Friday, March 27, 2020

১৫.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

পর্ব-১৫





প্রাচীন যাদুকরদের সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে বিশ্বাস হচ্ছে মহাবিশ্বের সবকিছুই একক বস্তু থেকে একা একাই সৃষ্টি হয়েছে। সমস্ত বস্তু নিজে নিজেই ধীরে ধীরে উন্নততর হয়ে বহু প্রকার ও প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। সমস্ত বস্তুই self sustained infinite চক্রে বন্দী। যাদুশাস্ত্রগুলো সমস্ত সৃষ্টিজগতকে মৌলিক একক অস্তিত্ব বলে, যার অন্তর্গত সমস্তকিছুই ক্রমাগত উন্নয়নঅভিমুখী। সবকিছুই একা একাই একক বস্তু থেকে তৈরি হয়ে ক্রমাগত উন্নয়ন ঘটিয়ে চরম উৎকর্ষের দিকে যাচ্ছে। এ সৃষ্টিজগতে বাহ্যিক কোন ঐশ্বরিক সত্তার হস্তক্ষেপের(Divine Intervention) প্রয়োজন নেই। মহাবিশ্ব সর্বপ্রথম নিজে নিজেই মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে অস্তিত্বে আসে। প্রথমদিকে বিশৃঙ্খল ছিল, ধীরে ধীরে শৃঙ্খলায় উন্নীত হয়। এরপরে নিজে নিজেই জীবজগত সৃষ্টি হয়। এককোষী থেকে বহুকোষী প্রানী, এরপরে জলজ প্রাণী, মৎস জাতীয় প্রানী, এরপরে অনেক জাত-প্রজাতিতে একাএকাই উন্নয়নের দ্বারা বিভক্ত হয়ে প্রানীজগত তৈরি হয়। স্তন্যপায়ী, উভচর, জলচর, সরীসৃপ প্রভৃতিতে ভাগ হয়।অবশেষে বানর থেকে হয় মানুষ। এই অকাল্ট বিশ্বাসকে বর্তমানে নাম দেওয়া হয়েছে বিবর্তনবাদ। প্রাচীন প্রকৃতি ও ব্রহ্মাণ্ডপূজারী যাদুকররা এই বিবর্তনবাদী ধারনা লাভ করে "চেতনার ওপার"[১](altered state of consciousness) থেকে। এ আলোচনা পরে আসছে।



সর্বাধিক প্রাচীন বিবর্তনবাদের চিহ্ন পাওয়া যায় বাবেল শহরের কবি গিলগেমিশের মহাকাব্যে, যেখানে তিনি মাছ থেকে মানুষ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছে। একইভাবে গ্রীক ন্যাচারাল ফিলসফার তথা যাদুকর
Anaximander (খ্রিষ্টপূর্ব ৬১০-৫৪৬) শিক্ষা দিতেন যে, মানবজাতি মাছের ন্যায় প্রানী থেকে আসে। এজন্য উনিশ শতকের শেষভাগে এ্যাণাক্সিম্যান্ডাকে প্রথম ডরউইনিস্ট হিসেবে সম্মান করা হত। উইকিপিডিয়া উল্লেখ আছে,
In the late nineteenth century, Anaximander was hailed as the "first Darwinist"[Wikipedia] 

আরেক বাবেলশহরের অপবিদ্যার অনুসারী, ডেমোক্রিটাস শেখাতেন যে, মানুষের ভাষা বিবর্তনের দ্বারাই ক্রমাগত ধ্বনি, শব্দ এবং পরবর্তীতে পরিপূর্ণ অর্থপূর্ণ ভাষায় রূপান্তরিত হয়।এম্পিডোক্লিস  (490 - 430 খ্রিস্টপূর্ব) যুক্তি দিয়েছিলেন যে আমরা প্রাণীদের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যুকে যা বলেছি তা হলো উপাদানগুলির মিশ্রণ এবং বিচ্ছেদ যা অগণিত "নশ্বর প্রজাতির উপজাতি" সৃষ্টি করে। বিশেষতঃ প্রথম যে প্রাণী এবং গাছপালা ছিল, আজ আমরা যেগুলি দেখতে পাই তার অংশবিহীন অংশগুলির মতো, যার মধ্যে কয়েকটি বিভিন্ন সংশ্লেষে যোগ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিল এবং তারপরে ভ্রূণের বিকাশের সময় আন্তঃসংযোগ ঘটে। গ্রীক এটোমিস্ট Epicurus (341–270BC) প্রচার করতেন যে, সৃষ্টিকর্তা বা দেবতাদের অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই। সমস্ত জগত এবং প্রানীদের জন্ম হয়েছে স্বয়ংক্রিয়  অনু-পরমাণুর সঞ্চালনের দ্বারা। লুক্রেটিয়াসের কবিতা ডি রেরাম নাটুরা গ্রীক এপিকিউরিয়ান দার্শনিকদের ধারণার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা সরবরাহ করে। এটি সৃষ্টিতে অতিপ্রাকৃত শক্তি জড়িত থাকার কোনও উল্লেখ ছাড়াই বিশুদ্ধ প্রকৃতিবাদী মেকানিজমের মাধ্যমে বিশ্বজগত, পৃথিবী, জীবজন্তু এবং মানব সমাজের বিকাশের বর্ণনা দেয়। প্রাচীন যাদুকরদের বিবর্তনবাদী চিন্তাধারার বিষয়টি প্রথম ৫ পর্বের কোন একটিতে উল্লেখ করেছিলাম।

জলজ প্রানী তথা মাছ থেকে স্থলচর এবং পরিশেষে মনুষ্যজাতির সৃষ্টির তত্ত্ব প্রাচীন মিশর ও বাবেল থেকে গ্রীস, গ্রীস থেকে আরবে পৌছায় সমস্ত আলকেমিক্যাল-হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রের পাশাপাশি। ইবনে খালদুনের নাম ইতিহাসের বিবর্তনবাদীদের পাশে এখনো উজ্জ্বলভাবে বর্তমান। আশআরি আকিদার ইবনে খালদুন ছিলেন আলকেমিস্ট। গ্রীক দর্শন অন্য সকলের ন্যায় আপন করে নেন। ব্যবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্রের বিলুপ্তির জন্য তার খুব আফসোস ছিল। তিনি বলেনঃ "আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে যা পেয়েছি, অপ্রাপ্তির পরিমাণ তদপেক্ষা অনেক বেশি। পারস্যের সেই জ্ঞান কোথায়, যা পারস্য বিজয়কালে হজরত উমার(রাঃ) নিশ্চিহ্ন করে দিতে বলেছিলেন। কোথায় ক্যালাডিয়ান, সিরিয়া ও বাবেল বাসীর জ্ঞানের ঐতিহ্য! তাদের মধ্যে যে নিদর্শন বিদ্যমান ছিল, যে ফলশ্রুতি ঘটেছিল, তা কোথায় বিলুপ্ত হল। কোথায় গেল কিবতী ও তাদের পূর্ববতীদের জ্ঞানের ঐশ্বর্য! আমাদের নিকট শুধু একটি জাতির জ্ঞান-গুণই এসে পৌছেছে, তারা হলো গ্রিক। এটাও সম্ভব হয়েছে সম্রাট মামুনের জন্য।”
[আল মুকাদ্দিমাহ]


