Thursday, June 6, 2019

১০.ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব[দিবা-রাত্রি]

পর্ব-১০




দিবা রাত্রি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার অনন্য এক নিদর্শন। আল্লাহ দিনকে কর্মের জন্য এবং রাত্রিকে করেছেন নিদ্রার সময়।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُواْ فَضْلاً مِّن رَّبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُواْ عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلاً

আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিস্প্রভ করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী করেছি, যাতে তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা স্থির করতে পার বছরসমূহের গণনা ও হিসাব এবং আমি সব বিষয়কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি
(১৭:১২)




وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا
যারা অনুসন্ধানপ্রিয় অথবা যারা কৃতজ্ঞতাপ্রিয় তাদের জন্যে তিনি রাত্রি ও দিবস সৃষ্টি করেছেন পরিবর্তনশীলরূপে (২৫:৬১)

وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
তিনিই ভুমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে
(১৩:৩)


وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالْنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالْنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে। তারকাসমূহ তাঁরই বিধানের কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে
(১৬:১২)


إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে
(৩:১৯০)


وَهُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ وَلَهُ اخْتِلَافُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং দিবা-রাত্রির বিবর্তন তাঁরই কাজ, তবু ও কি তোমরা বুঝবে না?
(২৩:৮০)

يُقَلِّبُ اللَّهُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُوْلِي الْأَبْصَارِ
আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে অর্ন্তদৃষ্টি-সম্পন্নগণের জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে
(২৪:৪৪)

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَالنَّوْمَ سُبَاتًا وَجَعَلَ النَّهَارَ نُشُورًا
তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে
(২৫:৪৭)

আল্লাহ রাত ও দিনের মধ্যে কোনটিকে আগে সৃষ্টি করেন তা নিয়ে আলিমদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। একদল বলেন, দিনের সৃষ্টির পূর্বে রাত ছিল,অপর একদল আলিমদের মত সবার প্রথমে দিন বা রাত কোনটিই ছিল না,শুধু ছিল আল্লাহর নূরের আলো। তাদের কেউ কেউ বলেন আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আলো এবং আঁধার। তাদের মতে পানি,আরশ,কলম সব কিছুর মধ্যে আল্লাহ আলো আঁধারকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন।
আঁধারে পূর্বে আলো ছিল,
According to 'Ali b. Sahl-al-Hasan b. Bi1a1420 -Hammad b. Salamah -Abu 'Abd al-Salam al-Zubayr421-Ayyub b. 'Abdallah al-Fihri 22 -Ibn Masud: With your Lord there is neither night nor day. The light of the heavens comes from the light of His face. The measure of each of those days of yours is twelve hours with Him.
[History of Imam Tabari]

ইবনে আব্বাস(রাঃ) এবং কতিপয় প্রাচীন আলিমদের মতে সৃষ্টিজগতের প্রথমে রাত্রি বা আধার ছিল। কারন আসমান ও যমীনসমূহ ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল।


Ibn Bashshar-'Abd al-Rahman (b. Mahdi)-Sufyan (al-Thawri)- his father B -'Ikrimah-Ibn 'Abbas: Asked whether the night existed before the day, (Ibn 'Abbas?) replied: Don't you see! When the heavens and the earth weie compressed, 409 was there anything but darkness between them? This is meant for you to realize that the night existed before the day. 

According to al-Hasan b. Yahya410 -'Abd al-Razzag41 -(Sufyan) al-Thawri-his father-'Ikrimah-Ibn 'Abbas: The night is before the day. Then he said: "The two were compressed, and We then split them apart."412
[History Of Tabari Vol:1]


এটা মানতে কোন অসুবিধা নেই যে সর্বপ্রথম সৃষ্টিজগতে অন্ধকার বিদ্যমান ছিল। ইবনে আব্বাস(রাঃ) ও ইবনে মাসুদ(রাঃ) এর বর্ননার হাদিসটির মধ্যে কোন সাংঘর্ষিকতা নেই, কারন হয়ত  ইবনে আব্বাস(রাঃ) আসমান যমীনের মধ্যস্থিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে এমনটা বলেছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আসমান যমীনের মধ্যে জ্যোতি তথা দিবালোকের উন্মেষ ঘটান যমীন ও আসমানকে সৃষ্টির পর। অথচ তখনও যমীনকে সমতলে বিস্তৃত করা হয়নি, পাহাড়গুলোকেও স্থাপন করা হয়নি,চাঁদ-সূর্যকেও সৃষ্টি করা হয়নি। যেমনটা আল্লাহ বলেনঃ
أَأَنتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاء بَنَاهَا
তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন?
رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا
তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন।
وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا
এবং তিনি ওর রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং ওর জ্যোতি বিনির্গত করেছেন।
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন
أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءهَا وَمَرْعَاهَا 
তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, 
وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا 
পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন(৭৯:২৮-৩২)


এটা প্রমান করে, দিন চাঁদ ও সূর্যের থেকে স্বাধীন।আলো ও আধারের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই। হয়ত আল্লাহ রাতকে দিনের পূর্বে সৃষ্টি করেছেন, অর্থাৎ দিনের আলোর পূর্বে রাত সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِرَبِّهِم يَعْدِلُونَ
সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভব করেছেন। তথাপি কাফেররা স্বীয় পালনকর্তার সাথে অন্যান্যকে সমতুল্য স্থির করে।
(৬:১)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আসমানের নিচে জ্যোতি বিনির্গত করেন বুধবারে বা চতুর্থ দিনে। সেটা শুধুই আসমান ও যমীন সৃষ্টির পর। যমীনে পর্বত প্রোথিতকরন এবং সূর্য-চন্দ্র, নক্ষত্রমালা সৃষ্টির বহু আগেই দিবালোকের ব্যবস্থা করেন।
This we were told by Hannad b. al-Sari-Abu Bakr b. 'Ayyash-Abu Sa'd al-Baqqal-'Ikrimah Ibn 'Abbas-the Prophet. As transmitted by Abu Hurayrah, the Prophet said: God created light on Wednesday.426

 This I was told by al-Qasim b. Bishr and al-Husayn b. 'Ali-IIajjaj b. Muhammad-Ibn Jurayj Ismail b. Umayyah-Ayyub b. Khalid-'Abdallah b. Rafi'-Abu Hurayrah-the Prophet: God created light on Wednesday.

He created the light on Wednesday. I was told this by al-Qasim b. Bishr b. Ma'ruf and al-Husayn b. 'All al-Suda'i-Hajjaj-Ibn Surayj-Ismail b. Umayyah-Ayyub b. Khalid-Abdallah b. Rafi', the mawla of Umm Salamah-Abu Hurayrah-the Prophet.
[History of imam Tabari]


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বৃহস্পতিবার উপরে উত্থিত ধুম্রকুঞ্জ থেকে সলিড আসমানে পরিনত করে স্তরে স্তরে সজ্জিত করেন।
Thursday: He created on it the heavens, which were compressed but then were split,373 as I was told by Musa b. Harun- 'Amr b. Hammad-Asbat-al-Suddi-Abu Malik and Abu Salih Ibn 'Abbas. Also (al-Suddi)-Murrah al-Hamdani-'Abdallah b. Masud and some (other) companions of the Prophet (commenting on): "Then He stretched out straight toward heaven, which was smokei374 -that smoke came from the water 's breathing- and made it into one heaven . Then He split ( this one heaven) into seven heavens on two days, Thursday and Friday.

According to al-Muthanna-Abu Salih ('Abdallah b. Silih) -Abu Ma'shar-Sa'id b. Abi Said-'Abdallah b. Salim: God created the heavens on Thursday and Friday, and He finished in the last hour of Friday, in which He created Adam in haste. This is the hour in which the Hour will come.
[History of Imam Tabari]

যেহেতু বৃহস্পতিবার আসমানকে সাত স্তরে সুসজ্জিত করা হয় সেহেতু চাঁদ সূর্য নক্ষত্রদের অস্তিত্ব এর আগে কল্পনা করা যায় না। শুক্রবারের শেষ প্রহরে তিনঘন্টা বাকি থাকতে চাঁদ সূর্য নক্ষত্র সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং ছয়দিনের প্রায় শেষ ৩ দিন অর্থাৎ বুধবার থেকে সূর্যোদয় ছাড়াই রাত দিন আবর্তিত হয়।
As transmitted on (Ibn 'Abbas') authority, (the Prophet) said: God created the sun, the moon, the stars, and the angels on Friday, until three hours remained of it.

Abu Bakr b. 'Ayyash-Abu Said (!) al-Baggal-`Ikrimah-Ibn 'Abbas-the Prophet: On Thursday He created heaven. On Friday He created the stars, the sun, the moon,[…]
[History of Imam Tabari]

ইমাম ইবনে জারির তাবারি রহিমাহুল্লাহ এ ব্যপারে আসা হাদিসের ব্যপারে বলেনঃ
Abu Ja'far (al-Tabari) says: Regarding this, the correct statement, in our opinion, is the one of those who said : God created the earth on Sunday. He created the heaven on Thursday, and He created the stars and the sun and the moon on Friday. (We consider it correct) because of the soundness of the report mentioned by us earlier on the authority of Ibn 'Abbas from the Messenger of God. The tradition transmitted to us on the authority of Ibn 'Abbas is not impossible .[……]
[History of Imam Tabari]

এই হাদিস গুলো প্রমান করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আসমান যমীনে সর্বপ্রথম অন্ধকারের সৃষ্টি করেন এবং এরপরে আলো সৃষ্টি করেন। চতুর্থদিনে এতে জ্যোতিবিনির্গত করেন। অতঃপর সৃষ্টিকার্য সমাপ্তের শেষ প্রহরে সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ সূর্যের সৃষ্টির পূর্বে প্রায় ৩০০০ বছরের মত সময় যাবৎ দিবারাত্রি আবর্তিত হত। এতে এটা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় প্রভাত রশ্মির উন্মেষে সূর্যের ভূমিকা নেই, যেটা হেলিওসেন্ট্রিক প্যাগান কস্মোলজি শিক্ষা দেয়। দিবা-রাত্রি সূর্যের থেকে স্বাধীন। প্রায় ৩০০০ হাজার বছর এজন্যই বলছি যে আল্লাহর সৃষ্টিকার্যের ছয়দিনের একদিন=আমাদের হিসাবের ১০০০ বছর। সুতরাং বুধ থেকে শুক্র পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ বছর।
According to Ibn Humayd-Hakkam392 -'Anbasah393 -Simak394 -'Ikrimah-Ibn 'Abbas, commenting on: God "created the heavens and the earth in six days"395 -of which each day is like "one thousand years of your counting."396
[History of Imam Tabari]

অতএব,দিনরাত্রি আল্লাহর স্বতন্ত্র বিস্ময়কর সৃষ্টি। দিবারাত্রি সূর্য-চন্দ্রের ন্যায় ফালাকে আবর্তন করে। চন্দ্র সূর্যের আগে যেতে পারে না, দিন রাত্রির আগে যেতে পারে না, প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরন করছে।আল্লাহ বলেনঃ
لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে(৩৬:৪০)

আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।
(২১:৩৩)

আমরা গত পর্বে চন্দ্র সূর্যের সমান্তরাল অবস্থানে থেকে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ফালাকে আবর্তনের কথা উল্লেখ করেছিলাম। উপরের আয়াত দুটি এর কথাই বলে। বিষয়টা শুধু চাঁদ সূর্য নয় দিবা-রাত্রির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দিন রাত্রিও চাঁদ সূর্যের মত একে অন্যের পিছনে সন্তরণরত। আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكُمُ اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ تَبَارَكَ اللّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।(৭:৫৪)

 আয়াতে উল্লিখিত চাঁদ সূর্য, দিন রাত্রিকে একে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা প্রমানের অনেকে বৃথা চেষ্টা চালাবেন,তাদেরকে বলি, চাদের সাথে রাতের এবং সূর্যের উপর দিনের নির্ভরশীলতা বোঝানো হলে ক্রমধারা এরূপ হত যেঃ চাঁদ-সূর্য এবং রাত্রি-দিন অথবা দিন-রাত্রি এবং সূর্য-চন্দ্র। কিন্তু আল্লাহ ক্রমধারা বজায় রাখেন নি। অর্থাৎ এর মানে দাঁড়ায় সবগুলি একে অন্যের থেকে স্বাধীন। দিন-রাত্রির সমান্তরালে(একের পিছনে আরেকটির) আবর্তনের দৃশ্য পর্যবেক্ষণযোগ্য। দিন রাত্রির পাশাপাশি অবস্থানের দৃশ্য একটি সমুদ্রে অবস্থানকারী জাহাজ থেকে কেউ একজন ধারন করে। এতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় একদিকে দিনের গোধূলির আলো অন্যদিকে রাতের নিকষ আঁধারের চাদর। প্রচলিত বিজ্ঞানে এর ব্যাখ্যা নেই। তবে কুরআন সুন্নাহ ফেনোমেনার মূল কারন সম্পর্কে বলে। দেখুনঃ
https://m.youtube.com/watch?v=xdBR3tDXyVw

