Saturday, February 12, 2022

বিশেষ দ্রষ্টব্য - ৬

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। আশাকরি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আপনারা ব্লগে অনেক পরিবর্তন হয়ত লক্ষ্য করছেন। কয়েকদিন আগে ব্লগে বড় ধরনের ম্যালফাংশন লক্ষ্য করি। মনে হচ্ছিল কেউ হ্যাকিং এর চেষ্টা করেছে অথবা অন্য কিছু। ব্রাউজার একাধিকবার Cross-Site Scripting attack এর রিপোর্ট করেছিল। আমি লক্ষ্য করি সকল পোস্ট গুলো ডুপ্লিকেট হচ্ছিল। সব পোস্ট রিমুভ করতে গেলেও ফেইল হচ্ছিল। এরকম কোনকিছু কখনো দেখিনি। অনেক চেষ্টার পর সকল কন্টেন্ট রিমুভ করে পুনরায় ব্যাকআপ ইমপোর্ট করার পরে ঠিক হয়। টেম্পলেট টাও পালটে ফেলি। 

৫-৭ বছর আগের স্লো ফোন ফাস্ট করবেন যেভাবে

বর্তমানে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ছাপ প্রযুক্তি পণ্যে অনেক বেশি। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন, আপনার হাতের ফোনটা ২ বছর পার হলেই এমন অবস্থা হয় যে সেটা আর চালানো যায়না। ৪ বছর আগের একজিবি বা ৫১২ মেগাবাইট এর র‍্যামের ফোন গুলায় ম্যাসেঞ্জার কিংবা ফেসবুক ইন্সটল করলে আর অন্য এ্যাপ্লিকেশন ইন্সটলেশন এর স্পেস থাকেনা। ৪ বছর আগে ফেসবুকের সাইজ ছিল ৩০ মেগাবাইট এখন সেটার সাইজ ১০০ এর বেশি। ইন্সটল করলে সাইজ অর্ধগিগাবাইট খেয়ে ফেলে। চার পাঁচ বছর আগে ক্রোম ফায়ারফক্সের সাইজ ছিল ২৫-৩০ এম্বি। এখন সেসব ব্রাউজারের আকার ১৫০+।২০০ মেগাবাইটের ব্রাউজারও আছে। ইন্সটল করার পর ৬০০ মেগাবাইট ছাড়ায়এখন চিন্তা করে দেখুন কিভাবে এসব ৫১২ র‍্যামের ফোনে ব্যবহার করবেন! এখানেই ক্যাপিটালিজম। আপনাকে বাধ্য হয়েই এটা ফেলে দিয়ে নতুন হায়ার হার্ডওয়্যার রিসোর্স এর ফোন কিনতে হবে। ওরা ইচ্ছা করেই এপ্লিকেশন এর সাইজ বাড়াচ্ছে আপডেটের নামে। আর আপনি ওদের তালে তাল মেলাতে গিয়ে আপনার ব্যবহার্য জিনিস ব্যবহার অনুপযোগী করছেন। আপনার ডিভাইসের হার্ডওয়্যার খারাপ হচ্ছে না বরং ওরা প্রতিনিয়ত অধিকতর শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এর উপযোগী সফটওয়্যার রিলিজ করছে, যখন আপনার ডুয়েল কোর এর ফোনে আপডেট করছেন তখন সেটা রান করতে soc এর ওভারস্ট্রেস হচ্ছে, স্লো হচ্ছে হ্যাং হচ্ছে। আসলে এটাকে আপডেট বলেনা এটাকে ডেভেলপমেন্ট বলেনা , ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে এক্সিস্টিং মেশিনে ঐ সফটওয়্যারকে আকার না বাড়িয়ে আরো বেশি অপটিমাইজড করা,লেস পাওয়ার কনজিউমিং করা,সাইজ আরো ছোট করার জন্য। এই কাজটাই করে লিনাক্স বেজড ডিস্ট্রো গুলো। কিন্তু এন্ড্রয়েড লিনাক্স বেজড হওয়া সত্ত্বেও এটার নিয়ন্ত্রণ পুঁজিবাদী গুগলের হাতে। এজন্য এটা সবচেয়ে নিম্নমানের ওএস। এখন কথা হচ্ছে কিভাবে আপনি আপনার ৫-৬ বছর আগের ডিভাইস কোন ল্যাগ বা হ্যাং ছাড়াই ব্যবহার করবেন?  


