Friday, June 19, 2020

Ummah Network

আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার প্রতি লাখকোটি শুকরিয়া যে তিনি আমাদের সকলের প্রিয় শাইখ তামিম আল আদনানির[হাফিঃ] ইউটিউব চ্যানেল Ummah Networkএর অনুসরণকারীর সংখ্যা পাঁচলক্ষ করেছেন। বর্তমানে সাবসক্রাইবার সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যেন এই সংখ্যা বহুগুন বাড়িয়ে দেন। আমিন। এই সংখ্যাবৃদ্ধি তাওহীদের দাওয়াত ব্যাপক আকারে প্রসারেরই ইঙ্গিত। আমরা যারা অনলাইনে আছি, তারা যার যার ফেসবুকে তার চ্যানেলের লিংক প্রমোট করলে এক সপ্তাহে আরো অনেকের কাছে পৌছত। লিংকঃ
https://m.youtube.com/channel/UCdC58Fno7uiux5-fDWb3F4Q

মাঝে কিছুদিন আগে সমস্ত পথচ্যুত দরবারি আলিমরা তার লেকচার না শুনবার জন্য অনেক প্রচারণা চালিয়েছিল। মনে পড়ে? কিন্তু ফলাফলে এখন কি হলো? ৫০০০০০+ সাবস্ক্রাইবার। আল্লাহু আকবর। আল্লাহর পরিকল্পনা এমনই। ওদের নিন্দা আর বিদ্বেষ শাইখের খ্যাতি মোটেও কমায় নি বরং সহস্র গুন বাড়িয়েছে। আমার মনে হয় না বাংলাদেশে ২য় কোন জীবিত আলিমের ফ্যান ফলোয়ারদের সংখ্যা এত বেশি । শাইখ তামিমকে মানুষ কতটা ভালবাসে সেটা টের পাওয়া যায় তার একেকটা ভিডিওর কমেন্টে। আমার মনে হয়না শাইখুল হাদিস মুফতি জসিমউদদীন রহমানির (হাফিঃ) পর শাইখ তামিম আল আদনানির অনুরূপ বাংলাদেশের ৩য় কেউ আছে। আমরা উভয়ের জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য রহমানের দরবারে দু'আ করি। আল্লাহ যেন শাইখ তামিম আল আদনানিকে(হাফিঃ) দিয়ে আরো দীর্ঘ সময় বিশুদ্ধ তাওহীদের দিকে  দাওয়াহ অব্যাহত রাখেন এবং শাইখ জসীমউদ্দিন রহমানির(হাফিঃ) মুক্তি ত্বরান্বিত করেন। আমিন।

Tuesday, June 16, 2020

১৯.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

পদার্থবিজ্ঞানের অকাল্ট মায়াবাদি আকিদায় প্রত্যাবর্তন

 






প্রাচীন প্যাগান যাদুকরদের বাস্তবতা এবং সমগ্র অস্তিত্বের ব্যপারে এরূপ বিশ্বাস ছিল যে, গোটা বিশ্বজগতের বাস্তব অস্তিত্ব নেই। সবই মায়া। মায়া শব্দের বৈদিক অর্থ যাদু,উইচক্র্যাফট/সর্সারি[১]। যাদুকররা গোটা বিশ্বজগতকেই যাদু বা মায়া বলে অভিহিত করে। এই বিশ্বাস ভারতীয় যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শনগুলোতেও ছিল।পুরাণ এবং বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বে, মায়াকে বিষ্ণুর নয়শক্তির মধ্যে একটি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিষ্ণুর ঘুমের সাথে সাথে স্বপ্নের দ্বারা তৈরি হয় মায়া। বিষ্ণু, ইন্দ্রের মতোই মায়া সৃষ্টির কর্তা; এবং মায়া বিষ্ণুর গোটা দেহকে[মহাবিশ্বকে] আচ্ছন্ন করে।
In Puranas and Vaishnava theology, māyā is described as one of the nine shaktis of Vishnu.[42] Māyā became associated with sleep; and Vishnu's māyā is sleep which envelopes the world when he awakes to destroy evil. Vishnu, like Indra, is the master of māyā; and māyā envelopes Vishnu's body[৩].[উইকিপিডিয়া]



বিগত পর্বগুলোয় মায়াবাদের বেদান্তবাদী একটা স্তরের ব্যপারে আলোচনা হয়েছে, যেখানে ব্রহ্মচৈতন্যের এবং সবকিছুর এক ও অভেদ অস্তিত্বের মধ্যে মানুষের বাহ্যিক বিচ্ছিন্নতার(প্রতিটি বস্তু ও প্রানীর মধ্যবর্তী বস্তুগত ফাঁকাস্থান) বিশ্বাসের জন্য সবকিছুকে মায়া(ইল্যুশন) বলা হয়েছে। মায়াতত্ত্বের অপর বৈষ্ণবীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে সমগ্র মহাবিশ্ব মহাজাগতিক একক চেতনার কল্পনা বা স্বপ্ন।  ভারতীয় অকাল্ট ফিলসফির বিষ্ণুর মায়ার পাশাপাশি এই আকিদা বা বিশ্বাস খুজে পাওয়া যায় মিশরীয় যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শনগুলোয়। মিশরের 'ভেইল অব আইসিস' এর দ্বারা এই চিন্তাধারাকে বোঝায়। হিন্দুধর্মের বিষ্ণুপুরাণে এরূপ বর্ননা পাওয়া যায়। যখন মহাজাগতিক ক্ষীর সমুদ্রে বিষ্ণুদেব নিদ্রায় যান, তখন স্বপ্নে তার নাভিমূল থেকে ব্রহ্মাকে জন্ম হতে দেখেন। ব্রহ্মকে সৃষ্টির জন্য আদেশ করা হয়। এভাবে ব্রহ্মাকে বলা হয় সৃষ্টিকর্তা এবং বিষ্ণুকে বলা হয় এই ব্রহ্মকল্পের ধারক তথা ব্রহ্মাণ্ডের পরমেশ্বর। হিন্দু পুরাণ-ঔপনিষদিক বিশ্বাসে বলা হয় বিষ্ণু যখন ঘুমিয়ে যায় তার স্বপ্নে নাভিমূল থেকে ব্রহ্মার উত্থান হয়ে মহাবিশ্বের তথা ব্রহ্মকল্পের মহামায়ার সূত্রপাত ঘটে। ব্রহ্মকল্পের অবসান ঘটে ধ্বংসের নৃত্যকারী নটরাজ শিবের আবির্ভাবের দ্বারা।কল্পের সাগরে শেষনাগের অনন্তশয্যায় শায়িত বিষ্ণুর নাভি থেকে জাত পদ্মের ওপরে ব্রহ্মাকে বসে থাকতে দেখা যায়। বলা হয়,সৃষ্টির আদিতে বিষ্ণুই একা ছিল, সৃষ্টির কথা স্মরণ হতেই তাঁর নাভিজাত পদ্মে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়[৪]। যেহেতু সমস্ত মহাবিশ্ব বিষ্ণুর ঘুমের স্বপ্ন বা কল্পনা, এই জগত বস্তুত মায়া বা ইল্যুশন। বৈদিক সংজ্ঞানুযায়ী যেটাকে যাদু বলা হয়।  উপনিষদে গোটা প্রকৃতি জগতকে বলা হয়েছে যাদু। বিষ্ণুর স্বপ্নে নাভিমূলে উদগত স্বয়ং ব্রহ্মাকে বলা হয়েছে যাদুকর। মনুষ্যজাতি এ যাদুর মায়াজালে সহজে মোহিত হয়ে মায়াময় অস্তিত্বহীন জগতের সাথে বন্ধন তৈরি করে। এই মিথ্যা বন্ধনী থেকে মুক্ত হবার জন্য মানুষকে যাদুবিদ্যার পেছনের গুপ্তবিদ্যা অন্বেষণের আহব্বান করে উপনিষদ! এ কথা সরাসরি উপনিষদেও এসেছেঃ The concept of Maya appears in numerous Upanishads. The verses 4.9 to 4.10 of Svetasvatara Upanishad, is the oldest explicit occurrence of the idea that Brahman (Supreme Soul) is the hidden reality, nature is magic, Brahman is the magician, human beings are infatuated with the magic and thus they create bondage to illusions and delusions, and for freedom and liberation one must seek true insights and correct knowledge of the principles behind the hidden magic.[উইকিপিডিয়া]

আধুনিক বিজ্ঞান এই মায়াবাদি মহাবিশ্বের ধারনা তথা ম্যাজিক্যাল অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন করছে। ঔপনিষদিক বিদ্যার সাথে সুর মিলিয়ে বলছে এই মহাবিশ্ব একটি যাদুপ্রদর্শণী। জ্বি,কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার বলেন:"
"প্রশ্নটি হচ্ছে, প্রশ্নটি কী?
সবই কি যাদুপ্রদর্শনী?
বাস্তবতা কি একটি মায়া(ইল্যুশন)?
(এ) মেশিনের কাঠামো কী?
ডারউইনের ধাঁধা: প্রাকৃতিক নির্বাচন[ন্যাচারাল সিলেকশন]?
স্পেস-টাইম কোথা থেকে আসে?
এটা চেতনা থেকে আসে, এটা ছাড়া কোন উত্তর আছে?
সেখানে কি আছে?
এটা কি আমরা নিজেরাই?
অথবা, এর সবই কি কেবল একটি ম্যাজিক শো?
আইনস্টাইন আমাকে বলেছেন:
"আপনি যদি শিখতে পারেন, শেখান!"

অর্থাৎ মানুষের অস্তিত্ব তথা সমগ্র ত্রিমাত্রিক জগতের বাস্তব অস্তিত্ব নেই, সেসব স্বপ্নীল মায়াজাল। বিষ্ণুর কল্পনা।একে ইংরেজিতে একে বলা যায়, Dream, simulation, hologram কিংবা illusion। এটাই প্রাচীন ন্যাচারাল ফিলসফি তথা জাগতিক অস্তিত্বের ব্যপারে যাদুকরদের বিশ্বাস। উল্লিখিত দেবদেবীর কথাগুলো রূপকার্থে গুন বা বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। নিম্নশ্রেণীর ভক্তি সম্প্রদায় এদেরকে মাটি দিয়ে বাস্তবিক দেবদেবীর রূপ দিয়ে পূজা করে।

যাদুবিদ্যা বা যাদুশাস্ত্রের বিশ্বাসকে, বিজ্ঞান নামে প্রতিষ্ঠিত অপবিজ্ঞান কি করে বৈদিক অদ্বৈত বেদান্তবাদী কুফরি বিশ্বাসকে সায়েন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে সেটা  ১৭ ও ১৮তম পর্বে বিস্তারিত দেখেছেন। মূলত, অদ্বৈত বেদান্তবাদে ফিরে যাবার দ্বারা আধুনিক বিজ্ঞান প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান আইডিয়ালিস্টিক অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন করেছে। কোয়ান্টাম পদার্থবিদগন এ সুবিশাল কাজটিকে করেছে। সরাসরি ব্রহ্মচৈতন্যে ফিরে যাবার পাশাপাশি তারা এর সাথে যুক্ত বিষ্ণুর ব্রহ্মকল্পের সেই আদি বিশ্বাসকেও সত্যায়ন করেছে। অদ্বৈত অস্তিত্বের পাশাপাশি বাস্তবজগতকে বলা হচ্ছে, এটা ভার্চুয়াল কন্সট্রাক্ট। অর্থাৎ মহাবিশ্ব জগত একরকমের হলোগ্রাফিক স্বপ্নময় অসত্য অস্তিত্ব। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক নিজেই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সের কথা বলেছেনঃ"এই মহাবিশ্ব,যার মধ্যে আমরা কাজ করি এটি একটি হলোগ্রাফিক ইনফরমেশনাল স্ট্রাকচার, যার মধ্যে আমরা আমাদের চেতনাকে ব্যবহার করে প্রবেশ এবং কাজ করি। প্রত্যেক ব্যক্তি এক একটি মাইক্রোভার্সে বাস করে,যেটাকে শ্রদ্ধেয় এন্টন উইলসন বলেছেন 'রিয়ালিটি টানেল' - পরস্পরেরসাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হয় শেয়ার্ড প্রোগ্রামের জন্য। মাল্টিভার্সের মধ্যে প্রোগ্রাম গুলোর অবস্থান পরস্পরের সাথে যুক্ত একীভূত তরঙ্গরূপে। আমাদের মনই এটাকে স্থান কাল ও বস্তুতে সাজায়। আপনি আপনার (মানসিক)প্রোগ্রামকে নতুনভাবে সাজান তবেই ভিন্ন ধরনের রিয়ালিটিতে নিজেকে খুজে পাবেন।"

ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ম্যাট্রিক্স ম্যাথম্যাটিক্যাল মেকানিক্স নিয়ে এসেছিলেন। আজকে বৌদ্ধ,বেদান্তশাস্ত্র ও পদার্থবিজ্ঞানের অকাল্ট ফিলসফিকে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে হলিউডের ম্যাট্রিক্স ফিল্মে। মহাবিশ্ব একটি হলোগ্রাফিক সিমুলেশন বা ভার্চুয়াল ইন্সট্রাক্ট। সবকিছুই মৌলিক সংখ্যা বা ইনফরমেশনের দ্বারা তৈরি। সুতরাং বৈষ্ণব-উপনিষদের স্বপ্নময় বাস্তব অস্তিত্বহীন বিশ্বজগতের প্রাচীন ধারনায় ফেরত আসা শুরু হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনকদের হাত ধরে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স তথা বেদান্ত মেকানিক্সই গোটা সৃষ্টিতত্ত্ব এবং সৃষ্টিজগতের উৎপত্তির জ্ঞানকে পাল্টে প্রাচীন যাদুকরদের বিশ্বাসব্যবস্থার দিকে নিয়ে যায় এবং সেটাকে যথার্থ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

মায়াবাদি বা আইডিয়ালিস্টিক বাস্তবতার ধারনা সবচেয়ে পুরোনো যে শাস্ত্রে পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে ব্যাবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ। কাব্বালিস্টিক টেক্সটগুলোর মূল শিক্ষার বিষয়ই হচ্ছে হাইপার ডাইমেনশনাল আইডিয়ালিস্টিক ফিজিক্স। বলতে পারেন বাস্তবজগতের ব্যপারে আজকের বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে খুব উন্নততর অথচ সবচেয়ে পুরোনো বিদ্যা রয়েছে কাব্বালায়। যখন ইহুদী যাদুকরদের থেকে গ্রীক জ্ঞানবাদী দার্শনিক মনীষীগন[!] গ্রীসে পৌছায় তখন গ্রীস হয়ে যায় অপবিদ্যার সমৃদ্ধ ভূমি। গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাস ব্যবিলন-মিশরের ম্যাজাইদের থেকে বাস্তব জগতের ব্যপারে বিকৃত কুফরি বিশ্বাস তথা আকিদাকে নিয়ে আসেন।এ আর্টিকেল সিরিজের পূর্ববর্তী পর্বগুলোয় পিথাগোরাসের বাবেল সফরের দলিলগুলো নিয়ে আলোচনা গত হয়েছে। পিথাগোরাসকে আইডিয়ালিস্টিক ডিজিটাল ফিজিক্সের আদি প্রবক্তা বলা যেতে পারে। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই মহাবিশ্ব নাম্বার বা সংখ্যার সমন্বয়ে গঠিত। সবকিছুই গনিত সবকিছুই সংখ্যা। এজন্য তিনি তার শিষ্যদেরকে  সংখ্যাতত্ত্ব বা নিউমেরলজির শিক্ষা দিতেন। তারা বিশ্বাস করত সংখ্যার মধ্যেই রিয়ালিটির গুপ্তজ্ঞান রয়েছে।

