Friday, July 31, 2020

২০.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

পর্ব - ২০

- পদার্থবিজ্ঞানীদের ইন্দ্রজালে প্রত্যাবর্তন -




পদার্থবিজ্ঞানীরা আজ ফিরে গিয়েছে ইন্দ্রজালের দিকে। আমার মনে পড়ে দু-তিন বছর আগে এরকম টাইটেলেই একটা ছোট আর্টিকেল লিখেছিলাম, কিন্তু অধিকাংশই কিছু বুঝতে পারেন নি। অনেকে বিস্তারিত লিখতে অনুরোধ করেছিলেন। আজ কয়েক বছর আগের সেই জমে থাকা কথাগুলো বিস্তারিত লিখতে যাচ্ছি। বৈদিক- ঔপনিষদিক শাস্ত্রগুলোয় ইন্দ্রজাল দ্বারা বোঝায়, দেবতা ইন্দ্রের ছড়ানো মায়া জালকে। এর রূপক অর্থঃ সমস্ত সৃষ্টিজগতের অস্তিত্বের মূল ফ্যাব্রিক বা প্রাইমোর্ডিয়াল ফিল্ড। সহজ করে বলতে গেলে, যে বুননের উপর সমস্ত বস্তুজগত দাঁড়িয়ে আছে। ভ্যাকুয়াম স্পেস, শূন্যস্থান হচ্ছে সেই বুনন। অথর্ব-বেদ ইন্দ্রকে ইন্দ্রজালের পরিশীলিত ধারণার কেন্দ্রস্থলে রেখেছে। এই জালে, প্রতিটি গিঁটে একটি হীরা, প্রতিটি হীরক অন্যান্য গিঁটকে প্রতিফলিত করে এবং এইভাবে পুরোটি। আধুনিক পদার্থবিদ্যার “হলোগ্রাফিক প্যারাডাইম” ইন্দ্রজালেরই ধারণা, যেটা বিকাশের জন্য পশ্চিমাদের আরো চার হাজার বছর দরকার ছিল(বেদান্তশাস্ত্রের জন্য লাগেনি)। [উইকিপিডিয়া]

রাজীব মালহোত্রা তার ইন্দ্রজাল নামের কিতাবে লিখেছেন, "ইন্দ্রজাল হলো হিন্দুধর্মশাস্ত্রে বর্নিত বিশ্বজগত এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপক। ইন্দ্রজাল দ্বারা মহাবিশ্বকে পরস্পর আন্তঃসংযোগ এবং আন্তঃনির্ভরতার জালের ন্যায় বোঝানো হয় [...] আমি এটিকে বৈদিক বিশ্বজগতের ধারনার ভিত্তি হিসাবে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই এবং দেখাতে চাই যে, এটি কীভাবে বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্রীয় নীতিতে পরিণত হয়েছিল এবং সেখান থেকে মূলধারার পশ্চিমা চিন্তাধারার বিভিন্ন শাখা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।"

বৌদ্ধ দর্শনে ইন্দ্রজাল হচ্ছে হলোগ্রাফিক বাস্তবতার রূপক: "ইন্দ্রের স্বর্গে মুক্তোর একটি নেটওয়ার্ক আছে বলা  হয়, সেটা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে আপনি যদি একটির দিকে তাকান তবে দেখবেন, অন্যগুলো এতে প্রতিবিম্বিত হয়েছে।" স্যার চার্লস এলিয়ট বলেন, "ধূলিকণার প্রতিটি কণায় অজস্র সংখ্যক বুদ্ধ বিদ্যমান রয়েছে "। যাদুশাস্ত্রভিত্তিক প্যাগান দর্শনের প্রচারক মিস্টিক এ্যালান ওয়াটস বলেন,"ভোরের শিশির দিয়ে ঢাকা একটি বহুমাত্রিক মাকড়সার জালকে কল্পনা করুন এবং প্রতিটি শিশিরবিন্দুতে অন্যান্য শিশিরবিন্দুর প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান এবং প্রতিটি প্রতিচ্ছবির শিশিরবিন্দুতে অন্যান্য সমস্ত শিশির ফোঁটার প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান। এবং এরকম অনন্ত অসীমভাবে বিদ্যমান। এটি হলো একটি ছবির মধ্যে বৌদ্ধধর্মের মহাবিশ্বের ধারণার উদাহরন।" 
মহাযান বৌদ্ধমতের অবতমসক সূত্র গ্রন্থে 30 টি সূত্রের নাম নাম দেওয়া হয়েছে "দ্য ইনক্যালকুলেইবল" কারণ এটি মহাবিশ্বের সীমাহীনতার ধারণার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে "ব্রহ্মাণ্ড কল্পনাতীতভাবে অসীম, এবং তাই এখানে জ্ঞান এবং আলোকিতকরণের ক্রিয়াকলাপের সুযোগ বিশদ।" সূত্রের অন্য একটি অংশে, সমস্ত বিষয়ে গৌতম বুদ্ধের জ্ঞানকে এই রূপক দ্বারা বোঝানো করা হয়েছে:"তারা [বুদ্ধরা] জানে যে সমস্ত ঘটনা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল উৎস থেকে আসে।তারা সমস্ত বিশ্বব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে জানে। তারা জানে সমস্ত জগতের বিভিন্ন ঘটনা, ইন্দ্রের জালের সাথে সম্পর্কিত। "

রাজিব মালহোত্রা ইন্দ্রজালে উল্লেখ করেন,"মহাযান বৌদ্ধধর্মের অবতমসক সূত্র (যার অর্থ 'ফুলের মালা') মহাজাগতিক আন্তঃবিভাজন ব্যাখ্যা করার জন্য ইন্দ্রজালকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করে। এই সূত্রটি সমস্ত আয়নাকে সমস্ত আয়নার প্রতিচ্ছবি বা প্রতিফলন করাকে বুঝায় যা সমস্ত কিছু দ্বারা প্রতিবিম্বিত হয়। সবকিছু একই সাথে কারণ ও প্রভাব[cause and effect], সাপোর্ট এবং সাপোর্টেড। এই গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটি সংস্কৃত থেকে অনুবাদ করা হয়েছিল এবং এর যুক্তিটিকে চীনের হুয়া-ইয়েন বৌদ্ধধর্মে আরও বিকশিত হয়েছিল।"
[Indra's Net by Rajiv Malhotra p. 13-14]

চীনা হুয়া ইয়েন ট্রেডিশনটি বেশ কয়েকটি চিন্তাবিদদের দ্বারা বিকশিত হয়েছিল, উল্লেখযোগ্যভাবে Fa-tsang (খ্রিঃ ৬৪৩-৭১২)। তাঁর মাধ্যমে, এটি কোরিয়া এবং অন্যান্য পূর্ব এশীয় দেশগুলিতে চলে যায়, জাপানে 'কেগন' নামে পরিচিতি লাভ করে। হুয়া-ইয়েন, চীনা বৌদ্ধ চিন্তার সর্বোচ্চ বিকাশ হিসাবে প্রশংসিত। ডি.টি. সুজুকি হুয়া-ইয়েনকে জেনের[Zen] দর্শন এবং ধ্যান চর্চার মূল হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ফ্রান্সিস কুক হুয়া-ইয়েনের মূল দর্শনটি নীচে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন: ''মহান দেবতা ইন্দ্রের স্বর্গীয় বাসভবনে খুব দূরে, এমন এক বিস্ময়কর জাল রয়েছে, যা কিছু চাতুর্যময় কারিগর দ্বারা এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল যে, এটি সমস্ত দিক থেকে সীমাহীনভাবে প্রসারিত। দেবদেবীদের অমিতব্যয়ী রুচি অনুসারে কারুশিল্পীরা জালের প্রতিটি "চক্ষু" তে একক চকচকে রত্ন ঝুলিয়ে রেখেছিল এবং যেহেতু জালটি নিজেই মাত্রার দিক দিয়ে অসীম, তাই রত্নগুলি সংখ্যায় অসীম। সেখানে রত্নগুলি প্রথম মাত্রায় তারকার ন্যায় ঝুলে আছে, সে এক অপূর্ব দৃশ্য। যদি আমরা এখন নির্দ্বিধায় পরিদর্শন করার জন্য এই রত্নগুলির মধ্যে একটি নির্বাচন করি এবং এটি ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করি তবে আমরা আবিষ্কার করব যে এর পালিশ পৃষ্ঠে জালের অন্যান্য সমস্ত রত্নগুলি প্রতিবিম্বিত হয়েছে, সংখ্যায় অসীম। কেবল এটিই নয়, এই একটি রত্নে প্রতিবিম্বিত প্রতিটি রত্ন  অন্য সমস্ত রত্নকেও প্রতিবিম্বিত করে, যাতে একটি অসীম প্রতিবিম্ব প্রক্রিয়া ঘটে। ''
[Indra's Net by Rajiv Malhotra p. 13-14]


সুতরাং দেখতে পাচ্ছেন, ইন্দ্রজাল রূপকটি চীনা হুয়ান দার্শনিক স্কুল অব থটে একটি অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে,যেখানে এটি মাইক্রোকসমোস এবং ম্যাক্রোকসমোসের ইন্টারপেনেট্রেশন (ওয়াইলি: জং-'জুগ; সংস্কৃত: যুগানাদ্ধ) বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এর দ্বারা বোঝায় সবকিছু সবকিছুর উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ এক প্রকারের মহাজাগতিক ইন্টারডিপেন্ডেন্স। ডানে যে ছবিটি দেখছেন এটা কোন সায়েন্সফিকশন আর্ট না, এটা প্রাচীন বৈদিক অকাল্ট টেক্সটেরই ঐন্দ্রজালিক বর্ননাসমূহের চিত্রায়িত রূপ। সকল পদার্থ ইন্দ্রজালের উপর রত্নের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে এবং সকল পদার্থের বৈশিষ্ট্য একে অপরকে প্রতিফলিত করে ইন্দ্রজালের রত্নের ন্যায়। অর্থাৎ মহাবিশ্বের একটি পদার্থের বৈশিষ্ট্য, গুনাগুন ও আচরণ অন্যসকল বস্তুতে প্রতিবিম্বিত হয় অর্থাৎ প্রভাবিত করে। সকল বস্তু একে অন্যের সাথে সংযুক্ত এবং আন্তঃনির্ভরশীল। একটির মৌলের ক্রিয়া বা পরিবর্তন মহাবিশ্বের অন্য সকল বস্তুকে পরিবর্তন করে। এই শিক্ষার মধ্যে প্লেটনিক আইডিয়ালিজমের কাব্বালিস্টিক শিক্ষাও গভীরভাবে নিহিত আছে,সেটা আগামী পর্বের আলোচ্য বিষয়। বৈদিক শাস্ত্রানুযায়ী ইন্দ্রজাল দ্বারা যাদু ও মায়াকেও বোঝায়। Teun Goudriaan মতে, ঋগ্বেদে ইন্দ্রকে বলা হয়েছে মহান যাদুকর, যিনি তাঁর শত্রুদের তাদের নিজের অস্ত্র দ্বারা প্রতারিত করেন, যার ফলে পৃথিবীতে মানবজীবন ও সমৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইন্দ্র পার্থিব যাদুবিদ্যার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন,এটা ইন্দ্রজাল শব্দে প্রতিফলিত হয়।  "ইন্দ্রের জাল" দ্বারা সাধারনত যাদুকরদের যাদুসংক্রান্ত সকল চর্চাকে বোঝায়। Goudriaan এর মতে, ইন্দ্রজাল শব্দটি अथর্ববেদ এর ৮.৮.৮ পদ থেকে উদ্ভূত হয়েছে,যেখান থেকে Goudriaan একটি ভিন্ন অনুবাদ দিয়েছেন: "এই পৃথিবী ছিল ইন্দ্রের এক বিশাল আকারের  জাল, সুবিশাল ; ইন্দ্রের এই জালের মাধ্যমে আমি সমস্ত লোককে অন্ধকারে আবদ্ধ করে রেখেছি।"[১]


কথিত আধুনিক বিজ্ঞান আজ ফিরে গেছে বৈদিক ঐন্দ্রজালিক ব্রহ্মচৈতন্যের আকিদায়[বিশ্বাসে]। এটাই আজকের সায়েন্স। বিগত পর্বগুলোয় চৈতন্যবাদ ও মায়াবাদের ব্যপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে অর্থাৎ ইন্দ্রজালের বৈদিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী বলা যায়, আজ আধুনিক মহাকাশ ও পদার্থবিজ্ঞান ফিরে গেছে সুস্পষ্ট যাদুশাস্ত্রে। রাজিব মালহোত্রা  বলেন, "মহাবিশ্বকে কোনও সূচনা বা শেষ না দিয়ে সমস্ত দিকে ছড়িয়ে দেওয়া অসীম জাল হিসাবে কল্পনা করুন। প্রতিটি নোডে বহু-মুখী জুয়েল তৈরি হয়, প্রত্যেকে একে অপরকে পরিবর্তনশীল সহস্রষ্ট্রার প্রবাহে প্রতিফলিত করে। প্রতিটি জুয়েল চেতনারই ফ্রাক্টাল , একটি জীবন্ত প্রাণ; উভয় সম্পূর্ণরূপে একটি অণুজীব এবং সম্পূর্ণরূপে অবিভাজ্য; উভয়ই অর্গ্যানিক সমগ্র ইউনিটির মধ্যে অনন্য স্বতন্ত্র কিন্তু একে অপরের জন্য অপরিহার্য । প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে সংস্কৃত ভাষায় রচিত ইন্দ্রজাল হচ্ছে বৈদিক রূপক। এবং আজ, কোয়ান্টাম সায়েন্স, অনিশ্চয়তার নীতি এবং ননলোকাল এন্টেঙ্গলমেন্টের মতো আবিষ্কার গুলো যেন এই রূপকের বাস্তব সত্যতাকে প্রদর্শন করছে।"[২]

ইন্দ্রজাল বলতে আগেই উল্লেখ করেছি, মহাজাগতিক ওই বুনন বা জালকে বোঝায় যার উপর বস্তুজগত দাঁড়িয়ে আছে। এটা ফিজিক্যাল জগতের ভিত্তিস্বরূপ। এই মহাজাগতিক জালকে প্রাচীন যুগ থেকে বিভিন্ন অকাল্ট ট্রেডিশনের একেক ভাষায় একেক নামে ডাকা হত। কেউ বলে ইথার, কেউ বলে প্রাণ-আকাশ,কেউ বলে চি-কি, কেউ বলে ব্রহ্মচৈতন্য,কেউ বলে অর্গন,কেউ বলে ভ্রিল,কেউ বলে এ্যাপেইরন,কেউ বলে কুইন্টএ্যাসেন্স,কেউ বলে ইং-ইয়াং....ইত্যাদি অজস্র নাম অথচ একই উপাদান। এই ঐন্দ্রজালিক এনার্জি ফিল্ড সবসময়ই যাদুকরদের বিভিন্ন চর্চা, শাস্ত্র ও বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রাচীন গ্রীসে ইথার ছিল সমস্ত দার্শনিক - অকাল্টিস্টদের মধ্যে বহুল প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত মহাজাগতিক ফিল্ড এর ধারনা।
পিথাগোরিয়ান অকাল্টিস্টদের[যাদুকর] মধ্যে এ বিষয় কোন মতানৈক্য নেই। যাদুবিদ্যায় ক্ল্যাসিক্যাল ইলিমেন্টস তথা পাচটি রেগুলার সলিড যথাঃ পানি,মাটি, বায়ু, আগুন এবং সর্বশেষ উপাদান হচ্ছে ইথার। ইথার সমস্ত বস্তু জগতের মূলে মহাবিশ্বের সর্বত্রই ছেয়ে আছে। প্রতিটি বস্তু এর উপরেই সৃষ্টি। বস্তু বা শূন্যস্থান সর্বত্রই এটি বিদ্যমান। কাল্পনিক মহাশূন্য এবং পৃথিবীর সমস্তকিছুই ইথারের সমুদ্রের মধ্যে ডুবে আছে। ইথার সকল শক্ত বস্তুকেও ভেদ করে প্রবাহিত সুপার ফ্লুইড রিয়ালিটি। যাদুচর্চায় সবচেয়ে মৌলিক উপাদান হচ্ছে ইথার। এ বিশ্বাস সমস্ত যাদুকরদের মাঝে প্রচলিত যে, একজন যাদুকর স্বীয় মনচৈতন্য দ্বারা প্রকৃতির নীতি গুলোকে পালটে ফেলে এই ইথার ফিল্ডকে ব্যবহারের মাধ্যমে। এটা বস্তুজগতের একদম মৌলিক সুপারফ্লুইড উপাদান যার দ্বারা এবং যেই জালের উপর ভর করে সমস্ত অস্তিত্বশীল বস্তু দাঁড়িয়ে আছে। এটা তাদের মতে সমগ্র মহাবিশ্বের Ever pervading eternal  primordial field of existence। যাদুকররা এই ইথারিয়েল ফিল্ডের ম্যানিপুলেশনের দ্বারাই জাগতিক পরিবর্তন ঘটায়। এটা তারা অকপটেই স্বীকার করে[৩]।

গ্রীক দার্শনিকদের মধ্যে ইথারকে সবচেয়ে বেশি প্রোমোট করতেন প্লেটোর শিষ্য এরিস্টটল। প্লেটো নিজেই থিওরি অব ফর্মে সমস্ত বস্তুকে একক উপাদানেরই আইডিয়ালিস্টিক ফর্মের শিক্ষা দেন।প্লেটোর টিমিয়াস (৫৮ ডি) বায়ু সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে প্লেটো উল্লেখ করেছিলেন যে "সবচেয়ে সুক্ষ এক প্রকার (বস্তু) রয়েছে যা ইথার (αἰθήρ) নামে ডাকা হয়"। তবে  তিনি চারটি উপাদানের ক্ল্যাসিক্যাল সিস্টেমকে গ্রহণ করেছিলেন। ইথারগত ঐন্দ্রজালিক এই ফিল্ডের যাবতীয় শিক্ষার অরিজিন্স মূলত বাবেল শহর। যাদুকরদের সিহরে যেহেতু এই ঐন্দ্রজালিক ফিল্ড কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই এসবই বাবেলের শিক্ষা।তাছাড়া যাদুবিদ্যার পাঁচটি ক্লাসিক্যাল ইলিমেন্টসের প্রত্যেকটিরই জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার আছে যার অরিজিন্স কাব্বালাহ অর্থাৎ এসব সবই ব্যবিলনীয়ান অকাল্ট[যাদুসংক্রান্ত ব্যপার] ছাড়া কিছু নয়। 


উনিশ শতক পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইথারের অস্তিত্বের বিষয়ে কোন মতানৈক্য ছিলনা। তখন ইথার ছিল পদার্থবিদ্যায় একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য থিওরি। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যেহেতু শব্দ সঞ্চালনের জন্য বায়ু মাধ্যম হিসেবে কাজ করে একই ভাবে আলোর সঞ্চালনের জন্য ইথারের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ইথারের সমুদ্রেই পৃথিবী নক্ষত্রসমূহ ভাসছে। আইজ্যাক নিউটনও ইথারের অস্তিত্বকে স্বীকার করতেন। মূলত বিজ্ঞানের শুরুটা হয় হার্মেটিক-গ্রীক ও কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রগুলোর পাশ্চাত্যে পৌছে অনুবাদের মাধ্যমে। এজন্য তারা বিতর্ক ছাড়াই ইথারকে মেনে নিয়েছিল। আসমানি বস্তুগুলো তৈরির জন্য ব্যবহৃত পঞ্চম উপাদানটির ল্যাটিনেট নাম ছিল কুইন্টএ্যাসেন্স। এটাকে এ নামেই অভিহিত করত মধ্যযুগীয় আলকেমিস্টরা। অপবিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আলকেমিস্টদের একজন।তার অপটিক্সের তৃতীয় বইটিতে ইথারের অস্তিত্বকে সাজেস্ট করেছিলেন (প্রথম সংস্করণ 1704; দ্বিতীয় সংস্করণ 1718)। নিউটন ভাবতেন গ্রাভিটির মিডিয়াম হলো ইথার, এটা তিনি তার Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica (the Principia, 1687) বইয়ে লিখেছেন। ১৬ থেকে ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত, মহাকর্ষীয় ঘটনাগুলোকে ইথারকে ব্যবহার করে সাজানো হয়েছিল। সর্বাধিক পরিচিত সূত্রটি হল Le Sage এর গ্র্যাভিটেশন তত্ত্ব, যদিও অন্যান্য মডেলগুলো Isaac Newton, Bernhard Riemann এবং Lord Kelvin প্রস্তাব করেছিলেন।

লুমিনিফেরাস ইথার (বা ইথার),কে বলা হতো আলো এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ সঞ্চালনের একটি তাত্ত্বিক মাধ্যম। ১৮৮৭ সালে মাইকেলসন ও মর্লি ইথারকে মাধ্যম হিসেবে কল্পনা করে পৃথিবীর গতি সনাক্ত করার চেষ্টা করে খুজতে বিখ্যাত মাইকেলসন মর্লি এক্সপেরিমেন্টটি করে। কিন্তু পরীক্ষণে মহাসমস্যা তৈরি হয়। পরীক্ষাতে পৃথিবীর আবর্তন বা কোনরূপ গতির কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, তখন বিজ্ঞানীদের যেকোন একটা নির্বাচনের অবস্থা তৈরি হয়। ইথারের অস্তিত্ব মানতে গেলে হয় তারা পৃথিবীকে গতিশূন্য স্থির বলবে অথবা ইথারের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে পৃথিবীকে গতিশীল বলবে।[অপ]বিজ্ঞানীরা তাদের প্রতিষ্ঠিত প্যাগান কস্মোলজির থিওরিটিক্যাল কন্সিস্টেন্সি রক্ষা করতে ইথারের অস্তিত্ব 'সাময়িকভাবে' অস্বীকার করে। ইহুদী ফিজিসিস্ট এলবার্ট আইনস্টাইন শুরুর দিকে ইথারের অস্তিত্বকে স্বীকার করতেন।আইনস্টাইন, ডেরাক, বেল, পলিয়াকভ, 'টি হুফ্ট, লাফলিন, ডি ব্রোগলি, ম্যাক্সওয়েল, নিউটন এবং অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পেসের খালিস্থান পূরণ করার জন্য ফিজিক্যাল উপাদানযুক্ত একটি মাধ্যম থাকতে পারে, ইথারই এই ফিজিক্যাল প্রক্রিয়া অংশ হিসেবে কাজ করে। ১৮৯৪ বা ১৮৯৫ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন: "একটি তরঙ্গের গতিবেগের সম্প্রসারনযোগ্য বল এর বর্গমূলের সাথে সমানুপাতিক, যা [এর] বিস্তার ঘটায় এবং এই বল দ্বারা স্থানান্তরিত ইথারের ভরগুলির সাথে বিপরীতভাবে সমানুপাতিক।" 

কিন্তু পরবর্তীকালে এই ইথার তত্ত্বটি বৈজ্ঞানিকভাবে অপ্রচলিত বলে বিবেচিত হয়, কারণ স্পেশাল রেলেটিভিটি তত্ত্ব থেকে প্রমাণিত হয়েছিল যে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলোকে এই ফোর্সগুলোর সঞ্চালনের জন্য ইথারের প্রয়োজন হয় না। যাইহোক, আইনস্টাইন নিজেই উল্লেখ করেছিলেন যে ইথার তত্ত্বের প্রতিস্থাপনকারী তাঁর নিজস্ব মডেল নিজেই একটি ইথার হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এতে বোঝা যায় যে বস্তুর মধ্যে ফাঁকা স্থানটির নিজস্ব ফিজিক্যাল প্রোপার্টি রয়েছে। আলবার্ট আইনস্টাইন কখনও কখনও সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের মধ্যে মহাকর্ষ ক্ষেত্রের জন্য ইথার শব্দটি ব্যবহার করেতেন, তবে এই টার্মিনোলজিটি কখনও ব্যাপক সমর্থন লাভ করতে পারেনি।তিনি ১৯২০ সালে বলেনঃ "আমরা বলতে পারি যে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে স্পেস ফিজিক্যাল কোয়ালিটি দ্বারা সমৃদ্ধ; এই অর্থে বলা যায় যে এতে ইথারের উপস্থিতি রয়েছে। জেনারেল থিওরি অব রেলেটিভিটি অনুসারে ইথার ব্যতীত স্পেসের কথা চিন্তাই করা যায় না; কারণ এইরকম মহাকাশে শুধুমাত্র আলোর সঞ্চালনই থাকবেনা এমনটা নয়, স্থান এবং সময়ের মান (মাপার কাঠি এবং ঘড়ি) এর অস্তিত্বের কোন সম্ভাবনাও থাকবে না, তাই ফিজিক্যাল অর্থে কোনও স্থান-কালের ইন্ট্যারভ্যাল থাকবেনা। কিন্তু মিডিয়াগুলোয় প্রচারিত ইথারের পুরনো গুণগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারনাটি এই ইথারে থাকবে না।এতে গতির ধারণাটি প্রয়োগ নাও হতে পারে।"

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী Robert B. Laughlin সমসাময়িক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে ইথার সম্পর্কে বলেছিলেন:"এটা আইরনিক বিষয় যে আইনস্টাইনের সবচেয়ে সৃজনশীল কর্মঃজেনারেল থিওরি অব রেলেটিভিটিতে স্পেসকে একটা মিডিয়াম হিসেবে প্রকাশ করা সমীচীন ছিল, যেখানে তার আসল ভিত্তি [বিশেষ আপেক্ষিকতায়] তে এরকম কোন মাধ্যম ছিল না [..] 'ইথার' শব্দটি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে আপেক্ষিকতার বিরোধিতার সাথে এর অতীতের সংযোগের কারণে অত্যন্ত নেতিবাচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। এটি দুর্ভাগ্যজনক কারণ, এই অভিব্যক্তিগুলি বাদ দিয়ে বেশিরভাগ পদার্থবিদরা শূন্যতার(ভ্যাকুয়াম) বিষয়ে বাস্তবে যেভাবে ভাবছেন তা এটি খুব সুন্দরভাবে ক্যাপচার করে....আপেক্ষিকতা আসলে মহাবিশ্বকে বিস্তৃত (ইথারিক) পদার্থের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা সম্পর্কে কিছুই বলে না, কেবল এ জাতীয় কোনও বিষয়ে আপেক্ষিক প্রতিসাম্য থাকতে হবে। [..] দেখা যাচ্ছে যে এ জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান। সময়ের সাথে সাথে আপেক্ষিকতা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছিল,তখন রেডিও এক্টিভিটি পর্যালোচনা করে দেখায় যে, স্পেসের খালি শূন্যতায় স্পেক্ট্রোস্কোপিক কাঠামো ছিল সাধারণ কোয়ান্টাম সলিড এবং তরলের[কোয়ান্টাম ফ্লুয়িড] মতো। বৃহত্তর কণা ত্বকের সাথে পরবর্তী গবেষণাগুলি এখন আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে যে স্পেস হলো আদর্শ নিউটোনীয় শূন্যতা নয়, বরং উইন্ডো গ্লাসের একটি অংশের মতো। এটি 'বস্তুসমূহ' দিয়ে পূর্ণ, যা সাধারণত স্বচ্ছ, তবে এটি দৃশ্যমান করা সম্ভব যদি এর কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট শক্তভাবে আঘাত করা হয়। শূন্যতার আধুনিক ধারণাটি প্রতিদিন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া একটি আপেক্ষিক ইথার। তবে আমরা এটিকে ইথার বলি না কারণ এটি নিষিদ্ধ[ট্যাবু]।"


যে মূহুর্তে প্রাচীন গ্রেসিয়ান-ব্যবিলনীয়ান ইথার থিওরিকে মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞান থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছিল তখন এক অসম্ভব প্রতিভাবান আবিষ্কারক এর পক্ষে দাঁড়ান। তিনি হলেন নিকোলা টেসলা। ১৮৫৬ সালে জন্মগ্রহণকারী নিকোলা টেসলা অস্ট্রিয়ার গ্রাজে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু কখনো স্নাতক লাভ করেন নি। তিনি ১৮৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছিলেন এবং খুব শীঘ্রই আর্থিক সহায়তাকারীরা তার জন্য নতুন বৈদ্যুতিক ডিভাইস নির্মাণের জন্য পরীক্ষাগার এবং সংস্থাগুলি স্থাপন করেছিল। তার আবিষ্কারগুলোর মধ্যে এসি ইন্ডাকশন মোটর, হাই ফ্রিকোয়েন্সি কারেন্ট জেনারেটর  অন্তর্ভুক্ত। নিকোলা টেসলা সম্ভবত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং তাঁর আবিষ্কারগুলি মানবজাতির জন্য একটি ব্যাপক অবদান রেখেছে; তিনি অনেক ক্ষেত্রে অগ্রণী পথিকৃৎ ছিলেন। টেসলা কয়েল থেকে রেডিও থেকে অল্টারনেট কারেন্ট থেকে টেলিফোন পর্যন্ত (হ্যাঁ, এটির জন্য থমাস এডিসন এবং নিকোলা টেসলার মধ্যে একটি বিরাট বিতর্ক রয়েছে, তবে অনেক প্রমাণই প্রকৃত উদ্ভাবক হিসাবে নিকোলা টেসলার প্রতি ইঙ্গিত করে) সার্বিয়ান-আমেরিকান এই পদার্থবিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী আবিষ্কারের মাধ্যমে অত্যন্ত সম্মানিত হন। টেসলাকে "সায়েন্টিস্ট" না বলে অকাল্টিস্ট বলাটাই বেশি সমীচীন মনে হয়। কেননা তার অধিকাংশ আবিষ্কারের চেষ্টা গুলো ছিল অকাল্ট বা যাদুশাস্ত্র নির্ভর। অনেক প্যাটেন্টেড আবিষ্কারও আছে। শোনা যায় তিনি ডেথরে আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি ছিলেন বৈদিক শাস্ত্রের অনুসারী।
স্বামী বিবেকানন্দের সাথে দেখাও করেন। তিনি প্রায়ই বৈদিক উদ্ধৃতি দিয়ে কথা বলতেন। তার কথায় সুস্পষ্টভাবে ধরা পরে তিনি বৈদিক ঐন্দ্রজালিক এনার্জি ফিল্ডের অন্বেষণে অনেক সময় ব্যয় করেন। এবং তার বিভিন্ন কথার পেছনে এটাই ছিল গাইড হিসেবে। তিনি ইথারের পরিচয়ে বৈদিক রেফারেন্স টেনে বলেনঃ “সমস্ত উপলব্ধিযোগ্য পদার্থ একটি প্রাথমিক পদার্থ থেকে আসে, ধারণার বাইরের হয়ে সমস্ত স্থান পূরণ করে,(যাকে বলা হয়) আকাশ বা আলোকপ্রদায়ী ইথার, যা জীবন দানকারী প্রাণ বা সৃজনশীল শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, সমস্ত জিনিস ও ঘটনার অস্তিত্বকে অনন্ত চক্রের মাঝে ডেকে তোলে। বিস্ময়কর বেগের অসীম ঘূর্ণিতে নিক্ষিপ্ত এ প্রাথমিক উপাদান(ইথার) স্থূল পদার্থে(ম্যাটার) পরিণত হয়; শক্তি কমতে থাকে, গতি হারিয়ে যায় এবং পদার্থটি অদৃশ্য হয়ে যায়, (সেটা) প্রাথমিক উপাদানে[ইথারে] ফিরে যায়।"

 [Man’s Greatest Achievement, John J. O’Neal., &
Prodigal Genius, The Life of Nikola Tesla, 1944]


টেসলা জিরো পয়েন্ট ফিল্ড বা ইথারের মহা শক্তি বুঝতে পেরেছিলেন: ইলেকট্রন এবং নিউক্লিয়াসের মধ্য স্থানের শক্তি। টেসলার উপর স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব এতটাই বেশি হয়েছিল যে তিনি নিরামিষভোজী হয়ে গিয়েছিলেন, ব্রহ্মচারী হয়ে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার শুরু করলেন। তিনি তার মাথার মধ্যে স্কেলার এনার্জির বিজ্ঞান নিয়ে মারা গিয়েছিলেন, কারণ তিনি চান নি যে মার্কিন সেনাবাহিনী এটাকে ব্যবহার করে পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ফেলুক। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তাকে নোবেল পুরষ্কার অস্বীকার করা হয়েছিল। তার একাডেমিক যোগ্যতা, প্রচলিত রেলেটিভিস্টিক বিজ্ঞানে অস্বীকৃতি এবং আবিষ্কৃত বিষয় দ্বারা বিনামূল্যে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাধারা নোবেল পুরস্কারদানকারী কর্তৃপক্ষ হয়ত তাকে বঞ্চিত করেছে বলে সাধারন মানুষ মনে করে। টেসলা রেলেটিভিটিকে সঠিক বলে স্বীকার করতেন না, কারন তিনি বলতেন স্পেসে কখনোই বেন্ড বা কার্ভ সম্ভব না। টেসলা ছিলেন কিছুটা ফিলান্থ্রপিস্ট ঘরানার লোক। তিনি চেয়েছিলেন দুনিয়ার সবাইকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ করে দেবেন। অর্থাৎ ঐন্দ্রজালিক শক্তি ব্যবহার করে দুনিয়াকে শক্তি-জ্বালানীতে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি আটলান্টিক মহাসাগর জুড়ে কীভাবে রেডিও যোগাযোগকে সম্ভব সেটার পথ বের করেন। তবে যেহেতু তিনি এটাই অন্যের জন্য ফ্রি করতে চেয়েছিলেন,তাই সম্ভবত তার প্রতি ফান্ডিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং পরে তার আবিষ্কারের কৃতিত্ব অন্যকাউকে দেয়া হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই জ্বালানী ও শক্তি দ্বারা যারা ব্যবসায় করে তাদের বিশ্বনিয়ন্ত্রনে এ ধরনের প্রযুক্তিগত বিপ্লবের স্বপ্নটি দুঃস্বপ্নের মত। তাছাড়া বিশ্বকে নিয়ন্ত্রনকারীরা এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের দ্বারাই বিশ্বকে স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু তারা এরজন্য টেসলার জীবদ্দশাতেই প্রস্তুত ছিলনা। এ স্বপ্ন ইহুদীদের মসীহ আসবার পরে ব্যবহারের পরিকল্পনা।
তাই স্বাভাবিকভাবেই অকাল্টিস্ট টেসলার জন্য ওই সময়টা উপযুক্ত ছিলনা। বাধাপ্রাপ্ত হওয়াই স্বাভাবিক। টেসলার সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং তাঁর মাথার ভেতর কল্পনায় আগে হত, তিনি কখনই কাগজের উপর কোনও কাজ করেননি বা চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য স্কেল মডেল ব্যবহার করেননি। টেসলা স্বীকার করেন তার যাবতীয় বিদ্যাবুদ্ধি আসে দৈবিক সত্তাদের থেকে। তিনি বলেছেন, "মানসিক শক্তি উপহার স্বরূপ আসে ঈশ্বর,দৈবিক সত্তার কাছ থেকে এবং আমরা যদি সেই সত্যের প্রতি আমাদের মনকে মনোনিবেশ করি তবে আমরা এই মহান শক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হব... আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো আমাদের বাইরের বিশ্বের খুব সামান্য অংশকে উপলব্ধি করতে সক্ষম করে।" 

পাঠকরা আশাকরি ইতোমধ্যে বুঝতে পারছেন, বেদান্তশাস্ত্রের অনুসারী জনাব টেসলা কাদের থেকে শিক্ষা বা জ্ঞান গ্রহন করতেন। লর্ড কেলভিন গস্পেল অব বুদ্ধ চেয়ে টেসলার কাছে চিঠি লেখেছিলেন। যাইহোক, সারাহ বার্নহার্ট কর্তৃক আয়োজিত একটি পার্টিতেই নিকোলা টেসলা সম্ভবত সেখানেই সর্বপ্রথম স্বামী বিবেকানন্দের সাথে দেখা করেছিলেন। সারাহ বার্নহার্ট একটি নাটকে 'ইজিয়েল' এর চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। এটি গৌতম বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে একটি ফরাসি সংস্করণ ছিল। দর্শকদের মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনের পথিকৃৎ স্বামী বিবেকানন্দকে দেখে অভিনেত্রী একটি সভার ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে নিকোলা টেসলাও উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা স্বামীর কাছ থেকে শঙ্খ চিন্তাধারার সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাখ্যা এবং হিন্দুদের সাইক্লিক্যাল তত্ত্ব দ্বারা মুগ্ধ হয়েছিলেন। বিশেষত পদার্থ এবং শক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের শঙ্খ মধ্যে সাদৃশ্যটি দেখে তিনি ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ফ্রিম্যাসন গুরু বিবেকানন্দ নিউইয়র্কের স্যার উইলিয়াম থম্পসনের পরে লর্ড কেলভিন এবং পশ্চিমা বিজ্ঞানের দুই শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি প্রফেসর হেলমহোল্টজের সাথে দেখা করেছিলেন। টেসলা স্বামী বিবেকানন্দের সাথে দেখা করার পরে এবং বস্তু জগতকে চালিত করার পদ্ধতি সম্পর্কে ভারতীয় বৈদিক শাস্ত্রের বিদ্যা অর্জনের পর থেকে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার শুরু করেছিলেন। অবশেষে, এটি তাকে তারবিহীন বিদ্যুৎ সঞ্চালন আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যায়, যা টেসলা কয়েল ট্রান্সফর্মার হিসাবে পরিচিত। ওই বছর আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স এর সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি নিম্নলিখিত মন্তব্য করেছিলেন (তিনি নিজেকে পূর্বাঞ্চলীয় বৈদিক জাতিসমূহ যেমন, ভার‍ত, তিব্বত এবং নেপালের ব্যপারে আন্তরিকতার পরিচয় দেন):“বহু প্রজন্ম পার হবার পূর্বে, আমাদের যন্ত্রপাতি মহাবিশ্বের যে কোনও স্থান থেকে আহরণযোগ্য শক্তি দ্বারা চালিত হবে। এই ধারণাটি উপন্যাস নয় ... আমরা এটি এন্থিয়াসের দারুন মিথেও পেয়েছি, যিনি পৃথিবী থেকে শক্তি আহরণ করতেন; আমরা এটি আপনাদের চমৎকার গণিতবিদদের সূক্ষ্ম স্পেকুলেশনের মধ্যে খুঁজে পাই। এই শক্তি স্থির, নাকি গতিশীল? স্থিতিশীল[স্ট্যাটিক] হলে আমাদের আশা বৃথা হবে; যদি গতিশীল[kinetic] হয় - এবং এটিই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি - তবে এটি কেবল সময়ের ব্যপার হবে, যখন লোকেরা তাদের যন্ত্রাদি প্রকৃতির একদম চক্রবাকে যুক্ত করতে সফল হবে"।