১৩৭৭ সালে তিনি আল মুকাদ্দিমাহ নামের গ্রন্থ লেখেন যেটাতে তিনি বলেন যে, মানবপ্রজাতি এসেছে,"বানরের জগত" থেকে এমন এক প্রক্রিয়ায় যার দ্বারা প্রানীপ্রজাতি অগণিত হয়ে যায়। তিনি বলেনঃ
"সৃষ্টির জগতের দিকে একবার নজর দেওয়া উচিত। এটি খনিজগুলি থেকে শুরু হয়েছিল এবং ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছিল উদ্ভিদ এবং প্রাণীগুলিতে (রূপান্তরের দ্বারা)। খনিজগুলির শেষ পর্যায়ে উদ্ভিদের প্রথম পর্যায়ে যেমন সংযুক্ত তেমনি বীজহীন উদ্ভিদের সাথে সংযুক্ত থাকে। পাম এবং লতা জাতীয় গাছের শেষ পর্যায়ের সাথে প্রাণীর প্রথম স্তরের সাথে যেমন শামুক এবং শেলফিসের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা কেবল স্পর্শের শক্তি রাখে। এই তৈরি করা বিষয়গুলির সাথে 'সংযোগ' শব্দের অর্থ প্রতিটি গ্রুপের শেষ পর্যায়ে সম্পূর্ণ নতুন গ্রুপের প্রথম পর্যায়ে পরিণত হওয়ার জন্য প্রস্তুত (প্রক্রিয়া)। প্রাণীজগৎ তারপরে প্রশস্ত হয়, এর প্রজাতি অসংখ্য হয়ে যায় এবং ক্রমান্বয়ে সৃষ্টির ফলে এটি মানুষের(সৃষ্টির) দিকে নিয়ে যায়, যিনি ভাবতে ও চিন্তা  করতে সক্ষম। মানুষের এ পর্যায় সেই বানর জগত থেকে উন্নীত হয়েছে যে জগতে অনুভুতি ও উপলব্ধি একত্র হয়েছিল কিন্তু বাস্তব, মনন ও দর্শনে পৌছতে পারেনি। এরপর মানুষের প্রথম দিকের আরম্ভ এবং এটাই আমাদের অভিজ্ঞতার শেষ পর্যায়।
[আল মুকাদ্দিমাহ পৃঃ১৩৭-১৩৮][৮]

অন্যত্র বলেনঃ"গাছপালাগুলিতে প্রাণীদের মতো একই সূক্ষ্মতা এবং শক্তি থাকে না। সুতরাং, ঋষিরা খুব কমই তাদের দিকে ফিরেছিলেন। প্রাণী তিনটি অনুক্রমের শেষ এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খনিজগুলি উদ্ভিদে এবং উদ্ভিদ প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়, তবে প্রাণী নিজের চেয়ে ভাল কিছুতে পরিণত হতে পারে না"।[৭]


অতএব, বুঝতেই পারছেন বানর থেকে মানুষ সৃষ্টির তত্ত্বটি আদৌ উনিশ শতকের আধুনিক বৈজ্ঞানিক কোন তত্ত্ব নয়। বরং প্রাচীন যাদুশাস্ত্রের অকাল্ট বিশ্বাস। ইউরোপে যখন গ্রীক যাদুকরদের কুফরি আকিদা গুলো আরব হয়ে পৌছায়, অভিশপ্ত দার্শনিকরা গোপনে বিবর্তনের বিশ্বাসকে ধারন করতে শুরু করে। সেসময়ে বিবর্তনবাদের বিপরীতে থাকা 'ক্রিয়েশনিজমের' প্রতি জনসমর্থন বেশি থাকায় জনসমক্ষে প্রচার হত না। এসব বিদ্যা সীমাবদ্ধ থাকতো শুধুমাত্র অকাল্ট সার্কেলের মধ্যে,অর্থাৎ সিক্রেট সোসাইটি গুলোর মধ্যে। ইউরোপের অকাল্টিস্ট রয়্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করে। বিগত পর্বগুলোয় এ ইতিহাস নিয়ে আলোচনা গত হয়েছে।১৬৬০ সালে রয়্যাল সোসাইটি ফ্রিম্যাসনদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পূর্বে ন্যাচারাল ফিলসফি এবং প্যাগান আধ্যাত্মিকতা একই সাথে যুক্ত ছিল।সাধারণ মানুষের কাছে প্যাগানিজম বা প্রকৃতিপূজা কেন্দ্রিক বিশ্বাসব্যাবস্থার গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্যাগান আধ্যাত্মিকতার অংশটি  রয়্যাল সোসাইটির সহযোগিতায় আলাদা করা হয়,রাখা হয় শুধুই আধ্যাত্মিক  দর্শনকেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণযোগ্য ও পর্যবেক্ষণ অযোগ্য বিদ্যাসমূহ। এই ফ্রিম্যাসনিক রয়্যালসোসাইটিই প্রাচীন যাদুকরদের অপর্যবেক্ষনযোগ্য বিশ্বাসের বিষয়, যেমনঃ হেলিওসেন্ট্রিসিটি,স্ফেরিক্যাল পৃথিবী এবং গ্রাভিটি তত্ত্বকে প্রমোট করে।অতঃপর বিবর্তনবাদকেও। রয়্যাল সোসাইটির সদস্যরা অর্থাৎ ফ্রিম্যাসনদের পরিচয় আপনারা জানেন, এরা অইহুদি হয়েও ইহুদিবাদী স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা পৃথিবীতে অন্য সব গুপ্তসংগঠনের পাশাপাশি একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এরা সকলেই যাদুশাস্ত্র কাব্বালার অনুসারী।


র‍্যাসমাস ডারউইন নামের একজন কবি, ফিজিশিয়ান ছিলেন রয়াল সোসাইটির অন্যতম মেম্বার, তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন স্বীকৃত ফ্রি ম্যাসন। তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে অবস্থিত 'ক্যানন গেইট লজ' এর মাস্টার ম্যাসন।তার সাথে জ্যাকোবিন ম্যাসনদের সাথেও গভীর সম্পর্ক ছিল যারা ফরাসী বিপ্লবের পিছনে কাজ করে। এছাড়াও র‍্যসমাস ডারউইন ছিলেন ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে লুনার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা।
তার পুত্রও একজন ম্যাসন ছিল।
র‍্যসমাস ডারউইন মাঝেমধ্যে কবিতা লিখতেন, তাতে প্রকৃতির ইতিহাসে বিবর্তনবাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেন। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (অপ)বৈজ্ঞানিক কর্ম ছিল Zoonomia (1794–1796) গ্রন্থটি।এতে প্যাথলজিক্যাল প্রক্রিয়া এবং "প্রজন্মের" অধ্যায় আছে। পরবর্তী চ্যাপ্টার গুলোয় তিনি Jean-Baptiste Lamarck এর চিন্তাধারাকে প্রকাশ করেন যেটা পরবর্তীকালে theory of evolution এ পরিনত হয়। র‍্যাসমাস ডারউইন তার গ্রন্থে বিবর্তনের ব্যপারে বলেনঃ
"মানবজাতির ইতিহাস শুরুর লক্ষ লক্ষ বছর আগে সম্ভবত পৃথিবীর অস্তিত্ব শুরু হয়েছিল, সেই সময়কালের বিশাল দৈর্ঘ্যে, এটি কল্পনা করা কি খুব সাহসিকতার কাজ হবে? এটা বলা কি খুব সাহসিকতাপূর্ণ হবে যে, একটি জীবন্ত ফিলামেন্ট থেকে উদ্ভূত হয়েছে সবধরনের উষ্ণরক্তের প্রানীর, যা সর্ব প্রথম প্রাণীর সাথে সংযুক্ত হয়েছিল, নতুন অংশগুলি অর্জন করার ক্ষমতা নিয়ে,তা নতুন প্রবণতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল যেমনঃ জ্বালা-যন্ত্রনা, সংবেদনশীলতা, সংযোজন এবং সংঘবদ্ধতা দ্বারা পরিচালিত; এবং এভাবে নিজস্ব অন্তর্নিহিত ক্রিয়াকলাপ দ্বারা উন্নয়ন অব্যাহত রাখার অনুষদের অধিকারী, এবং প্রজন্মের মাধ্যমে সেই উন্নয়নের ধারাগুলি তার পরবর্তী বংশধরদের পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, সীমাহীন জগতে!"
[Erasmus Darwin, Zoonomia: Project Gutenberg text XXIX.4.8]

