Friday, April 27, 2018

৩.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?
The Occult Origins of Mainstream physics and Astronomy:[পর্বঃ৩]



    আজ ৩য় পর্বেও আমরা পূর্বের ন্যায় আংশিকভাবে প্যাগান ধর্ম/সংগঠন নিয়ে আলোচনা করব ও ধীরে ধীরে "বৈজ্ঞানিক" অরিজিনের শেকড়ে ফিরব, সেই সাথে Global Scientific illumination এর মহান পথিকৃৎদের নিয়ে আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।

Eastern Occult Tradition:
Occult philosophy গুলোতে সবচেয়ে এডভ্যান্স হচ্ছে Eastern occultism বা Eastern Mysticism। গ্লোবাল প্যাগান রিভাইভালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পূর্বাঞ্চলীয় আধ্যাত্মবাদ। বলা যায়, পশ্চিমা প্যাগানিজমের চালিকাশক্তিই এই পূর্বাঞ্চলীয় মিস্টিসিজম। খোদ আমেরিকায় ইস্টার্ন অকাল্টিজমের প্রভাব লক্ষ্য করবার মত। আমেরিকায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ভারতবর্ষ থেকে আগত বহু সাধু-গুরুজীদের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের গুপ্তদর্শন প্রচারের জন্য। জাতিসংঘ এবং মার্কিন সরকারের নিবিড় পৃষ্ঠপোষকতায় আজ আমেরিকার প্রতি চার জনে একজন নাগরিক ভারতীয় অকাল্ট স্পিরিচুয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ডভিউ লালন করে। সেখানকার স্কুল কলেজে বাধ্যতামূলক ইয়োগা শিক্ষাও চালু করেছিল সরকার। বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মত আমেরিকার এখানে সেখানে মেডিটেশন-ইয়োগা ট্রেনিং সেন্টার গড়ে উঠেছে।

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা সবচেয়ে বেশি ইস্টার্ন স্পিরিচুয়ালিজমের ফাদে পড়েছে। টেলিভিশন প্রোগ্রামে তো করছেই, এমনকি হলিউডের ক্যারেক্টারদের দ্বারাও প্রোমোট করা হচ্ছে। আমি অবাক হয়েছিলাম 'ডেথ রেস থ্রি' এর হিরো Luke Goss এর পিঠে 'Om' সিম্বল দেখে।

এটা বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটা ট্রেন্ড। কেউ হাতে, কেউ বুকে, কেউবা পিঠে এরকম ইস্টার্ন Esoteric symbol এর উল্কি/ট্যাটো করে থাকে। ইস্টার্ন মিস্টিসিজম বলতে মেইনস্ট্রিম বৌদ্ধ,হিন্দু,জৈন,বৈষ্ণবদের বোঝায়। আমরা যখনই সর্বেশ্বরবাদ(monism) ও পুনঃজন্মবাদের আকিদার কথা শুনি তখন প্রথমেই মনে হিন্দুবৌদ্ধদের কথা চলে আসে। অথচ এটা শুধু তাদের একার বিশ্বাসই না, বরং পৃথিবীর সকল প্রান্তের সকল প্যাগানদের এবং সকল গুপ্তজ্ঞানবাদী দার্শনিকদের মধ্যে অভিন্নভাবে বিদ্যমান। সেজন্য পূর্বাঞ্চলীয় কুফরি মতাদর্শগুলোকে সাধারন ধর্মের কাতারে রাখা ভুল।

এগুলো মূলত Ancient Indian philosophical school of thought! এদের যারা বৈদিক ডোমিনিয়ন মানে তাদেরকে আস্তিক বলে আর যারা বেদকে মূল হিসেবে মানে না তাদেরকে নাস্তিক স্কুল অব থট বলা হয়। বৌদ্ধ,জৈন মতবাদ 'নাস্তিক' শাখাভুক্ত। উভয়ের মাঝেই অকাল্ট ট্রেডিশন হিসেবে 'তন্ত্র'কে মান্য করা হয়।'তন্ত্র' ইস্টার্ন মিস্টিসিজম বা অকাল্ট ফিলোসফির প্রধান পথ। আপনারা জানেন তান্ত্রিকরা যাদুবিদ্যায় সিদ্ধহস্ত। অনেক হিন্দু তন্ত্রকে দূরে ঠেলে দিতে চায় কিন্তু ভারতের সব মতবাদই আসলে একে অপরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।কেউ তান্ত্রিক ট্রেডিশন বাদ দিয়ে ষড়চক্রের উন্নয়ন সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারবে না কেননা সেটা তন্ত্র থেকেই এসেছে।

বেদ প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান ও দর্শনের মূল শাস্ত্র। বেদ লেখা হত কথিত মূনীঋষিদের দ্বারা। তারা ধ্যানের মাধ্যমে Altered State of Consciousness এ গিয়ে উচ্চতর ডাইমেনশনে থাকা স্পিরিচুয়াল স্বত্ত্বাদের থেকে অনেক জ্ঞান আহরন করতেন। পরবর্তীতে সেগুলো কিতাবে লিপিবদ্ধ করা হয় (স্মৃতি/শ্রুতি ভাগে) পবিত্রশাস্ত্র হিসেবে।
"The Veda, for orthodox Indian theologians, are considered revelations seen by ancient sages after intense meditation, and texts that have been more carefully preserved since ancient times."(Wikipedia)

তাছাড়া লেফট হ্যান্ড পাথের (বামপন্থার) সাথেও ইস্টার্ন মিস্টিসিজমের সুদৃঢ় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে এথিস্টিক স্যাটানিজম এবং অকাল্ট এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন সেক্ট অব দ্য হর্ন গডের প্রধান Thomas LeRoy বলেন, হিন্দুধর্ম বামপন্থার একটি অন্যতম পথ। শিবকেও তিনি গ্লোরিফাই করেন একটি ভিডিওতে। তার পেজ লিংকঃ m.facebook.com/TheSectOfTheHornedGod

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Left-hand_path_and_right-hand_path

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vedanta

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Āstika_and_nāstika

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Śramaṇa

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Veda

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Tantra

বেদকে সর্বাধিক প্রাচীন গ্রন্থ গুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব সর্বোচ্চ ১৭০০ বছর আগে বেদ লিপিবদ্ধ হয়। হিন্দুত্ববাদীদের একটা ভ্রান্ত অহমিকা হচ্ছে নিজেদেরকে সবচেয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে দাবি। এটা সত্য যে ওদের প্যাগান মতাদর্শ সর্বাধিক সময় ধরে একই ভাবে টিকে আছে, তাই বলে এই নয় যে সেটাই সবচেয়ে প্রাচীন 'ধর্ম'। নতুবা, হরপ্পার প্রাচীন সভ্যতার সময় হিন্দুত্ববাদ কোথায় ছিল(?)! আগেই উল্লেখ করেছি ইন্ডিয়ান ফিলোসফি কোন রিলিজিয়াস ট্রেডিশন না।বরং ইস্টার্ন অকাল্ট ফিলোসফিক্যাল ট্রেডিশন। সুতরাং ওদের জন্য এটা দাবি করা যৌক্তিক যে, ইন্ডিয়ান অকাল্টিজমই(কুফর) সর্বপ্রাচীনতম occult বা কুফরের মূল।

এজন্যই, আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট ইয়ামানের লোকেরা উপস্থিত হয়েছে। তারা নম্রচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। ঈমান ইয়ামানীদের মধ্যে এবং হিকমাত ইয়ামানীদের। আর কুফরের উৎস হচ্ছে পূর্ব দিকে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কুফরীর মূল পূর্বদিকে, গর্ব এবং অহংকার ঘোড়া এবং উটের মালিকদের মধ্যে এবং বেদুইনদের মধ্যে যারা তাদের উটের পাল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আর শান্তি বকরির পালের মালিকদের মধ্যে।’ (৩৪৯৯, ৪৩৮৮, ৪৩৮৯, ৪৩৯০) (মুসলিম ১/২১ হাঃ ৫২, আহমাদ ৯৪১৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কাফেরদের মহান নেতা দাজ্জালেরও পূর্বদিকে থাকাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত।

......রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "তামীমদারীর বর্ণনাটি আমাকে বিমোহিত করেছে। যেহেতু তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার, যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মাদীনা ও মক্কা সম্পর্কে ইতিপূর্বে বলেছি। তিনি আরো বললেন, সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরে বরং পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে। এসময় তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) বলেন, এ হাদীস আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুখস্থ করেছি।"(সহীহ মুসলিম)

বেদের মূল জ্ঞানের অংশ উপনিষদ।
উপনিষদেই আধ্যাত্মবাদের মূল আলোচনা করা হয়েছে।বেদের মূল প্রানকেন্দ্র উপনিষদ। তান্ত্রিক এসোটেরিক ট্রেডিশন থেকে এসেছে ষড়চক্র ও দেহতত্ত্ববাদী নানা সাধনা রিচুয়াল। সেসবের উপর ভিত্তি করেই ধ্যান-ইয়োগা(যোগসাধনা) করা হয়। আপনারা অবগত যে প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ যাদুবিদ্যার জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত। যারাই যাদুবিদ্যা,গুপ্তজ্ঞানের খোজে ছুটেছেন তারা ভারতে একবার হলেও এসেছেন। আধুনিক ওয়েস্টার্ন এসোটেরিক পাথের এক জননী ম্যাডাম এইচ.পি ব্লাভাস্তস্কি ভারত ও তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছেন এবং অনেক যাদুকর তান্ত্রিকদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, এরপরে তিনি নিজেই থিওসফিক্যাল সোসাইটি গঠন করেন।