নোভা ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয় যে,পিথাগোরাস বিশ্বাস করতেন এই মহাবিশ্বের সব কিছুই নাম্বার বা সংখ্যা ও গণিতের সমন্বয়ে সৃষ্টি। এমনকি শব্দ তরঙ্গ বা মিউজিকও জটিল গণিতের সমন্বয়ে সৃষ্ট। যত উচ্চতর জটিল গাণিতিক ছন্দ, মিউজিক তত শ্রুতিমধুর। তিনি স্ট্রিং বা তারকে গাণিতিক রেশিওতে ভাগ করে সর্বপ্রথম গিটারের অনুরূপ বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে ফেলেন[২]। তিনিই সর্বপ্রথম বাদ্যযন্ত্রের মিউজিক্যাল নোটের হার্মোনিয়াস ইন্টারভ্যালের রেশিও আবিষ্কার করেন। সুতরাং আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সাথে পিথাগোরাসের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।জ্যাজ মিউজিশিয়ান এ্যাস্প্যারেঞ্জা স্প্যাল্ডলিং গনিতকে খুবই ভালবাসেন তিনি গানিতিক পার্ফেকশান খুজে পান বাদ্যযন্ত্রের মাঝে। পিথাগোরাসের আধ্যাত্মিক শিষ্য গ্যালিলিও তার অনুরূপ বিশ্বাস করতেন যে এই মহাবিশ্ব সম্পূর্ণ গানিতিক ভাষায় লেখা। অর্থাৎ ডিজিটাল ফিজিক্স আধুনিক কিছু নয়, বরং প্রাচীন যাদুকরদের আকিদার নতুন সংস্করণ।


পাশ্চাত্যে মহাবিশ্বের মায়াময় স্বপ্নীল অস্তিত্বের সর্বপ্রথম ধারনা দেয় দার্শনিক রেনে ডেকার্ট। তাঁর লেখা 'মেডিটেশন অন ফার্স্ট ফিলোসফি'(1641) তে রিয়ালিটিকে স্বপ্নের সাথে পার্থক্যহীন দাবি করেছিলেন। তার স্বপ্নের যুক্তিটি নিম্নরূপ: "এমন বিশ্বাসের কোনও সত্যতা নেই যে আমি সত্যি সত্যিই আগুনে বসে আছি, যেহেতু আমি স্বপ্ন দেখেছি যে আমি নিশ্চিতভাবে আগুনের পাশে বসে আছি, অথচ এটা আমার কাছে অজানা ছিল যে আমি স্বপ্ন দেখছি ।" ডেকার্টের যুক্তি অনুসারে,স্বপ্ন জাগ্রত অবস্থায় থাকার বাস্তবতা থেকে পার্থক্যহীন হতে পারে। জীবন জাগ্রত ও স্বপ্ন দেখার মধ্যে যে কোন বিষয়গত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই পার্থক্য একজনকে আত্মবিশ্বাসের সাথে দৃঢ়ভাবে বলতে দেয় না যে সে জেগে আছে বা স্বপ্ন দেখছে। ডেকার্ট "মেডিটেশন অন ফার্স্ট ফিলোসফি"তে বলেছেন, "... এমন কোনও নির্দিষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় নি যার দ্বারা আমরা ঘুম থেকে জাগ্রত অবস্থাকে স্পষ্টভাবে আলাদা করতে পারি", এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, "সম্ভবত আমি এই মুহূর্তে স্বপ্নের মধ্যে আছি এবং আমার সমস্ত বাস্তব উপলব্ধি ভুল[বিভ্রম/মায়া]।" ডেকার্ট ছিলেন পাশ্চাত্যের প্রথম স্বীকৃত দার্শনিক।তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বিচিত্র মিস্টিক্যাল অকাল্ট টেক্সটের মধ্যে ডুবে ছিলেন তৎকালীন অন্য সকল দার্শনিকদের মত[৫]। সুতরাং তিনি সেখান থেকেই মূলত প্রাচীন মায়াবাদি অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে প্রচার করছেন। তিনি বোঝাচ্ছেন, হয়ত আমাদের বাস্তব জগতের ধারনাটিও ভুল। আমরা হয়ত স্বপ্নের মধ্যে আছি। যেহেতু এই বিশ্বাসের অরিজিন যাদুশাস্ত্র সুতরাং এর অনুসারী কাউকে যদি ইলাহের স্বীকৃতি দেবার চেষ্টা করে তবে শয়তানকেই ইলাহ বলে স্বীকৃতি দেবে। রেনে ডেকার্ট এ কাজটিই সরাসরি করেছেন। তিনি স্বপ্নময় জগতের স্রষ্টা হিসেবে শয়তানকে স্বীকৃতি দেন। Descartes একে বলেন অশুভ শয়তানের[Evil Demon] হাইপোথিসিস, যা তার পরের লেখায় উত্থাপিত হয়। তিনি যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন যে একটি "অশুভ শয়তান" মহা প্রতারণার[মিথ্যা রিয়ালিটিকে সত্য হিসেবে উপস্থাপনের] জন্য দায়ী, যাকে আমরা দৃঢ়তার সাথে বাস্তবতা হিসাবে উল্লেখ করি - এই শয়তান তার নিজ ক্ষমতা ব্যবহার করে বাহ্যিক বিশ্বজগতের সম্পূর্ণ বিভ্রম বা মায়া তৈরি করছে। এই ধূর্ত শয়তান আমাদের সমস্ত সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। ডেকার্টের এ মায়াবাদি তত্ত্বকে পরবর্তীতে হ্যান্স মোরাভিক পুনরুত্থাপন করেন।

ডেকার্টের ইভিল ডিমন তথা অশুভ শয়তানের তত্ত্বটি এখানেই শেষ হয়নি।আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এটা আজ আধুনিক বিজ্ঞানের  প্রচারক ও ধারকরা তাদের আকিদায় বৈজ্ঞানিকভাবে এই শয়তানি বিশ্বাস লালন করেন,এটা তারা এমনকি সায়েন্টিফিক ডকুমেন্টারিতেও প্রচার করেন। সেটা ইনশাআল্লাহ একটু পড়েই বুঝবেন।

মায়াবাদি এই কুফরি দর্শন প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছে ইনফরমেশন বেজড ডিজিটাল প্যানকম্পিউটেশনালিস্টিক ফিজিক্সের ধারা। মূলত আইডিয়ালিজম এরই হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিজিটাল ফিজিক্স এর দ্বারা এমন পদার্থবিদ্যার ধারাকে বোঝায় যেখানে রিয়ালিটিকে ডিজিটাল বাইনারি কোড বেজড ভার্চুয়াল কন্সট্রাক্ট হিসেবে দেখা হয়। সেটা হতে পারে ডিজিটাল বাইনারি কম্পিউটার কোড বা এরকম কিছু। সবকিছুর নিচে আছে ইনফরমেশন। এরও নিচে আছে মহাচৈতন্য। ডিজিটাল ফিজিক্সে রিয়ালিটিকে পিক্সেলেটেড বলা হয়। অর্থাৎ পদার্থের একদম মৌলিক অবিভাজ্য পর্যায়ে গেলে ত্রিমাত্রিক পিক্সেল খুজে পাওয়া যাবে যেমনটা কোন দ্বিমাত্রিক কম্পিউটারের ছবিকে জুম করতে থাকলে অবশেষে ইমেজটি ফেটে অসংখ্য ২ডি পিক্সেল দেখা যায়। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ম্যাট্রিক্স ম্যাথম্যাটিকস ব্যবহার করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রথম সমীকরণ তৈরি করেছিলেন। তিনি থিওরাইজ করেছিলেন, স্থান এবং সময় অবিভাজ্য, ত্রিমাত্রিক প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্যের ইউনিটগুলিতে (আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনের 2 ডি পিক্সেলের অনুরূপ) পিক্সেলেটেড অবস্থায় আছে। গণিতও এর ইঙ্গিত করে, এবং রিয়ালিটির মসৃণতার[অ-পিক্সেলেটেড] জন্য কোনও শক্ত পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। মসৃণ স্পেসটাইমে যে কোনও দুটি পয়েন্টের মধ্যে অসীম পরিমাণের পয়েন্টের বিস্ময়কর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। বজেনোর ডিকটোমী প্যারাডক্স এই সমস্যাটির মুখোমুখি হয় যে, আপনি যদি পয়েন্ট এ থেকে পয়েন্ট বি'তে যেতে চান, তবে আপনাকে প্রথমে অবশ্যই এই দুটি পয়েন্টের মধ্যে অর্ধেক পথ যেতে হবে। এবং সেখানে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই সেই দুটি পয়েন্টের মধ্যে অর্ধেক পথ পাড়ি দিতে হবে এবং এভাবে অসীমভাবে।স্পষ্টতই, এই প্যারাডক্সটি অর্থহীন, কারণ আমরা সাধারণত বি পয়েন্টে যেতে পারি। যাইহোক, আমরা যদি বি বিন্দুতে যেয়ে থাকে তবে এটি সূচিত করে যে বাস্তবতা পিক্সেলেটেড। পিক্সেলেটেড রিয়েলিটি সম্পর্কে হাইজেনবার্গের ধারণাগুলি তাঁর দিনের বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর কাছে অত্যন্ত র‍্যাডিক্যাল ছিল, একমাত্র নিলস বোর তার সাথে একমত হয়েছিলেন।বর্তমানে অধিকাংশ  পদার্থবিজ্ঞানীরা ডিজিটাল ফিজিক্সের পিক্সেলেটেড স্পেসটাইমের ধারনাকে মেনে নিচ্ছেন। বেশিরভাগ একমত যে প্লাঙ্ক স্কেলের চেয়ে কম হতে পারে না, যা স্পষ্টত বলে যে বাস্তবতা পিক্সেলেটেড। খুব শীঘ্রই পিক্সেলেটেড স্পেসটাইমের পক্ষে একটি শক্তিশালী কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কার হতে যাচ্ছে যেটা স্মুথ স্পেসটাইমের ধারনাকে চূড়ান্তভাবে ভুল প্রমাণ করবে[৬]।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবির্ভাবের দ্বারা প্রাচীন অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন কার্য শুরু হলে এর মাঝে বৈষ্ণবীয় - বেদান্তবাদী মায়াতত্ত্বে তাৎপর্য উপলব্ধি শুরু হয়, কিন্তু আলাদাভাবে সরাসরি মায়াবাদে ফিরে যাবার জন্য প্রয়োজন হয় নতুন কোন থিওরির। এজন্য পদার্থবিজ্ঞানীগন ১৯৭০ সাল দিয়ে হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপল তৈরি করে বৈষ্ণবী মায়াকল্পের ধারনাকে আলাদাভাবে প্রচার শুরু করে। স্পেস তথা মহাশূন্যের ধারণা ততদিনে মানুষের কল্পনায় প্রতিষ্ঠিত হয়। কাব্বালিস্টিক হেলিওসেন্ট্রিক মহাকাশতত্ত্বের উপর অনেক থিওরির জন্ম হয়, এসব নিয়ে অনেক কল্পনা জল্পনা শুরু হয়। ব্ল্যাকহোল, এন্টি ম্যাটার,ডার্ক ম্যাটার অমুক তমুক বিচিত্র কাল্পনিক জিনিস মূল আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়। এ সকল তত্ত্ব, হাইপোথিসিস আসলে সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব বিষয়, হয় পরবর্তীতে কোন একটা সম্পর্কযুক্ত বিশ্বাসব্যবস্থাকে সত্যায়নে সহযোগিতা করে, কিংবা প্রাচীন কোন আকিদার দিকে নিয়ে যায়। যেমন ধরুন ব্ল্যাকহোল।
এই হলোগ্রাফিক তত্ত্ব এসেছে ব্ল্যাকহোল তত্ত্ব থেকে।মাইকেল ট্যালবটের মতে,হলোগ্রাম হচ্ছে "ভার্চুয়াল ছবি, যেটাকে (অস্তিত্বশীল হিসেবে) দেখা যায়, অথচ সেটা নেই..."। হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপ্যাল বলে যে, গ্রাভিটি পাতলা- স্পন্দিত স্ট্রিং থেকে উদ্ভূত হয়,  যা সমস্ত ফ্ল্যাট, দ্বিমাত্রিক  ইউনিভার্সের হলোগ্রাম।বিজ্ঞানীরা দেখে যে ব্ল্যাকহোলগুলোয় যদি সব গ্রাস করে নেয় তবে সকল ত্রিমাত্রিক বস্তুকে দ্বিমাত্রিক সার্ফেসে সকল ত্রিমাত্রিক বস্তুর ইনফরমেশন সংরক্ষণ করবে। একইভাবে এই দ্বিমাত্রিক জগত থেকে আবারো বস্তুটির ত্রিমাত্রিক রূপ দেয়া সম্ভব, এখান থেকে ধরা হয় মহাবিশ্ব পুরোটাই হলোগ্রাম। ব্ল্যাকহোল তত্ত্ব থেকে এ ধারণাটি আসে। ১৯৭০ এর দশকে গবেষকরা জানলেন যে যখন কোনও বস্তু ব্ল্যাকহোলে পড়ে ব্ল্যাকহোলের অংশ হয়ে যায়, তখন দুটি জিনিস ঘটে। এক,অবজেক্ট সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য হারিয়ে যায়। দুই, ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হোরাইজনের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়। প্রথম ঘটনাটি থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় 'ল লঙ্ঘন করেছে বলে মনে হয়, কারণ হারিয়ে যাওয়া বিবরণগুলির মধ্যে একটি হলো অবজেক্টটির এনট্রপি বা তার অংশগুলোর আণুবীক্ষণিক তথ্য। তবে দ্বিতীয় সত্যটি একটি উপায় বের করে দিয়েছে: যদি এনট্রপি সর্বদা বর্ধমান হয় এবং একটি ব্ল্যাকহোলের পৃষ্ঠের অঞ্চলটিও, তাহলে সম্ভবত ব্ল্যাকহোলের কোথাও তথ্য বা ইনফরমেশন কোনওভাবে সেখানে সঞ্চিত থেকে যায়।

হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপাল কোয়ান্টাম গ্রাভিটি স্ট্রিং থিওরির বিষয়। এর প্রথম প্রস্তাবনাকারী Gerard 't Hooft। পরবর্তীতে Leonard Susskind বিস্তরব্যাখ্যা দান করেন। থর্ন 1978 সালে দেখেছেন যে, স্ট্রিং থিওরি এমন এক lower-dimensional বর্ণনাকে স্বীকার করে যার মধ্যে হলোগ্রাফিক উপায়ে মহাকর্ষের উত্থান ঘটে।  হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপ্যাল ব্ল্যাকহোল থার্মোডাইনামিক্স থেকে উত্থাপিত হয়েছিল। ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে ধারনাটি এরূপ, যে সব বস্তু গর্তে পড়েছে তাদের তথ্যবহুল বিষয়বস্তু পুরোপুরি ইভেন্ট হোরাইজনের ফ্লাকচুয়েশনে থাকতে পারে। হলোগ্রাফিক নীতি ব্ল্যাকহোলের ইনফরমেশন প্যারাডক্সকে স্ট্রিং তত্ত্বের কাঠামোর মধ্যে সমাধান করে।