বিবর্তনবাদের "survival of the fittest" এর চিন্তাটি ফ্রিম্যাসনগুরু র‍্যাসমাসের Zoönomia তে ছিল,যাতে দেখানো হয় কিভাবে একটি প্রজাতির বংশ প্রসার করে। তিনি মনে করতেন, "সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সক্রিয় প্রাণীর প্রজাতির বংশবিস্তার করা উচিত, সেখান থেকে (প্রজাতি)উন্নত হবে।" এটাকে আজকে বলা হয় the theory of survival of the fittest। র‍্যাসমাস ডারউইনের সর্বশেষ কবিতা,"The Temple of nature" প্রকাশ হয় ১৮০৩ সালে। এটাকে বিবর্তনবাদের কাব্যিক উপস্থাপনের শ্রেষ্ঠ বই বলে মনে করা হয়।[৬]


র‍্যাসমাস ডারউইনই প্রথম ম্যাসন যিনি বিবর্তনবাদি আকিদার প্রকাশ করেন। তার ১৭৯৪ সালে লেখা Zoonomia গ্রন্থে তিনি সমস্ত প্রানীর এক ও অভিন্ন পূর্বসূরির কথা বলেন। ফ্রিম্যাসন র‍্যাসমাস ডারউইনের নাতি হলেন আজকের বহুল আলোচিত সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব জনাব চার্লস ডারউইন। তিনি তার দাদার লেখাগুলো পাঠ করেন এবং হৃদয়ে ধারন করেন। Erasmus Darwin এর "Temple of Nature" লেখাটি চার্লস ডারউইন পাঠ করেন,সেসবে তিনি মন্তব্যও করতেন। চার্লস ডারউইনও রয়্যাল সোসাইটির সদস্য ছিলেন। তিনি তার দাদার ফ্রিম্যাসনিক সৃষ্টিতত্ত্বকে সকলের সামনে আনেন। এরপরে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মোড়কে নিজের নামে প্রচার শুরু করেন। তার ১৮৫৯ এ প্রকাশিত অন দ্যা অরিজিন অব স্পিসিজ বিবর্তনবাদের বই হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। তিনিও সমস্ত প্রাচীন যাদুকরদের অনূরূপ প্রচার করেন,  একক কোষ বিবর্তিত হয়ে Invertebrate এ পরিনত হয় যেটা মেরুদণ্ডহীন জেলিফিশ জাতীয় প্রানী, যেটা পরে মাছ এরপরে এম্ফিবিয়ান এরপরে রেপটাইল অবশেষে ম্যামলস বা স্তন্যপায়ী প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়।

সুতরাং,দেখতেই পারছেন, কোথাকার বিশ্বাস বা আকিদাকে আজ সায়েন্টফিক থিওরিতে রূপান্তর হয়েছে। ফ্রিম্যাসনিক বিলিভ সিস্টেইম! পার্থক্য হচ্ছে এই বিশ্বাস আগে লুক্কায়িত রাখা হত কিন্তু চার্লস ডারউইন প্রকাশ্যে প্রচার করেছেন। ডারউইনের উদ্যেগে যখন এই ফ্রিম্যাসনিক অকাল্ট ফিলসফি বিজ্ঞানে নিয়ে আসা হলো, সকল অপবিজ্ঞানীগন সাদরে গ্রহন শুরু করলেন। পাঠ্যপুস্তকসহ সমগ্র বিদ্যার ধারকবাহক সমূহ সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপের কথা পাল্টে বিবর্তনবাদী স্রষ্টাবিহীন সৃষ্টিতত্ত্বে পরিবর্তিত হতে থাকে। চার্লস ডারউইন বিবর্তনবাদের প্রচারণায় পাশে টমাস হেনরি হাক্সলিকে নেন। অতঃপর এই বিবর্তনবাদী অকাল্ট বিশ্বাসব্যবস্থা শুধুমাত্র বায়োলজিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, অন্য সকল দার্শনিক/বৈজ্ঞানিক শাখাতেও বিবর্তনবাদী চিন্তাকে নিয়ে আসা শুরু হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ডারউইনিয়ান অকাল্ট ফিলসফিকে গ্রহন করতে শুরু করে। হিটলার এবং কার্ল মার্ক্স উভয়েরই বিবর্তনবাদের প্রতি আগ্রহ ছিল। T.H Huxley এর বিবর্তনবাদের উপর দেওয়া বক্তৃতা শ্রবণের উদ্দেশ্যে কার্ল মার্ক্স সরাসরি লন্ডনে অংশগ্রহন করেন।কমিউনিস্টদের শ্রেনীযুদ্ধের কন্সেপ্টের সাথে বিবর্তনবাদের ন্যাচারাল সিলেকশনের অদ্ভুত সাদৃশ্যতা দেখে কার্ল মার্ক্স ডারউইনকে ১৮৭৩ সালে
Das Kapital এর ২য় জার্মান সংস্করণ প্রেরণ করেন। টাইটেল পেইজে তিনি লেখেন,“Mr. Charles Darwin/On the part of his sincere admirer/[signed] Karl Marx, London 16 June 1873.” বিবর্তনবাদে মোহাবিষ্ট হয়ে তিনি ডারউইনকে তার পরের ভলিউম তার জন্য উৎসর্গ করার জন্য অনুমতি চায়! কার্ল মার্ক্সের বন্ধু এবং নিকটতম লেখক Friedrich Engels বলেন,"যেভাবে ডারউইন প্রানীজগতে বিবর্তনবাদের নীতি আবিষ্কার করেন, মার্ক্স ঠিক ওইভাবেই মানব ইতিহাসে বিবর্তনবাদকে আবিস্কার করেন। তিনি প্রজাতির মধ্যে টিকে থাকার লড়াইয়ের নীতির সাথে মানব ইতিহাসে শ্রেনীগোষ্ঠীর মধ্যে সংগ্রামের সামঞ্জস্যতা খুজে পান।"

বিংশ শতকে মার্ক্সবাদীরা সরকারকে বিবর্তনবাদি চিন্তার ফসলে সাধারন মানুষকে হত্যায় উৎসাহ দেয়। প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হয় যা ইতিহাসের যেকোন ধর্মযুদ্ধের চেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড। এডলফ হিটলারের জাতিবৈষম্য, আনফিটদেরকে হত্যা, আর্য অনার্য বিভেদের পিছনে এভ্যুলুশ্যনারী ন্যাচারাল সিলেকশন ও সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট তত্ত্বের চিন্তার প্রভাব বিশেষভাবে ছিল। Evolution and Ethics কিতাবে স্কটিশ এনাটমিস্ট ও অ্যান্থ্রোপোলজিস্ট স্যার আর্থার কিথ স্পষ্টভাবে বলেন, "আমি যেমনটা ধারাবাহিকভাবে বলে চলেছি, জার্মান ফুহার (হিটলার) একজন বিবর্তনবাদী; তিনি সচেতনভাবে জার্মানির অনুশীলনকে বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করেছেন "
(Keith, Evolution and Ethics, 230)


বিবর্তনের এই বিশ্বাস ন্যাচারাল ফিলসফির শুধু বায়োলজি শাখাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এই অকাল্ট ফিলসফি কস্মোলজিক্যাল স্কেলেও নিয়ে আসা হয়। হঠাৎ কথিত বিজ্ঞানীরা বলতে শুরু করলো, আমাদের গোটা সৃষ্টি জগতও বিবর্তন প্রক্রিয়ায় কোনরকমের সৃষ্টি কর্তার প্রয়োজন ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে। এক বিন্দু অস্তিত্বের মহাবিস্ফোরণ ও সম্প্রসারণের পর লক্ষ কোটি বিলিয়ন বছরের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় সমস্ত বিশ্বজগত বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় ফেরে। এটাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ১৯২৭ সালের জর্জ লেমাইত্রের বিগব্যাং থিওরি মাধ্যমে। এটাই কস্মোলজিক্যাল এভ্যুলুশন!