* প্রথমে একটা ফ্যাক্টরি রিসেট দিবেন।
*এরপরে প্লে স্টোর এবং গুগল সংক্রান্ত কয়েকটা এপ্লিকেশন যেগুলা কম প্রয়োজন সেগুলো ডিজএ্যাবল করবেন। প্লেস্টোর ডিজএবল করবেন যাতে স্টক এ্যাপ আপডেট না হয়। প্লে স্টোর থাকলেই, গুগল, গুগল প্লে সার্ভিস সহ আরো কিছু সফটওয়্যার আপডেট করে আকার অনেক বাড়িয়ে ফেলবে যার ফলে আপনি স্বল্প র‍্যামে আর চালাতে পারবেন না। তাছাড়া ওরা গুগল প্লে সার্ভিস সহ কিছু স্টক এপ্লিকেশন আপডেট করে পুঁজিবাদ টিকিয়ে রাখতে নতুন নতুন শক্তিশালী প্রসেসরের জন্য, যেটা চালাতে আপনার দুর্বল প্রসেসর পেরে ওঠে না,অনেক স্ট্রাগল করতে হয়। এই কারনেই স্লো হয়ে যায়। এজন্য কোনভাবেই আপডেট করবেন না স্টক এপ্লিকেশন গুলো।
*অন্য সফটওয়্যার গুলোর লাইট ভার্সন কিংবা অনেক আগের ভার্সন যেগুলার সাইজ ছোট ছিল সেসব ব্যবহার করা। অফিস এপ্লিকেশন যেগুলার সাইজ ৩ বছর আগে ৩০ মেগাবাইট ছিল এখন সেগুলো ১৫০-১৯০ এম্বি। সুতরাং ওল্ড ভার্সন ব্যবহার করতে হবে। ফেসবুক মেইন এপ্লিকেশন এর জায়গায় লাইট ভার্সন ব্যবহার করা যেতে পারে।
*যেহেতু প্লে স্টোর ডিজএ্যাবল করবেন নতুন এপ্লিকেশন ডাউনলোড কিভাবে করবেন? এজন্য অন্য কোন মার্কেট প্লেস ব্যবহার করতে পারেন, যেমনঃ mobile1, 9Apps, apkmirror,Fdroid, Aptoid,Moboginie,Apkpure এরকম অসংখ্য পাবেন। এদের মধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে  Apkpure বেশি পছন্দ করি। আপনারা চাইলে গুগল থেকেও ****.apk প্যাকেজ নামিয়ে ইন্সটল করে নিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার আর্কিটেকচার মিলিয়ে নিতে হবে। নিয়ন এআরএম৭, এক্স ৮৬, এবং ৬৪ বিট এর মধ্যে আপনার ফোন যেটা সেটা নামালে ইন্সটল হবে। যেহেতু লোএন্ডের পুরাতন ফোন ইউজেবল করবেন সেহেতু এই ঝামেলাগুলো করতেই হবে।
*সফটওয়্যার চাইলে অন্যের ফোন দিয়ে ব্লুটুথ বা শেয়ারমি দিয়ে নিয়ে নেবেন(শেয়ারইট ব্যবহার করবেন না, বাজে এ্যাডে ভরে গেছে+ সাইজও অস্বাভাবিক বেড়েছে)
*থার্ডপার্টি এ্যাপ মার্কেট ব্যবহার করতে গেলেও খেয়াল রাখবেন গুগল এর  বা অন্যান্য হেভি এ্যাপ্লিকেশন আপডেট হয়ে না যায়। এজন্য সবচেয়ে ভাল হয় কোন এ্যাপ মার্কেট ব্যবহার না করে সরাসরি গুগলে সার্চ দিয়ে এপ্লিকেশন প্যাকেজ নামালে।
*ফোন এর ইন্টারনাল স্টোরেজে ব্যক্তিগত কিছু রাখবেন না। সেটাকে কিছুটা ফাঁকা রাখা জরুরি। অনেকসময় দেখা যায় একা একাই জায়গা কমতে থাকে। আমি ছবি তে দিয়েছি, এখানে দেখছেন একেকটা সফটওয়্যার এ্যাপ্লিকেশনের সাইজ কিরূপ বেড়ে গিয়েছে। এখানে মূল রহস্য হচ্ছে ক্যাশ। সপ্তাহে অন্তত একবার প্রত্যেক এপ্লিকেশন এর ক্যাশ ক্লিয়ার করবেন। ক্যাশ ফাইল হচ্ছে একটা সফটওয়ার চলার কারনে জমা হওয়া কিছু ফাইল, যা পুনরায় ওই এ্যাপ্লিকেশন এ্যাক্সেসে দ্রুতি ঘটায়। যেমন ধরুন ফেসবুকের ক্যাশই জমে ৪০০-৫০০ মেগাবাইট ছাড়ায়। এর ফলে কিছু পেইজ প্রিলোডেড হয়ে থাকে। আবার কিছু ফাইল জাঙ্ক হয়ে থাকে। তবে পুরাতন ফোন গুলায় স্পেস কম হবার জন্য এগুলো সেটিং এর স্টোরেজ অপশনে গিয়ে ক্যাশ ক্লিয়ার করে নিবেন। এতে দেখবেন দু এক জিবি স্পেস খালি হবে।
*বড় সাইজের হেভি সফটওয়্যার এর বিকল্প লাইট কিছু খুজবেন। যেমন ধরুন ম্যাসেঞ্জার না চালিয়ে ম্যাসেঞ্জার লাইট। ক্রোম ব্রাউজার, ফায়ারফক্স এর আকার এখন ৯০+ এম্বি। বিকল্প হিসাবে অপেরামিনি ব্যবহার করা যেতে পারে। যে এপ্লিকেশন ব্যবহার কম হয়, সেসব আনইন্সটল করা যেতে পারে।
* ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন ক্লিয়ার করবেন। র‍্যাম ভরে গেলেই হ্যাং করে। যেহেতু র‍্যাম কম তাই ব্যাকগ্রাউন্ড এ্যাপ বন্ধ রাখবেন। যে সব এপ্লিকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড এ রান করা অত্যাবশ্যকীয় সেগুলো ব্যাটারি অপটিমাইজেশন এ গিয়ে হোয়াইট লিস্টে রাখবেন, নতুবা এ্যাপ্লিকেশন পাওয়ার সেভিং এর জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।
*থার্ড পার্টি লঞ্চার ব্যবহার না করাই ভাল। সব সময় স্টক লঞ্চারে নির্ভর করা উত্তম।
*অনেক পুরাতন ফোনে আধুনিক এ্যাপ্লিকেশন আপডেট বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন একটা ফোনে দেখেছি ইউটিউব এ্যাপ চলেনা। সেগুলোয় বিকল্প সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে যেমন স্ন্যাপটিউব, পিওরটিউবার।
*যতদিন না পুরাতন সফটওয়্যার ব্যবহার অনুপযুক্ত হয় ততদিন চালাতে থাকবেন। যেমন হোয়াটসএ্যাপ একটা পর্যায়ে একই ভার্সন আর চলবেই না। আবার ফেসবুকও বাধ্যতামূলক আপডেট করতে হবে। ওই অবস্থা আসার আগ পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন।
*একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন যত কিছুই হোক, কোন অবস্থাতেই যেন গুগল ও গুগল প্লে সার্ভিস আপডেট না হয়।