এবার চলুন,১৯৯৩-এর দিকের ঘটনায় যাওয়া যাক। পৃথকভাবে কাজ করা দুই পার্টিকেল ফিজিসিস্ট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে মহাবিশ্ব নিজেই একইভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এই ধারণাটি দিয়ে শুরু করে যে, স্পেস বা স্থানের প্রতিটি ভলিউমে তথ্য সঞ্চিত রয়েছে। তবে স্পেসের যে কোনও স্থান ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে, যেটা হবে প্রকৃতির সবচেয়ে ঘন ফাইল ক্যাবিনেট, যা অঞ্চলের বিটগুলিতে তথ্য সঞ্চয় করে। সম্ভবত তারপরে, স্পেস, ব্ল্যাকহোল বা কোনও প্যাচ বর্ণনা করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা হলো এই অঞ্চলের ইনফরমেশনের মান । এ ধারণাটির থেকে হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স তত্ত্বের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। জেআর মিনকেল বলেন,"আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে  হলোগ্রাফিক নীতিটি সমস্ত স্থানের সকল স্পেস টাইমে  কাজ করে। আমাদের সেখানে এই আশ্চর্যজনক প্যাটার্ন রয়েছে, যা ব্ল্যাকহোলের তার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এবং এটি কেন কাজ করে তার ব্যপারে আমাদের কোনও ধারণা নেই। এটা আমাদের যেটা জানাচ্ছে যে আমাদের এ জগতের এমন একটি বিবরণ বা ব্যাখ্যার সন্ধান করা উচিত; যা বর্তমানে আমাদের কাছে বিদ্যমান তত্ত্বের চেয়ে আরও বেশি অল্পভাষার এবং সম্ভবত কোয়ান্টাম গ্রাভিটির সাথে এটি করতে হবে।"[৭]


মাইকেল ট্যালবট একজন অস্ট্রেলিয়ান লেখক, যার বইগুলি মূলত কেবলমাত্র সায়েন্স ফিকশনের। তিনি একজন মিস্টিক ছিলেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে মিস্টিসিজম মিলিয়ে বই লিখতেন। তার একটি কিতাবের নাম Mysticism And The New Physics, Beyond The Quantum। তিনি হঠাৎ বাস্তবতার ব্যপারে "দ্য হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স" নামের বই পাব্লিশ করেন, এতে বলা হয় যে, এই মহাবিশ্ব একটি বিশাল হলোগ্রাম ছাড়া আর কিছু নয়, অর্থাৎ একটি মায়া, যা বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট প্রাথমিক স্তরের অভিক্ষেপ[প্রজেকশন]। তার বইয়ের এই তত্ত্বটিকে বিজ্ঞান মহল সায়েন্সফিকশন হিসেবে নেয় নি বরং খুব সিরিয়াসলি গ্রহন করে। মাইকেল ট্যালবটের এ বইতে বলেন, " এ বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে যে আমাদের এ জগতের সমস্ত জিনিস, স্নোফ্লেক্স থেকে ম্যাপল গাছ, পতনশীল তারকা থেকে ঘূর্ণনশীল ইলেকট্রন পর্যন্ত সমস্ত কিছুই ভূতুরে ছবি, যা এমন এক লেভেলের রিয়ালিটির প্রজেকশন যেটা শুধুমাত্র আমাদের রিয়ালিটিই নয় বরং এই স্পেস-টাইমেরও বাইরের।"

হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স এর অকাল্ট তত্ত্বকে আলাদাভাবে সর্বপ্রথম প্রচার শুরু করেন খ্যাতিমান ইহুদী পদার্থবিজ্ঞানী David Bohm। ডেভিড বোহম ছিলেন বেদান্তশাস্ত্রের অনুসারী ওপেনহেইমারের শিষ্য এবং ইহুদী  পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বন্ধু। তিনি তৎকালীন প্রথম সারির কোয়ান্টাম ফিজিসিস্টদের একজন। ইহুদি পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড বোহম পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য স্মরনীয় হয়ে আছেন।  বার্কলেতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরপরই তিনি ইলেক্ট্রন ফেনোমেনন আবিষ্কারের দ্বারা প্লাজমা তত্ত্ব তৈরি করেন যাকে এখন বোহম ডিফিউশন বলা হয়। ১৯৫৫ বোহম ইসরাইলে চলে আসেন, সেখানে তিনি হাইফার Technion 'এ দু'বছর কাজ করেন।[৮]

এই হলোগ্রাফিক থিওরি তৈরির কাজে ডেভিড বোহমের পাশে ছিল স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্সের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কার্ল এইচ প্রব্রাম। অদ্ভুতভাবে, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্ষেত্রের এ দুই বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় একই সিদ্ধান্তে এসেছেন। "স্টার  ওয়ার্স" মুভিটিতে দেখে থাকবেন,একটি লেজারযুক্ত রোবট মহাকাশে ত্রি-মাত্রিক চিত্র তৈরি করে যা সম্পূর্ণ বাস্তব বলে মনে হয়। সম্ভবত, আমাদের পুরো বিশ্বজগতটি এমন একটি হলোগ্রাম যা বাস্তবের এমন গভীর স্তর থেকে প্রজেক্ট করা হয়েছে, যেটা স্থান কালের বাহিরে অবস্থিত। ডেভিড বোহম এবং কার্ল প্রব্রামকে এমন ধারনা সত্য কিনা প্রশ্ন করা হলে তাদের থেকে এই প্রশ্নের উত্তরে "হ্যাঁ"সূচক জবাব আসে। কার্ল প্রিব্রাম ট্রেডিশনাল নিউরোফিজিওলজির ধারণায় হতাশ হয়ে পরে হলোগ্রামের ধারণায় এসেছিলেন, কারন ট্রেডিশনাল পদ্ধতি মস্তিষ্কের কর্মপ্রণালীর ব্যাখ্যায় প্রচুর কনফ্লিক্ট বিদ্যমান এবং এর অনেক রহস্যের ব্যাখ্যা করতে পারেনা।
উভয় বিজ্ঞানীর মতে, হলোগ্রাফিক মহাবিশ্বের তত্ত্বটি সহজেই চিন্তা-চেতনার দ্বারা বস্তুকে সরানো অর্থাৎ টেলিকেনেসিস, টেলিপ্যাথি, ভবিষ্যদ্বাণী, অন্ধ লোকদের "দেখার" ক্ষমতা এবং অন্যান্য অলৌকিক ঘটনার  রহস্যগুলির অনেকগুলোর ব্যাখ্যা করে। বিগত দশকে, অনেক বিজ্ঞানী এই ক্ষেত্রে গবেষণা করেছিলেন এবং আরও প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন যে হলোগ্রাফিক তত্ত্বটি সঠিক। 1982 সালে, পদার্থবিদ এ্যালাইন এসপেক্ট নিউরোফিজিওলজি ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন, যা স্মৃতি এবং উপলব্ধির হলোগ্রাফিক প্রকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।বোহম দৃঢ় বিশ্বাস করতেন যে যদিও মহাবিশ্বকে বাহ্যিকভাবে সলিড বস্তুগত মনে হয়, অথচ এটি প্রকৃতপক্ষে একটি হলোগ্রাম। তিনি এই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সের "প্রতিটি অংশে সম্পূর্ণ" ধারণাতে বিশ্বাসী ছিলেন এর মানে, বাহ্যিক জগতের প্রতিটি অংশে পুরো মহাবিশ্বের গঠন উপাদান ও তথ্য রয়েছে। বোহম বলেন,"হলোগ্রাম ব্যাখ্যা করে কিভাবে পুরো হলোগ্রাফিক দৃশ্যের তথ্য কিভাবে  সিনেমার প্রতিটা অংশে এনফোল্ড করা থাকে।" বোহম ও প্রিব্রাম মিলে হলোনমিক ব্রেইন থিওরি তৈরি করেন যাতে ব্যাখ্যা করা হয় যে আমাদের মস্তিষ্ক হলোগ্রাফিক পন্থায় কাজ করে এবং কোয়ান্টাম ইফেক্ট মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত সাধারন বিষয়।মাইকেল ট্যালবট তার বই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সে উল্লেখ করেন," প্রিব্রাম বুঝতে পেরেছিল যে যদি হলোগ্রাফিক মস্তিষ্কের মডেলটিকে তার যৌক্তিক সিদ্ধান্তে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে এটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। অব্জেক্টিভ রিয়ালিটি: কফি কাপ, পর্বত সুড়ঙ্গ, এলম গাছ এবং টেবিল ল্যাম্প প্রভৃতির জগত - হয়ত অস্তিত্বশীল নয়। অথবা কমপক্ষে আমরা যেরূপে এর অস্তিত্বে বিশ্বাস করি,এটা ওইরূপ নয়। তিনি কি আশ্চর্য হয়েছিলেন যে,এমনটা কি হতে পারে যে, রহস্যবাদীরা[অকাল্ট ফিলোসফার] বহু শতাব্দী ধরে যা বলে আসছিল তা সত্য, বাস্তবতা হচ্ছে মায়া, একটি ইল্যুশন এবং যার অস্তিত্ব ছিল সেটা সত্যিই তরঙ্গ রূপগুলোর একটি বিশাল, অনুরণনকারী সিম্ফনি, একটি "ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন" যা রূপান্তরিত হয়ে আমাদের ইন্দ্রিয়তে প্রবেশ করার পরেই আমরা এটিকে জগত বলে মনে করি?"

বোহম থিওসফিক্যাল সোসাইটি সহজ কথায় হিন্দুত্ববাদী তান্ত্রিক শাখা সংগঠনের গুরু যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এজন্য প্রিব্রামের অনুরূপ বৈদিক  মায়াবাদকে ধারন করে তাকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা স্বাভাবিক। বোহম বিশ্বাস করতেন সমস্ত সৃষ্টিজগতটিই একটি হলোগ্রাফিক প্রজেকশন অনুরূপ মায়া।তিনি ডিসিসির এক আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখানে বাস্তব জগত সম্পর্কে লিখেছেনঃ“আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব বাস্তবতা হলোগ্রাফিক চিত্রের মতো সত্যই একধরনের মায়া। এটি বাস্তব জগতের বিস্তৃত ও আরো প্রাথমিক স্তরে অন্তর্নিহিত অস্তিত্বের একটি গভীর ক্রমসংগঠন,  যা আমাদের বাহ্যিক জগতের সমস্ত বস্তু এবং উপস্থিতিকে একইভাবে জন্ম দেয়, যেভাবে একটি হলোগ্রাফিক ফিল্মের হলোগ্রামকে জন্ম দেয়। যদি বিশ্বের সলিড আকৃতিগত বস্তুজগত একটি গৌণ বাস্তবতা হয়, এবং 'বাহিরে সেখানে’র সব কিছু ফ্রিকোয়েন্সিগুলোর একটি হলোগ্রাফিক ব্লার[Holographic blurr] হয় এবং মস্তিষ্কও যদি একটি হলোগ্রাম হয় এবং তা ফ্রিকোয়েন্সি প্রক্রিয়াকরণের অংশ নেয়, তবে অব্জেক্টিভ রিয়ালিটি কি হয়ে যায়? বেশ সহজভাবে বলতে গেলে এটির অস্তিত্ব বিলোপিত হয়ে যায়।যদিও আমরা ভেবে থাকি যে, আমরা দৈহিক আকৃতিগত সত্তা একটি দৈহিক আকৃতিগত জগতের মধ্য দিয়ে চলেছি, এটি মূলত একটি মায়া[ইল্যুশন]। আমরা আসলেই ক্যালিডোস্কোপিক ফ্রিকোয়েন্সির সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ভাসমান 'রিসিভার'[স্বরূপ]।"[৯]

১৭ জানুয়ারি ২০১২ সালে জার্মানির জিইও৬০০ গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ ডিটেক্টর এর বিজ্ঞানীগন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পেয়েছেন যে আমাদের এই ইউনিভার্স একটি হলোগ্রাফিক প্রজেকশন। জার্মান বিজ্ঞানীদের গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ শনাক্ত করার যন্ত্র গুলো অদ্ভুত শব্দ ধারন করছিল,সেখানকার বিজ্ঞানীরা এর কারন হিসেবে উপসংহারে আসেন যে এর কারন হতে পারে, মহাবিশ্ব একটি হলোগ্রাম। ইলিনয়ের বাটাভিয়ায় অবস্থিত ফার্মি পার্টিকেল ফিজিক্স ল্যাবের পদার্থবিজ্ঞানী Craig Hogan বলেন, জিইও৬০০ স্পেস টাইমের ফান্ডামেন্টাল লিমিটের শেষ পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছে। তিনি বলেন, "জিইও৬০০ যদি ওই ফলাফলে উপনীত হয় যেটার আশংকা আমি করি, তবে বলব যে আমরা একটা বৃহদাকার মহাজাগতিক হলোগ্রামে বাস করি। আমরা যে হলোগ্রামে বাস করি, এটা শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু এটা ব্ল্যাকহোলের ব্যপারে আমাদের প্রকৃতিগত বোধ, এবং দৃঢ় থিওরিটিক্যাল ফুটিং। এটা ওইসব থিওরিটিক্যাল ফিজিসিস্টদের জন্যও সহযোগীতাকারী তত্ত্ব যারা এই মহাবিশ্ব মৌলিক ভাবে কিভাবে কাজ করে, সেটা আবিষ্কারের জন্য অনবরত থিওরি গুলোর মধ্যে লড়াইরত আছে।"

Hebrew University of Jerusalem এর ফিজিক্স প্রফেসর Dr. Jacob D. bekenstein বলেন
,"হলোগ্রাফিক থিওরি নামের আশ্চর্যজনক থিওরিটি বলে যে ইউনিভার্সটি হলোগ্রামের ন্যায়....প্রচন্ড চাপে থাকা ভর-ব্ল্যাকহোলের ফিজিক্স একটা হিন্টস হিসেবে আমাদের বলে যে এই থিওরি সত্য হতে পারে।"
-Scientific American [august 2003]