অর্থাৎ টেসলা ঐন্দ্রজালিক ইথার ফিল্ড বা ভ্যাকুয়াম কোয়ান্টাম ফিল্ড এর সৃষ্টিজগতের ভিত্তিমূলের অপরিসীম  শক্তিকে ব্যবহার করার ধারনা দেন। তার এ ধরনের গবেষণা সম্পূর্ন অকাল্ট(যাদু) নির্ভর। তিনি গ্রীক দার্শনিক-যাদুকরদের বলা ওই ফোর্সফিল্ডকে মেকানিক্যালি ব্যবহার করতে চান, যাদুকরদের টেস্টিমনি অনুযায়ী যেটার উপর ভিত্তি করে সিহর[যাদু] সংঘটিত হয়। এ ধরনের প্রযুক্তি সম্পূর্ণ অকাল্ট, কারন এটা প্রথমত ম্যাজিক্যাল প্রোপার্টি, এর উপর এমন কিছু যার cause & effect সম্পর্কে মানুষের কাছে স্পষ্ট জ্ঞান নেই। অর্থাৎ সিহরের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে যায়। এমন কিছু বাস্তবে এ্যাপ্লাই করা সম্ভব হলে সৃষ্টিজগতের উপর ভিত্তিগতভাবে ম্যানিপুলেট করেই এনার্জি তৈরি করা হবে অর্থাৎ যাদুবিদ্যায় ইন্টেন্ট ব্যবহারের অনুরূপ মেকানিক্যালি জগতের ফান্ডামেন্টাল স্ট্রাকচারে পরিবর্তন ঘটিয়েই শক্তি অর্জিত হবে।এটা বস্তুজগতে সুবিশাল প্রভাব ফেলবে। এটা সৃষ্টিজগতের প্রক্রিয়ার বিকৃতির মাধ্যমেই শক্তি তৈরি করবে। যারা যাদুবিদ্যাকে মু'তাযিলাদের অনুরূপ কেবল মাত্র জ্বীন জাতির কেরামতি মনে করে এদের কাছে এ ব্যপারটা মোটেও নেতিবাচক কিছু না বরং তাদের চোখে এটা কল্যাণময় প্রযুক্তিগত বিপ্লব। অথচ এখানে যাদুকরদের সেই ম্যাজিক্যাল ইলিমেন্টই ব্যবহার হচ্ছে। কাফিরদের কুফরি ননডুয়ালিস্টিক[সর্বেশ্বরবাদি] আকিদাকে সত্যায়ন করেই করা হবে। সবই বেদ - কাব্বালা - হার্মেটিক বিদ্যার ফসল। যাদুকরদের যাবতীয় চিন্তাভাবনা আকিদা দর্শন এই ইন্দ্রজালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল। Toby Grotz[President, Wireless Engineering] বলেন,“স্বামী বিবেকানন্দ আশাবাদী যে টেসলা দেখিয়ে দিতে সক্ষম হবেন যে আমরা যাকে পদার্থ বলে থাকি তা হলো সম্ভাবনাময় শক্তি, কারণ এটি আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে বেদের শিক্ষার সমন্বয় সাধন করবে। স্বামী বুঝতে পেরেছিলেন যে সেক্ষেত্রে, বৈদিক মহাজাগতিক বিদ্যা সকল শিক্ষার ভিত্তিমূলে স্থাপিত হবে। টেসলা সংস্কৃত পরিভাষা এবং দর্শন বুঝতে পেরেছিলেন এবং দেখেছিলেন যে মহাবিশ্বের ফিজিক্যাল মেকানিজমগুলোকে তাঁর চোখের মাধ্যমে বর্ণিত করার পক্ষে এটি(বৈদিক শিক্ষা) একটি ভাল উপায় হিসেবে ছিল। যারা নিকোলা টেসলার উদ্ভাবনের পিছনে বিজ্ঞানকে সংস্কৃত ও বৈদিক দর্শন অধ্যয়নের জন্য বোঝার চেষ্টা করবেন তাদের পক্ষে এটিই মাননসই " 

স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, "জনাব টেসলা মনে করেন যে তিনি গাণিতিকভাবে পারেন যে শক্তি এবং পদার্থ সম্ভাব্য এনার্জিতে রূপান্তরযোগ্য। তার এই নতুন গাণিতিক প্রদর্শনী দেখতে আমি পরের সপ্তাহে তাকে দেখতে যাব। সেক্ষেত্রে বৈদিক মহাজাগতিক জ্ঞান সবকিছুর মূল ভিত্তিতে স্থাপিত হবে। আমি এখন বেদান্তবাদী মহাকাশতত্ত্ব এবং এস্কেটোলজির উপর অনেক কাজ করছি। আমি আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে এটার নিখুঁত মিল স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি এবং একটির বর্ননা একে অপরটিকে অনুসরণ করবে।" 
[Swami Vivekananda (Complete Works, VOL. V, Fifth Edition, 1347, p. 77). (1)]


 1896 সালের 13 ফেব্রুয়ারিতে এক বন্ধুর কাছে লেখা একটি চিঠিতে স্বামী বিবেকানন্দ নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন: "…জনাব. টেসলা বৈদিক 'প্রাণ' এবং 'আকাশ' এবং 'কল্পের' কথা শুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিলেন, যা তাঁর মতে একমাত্র আধুনিক বিজ্ঞান উপভোগ করতে পারেন ..... মিঃ টেসলা মনে করেন যে, তিনি গণিতের মাধ্যমে শক্তি ও পদার্থকে সম্ভাবনাময় শক্তিতে রূপান্তরযোগ্য তা প্রমাণ করতে পারবেন। এই গাণিতিক প্রদর্শনটি পেতে আমি পরের সপ্তাহে তাকে দেখতে যাব।" 

স্বামী বিবেকানন্দ পরে ভারতে এক বক্তৃতা দেওয়ার সময় মন্তব্য করেছিলেন, "বেদান্তের সারকথাগুলো যে কত আশ্চর্যজনকভাবে যুক্তিযুক্ত তা আমার কাছে আজকের একজন শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক মনের লোকদের একজন বলেছেন, আমি তাদের একজনকে ব্যক্তিগতভাবে জানি,যার হাতে খাবার গ্রহনের মত সময় খুব কমই ছিল, বা তাঁর গবেষণাগারের বাইরে যাবার মত সময় ছিল, তবে তার হাতে যথেষ্ট সময় ছিল আমার বক্তৃতাগুলোতে উপস্থিত হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বৈদিক তত্ত্ব শোনার জন্য, কারণ তিনি প্রকাশ করেছেন, এগুলো এতই বিজ্ঞানসম্মত যে, সেসব আধুনিক যুগের আকাঙ্ক্ষার সাথে এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সাদৃশ্যতা রেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে"।[৫]

অতএব আশাকরি বুঝতে পারছেন এদের মূল উদ্দেশ্য টেকনোলজিক্যাল ব্রেইকথ্রু'র মাধ্যমে বৈদিক কুফরি আকিদাকে সত্যায়ন করা। টেসলা ম্যাস ও এনার্জির সমতুল্যতা প্রদর্শন করে যেতে পারলেও কয়েক বছর পরে  E = mc2 সমীকরণটি প্রকাশিত হয়েছিল, প্রথমত ১৯০৩ সালে ইতালিয়ান অলিন্টো ডি প্রেটো এবং ১৯০৫ সালে ইহুদী পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন প্রকাশ করেছিলেন। নিকোলা টেসলা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত মতপার্থক্য এবং প্রতিকূলতার কারনে বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তেমন সুখ্যাতিলাভ না করলেও অকাল্ট সার্কেল, মিস্টিকদের কাছে সবসময়ই মহর্ষির আসনে ছিলেন। সাধারন জনতার মাঝে বিগত চার দশক ধরে জনপ্রিয়তা অর্জন শুরু হয়। তিনি আজ যদিও বেচে নেই, তাও লাখ লাখ মানুষের কাছে নায়ক হয়ে আছেন। তাকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজ করে আমেরিকার আধ্যাত্মবাদী প্যাগান নিউএইজ মুভমেন্ট নামের দলটি। একটি এজেন্ডা সবসময় প্রব্লেম→রিয়্যাকশান→সল্যুশন নীতিতে কাজ করে আসছে। তারা হেগেলিয়ান ডিয়ালিক্টিক অর্ডারে একটি দল একাধিক দল মত প্রতিষ্ঠা করে, যেটার একটিকে জনগনের কাছে ক্রমেই অশুভ, ক্ষতিকর আকারে উপস্থাপন করে, এতে করে সাধারন জনগন যখন অন্যায় অনাচার অবিচারের দুর্বিপাকে নাভিশ্বাস তোলে তখন ওই সুপারএজেন্ডা অপর আরেকটি দলকে দ্বার করিয়ে দেয় সল্যুশন হিসেবে এমন কিছুকে দেখানোর জন্য, যেটা ওই হায়ারার্কির শীর্ষে থাকা এজেন্ডারই আসল লক্ষ্য। জনগণ বিদ্যমান অনাচারের তুলনায় সেটার মাঝে স্বস্তি খুঁজে পায় এবং সেটাকেই সর্বোত্তম সমাধান হিসেবে দেখে। অর্থাৎ ওই একটি এজেন্ডা একাধারে সমস্যা সৃষ্টি করে জনমনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে নিজেরাই সমাধান দেখাচ্ছে। সাধারন কন্সপিরেসি থিওরি দ্বারা অবসেসড লোকেরা চোখ বুজে এ এজেন্ডার নাম বলে দেয়ঃ'ইল্যুমিনাতি'।
আমি তাদেরকে সমর্থন করিনা। ইল্যুমিনাতি শুধুই ওদের অনেকগুলো শাখা সংগঠনের একটি। যাইহোক, নিকোলা টেসলার ফ্রিএনার্জির বিশ্বপ্রেমিক ভাবনা, এসব নিয়ে বিস্তর গবেষণা, তার অনেক যোগ্যতা থাকার পরেও নোবেল থেকে বঞ্চিত করার বিষয়গুলো সাধারণ জনমনে দুর্বলতা তৈরি করে। অথচ টেসলা ছিলেন নিউটনের অনুরূপ খাটি অকাল্টিস্ট। একমাত্র যাদুকররাই তাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে, কারন সে হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রের এনার্জি ফ্রিকোয়েন্সি ভাইব্রেশনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এসব নিয়ে গবেষণা করেন। টেসলা বলেন,"আপনি যদি মহাবিশ্বের গুপ্ত রহস্যকে খুঁজতে চান তবে এনার্জি, ফ্রিকোয়েন্সি ও ভাইব্রেশন শব্দগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন।" 

মূলত টেসলার দ্বারা হার্মেটিক যাদুশাস্ত্রের এই নীতিগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপের থেকে সাধারন মানুষ এই তিন নীতির ব্যপারে অনেক বেশি কৌতূহলী হয়ে পড়ে। তখন থেকে টনোস্কোপে শব্দের দ্বারা সাইম্যাটিক্স ও এর তাৎপর্যের প্রতি সাধারন মানুষ ঝুঁকে পড়ে। সাইম্যাটিক হলো শব্দের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কমিয়ে বাড়িয়ে বিভিন্ন কমপ্লেক্স জিওমেট্রিক প্যাটার্ন তৈরি। টেসলার যাদুশাস্ত্রের ওই নীতিগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপের পর থেকে পাশ্চাত্যে নতুন করে অকাল্ট রিভাইভ্যাল ঘটে। প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান পিথাগোরিয়ান জিওমেট্রিক্যাল প্যাটার্নের তাৎপর্য মানুষ আধুনিক প্রযুক্তিবলে বুঝতে শুরু করে। একরকমের বলা যায় পাশ্চাত্যে বস্তুবাদী চিন্তাধারা থেকে মানুষ প্রাচীন মিস্টিসিজমে ঢুকতে শুরু করে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে, গোটা বস্তুজগত মূলত ইথারেরই বিভিন্ন ভাইব্রেশন/ফ্রিকোয়েন্সির সিম্ফনি। সবকিছুই অতীন্দ্রিয় শব্দের ফসল। টেসলা বলেন,"আপনি যদি ৩,৬,৯ এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানতেন, তবে আপনি মহাবিশ্বের চাবি পেয়ে যেতেন।"[৪]
সুতরাং এরকমটা হওয়া অস্বাভাবিক না যে বেদান্তবাদী নিকোলা টেসলা সত্যিই ওদেরই অংশ হয়ে কাজ করেছেন কিন্তু পরবর্তীতে পাব্লিক সিম্প্যাথি কুড়াচ্ছেন।এরূপ হওয়া অসম্ভব না যে তিনি ওদের নির্দেশেই জনসাধারণকে ফ্রি এনার্জির সম্ভাবনার স্বপ্ন  দেখিয়েছে, এরপরে বিভিন্ন আর্থসামাজিক বাধাবিপত্তির তৈরি করে অবহেলিত হওয়া দেখিয়েছে, যাতে করে তার ব্যপারে জনমনে একটা জায়গা তৈরি হয়। এসব বিষয় আল্লাহই ভাল জানেন। তবে এ ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই যে তার অধিকাংশ গবেষণাই ছিল অকাল্ট বেজড। এনার্জি-ফ্রিকোয়েন্সি-ভাইব্রেশনকে ঘিরেই নিউএইজ  মুভমেন্টের ল' অব এ্যাট্রাকশান গড়া হয়েছিল। অন্য স্থানে টেসলা মহাবিশ্বের গুপ্ত রহস্য জানতে তিন,ছয় ও নয় নিয়ে গবেষণা করতে তাগিদ দিয়েছেন। তার এই চিন্তাধারা নিউমেরলজি-কাব্বালার সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। সংখ্যাতত্ত্বে সংখ্যাকে জীবন্ত এবং গভীর তাৎপর্যবাহী হিসেবে ধরা হয়।
শব্দই বিভিন্ন শেইপের ম্যাটারে রেজোনেট করে। উদাহরণ স্বরূপ ডান পাশে দেয়া শব্দ দ্বারা উৎপন্ন জিওমেট্রিক এই প্যাটার্নটি কচ্ছপের পৃষ্ঠদেশেও পাওয়া যায়। সুতরাং এর তাৎপর্য হচ্ছে বস্তুজগত সবই মহাজাগতিক শব্দেরই বহিঃপ্রকাশ। এসব বেদান্তবাদ ও বৌদ্ধমতকে সত্যায়ন করে। যাদুকরদের প্রাচীন আকিদা হলো মহাবিশ্ব হচ্ছে ভাইব্রেশন যা শব্দের থেকে তৈরি হয়। বৈদিক শাস্ত্রে মহাবিশ্বকে বলা হয় নটব্রহ্ম[natabrahma], যার অর্থ- ইউনিভার্স হচ্ছে শব্দ।এখানে আর্টিস্ট আর্ট একই। কাব্বালিস্টরা বিশ্বাস করে শব্দের দ্বারা সব কিছুতে প্রভাব ফেলা যায়। তারা হিব্রু এ্যালফাবেটের মধ্যে যাদুকরী শক্তির অস্তিত্বের কথা ভাবে, যার দ্বারা প্রকৃতিতে পরিবর্তন বা প্রভাব বিস্তার করা যায়। টেসলা কর্তৃক এনার্জি ফ্রিকোয়েন্সি ভাইব্রেশনে গুরুত্বারোপের ফলে পাশ্চাত্যের মিস্টিকরা আরো একধাপ এগিয়ে যায় যখন তারা রি-ডিস্কোভার করে মানুষের কথাও ভাল বা মন্দ এনার্জি বহন করে যা বস্তু বা প্রানীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। যাদুকরদের যাবতীয় অকাল্ট প্র‍্যাক্টিস মেইনস্ট্রিমে ঢুকে পড়ে। জাপানের ডঃ মাশারো ইমোটো চাল ডোবানো পানির তিনটি জারের উপর একটি পরীক্ষা করেন যা পরবর্তীতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তিনি তিনটি জারের কাছে গিয়ে ভাল, মন্দ এবং ৩য় পাত্রে কিছু না বলে রেখে যান। কিছুদিন পরে দেখেন যে ভাল কথা যে পাত্রের কাছে বলা হয়েছিল সেটার চাল পঁচে রঙ সাদাটে হয়ে ভাল মানের জিওমেট্রিক প্যাটার্ন তৈরি করে, মন্দ কথা শোনানো পাত্রের ভেতরটা বিদঘুটে কালো রঙ ধারণ করে। ৩য় পাত্রটিতে স্বাভাবিক পচন ক্রিয়া ধরা পরে।
এই পরীক্ষা পানির উপরেও হয়, দেখা যায় ভাল কথা শোনান পানির ফোঁটাগুলোর ক্রিস্টালাইজেশানের পর সেগুলো চমৎকার জিওমেট্রিক প্যাটার্ন ধারণ করে। অন্যদিকে মন্দ কথা শোনানোর গুলো বিভৎস প্যাটার্ন তৈরি করে। এ পরীক্ষার দ্বারা এই উপসংহারে আসা হয় যে পানির স্মৃতি আছে। ডিজনির এ্যানিমেটেড ফিল্ম Frozen এ বার বার একটা কথা শোনানো হয়: Water has memory। এই পরীক্ষণগুলোর প্রচারকারী মিস্টিক ও যাদুকরা পাশ্চাত্যের জনসাধারণের নিকট প্রশ্ন ছোড়ে, যদি ক্ষুদ্র পরিসরেই এত বড় প্রভাব ফেলা সম্ভব তাহলে সেটা মানুষের ক্ষেত্রে কি করা সম্ভব, যেখানে মানবদেহের ৬০% ই পানি! জ্বি তারা বলতে চাচ্ছে,বিভিন্ন এনার্জি- ফ্রিকোয়েন্সি -ভাইব্রেশনের শব্দ/কথা দ্বারা অসুস্থ করে দেয়া, হত্যা সহ সহ বিবিধ অকল্যাণ এবং একইভাবে কল্যাণমুখী কাজের দ্বারা স্বার্থ হাসিলও সম্ভব। অর্থাৎ সেই ঐন্দ্রজালিক যাদুচর্চায় প্রত্যাবর্তন। এভাবে টেসলার মাধ্যমে আবারো যাদুবিদ্যাকে সত্যায়ন এবং নতুন আঙ্গিকে বৈপ্লবিক জাগরণ ঘটে।  বাহ্যত টেসলাকে দেখা যায় প্রবঞ্চিত, অবমূল্যায়িত মেধাবী বিজ্ঞানীরূপে। কিন্তু এরূপ হওয়া অসম্ভব কিছু না যে সেও freemason member বিবেকানন্দের ন্যায় কোন গুপ্ত সংগঠনের সদস্য। কেননা টেসলা ছিল সম্পূর্ণ বেদান্তশাস্ত্রের অনুগত ভক্ত।
তাকে হলিউডের ফিল্মগুলোতেও বিভিন্ন অকাল্ট কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। যেমনটা ট্রান্সফরমার সিরিজের সর্বশেষ ফিল্মটিতে টেসলাকে ফিকশনাল উইটউইক্কান[witwiccan] সিক্রেট সোসাইটির একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে। অর্থাৎ যাদুকর। তাতে স্পষ্ট বলা হয় তিনি অন্যান্য সকল অকাল্টিস্টদের পাশাপাশি তাদের মহাপরিকল্পনায় একাত্ম হয়ে সাথে কাজ করেছেন। ডিজনির ইউটোপিয়ান ফিল্ম Tomorrowland [2015]'এ টেসলাকে দেখানো হয় অন্য অন্য ডাইমেনশনগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর এন্টেনার মূল আবিষ্কার কর্তা হিসেবে যেটা তাদেরকে নতুন আরেক জগতের[Tomorrowland] পথ দেখায়। ফিল্মের ফ্র‍্যাঙ্ক নামের সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার একে একে টেসলা,জুলভার্ন, এডিসন প্রমুখের প্রতিকৃতি দেখিয়ে তাদের অবদানগুলো ফিল্মের নারী ক্যারেক্টার কেইসিকে[মিস নিউটন] দেখাচ্ছিল। তখন কেইসি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,"তার মানে এরা সবাই এইসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিল!"  ফ্র‍্যাঙ্ক বলেন, "এন্টেনাটি আসলে টেসলার করা ডিজাইন ছিল। এর দ্বারা তারা সবধরনের ফ্রিকোয়েন্সি অবজার্ভ করতেন যেমন, সাবস্পেস-ট্রান্সডাইমেনশনাল। তারা মূলত যেটা খুজতেছিলেন সেটা পেয়েছিলেন। টেসলার আবিষ্কারের ক্রেডিট এডিসন নিয়ে যান। জানোই যে এরা একে অন্যকে দেখতে পারত না।" হলিউডের প্রতিটি স্পীচ,এক্সপ্রেশান এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকেরও কোননা কোন অর্থ থাকে। সমস্ত মুভমেন্ট সমস্ত কথা অনেক হিসেব করে নির্ধারিত। কিছু ক্ষেত্রে অর্থহীন বার্তা দিলেও মাঝেমধ্যে  interstellar এর মত সিরিয়াস সায়েন্সফিকশনও বানিয়ে ফেলে। নস্টিক জান্রার ফিল্মগুলো সবচেয়ে বেশি অকাল্ট তাৎপর্য বহন করে।

আপনারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন নিকোলা টেসলা মাঝেমধ্যে সংস্কৃত "আকাশ" শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা কি বোঝায়? আমরা বাংলাভাষীরা এই সংস্কৃত শব্দ নিয়মিত ব্যবহার করলেও আমরা ব্যবহারিক অর্থে ভুল করে থাকি। আকাশ মানে উপরিস্থিত আসমান নয়। বরং এর মূল অর্থ ইথার। ভয়েড বা শূন্যকেও বোঝায়। আকাশিক ফিল্ডের ব্যপারে বৈদিক-ঔপনিষদিক শাস্ত্রে স্পষ্ট অনেক কথাই এসেছে। Chāndogya উপনিষদ মহাবিশ্বের এবং ক্ল্যাসিক্যাল উপাদানগুলোর মধ্যে সম্পর্কের কথা বলেছে: "From this Self (Atman), ākāśaarose; from ākāśa air; from air fire; from fire water; from water the earth." মহাভারতের "শান্তি পর্বে" ফিজিক্যাল ইউনিভার্সের দ্রাবনের ক্রমের ব্যপারে বলা হয়েছে:"প্রচন্ড উত্তাপের দরুন পৃথিবী পানিতে পরিণত হয়েছে, তারপরে অগ্নি, তারপরে বাতাস, তারপর আকাশ[ইথার], তারপরে স্পেস, মন, তারপরে সময়, তারপরে শক্তি এবং অবশেষে ইউনিভার্সাল [মহা]চৈতন্য।"
হিন্দুদের Nyaya ও Vaisheshika দর্শনগত শাখায় বলা হয়েছে যে আকাশ বা ইথার পঞ্চম ফিজিক্যাল উপাদান। এটি একক, চিরন্তন এবং সমগ্র বিস্তৃত পদার্থ যা দুর্ভেদ্য। বেদান্তশাস্ত্রে আকাশ দ্বারা জগতের সমস্ত জিনিসের ভিত্তিমূল এবং মৌলিক প্রথম উপাদানকে বোঝায়,এটাই প্রধান উপাদান। একটি বৈদিক মন্ত্রঃ "pivthivyāpastejovāyurākāśāt" তে পাঁচটি মৌলিক স্থূল উপাদানগুলির প্রাথমিক উপস্থিতির ক্রম নির্দেশ করে।হিন্দুদের Samkhya দর্শনগত শাখা অনুযায়ী আকাশ হলো পঞ্চমহাভূতের মধ্যে একটি (গ্র্যান্ড ফিজিক্যাল ইলিমেন্টস) যার মধ্যে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শব্দ। 

শুধুমাত্র টেসলাই নয় ঐন্দ্রজালিক আকাশিক ফিল্ডকে সরাসরি সংস্কৃত শব্দেই ডেকেছেন অনেক বিজ্ঞানীরা। তাদের চিন্তাধারা ও দর্শন টেসলার থেকে ভিন্ন নয়। তবে এবার বিজ্ঞানীরা বৈদিক আকাশিক ফিল্ড তথা ইথারকে শুধুমাত্র সমস্ত বস্তু জগতের মূল উপাদান বলেই ক্ষান্ত নয়, এরা একে সকল ইনফরমেশন বা তথ্যের আধার প্রমানের চেষ্টা করেছে। বিজ্ঞানীরা একে মহাবিশ্বের মেমরি স্টোরেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এটাই স্থান ও কালের মূল। সময়ের প্রবাহের উপলব্ধির মূলে দায়ী এই আকাশিক ইন্দ্রজাল। রুডলফ স্টেইনারের ধারণাগুলির উপর ভিত্তি করে হাঙ্গেরিয়ান বিজ্ঞানী Ervin László এর Science and the Akashic Field: An Integral Theory of Everything (২০০৪), বইতে মহাবিশ্বের পদার্থ হিসাবে "আকাশিক ফিল্ড" বা "এ ফিল্ড" কে "ইনফরমেশনের ফিল্ড" হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।আরভিন ল্যাজলো একদিকে সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং অন্যদিকে উচ্চ স্তরের প্রাচীন দর্শন (অদ্বৈত বেদান্তবাদ) এর সাথে মিল রেখে এই রচনার একটি স্পষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি অ-প্রকাশিত শক্তি (পরম) এবং উদ্ভাসিত (মহাবিশ্ব) মধ্যে ট্র‍্যাঞ্জিশন এরিয়াকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন: সময় এবং স্থানের বাইরে একটি কজ্যুয়াল ফিল্ড যেখানে প্রকাশিত বস্তুজগতের সমস্ত তথ্য "সংরক্ষিত" আছে। ল্যাজলো একে একটি অ-মাত্রিক হলোগ্রাফিক ইমপ্রিন্ট হিসাবে বর্ণনা করেছেন। প্রকাশিত সমস্ত কিছুই এই এ-ফিল্ড (ইথার/আকাশ) থেকে একটি মাইক্রো এবং ম্যাক্রো স্তরে অন্তর্নির্মিত। তার এই জ্ঞানের উৎস হচ্ছে বেদ। বৈদিক আকাশ বা ইথার তত্ত্বানুযায়ী এই ফিল্ড তথা ব্রহ্মচৈতন্য হলো সকল ভূতভবিষ্যতের জ্ঞান ও তথ্যের আধার। একে পূর্বাঞ্চলীয় আধ্যাত্মবাদের অনুসারীরা আকাশিক রেকর্ড বলে অভিহিত করে। তারা বলে, এই আকাশিক রেকর্ডের ডেটাবেজ সংগ্রহ ও সংরক্ষনে কিছু হায়ার ডাইমেনশনাল এনলাইটেন্ড বিং রয়েছে, যারা এই ফিল্ড অব ইন্টেলিজেন্সে অল্টার্ড স্টেইট অব কনসাসনেসের[চেতনার ওপারে আর্টিকেলে বিস্তারিত] মাধ্যমে জ্ঞানের জন্য আসে তাদেরকে ভূত ভবিষ্যত এবং প্রকৃতির গুপ্ত রহস্যের জ্ঞান দিয়ে আলোকিত করে।পাঠকরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই উচ্চমাত্রার আলোকিত সিদ্ধ সত্তারা মূলত কারা! রামায়ন ও পুরানায় নারদ নামের এক ঋষি এই ফিল্ডে নিজের চৈতন্যকে পৌছে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন। এই ফিল্ডকে ফিল্ড অব ইন্টেলিজেন্স বলা হয়[৫]।
আকাশ আত্মসচেতন বুদ্ধিমান অবিভক্ত সত্তা। এটাই মহাচৈতন্য - ব্রহ্মা! ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম মাইন্ডটিও ছিল এই স্পেস-টাইম জিওমেট্রির বাহিরের আকাশিক বা ইথারিয়েল সাবস্ট্যান্স। বিখ্যাত অকাল্ট প্রিচার গ্রেগ ব্রাডেন বলেন,"স্পেসকে আমরা শূন্য বলি, কিন্তু এটা আসলে খালি নয়। প্রথমত এটা জীবন্ত সারসত্তা ও পদার্থ দ্বারা পরিপূর্ণ, দ্বিতীয়ত, আমরা যা আমাদের দেহের মধ্যে অনুভব করি সেটা আমাদের দেহের বাহিরের জগতকে শূন্যস্থানে যা আছে তার উপর ভিত্তি করে প্রভাবিত করে।স্পেস (আশপাশের শূন্যস্থান) জীবন্ত তরঙ্গায়িত এসেন্স দ্বারা পূর্ণ। আপনাকে বিজ্ঞানে একক শব্দে একমত হতে হবে। কেউ একে বলে "কোয়ান্টাম হলোগ্রাম"। এ্যাপোলো এ্যাস্ট্রোনট এডগার মিচেল একে বলেন " প্রকৃতির মন"।স্টিফেন হকিং বলতেন 'ঐশ্বরিক মন'। অন্যরা একে ফিল্ড বলে। ১৯৪৪ সালে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের জনক ম্যাক্স প্লাঙ্ক এই ফিল্ডের অস্তিত্ব আবিস্কার করেন। তিনি এর নাম দেন ম্যাট্রিক্স। তিনি বলেন সমস্ত বস্তুজগত এমনকি আমাদের দেহের অস্তিত্বের শেকড়ে একটা সচেতন, বুদ্ধিমান মন রয়েছে। তার ওই আইডিয়া থেকে ম্যাট্রিক্স মুভিটি তৈরি হয় এবং আজ পর্যন্ত আমরা অনেক ধারনা পাচ্ছি।"

নোবেলজয়ী ফিজিসিস্ট ব্রায়ান ডেভিড জোসেফসন বলেন,"বেদান্ত ও শঙ্খ শাখাগুলো মনের ও চিন্তার নীতি-প্রক্রিয়াগুলোর মূল চাবিকাঠি ধারন করে যা কোয়ান্টাম ফিল্ডের সাথে সম্পর্কিত অর্থাৎ পারমাণবিক ও আণবিক স্তরের কণার পরিচালনা ও বিতরণ।"রিচার্ড ফাইনম্যান বিশ্বাস করতেন আমাদের মস্তিষ্কের অতীতের রেডিও সিগ্নাল গ্রহনের ক্ষমতা আছে। নিকোলা টেসলাও একই বিশ্বাস রাখতেন।তিনি বলেন,"আমার মস্তিষ্ক শুধুই একটি রিসিভার। এই মহাবিশ্বের একটি মূল আছে যেখান থেকে আমরা সব ধরনের জ্ঞান,শক্তি ও অনুপ্রেরণা লাভ করি। আমি এখনো ওই core এর রহস্যভেদ করতে পারিনি। কিন্তু আমি জানি এর অস্তিত্ব আছে।" 

আকাশ ফিল্ড হলো চেতনার ফিল্ড এখানে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সব আছে। আইনস্টাইন বলতেন সব সময় সব সময়ে বিদ্যমান[all time exist all the time]। সার্নের হিগস বোসন এক্সপেরিমেন্ট প্রমান করে যে একটা অদৃশ্য ফিল্ড সমস্ত স্থানে বিদ্যমান। সময় স্পেস থেকে উৎপন্ন। মেমরি স্পেসে রয়েছে। সাধগুরু আকাশের ব্যাখ্যায় বলেন এটা পঞ্চভূত বা পাঁচটি ক্ল্যাসিক্যাল ইলিমেন্টসগুলোর একটি। আকাশই সেই ঐন্দ্রজালিক বস্তু যা সকল পদার্থের মূল। এটা বাতাসের ন্যায় সর্বত্র ছেয়ে আছে।এটাই সব বস্তুকে গঠন করছে। সকল বস্তুর ভিত্তিমূলে আকাশ বা ইথার হবার দরুন সবকিছুরই ফান্ডামেন্টাল গঠন তন্ত্র, এ্যাজ এ্যাবোভ সো বিলৌ, মানে ম্যাক্রোকজোম মাইক্রোকসম সবই একই রকম ম্যান্ডেল ব্রটের ফ্র‍্যাকটাল জিওমেট্রিক প্যাটার্নের মত। এটাই ইন্দ্রজাল। পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ার জনাব পরম মহান তৈয়ারি বলেন,"আকাশ ধ্বংসশীল নয়, এটা এ্যাটমের মৌলিকতম স্তর যা মহাজাগতিক বস্তুর সৃষ্টি করে এজন্য আকাশকে সাধারন বস্তু জগতে খুজে পাওয়া যায় না। আকাশ হচ্ছে চিরায়ত সুপারফ্লুয়িড বাস্তবতার অস্তিত্ব যেটি ধ্বংস ও সৃষ্টির নীতির বাহিরে রয়েছে।"
- (Idham thadhakshare parame vyoman. Parame vyoman) – Paramahamsa Tewari, Engineer, Physicist and Inventor

ইথারকে বাহ্যত ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ন্যাচারাল ফিলসফি তথা বিজ্ঞান থেকে বাদ দেয়া হলেও অন্যদিক দিয়ে নতুন মোড়কে আরো শক্তিশালী আসনে এই ঐন্দ্রজালিক ফিল্ডের তত্ত্বকে আনা শুরু হয়। এই দুয়ার উন্মোচিত করে কোয়ান্টাম মেকানিকস। আমরা ইতোপূর্বে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরু এবং নিগূঢ় তত্ত্বের উৎস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেহেতু বেদান্তবাদী শাস্ত্র থেকে এর জন্ম, সুতরাং এটা খুব প্রত্যাশিত যে, ইন্দ্রজালের শিক্ষাকে যেকোনভাবে কোয়ান্টামতত্ত্বই পুনরুজ্জীবিত করবে। সেটাই করেছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স স্পেসটাইমকে অত্যন্ত ছোট স্কেলে এনার্জি দ্বারা পরিপূর্ণ হিসাবে বর্ণনা করে, যেটা অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে বার বার উপস্থিত ও অদৃশ্য হয়ে ওঠানামা করার(ফ্লাকচুয়েশন) দ্বারা পার্টিকেল জেনারেট করে। এ তত্ত্ব পল ডেরাকের মতো কিছু পদার্থবিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রস্তাবিত হয়েছিল যে, এই কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামটি  আধুনিক পদার্থবিদ্যায় ইথারের সমতুল্য হতে পারে। পল ডেরাক ১৯৫১ সালে লিখেছিলেন: "বস্তুগত জ্ঞান ১৯০৫ সাল থেকে অনেকটা অগ্রগতি লাভ করেছে,  বিশেষত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আগমনের ফলে, এবং পরিস্থিতি [ইথারের ব্যপারে বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসযোগ্যতা] আবারও পরিবর্তিত হয়েছে। যদি কেউ বর্তমান বিদ্যমান জ্ঞানের আলোকে প্রশ্নটি পরীক্ষা করে দেখেন,যেমন একজন আবিষ্কার করেছেন যে ইথার আপেক্ষিকতার দ্বারা বাতিল হয় না, এবং ইথারকে ব্যাখ্যা করার জন্য ভাল কারণগুলি এখন এডভান্স করা যেতে পারে ...আমরা দেখছি যে স্পেস-টাইমের সমস্ত পয়েন্টে বেগ আছে, এটা ইলেক্ট্রডাইনামিক্সের ক্ষেত্রে মৌলিক ভূমিকা পালন করছে। এটিকে বাস্তব ফিজিক্যাল জিনিসের বেগ হিসাবে বিবেচনা করা স্বাভাবিক। তাই ইলেক্ট্রডাইনামিক্সের নতুন তত্ত্বের সাথে [ভ্যাকুয়ামে ভার্চুয়াল পার্টিকেল দ্বারা পূর্ণ] আমরা বরং ইথার ফিল্ডকে রাখতে বাধ্য হই।"
১৯৮৬ সালে জন বেল, পল ডেভিসিন এর দ্বারা "দ্য ঘোস্ট ইন দ্য অ্যাটম" নামক এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, ইথার থিওরি একটি রেফারেন্স ফ্রেইম প্রদানের দ্বারা ইপিআর প্যারাডক্সটিকে সমাধান করতে সহায়তা করতে পারে, যাতে সংকেত আলোর চেয়ে আরও দ্রুত যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন যে লরেন্টজ কন্ট্রাকশন পুরোপুরি সুসংগত, আপেক্ষিকতার সাথে বেমানান নয়, এবং মাইকেলসন-মর্লি পরীক্ষার সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ইথার তত্ত্ব তৈরি করতে পারে। বেল দাবি করেন যে, ইথারকে এরকম ভুলভাবে দার্শনিক ভিত্তিতে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল যে: "যা অবজার্ভেবল নয় তার অস্তিত্ব নেই " [পৃঃ 49]। আইনস্টাইন নন-ইথার তত্ত্বটিকে সহজ এবং আরও মার্জিত বলে খুঁজে পেয়েছিলেন, তবে জন বেল বলেন এর জন্য ইথার তত্ত্ব বাতিল হয়ে যায় না। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত্তিতে আসা যুক্তি ছাড়াও, বেল ইথারকে পুনরুত্থিত করার পরামর্শ দেয় কারণ এটি একটি দরকারী শিক্ষাগত ডিভাইস। আর এটা এই যে, ইথারের অস্তিত্বের কল্পনা করে অনেকগুলি সমস্যা আরও সহজেই সমাধান করা হয়।
১৯৮৬ জুলাই মাসে ইউএস এয়ারফোর্স মাইকেলসন মর্লি এক্সপেরিমেন্টটিকে পুনরায় রেপ্লিকেট করে। তারা আরো উন্নতর টেকনলজি ব্যবহার করে। তারা ইথারের অস্তিত্বকে আবিষ্কার করে। তারা সায়েন্টিফিক জার্নাল Nature এর ৩২২ নং ভলিউমে প্রকাশ করে যে,"এই ফিল্ডটির অস্তিত্ব আছে!"। জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ইথার সম্পর্কে বলেছেন, "এই গ্রন্থের বেশ কয়েকটি অংশে একটি দেহ থেকে অন্যদেহে স্থানান্তরিত যান্ত্রিক ক্রিয়া দ্বারা তাদের মধ্যবর্তী স্থান দখল করে এমন একটি মাধ্যমের মাধ্যমে তড়িৎ চৌম্বকীয় ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আলোক তত্ত্বও একটি মাধ্যমের অস্তিত্ব ধরে নিয়েছে। আমাদের এখন দেখাতে হবে তড়িৎ চৌম্বকীয় মাধ্যমের বৈশিষ্ট্যগুলো লুমিনিফারাস মিডিয়ামের থেকে অভিন্ন।"
Louis de Broglie বলেছিলেন, "যে কোনও কণা,যা সদা বিচ্ছিন্ন, তা কোনও গোপন মাধ্যমের সাথে অবিচ্ছিন্ন" "এনার্জেটিক কন্টাক্ট" হিসাবে কল্পনা করতে হবে''। তিনি ইথারকে পাইলট ওয়েভ নামের দ্বারা প্রকাশ করেন। ইথার তত্ত্বটি মূলত প্রাচীন অকাল্ট স্পিরিচুয়াল ইন্ডিটারমিনিস্টিক বিশ্বব্যবস্থার কথা বলত যার সাথে আইনস্টাইনিয়ান গ্রুপের সাথে বিতর্ক ছিল। আইনস্টাইন  মন্তব্য করেছিলেন যে "ঈশ্বর মহাবিশ্বের সাথে ডাইস খেলেন না"। এবং যারা তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন তারা এমন একটি ধ্রুপদী, নির্বিচারবাদী ইথার তত্ত্বের অনুসন্ধান করছেন যা কিনা কোয়ান্টাম-মেক্যানিক্যাল প্রেডিকশনকে একটি পরিসংখ্যানের নিকটবর্তী হিসাবে[স্ট্যাটিস্টিক্যাল এ্যাপ্রোক্সিমেইশান] চিহ্নিত করবে, এটি হবে একটি হিডেন ভেরিয়েবল থিওরি। বিশেষত, জেরার্ডের হুফ্ট বলেছিলেন: "আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে কী ধরনের গতিশীল ঘটনা ঘটছে তা বর্ণনা করে না, বরং আমাদের সম্ভাব্য ফলাফল দেয়। আমার কাছে এটি অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয় যে প্ল্যাঙ্ক স্কেলে গতিবিদ্যার জন্য যে কোনও যুক্তিসঙ্গত তত্ত্ব এমন প্রক্রিয়াগুলোতে নিয়ে যায়, যেগুলি বর্ণনা করতে এত জটিল, যেকারও আরো বৃহত্তর পরিসরে stochastic fluctuations এর প্রত্যশা করা উচিত।এটা যুক্তিসংগত হবে যে প্ল্যাঙ্ক ডোমেনের জন্য একটি ক্ল্যাসিক্যাল ডিটারমিনিস্টিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠার।  কেউ অনুমান করতে পারে যে আমরা আজ কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে যাকে বলে থাকি তা এই ডাইনামিকসকে পরিসংখ্যানগতভাবে হ্যান্ডেল করার জন্য একটি উদ্ভাবনী কৌশল ছাড়া আর কিছু না।" Blasone, Jizba and Kleinert জি হুফ্টের গবেষণাপত্রের সাম্প্রতিক প্রস্তাবকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, যেখানে কোয়ান্টাম তত্ত্বকে পূর্নাঙ্গ ফিল্ড থিওরি হিসাবে দেখা হয় নি, বরং বাস্তবে এটি ডাইনামিকসের গভীর স্তর থেকে উদ্ভূত একটি অদ্ভুত ঘটনা। অন্তর্নিহিত ডাইনামিক্সকে ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স এর সাথে যথার্থ ইনফরমেশন লস কন্ডিশনের একক Lagrangian হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। কন্সট্রিয়্যান্ট ডাইনামিকস এর প্রকৃত প্রকৃতি সম্পর্কে প্লসিবল অনুমানের সাথে, classical Dirac-Bergmann algorithm যখন constrained dynamics এরজন্য ক্ল্যাসিকাল অবিচ্ছেদ্য পথকে প্রয়োগ করা হয় তখন কোয়ান্টাম থিওরি ইমার্জ করে।
লুই ডি ব্রোগলি বলেন, "যদি কোনও লুকানো সাব-কোয়ান্টাম মাধ্যমকে ধরে নেওয়া হয়, তবে এর প্রকৃতি স্বরূপের জ্ঞানটি কাঙ্ক্ষিত মনে হবে। এটি অবশ্যই বেশ জটিল চরিত্রের। এটি সর্বজনীন রেফারেন্স মিডিয়াম হিসাবে কাজ করতে পারেনা,যেহেতু তাহলে এটি আপেক্ষিকতা তত্ত্বের পরিপন্থী হবে। "
১৯৮২ সালে, রোমানিয়ান ফিজিসিস্ট, Ioan-Iovitz Popescu লিখেছিলেন ইথার "বস্তুরই এক প্রকারের অস্তিত্বগত একটি রূপ, তবে এটি সাধারণ (পারমাণবিক এবং আণবিক) পদার্থ বা রেডিয়েশন (ফোটন) থেকে গুণগতভাবে পৃথক হয়"। ইথার ফ্লুইডটি "জড়তার নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এর উপস্থিতি স্থান-কাল জ্যামিতির পরিবর্তন সাধন করে।" লি সেজের আল্ট্রা মুন্দানি করপাস্কেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি পোপেস্কুর থিওরিটি একটি সসীম ইউনিভার্সের মডেলের কথা বলে যেটি "ছোট ভর, আলোর গতিতে বিশৃঙ্খলভাবে ভ্রমণকারী পার্টিকেল দ্বারা পরিপূর্ণ বলা হয়" এবং ম্যাটেরিয়াল বডি বা বস্তুসমূহ " ইথারন নামক কণা দ্বারা গঠিত "। বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী এবং জৈব-প্রকৌশলী অধ্যাপক Sid Deutsch অনুমান করেছেন যে "বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় তরঙ্গ বহন করতে" একটি "গোলাকার, ঘূর্নয়মান " ইথার কণিকার অস্তিত্ব অবশ্যই আছে এবং ডার্ক ম্যাটারের ঘনত্ব ব্যবহার করে এর ব্যাস এবং ভর অর্জন করেছেন। Allen Rothwarf প্রস্তাব করেছিলেন, একটি অধঃপতিত ফার্মি ফ্লুইড মডেল, "প্রাথমিকভাবে ইলেকট্রন এবং পজিট্রনগুলির সমন্বয়ে গঠিত" যা "মহাবিশ্বের বয়স অনুসারে সময়ের সাথে সাথে" আলোর গতি হ্রাসের পরিণতি অর্জন করে।" মহাজাগতিক এক্সটেনশনে মডেলটিকে "মহাবিশ্বের ডিসিলারেটিং এক্সপ্যানশনকে প্রেডিক্ট করতে (থিওরিটিকে)এক্সটেন্ড করা হয়েছিল"।এভাবেই মাঝেমধ্যে কিছু পদার্থবিজ্ঞানী বর্তমান ফিজিক্যাল মডেলগুলির ঘাটতিসমূহ সমাধান করার জন্য ইথারের ধারণাটি পুনঃপ্রবর্তনের চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে  ক্ল্যাসিক্যাল ইলিমেন্টের সম্মানে ডার্ক এনার্জির একটি প্রস্তাবিত মডেলের নাম দেওয়া হয়েছে "quintessence"।এটাকে ইথারেরই বিকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই ধারণাটি পর্যবেক্ষণাধীন এক্সিলারেটিং মহাবিশ্বের ব্যাখ্যা হিসাবে ডার্ক এনার্জির অনুমানমূলক রূপের সাথে সম্পর্কিত। একে পঞ্চম মৌলিক শক্তিও[ফিফথ ফান্ডামেন্টাল ফোর্স] বলা হয়।