লি স্মোলিনের কস্মোলজিক্যাল ন্যাচারাল সিলেকশন হাইপোথিসিস, যাকে ফেকুন্ড ইউনিভার্স তত্ত্বও বলা হয়,এতে একটি প্রক্রিয়া প্রস্তাব দেয় যে জৈবিক প্রাকৃতিক নির্বাচনের(ন্যাচারাল সিলেকশন) সাথে সমতুল্য  স্কেলগুলো বৃহত্তর পরিসরেও প্রযোজ্য। স্মোলিন এই ধারণাটি 1992 সালে প্রকাশ করেছিলেন এবং দ্য লাইফ অফ দ্য কসমোস নামে একটি বইয়ে। এরপর তৈরি হয় কোয়ান্টাম ডারউইনিজম। কোয়ান্টাম ডারউইনিজম হচ্ছে এমন এক থিওরি যাতে ব্যাখ্যা করা কিভাবে ডারউইনিয়ান ন্যাচারাল সিলেকশন প্রসেস ব্যবহার করে বস্তু জগত কোয়ান্টাম জগত বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুপরমানুর জগত থেকে ক্ল্যাসিক্যাল ওয়ার্ল্ডকে গঠন করে।এই থিওরিকে ২০০৩ সালে Wojciech Zurek তার একদল সহযোগী, যেমনঃ Ollivier, Poulin, Paz and Blume-Kohout প্রমুখের দ্বারা প্রস্তাবিত হয়।[৫]


অর্থাৎ দেখতে পারছেন সকল ক্ষেত্রেই স্রষ্টাবিহীন সৃষ্টিতত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। এরপর বলা হলো ডরউইনিয়ানের বিবর্তন সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ তত্ত্বকে বলা হলো "ইউনিভার্সাল ডারউইনিজম"। ইউনিভার্সাল ডারউইনবাদ (ডারউইনবাদি সর্বজনীন নির্বাচন তত্ত্ব বা ডারউইনীয় মেটাফিজিক্স হিসাবেও পরিচিত) বিভিন্ন পদ্ধতিকে বোঝায় যা ডারউইনবাদ তত্ত্বকে পৃথিবীর জৈবিক বিবর্তনের মূল ডোমেইনের বাইরেও প্রসারিত করে অন্য সকল ক্ষেত্রেও আরোপ করা হয় । ইউনিভার্সাল ডারউইনিজম, চার্লস ডারউইনের প্রস্তাবিত বিবর্তনের প্রক্রিয়াগুলির একটি সাধারণ সংস্করণ তৈরি করে, যার মাধ্যমে মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞান সহ বিস্তৃত বিভিন্ন ডোমেইনে বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে প্রয়োগ করা হয়।

রিচার্ড ডকিন্স ১৯৮৩ সালে প্রথম "সার্বজনীন ডারউইনবাদ" শব্দটি প্রবর্তন করেছিলেন। এর দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, সৌরজগতের বাইরের যে কোন সম্ভাব্য জীবন রূপ পৃথিবীর মতোই প্রাকৃতিক নির্বাচনের(ন্যাচারাল সিলেকশন) দ্বারা বিকশিত হবে। লেখক ডি.বি. কেলি সর্বজনীন ডারউইনবাদের সুপ্রশস্থ  পদ্ধতিগত রূপরেখা তৈরি করেছেন। তার 2013 সালের বই "দ্য অরিজিন অফ এভরিথিং"-এ তিনি দেখিছেন যে প্রাকৃতিক নির্বাচন জীবনের সংগ্রামে অনুকূল জাতিগুলির সংরক্ষণের সাথে শুধুমাত্র জড়িত নয়, যেমন ডারউইন দেখিয়েছেন, বরং অস্তিত্বের পক্ষে লড়াইয়ে সার্থক ব্যবস্থাকে সংরক্ষণ করাও ব্যাখ্যা করেছেন। এ জাতীয় সমস্ত সৃষ্টির স্থিতিশীলতা এবং বিবর্তনের পিছনে মৌলিক প্রক্রিয়াকে কেলি "survival of the fittest system" বলে বলে অভিহিত করেছেন। সমস্ত সিস্টেমগুলি চক্রাকার, তাই পুনরাবৃত্তি, প্রকরণ এবং নির্বাচনের ডারউইনীয় প্রক্রিয়া কেবল প্রজাতির মধ্যেই নয়, সমস্ত প্রাকৃতিক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কেলি ব্যাখ্যা করেন,বিশেষ করে বিগ ব্যাং থেকে মহাবিশ্বটি একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে স্থিতিশীল শৃঙ্খল অবস্থায় বিবর্তিত হয়েছে,এটা সম্ভব হয়েছে ডরউইনিয়ান ন্যাচারাল সিলেকশনের দ্বারা।[৪]


চার্লস ডারউইন ছিলেন খ্রিষ্টধর্ম তথা আব্রাহামিক ট্রেডিশন বিদ্বেষী। তিনি প্রায়ই খ্রিষ্টানধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন। তিনি বলেনঃ
"যদিও আমি সকল বিষয়ে মুক্তচিন্তার পক্ষে শক্তিশালী সমর্থন দেই, তবুও এটা আমার কাছে (সঠিকভাবে বা ভুলভাবে মনে হয়) খ্রিস্ট ধর্ম ও আস্তিকতার বিরুদ্ধে সরাসরি যুক্তি জনসাধারণের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হয়না; এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে ধীরে ধীরে প্রচার করা হয় লোকেদের মনকে আলোকিত করার দ্বারা, যা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা থেকে অনুসরণ করে।  সুতরাং আমার লক্ষ্য ছিল সর্বদা ধর্ম সম্পর্কে লেখা এড়ানো এবং আমি নিজেকে বিজ্ঞানের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছি, যাইহোক আমি যদি কোনওভাবে ধর্মের উপর সরাসরি আক্রমণ করতে সহায়তা করি, এ ব্যথার দ্বারা অযৌক্তিকভাবে দায়ী হয়ে থাকতে পারি,যেটা(ব্যাথা) আমার পরিবারের কিছু সদস্য পেয়ে থাকতে পারে।"
[উইকিপিডিয়া]

ডারউইন তার বিশ্বাসের ব্যপারে বলতেন যে তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যপারে সন্দেহবাদী অথবা অজ্ঞেয়বাদী। যদি তিনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসীও ঘোষণা দিতেন সেটা অবশ্যই ইব্রাহীম(আ) এর মা'বুদ হবে না বরং সেটা হত ফ্রিম্যাসনের মা'বুদ, যেহেতু তার বাপ-দাদা সেই পথেরই এবং তার প্রচারিত তত্ত্বটিও ফ্রিম্যাসনেরই। আপনারা ইতোমধ্যে হয়ত বুঝতে পারছেন মাসূনীদের মা'বুদ কে। এ বিষয়টি 'আইজ্যাক নিউটনের' ব্যপারে করা পর্বটিতে গত হয়েছে।