এভাবে করে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আপনার বাসায় ফেলে রাখা ফোন সচল রাখতে পারবেন। সেইসাথে আপনার হাতের লো কনফিগারেশন এর ফোনটাও অনেক বছর ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারবেন।আসলে এন্ড্রয়েড লিনাক্স নির্ভর হলেও এটা লিনাক্সের মান ইজ্জত নস্ট করছে পুঁজিবাদীদের হাতে পরে। এজন্য পিউরিজমের লিবরেম আসলেও উচ্চমূল্যের জন্য তেমন সফল হয়নি। এখন চলে এসেছে পাইনফোন। এটা স্বাভাবিক ব্যবহার উপযোগী করতে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এর জন্য এখনো অনেক অপেক্ষা করতে হতে পারে। যদিও মোবিয়ান অনেক এগিয়ে গেছে। মোবিয়ানে পাশে শক্ত কোন খুটির অভাবে খুব বেশি দূর হয়ত এগোবে না। এজন্য কেডিই প্লাজমা শেল পাওয়ার্ড- ম্যাঞ্জারো আর্ম এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পাইন ফোন গুলোয় কম্পিউটার এর মত  আপনার ইচ্ছামত ওএস বদলাতে পারবেন। চাইলেই সেটায় ইন্সটল করতে পারবেন পোস্টমার্কেট ওএস,জোলার সেইলফিশ,পিওরওএস, উবুন্টু টাচ কিংবা এন্ড্রয়েড।