গোটা বৈদিক শাস্ত্র যাদুবিদ্যা/ spell casting এর শিক্ষা দেয়। দেখুনঃ

http://astrologyfutureeye.com/mantra-108

http://www.vedanta-occult-spells.com/karma-in-hinduism.html

http://www.vedanta-occult-spells.com/spell-caster.html

http://www.vedanta-occult-spells.com

https://baalkadmon.com/portfolio-item/vedic-magick/

https://vicdicara.wordpress.com/2017/01/24/magic-spells-from-atharva-veda/

মন্ত্র বা Spell casting খুবই সাধারণ একটা ব্যপার এই পূর্বাঞ্চলের প্যাগান 'ধর্মচক্রে'।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mantra

"Mantras come in many forms, including ṛc (verses from the Rigveda for example) and sāman (musical chants from the Sāmaveda for example).[3][7] They are typically melodic, mathematically structured meters, believed to be resonant with numinous qualities. At its simplest, the word ॐ (Aum, Om) serves as a mantra. In more sophisticated forms, mantras are melodic phrases with spiritual interpretations such as a human longing for truth, reality, light, immortality, peace, love, knowledge, and action.[3][12] Some mantras have no literal meaning, yet are musically uplifting and spiritually meaningful."(Wikipedia)

আগেই আপনাদেরকে বলেছিলাম মিস্টিকদের কথিত রিয়েলিটি=ইল্যুশন বা মায়া তত্ত্ব সর্বপ্রথম এসেছে এই ইন্ডিয়ান প্যাগানিজম থেকে।
বৌদ্ধ ও হিন্দুদের কিছু গ্রন্থে এর ব্যপারে উল্লেখ আছে।

বিস্তারিত দেখুনঃ https://en.m.wikipedia.org/wiki/Maya_(illusion)

Monier William এর মতে মায়া হলো- "wisdom and extraordinary power" in an earlier older language, but from the Vedic period onwards, the word came to mean "illusion, unreality, deception, fraud, trick, sorcery, witchcraft and magic".(Wikipedia)

ইস্টার্ন অকাল্ট বিলিফ সিস্টেম আমাদের ফ্রিকোয়েন্সি ও ভাইব্রেশনের দ্বারা প্রকৃতির গঠনের কথা বলে, যে বিশ্বাস সকল মিস্টিকদের মধ্যে বিদ্যমান।। "Creation consists of vibrations at various frequencies and amplitudes giving rise to the phenomena of the world."(Wikipedia)

এস্ট্রলজি বা জ্যোতিষশাস্ত্র যা ইসলামী শারী'আ যাদু বিদ্যার একটি শাখা হিসেবে সাব্যস্ত করে সেটাও পূর্বাঞ্চলের অকাল্টিজমের মৌলিক বিষয়। "The foundation of Hindu astrology is the notion of bandhu of the Vedas, (scriptures), which is the connection between the microcosm and the macrocosm."
(উইকিপিডিয়া)

"Jyotiṣa is one of the Vedāṅga, the six auxiliary disciplines used to support Vedic rituals."(উইকিপিডিয়া)

"The Vedāṅga Jyotiṣa, or Jyotiṣavedāṅga (Devanagari वेदाङ्ग ज्योतिष) is one of earliest known Indian texts on astronomy and astrology (Jyotisha).[1] The present form of the text is dated to the 700 BCE to final centuries BCE, but it is based on a tradition reaching back to about 1400 BCE."
(উইকিপিডিয়া)

বিস্তারিতঃ
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vedanga
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vedanga_Jyotisha

অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে যাদুবিদ্যার শাখাভুক্ত জ্যোতিষশাস্ত্র পূর্বাঞ্চলীয় 'আস্তিক ট্রেডিশনে'রই অবিচ্ছেদ্য বিষয়। তাহলে 'নাস্তিক দর্শনের' অন্তর্ভুক্ত বৌদ্ধ/জৈন/ Cārvāka/ Ājīvika গুলোর কি অবস্থা!/? আপনারা জানেন বৌদ্ধমত সবচেয়ে বেশি স্পিরিচুয়াল। এদের মধ্যে যোগসাধনা,যাদু-তন্ত্র-মন্ত্র, আধ্যাত্মিক এনলাইটমেন্টের মনোযোগ বেশি। আপনারা ভাল করেই জানেন বৌদ্ধদের কালচক্রতন্ত্রে কি উল্লেখ আছে।
জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যপারে আল্লাহর রাসূল(সা) কি বলেন?

ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ﻣَﻦِ ﺍﻗْﺘَﺒَﺲَ ﻋِﻠْﻤًﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨُّﺠُﻮﻡِ ﺍﻗْﺘَﺒَﺲَ ﺷُﻌْﺒَﺔً ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴِّﺤْﺮِ ...
‘যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যা থেকে কিছু অংশ শিখল সে মূলতঃ যাদুবিদ্যারই কিছু অংশ শিখল। এ (জ্যোতির্বিদ্যা) যত বাড়বে যাদুবিদ্যাও তত বাড়বে’।(আবূদাঊদ হা/৩৯০৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান)

কুফরের মূল কেন্দ্র পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন এস্ট্রোনোমিকাল আইডিয়া এতটাই ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ছিল যে তা গ্রীস পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল। যাদুবিদ্যা ও অন্যান্য নিষিদ্ধ জ্ঞানের অন্যতম চর্চাকেন্দ্র গ্রীসেও ভারতবর্ষের অপবিদ্যা প্রভাবিত করে।
"Indian astronomy also influenced Greek astronomy beginning in the 4th century BCE[6][7][8] and through the early centuries of the Common Era, for example by the Yavanajataka[6] and the Romaka Siddhanta, a Sanskrit translation of a Greek text disseminated from the 2nd century"(Wikipedia)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indian_astronomy
ভারতীয়দের বিশ্বাস তারা প্রাচীনকাল থেকেই ওদের ধর্মীয়শাস্ত্র থেকে জানতো যে পৃথিবী বর্তুলাকার। তবে একদম বলের ন্যায় গোলাকার নয়। স্ফেরিক্যাল আকৃতির জন্য সবচেয়ে বড় প্রমান সংস্কৃত "ভূগোল" শব্দটি।
দেখুনঃ
https://hinduism.stackexchange.com/questions/12365/what-is-the-shape-of-earth-according-to-hindu-scriptures

শুধু গ্রীসেই নয় ইউরোপেও জেসুইট মিশোনারীর সহযোগীতায় ভারতীয় আকাশবিদ্যা পৌছে যায়।
জেসুইট মিশোনারীদের নিয়ে সামনে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

"Some scholars have suggested that knowledge of the results of the Kerala school of astronomy and mathematics may have been transmitted to Europe through the trade route from Kerala by traders and Jesuit missionaries.[51] Kerala was in continuous contact with China, Arabia and Europe".
(উইকিপিডিয়া)

সবচেয়ে অবাক করে হিন্দুশাস্ত্রে সর্বপ্রথম 'পরমানুর' ব্যাপারে সংজ্ঞা। যার উপর গোটা পদার্থবিদ্যা দাঁড়িয়ে আছে সেটার ব্যপারে সর্বপ্রথম বর্ননা পাওয়া যায়:
caramaH sad-visheShANAm aneko .asaMyutaH sadA |
paramANuH sa viGYeyo nR^iNAm aikya bhramo yataH || 3.11.1

The material manifestation’s ultimate particle, which is indivisible and not formed into a body, is called the atom. It exists always as an invisible identity, even after the dissolution of all forms. The material body is but a combination of such atoms, but it is misunderstood by the common man.

sata eva padArthasya svarUpAvasthitasya yat |
kaivalyaM parama-mahAn avisheSho nirantaraH | |3.11.2

Atoms are the ultimate state of the manifest universe. When they stay in their own forms without forming different bodies, they are called the unlimited oneness. There are certainly different bodies in physical forms, but the atoms themselves form the complete manifestation.
The Parama-Mahan is still more subtler than Paramanu.
The Parama Mahan is unique, has no difference, no spacing and leaves behind nothing.
However, majority of Hydrogen atoms have only electrons and protons, but no neutrons.

evaM kAlo .apy anumitaH saukShmye sthaulye ca sattama |
saMsthAna-bhuktyA bhagavAn avyakto vyakta-bhug vibhuH || 3.11.3

In the same way time also has its discrete divisions, which comprise its gross form and this can be measured by the movement and combination of particles; viShNu is that which is unmanifest, existing in movement and in potential.

sa kAlaH paramANur vai yo bhu~nkte paramANutAm |
sato .avisheSha-bhug yas tu sa kAlaH paramo mahAn || 3.11.4

Those discrete units of time, which are verily further indivisible, correspond to the time required by a paramANu to cover the space equivalent to a paramANu; this is verily the primal, supreme time.

aNur dvau paramANU syAt trasareNus trayaH smRtaH |
jAlArka-rashmy-avagataH kham evAnupatan agAt || 3.11.5

Two paramANus are combine to form an aNu, and 3 combine to form a trasareNu; the rays of light emerging from a mesh can make these [trasareNus] move up in empty space.
[ভগবত পুরান]

ব্যাখ্যা-
Bhagavata states that the Paramanus never join each other, only by coming close together they produce an illusion of a solid matter, which has specific properties. It is now accepted by the science that an atom of an element has some specific properties but its Subatomic particles have no such properties.