একইভাবে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ ব্রেইন গ্রীন ২০১১ সালে ডিস্কোভারি চ্যানেলের নোভা ডকুমেন্টারির পর্ব The Fabric of Cosmos : what is space এ  বলেন, "আমাকে কি খুব বাস্তব বলে মনে হচ্ছে, তাই না? কিন্তু বর্তমানে অনেক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে আমি আপনি এবং এমনকি স্পেস আসলে একধরনের হলোগ্রাম। আমরা যা-ই দেখি, যাই ত্রিমাত্রিক জগতে অনুভব করি, তা সম্ভবত দূরবর্তী দ্বিমাত্রিক সার্ফেস থেকে উদ্ভূত ত্রিমাত্রিক প্রজেকশনের ইনফরমেশন।"[১২] স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ফিজিসিস্ট লিওনার্দ সাস্কিন্ড অন্য সকলের ন্যায় হলোগ্রাফিক মায়াতত্ত্বে বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন,"আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতটি কি হলোগ্রামের ন্যায় মায়া[ইল্যুশন]?সম্ভবত, আমি মনে করি ত্রিমাত্রিক এ জগত একধরনের মায়া।এবং বাস্তবজগতের সর্বশেষ রূপ হচ্ছে মহাবিশ্বের দ্বিমাত্রিক সার্ফেস।" University of Southampton এর থিওরিটিক্যাল পদার্থবিদদের একটি দল বিশ্বাস করে যে, বিগব্যাং এর পর অবশিষ্ট রেডিয়েশন তথা মহাবিশ্বের কস্মিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি) নিয়ে গবেষণা করে যে তথ্যপ্রমাণ হাতে আসে, তা আমাদের ইউনিভার্সকে মায়া বলে সাব্যস্ত করে।  Professor Kostas Skenderis বলেন,  
"কল্পনা করুন যে আপনি যা দেখেন, অনুভব করেন এবং তিন মাত্রায় যা শুনে থাকেন এবং আপনার সময় সম্পর্কে উপলব্ধি প্রকৃতপক্ষে একটি সমতল দ্বি-মাত্রিক ক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত হয়।" University of Waterloo,  Perimeter Institute এর Niayesh Afshordi বলেন, "আমরা এই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স মডেল ব্যবহার করার প্রস্তাব দেই, যা মহাকর্ষ এবং ইনফ্ল্যাশনের উপর নির্ভর করে চলা জনপ্রিয়  বিগব্যাং মডেলের চেয়ে আলাদা।" আফশোরদী আরো বলেন, "এই মডেলগুলির প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র প্রেডিকশন দ্বার করায় যা আমরা আমাদের ডেটা পরিমার্জন করার সাথে সাথে আমাদের তাত্ত্বিক বোধগম্যতার উন্নয়ন করতে পারি, পরের পাঁচ বছরের মধ্যে।" Skenderis বলেন, "আমরা যেভাবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাঠামো নিয়ে চিন্তা করি, তাতে হলোগ্রাফিক তত্ত্বটি অনেক লম্বা দূরবর্তী[উন্নততর] চিন্তার বিষয়।"[১১]

সুতরাং দেখতে পারছেন যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়; সর্বত্রই এখন বৈদিক মায়াবাদের জাল বোনা হয়েছে। এই হলোগ্রাফিক জগতের হলোগ্রাম তৈরি হয় ডিজিটাল বিটস, ইনফরমেশনের সমন্বয়ে। স্টুয়ার্ট হ্যামারফ বলেন, "আমাদেরকে স্কুলে শেখানো হয়েছে এই মহাবিশ্ব এ্যটমসহ বিচিত্র জিনিস দ্বারা তৈরি। এটম দিয়ে মলিকিউল তৈরি, মলিকিউল দিয়ে পদার্থ তৈরি, এবং সবকিছুই এর দ্বারা তৈরি। কিন্তু এটম প্রায় পুরোপুরি শূন্য। যেমন ধরুন এই হাতের বলটি এটমের নিউক্লিয়াস। হাইড্রোজেন এটমের প্রোটন উদাহরণস্বরূপ। এর ইলেক্ট্রন যা একে বাহির থেকে প্রদক্ষিণ করে যা ধরুন ওই পাহাড় সারির দূরত্ব থেকে, এর ভেতরকার সবকিছুই ফাঁকা। আসলে এই মহাবিশ্বই প্রকৃতপক্ষে শূন্য। যদি আমরা এই শূন্যতার আরো ভেতরের দিকে যাই, আমরা এক মৌলিক স্তরে এসে উপনীত হই যেটা ফান্ডামেন্টাল স্পেস টাইম জিওমেট্রি যেখানে শুধুই তথ্য বা ইনফরমেশন আছে বিশেষ প্যাটার্নে। একে প্লাঙ্ক স্কেল বলা হয়। এটাই মহাবিশ্বের ফ্যাব্রিক। এখানে বিগব্যাং এর সময় থেকে তথ্য মওজুদ আছে।"
পদার্থবিজ্ঞানীরা মায়াবাদের গ্রহণযোগ্যতা বর্ধনে সেটাকে আরো যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিককরনে ডিজিটাল ফিজিক্স তথা ইনফরমেশন থিওরির প্রস্তাব করেন।ইনফরমেশন থিওরি অনুযায়ী বোঝানো হয় যে, সকল বার্তাকে বাইনারি ইউনিট অথবা বিটে রূপান্তরযোগ্য।যা হ্যা বা না প্রশ্নের উত্তর দেয় শুধু।জন হুইলার প্রস্তাব করেছিলেন যে পদার্থবিদ্যাকে ইনফরমেশন থিওরিতে পুনর্গঠন করা উচিত,ইনফরমেশন থিওরির ধারণাকে  তিনি এই বাক্যটিতে আবদ্ধ করেছেন "it from bit"। এর দ্বারা বোঝায় যে বাস্তব হলোগ্রাফিক জগতের সকল বস্তুর নিচে ক্ষুদ্রতম স্তরে গেলে শূন্য ও একের বাইনারি বিট পাওয়া যাবে। মহাচৈতন্যের থেকেই এই বিট উৎসারিত হয় বা ইনফরমেশন উদ্ভূত হয়[১০]। ১৯৯০ সালে হুইলার বলেছিলেন যে, মহাবিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ইনফরমেশন হলো মৌলিক। তার "এটা বিট থেকে" মতবাদ অনুসারে, বাহ্যিক জগতের সমস্ত কিছুই ইনফরমেশন থেকে উদ্ভূত। ১৯৮৯ সালে তিনি এটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন যে,"প্রতিটি it - প্রতিটি কণা, বলের প্রতিটি ক্ষেত্র এমনকি স্পেসটাইম কনটিনুয়াম - তার ক্রিয়াকলাপ, এর ব্যাখ্যা,এমনকি এর সমগ্র অস্তিত্ব - এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে -বাইনারি চয়েজ, বিটগুলো থেকে হ্যাঁ-বা-না প্রশ্ন থেকে উদ্ভূত হয়।এটা বিট থেকে ধারনাটি প্রতীকী হিসেবে বলে যে বাহ্যিক জগতের সমস্ত কিছুর তলানী বলে কিছু আছে-খুবই গভীর তলদেশ- অধিকাংশ ক্ষেত্রে - একটি অবস্তুগত উৎসের ব্যাখ্যা; আমাদের রিয়ালিটি হ্যা বা না প্রশ্নের থেকে উত্থিত হয়। সংক্ষেপে বলা যায় এই বাহ্যিক জগতের অরিজিন্স হলো তথ্যতাত্ত্বিক এবং এটা একটা অংশগ্রহণমূলক ইউনিভার্স।"

একই সময়ে তৈরি হয়ে যায় ম্যাট্রিক্স নামের জগদ্বিখ্যাত ফিল্ম যেখানে বুদ্ধধর্মের অবলম্বনে কোড বেজড রিয়ালিটিকে দেখানো হয়। ডিরেক্টর শামানিস্ট কন্যা লানা ওয়াচস্কি, মরফিয়াসের মুখে বলেন,"আপনি বাস্তবতাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করেন? আপনি যদি বাস্তবতাকে দেখা,শোনা, অনুভব, স্বাদকে বোঝান তাহলে বাস্তবতা বলতে শুধুই আপনার মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যাল সিগ্নালের ব্যাখ্যাকে বোঝাবে। এই [স্ক্রিনের ভিডিও] ছিল আপনার চেনা বাস্তবতা। এই হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর দুনিয়া। এটার অস্তিত্ব এখন নিউরো-ইন্টার‍্যাক্টিভ সিমুলেশনের অংশ যাকে আমরা ম্যাট্রিক্স বলি। নিও, আপনি এতদিন স্বপ্নময় জগতে বাস করতেন।"

এভাবেই পদার্থবিজ্ঞানে শক্তিশালী বৈদিক অকাল্ট প্যারাডাইম দাঁড়িয়ে যায়। একে একে সত্যায়ন ক্রিয়া চলতে থাকে সমস্ত প্রাচীন যাদুকরদের কুফরি আকিদা সমূহ, বাতেনি ফের্কার বিশ্বাস সমূহ, এবং গ্রীক দর্শন। বিগত দুই পর্বে পদার্থবিজ্ঞানীদের কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ধারার প্রবর্তক এবং আরো অনেক বিখ্যাত ফিজিসিস্টদের ব্রহ্মচৈতন্যবাদি বৈদিক বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানকে বেদান্তবাদের আদি মোড়কে ফেরানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। মূলত,প্রত্যেক বেদান্তবাদী অপবিজ্ঞানী হলোগ্রাফিক ডিজিটাল ফিজিক্সে বিশ্বাস করতেন। এমনকি যারা যারা সুস্পষ্টভাবে কিছু বলবার সুযোগ পায়নি তারাও, কেননা এটা আইডিয়ালিস্টিক ফিজিক্সেরই ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাটাস। এজন্য আবারো ঐসব পদার্থবিজ্ঞানীদের হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সের বিশ্বাসের বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন মনে করি।

বেদান্তশাস্ত্র ভিত্তিক কোয়ান্টাম মেকানিকস নির্ভর আইডিয়ালিস্টিক ডিজিটাল ফিজিক্স বা ইনফরমেশন থিওরির ডেভেলপমেন্ট এখানেই শেষ নয়। হলোগ্রাফিক বৈদিক মায়াবাদ আরো ভাল করে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে সিমুলেশন শব্দটি। বলা হচ্ছে যে আমাদের এই রিয়ালিটি বা বাস্তবতা হচ্ছে হলোগ্রাফিক সিমুলেশন।সহজে বোঝানোর জন্য আনা হয়েছে কম্পিউটার সিমুলেশনকে। বিজ্ঞানীরা বলতে শুরু করলো যে আমাদের এই বিশ্বজগত একটি দৈত্যাকার কম্পিউটারের প্রজেকশন। Konrad Zuse এর লিখিত Rechnender Raum (translated into English as Calculating Space) নামের বইয়ে সর্বপ্রথম মহাবিশ্বকে সুপারকম্পিউটার বলে উত্থাপন করা হয়। এছাড়াও মহাবিশ্বকে দৈত্যাকার কম্পিউটার বলেছেন Stephen Wolfram, Juergen Schmidhuber এবং নোবেলবিজয়ী Gerard't Hooft। তারা বলতেন কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রোব্যাবিলিস্টিক প্রকৃতির সাথে কম্পিউট্যাবিলিটি সাংঘর্ষিক নয়। তাদের এ চিন্তার কারন অনেকে কম্পিউটেশনকে ডিটারমিনিস্টিক মনে করেন।এতে সাধারন সেন্সে সবকিছুই বাঁধাধরা গননাযোগ্য এবং প্রেডিক্টেবল মনে হয়। এ সীমাবদ্ধতা থেকে বের করতে তারা প্রস্তাব করে ডিজিটাল ফিজিক্সের কোয়ান্টাম ভার্সন। সম্প্রতি Seth Lloyd, Paola Zizzi এবং Antonio Sciarretta প্রমুখ ডিজিটাল ফিজিক্সের কোয়ান্টাম ভার্সনের প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে আছে Carl Friedrich von Weizsäcker এর Ur-alternative বাইনারি থিওরি, pancomputationalism, computational universe theory। John Archibald Wheeler এর "It from bit", এবং Max Tegmark এর ultimate ensemble'ও এর অন্তর্গত।

Pancomputationalism বলতে মহাবিশ্বকে একটি গণনাকারী দৈত্যাকার কম্পিউটার অনুরূপ যন্ত্রকে বোঝায়, যেটা তার বর্তমান অবস্থার পরবর্তী ধাপকে গণনা করে।  Zuse এর 1967 সালের থিসিস পেপারের উপর ভিত্তি করে Jürgen Schmidhuber সর্বপ্রথম এই তত্ত্বকে উত্থাপন করেন। Pancomputationalists, Lloyd (2006) মহাবিশ্বকে একটি quantum computer এর সাথে তুলনা করেন। MIT এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রফেসর seth Lloyd বলেন, "এই মহাবিশ্ব মূলত একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আইন্সটাইনের চেয়ে নিজের ইন্টুইশনে কে বেশি আস্থা রাখে বলুন। যাইহোক,আইনস্টাইনের অবজেক্টিভ রিয়ালিটির(বস্তুজগতের বাস্তব স্বকীয় অস্তিত্বের) ধারনা পুরোপুরি ভুল।"

কোয়ান্টাম বিটকে যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যায়, আলো কোয়ান্টাইজড ফোটন, ইলেক্ট্রিসিটি হচ্ছে ইলেক্ট্রন, এটাও বাস্তব জগতের ভার্চুয়াল কন্সট্রাক্টের দাবির সপক্ষে যুক্তি দেয়। কারন ডিজিটাল প্রসেসে সকল ডেটার নূন্যতম কোয়ান্টিটি হিসেবে বিট বা পিক্সেল হিসেবে থাকবে। এবং আমাদের এই জগতেও একই উপাদান পাওয়া যায়। কোন কম্পিউটার ইমেজকে যদি কাছে থেকে পরীক্ষা করা হয় তবে তা সর্বশেষে পিক্সেলে বিভাজিত হবে, এটা আমাদের প্রকৃতিতেও বিদ্যমান। গত শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে পদার্থ আসলেই কোয়ান্টাইজড। এটা গঠিত এটোমের চেয়ে বিলিয়ন গুন ক্ষুদ্র অবিভাজ্য পার্টিকেল। এসব এভিডেন্স একত্রে বলে যে প্রকৃতি হচ্ছে কম্পিউটেবল বিট দ্বারা তৈরি ম্যাট্রিক্স। স্থান, কাল, এনার্জি সবকিছুই কোয়ান্টাইজড, সবই বিটের সমন্বয়ে তৈরি। এর মানে এই মহাবিশ্বের উপাদান এবং অবস্থা সংখ্যা নির্দিষ্ট। এর মানে এটা কম্পিউটেবল। যদি মহাবিশ্বের আসল প্রকৃতি ডিজিটাল হয় যার স্পেস টাইম কোয়ান্টাম বিটস দ্বারা তৈরি হয়,অর্থাৎ জন হুইলারের অবস্থান সঠিক।