আল্লাহই দিন ও রাত্রিকে একটিকে অন্যটির মধ্যে প্রবিষ্ট করেন। আল্লাহ বলেনঃ
تُولِجُ اللَّيْلَ فِي الْنَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الَمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَن تَشَاء بِغَيْرِ حِسَابٍ
তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান কর
(৩:২৭)

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَهُوَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করেন রাত্রিতে। তিনি অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞাত
(৫৭:৬)

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রির মধ্য দাখিল করে দেন এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন, দেখেন
(২২:৬১)


يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ
তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। ইনি আল্লাহ; তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়
(৩৫:১৩)

وَآيَةٌ لَّهُمْ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ
তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়
(৩৬:৩৭)


أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?(৩১:২৯)


يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَهُوَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করেন রাত্রিতে। তিনি অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞাত(৫৭:৬)


خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল(৩৯:৫)

এটা সেই আয়াত যেটা দ্বারা আলিমদের একদল কাফিরদের বলা গোলাকৃতি পৃথিবীর অসত্য ধারনাকে সত্যায়ন করতে দলিল বানিয়ে নিয়েছে। অথচ এই আয়াতে পৃথিবীর আকৃতির ব্যপারে কিছুই বলে না। যেটা বলে সেটা দিবা রাত্রির আবর্তন।
শাইখ ইবনে উসাইমীন(রহঃ) বলেনঃ
The earth is round, based on the evidence of the Qur’an, reality, and scientific views. The evidence of the Qur’an is the verse in which Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“He created the heavens and earth for a true purpose; He wraps the night around [yukawwir] the day and the day around the night”[az-Zumar 39:5].
The word yukawwir (translated here as “wraps around” means to make something round, like a turban. It is well-known that night and day follow one another on earth, which implies that the Earth is round, because if you wrap one thing around another thing, and the thing that it is wrapped around is the Earth, then Earth must be round.

Fataawa Noor ‘ala ad-Darb

ইবনে উসাইমীন (রহঃ) যে সাইন্সের অনুসরন করেছেন সেটা তিনি প্রথমেই স্পষ্ট করেই বলেছেন। এই বিজ্ঞান ঘেষা বিশ্বাসকে ভ্যালিড করতে কুরআনের সূরা যুমারের ৫ নং আয়াতকে ব্যবহার করেছেন। তার যুক্তি হচ্ছে Yukawwir শব্দটি দ্বারা কোনরূপ বর্তুলাকৃতিকে(sphericity) নির্দেশ করে। যদিও এখানে যমীনের ব্যপারে কিছুই বলা হচ্ছে না, তিনি জোড় করে যমীনের দিকে চাপিয়ে দিচ্ছেন।
আমরা উপরে দলিলগুলোকে উল্লেখ করেছি যে দিবারাত্রি আসমানের ফালাকে সন্তরনশীল(21:33)। হাদিসে যে আধাঁরের পর্দা সঞ্চালনের কথা এসেছে সেটাও আসমানের তরঙ্গের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ দিবারাত্রির আলো আঁধার আসমানের সাথে সম্পর্কিত। আমরা বিগত পর্বগুলোয় আসমানের গম্বুজাকৃতির ব্যপারে আসা শারঈ দলিল গুলো উল্লেখ করেছি। গম্বুজাকৃতি বা ডোম স্ট্রাকচার একটি সেমি স্ফেরিক্যাল স্ট্র‍্যাকচার। অর্থাৎ অর্ধবর্তুলাকার। এই অর্ধবর্তুলাকার ছাদে দিন রাত্রির আলো-আঁধারি একে অপরকে মুড়িয়ে(wrapping) দেয় বা আচ্ছাদিত করে। Vaulted Dome shaped আসমানের কার্ভাচারের উপরে দিন রাত্রির আচ্ছাদনের বর্ননার জন্য সবচেয়ে যথার্থ শব্দ Yukawwir(Wrap), যেটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এ আয়াতে ব্যবহার করেছেন। এখানে যমীনের সাথে কোনরূপ সম্পর্কই নেই। এজন্য এই আয়াতকে পৃথিবী গোলাকার হবার সম্ভাব্য দলিল হিসেবেও গ্রহন করার বিষয়টি খুব অবাক করে। তারা আসমান বাদ দিয়ে যমীনকে মনে করেছে, যদিও যমীনের সাথে এর দূরতম সম্পর্কও নেই। এই আয়াতটিকে দলিল হিসেবে শুধু উসাইমীন(রহঃ) একা নন, তার পূর্বে ইবনে হাযমও নিয়েছেন। বিস্তারিতঃ

আল্লাহ যেরূপে আলোকে ভিন্নভাবে সৃষ্টি করেছেন তদ্রুপ অন্ধকারকেও। সুদীর্ঘ এক হাদিসে রাত্রি আবর্তনের ব্যপারে বর্ননা এসেছে। ফেরেশতারা একটা সুবিশাল আধারের পর্দাকে আসমানের তরঙ্গের ভেতরের কক্ষপথে টেনে নিয়ে যায়। অতঃপর যার উপর দিয়ে সেটা অতিক্রম করে তাকে সে আচ্ছন্ন করে। ফেরেশতারা সেই পর্দাকে যমীনের উপর দুই প্রান্তে গিয়ে টেনে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নিয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন রাত হয়। কিয়ামত পর্যন্ত নির্ধারিত সংখ্যক আধারের চাদর পশ্চিমে পৌছানোর কাজে রত থাকবে। হাদিসটিঃ
Ibn 'Abbas said that 'Ali b. Abi Talib said to the Messenger of God: You are like my father and my mother! [………] He continued. In the east, God places a veil of darkness on the
seventh ocean according to the number of nights from the day God created this world until the day when this world will be cut off.At sunset, an angel entrusted with the night comes and grabs a handful of the veil's darkness. He then moves toward the west,all the time gradually releasing some of the darkness through the interstices of his fingers, watching out for the twilight. When the twilight has disappeared, the angel releases all the darkness. He then spreads out his two wings. They reach the two sides of the earth and the two rims of heaven and pass outside in the air as far as God wishes. The angel drives the darkness of the night with his wings, praising and sanctifying God with prayer, until he reaches the west. When he has reached the west, morning dawns from the east. The angel puts together his wings, then puts together the parts of the darkness one by one in his palms, then grabs in one palm as much of the darkness as he had taken from the veil (of darkness) in the east, and places it in the west on the seventh ocean. From there comes the darkness of the night. When the veil is transported (completely) from east to west, [70] the Trumpet is blown, and this world comes to its end. The luminosity of the day comes from the east, and the darkness of the night comes from that veil . The sun and the moon always continue this way from rising to setting, and on to their being raised to the highest, seventh heaven and their being held underneath the Throne[……]
[History of Imam Tabari]

অতএব এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে রাত্রির আধাঁর আল্লাহরই স্বতন্ত্র সৃষ্টি। হয়ত এজন্যই বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা রাতকে আচ্ছন্নকারী আবরণ বলেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا
রাত্রিকে করেছি আবরণ।(৭৮:১০)

আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ
وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى
শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে,
وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى
শপথ দিনের, যখন সে আলোকিত হয় (৯২:১-২)
وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا
শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে,[৯১:৩-৪]

অন্ধকারকে যেরূপে আল্লাহ যমীনের উপর ছড়িয়ে দেন। হয়ত আলোর ক্ষেত্রেও তদ্রুপ কিছু একটা ঘটে। আল্লাহ ভাল জানেন। পশ্চিমের অর্থোডক্স ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের স্বল্পসংখ্যক বিশ্বাস করে দিনের আলো তৈরি হয় একটি বিশেষ গ্যাসের কারনে।দেখুনঃ https://m.youtube.com/watch?v=3GZhj9BbIXc

ওদের কাছে এ বিশ্বাসের দলিল হচ্ছে বিকৃত তাওরাতের প্রথম দিকের কিছু ভার্স। এগুলো হচ্ছে  ইহুদীদের নিকট আসা সৃষ্টিতত্ত্বের জ্ঞানের উৎস যা তারা আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এর জীবদ্দশায় তার নব্যুয়তের সত্যয়নের পরীক্ষায় ব্যবহার করত। তারা আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বর্ননার সাথে সাদৃশ্যতা পেয়ে আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এর কথার সত্যতার স্বীকৃতি দিত। এখান থেকেই কিতাব বিকৃত করে ওরা sabbath এর প্রথা চালু করে।


 ইহুদীদের তাওরাতে উল্লিখিত এ ভার্সগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে প্রায় শতভাগ সঙ্গতিপূর্ণ। এটা এরূপ যেন গোটা বিষয়টার সারমর্ম একত্রে দেওয়া। সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যপারে আসা কুরআন ও সুন্নাহর সকল দলিল সামনে রাখলে দেখলে মনে হবে, এটা যেন তাওরাতে আসা সৃষ্টিতত্ত্বের কথাই পুনরায় বলছে। আমরা বিগত পর্বগুলোয় যার আলোচনা বিশদভাবে করছি, সেটাই যেন ওখানে আছে। তাওরাতে এই ভার্সগুলো নিন্মরূপঃ