ফ্রিম্যাসনে বিবর্তনবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্কের ম্যাসনদের দ্বারা ছাপানো The Mason Magazine এ বিবর্তনবাদের তত্ত্বে বিশ্বাসের কারন ব্যাখ্যা করে বলা হয়ঃ"ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব দেখিয়েছিল যে, প্রকৃতির অনেক ঘটনা সৃষ্টিকর্তার কাজ নয়। ফ্রিম্যাসনরা ডারউইনবাদকে একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ডারউইনবাদকে নাস্তিক্যবাদি ম্যাসোনিক শক্তিগুলো তাদের বিকৃত বিশ্বাস ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং মাসূনীরা এই তত্ত্বের প্রচারকে তাদের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য(ম্যাসনিক ডিউটি) হিসাবে গ্রহণ করে।"[৯]

"ম্যাসন ম্যাগাজিন" “masonic duty” বলতে বোঝায়ঃ"আমাদের সকলেরই সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক এবং ম্যাসোনিক কর্তব্য হলো ইতিবাচক বিজ্ঞানকে ধরে রাখা, এই বিশ্বাসকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং 'বিবর্তনবাদ সর্বোত্তম ও একমাত্র উপায়' এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে ইতিবাচক বিজ্ঞান [ডারউইনবাদ] দিয়ে তাদের শিক্ষিত করা।"[৯]

 মাসূনীদের এক বৈঠকে গৃহীত রেজোলিউশন ছিল একটি জলন্ত উদাহরণ, যা প্রমাণ করে যে ডারউইনবাদ হলো ফ্রিম্যাসনরির অন্যতম বৃহত্তম প্রতারণা। বিবর্তনবাদকে বিজ্ঞান হিসাবে প্রচার করার বিষয়টি, প্যারিসে মিজরাম ফ্রিম্যাসনরির ৩৩ডিগ্রি সুপ্রিম কাউন্সিল তার মিনিটসের মধ্যে প্রকাশ করেছে। তারা নিজেরাই তত্ত্বটি নিয়ে তামাশা করেছিল।মিনিটসে বলা হয়ঃ“[বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব] এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের প্রেসের মাধ্যমে এই তত্ত্বগুলির প্রতি অন্ধ আস্থা জাগ্রত করি। বুদ্ধিজীবীরা তাদের জ্ঞান নিয়ে নিজেকে শেষ করে দেবে এবং তাদের কোনও যৌক্তিক যাচাইকরণ ছাড়াই বিজ্ঞানের কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত তথ্য কার্যকর করা হবে, যা আমাদের এজেন্ট বিশেষজ্ঞরা তাদের মনকে আমরা যেদিকে চাই, সে বিষয়ে শিক্ষার উদ্দেশ্যে চাতুরতার সাথে একত্রিত করেছেন। এক মুহুর্তের জন্য মনে করবেন না যে এই বিবৃতিগুলি খালি কথা: আমরা ডারউইনবাদের পক্ষে যে সাফল্যগাথা সাজিয়েছি সেগুলি সাবধানতার সাথে চিন্তা করুন..."[৯]


সুতরাং দেখতেই পারছেন, এ গুপ্তসংগঠনের অভিশপ্ত সদস্যরাও জানে যে বিবর্তনবাদ একটি অযৌক্তিক প্রতারণামূলক বিশ্বাস। ওরা ডারউইনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে স্রষ্টাদ্রোহী করে একরকমের বোকাই বানাচ্ছে। আজ এই বিবর্তনবাদ বায়োলজিকাল বিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এখন আধ্যাত্মিক বিবর্তনের[১২] প্রচার শুরু করেছে। বলা হচ্ছে মানব জাতি এসেছে এককোষী প্রানী এরপর মাছ থেকে, এরপর শারীরিক উৎকর্ষ সাধিত হয়ে আজ আমরা হোমোস্যাপিয়েন্স। এবার স্পিরিচুয়াল এভ্যুলুশনের পালা। Psychic ability এর দ্বারা মানব হবে অতিমানব। ত্রিমাত্রিক জগতের রক্তমাংসের শরীর বিকশিত হয়ে যাত্রা শুরু করবে উপরের মাত্রায়। প্রত্যেকেই হবে চিরঞ্জীব গড-লাইক/ এ্যাঞ্জেলিক বিং(দৈবিক/ফেরেশতা অনুরূপ সত্তা)। বলা হচ্ছে এটাই এনলাইটেনমেন্ট এবং বিবর্তনের পরবর্তী ধাপ। এই আধ্যাত্মিক বিবর্তনের জন্য জানতে হবে আত্মাকে,রিয়ালিটিকে। যেতে হবে কাব্বালার সাজারাতুল খুলদের কাছে। কাব্বালিস্টিক যাদুশাস্ত্রের tree of life এর জ্ঞানই দেবে এই অমরত্ব এবং দৈবিক-এ্যাঞ্জেলিক সত্তায় বিবর্তনের পথের সন্ধান। এই ওয়াদা নতুন কিছু নয়। বরং ছয় হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। আমি এ আর্টিকেলের শুরুতেই উল্লেখ করেছি বিবর্তবাদের তত্ত্বটি প্রাচীন যাদুকররা চেতনার ওপার(Alterted state of consciousness) থেকে পায়। চেতনার ওপারে কার কাছ থেকে পায়? সহজ উত্তর হলোঃ শয়তান জ্বীন। এই আকিদা গ্রহন করা হয়েছে শয়তানের থেকে। এর শুরু খুজতে ফিরে যেতে হবে মানব জাতির আদি পিতামাতা আদম-হাওয়া (আঃ) এর আদি নিবাস জান্নাতে। শয়তান তাদেরকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। দেখিয়ে দেয় অনন্ত জীবন প্রদায়ী বৃক্ষের(Tree of life)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَى
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা? 
[আত ত্বোয়া হা ১২০]

فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَاتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـذِهِ الشَّجَرَةِ إِلاَّ أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ
অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী।
 [আরাফ ২০]