বৈদিক মায়াবাদকে বিজ্ঞান বিতর্কের উর্ধ্বে নিতে এবার হলোগ্রাফিক তত্ত্বের পূর্ণতাদানে বলা শুরু করেছে এই মহাবিশ্ব হলো কম্পিউটার প্রজেকশন বা কম্পিউটার হলোগ্রাফিক সিমুলেশন অথবা কম্পিউটার গেইমের অনুরূপ সিমুলেটেড প্রোগ্রাম। তৈরি হয় সিমুলেশন হাইপোথিসিস। এটাই বৈদিক-বৈষ্ণবী মায়াবাদের সর্বাধুনিক সংস্করণ। এটা সেই প্লেটনিক আইডিয়ালিজমকে পরিপূর্ণতা দেয়। যেহেতু আমাদের বিশ্বজগত উচ্চমাত্রার জগতের হলোগ্রাফিক প্রজেকশন, এটাকে কোন আসল বস্তুর ছায়ার সাথে তুলনা করা যায়। অর্থাৎ আবারও ফিরে যেতে হবে প্লেটোর সেই "এ্যলিগোরি অব কেইভে"। যেখানে হাত পা বাধা কিছু লোক সারাজীবন গুহার আলো আধারের মধ্যে তাদের ছায়াকে দেখে এসেছে, এবং সেই ছায়াকেই তাদের অস্তিত্বের আসল রূপ বলে বিশ্বাস করেছে এরপর যখন ছাড়া পেল, তাদের কাছে ত্রিমাত্রিক জগত একদম দুর্বোধ্য মনে হলো। ত্রিমাত্রিক জগতের বাস্তবতাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। ফলে তারা পুনরায় গুহায় ফিরে আসে দ্বিমাত্রিক ছায়ার জগতে। হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স বা সিমুলেটেড রিয়ালিটি প্লেটোর আইডিয়ালিজমের কথা বলে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনেক আগে থেকেই আইডিয়ামিজম কে সত্যায়ন করেছে। কিন্তু হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স তত্ত্ব সম্পূর্ন প্লেটোনিক আইডিয়ালিজমে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে আধুনিক বিজ্ঞান কে, যেখানে বলা হচ্ছে আমরা উচ্চতর মাত্রাসমূহ থেকে আসা হলোগ্রাফিক প্রজেকশন বা উচ্চতর জগত সমূহের অন্তর্গত কম্পিউটার সিমুলেশন বা কাল্পনিক সুপার কম্পিউটারই হায়ার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটি। আমরা যে বস্তু জগতকে সত্য বলছি সেটা সত্য নয়। আমাদের দেখা চিরচেনা সত্য জগতটি উচ্চতর মাত্রা থেকে দেখতে ভিন্ন। ধরুন ৮ম বা ৯ম মাত্রায় অবস্থান করলে ৩য় মাত্রাকে অন্যরকম দেখাবে। অর্থাৎ আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতই আল্টিমেট রিয়ালিটি নয়।

সিমুলেশন আর্গুমেন্ট শুরু হয় মিস্টিক - দার্শনিকদের হাত ধরেই। দার্শনিক মানেই অকাল্ট ফিলসফির অনুসারী। হলোগ্রাফিক মায়াতত্ত্বকে একজন দার্শনিক শুধুমাত্র বৈদিক ট্রেডিশনেই সীমাবদ্ধ দেখেনা। Mexican toltec একই কথা বলে।একইভাবে ইহুদি কাব্বালিস্টিক যাদুশাস্ত্রে বিশ্বজগতকে বলা হয় Alma 'd shikra [world of illusion]। ১৯৭৪ সালে ফিলিপ কে ডিক মুখ অপারেশন এর পর বাসায় নার্সের যন্ত্রনাদায়ক মেডিকেশনের অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ করে দরজার কলিং বেল বাজলো। দরজা খুলেই তিনি মাছের প্রতিকৃতির নেকলেস পরিহিতা এক নারীকে আবিষ্কার করেন, একইসাথে তার মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতির জাগ্রত হয়। তার মনে হলো তার মধ্যে উচ্চতর জগতের মহাচৈতন্যের স্রোত বয়ে গেল। তিনি একে বলেন,'invasion of transcendent higher mind'! তিনি অনেকক্ষন চিন্তাভাবনার বাহিরে চলে গিয়েছিলেন। তার মনে হলো মহাজাগতিক তথ্য তাকে গ্রাস করেছে। তিনি সারা মহাবিশ্বকে দেখতে লাগলেন। তিনি বর্ননা করেন যে তিনি একইসাথে বর্তমান অসংখ্য মাত্রাসমূহ, অতীত বর্তমানের টাইমলাইন দেখেন, একই সাথে অতীতের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের মাঝেও নিজেকে আবিষ্কার করেন। মহাবিশ্বকে তিনি হলোগ্রাফিক ইল্যুশন হিসেবে প্রত্যক্ষ করেন।সাইকাডেলিক ড্রাগের প্রভাবে যা অনুভব করা যায় সবই প্রত্যক্ষ করেন । তার এই চৈতন্যের ধাক্কা অনেকদিন পর্যন্ত রয়ে যায়। তিনি কখনো ল্যাটিন ভাষায় কথা বলেন নি। কিন্তু হঠাৎ করে কথা বলতে শুরু করেন নির্ভুলভাবে।  তিনি দাবি করেন তার মধ্যে যিশু খ্রিষ্ট, টমাসের স্মৃতিও ছিল! ফিলিপ কে ডিক অনুভব করেন তার এই মহাজ্ঞান লিখে রাখা প্রয়োজন। এরপর লেখা শুরু করেন এবং প্রায় নয়শত পৃষ্ঠার একটি বই লেখেন, যার নাম দ্যা এক্সেজিস অব ফিলিপ কে ডিক। তিনি এতে উল্লেখ করেন, "আমরা একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামড রিয়ালিটিতে[বাস্তবতা] বাস করি। এর একটি মাত্র যে ক্লু'টি আমাদের কাছে আছে সেটা হলো যখন এই [সিমুলেটেড] রিয়ালিটির কোন একটা ভ্যারিয়েবল পরিবর্তন করা হয় বা কোন ধরনের পরিবর্তন ঘটানো হয়, আমরা তখন ডেজা'ভু[কোন একটা অচেনা জায়গাকে হঠাৎ চেনা মনে হওয়া, কোন ঘটনাকে হঠাৎ আগেও ঘটেছে মনে হওয়া] অনুভব করি। এই অনুভবগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যখনই কোন ভেরিয়েবলের পরিবর্তন ঘটা তখনই আরেকটি বিকল্প বাস্তবতার[অল্টারনেটিভ রিয়ালিটি] জন্ম হয়।"

ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ফিল্মে ডক্টর স্টিফেন স্ট্রেঞ্জ যখন সর্সারার সুপ্রিমের সাথে দেখা করেন, তখন ম্যাটেরিয়ালিস্ট স্ট্রেঞ্জ এই ডাইনীর যাদুবিদ্যাকে তাচ্ছিল্য করছিল অবিশ্বাসের সাথে, তখনই স্ট্রেঞ্জকে রিয়ালিটির আসল রূপ ও মেকানিক্স শেখাতে অল্টার্ড স্টেইট অব কনসাসনেস বা চেতনার ওপারে নিয়ে যান। এই ফিল্ম মূলত ম্যাটেরিয়ালিস্টিক বস্তুজগতের নিচের আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটির বিশ্বাসকে প্রোমোট করে তৈরি করা হয়, ম্যাটেরিয়ালিজমকে ভুল প্রমাণ করে আইডিয়ালিজমকে সত্যায়ন করা হয়। যাইহোক, এ ফিল্মের ডঃ স্ট্রেঞ্জের ন্যায় ফিলিপ কে ডিকেরও একইরকমের ট্রান্সেন্ডেন্টাল এক্সপেরিয়েন্স হয়েছিল। তবে ডিকের ব্যপারটা সামান্য ভিন্ন। দুয়ার খুলবার সাথে সাথে এমন মহাচৈতন্যের অনুভূতি উদয়ের রহস্যের সহজ ব্যাখ্যা হলো, তার মধ্যে বায়ো-প্লাজমিক হায়ার ডাইমেনশনাল সত্তার অনুপ্রবেশ ঘটে। সহজ ভাষায় বললে,শয়তান জ্বীনের অনুপ্রবেশ ঘটে।ডিক এ কথা নিজেই বলেন।তিনি বলেছেন ,"বায়োপ্লাজমিক অর্গনের মত কোন এনার্জি  প্রবেশ করে।উচ্চ শিখরে থাকা সচেতনতা আমাকে সারাবিশ্বকে দেখায়। আমি সর্বত্রবিরাজমান এক যৌক্তিক মন দ্বারা আমার মনে হামলা হওয়াকে অনুভব করি। হঠাৎ করেই দুর্বোধ্য গোটা জীবনকে সহজবোধ্য হয়ে ওঠে।"

অনেক সমালোচক মনে করেন এই রকম র‍্যাডিক্যাল চৈতন্যবোধের কারন সাইকাডেলিক ড্রাগ, যা তাকে চেতনার ওপারে নিয়ে যায়।এটা সত্য যে অনেকেই সাইকাডেলিক ড্রাগ সেবনে সিমুলেটেড রিয়ালিটির উপলব্ধি লাভ করে[২০]।বাইরন কেডি, একার্ড টোল, আনিতা মর্জানি সবাই এরকম ট্রান্সেন্ডেন্টাল অনুভূতি হয়েছিল। ডিকের সাইকাডেলিক মাদক সেবনের কথা যেহেতু পাওয়া যায় না, ডিকের নিজের কথার উপর ভিত্তি করে এটাই ধরা যায় যে তার মধ্যে শয়তানের অনুপ্রবেশ ঘটে। এই বায়োপ্লাজমিক সত্তা তথা শয়তানগুলোই রেনে ডেকার্টের "অশুভ শয়তান" তত্ত্বের আইরনিক সত্যায়ন করে। ডিক ডেকার্টের মায়াবাদের আধুনিক সংস্করণ তথা সিমুলেশন তত্ত্বের সত্যায়ন করেন, মহাবিশ্বকে কম্পিউটার সিমুলেশন হিসেবে দেখার দাবির দ্বারা। স্বাভাবিক ভাবেই শয়তান চাইবে যে, মানুষ যেন তাদের জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে ইলাহের আসনে বসাক। রেনে ডেকার্ট তার আকিদায় সেটা বসিয়েছিল। এবার ওই শয়তানেরই দেখানো এই মেটাফিজিক্যাল ব্যাখ্যার পথ ধরে আধুনিক বিজ্ঞান সমগ্র মানবজাতির আকিদায় শয়তান জ্বীন জাতিকে এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তার আসনে বসাতে যাচ্ছে!

সিমুলেশন তত্ত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন দার্শনিক নিক বোস্ট্রম। তিনি সিমুলেশন তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই সিমুলেশনের স্রষ্টার সিমুলেশন তৈরির একাধিক কারন দেখিয়েছেন। এর একটি এ্যান্সেস্টর সিমুলেশন। এর দ্বারা বোঝায়, কোন উচ্চমাত্রিক এলিয়েন সভ্যতা উন্নয়নের চরম শেখরে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নেয় যে আর কোন সচেতন প্রানীর সৃষ্টি হবেনা। তারা ওই অবস্থায় কম্পিউটার সিমুলেশন তৈরি করলো যাতে করে,তাদের জগতের একদম শুরুর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিগব্যাং থেকে শুরু করে বিবর্তনসহ সবকিছু এতে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবর্ধিত হওয়া দেখাবে। ওই সিমুলেশনের প্রানী জগত আত্মসচেতন এজন্য তারা তাদের বাস্তবতাকে সত্য বলে মনে করে। অনেক সিমুলেশন থিওরিস্ট সারা মহাবিশ্বের  প্রতিটি এটম/মলিকিউল সিমুলেট করবার মত কম্পিউটার সক্ষমতার কথা ভাবতে গিয়ে অসম্ভব মনে করেন, এর সমাধানে তারা কম্পিউটার সিমুলেশন বা আধুনিক গেইমস এর গ্রাফিক্সের ভিডিও রেন্ডারিং প্রসেসকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। আপনারা দেখবেন উন্নত গ্রাফিক্সের ভিডিও গেইমের জগতে যে দিকে অবজার্ভ করা হয় বা যেদিকে স্ক্রিন ঘোরানো হয় সেদিকই ঝাপসা থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। এখানে বিষয়টি কোয়ান্টাম তত্ত্বের অবজারভার ইফেক্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পর্যবেক্ষণ ছাড়া অন্য অঞ্চলগুলো ননলোকাল অবস্থায় থাকে। যাইহোক, সিমুলেশন থিওরিস্টরা বলেন যে, আমাদের গোটা পৃথিবীটি গেইমের স্ক্রিনের এলাকার মত সবসময় পর্যবেক্ষণের অধীনে থাকে, মহাবিশ্বের বাকি অংশগুলো এর বাইরে থাকে, এজন্য গোটা মহাবিশ্বকে এ্যাটম বাই এ্যাটম সিমুলেট করার জন্য অসম্ভব ক্ষমতার কম্পিউটার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ এটা সিমুলেশন হাইপোথিসিসকে অসম্ভাব্যতা থেকে বাচায়। নিক বোস্ট্রম বলেনঃ" সায়েন্স ফিকশনের অনেক কর্ম, পাশাপাশি অনেক প্রযুক্তিবিদ এবং ভবিষ্যতত্ত্ববিদদের কিছু পূর্বাভাসস্বরূপ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, আগামী নিকট ভবিষ্যতে প্রচুর পরিমাণে কম্পিউটিং শক্তি পাওয়া যাবে। আসুন আমরা এক মুহুর্তের জন্য অনুমান করি যে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সঠিক। একটি জিনিস যা পরবর্তী প্রজন্মগুলো তাদের সুপার-পাওয়ারফুল কম্পিউটারগুলোর সাথে করতে পারে তা হলো, তাদের পূর্ববর্তী বা তাদের পূর্ববর্তী লোকদের বিস্তারিত সিমুলেশন চালু করা, কারণ তাদের কম্পিউটারগুলো এত শক্তিশালী হবে, তারা এ জাতীয় অনেকগুলি সিমুলেশন চালাতে পারে। মনে করুন যে, এই সিমুলেটেড রিয়ালিটির লোকেরা সচেতন (যদি সিমুলেশনগুলি যথেষ্ট পরিমাণে সূক্ষ্ম হয় এবং যদি ফিলসফি অব মাইন্ডের কোন বিস্তৃতভাবে স্বীকৃত অবস্থান সঠিক হয়)। তারপরে এটি ঘটতে পারে যে আমাদের মতো বিশাল সংখ্যক মন মূল জাতির অন্তর্গত নয়, বরং একটি মূল জাতির উন্নত বংশধরদের সিমুলেশনের লোকদেরই। তারপরে এটির পক্ষে যুক্তি দেয়া সম্ভব যে, এটি যদি হয়, তবে আমরা ভাবা যুক্তিযুক্ত যে আমরা সম্ভবত মূল বায়োলজিক্যাল অস্তিত্বের পরিবর্তে সিমুলেটেড মনের মধ্যে রয়েছি। অতএব, আমরা যদি মনে করি যে আমরা বর্তমানে কম্পিউটার সিমুলেশনে বাস করছি না, তবে আমরা বিশ্বাস করতে পারি না যে আমাদের পরবর্তী বংশধররা যারা থাকবে তারা তাদের পূর্বসূরীদের সিমুলেশন চালাবে।[১৩]