א  בְּרֵאשִׁית, בָּרָא אֱלֹהִים, אֵת
הַשָּׁמַיִם, וְאֵת הָאָרֶץ.
1 In the beginning God created the heaven and the earth.
ב  וְהָאָרֶץ, הָיְתָה תֹהוּ וָבֹהוּ, וְחֹשֶׁךְ, עַל-פְּנֵי תְהוֹם; וְרוּחַ אֱלֹהִים, מְרַחֶפֶת עַל-פְּנֵי
הַמָּיִם.
2 Now the earth was unformed and void, and darkness was upon the face of the deep; and the spirit of God hovered over the face of the waters.
ג  וַיֹּאמֶר אֱלֹהִים, יְהִי
אוֹר; וַיְהִי-אוֹר.
3 And God said: 'Let there be light.' And there was light.
ד  וַיַּרְא אֱלֹהִים אֶת-הָאוֹר, כִּי-טוֹב; וַיַּבְדֵּל אֱלֹהִים, בֵּין
הָאוֹר וּבֵין הַחֹשֶׁךְ.
4 And God saw the light, that it was good; and God divided the light from the darkness.
ה  וַיִּקְרָא אֱלֹהִים לָאוֹר יוֹם, וְלַחֹשֶׁךְ קָרָא לָיְלָה; וַיְהִי-עֶרֶב וַיְהִי-בֹקֶר, יוֹם אֶחָד. 
{פ}
5 And God called the light Day, and the darkness He called Night. And there was evening and there was morning, one day. {P}
ו  וַיֹּאמֶר אֱלֹהִים, יְהִי רָקִיעַ בְּתוֹךְ הַמָּיִם, וִיהִי מַבְדִּיל, בֵּין מַיִם
לָמָיִם.
6 And God said: 'Let there be a firmament in the midst of the waters, and let it divide the waters from the waters.'
ז  וַיַּעַשׂ אֱלֹהִים, אֶת-הָרָקִיעַ, וַיַּבְדֵּל בֵּין הַמַּיִם אֲשֶׁר מִתַּחַת לָרָקִיעַ, וּבֵין הַמַּיִם אֲשֶׁר מֵעַל לָרָקִיעַ;
וַיְהִי-כֵן.
7 And God made the firmament, and divided the waters which were under the firmament from the waters which were above the firmament; and it was so.
ח  וַיִּקְרָא אֱלֹהִים לָרָקִיעַ, שָׁמָיִם; וַיְהִי-עֶרֶב וַיְהִי-בֹקֶר, יוֹם
שֵׁנִי.  {פ}
8 And God called the firmament Heaven. And there was evening and there was morning, a second day. {P}
ט  וַיֹּאמֶר אֱלֹהִים, יִקָּווּ הַמַּיִם מִתַּחַת הַשָּׁמַיִם אֶל-מָקוֹם אֶחָד, וְתֵרָאֶה, הַיַּבָּשָׁה;
וַיְהִי-כֵן.
9 And God said: 'Let the waters under the heaven be gathered together unto one place, and let the dry land appear.' And it was so.
י  וַיִּקְרָא אֱלֹהִים לַיַּבָּשָׁה אֶרֶץ, וּלְמִקְוֵה הַמַּיִם קָרָא יַמִּים; וַיַּרְא
אֱלֹהִים, כִּי-טוֹב.
10 And God called the dry land Earth, and the gathering together of the waters called He Seas; and God saw that it was good.
יא  וַיֹּאמֶר אֱלֹהִים, תַּדְשֵׁא הָאָרֶץ דֶּשֶׁא עֵשֶׂב מַזְרִיעַ זֶרַע, עֵץ פְּרִי עֹשֶׂה פְּרִי לְמִינוֹ, אֲשֶׁר זַרְעוֹ-בוֹ
עַל-הָאָרֶץ; וַיְהִי-כֵן.
11 And God said: 'Let the earth put forth grass, herb yielding seed, and fruit-tree bearing fruit after its kind, wherein is the seed thereof, upon the earth.' And it was so.
יב  וַתּוֹצֵא הָאָרֶץ דֶּשֶׁא עֵשֶׂב מַזְרִיעַ זֶרַע, לְמִינֵהוּ, וְעֵץ עֹשֶׂה-פְּרִי אֲשֶׁר זַרְעוֹ-בוֹ, לְמִינֵהוּ;
וַיַּרְא אֱלֹהִים, כִּי-טוֹב.
12 And the earth brought forth grass, herb yielding seed after its kind, and tree bearing fruit, wherein is the seed thereof, after its kind; and God saw that it was good.
יג  וַיְהִי-עֶרֶב וַיְהִי-בֹקֶר,
יוֹם שְׁלִישִׁי.  {פ}
13 And there was evening and there was morning, a third day. {P}
יד  וַיֹּאמֶר אֱלֹהִים, יְהִי מְאֹרֹת בִּרְקִיעַ הַשָּׁמַיִם, לְהַבְדִּיל, בֵּין הַיּוֹם וּבֵין הַלָּיְלָה; וְהָיוּ לְאֹתֹת וּלְמוֹעֲדִים,
וּלְיָמִים וְשָׁנִים.
14 And God said: 'Let there be lights in the firmament of the heaven to divide the day from the night; and let them be for signs, and for seasons, and for days and years;
טו  וְהָיוּ לִמְאוֹרֹת בִּרְקִיעַ הַשָּׁמַיִם, לְהָאִיר עַל-הָאָרֶץ;
וַיְהִי-כֵן.
15 and let them be for lights in the firmament of the heaven to give light upon the earth.' And it was so.
טז  וַיַּעַשׂ אֱלֹהִים, אֶת-שְׁנֵי הַמְּאֹרֹת הַגְּדֹלִים:  אֶת-הַמָּאוֹר הַגָּדֹל, לְמֶמְשֶׁלֶת הַיּוֹם, וְאֶת-הַמָּאוֹר הַקָּטֹן לְמֶמְשֶׁלֶת
הַלַּיְלָה, וְאֵת הַכּוֹכָבִים.
16 And God made the two great lights: the greater light to rule the day, and the lesser light to rule the night; and the stars.
יז  וַיִּתֵּן אֹתָם אֱלֹהִים, בִּרְקִיעַ הַשָּׁמָיִם,
לְהָאִיר, עַל-הָאָרֶץ.
17 And God set them in the firmament of the heaven to give light upon the earth,
יח  וְלִמְשֹׁל, בַּיּוֹם וּבַלַּיְלָה, וּלְהַבְדִּיל, בֵּין הָאוֹר וּבֵין הַחֹשֶׁךְ; וַיַּרְא
אֱלֹהִים, כִּי-טוֹב.
18 and to rule over the day and over the night, and to divide the light from the darkness; and God saw that it was good.
יט  וַיְהִי-עֶרֶב וַיְהִי-בֹקֶר, יוֹם רְבִיעִי. 
{פ}
19 And there was evening and there was morning, a fourth day. {P}

בְּרֵאשִׁית[Bereshit:1-19]


তাওরাতের সাথে সৃষ্টিতত্ত্বের এই সাদৃশ্যতা খুবই স্বাভাবিক,ইহুদীরা যখন আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কে এ ব্যপারে প্রশ্ন করছিল,তখন তারা তাদের কিতাবের সাথে সাদৃশ্যতা পেয়ে সত্যতার স্বীকৃতি দিচ্ছিল। আমরা বিকৃত তাওরাতেও দেখতে পাচ্ছি যে , আল্লাহ আসমান যমীন সৃষ্টির পরই আলো আধারের সৃষ্টি করেন এবং পরবর্তীতে বুধবার(চতুর্থদিনে) আবারো দিনরাত্রিকে সৃষ্টি করেন। এটা দিবালোককে সূর্যের থেকে স্বাধীন সাব্যস্ত করে।আল্লাহ আলো আধার, দিন রাত্রি আসমানে সূর্যের সৃষ্টির আগেই সৃষ্টি করেছিলেন। ওয়া আল্লাহু আ'লাম।

আসমানে প্রভাতের(দিবালোকের শুরু) গোধূলির আলো আল্লাহর স্বতন্ত্র সৃষ্টি। বিষয়টা পর্যবেক্ষনযোগ্য।প্রত্যুষের আলোকপ্রভা পুরা আকাশের হোরাইজনে বিস্তৃত থাকে। শুধু পূর্বেই না পশ্চিম দিকের দৃষ্টিসীমার শেষ পর্যন্ত সেটা লক্ষ্য করা যায়,যদিও এ অবস্থার প্রায় আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা পর সূর্য উদিত হয়।দিবালোকের স্বাতন্ত্র্য অনুভব করা যায় সূর্যগ্রহনের সময় এবং ঘন মেঘাচ্ছন্ন বৃষ্টিমুখর দিনে। সূর্য সম্পূর্ণভাবে ঢাকা পড়ে, এমনকি আসমানের যে অংশে সূর্যের অবস্থান, সেখানের সাথে বিপরীত দিকের আলোকজ্জলতা একই রকমের থাকে।এটা প্রমান করে দিবালোকের স্বতন্ত্র আলো সূর্যের চেয়ে অধিক বিস্তৃত। সূর্য তো সামান্য মেঘের আড়ালেই ঢাকা পড়ে যায়। অধিকন্তু সূর্যের আলো লোকাল।এরকম অনেক প্রমান আছে যে সূর্যের ঠিক নিচের মেঘের উপর সার্কুলার হটস্পট দেখা যায়(এসব নিয়ে 'জিওসেন্ট্রিক কস্মোলজিতে' আলোচনা গত হয়েছে)। সূর্যের ন্যায় চাঁদও মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে আলোসহ হারিয়ে যায়।তখন ঘুটঘুটে অন্ধকারে চাদের সামান্য আলোও মেঘের আশপাশ থেকে দেখা  দেখা যায় না।যেন চাঁদ ওঠেই নি। পূর্নিমার চাঁদের আলোকেও মেঘলা আকাশ ঢেকে দিয়ে অন্ধকার করে দেয়,তখন অন্ধকার ছাড়া কিছুই থাকেনা কারন রাত্রির আবরন সর্বত্র বিরাজ করে কিন্তু দিনের বেলায় ঘন মেঘের আড়ালে প্রখর সূর্য ঢাকা পড়লেও দিবসের আলো রাত্রির ন্যায় অন্ধকার হতে দেয় না,নূন্যতম গোধূলি/সুবহে সাদিকের ন্যায় আলো টিকে থাকে।  সূর্যকে আল্লাহ মূলত হিসাবের জন্য সৃষ্টি করেছেন। দিন সৃষ্টি এর কাজ নয়, তবে দিবালোক আরো প্রখর এবং উজ্জ্বল করে সূর্যরশ্মি। আল্লাহ বলেনঃ
فَالِقُ الإِصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
তিনি প্রভাত রশ্মির উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে আরামদায়ক করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর নির্ধারণ(৬:৯৬)


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বিভিন্ন স্থানে দিন ও রাত্রির শপথ করেছেন, যেগুলো দিবারাত্রিকে স্বতন্ত্র সৃষ্টি হিসেবে নির্দেশ করে। আল্লাহ বলেনঃ
وَالضُّحَى
শপথ পূর্বাহ্নের,
وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى
শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়(৯৩:১-২),
وَاللَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ
শপথ নিশাবসান ও
وَالصُّبْحِ إِذَا تَنَفَّسَ
প্রভাত আগমন কালের(৮১:১৭-১৮)
وَاللَّيْلِ إِذْ أَدْبَرَ
শপথ রাত্রির যখন তার অবসান হয়,
وَالصُّبْحِ إِذَا أَسْفَرَ
শপথ প্রভাতকালের যখন তা আলোকোদ্ভাসিত হয়
(৭৪:৩৩-৩৪)

আল্লাহ চাইলেই এই দিন বা রাত্রিকে কিয়ামত পর্যন্ত বর্ধিত করতে পারেন। রাতকে এরূপ কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করলে নরওয়ে, সাইবেরিয়ার মত মধ্যরাতে সূর্য দেখার ঘটনা ঘটতে পারে। তেমনি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত লম্বা করলে হয় চাঁদ সূর্যকে নিয়মিত আবর্তিত হতে দেখা যাবে কিন্তু সূর্যাস্তের পরেও গোধূলির আলো বিদ্যমান থাকবে। ওয়া আল্লাহু আ'লাম।আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِضِيَاء أَفَلَا تَسْمَعُونَ
বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না?
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে ? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ?
وَمِن رَّحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর(২৮:৭১-৭৩)

আমাদের নিচেও আরো ছয়টি আমাদের পৃথিবীর ন্যায় ছয়টি সমতলে বিস্তৃত স্তর আছে। প্রত্যেকটিতে মাখলুক রয়েছে। সেখানে হয়ত চাঁদ সূর্য নেই, যেহেতু এমন কোন দলিল পাওয়া যায় না যেটা চাঁদ সূর্যকে একাধিক বলে। হয়ত নিচের যমীনগুলোতেও দিবারাত্রির আবর্তন ঘটে অথবা সেখানে আল্লাহ স্থায়ী গোধূলির আলোর(twilight) ব্যবস্থা রেখেছেন। ওয়া আল্লাহু আ'লাম।

আজকের সৌরজগত ভিত্তিক বিবর্তনবাদী সৃষ্টিতত্ত্ব আমাদেরকে শেখায় দিনরাত্রি পৃথিবীর ঘূর্ননের কারনে সূর্যের আড়ালে চলে যাবার দরুন ঘটছে। এ কারনে অনেক মুসলিম অপবিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিকতা দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করে। কিন্তু তাদের প্রশ্নের জবাব সেইভাবেই সায়েন্টিফিক স্ট্যান্ডার্ড ঠিক রেখে দেওয়া হয়। কোন এক মুসলিম প্রশ্ন করে,'কেন কুরআনে রাতকে পর্দার ন্যায় টানার কথা আল্লাহ বলেছেন , যেখানে  রাত্রিকে পৃথিবীর ঘূর্ননের দরুন হওয়া স্পেসের অন্ধকার বলা হয়?'
সেখানে অনেক মুসলিম বিচিত্র সায়েন্টিফিক উত্তর দিয়েছে। আপনারা দেখতে ভুলবেন না।
https://www.quora.com/Why-does-Quran-say-that-night-is-a-veil-pulled-over-day-by-Allah-when-night-is-just-the-darkness-of-space-as-seen-from-the-earth-due-its-rotation