 ১৮৯৭ সালে ম্যারি কুরী কিছু দুর্লভ ধাতু থেকে অদ্ভুত রশ্মি দেখলেন যাকে তিনি নাম দিলেন রেডিও এক্টিভিটি। এরপরে ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন এ্যাটমের অস্তিত্ব ও আকৃতি নিয়ে ধারণা দেন। এর পরে নিউজিল্যান্ডের আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ম্যানচেস্টারে একটা পরীক্ষা করেন যার দ্বারা এ্যাটোমের ভেতরকার অবস্থার ব্যপারে ধারনা লাভ করেন। এরপরে বিজ্ঞানীগন দেখলেন এ্যাটমের ভেতরটা একেবারেই শূন্য। পল ডের‍্যাকই সর্বপ্রথম পদার্থবিদ যিনি কোয়ান্টাম ও ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স একত্রিত করার চেষ্টা করেন।পল ডের‍্যাকের ইক্যুয়েশন নতুন এক ধারনাকে প্রস্তাব করেন। সেটা ছিল এন্টি ম্যাটার। তার এন্টি ম্যাটারের আইডিয়া একটা ইলেক্ট্রনকে ব্যাখ্যা করতে পারত, কিন্তু একাধিক ইলেক্ট্রনকে ব্যাখ্যা করতে পারত না যার জন্য নতুন আরেকটি থিওরির প্রয়োজন ছিল। এরপর চলে আসেন রিচার্ড ফাইনম্যান। ফাইনম্যানকে বিংশ শতাব্দীতে আইনস্টাইনের পরে ২য় শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী ধরা হয়। তিনি কোয়ান্টামইলেক্ট্রডাইনামিক্স নিয়ে কাজ করেন। তিনি আবিষ্কার করেন শূন্যস্থান(স্পেস/ভ্যাকুয়াম) আসলে শূন্য নয় বরং পদার্থ দ্বারা পরিপূর্ণ। ভ্যাকুয়ামে প্রতিনিয়ত ম্যাটার ও এন্টি ম্যাটার প্রতিনিয়ত সৃষ্টি ও ধ্বংস প্রক্রিয়া চলছে।একে পদার্থবিজ্ঞানীদের ভাষায় বলা হয় কোয়ান্টাম ফোম। রিচার্ডফাইনম্যান গানিতিক জটিলতা বাদ দিয়ে কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রডাইনামিক্সের একটা বিতর্কিত ইডিওসিনক্রেটিক ডায়াগ্রাম তৈরি করেন।
বিশ্বের সব নামজাদা পদার্থবিজ্ঞানীদের কনফারেন্স হয় শেল্টারআইল্যান্ডে। ফাইনম্যান ঠিক করেন তার থিওরি ডায়াগ্রাম সেখানে উত্থাপন করবেন। কনফারেন্সে উপস্থিত হলেন। সবাই একে একে দাড়িয়ে তাদের হাইপোথিসিস উত্থাপন করতে লাগলেন। কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রডাইনামিক্স এর সঠিক ব্যাখ্যা না পেয়ে সবাই হতাশ হচ্ছিল। অবশেষে ফাইনম্যানের পালা, সে নির্ভয়ে তার ডায়াগ্রাম পেশ করলেন।এতেই বিপত্তি বাধলো। নিলস বোর দাড়িয়ে চরম আপত্তি জানালেন। তিনি সারাজীবন যে এ্যাটমিক স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করেছেন এটা তার বিপরীত। পল ডির‍্যাকও বিরুদ্ধাচারণ করলেন। এমনকি ফাইনম্যানকে এমন ইডিয়ট সাব্যস্ত করা হলো, যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যপারে একদম অজ্ঞ। ফাইনম্যানের একমাত্র অপরাধ ছিল ভিজ্যুয়ালাইজেশন। পরবর্তীতে ফাইনম্যান আরেকজন পদার্থবিদ জুলিয়াকে সাথে নিয়ে আবারো ফাইনম্যান তার তত্ত্বকে উত্থাপন করেন এবং গ্রহনযোগ্যতা লাভ করেন।
এরপরে পদার্থবিদ রবার্ট এলফরওয়ার্ড ক্যাশমেয়ার প্রমাণ করেন, দুটি মেটাল প্লেট ভ্যাকুয়ামের ভার্চুয়াল পার্টিকেলগুলো পরস্পরের দিকে টানে।এটা প্রমাণ করে মূলত ভ্যাকুয়াম স্পেসই আসল মেকানিক্যাল ফোর্স। শূন্যস্থানই পদার্থের ভার্চুয়াল স্থান, সমস্ত শক্তি ও পদার্থের মূল আধার। ডাঃ হ্যারল্ড ই পুথফ বলেন,"১৯৬৪ সালের দিকে রবার্ট এল ফরোয়ার্ড নামের Hughes Laboratory এক গবেষক দেখিয়েছিলেন যে Casimir Effect নামে একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে যা এটা দেখায় যে এই এনার্জিকে ব্যবহার করা যেতে পারে।" 

অতএব বুঝতেই পারছেন, নিকোলা টেসলা একা নন। তার মত আরো অনেকেই অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করছেন। উদ্দেশ্য,এ ম্যাজিক্যাল ইথারিয়াল উপাদানকে শুধুমাত্র স্পিরিচুয়াল যাদুসংক্রান্ত চর্চার গণ্ডি থেকে বের করে যান্ত্রিক পর্যায়ে ব্যবহার করা। এর দ্বারা দুনিয়াতে স্বর্গীয় সমৃদ্ধি আর উৎকর্ষতা সাধন করে বৈদিক অদ্বৈতবাদী চেতনায় বিশ্ববাসীকে একসুতোয় গাঁথা। কাব্বালিস্টদের লক্ষ্যও অভিন্ন। এই স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও স্বপ্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসছে এ আর্টিকেল সিরিজের শেষ পর্বে। 



ঐন্দ্রজালিক শিক্ষাসমূহঃ

জুয়েলস অব ইন্দ্র বা ইন্দ্রের ইথারিয়েল মায়াজাল বেশ কিছু তাৎপর্য বহন করে। উপরে দেখিয়েছি বৈদিক-বৌদ্ধ দর্শনে ইন্দ্রজাল দ্বারা মহাবিশ্বের হলোগ্রাফিক আন্তঃসম্পর্কযুক্ত আন্তঃনির্ভরতা এবং মায়াবাদের শিক্ষা দেয়।

1. ইউনিভার্সের হলোগ্রাফিক প্রকৃতি:
হলোগ্রাম তৈরির অনেক আগে, রত্নের জালটি[জুয়েলস অব ইন্দ্র] হলোগ্রাফির বৈশিষ্ট্যের একটি দুর্দান্ত বর্ণনা: হলোগ্রামের প্রতিটি পয়েন্টে অন্যান্য সকল পয়েন্ট সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। রত্নগুলোর এই প্রতিবিম্বিত প্রকৃতি হলোগ্রাফিক প্রজেকশনের আদি রেফারেন্স হিসেবে ধরা যায়। মাইকেল ট্যালবোটের দ্য হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সে সুন্দরভাবে বর্ণিত রয়েছে যে এই ধরণের ঐন্দ্রজালিক উপমা বিজ্ঞান বিশ্বজগতের একটি প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য শুধু তাই নয়, এটা মানুষের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের ব্যাখ্যা হিসেবেও গ্রহণযোগ্য বলে ফিজিসিস্টদের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছেন।
2. সমস্ত বস্তুর আন্তঃসংযুক্তিঃ
জালের কোনও রত্নকে স্পর্শ করা হলে নোডের অন্যান্য সমস্ত রত্নগুলি প্রভাবিত হয়। এটি সমগ্র মহাবিশ্বের প্রত্যেকের মাঝে গোপন আন্তঃসংযোগ এবং আন্তঃনির্ভরতার সাথে কথা বলে এবং বৌদ্ধধর্মে "ডিপেন্ডেন্ট অরিজিনেশান" ধারণার একটি অপ্রত্যক্ষ উল্লেখ রয়েছে। ইন্দ্রের জালটি জন বেলের থিয়োরামের প্রাচীন উদাহরণ, বা ননলোকাল তত্ত্ব। পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রিতজফ কাপ্রা বলেন,"মহাবিশ্ব একটি আন্তঃসংযুক্ত সমগ্র যেখানে কোনও অংশই অপর অংশের চেয়ে বেশি মৌলিক নয়, যাতে কোনও অংশের বৈশিষ্ট্য অন্য সমস্ত অংশের দ্বারা নির্ধারিত হয়। সেই অর্থে, কেউ বলতে পারে যে প্রতিটি অংশই অন্যান্য সমস্ত অংশকে ‘ধারণ করে’ এবং প্রকৃতপক্ষে পারস্পরিক প্রতিমূর্তির বিষয়টি প্রকৃতির রহস্যময় অভিজ্ঞতার[মিস্টিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স] বৈশিষ্ট্য বলে মনে হয়। ”
[Capra, Fritjof, The Tao of Physics , Shambhala Publications, Inc, 5 Edition, 2010]
৩.বস্তুজগতের অস্তিত্ব নেইঃ
প্রতিটি নোড, একজন ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করে, অন্য সমস্ত নোডের গুণাবলীকে ধারন করে।  হিন্দুধর্ম অদ্বৈত বেদান্তশাস্ত্রে ও বৌদ্ধধর্ম অনুসারে বস্তুজগতের এমন ননসলিড বা প্রকৃত সহজাত স্বভাবের অভাবের বিষয়টিকে পাওয়া যায়, এটা ইন্দ্রের সকল নোডের গুণাবলীতে প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ সকলেই একই বৈশিষ্ট্য বা একক গুনাবলীর স্বকীয়তা বলে কিছুনেই।
৪. অ -স্থানীয়ত্ব: 
ঐন্দ্রজালিক সমস্ত নোডগুলি কেবল প্রতিচ্ছবি হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত দেয়, যার ফলে এর কোন নির্দিষ্ট একক উৎস পয়েন্ট পাওয়া যায় না, যেখানে থেকে এর সমস্ত উত্থিত হয়েছিল। অর্থাৎ সবকিছুই ননলোকাল।
5. অন্তর্নিহিত জ্ঞানঃ
মহাবিশ্বের সমস্ত আলোর পুরোপুরি প্রতিবিম্বিত করার ক্ষমতা প্রমাণ করে যে, সমস্ত নোডের মূলে রয়েছে অন্তর্নিহিত ট্রান্সেন্ডেণ্টাল জ্ঞান, যা সমস্ত সংবেদনশীল প্রাণীর প্রতিনিধিত্ব করে, এবং সবকিছুই সহজাত বুদ্ধ প্রকৃতির বলে প্রতিপন্ন হয়।
6. ইল্যুশন বা মায়াঃ
সমস্ত নোডগুলি কেবল অন্য সকলের প্রতিবিম্ব যা সমস্ত উপস্থিতিকে মায়াজাল প্রকৃতির বোঝায়। বাহ্যিকভাবে যা দেখি সেটা আসল বাস্তবতা নয়, বরং বাস্তবতার রিফ্লেক্সন।[৭]

ইথার নামটিকে বিদায় দানের পর কোয়ান্টাম বিপ্লবের বিগত কয়েক দশকে ইন্দ্রজালকে পদার্থবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন শব্দে, বিভিন্ন পরিভাষায় বলে আসছে। কারো কাছে এটা কোয়ান্টাম ফিল্ড অব ইন্টেলিজেন্স, কেউ বলছে কোয়ান্টাম মাইন্ড, কেউ বলছে ইউনিভারসাল প্রোটো কনসাসনেস,কারো কাছে ভ্যাকুয়াম স্পেস, কেউ ডাকছে জিরো পয়েন্ট ফিল্ড,কারো কাছে কোয়ান্টাম ফোম, কারো কাছে পাইলট ওয়েভ, কেউ বলে কোয়ান্টাম ওয়েভ ফাংশন,কেউ বলে কোয়ান্টাম স্যুপ, কেউ বলে ইমপ্লিকেইট অর্ডার, কেউ বলে প্ল্যাঙ্ক স্কেল, কেউ বলে ইউনিফাইড ফিল্ড, কেউ বলে সুপারস্ট্রিং ফিল্ড। লেখিকা Lynn mctaggart এটিকে বলেছেন "দ্য ফিল্ড"। সার্ন ল্যাবের পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ জন হাগেলিন বলেন, "বিগত কয়েক শতকে আমাদের বাস্তব জগতের নীতিপ্রকৃতির ব্যপারে অনেক গভীর জ্ঞান অর্জিত হয়েছে।ম্যাক্রোস্কপিক থেকে মাইক্রোস্কপিক লেভেলে।মলিকিউলার থেকে শুরু করে প্রকৃতির এটোমিক, সাবনিউক্লিয়ার লেভেল পর্যন্ত। যাকে বলে ইলেক্টইউনিফাইড ফিল্ড, গ্রান্ড ইউনিফাইড ফিল্ড,সুপারইউনিফাইড ফিল্ড। আমরা যেটা খুজছি সেটা হচ্ছে ইউনিভার্সের কোর বেসিস, ইউনিভার্সের ফাউন্ডেশন। যেটা সিঙ্গেল ইউনিভার্সাল ফিল্ড অব ইন্টেলিজেন্স। এমন এক ফিল্ড যেটি গ্র‍্যাভিটির সাথে ইলেকট্রম্যাগনেটিজম, লাইট, রেডিওএক্টিভিটি, নিউক্লিয়ার ফোর্সের সাথে সংযুক্ত করবে। সুতরাং প্রকৃতির সব ধরনের ফোর্স ও পার্টিকেল যেমন কোয়ার্ক,প্রোটন,নিউট্রনকে সংযোগ ঘটাবে। এটা হচ্ছে একক ওশেন অব এক্সিস্টেন্সের বিভিন্ন তরঙ্গ বা ঢেউ। যাকে বলা হয় ইউনিফাইড ফিল্ড বা সুপারস্ট্রিং ফিল্ড। একক ইউনিভার্সাল ফিল্ড অব ইন্টেলিজেন্স, অস্তিত্বের মহাসমুদ্র, মাইন্ড ও ম্যাটারের একদম ভিত্তিমূলে অবস্থিত। সকল ফোর্স ও পার্টিকেল এবং বস্তুত সমস্তকিছুই এই মহাসমুদ্রের ঢেউ। এটাই হচ্ছে ইউনিফাইড ফিল্ড এবং এটা বস্তুত ননম্যাটেরিয়াল ফিল্ড। গ্রহ, বৃক্ষ,প্রানী,জনগন সবকিছুই সুপারস্ট্রিং ফিল্ডের তরঙ্গের কম্পন।আমরা সত্যিই আসলে একটি চেতনা বা ধারনাগত মহাবিশ্বে বাস করি। কোয়ান্টাম মেকানিকস শুধুই সম্ভাব্য তরঙ্গের ক্রিড়া ও প্রদর্শনী। এই কথাগুলোর মূল বক্তব্য এটাই যে আপনি প্রকৃতির নীতিগুলোর যত গভীরে প্রবেশ করবেন ততই অবস্তুগত অস্তিত্বকে দেখা যাবে। বরং ততই জীবন্ত চেতনাময় মহাবিশ্বকে দেখা যাবে। এরপরে আমরা একেবারে ভিত্তিমূলের ইউনিফাইড ফিল্ডে পৌছালে দেখব এটা একটি ফিল্ড অব ইন্টেলিজেন্স। কারন এটা মহাবিশ্বের সকল মৌলিক পার্টিকেল, ফোর্স ও নীতির ফাউন্টেনহেড যা মহাবিশ্বের সকল প্রাণ সত্তাকে পরিচালনা করে। এটাই ইউনিফাইড ফিল্ডকে প্রকৃতির সবচেয়ে বেশি কন্সেন্ট্রেটেড ফিল্ড অব ইন্টেলিজেন্স করে। এটা অবস্তুগত, গতিশীল বুদ্ধিবৃত্তিক সত্তা। এগুলোই ইউনিফাইড ফিল্ডের উপাদান।"

এই ইথারিয়েল ঐন্দ্রজালিক ইউনিফাইড ফিল্ডের ব্যপারে সবচেয়ে বিশদব্যাখ্যা দিয়েছেন ইহুদী পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ ডেভিড বোহম। বোহমের ইহুদী ব্লাডলাইন উল্লেখের উদ্দেশ্য এই যে পদার্থবিদ্যার উৎকর্ষের পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে ইহুদিদের কাব্বালাহ। কাব্বালিস্টিক সমস্ত কিতাবাদিকে বলা যায় পদার্থবিজ্ঞানেরই কিতাব। তাতে প্রকৃতির নীতি প্রকৃতির এমন সব উচ্চমার্গীয় বিষয়ও উল্লেখ আছে যা এখনো প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞান সরাসরি আলোচনা করেনা। কাব্বালার ওরাল ট্রেডিশন সবচেয়ে শক্তিশালী সেন্ট্রাল ইস্টার্ন ইউরোপে। মজার বিষয় হলো ইউরোপকেন্দ্রীয়  অধিকাংশ পদার্থবিজ্ঞানীরা এই এলাকা থেকে এসেছে। এমনকি আইনস্টাইনও ইহুদি পদার্থবিদ। এরা সকলেই বৈদিক ইন্দ্রজালের পথে হেটেছে। আইনস্টাইন ছিলেন ভগবতগীতা এবং বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী। তার দৃষ্টিতে সবচেয়ে সায়েন্টিফিক ধর্ম হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম, তিনি এর মাঝে কস্মিক রিলিজিয়াস ফিলিং পেয়েছেন যেটাকে ভবিষ্যতে গোটা পৃথিবীর একক ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার আশা পোষন করেছেন। একইভাবে থিওসফিক্যাল সোসাইটির যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির ভক্ত ছিলেন মহান কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট ডঃ ডেভিড বোহম। 

ডেভিড বোহম ইন্দ্রজালবিদ্যা তথা আকাশিক ফিল্ডের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি ইউনিফাইড ফিল্ড তথা সমস্ত বস্তুজগতের ভিত্তিমূলের সুপারফ্লুইড ইথারিয়েল রিয়ালিটির এবং বস্তুজগতের স্তরকে আলাদা দুইভাগে ভাগ করেন। এনফোল্ডেড অর্ডার বা সাবএ্যাটোমিক রিয়ালিটিকে নাম দিয়েছিলেন ইমপ্লিকেইট অর্ডার আর আমাদের বস্তুজগতকে বলেছেন এক্সপ্লিকেট অর্ডার। সমস্ত ভ্যাকুয়াম স্পেস বা শূন্যস্থান জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই ইমপ্লিকেট অর্ডার। এই স্পেস শূন্য নয় বরং ইনফিনিট এনার্জিতে ভরা যার ফ্লাকচুয়েশন থেকেই সৃষ্টি হয় ম্যাটার বা সলিড পদার্থ। ডাঃ বোহম অনুমান করেছিলেন কণাগুলি পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতিতে বিদ্যমান রয়েছে। তিনি নিলস বোরের অলঙ্ঘনীয় প্রাচীরের নীচে একটি বাস্তবতা ধরে নিয়েছিলেন। তিনি এ ফিল্ডটিকে ‘কোয়ান্টাম পটেনশিয়াল’ নাম দিয়েছিলেন। এটি গ্রাভিটির মতো সমস্ত স্থান জুড়ে আছে; তবে দূরত্বের জন্য কমেনি। সারকথা হচ্ছে এটি হচ্ছে ইথার। অংশগুলির আচরণটি আসলে পুরোটা দ্বারা সংগঠিত ছিল।তিনি বলেন যে এই wholeness আসলে আরও প্রাথমিক বাস্তবতা [প্রাইমোর্ডিয়াল রিয়ালিটি]। বোহমের কোয়ান্টাম পটেনশিয়ালের ধারণা অনুযায়ী সাবোটমিক কণাগুলি অত্যন্ত জটিল, গতিশীল সত্তা যা একটি সূক্ষ্ম পথ অনুসরণ করে এবং তা সূক্ষ্ম শক্তি দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে কোয়ান্টাম পটেনশিয়ালিটি সমস্ত স্থানে ছড়িয়ে আছে এবং তা সমগ্র পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে কণার গতি নির্দেশ করে। ডাঃ বোহমের কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাখ্যাতে, লোকেশানের অস্তিত্ব বলে কিছু থাকেনা। "মহাকাশের সমস্ত পয়েন্টের স্থানগুলো অন্যান্য পয়েন্টগুলির সমান।"  ননলোকালিটি বোহমের গবেষণার একটি কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে ছিল।সার্নের পদার্থবিজ্ঞানী জন বেল বোহমের কাজে মুগ্ধ হয়ে নন লোকালিটির প্রমাণে কাজ শুরু করেন এবং প্রমান পান যে সব নন লোকাল। বোহম বলেন,“কোয়ান্টাম সম্ভাব্যতা সমস্ত স্থানের[স্পেস] মধ্যে ছড়িয়ে আছে, সমস্ত কণা অ-স্থানীয়ভাবে পরস্পর সংযুক্ত রয়েছে। সাবএ্যাটমিক স্পেসের শূন্যস্থানের মধ্যে দিয়ে চলন্ত কণাগুলো একে অপরের থেকে পৃথক নয় এবং এটা এমন একটি জিনিস যেখানে সমস্ত জিনিস অবিচ্ছিন্ন জালের[net] অংশ এবং এমন একটি স্পেসে এম্বেডেড হয়ে থাকে যেটা ঠিক ততটাই বাস্তব ও প্রক্রিয়াসমৃদ্ধ যেমন করে এর মধ্য দিয়ে পদার্থ প্রবাহিত হয়।"

অর্থাৎ বোহম সরাসরি ইন্দ্রজালকে বৈজ্ঞানিক পরিসরে ব্যাখ্যা করছেন সায়েন্টিফিক টার্মিনোলজির দ্বারা। ইন্দ্রজালটি পরস্পর সংযুক্ত এবং জালে অজস্র রত্ন রয়েছে যার উপর অন্যসকল রত্নের প্রতিফলন ঘটে। অর্থাৎ এটি একটি ইন্টারকানেক্টেড ওয়েব যার প্রতিটির মাঝে প্রতিটির চিত্র বিদ্যমান, অর্থাৎ মহাবিশ্বের প্রতিটি অংশ বা পার্টিকেলে গোটা মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেলের ইনফরমেশন এনফোল্ড অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, "আমরা সকলেই অদৃশ্য সংযোগের একটি ফ্যাব্রিক দ্বারা সম্পর্কযুক্ত। এই ফ্যাব্রিক ক্রমাগত পরিবর্তন এবং বিকশিত হয়। এই ক্ষেত্র বা ফিল্ডটি সরাসরি আমাদের আচরণ এবং আমাদের উপলব্ধি দ্বারা প্রভাবিত হয়।...যেমন একটি হলোগ্রামের প্রতিটি অংশে পুরো চিত্র রয়েছে, তেমনি মহাবিশ্বের প্রতিটি অংশ পুরোটি এনফোল্ড অবস্থায় আছে।"

১৯৪০ এর সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় লরেন্স রেডিয়েশন পরীক্ষাগারে প্লাজমা নিয়ে গবেষণার করার সময় বোহম লক্ষ্য করেছিলেন, একবার ইলেক্ট্রন প্লাজমায় ছিল (যার বৈদ্যুতিন এবং ধনাত্মক আয়নগুলির ঘনত্ব উচ্চমাত্রার ছিল), তারা পৃথক কণার মতো আচরণ করা বন্ধ করে দেয় এবং ইউনিটের মতো আচরণ শুরু করে। প্লাজমা এমন একটি গ্যাস যা একটি উচ্চ ঘনত্বের ইলেক্ট্রন এবং ধনাত্মক আয়নগুলিকে ধারণ করে। ডঃ বোহম দেখেছিলেন, একবার প্লাজমায় সাবএটমিক কণাগুলি স্বতন্ত্রভাবে আচরণ করা বন্ধ করে দেয় এবং একটি বৃহত্তর আন্তঃসংযুক্ত সামগ্রীক অংশ হিসাবে আচরণ করে। প্লাজমা চরম স্ব-সংগঠনের প্রভাব তৈরি করে।ডঃ বোহমের ধারণা হয়েছিল ইলেক্ট্রনের সমুদ্রটি যেন ‘জীবিত’।  সমগ্র এ সমুদ্রের কণাগুলি এমন আচরণ করছিল যেন এটি তাদের কাছে জানা ছিল যে, অন্য কোটি কোটি পার্টিকেলগুলো কি কাজ করছে।পাশ্চাত্যের রিয়ালিটির ব্যপারে মেকানিস্টিক ধারনার সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে বোহম স্বাতন্ত্রতাকে মায়াজাল বলে অভিহিত করেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে বাস্তবতার গভীরতর স্তরে আমরা এবং সেইসাথে সমস্ত পদার্থ যা সমস্ত বিষয় তৈরি করে, তারা এক এবং অবিভাজ্য। বোহমের মতে, "খালি জায়গা" এনার্জি এবং তথ্য দিয়ে পূর্ণ। এটি জড়িত অর্ডারটির একটি গোপন জগত, এটি "জিরো পয়েন্ট ফিল্ড" বা "আকাশ" নামেও পরিচিত।তিনি বলেন," স্পেস শূন্য বা খালি নয়। এটি পরিপূর্ণ, শূন্যতার বিপরীতে পদার্থ দ্বারা পরিপূর্ণ এবং আমাদের সহ সকল অস্তিত্বের ভিত্তি। মহাবিশ্ব এই মহাজাগতিক সমুদ্র থেকে পৃথক নয়।” তিনি আরো বলেন,“আমরা যাকে ফাঁকা জায়গা বলি তাতে অপরিসীম শক্তি রয়েছে এবং আমরা সেই ম্যাটারের ব্যপারে যা জানি তা হলো, এটা খুবই ছোট,ব্যাকগ্রাউন্ডের উপরের দিকে "কোয়ান্টাইজড"  উদ্বেলিত ওয়েভের ন্যায়,এটা অনেকটা বিশাল সমুদ্রের উপর ছোট্ট ঢেউয়ের ন্যায়।"
অন্যত্র বলেনঃ"হ্যাঁ, আপনি যদি বলেন যে সমস্ত বস্তু ইনফরমেশন(0/1 bits) থেকে কাজ করে,শুধুমাত্র স্নায়ুতন্ত্র বা ডিএনএ এর বস্তু নয় যা কোষে কাজ করে, যদিও ইলেক্ট্রন খালি স্থান থেকে তৈরি হয় যা ইনফরমেশনের কোনও অজানা উৎস দ্বারা প্রকাশিত হয়, যা সমস্ত শূন্য স্থান জুড়ে রয়েছে । এবং আমাদের নেই, চিন্তা, আবেগ এবং পদার্থের মধ্যে তীব্র বিভাজন নেই। আপনি দেখেন যে তারা একে অপরের মধ্যে প্রবাহিত। এমনকি আপনার সাধারন অভিজ্ঞতায় আপনার চিন্তাভাবনা,আবেগগুলি শরীরের মধ্যে সচল পদার্থের মধ্যে প্রবাহিত হয়। অথবা শরীরে পদার্থের সঞ্চালব আবেগ এবং চিন্তাভাবনার জন্ম দেয়। এখন একমাত্র বক্তব্য হলো বর্তমান বিজ্ঞানের কোনও ধারণা নেই যে কীভাবে চিন্তা(thought) এমন কোনও বস্তুকে প্রভাবিত করতে পারে যার সাথে শরীরের কোন সংযোগ নেই অথবা কোন সরাসরি কোন প্রক্রিয়া দ্বারা সংযুক্তও নয়। তবে এবার আপনি যদি বলেন যে, বস্তুজগতের অস্তিত্বের পুরো স্থলটি শূন্যস্থানের(empty space) মধ্যে মোড়ানো এবং সমস্ত পদার্থ এই স্পেস থেকে আসছে, এমনকি আমাদের মস্তিস্ক, আমাদের চিন্তাসহ এখান থেকে আসছে ...তাহলে পদার্থের সৃষ্টির জন্য ইনফরমেশন স্পেস বা শূন্যস্থানকে বিদীর্ন করে। আপনি বলতে পারেন যে পদার্থ এটা যে ইনফরমেশন বহন করে, এর উপর ভিত্তি করে আকৃতি ধারন করে, আর তাই চিন্তাপ্রক্রিয়া খালি স্পেসের ইনফরমেশনকে উল্টিয়ে দিতে সক্ষম। তাই আমি বলব যে এটা সম্ভব বলেই মনে হয়, এজন্য এটা আসলেই ঘটে কিনা তা দেখতে খুব গভীর পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন।"

তিনি মহাবিশ্ব সম্পর্কে বাস্তবতার দুটি স্তর বা লেভেলকে ধারণা করেছিলেন:
ইমপ্লিকেট(এনফোল্ডেড) অর্ডার - বাস্তবতার গভীর স্তর (অদেখা মেটাফিজিক্যাল স্থান/কাল)।
এক্সপ্লিকেট (আনফোল্ডেড) অর্ডার - আমাদের নিজস্ব অস্তিত্বের স্তর (ফিজিক্যাল স্থান / সময় দেখা)। তিনি আমাদের বস্তু জগতকে ওই দুটি অর্ডারের মধ্যে অগণিত এনফোল্ডিং এবং আনফোল্ডিং এর ফলাফল বলে মনে করতেন। এই এনফোল্ডিং এবং ফোল্ডিংগুলিকে সময় / স্থান এবং স্থান / সময় দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে ক্রমাগত অসোলেশনের(দোলন) সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যখন কোন পার্টিকেল ধ্বংস হয়ে যায় বলে মনে হয়, এটি মূলত তখন হারিয়ে যায় না। এটি যে গভীরতর ক্রম থেকে এসেছিল, তাতেই আবার ফিরে যায় [ডিম্যাটেরিয়ালাইজেশান]। রিয়ালিটির এ দুই অর্ডার বা স্তরের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত এ আসা যাওয়া তথা বাহ্যত ধ্বংস ও সৃষ্টি ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে কণাগুলি[পার্টিকেলস] এক ধরণ থেকে অন্য ধরণে রূপান্তরিত হয়। এটি কোয়ান্টাম ইউনিট কীভাবে কণা বা তরঙ্গ হিসাবে প্রকাশ পায় তাও ব্যাখ্যা করে।তিনি বলেনঃ "What is, is always a totality of ensembles, all present together, in an orderly series of stages of enfoldment and unfoldment, which intermingle and interpenetrate each other in principle throughout the whole of space.”

বোহমের নিকট সমস্ত বাস্তবতা হচ্ছে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যেখানে সমস্ত প্রকাশিত অবজেক্টগুলি ধ্রুবক প্রবাহের অবস্থায় থাকে। "ইমপ্লিকেট অর্ডার" এবং "এক্সপ্লিকেট অর্ডার" এর ধারণাগুলো প্রবর্তন করে বোহম যুক্তি দিয়েছিলেন যে মহাবিশ্বের খালি জায়গায় সমস্ত কিছু রয়েছে। এটা মূলত এক্সপ্লিকেট বা প্রকাশ্য বস্তুজগতের উৎস এবং এটি বিশুদ্ধ তথ্যের[ইনফরমেশন] ক্ষেত্র। এখান থেকে, ফিজিক্যাল, পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনা উদ্ভাসিত হয় এবং আবারও এটিতে ফিরে আসে। প্রকাশ্য বা এক্সপ্লিকেট অর্ডার থেকে ইমপ্লিকেট অর্ডারে থেকে পদার্থের ফেরত, এবং সমস্ত পদার্থের বার বার এনফোল্ডিং-আনফোল্ডিং প্রক্রিয়াকে বোহম বলেছেন হলোমুভমেন্ট। বোহম বলেনঃ "The actual order (the Implicate Order) itself has been recorded in the complex movement of electromagnetic fields, in the form of light waves. Such movement of light waves is present everywhere and in principle enfolds the entire universe of space and time in each region. This enfoldment and unfoldment takes place not only in the movement of the electromagnetic field but also in that of other fields (electronic, protonic, etc.). These fields obey quantum-mechanical laws, implying the properties of discontinuity and non-locality. The totality of the movement of enfoldment and unfoldment may go immensely beyond what has revealed itself to our observations. We call this totality by the name holomovement.”

