Tuesday, May 25, 2021

আদর্শহীনতা

আদর্শহীন জীবন অনেকটাই এ্যানিম্যালিস্টিক জীবন। বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। সমস্ত এ্যানিম্যাল বিয়িং তাদের জন্য নির্দিষ্ট দ্বীন অনুযায়ী চলে। মানুষ যখন তার জন্য নির্দিষ্ট দ্বীন(ইডিওলজি) এর অনুসরণ করে তখন তাকে সেটা সকল জীব জগতের হায়ারার্কির সর্বোচ্চে নিয়ে যায়। একইভাবে সেই নির্ধারিত ইডিওলজি রিজেকশনের ফলাফল জন্তুজানোয়ারের চেয়েও নিচু স্তরে চলে যাওয়া।  ফিজিক্যাল কিংবা ইন্টেলেকচুয়াল সুপেরিয়রটি মূলত শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড নয়। জ্বীন জাতি প্রযুক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে মানুষের চেয়েও এ্যাডভান্স। এমনকি তাদের তাদের ফিজিক্যাল স্ট্যাচার মানুষ অপেক্ষা উন্নত। চতুষ্পদ জন্তুদের অধিকাংশই মানব অপেক্ষা ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন, অধিকতর শক্তিশালী এবং কষ্টসহিষ্ণু। এমন অনেক প্রানী আছে যার চোখের সংখ্যা,হার্ট মানুষের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যার, এরপরেও সেসব প্রানী শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে মানুষের ধারে কাছেও নেই। অর্থাৎ শ্রেষ্ঠত্বের মান এখানে অনেকটাই এ্যাবস্ট্রাক্ট।


আমরা যদি শ্রেষ্ঠত্বের এ্যাবস্ট্র‍্যাক্ট ইডিওলজিক্যাল মাপকাঠি নিজেদের আকল দিয়ে খুজতে যাই তখন একেকজন একেকটাকে ধরে নেবে। ইডিওলজিক্যাল সুপ্রিমেসির কথা ভাবলে একেক মানুষ একেক রকম ফিলসফিক্যাল থটের গুণকীর্তন করবে। এজন্য আমাদেরকে দেখতে হবে আসমান যমীন এবং সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতে কোন ইডিওলজি প্রকৃতপক্ষে মনোনীত ইডিওলজি। কোন দ্বীন তার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য।  [দ্বীন দ্বারা মতাদর্শ/ইডিওলজি বোঝায়] বস্তুত কোন দ্বীন কল্যাণকর সেটা তার চেয়ে ভাল কেউ বলতে পারেনা। এমতাবস্থায়, আমরা দেখি আল্লাহ আযযা ওয়াযাল আদম(আ) এর সময় থেকেই আমাদের জন্য এক ও অভিন্ন ইডিওলজি নির্ধারণ করে রেখেছেন। যারা এই দ্বীন ধারন করবে তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। যারা অস্বীকার(কুফর) করবে এরা নিকৃষ্ট, এমনকি চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা নিকৃষ্ট। আমরা দেখতে পাই অনেকেই ম্যাটেরিয়ালিস্টিক এ্যাচিভমেন্ট এবং পার্ফেকশনকে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে। অর্থাৎ এদের দৃষ্টিতে যে দেশ বা জাতি যত বেশি প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এ্যাডভান্স তারা তত শ্রেষ্ঠ। তাদের এই মানদণ্ডে জ্বীন জাতি সবার উপরে থাকে। আমরা যদি গোটা এক্সিস্টেন্সের আন্ডারলেইং রিজনকে[মেটাফিজিক্স] খুঁজতে চেষ্টা করি তখন কারেন্ট ফিজিক্যালিটির বাইরে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত তিন অবস্থাকে খুঁজে পাব। যে অবস্থাকে নির্ধারণ করবে আমাদের বর্তমানকালের কর্ম। আল্লাহ সূরা মুলকের ২য় আয়াতে বলেছেন, الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلً। 