এই প্রাচীন প্রতারণাপূর্ণ ওয়াদাকে শয়তান দুনিয়াতেও আবারও একই ট্রি অব লাইফের(সাজারাতুল খুলদ) নামেই নতুন মোড়কে মানুষের সামনে প্রকাশ করেছে[১]। মানুষকে ইভলভড হবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আধ্যাত্মিক বিবর্তনের ধারনাকে জনপ্রিয় করার কাজে আছে জাতিসংঘ সহ গোটা সায়েন্টিফিক প্যারাডাইম। গত পর্বে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আংশিক আলোচনা হয়েছিল যাতে দেখিয়েছি, কিভাবে যাদুবিদ্যা এবং অদ্বৈত ব্রহ্মতত্ত্বে বিশ্বাসের জন্য বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় প্লট তৈরি করেছে। এই গোটা অকাল্ট ফিলসফি এবং এর উপর দাড়ানো অপবিজ্ঞান সবকিছুই শয়তানের ওই বিবর্তনের ওয়াদার দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পাশ্চাত্যে নিউএজ নামের বেদান্ত-বৌদ্ধমত ও যাদুশাস্ত্রের মিশ্রিত আদর্শের অনুসারী সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের কোয়ান্টাম ম্যাথড অভিন্ন পথের দিকে ডাকে।
শয়তানের প্রতিশ্রুতির দিকে। আধ্যাত্মিক বিবর্তনের ধারনাটিকে বিগত কয়েক দশকে জনপ্রিয় করনে কাজ করেছেন, Schelling, Hegel, Carl Jung ,Max Théon, Helena Petrovna Blavatsky, Henri Bergson, Rudolf Steiner, Sri Aurobindo,Jean Gebser, Pierre Teilhard de Chardin , Owen Barfield , Arthur M. Young, Edward Haskell ,E. F. Schumacher, Erich Jantsch,Clare W. Graves, Alfred North Whitehead , Terence McKenna, P. R. Sarkar ,William Irwin Thompson, Victor Skumin ,Ken Wilber ,Brian Swimme সহ অনেক আধুনিক দার্শনিক-অকাল্টিস্ট। সবার একই কথা, যাদুশাস্ত্রের অনুসরনের দ্বারা শয়তানের প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করিয়ে সে পথে পা বাড়ানো[১১]।আধ্যাত্মিক বিবর্তনের ব্যপারে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ লেখা হেলেনা ব্লাভাস্তস্কির। তিনি তার গ্রন্থে প্রাচীন বিবর্তনবাদী বিশ্বাসের বিষয়টিকে পরিপূর্ণভাবে বর্ননা করেন।তিনি এতে আর্যসহ একাধিক Root Race এ বিভক্ত করে মানব বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়কে উল্লেখ করেন।তিনি নিজেই দাবি করেছেন যে,তিনি সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করেন খুতুমি ও এল মোরিয়া নামের দুই মানুষের বেশধারী শয়তানের থেকে। [১০]

শয়তানের এই প্রাচীন প্রতিশ্রুতি মানুষকে দেওয়া হচ্ছে বাহ্যত দুইটি রাস্তায়।
১.Spiritual way
২.Biomechanical way.

আধ্যাত্মিক পথটি হচ্ছে যাদুশাস্ত্রের অনুসরণ এবং সে অনুযায়ী আকিদা বিশ্বাস গঠন, সরাসরি যাদুচর্চার দ্বারা আধ্যাত্মিক সিদ্ধিলাভের প্রতিশ্রুতি। অপর পথটি হচ্ছে যাদুশাস্ত্রের অনুসরনে গড়া প্রযুক্তির দ্বারা শারীরিক ক্ষমতার বিবর্তন ও বিবর্ধন। শরীরের রক্তমাংসের অঙ্গ বাদ দিয়ে সেস্থলে ঐসব প্রযুক্তি নির্ভর  ইস্পাত-লৌহের
যান্ত্রিক (মেক্যানিক্যাল) অঙ্গ প্রতঙ্গের সমন্বয়। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ট্র‍্যান্সহিউম্যানিজম। বিবর্তনবাদীরা আশা করে এর দ্বারা শারীরিক শক্তির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দৈবিক শক্তি অর্জনের পাশাপাশি অমরত্বলাভও সম্ভব। ইহুদিদের কাব্বালিস্টিক সাজারাতুল খুলদের জ্ঞানের স্ক্রিপচার অনুসরনে তৈরি অকাল্টপ্রযুক্তি ভবিষ্যতে অনন্ত স্বর্গরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবে। মূলত এটা শয়তানের ওই প্রাচীন প্রতিশ্রুতিরই বায়োমেক্যানিক্যাল মিনিং। এটা বুঝতে এবং এই প্রতিশ্রুতি পূরণে কারা কাজ করছে জানতে হলে আমাদেরকে যেতে হবে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রচারসঙ্গী টমাস হেনরি হাক্সলির পরিবারের নিকট।

টমাস হেনরি হাক্সলি ছিলেন একজন ফ্রিম্যাসন এবং র‍্যায়াল সোসাইটির সম্মানিত মেম্বার। ব্রিটিশ হাক্সলি পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্রিটেনের পাব্লিক সার্ভিসে সিনিয়র পদের কর্মকর্তা রূপে নিয়োজিত ছিলেন। হাক্সলির বড় ছেলে এল্ডস হাক্সলি Brave New World এবং ডোরজ অব পারসেপশান এর লেখক। তার বিবর্তনবাদী ভাই জুলিয়ান হাক্সলি ইউনেস্কোর প্রথম ডিরেক্টর অব জেনারেল।তার ভাই এন্ড্রু হাক্সলি নোবেল বিজয়ী ফিজিওলজিস্ট। ১৯৩২ তে প্রকাশিত ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ডে তিনি এমন এক ভবিষ্যৎকে উপস্থাপন করেছেন যেখানে মানুষ একটি ইউটোপিয়ান কিংডমে(স্বর্গীয় স্বপ্নরাজ্য) বাস করে, সেখানে আর মানুষ স্বাভাবিক প্রকৃতিতে জন্মগ্রহন করে না, সবাই ইনকিউবেটরে ক্লোনিং এর দ্বারা হয়। এতে তিনি উল্লেখ করেনঃ"প্রাচীন স্বৈরশাসকরা ব্যর্থ হয়েছেন, কারন তারা পর্যাপ্ত রুটি(খাদ্য), বিনোদন, আলৌকিকতা, রহস্য(মিস্টিসিজম) সরবরাহ করতে পারেনি। একটি 'বৈজ্ঞানিক স্বৈরশাসনের' দ্বারা (নির্মিত) শিক্ষাব্যবস্থা সত্যিই কাজ করবে, যেখানে প্রত্যেক মানব মানবী তাদের দাসত্ব ভালবাসবে। এবং কখনো বিপ্লবের চিন্তা করবে না। এমন 'বৈজ্ঞানিক স্বৈরশাসন' ধ্বংসের কোন ভাল প্রয়োজনীয়তাই ভবিষ্যতে হবে না।"

জুলিয়ান হাক্সলি ইউজেনিক্সের প্রমিনেন্ট অ্যাডভোকেট। ইউজেনিক্স হলো এমন এক বিজ্ঞান যার দ্বারা মানব প্রজাতির গঠন প্রকৃতির উন্নয়ন করা যায় আকাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যে নিয়ন্ত্রন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে। ধরুন জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে উচ্চতা গায়ের রং ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ইচ্ছেমত পরিবর্তনের দ্বারা আকাঙ্ক্ষিত উন্নত প্রজাতির মানুষ সৃষ্টি। ১৯৩৩ এর the vital importance of eugenics এ বলেন,  ইউজেনিক্সের মূল লক্ষ্য হবে মানসিকভাবে ত্রুটিযুক্ত লোকেদের সন্তানধারনকে বন্ধ করা। তিনি বিবর্তনবাদের যোগ্য অযোগ্যের সংজ্ঞানুযায়ী অযোগ্যদের বিয়ে হ্রাস করা, অযোগ্যদের বন্ধ্যাকরণের পক্ষে বলেন।তিনি ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের থিংকট্যাঙ্ক ইউনেস্কোর প্রথম ডিরেক্টর অব জেনারেল হবার পর, Unesco- its purpose its philosophy নামে ইশতেহার প্রকাশ করেন। তাতে বলেন, ইউনেস্কোর উদ্দেশ্য পৃথিবীতে ভ্রাতৃত্ব, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবকল্যান, এটি তখনই সম্ভব যখন প্রত্যেক মানুষ 'বিবর্তনবাদি লক্ষ্যে' এগিয়ে আসবে। তিনি ' ট্র‍্যান্সহিউম্যানিজম' শব্দটিও উল্লেখ করেন। শুধু তাই নয় তার "New bottle for new wine" প্রবন্ধে তিনি বলেনঃ"আমি ট্রান্সহিউম্যানিজমে বিশ্বাস করি:যখন অনেক মানুষ এ কথাটি বলতে পারবে, মানবজাতি এক নতুন ধরনের অস্তিত্বের গন্তব্যে পৌছবে। তারা আমাদের থেকে ভিন্ন হবে...। এটা(ট্রান্সহিউম্যানিজম) অবশেষে  সচেতনভাবে হওয়া তাদের নিজেদের ভাগ্যের (শেষ) পরিনতি হিসেবে সত্য হবে।"