আমি জানি আজকের এই পর্ব এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখা যেটার সপক্ষে স্পষ্টভাবে সুদ্দি রহিমাহুল্লাহসহ আরো দু একজন আলিম/মুফাসসীরিন ছাড়া আর কেউ তেমন কিছু বলেন নি। কিন্তু আমাদের কাছে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল আছে যা উপরে উল্লেখ করেছি। আমরা ঐ সমস্ত সম্মানিত আলিমদের ব্যপারে সচেতন যারা কিছু বিষয়ে অনুমান নির্ভর সামান্য ভিন্নমত পোষন করেছেন। এসব তথ্য সম্পূর্ন গায়েবের বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, এর ব্যপারে আল্লাহই উত্তম জানেন। আল্লাহ যা আমাদের জানিয়েছেন এখানে তাই প্রকাশের চেষ্টা মাত্র। তাই এ বিষয়ে যেকোনরূপ ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহ আযযা ওয়াযালের নিকট বিনীত ক্ষমা প্রার্থনা করি।
আফসোসের বিষয় হচ্ছে এ যুগের মানুষ আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীন এবং সমস্ত আলামের মালিক সেই মহান প্রতিপালকের বলা সত্যিকারে সৃষ্টিতত্ত্বকে অবিশ্বাস করে। এ অবস্থা আজ অধিকাংশই কালেমা পড়া মুসলিমদেরও অবস্থা। এই সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত দলিলভিত্তিক আর্টিকেল সিরিজ ব্যাধিহীন পবিত্র হৃদয়ের মুত্তাকী বান্দার জ্ঞানের জন্য উপকারী যারা রহমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার সৃষ্টি নিয়ে তাদাব্বুর করে। কলুষিত হৃদয়ের বান্দাদের জন্য এটা ক্ষতির কারনও হতে পারে যেহেতু তারা অপবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে এবং কাফিরদের কথায় অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এখন হক্ক বিষয়ও ফিতনার কারন হতে পারে। কুরআন-সুন্নাহর কস্মোলজিক্যাল বিষয় এ পর্যন্ত অনেক মুসলিমের(ফাসিক/মুনাফিকের) এ্যাপোস্টেসির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। এরকম অজস্র মুর্তাদ ঘুরছে যারা শুধুমাত্র অপবিজ্ঞানের সাথে সত্যিকারের জ্ঞানের রশ্মি কুরআনের বৈসাদৃশ্যতা দেখে কাফির হয়ে গেছে। এজন্য এসব আমভাবে যার তার কাছে প্রচার এবং এর কোন কিছুকে রেফারেন্স করে অহেতুক তর্ক বিতর্ক এড়ানোর জন্য সকলের কাছে অনুরোধ করি।







ওয়া আল্লাহু আ'লাম


[চলবে ইনশাআল্লাহ…]




বিগত পর্বগুলোর লিংকঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/article-series_85.html

Tuesday, May 28, 2019

এ্যাডভান্স হাইপারডাইমেনশনাল ফিজিক্সে এ্যাস্ট্রোলজিক্যাল ইমপ্লিকেশন

মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞান সরাসরিভাবে জ্যোতিষশাস্ত্রকে অপবিজ্ঞানের কাতারে ফেলতে চায়। যদিও এটা ৩০০ বছর আগেও মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞান ছিল। কিন্তু আজকের পদার্থবিজ্ঞান যেসমস্ত মেকানিক্সের শিক্ষা দেয় সেগুলোর খুবই এ্যাডভান্স স্তরে গিয়ে এস্ট্রলজিক্যাল ইমপ্লিকেশন সরাসরি পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিজ্ঞান বাহ্যিকভাবে এর স্বীকৃতি দেওয়া থেকে দূরে থাকতে চাইলেও এর মূল শিক্ষা শেষ হয় সেটার মাধ্যমে। এটা বুঝতে হলে হাইপারডাইমেনশনাল ফিজিক্স ভাল করে বুঝতে হবে। যেখানে সবকিছুই সবকিছুর অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে দেখানো হয়, এজন্য এস্ট্রলজিকে প্রাচীন ভিত্তিহীন বিজ্ঞান বললে ভুল হবে। আমার কাছে এরূপ লাগে যে বাবেল শহরে জন্মানো এই বিদ্যা প্রাচীন যুগেই আসা এ্যাডভান্স মেটাফিজিক্যাল সিনপ্সিস। আজকের বিজ্ঞান শুধুই সেই জ্ঞানকে ডিকোড করছে, এরজন্য কিছুকাল সেটা থেকে আলাদা থাকা আরকি। উদাহরণস্বরূপ,প্রাচীন যুগে কোন লোক এক সম্প্রদায়কে একটা বিমানের এর চিত্র একে দেখালো, সবাই সেটাকে অনুকরণ করে অঙ্কন করতে লাগলো, কিন্তু ঐলোক বিমানের মেকানিজম সম্পর্কে কিছুই জানায়নি। দুইতিনশত বছর পর সে চিত্রকে একদল নীতিনির্ধারক কল্পনা বলে এ্যাবান্ডন করে ধীরে ধীরে জ্ঞান বিজ্ঞানের অনুসরন করে একসময় বিমানই তৈরি করে ফেলল। তখনকার লোক প্রাচীন ছবি দেখে বলতে লাগলো, এই বিদ্যা তো সেদিনই আবিষ্কার হলো। এতো এ্যাডভান্স নলেজ প্রাচীন লোকদের মধ্যেও তবে ছিল!

একইভাবে এস্ট্রলজি আবারো বৈজ্ঞানিক সমর্থন পেতে যাচ্ছে। এরজন্য আমরা কোয়ান্টাম এবং ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিক্স রিকনসাইল করার প্রচেষ্টায় থাকা বিজ্ঞানীগন এস্ট্রলজিকে আড়ালে আবডালে প্রচার করে তাদের প্রপাগান্ডা ডকুমেন্টারিতে।

জিনিসগুলোকে ইনশাআল্লাহ সবই খুলে খুলে বর্ননা করব , এবং সেটা করতেই হবে। নতুবা কোন তত্ত্বকে কুফর সাব্যস্ত করলে যাদের জ্ঞানই নাই তারা আমাকে তো পথচ্যুত মনে করেই, পাশাপাশি স্যাটানিক থিওলজিতে সমর্থনে গোঁড়ামিও বেড়ে যায়। যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা রক্ষা করেছেন, তাদের কথা ভিন্ন।

যে বিষয়টা আমাকে অবাক করে, একটা সময় ছিল খুজতাম আল্লাহর রাসূল(সাঃ) আজকের বিচিত্র কুফরি তত্ত্বের ব্যপারে কিছু বলেছিলেন কিনা। কিন্তু কিছুই পেতাম নাহ। কিন্তু আজ দেখতে পাচ্ছি , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা, রাসূল(সাঃ) এর মাধ্যমে একদম সাপের মাথার ব্যপারেই সতর্ক করেছিলেন। সুবহানআল্লাহ, এই সেই জ্যোতিষবিজ্ঞান।এটা সুপারন্যাচারাল ম্যাজিকেরই একটা শক্তিশালী শাখা। এই শাখার শেকড় আজকের বিভিন্ন থিওরি আর 'ল এর ব্যপারে বিদ্যা। কাব্বালিস্ট র‍্যবাইদের কাছে থেকে শুনুন, এটা কিরূপ বিদ্যা! যেখানে সাপের মাথার ব্যপারেই সতর্ক করা হয়েছে সুতরাং এর লেজ কিংবা উদরের ব্যপারে সতর্ক করা নিষ্প্রোয়োজন।

Hashem Al Ghaili - সারাবিশ্বে Occult worldview প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেলিব্রেটি মুর্তাদদের অনন্য প্রয়াস

এক দ্বীনি সেলিব্রেটি ভাইকে দেখেছিলাম "হাশেম আল ঘাইলি"র কোন একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন। আমি জানিনা মূর্খতার কোন পর্যায়ে আমরা! এরাবিক/ইসলামিক নাম দেখলেই ঝাপ দেই! আর ওদের শয়তানি আকিদার ডেপিকশন গুলো নিয়ে ইসলামাইজেশন! এগুলো কিনা কিছু লোকের রিলিজিওসিটি ইনহ্যাঞ্চ করে! (প্রদত্ত ছবিতে)এরা সুস্পষ্টভাবে শয়তানের চেহারাতেই দেখিয়ে সৃষ্টিকর্তার আসনে রিপ্লেস করছে। হাশেম সাবের বিশ্বাস শুনবেন?
এক সাক্ষাৎকারে তাকে [সুডো]সায়েন্স এবং নাস্তিকতা একে অন্যের সাথে জড়িত কিনা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়।তিনি উত্তরে বলেন,
“The way I see it, science and atheism are interconnected. To believe in all science, you must first give up any concept that contradicts with science. You can’t just choose to believe in some science and ignore some parts of it because the same scientific method is always followed in generating this whole body of scientific knowledge. It’s either to accept in the whole package or to reject it once and for all. What makes religions weak is that the beliefs they promote are well preserved, unchangeable over centuries and not allowed to be questioned by their followers. However, you don’t have to be an atheist to become a scientist, you can still believe in religion and in science at the same time but then your rational scientific mind won’t be able to accommodate both.”
 

এতে কোন সন্দেহ নেই যে বৃহদাকারে রিপ্যাকেজড স্যাটানিজম, এবং মালাউন সর্সারারদের যাদুশাস্ত্র ডিরাইভড শয়তানি আকিদাকে জগতে ছড়িয়ে দিতে দুজন মুসলিম পরিবারের সন্তানকে শয়তান বেছে নিয়েছে। এর একজন হাশেম সাব। আরেকজন যেকোন সময়ে নোবেল পাবেন। উনি কাব্বালাকেও ফিজিক্সের পরিভাষায় ডিকোড করে ফেলেছেন (তাকে নিয়ে অন্যদিন লিখব) । ব্যপারটা আইরনিক্যাল। কাটা দিয়ে কাটা তুলবার মত কাজ।
.
আমার সত্যিই সন্দেহ হয় এবং আশংকা হয় এই ভেবে যে, আরিফ আজাদসহ আরো অনেক মর্ডানিস্ট অথোরস কাদের হয়ে কাজ করছেন? 
তারা যা করছেন সেব্যপারে কি তারা কন্সাস? নাকি শ্রেফ মূর্খতার দরুন এরূপ করছেন?
.
সর্তক করে যদি কিছু বলতে যাই, উলটা আমারেই তাকফির করে! একটা আইডিও রিপোর্ট করে বন্ধ করতে বাদ রাখেনি। আল্লাহই সবার অন্তরের ব্যপারে ভাল জানেন। তবে আমি আমার কাজ করে যাব, শয়তানি সমস্ত ডেটাবেজ যা আমার কাছে আছে ধীরে ধীরে আনভেইল করতে থাকব, যার ভাল লাগবে তা মানবে, যার ভাল না লাগবে ইবলিসের পথকে বেছে নেবে। দ্বীনের ব্যপারে তো কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আমার খুব খারাপ লাগে কারন এসব আমি সমূলে বুঝি এবং ভয়াবহতা উপলব্ধি করি। কিন্তু আমার দ্বীনিভায়েদেরই এসবে বিশ্বাস করতে দেখি। সাধারন মানুষ করবে কি!?
গতকাল আরেক দ্বীনি ভাই দেখি মালাউন কার্ল সেগানের ভিডিও শেয়ার করতে। এতে তার ফলোয়াররা শেয়ার্ড লিংকের নিচে 'সুবহানআল্লাহ' লিখছিলো।  
আসলে এজন্য একটা বিষয় অনুভব করি, ignorance is bliss। মানে, 
"if one is unaware of an unpleasant fact or situation one cannot be troubled by it." এ বিষয় গুলোতে সবার মত অচেতন থাকলে,আজ এগুলো দেখলে রাগান্বিত হতে হত না, সবার সাথে আমিও "আমিন" কিংবা "সুবহানআল্লাহ" বলতাম। 
.
[সংযুক্ত ছবির বিষয় বস্তু স্যাটানিক এন্টিটির ডিভিনিটি নিয়ে, যদি "স্যাটানিক" টার্মটি আপনার মর্ডান সেন্সিবিলিটিতে আঘাত হানে, তাহলে "এলিয়েন" দিয়ে রিপ্লেস করলেই হলো। তবে কনভেনশনাল আউটার স্পেসের এলিয়েন নিয়ে নয়, এরা ডিল করছে ইনারস্পেসের এলিয়েন নিয়ে। ঐন্দ্রজালিক উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমান স্বত্ত্বাদের ঐশ্বরিকতা নিয়ে। এটাই সাইন্স  ইউ হ্যাভ টু মানতে হবে 
বিস্তারিতঃ 
https://aadiaat.blogspot.com/2018/12/blog-post_30.html

এবং বছর খানেক আগে লেখা অসম্পূর্ণ ডকুমেন্টারির খন্ডাংশ- 
https://aadiaat.blogspot.com/2018/04/blog-post_42.html