Its is now proved by the science that the subatomic particles are not really joined to each other, they are far away from each other. Proton of an atom is at a distance of 40,000 [forty thousand] times the diameter of it from its Electron.
Bhagavata Purana has correlated the matter with the time, just like the space-time continuam of the modern science. Time is unmanifested (Avyakta), but it enjoys the manifest world (Vyaktabhuk). It comes into existence in a special way, so it is called as ‘ Vibhu’. The finest unit of time is named as Paramanu, which equals to a millionth of a second. To be precise, a Paramanu of time is 0.000032 seconds, according to the Bhagavata.

The theory of the Paramanus proposed by the Bhagavata is now accepted by the modern science, but the ‘Parama Mahan’ is not yet accepted by the science. A Paramanu keeps behind some ‘ thing ’, if broken ; but the Parama Mahan will not keep any ‘thing ’ behind, except itself. That Unique thing is called as ‘ Kaivalya’ ( nirvana/salvation/moksha ), which is the unique, ultimate Reality.
Vishnu Sahasranama (written in the Shanti Parva of the Mahabharata) gives the meaning of Vishnu as : Veveshti Vyaapnoti iti Vishnuh – That which pervades everywhere is Vishnu.
It is known that atoms don’t exist independently and they exist as molecules, which are spread everywhere to make up the matter appear in different shapes and forms.

Siva is described in Tantra books as the one who is in Anu-Poorva sthiti (pre-atomic stage).
In pre-atomic stage, an unstable atom has an excess electron or proton and this means, Siva exists in the form of atomic energy which flows, and these atoms makeup molecules, which ultimately appears like matter.
This clearly explains the line ‘Sivaya Vishnu Roopaya, Siva Roopaya Vishnave | Sivascha hridayam Vishnor, Vishnascha hridayam Sivaha ||’
Ancient literature like Lakshmi Tantra also suggests that Paramatma , the Supersoul in the heart of everyone through whom all Avatars come to material universe, is lying on that Milk ocean (Milky Way/Galaxy). So Paramatma is in every atom and heart of all souls in 8400000 kinds(species) of material bodies, with two souls in each heart called jivaatma and Paramatma

তথ্যসূত্রঃ
https://www.booksfact.com/puranas/atomic-molecular-knowledge-in-bhagavata-purana.html

ভগবত পুরানকে মাঝেমধ্যে 'পঞ্চম বেদ' বলেও অভিহিত করা হয়।
"The Bhagavata is widely recognized as the best-known and most influential of the Puranas and, along with the Itihasa and other puranas, is sometimes referred to as the "Fifth Veda".(উইকিপিডিয়া)

Kaṇāda Kashyapa এর প্রবর্তিত একটি বৈদিক ফিলোসফি Vaisheshika। এতে এটমিক কন্সেপ্টকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে।

"Vaisheshika school is known for its insights in naturalism,[4][5] it is a form of atomism in natural philosophy.[6] It postulated that all objects in the physical universe are reducible to paramāṇu (atoms), and one's experiences are derived from the interplay of substance (a function of atoms, their number and their spatial arrangements), quality, activity, commonness, particularity and inherence."

"According to the Vaiśeṣika school, the trasareṇu are the smallest mahat (perceivable) particles and defined as tryaṇukas (triads). These are made of three parts, each of which are defined as dvyaṇuka (dyad). The dvyaṇukas are conceived as made of two parts, each of which are defined as paramāṇu (atom). The paramāṇus (atoms) are indivisible and eternal, they can neither be created nor destroyed.[31] Each paramāṇu (atom) possesses its own distinct viśeṣa (individuality)."
The measure of the partless atoms is known as parimaṇḍala parimāṇa. It is eternal and it cannot generate the measure of any other substance. Its measure is its own absolutely.

যাদুবিদ্যার ক্লাসিক্যাল ইলিমেন্টস(পানি বায়ু পৃথিবী আগুন) এই এটমিক দর্শন espouse করে।
"Vaisheshika espouses a form of atomism, that the reality is composed of four substances (earth, water, air, fire). Each of these four are of two types, explains Ganeri,[6]atomic (paramāṇu) and composite. An atom is that which is indestructible (anitya), indivisible, and has a special kind of dimension, called “small” (aṇu). A composite is that which is divisible into atoms. Whatever human beings perceive is composite, and even the smallest perceptible thing, namely, a fleck of dust, has parts, which are therefore invisible.[6]

 The Vaiśeṣikas visualized the smallest composite thing as a “triad” (tryaṇuka) with three parts, each part with a “dyad” (dyaṇuka). Vaiśeṣikas believed that a dyad has two parts, each of which is an atom. Size, form, truths and everything that human beings experience as a whole is a function of atoms, their number and their spatial arrangements.
Vaisheshika postulated that what one experiences is derived from dravya (substance: a function of atoms, their number and their spatial arrangements), guna (quality), karma (activity), samanya (commonness), vishesha (particularity) and samavaya (inherence, inseparable connectedness of everything)."

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vaisheshika

সুতরাং হয়ত অবাক হচ্ছেন আজকের এডভ্যান্স অনু-পরমানুবিদ্যা ৩১০০BCE তে লেখা(ভগবত পুরান) পূর্বাঞ্চলীয় প্যাগানধর্মীয় গ্রন্থ ও দর্শনশাস্ত্রে দেখে। এ কথাও স্পষ্ট হচ্ছে সর্বেশ্বরবাদী ভারতীয় কথিত ধর্ম গুলো যেসব দেব-দেবতার পূজা করে সেসব মূলত প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লকেরই পার্সোনিফিকেশন। এজন্য ভগবত পুরানে উপরে বর্নিত বিষ্ণু সর্বত্র বিরাজমান, অনুপ্রভাস্থিতিকে(প্রি এটোমিক স্টেজ)শিব,পরমআত্মা লক্ষ্মী। সুতরাং এটা শক্তিশালী মনিস্টিক ফিলোসফি। মূর্খ হিন্দুরা প্রকৃতির নিগূঢ় অবস্থাকেই দেব দেবীদের বিচিত্র আকার বানিয়ে পূজা করছে। আর জ্ঞানীর মত বৌদ্ধরা কস্মিক ধর্মের স্বাদ আস্বাদন করছে যোগসাধনায় সিদ্ধির দ্বারা। এদের কেউ স্বামী বিবেকান্দ হয়, কেউ হয় যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তি কেউবা হয় রজনীশ। ওরা Oneness এর সাথে একাকার হবার জন্য সাধনা করে যায়! এজন্য ওরা আগেই জানে যে এই পৃথিবীর বস্তুর সলিডনেস শুধুই মরীচিকা।

 পরমানুই রিয়েলিটিতে কঠিন অথবা সুক্ষ্ম বস্তুর ইল্যুশন তৈরি করে। এই পূর্বদিকের গুপ্তজ্ঞানের উপর দাঁড়িয়ে শিক্ষিত যাদুকর-অকাল্টিস্টরা বলে রিয়েলিটি হচ্ছে মায়া বা ইল্যুশন,কনসাসনেসের কথা বলে, ফ্রিকোয়েন্সি, ভাইব্রেশন ও এনার্জির কথা বলে,বলে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা, বলে -কি করে ব্যক্তি নিজেই রিয়েলিটি ম্যানিপুলেট করতে পারে তার ইচ্ছা ও কল্পনা এবং চিন্তার দ্বারা(ল অব এট্রাকশন),বলে পর্যবেক্ষকের উপরই রিয়েলিটি(পরিবর্তন) নির্ভর করে।। আমরা দেখছি, পারমানবিক বিদ্যার প্রথম শেকড় পাওয়া যায় এই ইস্টার্ন অকাল্ট মিস্টিসিজমে।বস্তুত, এই বিদ্যা এক মহা-অন্ধকার পথের, যাকে আজ মানুষ মূর্খতা অথবা কুফরির দরুন মহাআলোর(জ্ঞান-বিজ্ঞানের) পথ মনে করে। সুপ্রাচীন কুফরি যাদুবিদ্যার জ্ঞান ভান্ডারে বর্নিত প্রকৃতির সৃষ্টি রহস্যের বর্ননাই আজকের প্রতিষ্ঠিত স্বতঃসিদ্ধ ফিজিক্স!!