— Nick Bostrom, 
Are you living in a computer simulation?, 2003



নিক বোস্ট্রমের পর থেকে একে একে পদার্থবিজ্ঞানীরা একে একে বৈদিক মায়াবাদের সর্বাধুনিক সংস্করণ সিমুলেশন তত্ত্বের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। পদার্থবিজ্ঞানী ব্রায়ান উইটওর্থ[MIT] ম্যাটেরিয়ালিস্টিক এবং আইডিয়ালিস্টিক ফিজিক্স এর যাবতীয় ডেটা পাশাপাশি রেখে গবেষণা করেন, এতে তিনি বস্তুবাদী বিজ্ঞান অপেক্ষা আইডিয়ালিস্টিক সিমুলেশন হাইপোথিসিসের সর্বাধিক বিশুদ্ধতা ও কন্সিস্টেন্সি পান।
সিমুলেশন হাইপোথিসিসের প্রস্তাবটি সর্বপ্রথম দেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালে বন বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, সিয়াটেল) থেকে পদার্থবিজ্ঞানী Silas R. Beane এবং সিয়াটেলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Zohreh Davoudi এবং Martin J. Savage এর একটি যৌথ গবেষণাপত্রে। বিগব্যাং মডেলের শূন্য থেকে সব সৃষ্টির তত্ত্বটিও সিমুলেশনের সাথে অনেক যৌক্তিকভাবে সংগতিপূর্ণ। আমরা জানি শূন্য থেকে বিগব্যাং এর দ্বারা সব কিছু অস্তিত্বে আসে। একইভাবে একটি কম্পিউটার সিমুলেশনও চালু করার সময় একদম শূন্য থেকে শুরু হয়। ধরুন প্রতিবার একটি গেইম চালুর সময় বিগব্যাং সংঘটিত হয়। সিমুলেশন মডেলের অনুসারীরা এমনটাই দাবি করেন।সুতরাং, বোস্ট্রোম এবং ডেভিড চামার্সের মতো একমত হয়ে অন্যান্য লেখকরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে "সিমুলেশন হাইপোথিসিস" এর গবেষণামূলক যুক্তি থাকতে পারে এবং তাই সিমুলেশন হাইপোথিসিস একটি সংশয়মূলক অনুমান নয় বরং একটি "মেটাফিজিক্যাল হাইপোথিসিস"। প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান সভ্যতার যাদুকরদের আকিদা ছিল বাস্তবতা নিজেই একটি গাণিতিক কাঠামো।সেই থেকে এটা পিথাগোরাসের আকিদা[বিশ্বাস] এবং একইভাবে তার প্রাচীন ও বর্তমান অনুসারীদেরও। 2017 সালে 17 তম বার্ষিক আইজ্যাক অসিমভ বিতর্ক চলাকালীন মহাবিশ্ব সিমুলেটেড কিনা সে আলোচনায় ফিজিসিস্ট টেগমার্ক বলেছেন: "পরে একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসাবে [বাস্তবতা] সম্পর্কে আমি যত বেশি জানতে পেরেছিলাম, ততই আমি আরও আঘাত পেয়েছিলাম যে, আপনি যখন প্রকৃতি কীভাবে কাজ করে তার গভীরতায় নামবেন, আপনারা সবাইকে একগুচ্ছ কোয়ার্ক এবং ইলেক্ট্রন হিসেবে দেখবেন […] যদি আপনি দেখেন এই যে কোয়ার্কগুলি কীভাবে চলাফেরা করে, তাহলে দেখবেন নিয়মগুলি সম্পূর্ণ গাণিতিক, যতদূর আমরা বলতে পারি।" তিনি আরো বলেনঃ "যদি আমি একটি কম্পিউটার গেমের একটি চরিত্র হয়ে থাকি, তবে আমি শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারব যে,এর নিয়মগুলি সম্পূর্ণ কঠোর গাণিতিক। এটা হুবহু যে কম্পিউটার কোডে লেখা হয়েছিল তাতে প্রতিফলিত করে।"

টেগমার্ক এক ডকুমেন্টারিতে বলেন,কম্পিউটার গেইমের পুরা জগতটি তৈরির পেছনে থাকে ম্যাথম্যাটিকাল ইক্যুয়েশন। তিনি আমাদের জগতটিকেও কম্পিউটার সিমুলেটেড প্রোগ্রামের অনুরূপ বলেন। এজন্যই আমাদের জগতের সকল সৃষ্টির মাঝে ফিবোনাক্কি সিকোয়েন্স মেইন্টেইন করতে দেখা যায়। তিনি বলেন,"ধরুন আমাকে একটি গেইমের ক্যারেক্টারে রূপান্তর করা হলো এবং আমার সেখানে আত্ম সচেতনতাও থাকলো যার ফলে আমি সে জগতের সবকিছু সত্য ভাবতে শুরু করলাম, এবং একপর্যায়ে আবিষ্কার করলাম যেকোন বস্তুর উত্থান পতন থেকে শুরু করে সমস্তকিছুর পিছনে আছে একজন প্রোগ্রামারের ম্যাথম্যাটিকাল ইক্যুয়েশন। একইভাবে এই জগতকেও ধরুন,এই মহাবিশ্বও গেইমের অনুরূপ কম্পিউটার প্রোগ্রামের ন্যায়। এই যে আমার হাত, এখানে কোন গনিত খুজে পাচ্ছিনা কিন্তু আপনি যতই গভীরে যাবেন শুধু গাণিতিক হিসাব পাবেন। আমার কিছু কলিগরা বলেন যে এই মহাবিশ্বে কিছু ম্যাথম্যাটিকাল প্রপার্টি আছে, কিন্তু আমি বলি এটি পুরোটাই গণিত। শুধুমাত্র কিছু জিনিসে গাণিতিক হিসাব নেই বরং এই মহাবিশ্বের এ্যাসেন্সই হচ্ছে গণিত।"



১৯৭৫ সালে ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকস আবিষ্কারের দ্বারা গণিতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন বেনওয়া ম্যান্ডেলব্রট[Benoit Mandlebrot]। এই গণিত দ্বারা অনন্ত সেল্ফ সিমিলার প্যাটার্ন তৈরি করা যায়। এই গণিতের উপর নির্মিত কম্পিউটার সিমুলেটেড প্যাটার্ন আপনি অগণিত বার জুম করতে পারেন। ডানে দেখানো চিত্রের একদম ক্ষুদ্রতম অংশকে যদি জুম করেন, দেখবেন একইরকমের আরেকটি জগত এর নিচে লুকিয়ে আছে। এরকম প্যাটার্ন[নিচের ছবিতে] আমাদের বাস্তব জগতের গাছের পাতা, ফার্ণ উদ্ভিদের ডগাসহ অনেক কিছুতে বিদ্যমান। এটা দার্শনিক ও হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সে বিশ্বাসীদের ভাবায় আমাদের এই ইউনিভার্সটিও এরকম সেল্ফ সিমিলার ইনফিনিট প্যাটার্নের উপর তৈরি। এর দ্বারা যাদুকরদের মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সীমাহীনতাকে আরোপ করে। হলোগ্রাফিক মডেল ও ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসের সমন্বয়ে তৈরি হয় হলোফ্র‍্যাক্টাল থিওরি। ম্যান্ডেলব্রটের বিস্ময়কর এই গাণিতিক ধারার উপর বর্তমানে কম্পিউটার সিমুলেশনে, এ্যানিমেশন/গেইমে সফলভাবে ব্যবহার করা হয় গেইমের প্রাকৃতিক জগতটিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য। ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকস প্রাচীন সেক্রিড জিওমেট্রি,পাই রেশিওর সাথে সংগতিপূর্ণ। PBS/NOVA 'র ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসের উপর “Fractals – Hunting the Hidden Dimension” নামে একটি ডকুমেন্টারি নির্মান করেছিল। তাছাড়া এ বিষয় বুঝতে Arthur Clarke এর “Fractals – The Colors of Infinity” ডকুমেন্টারিটাও দেখা যেতে পারে। এবার বাস্তব জগতে কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যবহৃত গণিত আবিষ্কারের পালা, যেটা চূড়ান্তভাবে সত্যায়ন করবে যে আমাদের বস্তুজগত মূলত কম্পিউটার সিমুলেশন, ম্যাট্রিক্স ফিল্মের ন্যায় আমরা কোড হলোগ্রাফিক ম্যাট্রিক্সে বসবাস করি।

মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ জেমস গেটস, যিনি আইজ্যাক অসিমভ বিতর্কে উপস্থিত ছিলেন, তিনি এমন এক বিষয় আবিষ্কার করেছেন, যা সিমুলেশন হাইপোথিসিসকে সমর্থন করে। সুপারস্ট্রিং থিওরিতে কাজ করার সময়, তিনি কিছু তাত্ত্বিক সমীকরণের আবিষ্কার করেন। গেটস বলেছেন যে সমীকরণগুলি ত্রুটি-সংশোধনকারী কোডগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণের সাথে জড়িত ত্রুটিগুলি যাচাই করার জন্য এবং সমাধান করতে ব্যবহৃত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে, অ-সিমুলেটেড মহাবিশ্বে এই জাতীয় কোডগুলি আবিষ্কার করা "অত্যন্ত অসম্ভব"।  বক্তৃতাকালে তিনি আরো বলেছিলেন: “ত্রুটি-সংশোধন করার কোডগুলি[Error-correcting codes] ব্রাউজারগুলোকে কার্যক্ষম করে, তাহলে আমি কোয়ার্ক, এবং লেপটন এবং সুপারসেমেট্রি সম্পর্কে যে সমীকরণগুলি নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম সেগুলোতে কেন এগুলোর উপস্থিতি ছিল? এটাই আমাকে এই অত্যন্ত বাস্তব উপলব্ধিতে নিয়ে এসেছিল যে আমি আর বলতে পারি না যে ম্যাক্স [টেগমার্ক] এর মতো লোকেরা পাগল[কারন তারা মহাবিশ্ব কে কম্পিউটার সিমুলেশন বলে] [১৪]। "

তিনি আরো বলেন,"আমি গত পাচ ছয় বছর ধরে আমি যে ইকুয়েশন নিয়ে কাজ করছি, তাতে আমি ঐ অভিন্ন কম্পিউটার কোড পেয়েছি যা ইন্টারনেট ব্রাউজারকে সচল করে। যদি এই ইক্যুয়েশন গুলো বলে যে রিয়ালিটি বা বাস্তব জগতে কম্পিউটার কোড লুকিয়ে আছে, তবে তা সত্যিই অদ্ভুত ব্যপার। এটা এতটা অদ্ভুত যে আমি বলতে পছন্দ করব যে, চলো ম্যাট্রিক্স মুভির কাছে ফিরে যাই, ওখানে  কোন পদার্থবিদ কাজ করেছে কিনা দেখি। তারা হয়ত রিয়ালিটির ব্যপারে জানতে চাইতো যে আমরা ম্যাট্রিক্সের মাঝে আছি কিনা। আর তারা যেকোনভাবে কম্পিউটার কোড ব্যবহার করেছে। এবং এই  ইক্যুয়েশন গুলো আমাদের জগতকে বর্ননা করে, এটাই আমি বলি।"

অর্থাৎ ফিজিসিস্টরা শতবছর আগের ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স মেকানিক্সের পরিপূর্নতা দান করেছেন। হলিউডের বৈদিক ও বৌদ্ধ অকাল্ট দর্শনের উপর নির্মিত ম্যাট্রিক্স ফিল্মে দেখানো রিয়ালিটির বর্ননাটিই শুদ্ধ। এখানে স্বয়ং পদার্থবিজ্ঞানীই সাজেস্ট করছেন ম্যাট্রিক্স ফিল্ম দেখবার জন্য, তিনি স্বীকৃতি দিচ্ছেন এটাই রিয়ালিটির আসলরূপের বিশুদ্ধ উপস্থাপন। জেমস গেট নেইল ডি'গ্রাস টাইসনসহ একাধিক পদার্থবিজ্ঞানীদের উপস্থিতিতে করা সাক্ষাতকারে তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা বলেন। তিনি বলেন,"এগুলো হচ্ছে সেসব ইক্যুয়েশন যার উপর আমি গত ১৫ বছর কাজ করেছি, এসবের বিষয়েই আমার কলীগরা আমাকে প্রশ্ন করত। এই ছবিগুলোতে সেসব তথ্য গুলো আছে যা আমরা স্ট্রিং থিওরিতে পেয়ে থাকি, এবং সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো আপনি এর মধ্যে কম্পিউটার কোড খুজে পাবেন,ওইরকম কোড যা আপনি ইন্টারনেটে ব্রাউজারে পেয়ে থাকেন। আমি এখন এই পাজলের মধ্যে পড়ে গিয়েছি যে আমিই ম্যাট্রিক্সের মধ্যে বাস করছি কিনা।" নেইল ডিগ্র‍্যাস টাইসন তাকে থামিয়ে বলেন,"আপনি আমার মন জুড়িয়ে দিয়েছেন, আপনি বললেন যে, এই জগতের মৌলিক নীতি খুজতে গিয়ে এমন কিছু ইক্যুয়েশনের কাছে গিয়েছেন যেটা সার্চ ইঞ্জিন ও ব্রাউজার পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত ইক্যুয়েশনগুলোর সাথে মিলিয়ে দিয়েছে। 
তার মানে আপনি বলছেন, আপনি যত গভীরে যাচ্ছেন, আপনি এই কস্মোর ফ্যাব্রিকের উপর কম্পিউটার কোড আবিষ্কার করছেন। তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন যে, আমাদের মহাবিশ্ব কিছু [এলিয়েন] এন্টিটির প্রোগ্রাম আর আমরা শুধুই তাদের কোডগুলোর বহিঃপ্রকাশ? অনেকটা ম্যাট্রিক্স এর মত?" উত্তরে জেমস গেইট বলেন,"[জ্বি] যেসব ইক্যুয়েশনে আমরা কস্মোর বর্ননায় ব্যবহার করে থাকি। কম্পিউটার কোড[পাওয়া যাচ্ছে], ওয়ান ও জিরো বিট। এটা সাধারণ কোন কম্পিউটার কোড নয় বরং বিশেষ ধরনের কম্পিউটার কোড যা কল্ট শ্যানন ১৯৪০ সালে আবিষ্কার করেছিলেন।এটাই এখন আমরা স্ট্রিং থিওরির মধ্যে দেখছি যেটাকে আমরা আজ সুপারসেমেট্রিক বলি। আপনি [প্রজেক্টরে] দেখানো চিত্রগুলো[ডানে] যা দেখছেন তা কোডের মত দেখতে নয় বরং এগুলো হলো এমন সব ইক্যুয়েশনের গ্রাফিক্যাল রিপ্রেজেন্টেশন যা ওইসব কোডের সমন্বয়ে তৈরি। আরো স্পষ্ট করে বললে বলবো,আমি এখন খুবই অদ্ভুত পর্যায়ে এসে পৌছেছি। আমি কখনোই আশা করিনি যে, ম্যাট্রিক্স ফিল্মটি আমি যেখানে আছি সেটার যথাযথ নির্ভুল প্রতিচ্ছবি।"

নেইল ডি'গ্র‍্যাস টাইসন নিজেও সিমুলেশনতত্ত্বে বিশ্বাস করেন। জেমস গেইটের স্বীকৃতি তার এই অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে আরো পোক্ত করেছে। তিনি ল্যারি কিং এর সাথে দেয়া সাক্ষাতকারেও সিমুলেশন হাইপোথেসিসে বিশ্বাসের কথা বলেন[২২]। তিনি অন্যত্র বলেন," আমি এটা[সিমুলেশন থিওরি] [ভাবতে] ভালবাসি। হয়ত কোন এলিয়েন সিভিলাইজেশ্যনের বোচা নাকওয়ালা শিশুরা তাদের বাড়ির বেজমেন্টে বসে আমাদেরকে সিমুলেট করছে। তাদের কম্পিউটিং ক্ষমতা ও প্রযুক্তি আমাদের থেকে উন্নত এবং তারা এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছে যে তারা আমাদের মহাবিশ্বের প্রতিটি মলিকিউল পর্যন্ত প্রোগ্রামের আওতায় এনেছে। আমরা এখানে তাদের বিনোদনের বস্তু হিসেবে আছি।"