যেটা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম... 
হাশিম আল ঘাইলি, আপনাদের প্রিয় সায়েন্স এন্থুজিয়াস্ট(আপনাদের দৃষ্টিতে মুসলিম,আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী না তাতে কি, আল হাইয়্যান, ইবনে সিনাদের মত উনিও উম্মাহর জ্ঞানের গর্ব। বিখ্যাত সায়েন্সবোদ্ধা।আপনারা তো নাস্তিকদের বানানো ভিডু শেয়ার দেন না, উনার ভিডিও আর্টিকেল যেহেতু শেয়ার হয়, পেইজে লাইক আছে সুতরাং উনার ব্যপারটা একটু আলাদা। আল্লাহকে অবিশ্বাস করলেও তাকে কাফের বলা ঠিক হবে না, তাইনা?) এর খ্যাতি জগতজোড়া। ফেসবুকেই ২১ মিলিয়ন ফলোয়ার! ভিডিও সম্পাদনায় অসাধারণ। ৬ বিলিয়ন অর্গানিক ভিউয়ার। এ নৈপুণ্য দিয়ে কি বানাচ্ছেন জানেন? তিনি (সুডো)সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম তৈরি করছেন। তিনি দেখাবেন, যে মৃত্যুর পর পরকাল বলে কিছু নেই বরং উচ্চতর মাত্রায় ট্রান্সেন্ডেন্সের সম্ভাবনা। এবং আমাদের দেখা মহাবিশ্ব এবং সমগ্র সৃষ্টিজগত শয়তান জ্বীনদের তৈরি। তারাই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা! আর এই জগৎ হলোগ্র‍্যাফিক ইল্যুসিভ সিমুলেশন। এই আকিদার গ্রেসিয়-ব্যবিলনিয়ান (পিথাগোরিয়ান) যাদুকরকেন্দ্রিক অরিজিন নিয়ে বছর খানেক আগে লিখেছিলাম। একদেড়শ বছর আগেও হিপ্পি-মিস্টিকদের মধ্যে এই আকিদা প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখন একদম মেইনস্ট্রিম সায়েন্সবাদি পাবলিক ফিগার এর প্রচার করছে(পেছনে বাঘা বাঘা ফিজিসিস্টরা আছেন,ওনারা তো নিরীহ(!), ওনাদের মুসলিমদের মধ্যে পরিচিতি কম তাই এখানে না টানি) । আর এমন একজন যার ফলোয়ারের আনুমানিক কয়েক মিলিয়ন ইসলামি নামধারী। হয়ত লাখখানেক তাওহীদবাদি মুসলিম আছে। আমার আইডিতে মিচুয়াল ফ্রেন্ডদের মধ্যে অনেক ফলোয়ারস ছিল। অনেকে তার দুর্দান্ত ভিডিও গুলো শেয়ার করত! এই বিখ্যাত বিজ্ঞানমনা ফেসবুকার খুব শীঘ্রই গনহারে মুশরিক মালাউন বানানোর উদ্দেশ্যে ফিল্ম রিলিজ করবেন। এর ট্রেইলারেই শয়তানের চেহারা রেখেছেন(ছবিটা অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া)। এরাই "ক্রিয়েটরস"!!! এরাই সবকিছুর নিয়ত্বা ও কোঅর্ডিনেটর। [নাউজুবিল্লাহ]
.
কি ব্যপার, শেয়ার করবেন না ভিডিও টা? জুনের মধ্যেই পুরোপুরি কাজ শেষ হবার কথা। তো তাওহীদবাদী প্রিয় ভাইবোনেরা, শয়তানকে ইলাহ হিসেবে গ্রহনের আহব্বানের যুগান্তকারী ভিডিওখানা শেয়ার করবেন তো? 
.
আমি তো কতকিছুই বলি, আমার কথার কোন ভ্যালু আছে নাকি! পুরা সায়েন্সকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার ধৃষ্টতা দেখাই! যেখানে আলিমদের প্রায় সবই এগুলো গ্রহন করে নিয়েছে, সায়েন্টিফিক্যালি জাস্টিফাইয়েবল থিওলজিকাল লেকচার দিয়ে ঘর্মাক্ত হন(প্রাইডের জন্য), সেখানে (সাহাবীদের বলা)প্রিমিটিভ কস্মোজেনেসিসের দিকে আহব্বানকারী জেনারেলে পড়া ফ্যানাটিক বিগটের কথা মানবেন কেন! দ্বীন নিয়ে কথা বলার মিনিমাম যোগ্যতা আছে! ইসলাম তো প্রগতিশীল,শান্তির ধর্ম। আর এগুলো এ্যাডভ্যান্স ফিজিক্সেরই এক্সপ্ল্যানেইশন, সবকিছুর ম্যাথম্যাটিক্যালি ও জিওম্যাট্রিক্যালি ১০০% বিশুদ্ধ। অতএব 'সাইন্স উইথআউট রিলিজিয়ন ইজ লেইম, রিলিজিয়ন উইথআউট সাইন্স ইজ ব্লাইন্ড'। ঠিকাছে?

ভারতীয় দর্শনের সাথে বর্তমান বিজ্ঞানের এত সখ্যতা কেন!

এক ভাই প্রশ্ন করেছেন,
"বর্তমানের কসমোলজিস্টরা হিন্দু কসমোলজির এতো প্রসংসা করে কেন(?) ,আর গুরুদের সাথে সাইন্টিস্টদের এতো ভালো সম্পর্ক কেন!"

শুধু হিন্দুত্ববাদী বৈদিক শাস্ত্রই না, ওরা বৌদ্ধধর্মকেও এস্ট্রোফিজিক্সের আইডিয়াল স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে দেখে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর প্রায় পুরোটাই হিন্দু শাস্ত্র থেকে নেওয়া। এর কারন কি? 
কারন কোনদিনই কেউ বুঝবে না যদি সে অকাল্ট ফিলসফি/মিস্টিসিজম এর ব্যপারে কিছুই না জানে। আর সে যদি না জানে এই সায়েন্সের অরিজিন কি, কি ছিল আর কি হয়েছে তাহলেও বুঝতে পারবে না। 

হিন্দু পৌত্তলিকতা আসলে পূর্বাঞ্চলীয় রহস্যবাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা পৌত্তলিকতার ধর্ম। মক্কায় ইসলাম অবতীর্ণ হবার সময় পূর্ব অবস্থাকে দ্য ম্যাসেজ ফিল্মে দেখানো হয়। সেখানে কোন এক বিদ্বান পৌত্তলিককে মূর্তি পূজার কারন জিজ্ঞেসা করলে সে উত্তরে বলে, আমরা আসলে একটা প্রতীকি রূপ দিয়ে পূজা করি যা শক্তির আধার। 

একই ধারনা ভারতীয় মুশরিকদের। নিন্ম বর্নের নমঃশূদ্ররা হয়ত বিভিন্ন মূর্তিদেরকে কোনরূপ পার্সোনিফিকেশন ছাড়াই পূজা করে, কিন্তু একটু জ্ঞানী শিক্ষিত মুশরিকরা মূর্তিদেরকে পার্সোনিফাইড ন্যাচারাল ফোর্সেস বা 'ল হিসেবে দেখে। একই দৃষ্টিভঙ্গি বিজ্ঞানীদেরও ওদের কস্মোজেনেসিসে(সৃষ্টিতত্ত্বে) ব্রহ্ম, বিষ্ণু,শিবের ভূমিকা আরো উচু স্তরের কুফরি আকিদার বার্তারই এক্সোটেরিক রিলিজিয়াস ভার্সন। যখন বিষ্ণু ঘুমিয়ে পড়ে, তার নাভি দিয়ে ব্রহ্মার জন্ম হয়। বিষ্ণুর স্বপ্নীল মায়াজালই হচ্ছে আমাদের রিয়ালিটি। আর যখন বিষ্ণুর ঘুম ভাঙ্গে, তার স্বপ্নও ভাঙ্গে, আমাদের ইউনিভার্সও ধ্বংস হয় শিবের ধ্বংস নৃত্যে। আবারো ব্রহ্মা আসে সৃষ্টির পুনঃজন্মের জন্য, এভাবেই অনন্তকাল চলতে থাকবে(ইনফিনিট লুপ)। ফিজিসিস্টগন মেটাফোরিক্যাল অকাল্ট মিনিংটাই নিয়েছেন। তারা লার্জ হাইড্রন কোলাইডারে পার্টিকেলকে ভাঙতে ভাঙ্গতে শেষ সীমানায় নিয়ে যান, এই উদ্দেশ্যে যে তারা হয়ত ব্রহ্মাকে পাবে, যে পুনঃসৃষ্টির কাজ করবে। এজন্যই শিবমূর্তিকে রিসার্চ ল্যাবের সামনে সসম্মানে রাখা আছে। তারা শিব-ব্রহ্মার ইন্ট্যার‍্যাকশ্যন মাইক্রোস্কোপিক এবং ম্যাক্রোস্কোপিক উভয় পার্স্পেক্টিভেই দেখেন।

এই অকাল্ট কস্মোজেনেসিস একেক ট্রেডিশনে একেকরকম। প্রাচীন ইজিপ্ট/গ্রীক/ব্যবিলন সব জায়গায় একই রকম ছিল ভিন্ন ভিন্ন কন্টেক্সট আর সেটিংএ। হিন্দু ধর্মের এসব এসোটেরিক ম্যাসেজ অনেক পুরাতন আর কালারফুল,কনভিন্সিং। অর্থাৎ সায়েন্স তথা ন্যাচারাল ফিলসফি যে ম্যাসেজ ক্যারি করে সেটা হিন্দুধর্মে অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান। এজন্য বিজ্ঞানীদের কাছে ইস্টার্ন মিস্টিসিজম এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কিতাবাদি বাইবেলস্বরূপ। হিন্দুত্ববাদ-বৌদ্ধ ইত্যাদি আস্তিক নাস্তিক স্কুল অব থট দর্শন ছাড়া কিছুই নয়। আরো অনেক দর্শনের শ্রেণীবিভাগ ছিল সেসবের অনেকগুলোই কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে। বিশেষিকা ট্রেডিশান তো অনু পরমানু পরমমহান পরমআত্মা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলত। সেসব অবশ্য হিন্দু স্ক্রিপচারগুলোয়ও আছে। সুতরাং মূল বিষয় হচ্ছে একটা মিস্ট্রি স্কুল(Science) যদি অন্য আরেক প্রাচীন মিস্ট্রি স্কুলের প্রতি বিমুগ্ধতায় ভোগে তাহলে এতে খুব বেশি বিস্মিত হবার কিছু দেখি না। মিস্টিসিজম স্যাটানিক চ্যান্টিং ছাড়া আর কিছু না। এখানে যা আছে সেটা হচ্ছে ইব্রাহীমের(আঃ) দ্বীনের সবকিছুর বিপরীত কুফরভিত্তিক বিকল্পপথ। কস্মোলজি থেকে শুরু করে সবকিছুরই এক্সপ্ল্যানেশন আর অলটারনেটিভ অরিজিন আছে। এস্ট্রোলজিক্যাল নলেজ হচ্ছে এমন একটি মিস্টিক্যাল সায়েন্স যেটা সকল অকাল্ট ফিলসফিরই কোর টেনেট। হিন্দুত্ববাদ সম্পূর্ণভাবে এর উপর নির্ভরশীল। অথচ আমাদের আব্রাহামিক[আদম-মুহম্মদ(স)] রিলিজিয়াস ট্রেডিশনে এটা শয়তানি কাজ এবং নিষিদ্ধ যাদুবিদ্যারই শাখা।

অর্থাৎ একটা স্রোত গিয়েছে একত্ববাদের দিকে। আরেকটা স্রোত গিয়েছে বহুত্ববাদী পৌত্তলিকতার দিকে। এই পলিথেইস্টিক স্ট্রিমে পৌত্তলিকতা থেকে শুরু করে প্রকৃতিপূজা, আত্মপূজা, শয়তানের পূজা সবকিছু একাকার হয়ে আছে। ইসলামের মাঝে যারা সেই একই মিস্টিক্যাল কুফরি আকিদা ইসলামাইজ করে ঢুকিয়েছে এরা হচ্ছে শিয়া এবং সুফিরা। আজকের পীরদের অধিকাংশই মালাউন। কিন্তু অন্ধ অনুসারীদের অধিকাংশকে তাকফির করা যায় না। সবচেয়ে বড় আইরোনিক্যাল ব্যপার হচ্ছে সহীহ আকিদার দাবিদার প্রায় সবাই কোন না কোন ভাবে মেইনস্ট্রিম স্যাটানিক অলটারনেটিভ কস্মোলজি এবং কস্মোজেনেসিসে বিশ্বাসী। এদের মধ্যে আবার কতক উচ্চ শিক্ষিত। এদেরকে দেখলেই সবচেয়ে বেশি বিচলিত হই। এদের মধ্যে অনেক বড় বড় দাঈ আছেন যারা এসবই ইসলামাইজ করে কিতাব প্রকাশ করেন। তাদের কাছে কোন ব্যাখ্যাই নেই যে কেন এরকম করছে। হয়ত ইগো এখানে অনেক বড় একটা ব্যপার। ওয়া আল্লাহু আ'লাম।