কখনো কি ভেবেছেন, কেন পার্টিকেল ফিজিক্স রিসার্চ ল্যাব - CERN এর সামনেই শিবমূর্তি(উপরের ছবিতে)বসানো?!
[সার্নের ব্যপারে যারা মোটেই জানেন না তাদেরকে বলি, সার্ন হচ্ছে ইউরোপীয় পরমানু গবেষনা ল্যাবরেটরি। এটাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পার্টিকেল ফিজিক্সের গবেষনা ল্যাব। ২২ টি দেশ সংযুক্ত এবং মজার বিষয় হচ্ছে ইজরাইল অ-ইউরোপিয়ান দেশ হলেও পূর্ন মেম্বারশিপ পায়। জাতিসংঘও এর সাথে যুক্ত আছে। (তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া)
বিস্তারিতঃ https://en.m.wikipedia.org/wiki/CERN ]

এজন্যই দার্শনিক, লেখক ও ইতিহাসবেত্তা ভলটেয়ার ইস্টার্ন অকাল্টিজমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কিতাব 'বেদের' ব্যপারে বলেন,"The Veda was the most precious gift for which the West had ever been indebted to the East."(Wikipedia)

এখানেই শেষ নয়, বেদ-উপনিষদের স্তুতিগান আমরা সামনের আলোচনায় আরো বড় বড় মুখ থেকে দেখতে পাবো ।
....................................................[চলবে ইনশাআল্লাহ ]

Thursday, April 26, 2018

২.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

[পর্বঃ২]

 

শয়তানের চার প্রতিশ্রুতি






আমাদেরকে ফিরতে হবে সমগ্র ইতিহাসের একদম শেকড়ে, যাতে করে সবকিছুর শুরু ও কারন ভালভাবে উপলব্ধি করা যায়। আপনারা জানেন ইবলিস[পূর্বনাম আযাযিল] ছিল জ্বীন সম্প্রদায়ের একজন, যাকে ফেরেশতাদের অনুরূপ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল। যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা পিতা আদম আলাইহিসালামকে কাদামাটি দ্বারা তৈরি করলেন তখন ইবলিসের অন্তরে অহংকার তৈরি হলো। ইবলিস আগুনের তৈরি আর আদম মাটির তৈরি, একে এত মর্যাদাদানের বিষয়টি সে পছন্দ করলো না। এজন্য আল্লাহ তার অন্তরের ব্যাধিকে প্রকাশ করার জন্য পরীক্ষায় ফেললেন। নির্দেশ দেয়া হলো সবাই যেন আদমকে সিজদাহ করে। আগুনের তৈরি ইবলিস ব্যতিত সকল নূরের তৈরি মালাইকারা সিজদাহ করলো। ফলে ইবলিসের অহংকার প্রকাশিত ও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করবার জন্য অভিশপ্ত ও বিতাড়িত হলো।ইবলিস বিতাড়িত হবার সময় আদম সন্তানদেরকে বিভিন্নভাবে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টার কথা বলে যায়। আল্লাহ বলেন:
"আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব।অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফঁুক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেয়ো।  তখন ফেরেশতারা সবাই মিলে সেজদা করল।কিন্তু ইবলীস-সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হল না।আল্লাহ বললেনঃ হে ইবলিস, তোমার কি হলো যে তুমি সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হলে না? বললঃ আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বললেনঃ তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। তুমি বিতাড়িত। এবং তোমার প্রতি ন্যায় বিচারের দিন পর্যন্ত অভিসম্পাত। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।আল্লাহ বললেনঃ তোমাকে অবকাশ দেয়া হল।সেই অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।সে বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব।"[সূরাঃ হিজর ২৮-৩৯]
শয়তান পথভ্রষ্ট করার চেষ্টার শুরুটা করে আদম ও  হাওয়া [আঃ] কে দিয়ে। সে চারটি জিনিস অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেয়ঃ
১.অনন্ত জীবনপ্রদায়ী বৃক্ষ/সাজারাতুল খুলদ[Tree of life]
২.অমরত্বের[immortality]
৩.অবিনশ্বর স্বর্গরাজ্যের[Eternal utopian kingdom]
৪.ফেরেশতাদের অনুরূপ নূরের শরীরে[light beings]রূপান্তর[Angelic ascension]

আল্লাহ বলেন,
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَىٰ شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَىٰ
 অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?
(সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ১২০)


 وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَٰذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ
 সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী।
(সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ২০)


অর্থাৎ শয়তানের আদি প্রতিশ্রুতি হচ্ছে সাজারাতুল খুলদের অর্থাৎ Tree of life এর, অমরত্বের, অসীমতার, অবিনশ্বর স্বর্গরাজ্যের, কাদামাটির দেহের কাঠামো থেকে আলোকোজ্জ্বল দ্যুতিময় উন্নততর শরীরে রূপান্তর বা উন্নীতকরন। শয়তান আল্লাহর বলে দেয়া নিষিদ্ধ বৃক্ষকে অনন্তজীবনপ্রদায়ী বৃক্ষ[tree of life] বলে উপস্থাপন করে। এই বৃক্ষ অমরত্বের সন্ধান দেবে বলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। আদম ও হাওয়া [আঃ] এই মিথ্যা ফাঁদে পা দিয়ে জান্নাত থেকে অপসারিত হন। আল্লাহ বলেনঃ
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَىٰ
বাংলা অনুবাদঃ তিনি বললেনঃ তোমরা উভয়েই এখান থেকে এক সঙ্গে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।
(সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ১২৩)


এরপরে শয়তান আদমের[আঃ] পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে কিছু ভাল লোকেদের মূর্তি/ভাস্কর্য স্মৃতি হিসেবে রাখতে উৎসাহিত করে,পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এসব মূর্তিদেরকে পূজা[ancestry worship] করতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ বলেন,"তারা বলছেঃ তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নসরকে।"
(সূরাঃ নূহ, আয়াতঃ ২৩)



ফলে নূহের [আঃ] কওম এর উপর শাস্তি স্বরূপ মহাপ্লাবন হয়। পৃথিবীতে এরপরে সবকিছু নতুন করে শুরু হয়। নূহের[আঃ] পুত্র এবং তাদের সন্তানরা বাস করতে শুরু করে ব্যবিলনে। এ পর্যন্ত যা উল্লেখ করেছি তার বিশদ দলিলভিত্তিক আলোচনা কিতাবাদিতে আছে। এবং এর প্রায় অধিকাংশই মানুষের জানা, এজন্য এসবের বিস্তর দলিল সমূহ টেনে দীর্ঘ আলোচনাকে নিষ্প্রয়োজন মনে করি। বাবেলে নূহের পুত্র ও পুত্রসন্তানদের বসতি স্থাপন ও এর পরবর্তী ঘটনার ব্যপারে ধর্মনিরপেক্ষ তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে আলোচনা করব যা শয়তানের সেই আদি প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তির শুরুকে স্পষ্ট করবে। পরবর্তী পর্বগুলোয় বিভিন্ন বিষয়ে বার বার ব্যবিলনীয়ান অরিজিনকে খুঁজে পাবেন। এজন্য আজ সবকিছুর শুরুকে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

মহাপ্লাবনের পর বাবেলে বসবাসরত নূহ[আঃ] এর তিন সন্তানের মাধ্যমে মানবজাতির বংশ বিস্তার ঘটে, যাদের মধ্যে শামের বংশ থেকে অধিকাংশ নবী রাসূল এসেছেন। ইয়াফিসের থেকে আসা বংশধর হলো ইয়াজুজ-মাজুজ। হামের এক সন্তানের নাম কুশ, কুশের থেকেই যাবতীয় শিরক-কুফরের জন্ম হয়। অনেক বর্ননায় হামের পুত্র কেনান এবং কেনানের পুত্র কুশ বলা হয়েছে। অর্থাৎ কুশ হামের ইমিডিয়েট সন্তান না হয়ে নাতিও হতে পারে[আল্লাহ ভাল জানেন]। নন রিলিজিয়াস ডকুমেন্টস অনুযায়ী কুশ আল্লাহর অবাধ্য ছিল। তার স্ত্রীর দাবি ছিল সে জন্ম নেয় অলৌকিকভাবে, সে নিজেকে চন্দ্রদেবী দাবি করত।  কুশ স্বপ্ন দেখতো সারাপৃথিবীর একছত্র আধিপত্যের। আসমানবাসীদেরকে দেখে নিতে সে উচু টাওয়ারের স্বপ্ন দেখত,তারা চিন্তা করত আরেকটা মহাপ্লাবন হলে এতে বাস করতে পারবে। তার ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডারে ভাষা, ধর্ম থাকবে কেবল একটি। এই ওয়ান ওয়ার্ল্ড গভার্নমেন্ট এর রাজধানী বাবেল শহর। বাবেলের টাওয়ার নির্মাণ কাজ শুরু করলে আল্লাহ ওদের একক ভাষার মধ্যে পরিবর্তন এনে দেন,সবাই এক ভাষায় কথা বলতে পারছিল না, ফলে কেউই কারও কথা বুঝতেছিল না। ফলশ্রুতিতে সবাই আলাদা হয়ে যেতে থাকে। 