তিনি ‘হলোগ্রাম’ না বলে হলোমুভমেন্ট শব্দটিকে ব্যবহার করেছিলেন কারণ হলোগ্রাম স্থির এবং অন্য দিকে হলোমুভমেন্ট দ্বারা গতিশীলতা বোঝায়। সব কিছুই গতিশীল। হলোমুভমেন্ট আরও ব্যাখ্যা করে যে বাস্তবতা কেন সাবকোয়ান্টাম স্তরে ননলোকাল অবস্থায় থাকে। 
ডঃ বোহম বলতেন, মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুই একটি ধারাবাহিকতার অংশ - অন্য সব কিছুর এক বিরাম বিস্তৃতি, এমনকি এনফোল্ডেড এবং আনফোল্ডেড অর্ডারের পরস্পর মিশ্রিত। তিনি এটা বলেন না যে মহাবিশ্ব একটি ‘জায়ান্ট আন্ডিফারেনশিয়েটেড ম্যাস’, বরং এর প্রত্যেক অংশ অনন্য বৈশিষ্ট্যের অবিভক্ত চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন,"নীতিগতভাবে এই বাস্তবতা হলো পুরো মহাবিশ্বের সমস্ত ক্ষেত্র এবং কণা সহ অখণ্ড একক। সুতরাং আমাদের বলতে হবে যে হলোমুভমেন্টটি বহুমাত্রিক ক্রমে এনফোল্ড এবং আনফোল্ড করে, এর ডাইমেনশনালিটি অসীম। সুতরাং সাবটোটালিটির রিলেটিভ অটোনমি প্রিন্সিপ্যাল অনুযায়ী - এখন বাস্তবতার বহুমাত্রিক ক্রম[multi-dimensional order] প্রসারিত হতে দেখা যায়।"[৮]
—Physicist David Bohm on the Holographic Universe

ডঃ বোহম লিখেছেন, "যে কোন ফর্ম বা আকৃতির সক্রিয় হবার ক্ষমতা হলো মনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এবং ইলেকট্রনের সাথে ইতিমধ্যে মনের[mind] মতো কিছু রয়েছে।" ফিজিসিস্ট ব্রায়ান জোসেফসন বিশ্বাস করেন যে, বোহমের ইমপ্লিকেট অর্ডার একদিন ঈশ্বর বা মনকে বিজ্ঞানের কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। অ্যানিমেট এবং জড় পদার্থগুলি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। জীবন এবং বুদ্ধি পদার্থ, শক্তি, স্থান, সময় এবং সমগ্র মহাবিশ্বের ফ্যাব্রিক উপস্থিত হয়। এটা প্যানসাইকিজমের ধারণা যা অকাল্ট এসোটেরিক স্কুলগুলোর[যাদু ও কুফরি বাতেনি অধিবিদ্যার বিভিন্ন শাখা] একটি ভিত্তি। বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী বোহমের কাজকে সমর্থন করেন যেমন: Roger Penrose (Oxford), Bernard d’Espagnat (University of Paris) এবং Brian Josephson (Cambridge)। বোহম বিশ্বাস করতেন যে তার দেহ ম্যাক্রোকোজমের  একটি মাইক্রোকোজম এবং মহাবিশ্ব একটি স্পিরিচুয়াল/আধ্যাত্মিক স্থান যেখানে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সহাবস্থানে থাকে। তিনি বলেন,"আমাদের দেহের প্রতিটি কোষ পুরো মহাবিশ্বকে এনফোল্ড করে।"




   ∞     In Quest of Infinity    ∞





“To see a World in a Grain of Sand. And a Heaven in a Wild Flower, Hold Infinityin the palm of your hand. And Eternityin an hour.”
-William Blake-

ডঃ ডেভিড বোহমের ব্যাখ্যায় বলা আকাশিক ইউনিফাইড ফিল্ডে হলোগ্রাফিক মুভমেন্ট[হলোমুভমেন্ট] এর অনেকটা এরূপ যে ইউনিফাইড ফিল্ডের Ethereal superfluid substance প্রচণ্ড গতিতে অনবরত অসোলেট করে ম্যাটারে আনফোল্ড হচ্ছে যেটা আমরা ত্রিমাত্রিক বস্তুজগতে সলিড পদার্থ হিসেবে দেখি। ত্রিমাত্রিক জগতের কোন বস্তুর সামান্য স্থান পরিবর্তন বা সঞ্চালন পদার্থে পরিপূর্ণ ভ্যাকুয়াম স্পেস বা কথিত ফাঁকাস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে অনবরত পদার্থে রূপান্তর ঘটায়। এখানে পদার্থে রূপান্তরকারী হিসেবে যে চৈতন্য কাজ করে সেটা এই কোয়ান্টাম আকাশিক ফিল্ডেই আছে। এটাই ব্রহ্মচৈতন্য। হলোমুভমেন্ট এর প্রকৃতি বুঝতে নিচের লিংকে প্রবেশ করা যেতে পারেঃ

পদার্থের মূল কখনো ধ্বংস হয়না, এটা শুধুই ইমপ্লিকেট ও এক্সপ্লিকেট অর্ডারের মধ্যে এনফোল্ড এবং আনফোল্ড করে। এই হলোমুভমেন্ট একটি ইনফিনিট প্যাটার্ন। এর প্রতিটি অংশের মধ্যে সেল্ফসিমিলার স্ট্রাকচার রয়েছে। প্রতিটি মাইক্রো অংশের মধ্যে ম্যাক্রো স্ট্রাকচার। Macrocosm within microcosm। এটা মূলত প্রাচীন যাদুকরদের যাদুশাস্ত্র উৎসারিত বিদ্যা বা আকিদা। যাদুকররা সবসময় পার্থিব জগতে ইনফিনিটির অনুসন্ধান করে। যেহেতু তারা সৃষ্টিকর্তা বলতে আলাদা সত্তাকে অস্বীকার করে মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ড তথা সমস্ত আকাশিক ইথারিয়েল ফিল্ডকে ডিভিনিটি দান করে,সেহেতু তাদের মেটাফিজিক্যাল জ্ঞান বা শিক্ষায় সমস্ত সৃষ্টিজগতের মধ্যে অসীমতা,অন্তহীনতা [∞] আরোপ করে। উদ্দেশ্য- সৃষ্টিকর্তাবিহীন আত্মনির্ভরশীল মেটাফিজিক্যাল রিয়ালিটির আকিদা বিনির্মাণ যাতে সবকিছুই অনন্ত-অসীম-সীমাহীন। এই বিষয়টি তারা প্রাচীন অরোবোরাস সিম্বল এবং Endless Knot দ্বারা বোঝাতো। মাইক্রোস্কপিক বা ক্ষুদ্র পরিসরে  সকল অনু পরমাণু অসীম এসোলসশনের ফল। প্রত্যেক এ্যাটম অসীম শক্তির ধারক। প্রত্যেক পরমানুর সোর্স অসীম। প্রত্যেক এ্যাটমই সিঙ্গুলারিটি। প্রত্যেক পার্টিকেলের মাঝে ম্যাক্রোস্কপিক লেভেলের সমস্ত বিল্ডিংব্লক,জিওমেট্রিক প্যাটার্ন ধারন করে। ধরুন আপনি পার্টিকেলটিকে যত জুম করে নিচের লেয়ারে যাবেন,ততই নতুন নতুন মাইক্রো ইউনিভার্সকে আবিষ্কার করবেন। একইভাবে ম্যাক্রো লেভেল বা বৃহত্তর জগতে যত উপরে যাবেন সেল্ফ সিমিলার প্যাটার্ন আবিষ্কার করবেন। এটাই হার্মেটিসিজমের As Above, so below - As within so without প্রিন্সিপ্যাল[নীতি]। প্রতিটি এ্যাটম যেভাবে একেকটি সেল্ফ সাস্টেইন্ড সিঙ্গুলারিটি, একইভাবে ম্যাক্রোলেভেলে গোটা ইউনিভার্স সিঙ্গুলারিটির ফসল। সে হিসেবে সমস্ত বস্ত ও প্রানী অসীম অস্তিত্ব। এজন্য যাদুকরদের দৃষ্টিতে তারা অসীম ক্ষমতা ও সম্ভাবনার অধিকারী। মৃত্যুকে তারা অমরত্বের আরেকটি প্লেইন অব এক্সিস্টেন্স মনে করে। যাদুকরদের এই অসীমতার আকিদার জন্য তারা দুনিয়াতে চিরকাল বেঁচে থাকতে চায়। এজন্যই হাজার বছর ধরে আলকেমিক্যাল পরশ পাথরের খোঁজ করে গেছে আলকেমিস্ট যাদুকররা। এই অসীমতা ও অমরত্বের পথেরই শিক্ষাই দেয় ইহুদী যাদুবিদ্যার ট্রেডিশন কাব্বালার ট্রি অব লাইফ[সাজারাতুল খুলদ]। বস্তুত, এই সম্ভাবনার আশা ও প্রতিশ্রুতি যাদুকররা গ্রহন করেছে সরাসরি শয়তানের থেকে। আল্লাহ সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে ইহুদীদের যাদুশিক্ষার বিষয়টিকে সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন। এ শয়তানের ওয়াদাহ এর অরিজিন আরো অনেক প্রাচীন। ইবলিস সর্বপ্রথম জান্নাতে আদি পিতা-মাতা আদম[আঃ] ও হাওয়াকে [আঃ] নিষিদ্ধ সাজারাতুল খুলদ বা অনন্তজীবন প্রদায়ী বৃক্ষের মিথ্যা আশা দেখিয়েছিল।শয়তান এই ইনফিনিটির প্রাচীন আশা এখন যাদুশাস্ত্রের মাধ্যমে দেখায়। এই infinitude যাদুশাস্ত্রের একদম মৌলিক ঐন্দ্রজালিক শিক্ষার একটি। এজন্য যাদুকরদের আকিদাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যেখানে সৃষ্টিকর্তাকে যৌক্তিকভাবে নিষ্প্রয়োজন প্রমাণ করা হয়।  এজন্য অকাল্ট টেক্সট বা যাদুশাস্ত্র মানেই কুফরি[Disbelief]। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যপার হলো এই অকাল্ট ফিজিক্স - অকাল্ট ফিলসফির এ্যাডভান্স রূপ হচ্ছে আজকের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান। এরই শিক্ষা দিয়েছেন  প্লেটো-পিথাগোরাস থেকে শুরু করে হাইজেনবার্গ,শ্রোডিঞ্জার,প্ল্যাঙ্ক,হুইলার, বোর,বোহমরা।এই কুফরি অকাল্ট আকিদার শিক্ষা এখন অব্যাহতভাবে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়েছে। ফিরে গেছে বৈদিক হলোগ্রাফিক হলোমুভমেন্টে। 

ডেভিড বোহমের বর্নিত ঐন্দ্রজালিক অসীমতার শিক্ষা আরো বেশি যৌক্তিকভাবে গ্রহনযোগতা লাভ করে জনাব বেনোয়া ম্যান্ডেলব্রটের ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকস আবিষ্কারের মাধ্যমে। এতে দেখানো হয় কিভাবে ফাইনাইট সিস্টেমের মধ্যে ইনফিনিট প্যাটার্ন থাকতে পারে।আধুনিক যাদুশাস্ত্রের অনুসারী,জ্যোতিষীরা হার্মেটিক এ্যাজ এ্যাবোভ সো বিলৌ, এ্যাজ উইথইন সো উইথআউট এর নীতির উপর নির্ভর করে বিশ্বাস করে যে, আমাদের বাস্তবজগত ফ্র‍্যাক্টাল জিওমেট্রির অনুরূপ কোন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট[fractal reality]। ইতিহাস, প্রকৃতি,মানব সভ্যতা, মানবদেহ সহ সবকিছুই ইনফিনিট ফ্র‍্যাক্টাল প্যাটার্ন দ্বারা তৈরি। মিস্টিক-অকাল্টিস্টরা রিয়ালিটির অসীমতা বোঝাতে এই ফ্র‍্যাক্টাল ম্যান্ডেলব্রটের সাহায্য নেয়। ফ্রাক্টালকে থাম্বপ্রিন্ট অব গড বলা হয়[৯]। এটা ইন্দ্রজালকে সবচেয়ে ভালভাবে ব্যাখ্যা করে। এই ম্যাথম্যাটিকসকেই ব্যবহার করে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি তথা গেইম, এনিমেশন ও হলিউডের সায়েন্স ফিকশন ফিল্মের বৈচিত্র্যময় জগৎ নির্মাণ করা হয়। ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসের ইনফিনিটির পেছনে আছে ইটেরেইশান বা ফিডব্যাক মেকানিজম। যাদুকরদের প্রাচীন বিশ্বাস, আমাদের বস্তুজগতও ভ্যাকুয়াম ফিল্ডে এনার্জেটিক ইটেরেশন বা ফিডব্যাক মেকানিজমেরই বহিঃপ্রকাশ। ফিডব্যাক মেকানিজমের ধারনা দিয়েছিলেন জন ডেভিস।   চৈতন্য বা কনসাসনেস হচ্ছে একটা ফাংশন যার মাধ্যমে স্পেস নিজের সাথে ফিডব্যাক মেকানিজম সচল রাখে। অর্থাৎ কনসাসনেস ক্রিয়েটস রিয়ালিটি।আমরা স্পেসের স্ট্রাকচারের মধ্যে ইনফরমেশন প্রবেশ ঘটাই আর স্পেস-টাইম সেই ইনফরমেশন ফিডব্যাক ঘটায়। এটা একটা ইটারনাল সাইক্লিক্যাল প্রসেস। এই ফিডব্যাক মেকানিজমই অরোবোরিক সেল্ফ অর্গানাইজড সিস্টেমের পেছনে দায়ী। অর্থাৎ একটি সাপ অনন্তকাল ধরে নিজের লেজ নিজেই গিলছে[অরোবোরাস]।

ম্যান্ডেলব্রটের ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসকে ফিজিক্সের ব্যাখ্যায় সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন নাসিম হারামাঈন নামের এক সুইডিশ এ্যামেচার পদার্থবিদ। তার ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরিতে হলোগ্রাফিক থিওরি ও ফ্রাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসকে একিভূত করে নাম দিয়েছেন হলোফ্র‍্যাক্টাল। হলোফ্র‍্যাক্টাল রিয়ালিটি আমাদেরকে একটা ইন্টারপেনেট্রেবল, ইন্টারডিপেন্ডেন্ড, ইন্টারকানেক্টেড সিস্টেমকে দেখায় যেখানে সবকিছু সবকিছুর সাথে যুক্ত, সবকিছু সবকিছু নির্ভরশীল। ইন্দ্রজালের আধুনিক রূপায়ন এই ইন্টারকানেক্টেড ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসের অরিজিন মূলত জ্যোতিষশাস্ত্র। অভিশপ্ত জ্যোতিষবিদ্যাতেই এরকম জিওমেট্রিক প্যাটার্ন মেলে। উদাহরণস্বরূপ ডানের ছবিতে প্রদত্ত ছবিতে তিব্বতীয় এস্ট্রলজিক্যাল জিওমেট্রিকে দেখুন। এটা হলোফ্র‍্যাক্টাল জিওমেট্রিক প্যাটার্নেরই আদি রূপ। সুতরাং দেখা যায় এনিমেশন, কম্পিউটার সিমুলেশন গুলোয় ব্যবহৃত ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসের উৎস প্রাচীন জ্যোতিষীগুলো, যারা প্রকৃতির ল',  ফোর্স এবং প্যাটার্ন নিয়ে গভীর অনুসন্ধান করে নক্ষত্রমণ্ডল ও মনুষ্য জীবনের সম্পর্ক ও প্রভাব বের করত। আধুনিক স্বীকৃত বিজ্ঞানীরাও আজ সেই প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্রীয় চিন্তাধারার স্বীকৃতি দিচ্ছে নক্ষত্রের সাথে মানুষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বলে। বিজ্ঞানীরা এখন মানুষের ও নক্ষত্রের ফিজিক্যাল কানেকশন তথা আন্তঃসম্পর্কের স্বীকৃতি দিচ্ছেন। তারা এই অনুভূতিকে তুলনা করছে ব্রহ্মাণ্ডের তীর্থযাত্রার সাথে। নিউএজ প্যাগানদের এস্ট্রলজিক্যাল চিন্তাধারাকে শুদ্ধ বলছেন। নিজেদেরকে বলছে স্টারডাস্ট। নিলস ডি'গ্রাস টাইসন বলেন,"আমরা নক্ষত্রকে ট্রেস করতে পারি, আমরাই নক্ষত্র। নক্ষত্রগুলোর শেষ বয়সে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে তাদের সকল উপাদান গুলো চারদিকে বিক্ষিপ্ত করে। সেগুলোই গ্যাস ক্লাউডে রূপান্তরিত হয়ে পরবর্তীতে নক্ষত্র এবং গ্রহে পরিনত হয় এবং জীবন তৈরি করে। তো এই যে কস্মিক পার্স্পেক্টিভ যেটা ব্রহ্মান্ডের তীর্থযাত্রা, এখানে কিছু মানুষ বলে যে আমি মহাবিশ্বের তুলনায় কত ক্ষুদ্র! না তিনি সঠিকভাবে চিন্তা করছেন না। আমি এভাবে দেখি যে আমার শরীরে যেসব মলিকিউল আছে সেগুলো ব্রহ্মাণ্ডেও বিদ্যমান,তো আমি যখন মহাবিশ্বের দিকে তাকাই আমি নিজেকে বড় অনুভব করি, ব্রহ্মাণ্ডের সাথে আমাদের একরকম গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান যেটা নিউএজ আধ্যাত্মবাদীদের চিন্তাধারার সাথে গভীরভাবে মেলে।আমি এ ব্যপারে একদমই এ্যাপোলোজেটিক হবো না, যার সাথেই মিলুক না কেন, যান, গিয়ে সেটা গ্রহন করুন। এটা বেশ সত্য যে 'আমরা সত্যিই স্টার ডাস্ট'। সর্বোচ্চ এবং প্রশংসনীয়তার সাথে এই বাক্যটিকে আমরা ব্যবহার করতে পারি। আমরা যে মলিকিউলে তৈরি সেটা নক্ষত্রের মলিকিউলে ট্রেইসেবল যেটা একসময় বিস্ফোরিত হয়ে সবকিছু সৃষ্টি করে। সুতরাং আমরা সত্যিই পরস্পর বায়োলজিক্যালি এবং পৃথিবীর সাথে ক্যামিক্যালি সম্পর্কযুক্ত এবং বাকি মহাবিশ্বের সাথে এ্যাটোমিক ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এটা খুবই চমৎকার। এটা আমাকে হাসায় এবং অবশেষে আমি নিজেকে বিরাট কিছু ভাবতে শুরু করি। এমনটা নয় যে আমরা মহাবিশ্বের চেয়ে উত্তম কিছু বরং আমরা মহাবিশ্বেরই অংশ। আমরা মহাবিশ্বের ভেতরে এবং মহাবিশ্ব আমাদের ভেতরে।"
পদার্থবিজ্ঞানী ব্রায়ান কক্স বলেন,"যখন আমরা আকাশের দিকে তাকাই, আমরা আমাদেরই জন্মস্থলের দিকে তাকাই,কারন আমরা সত্যই নক্ষত্রদের সন্তান।"
একই বিশ্বাস লালন করেন এ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট কার্ল সেগান।তিনি বলেন,"ব্রহ্মাণ্ড আমাদের মধ্যেই রয়েছে। আমরা তারকার উপাদানেরই সৃষ্টি। আমরাই ব্রহ্মাণ্ডের নিজের ব্যপারে জানার একটি উপায়।"

এভাবেই পদার্থবিজ্ঞানীগন জ্যোতিষবিদ্যার শিক্ষাকে সত্যায়ন করছেন। রেজোন্যান্স সায়েন্স ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর নাসিম সরাসরি ব্যবিলনীয়ান কাব্বালিস্টিক অকাল্ট ঐন্দ্রজালিক ফিজিক্সে ফিরে গেছেন। তিনি সরাসরি ইহুদিদের যাদুবিদ্যা কাব্বালাকে বিশুদ্ধ বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার অবস্থা বাহ্যত টেসলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনিও টেসলার ন্যায় মেইনস্ট্রিম সায়েন্টিফিক ইন্সটিটিউশন থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করেন নি। কিন্তু অবদানের দিক দিয়ে নোবেল পুরস্কার লাভের যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছেন। তিনিও টেসলার ন্যায় ইথারিয়েল ফিল্ড থেকে অফুরন্ত এনার্জি তৈরির জন্য সারাজীবন কাজ করেছেন।
গবেষণায় এমন কিছু আবিষ্কার করছেন, ফিজিক্সের এমন সব সমস্যার সমাধান করেছেন যাতে এখনই তিনি নোবেল লাভের যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছেন। নাসিম হারামাইন  আইনস্টাইনের ফিল্ড ইক্যুয়েশন সলভ করেন ব্ল্যাকহোলের ম্যাস নির্নয়ের জন্য। তিনি ইন্দ্রজাল বা শূন্যতাকেই সকল বস্তু জগতের উৎস মনে করেন। সমস্ত কিছুই ভ্যাকুয়াম ফিল্ডের ফ্ল্যাকচুয়েশনের দ্বারা সৃষ্ট। তিনি এ ব্যপারে সরাসরি ডেভিড বোহম ও জন হুইলারকে অনুসরন করেছেন। মহাবিশ্বে ৯৯.৯৯৯৯৯% ই শূন্যস্থান বা ভ্যাকুয়াম স্পেস। এবং ৪.৯% বস্তুজগত। ১৯৯২ সালে নাসার কস্মিক ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার, ইউনিভার্সের ব্যাকগ্রাউন্ড এনার্জি ফ্ল্যাকচুয়েশন ধরার দাবি করে। ভ্যাকুয়াম স্পেস খালি নয় বরং এটাই সবচেয়ে বেশি এনার্জি ও উপাদানে ভরপুর। এটাই বস্তুজগত এর থেকেই অরিজিনেইটেড। ভ্যাকুয়াম স্পেস শুধুমাত্র বাহিরেই না, সমস্ত বস্তু জগতের একদম মূলে আছে। সুতরাং বস্তুজগত আসলে ইল্যুশন। সবকিছুই ইথারিয়েল ফিল্ডের অসোলেশনের দরুন সৃষ্ট বস্তুজগতের মায়া। সুতরাং ভ্যাকুয়াম বা শূন্যস্থান আসলে শূন্যস্থান নয়। জন আর্চিব্যাল্ড হুইলার বলেন,"কোন বিষয়ই এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যে, স্পেস খালি নয় বরং এটা এক উত্তাল ফিজিক্সের আসন।"
একই গীত গেয়েছেন নিকোলা টেসলা।তিনি বলেছিলেন,"খালি স্থান বলে যাকে বিবেচনা করা হয় সেটা ওই আনমেনিফেস্টেড পদার্থ যাকে এখনো জাগ্রত করা হয়নি। শূন্যস্থান বলে কিছুই এই পৃথিবী বা মহাবিশ্বে নেই। ব্ল্যাকহোল, যেগুলো নিয়ে এস্ট্রনমাররা কথা বলেন,সেগুলো শক্তি ও জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস।"

নাসিম তাদের পথেই হেটেছেন।তিনি কাজ করতেন পদার্থবিজ্ঞানী Elizabeth Rauschers এর সাথে। তিনি[নাসিম] ব্যাখ্যা করেছেন ভ্যাকুয়াম স্পেস অজস্র নক্ষত্র একত্রিত করে স্কুইজ করলে যতটা ডেন্স হয় তার চেয়েও সামান্য এক সেন্টিমিটার ভ্যাকুয়াম বেশি ডেন্স এনার্জি দ্বারা পরিপূর্ণ। বোহমের অনুসরনে নাসিমও বিশ্বাস করেন সবকিছুই প্রতিনিয়ত ভ্যাকুয়াম স্পেসের ভেতরে যাচ্ছে এবং উদগত হচ্ছে। এই সাবএ্যাটোমিক ডাইনামিক্সের দ্বারাই প্রকৃতির সবকিছু গতিশীল অবস্থায় আছে। একটি এ্যাটোমের মধ্যস্থিত প্রোটনের ভেতর যে ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাকচুয়েশন সংঘটিত হয়, তার ম্যাস মহাবিশ্বের সকল স্থানের প্রোটনের সমকক্ষ। অর্থাৎ সেই ইন্দ্রজাল। সুতরাং একটি ছোট প্রোটন সকল প্রোটনের সাথে যুক্ত ইন্টারডিপেন্ডেন্ট। মহাবিশ্বের সকল বস্তু হলোগ্রাফিক্যালি প্রতিটি প্রোটনের ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মধ্যে বিদ্যমান। নাসিম প্ল্যাঙ্ক স্পেককে ব্যবহার করে যা প্রোটনের চেয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন গুন ক্ষুদ্র। প্রোটনকে যদি চার আলোকবর্ষ সমান ধরা হয় তাহলে প্ল্যাঙ্ক পিক্সেল এর সাইজ হবে মরুর বুকের বালুকণার সমান। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্ক স্পেকগুলোর প্রতিটিই অন্যসকল প্রোটনের ইনফরমেশন বহন করে। আর এই প্ল্যাঙ্ক পিক্সেলের মধ্যে হওয়া অসোলেটরি ফ্ল্যাকচুয়েশন ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করে যা মৌলিকভাবে মহাবিশ্বের ফিডব্যাক লুপ হিসেবে কাজ করে। আইনস্টাইন কস্মোলজিক্যাল লেভেলে গ্রাভিটিকে স্পেসের ফ্যাব্রিক্সের কার্ভের দরুন সৃষ্ট মনে করতেন, নাসিম হারামাইন যাদুবিদ্যার এ্যাজ এ্যাবোভ সো বিলৌ তত্ত্বের অনুসরন করে আইনস্টাইনের গ্র‍্যাভিটেশনাল মডেলকে কোয়ান্টাম লেভেলে আরোপ করেন। গ্রাভিটিও ভ্যাকুয়ামে প্ল্যাঙ্ক ফ্ল্যাকচুয়েশনের ফসল। তাছাড়া তিনি ব্ল্যাকহোলকে মহাবিশ্বের একটি মৌলিক আচরন হিসেবে দেখেন। আমাদের ইউনিভার্সের সাথে বিরাট ব্ল্যাকহোল আছে এবং এই ইউনিভার্স ব্ল্যাকহোল ভিত্তিক।ম্যাক্রো ও মাইক্রো রিয়ালিটির উভয় স্তরেই ব্ল্যাকহোল রয়েছে[১০]।
তার মতে ব্ল্যাকহোলগুলো ভ্যাকুয়াম এনার্জির প্ল্যাঙ্ক পিক্সেলগুলোর সমন্বিত অসোলেটরি স্পিন বা ঘূর্ণন।
এটা সর্বত্র ঘটছে। ম্যাটেরিয়াল ইউনিভার্স ব্ল্যাকহোল সৃষ্টির জন্য দায়ী নয় বরং ব্ল্যাক হোলই ম্যাটেরিয়াল ইউনিভার্স তথা বস্তুজগত সৃষ্টির পেছনে দায়ী। প্রায় একই রকম ভাবে ভাবেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রসেফর ফিজিসিস্ট লিওনার্ড সাস্কিন্ড।  আইনস্টাইনের স্বপ্ন ছিল একটি সিম্পল ইক্যুয়েশনের যেটা কস্মিক ম্যাক্রো ও মাইক্রো লেভেলকে সমন্বয় করে সব কিছুর ব্যাখ্যা দেবে। নাসিমের ইক্যুয়েশনটা ঠিক এমনই সহজ জিওমেট্রি ও এ্যালজেব্রার সমন্বয়ে তৈরি[ডানের ছবিতে দ্রষ্টব্য]। এটা আইনস্টাইনের ফিল্ড ইক্যুয়েশনের সমাধান করে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নাসিম তার লেখা রিসার্চ পেপার কপিরাইটের জন্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে প্রেরণ করেন। তিনি প্রোটনের রেডিয়াসকে থিওরেটিকালভাবে প্রেডিক্ট করেছিলেন।
এবং তিনি এও রিসার্চ পেপারে উল্লেখ করেন যে, ভবিষ্যতে কোন উন্নত পরীক্ষনে বিষয়টি প্রমাণিত হবে। ২৫ জানুয়ারি, ২০১৩ সালে এক পরীক্ষণে হারামাইনের প্রেডিক্টেড ভ্যালুকে সত্যায়ন করে। কিন্তু সমস্যা হলো স্ট্যান্ডার্ড মডেল যেটা প্রত্যাশা কর‍ত তার চেয়ে ৪% কম মেজারমেন্ট হয়, যেটা সাধারন পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে হজম করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। 

নাসিম হারামাইন বলতেন মাইক্রো লেভেলের সকল এ্যাটোম একেকটি মিনি ব্ল্যাকহোল,এদের কেন্দ্রে সিঙ্গুলারিটি বিদ্যমান। আগেই আলোচনা করেছি ইনফিনিটি যাদুকরদের মৌলিক আকিদা।
 নাসিমের এই ধারনাকে বিজ্ঞানে প্রবেশ করানোর চেষ্টা সাধারন মানুষকে সরাসরি যাদুকরদের অনুরূপ নিজেদের ব্যপারে অসীম ক্ষমতার ধারনায় স্থলাভিষিক্ত হতে শুরু করে। নাসিম বলেন, "প্রতিটি এ্যাটোম একেকটি মিনি ব্ল্যাক হোল, এর ইনফিনিট ডেন্সিটি এবং কেন্দ্রে সিঙ্গুলারিটি বিদ্যমান। প্রোটনের সাথে ভ্যাকুয়াম এনার্জির আন্তঃসংযোগ রয়েছে। ভ্যাকুয়াম ফিল্ড প্যাসিভ নয় বরং এক্টিভভাবে ম্যাটার এর সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে। সবকিছু যে একক অস্তিত্ব এ বিষয়টা একটা ম্যাথম্যাটিক্যাল রেন্ডারিং। সুতরাং এটা গাণিতিক ভাবে প্রমাণিত। এখন পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে ধীরে ধীরে এ্যারোগ্যান্স কমে আসছে, আমি যখন ১৫-১৬ বছর আগে আমার রিসার্চ পেপার গুলো ফিজিক্স কমিউনিটির মধ্যে শেয়ার করি তারা এমন ভাব ধরত যেন সব কিছুই প্রমাণিত, নতুন কোন আইডিয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এরপরে যখন তাদের থিওরিগুলো ব্যর্থ হতে শুরু করল, ল্যাবের এক্সপেরিমেন্ট গুলোয় ভুল প্রমাণ হতে শুরু করলো যেমন ধরুন স্ট্রিং থিওরি, তখন থেকে ফিজিক্স কমিউনিটির মধ্যে পরিবর্তন আসা শুরু করলো। অন্য আরও পদার্থবিদগনের বিশ্বাসযোগ্যতা কিভাবে অর্জন করা যায় যা আমি লিখছি এবং সাধারন মানুষকে সচেতন করা যে আমরা সসীম জগতে বাস করিনা। এ্যাটোমিক স্ট্রাকচারগুলোরও ইনফিনিট পটেনশিয়ালটি আছে ফাইনাইট ব্যারিয়ারের মধ্যে। স্পিরিচুয়ালিস্ট ও দার্শনিকরা বলে থাকে তারা অনন্ত অসীম সত্তা। আসলে আমাদেরকে ফিজিক্যাল জগতের বাইরের কিছু হতে হবে না, আসল ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ড এর কথাই তারা বলে। আসলে ফিলসফি এবং স্পিরিচুয়ালিটি পরস্পর এ্যাটোমিক স্ট্রাকচারের বিষয়গুলো ছেড়ে যায়নি।  এ্যাটোমিক স্ট্রাকচার গুলো আসলে মহাচৈতন্যের [consciousness] ডাইনামিক্সেরই বহিঃপ্রকাশ।" 

নাসিমের বর্নিত ইউনিফাইড ফিল্ডের ভ্যাকুয়ামের মধ্যে হলোগ্রাফিক ফ্র‍্যাক্টাল জিওমেট্রি আছে।একে তিনি হলোফ্র‍্যাক্টাল বলেন। এ জ্যামিতির প্রতি অংশের মধ্যে ইনফিনিট সেল্ফ সিমিলার প্যাটার্ন বিদ্যমান।
তার তাত্ত্বিক ভিত্তি হার্মেটিক সেই প্রিন্সিপলঃ এজ এ্যাবোভ সো বিলো। যা আমরা দেখছি সেটাই সবচেয়ে ছোট থেকে ছোট স্তরে আছে তেমনি বড় থেকে বড় স্তরেও আছে। ইথারিক রিয়ালিটি থেকে বস্তু জগতে ম্যানিফেস্ট হবার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইটেরেশান। অনবরত এনার্জির ফিডব্যাক লুপে অসোলেশনের ফলে বস্তুজগত সৃষ্টি হয়। রিয়ালিটির মেকানিজমের এই প্রাচীন হলোফ্র‍্যাক্টাল অকাল্ট কন্সেপ্টটি হলিউডের যাদুবিদ্যা কেন্দ্রিক ফিল্ম ডঃ স্ট্রেঞ্জ এ অসংখ্যবার দেখানো হয়। এতে দেখানো হয় যাদুকররা নিজেরা এরকম স্পেসটাইমে অসোলেশন তৈরি করতে পারে, আবার সর্সারার সুপ্রীম ট্রেঞ্জকে রিয়ালিটির মেকানিজম শেখানোর জন্য অল্টার্ড স্টেইট অব কনসাসনেসেও দেখা। এই ফ্র‍্যাক্টাল ইফেক্ট দিতে ফিল্মটি তৈরির সময় ম্যান্ডেলব্রটের ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকস ব্যবহার করতে হয়েছিল[২২]। আশাকরি এই ম্যাজিক্যাল কুফরি ওয়ার্ল্ডভিউয়ের যাদুশাস্ত্রভিত্তিক অরিজিনের ব্যপারে আর কোন সন্দেহ নেই। এ যাদুবিদ্যার আইডিয়াটিকেও নাসিম এ্যাডভান্স ফিজিক্সে নিয়ে এসেছেন। তার অফিশিয়াল ডকুমেনটারি ফিল্ম কানেক্টেড ইউনিভার্সে এই(নিচের চিত্রে দ্রষ্টব্য) যাদুশাস্ত্রীয় ম্যাটেরিয়ালাইজেশন মেকানিক্স দেখান:



  নাসিম প্রতিটি ম্যাক্রো ও মাইক্রো স্তরে ব্ল্যাকহোল ও সিঙ্গুলারিটি তৈরির জন্য স্পিনিং মডেল নিয়ে আসেন। সমস্ত কিছুই চলনশীল,সবকিছুই ঘূর্ননশীল। এটা হার্মেটিক থার্ড 'লঃ" Nothing rests; Everything Moves"। নাসিম নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন যে তার সায়েন্টিফিক এ্যাপ্রোচ প্রাচীন যাদুশাস্ত্র ভিত্তিক। নাসিম বলেন, "এ্যাডভান্স ফিজিক্সে আমার এ্যাপ্রোচটা হলো সমগ্র পৃথিবীর প্রাচীন (যাদুশাস্ত্র) শাস্ত্র এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলো পড়াশুনার মধ্য দিয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে আন্তঃসম্পর্ক খুজে বের করা এবং এই কো-রিলেশন এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলোর জ্ঞানকে একত্রিত করে নতুন স্তরের ফিজিক্সের দিকে যাওয়া যেটা আরো বেশি পরিপূর্ণ এবং ইউনিফাইড। এই নতুন মাত্রার পদার্থবিজ্ঞানটি বড় বড় ফিজিক্সের দৈত্যদের কাধেই প্রতিষ্ঠিত, যেমন আইনস্টাইন, নিউটন, নিলস বোর। আমি সবগুলোকে একত্রিত করি এরপর দেখি এর মধ্যে কোনটির অভাব আছে। সমস্ত তত্ত্ব গুলোয় একটা বিষয়ের অভাব আছে, সেটা হলো সবধরনের ঘূর্ণনের ফান্ডামেন্টাল সোর্স। কেন ইলেক্ট্রন, গ্যালাক্সি, এই পৃথিবীসহ আমাদের সৌরজগত সবকিছু ঘুরছে? আমাদের এই নতুন তত্ত্বে বলা হয় যে সব ধরনের ঘূর্ননের পিছনে একটি মৌলিক ফোর্স ফিল্ড আছে যেটা ভ্যাকুয়ামেও রয়েছে.......কল্পনা করুন, যে বাস্তবতা সম্পর্কে আপনি যা ভাবেন সেটা ঠিক সেরকম নাও হতে পারে ..... হয়ত ভ্যাকুয়াম বা চারপাশের ফাঁকাস্থানটি কেবল খালি নয়, বরং শক্তিতে ভরপুর, তথ্যে পরিপূর্ণ এবং বাস্তবে বস্তু জগত বা বাস্তবতা যেটাকে আপনি বাস্তব মনে করেন, সেটা হতে পারে স্পেসেরই অংশ।"[১১] 

বিগত পর্বগুলোয় অপবৈজ্ঞানিক আলোচনাকে একবাক্যের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর আকারে নিন্মলিখিত কথায় প্রকাশ করা যায়ঃ
  • রিয়ালিটি বা বাস্তব জগত কি জিনিস? 
উত্তরঃঅদ্বৈত মহাচৈতন্য [Non dualistic universal collective consciousness]। 
  • মহাচৈতন্য কি অবস্থায় আছে? 
উত্তরঃহলোগ্রাফিক একরকমের  ম্যাথম্যাটিক্যাল সিমুলেশন, মায়াবাদের অনুরূপ মায়া[Holographic simulation]।

এ পর্যন্ত আমরা এ দুইটি বিষয়ে বিস্তর আলোচনা দেখেছি। আজকে থেকে নতুন আরেক ঐন্দ্রজালিক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে, এই রিয়ালিটির হলোগ্রাফিক স্ট্রাকচারটি কিরূপ? উত্তরঃঅকাল্ট শাস্ত্রানুযায়ী রিয়ালিটির স্ট্রাকচার বা বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে আইডিয়ালিস্টিক সেক্রিড জিওমেট্রি। যাদুকরদের এই বিশ্বাস নিয়ে মনে পড়ে ১০ নং পর্বে আলোচনা করেছিলাম। তাই সহজভাবে বুঝতে আবারো ১০নং পর্বে ফিরে যাওয়া আবশ্যক। মূলত বিজ্ঞানী নাসিম কাব্বালিস্টিক প্লেটনিক আইডিয়ালিজমকেও বাদ দেয়নি। তিনি প্লেটনিক সলিডগুলোয় ফিরে আসেন।  ডঃ জে মুন পার্টিকেল ইন্টারেকশন প্লেটোনিক সলিড দিয়ে বোঝাতেন। যাইহোক, নাসিম ফিরে গেছেন কাব্বালার ট্রি অব লাইফ, ফ্রুট অব লাইফের কাছে। কাব্বালায় বর্নিত রিয়ালিটিকে তিনি একটানে বিজ্ঞানে নিয়ে এসেছেন। হারামাইন প্রাচীন যাদুশাস্ত্রের সাহায্যে থিওরাইজ করে যে ভ্যাকুয়াম বা শূন্যস্থানের জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার হচ্ছে টেট্রাহিড্রন। এটা প্রাচীন যাদুকরদেরই প্রাচীন বিশ্বাস। সাবএ্যাটমিক লেভেলে এনার্জির মৌলিক জিওমেট্রিক প্যাটার্ন হচ্ছে পিরামিডের অনুরূপ ত্রিভুজাকার টেট্রাহিড্রন।
নাসিম তার সায়েন্টিফিক প্রেজেন্টেশনে দেখান,কাব্বালার ট্রি অব লাইফের জিওমেট্রির মধ্যে আছে স্টার টেট্রাহিড্রন(ইহুদীরা স্টার টেট্রাহিড্রনকে বলে merkaba)।  প্রাচীন ইহুদী যাদুকর তথা কাব্বালিস্ট থেকে শুরু করে প্রাচীন পিথাগোরিয়ান অকাল্টিস্ট-এ্যাস্ট্রলজার- আলকেমিস্ট সবাই এ ব্যপারে একমত যে এটাই ফান্ডামেন্টাল স্পেস টাইম জিওমেট্রি। ফিজিক্সে একে প্রতিষ্ঠার অর্থ পদার্থবিজ্ঞানের সরাসরি ইন্দ্রজালে প্রত্যাবর্তন। নিঃসন্দেহে বলা যায় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান প্রাচীন যাদুবিদ্যারই আধুনিকতম রূপ। যাইহোক,বাক মিনিস্টার ফুলার ছিলেন সেক্রিড জিওমেট্রি নিয়ে অবসেসড অকাল্টিস্ট। তিনি উপসংহারে আসেন যে আমাদের বাস্তব জগতের ফান্ডামেন্টাল জিওমেট্রি হচ্ছে আইসোট্রপিক ভেক্টর মেট্রিক, একে ফোর ফ্রিকোয়েন্সিও বলে। এই স্ট্রাকচার নির্মান হয় বিশটি টেট্রাহিড্রনের সমন্বয়ে যা একত্রিত হয়ে একটি বড় টেট্রাহিড্রন গঠন করে। নাসিম এর মাঝে নিপুণ ভারসাম্যতা খুঁজছিলেন। কারন আইসোট্রপিক ভেক্টর মেট্রিকের মাঝে নেগেটিভ স্পেস দেখা যাচ্ছিল। এটা ছিল ভারসাম্যহীন একমুখী। নাসিম দেখলেন এই টেট্রাহিড্রনের বিপরীতে আরেকটি টেট্রাহিড্রন যুক্ত করলে স্ট্রাকচারটি ভারসাম্যপূর্ণ হয়। তিনি বিপরীতমুখী
দুটি টেট্রাহিড্রন পরস্পরের মাঝে প্রবেশ করিয়ে আবিষ্কার করেন একটি স্টার টেট্রাহিড্রন তৈরি হয়। স্টারটেট্রাহিড্রনের সব স্ট্রাকচার গুলো আলাদা করলে দেখা যায় এই জিওমেট্রিক শেইপের একদম কেন্দ্রে কিউবঅক্টাহিড্রন তৈরি হয় যার কেন্দ্রে আছে আরেকটি স্টার টেট্রাহিড্রন। যেটা কাব্বালিস্ট ইহুদী ইজরাইলের পতাকায় খচিত ডেভিড স্টার। বাকমিনিস্টার ফুলার সবসময় বলতেন ভেক্টর ইকুইলিব্রিয়ামই হবে ফান্ডামেন্টাল জিওমেট্রি তাই নাসিম একেই ভ্যাকুয়াম স্পেসের ফান্ডামেন্টাল স্ট্রাকচার মনে করেন। ৬৪ স্টার টেট্রাহিড্রনই স্পেস বা ভ্যাকুয়ামের মৌলিক জিওমেট্রিক প্যাটার্ন। ৬৪ স্টার টেট্রাহিড্রন এর ছায়া ফেললে ২ডি ফ্লাওয়ার অব লাইফ তৈরি হয়। অর্থাৎ এর মাঝে প্লেটোর এ্যালিগোরি অব কেইভের তাৎপর্য আছে। এ নিয়ে আলাদাভাবে সামনের পর্বটিতে আলোচনা হবে। কাব্বালার ট্রি অব লাইফের সমন্বয়েই ৬৪ স্টার টেট্রাহিড্রনের সৃষ্টি। ট্রি অব লাইফের জিওমেট্রির একদম নিচের দিকে একটা টেট্রাহিড্রন আছে এবং একদম উপরে আছে অক্টাহিড্রন। কাব্বালাহ অনুযায়ী ট্রি অব লাইফ একটি নয় বরং একটির চারটি প্রতিরূপ আছে। এরা পরস্পর আটটি শিকড়ে পরস্পর যুক্ত। আটটি ট্রি অব লাইফ গ্রীড এক করলে ৬৪ স্টার টেট্রাহিড্রন তৈরি হয়। ৬৪ টেট্রাহিড্রন গ্রীডে ৬ টি ট্রি অব লাইফ সহজভাবে মিলে যায়। তার মানে কাব্বালিস্টিক সেক্রিড জিওমেট্রিক্যাল শিক্ষাই আজকের এডভান্স ফিজিক্স। নাসিম যেটা প্রমাণ করতে চান সেটা এই যে ভ্যাকুয়াম স্পেসের জিওমেট্রিক প্যাটার্ন হচ্ছে ৬৪ স্টার টেট্রাহিড্রন। ফ্লাওয়ার অব লাইফ হলো এরই প্রতিফলন।
নাসিম এক ভিডিও প্রেজেন্টেশনে ব্যবিলনীয়ান ম্যাথমেটিক্যাল ট্যাবলেটের খোদিত ফ্লাওয়ার অব লাইফের অনুরূপ জিওমেট্রিকে ব্যবহার করে দেখান যে এটাও ৬৪ স্টার টেট্রাহিড্রন তৈরি করে। এটা মূলত তার যাদুবিদ্যা তথা অকাল্ট নির্ভর গবেষণার রেফারেন্স এবং প্রাচীন স্বীকৃতি। হয়ত অনেকে বুঝতে পারছেন না,নাসিম নিজেই এগুলোকে গ্রাফিক্স ব্যবহার করে সহজে ব্যাখ্যা করেছেন[১২]। যারা বোঝেন না, তাদের নতুন করে বোঝার চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই। যাদুবিদ্যা থেকে যত দূরেই থাকবেন ততই আপনার জন্য কল্যাণের। আফসোসের বিষয় হলো এটাই আজকের স্বতঃসিদ্ধ বিশুদ্ধ বিজ্ঞান। এজন্য কুফরকে স্পষ্ট করবার জন্য এই কথিত বিজ্ঞানকে নিয়ে না চাইলেও লিখতে হচ্ছে।
নাসিম হারামাঈন কাব্বালাকে বিজ্ঞানরূপে দ্বার করিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি যাদুকর নিউটনকেও কাব্বালিস্টিক শাস্ত্রকে ঘিরে যাদুচর্চার কথা গর্বের সাথে বলেন।এ ব্যপারে নাসিম বলেন, "আইজ্যাক নিউটন ফিজিক্স সংক্রান্ত কিছু লেখার আগে প্রায় ২০ বছর যাবৎ ইহুদিদের কাব্বালার কিতাবাদির পিছনে ব্যয় করেন। এমনকি তার নিজের হাতে লেখা বইয়ের উপর লেখা স্মারকলিপি আছে যেটাতে যেটাতে বলা হয়েছে যে, নিউটনের ফিজিক্সের ব্যপারে যত যাই লিখেছেন সবই আসলে সরাসরি কাব্বালিস্টিক কিতাবাদি থেকে টেনে এনেছেন। এটা সত্যিই অসাধারন। অধিকাংশ মানুষই এটা জানেনা। তিনি এমনকি টেম্পল অব সলোমনের ফ্লোর প্ল্যানের একটা ম্যাপও তৈরি করেন।" 