৯.ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ত্ব[নক্ষত্রমালা ও ছায়াপথ]

পর্ব-৯

নক্ষত্রমালা


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন একদম ছয়দিনের শেষ প্রহরে শুক্রবারে।অথচ প্রচলিত বিজ্ঞান আমাদের শেখায় তারকা, গ্রহ(কথিত) সবকিছু এলোমেলোভাবে সৃষ্টি হয় বিগব্যাং এর দ্বারা। ওরা এক স্থানে বলে প্রথম তারকাটির জন্ম ১০০মিলিয়ন বছর পূর্বে। ওরা সূর্যকেও ওদের বিলিয়ন মিলিয়ন তারকার একটি হিসেবে বিবেচনা করে। এই তারকা সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবী তথা কথিত গ্রহ সৃষ্টিরও অনেক আগে। তাদের ভাষায় এটা হচ্ছে কস্মোলজিক্যাল এভ্যুল্যুশন[১]।

কাফিরদের একটা বাংলা ওয়েবে তারকা এবং গ্রহ সৃষ্টির মেইনষ্ট্রিম সায়েন্স স্বীকৃত প্রক্রিয়া  লিখেছেঃ
"গ্রহ বা গ্রহানু সৃষ্টিতত্ত্ব জানার আগে সূর্য কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল তা জেনে রাখা ভালো। আমাদের সূর্য সৃষ্টি হয় সৌর নেবুলা থেকে। আর সৌর নেবুলা সৃষ্টি হয় সুপারনোভা বিস্ফোরণ মাধ্যমে।

সূর্যের চেয়ে তিন গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রসমূহের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেনের সংযোজন বিক্রিয়ায় তৈরি হয় হিলিয়াম, হিলিয়ামের সংযোজনে তৈরি হয় কার্বন এবং সেই কার্বনের সংযোজনে তৈরি হয় লোহা। লোহা তৈরির মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীণ বিক্রিয়াসমূহের পরম্পরার পরিসমাপ্তি ঘটে, কারণ এর পরের বিক্রিয়াটি তাপশোষী। এমনই এক সময়ে নক্ষত্রের অভ্যন্তরস্থ বহির্মুখী চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যাওয়ায় এটি আর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, ফলে নক্ষত্রে ঘটে এক প্রচণ্ড অন্তস্ফোটন (Implosion)। নক্ষত্রটির বেশিরভাগ ভরই এর কেন্দ্রে সংকুচিত হয়ে পড়ে, আর গ্যাসীয় বাতাবরণটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবলবেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাই সুপারনোভা বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কেন্দ্র ছাড়া অবশিষ্ট অংশটুকু বা আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলাকণার মেঘ অর্থাৎ যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তা নেবুলায় পরিণত হয়।

একইভাবে সৌর নেবুলা সৃষ্টি হয়েছিল। যা প্রায় ১ আলোকবর্ষ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এরপর এই বিশাল আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলাকণার মেঘের ঘূর্ণনবেগ বাড়ার সাথে সাথে এটি সংকুচিত হতে শুরু করলো। ফলে আস্তে আস্তে মেঘের আকৃতি ছোট হতে থাকে । এটি চ্যাপ্টা আকৃতির সাথে সাথে প্রায় ১০০ জ্যোতির্বিদ্যার একক (১ জ্যোতির্বিদ্যার একক= ১৪৯৬০০০০০ কি.মি) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে যায়।

নীহারিকার মেঘের কেন্দ্র আশেপাশের অন্য অংশ হতে বেশি ঘনত্বপূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। সেখানেই তৈরি হয়ে থাকে আমাদের প্রোটোসূর্য। ধীরে ধীরে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এটি হতে দৃশ্যমান আলো নির্গত হতে থাকে । এরপরে তাপমাত্রা আরও অনেক বাড়ার পর নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সৃষ্টি হয়ে যায় আমাদের সূর্য । আমাদের সূর্য মেঘটির কেন্দ্রের স্থান দখল করে ছিল। এরপর আশেপাশের সকল বস্তু চাকতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে শুরু করে। আশেপাশের সকল বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। তখন অনুবীক্ষণিক ধূলিকণার বস্তুগুলো একে অপরকে আরও বেশি আকর্ষণ করতে শুরু করে।
স্বল্প ভররের বস্তু হতে অধিক ভরের বস্তুর সৃষ্টি হতে থাকে। আস্তে আস্তে বস্তুগুলো বড় হতে হতে একসময় গ্রহাণুতে রূপান্তর হয়ে পড়ে। এর থেকেও বড়গুলো গ্রহে পরিণত হয়। আমাদের পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো ঠিক এভাবেই সৃষ্টি হয়।"[২]

সুতরাং শয়তানের সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী সর্বপ্রথম তারকার সৃষ্টি হয় অতঃপর অনেকপরে কথিত গ্রহ-উপগ্রহ। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সর্বপ্রথম পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন,সাতটি পৃথিবী একের উপর আরেকটি সমতল দ্বীপ সদৃশ। এরপর আমাদের উপরে গম্বুজাকৃতির আসমান এবং এভাবে মোট সপ্ত আসমান, অতঃপর শুক্রবার শেষ প্রহরে চাঁদ সূর্য,তারকারাজি সৃষ্টি করেন। তারকারাজিকে দুনিয়ার নিকটতম আকাশে গেঁথে দেন।

I was told by Musa b. Harun-'Amr b. Hammad-Asbat-al-Suddi-Abu Malik and Abu SalihIbn 'Abbas. Also (al-Suddi)-Murrah al-Hamdani-'Abdallah b. Masud and some (other) companions of the Prophet ( comment?ing on): "Then[....]Friday. Friday-yawm al-jum'ah -is thus called because on it, God
put together fl-m-) the creation of the heavens and the earth and "revealed in every heaven its command."375 He continued: In every heaven, He created its (special) angels as well as its (special) oceans, the mountains with hail,376 and what (man) does not know.377 He then adorned the lower heaven with the stars and made them an ornament and guard to guard against the Satans.378 [....]
[ইবনে জারির তাবারির ইতিহাস]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَى فِي كُلِّ سَمَاء أَمْرَهَا وَزَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা
[৪১:১২]

সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন, শরীআতের দলিল অপবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার একেবারেই বিপরীতের। শুধু তাই না, এই বিজ্ঞান সূর্যকে নক্ষত্র মনে করে। অন্যদিকে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী নক্ষত্র ও সূর্য সম্পূর্ন ভিন্ন সৃষ্টি। আল্লাহ তারকারাজিকে সম্পূর্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন তিনটি উদ্দেশ্যেঃ
১.আসমানের সৌন্দর্যের জন্য।
২.আসমানের তারকা দেখে যমীনের উপর পথ চেনার নির্দেশক হিসেবে এবং
৩.বিতাড়িত শয়তানের থেকে আকাশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপনাস্ত্ররূপে।

এর বাহিরে তারকারাজির অন্য কোন কাজ নেই। বর্তমান বিজ্ঞান নক্ষত্রের ব্যপারে যা বলে, তা সুস্পষ্ট মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُواْ بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ قَدْ فَصَّلْنَا الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি
[আনআমঃ৯৭]
এর ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ

অন্যত্র বলেনঃ
وَعَلامَاتٍ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ
এবং তিনি পথ নির্ণয়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন, এবং তারকা দ্বারা ও মানুষ পথের নির্দেশ পায়[নাহলঃ১৬]

আল্লাহ বলেনঃ
وَالسَّمَاء ذَاتِ الْبُرُوجِ
শপথ নক্ষত্র শোভিত আকাশের[বুরুজঃ১]
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি।
وَحِفْظًا مِّن كُلِّ شَيْطَانٍ مَّارِدٍ
لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَى وَيُقْذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبٍ
دُحُورًا وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ
إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ
এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে।ওরা উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়। ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে
[আস ছফফাতঃ৬-১০]




আল্লাহ সূরা ফুরকানে বলেনঃ
تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاء بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا
কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র
[২৫:৬১]


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সূরা হিজরে ইরশাদ করেনঃ
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاء بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ
নিশ্চয় আমি আকাশে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে দর্শকদের জন্যে সুশোভিত করে দিয়েছি।

وَحَفِظْنَاهَا مِن كُلِّ شَيْطَانٍ رَّجِيمٍ
إِلاَّ مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُّبِينٌ
আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছি।
কিন্তু যে চুরি করে শুনে পালায়, তার পশ্চাদ্ধাবন করে উজ্জ্বল উল্কাপিন্ড
[১৫:১৬-১৮]

মাত্র তিনটি উদ্দেশ্যে আল্লাহ নক্ষত্রদের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আজকের কল্পনাভিত্তিক কস্মোলজিক্যাল মিস্টিসিজমে নক্ষত্রের এসকল কাজ নেই। তাদের কাছে তারকাদের ভূমিকা আরো অনেক কিছু।  এরা কখনো স্বীকৃতি দেয় না যে, নক্ষত্র শয়তানের বিরুদ্ধে উল্কা নিক্ষেপক হিসেবে কাজ করে, এরা তো উল্কা বলতে নক্ষত্রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কিছুকেই বোঝায় না। দ্বিতীয়ত, হেলিওসেন্ট্রিক এভার এক্সপ্যান্ডিং ইউনিভার্সে যেখানে সকল তারকা এদিক ওদিক ধাবমান, সেখানে তারকা দেখে পথ চেনার কথা কল্পনাও করা যায় না। কারন, এই কস্মোলজি অনুযায়ী প্রতিনিয়ত তারকারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। এক শতাব্দী পর এক তারকা সম্পূর্ন হারিয়ে যাবে আবার নতুন কোন অজানা অচেনা তারকার উদয় ঘটবে। অথচ বাস্তবতা ঠিক তাই,যা রহমান আল্লাহ বলেছেন। মানব সভ্যতার আদি থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত তারকাদের অবস্থান/কক্ষপথ অপরিবর্তিত আছে। চলমান তারকারা সেই প্রাচীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত একই দূরত্ব ও অবস্থানে থেকে পৃথিবীকে আবর্তন করছে। এটা প্রমান করে আল্লাহর কথাই সন্দেহাতীতভাবে সত্য। আল্লাহ কখনোই পরিবর্তনশীল কোন কিছুকে পথের দিশা রূপে সৃষ্টি করতেন না যদি নক্ষত্ররা সত্যিই অবস্থান পরিবর্তন করত(যেমনটা আজকের বিজ্ঞান বলে)।
আজকের বিজ্ঞান অনুযায়ী, নক্ষত্ররা হচ্ছে একেকটি সূর্য, এদের প্রত্যেকের চারদিকে পৃথিবীর মত কিন্তু গোলাকার কিছু মাটি/পাথরের দলা ঘুরতে থাকে, তাদের পরিভাষায় সেসব হচ্ছে গ্রহ। সূর্য তথা প্রত্যেক নক্ষত্রের কাজ হচ্ছে, তাদের চারপাশের গ্রহ গুলোয় আলোদান।এরা হচ্ছে একেকটা জগতের সকল শক্তির উৎস! আমাদের উপর চক্রশীল সূর্যও নাকি একটা নক্ষত্র। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা চাদঁ সূর্যকে তারকাদের থেকে আলাদা উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন সময়ের হিসাবের জন্য এবং একটি নিদর্শন হিসেবে, এটা আদৌ কোন নক্ষত্র নয়। অন্যদিকে নক্ষত্রদেরকে আল্লাহ ভিন্ন উদ্দেশ্য ও কাজ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন,আমরা উপরে তা আলোচনা করেছি। আল্লাহ যখন ইউসুফ(আঃ) এর স্বপ্নের বর্ননা দিলেন তখন চাঁদ-সূর্যের কথা নক্ষত্রদের থেকে আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন। নক্ষত্ররা আসমানের সমুদ্রের কক্ষপথে সন্তরনরত চাঁদ সূর্যের তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র এবং অল্প আলোযুক্ত প্রদীপমালা।
আল্লাহ বলেনঃ
إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ
যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি
[ইউসুফঃ৪]