 এমতাবস্থায় দুনিয়ার হায়াতের এই টেম্পরাল ম্যাটেরিয়ালিস্টিক গেইনিংকে যদি শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি বানানো হয় তবে সেটা স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির আত্মপ্রবঞ্চনাময় ভাবনা ছাড়া আর কিছু না। এরকম চিন্তা করে তারা, যারা আল্লাহ প্রদত্ত ইডিওলজিকে অস্বীকার করে[কাফির]। আজকে আল্লাহর দ্বীনধারনকারী[মোডারেট মুসলিমস] দাবিদাররাও এমনটা ভাবে যে প্রযুক্তিগত ম্যাটেরিয়ালিস্টিক উৎকর্ষতাই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি, এরা কাফিরদের সুপেরিয়রটির ডেফিনিশনকে গ্রহন করে ওদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে আহবান করে। 


শুধু এরাই না, আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহন করেছে এমন হাজারো দাবিদার আছে, যাদের নামটা শুনলে মনে হয় সে আল্লাহর পথের এবং মতের, অথচ অন্তরের ভেতরে মোটেও তা নয়। অনেক পীর সুফি থেকে শুরু করে অনেক আলিম কামিল এমনকি সহিহ আকিদাধারীদেরকেও পাবেন যারা দ্বীনকে বাহ্যিকভাবেই মানে বলে প্রকাশ করে, কিন্তু দ্বীন তাদের অন্তর পর্যন্ত পৌছায়না। আল্লাহর নির্ধারিত ইডিওলজি তাদের বেসিক ইডিওলজি না। বরং বেসিক ইডিওলজি সামথিং এলস। বেসিক ইডিওলজি হচ্ছে তাদের নফস। ইসলামিক ইডিওলজিটা যাস্ট তাদের সামাজিক পরিচয়ের জন্য। ওটা শুধুই লেবাস! যার জন্য এরা আল্লাহর পথ এত কাছে পেয়েও পায়না। নফস এবং কাফিরদের সাথে সবসময় আপোষ করে চলে এরা। এরা আল্লাহকে মান্য করার বেসিক শর্তগুলোই মানে না! আপনি এরকম বুজুর্গ লোক খুব কমই খুঁজে পাবেন যিনি তাগুত কি, তা জানে এবং তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান রাখেন। সবার অবস্থা হচ্ছে তাগুতের বশ্যতা স্বীকার করে আল্লাহ প্রদত্ত ইডিওলজিকে মেনেছি বলে সাক্ষ্যদান। এরা প্রত্যেকেই আদর্শহীন, পরিচয়হীন। ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর দ্বীনকে অন্তরে ধারন করার ব্যপারে গাফিলতি করা ও এড়িয়ে চলা লোকেদের অবস্থা অনেকটা দ্বিপদী জন্তুর মতই। এরা জানেনা দুনিয়াতে কেন এসেছে, প্রকৃত সাফল্য কি, এদের নেই কোন আদর্শ। এরা পারিপার্শ্বিক অবস্থার স্রোতে চলে। নফসের অনুকূলতা বিচার করে চলে। বিপরীতভাবে, যারা আন্তরিকভাবে ইসলামকে ডিফল্ট ইডিওলজি বা কগনিশন হিসেবে সিলেক্ট করে তারা জীবনের অর্থ,প্রকৃত সাফল্য, লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। এরা খেয়ালিপনা করে জীবনকে চালায়না। আশপাশের সামাজিক অসামাজিক ট্রেন্ড দ্বারা এরা আনএ্যাফেক্টেড থাকে। এরা যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন ইসলামিক মানদণ্ডের বাহিরে গিয়ে অন্য কোন স্ট্যান্ডার্ডকে গ্রহন করেনা। ইসলামই হয় এদের একমাত্র মটো। কাফিরদের পরিবেশেও এদের অন্তরে ঈমানের নূর সর্বাবস্থায় প্রজ্জলিত থাকে, কখনোই কুফরের সাথে আপোষ করে চলার কথা ভাবেনা। এরা প্রতিষ্ঠিত কুফরি শাসনব্যবস্থার ইত্তেবা করেনা বরং তারা আল্লাহর যমীনে তার শাসন প্রতিষ্ঠার নববী পন্থার অনুসরণ করে। এই শ্রেনীটাই প্রকৃত শ্রেষ্ঠ ইডিওলজির ধারক, এরাই প্রকৃত এবং শ্রেষ্ঠ মানুষ।