ঐন্দ্রজালিক হলোগ্রাফিক মায়াবাদের অত্যন্ত গভীর একটি তাৎপর্য হচ্ছে আন্তঃসংযোগ বা ইন্টারকানেক্টেডনেস[১৬]। এর দ্বারা বোঝায় সবকিছুই একে অপরের সাথে সংযুক্ত। একটি অংশ আরেক অংশের উপর নির্ভরশীল। কেউই স্বতন্ত্র সত্তা নয়। সবাই মিলে একক অদ্বৈত অস্তিত্ব। এটাই বৈদিক শিক্ষা। যুগে যুগে সমস্ত যাদুকর বিজ্ঞানীগন এ জ্যোতিষশাস্ত্রীয় বিশ্বাস ধারন করত।পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড বোহম বলেন,"কোয়ান্টাম আন্তঃসংযোগের[ইন্টারকানেক্টেডনেস] অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্যটি হলো পুরো মহাবিশ্বটি সমস্ত কিছুতে এনফোল্ডেড[মুড়িয়ে আছে], এবং প্রতিটি জিনিসই সবকিছুর মাঝে পুরোপুরি এনফোল্ডেড হয়ে আছে।" একই কথা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিও বলেন।তিনি বলেন,"কিভাবে দেখতে হয় সেটা শিখুন, এবং বুঝতে শিখুন যে সবকিছু সবকিছুর সাথে সংযুক্ত।" 
নাসিম এই বেদান্তবাদি ইন্দ্রজালের তাৎপর্য তার কর্মের মাঝে সমুন্নত রেখেছেন রেখেছেন।তাকে জিজ্ঞেসা করা হয় বাহ্যত স্বাতন্ত্র্যবোধ জাগ্রত হয় কোথা থেকে? উত্তরে তিনি বলেন,"বাহ্যত আলাদাবোধ বা স্বাতন্ত্রবোধ বলতে বোঝায় স্পেস ও অব্জেক্টের মধ্যে স্বাতন্ত্রবোধ।যেমন ধরুন আমরা এ মুহূর্তে এই রুমের মাঝে আছি এবং মনে করছি আমরা শূন্য স্থানে আছি, আমার আশপাশে কিছুই নেই। কিন্তু এখনই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ও রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ফিল্ড আমার চারদিকেই আছে কিন্তু আমি এ ব্যপারে সচেতন নই কিন্তু সেটা এখানে আছে।সমস্যা টা এখানেই, আমরা অনুভব করি যে স্পেস ও বস্তুর মধ্যে শূন্যস্থান আছে যেখানে কিছুই নেই এজন্য আমি আর সাথে দেওয়াল ও টেবিলের সম্পর্কের ব্যপারে ভাবিনা, অথচ এই সম্পর্কটা অবশ্যই আছে।
স্পেসই ম্যাটারকে ডিফাইন করে, ম্যাটার স্পেসকে ডিফাইন করেনা। সমস্ত বস্তু ভ্যাকুয়ামের থেকে উদগত হয় আবার ভ্যাকুয়ামে ফিরে যায়[ইটেরেইশান]। এই ব্যপারটা যখন আমরা অনুভব করতে শুরু করি তখন স্বাতন্ত্রবোধের অনুভূতি আমাদের মধ্যে শেষ হতে শুরু হবে। আমরা সবকিছুর সাথে একক অস্তিত্ব এবং সম্পর্কযুক্ততাকে অনুভব করতে শুরু করি। আমি মনে করে এটাই সর্বশেষ উপলব্ধি। আমরা অনেক ঋষিদের থেকে শুনে থাকি তারা যখন ইল্যুমিনেশন বা নির্বাণের পর্যায়ে পৌছায় তারা সমস্ত কিছুর সাথে একত্ববোধের উপলব্ধি লাভ করে।"[১৩]

অন্যত্র তিনি আন্তঃসংযুক্ত জগতের তাৎপর্যে প্রাচীন যাদুকরদের প্রকৃতিতে প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতাটিকে ইঙ্গিত করে বলেন, "যখন আপনি উচ্চতর স্পিরিচুয়াল ও ফিলোসফিক্যাল চিন্তাধারাকে বিশুদ্ধ ফিজিক্স ও ম্যাথম্যাটিকসের আওতায় এনে ব্যাখ্যা করবেন, তখন মনে হবে একটি ফুল উন্মুক্ত হয়েছে, আপনি যেন কিছু একটাকে উপহার হিসেবে লাভ করবেন। সেটা হলো আপনি গভীরভাবে বুঝতে পারবেন সৃষ্টির মূল শক্তিকে এবং আপনি কিভাবে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত আছেন এবং আপনি কিভাবে এর অবিচ্ছেদ্য অংশ রূপে আছেন। আপনি বুঝতে শুরু করবেন যে প্রত্যেক পয়েন্ট অন্য সকল পয়েন্টের সাথে কানেক্টেড। আপনি বুঝতে শুরু করবেন যে বিলিয়ন বিলিয়ন পরমানু যার দ্বারা আপনি সৃষ্ট, এটা ভ্যাকুয়ামের মধ্য দিয়ে অন্যসকল পরমানুর সাথে সংযুক্ত। ইউনিভার্সের সমস্ত কিছুতে আপনার প্রভাব আছে একই ভাবে এই ইউনিভার্সেরও আপনার উপর প্রভাব আছে।আপনি আপনার ভেতর ও বাইরের ফিডব্যাকের ব্যপারে সচেতন হবেন, আপনি হঠাৎ করেই মহাবিশ্বের একজন সচেতন অংশগ্রহণকারী হবেন যে কিনা রিয়ালিটির উপর উপকারী প্রভাববিস্তারকারী হবেন যেটা মহাবিশ্ব এবং মানবজাতির জন্য কল্যানকর হবে।" 

ইন্দ্রজাল যাদুকরী শক্তিদানের সম্ভাবনার পাশাপাশি আরো কিছু দেয়। এটা মানুষকে আইসোলেটেড - তুচ্ছ সত্তা ভাবাকে প্রশমিত করে।এটা শেখায় কোন ব্যক্তিরই নিজের ক্ষমতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা উচিত না, কারন একজন মানুষ মহাবিশ্বের সাথেই যুক্ত, সে যা ইচ্ছে তাই হতে পারে। রুমি বলেন,"নিজেকে ছোট ভাবা বন্ধ করো, কেননা তুমি নিজেই ভাবাবেশকর গতিময় মহাবিশ্ব।" রুমির কথায় মাইক্রোকজমের ভেতর ম্যাক্রো ওয়ার্ল্ডের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি ফ্র‍্যাক্টালের কথা বলছেন। এ কারনেই সমস্ত কুফফার যাদুকররা রুমির ভক্ত। 

বেদান্তবাদি কাব্বালিস্টিক দর্শনে সমস্ত সৃষ্টিজগত তথা প্রকৃতি ও মানুষকে  অভিন্ন-অবিভাজ্য- অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা হয়,যার জন্য যাদুকররা পারস্পারিক হার্মোনির আহব্বান করে অর্থাৎ পারস্পারিক সংঘাত দ্বন্দ্ব বিগ্রহ থেকে মুখ ফিরিয়ে ধর্মবিহীন স্বর্গরাজ্য তৈরির আহব্বান করে। সেখানে শক্তি বা এনার্জি বা জ্বালানির কোন অভাব থাকবেনা, কারন ভ্যাকুয়াম স্পেস এবং সকল বস্তুর গোড়ার ইথার বা আকাশিক ফিল্ডই অনন্ত শক্তির আধার। ভ্যাকুয়াম ইথারিয়েল এনার্জি ফিল্ডের সাথে ফিজিক্যাল ও স্পিরিচুয়াল সংযোগের মাধ্যমে প্রকৃতি ও মানব জাতির অপূর্ব সমন্বয় ও হার্মনি সম্ভব। সেখানে অভাব বলে কিছু থাকবেনা। অফুরন্ত জ্বালানি শক্তি থাকবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য। ধরুন অফুরন্ত বিদ্যুৎ শক্তি অথবা তেলের বিকল্প কোন জ্বালানি। ধরুন বিদ্যুতের বিকল্পে এমন কোন অর্গ্যানিক শক্তি যেটা বিদ্যুতের তুলনায় শক্তিশালী অফুরন্ত এবং মানুষ ও পরিবেশের জন্য অক্ষতিকর। সায়েন্টিজমের প্রচারক ন্যাশনাল জিওগ্রাফির জেসন সিলভাকে এক মহিলা প্রশ্ন করে যে, ধর্মে বিশ্বাস কি সায়েন্টিফিক এ্যাডভান্সমেন্টের কারনে এক পর্যায়ে বাতিল হয়ে যাবে কিনা(?)।উত্তরে জেসন সিলভা সরাসরি বলেন, প্রযুক্তি এখন ওইসব মেটাফিজিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করেছে যার জন্য মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করত, সুতরাং খুব শীঘ্রই ধর্ম বিশ্বাস বাতিল হয়ে যাবে। তিনি ওমেগা পয়েন্ট[১৭] নামের আরেক সায়েন্টিফিক ভিডিওতে সরাসরি বললেন যে আধুনিক বিজ্ঞান ধীরে ধীরে ট্রান্সহিউম্যানিস্টিক এভ্যুলুশনারী প্যান্থেইস্টিক ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন করে এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি সরাসরি বলেন, বিজ্ঞান ধীরে ধীরে প্রাচীন সাইকাডেলিক ট্রান্সেন্ডেন্টাল অনুভূতির দিকে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে, সৃষ্টিজগতের মধ্যে নিজেরদের অংশগ্রহন অনেকটা মস্তিষ্কের নিউরনের সাথে তুলনীয়। মানুষ মহাচৈতন্যের অনুভূতি এবং সত্যায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নাসিম হারামাইনও একই লক্ষ্যে কাজ করেছেন।তার সকল অকাল্ট শাস্ত্রীয় গবেষণা প্রাচীন রহস্যময় নানা স্থাপত্যের কাছে গিয়ে সভা সেমিনারের উদ্দেশ্য এটা বলা যে, প্রাচীন সভ্যতাগুলোর হাতে এ্যাডভান্স প্রযুক্তি ছিল। তিনি সেই অকাল্ট টেকনলজির মেকানিজম অন্বেষণে অনবরত ছুটেছে। তিনি বলতেন পিরামিড স্ট্রাকচারগুলো সবই এনার্জি জেনারেটর হিসেবে কাজ কর‍ত। তিনি টিওটুকুয়ান এর পিরামিড স্থাপত্যের ব্যাখ্যায় বলেন, এটি এমন স্থানে তৈরি যেখানে স্পেস টাইমের শক্তিশালী এনার্জি ভর্টেসি তৈরি হয়। এগুলো টেট্রাহিড্রাল স্ট্রাকচার তৈরি করে। এসব বিল্ডিং স্ট্রাকচার দিয়ে তার মতে এনার্জি তৈরি করা হত[১৪]। নাসিমও তেমনই স্বপ্ন দেখেন। তার সহকর্মী পদার্থবিজ্ঞানী এলিজাবেথ রশার বলেন,"আমি সমস্ত কিছু অস্তিত্বকে একক হিসেবে দেখি, এখন আমরা সায়েন্টিফিক ম্যাথডে যাচ্ছি চমৎকার সুযোগ এবং যন্ত্রের মাধ্যমে যাতে এই চিন্তাকে সমর্থন করতে পারি।এটাকে স্পিরিচুয়াল ট্রেডিশন বলা যেতে পারে, কিন্তু এটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছুই করবার মত আছে। যেমন ধরুন কিভাবে এই জগতে কাজ করা উচিত, কিভাবে পজেটিভ ম্যানারে এই ফোর্সকে কাজে লাগানো যায় মানবজাতির মহাকল্যানের স্বার্থে।" নাসিম টেসলার ন্যায় ভাকুয়্যামকেই সকল শক্তির আধার হিসেবে ধরেন। শূন্যতার ঐন্দ্রজালিক শক্তি দ্বারা তিনি বিশ্বকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখেন। নাসিমের পাশে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। অনেকে তার সাথে যোগ দিয়ে তারই গবেষণা প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছে।এরই একজন জেমি জ্যানোভার। তিনি নাসিমের গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে ফিল্মও বানাতে চেয়েছিলেন[১৫]। নাসিম Connected Universe[২১] এবং Black Hole নামের দুটি ফিল্ম তৈরি করেন, এতে তার প্রচারণা আরো বেড়ে গেছে।
নাসিম মিশরীয় প্যাগানিজমকে সত্যায়ন করেন সানগড এর সত্যতা তুলে ধরার মাধ্যমে। তিনি বিশ্বাস করে আসল মানবজাতির ইতিহাস বিকৃত। বস্তুত তিনি যেই সৃষ্টিতত্ত্ব ও বিবর্তনবাদি মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিশ্বাস করেন তা প্রাচীন যাদুকরদের কুফরি নস্টিক[Gnostic] আকিদা ছাড়া অন্য কিছু নয়। প্রমিথিউজ, নোয়িংসহ অনেক হলিউড ফিল্ম বিকৃত মানব জাতির ইতিহাসকে উপস্থাপন করে যাতে দেখানো হয় এলিয়েনরাই আমাদের স্রষ্টা! নাসিম এটাকেই প্রোমোট করেন। তিনি প্রাচীন প্রযুক্তিগুলোকে বলেন সবই এলিয়েনদের শিক্ষা। আমার মনে পড়ে বিগত পর্বের এলিয়েন চ্যাপ্টার নিয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। এলিয়েনরা কারা, সে পরিচয় বোধ করি আবারো নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। সুতরাং হাশিম আল ঘাইলির ন্যায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শয়তানের আনুগত্যের দিকেই আহব্বান করে নাসিম হারামাইনগন। বিগত কয়েক দশকে ক্রপসার্কেলগুলোয় অসংখ্যবার ফ্র‍্যাক্টাল ম্যান্ডেলব্রট ও অনেক জটিল সেক্রিড জিওমেট্রি খোদিত হয়েছে। এটা এই সকল অকাল্ট সেক্রিড জিওমেট্রিক বিদ্যার শয়তানি অরিজিনকে প্রমাণ করে। কেননা ক্রপসার্কেলগুলোর অধিকাংশই শয়তান জ্বীনের সৃষ্টি সেটা ইতোপূর্বে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি।

নাসিম তার ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরির দ্বারা একটি utopian বিশ্বব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেন যেখানে জ্যোতিষবিদ্যাই এবং প্রকৃতিপূজাই হবে মানুষের একক ধর্ম। যেখানে এনার্জির প্রাচুর্য থাকবে যেটা দারিদ্র ও অভাবকে দূরীভূত হবে। মানুষ প্রকৃতির সাথে harmony তৈরি করে স্বর্গের ন্যায় বসবাস করবে। প্রকৃতির সাথে হার্মোনি তৈরির জন্য ইতোমধ্যে তিনি বহু বছরের ফিজিক্সের জ্ঞান দিয়ে আর্ক নামের একটি ম্যাজিক্যাল ক্রিস্টাল ডিভাইস তৈরি করেছেন,যেটা নেকলেসের ন্যায় গলায় ঝুলানোর যোগ্য।এটা কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম ফিল্ডের সাথে মানুষের শরীরের পজেটিভ ইন্টার‍্যাকশন তৈরির মাধ্যমে শারীরীক সুস্থতা বর্ধিত করে বলে প্রচারের দ্বারা অনেক বিক্রি হয়েছে। নাসিমের মূল পরিচয় হলো, তিনি জ্যোতিষী ও কাব্বালিস্ট[১৯] । তার জ্ঞানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে প্রাচীন বিচিত্র যাদুবিদ্যার শাখা গুলো। তার ঐন্দ্রজালিক ভ্যাকুয়াম এনার্জির আবিষ্কার এবং প্রযুক্তিতে রূপান্তর শুধুই সিহরের এডভান্স মেকানাইজেশান। তিনি একাই নন বরং যুগে যুগে বিজ্ঞানী নামধারী যাদুকররা এর বিষয়ে বলে গেছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স প্রফেসর এবং সাবেক নাসা এ্যাস্ট্রোনট ব্রায়ান ও'লিয়ারি বলেন,"এই কনসেপ্টটি পৃথিবীর প্রায় ১০০টিরও বেশি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় প্রমাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো এগুলো দিবালোক দেখেনি।যদি এই প্রযুক্তিগুলো পৃথিবীতে বিনামূল্যে দেয়া হয়, তাহলে গভীর পরিবর্তন ঘটবে। এটা বিশ্বের সর্বত্রই ব্যবহার যোগ্য। এ প্রযুক্তিগুলো অবশ্যই ইতিহাসের ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন হবে।"

পদার্থবিদ Harold E. Puthoff একজন আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী[পিএইচডি,স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়]। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সিআইএ এবং এনএসএ দ্বারা পরিচালিত রিমোট ভিউ প্রোগ্রামটি ডিক্লাসিফিকেশনের জন্য তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি অস্টিনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের পরিচালক, এবং তাঁর বহু বছর ধরে বিভিন্ন সরকারী সংস্থার দায়িত্ব পালন করেছেন। ডক্টর হ্যারল্ড পুটহফ বলেন,"এরা কোন সায়েন্সফিকশন আইডিয়াধারী ফ্রিঞ্জ সায়েন্টিস্ট নয়। এগুলো মেইনস্ট্রিম আইডিয়া, যা মেইনস্ট্রিম ফিজিক্স জার্নালে প্রকাশ হয়েছে এবং এগুলো মেইনস্ট্রিম মিলিটারির দ্বারা খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। এমনকি নাসার মত সংস্থাও বিনিয়োগ করেছে। আমি যখন নেভির এয়ারক্র‍্যাফটে কর্মরত ছিলাম তখন দেখিয়েছিলাম কোন জিনিসটা আমাদেরকে রিপ্লেস করা প্রয়োজন যদি আমরা নতুন জ্বালানির উৎসের জন্য নতুন জ্বালানির প্রক্রিয়া বন্টন করতে চাই।"[৬]

ইউটোপিয়ান ফিলান্থ্রপিক মিশনের সংগঠন থ্রাইভ মুভমেন্ট এর ফস্টার গ্যাম্বেল ঠিক একই ধরনের এনার্জির ফিল্ড এবং অফুরন্ত শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনার প্রোপাগান্ডা চালায়।  তিনিও প্লেটনিক সলিডের দিকে যান। এমনকি নাসিমের সাথেও সাক্ষাত করেন। তিনিও বলেন ম্যাটারকে ক্র‍্যাশিং এর দ্বারা এনার্জি না তৈরি করে হার্মোনিক রেজোনেন্সের দ্বারা তৈরি করা। ন্যাচারের শক্তির অনুকূলে গিয়ে শক্তি গ্রহন করা প্রতিক্যুলে না গিয়ে। নাসিম সবসময় টোরাস স্ট্রাকচারের কথা বলতেন যেটা ইনফিনিট এনার্জি এনার্জি ভর্টেসি প্রসঙ্গে। থ্রাইভেত গ্যাম্বেলও ঠিক এটাকেই গ্রহন করেছেন। ফস্টার সাহেব কিছু ইউএফও দ্বারা এ্যাবডাক্ট হওয়া ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাত করেন যারা ইউএফও তে চড়েছিল তারা সকলেই ওই ইইএফওর টোরাইডাল টোরাস ধরনের ইউএফও প্রপালশান সিস্টেমের কথা বলেন। steave groff m.d বলেন, "এই ধরনের প্রযুক্তি স্পেসের ফ্যাব্রিক থেকে এক্সট্র‍্যাক্ট করা হয়,যার মানে হচ্ছে একে কোন মিটারবদ্ধ করা যাবেনা যেটা কিনা তেল,কয়লা, মোবিল, ইলেক্ট্রিসিটি কে বিদায় দিয়ে কিছু ইন্ড্রাস্ট্রি ও কোম্পানিকে সরাসরি হুমকি দেয়।"

মূলত এসবের প্রচারণাকারী এবং গোপনকারী একই এজেন্ডার দুই রূপ। সাধারন মানুষ সমৃদ্ধি আর উন্নত জীবন যাত্রার ব্যপারে খুব দুর্বল হয়ে এসবকে গ্রহন করে। কিন্তু সরকার সবসময়ই এই ঐন্দ্রজালিক প্রযুক্তিকে লুকিয়ে রাখার অভিনয় করে জনসাধারণের কৌতুহল বাড়ে। তাছাড়া তেল গ্যাস বিদ্যুৎ জ্বালানি একটা বিশাল ব্যবসায় এবং নিয়ন্ত্রনের অংশ। বিনা কারনে ওরা এটা হাত ছাড়া করবেনা। জন বেদিনি, ট্রম্বলিসহ অনেকেই টেসলাকে অনুসরণ করে এ ধরনের ফ্রিএনার্জির যন্ত্র নির্মাণ করেছিল। এ্যাডাম ট্রম্বলিকে তার আবিষ্কার দেখাতে ইউনাইটেড নেশন ও ইউএস সিনেট থেকে ইনভাইটেশন পাঠান হয়েছিল। কিন্তু এরপরেই তৎকালীন বুশ এডমিনিস্ট্রেশন তার মেশিন নিয়ে গেছে। বিজ্ঞানী এঞ্জিনিয়ার ইউজিন ম্যালভ ফ্রি এনার্জি নিয়ে প্রচারনা চালিয়েছিলেন। হয়ত তাকে এজন্য ২০০৪ সালে হত্যা করা হয়। এ সকল ঘটনা দ্বারা শাসক গোষ্ঠী সাপ্রেশনকে স্পষ্ট করছে যাতে এর প্রতি জনমনে আরো বেশি আকুলতা বৃদ্ধি পায়। সেটাও হয়ে গেছে। টেসলাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ডানের চিত্রের ন্যায় হাজারো লোকেরা তাদের প্রযুক্তিতে সাপ্রেশনের নিন্দা জানায় এবং তাদেরকে সফলভাবে কাজের সুযোগ দিলে যে এতদিনে দুনিয়া স্বর্গলোক হয়ে যেত,সেই আফসোস করে।



যাদুবিদ্যা উৎসারিত ঐন্দ্রজালিক জিরো পয়েন্ট ফিল্ডকে[২০] হঠাৎ করে থিওরেটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই ব্যবহারের পথ দেখানো হবেনা। আগে তৈরি করে নিতে হবে শক্ত থিওরেটিকাল প্ল্যাটফর্ম, দরকার একটা "থিওরি অব এভ্রিথিং"। সেই সাথে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গোটা মানব জাতির এক বৈপ্লবিক আধ্যাত্মিক প্রত্যাবর্তন। প্রত্যাবর্তন করতে হবে প্রকৃতি মাতার কাছে। দরকার আরেকটা রেনেসাঁর। আধ্যাত্মবাদী যাদুশাস্ত্রের অনুসারী সকলের মাঝে এ ব্যপারে ইজমা[ঐক্যমত্য] আছে যে ২০১২ এর পর থেকে মানব জাতি নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে। এ্যাস্ট্রলজিক্যাল এ্যাকুরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্তমান সময় চৈতন্যের নতুন ধারায় মানবজাতি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বেদান্তশাস্ত্রের অনুসারীরা একদিকে অপেক্ষা করছে কল্কি অবতারের জন্য, বৌদ্ধরা মৈত্রেয় বুদ্ধ। ইহুদীরা অপেক্ষা করছে তাদের মহান নেতা মসীহের জন্য। তাকে ঘিরেই যত আয়োজন।








[চলবে ইনশাআল্লাহ....]




Ref:
[] https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indra's_net
[]https://switchonnow.com/magazine/indras-net-bells-theorem-and-enlightenment/
Elst, Koenraad. Hindu dharma and the culture wars. (2019). New Delhi : Rupa. Chapter 20.
https://en.m.wikiquote.org/wiki/Indra's_net
https://dhivanthomasjones.wordpress.com/2013/05/02/dependent-arising-and-interconnectedness/
http://www.pragyata.com/mag/the-vedic-metaphor-of-indras-net-234
[]https://m.youtube.com/watch?v=MCTMpMf9U3A
[]https://m.youtube.com/watch?v=OXbVZc10lnk
[]https://m.youtube.com/watch?v=SKcv6GSm2dw
[]en.m.wikipedia.org/w/index.php?search=Aether&title=Special%3ASearch&profile=default&fulltext=1&ns0=1&iorg_service_id_internal=1547440102204384%3BAfpaKC4lTmyQrxpW
en.m.wikipedia.org/w/index.php?search=Aether&title=Special%3ASearch&profile=default&fulltext=1&ns0=1&iorg_service_id_internal=1547440102204384%3BAfpaKC4lTmyQrxpW
https://m.youtube.com/watch?v=6Jcl0kgOg4I
https://m.youtube.com/watch?v=Im01RsX6THM
missing link
[]https://www.scienceandnonduality.com/article/the-indras-net
https://wiki.my-big-toe.com/index.php/The_Vedic_Conception_of_Indras_Net
[]https://www.scienceandnonduality.com/article/david-bohm-implicate-order-and-holomovement
https://futurism.com/david-bohm-and-the-holographic-universe
https://m.youtube.com/watch%3Fv%3DQI66ZglzcO0&sa=U&ved=2ahUKEwjH0KDyuePoAhWLYH0KHUAYCbYQtwIwCHoECAkQAQ&usg=AOvVaw3piLRIepYsXE5yPPdGVt1U
https://www.cosmic-core.org/free/article-134-the-holographic-universe-part-1-david-bohm-the-holographic-universe/
https://futurism.com/david-bohm-and-the-holographic-universe?fbclid=IwAR3ednBOAQkNVTyEXp32xNTrsFjaR6Tip40Hsntp4wI9u6vBZ4h9shkhu9Y
[]https://m.youtube.com/watch?v=aXuTt7c3Jkg
[১০]https://m.youtube.com/watch?v=aB3Z0SD_Xiw
https://m.youtube.com/watch?v=xJsl_klqVh0
[১১]missing link
[১২]https://m.youtube.com/watch?v=1R8AihKoWrw
[১৩]https://m.youtube.com/watch?v=DtUMMC6BMY0
[১৪]https://m.youtube.com/watch?v=J5QBQ0kiCr8
[১৫]https://m.youtube.com/watch?v=sZwWmvI6EhQ
[১৬]https://m.youtube.com/watch?v=yD9og3ylAzg
[১৭]https://m.youtube.com/watch?v=1UfNLmLBoNA
https://m.youtube.com/watch?v=54RxU_MekPU
https://m.youtube.com/watch?v=Bk7p4XqdF5M
[১৮]https://m.youtube.com/watch?v=TXPpQmgD85E
[১৯]https://youtu.be/e_mG6r0Fdq4
[২০]https://m.youtube.com/watch?v=KHc96rRDA3I
[২১]https://m.youtube.com/watch?v=o4uY4hyBh9k
[২২]https://codemeariver.wordpress.com/2017/03/07/doctor-strange-world-of-fractals/amp/




বিগত পর্বগুলোর লিংক:
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html

Friday, June 19, 2020

Ummah Network

আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার প্রতি লাখকোটি শুকরিয়া যে তিনি আমাদের সকলের প্রিয় শাইখ তামিম আল আদনানির[হাফিঃ] ইউটিউব চ্যানেল Ummah Networkএর অনুসরণকারীর সংখ্যা পাঁচলক্ষ করেছেন। বর্তমানে সাবসক্রাইবার সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যেন এই সংখ্যা বহুগুন বাড়িয়ে দেন। আমিন। এই সংখ্যাবৃদ্ধি তাওহীদের দাওয়াত ব্যাপক আকারে প্রসারেরই ইঙ্গিত। আমরা যারা অনলাইনে আছি, তারা যার যার ফেসবুকে তার চ্যানেলের লিংক প্রমোট করলে এক সপ্তাহে আরো অনেকের কাছে পৌছত। লিংকঃ
https://m.youtube.com/channel/UCdC58Fno7uiux5-fDWb3F4Q

মাঝে কিছুদিন আগে সমস্ত পথচ্যুত দরবারি আলিমরা তার লেকচার না শুনবার জন্য অনেক প্রচারণা চালিয়েছিল। মনে পড়ে? কিন্তু ফলাফলে এখন কি হলো? ৫০০০০০+ সাবস্ক্রাইবার। আল্লাহু আকবর। আল্লাহর পরিকল্পনা এমনই। ওদের নিন্দা আর বিদ্বেষ শাইখের খ্যাতি মোটেও কমায় নি বরং সহস্র গুন বাড়িয়েছে। আমার মনে হয় না বাংলাদেশে ২য় কোন জীবিত আলিমের ফ্যান ফলোয়ারদের সংখ্যা এত বেশি । শাইখ তামিমকে মানুষ কতটা ভালবাসে সেটা টের পাওয়া যায় তার একেকটা ভিডিওর কমেন্টে। আমার মনে হয়না শাইখুল হাদিস মুফতি জসিমউদদীন রহমানির (হাফিঃ) পর শাইখ তামিম আল আদনানির অনুরূপ বাংলাদেশের ৩য় কেউ আছে। আমরা উভয়ের জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য রহমানের দরবারে দু'আ করি। আল্লাহ যেন শাইখ তামিম আল আদনানিকে(হাফিঃ) দিয়ে আরো দীর্ঘ সময় বিশুদ্ধ তাওহীদের দিকে  দাওয়াহ অব্যাহত রাখেন এবং শাইখ জসীমউদ্দিন রহমানির(হাফিঃ) মুক্তি ত্বরান্বিত করেন। আমিন।

Tuesday, June 16, 2020

১৯.বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

পদার্থবিজ্ঞানের অকাল্ট মায়াবাদি আকিদায় প্রত্যাবর্তন

 






প্রাচীন প্যাগান যাদুকরদের বাস্তবতা এবং সমগ্র অস্তিত্বের ব্যপারে এরূপ বিশ্বাস ছিল যে, গোটা বিশ্বজগতের বাস্তব অস্তিত্ব নেই। সবই মায়া। মায়া শব্দের বৈদিক অর্থ যাদু,উইচক্র্যাফট/সর্সারি[১]। যাদুকররা গোটা বিশ্বজগতকেই যাদু বা মায়া বলে অভিহিত করে। এই বিশ্বাস ভারতীয় যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শনগুলোতেও ছিল।পুরাণ এবং বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বে, মায়াকে বিষ্ণুর নয়শক্তির মধ্যে একটি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিষ্ণুর ঘুমের সাথে সাথে স্বপ্নের দ্বারা তৈরি হয় মায়া। বিষ্ণু, ইন্দ্রের মতোই মায়া সৃষ্টির কর্তা; এবং মায়া বিষ্ণুর গোটা দেহকে[মহাবিশ্বকে] আচ্ছন্ন করে।
In Puranas and Vaishnava theology, māyā is described as one of the nine shaktis of Vishnu.[42] Māyā became associated with sleep; and Vishnu's māyā is sleep which envelopes the world when he awakes to destroy evil. Vishnu, like Indra, is the master of māyā; and māyā envelopes Vishnu's body[৩].[উইকিপিডিয়া]



বিগত পর্বগুলোয় মায়াবাদের বেদান্তবাদী একটা স্তরের ব্যপারে আলোচনা হয়েছে, যেখানে ব্রহ্মচৈতন্যের এবং সবকিছুর এক ও অভেদ অস্তিত্বের মধ্যে মানুষের বাহ্যিক বিচ্ছিন্নতার(প্রতিটি বস্তু ও প্রানীর মধ্যবর্তী বস্তুগত ফাঁকাস্থান) বিশ্বাসের জন্য সবকিছুকে মায়া(ইল্যুশন) বলা হয়েছে। মায়াতত্ত্বের অপর বৈষ্ণবীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে সমগ্র মহাবিশ্ব মহাজাগতিক একক চেতনার কল্পনা বা স্বপ্ন।  ভারতীয় অকাল্ট ফিলসফির বিষ্ণুর মায়ার পাশাপাশি এই আকিদা বা বিশ্বাস খুজে পাওয়া যায় মিশরীয় যাদুশাস্ত্রকেন্দ্রিক দর্শনগুলোয়। মিশরের 'ভেইল অব আইসিস' এর দ্বারা এই চিন্তাধারাকে বোঝায়। হিন্দুধর্মের বিষ্ণুপুরাণে এরূপ বর্ননা পাওয়া যায়। যখন মহাজাগতিক ক্ষীর সমুদ্রে বিষ্ণুদেব নিদ্রায় যান, তখন স্বপ্নে তার নাভিমূল থেকে ব্রহ্মাকে জন্ম হতে দেখেন। ব্রহ্মকে সৃষ্টির জন্য আদেশ করা হয়। এভাবে ব্রহ্মাকে বলা হয় সৃষ্টিকর্তা এবং বিষ্ণুকে বলা হয় এই ব্রহ্মকল্পের ধারক তথা ব্রহ্মাণ্ডের পরমেশ্বর। হিন্দু পুরাণ-ঔপনিষদিক বিশ্বাসে বলা হয় বিষ্ণু যখন ঘুমিয়ে যায় তার স্বপ্নে নাভিমূল থেকে ব্রহ্মার উত্থান হয়ে মহাবিশ্বের তথা ব্রহ্মকল্পের মহামায়ার সূত্রপাত ঘটে। ব্রহ্মকল্পের অবসান ঘটে ধ্বংসের নৃত্যকারী নটরাজ শিবের আবির্ভাবের দ্বারা।কল্পের সাগরে শেষনাগের অনন্তশয্যায় শায়িত বিষ্ণুর নাভি থেকে জাত পদ্মের ওপরে ব্রহ্মাকে বসে থাকতে দেখা যায়। বলা হয়,সৃষ্টির আদিতে বিষ্ণুই একা ছিল, সৃষ্টির কথা স্মরণ হতেই তাঁর নাভিজাত পদ্মে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়[৪]। যেহেতু সমস্ত মহাবিশ্ব বিষ্ণুর ঘুমের স্বপ্ন বা কল্পনা, এই জগত বস্তুত মায়া বা ইল্যুশন। বৈদিক সংজ্ঞানুযায়ী যেটাকে যাদু বলা হয়।  উপনিষদে গোটা প্রকৃতি জগতকে বলা হয়েছে যাদু। বিষ্ণুর স্বপ্নে নাভিমূলে উদগত স্বয়ং ব্রহ্মাকে বলা হয়েছে যাদুকর। মনুষ্যজাতি এ যাদুর মায়াজালে সহজে মোহিত হয়ে মায়াময় অস্তিত্বহীন জগতের সাথে বন্ধন তৈরি করে। এই মিথ্যা বন্ধনী থেকে মুক্ত হবার জন্য মানুষকে যাদুবিদ্যার পেছনের গুপ্তবিদ্যা অন্বেষণের আহব্বান করে উপনিষদ! এ কথা সরাসরি উপনিষদেও এসেছেঃ The concept of Maya appears in numerous Upanishads. The verses 4.9 to 4.10 of Svetasvatara Upanishad, is the oldest explicit occurrence of the idea that Brahman (Supreme Soul) is the hidden reality, nature is magic, Brahman is the magician, human beings are infatuated with the magic and thus they create bondage to illusions and delusions, and for freedom and liberation one must seek true insights and correct knowledge of the principles behind the hidden magic.[উইকিপিডিয়া]

আধুনিক বিজ্ঞান এই মায়াবাদি মহাবিশ্বের ধারনা তথা ম্যাজিক্যাল অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন করছে। ঔপনিষদিক বিদ্যার সাথে সুর মিলিয়ে বলছে এই মহাবিশ্ব একটি যাদুপ্রদর্শণী। জ্বি,কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার বলেন:"
"প্রশ্নটি হচ্ছে, প্রশ্নটি কী?
সবই কি যাদুপ্রদর্শনী?
বাস্তবতা কি একটি মায়া(ইল্যুশন)?
(এ) মেশিনের কাঠামো কী?
ডারউইনের ধাঁধা: প্রাকৃতিক নির্বাচন[ন্যাচারাল সিলেকশন]?
স্পেস-টাইম কোথা থেকে আসে?
এটা চেতনা থেকে আসে, এটা ছাড়া কোন উত্তর আছে?
সেখানে কি আছে?
এটা কি আমরা নিজেরাই?
অথবা, এর সবই কি কেবল একটি ম্যাজিক শো?
আইনস্টাইন আমাকে বলেছেন:
"আপনি যদি শিখতে পারেন, শেখান!"