বিলিয়নিয়ার টেক জায়ান্ট ইলন মাস্কও সিমুলেশন হাইপোথেসিসে বিশ্বাস করেন। তার বিশ্বাসের স্বীকৃতি সিমুলেশন তত্ত্বকে গ্রহণযোগ্যতার উচ্চ আসনে নিয়ে যায়। ইলন মাস্ক বর্তমান যুগের থ্রিডি ফটোরিয়ালিস্টিক গেইমগুলোর কথা বলেন যা বাস্তবজগত থেকে প্রায় পার্থক্যহীন। ইলন মাস্ক বলেন,"আমরা প্রতিবছরই ভার্চুয়াল গেইম গুলোয় উন্নতি সাধন করছি। এখন আমাদের ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, অগমেন্টেড রিয়ালিটি উভয়ই রয়েছে। যদি আপনি উন্নতির অবস্থাটাকে পর্যালোচনা করেন, গেইমগুলোকে দেখবেন সেগুলো এখন অনেকটাই বাস্তবজগতের সাথে প্রায় পার্থক্যহীন হয়ে গেছে। হ্যা আমরা খুব সম্ভবত সিমুলেশনের মধ্যে আছি। বাস্তব জগতে আমাদের বসবাসের সম্ভাবনা বিলিয়নের মধ্যে এক।"[১৫]

পদার্থবিজ্ঞানী টমাস ক্যাম্পবেল ইউএস মিসাইল ডিফেন্স, আর্মি ও নাসায় কাজ করেন। তার মাই বিগ টো[থিওরি অব এভ্রিথিং] বইতে সিমুলেশন হাইপোথিসিস কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন এই ত্রিমাত্রিক জগত হায়ার রিয়ালিটির আইডিয়ালিস্টিক শ্যাডো, এটা হলোগ্রাম। অনেকে হয়ত হলোগ্রামটি  ইনফরমেশন নাকি চৈতন্যের তৈরি, নাকি বাইনারি ডেটার সমন্বয়ে সৃষ্ট,সেটা বুঝতে পারছেন না। টম ক্যাম্পবেল এর সহজ সমাধানে বলেন,"চেতনা হলো ইনফরমেশন। এটা হচ্ছে ডেটা।" টমাস ক্যাম্পবেলের ন্যায় পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ গ্রীন ব্রেইনও সিমুলেশন তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি এক প্রশ্নোত্তরে আমাদের জগত যে উচ্চতর মাত্রার কিছু কিশোরের কম্পিউটার গেইমের সিমুলেশন সে সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেন। রন গ্যারেট গুগল, জেপিএল সহ অনেক জায়গায় কাজ করেছেন। তিনি গুগল টেড টকে একটা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে করা প্রেজেন্টেশনে বলেন, "আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জিরো ইউনিভার্স ইন্টারপ্রিটেশানের দার্শনিক তাৎপর্য নিয়ে বলব। আপনি যদি মনে করেন ফিজিক্স মহাবিশ্বকে যেরূপ বর্ননা করে সেরূপই, তাহলে আমি আপনাকে স্পষ্ট ভাবে বলব যে এটাই আসলটা নয়, কারন এক ধরনের বিশেষ মেটাফিজিক্যাল বাস্তবতার জন্য মেজারমেন্ট স্থান-কালে কন্সিস্টেন্ট। এটা আমরা যা মনে করি তার ঠিক বিপরীত কিছু বলে, আমরা [ফান্ডামেন্ডালভাবে] এ্যাটম দ্বারা তৈরি নই বরং বিট দ্বারা তৈরি। আমরা হলাম আমাদের চিন্তা/চেতনা।আমরা হচ্ছি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সিমুলেশন। মহাবিশ্ব কেন অনুধাবনযোগ্য মনে হয়,অর্থাৎ ফিজিক্যাল থিওরির ব্যাখ্যা হলো, কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে একটি কম্প্রিয়েন্সেবল ইউনিভার্সের ধারনা দিতে চেষ্টা করে তবে এই মূল্যের বিনিময়ে যে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে বিশ্বাস করতেই হবে যে এই মহাবিশ্ব,যাকে আপনি বাস্তব বলে মনে করেন তা আসলে বাস্তব নয় বরং মায়া।"

2017 সালে, Campbell et al. তাদের গবেষণাপত্র "সিমুলেশন থিওরি অন টেস্টিং" এ সিমুলেশন[১৬] হাইপোথিসিস পরীক্ষা করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রস্তাব করেছিলেন। 2018 সালে তারা পরীক্ষাগুলির তহবিলের জন্য একটি কিকস্টার্টার ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল, যা ২৩৬,৫৯০ ডলারে পৌঁছেছিল, যেখানে মাত্র ১৫,০০০০ ডলার প্রয়োজন ছিল। জনমনে সিমুলেশন হাইপোথেসিসের বিষয়ে এত আগ্রহের একটি কারন হলো মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা। হলিউড ফিল্মগুলো অনেক বড় ভূমিকা পালন করে মানুষের ব্রেইনওয়াশিং এর জন্য। রাইনার ওয়ার্নার ফ্যাসবিন্ডার পরিচালিত ওয়ার্ল্ড অন এ ওয়্যার (1973), থার্টিন্থ ফ্লোর(1999), আমেরিকান লেখক ফিলিপ কে ডিকের "We Can Remember It for You Wholesale" একটি ছোট গল্প, এটি ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাসে ফ্যান্টাসি অ্যান্ড সায়েন্স ফিকশন - ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটি টোটাল রিকল (১৯৯০ চলচ্চিত্র) এবং টোটাল রিকল ২০১২ সালের ফিল্মের ভিত্তি ছিল।এ সমস্ত সায়েন্স ফিকশন লেখনী, ফিল্ম জনমনে বিস্তর প্রভাব ফেলে।
1983 সালে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র In Overdrawn at the Memory Bank -এ দেখায়, মূল চরিত্রটি তার মনকে একটি সিমুলেশনের সাথে যুক্ত করার জন্য অর্থ প্রদান করে।দ্য স্টার ট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন এর "শিপ ইন আ বোতল" পর্বে দেখায় লোকেরা নিজেদের অজ্ঞাতসারে সিমুলেশনে জীবনযাপন করছে, পিকার্ডের শেষে দেখানো ব্যাখ্যানুসারে শেষে বোঝানো হয় যে, সম্ভবত তারা কোনও টেবিলের বক্সের মধ্যে গেইম সিমুলেশনের মধ্যে আছে। এটি নাটকীয় আইরনির সম্ভাব্য ব্যবহার, যেখানে অভিনেতা এবং দর্শকদের উভয়ই অবগত যে টেলিভিশন প্রোগ্রামটি সত্যই এক ধরণের সিমুলেশন। ১৯৯৯ সালের থার্টিন্থ ফ্লোর ফিল্মে দেখায় আমাদের বাস্তবতাটিও মূলত উচ্চতর মাত্রায় অবস্থিত সুপার কম্পিউটারের সিমুলেশন। সম্প্রতি, একই সিমুলেশন এর থিমটির পুনরাবৃত্তি হয়েছিল ১৯৯৯ সালে বৌদ্ধ দর্শনের উপর নির্মিত দ্য ম্যাট্রিক্স ছবিতে। জেমস গেইটের মুখেই তো শুনলেন, এটাই সাইন্স! ২০১০ সালের ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালিত ইন্সেপশন নামের আরেকটি ফিল্মে আমাদের বাস্তবজগতকে স্বপ্নময় সিমুলেশন বলে উপস্থাপন করা হয়। এ ফিল্মের কেন্দ্রীয় চরিত্ররা কৃত্রিম স্বপ্নের দ্বারা বিভিন্ন লোকের গোপন তথ্য চুরি করে। এতে স্বপ্নের মধ্যে আরো দুই তিন স্তরের স্বপ্নের জগতকে দেখায়। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর স্ত্রী ম্যারিয়ন কোটিলার্ড স্বপ্নের জগতটিকে বাস্তবের সাথে পার্থক্যহীন অনুভব করে,তাছাড়া সে দেখতে পায়, কৃত্রিম স্বপ্নের প্রজেকশন থেকে বের হবার উপায় মৃত্যু, এটা তার মাঝে আমাদের বাস্তবজগত সম্পর্কেও ধারনা দিতে শুরু করে যে এ জগতটিও উপরের জগতের ড্রিম প্রজেকশন, এ জগতটিও সত্য নয়। ফলে সে জগতের স্বপ্নের ঘোর থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, উচ্চতর ডাইমেনশনের জগতে জাগ্র‍ত হবার আশায়। উইকিপিডিয়াতেও এসেছে এই ফিল্মটি পরিচালক ক্রিস্টোফার নোল্যান দ্যা ম্যাট্রিক্স, থার্টিন্থ ফ্লোর থেকে উৎসাহিত হয়ে মায়াবাদকে প্রমোট করে তৈরি করেছেন।

এভাবেই আধুনিক অপবিজ্ঞান বিশ্বের বর্তমান ক্ষমতাসীন ইহুদীদের মিডিয়ার প্রচারণায়,বিজ্ঞানীদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগীতায় ফিরে গেছে বৈদিক-কাব্বালিস্টিক মায়াবাদে[১৭]। সত্যায়ন করা হয়েছে প্লেটোর আইডিয়ালিজমে[১৯]।আজ বলা হচ্ছে বৌদ্ধ বেদান্তশাস্ত্রের সারশিক্ষার উপর নির্মিত ফিল্ম দ্য ম্যাট্রিক্স'ই আমাদের জগতের আসল পরিচয়। পদার্থবিজ্ঞানী ক্লি আরউইন সান ফ্রান্সিসকোর থিওসফিক্যাল সোসাইটির এর সভায় ম্যাট্রিক্স ফিল্মকে স্লাইডে ব্যবহার করে আমাদের বাস্তবতা যে ম্যাট্রিক্স ফিল্মের মত তার উপর সায়েন্টিফিক প্রমান উপস্থাপন করে প্রেজেন্টেশনের শুরুতেই বলেন,"ম্যাট্রিক্স ফিল্মটি আমার নিকট সর্বকালের সবচেয়ে প্রিয় ফিল্ম।[১৮]" কোয়ান্টাম অপবিজ্ঞানের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এই ম্যাট্রিক্সের কথাই বলেছেন। জন হুইলার ইট ফ্রম বিট দ্বারা এরই কথা বলেছেন।


বৈদিক মায়াবাদের আধুনিক সংস্করণ সিমুলেশন হাইপোথেসিস আবারো সেই রেনে ডেকার্টের ইভল ডিমন তত্ত্বে ফিরে গেছে। সহজ কথায়,প্রচার করা হচ্ছে যে এই ইউনিভার্সের সিমুলেটর হচ্ছে শয়তান। পদার্থবিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা সিমুলেশনের স্রষ্টা হিসেবে বলছে এলিয়েনদেরকে। এলিয়েনরা কারা, সে পরিচয় বিগত পর্বে পেয়েছেন। আজ শয়তান জ্বীন জাতিকে এলিয়েন নামে প্রচার চলছে। আপনারা অবশ্যই মলিকিউলার বায়োলজিস্ট হাশিম আল ঘাইলির নাম শুনেছেন। তিনি বিখ্যাত সায়েন্স কমিউনিকেটর ও সায়েন্টিফিক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে। উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রতি সপ্তাহে তার ভিডিও ডকুমেন্ট গুলোয় পাঁচ মিলিয়ন ভিউ হয়। হয়ত আপনি বা আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকেই তার পেইজে লাইক দিয়ে আছেন। অনেককেই তাদের ভিডিও কন্টেন্ট শেয়ার করেন। সেদিন এক দ্বীনি ফেসবুক সেলিব্রেটি ভাইকে দেখেছিলাম "হাশিম আল ঘাইলি"র কোন একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন। আমি জানিনা মূর্খতার কোন পর্যায়ে আমরা পৌছে গিয়েছি! এরাবিক/ইসলামিক নামযুক্ত কোন বিজ্ঞান ব্যক্তিত্বকে দেখলেই ঝাপ দেই! এক সাক্ষাৎকারে তাকে [সুডো]সায়েন্স এবং নাস্তিকতা একে অন্যের সাথে জড়িত কিনা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়।তিনি উত্তরে বলেন,"আমি এটি যেভাবে দেখছি, বিজ্ঞান এবং নাস্তিকতা একে অপরের সাথে সংযুক্ত। সমস্ত বিজ্ঞানে বিশ্বাস রাখতে, আপনাকে প্রথমে বিজ্ঞানের সাথে বিরোধী যেকোন ধারণা ছেড়ে দিতে হবে। আপনি কেবল কিছু বিষয়ে বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস রাখতে এবং এর কিছু অংশকে উপেক্ষা করতে পারেন না, কারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের এই পুরো কাঠামোটি তৈরি করতে একই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সর্বদা অনুসরণ করতে হয়। হয় এর পুরো প্যাকেজটিতে স্বীকার করা বা এটির সবকিছুকে একবারে প্রত্যাখ্যান করা।যে বিষয়গুলো ধর্মকে দুর্বল করে তোলে তা হলো, তারা যে বিশ্বাসকে প্রচার করে সেগুলো বহু শতাব্দী ধরে ভালভাবে সংরক্ষিত, অপরিবর্তনীয় এবং ধর্ম এর অনুসারীদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া অনুমিত নয়, তবে আপনাকে বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য নাস্তিক হতে হবে না, আপনি এখনও একই সাথে ধর্ম এবং বিজ্ঞানে বিশ্বাস করতে পারেন, কিন্তু  আপনার যুক্তিযুক্ত বৈজ্ঞানিক মন উভয়কে একই সাথে স্থান দিতে সক্ষম হবে না।"