অতএব,আপনারা বুঝতে পারছেন, জাতিসংঘের মত বড় বড় আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো কোন লক্ষ্যে কাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করছে। এরা সকলেই ফ্রিম্যাসনিক কাব্বালিস্টিক ইউটোপিয়ার স্বপ্ন দেখে যেটায় ইহুদিদের মসীহ একচ্ছত্র আধিপত্য করবেন। মানুষকে সেখানে ইহুদি মাসূনীদের কাব্বালিস্টিক জ্ঞানের দ্বারা জেনেটিক প্রোগ্রামিং ক্লোনিং এবং ট্রান্সহিউম্যানিস্টিক প্রক্রিয়ায় সাজারাতুল খুলদের অমরত্ব দান এবং চিরস্থায়ী স্বর্গরাজ্য তৈরির স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকুকে পদার্থবিদ নিল ডি গ্র‍্যাস টাইসন প্রশ্ন করেন,
"টাইসনঃফিউচার অব মাইন্ড টাইটেলের আপনার বইটিতে যাতে আপনি বলেছেন,"বৈজ্ঞানিক লক্ষ্যঃ মনকে বুঝতে শেখা, একে সম্প্রসারিত, শক্তিশালী করা"। কখন আমাদের মস্তিষ্ককে আপলোড করা বাস্তবে পরিনত হবে? 

মিচিও কাকুঃ ডিজিটাল অমরত্ব এখন থেকে শুরু হয়ে গেছে।টেলিপ্যাথি, টেলিকেনেসিস,স্মৃতিকে আপলোড করা, স্বপ্নকে রেকর্ড করা, এগুলো এখন আর সায়েন্সফিকশন নয়। আপনি যদি ফিজিক্স ল্যাবরেটরিতে যান, আপনি দেখবেন কিভাবে মানব মস্তিষ্ক থেকে ছবিগুলোকে আহরণ করা হয়। এটা কিভাবে এখন সম্ভব হচ্ছে? আমরা এখন প্রানী মস্তিষ্কে স্মৃতিকে আপলোড করতে পারি, স্মৃতিকে রেকর্ড করতে পারি, কারন পদার্থবিজ্ঞান এখন চিন্তায়(মনে) প্রবেশ করেছে।

টাইসনঃআপনি কি ঐ একই বিষয়কে বর্ননা করছেন যাকে চেতনা(consciousness) বলা হয়? যদি এটাই হয়, তাহলে বলতে পারি যে এটা শুধুমাত্র আমাদের চিন্তা(স্মৃতি) নয় বরং এটা আমাদের পরিচয়,আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের চেতনাগত অস্তিত্ব, যেটা চিরকাল বেচে থাকে। 

মিচিও কাকুঃ একটা থিওরি আছে, যেটা বলে যে আত্মা হলো ইনফরমেশন(তথ্য)। এটা বিরাট আকারের ইনফরমেশন। যদি এই ইনফরমেশনকে হলোগ্রাফিক ফর্মে রাখা হয়,যদি আপনি মৃত্যু বরণও করেন, মৃত্যুর পরেও এর কিছু একটা টিকে থাকবে।

অপর প্রশ্নকর্তাঃ তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে এটা অমরত্ব। আপনি একবার ওই পর্যায়ে গেলে আপনি চিরকাল বেচে থাকবেন। 

মিচিও কাকুঃ এটা কেন ডিজিটাল অমরত্ব হবে না? আপনি কি চাইবেন না আপনার নাতীর নাতীর নাতীর নাতীর নাতীদের সাথে কথা বলতে, যারা কিনা আবার নিজেদেরও নাতীর নাতীর নাতীর সাথে কথা বলতে চাইবে? 

টাইসনঃ এটা আপনাকে স্পেস টাইমের মধ্যে চলাচলের ক্ষমতা দেবে, সুতরাং এটা ঈশ্বরের সমতুল্যতা। 

মিচিও কাকুঃ জ্বি, এটার কথাই আমরা বলছি। Transcending human race!"


অতএব, এটা স্পষ্ট যে আজকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাদীক্ষা সবকিছুই ঐ প্রাচীন লক্ষ্যের জন্য নকশা করা। এটা শয়তানের সেই প্রাচীন প্রতিশ্রুতির বায়ো-মেকানিক্যাল প্রক্রিয়া। মাসূনীরা বিবর্তনের ক্রমধারার সর্বোচ্চ লক্ষ্য তথা শয়তানের প্রতিশ্রুতির ব্যপারে খোলাখুলিভাবেই বলে। ইংরেজ লেখক এবং ফ্রিম্যাসন W.L. Wilmhurst বলেনঃ "...বিবর্তনের দ্বারা মানব থেকে অতিমানবে (superman/Superhuman) রূপান্তর - সর্বদা প্রাচীন রহস্যগুলির(ancient mystery-প্রাচীন যাদুকরদের বিশ্বাস বা মিস্টিসিজম) উদ্দেশ্য ছিল, এবং আধুনিক মাসূনীদের(ফ্রিম্যাসন) আসল উদ্দেশ্য এমন সামাজিক এবং দাতব্য উদ্দেশ্য নয়, যার প্রতি এত বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, বরং যারা নিজেদেরকে আধ্যাত্মিক বিবর্তনের দ্বারা উৎকর্ষে পৌছানোর আকাঙ্ক্ষা করে, সেটা ত্বরান্বিত করা এবং তাদেরকে ঐশ্বরিক বা দৈবিক বৈশিষ্ট্যে নিয়ে যায়। এবং এটি একটি নির্দিষ্ট বিজ্ঞান, একটি রাজকীয় শিল্প, যা আমাদের প্রত্যেকের পক্ষে অনুশীলন করা সম্ভব .."[৩]
(The Meaning of Masonry, W.L. Wilmhurst, p. 47)


বিবর্তনবাদের চিন্তা যে ফ্রিম্যাসন বা যাদুকরদের কাছে শয়তানের থেকেই আসে, সেটা বোঝা যায় চার্চ অব শয়তানের প্রতিষ্ঠাতা শয়তানের পূজারী এন্টন লিভেই কথায়। তিনি বলেনঃ"শয়তানবাদ একটি নির্মম স্বার্থপর, নৃশংস ধর্ম। এটা এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে গঠিত যে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে স্বার্থপর, হিংস্র প্রাণী,এই জীবন হলো ডরউইনিজমের সুযোগ্যের টিকে থাকার জন্য সংগ্রামের অনূরূপ। এটা এই যে এই পৃথিবী তাদের দ্বারা শাসিত হবে যারা এ জঙ্গলে অন্তহীন যুদ্ধে জয়লাভের জন্য লড়াইয়ে লিপ্ত হয়- শহুরে সমাজও এর অন্তর্ভুক্ত। এই স্কোরের উপর ভিত্তি করে চার্চ অফ শয়তানের সঙ্গত সমালোচনা করা যেতে পারে,যদিও এর সমালোচকদের স্বীকার করতে হবে যে এই দর্শন পৃথিবীতে বিদ্যমান যুক্তি এবং বাস্তব অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। "


শয়তান মানুষকে অবজ্ঞা করে সাধারন চতুষ্পদ প্রানীর সাথে তুলনা করে। বিবর্তনের শিক্ষাদানের অন্যতম কারন এটিও যে মানুষের নিজের কাছে নিজেদের সম্মানের ব্যপারে দুর্বল ধারনা সৃষ্টি করা। শয়তানের পূজারী ও স্যাটানিক বাইবেলের লেখক এন্টন লাভেই বলেনঃ
"শয়তান মানুষকে অন্য একটি (সাধারণ) প্রাণী প্রজাতি হিসাবে তুলে ধরে, কখনও কখনও আরও উন্নত হয়, কখনো বা চারপায়ে চলাচলকারীদের চেয়ে আরও খারাপ, যারা তাঁর "দৈবিক আধ্যাত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের কারণে" সকলের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য প্রাণী হয়ে উঠেছে।"
(Anton LaVey, The Satanic Bible (NewYork, Avon Books, 1969), p. 25.)