অর্থাৎ মানুষের অস্তিত্ব তথা সমগ্র ত্রিমাত্রিক জগতের বাস্তব অস্তিত্ব নেই, সেসব স্বপ্নীল মায়াজাল। বিষ্ণুর কল্পনা।একে ইংরেজিতে একে বলা যায়, Dream, simulation, hologram কিংবা illusion। এটাই প্রাচীন ন্যাচারাল ফিলসফি তথা জাগতিক অস্তিত্বের ব্যপারে যাদুকরদের বিশ্বাস। উল্লিখিত দেবদেবীর কথাগুলো রূপকার্থে গুন বা বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। নিম্নশ্রেণীর ভক্তি সম্প্রদায় এদেরকে মাটি দিয়ে বাস্তবিক দেবদেবীর রূপ দিয়ে পূজা করে।

যাদুবিদ্যা বা যাদুশাস্ত্রের বিশ্বাসকে, বিজ্ঞান নামে প্রতিষ্ঠিত অপবিজ্ঞান কি করে বৈদিক অদ্বৈত বেদান্তবাদী কুফরি বিশ্বাসকে সায়েন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে সেটা  ১৭ ও ১৮তম পর্বে বিস্তারিত দেখেছেন। মূলত, অদ্বৈত বেদান্তবাদে ফিরে যাবার দ্বারা আধুনিক বিজ্ঞান প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান আইডিয়ালিস্টিক অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন করেছে। কোয়ান্টাম পদার্থবিদগন এ সুবিশাল কাজটিকে করেছে। সরাসরি ব্রহ্মচৈতন্যে ফিরে যাবার পাশাপাশি তারা এর সাথে যুক্ত বিষ্ণুর ব্রহ্মকল্পের সেই আদি বিশ্বাসকেও সত্যায়ন করেছে। অদ্বৈত অস্তিত্বের পাশাপাশি বাস্তবজগতকে বলা হচ্ছে, এটা ভার্চুয়াল কন্সট্রাক্ট। অর্থাৎ মহাবিশ্ব জগত একরকমের হলোগ্রাফিক স্বপ্নময় অসত্য অস্তিত্ব। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক নিজেই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সের কথা বলেছেনঃ"এই মহাবিশ্ব,যার মধ্যে আমরা কাজ করি এটি একটি হলোগ্রাফিক ইনফরমেশনাল স্ট্রাকচার, যার মধ্যে আমরা আমাদের চেতনাকে ব্যবহার করে প্রবেশ এবং কাজ করি। প্রত্যেক ব্যক্তি এক একটি মাইক্রোভার্সে বাস করে,যেটাকে শ্রদ্ধেয় এন্টন উইলসন বলেছেন 'রিয়ালিটি টানেল' - পরস্পরেরসাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হয় শেয়ার্ড প্রোগ্রামের জন্য। মাল্টিভার্সের মধ্যে প্রোগ্রাম গুলোর অবস্থান পরস্পরের সাথে যুক্ত একীভূত তরঙ্গরূপে। আমাদের মনই এটাকে স্থান কাল ও বস্তুতে সাজায়। আপনি আপনার (মানসিক)প্রোগ্রামকে নতুনভাবে সাজান তবেই ভিন্ন ধরনের রিয়ালিটিতে নিজেকে খুজে পাবেন।"

ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ম্যাট্রিক্স ম্যাথম্যাটিক্যাল মেকানিক্স নিয়ে এসেছিলেন। আজকে বৌদ্ধ,বেদান্তশাস্ত্র ও পদার্থবিজ্ঞানের অকাল্ট ফিলসফিকে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে হলিউডের ম্যাট্রিক্স ফিল্মে। মহাবিশ্ব একটি হলোগ্রাফিক সিমুলেশন বা ভার্চুয়াল ইন্সট্রাক্ট। সবকিছুই মৌলিক সংখ্যা বা ইনফরমেশনের দ্বারা তৈরি। সুতরাং বৈষ্ণব-উপনিষদের স্বপ্নময় বাস্তব অস্তিত্বহীন বিশ্বজগতের প্রাচীন ধারনায় ফেরত আসা শুরু হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনকদের হাত ধরে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স তথা বেদান্ত মেকানিক্সই গোটা সৃষ্টিতত্ত্ব এবং সৃষ্টিজগতের উৎপত্তির জ্ঞানকে পাল্টে প্রাচীন যাদুকরদের বিশ্বাসব্যবস্থার দিকে নিয়ে যায় এবং সেটাকে যথার্থ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

মায়াবাদি বা আইডিয়ালিস্টিক বাস্তবতার ধারনা সবচেয়ে পুরোনো যে শাস্ত্রে পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে ব্যাবিলনীয়ান যাদুশাস্ত্র কাব্বালাহ। কাব্বালিস্টিক টেক্সটগুলোর মূল শিক্ষার বিষয়ই হচ্ছে হাইপার ডাইমেনশনাল আইডিয়ালিস্টিক ফিজিক্স। বলতে পারেন বাস্তবজগতের ব্যপারে আজকের বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে খুব উন্নততর অথচ সবচেয়ে পুরোনো বিদ্যা রয়েছে কাব্বালায়। যখন ইহুদী যাদুকরদের থেকে গ্রীক জ্ঞানবাদী দার্শনিক মনীষীগন[!] গ্রীসে পৌছায় তখন গ্রীস হয়ে যায় অপবিদ্যার সমৃদ্ধ ভূমি। গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাস ব্যবিলন-মিশরের ম্যাজাইদের থেকে বাস্তব জগতের ব্যপারে বিকৃত কুফরি বিশ্বাস তথা আকিদাকে নিয়ে আসেন।এ আর্টিকেল সিরিজের পূর্ববর্তী পর্বগুলোয় পিথাগোরাসের বাবেল সফরের দলিলগুলো নিয়ে আলোচনা গত হয়েছে। পিথাগোরাসকে আইডিয়ালিস্টিক ডিজিটাল ফিজিক্সের আদি প্রবক্তা বলা যেতে পারে। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই মহাবিশ্ব নাম্বার বা সংখ্যার সমন্বয়ে গঠিত। সবকিছুই গনিত সবকিছুই সংখ্যা। এজন্য তিনি তার শিষ্যদেরকে  সংখ্যাতত্ত্ব বা নিউমেরলজির শিক্ষা দিতেন। তারা বিশ্বাস করত সংখ্যার মধ্যেই রিয়ালিটির গুপ্তজ্ঞান রয়েছে।

নোভা ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয় যে,পিথাগোরাস বিশ্বাস করতেন এই মহাবিশ্বের সব কিছুই নাম্বার বা সংখ্যা ও গণিতের সমন্বয়ে সৃষ্টি। এমনকি শব্দ তরঙ্গ বা মিউজিকও জটিল গণিতের সমন্বয়ে সৃষ্ট। যত উচ্চতর জটিল গাণিতিক ছন্দ, মিউজিক তত শ্রুতিমধুর। তিনি স্ট্রিং বা তারকে গাণিতিক রেশিওতে ভাগ করে সর্বপ্রথম গিটারের অনুরূপ বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে ফেলেন[২]। তিনিই সর্বপ্রথম বাদ্যযন্ত্রের মিউজিক্যাল নোটের হার্মোনিয়াস ইন্টারভ্যালের রেশিও আবিষ্কার করেন। সুতরাং আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সাথে পিথাগোরাসের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।জ্যাজ মিউজিশিয়ান এ্যাস্প্যারেঞ্জা স্প্যাল্ডলিং গনিতকে খুবই ভালবাসেন তিনি গানিতিক পার্ফেকশান খুজে পান বাদ্যযন্ত্রের মাঝে। পিথাগোরাসের আধ্যাত্মিক শিষ্য গ্যালিলিও তার অনুরূপ বিশ্বাস করতেন যে এই মহাবিশ্ব সম্পূর্ণ গানিতিক ভাষায় লেখা। অর্থাৎ ডিজিটাল ফিজিক্স আধুনিক কিছু নয়, বরং প্রাচীন যাদুকরদের আকিদার নতুন সংস্করণ।


পাশ্চাত্যে মহাবিশ্বের মায়াময় স্বপ্নীল অস্তিত্বের সর্বপ্রথম ধারনা দেয় দার্শনিক রেনে ডেকার্ট। তাঁর লেখা 'মেডিটেশন অন ফার্স্ট ফিলোসফি'(1641) তে রিয়ালিটিকে স্বপ্নের সাথে পার্থক্যহীন দাবি করেছিলেন। তার স্বপ্নের যুক্তিটি নিম্নরূপ: "এমন বিশ্বাসের কোনও সত্যতা নেই যে আমি সত্যি সত্যিই আগুনে বসে আছি, যেহেতু আমি স্বপ্ন দেখেছি যে আমি নিশ্চিতভাবে আগুনের পাশে বসে আছি, অথচ এটা আমার কাছে অজানা ছিল যে আমি স্বপ্ন দেখছি ।" ডেকার্টের যুক্তি অনুসারে,স্বপ্ন জাগ্রত অবস্থায় থাকার বাস্তবতা থেকে পার্থক্যহীন হতে পারে। জীবন জাগ্রত ও স্বপ্ন দেখার মধ্যে যে কোন বিষয়গত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই পার্থক্য একজনকে আত্মবিশ্বাসের সাথে দৃঢ়ভাবে বলতে দেয় না যে সে জেগে আছে বা স্বপ্ন দেখছে। ডেকার্ট "মেডিটেশন অন ফার্স্ট ফিলোসফি"তে বলেছেন, "... এমন কোনও নির্দিষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় নি যার দ্বারা আমরা ঘুম থেকে জাগ্রত অবস্থাকে স্পষ্টভাবে আলাদা করতে পারি", এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, "সম্ভবত আমি এই মুহূর্তে স্বপ্নের মধ্যে আছি এবং আমার সমস্ত বাস্তব উপলব্ধি ভুল[বিভ্রম/মায়া]।" ডেকার্ট ছিলেন পাশ্চাত্যের প্রথম স্বীকৃত দার্শনিক।তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বিচিত্র মিস্টিক্যাল অকাল্ট টেক্সটের মধ্যে ডুবে ছিলেন তৎকালীন অন্য সকল দার্শনিকদের মত[৫]। সুতরাং তিনি সেখান থেকেই মূলত প্রাচীন মায়াবাদি অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে প্রচার করছেন। তিনি বোঝাচ্ছেন, হয়ত আমাদের বাস্তব জগতের ধারনাটিও ভুল। আমরা হয়ত স্বপ্নের মধ্যে আছি। যেহেতু এই বিশ্বাসের অরিজিন যাদুশাস্ত্র সুতরাং এর অনুসারী কাউকে যদি ইলাহের স্বীকৃতি দেবার চেষ্টা করে তবে শয়তানকেই ইলাহ বলে স্বীকৃতি দেবে। রেনে ডেকার্ট এ কাজটিই সরাসরি করেছেন। তিনি স্বপ্নময় জগতের স্রষ্টা হিসেবে শয়তানকে স্বীকৃতি দেন। Descartes একে বলেন অশুভ শয়তানের[Evil Demon] হাইপোথিসিস, যা তার পরের লেখায় উত্থাপিত হয়। তিনি যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন যে একটি "অশুভ শয়তান" মহা প্রতারণার[মিথ্যা রিয়ালিটিকে সত্য হিসেবে উপস্থাপনের] জন্য দায়ী, যাকে আমরা দৃঢ়তার সাথে বাস্তবতা হিসাবে উল্লেখ করি - এই শয়তান তার নিজ ক্ষমতা ব্যবহার করে বাহ্যিক বিশ্বজগতের সম্পূর্ণ বিভ্রম বা মায়া তৈরি করছে। এই ধূর্ত শয়তান আমাদের সমস্ত সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। ডেকার্টের এ মায়াবাদি তত্ত্বকে পরবর্তীতে হ্যান্স মোরাভিক পুনরুত্থাপন করেন।

ডেকার্টের ইভিল ডিমন তথা অশুভ শয়তানের তত্ত্বটি এখানেই শেষ হয়নি।আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এটা আজ আধুনিক বিজ্ঞানের  প্রচারক ও ধারকরা তাদের আকিদায় বৈজ্ঞানিকভাবে এই শয়তানি বিশ্বাস লালন করেন,এটা তারা এমনকি সায়েন্টিফিক ডকুমেন্টারিতেও প্রচার করেন। সেটা ইনশাআল্লাহ একটু পড়েই বুঝবেন।

মায়াবাদি এই কুফরি দর্শন প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছে ইনফরমেশন বেজড ডিজিটাল প্যানকম্পিউটেশনালিস্টিক ফিজিক্সের ধারা। মূলত আইডিয়ালিজম এরই হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিজিটাল ফিজিক্স এর দ্বারা এমন পদার্থবিদ্যার ধারাকে বোঝায় যেখানে রিয়ালিটিকে ডিজিটাল বাইনারি কোড বেজড ভার্চুয়াল কন্সট্রাক্ট হিসেবে দেখা হয়। সেটা হতে পারে ডিজিটাল বাইনারি কম্পিউটার কোড বা এরকম কিছু। সবকিছুর নিচে আছে ইনফরমেশন। এরও নিচে আছে মহাচৈতন্য। ডিজিটাল ফিজিক্সে রিয়ালিটিকে পিক্সেলেটেড বলা হয়। অর্থাৎ পদার্থের একদম মৌলিক অবিভাজ্য পর্যায়ে গেলে ত্রিমাত্রিক পিক্সেল খুজে পাওয়া যাবে যেমনটা কোন দ্বিমাত্রিক কম্পিউটারের ছবিকে জুম করতে থাকলে অবশেষে ইমেজটি ফেটে অসংখ্য ২ডি পিক্সেল দেখা যায়। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ম্যাট্রিক্স ম্যাথম্যাটিকস ব্যবহার করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রথম সমীকরণ তৈরি করেছিলেন। তিনি থিওরাইজ করেছিলেন, স্থান এবং সময় অবিভাজ্য, ত্রিমাত্রিক প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্যের ইউনিটগুলিতে (আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনের 2 ডি পিক্সেলের অনুরূপ) পিক্সেলেটেড অবস্থায় আছে। গণিতও এর ইঙ্গিত করে, এবং রিয়ালিটির মসৃণতার[অ-পিক্সেলেটেড] জন্য কোনও শক্ত পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। মসৃণ স্পেসটাইমে যে কোনও দুটি পয়েন্টের মধ্যে অসীম পরিমাণের পয়েন্টের বিস্ময়কর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। বজেনোর ডিকটোমী প্যারাডক্স এই সমস্যাটির মুখোমুখি হয় যে, আপনি যদি পয়েন্ট এ থেকে পয়েন্ট বি'তে যেতে চান, তবে আপনাকে প্রথমে অবশ্যই এই দুটি পয়েন্টের মধ্যে অর্ধেক পথ যেতে হবে। এবং সেখানে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই সেই দুটি পয়েন্টের মধ্যে অর্ধেক পথ পাড়ি দিতে হবে এবং এভাবে অসীমভাবে।স্পষ্টতই, এই প্যারাডক্সটি অর্থহীন, কারণ আমরা সাধারণত বি পয়েন্টে যেতে পারি। যাইহোক, আমরা যদি বি বিন্দুতে যেয়ে থাকে তবে এটি সূচিত করে যে বাস্তবতা পিক্সেলেটেড। পিক্সেলেটেড রিয়েলিটি সম্পর্কে হাইজেনবার্গের ধারণাগুলি তাঁর দিনের বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর কাছে অত্যন্ত র‍্যাডিক্যাল ছিল, একমাত্র নিলস বোর তার সাথে একমত হয়েছিলেন।বর্তমানে অধিকাংশ  পদার্থবিজ্ঞানীরা ডিজিটাল ফিজিক্সের পিক্সেলেটেড স্পেসটাইমের ধারনাকে মেনে নিচ্ছেন। বেশিরভাগ একমত যে প্লাঙ্ক স্কেলের চেয়ে কম হতে পারে না, যা স্পষ্টত বলে যে বাস্তবতা পিক্সেলেটেড। খুব শীঘ্রই পিক্সেলেটেড স্পেসটাইমের পক্ষে একটি শক্তিশালী কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কার হতে যাচ্ছে যেটা স্মুথ স্পেসটাইমের ধারনাকে চূড়ান্তভাবে ভুল প্রমাণ করবে[৬]।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবির্ভাবের দ্বারা প্রাচীন অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে সত্যায়ন কার্য শুরু হলে এর মাঝে বৈষ্ণবীয় - বেদান্তবাদী মায়াতত্ত্বে তাৎপর্য উপলব্ধি শুরু হয়, কিন্তু আলাদাভাবে সরাসরি মায়াবাদে ফিরে যাবার জন্য প্রয়োজন হয় নতুন কোন থিওরির। এজন্য পদার্থবিজ্ঞানীগন ১৯৭০ সাল দিয়ে হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপল তৈরি করে বৈষ্ণবী মায়াকল্পের ধারনাকে আলাদাভাবে প্রচার শুরু করে। স্পেস তথা মহাশূন্যের ধারণা ততদিনে মানুষের কল্পনায় প্রতিষ্ঠিত হয়। কাব্বালিস্টিক হেলিওসেন্ট্রিক মহাকাশতত্ত্বের উপর অনেক থিওরির জন্ম হয়, এসব নিয়ে অনেক কল্পনা জল্পনা শুরু হয়। ব্ল্যাকহোল, এন্টি ম্যাটার,ডার্ক ম্যাটার অমুক তমুক বিচিত্র কাল্পনিক জিনিস মূল আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়। এ সকল তত্ত্ব, হাইপোথিসিস আসলে সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব বিষয়, হয় পরবর্তীতে কোন একটা সম্পর্কযুক্ত বিশ্বাসব্যবস্থাকে সত্যায়নে সহযোগিতা করে, কিংবা প্রাচীন কোন আকিদার দিকে নিয়ে যায়। যেমন ধরুন ব্ল্যাকহোল।
এই হলোগ্রাফিক তত্ত্ব এসেছে ব্ল্যাকহোল তত্ত্ব থেকে।মাইকেল ট্যালবটের মতে,হলোগ্রাম হচ্ছে "ভার্চুয়াল ছবি, যেটাকে (অস্তিত্বশীল হিসেবে) দেখা যায়, অথচ সেটা নেই..."। হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপ্যাল বলে যে, গ্রাভিটি পাতলা- স্পন্দিত স্ট্রিং থেকে উদ্ভূত হয়,  যা সমস্ত ফ্ল্যাট, দ্বিমাত্রিক  ইউনিভার্সের হলোগ্রাম।বিজ্ঞানীরা দেখে যে ব্ল্যাকহোলগুলোয় যদি সব গ্রাস করে নেয় তবে সকল ত্রিমাত্রিক বস্তুকে দ্বিমাত্রিক সার্ফেসে সকল ত্রিমাত্রিক বস্তুর ইনফরমেশন সংরক্ষণ করবে। একইভাবে এই দ্বিমাত্রিক জগত থেকে আবারো বস্তুটির ত্রিমাত্রিক রূপ দেয়া সম্ভব, এখান থেকে ধরা হয় মহাবিশ্ব পুরোটাই হলোগ্রাম। ব্ল্যাকহোল তত্ত্ব থেকে এ ধারণাটি আসে। ১৯৭০ এর দশকে গবেষকরা জানলেন যে যখন কোনও বস্তু ব্ল্যাকহোলে পড়ে ব্ল্যাকহোলের অংশ হয়ে যায়, তখন দুটি জিনিস ঘটে। এক,অবজেক্ট সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য হারিয়ে যায়। দুই, ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হোরাইজনের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়। প্রথম ঘটনাটি থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় 'ল লঙ্ঘন করেছে বলে মনে হয়, কারণ হারিয়ে যাওয়া বিবরণগুলির মধ্যে একটি হলো অবজেক্টটির এনট্রপি বা তার অংশগুলোর আণুবীক্ষণিক তথ্য। তবে দ্বিতীয় সত্যটি একটি উপায় বের করে দিয়েছে: যদি এনট্রপি সর্বদা বর্ধমান হয় এবং একটি ব্ল্যাকহোলের পৃষ্ঠের অঞ্চলটিও, তাহলে সম্ভবত ব্ল্যাকহোলের কোথাও তথ্য বা ইনফরমেশন কোনওভাবে সেখানে সঞ্চিত থেকে যায়।

হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপাল কোয়ান্টাম গ্রাভিটি স্ট্রিং থিওরির বিষয়। এর প্রথম প্রস্তাবনাকারী Gerard 't Hooft। পরবর্তীতে Leonard Susskind বিস্তরব্যাখ্যা দান করেন। থর্ন 1978 সালে দেখেছেন যে, স্ট্রিং থিওরি এমন এক lower-dimensional বর্ণনাকে স্বীকার করে যার মধ্যে হলোগ্রাফিক উপায়ে মহাকর্ষের উত্থান ঘটে।  হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপ্যাল ব্ল্যাকহোল থার্মোডাইনামিক্স থেকে উত্থাপিত হয়েছিল। ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে ধারনাটি এরূপ, যে সব বস্তু গর্তে পড়েছে তাদের তথ্যবহুল বিষয়বস্তু পুরোপুরি ইভেন্ট হোরাইজনের ফ্লাকচুয়েশনে থাকতে পারে। হলোগ্রাফিক নীতি ব্ল্যাকহোলের ইনফরমেশন প্যারাডক্সকে স্ট্রিং তত্ত্বের কাঠামোর মধ্যে সমাধান করে।

এবার চলুন,১৯৯৩-এর দিকের ঘটনায় যাওয়া যাক। পৃথকভাবে কাজ করা দুই পার্টিকেল ফিজিসিস্ট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে মহাবিশ্ব নিজেই একইভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এই ধারণাটি দিয়ে শুরু করে যে, স্পেস বা স্থানের প্রতিটি ভলিউমে তথ্য সঞ্চিত রয়েছে। তবে স্পেসের যে কোনও স্থান ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে, যেটা হবে প্রকৃতির সবচেয়ে ঘন ফাইল ক্যাবিনেট, যা অঞ্চলের বিটগুলিতে তথ্য সঞ্চয় করে। সম্ভবত তারপরে, স্পেস, ব্ল্যাকহোল বা কোনও প্যাচ বর্ণনা করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা হলো এই অঞ্চলের ইনফরমেশনের মান । এ ধারণাটির থেকে হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স তত্ত্বের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। জেআর মিনকেল বলেন,"আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে  হলোগ্রাফিক নীতিটি সমস্ত স্থানের সকল স্পেস টাইমে  কাজ করে। আমাদের সেখানে এই আশ্চর্যজনক প্যাটার্ন রয়েছে, যা ব্ল্যাকহোলের তার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এবং এটি কেন কাজ করে তার ব্যপারে আমাদের কোনও ধারণা নেই। এটা আমাদের যেটা জানাচ্ছে যে আমাদের এ জগতের এমন একটি বিবরণ বা ব্যাখ্যার সন্ধান করা উচিত; যা বর্তমানে আমাদের কাছে বিদ্যমান তত্ত্বের চেয়ে আরও বেশি অল্পভাষার এবং সম্ভবত কোয়ান্টাম গ্রাভিটির সাথে এটি করতে হবে।"[৭]


মাইকেল ট্যালবট একজন অস্ট্রেলিয়ান লেখক, যার বইগুলি মূলত কেবলমাত্র সায়েন্স ফিকশনের। তিনি একজন মিস্টিক ছিলেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে মিস্টিসিজম মিলিয়ে বই লিখতেন। তার একটি কিতাবের নাম Mysticism And The New Physics, Beyond The Quantum। তিনি হঠাৎ বাস্তবতার ব্যপারে "দ্য হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স" নামের বই পাব্লিশ করেন, এতে বলা হয় যে, এই মহাবিশ্ব একটি বিশাল হলোগ্রাম ছাড়া আর কিছু নয়, অর্থাৎ একটি মায়া, যা বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট প্রাথমিক স্তরের অভিক্ষেপ[প্রজেকশন]। তার বইয়ের এই তত্ত্বটিকে বিজ্ঞান মহল সায়েন্সফিকশন হিসেবে নেয় নি বরং খুব সিরিয়াসলি গ্রহন করে। মাইকেল ট্যালবটের এ বইতে বলেন, " এ বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে যে আমাদের এ জগতের সমস্ত জিনিস, স্নোফ্লেক্স থেকে ম্যাপল গাছ, পতনশীল তারকা থেকে ঘূর্ণনশীল ইলেকট্রন পর্যন্ত সমস্ত কিছুই ভূতুরে ছবি, যা এমন এক লেভেলের রিয়ালিটির প্রজেকশন যেটা শুধুমাত্র আমাদের রিয়ালিটিই নয় বরং এই স্পেস-টাইমেরও বাইরের।"

হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স এর অকাল্ট তত্ত্বকে আলাদাভাবে সর্বপ্রথম প্রচার শুরু করেন খ্যাতিমান ইহুদী পদার্থবিজ্ঞানী David Bohm। ডেভিড বোহম ছিলেন বেদান্তশাস্ত্রের অনুসারী ওপেনহেইমারের শিষ্য এবং ইহুদী  পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বন্ধু। তিনি তৎকালীন প্রথম সারির কোয়ান্টাম ফিজিসিস্টদের একজন। ইহুদি পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড বোহম পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য স্মরনীয় হয়ে আছেন।  বার্কলেতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরপরই তিনি ইলেক্ট্রন ফেনোমেনন আবিষ্কারের দ্বারা প্লাজমা তত্ত্ব তৈরি করেন যাকে এখন বোহম ডিফিউশন বলা হয়। ১৯৫৫ বোহম ইসরাইলে চলে আসেন, সেখানে তিনি হাইফার Technion 'এ দু'বছর কাজ করেন।[৮]

এই হলোগ্রাফিক থিওরি তৈরির কাজে ডেভিড বোহমের পাশে ছিল স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্সের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কার্ল এইচ প্রব্রাম। অদ্ভুতভাবে, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্ষেত্রের এ দুই বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় একই সিদ্ধান্তে এসেছেন। "স্টার  ওয়ার্স" মুভিটিতে দেখে থাকবেন,একটি লেজারযুক্ত রোবট মহাকাশে ত্রি-মাত্রিক চিত্র তৈরি করে যা সম্পূর্ণ বাস্তব বলে মনে হয়। সম্ভবত, আমাদের পুরো বিশ্বজগতটি এমন একটি হলোগ্রাম যা বাস্তবের এমন গভীর স্তর থেকে প্রজেক্ট করা হয়েছে, যেটা স্থান কালের বাহিরে অবস্থিত। ডেভিড বোহম এবং কার্ল প্রব্রামকে এমন ধারনা সত্য কিনা প্রশ্ন করা হলে তাদের থেকে এই প্রশ্নের উত্তরে "হ্যাঁ"সূচক জবাব আসে। কার্ল প্রিব্রাম ট্রেডিশনাল নিউরোফিজিওলজির ধারণায় হতাশ হয়ে পরে হলোগ্রামের ধারণায় এসেছিলেন, কারন ট্রেডিশনাল পদ্ধতি মস্তিষ্কের কর্মপ্রণালীর ব্যাখ্যায় প্রচুর কনফ্লিক্ট বিদ্যমান এবং এর অনেক রহস্যের ব্যাখ্যা করতে পারেনা।
উভয় বিজ্ঞানীর মতে, হলোগ্রাফিক মহাবিশ্বের তত্ত্বটি সহজেই চিন্তা-চেতনার দ্বারা বস্তুকে সরানো অর্থাৎ টেলিকেনেসিস, টেলিপ্যাথি, ভবিষ্যদ্বাণী, অন্ধ লোকদের "দেখার" ক্ষমতা এবং অন্যান্য অলৌকিক ঘটনার  রহস্যগুলির অনেকগুলোর ব্যাখ্যা করে। বিগত দশকে, অনেক বিজ্ঞানী এই ক্ষেত্রে গবেষণা করেছিলেন এবং আরও প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন যে হলোগ্রাফিক তত্ত্বটি সঠিক। 1982 সালে, পদার্থবিদ এ্যালাইন এসপেক্ট নিউরোফিজিওলজি ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন, যা স্মৃতি এবং উপলব্ধির হলোগ্রাফিক প্রকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।বোহম দৃঢ় বিশ্বাস করতেন যে যদিও মহাবিশ্বকে বাহ্যিকভাবে সলিড বস্তুগত মনে হয়, অথচ এটি প্রকৃতপক্ষে একটি হলোগ্রাম। তিনি এই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সের "প্রতিটি অংশে সম্পূর্ণ" ধারণাতে বিশ্বাসী ছিলেন এর মানে, বাহ্যিক জগতের প্রতিটি অংশে পুরো মহাবিশ্বের গঠন উপাদান ও তথ্য রয়েছে। বোহম বলেন,"হলোগ্রাম ব্যাখ্যা করে কিভাবে পুরো হলোগ্রাফিক দৃশ্যের তথ্য কিভাবে  সিনেমার প্রতিটা অংশে এনফোল্ড করা থাকে।" বোহম ও প্রিব্রাম মিলে হলোনমিক ব্রেইন থিওরি তৈরি করেন যাতে ব্যাখ্যা করা হয় যে আমাদের মস্তিষ্ক হলোগ্রাফিক পন্থায় কাজ করে এবং কোয়ান্টাম ইফেক্ট মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত সাধারন বিষয়।মাইকেল ট্যালবট তার বই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সে উল্লেখ করেন," প্রিব্রাম বুঝতে পেরেছিল যে যদি হলোগ্রাফিক মস্তিষ্কের মডেলটিকে তার যৌক্তিক সিদ্ধান্তে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে এটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। অব্জেক্টিভ রিয়ালিটি: কফি কাপ, পর্বত সুড়ঙ্গ, এলম গাছ এবং টেবিল ল্যাম্প প্রভৃতির জগত - হয়ত অস্তিত্বশীল নয়। অথবা কমপক্ষে আমরা যেরূপে এর অস্তিত্বে বিশ্বাস করি,এটা ওইরূপ নয়। তিনি কি আশ্চর্য হয়েছিলেন যে,এমনটা কি হতে পারে যে, রহস্যবাদীরা[অকাল্ট ফিলোসফার] বহু শতাব্দী ধরে যা বলে আসছিল তা সত্য, বাস্তবতা হচ্ছে মায়া, একটি ইল্যুশন এবং যার অস্তিত্ব ছিল সেটা সত্যিই তরঙ্গ রূপগুলোর একটি বিশাল, অনুরণনকারী সিম্ফনি, একটি "ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন" যা রূপান্তরিত হয়ে আমাদের ইন্দ্রিয়তে প্রবেশ করার পরেই আমরা এটিকে জগত বলে মনে করি?"

বোহম থিওসফিক্যাল সোসাইটি সহজ কথায় হিন্দুত্ববাদী তান্ত্রিক শাখা সংগঠনের গুরু যিদ্দুকৃষ্ণমূর্তির সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এজন্য প্রিব্রামের অনুরূপ বৈদিক  মায়াবাদকে ধারন করে তাকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা স্বাভাবিক। বোহম বিশ্বাস করতেন সমস্ত সৃষ্টিজগতটিই একটি হলোগ্রাফিক প্রজেকশন অনুরূপ মায়া।তিনি ডিসিসির এক আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখানে বাস্তব জগত সম্পর্কে লিখেছেনঃ“আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব বাস্তবতা হলোগ্রাফিক চিত্রের মতো সত্যই একধরনের মায়া। এটি বাস্তব জগতের বিস্তৃত ও আরো প্রাথমিক স্তরে অন্তর্নিহিত অস্তিত্বের একটি গভীর ক্রমসংগঠন,  যা আমাদের বাহ্যিক জগতের সমস্ত বস্তু এবং উপস্থিতিকে একইভাবে জন্ম দেয়, যেভাবে একটি হলোগ্রাফিক ফিল্মের হলোগ্রামকে জন্ম দেয়। যদি বিশ্বের সলিড আকৃতিগত বস্তুজগত একটি গৌণ বাস্তবতা হয়, এবং 'বাহিরে সেখানে’র সব কিছু ফ্রিকোয়েন্সিগুলোর একটি হলোগ্রাফিক ব্লার[Holographic blurr] হয় এবং মস্তিষ্কও যদি একটি হলোগ্রাম হয় এবং তা ফ্রিকোয়েন্সি প্রক্রিয়াকরণের অংশ নেয়, তবে অব্জেক্টিভ রিয়ালিটি কি হয়ে যায়? বেশ সহজভাবে বলতে গেলে এটির অস্তিত্ব বিলোপিত হয়ে যায়।যদিও আমরা ভেবে থাকি যে, আমরা দৈহিক আকৃতিগত সত্তা একটি দৈহিক আকৃতিগত জগতের মধ্য দিয়ে চলেছি, এটি মূলত একটি মায়া[ইল্যুশন]। আমরা আসলেই ক্যালিডোস্কোপিক ফ্রিকোয়েন্সির সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ভাসমান 'রিসিভার'[স্বরূপ]।"[৯]

১৭ জানুয়ারি ২০১২ সালে জার্মানির জিইও৬০০ গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ ডিটেক্টর এর বিজ্ঞানীগন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পেয়েছেন যে আমাদের এই ইউনিভার্স একটি হলোগ্রাফিক প্রজেকশন। জার্মান বিজ্ঞানীদের গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ শনাক্ত করার যন্ত্র গুলো অদ্ভুত শব্দ ধারন করছিল,সেখানকার বিজ্ঞানীরা এর কারন হিসেবে উপসংহারে আসেন যে এর কারন হতে পারে, মহাবিশ্ব একটি হলোগ্রাম। ইলিনয়ের বাটাভিয়ায় অবস্থিত ফার্মি পার্টিকেল ফিজিক্স ল্যাবের পদার্থবিজ্ঞানী Craig Hogan বলেন, জিইও৬০০ স্পেস টাইমের ফান্ডামেন্টাল লিমিটের শেষ পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছে। তিনি বলেন, "জিইও৬০০ যদি ওই ফলাফলে উপনীত হয় যেটার আশংকা আমি করি, তবে বলব যে আমরা একটা বৃহদাকার মহাজাগতিক হলোগ্রামে বাস করি। আমরা যে হলোগ্রামে বাস করি, এটা শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু এটা ব্ল্যাকহোলের ব্যপারে আমাদের প্রকৃতিগত বোধ, এবং দৃঢ় থিওরিটিক্যাল ফুটিং। এটা ওইসব থিওরিটিক্যাল ফিজিসিস্টদের জন্যও সহযোগীতাকারী তত্ত্ব যারা এই মহাবিশ্ব মৌলিক ভাবে কিভাবে কাজ করে, সেটা আবিষ্কারের জন্য অনবরত থিওরি গুলোর মধ্যে লড়াইরত আছে।"

Hebrew University of Jerusalem এর ফিজিক্স প্রফেসর Dr. Jacob D. bekenstein বলেন
,"হলোগ্রাফিক থিওরি নামের আশ্চর্যজনক থিওরিটি বলে যে ইউনিভার্সটি হলোগ্রামের ন্যায়....প্রচন্ড চাপে থাকা ভর-ব্ল্যাকহোলের ফিজিক্স একটা হিন্টস হিসেবে আমাদের বলে যে এই থিওরি সত্য হতে পারে।"
-Scientific American [august 2003]


একইভাবে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ ব্রেইন গ্রীন ২০১১ সালে ডিস্কোভারি চ্যানেলের নোভা ডকুমেন্টারির পর্ব The Fabric of Cosmos : what is space এ  বলেন, "আমাকে কি খুব বাস্তব বলে মনে হচ্ছে, তাই না? কিন্তু বর্তমানে অনেক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে আমি আপনি এবং এমনকি স্পেস আসলে একধরনের হলোগ্রাম। আমরা যা-ই দেখি, যাই ত্রিমাত্রিক জগতে অনুভব করি, তা সম্ভবত দূরবর্তী দ্বিমাত্রিক সার্ফেস থেকে উদ্ভূত ত্রিমাত্রিক প্রজেকশনের ইনফরমেশন।"[১২] স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ফিজিসিস্ট লিওনার্দ সাস্কিন্ড অন্য সকলের ন্যায় হলোগ্রাফিক মায়াতত্ত্বে বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন,"আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতটি কি হলোগ্রামের ন্যায় মায়া[ইল্যুশন]?সম্ভবত, আমি মনে করি ত্রিমাত্রিক এ জগত একধরনের মায়া।এবং বাস্তবজগতের সর্বশেষ রূপ হচ্ছে মহাবিশ্বের দ্বিমাত্রিক সার্ফেস।" University of Southampton এর থিওরিটিক্যাল পদার্থবিদদের একটি দল বিশ্বাস করে যে, বিগব্যাং এর পর অবশিষ্ট রেডিয়েশন তথা মহাবিশ্বের কস্মিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি) নিয়ে গবেষণা করে যে তথ্যপ্রমাণ হাতে আসে, তা আমাদের ইউনিভার্সকে মায়া বলে সাব্যস্ত করে।  Professor Kostas Skenderis বলেন,  
"কল্পনা করুন যে আপনি যা দেখেন, অনুভব করেন এবং তিন মাত্রায় যা শুনে থাকেন এবং আপনার সময় সম্পর্কে উপলব্ধি প্রকৃতপক্ষে একটি সমতল দ্বি-মাত্রিক ক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত হয়।" University of Waterloo,  Perimeter Institute এর Niayesh Afshordi বলেন, "আমরা এই হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স মডেল ব্যবহার করার প্রস্তাব দেই, যা মহাকর্ষ এবং ইনফ্ল্যাশনের উপর নির্ভর করে চলা জনপ্রিয়  বিগব্যাং মডেলের চেয়ে আলাদা।" আফশোরদী আরো বলেন, "এই মডেলগুলির প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র প্রেডিকশন দ্বার করায় যা আমরা আমাদের ডেটা পরিমার্জন করার সাথে সাথে আমাদের তাত্ত্বিক বোধগম্যতার উন্নয়ন করতে পারি, পরের পাঁচ বছরের মধ্যে।" Skenderis বলেন, "আমরা যেভাবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাঠামো নিয়ে চিন্তা করি, তাতে হলোগ্রাফিক তত্ত্বটি অনেক লম্বা দূরবর্তী[উন্নততর] চিন্তার বিষয়।"[১১]

সুতরাং দেখতে পারছেন যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়; সর্বত্রই এখন বৈদিক মায়াবাদের জাল বোনা হয়েছে। এই হলোগ্রাফিক জগতের হলোগ্রাম তৈরি হয় ডিজিটাল বিটস, ইনফরমেশনের সমন্বয়ে। স্টুয়ার্ট হ্যামারফ বলেন, "আমাদেরকে স্কুলে শেখানো হয়েছে এই মহাবিশ্ব এ্যটমসহ বিচিত্র জিনিস দ্বারা তৈরি। এটম দিয়ে মলিকিউল তৈরি, মলিকিউল দিয়ে পদার্থ তৈরি, এবং সবকিছুই এর দ্বারা তৈরি। কিন্তু এটম প্রায় পুরোপুরি শূন্য। যেমন ধরুন এই হাতের বলটি এটমের নিউক্লিয়াস। হাইড্রোজেন এটমের প্রোটন উদাহরণস্বরূপ। এর ইলেক্ট্রন যা একে বাহির থেকে প্রদক্ষিণ করে যা ধরুন ওই পাহাড় সারির দূরত্ব থেকে, এর ভেতরকার সবকিছুই ফাঁকা। আসলে এই মহাবিশ্বই প্রকৃতপক্ষে শূন্য। যদি আমরা এই শূন্যতার আরো ভেতরের দিকে যাই, আমরা এক মৌলিক স্তরে এসে উপনীত হই যেটা ফান্ডামেন্টাল স্পেস টাইম জিওমেট্রি যেখানে শুধুই তথ্য বা ইনফরমেশন আছে বিশেষ প্যাটার্নে। একে প্লাঙ্ক স্কেল বলা হয়। এটাই মহাবিশ্বের ফ্যাব্রিক। এখানে বিগব্যাং এর সময় থেকে তথ্য মওজুদ আছে।"
পদার্থবিজ্ঞানীরা মায়াবাদের গ্রহণযোগ্যতা বর্ধনে সেটাকে আরো যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিককরনে ডিজিটাল ফিজিক্স তথা ইনফরমেশন থিওরির প্রস্তাব করেন।ইনফরমেশন থিওরি অনুযায়ী বোঝানো হয় যে, সকল বার্তাকে বাইনারি ইউনিট অথবা বিটে রূপান্তরযোগ্য।যা হ্যা বা না প্রশ্নের উত্তর দেয় শুধু।জন হুইলার প্রস্তাব করেছিলেন যে পদার্থবিদ্যাকে ইনফরমেশন থিওরিতে পুনর্গঠন করা উচিত,ইনফরমেশন থিওরির ধারণাকে  তিনি এই বাক্যটিতে আবদ্ধ করেছেন "it from bit"। এর দ্বারা বোঝায় যে বাস্তব হলোগ্রাফিক জগতের সকল বস্তুর নিচে ক্ষুদ্রতম স্তরে গেলে শূন্য ও একের বাইনারি বিট পাওয়া যাবে। মহাচৈতন্যের থেকেই এই বিট উৎসারিত হয় বা ইনফরমেশন উদ্ভূত হয়[১০]। ১৯৯০ সালে হুইলার বলেছিলেন যে, মহাবিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ইনফরমেশন হলো মৌলিক। তার "এটা বিট থেকে" মতবাদ অনুসারে, বাহ্যিক জগতের সমস্ত কিছুই ইনফরমেশন থেকে উদ্ভূত। ১৯৮৯ সালে তিনি এটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন যে,"প্রতিটি it - প্রতিটি কণা, বলের প্রতিটি ক্ষেত্র এমনকি স্পেসটাইম কনটিনুয়াম - তার ক্রিয়াকলাপ, এর ব্যাখ্যা,এমনকি এর সমগ্র অস্তিত্ব - এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে -বাইনারি চয়েজ, বিটগুলো থেকে হ্যাঁ-বা-না প্রশ্ন থেকে উদ্ভূত হয়।এটা বিট থেকে ধারনাটি প্রতীকী হিসেবে বলে যে বাহ্যিক জগতের সমস্ত কিছুর তলানী বলে কিছু আছে-খুবই গভীর তলদেশ- অধিকাংশ ক্ষেত্রে - একটি অবস্তুগত উৎসের ব্যাখ্যা; আমাদের রিয়ালিটি হ্যা বা না প্রশ্নের থেকে উত্থিত হয়। সংক্ষেপে বলা যায় এই বাহ্যিক জগতের অরিজিন্স হলো তথ্যতাত্ত্বিক এবং এটা একটা অংশগ্রহণমূলক ইউনিভার্স।"