এরপর কুশের সন্তান নমরুদ ক্ষমতায় আসেন। নমরুদ ছিলেন শারীরিক ভাবে বলিষ্ঠ শক্তিধর শিকারী। অল্প সময়ের মধ্যে জন্তুজানোয়ার ও মানুষের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। নমরুদ তার পিতার স্বপ্ন সত্যি করেন বিশ্বের প্রথম ওয়ান ওয়ার্ল্ড গভার্নমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তিনি হন গোটা পৃথিবীর সিংহাসনের বাদশাহ। আনপ্যারালাল্ড সুপ্রীম মোনার্কি। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা গোটা পৃথিবীর সিংহাসনে ৪ জনকে বসবার সুযোগ দেন। চারজনের দুজন কাফির, দুজন মুসলিম। কাফির দুজনের প্রথমজন বাবেল সম্রাট নমরুদ, দ্বিতীয় জন বাবেল সম্রাট নেবুচাদনেজার[বুখত নসর]। বাকি দুইবার ওয়ান ওয়ার্ল্ড গভার্নমেন্ট গড়েন রাজা সুলাইমান[আঃ] এবং যুলকারনাঈন[আঃ]।  বলা যায় কুফর ও তাওহীদ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দুই দুই গোলে ড্র অবস্থায় আছে, আরেকবার যেই দেবে তারাই বিজয়ী। আর আমরা খুব ভাল করেই জানি ফাইনাল ওয়েভে ঈসা রুহুল্লাহ গোটা পৃথিবীতে তাওহীদের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন।তাওহীদ ও ইত্তেহাদের চূড়ান্ত যুদ্ধে ইহুদীদের মিথ্যা মসীহ[দাজ্জাল] শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবে। 

অতীতে ফেরা যাক, নমরুদের সাথে বিরোধীদল শামের গোত্রের সাথে প্রায়ই সংঘাত লেগে থাকত। নমরুদ নিজের  ক্ষমতা প্রতিপত্তি দেখিয়ে নিজেকে উপাস্য দাবি করতো। সে নরবলি দিতো। সবাই তার ধর্মের অনুসরন করত। শয়তান তাদেরকে এ বিশ্বাসে আকৃষ্ট করে যে, মানুষের মৃত্যুর পর আত্মা নক্ষত্রে গিয়ে থাকে। নমরুদ কুশের স্বপ্ন পূরণ করেন বাবেল টাওয়ার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এদিকে কুশের স্ত্রী সেমেরামিস ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজের পুত্র নমরুদকেই বিবাহ করে! নমরুদের শোচনীয় মৃত্যুর পর শামের বংশধররা বলতে থাকে নমরুদ কোনভাবেই উপাস্য নয়। জনগণও সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করে। কিন্তু এদিকে শয়তানের অনুগত সহচর সেমেরামিস একটা বুদ্ধি বের করলো। সে নমরুদের মৃত্যুর পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে প্রচার করে, নমরুদ মৃত্যুর পর সূর্যদেব হয়ে আকাশে আরোহন করেন। নমরুদের আত্মা তাকে অন্তঃসত্ত্বা করে ফেলে পুনর্জন্মলাভের জন্য। সেমেরামিসের সন্তানঃ তামুজ জন্মলাভের কিছুদিন পরই বন্য শূকরের
আক্রমণে মারা যায়। ফলে সেমেরামিস বলা শুরু করে সূর্যদেব নমরুদের আত্মার পুনর্জন্মলাভের পর সেটা আবারো উৎসে ফিরে গেছে। এখানে নমরুদ হয়ে যায় সূর্যদেব, সেমেরামিস হয় চন্দ্রদেব এবং সন্তান তামুজ হয় son of god! সেমেরামিস নমরুদ ও তার সন্তানের মৃত্যুর পরেও তাদের অনুসারীদের নিয়ে পূজা, শয়তানের চ্যানেলিং, যাদু এবং যাবতীয় উৎসর্গ অব্যহত রাখে। নমরুদ ও তার পুত্র এবং সূর্যনক্ষত্রকে ঘিরে তারা তাদের প্যাগান ফিলোসফিকে [শয়তানের সাহায্য নিয়ে]আরো ভালভাবে নির্মাণ করে। কিন্তু শামের তোপের মুখে তারা দুর্বল হয়ে তাদের কাল্ট লুকিয়ে পালন শুরু করে। সেই থেকে তাদের চর্চাগুলো হয়ে যায় অকাল্ট[গুপ্ত/লুক্কায়িত বিদ্যা/চর্চা]। সেখান থেকে শুরু হয় সিক্রেট সোসাইটির। সেই সাথে সারাপৃথিবী একক শাসনের নিচে থাকার জন্য সহজেই বিভিন্ন দেশ মহাদেশে তাদের গুপ্তচর্চা ছড়িয়ে পড়ে। দেশ ও ভাষাভেদে বিভিন্ন শব্দে এই তিন দেবদেবীর বন্দনা করা হয়- সূর্যদেব-চন্দ্রদেব-সূর্যদেবের পুনর্জন্মপ্রাপ্ত পুত্র। মিশরে সূর্যদেব রা,চন্দ্রদেব আইসিস, পুত্র হোরাস। গ্রীসে সূর্যদেব জিউস, চন্দ্রদেবী আর্টেমিস এবং পুত্র এ্যাডোনিস। রোমে জুপিটার-ডিয়ানা-এ্যাপোলো। রোমান ক্যাথলিকদের ঈসা(আ) কে সন অব গড বানানোর চিন্তা এখান থেকেই এসেছে , নর্ডিক কাল্টে ওডিন-জর্ড-থর, হিন্দুদের মধ্যে বিষ্ণু-চন্দ্রা-কৃষ্ণ[বিষ্ণু অবতার]। সুতরাং বৈদিক ট্রেডিশন সহ আজকের যুগের সমস্ত অকাল্ট ট্রেডিশনের আদি উৎস গিয়ে মেলে বাবেল শহরে। বেদান্ত শাস্ত্র যেহেতু আর্যদের হাত ধরে ভারতের বাহির থেকে আসে, সুতরাং  জন্ম-পুনর্জন্ম চক্রের আদি বিশ্বাসের শেকড় সেমেরামিসদের থেকে অর্থাৎ বাবেল শহরে গিয়ে মেলে। আপনি যদি এ্যাসিরিয়ান সম্রাটদের নাম গুলোকে লক্ষ্য করেন, তাহলে সে সব শব্দের সাথে হিন্দুয়ানী সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। এজন্যই গৌতম বুদ্ধ নিজেও বাবেলে গিয়েছিলেন জ্ঞানের অন্বেষণে। নমরুদের মৃত্যুর বহু শতাব্দী পরেও বাবেল শহর জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা সংস্কৃতের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ছিল[২১]। 

শয়তান মূলত পিতা আদম[আঃ] কে দেয়া সেই প্রাচীন প্রতিশ্রুতিই সেমেরামিসদের থেকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। শয়তান শেখাচ্ছে জন্ম-পুনর্জন্মের ইটারনাল সাকসেসিভ সাইকেলকে যেখানে শেষ বলে কিছু নেই, সবাই অমর। প্রত্যেক জন্ম-পুনর্জন্ম চক্রে আগের জীবন অবস্থা থেকে উন্নততর হবার প্রতিশ্রুতিও দেয়, যেটা বিংশ শতাব্দীর সকল আধ্যাত্মবাদী সংগঠনগুলো প্রচার করে। এরা প্রচার করে মানুষ অবশেষে অতিমানবে রূপান্তর হবে। পরিনত হবে এ্যাঞ্জেলিক বিং এ। এটা সেই শয়তানের আদি প্রতিশ্রুতির রিপ্যাকেজড ভার্সন। এসবের পার্থিব গোড়া খুঁজলে ফিরে যেতে হবে কুশ-নমরুদদের কাছে।

ইমাম আবু জাফর মুহম্মদ ইবনে জারির তাবারি রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন, মুজাহিদ [রহঃ] বলেন,"নমরূদ ছিল Kan'aan এর পুত্র"। কাতাদাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন,"তার নাম ছিল নমরূদ, সে ছিল বাবেল টাওয়ারের নির্মাতা এবং যমীনের উপর প্রথম অত্যাচারী বাদশাহ এবং তিনি ইব্রাহীম [আ] এর সাথে আল্লাহর ব্যপারে বাকবিতণ্ডা করে।" আর রাবি (রহঃ), ইবনে জুরাইজও (রহ:) একই কথা বলেন। নমরূদের ব্যপারে আল্লাহ বলেন,"তুমি কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল ইব্রাহীমের সাথে এ কারণে যে, আল্লাহ সে ব্যাক্তিকে রাজ্য দান করেছিলেন? ইব্রাহীম যখন বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সুর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে কাফের হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ সীমালংঘণকারী সম্প্রদায়কে সরল পথ প্রদর্শন করেন না।"
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২৫৮)

মাসি বিন হিরান - 'আমর বিন হাম্মিদ আসবাত-আল-সুদ্দী-আবা সালিহ এবং আবু মালিক-ইবনে 'আব্বাস এবং মুররাহ আল-হামদানি-ইবনে মাসুদ এবং আরো কিছু সাহাবীদের[রাঃ] মতে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত গোটা পৃথিবীকে শাসনকারী প্রথম রাজা হলেন নমরুদ বিন কেনান বিন কুশ বিন শাম বিন নূহ।  এরকম মোট চার বাদশাহ, যারা সারাবিশ্ব শাসন করেছেন তারা হলেনঃ নমরুদ, সোলাইমান বিন দাউদ, যুলকারনাঈন এবং নেবুচাদনেজার - দুজন মু'মিন দুজন কাফির।
 [ইবনে জারির তাবারির ইতিহাস]

Ibn Taymiyyah, Majmoo' al-Fataawaa (35/195) তে বলেন:"For Nimrod bin Kan'aan was the king of those (star and planet worshippers), and the
Scholars of the Sabeans were the astrologers and their likes. And have idols been worshipped overwhelmingly except on account of the viewpoint (teaching) of this vile faction who consume the wealth of people in falsehood and hinder (others) from the pathof Allaah."