শয়তানের মানুষের প্রতি এরকম ঈর্ষায় ভরা ঘৃণার কারনটিও অনেক পুরোনো। যখন আদমকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করে আগুনের সৃষ্টি ইবলিশকে সিজদাহ করতে বলা হলো, শয়তান অহংকারবশত তা থেকে বিরত থাকলো, যার দরুন শয়তান অভিশপ্ত এবং বিতাড়িত হয়েছিল। আল্লাহ বলেনঃ
إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنْ الْكَافِرِينَ
 قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ
قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ

কিন্তু ইবলীস; সে অহংকার করল এবং অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।
আল্লাহ বললেনঃ বের হয়ে যা, এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত।
[ছোয়াদঃ৭৪-৭৭]



বিবর্তনবাদে একটা সমস্যা হচ্ছে এত যে ট্রাঞ্জিশন কিন্তু ইটারমিডিয়েটরি প্রানীর অস্তিত্ব নেই। কেন বানররা এখনো বানর?এজন্য কার্ল লিনিয়াস যিনি ট্যাক্সোনমির (প্রানীর শ্রেনীবিভাজন বিদ্যা) জনক ক্রিয়েশনিজমে বিশ্বাস করতেন। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন তা সৃষ্টিকর্তার কথার বিপরীত মেরুর। যে বিষয়ে কোন দলিল প্রমাণ নেই, সুস্পষ্ট মাসূনী অকাল্টিস্টদের মনগড়া কথা, সেটাও সায়েন্স! আকাশবিদ্যা থেকে শুরু করে পদার্থবিদ্যা,প্রানীবিদ্যা... সমস্ত শাখাগুলো প্রাচীন যাদুকরদের বিদ্যা এবং বিশ্বাসগুলোকে ঢোকানো হয়েছে। ১৭ ও ১৮তম পর্বে দেখাব কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের দ্বারা বিজ্ঞান ফিরে গেছে বাবেল শহরের আইডিয়ালিস্টিক দর্শনে। অদ্বৈত বেদান্তবাদের কুফরি যাদুমন্ত্রের বিশ্বাসব্যবস্থাকে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় রূপান্তর হয়েছে। আজ দেখলেন, যাদুকরদের গুপ্তসংগঠন ফ্রিম্যাসনদের যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক স্রষ্টাবিমুখ কুফরি সৃষ্টিতত্ত্বকে প্রানীবিদ্যা থেকে শুরু করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।Oregon State University এর অধ্যাপক পদার্থবিদ Dr. Wolfgang Smith বলেন,"...বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসাবে, ডারউইনবাদ অনেক আগেই বর্জন করা হত। মূল বক্তব্য হলো, বিবর্তনবাদটি বিশ্বে তার বৈজ্ঞানিক গুণাবলীর শক্তির উপর দিয়ে আসেনি, বরং নস্টিক(Gnostic) মিথ দ্বারা যথাযথভাবে তৈরি করেছে। এটি সত্যই প্রমাণ করে যে, জীবিত জিনিসগুলি নিজেরাই নিজেদের তৈরি করেছিল, যা প্রকৃতপক্ষে একটি মেটাফিজিক্যাল দাবী .... সুতরাং ... বিবর্তনবাদ একটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে সাজানো একটি মেটাফিজিক্যাল মতবাদ .... এটি একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। এবং পৌরাণিক কাহিনীটি gnostic , কারণ এটি স্পষ্টতই প্রাণীসত্তার অলৌকিক উৎসকে অস্বীকার করে;.... ডারউইনবাদ তাই সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, অবজ্ঞার প্রাচীন জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রেখেছে। এটি স্থির রাখে ... 'যিহোবা ব্যাশিং'(ঈশ্বরের বিশ্বাসকে প্রহারের) এর নস্টিক(যাদুবিশ্বাসের) ঐতিহ্যকে।"

(From Old Gnosticism to New Age I, Alan Morrison, SCP Journal Vol. 28:4-29:1, 2005, pp. 30-31)[২]

অতএব, আশাকরি কথিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত Biological, Cosmological, Quantum তথা UNIVERSAL EVOLUTION এর উৎস এবং সারকথা বুঝতে পারছেন। ফ্রিম্যাসনিক এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটি আসলে কতটুকু বৈজ্ঞানিক! প্রশ্ন থাকলো, ফ্রিম্যাসনিক প্রাচীন যাদুকরদের আকিদা-'বিবর্তনবাদ' এর উপর দাড়ানো এই প্রচলিত বিজ্ঞান কি আসলেই বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান!?


[চলবে ইনশাআল্লাহ]







ﻳَﻌِﺪُﻫُﻢْ ﻭَﻳُﻤَﻨِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﻌِﺪُﻫُﻢُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺇِﻟَّﺎ ﻏُﺮُﻭﺭًﺍ






Ref:

[১]
http://www.kabbalahblog.info/2014/05/the-hidden-link-between-evolution-and-kabbalah/


[২]
http://www.soul-guidance.com/houseofthesun/esohist.htm&hl=en-US&f=1&tk=13341524048405849985&rqid=2OJ4Xp7GJJCA2Qasl7CgBA&pid=


[৩]
http://patriotsandliberty.com/lindas-latest/2013/12/10/the-ancient-myth-of-evolution-sumeria-to-darwin-and-occult-new-age


[৪]
wikipedia.org/wiki/Universal_Darwinism


[৫]
wikipedia.org/wiki/Quantum_Darwinism


[৬]
wikipedia.org/wiki/Erasmus_Darwin


[৭]
Khaldun, ibn. "The Muqaddimah" (PDF). Translated by Franz Rosenthal.Chapter6
wikipedia.org/wiki/Muqaddimah


[৮]
wikipedia.org/wiki/History_of_evolutionary_thought


[৯]
[John Daniel, Two Faces of Freemasonry, Day Publishing, 2007, p. 121
Mason Magazine, Issue: 25-26, p.14
Mimar Sinan Magazine, Issue 38, 1980, p. 18
Türk Mason Magazine, Issue:25-26, March 1977, p. 59]


[১০]
https://www.beliefnet.com/columnists/kingdomofpriests/2010/03/darwin-at-the-mountains-of-madness-evolution-the-occult.html


[১১]
https://m.youtube.com/watch?v=I5KHCRnSKf0
https://m.youtube.com/watch?v=dhG4oGeOxDs
https://m.youtube.com/watch?v=Z2HEV4CcdFM


[১২]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Spiritual_evolution


বিগত পর্বসমূহের লিংকঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html

0 Comments:

Post a Comment