্তাধারার খুঁত খুজতে কানখাড়া করে শুনতাম। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ পাইনি। তিনিই একমাত্র জনপ্রিয় আলিম যার নাম বাংলাদেশ ছাপিয়ে ভারতের তিনচারটা প্রদেশ পর্যন্ত পৌছেছে। যদিও ইল্মের সনদ নিয়েছেন দেওবন্দ থেকে কিন্তু চিন্তাধারা ও কর্মপন্থা সালাফিদের অনুরূপ(ভুয়া সালাফি নয়)। হাজারো জেনারেল লাইনের মানুষ তার থেকে ইল্ম শিক্ষা করেছে। যাদের আশেপাশে মাদ্রাসা নেই, চেনাপরিচিত ভাল আলিম নেই, হকপন্থী আলিম নেই, তাদের জন্য শাইখের বক্তব্য,লেখা বই অবশ্যই খুবই উপকারের। যারা ইসলামের মৌলিক জ্ঞান রাখে না, কোন ফ্রেম খুজে পায় না,পারপাজ খুজে পায় না, নানাবিধ সংশয়ে পড়ে আছে তাদের পথের দিশারি হিসেবে বাংলা ভাষায় শাইখের ২য় বিকল্প আর কেউ আছে বলে জানিনা। গত দুই পোস্ট তার পথকে তুলে ধরবার জন্যই লেখা।

খুব কাছের এক মানহাজি দ্বীনি ভাই(জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ড) আছেন যিনি প্রথম যখন শাইখের আলোচনা শুনেছেন, উনি বুঝতে পারেন এ লোক সাধারন কেউ নন। এরপরে ঢাকায় গিয়ে তার মসজিদে নিয়মিত বিভিন্ন দারসে উপস্থিত হতেন। উনি তার প্রায় সব বয়ান গুলো শুনেছেন। বিশেষ করে রেকর্ডেড গুলো। এখন প্রায়ই দ্বীনি মোজাকারায় কথা প্রসঙ্গে আসা আয়াত গুলোও চমৎকারভাবে বলে ফেলেন। তিনি অনেক অনেক আয়াত মুখস্ত করে ফেলেছেন শুধুমাত্র শাইখের লেকচার শুনে শুনে। দ্বীনের মৌলিক জ্ঞানগুলো তার থেকে নিয়েছেন। এখন আমি তাকে অনেক জ্ঞানী মনে করি। এইতো একটু আগে কথা হয়েছে। এখন আবারো সাক্ষাৎ হবে, রাত পর্যন্ত ভাল দ্বীনি আড্ডা হবে ইনশাআল্লাহ। শাইখের মোট রেকর্ডকৃত লেকচার প্রায় ৩৫০+ । তার আলোচনা বয়ান গুলো শুনলে চিন্তার অনেক দুয়ার প্রসারিত হয়। নতুন পার্স্পেক্টিভে সবকিছু দেখার মত চোখ সৃষ্টি হয়। সত্যমিথ্যা বোঝার কষ্টিপাথর অন্তরে তৈরি হয়। তিনি আলহামদুলিল্লাহ এমন সব আলোচনা করেছেন যা কোন আলিমদের করতে দেখবেন না। বিশুদ্ধ দ্বীনের কথা বলে গেছেন। ফলস্বরূপ অনেক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। কেউ যদি জিজ্ঞেসা করে বাংলাদেশের কোন আলিমের কথা শুনব? উত্তরে অবশ্যই বলব, শাইখ জসীমউদ্দিন রহমানি(হাফিঃ)। [কমেন্টে তার লেকচার ও কিতাবের ওয়েব লিংক... Worthy to write a blank disk(DVD) with all his recorded documents]। আগে মৌলিক আকিদার জ্ঞান নিয়ে এরপরে ইসলামের ইতিহাস, আল্লাহর রাসূল(সা) ও সাহাবিদের জীবনী, কর্ম,ওয়ার্ল্ডভিউ ইত্যাদির উপর লেখা লেজেন্ডারি বই এবং যুহুদ বা দুনিয়াবিমুখতার জন্য তাযকিয়া সংক্রান্ত শ্রেষ্ঠ বই গুলো পাঠের দ্বারা জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার মাঝে কল্যান আছে। আমি চাই প্রতিটি ভাইবোনের জ্ঞান ঐরূপ হোক যাতে করে আমিই তাদের থেকে নসিহা নিতে পারি।

আমার বাসার পাশে এক হক্কানি সিলসিলার মাদ্রাসা। সেখানকার আলিমদের সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। তাদের সাথে মাঝেমধ্যে আমার বসাও হয়। আপনাদের তাকদির আমার অনুরূপ না, তাই আপনারা কি করবেন ভেবেই লিখলাম। আমি আলিমদের অবস্থা জানি, তাই 'কোন এক আলিমের সহবতে থাকুন' এই মুখস্ত ডায়লগ দিতে অনীহা পোষন করি।

https://allahordikeahban.wordpress.com/2014/10/19/শায়খ-জসীম-উদ্দিন-রহমানীর/


শাইখ রাহমানির সব লেকচার
https://archive.org/details/BanglaIslamicBestLecturesbooks

https://archive.org/compress/BanglaIslamicBestLecturesbooks/formats=OGG%20VORBIS&file=/BanglaIslamicBestLecturesbooks.zip


https://archive.org/compress/BanglaIslamicBestLecturesbooks/formats=VBR%20MP3&file=/BanglaIslamicBestLecturesbooks.zip