এই বাক্যমালার দ্বারা হাশিম তার নিজের নাস্তিক্যবাদি বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করেন। তিনি সত্যই লিখেছেন। সাদা আর কালো দুইটা এক সাথে হতে পারেনা। তিনি ভাল করেই উপলব্ধি করেছেন ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রচলিত বিজ্ঞান পরস্পর সাংঘর্ষিক। উভয় পাশাপাশি অবস্থান করতে পারেনা। একজন মানুষ একই সাথে দুই নৌকায় থাকতে পারেনা। কিছুকাল থাকলেও তাকে কিছুদিনের মধ্যে দুয়ের একটিকে বেছে নিতে হয়। হাশিমের কথায় প্রতিফলিত হয় ইসলাম ও প্রচলিত [অপ]বিজ্ঞানের মধ্যে  আপোষ করে সমন্বয়সাধনের প্রতারণাপূর্ণ অপপ্রয়াসের। আজ কিছু মুসলিমরা এ দুই মেরু এক করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে, যার মেলবন্ধন বা সহাবস্থান কখনো সম্ভব না। হাশিম আল ঘাইলি অনেক বিখ্যাত সায়েন্টিফিক ভিডিও ডকুমেন্ট নির্মাণ করেছে। যার মধ্যে আছে Pale Blue Dot,The Future is Now এবং  In Science We Trust। "ইন সায়েন্স উই ট্রাস্ট" টাইটেলটি বেশ ইন্ট্রেস্টিং। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে পেনিসিলভানিয়ার মিনিস্টার আমেরিকার সকল কারেন্সির উপর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাসের স্বীকৃতি দিয়ে “In God We Trust” ন্যাশনাল মটো হিসেবে বাক্যটি লেখার প্রচলন চালু করে। হাশিম আল ঘাইলি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসের স্থলে সায়েন্সকে বসিয়েছে। অর্থাৎ তিনি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন না বরং [অপ]বিজ্ঞানে। আমি তার ব্যবহৃত টাইটেলের "সায়েন্সের" স্থানে "উইচক্র্যাফট" বা "ম্যাজিক" শব্দটিকে বসানো অধিকতর অর্থপূর্ণ মনে করি,কেননা আধুনিক বিজ্ঞানের আসল পরিচয় সেটাই। আল ঘাইলিকে নিয়ে এত কথা লেখার উদ্দেশ্য হলো, তিনি অন্যান্য জনপ্রিয় সায়েন্স কমিউনিকেটরদের অনুরূপ বৈদিক মায়াবাদি সিমুলেশন তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। তিনি সম্প্রতি "সিমুলেশন" নামে একটা ফিল্মও তৈরি করেছেন[২৪]।
তিনি এতে সরাসরি শয়তান জ্বীন জাতিকে আমাদের জগতের সিমুলেটর বা স্রষ্টা হিসেবে দেখায়! এর ট্রেইলার ইমেজে আপনারা দেখতে পারছেন, (ডানের ছবিতে)তারা সুস্পষ্টভাবে শয়তানকে শয়তানের চেহারাতে দেখিয়েই সৃষ্টিকর্তার আসনে রিপ্লেস করেছে। এটাকে ডিজিটাল স্যাটানিজম নাকি ডিজিটাল পলিথেইজম কি নামে অভিহিত করা উচিত,সেটা নিয়ে চিন্তার অবকাশ আছে। হাশিম আল ঘাইলির খ্যাতি জগতজোড়া। ফেসবুকেই ২১ মিলিয়ন+ ফলোয়ার! ভিডিও সম্পাদনায় অসাধারণ। ৬ বিলিয়ন+ অর্গানিক ভিউয়ার। তার এ অসাধারন ভিডিও সম্পাদনার নৈপুণ্য ব্যবহার করে কুফরি বৈদিক মায়াবাদি আকিদাকে প্রোমোট করে ভিডিও নির্মাণ করেছেন। তিনি সিমুলেশন ফিল্মে দেখিয়েছেন যে, মৃত্যুর পর পরকাল বলে কিছু নেই। মৃত্যুর পর মানুষ  উচ্চতর ডাইমেনশনে ট্রান্সেন্ড করে। আমাদের দেখা মহাবিশ্ব এবং সমগ্র সৃষ্টিজগত শয়তান জ্বীনদের তৈরি। তারাই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা! আর এই জগৎ হলোগ্র্যাফিক সিমুলেশন।

ধরুন ফলোয়ারের আনুমানিক কয়েক লাখই মুসলিম। হয়ত এর মাঝে হাজার হাজার ধার্মিক মুসলিমও আছে। আমার আইডিতে মিচুয়াল ফ্রেন্ডদের মধ্যে অনেক ফলোয়ারস ছিল। অনেকে তার দুর্দান্ত ভিডিও গুলো শেয়ার করত! এই বিখ্যাত বিজ্ঞানপূজারী সেলিব্রিটি এখন গনহারে মুশরিক মালাউন বানানোর উদ্দেশ্যে ফিল্ম রিলিজ করেছেন। এর ট্রেইলারেই শয়তানের চেহারা রেখেছেন(ছবিটা অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া)। এরাই "ক্রিয়েটরস"!!! ট্রেইলার ভিডিওতেই বলেছে, এরাই সবকিছুর নিয়ত্বা ও কোঅর্ডিনেটর [লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ]। আমাদের ভাগ্যও তাদের হাতে নির্ধারিত। ট্রেইলারেই বলে আমাদের সমস্ত কাজ ও সিদ্ধান্ত সর্বোপরি সবকিছুই প্রিক্যালকুলেটেড। এও বলা হচ্ছে আমাদের ইউনিভার্স বৃহত্তম ইউনিভার্সের অংশ এবং সবকিছুই হায়ার পারপাজের জন্য ঘটছে। মূল ফিল্মে দেখানো হয়, একটি টেকঅর্গানাইজেশন ২০১৩ সালের আঘাত হানা উল্কার ব্যপারে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ২০১১ সালে। এই ভবিষ্যতবাণীর মধ্যে আছে এস্ট্রলজিক্যাল তাৎপর্য,এটা নিয়ে আগামীপর্বে আলোচনা হবে।এভাবেই অপবিজ্ঞান ফিরে গেছে রেনে ডেকার্টের "অশুভ শয়তানের" তত্ত্বে। যেখানে শয়তানকে বলা এই স্বপ্নীল বাস্তবতার মায়াজালের স্রষ্টা। এজন্যই প্রথমদিকে বলেছিলাম আধুনিক বিজ্ঞান এখন মানুষকে শয়তানের ইলাহ হিসেবে মেনে নেওয়ার ও স্বীকৃতিদান করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যপার হচ্ছে এর প্রচারণার শুরুই হয়েছে এক মুসলিম নামধারীর থেকে। তাহলে এবার ভাবুন কত হাজার মুসলিমদেরকে কুফরি আকিদার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, হাশিম আল ঘাইলিদের আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানতে অনেক অসুবিধা কিন্তু শয়তানকে ইলাহ মানতে কোন কষ্ট নেই। সরাসরি ফিল্মই তৈরি করে ফেলেছে স্বীকৃতি দিয়ে!

সিমুলেশন বা মায়াবাদকে সত্যায়ন মানে একটি বিকল্প কুফরি মেটাফিজিক্স বিনির্মাণ। বিশ্ব কাফির শক্তির আজ এই বৈদিক মায়াবাদি চেতনাকে প্রসার প্রচারণার পিছনে আছে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাচীন আব্রাহামিক বিশ্বাস ব্যবস্থার মূলোৎপাটন। তাওহীদের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে কাব্বালিস্টিক ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠার জন্য যাদুশাস্ত্রভিত্তিক প্যাগান বিশ্বাসব্যবস্থা তথা ওয়ান ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন প্রতিষ্ঠা।
এই লক্ষ্যে সর্বপ্রথম যাদুবিদ্যার ও যাদুশাস্ত্রের নাম পরিচয় এবং কিছু নীতিমালা পাল্টে কয়েক শতাব্দী ধরে অপবিদ্যা ও কুফরি শিক্ষা সমূহকে বিজ্ঞানের নামে সকলের গ্রহনযোগ্যতার আসনে নেয়া হয়। অতঃপর, সবাই একে গ্রহন করলে বিজ্ঞান তার আদি পরিচয়ে প্রত্যাবর্তন শুরু করে। নামেই শুধু বিজ্ঞান আছে কিন্তু এর যাবতীয় শিক্ষা ও অপবৈজ্ঞানিক বিশ্বাসসমূহ হাজার বছরের পুরোনো যাদুশাস্ত্রের শিক্ষায় ফিরে গিয়েছে। সেসবকে আজ সত্যায়ন করছে এবং যুক্তিযুক্ত গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞান বলছে। বৈদিক মায়াবাদ আজ বিজ্ঞান। ব্রহ্মচৈতন্য ,সর্বচৈতন্যবাদ আজ বিজ্ঞানের বিষয়। নিগেল ক্যালডারের মত সায়েন্স অথোরগন সরাসরি মহাবিশ্বের ব্যপারে "ম্যাজিক ইউনিভার্স" নামে বই পাব্লিশ করছেন। বৈদিক শাস্ত্রগুলো হয়ে গেছে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আধার! নিলস বোর, ওপেনহেইমার,শ্রোডিঞ্জার,হাইজেনবার্গ প্রত্যেকেই এসব বৈদিক অকাল্ট শাস্ত্রের মধ্যে ডুবে ছিলেন অপবৈজ্ঞানিক জ্ঞান অন্বেষণে। সমস্ত বৈজ্ঞানিক কুফরি আকিদাগুলোর অনুসরনে সর্বাধিক এগিয়ে আছে অকাল্টিস্ট বা পাশ্চাত্যের যাদুকররা[২৩]। এরা মানুষকে আহব্বান করে ধর্মহীনতার পথে। এক জ্যোতিষী মহিলা স্পষ্টভাষায় এই ম্যাট্রিক্সের বিভ্রম থেকে বাঁচতে কিছু উপায় বলে দেন, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ধর্মসমূহকে বিশ্বাসের খাতা থেকে বাদ দেয়া,স্পিরিট চ্যানেলিং বা শয়তানকে বস করা, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে ওই নারী জ্যোতিষীর নিকট ডেমিয়ার্জের(মহাচৈতন্যের) বার্তা আদানপ্রদানের মাধ্যম, অর্থাৎ শয়তান জ্বীন হচ্ছে এদের ম্যাসেঞ্জার![২১]

 অপবৈজ্ঞানিক অগ্রগতি বাধাহীন ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। গত পর্বগুলোয় একে একে ব্রহ্ম, শিবকে দেখেছেন,দেখেছেন পদার্থবিজ্ঞানীগন কাব্বালাহকে সায়েন্স বলছে। আজ বিষ্ণুকে পেলেন আগামী পর্বে দেখবেন, বিজ্ঞানীরা সরাসরি কাব্বালাহকে আধুনিক কস্মোলজিসহ সমস্ত পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিফলিত বিদ্যা বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বুঝতে পারবেন, আধুনিক বিজ্ঞানের আড়ালে লুকিয়ে আছে জ্যোতিষশাস্ত্রীয় কুফরি তত্ত্ব। "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজে অনেক সংক্ষেপে মূল বিষয় গুলো আলোচনা করা হচ্ছে, এটা থেকে অনেক বিষয়ই আলোচনা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলো এত ব্যাপক যে সমস্ত বিষয় যদি আলোচনার চেষ্টা করি তাহলে এক পর্বই শেষ করা সম্ভব হবেনা। আজ কথিত বিজ্ঞানের পরিচয় সম্পর্কে আপনারা অনেকটাই অবগত। সামনের পর্বগুলোতে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে। ইনশাআল্লাহ।







[চলবে ইনশাআল্লাহ..]



রেফঃ
[১]Bhattacharji, Sukumari (1970), The Indian Theogony: A Comparative Study of Indian Mythology from the Vedas to the Puraṇas, pages 35-37, Cambridge University Press Archive Sanskrit and Tamil Dictionaries. Retrieved 24 August 2016.
[২]https://m.youtube.com/watch?v=RwxZ21qRdMg
[৩]en.m.wikipedia.org/wiki/Maya_(religion)
[৪]https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81_%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3
[৫]https://www.theosophy-nw.org/theosnw/world/modeur/ph-wett2.htm
[৬]https://quantumgravityresearch.org/portfolio/pixelated-vs-smooth-spacetime
[৭]https://www.scientificamerican.com/article/sidebar-the-holographic-p/
[৮]en.m.wikipedia.org/wiki/David_Bohm
en.m.wikipedia.org/wiki/Holographic_paradigm
[৯]http://fractalenlightenment.com/760/enlightening-video/the-holographic-universe-perceiving-reality
en.m.wikipedia.org/w/index.php?search=Holographic+universe+&title=Special%3ASearch
[১০]https://blogs.scientificamerican.com/cross-check/a-super-simple-non-quantum-theory-of-eternal-consciousness
[১১]https://www.wired.co.uk/article/our-universe-is-a-hologram
[১২]https://m.youtube.com/watch?v=klpDHn8viX8
[১৩]https://www.gaia.com/article/do-we-live-in-a-holographic-universe-simeon-hei
https://www.gaia.com/article/universe-is-a-simulation-can-we-hack-it
[১৪]https://www.samwoolfe.com/2020/02/dmt-simulation-hypothesis.html
https://m.youtube.com/watch?v=Gj47A7VBrvM
[১৫]https://www.space.com/41749-elon-musk-living-in-simulation-rogan-podcast.html
https://m.youtube.com/watch?v=ZFWD0Jwwbcg
[১৬]en.m.wikipedia.org/wiki/Simulation_hypothesis
en.m.wikipedia.org/wiki/Digital_philosophy
en.m.wikipedia.org/wiki/Simulated_reality
https://m.youtube.com/watch?v=pznWo8f020I
[১৭]https://m.youtube.com/watch?v=l8AjoUb8Tq8
https://globalhinduism.wordpress.com/2012/05/23/modern-science-and-the-philosophy-of-hinduism/
https://www.hinduwebsite.com/hinduism/essays/advaita-holographic-principle.asp
https://sarikanandacerebrate.com/2015/01/18/holographic-universe-and-the-hindu-philosophy
https://www.nbcnews.com/mach/science/are-we-living-simulated-universe-here-s-what-scientists-say-ncna1026916
https://www.scientificamerican.com/article/are-we-living-in-a-computer-simulation/
https://builtin.com/hardware/simulation-theory
https://www.awakeninthedream.com/articles/quantum-meta-physics
en.m.wikipedia.org/wiki/Holographic_principle
https://plato.stanford.edu/entries/panpsychism/
https://www.quora.com/What-is-the-link-between-solipsism-and-simulation-theory
https://stillnessinthestorm.com/2016/08/consciousness-universe-vs-simulation-hypothesis-are-we-living-in-a-computer-simulation-created-by-an-advanced-civilization-elon-musk-says-yes/
en.m.wikipedia.org/wiki/Hylomorphism
http://blog.world-mysteries.com/science/universe-as-a-conscious-holographic-information-processor/
http://brainmind.com/QuantumConsciousness2.html
en.m.wikipedia.org/wiki/Buddhism_and_science
en.m.wikipedia.org/wiki/The_Void_(philosophy)
en.m.wikipedia.org/wiki/Relationship_between_religion_and_science
http://psychologybuddhism.blogspot.com/2017/08/
https://thex.ca/2018/02/09/panpsychism-and-idealism-consciousness-ego-enlightenment-feb-6th-2018/amp/
en.m.wikipedia.org/wiki/Digital_physics
en.m.wikipedia.org/wiki/Maya_(religion)
en.m.wikipedia.org/wiki/Acosmism
[১৮]https://youtu.be/fV07SJz1YXI
[১৯]https://m.youtube.com/watch?v=QiZLlpqAQ7U
https://m.youtube.com/watch?v=sFldDgotNDQ
https://m.youtube.com/watch?v=ORWTat-EaW4
[২০]https://medium.com/the-humanists-of-our-generation/my-lsd-trip-an-exploration-into-the-experience-of-altering-consciousness-918710cd2cbf
[২১]https://m.youtube.com/watch?v=UaT5v9ZE68A
https://m.youtube.com/watch?v=4L87pRqRrYE
[২২]https://m.youtube.com/watch?v=SYAG9dAfy8U
[২৩]https://youtu.be/ccQPesc7HFs
https://m.youtube.com/watch?v=btiEVxJLTAM
[২৪]https://m.youtube.com/watch?v=H6-N1v1REu8
https://youtu.be/YmP7aXs9ILk



বিগত পর্বগুলোর লিংক:
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html