আধুনিক অপবিজ্ঞান দৃশ্যমান নক্ষত্রসমূহকে গ্রহ বা প্ল্যানেট বানিয়েছে। এরা গ্রহ বলতে বোঝায় পৃথিবীর মত জগৎ। মঙ্গল,বুধ,শুক্র,শনি,বৃহস্পতি প্রভৃতি নক্ষত্রগুলোকে গ্রহ বানিয়েছে, এমনকি সেখানে যাবার মিথ্যা দাবী আর কল্পনায় জনগনকে ডুবিয়ে রেখেছে। তাদের মতে এরকম আরো বিলিয়ন মিলিয়ন গ্রহ সমগ্র মহাকাশে বিরাজমান। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এসব গ্রহের অস্তিত্ব শুধু কল্পনাতেই। ওরা যাদেরকে গ্রহ বলে, তারা মূলত চলমান নক্ষত্র। এ কথা হাদিসেও আছে। আলি(রাঃ) একদিন আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কে প্রশ্ন করেন ঐ সমস্ত তারকাদের ব্যপারে, কুরআনে যাদের শপথ আল্লাহ করেছেন। যাদেরকে আল্লাহ খুন্নাস বলেছেন। খুন্নাসের ব্যপারে আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেন সেসব হচ্ছে ৫টি 'তারকা'। সেগুলো হলো, বৃহস্পতি, শনি,বুধ,মঙ্গল,শুক্র। আমাদেরকে আজকে বিজ্ঞান এদেরকে 'গ্রহ' বলতে শেখায় অথচ নবী(সাঃ) শিখিয়েছেন তারকা। এই পাচঁঁটি এমনই তারকা যারা চাঁদ সূর্যের ন্যায় উদিত হয় এবং অস্ত যায়। এরা ছাড়া বাকি তারকারা আসমানে চক্রাকারে ঘুরছে। এদের এই ঘূর্ননই হচ্ছে আল্লাহর প্রার্থনা।


Ibn 'Abbas said that 'Ali b. Abi Talib said to the Messenger of God: You are like my father and my mother! You have mentioned the course of the retrograde stars (al-khunnas) by which God swears in the Qur'an,449 together with the sun and the moon, and the rest. Now, what are al-khunnas? The Prophet replied: 'Ali, they are five stars: Jupiter (al-birjis), Saturn (zuhal), Mercury ('utarid), Mars (bahram), and Venus (al-zuhrah). These five stars [661
rise and run like the sun and the moon and race with them together. All the other stars are suspended from heaven as lamps are from mosques, and circulate together with heaven praising and sanctifying God with prayer. The Prophet then said: If you wish to have this made clear, look to the circulation of the sphere alternately here and there. It is the circulation of heaven and the circulation of all the stars together with it except those five. Their's'
circulation today is what you see, and that is their prayer. Their circulation to the Day of Resurrection is as quick as the circulation of a mill because of the dangers and tremors of the Day of Resurrection. This is (meant by) God's word: "On a day when the
heaven sways to and fro and the mountains move. Woe on that day
unto those who declare false (the Prophet's divine message). 11453
[History of Tabari]

আসমানে সৃষ্ট গতিশীল পানির কক্ষপথে চাঁদ-সূর্যের সাথে বুধ, শুক্র,শনি বৃহস্পতি, মঙ্গল তারকারা সন্তরন করে। সেসব চাঁদ সূর্যের মত ফালাকে আবর্তিত হয়ে অতঃপর অস্তগমন করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এই পাঁঁচ তারকাদের ব্যপারে বলেনঃ
فَلَا أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ
আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়।

الْجَوَارِ الْكُنَّسِ
চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়[তাকভীরঃ১৫-১৬]

বড় আশ্চর্যের বিষয়,এ যুগের মুসলিমরা কাফিরদের বিকৃত শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে এই তারকাদেরকে গ্রহ বলে মেনে নিয়েছে। আজ এরা বিশ্বাস করে এই পাচ তারকায় অবতরন করা যায়। কোন কোনটি তাদের কল্পনানুযায়ী বাসযোগ্য! ভবিষ্যতে সেখানে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখে! কাফিররা যেসব মিথ্যার প্রচার করে সেসবকে কুরআন সুন্নাহর মানদণ্ড দ্বারা যাচাই ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি যেকোন কালের চেয়ে এ যুগে মাত্রা ছাড়িয়েছে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা যা বলেছেন সেটাই সত্য। জুমসেন্সড ক্যামেরা,টেলিস্কোপ দিয়ে কথিত গ্রহদেরকে তারকাদের মতই মিটমিট করে জ্বলতে দেখা যায়। অন্য নক্ষত্রদের সাথে এসকল কাল্পনিক গ্রহদের খুব বেশি পার্থক্য নেই। আপনি বিশ্বাস করেন যে, কোন মানুষ জ্বলন্ত প্রদীপমালার উপর অবতরন করতে পারে,কিংবা বসবাসের চিন্তা করতে পারে! এই অসম্ভব চিন্তা/কল্পনার মধ্যেই কাফিররা আজ মানুষকে ডুবিয়ে রাখছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তারকাদেরকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করেছেন। কখনো কাওকাব,নজম,বুরুজ,খুন্নাস,তারিক্ক,সাকিব ইত্যাদি। হয়ত আল্লাহ এদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামে সম্বোধন করেছেন। কোন তারকা উজ্জ্বল, কোনটি চক্রশীল ওয়ান্ডারিং স্টার,কোনটা রেট্রোগ্রেডিং স্টার,কোনটা স্থির,কোন কোন তারকা আসমানের প্রহরীস্বরূপ,কোনটা দিনের বেলায় লুকিয়ে যায়, রাতে প্রকাশ করে। অন্তরে ব্যাধিগ্রস্ত বিজ্ঞানপন্থী মুসলিমদের অধিকাংশ এসব বিভিন্ন নামের পার্থক্যের সুযোগ ব্যবহার করে সেগুলোকে প্ল্যানেট বা গ্রহ বলে ব্যাখ্যা করে। অনেক আলিম/দাঈরাও এটা বলতে চায় যে কাওকাব মানে হচ্ছে গ্রহ। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কাওয়াকিব(কাওকাব) শব্দটি সূরা ইউসূফের ৪ নং আয়াতে ব্যবহার করেছেন। সংশ্লিষ্ট আয়াতের ব্যপারে আসা হাদিসে জনৈক ইহুদী আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কে ইউসুফ(আঃ) কে সিজদা করা 'নক্ষত্রদের' নাম জিজ্ঞেসা করেন। ওই হাদিসে আদৌ সেসব নক্ষত্রদের দ্বারা গ্রহ বোঝানো হয়নি(হাদিসটি উপরে সূরা ইউসুফের ৪নং আয়াতের নিচে দেয়া আছে)। বরং স্পষ্টভাবে নক্ষত্রের কথা বলা হয়েছে। হিব্রু ও আরবি ভাষায় কাওকাব মানে তারকা বা নক্ষত্র। এর দ্বারা বিশেষ স্থির heavenly bodies-ও বোঝায়। সকল প্রকার তারকা বা নক্ষত্রই নুজুম কিন্তু সকল নুজুমকে কাওকাব/কাওয়াকিব বলা যায় না। সকল তারকাকে নুজুম বলা যায় কিন্তু সকল তারকা তারিক/শিহাব/সাকিব/বুরুজ নয়। সৃষ্টিকর্তা কোন কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নক্ষত্রদেরকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে বলেছেন, সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। কোন মানুষ সুস্পষ্টভাবে সুনিশ্চিতভাবে আকলী জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কিছুই বলতে পারবে না। কেননা প্রত্যেক নক্ষত্রের আচরণ-বৈশিষ্ট্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই জানা আছে। আজকে যারা মর্ডান সুডো সায়েন্সের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আল্লাহর বলা শব্দ গুলোকে কাফিরদের চিন্তাধারার সাথে মেলায়, তারা অবশ্যই ভুল করছে। একলোক শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদকে(হাফিঃ) নজম ও কাওকাবের ব্যপারে প্রশ্ন করেন। শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ(হাফিঃ) উত্তরে কাফিরদের কাছে থেকে আসা প্ল্যানেটারি নোশনের সাথে কুরআনের মধ্যস্থতা করলেন। এমনভাবে উত্তর করলেন যাতে সায়েন্টিফিক কমিউনিটিও না কষ্ট পায়, আবার রিলিজিয়াস কমিউনিটিও কষ্ট না পায়। এজন্য একদিকে বললেনঃ
"As for limiting the word “najm” and using it only to refer to huge heavenly  bodies that have fixed locations in the sky, are burning and emit light by themselves, such as the sun, and using the word “kawkab” to refer to solid heavenly bodies that are not burning, such as the planets of the solar system, this is modern astronomical terminology. There is nothing wrong with adopting and using this terminology, as there is no problem with the terminology itself, but it is wrong to judge the language of the Holy Quran by the terminology of later eras. Rather what we must do is understand the Holy Quran in accordance with the Arabic language, because that is the language in which the Quran was revealed. Whoever disagrees with that is like one who understands the word sayyaarah in the verse “And there came a caravan of travellers [sayyaarah]; they sent their water-drawer” [Yoosuf 12:20] as referring to the vehicle that is known nowadays in which people ride and travel by mechanical means [sayyaarah in modern Arabic means “car”] then raises an objection against the Quran by saying that cars were not invented at the time of Yoosuf (peace be upon him), so how can cars be mentioned here?! "[৩]

তার কথা হচ্ছে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক শিক্ষা অনুযায়ী তথ্য/পরিভাষাকে গ্রহন করায় কোন দোষ নেই(!), কিন্তু কুরআনকে বুঝতে হবে কুরআন নাযিলের সময়ের প্রেক্ষাপটে যা বুঝানো হয়েছে আরবি ভাষায়, তার উপর। তিনি আরবি শব্দের 'গাড়ি'র উদাহরন দিয়েছেন। ১৪০০ বছর আগে যেই মেকানিক্যাল চাকাওয়ালা বাহন ছিল সেটাকে যে শব্দে ডাকা হত, সে শব্দ দ্বারাই আজ গাড়িকে ডাকা হয়। মানুষ প্রাচীন শব্দকে আধুনিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। এমতাবস্থায় তার মতে কোনভাবেই কাউকে বলা উচিত না যে, কুরআনে কেন গাড়ির কথা আসল, গাড়ি তো ১৪০০ বছর আগে আবিষ্কৃত হয় নি!

তিনি চমৎকারভাবে সমন্বয় করলেন বৈজ্ঞানিক শব্দ গ্রহন এবং ইসলামের মধ্যে। কাফিরদের থেকে আসা বিশ্বাসগত শিক্ষা বা পরিভাষাকে গ্রহন করাতে দোষ নেই, কিন্তু কুরআনকে বুঝবার জন্য ওই নবোদ্ভাবিত বিদ্যা বা শিক্ষাকে ব্যবহার করা যাবে না! অদ্ভুত প্যারাডক্সিক্যাল কথা!