নমরুদের জীবদ্দশায় থাকা নবী ইব্রাহীম [আঃ] এর পুত্র ইসহাক[আঃ] এবং তার পুত্র ইয়াকুবের ১২ সন্তানের একজন ইউসুফ [আঃ]।তার ঈর্ষান্বিত ১১ ভাই ইউসুফ আলাইহিসালামকে ফেলে এসে বাঘ নিয়ে গেছে বলে মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে পিতাকে জানায়। তারা ইউসুফকে কূপের মধ্যে ফেলে এসে ইয়াকুব[আঃ] এর সামনে এসে মায়াকান্না করে। পরবর্তীতে ইউসুফকে[আঃ] একটি কাফেলা পানি তুলতে গিয়ে কূপের মধ্যে থেকে পেয়ে মিসর নিয়ে যায়। কয়েক দিনারে দাস হিসেবে বেচে দেয়। আল্লাহ বলেন,"যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি।তিনি বললেনঃ বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য।এমনিভাবে তোমার পালনকর্তা তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে বাণীসমূহের নিগুঢ় তত্ত্ব শিক্ষা দেবেন এবং পূর্ণ করবেন স্বীয় অনুগ্রহ তোমার প্রতি ও ইয়াকুব পরিবার-পরিজনের প্রতি; যেমন ইতিপূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছেন। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা অত্যন্ত জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। অবশ্য ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসুদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। যখন তারা বললঃ অবশ্যই ইউসুফ ও তাঁর ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চাইতে অধিক প্রিয় অথচ আমরা একটা সংহত শক্তি বিশেষ। নিশ্চয় আমাদের পিতা স্পষ্ট ভ্রান্তিতে রয়েছেন। হত্যা কর ইউসুফকে কিংবা ফেলে আস তাকে অন্য কোন স্থানে। এতে শুধু তোমাদের প্রতিই তোমাদের পিতার মনোযোগ নিবিষ্ট হবে এবং এরপর তোমরা যোগ্য বিবেচিত হয়ে থাকবে। তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, তোমরা ইউসুফ কে হত্যা করো না, বরং ফেলে দাও তাকে অন্ধকূপে যাতে কোন পথিক তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, যদি তোমাদের কিছু করতেই হয়। তারা বললঃ পিতাঃ ব্যাপার কি, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদেরকে বিশ্বাস করেন না ? আমরা তো তার হিতাকাংখী।আগামীকাল তাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুন-তৃপ্তিসহ খাবে এবং খেলাধুলা করবে এবং আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষন করব। তিনি বললেনঃ আমার দুশ্চিন্তা হয় যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি আশঙ্কা করি যে, ব্যাঘ্র তাঁকে খেয়ে ফেলবে এবং তোমরা তার দিক থেকে গাফেল থাকবে। তারা বললঃ আমরা একটি ভারী দল থাকা সত্ত্বেও যদি ব্যাঘ্র তাকে খেয়ে ফেলে, তবে আমরা সবই হারালাম। অতঃপর তারা যখন তাকে নিয়ে চলল এবং অন্ধকূপে নিক্ষেপ করতে একমত হল এবং আমি তাকে ইঙ্গিত করলাম যে, তুমি তাদেরকে তাদের এ কাজের কথা বলবে এমতাবস্থায় যে, তারা তোমাকে চিনবে না। তারা রাতের বেলায় কাঁদতে কাঁদতে পিতার কাছে এল। তারা বললঃ পিতাঃ আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আসবাব-পত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী। এবং তারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে আনল। বললেনঃ এটা কখনই নয়; বরং তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা কথা সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল। এবং একটি কাফেলা এল। অতঃপর তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে বালতি ফেলল। বললঃ কি আনন্দের কথা। এ তো একটি কিশোর তারা তাকে পন্যদ্রব্য গণ্য করে গোপন করে ফেলল। আল্লাহ খুব জানেন যা কিছু তারা করেছিল। ওরা তাকে কম মূল্যে বিক্রি করে দিল গনাগুণতি কয়েক দেরহাম এবং তাঁর ব্যাপারে নিরাসক্ত ছিল। মিসরে যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করল, সে তার স্ত্রীকে বললঃ একে সম্মানে রাখ। সম্ভবতঃ সে আমাদের কাছে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করে নেব। এমনিভাবে আমি ইউসুফকে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং এ জন্যে যে তাকে বাক্যাদির পূর্ণ মর্ম অনুধাবনের পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষা দেই। আল্লাহ নিজ কাজে প্রবল থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌছে গেল, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম। এমননিভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দেই।" 
[সূরা ইউসুফ]

যৌবনে উপনীত হলে তাকে চারিত্রিক অপবাদ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তার স্বপ্ন ব্যাখ্যা করবার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দেখে মিসরের বাদশাহ তার খুব কাছের পদে নিয়োগ করে। পরবর্তীতে তিনি মিসরে কর্তৃত্ব লাভ করেন।তখন তাকে ছেলেবেলায় কূপের মধ্যে ফেলে আসা ষড়যন্ত্রকারী ভাইয়েরা মিশরে আসে খাদ্য শষ্য আহরণের উদ্দেশ্যে। ইউসুফ[আ] তাদের খুব সহজেই চিনে ফেলেন। তিনি প্রথমেই পরিচয় দেন না। আগে কৌশলে চুরির ঘটনা সাজিয়ে নিজ সহোদরকে কাছে নেন, এরপরে বাকি ভাইয়েদেরকে পরিচয় দেন। তারা এতে ভীষণভাবে লজ্জিত হয়। ইউসুফ তাদেরকে না তাড়িয়ে ক্ষমা করে দেন। ইউসুফ[আঃ] তার বৃদ্ধ পিতা মাতাকে[সূর্য চন্দ্র] মিসরে নিয়ে আসেন, সিংহাসনে বসান। তখন বাকি ভাইয়েরা সম্মানে[১১টি নক্ষত্র] সিজদাবনত হয়। মিশরে ইয়াকুব[আঃ] ১২ পুত্র মহাপ্রতাপের সাথে বাস করতে থাকে। সেখানে বংশবিস্তার হতে থাকে। এরাই চিল্ড্রেন অব ইসরাইল[ইয়াকুব]।আল ইয়াহুদা। ইউসুফ আঃ এর মৃত্যুর শত বছর পরেও প্রতাপ ছিল। কিন্তু তখন স্থানীয় জনগন আর ইহুদী অভিবাসী দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আগে ইউসুফের জন্য কিছু বলা যায় নি, এরপরে স্থানীয় মিসরীয় রাজা ফেরাউন ক্ষমতায় আসে তখন তারা ইহুদীদের দমন করার কথা ভাবে , নাহলে হয়ত আবারো রাজ্য যাবে।ইহুদীদেরকে তারা সরাসরি আক্রমণও কর‍তে যেত না, কারন ইয়াকুবের ১২ সন্তানের বংশটা বেশ ভারী। প্রায় ৪০০ বছরের মত মাথা  নত করে সেখানে থাকতে হয় ইহুদিদের। এরপরে ইহুদীদের ভাগ্য বদলাতে আল্লাহ এক পরিবারে মূসা আলাইহিসালাম কে পাঠান। এরপরের ইতিহাস আপনারা জানেন। মূসা[আ] ইহুদীদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পিছনে ফেরাউন তার বাহিনী নিয়ে ধাওয়া করে।আল্লাহ সমুদ্রের মধ্যে পথ করে দিয়ে ইহুদীদের রক্ষা করেন। ফেরাউনরা ধ্বংস হয়। আমি যথাসম্ভব সংক্ষেপে লিখছি। ইহুদীদের নিয়ে আল্লাহ পবিত্রভূমি জেরুজালেমে প্রবেশ করতে বলেন। সেখানে থাকত দৈত্যাকার আমালিকা জাতি। ইহুদিদেরকে জিহাদের নির্দেশ দেয়া হলে তারা বেয়াদবের মত মূসা[আঃ] ও আল্লাহকে জিহাদ করতে বলে এবং ছাগলের মত খামি দিয়ে বসে। আল্লাহ বলেন," তারা বললঃ হে মূসা, আমরা জীবনেও কখনো সেখানে যাব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে। অতএব, আপনি ও আপনার পালনকর্তাই যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করে নিন। আমরা তো এখানেই বসলাম।
[সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ২৪]