একই সময়ে তৈরি হয়ে যায় ম্যাট্রিক্স নামের জগদ্বিখ্যাত ফিল্ম যেখানে বুদ্ধধর্মের অবলম্বনে কোড বেজড রিয়ালিটিকে দেখানো হয়। ডিরেক্টর শামানিস্ট কন্যা লানা ওয়াচস্কি, মরফিয়াসের মুখে বলেন,"আপনি বাস্তবতাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করেন? আপনি যদি বাস্তবতাকে দেখা,শোনা, অনুভব, স্বাদকে বোঝান তাহলে বাস্তবতা বলতে শুধুই আপনার মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যাল সিগ্নালের ব্যাখ্যাকে বোঝাবে। এই [স্ক্রিনের ভিডিও] ছিল আপনার চেনা বাস্তবতা। এই হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর দুনিয়া। এটার অস্তিত্ব এখন নিউরো-ইন্টার‍্যাক্টিভ সিমুলেশনের অংশ যাকে আমরা ম্যাট্রিক্স বলি। নিও, আপনি এতদিন স্বপ্নময় জগতে বাস করতেন।"

এভাবেই পদার্থবিজ্ঞানে শক্তিশালী বৈদিক অকাল্ট প্যারাডাইম দাঁড়িয়ে যায়। একে একে সত্যায়ন ক্রিয়া চলতে থাকে সমস্ত প্রাচীন যাদুকরদের কুফরি আকিদা সমূহ, বাতেনি ফের্কার বিশ্বাস সমূহ, এবং গ্রীক দর্শন। বিগত দুই পর্বে পদার্থবিজ্ঞানীদের কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ধারার প্রবর্তক এবং আরো অনেক বিখ্যাত ফিজিসিস্টদের ব্রহ্মচৈতন্যবাদি বৈদিক বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানকে বেদান্তবাদের আদি মোড়কে ফেরানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। মূলত,প্রত্যেক বেদান্তবাদী অপবিজ্ঞানী হলোগ্রাফিক ডিজিটাল ফিজিক্সে বিশ্বাস করতেন। এমনকি যারা যারা সুস্পষ্টভাবে কিছু বলবার সুযোগ পায়নি তারাও, কেননা এটা আইডিয়ালিস্টিক ফিজিক্সেরই ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাটাস। এজন্য আবারো ঐসব পদার্থবিজ্ঞানীদের হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সের বিশ্বাসের বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন মনে করি।

বেদান্তশাস্ত্র ভিত্তিক কোয়ান্টাম মেকানিকস নির্ভর আইডিয়ালিস্টিক ডিজিটাল ফিজিক্স বা ইনফরমেশন থিওরির ডেভেলপমেন্ট এখানেই শেষ নয়। হলোগ্রাফিক বৈদিক মায়াবাদ আরো ভাল করে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে সিমুলেশন শব্দটি। বলা হচ্ছে যে আমাদের এই রিয়ালিটি বা বাস্তবতা হচ্ছে হলোগ্রাফিক সিমুলেশন।সহজে বোঝানোর জন্য আনা হয়েছে কম্পিউটার সিমুলেশনকে। বিজ্ঞানীরা বলতে শুরু করলো যে আমাদের এই বিশ্বজগত একটি দৈত্যাকার কম্পিউটারের প্রজেকশন। Konrad Zuse এর লিখিত Rechnender Raum (translated into English as Calculating Space) নামের বইয়ে সর্বপ্রথম মহাবিশ্বকে সুপারকম্পিউটার বলে উত্থাপন করা হয়। এছাড়াও মহাবিশ্বকে দৈত্যাকার কম্পিউটার বলেছেন Stephen Wolfram, Juergen Schmidhuber এবং নোবেলবিজয়ী Gerard't Hooft। তারা বলতেন কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রোব্যাবিলিস্টিক প্রকৃতির সাথে কম্পিউট্যাবিলিটি সাংঘর্ষিক নয়। তাদের এ চিন্তার কারন অনেকে কম্পিউটেশনকে ডিটারমিনিস্টিক মনে করেন।এতে সাধারন সেন্সে সবকিছুই বাঁধাধরা গননাযোগ্য এবং প্রেডিক্টেবল মনে হয়। এ সীমাবদ্ধতা থেকে বের করতে তারা প্রস্তাব করে ডিজিটাল ফিজিক্সের কোয়ান্টাম ভার্সন। সম্প্রতি Seth Lloyd, Paola Zizzi এবং Antonio Sciarretta প্রমুখ ডিজিটাল ফিজিক্সের কোয়ান্টাম ভার্সনের প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে আছে Carl Friedrich von Weizsäcker এর Ur-alternative বাইনারি থিওরি, pancomputationalism, computational universe theory। John Archibald Wheeler এর "It from bit", এবং Max Tegmark এর ultimate ensemble'ও এর অন্তর্গত।

Pancomputationalism বলতে মহাবিশ্বকে একটি গণনাকারী দৈত্যাকার কম্পিউটার অনুরূপ যন্ত্রকে বোঝায়, যেটা তার বর্তমান অবস্থার পরবর্তী ধাপকে গণনা করে।  Zuse এর 1967 সালের থিসিস পেপারের উপর ভিত্তি করে Jürgen Schmidhuber সর্বপ্রথম এই তত্ত্বকে উত্থাপন করেন। Pancomputationalists, Lloyd (2006) মহাবিশ্বকে একটি quantum computer এর সাথে তুলনা করেন। MIT এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রফেসর seth Lloyd বলেন, "এই মহাবিশ্ব মূলত একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আইন্সটাইনের চেয়ে নিজের ইন্টুইশনে কে বেশি আস্থা রাখে বলুন। যাইহোক,আইনস্টাইনের অবজেক্টিভ রিয়ালিটির(বস্তুজগতের বাস্তব স্বকীয় অস্তিত্বের) ধারনা পুরোপুরি ভুল।"

কোয়ান্টাম বিটকে যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যায়, আলো কোয়ান্টাইজড ফোটন, ইলেক্ট্রিসিটি হচ্ছে ইলেক্ট্রন, এটাও বাস্তব জগতের ভার্চুয়াল কন্সট্রাক্টের দাবির সপক্ষে যুক্তি দেয়। কারন ডিজিটাল প্রসেসে সকল ডেটার নূন্যতম কোয়ান্টিটি হিসেবে বিট বা পিক্সেল হিসেবে থাকবে। এবং আমাদের এই জগতেও একই উপাদান পাওয়া যায়। কোন কম্পিউটার ইমেজকে যদি কাছে থেকে পরীক্ষা করা হয় তবে তা সর্বশেষে পিক্সেলে বিভাজিত হবে, এটা আমাদের প্রকৃতিতেও বিদ্যমান। গত শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে পদার্থ আসলেই কোয়ান্টাইজড। এটা গঠিত এটোমের চেয়ে বিলিয়ন গুন ক্ষুদ্র অবিভাজ্য পার্টিকেল। এসব এভিডেন্স একত্রে বলে যে প্রকৃতি হচ্ছে কম্পিউটেবল বিট দ্বারা তৈরি ম্যাট্রিক্স। স্থান, কাল, এনার্জি সবকিছুই কোয়ান্টাইজড, সবই বিটের সমন্বয়ে তৈরি। এর মানে এই মহাবিশ্বের উপাদান এবং অবস্থা সংখ্যা নির্দিষ্ট। এর মানে এটা কম্পিউটেবল। যদি মহাবিশ্বের আসল প্রকৃতি ডিজিটাল হয় যার স্পেস টাইম কোয়ান্টাম বিটস দ্বারা তৈরি হয়,অর্থাৎ জন হুইলারের অবস্থান সঠিক।


বৈদিক মায়াবাদকে বিজ্ঞান বিতর্কের উর্ধ্বে নিতে এবার হলোগ্রাফিক তত্ত্বের পূর্ণতাদানে বলা শুরু করেছে এই মহাবিশ্ব হলো কম্পিউটার প্রজেকশন বা কম্পিউটার হলোগ্রাফিক সিমুলেশন অথবা কম্পিউটার গেইমের অনুরূপ সিমুলেটেড প্রোগ্রাম। তৈরি হয় সিমুলেশন হাইপোথিসিস। এটাই বৈদিক-বৈষ্ণবী মায়াবাদের সর্বাধুনিক সংস্করণ। এটা সেই প্লেটনিক আইডিয়ালিজমকে পরিপূর্ণতা দেয়। যেহেতু আমাদের বিশ্বজগত উচ্চমাত্রার জগতের হলোগ্রাফিক প্রজেকশন, এটাকে কোন আসল বস্তুর ছায়ার সাথে তুলনা করা যায়। অর্থাৎ আবারও ফিরে যেতে হবে প্লেটোর সেই "এ্যলিগোরি অব কেইভে"। যেখানে হাত পা বাধা কিছু লোক সারাজীবন গুহার আলো আধারের মধ্যে তাদের ছায়াকে দেখে এসেছে, এবং সেই ছায়াকেই তাদের অস্তিত্বের আসল রূপ বলে বিশ্বাস করেছে এরপর যখন ছাড়া পেল, তাদের কাছে ত্রিমাত্রিক জগত একদম দুর্বোধ্য মনে হলো। ত্রিমাত্রিক জগতের বাস্তবতাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। ফলে তারা পুনরায় গুহায় ফিরে আসে দ্বিমাত্রিক ছায়ার জগতে। হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স বা সিমুলেটেড রিয়ালিটি প্লেটোর আইডিয়ালিজমের কথা বলে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনেক আগে থেকেই আইডিয়ামিজম কে সত্যায়ন করেছে। কিন্তু হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স তত্ত্ব সম্পূর্ন প্লেটোনিক আইডিয়ালিজমে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে আধুনিক বিজ্ঞান কে, যেখানে বলা হচ্ছে আমরা উচ্চতর মাত্রাসমূহ থেকে আসা হলোগ্রাফিক প্রজেকশন বা উচ্চতর জগত সমূহের অন্তর্গত কম্পিউটার সিমুলেশন বা কাল্পনিক সুপার কম্পিউটারই হায়ার ডাইমেনশনাল রিয়ালিটি। আমরা যে বস্তু জগতকে সত্য বলছি সেটা সত্য নয়। আমাদের দেখা চিরচেনা সত্য জগতটি উচ্চতর মাত্রা থেকে দেখতে ভিন্ন। ধরুন ৮ম বা ৯ম মাত্রায় অবস্থান করলে ৩য় মাত্রাকে অন্যরকম দেখাবে। অর্থাৎ আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতই আল্টিমেট রিয়ালিটি নয়।

সিমুলেশন আর্গুমেন্ট শুরু হয় মিস্টিক - দার্শনিকদের হাত ধরেই। দার্শনিক মানেই অকাল্ট ফিলসফির অনুসারী। হলোগ্রাফিক মায়াতত্ত্বকে একজন দার্শনিক শুধুমাত্র বৈদিক ট্রেডিশনেই সীমাবদ্ধ দেখেনা। Mexican toltec একই কথা বলে।একইভাবে ইহুদি কাব্বালিস্টিক যাদুশাস্ত্রে বিশ্বজগতকে বলা হয় Alma 'd shikra [world of illusion]। ১৯৭৪ সালে ফিলিপ কে ডিক মুখ অপারেশন এর পর বাসায় নার্সের যন্ত্রনাদায়ক মেডিকেশনের অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ করে দরজার কলিং বেল বাজলো। দরজা খুলেই তিনি মাছের প্রতিকৃতির নেকলেস পরিহিতা এক নারীকে আবিষ্কার করেন, একইসাথে তার মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতির জাগ্রত হয়। তার মনে হলো তার মধ্যে উচ্চতর জগতের মহাচৈতন্যের স্রোত বয়ে গেল। তিনি একে বলেন,'invasion of transcendent higher mind'! তিনি অনেকক্ষন চিন্তাভাবনার বাহিরে চলে গিয়েছিলেন। তার মনে হলো মহাজাগতিক তথ্য তাকে গ্রাস করেছে। তিনি সারা মহাবিশ্বকে দেখতে লাগলেন। তিনি বর্ননা করেন যে তিনি একইসাথে বর্তমান অসংখ্য মাত্রাসমূহ, অতীত বর্তমানের টাইমলাইন দেখেন, একই সাথে অতীতের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের মাঝেও নিজেকে আবিষ্কার করেন। মহাবিশ্বকে তিনি হলোগ্রাফিক ইল্যুশন হিসেবে প্রত্যক্ষ করেন।সাইকাডেলিক ড্রাগের প্রভাবে যা অনুভব করা যায় সবই প্রত্যক্ষ করেন । তার এই চৈতন্যের ধাক্কা অনেকদিন পর্যন্ত রয়ে যায়। তিনি কখনো ল্যাটিন ভাষায় কথা বলেন নি। কিন্তু হঠাৎ করে কথা বলতে শুরু করেন নির্ভুলভাবে।  তিনি দাবি করেন তার মধ্যে যিশু খ্রিষ্ট, টমাসের স্মৃতিও ছিল! ফিলিপ কে ডিক অনুভব করেন তার এই মহাজ্ঞান লিখে রাখা প্রয়োজন। এরপর লেখা শুরু করেন এবং প্রায় নয়শত পৃষ্ঠার একটি বই লেখেন, যার নাম দ্যা এক্সেজিস অব ফিলিপ কে ডিক। তিনি এতে উল্লেখ করেন, "আমরা একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামড রিয়ালিটিতে[বাস্তবতা] বাস করি। এর একটি মাত্র যে ক্লু'টি আমাদের কাছে আছে সেটা হলো যখন এই [সিমুলেটেড] রিয়ালিটির কোন একটা ভ্যারিয়েবল পরিবর্তন করা হয় বা কোন ধরনের পরিবর্তন ঘটানো হয়, আমরা তখন ডেজা'ভু[কোন একটা অচেনা জায়গাকে হঠাৎ চেনা মনে হওয়া, কোন ঘটনাকে হঠাৎ আগেও ঘটেছে মনে হওয়া] অনুভব করি। এই অনুভবগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যখনই কোন ভেরিয়েবলের পরিবর্তন ঘটা তখনই আরেকটি বিকল্প বাস্তবতার[অল্টারনেটিভ রিয়ালিটি] জন্ম হয়।"

ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ফিল্মে ডক্টর স্টিফেন স্ট্রেঞ্জ যখন সর্সারার সুপ্রিমের সাথে দেখা করেন, তখন ম্যাটেরিয়ালিস্ট স্ট্রেঞ্জ এই ডাইনীর যাদুবিদ্যাকে তাচ্ছিল্য করছিল অবিশ্বাসের সাথে, তখনই স্ট্রেঞ্জকে রিয়ালিটির আসল রূপ ও মেকানিক্স শেখাতে অল্টার্ড স্টেইট অব কনসাসনেস বা চেতনার ওপারে নিয়ে যান। এই ফিল্ম মূলত ম্যাটেরিয়ালিস্টিক বস্তুজগতের নিচের আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিটির বিশ্বাসকে প্রোমোট করে তৈরি করা হয়, ম্যাটেরিয়ালিজমকে ভুল প্রমাণ করে আইডিয়ালিজমকে সত্যায়ন করা হয়। যাইহোক, এ ফিল্মের ডঃ স্ট্রেঞ্জের ন্যায় ফিলিপ কে ডিকেরও একইরকমের ট্রান্সেন্ডেন্টাল এক্সপেরিয়েন্স হয়েছিল। তবে ডিকের ব্যপারটা সামান্য ভিন্ন। দুয়ার খুলবার সাথে সাথে এমন মহাচৈতন্যের অনুভূতি উদয়ের রহস্যের সহজ ব্যাখ্যা হলো, তার মধ্যে বায়ো-প্লাজমিক হায়ার ডাইমেনশনাল সত্তার অনুপ্রবেশ ঘটে। সহজ ভাষায় বললে,শয়তান জ্বীনের অনুপ্রবেশ ঘটে।ডিক এ কথা নিজেই বলেন।তিনি বলেছেন ,"বায়োপ্লাজমিক অর্গনের মত কোন এনার্জি  প্রবেশ করে।উচ্চ শিখরে থাকা সচেতনতা আমাকে সারাবিশ্বকে দেখায়। আমি সর্বত্রবিরাজমান এক যৌক্তিক মন দ্বারা আমার মনে হামলা হওয়াকে অনুভব করি। হঠাৎ করেই দুর্বোধ্য গোটা জীবনকে সহজবোধ্য হয়ে ওঠে।"

অনেক সমালোচক মনে করেন এই রকম র‍্যাডিক্যাল চৈতন্যবোধের কারন সাইকাডেলিক ড্রাগ, যা তাকে চেতনার ওপারে নিয়ে যায়।এটা সত্য যে অনেকেই সাইকাডেলিক ড্রাগ সেবনে সিমুলেটেড রিয়ালিটির উপলব্ধি লাভ করে[২০]।বাইরন কেডি, একার্ড টোল, আনিতা মর্জানি সবাই এরকম ট্রান্সেন্ডেন্টাল অনুভূতি হয়েছিল। ডিকের সাইকাডেলিক মাদক সেবনের কথা যেহেতু পাওয়া যায় না, ডিকের নিজের কথার উপর ভিত্তি করে এটাই ধরা যায় যে তার মধ্যে শয়তানের অনুপ্রবেশ ঘটে। এই বায়োপ্লাজমিক সত্তা তথা শয়তানগুলোই রেনে ডেকার্টের "অশুভ শয়তান" তত্ত্বের আইরনিক সত্যায়ন করে। ডিক ডেকার্টের মায়াবাদের আধুনিক সংস্করণ তথা সিমুলেশন তত্ত্বের সত্যায়ন করেন, মহাবিশ্বকে কম্পিউটার সিমুলেশন হিসেবে দেখার দাবির দ্বারা। স্বাভাবিক ভাবেই শয়তান চাইবে যে, মানুষ যেন তাদের জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে ইলাহের আসনে বসাক। রেনে ডেকার্ট তার আকিদায় সেটা বসিয়েছিল। এবার ওই শয়তানেরই দেখানো এই মেটাফিজিক্যাল ব্যাখ্যার পথ ধরে আধুনিক বিজ্ঞান সমগ্র মানবজাতির আকিদায় শয়তান জ্বীন জাতিকে এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তার আসনে বসাতে যাচ্ছে!

সিমুলেশন তত্ত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন দার্শনিক নিক বোস্ট্রম। তিনি সিমুলেশন তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই সিমুলেশনের স্রষ্টার সিমুলেশন তৈরির একাধিক কারন দেখিয়েছেন। এর একটি এ্যান্সেস্টর সিমুলেশন। এর দ্বারা বোঝায়, কোন উচ্চমাত্রিক এলিয়েন সভ্যতা উন্নয়নের চরম শেখরে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নেয় যে আর কোন সচেতন প্রানীর সৃষ্টি হবেনা। তারা ওই অবস্থায় কম্পিউটার সিমুলেশন তৈরি করলো যাতে করে,তাদের জগতের একদম শুরুর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিগব্যাং থেকে শুরু করে বিবর্তনসহ সবকিছু এতে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবর্ধিত হওয়া দেখাবে। ওই সিমুলেশনের প্রানী জগত আত্মসচেতন এজন্য তারা তাদের বাস্তবতাকে সত্য বলে মনে করে। অনেক সিমুলেশন থিওরিস্ট সারা মহাবিশ্বের  প্রতিটি এটম/মলিকিউল সিমুলেট করবার মত কম্পিউটার সক্ষমতার কথা ভাবতে গিয়ে অসম্ভব মনে করেন, এর সমাধানে তারা কম্পিউটার সিমুলেশন বা আধুনিক গেইমস এর গ্রাফিক্সের ভিডিও রেন্ডারিং প্রসেসকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। আপনারা দেখবেন উন্নত গ্রাফিক্সের ভিডিও গেইমের জগতে যে দিকে অবজার্ভ করা হয় বা যেদিকে স্ক্রিন ঘোরানো হয় সেদিকই ঝাপসা থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। এখানে বিষয়টি কোয়ান্টাম তত্ত্বের অবজারভার ইফেক্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পর্যবেক্ষণ ছাড়া অন্য অঞ্চলগুলো ননলোকাল অবস্থায় থাকে। যাইহোক, সিমুলেশন থিওরিস্টরা বলেন যে, আমাদের গোটা পৃথিবীটি গেইমের স্ক্রিনের এলাকার মত সবসময় পর্যবেক্ষণের অধীনে থাকে, মহাবিশ্বের বাকি অংশগুলো এর বাইরে থাকে, এজন্য গোটা মহাবিশ্বকে এ্যাটম বাই এ্যাটম সিমুলেট করার জন্য অসম্ভব ক্ষমতার কম্পিউটার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ এটা সিমুলেশন হাইপোথিসিসকে অসম্ভাব্যতা থেকে বাচায়। নিক বোস্ট্রম বলেনঃ" সায়েন্স ফিকশনের অনেক কর্ম, পাশাপাশি অনেক প্রযুক্তিবিদ এবং ভবিষ্যতত্ত্ববিদদের কিছু পূর্বাভাসস্বরূপ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, আগামী নিকট ভবিষ্যতে প্রচুর পরিমাণে কম্পিউটিং শক্তি পাওয়া যাবে। আসুন আমরা এক মুহুর্তের জন্য অনুমান করি যে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সঠিক। একটি জিনিস যা পরবর্তী প্রজন্মগুলো তাদের সুপার-পাওয়ারফুল কম্পিউটারগুলোর সাথে করতে পারে তা হলো, তাদের পূর্ববর্তী বা তাদের পূর্ববর্তী লোকদের বিস্তারিত সিমুলেশন চালু করা, কারণ তাদের কম্পিউটারগুলো এত শক্তিশালী হবে, তারা এ জাতীয় অনেকগুলি সিমুলেশন চালাতে পারে। মনে করুন যে, এই সিমুলেটেড রিয়ালিটির লোকেরা সচেতন (যদি সিমুলেশনগুলি যথেষ্ট পরিমাণে সূক্ষ্ম হয় এবং যদি ফিলসফি অব মাইন্ডের কোন বিস্তৃতভাবে স্বীকৃত অবস্থান সঠিক হয়)। তারপরে এটি ঘটতে পারে যে আমাদের মতো বিশাল সংখ্যক মন মূল জাতির অন্তর্গত নয়, বরং একটি মূল জাতির উন্নত বংশধরদের সিমুলেশনের লোকদেরই। তারপরে এটির পক্ষে যুক্তি দেয়া সম্ভব যে, এটি যদি হয়, তবে আমরা ভাবা যুক্তিযুক্ত যে আমরা সম্ভবত মূল বায়োলজিক্যাল অস্তিত্বের পরিবর্তে সিমুলেটেড মনের মধ্যে রয়েছি। অতএব, আমরা যদি মনে করি যে আমরা বর্তমানে কম্পিউটার সিমুলেশনে বাস করছি না, তবে আমরা বিশ্বাস করতে পারি না যে আমাদের পরবর্তী বংশধররা যারা থাকবে তারা তাদের পূর্বসূরীদের সিমুলেশন চালাবে।[১৩]

— Nick Bostrom, 
Are you living in a computer simulation?, 2003



নিক বোস্ট্রমের পর থেকে একে একে পদার্থবিজ্ঞানীরা একে একে বৈদিক মায়াবাদের সর্বাধুনিক সংস্করণ সিমুলেশন তত্ত্বের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। পদার্থবিজ্ঞানী ব্রায়ান উইটওর্থ[MIT] ম্যাটেরিয়ালিস্টিক এবং আইডিয়ালিস্টিক ফিজিক্স এর যাবতীয় ডেটা পাশাপাশি রেখে গবেষণা করেন, এতে তিনি বস্তুবাদী বিজ্ঞান অপেক্ষা আইডিয়ালিস্টিক সিমুলেশন হাইপোথিসিসের সর্বাধিক বিশুদ্ধতা ও কন্সিস্টেন্সি পান।
সিমুলেশন হাইপোথিসিসের প্রস্তাবটি সর্বপ্রথম দেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালে বন বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, সিয়াটেল) থেকে পদার্থবিজ্ঞানী Silas R. Beane এবং সিয়াটেলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Zohreh Davoudi এবং Martin J. Savage এর একটি যৌথ গবেষণাপত্রে। বিগব্যাং মডেলের শূন্য থেকে সব সৃষ্টির তত্ত্বটিও সিমুলেশনের সাথে অনেক যৌক্তিকভাবে সংগতিপূর্ণ। আমরা জানি শূন্য থেকে বিগব্যাং এর দ্বারা সব কিছু অস্তিত্বে আসে। একইভাবে একটি কম্পিউটার সিমুলেশনও চালু করার সময় একদম শূন্য থেকে শুরু হয়। ধরুন প্রতিবার একটি গেইম চালুর সময় বিগব্যাং সংঘটিত হয়। সিমুলেশন মডেলের অনুসারীরা এমনটাই দাবি করেন।সুতরাং, বোস্ট্রোম এবং ডেভিড চামার্সের মতো একমত হয়ে অন্যান্য লেখকরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে "সিমুলেশন হাইপোথিসিস" এর গবেষণামূলক যুক্তি থাকতে পারে এবং তাই সিমুলেশন হাইপোথিসিস একটি সংশয়মূলক অনুমান নয় বরং একটি "মেটাফিজিক্যাল হাইপোথিসিস"। প্রাচীন ব্যবিলনীয়ান সভ্যতার যাদুকরদের আকিদা ছিল বাস্তবতা নিজেই একটি গাণিতিক কাঠামো।সেই থেকে এটা পিথাগোরাসের আকিদা[বিশ্বাস] এবং একইভাবে তার প্রাচীন ও বর্তমান অনুসারীদেরও। 2017 সালে 17 তম বার্ষিক আইজ্যাক অসিমভ বিতর্ক চলাকালীন মহাবিশ্ব সিমুলেটেড কিনা সে আলোচনায় ফিজিসিস্ট টেগমার্ক বলেছেন: "পরে একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসাবে [বাস্তবতা] সম্পর্কে আমি যত বেশি জানতে পেরেছিলাম, ততই আমি আরও আঘাত পেয়েছিলাম যে, আপনি যখন প্রকৃতি কীভাবে কাজ করে তার গভীরতায় নামবেন, আপনারা সবাইকে একগুচ্ছ কোয়ার্ক এবং ইলেক্ট্রন হিসেবে দেখবেন […] যদি আপনি দেখেন এই যে কোয়ার্কগুলি কীভাবে চলাফেরা করে, তাহলে দেখবেন নিয়মগুলি সম্পূর্ণ গাণিতিক, যতদূর আমরা বলতে পারি।" তিনি আরো বলেনঃ "যদি আমি একটি কম্পিউটার গেমের একটি চরিত্র হয়ে থাকি, তবে আমি শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারব যে,এর নিয়মগুলি সম্পূর্ণ কঠোর গাণিতিক। এটা হুবহু যে কম্পিউটার কোডে লেখা হয়েছিল তাতে প্রতিফলিত করে।"

টেগমার্ক এক ডকুমেন্টারিতে বলেন,কম্পিউটার গেইমের পুরা জগতটি তৈরির পেছনে থাকে ম্যাথম্যাটিকাল ইক্যুয়েশন। তিনি আমাদের জগতটিকেও কম্পিউটার সিমুলেটেড প্রোগ্রামের অনুরূপ বলেন। এজন্যই আমাদের জগতের সকল সৃষ্টির মাঝে ফিবোনাক্কি সিকোয়েন্স মেইন্টেইন করতে দেখা যায়। তিনি বলেন,"ধরুন আমাকে একটি গেইমের ক্যারেক্টারে রূপান্তর করা হলো এবং আমার সেখানে আত্ম সচেতনতাও থাকলো যার ফলে আমি সে জগতের সবকিছু সত্য ভাবতে শুরু করলাম, এবং একপর্যায়ে আবিষ্কার করলাম যেকোন বস্তুর উত্থান পতন থেকে শুরু করে সমস্তকিছুর পিছনে আছে একজন প্রোগ্রামারের ম্যাথম্যাটিকাল ইক্যুয়েশন। একইভাবে এই জগতকেও ধরুন,এই মহাবিশ্বও গেইমের অনুরূপ কম্পিউটার প্রোগ্রামের ন্যায়। এই যে আমার হাত, এখানে কোন গনিত খুজে পাচ্ছিনা কিন্তু আপনি যতই গভীরে যাবেন শুধু গাণিতিক হিসাব পাবেন। আমার কিছু কলিগরা বলেন যে এই মহাবিশ্বে কিছু ম্যাথম্যাটিকাল প্রপার্টি আছে, কিন্তু আমি বলি এটি পুরোটাই গণিত। শুধুমাত্র কিছু জিনিসে গাণিতিক হিসাব নেই বরং এই মহাবিশ্বের এ্যাসেন্সই হচ্ছে গণিত।"



১৯৭৫ সালে ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকস আবিষ্কারের দ্বারা গণিতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন বেনওয়া ম্যান্ডেলব্রট[Benoit Mandlebrot]। এই গণিত দ্বারা অনন্ত সেল্ফ সিমিলার প্যাটার্ন তৈরি করা যায়। এই গণিতের উপর নির্মিত কম্পিউটার সিমুলেটেড প্যাটার্ন আপনি অগণিত বার জুম করতে পারেন। ডানে দেখানো চিত্রের একদম ক্ষুদ্রতম অংশকে যদি জুম করেন, দেখবেন একইরকমের আরেকটি জগত এর নিচে লুকিয়ে আছে। এরকম প্যাটার্ন[নিচের ছবিতে] আমাদের বাস্তব জগতের গাছের পাতা, ফার্ণ উদ্ভিদের ডগাসহ অনেক কিছুতে বিদ্যমান। এটা দার্শনিক ও হলোগ্রাফিক ইউনিভার্সে বিশ্বাসীদের ভাবায় আমাদের এই ইউনিভার্সটিও এরকম সেল্ফ সিমিলার ইনফিনিট প্যাটার্নের উপর তৈরি। এর দ্বারা যাদুকরদের মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সীমাহীনতাকে আরোপ করে। হলোগ্রাফিক মডেল ও ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসের সমন্বয়ে তৈরি হয় হলোফ্র‍্যাক্টাল থিওরি। ম্যান্ডেলব্রটের বিস্ময়কর এই গাণিতিক ধারার উপর বর্তমানে কম্পিউটার সিমুলেশনে, এ্যানিমেশন/গেইমে সফলভাবে ব্যবহার করা হয় গেইমের প্রাকৃতিক জগতটিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য। ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকস প্রাচীন সেক্রিড জিওমেট্রি,পাই রেশিওর সাথে সংগতিপূর্ণ। PBS/NOVA 'র ফ্র‍্যাক্টাল ম্যাথম্যাটিকসের উপর “Fractals – Hunting the Hidden Dimension” নামে একটি ডকুমেন্টারি নির্মান করেছিল। তাছাড়া এ বিষয় বুঝতে Arthur Clarke এর “Fractals – The Colors of Infinity” ডকুমেন্টারিটাও দেখা যেতে পারে। এবার বাস্তব জগতে কম্পিউটার প্রোগ্রামে ব্যবহৃত গণিত আবিষ্কারের পালা, যেটা চূড়ান্তভাবে সত্যায়ন করবে যে আমাদের বস্তুজগত মূলত কম্পিউটার সিমুলেশন, ম্যাট্রিক্স ফিল্মের ন্যায় আমরা কোড হলোগ্রাফিক ম্যাট্রিক্সে বসবাস করি।

মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ জেমস গেটস, যিনি আইজ্যাক অসিমভ বিতর্কে উপস্থিত ছিলেন, তিনি এমন এক বিষয় আবিষ্কার করেছেন, যা সিমুলেশন হাইপোথিসিসকে সমর্থন করে। সুপারস্ট্রিং থিওরিতে কাজ করার সময়, তিনি কিছু তাত্ত্বিক সমীকরণের আবিষ্কার করেন। গেটস বলেছেন যে সমীকরণগুলি ত্রুটি-সংশোধনকারী কোডগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণের সাথে জড়িত ত্রুটিগুলি যাচাই করার জন্য এবং সমাধান করতে ব্যবহৃত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে, অ-সিমুলেটেড মহাবিশ্বে এই জাতীয় কোডগুলি আবিষ্কার করা "অত্যন্ত অসম্ভব"।  বক্তৃতাকালে তিনি আরো বলেছিলেন: “ত্রুটি-সংশোধন করার কোডগুলি[Error-correcting codes] ব্রাউজারগুলোকে কার্যক্ষম করে, তাহলে আমি কোয়ার্ক, এবং লেপটন এবং সুপারসেমেট্রি সম্পর্কে যে সমীকরণগুলি নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম সেগুলোতে কেন এগুলোর উপস্থিতি ছিল? এটাই আমাকে এই অত্যন্ত বাস্তব উপলব্ধিতে নিয়ে এসেছিল যে আমি আর বলতে পারি না যে ম্যাক্স [টেগমার্ক] এর মতো লোকেরা পাগল[কারন তারা মহাবিশ্ব কে কম্পিউটার সিমুলেশন বলে] [১৪]। "

তিনি আরো বলেন,"আমি গত পাচ ছয় বছর ধরে আমি যে ইকুয়েশন নিয়ে কাজ করছি, তাতে আমি ঐ অভিন্ন কম্পিউটার কোড পেয়েছি যা ইন্টারনেট ব্রাউজারকে সচল করে। যদি এই ইক্যুয়েশন গুলো বলে যে রিয়ালিটি বা বাস্তব জগতে কম্পিউটার কোড লুকিয়ে আছে, তবে তা সত্যিই অদ্ভুত ব্যপার। এটা এতটা অদ্ভুত যে আমি বলতে পছন্দ করব যে, চলো ম্যাট্রিক্স মুভির কাছে ফিরে যাই, ওখানে  কোন পদার্থবিদ কাজ করেছে কিনা দেখি। তারা হয়ত রিয়ালিটির ব্যপারে জানতে চাইতো যে আমরা ম্যাট্রিক্সের মাঝে আছি কিনা। আর তারা যেকোনভাবে কম্পিউটার কোড ব্যবহার করেছে। এবং এই  ইক্যুয়েশন গুলো আমাদের জগতকে বর্ননা করে, এটাই আমি বলি।"

অর্থাৎ ফিজিসিস্টরা শতবছর আগের ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স মেকানিক্সের পরিপূর্নতা দান করেছেন। হলিউডের বৈদিক ও বৌদ্ধ অকাল্ট দর্শনের উপর নির্মিত ম্যাট্রিক্স ফিল্মে দেখানো রিয়ালিটির বর্ননাটিই শুদ্ধ। এখানে স্বয়ং পদার্থবিজ্ঞানীই সাজেস্ট করছেন ম্যাট্রিক্স ফিল্ম দেখবার জন্য, তিনি স্বীকৃতি দিচ্ছেন এটাই রিয়ালিটির আসলরূপের বিশুদ্ধ উপস্থাপন। জেমস গেট নেইল ডি'গ্রাস টাইসনসহ একাধিক পদার্থবিজ্ঞানীদের উপস্থিতিতে করা সাক্ষাতকারে তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা বলেন। তিনি বলেন,"এগুলো হচ্ছে সেসব ইক্যুয়েশন যার উপর আমি গত ১৫ বছর কাজ করেছি, এসবের বিষয়েই আমার কলীগরা আমাকে প্রশ্ন করত। এই ছবিগুলোতে সেসব তথ্য গুলো আছে যা আমরা স্ট্রিং থিওরিতে পেয়ে থাকি, এবং সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো আপনি এর মধ্যে কম্পিউটার কোড খুজে পাবেন,ওইরকম কোড যা আপনি ইন্টারনেটে ব্রাউজারে পেয়ে থাকেন। আমি এখন এই পাজলের মধ্যে পড়ে গিয়েছি যে আমিই ম্যাট্রিক্সের মধ্যে বাস করছি কিনা।" নেইল ডিগ্র‍্যাস টাইসন তাকে থামিয়ে বলেন,"আপনি আমার মন জুড়িয়ে দিয়েছেন, আপনি বললেন যে, এই জগতের মৌলিক নীতি খুজতে গিয়ে এমন কিছু ইক্যুয়েশনের কাছে গিয়েছেন যেটা সার্চ ইঞ্জিন ও ব্রাউজার পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত ইক্যুয়েশনগুলোর সাথে মিলিয়ে দিয়েছে। 
তার মানে আপনি বলছেন, আপনি যত গভীরে যাচ্ছেন, আপনি এই কস্মোর ফ্যাব্রিকের উপর কম্পিউটার কোড আবিষ্কার করছেন। তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন যে, আমাদের মহাবিশ্ব কিছু [এলিয়েন] এন্টিটির প্রোগ্রাম আর আমরা শুধুই তাদের কোডগুলোর বহিঃপ্রকাশ? অনেকটা ম্যাট্রিক্স এর মত?" উত্তরে জেমস গেইট বলেন,"[জ্বি] যেসব ইক্যুয়েশনে আমরা কস্মোর বর্ননায় ব্যবহার করে থাকি। কম্পিউটার কোড[পাওয়া যাচ্ছে], ওয়ান ও জিরো বিট। এটা সাধারণ কোন কম্পিউটার কোড নয় বরং বিশেষ ধরনের কম্পিউটার কোড যা কল্ট শ্যানন ১৯৪০ সালে আবিষ্কার করেছিলেন।এটাই এখন আমরা স্ট্রিং থিওরির মধ্যে দেখছি যেটাকে আমরা আজ সুপারসেমেট্রিক বলি। আপনি [প্রজেক্টরে] দেখানো চিত্রগুলো[ডানে] যা দেখছেন তা কোডের মত দেখতে নয় বরং এগুলো হলো এমন সব ইক্যুয়েশনের গ্রাফিক্যাল রিপ্রেজেন্টেশন যা ওইসব কোডের সমন্বয়ে তৈরি। আরো স্পষ্ট করে বললে বলবো,আমি এখন খুবই অদ্ভুত পর্যায়ে এসে পৌছেছি। আমি কখনোই আশা করিনি যে, ম্যাট্রিক্স ফিল্মটি আমি যেখানে আছি সেটার যথাযথ নির্ভুল প্রতিচ্ছবি।"