বিজ্ঞানপন্থীদের আরেক মিথ্যা দাবী হচ্ছে ,বিলিয়ন ট্রিলিয়ন (কাল্পনিক)গ্রহ-নক্ষত্র কাল্পনিক সীমাহীন মহাশূন্যের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সমস্ত নক্ষত্রদের দ্বারা শুধু প্রথম আসমানকে সুশোভিত করেছেন। অর্থাৎ কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী তারকারা শুধুই নিকটবর্তী আসমানে তথা প্রথম আসমানে এর বাইরে নয়। গ্রহ বলে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমরা রাতের আসমানে মিটমিট করে যাদের জ্বলতে দেখি, তাদের সবাই  প্রথম আসমানে ভাসমান নক্ষত্র।
আল্লাহ তাবারাকা তা'য়ালা সূরা মুলকে ইরশাদ করেনঃ
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি
[৬৭:০৫]

আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاء الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি[ছফফাতঃ৬]


সুতরাং, আশা করি দেখতে পাচ্ছেন আজকের কাল্পনিক বিজ্ঞান আর আমাদের শাশ্বত সত্য ইসলামের সৃষ্টিতত্ত্বের মধ্যে বৈপরীত্য এবং সাংঘর্ষিকতা। দুয়ের মধ্যে জ্ঞানগত ব্যবধান আকাশ পাতালের।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তারকারাজির পতনের স্থানের(অস্তাচল) কথা বলেছেন। আধুনিক অপবিজ্ঞানকে গ্রহণকারী মুসলিমরা আনন্দের সাথে বলছে এটাই ব্ল্যাকহোল। কুরআন বিজ্ঞানময়! কুরআনে ১৪০০ বছর আগে ব্ল্যাকহোলের কথা বলা হয়েছে যা হাবল টেলিস্কোপে এখন দেখানো হচ্ছে(৪)। অথচ সত্য হচ্ছে এসব ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব কম্পিউটার এনিমেশন, বই পুস্তক আর কল্পনার বাইরে নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কি ব্ল্যাক হোলের কথাই বলেছেন?! কখনোই না।

আল্লাহ এর দ্বারা খুন্নাস তারকাদের কথা বলেছেন যারা উদিত ও এবং অস্ত যায়। আল্লাহ ওদের অস্তাচলের শপথ করেছেন।
আল্লাহ বলেনঃ
وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى
নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়[আন নাজমঃ-১]




সুতরাং এই আয়াতটি নিচের আয়াতের মতই সমার্থক(ইমাম ইবনে কাসিরও তাই বলেছেন) যে আয়াত দ্বারা আজকের বিকৃত চিন্তার মুসলিমরা ব্ল্যাকহোল বুঝিয়ে থাকে।
فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ
অতএব, আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি[ওয়াক্বিয়াহ-৭৫]




কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সকল নক্ষত্রদেরকে নির্বাপিত করবেন,সেগুলো ঝরে পড়বে আসমান গা থেকে।
আল্লাহ বলেনঃ
فَإِذَا النُّجُومُ طُمِسَتْ
অতঃপর যখন নক্ষত্রসমুহ নির্বাপিত হবে[মুরসালাতঃ৮]

وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,[ইনফিতারঃ২]

وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ
যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে(তাকভীর:২)

উপরে দেখতে পাচ্ছেন হাদিসটি, যেখানে ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন, সূর্যকে নিষ্প্রভ করে উপুর করে মাটিতে নিক্ষেপ করা হবে। নক্ষত্রদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে। এর দ্বারা প্রমান হয়,আমাদের পৃথিবী সম্পর্কে অপবিজ্ঞান যা বলে তা মিথ্যা। সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্র বিজ্ঞান অনুযায়ী পৃথিবীর তুলনায় বিলিয়ন মিলিয়ন গুন বড়। এত বড় যে পৃথিবীকে নক্ষত্রদের সামনে একটা বিন্দুর সমতুল্যও মনে হবে না।এদেরকে পৃথিবীর উপর পতনের কথা কল্পনাও করা যায় না। এর সমপর্যায়ের ভাবনা এরূপ যে কোন এক বিন্দু বালির উপর গোটা পৃথিবীকে ফেলার কথা বলা। কিন্তু সাহাবীদের(রাঃ) আকিদা এটাই যে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন এদেরকে পৃথিবীর ভূমিতে ফেলে দেবেন। সকল নক্ষত্রদেরকে সমুদ্রে ফেলে নিষ্প্রভ করবেন। এটা প্রমান করে সত্যিকারের সৃষ্টিজগতের প্রকৃতি। এটা সাহাবীদের আকিদা যে, নূনের পৃষ্ঠদেশে সমতলভাবে বিছানো যমীনের বিশালতার তুলনায় চাঁদ সূর্য, নক্ষত্ররা অনেক অনেক ছোট। এদের প্রত্যেককে একত্রে সমুদ্রে নিক্ষেপ সম্ভব। আল্লাহ স্বয়ং এদের খসে/ঝড়ে পড়ার কথা বলেছেন।

Source:Al Bidaya Wan Nihaya






ছায়াপথ-আকাশগঙ্গা




ছায়াপথের ব্যপারে কাফির মুশরিকদের শেখানো আকিদা হচ্ছে সেটা হচ্ছে লক্ষকোটি তারকা গ্রহ-নক্ষত্র সমস্তকিছুর ধারক। এটা ধূলিকণা, গ্যাস,প্লাজমা,কৃষ্ণবস্তু দ্বারা গঠিত। এগুলো হাজার হাজার আলোকবর্ষের দৈর্ঘ্যপ্রস্ত বিশিষ্ট হয়ে থাকে। সমগ্র মহাকাশে এরকম বিলিয়ন মিলিয়ন ছায়াপথ আছে। প্রতিটা ছায়াপথ আবার মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র ধারন করে। প্রত্যেক ছায়াপথ সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে প্রচন্ড গতিতে(ঘন্টায় মিলিয়ন বিলিয়ন কিলোমিটার) মহাশূন্যের অজানা গন্তব্যে এদিক ওদিক ছুটে চলছে[৫]।

অথচ ছায়াপথের ব্যপারে ইসলামের শিক্ষা সম্পূর্ন ভিন্ন।ছায়াপথ হচ্ছে আসমানের একটি দরজা। কিয়ামতের সময় এই দরজা থেকেই বিদীর্ণ হওয়া শুরু হবে।

সুতরাং সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, আজকের উম্মাহ কতটা জঘন্যভাবে নব্যুয়তের শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাফিরদের কাল্পনিক অসত্য শিক্ষাকে গ্রহন করে নিয়েছে! বর্তমান যুগের আলিম, দাঈ এবং গায়রে আলিম সমস্ত মুসলিমের কাছে প্রশ্ন, কাফিরদের শিক্ষার কোন বিষয়টা তাদের নিকট নব্যুয়তের শিক্ষার চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য, চাকচিক্যপূর্ন এবং উত্তম বলে মনে হয়েছে, যার দরুন তারা কাফির-মুশরিকদের ভ্রান্ত আকিদা ও শিক্ষাকে গ্রহন করে নিয়েছে?!

আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থা পুরোপুরি অনুসরন করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি সাপের গর্তেও ঢুকে, তবে তোমরাও তাতে ঢুকবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি ইয়াহুদী ও নাসারাদের কথা বলছেন? নবী (সাঃ) বললেন, তবে আর কার কথা?’’ 
বুখারী ৩৪৫৬; মুসলিম ৬৬৭৪-(৬/২৬৬৯)

‘’ইয়াহুদি ও নাসারারা তোমার প্রতি রাজী হবে না যে পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের আদর্শ গ্রহন করো। বল- আল্লাহর দেখানো পথই সুপথ এবং তুমি যদি জ্ঞান আসার পরেও ওদের ইচ্ছা অনুযায়ী চল, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর ক্রোধ হতে রক্ষা করার মতো কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না’’ 
[বাকারাহ ২/১২০]


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার প্রশংসা ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা, যে তিনি আমাদের মত অতি স্বল্পসংখ্যক অধমকে হক্ককে চেনার এবং মান্য করার তাওফিক দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।



ওয়া আল্লাহু আ'লাম



[চলবে ইনশাআল্লাহ...]




রেফা:
১)
https://www.cfa.harvard.edu/~ejchaisson/cosmic_evolution/docs/splash.html
https://www.universetoday.com/54756/what-is-the-big-bang-theory/
https://www.space.com/13352-universe-history-future-cosmos-special-report.html
https://phys.org/news/2018-06-planet-formation-star-maturity.html
http://www.bigbangcentral.com/galaxy_page.html

২)
http://www.atheistbangla.com/2018/09/how-earth-created.html

৩)
https://islamqa.info/en/answers/243871/meteorites-and-shooting-stars-may-be-called-stars-nujoom-and-heavenly-bodies-kawaakib-in-arabic

৪)
https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/Mahfuzhappy/29261752

৫)
https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ছায়াপথ

বিগত পর্বগুলোর লিংকঃ
https://aadiaat.blogspot.com/2019/03/article-series_85.html

Monday, May 27, 2019

প্রভাত দিয়ে লেখার টিউটোরিয়াল

একসময় বাংলাদেশে কম্পিউটারে বাংলা লিখতে ব্যাপকভাবে বিজয় ব্যবহৃত হত। কিন্তু বিজয়ে কিছু মারাত্বক সমস্যা থাকার জন্য অনেকেই ইউনিকোড ভিত্তিক অভ্র ফোনেটিক ও প্রভাতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বিজয়ে পাইরেসির সমস্যার জন্য সেদিকে সময় না দেয়াই ভাল।
অভ্র ফোনেটিকে কী-স্ট্রোক বেশি থাকায় দ্রুতগতিতে বাংলা লেখা সম্ভব নয়। প্রভাতে নির্দিষ্ট লে-আউট থাকায় খুব দ্রুতগতিতে বাংলা লেখা যায়। ফলে অনেকেই (বিশেষত ব্লগাররা) প্রভাত ব্যবহার করছেন। প্রভাত শেখার সময় আমার যে কিঞ্চিৎ ভোগান্তি হয়েছে, অন্যদের যেন তা না হয়, তার জন্যই আমার এই টিউটোরিয়াল। প্রভাতে কোন কী-তে কোন বর্ণ তা নিচে দেয়া হল:

স্বরবর্ণ:

অ = A, আ = v, ই = I, ঈ = E, উ = U, ঊ = W, ঋ = V, এ = y, ঐ = Y, ও = o, ঔ = O

ব্যঞ্জনবর্ণ:

ক = k, খ = K, গ = g, ঘ = G, ঙ = M, চ = c, ছ = C, জ = j, ঝ = J, ঞ = & (& = shift+7), ট = t, ঠ = T, ড = d, ঢ = D, ণ = N, ত = f, থ = F, দ = q, ধ = Q, ন = n, প = p, ফ = P, ব = b, ভ = B, ম = m, য = Z, র = r, ল = l, শ = x, ষ = S, স = s, হ = h, ড় = R, ঢ় = X, য় = z, ৎ = * (* = shift+8), ং = L, ঃ = H, ঁ = >

কার:

া (আ-কার) = a, ি (ই-কার) = i, ী (ঈ-কার) = e, ু (উ-কার) = u, ূ (ঊ-কার) = w, ৃ (ঋ-কার) = <, ে (এ-কার) = [, ৈ (ঐ-কার) = {, ো (ও-কার) = ], ৌ (ঔ-কার) = }

ফলা:

্য (য-ফলা) = (যে বর্ণে য-ফলা দিতে চান সেটি এখানে বসাতে হবে)/Z, যেমন: k/Z = ক্য
্ব (ব-ফলা) = (যে বর্ণে ব-ফলা দিতে চান সেটি এখানে বসাতে হবে)/b, যেমন: k/b = ক্ব
্র (র-ফলা) = (যে বর্ণে র-ফলা দিতে চান সেটি এখানে বসাতে হবে)/r, যেমন: k/r = ক্র
্ল (ল-ফলা) = (যে বর্ণে ল-ফলা দিতে চান সেটি এখানে বসাতে হবে)/l, যেমন: k/l = ক্ল
্ম (ম-ফলা) = (যে বর্ণে ম-ফলা দিতে চান সেটি এখানে বসাতে হবে)/m, যেমন: k/m = ক্ম
র্ (রেফ) = r/(যে বর্ণে রেফ দিতে চান সেটি এখানে বসাতে হবে), যেমন: r/k = র্ক
[বি.দ্র. রেফ (র্) মূলত ব্যঞ্জনধ্বনির অব্যবহিত আগে ব্যবহৃত হসন্ত 'র' ধ্বনি।]

যুক্তবর্ণ:

প্রভাতে যুক্তবর্ণ লেখার জন্য যুক্তবর্ণটি কোন কোন বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত তা জানতে হয়। দুইটি বর্ণ যুক্ত করার জন্য তাদের মাঝে ইংরেজী কী-বোর্ডের / (স্ল্যাশ) টাইপ করতে হয় যেটা আসলে ্ দেখায়। নিচে কিছু যুক্তবর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেয়া হল:
ক্ষ = ক+ষ = k/S
হ্ম = হ+ম = h/m
জ্ঞ = জ+ঞ = j/& (& = shift+7)
ঞ্জ = ঞ+জ = &/j (& = shift+7)
ঞ্চ = ঞ+চ = &/c (& = shift+7)
ঞ্ছ = ঞ+ছ = &/C (& = shift+7)
ষ্ণ = ষ+ণ = S/N
ত্ত = ত+ত = f/f
ত্র = ত+র = f/r
ত্থ = ত+থ = f/F
হ্ণ = হ+ণ = h/N
হ্ন = হ+ন = h/n
ণ্ড = ণ+ড = N/d
ঙ্ক = ঙ+ক = M/k
ঙ্গ = ঙ+গ = M/g
স্থ = স+থ = s/F
র‍্য = র+য = r`/Z ( ` চিহ্নটি tab কী'র উপরের কী'র সাহায্যে দেয়া যায়)