আল্লাহ তাদের প্রতি সব সময়ই করুণা করে গিয়েছেন। The Golden Calf এর ঘটনা আপনারা জানেন, যখন মূসার[আঃ] অনুপস্থিতিতে তারা গোবৎস বানিয়ে পূজা দেয়া শুরু করে। এরপরেও ক্ষমা করেন। এতসব অবাধ্যতার পরেও আল্লাহ তাদেরকে বিনা পরিশ্রমে খাবারের[আল মান্না ওয়াস সালওয়া] ব্যবস্থা করেছিলেন। ইহুদীরা অবশেষে পবিত্রভূমিতে ঢুকতে পারে। সেখানে তারা প্রতিষ্ঠিত হয়। আমালিকা দৈত্যাকার জাতি তাদের শত্রুতে পরিণত হয়। ইহুদীদের শিরক বিদআতের কারনে বার বার নবী প্রেরিত হতে থাকে। আমালিকা গোষ্ঠীর নেতা জালূতের অত্যাচার বারতে থাকে। এতে ইহুদীরা প্রতিহত করতে নবী শামুয়েল[স্যামুয়েল] এর কাছে বাদশাহ নির্ধারনের আবদার করে, যাতে করে জিহাদ করতে পারে। আল্লাহ বলেন,"মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইর হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না। অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে। অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তা’আলা জালেমদের ভাল করেই জানেন।"
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২৪৬)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা দরিদ্র তালূত[আঃ] কে মনোনীত করলেন। এরপরে ঐতিহাসিক তালূত ও জালূতের যুদ্ধ মাঠে গড়ালো। যুদ্ধে কিশোর দাউদ[আঃ] জালূতকে হত্যা করে ফেলে। দাউদ[আ] চরম সুখ্যাতি অর্জন করেন এবং অবশেষে রাজা মনোনীত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৯৭০ সালে দাউদের[আঃ] এর পুত্র সুলাইমান[আঃ] স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি চারজন বাদশাহর একজন যিনি সারাবিশ্বব্যাপী রাজত্ব করলেন। আল্লাহ তার অধীনে করে দিয়েছিলেন বাতাসকে, সমস্ত প্রানীর ভাষা বুঝতেন। শয়তান জ্বীনরা তার বশীভূত হয়। এ নিয়ে তাফসীরের কিতাবগুলোয় সুদীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। সুলাইমান[আঃ] সমস্ত শয়তান জ্বীনদের আবৃত্ত কুফরি কথা এবং যাদুবিদ্যাকে একত্রিত করে তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখেন যাতে সেসব কেউ না চর্চা করতে পারে। শয়তান জ্বীনরাও সেসব উদ্ধার করতে পারত না। তাই শয়তান সুলাইমানের মৃত্যুর পর ইহুদীদেরকে প্ররোচিত করতে থাকে নিষিদ্ধ গুপ্তজ্ঞান উদ্ধারের জন্য। ইহুদীরা সিংহাসন তলদেশ খুঁড়ে যাদুশাস্ত্রীয় জ্ঞান উদ্ধার করে বলতে শুরু করে, এই যাদুর বলেই সুলাইমান[আঃ] সব কাজ করত। এভাবে তারা যাদুচর্চাকে হালাল করে নিলো। কেউ কেউ এ নবীকে যাদুকর অপবাদ দিলো। তাদের অল্প সংখ্যকই এসব কাজের বিরোধীতা করত। এদিকে বাবেল শহরে হারুত ও মারুত নামের দুই ফেরেশতাকে পরীক্ষা হিসেবে যাদুবিদ্যা দিয়ে পাঠানো হলো,তারা যাদু শিক্ষা দেয়ার আগে সতর্ক করত যে এটা কুফরি কাজ। এরপরেও জেনেবুঝে মানুষ কুফর করত। আল্লাহ বলেন,
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ ۚ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

 তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১০২)
 






আবারো ইতিহাসে ফেরা যাক, পবিত্রভূমিতে প্রতিষ্ঠিত ইহুদীরা তাদের অপকর্ম দুর্নীতি চালিয়ে যেতে লাগলো। সেই সাথে হাজার হাজার নবী পাঠানো অব্যাহত থাকলো। এরা নবীদেরকে দিনে দুপুরে হত্যা করে ফেলতো। নবীদের হত্যা করা ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা নবী হযরত ইরমিয়া(জেরেমায়াহ) [আঃ] এর মাধ্যমে ইহুদিদের কঠোরভাবে সতর্ক করলেন। তাদের উপর আযাবের সংবাদ দিলেন। তারা পাত্তাই দিচ্ছিলো না।



 [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ইমাম ইবনু কাসির আদ্ব দামেশকী রহিমাহুল্লাহ্]




এভাবেই আল্লাহ ইয়াফিসের সন্তানদেরকে পাঠালেন শামের সন্তানদেরকে শাস্তিদানের জন্য। এটা ছিল প্রতাপশালী বাবেল সম্রাট ২য় নেবুচাদনেজার[বুখত নাসর]। নেবুচাদনেজার বাহিনী ইহুদীদের উপর গনহত্যা চালায়। মসজিদের ভেতর শুকর জবাই করে। সবকিছু একদম ধ্বংস করে দিয়ে যায়। টোটালেটারিয়ান বাদশাহ  নেবুচাদনেজার অল্প কিছু বছরে সারাবিশ্বের উপর কর্তৃত্ব লাভ করেন। নমরুদের পর তিনিই কাফিরদের মধ্যে ২য় এবং শেষ ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার বাস্তবায়নকারী বাদশাহ। তিনি সমস্ত ইহুদিদেরকে বন্দী করে বাবেল শহরের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যান। বন্দীদের মধ্যে ছিল হযরত দানিয়েলের(ড্যানিয়েল) [আঃ] এর মত অনেক নবী। হযরত হিজকিল[ইজিকিয়েল] [আঃ] জেরুজালেমকে পুরো ধ্বংসস্তুপ হিসেবে দেখে আফসোস করেন এই চিন্তা করে এমন ধ্বংস স্তূপ আর কখনো আবাদ হবে কিনা! আল্লাহ বলেনঃ"তুমি কি সে লোককে দেখনি যে এমন এক জনপদ দিয়ে যাচ্ছিল যার বাড়ীঘরগুলো ভেঙ্গে ছাদের উপর পড়ে ছিল? বলল, কেমন করে আল্লাহ মরনের পর একে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত অবস্থায় রাখলেন একশ বছর। তারপর তাকে উঠালেন। বললেন, কত কাল এভাবে ছিলে? বলল আমি ছিলাম, একদিন কংবা একদিনের কিছু কম সময়। বললেন, তা নয়; বরং তুমি তো একশ বছর ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার ও পানীয়ের দিকে-সেগুলো পচে যায় নি এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ যে, আমি এগুলোকে কেমন করে জুড়ে দেই এবং সেগুলোর উপর মাংসের আবরণ পরিয়ে দেই। অতঃপর যখন তার উপর এ অবস্থা প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল-আমি জানি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।"
[সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২৫৯]

ইহুদীরা এভাবেই বাবেল শহরে শতবছর যাবৎ দাসত্ব বরণ করে। তারা একদিকে আল্লাহর বানীতে বিশ্বাসী ছিল না। এর উপর আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তিতে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়লো। তারা শক্তির জন্য অলটারনেটিভ কিছুকে
খুজছিল। বাবেলশহরে তারা পায় হারুত মারুত এবং নমরুদের উত্তরসূরি ক্যালডিয়ানদের এডভান্স এস্ট্রলজিক্যাল সায়েন্স এবং নমরুদের সময়কার সাবেঈন প্যাগানদের বিদ্যার অংশবিশেষ । সব মিলিয়ে র‍্যাবাঈগন কাব্বালাহ ডেভেলপ করেন। রচনা করে ফেলে ব্যবিলনীয়ান তালমূদ। তাওরাতকে ফেলে দিয়ে অনুসরন করা শুরু করে তালমূদ ও জোহারের মত যাদুশাস্ত্রীয় কিতাব। শয়তানের সাহচর্যে সুলাইমানের সময়কার শয়তানি শাস্ত্র এবং ব্যবিলনীয়ান ম্যাজাইদের জ্ঞানসমূহ সংকলন করে নিজেদেরকে অধিবিদ্যা সংক্রান্ত জ্ঞানের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ আসনে নিজেদেরকে নিয়ে যায়।তাদের দখলে আছে সাবএ্যাটোমিক তথা মাইক্রো রিয়ালিটি থেকে হাইপার ডাইমেনশনাল ম্যাক্রো রিয়ালিটির সমুদয় জ্ঞান। তারা এই শাস্ত্রকে ডাকে কাব্বালাহ[To receive] শব্দ দ্বারা। এর ওরাল ট্রেডিশন টাই আসল জ্ঞান, যেটা র‍্যাবাই থেকে র‍্যাবাই চলে আসছে। তাদের এসব শাস্ত্রে Cosmology - Cosmogony ও metaphysics এর ব্যপারে আছে সমস্ত আব্রাহামিক শিক্ষার বিপরীত শিক্ষা। অর্থাৎ চিন্তা- দর্শন- আকিদা/ বিশ্বাস সবকিছুর  বিকল্পধারার তাওহীদের বিপরীত শিক্ষা আছে। শয়তান অদৃশ্য-অদেখা জগতের বিষয়গুলোকে আল্লাহর সৃষ্টির ঠিক বিপরীতভাবে উপস্থাপন করেছে তার অনুসারীদের কাছে। পিথাগোরাস বাবেল শহরে গিয়েই হেলিওসেন্ট্রিক এ্যাস্ট্রনমির কথা বলেছেন। ইহুদীদের কাব্বালায় এ সম্পর্কে অনেক স্পষ্ট বর্ননা আছে, যা সামনের পর্বগুলোয় দেখবেন। আপনি যদি ইহুদী কাব্বালিস্টদের সবচেয়ে বড় র‍্যাবাঈয়ের কাছে গিয়েও কাব্বালাহর বিদ্যার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করেন, সে অকপটে উত্তরে বলবে ব্যবিলন। তালমূদ কিতাবটি বাবেলে রচিত হয় যা নিয়ে উইকিপিডিয়াতেও আলাদা আর্টিকেল পাবেন[২২]। ইহুদীরা  এই কুফরি বিদ্যার উপর ভিত্তি করেই আল্লাহর রাসূল[সাঃ] এর উপর যাদু করেছিল। Shaykh ul-Islam Ibn Taymiyyah বলেন,"The first of when this saying was manifested was from al-Ja'da bin Dirham, and al Jahm bin Safwan took it from him, and he proclaimed, and the saying of the Jahmiyyah was attributed to him [thereafter]. And it has been said that al-Ja'd took his saying from Abbaan bin Sam'aan, and Abbaan took it from Talut, the nephew of Labeed bin al-A'sam, and Talut took it from Labeed bin al-A'sam, the Jew sorcerer who put magic upon the Prophet (sallallaahu alayhi wasallam), and al-Ja'd bin Dirham - in what has been said -was from the land of Harraan, and there used to be amongst them a great portion of the Sabeans and Philosophers from the remmants of the religion of Nimrod, and the Kan'aanites, and some of the later ones authored [works] on the magic (sihr) of those people - and Nimrod is the King of the Chaldean Sabean Pagans."
 (al-Hamawiyyah p. 13, Dar ul-Kutub al-Ilmiyyah)