নেইল ডি'গ্র‍্যাস টাইসন নিজেও সিমুলেশনতত্ত্বে বিশ্বাস করেন। জেমস গেইটের স্বীকৃতি তার এই অকাল্ট ওয়ার্ল্ডভিউকে আরো পোক্ত করেছে। তিনি ল্যারি কিং এর সাথে দেয়া সাক্ষাতকারেও সিমুলেশন হাইপোথেসিসে বিশ্বাসের কথা বলেন[২২]। তিনি অন্যত্র বলেন," আমি এটা[সিমুলেশন থিওরি] [ভাবতে] ভালবাসি। হয়ত কোন এলিয়েন সিভিলাইজেশ্যনের বোচা নাকওয়ালা শিশুরা তাদের বাড়ির বেজমেন্টে বসে আমাদেরকে সিমুলেট করছে। তাদের কম্পিউটিং ক্ষমতা ও প্রযুক্তি আমাদের থেকে উন্নত এবং তারা এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছে যে তারা আমাদের মহাবিশ্বের প্রতিটি মলিকিউল পর্যন্ত প্রোগ্রামের আওতায় এনেছে। আমরা এখানে তাদের বিনোদনের বস্তু হিসেবে আছি।"


বিলিয়নিয়ার টেক জায়ান্ট ইলন মাস্কও সিমুলেশন হাইপোথেসিসে বিশ্বাস করেন। তার বিশ্বাসের স্বীকৃতি সিমুলেশন তত্ত্বকে গ্রহণযোগ্যতার উচ্চ আসনে নিয়ে যায়। ইলন মাস্ক বর্তমান যুগের থ্রিডি ফটোরিয়ালিস্টিক গেইমগুলোর কথা বলেন যা বাস্তবজগত থেকে প্রায় পার্থক্যহীন। ইলন মাস্ক বলেন,"আমরা প্রতিবছরই ভার্চুয়াল গেইম গুলোয় উন্নতি সাধন করছি। এখন আমাদের ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, অগমেন্টেড রিয়ালিটি উভয়ই রয়েছে। যদি আপনি উন্নতির অবস্থাটাকে পর্যালোচনা করেন, গেইমগুলোকে দেখবেন সেগুলো এখন অনেকটাই বাস্তবজগতের সাথে প্রায় পার্থক্যহীন হয়ে গেছে। হ্যা আমরা খুব সম্ভবত সিমুলেশনের মধ্যে আছি। বাস্তব জগতে আমাদের বসবাসের সম্ভাবনা বিলিয়নের মধ্যে এক।"[১৫]

পদার্থবিজ্ঞানী টমাস ক্যাম্পবেল ইউএস মিসাইল ডিফেন্স, আর্মি ও নাসায় কাজ করেন। তার মাই বিগ টো[থিওরি অব এভ্রিথিং] বইতে সিমুলেশন হাইপোথিসিস কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন এই ত্রিমাত্রিক জগত হায়ার রিয়ালিটির আইডিয়ালিস্টিক শ্যাডো, এটা হলোগ্রাম। অনেকে হয়ত হলোগ্রামটি  ইনফরমেশন নাকি চৈতন্যের তৈরি, নাকি বাইনারি ডেটার সমন্বয়ে সৃষ্ট,সেটা বুঝতে পারছেন না। টম ক্যাম্পবেল এর সহজ সমাধানে বলেন,"চেতনা হলো ইনফরমেশন। এটা হচ্ছে ডেটা।" টমাস ক্যাম্পবেলের ন্যায় পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ গ্রীন ব্রেইনও সিমুলেশন তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি এক প্রশ্নোত্তরে আমাদের জগত যে উচ্চতর মাত্রার কিছু কিশোরের কম্পিউটার গেইমের সিমুলেশন সে সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেন। রন গ্যারেট গুগল, জেপিএল সহ অনেক জায়গায় কাজ করেছেন। তিনি গুগল টেড টকে একটা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে করা প্রেজেন্টেশনে বলেন, "আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জিরো ইউনিভার্স ইন্টারপ্রিটেশানের দার্শনিক তাৎপর্য নিয়ে বলব। আপনি যদি মনে করেন ফিজিক্স মহাবিশ্বকে যেরূপ বর্ননা করে সেরূপই, তাহলে আমি আপনাকে স্পষ্ট ভাবে বলব যে এটাই আসলটা নয়, কারন এক ধরনের বিশেষ মেটাফিজিক্যাল বাস্তবতার জন্য মেজারমেন্ট স্থান-কালে কন্সিস্টেন্ট। এটা আমরা যা মনে করি তার ঠিক বিপরীত কিছু বলে, আমরা [ফান্ডামেন্ডালভাবে] এ্যাটম দ্বারা তৈরি নই বরং বিট দ্বারা তৈরি। আমরা হলাম আমাদের চিন্তা/চেতনা।আমরা হচ্ছি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সিমুলেশন। মহাবিশ্ব কেন অনুধাবনযোগ্য মনে হয়,অর্থাৎ ফিজিক্যাল থিওরির ব্যাখ্যা হলো, কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে একটি কম্প্রিয়েন্সেবল ইউনিভার্সের ধারনা দিতে চেষ্টা করে তবে এই মূল্যের বিনিময়ে যে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে বিশ্বাস করতেই হবে যে এই মহাবিশ্ব,যাকে আপনি বাস্তব বলে মনে করেন তা আসলে বাস্তব নয় বরং মায়া।"

2017 সালে, Campbell et al. তাদের গবেষণাপত্র "সিমুলেশন থিওরি অন টেস্টিং" এ সিমুলেশন[১৬] হাইপোথিসিস পরীক্ষা করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রস্তাব করেছিলেন। 2018 সালে তারা পরীক্ষাগুলির তহবিলের জন্য একটি কিকস্টার্টার ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল, যা ২৩৬,৫৯০ ডলারে পৌঁছেছিল, যেখানে মাত্র ১৫,০০০০ ডলার প্রয়োজন ছিল। জনমনে সিমুলেশন হাইপোথেসিসের বিষয়ে এত আগ্রহের একটি কারন হলো মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা। হলিউড ফিল্মগুলো অনেক বড় ভূমিকা পালন করে মানুষের ব্রেইনওয়াশিং এর জন্য। রাইনার ওয়ার্নার ফ্যাসবিন্ডার পরিচালিত ওয়ার্ল্ড অন এ ওয়্যার (1973), থার্টিন্থ ফ্লোর(1999), আমেরিকান লেখক ফিলিপ কে ডিকের "We Can Remember It for You Wholesale" একটি ছোট গল্প, এটি ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাসে ফ্যান্টাসি অ্যান্ড সায়েন্স ফিকশন - ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটি টোটাল রিকল (১৯৯০ চলচ্চিত্র) এবং টোটাল রিকল ২০১২ সালের ফিল্মের ভিত্তি ছিল।এ সমস্ত সায়েন্স ফিকশন লেখনী, ফিল্ম জনমনে বিস্তর প্রভাব ফেলে।
1983 সালে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র In Overdrawn at the Memory Bank -এ দেখায়, মূল চরিত্রটি তার মনকে একটি সিমুলেশনের সাথে যুক্ত করার জন্য অর্থ প্রদান করে।দ্য স্টার ট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন এর "শিপ ইন আ বোতল" পর্বে দেখায় লোকেরা নিজেদের অজ্ঞাতসারে সিমুলেশনে জীবনযাপন করছে, পিকার্ডের শেষে দেখানো ব্যাখ্যানুসারে শেষে বোঝানো হয় যে, সম্ভবত তারা কোনও টেবিলের বক্সের মধ্যে গেইম সিমুলেশনের মধ্যে আছে। এটি নাটকীয় আইরনির সম্ভাব্য ব্যবহার, যেখানে অভিনেতা এবং দর্শকদের উভয়ই অবগত যে টেলিভিশন প্রোগ্রামটি সত্যই এক ধরণের সিমুলেশন। ১৯৯৯ সালের থার্টিন্থ ফ্লোর ফিল্মে দেখায় আমাদের বাস্তবতাটিও মূলত উচ্চতর মাত্রায় অবস্থিত সুপার কম্পিউটারের সিমুলেশন। সম্প্রতি, একই সিমুলেশন এর থিমটির পুনরাবৃত্তি হয়েছিল ১৯৯৯ সালে বৌদ্ধ দর্শনের উপর নির্মিত দ্য ম্যাট্রিক্স ছবিতে। জেমস গেইটের মুখেই তো শুনলেন, এটাই সাইন্স! ২০১০ সালের ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালিত ইন্সেপশন নামের আরেকটি ফিল্মে আমাদের বাস্তবজগতকে স্বপ্নময় সিমুলেশন বলে উপস্থাপন করা হয়। এ ফিল্মের কেন্দ্রীয় চরিত্ররা কৃত্রিম স্বপ্নের দ্বারা বিভিন্ন লোকের গোপন তথ্য চুরি করে। এতে স্বপ্নের মধ্যে আরো দুই তিন স্তরের স্বপ্নের জগতকে দেখায়। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর স্ত্রী ম্যারিয়ন কোটিলার্ড স্বপ্নের জগতটিকে বাস্তবের সাথে পার্থক্যহীন অনুভব করে,তাছাড়া সে দেখতে পায়, কৃত্রিম স্বপ্নের প্রজেকশন থেকে বের হবার উপায় মৃত্যু, এটা তার মাঝে আমাদের বাস্তবজগত সম্পর্কেও ধারনা দিতে শুরু করে যে এ জগতটিও উপরের জগতের ড্রিম প্রজেকশন, এ জগতটিও সত্য নয়। ফলে সে জগতের স্বপ্নের ঘোর থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, উচ্চতর ডাইমেনশনের জগতে জাগ্র‍ত হবার আশায়। উইকিপিডিয়াতেও এসেছে এই ফিল্মটি পরিচালক ক্রিস্টোফার নোল্যান দ্যা ম্যাট্রিক্স, থার্টিন্থ ফ্লোর থেকে উৎসাহিত হয়ে মায়াবাদকে প্রমোট করে তৈরি করেছেন।

এভাবেই আধুনিক অপবিজ্ঞান বিশ্বের বর্তমান ক্ষমতাসীন ইহুদীদের মিডিয়ার প্রচারণায়,বিজ্ঞানীদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগীতায় ফিরে গেছে বৈদিক-কাব্বালিস্টিক মায়াবাদে[১৭]। সত্যায়ন করা হয়েছে প্লেটোর আইডিয়ালিজমে[১৯]।আজ বলা হচ্ছে বৌদ্ধ বেদান্তশাস্ত্রের সারশিক্ষার উপর নির্মিত ফিল্ম দ্য ম্যাট্রিক্স'ই আমাদের জগতের আসল পরিচয়। পদার্থবিজ্ঞানী ক্লি আরউইন সান ফ্রান্সিসকোর থিওসফিক্যাল সোসাইটির এর সভায় ম্যাট্রিক্স ফিল্মকে স্লাইডে ব্যবহার করে আমাদের বাস্তবতা যে ম্যাট্রিক্স ফিল্মের মত তার উপর সায়েন্টিফিক প্রমান উপস্থাপন করে প্রেজেন্টেশনের শুরুতেই বলেন,"ম্যাট্রিক্স ফিল্মটি আমার নিকট সর্বকালের সবচেয়ে প্রিয় ফিল্ম।[১৮]" কোয়ান্টাম অপবিজ্ঞানের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এই ম্যাট্রিক্সের কথাই বলেছেন। জন হুইলার ইট ফ্রম বিট দ্বারা এরই কথা বলেছেন।


বৈদিক মায়াবাদের আধুনিক সংস্করণ সিমুলেশন হাইপোথেসিস আবারো সেই রেনে ডেকার্টের ইভল ডিমন তত্ত্বে ফিরে গেছে। সহজ কথায়,প্রচার করা হচ্ছে যে এই ইউনিভার্সের সিমুলেটর হচ্ছে শয়তান। পদার্থবিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা সিমুলেশনের স্রষ্টা হিসেবে বলছে এলিয়েনদেরকে। এলিয়েনরা কারা, সে পরিচয় বিগত পর্বে পেয়েছেন। আজ শয়তান জ্বীন জাতিকে এলিয়েন নামে প্রচার চলছে। আপনারা অবশ্যই মলিকিউলার বায়োলজিস্ট হাশিম আল ঘাইলির নাম শুনেছেন। তিনি বিখ্যাত সায়েন্স কমিউনিকেটর ও সায়েন্টিফিক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে। উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রতি সপ্তাহে তার ভিডিও ডকুমেন্ট গুলোয় পাঁচ মিলিয়ন ভিউ হয়। হয়ত আপনি বা আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকেই তার পেইজে লাইক দিয়ে আছেন। অনেককেই তাদের ভিডিও কন্টেন্ট শেয়ার করেন। সেদিন এক দ্বীনি ফেসবুক সেলিব্রেটি ভাইকে দেখেছিলাম "হাশিম আল ঘাইলি"র কোন একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন। আমি জানিনা মূর্খতার কোন পর্যায়ে আমরা পৌছে গিয়েছি! এরাবিক/ইসলামিক নামযুক্ত কোন বিজ্ঞান ব্যক্তিত্বকে দেখলেই ঝাপ দেই! এক সাক্ষাৎকারে তাকে [সুডো]সায়েন্স এবং নাস্তিকতা একে অন্যের সাথে জড়িত কিনা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়।তিনি উত্তরে বলেন,"আমি এটি যেভাবে দেখছি, বিজ্ঞান এবং নাস্তিকতা একে অপরের সাথে সংযুক্ত। সমস্ত বিজ্ঞানে বিশ্বাস রাখতে, আপনাকে প্রথমে বিজ্ঞানের সাথে বিরোধী যেকোন ধারণা ছেড়ে দিতে হবে। আপনি কেবল কিছু বিষয়ে বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস রাখতে এবং এর কিছু অংশকে উপেক্ষা করতে পারেন না, কারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের এই পুরো কাঠামোটি তৈরি করতে একই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সর্বদা অনুসরণ করতে হয়। হয় এর পুরো প্যাকেজটিতে স্বীকার করা বা এটির সবকিছুকে একবারে প্রত্যাখ্যান করা।যে বিষয়গুলো ধর্মকে দুর্বল করে তোলে তা হলো, তারা যে বিশ্বাসকে প্রচার করে সেগুলো বহু শতাব্দী ধরে ভালভাবে সংরক্ষিত, অপরিবর্তনীয় এবং ধর্ম এর অনুসারীদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া অনুমিত নয়, তবে আপনাকে বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য নাস্তিক হতে হবে না, আপনি এখনও একই সাথে ধর্ম এবং বিজ্ঞানে বিশ্বাস করতে পারেন, কিন্তু  আপনার যুক্তিযুক্ত বৈজ্ঞানিক মন উভয়কে একই সাথে স্থান দিতে সক্ষম হবে না।"

এই বাক্যমালার দ্বারা হাশিম তার নিজের নাস্তিক্যবাদি বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করেন। তিনি সত্যই লিখেছেন। সাদা আর কালো দুইটা এক সাথে হতে পারেনা। তিনি ভাল করেই উপলব্ধি করেছেন ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রচলিত বিজ্ঞান পরস্পর সাংঘর্ষিক। উভয় পাশাপাশি অবস্থান করতে পারেনা। একজন মানুষ একই সাথে দুই নৌকায় থাকতে পারেনা। কিছুকাল থাকলেও তাকে কিছুদিনের মধ্যে দুয়ের একটিকে বেছে নিতে হয়। হাশিমের কথায় প্রতিফলিত হয় ইসলাম ও প্রচলিত [অপ]বিজ্ঞানের মধ্যে  আপোষ করে সমন্বয়সাধনের প্রতারণাপূর্ণ অপপ্রয়াসের। আজ কিছু মুসলিমরা এ দুই মেরু এক করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে, যার মেলবন্ধন বা সহাবস্থান কখনো সম্ভব না। হাশিম আল ঘাইলি অনেক বিখ্যাত সায়েন্টিফিক ভিডিও ডকুমেন্ট নির্মাণ করেছে। যার মধ্যে আছে Pale Blue Dot,The Future is Now এবং  In Science We Trust। "ইন সায়েন্স উই ট্রাস্ট" টাইটেলটি বেশ ইন্ট্রেস্টিং। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে পেনিসিলভানিয়ার মিনিস্টার আমেরিকার সকল কারেন্সির উপর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাসের স্বীকৃতি দিয়ে “In God We Trust” ন্যাশনাল মটো হিসেবে বাক্যটি লেখার প্রচলন চালু করে। হাশিম আল ঘাইলি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসের স্থলে সায়েন্সকে বসিয়েছে। অর্থাৎ তিনি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন না বরং [অপ]বিজ্ঞানে। আমি তার ব্যবহৃত টাইটেলের "সায়েন্সের" স্থানে "উইচক্র্যাফট" বা "ম্যাজিক" শব্দটিকে বসানো অধিকতর অর্থপূর্ণ মনে করি,কেননা আধুনিক বিজ্ঞানের আসল পরিচয় সেটাই। আল ঘাইলিকে নিয়ে এত কথা লেখার উদ্দেশ্য হলো, তিনি অন্যান্য জনপ্রিয় সায়েন্স কমিউনিকেটরদের অনুরূপ বৈদিক মায়াবাদি সিমুলেশন তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। তিনি সম্প্রতি "সিমুলেশন" নামে একটা ফিল্মও তৈরি করেছেন[২৪]।
তিনি এতে সরাসরি শয়তান জ্বীন জাতিকে আমাদের জগতের সিমুলেটর বা স্রষ্টা হিসেবে দেখায়! এর ট্রেইলার ইমেজে আপনারা দেখতে পারছেন, (ডানের ছবিতে)তারা সুস্পষ্টভাবে শয়তানকে শয়তানের চেহারাতে দেখিয়েই সৃষ্টিকর্তার আসনে রিপ্লেস করেছে। এটাকে ডিজিটাল স্যাটানিজম নাকি ডিজিটাল পলিথেইজম কি নামে অভিহিত করা উচিত,সেটা নিয়ে চিন্তার অবকাশ আছে। হাশিম আল ঘাইলির খ্যাতি জগতজোড়া। ফেসবুকেই ২১ মিলিয়ন+ ফলোয়ার! ভিডিও সম্পাদনায় অসাধারণ। ৬ বিলিয়ন+ অর্গানিক ভিউয়ার। তার এ অসাধারন ভিডিও সম্পাদনার নৈপুণ্য ব্যবহার করে কুফরি বৈদিক মায়াবাদি আকিদাকে প্রোমোট করে ভিডিও নির্মাণ করেছেন। তিনি সিমুলেশন ফিল্মে দেখিয়েছেন যে, মৃত্যুর পর পরকাল বলে কিছু নেই। মৃত্যুর পর মানুষ  উচ্চতর ডাইমেনশনে ট্রান্সেন্ড করে। আমাদের দেখা মহাবিশ্ব এবং সমগ্র সৃষ্টিজগত শয়তান জ্বীনদের তৈরি। তারাই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা! আর এই জগৎ হলোগ্র্যাফিক সিমুলেশন।

ধরুন ফলোয়ারের আনুমানিক কয়েক লাখই মুসলিম। হয়ত এর মাঝে হাজার হাজার ধার্মিক মুসলিমও আছে। আমার আইডিতে মিচুয়াল ফ্রেন্ডদের মধ্যে অনেক ফলোয়ারস ছিল। অনেকে তার দুর্দান্ত ভিডিও গুলো শেয়ার করত! এই বিখ্যাত বিজ্ঞানপূজারী সেলিব্রিটি এখন গনহারে মুশরিক মালাউন বানানোর উদ্দেশ্যে ফিল্ম রিলিজ করেছেন। এর ট্রেইলারেই শয়তানের চেহারা রেখেছেন(ছবিটা অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া)। এরাই "ক্রিয়েটরস"!!! ট্রেইলার ভিডিওতেই বলেছে, এরাই সবকিছুর নিয়ত্বা ও কোঅর্ডিনেটর [লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ]। আমাদের ভাগ্যও তাদের হাতে নির্ধারিত। ট্রেইলারেই বলে আমাদের সমস্ত কাজ ও সিদ্ধান্ত সর্বোপরি সবকিছুই প্রিক্যালকুলেটেড। এও বলা হচ্ছে আমাদের ইউনিভার্স বৃহত্তম ইউনিভার্সের অংশ এবং সবকিছুই হায়ার পারপাজের জন্য ঘটছে। মূল ফিল্মে দেখানো হয়, একটি টেকঅর্গানাইজেশন ২০১৩ সালের আঘাত হানা উল্কার ব্যপারে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ২০১১ সালে। এই ভবিষ্যতবাণীর মধ্যে আছে এস্ট্রলজিক্যাল তাৎপর্য,এটা নিয়ে আগামীপর্বে আলোচনা হবে।এভাবেই অপবিজ্ঞান ফিরে গেছে রেনে ডেকার্টের "অশুভ শয়তানের" তত্ত্বে। যেখানে শয়তানকে বলা এই স্বপ্নীল বাস্তবতার মায়াজালের স্রষ্টা। এজন্যই প্রথমদিকে বলেছিলাম আধুনিক বিজ্ঞান এখন মানুষকে শয়তানের ইলাহ হিসেবে মেনে নেওয়ার ও স্বীকৃতিদান করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যপার হচ্ছে এর প্রচারণার শুরুই হয়েছে এক মুসলিম নামধারীর থেকে। তাহলে এবার ভাবুন কত হাজার মুসলিমদেরকে কুফরি আকিদার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, হাশিম আল ঘাইলিদের আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানতে অনেক অসুবিধা কিন্তু শয়তানকে ইলাহ মানতে কোন কষ্ট নেই। সরাসরি ফিল্মই তৈরি করে ফেলেছে স্বীকৃতি দিয়ে!

সিমুলেশন বা মায়াবাদকে সত্যায়ন মানে একটি বিকল্প কুফরি মেটাফিজিক্স বিনির্মাণ। বিশ্ব কাফির শক্তির আজ এই বৈদিক মায়াবাদি চেতনাকে প্রসার প্রচারণার পিছনে আছে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাচীন আব্রাহামিক বিশ্বাস ব্যবস্থার মূলোৎপাটন। তাওহীদের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে কাব্বালিস্টিক ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠার জন্য যাদুশাস্ত্রভিত্তিক প্যাগান বিশ্বাসব্যবস্থা তথা ওয়ান ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন প্রতিষ্ঠা।
এই লক্ষ্যে সর্বপ্রথম যাদুবিদ্যার ও যাদুশাস্ত্রের নাম পরিচয় এবং কিছু নীতিমালা পাল্টে কয়েক শতাব্দী ধরে অপবিদ্যা ও কুফরি শিক্ষা সমূহকে বিজ্ঞানের নামে সকলের গ্রহনযোগ্যতার আসনে নেয়া হয়। অতঃপর, সবাই একে গ্রহন করলে বিজ্ঞান তার আদি পরিচয়ে প্রত্যাবর্তন শুরু করে। নামেই শুধু বিজ্ঞান আছে কিন্তু এর যাবতীয় শিক্ষা ও অপবৈজ্ঞানিক বিশ্বাসসমূহ হাজার বছরের পুরোনো যাদুশাস্ত্রের শিক্ষায় ফিরে গিয়েছে। সেসবকে আজ সত্যায়ন করছে এবং যুক্তিযুক্ত গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞান বলছে। বৈদিক মায়াবাদ আজ বিজ্ঞান। ব্রহ্মচৈতন্য ,সর্বচৈতন্যবাদ আজ বিজ্ঞানের বিষয়। নিগেল ক্যালডারের মত সায়েন্স অথোরগন সরাসরি মহাবিশ্বের ব্যপারে "ম্যাজিক ইউনিভার্স" নামে বই পাব্লিশ করছেন। বৈদিক শাস্ত্রগুলো হয়ে গেছে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আধার! নিলস বোর, ওপেনহেইমার,শ্রোডিঞ্জার,হাইজেনবার্গ প্রত্যেকেই এসব বৈদিক অকাল্ট শাস্ত্রের মধ্যে ডুবে ছিলেন অপবৈজ্ঞানিক জ্ঞান অন্বেষণে। সমস্ত বৈজ্ঞানিক কুফরি আকিদাগুলোর অনুসরনে সর্বাধিক এগিয়ে আছে অকাল্টিস্ট বা পাশ্চাত্যের যাদুকররা[২৩]। এরা মানুষকে আহব্বান করে ধর্মহীনতার পথে। এক জ্যোতিষী মহিলা স্পষ্টভাষায় এই ম্যাট্রিক্সের বিভ্রম থেকে বাঁচতে কিছু উপায় বলে দেন, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ধর্মসমূহকে বিশ্বাসের খাতা থেকে বাদ দেয়া,স্পিরিট চ্যানেলিং বা শয়তানকে বস করা, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে ওই নারী জ্যোতিষীর নিকট ডেমিয়ার্জের(মহাচৈতন্যের) বার্তা আদানপ্রদানের মাধ্যম, অর্থাৎ শয়তান জ্বীন হচ্ছে এদের ম্যাসেঞ্জার![২১]

 অপবৈজ্ঞানিক অগ্রগতি বাধাহীন ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। গত পর্বগুলোয় একে একে ব্রহ্ম, শিবকে দেখেছেন,দেখেছেন পদার্থবিজ্ঞানীগন কাব্বালাহকে সায়েন্স বলছে। আজ বিষ্ণুকে পেলেন আগামী পর্বে দেখবেন, বিজ্ঞানীরা সরাসরি কাব্বালাহকে আধুনিক কস্মোলজিসহ সমস্ত পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিফলিত বিদ্যা বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বুঝতে পারবেন, আধুনিক বিজ্ঞানের আড়ালে লুকিয়ে আছে জ্যোতিষশাস্ত্রীয় কুফরি তত্ত্ব। "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজে অনেক সংক্ষেপে মূল বিষয় গুলো আলোচনা করা হচ্ছে, এটা থেকে অনেক বিষয়ই আলোচনা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলো এত ব্যাপক যে সমস্ত বিষয় যদি আলোচনার চেষ্টা করি তাহলে এক পর্বই শেষ করা সম্ভব হবেনা। আজ কথিত বিজ্ঞানের পরিচয় সম্পর্কে আপনারা অনেকটাই অবগত। সামনের পর্বগুলোতে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে। ইনশাআল্লাহ।







[চলবে ইনশাআল্লাহ..]



রেফঃ
[১]Bhattacharji, Sukumari (1970), The Indian Theogony: A Comparative Study of Indian Mythology from the Vedas to the Puraṇas, pages 35-37, Cambridge University Press Archive Sanskrit and Tamil Dictionaries. Retrieved 24 August 2016.
[২]https://m.youtube.com/watch?v=RwxZ21qRdMg
[৩]en.m.wikipedia.org/wiki/Maya_(religion)
[৪]https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81_%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3
[৫]https://www.theosophy-nw.org/theosnw/world/modeur/ph-wett2.htm
[৬]https://quantumgravityresearch.org/portfolio/pixelated-vs-smooth-spacetime
[৭]https://www.scientificamerican.com/article/sidebar-the-holographic-p/
[৮]en.m.wikipedia.org/wiki/David_Bohm
en.m.wikipedia.org/wiki/Holographic_paradigm
[৯]http://fractalenlightenment.com/760/enlightening-video/the-holographic-universe-perceiving-reality
en.m.wikipedia.org/w/index.php?search=Holographic+universe+&title=Special%3ASearch
[১০]https://blogs.scientificamerican.com/cross-check/a-super-simple-non-quantum-theory-of-eternal-consciousness
[১১]https://www.wired.co.uk/article/our-universe-is-a-hologram
[১২]https://m.youtube.com/watch?v=klpDHn8viX8
[১৩]https://www.gaia.com/article/do-we-live-in-a-holographic-universe-simeon-hei
https://www.gaia.com/article/universe-is-a-simulation-can-we-hack-it
[১৪]https://www.samwoolfe.com/2020/02/dmt-simulation-hypothesis.html
https://m.youtube.com/watch?v=Gj47A7VBrvM
[১৫]https://www.space.com/41749-elon-musk-living-in-simulation-rogan-podcast.html
https://m.youtube.com/watch?v=ZFWD0Jwwbcg
[১৬]en.m.wikipedia.org/wiki/Simulation_hypothesis
en.m.wikipedia.org/wiki/Digital_philosophy
en.m.wikipedia.org/wiki/Simulated_reality
https://m.youtube.com/watch?v=pznWo8f020I
[১৭]https://m.youtube.com/watch?v=l8AjoUb8Tq8
https://globalhinduism.wordpress.com/2012/05/23/modern-science-and-the-philosophy-of-hinduism/
https://www.hinduwebsite.com/hinduism/essays/advaita-holographic-principle.asp
https://sarikanandacerebrate.com/2015/01/18/holographic-universe-and-the-hindu-philosophy
https://www.nbcnews.com/mach/science/are-we-living-simulated-universe-here-s-what-scientists-say-ncna1026916
https://www.scientificamerican.com/article/are-we-living-in-a-computer-simulation/
https://builtin.com/hardware/simulation-theory
https://www.awakeninthedream.com/articles/quantum-meta-physics
en.m.wikipedia.org/wiki/Holographic_principle
https://plato.stanford.edu/entries/panpsychism/
https://www.quora.com/What-is-the-link-between-solipsism-and-simulation-theory
https://stillnessinthestorm.com/2016/08/consciousness-universe-vs-simulation-hypothesis-are-we-living-in-a-computer-simulation-created-by-an-advanced-civilization-elon-musk-says-yes/
en.m.wikipedia.org/wiki/Hylomorphism
http://blog.world-mysteries.com/science/universe-as-a-conscious-holographic-information-processor/
http://brainmind.com/QuantumConsciousness2.html
en.m.wikipedia.org/wiki/Buddhism_and_science
en.m.wikipedia.org/wiki/The_Void_(philosophy)
en.m.wikipedia.org/wiki/Relationship_between_religion_and_science
http://psychologybuddhism.blogspot.com/2017/08/
https://thex.ca/2018/02/09/panpsychism-and-idealism-consciousness-ego-enlightenment-feb-6th-2018/amp/
en.m.wikipedia.org/wiki/Digital_physics
en.m.wikipedia.org/wiki/Maya_(religion)
en.m.wikipedia.org/wiki/Acosmism
[১৮]https://youtu.be/fV07SJz1YXI
[১৯]https://m.youtube.com/watch?v=QiZLlpqAQ7U
https://m.youtube.com/watch?v=sFldDgotNDQ
https://m.youtube.com/watch?v=ORWTat-EaW4
[২০]https://medium.com/the-humanists-of-our-generation/my-lsd-trip-an-exploration-into-the-experience-of-altering-consciousness-918710cd2cbf
[২১]https://m.youtube.com/watch?v=UaT5v9ZE68A
https://m.youtube.com/watch?v=4L87pRqRrYE
[২২]https://m.youtube.com/watch?v=SYAG9dAfy8U
[২৩]https://youtu.be/ccQPesc7HFs
https://m.youtube.com/watch?v=btiEVxJLTAM
[২৪]https://m.youtube.com/watch?v=H6-N1v1REu8
https://youtu.be/YmP7aXs9ILk



বিগত পর্বগুলোর লিংক:
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/documentary-article-series_10.html

Thursday, May 28, 2020

বিশেষ দ্রষ্টব্য - ৩

আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি সকলে আল্লাহর ইচ্ছায় ভাল আছেন। একটা বিষয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যা নিয়ে শেষপর্যন্ত লিখতেই চলে এলাম।

"বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজ নিয়েই দুশ্চিন্তা! আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করতে শুরু করেছেন ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের গভীর থেকে গভীরতর তত্ত্বের দিকে যাওয়া হচ্ছে। যত গভীরে প্রবেশ করছি, দেখতে পাচ্ছেন তত কুফরি আকিদা এবং যাদুবিদ্যাভিত্তিক শাস্ত্রের গহীনে যাওয়া হচ্ছে। আমার ভয় হয়, এসব পড়ে কেউ আবার কেউ ঈমান - কুফরের ফিতনায় পড়ে যায় কিনা। এজন্য ক'দিন আগে এক দ্বীনি ভাইকে বলছিলাম যতদূর গিয়েছি এবার থেমে যাব কিনা। তিনি সাহস দিয়ে থামতে নিষেধ করলেন। একটা বিষয় হচ্ছে, আমি এ সকল বিষয় না এনে পারিনা, কারন এগুলোই বিজ্ঞানের আসল পরিচয়, আসল রূপ। বিজ্ঞানীদের আসল আকিদাহ। এসব এড়িয়ে গেলে বিজ্ঞানের আসল পরিচয়কে গোপন করে আজীবন বৈধবিদ্যার মর্যাদায় রেখে অনুসরণ চালিয়েই যাওয়াতে সহযোগিতা করা হবে।  আপনারা দেখতে পাচ্ছেন কোন বিজ্ঞানপ্রিয় মুসলিম মুসলিমাহগন আমার বিরুদ্ধে এসব ডকুমেন্টস রিফিউট করতে সাহস করে না, কারন এটাই বাস্তবতা। কি করে সত্যকে অস্বীকার করবে বলুন! আমার খুব দুঃখ এবং ভয় হয় যে আমার পিছনে এমন কেউ নেই যার উপর নির্ভর করে নিশ্চিন্তে কিছু লিখব, কারন এ এমনই কিছু বিষয় যা আমার পূর্বে কেউই লেখেনি। এজন্য স্বীয় অবস্থানগত বিশুদ্ধতার সন্দেহে প্রতিনিয়ত অজানা ভয় গ্রাস করে,যেহেতু কোন কোন আলিমই এমন র‍্যাডিক্যাল চিন্তায় যায়নি তাই তাদের থেকে স্বীকৃতি নেই । আমার কন্সেপচুয়াল মডেল একমাত্র সরাসরি আসহাবে রাসূল(সাঃ) এর সাথেই মেলে। এর মাঝের ১৩০০ বছরের মাঝে আর কাউকে খুজে পাইনা, আলিমদের বিপরীত অবস্থানের জন্য কখনো কখনো  নিদারুণ অসহায়ত্বে ভুগি। অনেক প্রকারের ডিলেমার মধ্যে পড়ি। এমন চিন্তাও করি যে ভবিষ্যতে এমনও করতে পারি যে, আমি যাই বলেছি বা করেছি তা হঠাৎ করে সবকিছু মুছে দেই এবং যারা এর কিছু সংরক্ষন করেছে তা মুছতে আদেশ দেই[এমন কাজ সত্যিই করার সম্ভাবনা আছে]। কেননা আল্লাহ আযযা ওয়াযাল সবকিছুর হিসাব নেবেন। বিষয়টা চরমভাবে ভীত করে। কিন্তু আবার যখন কুরআন সুন্নাহের দিকে তাকাই তখন মনে হয় আমার অবস্থান বিশুদ্ধ এবং এসব কাজে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতাআ'লার কাছে অসন্তোষজনক নয়। যাইহোক আল্লাহর কাছে যাবতীয় ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং যেকোন ধরনের বড় কোন বিভ্রান্তির কারন হওয়া থেকে পানাহ চাই। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আমার নিজের দ্বারা ঘটা অন্যের উপর যেকোন অনিষ্ট থেকে। আমি কারও উপকার যদি নাও করতে পারি, আমার দ্বারা যেন কেউই কোনরূপ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমিন।

"বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজ সামনে আরো অনেক ভয়াবহ ঈমানবিধবংসী অপবৈজ্ঞানিক আকিদাহ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এমতাবস্থায়, সাধারন মানুষের কল্যানের জন্য আমি আবারো একটি শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এর আগে শুধুমাত্র ব্লগের রেফারেন্স দিয়ে কপি পেস্ট করার অনুমতি দিয়েছিলাম , "বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান" সিরিজের উপর সেই সুযোগটিও রাখা হচ্ছে না। আজকের পর থেকে এই আর্টিকেল সিরিজের কোন পর্বের যেকোন ধরনের কপি পেস্ট নিষেধ করা হচ্ছে। ব্লগের রেফারেন্স আমার নাম কোন কিছু উল্লেখ করে বৈধতা পাওয়া যাবে না। সেই সাথে এর উপর যেকোনো ভিডিও নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি। তাছাড়া এর কথাগুলোকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে নিজের মত করে লেখার বিষয়েও নিষেধ করছি। অনেকে এসবে পাণ্ডিত্য জাহিরের জন্যও করে থাকে, তাদেরকে এসব কার্য থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করি। এসব নিয়ে ঘাটতে যাওয়া হাতে প্রদীপ ছাড়া অন্ধকার গুহায় প্রবেশের মত, নিজের মত ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলা, ধাধার মধ্যে পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আমি যা প্রকাশ করছি, এসবের যা দুর্বোধ্য লাগে সেসব বুঝতে চাওয়ার প্রয়োজন নেই। এসবের মাঝে অকল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই।

যারা আমার কৃত নিষেধাজ্ঞাকে লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কপিরাইট ইনফ্রিঞ্জমেন্ট পিটিশনে যাওয়া হবে। কপিরাইট চেক করার এআই বটগুলো ভাল করেই জানে, আমার এ ব্লগের বাইরে আমার পূর্বে কোন ভাষাতেই এসকল বিষয়ে আমার আনিত বিশেষ স্ট্যান্ডার্ডে কিছুই নেই। সুতরাং এ জাতীয় পিটিশনে শতভাগ আনুকূল্য পাব বলে আশা করি।

এমতাবস্থায়, একমাত্র সীমিত পরিসরে লিংক শেয়ার ছাড়া আর কিছুর বৈধতা দিতে পারিনা।  এতেও যদি ভবিষ্যতে কোন ফিতনার আশংকা করি তবে এটার পথও বন্ধ করার জন্য বলা হবে। আমি এমনিতেই সমস্ত পর্বগুলোকে পিডিএফ ফাইল তৈরি করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করব। আমি এ সংক্রান্ত সকল বিষয়কে একটা বিশেষ শেইপে পূর্নতাদান করতে চাই যেহেতু এই ফিতনা ২০১৬ এর দিকে আমার হাতেই জন্ম। আমি কোনভাবেই এসকল ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলোকে ছেলেখেলা বানিয়ে যার যার মত অনুসারে ছড়িয়ে সুদূরপ্রসারী ফিতনাহর জন্ম দিতে পারিনা।


আমি ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি একদল ভাই মতে মিল না হওয়ায় অপর মুসলিম ভাইদের সাথে এমন রুক্ষ আচরণ করছেন যেটা একমাত্র কাফিরদের সাথে করাই শোভা পায়। সৃষ্টিতত্ত্বের বিশ্বাসের পার্থক্যে এমন আচরণ কখনোই সমর্থন করা যায় না। যারা শয়তান ও কাফিরদের হাতে নির্মিত সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসস্থাপন করে, এরূপ ব্যক্তি যদি আমাদের গালমন্দও করে, আমরা তা মুখবুজে সহ্য করব, তাকফির করা তো অনেক দূরের বিষয় । ভদ্রতার সাথে জবাবের বাহিরে যেন কোনরূপ রূঢ় আচরণ অপর মুসলিম ভাইদের প্রতি না করি।


অনেকে আমার সাথে যোগাযোগের প্রত্যাশা করেন, আমি আগেই বলেছি সময়ের অপচয় এবং শুহরাতের থেকে বেচে থাকার জন্য অনলাইনে সক্রিয় অবস্থানকে অপছন্দ করি। আমি জানি না ভবিষ্যতে কবে আবারো ফেইসবুকে আসছি। তবে সব সময় "ইল্মুল কালাম ওয়াল ইসলাম" নামের আমাদের গ্রুপে নিয়মিত চোখ রাখি। ব্লগের মাঝেই আপাতত সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। এখানে কাজ শেষ হয়ে গেলে এখান থেকেও বিদায় নেব। ব্লগে আগে গুগলে লগইন না করে কমেন্ট করা যেত না , এখন পাব্লিকভাবে বিনা লগইনে যে কেউই মন্তব্য করতে পারবেন। তাছাড়া এ ব্লগে "ফলো" বাটন আগে ইনএ্যাক্টিভ ছিল, যেটা এখন এক্টিভ করেছি। যাইহোক আমি সবসময় চেষ্টা করব কমেন্টের জবাব দিতে। ইদানীং লেখালেখির কাজে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হচ্ছি বিভিন্ন ডিজিটাল  হার্ডওয়্যারে সমস্যা হবার জন্য। ডিজিটাল স্টোরেজ এবং আমার অরগ্যানিক স্টোরেজ থেকে অনেক ইনফরমেশন হারিয়ে যাচ্ছে। দু'আর মুহতাজ।