শয়তান আবারো ইহুদীদের কাছে সেই প্রাচীন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যেটা করেছিল আদম-হাওয়া[আঃ] এর সাথে। সে আবারো দেখিয়েছে সাজারাতুল খুলদকে[Tree of Life/Eternity]। তবে এখনকার এ্যাপ্রোচ
একটু ভিন্ন। শয়তান অমরত্ব অসীমতার সন্ধান দিচ্ছে যাদুশাস্ত্রের মধ্যে।  ট্রি অব লাইফ বা অনন্ত জীবন প্রদায়ী বৃক্ষের কন্সেপ্ট কাব্বালার খুবই বেসিক একটা জ্ঞান। কাব্বালিস্টরা এর দ্বারা অস্তিত্বের হায়ারার্কির একটা ডায়াগ্রাম এর শিক্ষা দেয় যার সাধনা অমরত্ব দান করবে, মানুষকে উচ্চমাত্রিক অতিমানবীয় ক্ষমতাসম্পন্ন আলোকময় শরীরের অতিমানবে[angelic being] রুপান্তরের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা রিয়ালিটির হাইপার স্পেসিয়াল মেকানিক্সের শিক্ষা দেয়, শিক্ষা দেয় এর সমস্ত নীতি সমূহের, যার উপর ভর করে বাস্তব জগত এবং সমগ্র অস্তিত্ব অপারেট করে, যার দ্বারা দেখায়  এ্যাডভান্স টেকনলজির রাস্তা, যার দ্বারা পৃথিবীকে চির প্রাচুর্যময় স্বর্গরাজ্যের[ইউটোপিয়া] প্রতিশ্রুতি দেয়।তারা আপনাকে অমরত্বের সম্ভাবনা হিসেবে দেখাবে পুনর্জন্মের বিশ্বাসকে। প্রতিটা বস্তু অন্তহীন ফিডব্যাক লুপের মধ্যে থেকে চিরন্তন পুনরাবৃত্তি চক্রের মধ্যে আটকে আছে। সবকিছুই সীমাহীন অনন্ত অসীম।জন্ম-পুনর্জন্মের অন্তহীন চক্র কেবল মানুষের জীবন নয়, এটা কস্মোলজিক্যাল স্কেলে মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও অনবরত অন্তহীনভাবে হচ্ছে। এসব নিয়ে সামনের পর্বগুলোয় বিশদ আলোচনা পাবেন। প্রকৃত যাদুকরদের আকিদাহ এটাই। পূর্বাঞ্চলীয় কিংবা পাশ্চাত্যের সমগ্র হিন্দুয়ানি স্পিরিচুয়াল সোসাইটি সমূহও সেই অভিন্ন সুপ্রাচীন  প্রতিশ্রুতি দেয়। এরা আরো শেখায় জন্ম-পুনর্জন্মের চক্রের প্রত্যেক successive cycle'এ সমস্ত কিছু ক্রমাগতভাবে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এটা মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো সকল স্কেলে হচ্ছে।  আধ্যাত্মবাদীরা 
আপনাকে এনলাইটমেন্টের[২৩]কথা বলবে।শয়তানের একান্ত অনুগত ভৃত্য হেলেনা পেত্রোভনা ব্লাভাস্তস্কির থিওসফিক্যাল সোসাইটি সরাসরি চার্ট একে বোঝায় কিভাবে মানুষ ক্রমাগত উন্নতির দিকে যেতে যেতে অবশেষে [ফেরেশতাদের অনুরূপ] এঞ্জেলিক বিং এ রূপান্তর হচ্ছে। অর্থাৎ এরা সকলেই শয়তানের প্রতিশ্রুতির অনুসারী। কাব্বালিস্টদের ইল্ম যখন রেনেসাঁর সময় পশ্চিমা বিশ্বে প্রবেশ করে তখন থেকে ক্রমাগত সবাই শয়তানের প্রতিশ্রুতি, শয়তানের আবৃত্ত শাস্ত্র সমূহকে জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎস করে নিল। এর উপরে গড়ে উঠেছে পদার্থবিজ্ঞান মহাকাশবিজ্ঞান। একথা আজ কাব্বালিস্টরাও বলে। আজকের এডভান্স ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি সমূহকে পদার্থবিজ্ঞানীগন স্পষ্টভাষায় বলেন, এসব কাব্বালিস্টিক কুফরি শাস্ত্রেরই প্রতিফলন। এসমস্ত বিষয় নিয়ে সামনের পর্বগুলোয় সুবিস্তর আলোচনা পাবেন ইনশাআল্লাহ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন সমস্ত শয়তানি কুফরি আকিদার ভিত্তিপ্রস্তর গিয়ে মেলে নমরুদের বাবেল শহরে। শয়তানের প্রতিশ্রুতি কে পূর্নতা দিতে আসছেন ইহুদীদের মসীহ। তাকে ঘিরেই মূলত সকল আয়োজন। ইহুদীরা অপেক্ষায় আছে ৩য় মন্দির গড়বার অপেক্ষায়। সুতরাং, সোলাইমান [আ] এর রাজত্বের শয়তানের আবৃত্ত কথার অনুসরন এবং ইহুদীদের বাবেল শহরে বন্দী জীবনে ন্যাচারাল ফিলসফির কম্পাইলেশন-রিকন্সট্রাকশন এবং পরবর্তীকালে সেসব বিজ্ঞান বলে প্রতিষ্ঠালাভের ইতিহাস বোধকরি আর অস্পষ্ট নয়। আমরা এসব অকাল্ট ফিলসফি ও ম্যাজিককে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে প্রতিষ্ঠালাভের সিকোয়েন্সের সুবিস্তর ইতিহাসভিত্তিক আলোচনায় প্রবেশ করার আগে পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে কিছু মৌলিক বিষয়ের আলোকপাত করা হবে। সম্ভবত আগামী ১০ পর্ব পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আলোচনা চলবে। এরপর থেকে আশাকরি সবকিছু বুঝতে অনেক সহজ হবে। 
 
 
 
 
 
 
 
 

চেতনার ওপারে - Altered State of consciousness
 
 
 
 

সারা পৃথিবীতে প্যাগান বিলিফ সিস্টেমের পুনর্জাগরন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই অবস্থা মূলত এ মুহূর্তে প্রয়োজন সাধারন মানুষকে কুফরে আকবরের দিকে নেওয়ার জন্য, শয়তানের আনুগত্য এমনকি পূজার জন্য। এজন্য আজকে প্যাগান স্পিরিচুয়ালিটির দিকে সারা পৃথিবীকে ঝুকে পড়তে দেখা যাচ্ছে। আমেরিকায় ওয়াননেসের(ওয়াহদাতুল উজুদ) আহব্বান/ইনফিনিট লাভ রিলিজিয়নের ছড়াছড়ি। এমনকি নায়ক-নায়িকা গায়ক-গায়িকারা থেকে শুরু করে ফিজিসিস্ট সকলেই এ পথে আহব্বান করে। তাদের বিশ্বাস ব্যবস্থার সত্যতার সবচেয়ে বড় দলিল হচ্ছে 'চেতনার ওপারের' অভিজ্ঞতা অথবা অল্টার্ড স্টেইট অব কনসাসনেস[১৮]। এটা সেই মিস্টিক্যাল অনুভূতি যার জন্য অনেক সংগঠন ধ্যান-যোগসাধনা এবং প্যাগান স্পিরিচুয়ালিটির দিকে আহব্বান করে।